ডায়াবেটিস ও খাদ্য

Author Topic: ডায়াবেটিস ও খাদ্য  (Read 1800 times)

Offline taslima

  • Hero Member
  • *****
  • Posts: 515
    • View Profile
ডায়াবেটিস ও খাদ্য
« on: September 25, 2019, 11:15:30 AM »
গ্লাইসেমিক ইনডেক্স কি?

রক্তে শর্করার পরিমাপক হিসেবে এটি কাজ করে। শর্করার মাত্রা কি পরিমাণে বাড়ছে বা কমছে তা এর মাধ্যমে জানা যায় । বিভিন্ন খাবারে কি পরিমাণ শর্করা থাকে তা নিরূপণ করা হয় গ্লাইসেমিক ইনডেক্স দ্বারা। কম গ্লাইসেমিক ইনডেক্স সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করে ডায়াবেটিস সম্পর্কে সচেতন হোন। ডায়াবেটিক রোগীদের খাবারের গ্লাইসেমিক ইনডেক্স (GI )জানা জরুরী, কম  GI যুক্ত খাবারে এর মাত্রা থাকে ৫৫ এর কম, মধ্যম GI যুক্ত খাবারে ৫৬–৬৯ ও উচ্চ GI যুক্ত খাবারে ৭০ এর বেশি, ডায়াবেটিক আক্রান্ত ব্যাক্তিদের কম GI  যুক্ত খাবার খাওয়া আবশ্যক।

অবশ্য, সত্যিকার অর্থে– এ ব্যপারে এখন পর্যন্ত কোন সুন্দর ধারনা তৈরি হয়নি, দেখা যায় অনেকে কম জি আই ভুক্ত ওষুধ সেবন করছেন যা হয়ত আরো খারাপ কোন অবস্থার সৃষ্টি করছে। বিভিন্ন রিসার্চে দেখা গেছে জি আই এর উপরে নির্ভর না করে চিকিৎসকের পরামর্শ মতে দেয়া খাবারের তালিকা অনুযায়ী চললে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে বেশি ভূমিকা রাখে।

 

আশ যুক্ত খাবার সনাক্তকরণ

কি পরিহার করবেন   কি খাবেন
সাদা চালের ভাত   বাদামি বা লাল চাল এর ভাত
গোল আলু– ভর্তা, ভাজি   মিষ্ট আলু, ফুলকপি
রেগুলার পাস্তা   গমের পাস্তা, স্পেগেটি
সাদা পাউরুটি   গমের রুটি, লাল আটার রুটি
চিনিযুক্ত সেরিয়াল   উচ্চ আশ ও কম চিনি যুক্ত সেরিয়াল
ইনস্ট্যান্ট ওট মিল   গোল ওটস
করনফ্লেক্স   কম চিনি যুক্ত করনফ্লেক্স
ভুট্টা   সিম বা সবুজ শাক।
 

শর্করা জাতীয় খাবারে সাবধানী হোন–

 

ডায়াবেটিক খাবার মানে এই না যে এটি আপনার শরীরের শর্করাকে নিয়ন্ত্রণ করবে বা নিঃস্বরন করবে। আপনি যদি ডায়াবেটিস এ আক্রান্ত হয়ে থাকেন, তবে সাধারণ সকল শর্করা জাতীয় খাবার খেতে পারবেন, কিন্তু নিয়ম মাফিক ও পরিমিত আকারে।

যেমন–

অল্প পরিমাণে দৈনিক খাবারের তালকায় চিনিযুক্ত খাবার রাখতে পারেন।
খাবারের তালিকায় মিষ্টি থাকলে, সাদা পাউরুটি, ভাত বা পাস্তা খাবেন না। ডেজারট খেতে পারেন।
অল্প পরিমাণে সুষম চর্বি সমৃদ্ধ খাবার রাখতে পারেন, চর্বি ধীরে ধীরে খাবার হজমে সাহায্য করে। এ জাতীয় খাবারের মধ্যে পিনাট বাটার, পনির, টক দই বা বাদাম রাখতে পারেন।
অন্যান্য সুষম খাবারের সাথে চিনি জাতীয় খাবার খান, শুধু মিষ্টি খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। কারণ শুধু মিষ্টি খেলে এটি হটাত করে রক্তের শর্করার মাত্রা বাড়িয়ে দেয়।
খাবারকে উপভোগ করুন, যাই অল্প পরিমাণ মিষ্টি জাতীয় খাবার খান না কেন তার প্রতিটি বাইট কে উপভোগ করুন, পাশাপাশি লক্ষ্য রাখুন কি খাচ্ছেন, কখন খাচ্ছেন ও কতবার খাচ্ছেন।
 

কিভাবে চিনি জাতীয় খাবার কমাবেন?

কোমল পানীয় ও জুস – প্রতিদিন এক বোতল ( ২৫০ মিলি) কোমল পানীয় বা জুস পানে রক্তের শর্করার মাত্রা প্রায় ১৫ শতাংশ বাড়িয়ে দেয়। এর বদলে লেবুর শরবত বা কমলার রস পান করতে পারেন। চিনিযুক্ত দুধ চা এর বদলে চিনিহীন রঙ চা পান করতে পারেন।
 

সম্পৃক্ত চর্বি ও চিনি– আপনার দৈনন্দিন খাবারের তালিকায় রাখা সম্পৃক্ত  চর্বি জাতীয় খাবার, যেমন– সরযুক্ত দুধ এর বদলে চিনি সমৃদ্ধ খাবার পরিহার করুন। আমরা অনেকেই ভাবি দুধের বদলে মিষ্টি খাবার খেলে এর চাহিদা পূরণ হবে, কিন্তু এটি ভুল ধারনা। দৈনিক এক গ্লাস দুধ শরীরের পুষ্টির চাহিদা অনেকাংশে পূরণ করে।
 

নিজেই খাবারে মিষ্টি যোগ করুন– টক দই, রঙ চা, ওট্মিল ইত্যাদি খাবারে সাধারণ চিনি থাকেনা। আপনি চাইলে অল্প পরিমাণ মিষ্টি কোন ফল, বা অল্প পরিমাণ চিনি মেশাতে পারেন এসকল খাবারে।
 

প্রক্রিয়াজাত খাবার নির্বাচন– বাইরের প্যাকেটজাত খাবারের ক্ষেত্রে লক্ষ্য রাখুন এর গায়ে শর্করার মাত্রা কত। কম শর্করাযুক্ত খাবার নির্বাচন করুন। বিশেষ করে চিপস, কোমল পানীয়, বিস্কিট ইত্যাদি। সবচে ভাল হয় ঘরে তৈরি করা খাবার গ্রহণ।
 

খাবারে চিনির বদলে ফ্লেভারকে গুরুত্বদান– খাবারে চিনির মাত্রা এক তৃতীয়াংশ বা চতুর্থাংশ কমিয়ে এনে এতে পুদিনা, ভ্যানিলা, জলপাই ইত্যাদি ফ্লেভার যুক্ত করুন।
 

অন্যভাবে খাবারে পূর্ণ স্বাদ উপভোগ করুন– যেমন আইসক্রিমের বদলে ফ্রোজেন কলা, কালো চকলেট ইত্যাদি।
 

চর্বি জাতীয় খাবার নির্বাচন–

চর্বি যেমন স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর, তেমনি রয়েছে এর অনেক গুন, তাই চর্বি যুক্ত খাবার নির্বাচনে সাবধানী হোন–

অস্বাস্থ্যকর চর্বি– সবচে খারাপ চর্বি হল এটি ( প্রক্রিয়াজাত ট্রান্স ফ্যাট) । প্রক্রিয়াজাত প্যাকেট খাবার , প্রাণীজ তেলে ভাজা খাবার এছাড়া– চিপস, বার্গার ইত্যাদি খোয়া থেকে বিরত থাকুন।
 

স্বাস্থ্যকর চর্বি– অসম্পৃক্ত চর্বি সবচেয়ে ভাল, এটির প্রধান উৎস হল মাছ ও উদ্ভিদ; যেমন– অলিভ অয়েল, বাদামের তেল ইত্যাদি। মাছের তেলে থাকে ওমেগা–৩ ফ্যাটি এসিড যা, বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করার পাশাপাশি মগজ ও হৃদপিণ্ডকে সবল রাখে।
 

সম্পৃক্ত চর্বি– সাধারণত বিভিন্ন দুগ্ধজাত পণ্য, লাল মাংস, ট্রপিক্যাল তেল এর উৎস। এটি খাওয়া যেতে পারে , কিন্তু হিসেব করে।
 

কি ভাবে অস্বাস্থ্যকর চর্বি পরিহার করবেন?

চিপস বা ক্র্যাকারস এর বদলে বাদাম বা বীজ জাতীয় খাবার খতে পারেন। সাধারণ বাটার বা মাখনের পরিবর্তে পিনাট বাটার বেশ ভাল।
খাবার কড়া করে ভাজার পরিবর্তে হালকা তেলে ভাজি, সিদ্ধ খাবার বা সেকা খাবার খেতে পারেন।
প্যাকেটজাত খাবার, প্রক্রিয়াজাত খাবার পরিহার করুন।
লাল মাংসের ( যেমন– গরুর মাংস) বদলে চামড়াবিহিন মুরগির মাংস, মাছ, কুসম ছাড়া ডিম ও উদ্ভিজ্জ প্রোটিন খেতে পারেন।
পাস্তা, সবজি ও সালাদে জলপাইয়ের তেল ব্যবহার করতে পারেন।
স্যান্ডউইচ, বার্গার ইত্যাদির মাংসে থাকে অসম্পৃক্ত চর্বি, এগুলোতে মাংসের বদলে সবজি যোগ করলে খাবারে ভিন্নমাত্রা আসবে।
পরিমিত দুগ্ধজাত খাবার গ্রহণ।
 

নিয়মিত খাবার গ্রহণ ও খাবারের তালিকা প্রস্তুতি

মজার ব্যাপার এই যে মাত্র ৭% শরীরের ওজন কমালে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা অর্ধেক কমে যায়। এর জন্য অতিমাত্রার সচেতনতার দরকার নেই। শুধুমাত্র নিয়ম করে খাবার গ্রহণ ও কি খাচ্ছেন তার তালিকা প্রস্তুতি বা সচেতন হওয়ার মাধ্যমে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা অনেকাংশে হ্রাস করা সম্ভব।

দিনটি শুরু করুন সুসাস্থ্যকর নাস্তা দিয়ে– এটি সারাদিনের শক্তি যোগাবে পাশাপাশি রক্তের শর্করা নিয়মিত রাখবে। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে সকালের নাস্তা হিসেবে ২/৩ পিস লাল আটার রুটি, ১ টি সিদ্ধ ডিম ও পরিমাণ মত সবজি ছাড়াও ১ কাপ দুধ যথেষ্ট।
দুপুরের খাবার হিসেবে ১ কাপ ভাত, ১/২ কাপ সবজি ,মাছ বা মাংস ১ পিস ও পরিমাণ মত সালাদ যথেষ্ট।
রাতের খাবার হিসেবে ২/৩ পিস রুটি, ১ কাপ সবজি ও মাছ বা মুরগি ১ পিস যথেষ্ট।
অল্প অল্প খাবার গ্রহণ– সরবোচ্চ ৬ বারের বেশি খাবেন না। এভাবে খাবার গ্রহণে সহজে হিসেব রাখতে সুবিধা হয়।
ক্যলরি নিয়মিতকরন– নিয়মিত চাহিদানুযায়ি খাবার গ্রহণ করুন। কোন এক বেলার খাবার পরিহার করা থেকে বিরত থাকুন। ধরুন রাতে না খেয়ে পরেরদিন সকালে বেশি খেলেন, এটা কাম্য নয়। খাবার পরিহারে রক্তের শর্করার মাত্রার তারতম্য হয়।
 

খাবারের ডায়েরি

একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে যারা খাবারের ডায়েরি তৈরি করেছেন, তাদের ওজন হ্রাসের হার, যারা করেন নি তাদের থেকে প্রায় দ্বিগুণ। খাবারের ডায়েরি তৈরিকরণের মাধ্যমে আপনি বুঝতে পারবেন কোন খাবারে আপনার ঘাটতি রয়েছে ও কোন খাবার বেশি খাওয়া হচ্ছে। এভাবে আত্ম সচেতনতা তৈরি করে নিজেই খাবারের তালিকা প্রস্তুত করতে পারেন।

কর্মমুখর হোক প্রতিদিন–

সকালটি শুরু হোক ব্যায়ামের দ্বারা। পরদিন ৩০ মিনিট করে জোরে হাটা বা ১০ মিনিট বিরতিতে মোট ৩০ মিনিট হাটা শরীরের ইনসুলিন এর কর্মপ্রক্রিয়া অনেক বাড়িয়ে দেয়। হাঁটাহাঁটি ছাড়াও, ব্যায়াম, সাতার, সাইকেল চালানো, দড়ি লাফ ইত্যাদি মধ্যম মাত্রার কায়িক শ্রমের মাধ্যমে রক্তের শর্করার মাত্রা থাকে সহনীয় পর্যায়ে।

সুতরাং, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে শর্করা সমৃদ্ধ খাবারের পাশাপাশি চর্বি ও আমিষ জাতীয় খাবারে বিশেষ সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে, একটি সুন্দর খাবারের তালকা প্রস্তুতি বা ডায়েরির মাধ্যমে কি খাচ্ছেন তার তালিকা তৈরির মাধ্যমে তা লিপিবদ্ধ করে ওজন নিয়ন্ত্রণ ও নিয়মিত নিয়ম মাফিক ব্যায়ামের মাধ্যমে যে কেউ ডায়াবেটিস এ আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা বা ডায়াবেটিস এর মাত্রা  বহুলাংশে কমিয়ে আনতে পারেন।

https://cmed.com.bd/%E0%A6%A1%E0%A6%BE%E0%A7%9F%E0%A6%BE%E0%A6%AC%E0%A7%87%E0%A6%9F%E0%A6%BF%E0%A6%B8-%E0%A6%93-%E0%A6%96%E0%A6%BE%E0%A6%A6%E0%A7%8D%E0%A6%AF-%E0%A6%AA%E0%A6%B0%E0%A7%8D%E0%A6%AC-%E0%A7%A8-copy/
Taslima Akter
Sr. Accounts Officer (F&A)
Daffodil International University
Email: taslima_diu@daffodilvarsity.edu.bd