বোবায় ধরা বা স্লিপ প্যারালাইসিস

Author Topic: বোবায় ধরা বা স্লিপ প্যারালাইসিস  (Read 1382 times)

Offline Bilkis Khanam

  • Newbie
  • *
  • Posts: 28
  • Test
    • View Profile
বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস শেষ করে বাড়িতে ফিরেছে তানিয়া ( ছদ্দনাম) । খুব ক্লান্ত অনুভব করছে সে, তাই কিছু না খেয়েই ঘরে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়লো। কিছুক্ষণ পর হঠাৎ তানিয়ার ঘুম ভেঙ্গে গেল। তার মনে হচ্ছে তার বুকের উপর ভারী কিছু বসে আছে, সে ঠিকমত নিঃশ্বাস নিতে পারছে না। নড়াচড়া করতে পারছে না। এমনকি তানিয়া খুব চেষ্টা করছে তার মাকে ডাকতে কিন্তু কিছুতেই তার গলা দিয়ে কোনো শব্দ বের হচ্ছে না।

এরকম অভিজ্ঞতার সম্মুখীন আমরা মাঝে মাঝে হয়ে থাকি কিংবা আমাদের আশেপাশের মানুষদের কাছ থেকে শুনে থাকি তারা এই ধরনের অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে গিয়েছেন। এই অসহায় অবস্থাটাকে অনেকে “ বোবায় ধরা” বলে থাকেন। “ বোবায় ধরা” নামকরনটি এসেছে লোকাচারীয় কুসংস্কার থেকে। ধারনা করা হত বোবা নামের ভূত ঘুমের মধ্যে বুকের উপর বসে মুখ চেপে ধরে তাই ব্যাক্তি কথা বলা ও নড়াচড়া করতে পারে না। চিকিৎসাশাস্ত্রের ভাষায় একে বলা হয় “স্লিপ প্যারালাইসিস”।
আমরা যখন ঘুমাই তখন আমরা সচেতন অবস্থায় থাকি না। আমাদের মস্তিষ্ক কথা বলা, নড়াচড়া করা সাময়িকভাবে বন্ধ রাখে এবং আমাদের শরীর ধীরে ধীরে থিথীল হয়। ঘুম বিশ্লেষকদের মতে আমাদের ঘুমের ২ টি পর্যায় রয়েছে। একটি হল NREM ( Non- Rapid Eye Movement), যখন আমরা গভীর ঘুমে থাকি। এই পর্যায়ে আমাদের শরীর শিথীল হয় ও পুনরায় কাজ করার জন্য নিজেকে তৈরী করে। মোট ঘুমের প্রায় ৭৫ শতাংশ জুড়ে এই পর্যায়টি চলে। আরেকটি পর্যায় হল REM ( Rapid Eye Movement), এই পর্যায়ে আমাদের চোখের মণি খুব দ্রুত নড়াচড়া করে এবং এই সময়টাতেই আমরা স্বপ্ন দেখে থাকি।এই পর্যায়েও আমাদের শরীর শিথীল থাকে এবং আমাদের পেশি সচল থাকে না। এই NREM ও REM পর্যায় দুটি পর্যায়ক্রমে ঘুমের মধ্যে চলতে থাকে। একটা সময় আমাদের ঘুম ভেঙ্গে যায় বা আমরা সচেতন অবস্থায় চলে আসি। কোনভাবে যদি এই REM পর্যায়টি শেষ হবার আগেই আমাদের চেতনা ফিরে আসে তাহলে আমরা দেখব আমরা কথা বলতে ও নড়াচড়া করতে পারছি না। কারন তখনও আমাদের মস্তিষ্কের চেতন অংশের সম্পূর্ন কার্যক্রম শুরু হয়নি, যারকারনে পেশীগুলোতে মস্তিষ্ক থেকে নড়াচড়া কারার সিগনাল পৌঁছতে পারেনি। এই অবস্থাটিকেই স্লিপ প্যারালাইসিস বলা হয়।
স্লিপ প্যারালাইসিস যেকোনো বয়সের মানুষের মধ্যে দেখা দিতে পারে। প্রতি ১০ জনের মধ্যে ৪ জন ব্যাক্তি জীবনে কোন না কোন সময় এই অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হতে পারে। স্লিপ প্যারালাইসিস এর সাথে বংশগতির সম্পর্ক রয়েছে। স্লিপ প্যারালাইসিস বিভিন্ন কারনে হতে পারে। যেমনঃ ঘুম কম হওয়া, অনিয়মিত ঘুম, ওষুধের প্রভাব, মাদকের প্রভাব। এছাড়া মানসিক চাপ বা মানসিক রোগ যেমনঃ বাইপোলার মুড ডিসঅর্ডার এর কারনেও স্লিপ প্যারালাইসিস দেখা দিতে পারে।

স্লিপ প্যারালাইসিস তেমন গুরুতর কোন রোগ নয়। যদি এক-দুবার ঘটে থাকে তবে এর জন্য তেমন কোন চিকিৎসার প্রয়োজন নেই। তবে যদি বার বার ঘটতে থাকে তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে। যদি মানসিক সমস্যা থেকে স্লিপ প্যারালাইসিস দেখা দেয় তাহলে মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞের থেকে চিকিৎসা গ্রহণ করতে হবে। স্লিপ প্যারালাইসিসের হাত থেকে বাচার জন্য ঘুমের কিছু নিয়ম মেনে চলা প্রয়োজন যেমনঃ ঘুমের নির্দিষ্ট সময় মেনে চলা, দৈনিক ৬-৮ ঘণ্টা ঘুমানো, ঘুমের আগে গোসল করা অথবা শরীর মোছা, হালকা কাপড় পরিধান করে ঘুমানো। এছাড়া ঘুমাতে যাওয়ার আগে নিয়মিত রিলেক্সেশন এক্সারসাইজ করে ঘুমালে স্লিপ প্যারালাইসিস থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।

বিলকিস খানম
সাইকোলজিস্ট
ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি
Bilkis Khanam
Psychologist
Office of the Director of Students' Affairs
Daffodil International University
Cell no: 01847140065