শুরু হয়ে যাচ্ছে হজযাত্রার প্রস্তুতি। ডায়াবেটিসের রোগীরা অনেকেই নানা জটিলতায় ভোগেন। অনেকে ওষুধ ও ইনসুলিন গ্রহণ করেন। তাই হজের সময় তাঁদের একটু বেশি সচেতন থাকতে হয়।
ইনসুলিন, না বড়িহজের আগে অনেক রোগী অনুরোধ করেন, ডাক্তার সাহেব যদি এ কদিনের জন্য ইনসুলিন বন্ধ করে ডায়াবেটিসের বড়ি দিতেন, ভালো হতো। কেউ কেউ ইনসুলিন নেওয়া বন্ধ করে দেনও, যা একদমই ঠিক নয়। কারও যদি ইনসুলিনের প্রয়োজন থাকে, তার মানে তাঁর শরীরে ইনসুলিনের ঘাটতি আছে। ইনসুলিন বন্ধ করে দিলে শরীরে গুরুতর সমস্যা দেখা দিতে পারে। কেননা আমাদের বিপাকক্রিয়ার অন্যতম নিয়ন্ত্রক হলো এই ইনসুলিন। ফলে রোগী গুরুতর অসুস্থ হয়ে জ্ঞান হারাতে পারেন, তখন হজ পালন করাই মুশকিল হবে। ইনসুলিন রেফ্রিজারেটরে না রাখলে নষ্ট হয়ে যায়, কথাটা ঠিক নয়। এক মাস ঘরের স্বাভাবিক তাপমাত্রায় রেখে ব্যবহার করা যায়। রোদ না লাগলেই হবে। ইনসুলিন নিয়ে ভ্রমণেও কোনো সমস্যা হওয়ার কথা নয়।
হাইপোগ্লাইসেমিয়া যেন না হয়
যাঁরা সালফোনিল ইউরিয়া ওষুধ ও ইনসুলিন ব্যবহার করেন, তাঁদের সময়মতো খাবার গ্রহণ না করলে শর্করা কমে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে। তাই সঠিক সময়ে খাওয়াটা খুব দরকার। সঙ্গে খেজুর আর পানি রাখা উচিত। এই গরমে ১২ থেকে ১৫ গ্লাস পানি খাওয়া উচিত ২৪ ঘণ্টায়। তাওয়াফের সময় অনেক হাঁটতে হয়, তাই সঙ্গে অতিরিক্ত খাবার রাখা ভালো। দরকার হলে ইনসুলিনের পরিমাণ একটু কমিয়ে নিন।
পায়ের যত্ন
কারও কারও পায়ে স্নায়ুগত জটিলতা থাকে। অনুভূতির সমস্যা থাকে। তাঁদের পায়ে ঘা হতে পারে। ডায়াবেটিসের রোগীর পায়ে ঘা, সংক্রমণ ইত্যাদি খুব খারাপ জিনিস। তাই হাঁটার সময় সাবধান। কোনো কিছুতে খোঁচা লেগে, তাপ লেগে, অন্যের পায়ের দ্বারা আঘাত লেগে সমস্যা হতে পারে। পায়ের ত্বকে যেকোনো পরিবর্তন হলে সাবধান হোন।
যদি হৃদ্রোগও থাকে সঙ্গে
হাঁটলে বুকে ব্যথা হয় কিংবা হৃদ্রোগ আছে এমন রোগীরা সাবধান থাকবেন। একবারে অতিরিক্ত পরিশ্রম করার প্রয়োজন নেই। উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ সময়মতো খেতে ভুলবেন না। হার্টের রোগীরা বুকে ব্যথা হলে সঙ্গে সঙ্গে জিহ্বার নিচে স্প্রে নিয়ে নেবেন। হাঁপানি রোগীরা ইনহেলার সঙ্গে রাখবেন।
সুগার যেন না বাড়ে
অনেকে আবার এত বেশি ফলের রস, লাবাং, জুস, খেজুর খেয়ে ফেলেন যে রক্তে শর্করা অনেক বেড়ে যায়। নিজের গ্লুকোমিটার অবশ্যই নেবেন। যখনই শরীর খারাপ লাগবে চেক করবেন। যাঁরা ইনসুলিন নিয়ে থাকেন, তাঁরা ফজরের নামাজের আগে কিছু খেয়ে মসজিদে যাবেন, এসে সকালের খাবারের আগে ইনসুলিন নেবেন।
বদহজম যেন না হয়
বেশি খাওয়াদাওয়া আর বাইরের হোটেলের খাবার খেয়ে বদহজম, ডায়রিয়া হতে পারে। তাই বুঝেশুনে খেতে হবে। বয়স্ক ডায়াবেটিসের রোগীদের একা চলাফেরা করা উচিত নয়। রোগের নাম ও প্রয়োজনীয় সব ওষুধ একটি কাগজে লিখে সব সময় সঙ্গে রাখা উচিত। কিছু ওষুধ সঙ্গে নেওয়া উচিত। যেমন ডায়রিয়া, জ্বর, পেটব্যথা, বমি, চুলকানি, ভ্রমণে মাথা ঘোরা, হাত–পা ছিঁড়ে বা কেটে গেলে ফার্স্ট এইড, কাশি, ফোড়া, পেট খারাপের ওষুধ ইত্যাদি। যেকোনো অসুস্থতায় মেডিকেল ক্যাম্পের সাহায্য নিতে দ্বিধা করবেন না।