পেটের ভেতরে ছিল বীজ। আর তা থেকে গজিয়েছে এক ডুমুর গাছ। ডালপালা ছড়ানো সেই ডুমুর গাছই নিখোঁজ ওই হতভাগ্যের সন্ধান দিয়েছে। ধরিয়ে দিয়েছে ৪০ বছরেরও বেশি সময় আগের এক হত্যাকাণ্ড।
১৯৭৪ সালে সাইপ্রাসে গ্রিকদের সঙ্গে তুর্কিদের লড়াই-সংঘাতের সময় খুন হয়েছিলেন আহমেত হারগিউন। কিন্তু বছরের পর বছর ধরে তার মৃতদেহ খুঁজে পাওয়া যায়নি।
ওই সময়কার সংঘাতে প্রায় দুই লাখ মানুষ গৃহহীন হয়। খোঁজ মেলেনি বহু মানুষের। আহমেতও রয়ে গিয়েছিলেন নিখোঁজের তালিকায়। শেষ পর্যন্ত পাহাড়ের গায়ে গজিয়ে ওঠা ডুমুরই তার মৃত্যুর খবর জানান দিল।
২০১১ সালে সাইপ্রাসের পাহাড়ি এলাকায় গুহার ভেতর জন্মানো ওই ডুমুর গাছটি এক গবেষকের নজরে পড়ে। আর তা দেখেই তার কৌতুহল হয়। কারণ, পাহাড়ি এলাকায় সাধারণত ডুমুর গাছ দেখা যায় না।
খোঁজ শুরু করে দেন ওই গবেষক। লোকজন ডেকে খোঁড়া শুরু করেন গাছের গোড়ার চারপাশ। খুঁড়তে খুঁড়তে একটি কঙ্কাল খুঁজে পেয়ে তিনি পুলিশকে খবর দেন। পুলিশ এসে সেখান থেকে মোট তিনটি কঙ্কাল উদ্ধার করে।
ঘটনাটি খতিয়ে দেখে গোয়েন্দারা বলছেন, আহমেতকে অন্য দুইজনের সঙ্গে ওই গুহায় নিয়ে গিয়ে ডিনামাইট ফাটিয়ে হত্যা করা হয়েছিল। মারা যাওয়ার আগে সম্ভবত ডুমুর খেয়েছিলেন আহমেত। তার পাকস্থলীতে থেকে যাওয়া ডুমুরের বীজেই গাছ হয়েছে।
ধারণা করা হচ্ছে, ডিনামাইট বিস্ফোরণের কারণে গুহার দেয়ালে গর্ত হয়। সেখান দিয়ে সূর্যালোক ও বৃষ্টির পানি গিয়ে পড়েছিল গুহার ভেতরে। সেই পানি আর আলো পেয়েই পেটের বীজ থেকে গজিয়েছে চারাগাছ।
আহমেতের বোন ৮৭ বছরের মুনুর হেরগুনার বলেন, “আমরা যে গ্রামে বাস করতাম সেখানে চার হাজারের মত মানুষ ছিল। যাদের অর্ধেক গ্রিক, অর্ধেক তুর্কি। ১৯৭৪ সালে যখন সংঘাত শুরু হয়, তখন আমার ভাই আহমেত তুর্কি রেজিস্টেন্স অর্গানাইজেশনে (টিএমটি) যোগ দেয়। ওই বছর ১০ জুন গ্রিক বাহিনী তাকে ধরে নিয়ে যায়।”
“তারপর থেকেই সে নিখোঁজ। অনেক চেষ্টার পরও তাকে খুঁজে পাইনি।” আর এভাবেও যে তার সমাধির খোঁজ মিলবে তাও ভাবেননি বলে জানান মুনুর।
ডুমুর গাছের নিচে খুঁজে পাওয়া কঙ্কালের ডিএনএ নমুনার সঙ্গে আহমেত পরিবারের ডিএনএ নমুনার মিল পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছে ‘দ্য ডেইলি মিরর’ পত্রিকা।
১৯৬৩ সাল থেকে ১৯৭৪ সাল পর্যন্ত ভূমধ্যসাগরীয় দ্বীপ সাইপ্রাসে নিখোঁজ দুই হাজারের বেশি মানুষকে খুঁজে বের করতে ‘দ্য কমিটি অন মিসিং পার্সনস ইন সাইপ্রাস’ গঠন করা হয়েছিল ১৯৮১ সালে।
১০ সদস্যের এ কমিটি গত ১২ বছরে এক হাজার ২২২টি জায়গায় খনন করে আহমেতসহ ৮৯০ জন নিখোঁজের দেহাবশেষ খুঁজে বের করেছে।
সূত্রঃ ইন্টারনেট