বিশ্বকাপের পর্দা উঠছে আজ

Author Topic: বিশ্বকাপের পর্দা উঠছে আজ  (Read 1032 times)

Offline Anuz

  • Faculty
  • Hero Member
  • *
  • Posts: 1988
  • জীবনে আনন্দের সময় বড় কম, তাই সুযোগ পেলেই আনন্দ কর
    • View Profile
ক্রিকেট বিশ্বকাপকে ‘বিশ্বকাপ’ হিসেইে স্বীকার করতে চাইতেন না সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়। প্রয়াত এই সাহিত্যিক বলতেন, ১২-১৪ দলের একটা খেলা কী করে বিশ্বকাপ হয়! ভাগ্যিস সুনীল বেঁচে নেই! এবার সেই ক্রিকেট বিশ্বকাপ ছোট হয়ে ১০ দলের খেলা হয়ে গেছে। এই ঘটনা শুনলে তো ক্রিকেট বিশ্বকাপকে টুর্নামেন্ট বলেই মানতে চাইতেন না সুনীল। তবে এই ১০ দলের খেলা বলেই এবার অনন্য এক বিশ্বকাপ দেখতে চলেছি আমরা। গত কয়েক আসর ধরে বিশ্বকাপের যে অনিশ্চয়তা দেখে আমরা অভ্যস্ত হয়ে উঠেছিলাম, সেটা শেষ হতে চলল। লিগভিত্তিক এই টুর্নামেন্ট এবার সত্যিই খুজে বের করবে ‘সেরা’ দলকে। আর এ জন্যই মানতে হবে যে, এই ২০১৯ সালে ইংল্যান্ডে হতে চলেছে স্মরণকালের সবচেয়ে ব্যতিক্রমী ক্রিকেট বিশ্বকাপ।

১৯৭৫ সালে ৮টি দলকে নিয়ে শুরু হয়েছিল ওয়ানডে বিশ্বকাপ। এর মধ্যে ৬টি ছিল আইসিসির পূর্ন সদস্য এবং বাকি দুটি সহযোগী সদস্য দেশ। তখন ক্রিকেট খেলুড়ে দেশ এত কম ছিল যে, এটাই বেশ বড় আকারের টুর্নামেন্ট বলে বিবেচিত হয়েছিল। তাও কিন্তু সব দল সবার সাথে খেলেনি। ৮ দলকে দুই গ্রুপে ভাগ করে হয়েছিল আয়োজন। ১৯৭৯ সালে ঠিক একই ফরম্যাটে আয়োজিত হয় দ্বিতীয় আসর। সবার সাথে সবার দেখা হলো না। ১৯৮৩ সালের তৃতীয় আসরেও ৮টি দল দুই গ্রুপে ভাগ হয়ে খেলল। ১৯৮৭ সালের চতুর্থ আসরেও দেখা গেল একই ঘটনা। ১৯৯২ সালে এসে প্রথম বিশ্বকাপের ফরম্যাট বদলায়।

১৯৯২ বিশ্বকাপকে বলা যায় এবারের বিশ্বকাপের প্রকৃত পূর্বসুরী। সেবার বিশ্বকাপে অংশ নিয়েছিল ৯টি দল। সবার সাথে সবার খেলা হলো। এরপর সেরা চারটি দল সরাসরি খেলল সেমিফাইনাল। সেই সময়ই একটা প্রস্তাবনা ছিল যে, ক্রিকেট যেহেতু কম দেশের খেলা, এই ফরম্যাটটাই ধরে রাখা হোক। কিন্তু ১৯৯৬ সালে আবার ফরম্যাটে পরিবর্তন এলো।

ততদিনে জগমোহন ডালমিয়াদের কল্যাণে ক্রিকেটের গায়ে বিশ্বায়নের বাতাস লেগেছে। ফলে ক্রিকেটকে ছড়িয়ে দেওয়ার একটা মন্ত্র নিয়ে ১৯৯৬ সালে বিশ্বকাপের আসর বসলো দক্ষিণ এশিয়ার তিন টেস্ট খেলুড়ে দেশে। অংশগ্রহণকারী দেশের সংখ্যা এক লাফে বেড়ে হলো ১২। দুই গ্রুপে ৬টি করে দল খেললো। ফলে সবার সাথে সবার খেলার যে ধারা ১৯৯২ সালে দেখা গিয়েছিল, সেখান থেকে আবার সরে এলো বিশ্বকাপ। ১৯৯৬ ও ১৯৯৯ সালে ১২ দলকে নিয়ে দুই গ্রুপের খেলা হলো। এরপর ২০০৩ সালের বিশ্বকাপে দল বাড়লো আরেও দুটো। ১৪ দল এবার দুই গ্রুপে বিভক্ত হয়ে খেললো।

২০০৭ সালে একেবারে আনকোরা, মোড়কভাঙা এক পদ্ধতির বিশ্বকাপ দেখলো ক্রিকেটবিশ্ব। ১৬ দলের টুর্নামেন্ট অনুষ্ঠিত হলো ওয়েস্ট ইন্ডিজে। এবার ৪টি গ্রুপে অনুষ্ঠিত হলো খেলা। প্রত্যেক গ্রুপের সেরা দুই দল গেল পরের রাউন্ডে; নাম দেওয়া হলো-সুপার এইট। এই ‘সুপার এইট’-এর সব দল সবার সাথে খেললো। এখান থেকে সেরা ৪ দল গেল সেমিফাইনালে। সেটা ছিল ক্রিকেট ইতিহাসের সবচেয়ে বড় বিশ্বকাপ। বিশ্বায়নের পর্বে যারা ছিলেন, তারা বললেন, এটাই বিশ্বকাপের সেরা মডেল। কিন্তু এই মডেল থেকে সরে এলো আইসিসি।

২০১১ সালে আবারও সেই ২০০৩ সালের ফরম্যাটে ফিরে গেল উপমহাদেশের বিশ্বকাপ। ১৪ দল দুই গ্রুপে অংশ নিলো। তবে এবার বাড়তি হিসেবে যোগ হলো কোয়ার্টার ফাইনাল। ২০১৫ সালে, মানে সর্বশেষ আসরটিতেও হলো এই একই ধরনের বিশ্বকাপ। কিন্তু ২০১৯ সালের জন্য আইসিসি হঠাৎ করে দলসংখ্যা কমিয়ে একেবারে নব্বই দশকের শুরুতে চলে গেল। আর ফরম্যাটও করা হলো রবিন লিগ পদ্ধতির।

এখন ক্রিকেট বিশ্ব এই বিশ্বকাপ নিয়ে দুই ভাগে বিভক্ত। এক দল মনে করেন, ক্রিকেটের মতো স্বল্প বিস্তৃত খেলার জন্য এটাই আদর্শ ফরম্যাট। কারণ, এখানে সবার সাথে সবার খেলা বলে অঘটন ঘটার সম্ভাবনা কম। ফলে সত্যিকারের সেরা চারটি দলই সেমিফাইনালে যাবে।

আবার ক্রিকেট ছড়িয়ে দেওয়ার পক্ষে যারা কথা বলেন, তারা বলেন, ক্রিকেটের সৌন্দর্যটাই এই ফরম্যাটের কারণে নষ্ট হয়ে গেছে। অঘটন ঘটার সম্ভাবনা শেষ করে দেওয়াতে একটা আয়ারল্যান্ড বা জিম্বাবুয়ের উত্থান দেখা কঠিন হয়ে গেছে বিশ্বকাপে। ২০০৭ বা ২০১১ বিশ্বকাপে আয়ারল্যান্ড যেভাবে বিশ্বকে চমকে দিয়েছিল পাকিস্তান বা ইংল্যান্ডকে হারিয়ে, সেটা এবার আর দেখা যাবে না। শুধু আয়ারল্যান্ড কেন, জিম্বাবুয়ের মতো ক্রিকেটের পুরোনো দলও এবার রয়ে গেল বিশ্বকাপের বাইরে।

শচীন টেন্ডুলকার থেকে শুরু করে বিভিন্ন সাবেক-বর্তমান ক্রিকেটার তাই এই ফরম্যাটের সমালোচনা করেছেন। তবে সমালোচনা থাক আর প্রশংসা থাক; এটা মানতেই হবে যে, এই বিশ্বকাপ অন্য যে কোনো আসরের চেয়ে আলাদা হতে চলেছে। সেটা শুধু ফরম্যাটের জন্য, তা নয়। আরেও কিছু বিচারের জায়গা আছে। এবার বিশ্বকাপ ইংল্যান্ডে অন্যরকম রান উত্সবের একটা বিশ্বকাপ হওয়ার কথা।

ইংল্যান্ডে এই নিয়ে পঞ্চমবারের মতো বিশ্বকাপ হচ্ছে। প্রথম তিন বার বিশ্বকাপ আয়োজন করেছিল ইংলিশরা। তখন ইংল্যান্ড থেকে বিশ্বকাপকে বের করার জন্য এশিয়াভিত্তিক একটা রাজনৈতিক সক্রিয়তাও হয়েছিল, যার অংশ হিসেবেই জন্ম নিয়েছিল এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিল। এরপর আবর্তন নীতিতে বিশ্বকাপ আয়োজিত হতে থাকে। সেই নীতিতে ১৯৯৯ সালে আবারও বিশ্বকাপ হয়েছিল যুক্তরাজ্যে। কিন্তু এই ক্রিকেটের ‘মাতৃভূমিতে’ কখনোই বিশ্বকাপ ঠিক রান উত্সবের আসর হয়ে ওঠেনি। এবার সেটা হওয়ার খুব সম্ভাবনা আছে।

ইতিমধ্যে বিশ্বকাপের আগে যুক্তরাজ্যে যেসব ওয়ানডে ম্যাচ অনুষ্ঠিত হচ্ছে, সেখানে পাকিস্তান, ইংল্যান্ড, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, আয়ারল্যান্ড, বাংলাদেশ রান উত্সব করছে। ফলে বিশ্বকাপেও যে সেটা হবে, তাতে খুব একটা সন্দেহ নেই। ইংল্যান্ড বলতে এক সময় মনে করা হতো বোলারদের খেলা। বিশেষ করে গ্রীষ্মের এই সময়ে সেখানে বল নড়াচড়া করবে, দারুণ সুইং থাকবে; এগুলোই সত্যি ছিল। কিন্তু ইংল্যান্ডে টি-টোয়েন্টি আসার পর থেকে সেখানে উইকেটের সেই মজাটা চলে গেছে। এখন ইংল্যান্ডে টেস্টেও ব্যাটসম্যানদের খেলা হয়। ফলে ওয়ানডে এখন সেখানে রীতিমতো বোলারদের বধ্যভূমি।

বিশ্বকাপে ৩০০ রানটাই বিরাট ব্যাপার। কিন্তু এবার বিশ্বকাপে সাড়ে তিনশো নিয়মিত স্কোর হয়ে উঠলেও তাই অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। তবে মজাটা হলো, সবটাই তো আর কিউরেটরের হাতে নেই। কিছুটা প্রকৃতির হাতেও আছে। এই সময়ে মাঝে মাঝেই ইংল্যান্ডের আকাশ ভারী হয়ে উঠবে। মেঘে ঢাকা আকাশে যতই বোলারদের বিরোধী উইকেট হোক, কিছুটা সুইং তো দেখা যাবেই। তাই ব্যাটসম্যানদের পরীক্ষার জন্যই অপেক্ষা করা যাক। অপেক্ষা করা যাক সত্যিই অনন্য এক বিশ্বকাপের জন্য।
Anuz Kumar Chakrabarty
Assistant Professor
Department of General Educational Development
Faculty of Science and Information Technology
Daffodil International University

Offline tasnim.eee

  • Hero Member
  • *****
  • Posts: 506
  • Test
    • View Profile
 :) :)