(মিথ্যাবাদীর আকাশ)
সব ছিল কেবল তার মুখের কথায়। কথা বলাতেও যে অনেক এনার্জি লাগে - এটা তাকে দেখে বোঝা যায়। মুখের প্রতিটা পেশি শক্ত হয়ে বুঝিয়ে দেয় কথাগুলোতে কত নিপুন দক্ষতা আছে। প্রতিটা শব্দের উঠানামা আর বিরতিতে স্পষ্ট সজ্ঞান আচরণ। কত নিপুণ দক্ষতায় সে কথা বলে চলে। সে সব বলে চলে - কেবল যা বলার কথা সেটি বাদে। কত সূক্ষ তার বাচন ভঙ্গী - কত নিখুঁত তার বাক্য চয়ন। ঠিক যেমন দাবাখেলার সময় মাথা কাজ করে চলে - সেই রকম সুক্ষতায় সে ভেবে চলে।
তার একমাত্র ভয় হল মোবাইল রেকর্ডার। তার চক্ষুশূল রেকর্ডার মিথ্যা গুলোকে তার বিরুদ্ধেই সাক্ষ্য দেয়। আর ভয় পায় সে লিখতে। তার পছন্দ হল পেন্সিলের রাবার আর কি বোর্ডের ইরেজ বাটন। কারণ এগুলো দিয়ে তার মিথ্যাগুলোকে মুছে ফেলা যায়। কখনোবা সত্য গুলোকে মিথ্যায় পরিনত করা যায়। অভিনয়ে সে অতি দক্ষ। যেভাবে মাছ শিকারির নৌকা চালানোর দরকার পড়ে - অভিনয়ও মিথ্যার সাথে অঙ্গাঙ্গী একইভাবে তার দরকার পড়ে। সে যা বলে - অস্বীকার করে তা পরের মুহূর্তেই। তার অভিনয়ের নিপুণ দক্ষতা অস্কার পাওয়ার যোগ্য।
মিথ্যাবাদীর চোখ চকচক করে উঠে। আগে কখনো লিখেনি সে। লেখাকে বরাবরই সে ঘৃণা করে। লেখা গুলো মনে হয় তার মুখের কথাকে চপাটেঘাত করে চলে। প্রতি মুহূর্তে তার মনে হয় লেখা যদি না থাকতো - থাকতো যদি শুধু মুখের কথা। সে ইচ্ছা মত কথা গুলোকে ঘুরির মত উড়িয়ে যেত। কখনো বা বেলুনের মত আকাশে পাঠিয়ে দিত। লেখা গুলো যেন তীর হয়ে কেটে দেয় ঘুরিগুলোকে আর ফাটিয়ে দেয় তার বেলুন। মুখ থেকে বের হওয়া মিথ্যার বাবল্গুলো ফেটে গিয়ে দুর্গন্ধ ছড়ায় চারিদিকে।
আকাশটা ছিল ঘন নীল। বাতাসে ছিল সৌরভ। চারিদিকে ছিল পাখির কলতান আর ছিল সবুজ ঘাস। এখানে কবিতা লিখে চলা যায় অনন্তকাল। ছবি আঁকা যায় তুলির টানে। মিথ্যাবাদী কবিতা লিখতে চায়। সে জানে লেখা হবে না কিছুই। মিথ্যা দিয়ে কবিতা হয় না। আঁকা যায় না ছবি।
সে জানে না তাকে নিয়ে একজন কবিতা লেখার চেষ্টা করে চলেছে।জানে না সে নিজেই একটা নাটকের খল চরিত্র। তার কথা বলার ভঙ্গী কত নিখুঁত ভাবে অনুসরন করে চলে লেখক শুধু একেকটি ডায়ালগ লেখার জন্য। তার বাচনভঙ্গি অনুকরণ করা হয়েছে সিনেমার ভিলেন চরিত্রের ডায়ালগে - তা তার জানা নেই। হি হিমসেলফ ইজ এ পিস অফ আর্ট।