গাজীপুরে অপহরণে জড়িত পুলিশের দুই কর্মকর্তা গ্রেফতারের ঘটনায় কড়া বার্তা পেলেন জেলা পুলিশের কর্মকর্তা এবং সদস্যরা। অপরাধ করলে কেউ পাড় পাবো না এমন ধারণা এখন অনেক পুলিশ সদস্যরই।
গতকাল শুক্রবার (৮ফেব্রুয়ারী) অপহরণের সাথে জড়িত দুই পুলিশ কর্মকর্তার বিষয়ে পুলিশ সুপার কার্যালয়ে সংবাদ সন্মেলনের পর থেকেই বিষয়টি আলোচিত হচ্ছে প্রশাসনসহ জেলার সর্বস্তরের মানুষের মাঝে। ঘটনার পর থেকে জেলার সর্বত্র আলোচনার মূল বিষয় ছিল অপরাধে জড়িত দুই পুলিশ কর্মকর্তার গ্রেফতারের বিষয়টি।
বিগত কয়েকবছরে জেলার সাধারণ মানুষের কাছে পুলিশের ভাবমূর্তি যেভাবে ক্ষুন্ন হয়েছে তাতে সমাজের ভাল মানুষের কাছেও পুলিশ ছিল আতংকের নাম। তবে পুলিশ সুপার শামসুন্নাহার গাজীপুরে যোগদানের পর থেকেই সে জায়গা থেকে কিছুটা স্বস্তিতে জেলার সাধারণ মানুষ। বৃস্পতিবারের ঘটনায় গাজীপুরে সাধারণ মানুষের আস্তার জায়গাটি আরো শক্ত হয়েছে বলে মনে করছেন সাধারণরা।
জেলার বিভিন্ন শ্রেনীপেশার মানুষের সাথে আলাপ কালে তারা সময়ের কণ্ঠস্বরকে জানান, পুলিশের এ দুই কর্মকর্তাকে গ্রেফতারের ফলে তাদের মাঝে একটা বিশ্বাস জন্ম নিয়েছে যে অপরাধ করলে যেখানে পুলিশ সদস্য ছাড়া পাচ্ছে না সেখানে সাধারণ অপরাধীরাতো কোন ভাবেই পাড় পাবার সুযোগ নেই। তাদের মতে এর প্রভাব পড়বে জেলার সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির ওপর। যে ধরণের পরিবেশ জেলার মানুষের কাছে এখন প্রথম দাবি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিকক্ষ সময়ের কণ্ঠস্বরকে বলেন, যেকোন পেশায় কোন কর্মকর্তা অপরাধ করলে ঊর্দ্ধতন কতৃপক্ষ যদি তা চেপে যান অথবা শাস্তি বিহীন আর্থিক সুবিধা নিয়ে ছাড় দিয়ে দেন তাহলে পরবর্তীতে তা অন্যান্য কর্মকর্তার উপর প্রভাব বিস্তার করে। এবং অপরাধে জড়িত হতে উৎসাহ যোগায়। তার মতে, পুলিশের কোন সদস্য অপরাধে জড়িত হয়ে পাড় পেয়ে গেলে তা সৎ এবং নিষ্ঠাবান অফিসারদের কাজের আগ্রহ নষ্ট করে দেয়। যা আইনশৃঙ্খলাসহ সার্বিক পরিস্থিততে প্রভাব সৃষ্টি করে। তার মতে অপরাধে জড়িত এ দুই পুলিশ কর্মকর্তাকে আইনের আওতায় নিয়ে এসে যে দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন পুলিশ সুপার শামসুন্নাহার তা জেলার পুলিশ প্রশাসনে থাকা দূর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের লাগাম টেনে ধরতে বিশেষ ভূমিকা পালন করবে বলে তার বিশ্বাস।
বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের এ শিক্ষকের মতে, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ঠিক রাখতে জেলা পুলিশের পাশাপাশী জেলা গণমাধ্যমের কর্মীদের আরো বেশ দায়িত্ব নিয়ে কাজ করা দরকার। কারণ সঠিক এবং অনুসন্ধানী সংবাদ আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এবং সমাজে গঠনে বিশেষ ভুমিকা পালন করে।
গত বছরের ২৮ অগাস্ট একই স্থানে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে পুলিশ সুপার বলেছিলেন, পুলিশের কোনো সদস্য অন্যায় করলে বা জনগণকে হয়রানি করলে বিন্দু পরিমাণ ছাড় দেওয়া হবে না। প্রয়োজনে ওই পুলিশের পোশাক খুলে নেওয়া হবে। তার হুশিয়ারী যে কোন সাধারণ বার্তা ছিল না তা প্রমাণ পেলেন জেলার প্রশাসনসহ সর্বস্তরের মানুষ।
১৬৫দিন আগে গা থেকে পোশাক খুলে নেয়ার বিষয়ে সংবাদ সন্মেলনে যে বার্তা দিয়েছিলেন পুলিশ সুপার শামসুন্নাহার তার বাস্তব প্রয়োগ লক্ষ্য করা গেল গতকালের ঘটনায়।
পুলিশ সুপার দায়িত্ব নিয়ে কাজ না করলে হয়তো অপহরণের সাথে জড়িত পুলিশের এ ঘটনাটি কোনভাবেই আলোচনায় আসতো না। হয়তো অন্যভাবে বিষয়টি নিস্পত্তি হয়ে যেত। যা হয়তো ভোরের আলো ছড়িয়ে পড়ার আগেই অন্ধকারে বন্ধী হয়ে যেত। গাজীপুরে বিগতদিনে এ ধরণের ঘটনার শিকার অনেকেই এমনটা ভাবছেন। তাদের মতে, বর্তমানে পুলিশ সুপার অপরাধে জড়িতদের বিষয়ে জিরো ট্রলারেন্স নীতি গ্রহন করেছেন তা এখন স্পষ্ট।
গতকাল সাংবাদিক সন্মেলনে শামসুন্নাহার সাংবাদিকদের উদ্দেশ্য করে বলেন, সব ঘটনা হয়তো আমার কাছে জানা না হতে পারে। আপনারা আমাকে তথ্য দিন ব্যবস্থা গ্রহণ না করতে পারলে বলবেন। মহান আল্লাহকে স্বাক্ষী মেনে তিনি অপরাধের বিষয়ে তার অবস্থান নিশ্চিত করেন।
উল্লেখ্য, বুধবার বিকেল ৫টা ২০মিনিটে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের কালিয়াকৈর উপজেলার সূত্রাপুর এলাকায় শিলা-বৃষ্টি ফিলিং স্টেশনে গাড়িতে গ্যাস নেয়ার সময় সেখানে দুটি গাড়ি নিয়ে সেখানে হাজির হন এএসআই মামুন ও মুসরাফিকুর। সেসময় ভুক্তভোগীদের অভিযুক্তরা জোড় করে তাদের গাড়িতে তুলে নেন। বিষয়টি ভোক্তভোগীদের স্বজনরা পুলিশ সুপারকে জানালে অপহরণের শিকার যুবকদের উদ্ধার এবং ঘটনায় জড়িতদের গ্রেফতারে দ্রুত কাজ শুরু করে জেলা পুলিশ। এবং তাদের উদ্ধারে সক্ষম হন। সেইসাথে অভিযুক্ত দুই এএসআই কে গ্রেফতারের পর আদালতে হাজির করা হচ্ছে।
পলাশ মল্লিক, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, সময়ের কণ্ঠস্বর