প্রাণঘাতী রোগ প্রতিরোধ করতে চান?

Author Topic: প্রাণঘাতী রোগ প্রতিরোধ করতে চান?  (Read 834 times)

Offline sisyphus

  • Sr. Member
  • ****
  • Posts: 424
  • RAM
    • View Profile
প্রাণঘাতী রোগ প্রতিরোধ করতে চাইলে বেশি করে ফাইবার বা আঁশ সমৃদ্ধ খাবার খান- এটি হচ্ছে পুষ্টি বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ। সম্প্রতি আঁশের ওপর গবেষণার একটি বড় রিভিউ ল্যানসেটে প্রকাশিত হয় এবং তা থেকে জানা যায় যে আঁশ কতটা উপকারী। এই পুষ্টিটি আসলেই অন্তত চারটি রোগের ঝুঁকি কমায়- যাদের কয়েকটির সঙ্গে অন্ত্রের সরাসরি সম্পর্ক নেই।

যারা আঁশযুক্ত খাবার কম খেয়েছিল তাদের তুলনায় যারা আঁশযুক্ত খাবার বেশি খেয়েছিল তাদের হৃদরোগ, স্ট্রোক, টাইপ ২ ডায়াবেটিস ও কোলন ক্যানসারের ঝুঁকি কমে যায় এবং তাদের যেকোনো রোগে অকালে মারা যাওয়ার সম্ভাবনা ১৫% থেকে ৩০% হ্রাস পায়। লোকজন আঁশযুক্ত খাবার যত বেশি খাবে, তাদের ঝুঁকি তত বেশি কমে যাবে। প্রতি ৮ গ্রাম অতিরিক্ত আঁশ খাওয়ার জন্য হৃদরোগ, টাইপ ২ ডায়াবেটিস ও কোলন ক্যানসারের ঝুঁকি ৫% থেকে ২৭% হ্রাস পায়।

এই রিভিউয়ের উপাত্ত অনুসারে, প্রতিদিন ফল ও শাকসবজি থেকে (সাপ্লিমেন্ট অথবা পাউডার থেকে নয়) ২৫-২৯ গ্রাম আঁশ ভোজনে এসব রোগের ঝুঁকি উল্লেখযোগ্য মাত্রায় হ্রাস পেয়েছিল এবং যারা আরো বেশি আঁশ খেয়েছিল তাদের ঝুঁকি আরো বেশি কমে যায়। যারা হোল গ্রেন (গোটা শস্য) খেয়েছিল তাদের মধ্যেও একই উপকারিতা দেখেন গবেষকরা।

নিউজিল্যান্ডে অবস্থিত ইউনিভার্সিটি অব ওটাগোর প্রধান গবেষণা লেখক অ্যান্ড্রু রেনল্ডস বলেন, ‘আমাদের গবেষণা নির্দেশ করছে যে, লোকজনের প্রতিদিন খাবার থেকে ২৫-২৯ গ্রাম আঁশ খাওয়া উচিৎ। বর্তমানে অধিকাংশ লোক প্রতিদিন ২০ গ্রামের কম আঁশ খায়। তাই উচ্চ আঁশ সমৃদ্ধ খাবার খাওয়ার জন্য সচেতনতা বাড়ালে এই টার্গেট পূরণ হতে পারে।’

২৪৩টি গবেষণা বিশ্লেষণের মাধ্যমে এই ফলাফল পাওয়া গেছে। লোকজনকে তাদের ডায়েট সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হয় এবং স্বাস্থ্য বিষয় রেকর্ড করার জন্য তাদেরকে কিছু বছর অনুসরণ করা হয়; ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালও চালানো হয়, যেখানে লোকজন গবেষণার ভলান্টিয়ার হন ও তাদের ডায়েট পরিবর্তন করেন অথবা কন্ট্রোল গ্রুপের অংশ হন। গবেষকরা বিভিন্ন কার্বোহাইড্রেটের (যেমন- ফল, শাকসবজি ও গোটা শস্যের চিনি ও আঁশ) নির্দিষ্ট প্রতিক্রিয়া সম্পর্ক জানতে চেয়েছিলেন- তাই তারা সেসব গবেষণা বিশ্লেষণ করেন যেখানে লোকজন কি খেয়েছিল এবং স্বাস্থ্য ফলাফল কি ছিল তা লিপিবদ্ধ ছিল। গবেষকরা সেসব গবেষণাও দেখেন যেখানে স্বাস্থ্য পরিমাপক ছিল, যেমন- শারীরিক ওজন, রক্তচাপ, কোলেস্টেরল, রক্ত শর্করা ও প্রদাহ।

আঁশযুক্ত খাবার খাওয়ার উপকারিতা কোনো অপ্রত্যাশিত বিষয় নয় এবং এই রিভিউটি পুষ্টি বিশেষজ্ঞদের নির্ণয় করতে সাহায্য করবে যে, সর্বোচ্চ উপকারিতা পেতে একজন লোকের দিনে কতটুকু আঁশ খাওয়া প্রয়োজন। ডায়েটারি গাইডলাইন্স ফর আমেরিকানস প্রতিদিন নারীদের ২৫ গ্রাম এবং পুরুষদের ৩৮ গ্রাম আঁশ খেতে পরামর্শ দিচ্ছে। আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশনের পরামর্শ হচ্ছে, প্রাপ্তবয়স্কদের খাদ্যতালিকায় প্রতিদিন ২৫ থেকে ৩০ গ্রাম আঁশ থাকা উচিৎ- এর সঙ্গে সাম্প্রতিক রিভিউর সামঞ্জস্য রয়েছে।

হৃদরোগসহ কিছু ক্যানসার প্রতিরোধে আঁশের উপকারিতা পূর্বের গবেষণাগুলোতে পাওয়া গেছে। আঁশ সমৃদ্ধ খাবার তৃপ্তি বৃদ্ধি করে ও দীর্ঘক্ষণ পেট ভরা রাখে- এটি স্থূলতার ঝুঁকি কমায়, যার সঙ্গে হৃদরোগ ও ক্যানসারের সংযোগ রয়েছে। আঁশ অন্ত্রের উপকারী ব্যাকটেরিয়াকেও প্ররোচিত করে, যা কোলন ক্যানসারের ঝুঁকি হ্রাস করে।

বেশি করে আঁশ খেতে আপনার ডায়েটে হোল গ্রেন বা গোটা শস্য, শাকসবজি, শিম, লেগিউম বা বিভিন্ন ধরনের ডাল এবং হোল ফ্রুট বা গোটা ফল যোগ করতে পারেন। বিভিন্ন ধরনের হোল ফুড (অপ্রক্রিয়াজাত বা অপরিশোধিত খাবার অথবা তেমন একটা প্রক্রিয়াজাত বা পরিশোধিত নয় এমন খাবার) থেকে আঁশের চাহিদা মিটানোই সর্বোত্তম।

তথ্যসূত্র : টাইম, রাইজিংবিডি
Mr. Rafi Al Mahmud
Sr. Lecturer
Department of Development Studies
Daffodil International University