শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ: মো. মনিরুজ্জামানের ৫ পরামর্শ
১. ঋণমুক্ত থাকুন
শেয়ারবাজার থেকে লাভের আশা যদি আপনার থাকে, তাহলে ঋণ করে বিনিয়োগ করবেন না। যদি এরই মধ্যে আপনার বিনিয়োগের বিপরীতে ঋণ নিয়ে থাকেন, তবে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব নিজের বিনিয়োগকে ঋণমুক্ত করুন। কারণ, শেয়ারবাজারে ঋণদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো যে ঋণ দিয়ে থাকে, তার সুদহার ১৪ থেকে ১৬ শতাংশ। এখন বাজারে মন্দাভাব চলছে। মন্দা বাজারে ১৫ থেকে ২০ শতাংশ মুনাফা করা বেশ কষ্টসাধ্য। পেশাদার তহবিল ব্যবস্থাপকদের পক্ষেও বাজার থেকে বছর শেষে ১৫ থেকে ২০ শতাংশ মুনাফা করা বেশ কঠিন। সেখানে আপনি ঋণ করে বিনিয়োগের মাধ্যমে লাভ করতে চাইলে আপনাকে ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ মুনাফা করতে হবে। যেটি বর্তমান বাজার বাস্তবতায় প্রায় অসম্ভব। যেসব বিনিয়োগকারী শেয়ার কিনে কিছু সময়ের জন্য হলেও তা ধারণ করেন, তাঁদের মোটেই শেয়ারের বিপরীতে ঋণ করা উচিত নয়। কারণ, এ ক্ষেত্রে প্রতিদিন সুদ বাড়ে আর দাম কমতে থাকলে তখন দ্রুত নিজের বিনিয়োগ করা অর্থ হারাতে হয়।
২. এক কোম্পানিতে বিনিয়োগ নয়
কখনো একজন বিনিয়োগকারীর একক কোনো শেয়ারে সব অর্থ বিনিয়োগ করা উচিত নয়। আমরা আমাদের অনেক গ্রাহককে দেখেছি তাঁরা ভালো অঙ্কের অর্থ শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করেছেন। কিন্তু তা করেছেন একটি মাত্র কোম্পানিতে। হতে পারে কোম্পানিটি খুবই ভালো মানের কোম্পানি। তারপরও একক কোম্পানিতে কখনোই সব অর্থ বিনিয়োগ করা উচিত নয়। কারণ, যেকোনো কারণে ওই কোম্পানির শেয়ারের মূল্যপতন ঘটতে পারে। তখন ওই বিনিয়োগকারীদের সবচেয়ে বেশি লোকসান গুনতে হয়।
৩. শেয়ার নয়, ব্যবসা কিনুন
আপনি যখন শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করছেন, তখন ধরে নিন আসলে শেয়ার নয়, আপনি কোনো কোম্পানির ব্যবসায় বিনিয়োগ করছেন। সেটি করতে হলে আপনাকে সবার আগে খোঁজ নিতে হবে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে ভালো ব্যবসা কারা করছে। তারপর সেই কোম্পানির ব্যবসায় বিনিয়োগ করুন। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই বিনিয়োগকারীরা ভালো ব্যবসা করে, এমন কোম্পানি বাছাই করতে পারেন না। এ ক্ষেত্রে সহজ উপায় হচ্ছে, আপনার পছন্দের যে ব্যবসায় আপনি বিনিয়োগ করতে চান, সেই খাতের বাজারের সেরা কোম্পানিটিই বেছে নিন। ধরা যাক, আপনি ওষুধ খাতের ব্যবসায় বিনিয়োগ করতে চান। তাহলে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ওষুধ খাতের কোম্পানিগুলোর মধ্যে যার ব্যবসা সবচেয়ে ভালো, সেখানেই বিনিয়োগ করুন। যে কোম্পানির ব্যবসায় বিনিয়োগ করবেন, বিনিয়োগের আগে দেখতে হবে ওই কোম্পানির ব্যবসা বা মুনাফায় প্রবৃদ্ধি কেমন। মুনাফায় ন্যূনতম ১০ থেকে ১৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি আছে—এমন কোম্পানিকেই বেছে নিন। কোম্পানির কয়েক বছরের বিক্রয় ও নিট মুনাফার চিত্র দেখলে আপনি ওই কোম্পানির মুনাফার প্রবৃদ্ধি সম্পর্কে ধারণা পাবেন। যেসব কোম্পানির মুনাফার প্রবৃদ্ধি ভালো, সেসব কোম্পানির শেয়ার একটু বেশি দামে কিনলেও তাতে ক্ষতির আশঙ্কা কম থাকে। কারণ, যে হারে মুনাফা বা ব্যবসার প্রবৃদ্ধি ঘটে, শেয়ারের দামও সাধারণত সে হারে বৃদ্ধি পায়।
৪. বিনিয়োগের ভালো সময় এখনই
আপনি যদি শেয়ারবাজারে বিনিয়োগে আগ্রহী হন, তাহলে এখনই বিনিয়োগের সেরা সময়। কারণ, ক্রমাগত দরপতনে বেশির ভাগ শেয়ারের দাম গত কয়েক বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে এসেছে। সার্বিকভাবে বাজারের মূল্য আয় অনুপাত বা পিই রেশিও অনেক নিচে রয়েছে। তাই হাতে টাকা থাকলে বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নিতে পারেন এখনই। তবে বিনিয়োগযোগ্য অর্থের সবটুকু শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করবেন না। বেশির ভাগ টাকা নির্দিষ্ট ও নিরাপদ বিনিয়োগ হিসেবে ব্যাংক ও সঞ্চয়পত্রে খাটান। বাকি অর্থ নিয়ে শেয়ারবাজারে আসতে পারেন। তবে সতর্ক থাকুন শেয়ার কেনায়। দাম কম দেখে লাফ দিয়ে কোনো শেয়ার কিনবেন না। বাজারে কম দামে এমন অনেক শেয়ার আছে, যেসব কোম্পানির কোনো অস্তিত্ব নেই। তাই দাম কম মানেই বিনিয়োগযোগ্য শেয়ার, তা ভাবার সুযোগ নেই।
৫. দৈনন্দিন লেনদেনের মানসিকতা পরিহার করুন
আমাদের বাজারের বেশির ভাগ বিনিয়োগকারী শেয়ার কেনার পরদিন থেকেই লাভের আশায় থাকেন। দ্রুত মুনাফা করতে চান। এ ধরনের মানসিকতা নিয়ে বাজারে বিনিয়োগ করে শেষ বিচারে লাভবান হওয়া যায় না। হয়তো সাময়িকভাবে কেউ কেউ কোনো কোনো শেয়ারে অল্প সময়ে ভালো মুনাফা করেন ঠিকই, কিন্তু তার চেয়ে বেশি লোকসান করেন শেষ হিসাবে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায়, সাধারণ বিনিয়োগকারীরা যে শেয়ারের দাম দ্রুত বাড়তে থাকে, সেই শেয়ার কেনায় আগ্রহী হন। দ্রুততম সময়ে এক শেয়ার ছেড়ে অন্য শেয়ারে ঝোঁকেন। এতে মাস শেষে হিসাব করলে দেখা যাবে, এই ছোটাছুটি করে বেশির ভাগ বিনিয়োগকারী লোকসান করেছেন। সবশেষে নতুন বিনিয়োগকারীদের জন্য পরামর্শ, যদি আপনি এককভাবে বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নিতে না পারেন, তবে ভালো একজন তহবিল ব্যবস্থাপক বেছে নিন। যিনি আপনার হয়ে শেয়ার কেনাবেচার কাজটি করে দেবেন।
ব্যবস্থাপনা পরিচালক, আইডিএলসি ইনভেস্টমেন্টস লিমিটেড
Source:
https://www.prothomalo.com/economy/article/1620301/%E0%A6%B6%E0%A7%87%E0%A7%9F%E0%A6%BE%E0%A6%B0%E0%A6%AC%E0%A6%BE%E0%A6%9C%E0%A6%BE%E0%A6%B0%E0%A7%87-%E0%A6%AC%E0%A6%BF%E0%A6%A8%E0%A6%BF%E0%A7%9F%E0%A7%8B%E0%A6%97-%E0%A6%AE%E0%A7%8B.-%E0%A6%AE%E0%A6%A8%E0%A6%BF%E0%A6%B0%E0%A7%81%E0%A6%9C%E0%A7%8D%E0%A6%9C%E0%A6%BE%E0%A6%AE%E0%A6%BE%E0%A6%A8%E0%A7%87%E0%A6%B0-%E0%A7%AB-%E0%A6%AA%E0%A6%B0%E0%A6%BE%E0%A6%AE%E0%A6%B0%E0%A7%8D%E0%A6%B6