পৃথিবীতে আগুনের সূচনা কখন কি ভাবে হয়ে ছিল বলা মুশকিল ! তবে ইতিহাস থেকে জানা যায়, প্রস্তর যুগের মানুষেরা-ই সর্ব প্রথম পাথরে পাথরে ঘর্ষণে আগুন প্রজ্জলন করে ছিলেন। সেই থেকে আগুনের নানাবিদ ব্যবহার মানুষকে, আধুনিক যুগে পৌছে দিতে যুগযুগান্তকারী ভূমিকা রেখে চলেছে।
জানা যায়, পৃথিবীর সর্বাপেক্ষ প্রাচীন নগরি গ্রিকে সর্ব প্রথম আগুন প্রজ্জলন শুরু হয়েছিল। বিশ্ব সভ্যতার ইতিহাসে উল্লেখ , গ্রীক দেবতা ইয়াপেতুন ও ওশেনিড ক্লাইথেনের সন্তান ‘দেবতা প্রমিথিউস’ মানুষকে প্রাণী জগতের শ্রেষ্ঠ ঘোষণা করেন।
তিনি মানুষের উপকারে স্বর্গে গিয়ে মৃত্যূর কাছ থেকে আগুণের মশাল এনে মানুষকে ‘আগুন’ উপহার দেন। কিন্তু অপর দেবতা ‘জিউস’ এতে মনো- ক্ষুন্ন হন। তিনি ‘দেবতা প্রমিথিউস’কে শৃংখলে আবদ্ধ করে সারা গ্রীকে আগুন লাগিয়ে দেন। তৎপর ঈগলের রুপ ধারন করে পাহাড়ের পাদদেশে শৃংখলিত প্রমিথিউসের কলিজা ভক্ষণ করতে থাকেন। এহেন, নৈরাজ্যে ‘গ্রীক মহাবীর হারকিউলিস’ মহাবিক্রমে জিউসের হাত থেকে প্রমিথিউস কে উদ্ধার করে দেবতার আসনে অলংকৃত করেন।
প্রসিদ্ধ, সর্ব প্রথম দেবতা প্রমিথিউস ও জিউসের পরস্পর দ্বন্দে পৃথিবীতে প্রথম ভয়াবহ অগ্নি-কান্ডের সূচণা হয়েছিল। যার ধ্বংশ যজ্ঞে লক্ষ বছরের কালের স্বাক্ষী গ্রীক নগরির এথেনস্।
যা ফলে, যুগ পরিক্রমায়- শাসক শ্রেণী অহেতুক অগ্নিকান্ডের হাত হতে রক্ষা পেতে গড়ে তুলতে থাকেন ‘অগ্নি-নির্বাপক ব্যবস্থা’। অনুমান করা যায় আজ থেকে এক লক্ষ বছর আগে পৃথিবীতে অহেতুক অগ্নিকান্ডের সূচনা হয়েছিল।
এ কথা যদিও সত্য যে, আধুনিক যুগে আগুনের বহুবিদ ব্যবহার মানব সমাজ কে সভ্যতার স্বর্ণ-শিখরে আরোহন করতে সাহায্য করেছে । সেই সাথে এর ব্যবহারিক অসর্তকতা ও অপ-প্রয়োগও মানুষকে দিন দিন আরো বেশী ভাবিয়ে তুলেছে।
পরিসংখ্যানে উল্লেখ, আধুনিক কল্যাণ মূলক রাষ্ট্রসমুহে ৭০% ধ্বংশ যজ্ঞ অগ্নিকান্ডে ও ভূমিকম্পের দ্বারাই সংগঠিত হচ্ছে। তাই, বৈশ্ববিক প্রতিরক্ষায় অগ্নিকান্ডে ও ভূমিকম্পের ভয়াবহতা এখন নতুন চ্যালেন্স।
ইতিমধ্যে এই চ্যালেন্স মোকাবেলায় উন্নত বিশ্বের রাষ্ট্রগুলো গড়ে তুলেছে সর্বাধুনিক অগ্নি-নির্বাপক ব্যবস্থা। এই ক্ষেত্রে পিছিয়ে পরছে অনুন্নত রাষ্ট্র গুলো। পর্যাপ্ত সুযোগ সুবিধার অভাব ও অত্যাধিক ঘন-বসতির কারণে সমগ্র পৃথিবীর সিংহভাগ অগ্নিকান্ড সংগঠিত হচ্ছে এই সকল অনুন্নত দেশগুলোতে। এই ক্ষেত্রে বাংলাদেশ অগ্র-গন্য।
বহুল আরোচিত এই অগ্নিকান্ড ও ভুমিকম্পের কারণ ও করনীয় সম্পর্কে গত ১৭ ও ১৮ই জুন ২০১৯ ইং (‘দুই দিনব্যাপী) ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটিতে হলে গেল এক বিশেষ প্রশিক্ষণ কর্মশালা। বাংলাদেশ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স কর্তৃক আয়োজিত এই কর্মশালায় অত্র বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় হাজারেরও অধিক শিক্ষক, কর্মকর্তা -কর্মচারী অংশ গ্রহণ করেন।
বাংলাদেশ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের দুই-দুইজন, সুদক্ষ প্রশিক্ষক বিভিন্ন আঙ্গিকে অগ্নিকান্ড ও ভুমিকম্পের কারণ ও করনীয় সম্পর্কে বিস্তার ব্যাখা প্রদান করেন।
শুরুতেই প্রশিক্ষক রাসেল শিকদার বলেন, বাংলাদেশের সবচেয়ে স্পর্শকাতর ও ঝুঁকিপুর্ণ দিকগুলোর মধ্যে ‘ভূমিকম্পও অগ্নিকান্ড, এক বিশেষ আতংক। প্রতি বছর ‘ভূমিকম্প ও অগ্নিকান্ডে এদেশের অগনিত মানুষ ও প্রাণীকুলের প্রাণহানী, ব্যক্তিক কিংবা রাষ্ট্রীয় বিপুল পরিমান সম্পদের ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতি হচ্ছে।
প্রতিনিয়তই প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে শুরু করে প্রধান প্রধান শহর গুলোতে ‘ভূমিকম্প ও অগ্নি-কান্ডের সংখ্যা ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে যা সত্যিকারেই ভাবনার বিষয়।
জরিপে উল্লেখ, বর্তমানে দক্ষিণ এশিয়দেশ গুলোর মধ্যে বাংলাদেশই সবচেয়ে বেশী ভুমিকম্প প্রবণ ও অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে চলেছে। অথচ আমরা যদি এ ব্যাপারে একটু সতর্কতা অবলম্বন করি, তবে ভূমিকম্পের ব্যাপক ধ্বংশ যজ্ঞ হতে সহজেই রক্ষা পেতে পারি।
এ ব্যাপরে তিনি ভুমিকম্পের সময় করনীয়, অবস্থান এবং ভূমিকম্প-পরবর্তী তে করনীয় সম্পর্কে বিস্তার ব্যাখা প্রদান করেন। সেই সাথে ধ্বংশ যজ্ঞ ও আহত লোকদের প্রাথমিক চিকিৎসার বিভিন্ন পদ্ধতির কথা উল্লেখ করেন।
বাংলাদেশ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের মিস্টিভাষী অপর প্রশিক্ষক জনাব মোঃ আনোয়ারুল ইসলাম দুলন বলেন, আমাদের অ-সচেতনতা এবং অজ্ঞতার কারণেই প্রতিবছর বাংলাদেশে ‘অগ্নিকান্ড ও হাজার হাজার মানুষ প্রাণ হারাচ্ছে। ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে ব্যাক্তি কিংবা রাষ্ট্রের মূল্যবান সম্পদ। অথচ আমরা এবিষয়ে একটু সচেতন হলেই এই অনাকাঙ্থিত ধ্বংশ যজ্ঞ ও প্রানহানী থেকে অতি সহজেই রক্ষা পেতে পারি।
তিনি, এব্যাপারে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের উদাহারণ টেনে বলেন, সর্বাধিক সচেতনতা ও বিপকালীন সময়ে করনীয় সম্পর্কে ‘বাংলাদেশ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স’ তাদের সাধ্য মত সারাদেশের মানুষদের ‘ভূমি-কম্প ও অগ্নিকান্ডের কারণ ও করনীয় সম্পর্কে বিভিন্ন সেমিনা ও বাস্তব ভিত্তিক ট্রেনিং দিয়ে আসছে যার ধারা বাহিকতায় আজকের এই অনুষ্ঠান।
তিনি বলেন, স্বল্পজায়গায় অধিক বসতিও বিশেষ করে, যথাযথ কর্তৃপক্ষের নির্দেশিত বিল্ডংকোড না মেনে যত্র-তত্র বহুতল ভবন নির্মিত হচ্ছে।এই সকল ভবন নির্মানে নেই কোন মান-সম্মত কর্ম-পরিকল্পনাও জরুরী র্নিগমন পথ।ফলে অনাকাংঙ্খিত বিপদে মানুষ এই সকল ভবনগুলোতে আটকা পড়ে অকাত রে প্রাণ হারাচ্ছে।
এব্যাপারে তিনি সাভারের ঘটে যাওয়া ‘রানা প্লাজার’ ব্যাপক প্রাণহানী ও ধ্বংসাত্বক ইতিহাস টেনে ভবন মালিকদের সরকার কর্তৃক নিদের্শী নিয়ম মেনে ভবন নির্মানের উপর গুরুত্ব আরোপ করেন। তদুপরি, তিনি অনাকা-ঙ্খীত অগ্নিকান্ডে- অগ্নি নির্বাপনে -কুলিং, স্মাদারিং, ষ্টার ভেশন ও পয়জনিং পদ্ধতির কথা উল্লেখ করে (প্রাথমিক, ডেভলপমেন্ট ও ফুল্লি-ডেভলপমেন্ট) স্তরভেদে কি করনীয় তার বিস্তার ব্যাখ্যা প্রদান করেন।
তিনি বলেন, সাধারনত পরিবহন, পরিচলন ও বিকিরণ পদ্ধতিতে আগুণের বিস্তার ঘটে। প্রকার অনুয়ায়ী-এ (কঠিন), বি (তরল), সি (গ্যাসীয়) ও ডি (পাউডার) পদ্ধতি ব্যবহার করে অগ্নি-নির্বাপন সম্ভব। মূলতঃ কোন প্রকার আগুন নিভাতে কি পদ্ধতিতে বহার করতে হবে তা তাৎক্ষণিক ভাবে ভুক্ত-ভোগিকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
অগ্নিকান্ডের সময় অস্থিরতা না দেখিয়ে সময় মত বাংলাদেশ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সেকে অবহিত করতে হবে। সব সময় ০২-৯৫৫৫৫৫৫ বিশেষ প্রয়োজনে জরুরী তথ্য সেবা ৯৯৯ ফোন করে দ্রুত অগ্নিকান্ড সংগঠিত হওয়া জায়গার নাম, প্রয়োজনীয় ফোন নম্বর সংযোজন করতে হবে।
তিনি আরো বলেন, দেশের যে কোন বিপদে জন সচেতনাই বিপদ থেকে উত্তরণের একমাত্র উপায়। ভূমিকম্প কিংবা অগ্নিকান্ড চিরতরে সমাধান না করা গেলেও জন সচেতন তার মাধ্যমে আমরা এই বিপদ থেকে বহুলাংশেই রক্ষা পেতে পারি।
এই ব্যাপারে তিনি উপস্থিত সকলকে নিজ নিজ প্রশিক্ষণকে কাজে লাগিয়ে আরো বেশী সচেতন ও সংবেদনশীল হওয়ার আহব্বান জানান।
# মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম/বাংলাটপনিউজ২৪.কম #
https://banglatopnews24.com/2019/06/18/%E0%A6%AD%E0%A7%82%E0%A6%AE%E0%A6%BF%E0%A6%95%E0%A6%AE%E0%A7%8D%E0%A6%AA-%E0%A6%93-%E0%A6%85%E0%A6%97%E0%A7%8D%E0%A6%A8%E0%A6%BF%E0%A6%95%E0%A6%BE%E0%A6%A8%E0%A7%8D%E0%A6%A1%E0%A7%87%E0%A6%B0/