জুলাই, ১৯৭১: বাল্টিমোর অবরোধ

Author Topic: জুলাই, ১৯৭১: বাল্টিমোর অবরোধ  (Read 2534 times)

Offline Badshah Mamun

  • Administrator
  • Hero Member
  • *****
  • Posts: 2006
    • View Profile
    • Daffodil International University
জুলাই, ১৯৭১: বাল্টিমোর অবরোধ,
পাকিস্তানি জাহাজ হটাও,
আলীম আজিজ .
১৯৭১ সাল, পূর্ব পাকিস্তানে নির্বিচারে গণহত্যা চলছে। সেই গণহত্যায় ব্যবহূত হচ্ছে মার্কিন সমরাস্ত্র। এ সময়েই খবর এল বাল্টিমোর বন্দরে পাকিস্তানি জাহাজ পদ্মা আসছে যুদ্ধবিমানসহ অন্যান্য মার্কিন অস্ত্রের চালান নিতে। মার্কিন সরকারের এই অন্যায় ও পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর বর্বরতার প্রতিবাদে বাল্টিমোরের একদল নারী-পুরুষ সিদ্ধান্ত নিলেন পদ্মায় কোনো অস্ত্র উঠবে না। শুরু হলো পদ্মা অবরোধ আন্দোলন।

কিছু করতে চাই
জুন মাসজুড়ে পত্রিকার পাতায় ছাপা হচ্ছিল ভয়াবহ সব ছবি: হাজার হাজার বাঙালি প্রাণভয়ে পালিয়ে আসছে ভারতে, সহায়-সম্বলহীন দুর্বল অভুক্ত মানুষের দীর্ঘ কাফেলা। তাদের একেকজনের চোখেমুখে আতঙ্ক, দিশেহারা দৃষ্টি। খবর আসছিল পশ্চিম পাকিস্তানি সেনারা নির্বিচারে হত্যাযজ্ঞ চালাচ্ছে পূর্ব পাকিস্তানজুড়ে।
১৯৭১ সালের গ্রীষ্মের ওই সময় পশ্চিম ফিলাডেলফিয়ার কিছু শান্তিকামী মানুষ একত্র হয়েছে ফিলাডেলফিয়া লাইফ সেন্টারে অহিংস আন্দোলনের ওপর প্রশিক্ষণ ও আলোচনার জন্য; আয়োজক কোয়েকার ফাউন্ডেশন, এটা ঈশ্বরবিশ্বাসী শান্তিকামী কিছু মানুষের সংগঠন।
ওই সভারই একজন সদস্য রিচার্ড টেলর, যিনি বিভিন্ন কারণে পূর্ব পাকিস্তানের পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন। তাঁর একটি প্রতিদিনের মিডিয়ার খবর আর তাঁর বন্ধু বিল ময়ার। টেলরের মতো ময়ারও পাকিস্তানের পরিস্থিতি নিয়ে চিন্তিত। বিল ময়ার গিয়েছিলেন মিলাওয়াকির এক শান্তি আলোচনায়, সেখানে দেখা পুরোনো বন্ধু ডিক মারের সঙ্গে। তাঁর কাছ থেকেই ময়ার জানতে পারেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানকে সামরিক সাহায্য দিচ্ছে। তিনি সাক্ষী হিসেবে হাজির করেছেন পাকিস্তানি এক শান্তিকর্মী একবাল আহমেদকে। একবাল বিভিন্ন সূত্র থেকে জেনেছেন: যুক্তরাষ্ট্র সরকারের ভূমিকা শুধু সমর্থনেই সীমাবদ্ধ নেই। তারা সমরাস্ত্রসহ অন্য সব রকম সাহায্যই পাঠাচ্ছে পশ্চিম পাকিস্তানের খুনি সরকারকে।
বিল কৌতূহল থেকেই ডিক মারের কাছে জানতে চেয়েছিলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র পাকিস্তানে যাচ্ছে কীভাবে?’
‘জাহাজে?’ জবাব এসেছিল।
বিল ময়ার আগপিছ না ভেবেই বলেছিলেন, ‘ওই জাহাজ কোনোভাবে আটকে দেওয়া যায় না?’
ডিক উত্তেজিত হয়ে বলেছিলেন, ‘হ্যাঁ যায় তো...জাহাজগুলো তো ইস্ট কোস্টের বন্দরেই আসছে। তোমার কিছু একটা করা উচিত।’ এই ভাবনাই ক্রমাগত তাড়িয়ে নিয়ে বেড়াচ্ছিল বিল ময়ারকে।
সে কারণেই কোয়েকারের ২২ জুনের সভায় হাজির করা হয় ওইদিন টাইম-এ টেড জুলকের লেখা একটি প্রতিবেদন, তাতে বলা হয়েছে: যদিও আমেরিকান স্টেট ডিপার্টমেন্ট বলছে, মার্চে পাকিস্তানের দমন অভিযান শুরু হওয়ার পর থেকে সামরিক সরঞ্জাম সরবরাহের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি রয়েছে, কিন্তু তা সত্ত্বেও পাকিস্তানি জাহাজ যুক্তরাষ্ট্রের বন্দরে আসছে অস্ত্রের চালান নিতে...
মার্কিন সরকারের সহযোগিতায় পূর্ব পাকিস্তানে হত্যাযজ্ঞ চালাচ্ছে পাকিস্তানি সামরিক সরকার, এটা অনুধাবন করার পর থেকেই সদস্যদের মধ্যে হতাশা ছড়িয়ে পড়ে। তাদের ট্যাক্সের টাকা ব্যবহার হচ্ছে নিরপরাধ মানুষ হত্যায়। ‘আমাদের যুদ্ধবিমান, ট্যাংক আর বন্দুক-গোলবারুদ ব্যবহার করে মারা হচ্ছে শত শত নিরীহ মানুষকে। আমাদের বুলেট ব্যবহার করা হচ্ছে নির্বাচনে বিজয়ী একটি জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে।’
‘আমাদের এখন কী করা উচিত?’ কেউ একজন প্রশ্ন করেছিলেন। ‘হারবারে মাইন পেতে রাখব।’
বিল ময়ার চিন্তাভাবনা না করেই বলেছিলেন, ‘মাইন নয়, জাহাজ অবরোধ করতে হবে। তবে সেটা আমাদের অহিংস নীতিও বজায় রেখে।’
এভাবেই সমুদ্রতীরের এক শহরে হাজার মাইল দূরের নিদারুণ কষ্টে থাকা পূর্ববঙ্গের মানুষের জন্য নিজের দেশের সরকারের অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের পরিকল্পনা করে ফিলাডেলফিয়ার একদল শান্তিকামী মানুষ।

ফ্রেন্ডস অব বেঙ্গল
সুলতানা ক্রিপেনডরফ যুক্তরাষ্ট্রের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে যুক্ত। জার্মান বংশোদ্ভূত স্বামী ক্লাউস কমিউনিকেশন স্পেশালিস্ট। তাঁদের প্রথম সন্তান কাইহান—কিন্তু তিন মাস ধরে এই পরিবারের সুখ-শান্তি সব হারাম হয়ে গেছে। বাঙালি মেয়ে সুলতানার পুরো পরিবার, বন্ধুবান্ধব সবাই থাকে পূর্ববঙ্গে। আর প্রতিদিন মিডিয়া খবর দিচ্ছে, পাকিস্তানি বাহিনী নির্বিচারে গণহত্যা চালাচ্ছে সেখানে, বাবা-মায়ের চিন্তায়, দেশের চিন্তায় সুস্থির হতে পারছেন না সুলতানা। পড়াশোনা বাদ পড়েছে, ছোট্ট শিশুপুত্র কাইহানের দিকেও নজর দেওয়া হচ্ছে না, তাঁর অস্থির সময় কাটছে টেলিফোনের সামনে। একের পর এক ফোন করছেন, যদি কোনো সাহায্য মেলে। ফোন করেছেন বিভিন্ন পিস গ্রুপকে, রাজনীতিতে সক্রিয় বিভিন্ন সংগঠনকে, উইমেন্স স্ট্রাইক ফর পিস, দ্য উইমেন ইন্টারন্যাশনাল লিগ অব পিস অ্যান্ড ফ্রিডম—কাউকে বাদ রাখেননি। সবাই সমবেদনা জানিয়েছে। কিন্তু তারা ব্যস্ত ভিয়েতনাম যুদ্ধ নিয়ে। অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, যাঁদের অনেকেই দক্ষিণ এশিয়া বিশেষজ্ঞ এবং স্টেট ডিপার্টমেন্টের পরামর্শক হিসেবেও কাজ করছেন, তাঁদের কাছেও সাহায্য চেয়েছেন, চিঠি লিখেছেন, কিন্তু তাঁরাও কেউ জড়াতে চাননি।
শেষ পর্যন্ত এপ্রিলের শেষাশেষি, অনেক চেষ্টায় বাঙালি ও মার্কিনদের ছোট একটা দলকে একত্র করে গঠন করা হলো ‘ফ্রেন্ডস অব ইস্ট বেঙ্গল’।
এই দলের কারোরই এর আগে এ ধরনের সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড চালানোর অভিজ্ঞতা নেই। তাই দলটি শেষ পর্যন্ত ভালোমতো কাজ করবে কিনা এই নিয়েও যথেষ্ট সন্দেহ ছিল। কিন্তু সুলতানা ও অন্যান্য বাঙালি এবং মার্কিনদের আন্তরিক চেষ্টায় ধীরে ধীরে সংগঠনটি শক্তি অর্জন করে পূর্ব পাকিস্তানের পক্ষে নানা রকম কর্মকাণ্ড চালাতে শুরু করে, ফিলাডেলফিয়ার বাইরেও যোগাযোগ হতে থাকে বাংলাদেশের প্রতি সমব্যথিদের সঙ্গে।
২২ জুন টাইমের রিপোর্ট থেকেই যখন জানা গেল: ‘এস এস পদ্মা’ নামে একটি পাকিস্তানি জাহাজ বাল্টিমোর বন্দরে অস্ত্র বোঝাই করবে।
ফলে ফ্রেন্ডস অব ইস্ট বেঙ্গল এবং ফিলাডেলফিয়ার কোয়েকার সংগঠন একত্র হয়ে সিদ্ধান্ত নিল:‘পদ্মা’য় অস্ত্রের চালান ঠেকানোর চেষ্টা চালাবে তারা।
ড. উইলিয়াম গ্রিনাউ জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, ১৯৬২ থেকে ১৯৬৫ পর্যন্ত পূর্ব পাকিস্তানে কলেরা নিয়ে গবেষণা করেছেন। তিনি পেন্টাগনের একটি গোপন সূত্র থেকে জানতে পারেন, শুধু পদ্মা নয় একাধিক পাকিস্তানি জাহাজ অস্ত্রের চালান গ্রহণ করতে যুক্তরাষ্ট্র অভিমুখে রয়েছে। এর একটি কিংবা দুটি আসছে ইস্ট কোস্টের বন্দরগুলোতে। এ খবর পাওয়ামাত্র গ্রিনাউ দেখা করেন টাইম-এর সাংবাদিক ট্যাড জুলের সঙ্গে। তারই ফল ২২ জুন টাইম-এর রিপোর্ট। জুল লেখেন: নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও পাকিস্তানে অস্ত্র পাঠানো হচ্ছে। গ্রিনাইয়ের সূত্র ব্যবহার করেই...টাইম-এ প্রকাশিত এই প্রতিবেদনে ট্যাড পদ্মা নামের পাকিস্তানের জাহাজের নাম সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করেছিলেন। বলা হয়, পদ্মায় যুদ্ধবিমানের খুচরা যন্ত্রাংশ ও সামরিক যানের যন্ত্রাংশ এবং গোলাবারুদ সরবরাহ করা হবে।

কোয়েকারের কজন কীর্তিমান
কোয়েকার সদস্যদের শুরুর দিকে আন্দোলনে খানিকটা দ্বিধাদ্বন্দ্ব থাকলেও ফ্রেন্ডস অব ইস্ট বেঙ্গল যোগ দেওয়ার পর, সুলতানার মুখে পূর্ব পাকিস্তানে নিরীহ মানুষের ওপর অত্যাচার-নিপীড়নের কাহিনি শুনে সব দ্বিধাদ্বন্দ্ব দূর হয়ে যায়। প্রথম দিকের ৩০-৪০ জন দলের সদস্য সংখ্যা এক পর্যায়ে গিয়ে দাঁড়ায় ২০০ জনের ওপরে। এদের একজন রিচার্ড টেলরের পুরোনো বন্ধু জ্যাক প্যাটারসন—বাল্টিমোরের আমেরিকান ফ্রেন্ডস সোসাইটির বাল্টিমোর শাখার সভাপতি—পত্রিকা-ম্যাগাজিন পড়ে এরই মধ্যে পাকিস্তানযুদ্ধের অনেক খবরই তিনি জেনেছেন। এসেছেন অ্যালেক্স কক্স—লাল চুলের এক টেক্সান, ফিলাডেলফিয়া স্কুল কাউন্সেলর, সদ্য ন্যাশনাল এডুকেশন কনভেনশন শেষ করে ফিরেছেন। ‘আমাদের ট্যাক্সের টাকায় মিলিটারি সাহায্য যাচ্ছে পাকিস্তানে। এটা আমার মধ্যে এক ধরনের অসুস্থ অনুভূতি তৈরি করে...জাহাজ আটকানোর পরিকল্পনাটা আমার কাছে নাটকীয় মনে হলেও এই ঘটনা থেকে মার্কিন জনগণ প্রতিবাদের কথা জানতে পারবে।’ বাল্টিমোর সানকে বলেছিলেন।
ফিলাডেলফিয়া শহরতলির এক গোলাঘরের কর্মচারী ওয়েন লাউজার। ২৩ বছর বয়সী এই শান্তিকর্মী এর আগেও ১৯৬৯ সালে ক্লিভল্যান্ড থেকে ওয়াশিংটন পর্যন্ত যুদ্ধবিরোধী এক পদযাত্রায় অংশ নিয়ে প্রতিবাদলিপি দিয়েছিলেন মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রীর কাছে। ওয়েনই প্রথম প্রস্তাব করেন জাহাজ প্রতিরোধে ক্যানো (ছোট আকারের নৌকা) ব্যবহার করার। ওয়েন নিজেও একজন দক্ষ ক্যানো-চালক।
স্যালি উইলোবি বড় হয়েছেন কোয়েকার শান্তিকর্মীবেষ্টিত পরিবারে। তাঁর বাবা জর্জ উইলোবি ও মা লিলিয়ান গান্ধীবাদে দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেন। ২৪ বছর বয়সী স্যালি মাত্র কিউবায় নৌকা চালিয়ে যুদ্ধবিরোধী এক শান্তি অভিযাত্রা শেষ করে ফিরেছেন। পাকিস্তানি জাহাজ হটানোর পরিকল্পনায় তিনিও রোমাঞ্চিত হয়ে ওঠেন।
কোয়েকারের আরেক সদস্য ফিলাডেলফিয়া স্কুলের স্টাফ পারসন মাল স্কট আন্দোলনে যোগ দেওয়ার অঙ্গীকার করেন তার পুরো পরিবার নিয়ে।

পদ্মা নিয়ে ধূম্রজাল
বাল্টিমোর সান-এ ছোট্ট একটা সংবাদ ছাপা হয় বিজনেস পাতায়: বুধবার, পদ্মা ভিড়বে বাল্টিমোরে, ইস্ট ওয়েস্ট শিপিং এজেন্সি।
১১ জুলাই বাল্টিমোর হারবারে প্রতিবাদ সভার আয়োজন করা হয়। প্রতিবাদকারীরা মিছিল নিয়ে হাজির হন বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ভবনের সামনে, বন্দরে। আন্দোলনের এই সময়ে একেকজন সদস্য দিনে ১৮ ঘণ্টার বেশি কাজ করেছেন। কর্মীরা শুধু আন্দোলনের কর্মকৌশল নির্ধারণেই সীমাবদ্ধ থাকেননি। তাঁরা লিফলেট, প্ল্যাকার্ড-সাইন তৈরি; প্রেস রিলিজ, টিভি স্টেশনে খবর পাঠানোর মতো কাজও করেছেন।
পাকিস্তানি জাহাজ পদ্মার ভেড়ার কথা ছিল বন্দরের ৮ নম্বর পিয়ারের কভিংটনে। কিন্তু ১৩ জুলাইয়েও পদ্মার দেখা নেই। ‘এক শ একটা গুজব ছড়াচ্ছে চারদিকে’, বিল ময়ার লেখেন তাঁর জার্নালে, ‘লোকজন আতঙ্কিত হয়ে ভাবছে, পদ্মা কোথায়?’
অন্যদিকে বন্দর কর্তৃপক্ষ, পদ্মার এজেন্ট ইস্ট-ওয়েস্ট শিপিং এজেন্সি—কেউ পদ্মা নিয়ে মুখ খুলতে রাজি নয়। মুখে সবাই কলুপ এঁটে বসে আছে যেন। বন্দর কর্তৃপক্ষের এক কর্মকর্তা জানান, পদ্মা আদৌ বাল্টিমোরে আসবে কি না, তারই নিশ্চয়তা নেই।
এদিকে পদ্মার আগের যাত্রায় জাহাজ থেকে লাফিয়ে পড়ে বাল্টিমোরে আশ্রয় নিয়েছিলেন, এমন কয়েকজন বাঙালি নাবিকও যোগ দিয়েছেন আন্দোলনে। তাঁরা জড়ো হয়েছেন বন্দরের হকিন্স পয়েন্টে। পদ্মা বন্দরে ঢুকলে তাঁরাই সবার আগে দেখতে পাবেন। দেখামাত্র খবর ছড়িয়ে দেওয়া হবে অন্য আন্দোলনকারীদের মধ্যে।
সর্বশেষ বন্দরের বে পাইলট জানান, পদ্মা বন্দরে ভিড়বে ১৪ জুলাই, বুধবার।

শেষ কথা
১৪ জুলাই সকালে ৮ নম্বর পিয়ার অভিমুখী যাত্রা শুরু হলো আন্দোলনকারীদের। শুরুতে দলটা ছোট থাকলেও দেখতে দেখতে জমায়েত দুশর কাছাকাছি চলে গেল। খবর পেয়ে হাজির হয়েছে টিভি ক্রু, বিভিন্ন পত্রিকার সাংবাদিক আর পুলিশ। জাহাজের কোনো কার্যক্রমে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করা হলে মিছিলকারীদের গ্রেপ্তারে পুলিশ পিছপা হবে না। বার্তা খুব স্পষ্ট, কিন্তু বোঝা যাচ্ছিল, পদ্মার বিরুদ্ধে গড়ে ওঠা প্রতিবাদ কর্মসূচিতে তাদেরও নৈতিক সায় আছে। নেতৃত্বে রিচার্ড টেলর, ছোট ছোট নৌকা ক্যানো আর কায়াক নিয়ে নেমে পড়ল তাঁরা: ওয়েন লাউজার আর মাল স্কট ৮ নম্বর পিয়ারের কাছাকাছি গিয়ে দেখে, সেখানে আগেই আরও তিনটি কায়াক নিয়ে পৌঁছে গেছে স্যালি উইলোবি, স্টেফানি হলিম্যান আর অ্যালেক্স কক্স। কিন্তু পদ্মার কোনো দেখা নেই তখনো। ফলে ক্যানো আর কায়াকের ৮ নম্বর পিয়ার অভিমুখী এই অবরোধযাত্রা পরিণত হলো নিছক এক মহড়ায়। উপকূল থেকে ওয়াকিটকিতে বিল মারে জানাল, পাকা খবর জানা গেছে, পদ্মা বন্দরে ভিড়বে রাতে। কাজেই সবাই স্টোনি হাউসে ফিরে এল। নৌকাগুলো যেকোনো মুহূর্তে পানিতে নামার উপযোগী করে তৈরি রাখা হলো।
সন্ধ্যা ছটায় যখন সাপার গরম করা হচ্ছিল, তখনই ফোন বেজে উঠল, পদ্মা হারবারে ঢুকেছে।
এর পরের ঘটনা: ক্যানো আর কায়াকে চেপে বিশাল আকৃতির পদ্মার কাছাকাছি যাওয়ার চেষ্টা করে গ্রেপ্তার হলো—রিচার্ড টেলর, মাল স্কট, স্যালি উইলোবি, স্টেফানি হলিম্যান, ওয়েন লাউজারসহ মোট সাতজন। যদিও এক রাতের বেশি জেলে কাটাতে হলো না তাঁদের। এরপর দ্রুত ঘটনা ঘটতে শুরু করল। বন্দরের মাল ওঠানো-নামানোর কাজে নিয়োজিত লংসোরম্যান অ্যাসোসিয়েশন আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আলোচনার পর পদ্মায় কোনো কারগো ওঠা-নামায় তাদের শ্রমিক অংশ নেবে না বলে ঘোষণা দিল।
ফিলাডেলফিয়ার এই অহিংস আন্দোলন শেষ পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে আমেরিকার অন্যত্রও। পদ্মার মতো সামরিক সরঞ্জাম না ভরেই আরও পাকিস্তানি জাহাজকে ফিরে যেতে হয় নিউইর্য়ক থেকে সুটলাজ, ফিলাডেলফিয়া সিটি হারবার থেকে আল-আহমাদি জাহাজকে। আন্দোলন পৌঁছে যায় হোয়াইট হাউসের দোরগোড়া পর্যন্ত। সেখানে শান্তিকামী মানুুষ ভারতে বাঙালিদের শরণার্থী শিবিরের আদলে গড়ে তোলে প্রতিবাদ ক্যাম্প।
সূত্র: রিচার্ড টেলরের ব্লকেড গ্রন্থ, ৫ ডিসেম্বর প্রথম আলো কার্যালয়ে নেওয়া স্যালি উইলোবির সাক্ষাৎকার

Source : http://www.prothom-alo.com/detail/date/2011-12-09/news/207249
Md. Abdullah-Al-Mamun (Badshah)
Senior Assistant Director
Daffodil International University
01811-458850
cmoffice@daffodilvarsity.edu.bd
www.daffodilvarsity.edu.bd

www.fb.com/badshahmamun.ju
www.linkedin.com/in/badshahmamun
www.twitter.com/badshahmamun