১১৭ টেস্টে ৪২টি ইনিংস হার; কোন পথে বাংলাদেশের ক্রিকেট

Author Topic: ১১৭ টেস্টে ৪২টি ইনিংস হার; কোন পথে বাংলাদেশের ক্রিকেট  (Read 1765 times)

Offline turin

  • Newbie
  • *
  • Posts: 30
  • Test
    • View Profile
                                                               ১১৭ টেস্টে ৪২টি ইনিংস হার; কোন পথে বাংলাদেশের ক্রিকেট

 বাংলাদেশের জন্য ইনিংস পরাজয় বিরল কোনো ঘটনা নয়। অনেকটাই যেন স্বাভাবিক হয়ে গেছে। ভারতের বিপক্ষে গোলাপি বলে দিবা-রাত্রির টেস্ট ক্রিকেটের ম্যাচে বাংলাদেশ ইনিংস ও ৪৬ রানে হারের লজ্জা পেয়েছে। এর আগে ইন্দোরেও তিন দিনে ইনিংস হেরেছে। ১৯ বছরে ১১৭ টেস্ট বাংলাদেশ এ নিয়ে মোট ৮৮টি ম্যাচ হারল; যার মধ্যে ৪২টিই ইনিংস পরাজয়। মাত্র ১৩টিতে জয় পেয়েছে বাংলাদেশ। এর ৬টি আবার দুর্বল জিম্বাবুয়ে এবং ৪টি হালের খর্বশক্তি উইন্ডিজের বিপক্ষে। এই ১৯ বছরেরও কেউ হলফ করে বলতে পারবে না যে, বাংলাদেশি ক্রিকেটারদের মাঝে টেস্ট খেলার কোনো মানসিকতা রয়েছে!

ক্রিকেট লেখক বোরিয়া মজুমদার বলেন, এই টেস্ট সিরিজে টেস্ট ক্রিকেটের এক নম্বর দল ও নয় নম্বর দলের পার্থক্য পরিষ্কার হয়েছে। তার মতে, 'বাংলাদেশি ক্রিকেটারদের দক্ষতার অভাব আছে। ভারতের এই বোলিং লাইন আপের বিরুদ্ধে খেলার যে দক্ষতা সেটা বাংলাদেশের নেই। ভারতের এই বোলিং লাইন আপকে বিশ্ব ক্রিকেটের অন্যতম সেরা টেস্ট বোলিং লাইন আপ। তবে এখানে বাংলাদেশকে ছোট করে দেখার কোনোই কারণ নেই। কিন্তু ভারতের এই দলটা দক্ষতা ও মানসিক দুই দিকেই অনেক এগিয়ে।'

টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে বাংলাদেশ জিতেছে। কিন্তু বাংলাদেশের তো ঘরোয়া পর্যায়ের চারদিনের ক্রিকেট ততটা শক্তিশালী না। এই মুহূর্তে ভারতকে হারানো অবশ্যই কঠিন বলে মনে করেন বোরিয়া মজুমদার, 'সাকিব আল হাসান নেই, তামিম ইকবাল নেই। তাদের ছাড়া বাকিরা বেশ দুর্বল। মাহমুদউল্লাহ যেভাবে খেলেছেন, ইমরুল যেভাবে খেলেছেন এটা ভারতের বিপক্ষে অনেক কম হয়ে যায়'

দিবারাত্রির এই টেস্ট ম্যাচ শুরুর আগে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের জন্য দুশ্চিন্তার বিষয় ছিল সন্ধ্যায় ব্যাটসম্যানরা কেমন ব্যাট করে। কিন্তু সন্ধ্যা পর্যন্ত টেকেনি বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা। ১০৬ রানে অলআউট হয়ে যায় বাংলাদেশ। জবাবে বাংলাদেশ যখন বল করতে নামে, ভারত রান তোলে ৯ উইকেটে ৩৪৭। এরপর ইনিংস ঘোষণা করেন বিরাট কোহলি। বাংলাদেশের দ্বিতীয় ইনিংসের শুরুতেই বিরাট কোহলি ও তার দলের মনোভাব পরিষ্কার হয়ে যায়, দুই দিনের মধ্যেই খেলা শেষ করতে চান তারা।

এই লক্ষ্যে ইশান্ত শর্মার আগ্রাসী বোলিংয়ে ১৩ রানের চারটি উইকেট হারায় বাংলাদেশ। এর মধ্যে আবার মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ চোট পেয়ে মাঠ ছাড়েন। শুধু এই টেস্টেই বাংলাদেশের তিনজন ক্রিকেটার চোট পেয়ে মাঠ ছেড়েছেন। লিটন দাস, নাইম হাসান ও সর্বশেষ রিয়াদ। যেমন আয়োজন দিয়ে শুরু হয়েছিল কলকাতা টেস্ট, মাঠের ক্রিকেটে সেটার প্রতিফলন ছিল না। বাংলাদেশের সব ব্যাটসম্যান ব্যর্থ। সাদমান ইসলাম অনিক যাকে বাংলাদেশের টেস্টে নিয়মিত দলে নেয়া হচ্ছে তিনি ৪ ইনিংস মিলিয়ে রান তুলেছেন ৪১।

ইমরুল কায়েসকে দলে নেওয়ার জন্য অনেক 'লড়াই-সংগ্রাম' হয়ে থাকে সব সময়। সেই অভিজ্ঞ ইমরুল ঘরোয়া ক্রিকেটে ডাবল সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে দলে ঢুকেছেন। কিন্তু ভারত সফরে ৪ ইনিংস মিলিয়ে তিনি তুলেছেন ২১! রানের স্বল্পতার চেয়েও বড় ব্যাপার ইমরুল কায়েসকে কোনো ইনিংসেই যথেষ্ট আত্মবিশ্বাসী মনে হয়নি। বরং বোলারদের পরিকল্পনা মাফিকই ব্যাট চালিয়ে আউট হয়েছেন দুইবার। মমিনুল হক দীর্ঘদিন বাংলাদেশের অন্যতম সেরা টেস্ট ব্যাটসম্যানের তকমা নিয়ে আছেন। কিন্তু ভারতের বিপক্ষে দ্বিতীয় টেস্টে দুই ইনিংসেই 'ডাক' মারেন তিনি!

ভারতের বিপক্ষে 'পেয়ার' পাওয়া প্রথম ক্রিকেট অধিনায়ক মমিনুল হক। প্রথম টেস্টেও মমিনুল হক ৩৭ ও ৭ রান করে আউট হন।অর্থাৎ পুরো সিরিজে চার ইনিংস ব্যাট করে তিনি রান তুলেছেন ৪৩। ইন্দোর টেস্টের প্রথম ইনিংসে মমিনুল হক অশ্বিনের অফ-স্টাম্প লাইনের বল ছেড়ে দেন। যেটা সোজা গিয়ে অফ-স্টাম্পেই লাগে। এরপরের তিন ইনিংসেই মমিনুল বোলারের গতির কাছে পরাস্ত হন।যদিও ক্যারিয়ারের শুরুর দিকে মমিনুল হক টেস্ট ক্রিকেটের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান হওয়ার একটা আভাস দিয়েছিলেন কিন্তু যত দেশের বাইরে খেলা শুরু হয় ততই তার ব্যাটিংয়ের ভুল-ভ্রান্তি চোখে পড়তে থাকে।

পেস ও স্পিন দুই ধরণের বোলিংয়েই নির্দিষ্ট কিছু ডেলিভারি মমিনুল হক বরাবরই খেলতে পারেননি। ২০১৭ সালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে একটি সিরিজ চলাকালীন বাংলাদেশের তৎকালীন কোচ হাথুরুসিংহে মমিনুল হকের স্পিন বল খেলা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। হাথুরুসিংহে বাংলাদেশের কোচের দায়িত্ব ছেড়ে দেওয়ার পরের সিরিজেই মমিনুল হক শ্রীলঙ্কার বিপক্ষেই একই টেস্টে দুটো সেঞ্চুরি করেন, যার মধ্যে একটি ইনিংস ছিল ১৭৬ রানের। কিন্তু তার পরে বাংলাদেশের মাটিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সেঞ্চুরি ছাড়া বলার মতো রান নেই মমিনুল হকের ব্যাটে।

দেশের মাটিতে মমিনুল হকের টেস্ট গড় ৫৫, দেশের বাইরে ২১। মোহাম্মদ মিথুন, যিনি বাংলাদেশের হয়ে ৬টি টেস্ট ম্যাচ খেলেছেন, তার টেস্ট গড় ২০। এই টেস্ট সিরিজে চার ইনিংস ব্যাট করে তিনি রান তুলেছেন ৩৭। মুশফিকুর রহিম এই সিরিজে বাংলাদেশের সফলতম ব্যাটসম্যান, যিনি চার ইনিংসে রান তুলেছেন ১৮১। দুটি হাফ-সেঞ্চুরিও করেছেন। তবে কলকাতা টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে যখন ইনিংস পরাজয় এড়াতে ৫৪ রান প্রয়োজন, তখন ব্যক্তিগত ৭৪ রানে সামনে এগিয়ে ছক্কা মারতে গিয়ে আউট হন মুশফিক! যা নিয়ে রীতিমতো সমালোচনা হচ্ছে।

এদিকে গণমাধ্যমে ও সংবাদ সম্মেলনে একটা প্রশ্ন উঠেছে যে মুশফিকুর রহিম কেনো চার নম্বরে নামছেন না। সরাসরি মুশফিকের পক্ষ থেকে কোনো উত্তর পাওয়া যায়নি। তবে ২০ গড়ের মোহাম্মদ মিথুন যখন চার নম্বরে খেলছেন সেটা গোটা দলের ব্যাটিংয়েই প্রভাব ফেলছে। লিটন দাস ২ ম্যাচের ৩ ইনিংস ব্যাট করে ইডেনে আহত হয়ে মাঠ ছাড়েন। তিন ইনিংসে তার রান ৮০। তিনিই এই সিরিজে বাংলাদেশের দ্বিতীয় সফলতম ব্যাটসম্যান। কলকাতা টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে চোট পেয়ে মাঠ ছাড়েন মাহমুদউল্লাহ। যিনি এই পুরো সিরিজ জুড়েই বাজে শট খেলে আউট হয়ে মাঠ ছেড়েছেন। মনে হচ্ছিল, তিনি যেন ওয়ানডে খেলতে নেমেছেন!


Source: https://www.kalerkantho.com/online/sport/2019/11/24/843059