বালা মুসিবত মানুষের হাতের কামাই

Author Topic: বালা মুসিবত মানুষের হাতের কামাই  (Read 1144 times)

Offline ishaquemijee

  • Sr. Member
  • ****
  • Posts: 305
    • View Profile

মানুষ সৃষ্টির একমাত্র উদ্দেশ্য হলো স্রষ্টার দাসত্ব করা। জীবন পরিচালনার জন্য মানুষ যাই করুক না কেনো তা যদি আল্লাহ ও রসূলের নির্দেশিত পদ্ধতি অনুযায়ী হয় তবে তা ইবাদত বলে গণ্য হবে। ফলে পৃথিবীতে তারা সুখে শান্তিতে বাস করবে। কিন্তু মানুষ আজ আল্লাহ ও তার রাসূলের পথ মত ছেড়ে মনগড়া জীবনযাপন করছে। এমনকি আমরা যারা স্রষ্টাতে বিশ্বাস করি তারাও আজ নাফরমানিতে লিপ্ত। যার কারণে আমাদের ওপর আল্লাহর পক্ষ থেকে আপতিত হচ্ছে অসংখ্য বিপদ। আমরা দেখতে পাই, আমাদের দেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রতিনিয়ত ঘটছে নানা দুর্ঘটনা। সম্প্রতি ঢাকার ব্যস্ততম এলাকা চকবাজারে ঘটে গেল ইতিহাসের অন্যতম ভয়াবহ অগ্নিকান্ড। এরপরে বনানী, গুলশানসহ দেশের বিভিন্ন জায়গার ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটেছে। মূলত জলে স্থলে তথা সারা বিশে^ যে বিপর্যয় ছড়িয়ে পড়ছে তা মানুষের কুকর্মের কারণেই। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তাআলা বলেন,
“জলে ও স্থলে মানুষের কৃতকর্মের দরুণ বিপর্যয় ছড়িয়ে পড়েছে। আল্লাহ তাআলা তাদের কর্মের শাস্তি আস্বাদন করাতে চান, যাতে তারা ফিরে আসে।” (সুরা রূম : ৪১)
এ আয়াতের ব্যাখ্যায় তাফসীরে রূহুল মাআনীতে বলা হয়েছে, “‘বিপর্যয়’ বলে দুর্ভিক্ষ, মহামারি, অগ্নিকান্ড, পানিতে নিমজ্জিত হওয়ার ঘটনা বৃদ্ধি পাওয়া, সব কিছু থেকে বরকত উঠে যাওয়া, উপকারী বস্তুর উপকার কম হওয়া এবং ক্ষতি বেশি হওয়া ইত্যাদি বিপদাপদ বুঝানো হয়েছে।” (আল্লামা আলুসী, রূহুল মাআনী, খ.-২১, পৃ.-৬৩) আর বর্তমানে ঘটছেও তাই। সুতরাং আয়াত থেকে জানা যায়, এসব পার্থিব বিপদাপদের কারণ হচ্ছে মানুষের গোনাহ ও কুকর্ম। তন্মধ্যে শিরক ও কুফর মারাত্মক। এরপর অন্যান্য গোনাহ।
উপরোক্ত আয়াতের আলোকে নিম্নের বিষয়গুলো সম্পর্কে আমরা আলোচনা করতে প্রয়াস পাই-
১। সব গুনাহে কি শাস্তি হয়
২। সব বিপদ কি গুনাহর কারণে হয়
৩। সবার বিপদ কি গুনাহের শাস্তি
৪। শুধু গুনাহকারীকেই কি শাস্তি দেয়া হয়
৫। গুনাহের সব শাস্তি কি দুনিয়ায় দেয়া হয়
সব গুনাহের কি শাস্তি হয় :
আমাদের বিপদাপদ যদিও পাপের কারণে হয়, কিন্তু দয়াময় আল্লাহ তাআলা আমাদের সব গুনাহের পরিণামে শাস্তি দেননা। পদেপদে আমরা যেভাবে গুনাহ করছি, আল্লাহ তাআলা যদি আমাদের সব গুনাহের শাস্তি দিতেন তবে তো আমরা সুন্দরভাবে বাঁচতেই পারতাম না। আল্লাহ তাআলা আমাদের অনেক গুনাহ ক্ষমা করে দেন এবং শাস্তি বাতিল করেন। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তাআলা বলেন,
“তোমাদেরকে যেসব বিপদাপদ স্পর্শ করে, সেগুলো তোমাদেরই কৃতকর্মের কারণে। আর অনেক গুনাহ তিনি (আল্লাহ) ক্ষমা করে দেন।” (সুরা শুরা : ৩০) সুতরাং বুঝা গেল আমরা যে পরিমাণ গুনাহ করি আল্লাহ সে অনুযায়ী শাস্তি দেন না; বরং অনেক গুনাহ ক্ষমা করে দেন। আল্লাহু রহমান।
সব বিপদ কি গুনাহর কারণে হয় :
উদ্দিষ্ট আয়াত থেকে এ বিষয়টি আপত্তি হতে পারে- তাহলে কি সব বিপদ গুনাহের কারণে হয়? যদিও বিভিন্ন আয়াত দ্বারা বুঝা যায় বান্দার গুনাহের কারণেই বিপদ হয় তথাপিও আল্লাহ তাআলার ইচ্ছা বা অনুমতি ব্যতীত কিছুই হয় না। বান্দার কিছু বিপদ পূর্বে থেকেই নির্ধারিত যা আল্লাহ তাআলা বান্দার পরীক্ষার জন্য দিয়ে থাকেন। কখন, কিভাবে, কোথায় ও কী পরিমাণ শাস্তি হবে তা আগে থেকেই লিপিবদ্ধ। এরূপ বিশ্বাসের ফলে বিপদের কারণে বান্দার দুঃখবোধ হয়না। পক্ষান্তরে বিপদ থেকে মুক্তি পেলে অহংকার প্রকাশের কোনো অবকাশ থাকেনা। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তাআলা বলেন,
“পৃথিবীতে এবং তোমাদের ব্যক্তিগতভাবে যে বিপদ আসে তা আমার জগত সৃষ্টির পূর্বেই কিতাবে লিপিবদ্ধ। নিশ্চয় এটা আল্লাহর পক্ষে সহজ। আর এটা এজন্য যে, যাতে তোমরা যা হারাও তার জন্য দুঃখিত না হও এবং তিনি তোমাদের যা দেন তার জন্য উল্লসিত না হও। আর আল্লাহ তাআলা কোনো উদ্ধত অহংকারীকে পছন্দ করেন না।” (সুরা হাদীদ : ২২,২৩)
আল্লাহ তাআলা আরও বলেন,
“আল্লাহ তাআলার নির্দেশ ব্যতীত কেনো বিপদ আসেনা, আর যে আল্লাহ তাআলার প্রতি বিশ্বাস করে, তিনি তার অন্তরকে সৎপথ প্রদর্শন করেন। আর আল্লাহ তাআলা সব বিষয়ে জানেন।” (সুরা তাগাবুন : ১১)
আলোচ্য আয়াত দ্বারা এটাই প্রতীয়মান হয় যে, তাকদীরে বিশ্বাসী মুমিন যখন বিপদে পতিত হয়, তখন তার অন্তরকে আল্লাহ তাআলা এ বিষয়ে স্থির বিশ্বাস স্থাপন করে দেন যে, যা কিছু হয়েছে, আল্লাহ তাআলার অনুমতি ও ইচ্ছায় হয়েছে। যে বিপদ তাকে স্পর্শ করেছে, তা অবধারিত ছিলো। কেউ একে ফেরাতে পারত না। আর যে বিপদ থেকে সে মুক্ত রয়েছে, তা থেকে মুক্ত থাকাই তার জন্য অবধারিত ছিলো। (তাফসীরে মাআরেফুল কুরআন, সংক্ষেপিত, পৃ.-১৩৭৮)