শীতের ধুলাশায়

Author Topic: শীতের ধুলাশায়  (Read 1371 times)

Offline Jannatul Ferdous

  • Full Member
  • ***
  • Posts: 247
  • Test
    • View Profile
শীতের ধুলাশায়
« on: December 08, 2019, 11:16:57 AM »
শীত মানেই শুষ্কতা। এই সময় ত্বক যেমন আর্দ্রতা হারায়, তেমনি চারপাশের পরিবেশও শুষ্ক হয়ে পড়ে। তাই ধুলাবালুর পরিমাণও বেড়ে যায়। শীতের কুয়াশার সঙ্গে যোগ হয় ধুলা। চারদিকে যেন ধুলাশা। এই ধুলাবালির সঙ্গে অ্যালার্জেন মিশে থাকে। এই সময় অ্যালার্জি সৃষ্টি করে এমন অনেক উপাদান আমাদের শ্বাসনালির ভেতর ঢুকে যেতে পারে বা ত্বকের সংস্পর্শে আসে। তাই শীতের সময় অ্যালার্জির প্রকোপ বেড়ে যায়। আবার কারও থাকে কোল্ড অ্যালার্জি। কারও ক্ষেত্রে অ্যালার্জি অল্প মাত্রায় অসুবিধা করে, আবার কারও ক্ষেত্রে জীবনকে দুর্বিষহ করে।

ঠান্ডা বাতাস, সিগারেটের ধোঁয়া, সুগন্ধি, তীব্র গন্ধ, পুরোনো পত্রিকা বা বই–খাতার ধুলা যাতে মাইট থাকে, ফুলের রেণু, মোল্ড ইত্যাদির কারণে শ্বাসকষ্ট, হাঁপানি বা অ্যাজমা, সর্দি ইত্যাদি দেখা দেয়। এসবকে অ্যালার্জেন বলা হয়। প্রচণ্ড শীতও অনেকের জন্য অ্যালার্জেন হিসেবে কাজ করে এবং অ্যালার্জি হতে পারে।


কোল্ড অ্যালার্জি থেকে বাঁচার উপায়

ঠান্ডা বাতাস থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার জন্য একধরনের মুখোশ (ফিল্টার মাস্ক) বা মুখবন্ধনী ব্যবহার করা যেতে পারে। ফলে ব্যবহারকারীরা উত্তপ্ত নিশ্বাস গ্রহণ করতে পারেন। শীতপ্রধান দেশে সাধারণত শীতকালীন এই মাস্ক বা মুখোশ ব্যবহার করা হয়ে থাকে। উপসর্গ নিরসনে ওষুধ নেওয়া যেতে পারে।

বিছানা ও আসবাবে অ্যালার্জি

এই সময়ে বিছানার চাদর, বালিশের কভার, বালিশ, লেপ, তোশক, ম্যাট্রেস, কম্বল, মশারিতে ধুলাবালি, জীবাণু ও ঘরোয়া জীবাণু মাইট ডাস্ট বেশি জমে। ডাস্ট মাইটের বিষ্ঠা অনেকের শরীরে অ্যালার্জি আক্রান্ত হওয়ার মূল কারণ। এ থেকে পরিত্রাণ পেতে বিছানার চাদর, বালিশের কভার, লেপের কভার, মশারি ভালো করে ধুয়ে পরিষ্কার করে নিতে হবে। এ ছাড়া ঘরের চারপাশে পরিষ্কার রাখলে অ্যালার্জেন থেকে মুক্ত থাকা সম্ভব। রোদের আল্ট্রা ভায়োলেট রশ্মিতে ডাস্ট মাইট মরে যায়, তাই এসব জিনিসপত্র নিয়মিত রোদে শুকাতে দিতে পারেন। বাসাবাড়িতে বিভিন্ন আসবাবের ফাঁকে ফাঁকে ধুলাবালি ও ডাস্ট মাইট থাকে। অ্যালার্জি থেকে বাঁচতে যা নিয়মিত ঝাড়া-মোছা করা প্রয়োজন।

ছত্রাক থেকেও হতে পারে অ্যালার্জি

বায়ুবাহিত ছত্রাকের কারণে অ্যাজমা বা হাঁপানি হতে পারে। মাথার খুশকির অন্যতম কারণ ছত্রাক, সেই খুশকি থেকেও অ্যালার্জি হতে পারে।

কার্পেট, ম্যাট থেকে অ্যালার্জি

ঘরের সৌন্দর্য বাড়িয়ে তুলতে এবং শীতের সময় ঘর উষ্ণ রাখতে মেঝেতে নামীদামি কার্পেট ও ম্যাট বিছিয়ে রাখেন অনেকে। কিন্তু এই কার্পেট ও ম্যাটে প্রতিদিন প্রচুর ধুলাবালি ও ময়লা জমে। এই ময়লা থেকে জন্ম নেওয়া ডাস্ট মাইট বিশেষ করে শিশুরা ম্যাটে ও কার্পেটে বসে থাকে, খেলাধুলা করে, যে কারণে তারা অ্যালার্জিতে আক্রান্ত হয়। তাই ডাস্ট মাইট দূর করতে হলে নিয়মিত ভ্যাকুয়াম ক্লিনার বা ঝাঁট দিয়ে পরিষ্কার করা দরকার।

পোষা প্রাণী থেকে

অনেকেই বাসাবাড়িতে বিড়াল, কুকুর, ভেড়া, ছাগল, ময়না, টিয়া, ঘুঘুসহ নানান জাতীয় পশুপাখি পুষে থাকেন। এই পোষা প্রাণীদের শরীরে প্রতিদিন প্রচুর ডাস্ট মাইট জন্মে এবং তাদের শরীরের লোম থেকে অ্যালার্জি সৃষ্টি হয়। তা ছাড়া পশুপাখির মলমূত্র ও লালা থেকেও সৃষ্টি হয় অ্যালার্জি। পশুপাখিদের প্রতিদিন না হলেও দু-এক দিন পরপরই গোসল করিয়ে দেওয়া প্রয়োজন। গোসলে যদি সাবান ব্যবহার করা যায়, তাহলে অনেক ভালো হয়। পশুপাখি যখন মলমূত্র ত্যাগ করে, তখন তা যেন পাত্রে করে, এই অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। পশুপাখি যে জায়গায় থাকে, সেই জায়গাটা প্রতিদিন পরিষ্কার রাখা প্রয়োজন।

এ ছাড়া শিশুদের খেলনা, জুতা, ফ্যান, এসি, ঝাড়বাতি ও বিভিন্ন শোপিসে ধুলোবালি জমে জন্ম নেয় অ্যালার্জি। এসব শখের জিনিস ভালোভাবে এক দিন পরপর পরিষ্কার করা অত্যন্ত প্রয়োজন।


ডা. গোবিন্দ চন্দ্র রায়, সহযোগী অধ্যাপক, মেডিসিন বিভাগ শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল হাসপাতাল
Mosammat Jannatul Ferdous Mazumder
Student Counselor (Counseling & Admission)