হাসপাতালের এইচ ডি ইউ। হাই ডিপেন্ডেন্সি ইউনিট।
এখানে সবাই অনেক সিরিয়াস অবস্থার রুগী। প্রায় সবাই অচেতন অবস্থায় বেডে শুয়ে আছে। কেউ লাইফ সাপোর্টে। কারো মুখে অক্সিজেন মাস্ক লাগানো। পুরো এইচ ডি ইউয়ে ২৪ ঘন্টা একই রকম আলো ও তাপমাত্রা। দিন রাত্রির কোন পার্থক্য করা যায় না। না জানলে যে কেউ আশ্চর্য হয়ে ভাববে কিছু মানুষ যেন ঘুমিয়ে আছে অনন্তকাল কি এক মোহনিয় পরিবেশে। যেন তাদেরকে ডাক দিলেই এক এক জন জেগে উঠবে - চোখ কচলিয়ে ঘুম থেকে উঠে কথা বলে উঠবে। মেশিনের টিক টিক শব্দের সাথে নিশ্বাস নেয়ার ফোঁস ফোঁস শব্দ শোনা যায়। মনে হয় কিছু একটার জন্য সময় গননা চলতেছে।
এইচ ডি ইউ এর ভর্তি রুগীদের সাথে তাদের আত্মীয় স্বজনরা ভিতরে গিয়ে সকাল ১১ টা থেকে ১২ টা পর্যন্ত তাদের স্বজনকে দেখতে পারে।
সকাল ১০ঃ৫৫। এইচ ডি ইউয়ের গেটে ২০ - ২৫ জন আত্মীয়ের ভীর। তারা ব্যস্ত তাদের মুখে মাস্ক মাথায় টুপি পায়ের কভার আর আপ্রন পড়ার কাজে। শুধু ১১ঃ০০ টা বাজার অপেক্ষা। খুব দ্রুত তারা হাত দিয়ে আপ্রন মাস্ক পড়ে চলে। এই এক ঘন্টার প্রতি মুহূর্ত অতি মূল্যবান।
১১ঃ০০ টা বাজার সাথে সাথে সবাই প্রায় ছুটে চলে এইচ ডি ইউ এর ভিতরে। ছোটবেলায় স্কুল ছুটি হলে যে চিত্র ফুটে উঠে তার সাথে এর কিছুটা মিল আছে। এইচ ডি ইউ এ সব কিছুর হিসেব ভিন্ন। এখানে স্বজনের নিঃশ্বাস চলতেছে এইটা দেখাও যেন বহু মুল্যবান একটি উপহার। এখানে নাই কোন হিংসা শত্রুতার হিসেব। নাই কোন প্রথম হওয়ার বা লাভ ক্ষতির হিসেব। এখানে শুধুই হার্টবিট আর নিঃশ্বাস চলার হিসেব। প্রিয় জনের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকা। প্রতিদিনই তো কাছে থেকে দেখা হত। কিন্তু এখন সেই একই মানুষের মুখে কথা না থাকলেও অনেক মমতা উথলে উঠে। দুপুর ১২ঃ০০ টা বাজে। মনে হয় কত দ্রুত চলে গেল সময়টুকু। মেডিক্যাল এসিস্টেন্টদের বার বার অনুরোধ সত্ত্বেও কিছু সময় নেয়া। যতক্ষণ কাছে থাকা যায় প্রিয়জনের। বের হতে হতে বার বার পিছনে প্রিয়জনের দিকে ফিরে তাকানো। বের হওয়ার সময় গেটে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকা।
রাত ১২ঃ০০ টা। এইচ ডি ইউয়ের গেট বন্ধ। বাইরে লম্বা বারান্দা। পুরো জায়গা সুনসান জনমানবহীন। কিন্তু জানি এখানে মন পড়ে আছে স্বজনদের। ঝড়ো বাতাস উঠে চলেছে। কিছুক্ষণ পরে ঝড় উঠবে। স্বজনের তাতে কোন ভ্রূক্ষেপ নাই। লম্বা বারান্দায় আনমনে হেটে চলে অক্লান্ত। বারান্দার বাইরে বড়বড় গাছের ডাল পালা ঝড়ে দুলে চলে। মনে পড়ে সেই শ্বাসের শব্দ। কিছুটা রহস্যময় মনে হয়। যেন ঝড় জানে অনেক কিছু। সেই অচেতন রুগীর কথা তার স্বজনের মনের কথা।