আমাদের বাসার নীচতলা তখন খালি ছিল। পুরো বিল্ডিঙয়ে মানুষ বলতে আমরা চারজন। এর মধ্যে দুইজন হল আমার ছেলেমেয়ে। আর দিনের বেলা একজন রান্নাবান্না করে দিয়ে যেত। নিচতলা খালি তাই আমি তিন চারটা হুইসেল বা বাশি কিনে সব রুমে ঝুলিয়ে রেখেছিলাম। যাতে চোর টোর আসলে তাড়ানো যায়।
এক রাতে প্রায় দুইটার সময় কিছুতে ক্রমাগতঃ বাড়ি দেয়ার আওয়াজ পেলাম। বারান্দায় বের হয়ে নীচে তাকাতেই দেখলাম এক চোর খুব মনোযোগ দিয়ে আমাদের পানির মিটারের ঢাকনার তালায় ইট দিয়ে বাড়ি দিয়ে চলেছে। দরজা খোলার আওয়াজও তার কোন ব্যাঘাত ঘটাতে পারেনি। যাই হোক আপনাদের ভাবি চোর চোর বলে চিৎকার দেয় আর আমি হুইসেল বাজাই। তাতে চোর খুব আশ্চর্য হয়ে উপরে তাকালো। তার চোখে মুখে যে আশ্চর্য ফুটে উঠেছিল তাতে লেখা ছিল,"এই বাসাতে মানুষ আছে?"
যাই হোক সে দ্রুত ওয়াল টপকিয়ে পই পই করে দৌড় দিল। (এখনও মাঝে মাঝে ভাবি যে সে যদি না পালিয়ে যেত - তাহলেই বা কি করতে পারতাম?)
পরের দিন ডিসিশন হল কুকুর পুষতে হবে। প্রথমে পরিচিত একজন একটি জার্মান শেফার্ডের বাচ্চা দিয়েছিল। বয়স ৩ - ৪ মাস। বয়সে বাচ্চা হলেও পুরাই বড় দেশী কুকুরের সমান বড় ছিল সেটা। তার নাম রাখা হল পিক্সসি। কিছুদিন রাখার পর ভাবলাম জার্মান শেফার্ড বড় হলে বিশাল হয়ে যায়। তখন তাকে বেধে রাখাই কঠিন হবে। আবার অপরিচিত মানুষদের প্রতি এরা অনেক হিংস্র হয়। এইবার ডিসিশন হল জার্মান শেফার্ডকে বিদায় দিতে হবে। তার জায়গায় পাহারাদার হিসেবে দেশী কুকুর আনতে হবে। এর মাঝেই জার্মান শেফার্ডকে টিকা দেয়া হয়ে গেছে। তার বেল্ট চেন খাবার সব কিছু অনেক খোঁজাখুজি করে জোগার করতে হয়েছে।
বলে রাখা ভাল আমাদের বাসার কেউ কুকুর সহ্য করতে পারে না। এমনকি আমিও না। তাই পরিচিত ও আসে পাশের সবাইকে বলা হল জার্মান শেফার্ড কেউ নিবে কিনা?
যাই হোক একজন সেই রামপুরা থেকে রাত ১০ টার সময় আমাদের বাসায় আসলো জার্মান শেফার্ডের খবর নিতে। আমাদের তখন কুকুরের জ্বালায় ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা। কুকুরটি তেমন কোন ঝামেলা না করলেও আমাদের কুকুর ভীতি বা ঘৃণা থেকেই এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছিল। তবে লোকটির কথায় আশ্চর্য হলাম। সে আমাকে বলল," আপনি কুকুরটির দাম ১৪ হাজার চেয়েছেন। তবে যদি ১০ হাজারে দেন তাহলে আমি খুব খুশি হব।" বিনয়ে একেবারে বিগলিত হয়ে গেলেন তিনি। (আমরা একেবারে ফ্রি দেয়ার কথা ভেবেছিলাম। তাকে যে কুকুরের কথা বলেছিল সে কেন যেন টাকার কথা বলেছিল।)
আমি তাকে হিন্টস দেয়ার জন্য বেশ কয়েকবার বললাম টাকার কথা আপনাকে চিন্তা করতে হবে না। কিন্তু সেই লোকটি জার্মান শেফার্ডের মোহে এমনই বিগলিত যে আমার হিন্টস টিন্টস একেবারে আমলেই নিলেন না। টিপ টিপ বৃষ্টি পরতেছিল। রাত তখন ১১ টা বাজে। তিনি আমার কাছ থেকে ছাতা ধার করে এ টি এম বুথে রওনা দিলেন টাকা উঠিয়ে আনতে। আমিও আর ভেঙ্গে বললাম না। বিজনেসের স্টুডেন্ট না হলেও বুঝতে পারতেছিলাম একেবারে ফ্রি এর কথা বললে তিনি কুকুরের সুস্থতা নিয়ে সন্দেহ করবেন। আর হয়তো কুকুরটি নিবেন না। যাই হোক একটু পরে সেই রাতেই এসে পুরো টাকা আমাকে গুনে দিয়ে খুব খুশি মনে পিক্সসিকে নিয়ে আগালেন। পিক্সসিও আর গেটের বাইরে যাবে না। পরিশেষে তিনি সি এন জি তে পিক্সসিকে প্রায় কোলে নিয়ে রামপুরাতে রওনা দিলেন।
এইবার আরেক বিপদ। কুকুর বিক্রির টাকা আমি এখন কি করবো !!
অনেক ভেবে আলাদা রেখে দিলাম। অফিসের কলিগেরা কুকুর বিক্রির কথা শুনে ট্রিট চাইলো। সেখানে কিছু টাকা খরচ করলাম। সোর্স ওই একই টাকা। দেশী কুকুর আনার পর আবার তার টিকা বেল্ট চেন কেনা হল। তার পরও দেখি বেশ কিছু টাকা থেকে গেল। এর পর দেশী কুকুরের খাবার কিনতে থাকলাম ওই টাকা দিয়ে। দেশী কুকুরটাকে খুব ভাল খাওয়ানোর পরও বেশ কিছু দিন লেগেছিল পুরো টাকা শেষ হতে।