হোস্টেলে অলস দুপুর। ছেলেটির আর সব রুমমেট অকাতরে ঘুমাচ্ছে। সে তাকিয়ে আছে জানালার বাইরে। এখানে দাঁড়ালে দেখা যায় টিচারদের কোয়াটার গুলো। আর উপরে উন্মুক্ত আকাশ। গ্রীষ্মের প্রখর রোদ চারিদিকে। সে একভাবে দাড়িয়ে থাকে জানালার পাশে। রাস্তা দিয়ে তাদেরই একজন টিচার তার ছেলেকে নিয়ে যাচ্ছেন। সে জানে আর ২ - ৩ বছর আগে সেও ঠিক ছেলেটির সমানই ছিল। সে মিস করে তার বাবাকে। ঠিক এইভাবেই হাত ধরে সেও তো যেত। রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় কিছু একটার বায়না ধরত। মনে হয় হঠাৎ করেই তার চারিপাশের বাস্তবতার পরিবর্তন হয়ে গেছে। কেউ নাই আশেপাশে যার কাছে বায়না ধরা যায়। কিংবা সকালে বলা যায় আর একটু ঘুমাবো আমি। আর কয়দিন আগেই সে ছিল সবার আদরের। হঠাৎ কি হল - যে সবাই তার চলাফেরায় এখন শুধু কমন সেন্সের ছাপ দেখতে চায়? রাস্তা দিয়ে ঘোড়ার গাড়ী চলার টকটক আওয়াজ শোনা যায়। সাথে ঘুঙুরের ঝম ঝম আওয়াজ।
আস্তে করে জানালা থেকে সরে দাঁড়ায় সে। তার আলমারি খুলে নীচের ড্রয়ারের কাপড়ের নীচে থেকে বের করে ছোট একটি বল। বলটি মেঝেতে ফেললে সেটি লাফ দিয়ে অনেক উপরে উঠে। তার আলমারিতে কাগজের নীচে লুকানো আছে একটি ছবি। তার ছোটভাইয়ের। সে সেটি বের করে দেখে আর ভাবে। তার ভাইটি বাসায় এখন কি করতেছে? তার এই ছোটভাইটি অনেক ভক্ত তার। সেও বাসায় থাকলে সব সময় আগলিয়ে রাখে তাকে। কোন ব্যাথা পেল কিনা? বা অন্য কেউ তাকে কষ্ট দিল কিনা? তার মন ও মননের অনেক খানি জুড়ে ছিল তার এই ভাইটি। সে এখন কত দূরে থাকে। তার মনে পড়ে কোন নতুন বুদ্ধি পেলে আর তা করার সাহস না পেলে কিভাবে তার কাছে তার ভাইটি দৌড়ে আসতো সাহায্যের আশায়। বাউন্ডারির বাইরে বড় রাস্তা দিয়ে একঘেয়ে আওয়াজ তুলে বাস ট্রাক চলে যায়। সে ভাবে এইগুলো নিশ্চয় তাদের বাসার পাশ দিয়েই যাবে।
হঠাৎ বাঁশি বেজে উঠে। অবসর সময় শেষ। এখন দৌড়াতে হবে পড়তে যেতে।
(ফরগটেন চ্যাপটার)