টিভির বিবর্তন নিয়ে ভাবতেছিলাম। আমাদের সময় একটাই চ্যানেল ছিল আমাদের দেশে। সেটি হল ৯ নাম্বার চ্যানেল। এইটাতে কেবলমাত্র বি টি ভি দেখতে পারতাম আমরা। অল্প কিছুদিন এর পাশাপাশি ৬ নাম্বার চ্যানেল চালু করা হল। এইটাও বি টি ভি। আমাদের ভাই বোনদের মধ্যে টি ভি দেখা নিয়ে ঝগড়া ঝাটি শুরু হল। একজন দেখবে ৯ নাম্বার চ্যানেল তো আরেকজন দেখবে ৬ নাম্বার।
আমাদের সময়টা ছিল কিছুটা ভিন্ন। দাদা - নানাদের মাঝে এমনও কেউ কেউ ছিল - যারা সাধারণ গান শোনাকেও গর্হিত কাজ বলে মনে করতেন। অনেক সময়ই বাসায় এমন দাদা - নানাদের উপস্থিতিতে টিভি বন্ধও রাখা হত।
টি ভি তখন ছিল ঢাউস একটি বড় বাক্সের মত। যার কাঠামোর অনেক অংশই কাঠের তৈরি থাকতো। টেলিভিশনের পিছনে কাঠের কভারের ফুটো দিয়ে কিছু বাল্ব জ্বলতে দেখা যেত। টিভি গুলোর পায়াও থাকতো। রুমের এক মাথায় টি ভি দাড়িয়ে থাকতো তার কাঠের চার পায়ে ভর দিয়ে। রিমোট কন্ট্রোল তখন ছিল না। শীতকালে লেপ কম্বল গায়ে দিয়ে আয়েস করে বসে টিভি দেখার সময় সাউন্ড বা আলো কমাতে বা বাড়াতে হলে - উঠতে ইচ্ছা হত না।
টি ভি তে সিগারেটের বিজ্ঞাপন দেখানো সাধারণ একটি ব্যাপার ছিল। ছিল না কোন সংবিধিবদ্ধ সতর্কীকরণ।
অনেকদিন কেবলমাত্র সাদা কালো টেলিভিশনই ছিল। অনেক পরে রঙ্গিন টেলিভিশন দেখে আমরা সবাই মুগ্ধ হয়ে গিয়েছিলাম।
কোন দেশে কত সালে টেলিভিশন চালু হয়েছে - এইটা দিয়ে দেশের অবস্থা ব্যাখ্যা করতেও দেখেছি।
তখনকার খবর পাঠকদের অনেক কষ্ট সহ্য করতে হত। এক নাগারে ২০ - ৩০ মিনিট কাগজের লেখা খবর পড়তে হত তাদের। এক পৃষ্ঠা পড়া হলে তা পাশে রেখে আবার নতুন পৃষ্ঠার খবর পড়া শুরু করতে দেখতাম।
বিজ্ঞাপন বা এড গুলো থাকতো লিখিত আকারে। যেন একটি ল্যান্ড স্কেপ কাগজের পোস্টার। এড চেঞ্জ হওয়ার সময় টুট করে একটি শব্দ হত।
তখনকার নাট্য অভিনেতা, গানের শিল্পী থেকে সবাইকেই অনেক দক্ষ হতে হত।
এখনকার তুলোনায় অনেক ধীর গতির অনুষ্ঠান হত। তার পরেও তখনকার টেলিভিশনের অনেক কিছু এখনও অতুলোনীয় মনে হয়।