গবেষণা নিয়ে ৫ প্রশ্ন (দৈনিক প্রথম আলো, ১৩/০১/২০২০ )

Author Topic: গবেষণা নিয়ে ৫ প্রশ্ন (দৈনিক প্রথম আলো, ১৩/০১/২০২০ )  (Read 2298 times)

Offline nafees_research

  • Sr. Member
  • ****
  • Posts: 344
  • Servant of ALLAH
    • View Profile
গবেষণা নিয়ে ৫ প্রশ্ন

আমাদের দেশের বহু তরুণ এখন দেশ-বিদেশে গবেষণা করছেন। নামী জার্নালেও প্রকাশিত হয়েছে অনেকের গবেষণাপ্রবন্ধ। গবেষণায় আগ্রহ আছে অনেকের। কিন্তু নানা প্রশ্ন ঘুরপাক খায় শিক্ষার্থীদের মনে। এমনই পাঁচটি প্রশ্নের উত্তর থাকছে এবারের মূল রচনায়।

গবেষণা নিয়ে ৫টি প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন ৫ জন বাংলাদেশি গবেষক।

১. রাগিব হাসান
সহযোগী অধ্যাপক, কম্পিউটারবিজ্ঞান বিভাগ, যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব অ্যালাবামা অ্যাট বার্মিংহাম
গবেষণা কেন গুরুত্বপূর্ণ?

বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে স্নাতকে যাঁরা গবেষণা করছেন, গবেষণাপত্র প্রকাশ করছেন, তাঁদের বিদেশে উচ্চশিক্ষার সুযোগ অনেক বেশি। বিভিন্ন জার্নালে প্রকাশিত গবেষণাপত্র, প্রবন্ধ, পোস্টার উপস্থাপনকে যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশের নামীদামি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির ক্ষেত্রে বিশেষভাবে গুরুত্ব দেওয়া হয়। বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে গবেষণার অভিজ্ঞতা বিদেশে স্নাতকোত্তর ও পিএইচডি ডিগ্রি অর্জনে ভর্তির ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের গ্রহণযোগ্যতা বাড়িয়ে দেয়। দেশে গবেষণার অভিজ্ঞতা থাকলে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার ক্ষেত্রে অনুদান, ফেলোশিপ, অ্যাসিস্ট্যান্সি, বৃত্তির মাধ্যমে আর্থিক সহযোগিতা পাওয়ার সুযোগ থাকে।

গবেষণা শুধু উচ্চশিক্ষার সুযোগকে বিস্তৃত করে না, ভবিষ্যতের কর্মবাজারেও দারুণ কার্যকর। যে বিষয়ে গবেষণা করছেন, সে বিষয় নিয়ে কাজ করা কোনো না কোনো আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান আপনার কর্মস্থল হতে পারে। গবেষণারত অবস্থায় অনেক প্রযুক্তিগত ও বৈজ্ঞানিক গবেষণাগারে কাজের সুযোগ পান গবেষকেরা। গবেষণাকালীন সময়ে বিভিন্ন দেশে পেপার উপস্থাপন ও কনফারেন্সে অংশগ্রহণের সুযোগ থাকে।

যাঁরা ভবিষ্যতে শুধু শিক্ষক বা গবেষক হতে চান, তাঁদের জন্যই শুধু গবেষণা নয়, গবেষণা আসলে উচ্চশিক্ষার একটি অংশ। স্নাতক-স্নাতকোত্তর পর্যায়ে গবেষণায় আমাদের দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বেশি জোর দেওয়া প্রয়োজন।

২. সাইফুল ইসলাম
পিএইচডি গবেষক, কুইন্সল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়, অস্ট্রেলিয়া
গবেষণার কাজ কোন সময়ে শুরু করা উচিত?

আমাদের দেশে বেশির ভাগ শিক্ষার্থীই স্নাতক পর্যায়ে গবেষণার দিকে তেমন মনোযোগী নন। কিন্তু গবেষণা নিয়ে ভাবনা আসলে বিশ্ববিদ্যালয়জীবনের শুরু থেকেই করা উচিত। যে বিষয়েই পড়ুন না কেন, প্রথম ও দ্বিতীয় বর্ষ থেকেই ভবিষ্যতে কোন বিষয়ে গবেষণা করতে চান, তা খুঁজতে থাকুন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় ও তৃতীয় বর্ষ গবেষণার মনন বিকাশের দারুণ সময়। হুট করে তো একদিন গবেষক হয়ে ওঠা যায় না, তাই এই সময়কে গোছানোর জন্য কাজে লাগানো প্রয়োজন। স্নাতকোত্তর পর্যায়ে অনেকে তাড়াহুড়া করে গবেষণা শুরু করেন। তখন একটু বেশি চাপ হয়ে যায়। যত আগে শুরু করা যায়, যত আগে গবেষণার কৌশল সম্পর্কে শেখা যায়, আর্টিকেল লেখার চর্চা করা যায়, ততই নিজেকে সামনে এগিয়ে নেওয়ার সুযোগ থাকে। বিভিন্ন জার্নাল পেপারে আর্টিকেল জমা দেওয়ার নিয়ম জানতে হবে। বিভিন্ন সেমিনার ও সম্মেলনে অংশগ্রহণের মাধ্যমে কোন কোন ক্ষেত্রে নিজেকে গবেষক হিসেবে তৈরি করবেন, তা জানার সুযোগ আছে। যে বিষয়ে গবেষণা করতে চান, তা নিয়ে বিশেষজ্ঞ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ইমেইলে যোগাযোগের চেষ্টা করতে পারেন। গবেষক হিসেবে নেটওয়ার্ক গড়ে তোলাও জরুরি।

৩. শরিফা সুলতানা
পিএইচডি ইন ইনফরমেশন সায়েন্স, কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়, যুক্তরাষ্ট্র
কীভাবে বেছে নেব গবেষণার বিষয়?

গবেষণার দুনিয়া অনেক বড়, উন্মুক্ত। নানা বিষয়ে গবেষণার সুযোগ আছে। যাঁরা গবেষণার অ আ ক খ মোটামুটি জানেন, তাঁদের জন্য পুরো প্রক্রিয়া বোঝা সহজ। যে বিষয়ে পড়ছেন বিশ্ববিদ্যালয়ে, তা নিয়ে যেমন গবেষণার সুযোগ আছে, তেমনি নিত্যনতুন অসংখ্য বিষয় আছে। আমি যেমন মানুষ ও কম্পিউটারে মিথস্ক্রিয়া ও ডিজিটাল সিগন্যাল প্রসেসের মতো বিষয় নিয়ে গবেষণা করছি। নিজের বিষয়ের বাইরেও আমাকে জানতে হচ্ছে, শিখতে হচ্ছে। প্রকৌশলের শিক্ষার্থী হওয়া সত্ত্বেও কবিরাজি চিকিৎসা নিয়ে আমার একটি গবেষণাপত্র ২০১৯ সালে প্রকাশিত হয়।

গবেষণার ক্ষেত্রে আসলে নিজের পছন্দের বিষয়কে যেমন গুরুত্ব দিতে হয়, তেমনি যে বিষয় নিয়ে কাজের সুযোগ আছে, তা ভাবা জরুরি। প্রকৌশল কিংবা জীববিজ্ঞানের কোনো বিষয়ে পড়েও সামাজিক বিজ্ঞানের সঙ্গে সম্পৃক্ত কোনো গবেষণাপত্র তৈরি করতে পারেন। স্নাতকে যে বিষয়ে পড়ছেন, বা যে কোর্সে আগ্রহ তৈরি হয়েছে, তা নিয়েই শুরু করুন। ধীরে ধীরে জানার দুনিয়া বড় করতে হবে, গবেষণাকে বিস্তৃত করতে হবে। গবেষণায় তাত্ত্বিক পড়াশোনার দিকে গুরুত্ব দেওয়া হয়। বিভিন্ন গবেষণা কৌশল, তথ্য বিশ্লেষণ, তথ্য সংগ্রহের মতো বিষয় সম্পর্কে জানতে হবে। ধীরে ধীরে আপনার গবেষণার বিষয় ও আগ্রহ সম্পর্কে জেনে যাবেন।

৪. আলিয়া নাহিদ
প্রধান, ইনিশিয়েটিভ ফর নন কমিউনিকেবল ডিজিজেস, আইসিডিডিআরবি ও ক্লিনিক্যাল রিসার্চ প্ল্যাটফর্ম বাংলাদেশ
একজন গবেষকের মধ্যে কী কী দক্ষতা বা গুণ থাকা উচিত?

আগ্রহ আর ধৈর্যশক্তির জোরে যেকোনো শিক্ষার্থীই গবেষক হয়ে উঠতে পারেন। বুদ্ধিমত্তা ও কৌতূহল গবেষক হওয়ার জন্য ভীষণ জরুরি। অন্যদের সঙ্গে কাজ করার আগ্রহ, নেতৃত্বদান, অন্য গবেষকের অধীনে কিংবা দলের সঙ্গে কাজ করার কৌশল আয়ত্ত করতে হবে। নিজেকে যেমন বুঝতে হবে, তেমনি নিজের যোগ্যতাকে বিকাশে সময় দিতে হবে। তথ্য সংগ্রহ ও বিশ্লেষণের সক্ষমতা থাকতে হবে।

গবেষণায় শেষ বলে কিছু নেই, তাই সব সময় পর্যবেক্ষণ মনোভাবে থাকতে হবে। অনুসন্ধিৎসু হতে হবে।

গবেষকদের আরেকটি গুণ থাকা ভীষণ জরুরি—তা হচ্ছে সততা ও নৈতিকতা। মানসিকভাবে সৎ ও নৈতিক হওয়া প্রত্যেক গবেষকের জন্য যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি কাজের ক্ষেত্রেও নৈতিক থাকতে হবে। গবেষক হিসেবে গবেষণা নিয়ে অনেক সমালোচনা কিংবা নেতিবাচক ফল আসতে পারে, তাই বলে হাল ছেড়ে দিলে চলবে না।

শিক্ষক ও বিশেষজ্ঞ পেশাজীবীদের সঙ্গে গবেষণার সুযোগ কাজে লাগাতে হবে। বর্তমান সময়ে গবেষণার ক্ষেত্রে যেসব টুলস বা প্রযুক্তি ব্যবহৃত হয়, যেমন এসপিএসএস, ম্যাটল্যাব—এগুলোর ব্যবহার শিখতে হবে।

৫. নিগার সুলতানা
পিএইচডি, ওয়াটারলু বিশ্ববিদ্যালয়, কানাডা
গবেষণার মাঝপথে এসে থমকে গেলে কী করব?

গবেষণা অনেক সময়ের বিষয়। হুট করে শুরু করা যায় না। তবে বাস্তবতার কারণে গবেষণায় বাধা আসতেই পারে, থেমে যেতে হতে পারে। গবেষণায় হয়তো ফান্ড কমে গেল কিংবা বন্ধ হয়ে গেল। হয়তো গবেষণা করছেন, কিন্তু ফল পাচ্ছেন না। গবেষণা তত্ত্বাবধায়ক, সহগবেষকদের সঙ্গে অনেক বিষয়ে তর্ক ও বিতর্কের অবকাশ থাকে।

একজন গবেষককে সব পরিস্থিতির জন্য তৈরি থাকতে হবে। প্রয়োজনে সুপারভাইজার ও অন্যান্য গবেষকদের সহায়তা নিতে হবে। গবেষণা আসলে প্রকল্প ব্যবস্থাপনা। কাজটাকে ছোট ছোট ভাগ করে নিতে হবে। অনেকেই গবেষণা শুরুর পরে হাল ছেড়ে দেন। তরুণ গবেষকদের মধ্যে এই প্রবণতা খুব বেশি। প্রয়োজনে শিক্ষক ও মনোবিদদের পরামর্শ নিতে হবে।

গবেষক হিসেবে আপনার জীবনের চাপ অন্যরা গুরুত্ব না–ও দিতে পারে। এ ক্ষেত্রে নিজের স্বাস্থ্যের দিকে খেয়াল রাখা জরুরি। প্রয়োজনে একটু বিরতির পর আবার জেদ নিয়ে ফিরে আসুন। কাজে আগ্রহ হারিয়ে ফেলা তরুণ গবেষকদের সাধারণ সংকট বলা যায়। এ ক্ষেত্রে জীবনের অন্যান্য বিষয় আর শখকেও গুরুত্ব দিতে হবে। গবেষণাকাজ ও জীবনের মধ্যে ‘সামঞ্জস্য’ এনে নিজেকে উজ্জীবিত করতে হবে।

Source: https://www.prothomalo.com/education/article/1633959/?fbclid=IwAR1dX2EiGJELprngy2RRRGBld-9wRkRwuq-5mCUJy--VT5--3WuGIrS8AxE
« Last Edit: January 13, 2020, 03:06:39 PM by nafees_research »
Nafees Imtiaz Islam
Deputy Director, IQAC, DIU and
Ph.D. Candidate in International Trade
University of Dhaka

Tel.:  65324 (DSC-IP)
e-mail address:
nafees-research@daffodilvarsity.edu.bd  and
iqac-office@daffodilvarsity.edu.bd

Offline Umme Atia Siddiqua

  • Sr. Member
  • ****
  • Posts: 274
  • Test
    • View Profile