ঘড়ির কাটা টিক টিক করে ঘুরে চলেছে। রাত ২ টা বেজে ৫৬ মিনিট। রিন্তি (ছদ্দনাম) শুয়ে আছে তার প্রিয় বিছানাটিতে, কিন্তু তার চোখে ঘুম নেই। একটা সময় ছিল রিন্তি যখন কলেজে পড়ত প্রতিদিন তাকে মায়ের বকা শুনতে হত অতিরিক্ত ঘুমানোর জন্য। রাতে পড়তে বসলেই তার চোখে ভড় করত রাজ্যের ঘুম। এখন রিন্তি কলেজ পেড়িয়ে ভার্সিটিতে অষ্টম সেমিস্টারে পড়ছে। সকাল ৬ টা ৩০ মিনিটের প্রতিদিন এলার্মটাও আর দিতে হয় না। কারন তার অনেক আগেই তার ঘুম ভেঙ্গে যায়। ক্লাসে গেলেও সে মনোযোগ দিতে পারে না। ক্লাসে তার সারাক্ষণ ঘুম ঘুম লাগে, মাথা ব্যাথা করে। ভার্সীটিতে দ্বিতীয় সেমিস্টারে পড়ার সময় থেকেই রিন্তি এই সমস্যাগূলো অনুভব করছে। অনেকভাবে ঘুমানোর চেষ্টা করেও ব্যার্থ হয়েছে। এখন রাত হলেই রিন্তির ভঁয় করে, ঘুম না হবার ভঁয়। তাহলে কি রিন্তি ইনসোমনিয়ায় ভুগছে?
ইনসোমনিয়া কি?
ইনসোমনিয়া এমন এক ধরনের মানসিক অবস্থা যেখানে একজন ব্যক্তির মধ্যে তার ঘুমের পরিমাণ এবং গুনগত মান নিয়ে অসন্তুষ্টি দেখা দেয়। যেমনঃ সহজে ঘুম আসে না। সারারাত একটানা ঘুম হয় না অর্থাৎ বার বার ঘুম ভেঙ্গে যায় এবং আবার সহজে ঘুম আসে না। ঘুম এলেও খুব তাড়াতাড়ি জেগে উঠা। ঘুমের এই ব্যাঘাতের কারনে ব্যাক্তির পারিবারিক, সামাজিক, আচরণগত, শিক্ষাগত এবং পেশাগত জীবনে তাৎপর্যপূর্ণভাবে কাজকর্মের ক্ষেত্রে বিঘ্ন সৃষ্টি হয়।ইনসোমনিয়াকে মানসিক রোগ হিসেবে চিহ্নিত তখনই করা হবে যখন উপরোক্ত উপসর্গগুলো কমপক্ষে সপ্তাহে তিনদিন টানা তিনমাস ধরে উপস্তিত থাকবে ।
যে কারনে ইনসোমনিয়া দেখা দেয়ঃ
ইনসোমনিয়া থেকে মুক্তি পেতে হলে আগে খুজে বের করতে হবে কি কারনে আপনি ইনসোমনিয়ায় ভুগছেন। নিজেকে কিছু প্রশ্ন করুনঃ
•আপনি কি কোন মানসিক চাপ এ ভুগছেন?
•আপনার কি বিষন্ন লাগে অথবা আপনার বর্তমান জীবন নিয়ে
কি আপনি নিরাশ?
•কোন উৎকন্ঠা বা দুশ্চিন্তায় ভুগছেন?
•সম্প্রতি কি কোন ধরনের মানসিক আঘাত পেয়েছেন?
•এমন কোন ধরনের ঔষধ গ্রহণ করছেন কিনা যা আপনার
ঘুমকে প্রভাবিত করতে পারে?
•কোন ধরনের শারীরিক অসুস্থতায় ভুগছেন কিনা?
•আপনার শোবার ঘরের পরিবেশ শান্ত এবং আরামদায়ক কিনা?
•প্রতিদিন কি একই সময়ে ঘুমাতে যাওয়া এবং একই সময়ে ঘুম
থেকে উঠার চেষ্টা করেন কিনা?
•অতিরিক্ত চা বা কফি গ্রহণের প্রবণতা আছে কিনা?
এই প্রশ্নগুলোর উত্তর খুজলে আপনি ঠিক কি কারনে ইনসোমনিয়াতে ভুগছেন তা নির্নয় করতে সক্ষম হবেন। কারন ইনসোমনিয়া মূলত নানা ধরনের মানসিক চাপ, অনিয়মিত ঘুমের অভ্যাস, জীবনযাপনের দৈনন্দিন রুটিনে বিশৃংখলা, মানসিক বা শারীরিক রোগে ভোগা, অতিরিক্ত ঔষধ গ্রহণ এবং ক্যাফেইন জাতীয় পণ্য অতিরিক্ত গ্রহণের কারনে হয়ে থাকে।
ইনসোমনিয়া থেকে মুক্তি পাবার উপায়ঃ
ইনসোমনিয়া যদি মানসিক কারনে হয়ে থাকে তবে অবশ্যই সাইক্রিয়াট্রিস্ট এবং সাইকোলজিস্ট এর সরাপন্ন হতে হবে। যথাযথ কাউন্সেলিং এবং সাইকোথেরাপির মাধ্যমে ইনসোমনিয়া থেকে বের হয়ে আসা সম্ভব। এছাড়াও কিছু বিষয় মেনে চলা যেমনঃ ক্যাফেইন,অ্যালকোহল কম গ্রহণ করা, দিনের শেষে কিংবা সন্ধায় সম্পূর্ন এড়িয়ে চলা। যদি কোন ঔষধ গ্রহণ করে থাকেন তাহলে ডাক্তারের পরামর্শে গ্রহণ করা। ঘুমাতে যাবার সময়কে নির্দিষ্ট করা এবং প্রতিদিন এই একই সময়ে ঘুমাতে যাওয়া। নিয়মিত শরীরচর্চা করা। নিজের শোবার ঘরকে শান্ত, নিরিবিলি ও আরামদায়ক রাখা। যদি ঘুম না আসে তাহলে তা নিয়ে উদ্দ্বিগ্ন না হয়ে কোন একটা কাজ মনোযোগ দিয়ে করা এবং কিছুক্ষন পর আবার ঘুমাতে যাওয়া।
Bilkis Khanam
Psychologist
Daffodil International University.