রক্ত উষ্ণ ছিল ডাইনোসরের, দাবি নয়া গবেষণায়

Author Topic: রক্ত উষ্ণ ছিল ডাইনোসরের, দাবি নয়া গবেষণায়  (Read 1039 times)

Offline Md. Azizul Hakim

  • Jr. Member
  • **
  • Posts: 93
  • Respect is everything.
    • View Profile
নখগুলো কাস্তের মতো বাঁকানো। বন্ধ দরজার ও পারে দাঁড়িয়ে সেই নখ মাটিতে ঠুকে চলেছে সে। শিকারের জন্য অপেক্ষা। ‘জুরাসিক পার্ক’ ছবির সেই দৃশ্য মনে আছে নিশ্চয়ই? ব্যস্‌! বিশ্ববাসীর কল্পনায় ডাইনোসর হয়ে উঠল শীতল রক্তের, খসখসে চামড়ার ভয়ঙ্কর সরীসৃপ। তবে সম্প্রতি ডাইনো-ডিমের জীবাশ্ম পরীক্ষা করে ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষকদল জানিয়েছে, বিলুপ্ত এই প্রাণী সম্পর্কে জনমানসে চলে আসা ধারণাগুলি অনেকাংশে ভুল। তাঁদের মতে, ঠান্ডা রক্ত নয়, রীতিমতো উষ্ণ রক্ত বইত ডাইনোসরদের শরীরে।

তাঁদের এই গবেষণাপত্রটি সম্প্রতি ‘জার্নাল অফ সায়েন্স অ্যাডভান্সেস’-এ প্রকাশিত হয়েছে। প্রধান গবেষক রবিন ডসনের মতে, ‘আমরা জানতে পেরেছি যে মেটাবলিজমের মাধ্যমে পরিবেশের নিরিখে দেহের উষ্ণতা বাড়ানোর বৈশিষ্ট্যটি ডাইনোসরদের এগিয়ে রেখেছিল।’

ডাইনোসরেরা শীতল রক্তের না উষ্ণ রক্তের, তা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই বিতর্ক চলছে। ১৯৬০-র দশকে জীবাশ্মবিদেরা প্রথম প্রশ্ন তোলেন, এদের অনেকেই তো দৈত্যাকৃতি হওয়া সত্ত্বেও বেশ তৎপর ছিল। কোনও ঠান্ডা রক্তের প্রাণীর পক্ষে এই সক্রিয়তা কি সম্ভব? এই বিতর্কে জল না পড়লেও, ২০১৪ সালের এক গবেষণায় দাবি ওঠে, এরা শীতল বা উষ্ণ রক্তের মাঝামাঝি গোত্রের প্রাণী ছিল। এ বার ডসনদের গবেষণা ভবিষ্যতে সিলমোহর পেলে তা বড়সড় পরিবর্তন আনতে পারে বিজ্ঞানীদের ধারণায়।

এই গবেষণার জন্য তিন গোত্রের ডাইনোসরের ডিমের খোলসের জীবাশ্ম পরীক্ষা করেছেন ডসনরা। মাংসাশী ট্রুডন (টি-রেক্সের ছোট জ্ঞাতি ভাই) এবং দুই নিরামিশাষী মাইয়াসরাস ও দৈত্যাকার মেগালুলিথাস। তাদের ডিমের খোলসের জীবাশ্ম বিশ্লেষণ করে ওই গবেষকদল এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন, ঠান্ডা রক্তের তত্ত্বকে ধ্রুব সত্য ধরে নেওয়ার কোনও কারণ নেই। ডসনের মতে, ‘বিবর্তনের দিক থেকে দেখলে উষ্ণ রক্তের পক্ষীকুল ও শীতল রক্তের সরীসৃপের মাঝামাঝি রয়েছে ডাইনোসররা। আমাদের গবেষণা অনুযায়ী, তাদের প্রধান গোষ্ঠীগুলির সকলেরই শরীরের তাপমাত্রা পারিপার্শ্বিকের তুলনায় উষ্ণতর ছিল।’


ওই খোলসের জীবাশ্মে অক্সিজেন ও কার্বন পরমাণু কী ভাবে সাজানো রয়েছে, সেটা দেখার চেষ্টা করেছিলেন গবেষকরা। লক্ষ্য ছিল, তার ভিত্তিতে জন্মদাত্রী ডাইনোসর মায়ের দেহের তাপমাত্রা হিসেব করা। বৈজ্ঞানিক পরিভাষায় এর নাম, ‘ক্লাম্পড আইসোটোপ প্যালিয়োথার্মোমেট্রি।’ ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব ও ভূপদার্থবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক পিনসেলি হালের কথায়, ‘যেহেতু ডিমগুলি দেহের ভিতর তৈরি হত, তাই এগুলিকে থার্মোমিটারের আদিম সংস্করণ বলা চলে।’ কিন্তু শুধু ওই খোলসের জীবাশ্ম পরীক্ষা করে কোনও স্থির সিদ্ধান্তে আসা সম্ভব নয়। তাই অন্যান্য শীতল রক্তের অমেরুদণ্ডী প্রাণীর ডিমের খোলসের জীবাশ্মের উপরও এক পরীক্ষা করেন তাঁরা। তখনই দেখা যায়, ডাইনোসরদের দেহের তাপমাত্রা পারিপার্শ্বিকের তাপমাত্রার তুলনায় বেশি। সহজ করে বললে, অন্যান্য সরীসৃপরা যেখানে উষ্ণতার জন্য পারিপার্শ্বিকের উপর নির্ভরশীল, সেখানে ডাইনোসররা নিজেরাই দেহের অন্দর থেকে তাপ উৎপাদন করতে সক্ষম ছিল। তবে বিভিন্ন প্রজাতির মধ্যে এই উষ্ণতার মাত্রায় তারতম্য ছিল। ওই গবেষকদলের হিসেব, ট্রুডনের নমুনা যেখানে তার আশপাশ থেকে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি উষ্ণ ছিল, সেখানে মাইয়াসরাস ও মেগালুলিথাসের ক্ষেত্রে ওই মাত্রা ছিল যথাক্রমে ১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস ও ৩ থেকে ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে।

জুরাসিক পার্ক ফ্র্যাঞ্চাইজির ছবিগুলিতে দর্শকরা এমন কিছু প্রজাতিকেও ‘দেখতে’ পেয়েছিলেন যাদের দেহে পালক রয়েছে, যাদের শরীর জোড়া হরেক কিসিমের রং। ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই গবেষকদলের ধারণা, অনেক ডাইনোসরকে শুধু দেখতেই সুন্দর ছিল বা পাখির মতো উড়তে পারত এমন নয়। সম্ভবত ঘুঘুর মতো ডাকও ছিল তাদের। অর্থাৎ ডাইনোসর মানেই কানফাটানো গর্জন, এ ধারণাও অনেকাংশে ‘হলিউডি মিথ’ বলে মনে করছেন তাঁরা।
Lecturer,
Department of CSE
azizul.cse@diu.edu.bd

Offline drrana

  • Sr. Member
  • ****
  • Posts: 325
  • Test
    • View Profile