রূপচর্চার বাগান

Author Topic: রূপচর্চার বাগান  (Read 1627 times)

Offline smsirajul

  • Jr. Member
  • **
  • Posts: 55
  • Test
    • View Profile
রূপচর্চার বাগান
« on: June 20, 2019, 07:40:49 PM »
রূপচর্চায় গাছগাছড়ার ব্যবহার আজকের নয়। সিন্ধু সভ্যতার সময় থেকেই এই ধরনের রূপচর্চার কথা শোনা যায়। পরবর্তী কালে বিভিন্ন গাছগাছড়া ও ফুলের রস থেকেই প্রসাধনী তৈরি শুরু হয়। বাজার থেকে কিনে আনা প্রসাধনীর উপরে ভরসা না করে যদি বাড়িতেই বানিয়ে নেওয়া যায় রূপচর্চার বাগান, তবে কেমন হয়? দেখা যাক, কী ধরনের গাছ রাখতে পারেন সে বাগানে।

তুলনা নেই তুলসীর
তুলসীর মঞ্জরি থেকেই নতুন গাছ তৈরি হয়। ফলে একটা তুলসী গাছ বাড়িতে থাকলে তার থেকেই একাধিক গাছ তৈরি হয়ে যায়। তুলসীর পাতা বাটা ত্বক ও চুল দুইয়ের পক্ষেই ভাল। ত্বকে কোনও ব্যাকটিরিয়া বাসা বাঁধতে দেয় না। আর স্ক্যাল্পে লাগালে খুসকিও হয় না।
চুলের যত্নে ভৃঙ্গরাজও ভাল কাজ দেয়। বিশেষ করে আমলকী, হরিতকী ও বহেড়ার সঙ্গে ভৃঙ্গরাজ মিশিয়ে তেলে ফুটিয়ে নিতে হবে। তার পরে শ্যাম্পু করার আগের রাতে পুরো চুলে ভাল করে মেখে রাখলে খুসকি, চুলে পাক ধরা, চুল পড়ে যাওয়ার মতো অনেক সমস্যার মোকাবিলা করে। ভৃঙ্গরাজ গাছ পেতে আয়ুর্বেদের দোকানে খোঁজ করতে পারেন। আমলকী, হরিতকী গাছের জন্য অনেকটা জমির প্রয়োজন। তাই জায়গার অভাবে এগুলো কিনে নেওয়াই ভাল।

গোলাপেরই বাগে
অনেকের বাগানেই এই গাছটি থাকে। ত্বকের যত্নে এর ব্যবহার বিবিধ। গোলাপের পাপড়ি ফুটিয়ে গোলাপজল তৈরি করে রাখতে পারেন। প্রত্যেক দিন স্নানের জলে এই গোলাপজল মিশিয়ে নিলে সারা দিনের ক্লান্তি কাটবে। অন্য দিকে গোলাপ জলকে টোনার হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন মুখে। আবার যাঁদের ঠোঁট কালো হয়ে যাওয়ার মতো সমস্যা রয়েছে, তাঁরা গোলাপের পাপড়ি বেটে, মধু সহযোগে ঠোঁটে লাগিয়ে রাখতে পারেন। এতে ঠোঁটের রং হালকা হয়ে আসবে।

অ্যালো ভেরার আলোয়
বহু বছর ধরে ত্বকের যৌবন ধরে রাখতে অ্যালো জেল ব্যবহার করা হয়ে আসছে। অ্যালো ভেরার জেলে ভিটামিন এ, সি এবং ই থাকে। ফলে ত্বককে ময়শ্চারাইজ় করে ত্বকের বলিরেখা দূর করতে এর বিকল্প কমই। এ ছাড়া ত্বকের পোড়া-কাটা দাগ মেলাতেও অ্যালো ভেরা খুব কাজে লাগে। অ্যালো ভেরা টবে পুঁতলে বেশ তাড়াতাড়ি বাড়ে। তবে তার জন্য প্রয়োজন একটু উষ্ণ আবহাওয়া। বাড়ির যে দিকে রোজ রোদ আসে, সে দিকেই অ্যালো ভেরা গাছ রাখতে পারেন। এতে গাছ বাড়েও তাড়াতাড়ি, পাতা বেশ পুরুষ্টও হয়। ফলে জেলের পরিমাণও বাড়ে।

যৌবন ধরে রাখতে জবা
ত্বকের ইলাস্টিসিটি ধরে রাখতে জবার জবাব নেই। যার জন্য এই গাছ বোটক্স গাছ নামেও পরিচিত। অন্য দিকে অ্যান্টি-অক্সিড্যান্টে ভরপুর থাকায় জবা ফুল দূষণের মোকাবিলা করতেও ত্বককে সাহস জোগায়। ফলে সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি বা রাস্তাঘাটে ধুলো-ধোঁয়ায় ত্বক খুব একটা ক্ষতিগ্রস্ত হয় না। জবা ফুল চুলের জন্যও খুব ভাল। নারকেল তেলের সঙ্গে জবা ফুল ফুটিয়ে রোজ সেই তেল চুলে ও স্ক্যাল্পে লাগালে চুল ঘন হয়। জবা গাছের যত্ন নেওয়াও খুব কঠিন নয়।

ল্যাভেন্ডারে লালিত্য
এই গাছ করাও খুব কঠিন নয়। তবে রোদ ও জল জরুরি। ল্যাভেন্ডার গাছে ফুল আসতেও সময় লাগে। তবে ফুল এলে ভরে যায়। ল্যাভেন্ডারের পাপড়িগুলো একটা বাটিতে নিন। তার পরে একটি পাত্রে গরম জল ঢেলে এই পাপড়িগুলো তার মধ্যে ভিজিয়ে রাখুন। ঘণ্টাখানেক পরে পাপড়ি ছেঁকে জলটা নিয়ে তার মধ্যে ওটমিল পাউডার মিশিয়ে প্যাক তৈরি করুন। এই ফেসপ্যাক মুখে লাগিয়ে অপেক্ষা করুন। শুকিয়ে গেলে ঠান্ডা জলে ধুয়ে নিন। এতে ত্বকের রং অনেক পরিষ্কার হবে। একইসঙ্গে ত্বক সতেজ থাকবে।

সৌন্দর্যে সূর্যমুখী
এই ফুলকে ন্যাচারাল সানস্ক্রিন বলা যেতে পারে। সূর্যমুখী ফুলে ভিটামিন ই থাকে প্রচুর পরিমাণে, যা ত্বকের দাগছোপ, বলিরেখা দূর করে। চুলের ডগা ফাটার মতো সমস্যারও মোকাবিলা করে। রূপচর্চায় উপকারী ভিটামিনের মধ্যে ই ভিটামিনের গুরুত্ব অপরিসীম। আর এই ভিটামিন বেশি থাকায় সূর্যমুখী ফুলও ব্যবহার করতে পারেন রূপচর্চায়। সূর্যমুখী বীজের তেলও রূপচর্চায় বহুল ব্যবহৃত। তবে এই ফুলের বাগান করতে অনেকটা জায়গার প্রয়োজন।

জুঁইয়ের জাদুতে
এর জন্য অবশ্য খুব বেশি জায়গার প্রয়োজন নেই। ছোট টবেই জুঁইগাছ বাড়তে পারে। খুব বেশি যত্নেরও প্রয়োজন পড়ে না। কিন্তু সৌন্দর্যচর্চায় জুঁইয়ের গুরুত্ব অপরিসীম। জুঁই ফুলের নির্যাস, মধুর সঙ্গে মুখে লাগিয়ে রাখতে পারেন। ত্বকের ময়শ্চার বজায় থাকবে। এ ছাড়া চুলের কন্ডিশনার হিসেবে, স্ক্যাল্প পরিষ্কার রাখতেও জুঁইয়ের ভূমিকা অনস্বীকার্য। এর জন্য নারকেল বা আমন্ড তেলে জুঁই ফুল দিয়ে রাখুন। তেল মাখার আগে একটু গরম করে নিতে হবে। শ্যাম্পু করার ঘণ্টাখানেক আগে চুলে ও স্ক্যাল্পে এই তেল মাখুন। এতে স্ক্যাল্পে কোনও ব্যাকটিরিয়া বাসা বাঁধবে না। একই সঙ্গে স্ক্যাল্পে খুসকিও হবে না। চুলের কন্ডিশনিংও হবে।

গাছগুলো কিন্তু দুষ্প্রাপ্যও নয়। সহজেই নার্সারিতে পেয়ে যাবেন। আর বাড়িতেই যদি রূপচর্চার বাগান করে নেওয়া যায়, তা হলে প্রসাধনী সম্পর্কেও নিশ্চিন্ত থাকা যাবে।
Md. Sirajul Islam
Assistant Coordination Officer
Department of Business Administration
Daffodil International University
Uttara Campus