নিউমোনিয়া জয় করা সম্ভব
অধ্যাপক শুভাগত চৌধুরী
ফুলফুসের সংক্রমণ হলো নিউমোনিয়া। এই সংক্রমণের কারণে ফুসফুসে পানি জমে। এর ফলে প্রচণ্ড কাশি, জ্বর ও শ্বাসকষ্টে অতিষ্ট হয়ে ওঠে জীবনধারন। আর অবস্থার অবনতি হলে হুমকির মুখে পড়ে জীবন।
পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের প্রধান ঘাতক হলো নিউমোনিয়া। বিশ্বজুড়ে প্রতি ২০ সেকেন্ডে প্রাণ হারায় একজন শিশু। শিশু মৃত্যুর এই হার এইডস ও ম্যালেরিয়ায় সম্মিলিত প্রাণহানির চেয়েও বেশি।
ভয়াল এই রোগে প্রতি বছর প্রাণ হারায় ১৫ লাখ শিশু।
বিশ্বজুড়ে নিউমোনিয়াজনিত মোট শিশু মৃত্যুর ৯৯ শতাংশই ঘটে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে। অথচ এ অকাল মৃত্যু ঠেকানো সহজ। এদের প্রাণ বাঁচানোর জন্য রয়েছে নিরাপদ, কার্যকর ও সাশ্রয়ী কৌশল এবং উপায়।
এ যুদ্ধ জয় করা সম্ভব
টিকা ও এন্টিবায়োটিক দিয়ে, ঘরের অন্দরে বায়ুদূষণ ঠেকিয়ে ও নবজাতকদের প্রথম ছয় মাস মায়ের বুকের দুধ খাইয়ে প্রতিবছর ১০ লাখেরও বেশি শিশুর প্রাণ বাঁচানো সম্ভব।
শিশুর জন্মের পর প্রথম ছয় মাস কেবল মায়ের বুকের দুধ দিলে ১৫ থেকে ২৩ শতাংশ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় একটি শিশুর।
পুষ্টিহীনতার কারণে শিশুর দেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস পায়। ফলে নিউমোনিয়াসহ অন্যান্য রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে। আর তাই সুস্থ শিশুর জন্য চাই পর্যাপ্ত পুষ্টি।
অনাগত শিশুর ওজন যেন স্বভাবিকের চেয়ে কম না হয় সেজন্য গর্ভবতী মায়ের পুষ্টির দিকে খেয়াল রাখাও অত্যন্ত জরুরি।
বায়ুদূষণের ফলেও নিউমোনিয়ার বিস্তার ঘটে। তাই শিশুরা যে ঘরে বা স্থানে থাকে সেখানে ধূমপান ও জৈব জ্বালানির ব্যবহার পরিহার করলে শিশুর ফুসফুস থাকবে সুরক্ষিত। ঘরের তাপমাত্রা যেন স্বাভাবিক তাপমাত্রার অধিক না হয় সজাগ থাকতে হবে সেদিকেও।
শিশুদের সংস্পর্শে আসার আগে অবশ্যই ভালো করে হাত ধুয়ে নিতে হবে। এতে রোগজীবাণুর বিস্তার কমে অনেকখানি।
২০০৯ সালে শিশু নিউমোনিয়ার রুখতে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলো ‘দি গ্লোবাল কোয়ালিশন’। জনসচেতনতা সৃষ্টির জন্য ও নীতিনির্ধারকদেরকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানানোর জন্য প্রতি বছর ১২ নভেম্বর পালিত হয় বিশ্ব নিউমোনিয়া দিবস।
প্রতিরোধ
নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার আগেই প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরি। যেমন সঠিক সময়ে টিকাদান ও এন্টিবায়োটিকের প্রয়োগ নিউমোনিয়া সংক্রমণ থেকে শিশুদের রক্ষা করে।
টিকাদান হলো প্রাণঘাতী এ শিশুরোগ প্রতিরোধ করার সর্বোত্তম নিরাপদ ও কার্যকর পদ্ধতি।
নিউমোনিয়ার জন্য দায়ী ভাইরাস হল- নিউমোকক্কাস (স্ট্রেপটোকক্কাস নিউমোনি) ও হেমোফাইলাস ইনয়ুযেকি। এই দুই ভাইরাসকে ধরাশায়ী করতে টিকাদানের বিকল্প নেই। নিউমোনিয়া টিকার পাশাপাশি চাই হাম ও হুপিংকফের টিকাও।
উন্নয়নশীল দেশগুলোতে অসংখ্য শিশু এসব টিকার আওতায় নেই। নিউমোনিয়ার আগ্রাসন থেকে শিশুদেরকে বাঁচাতে এসব টিকা সুলভ করতে হবে।
গুরুতর নিউমোনিয়া চিকিৎসা করা যায় এন্টিবোয়োটিক দিয়ে। প্রতি মাত্রা এন্টিবোয়োটিকের খরচ এক ডলারের কম হলেও প্রতি পাঁচ জন আক্রান্ত শিশুর মাত্র একজন এই সেবা পেয়ে থাকে। এসব দরিদ্র শিশুদের জন্য দ্রুত কার্যকর চিকিৎসা গ্রহণের দায় আমরা এড়াতে পারি না।
Source:
http://www.bdnews24.com/bangla/details.php?id=179056&cid=13