গত শতকের পঞ্চাশের দশকের শুরুর দিকে আমেরিকায় কম্পিউটারের ব্যবহার শুর হয়। বিভিন্ন জটিল গবেষণায় কম্পিউটার ব্যবহার করতো নাসাও। কিন্তু নাসা তখন কম্পিউটারের গণনার ওপর যতোটা ভরসা করতো তার চেয়ে বেশি নির্ভর করতো মানুষের হাতের গণনার ওপর।
মহাকাশ অভিযানের এমনই এক জটিল গবেষণা ও গণনার কাজ তখন কাগজে-কলমে করেছিলেন ক্যাথরিন জনসন, ডরোথি ভন এবং মেরি জ্যাকসন নামের তিন কৃষ্ণাঙ্গ নারী। আর তাদের সেই অঙ্কের ফলাফলের ওপর ভরসা করেই মহাকাশে পাড়ি জমিয়েছিলেন মার্কিন মহাকাশচারী অ্যালন শেফার্ড। ক্যাথরিন জনসন ছিলেন এই গণনার মুখ্য ভূমিকায়। টানা দেড় দিন জটিল অঙ্ক করে ক্যাথরিন বলেছিলেন, পৃথিবীর গতিপথ নিয়ে কম্পিউটার যে তথ্য দিয়েছে তা নির্ভুল। মূলত তার কথার ওপর নির্ভর করেই ১৯৬২ সালে পৃথিবীর কক্ষপথে অভিযান করতে সম্মত হয়েছিলেন অ্যালন শেফার্ড।
ক্যাথরিন জনসন, ডরোথি ভন এবং মেরি জ্যাকসন জানতেন, একটা ভুল সংখ্যা মানে বিপুল বিপর্যয়। তাই কার্যত দিন-রাত এক করে বছরের পর বছর অজস্র জটিল অঙ্ক কষে গবেষণা থেকে শুরু করে পুরো একটা মহাকাশ অভিযানকে সাফল্যের পথ দেখিয়ে ছিলেন তারা।
অ্যাপোলো-১১ চাঁদে অবতরণের ৫০ বছর পরে সেই তিন মহিয়ষী নারীকে স্মরণ করছে নাসা। ২০১৬ সাল পর্যন্ত এই তিন নারী ছিলেন লোকচক্ষুর আড়ালে। যাদের নিয়ে আগে কখনও হইচই হয়নি। ২০১৬ সালে এই তিন জনের জীবনের ওপরে তৈরি হয় হলিউডের ছবি ‘হিড্?ন ফিগারস’। তার পরেই গোটা দুনিয়ার সামনে আসে এই তিন ‘মানব কম্পিউটার’-এর কৃতিত্ব। এরপরই সেই তিন কৃষ্ণাঙ্গকে সম্মান জানাল নাসা। তাদের সম্মানে সম্প্রতি ওয়াশিংটনে নাসার সদর দফতরের সামনের একটি রাস্তার নাম দেওয়া হয়েছে ‘হিড্?ন ফিগারস ওয়ে’। মারগট লি শেটারলি নামে অন্য এক কৃষ্ণাঙ্গ নারী ২০১৬ সালে ‘হিড্?ন ফিগারস’ নামে বইটি লেখেন।