আজানে শব্দ পরিবর্তন ও জুমা বন্ধের ব্যাপারে ইসলাম কী বলে?

Author Topic: আজানে শব্দ পরিবর্তন ও জুমা বন্ধের ব্যাপারে ইসলাম কী বলে?  (Read 751 times)

Offline Md. Siddiqul Alam (Reza)

  • Sr. Member
  • ****
  • Posts: 253
    • View Profile
১৩৪৬ ইং সাল থেকে নিয়ে প্রায় ১০ বছর ইতিহাসের সবচে বড় মহামারী হয়েছিল বিশ্বজুড়ে। আরবিতে আলমাউতুল আসওয়াদ নাম দেয়া হয়েছিল সেটিকে। আলমাউতুল আসওয়াদ অর্থ কালো মড়ক।

দামেস্কে একেক দিনে ৭০ হাজার মানুষ মারা গিয়েছিল তখন। বিস্ময়ের ব্যাপার হচ্ছে করোনার মতো কালো মড়কের সূচনাও হয়েছিল চীন থেকে। ইউরোপের মানুষ সবচে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল সেই মহামারীতে।

মিসরের আলেক্সান্ডার এলাকায়ও একেকদিন ২০ হাজার মানুষ মরেছিল। পুরো পৃথিবীর প্রায় অর্ধেক মানুষ মৃত্যু মুখে নিপতিত হয়েছিল মড়ক শেষের হিসাবে। আধুনিক জরিপ না হলেও ঐতিহাসিকদের দেয়া তথ্য সে সময়ের অবস্থা বুঝতে আমাদের সাহায্য করে।

আরবি ভাষায় তখন অসংখ্য পুস্তক লেখা হয়েছে মহামারী নিয়ে। সবচে বিখ্যাত কিতাব লিখেছেন হাফেজ ইবন হাজার আসকালানি। মৃ. ৮৫২ হিজরী। ইবন হাজারের (রহ.) দুই কন্যাও তার সময়ের মহামারীতে মারা গিয়েছিল। ইবন হাজার রচিত কিতাবের নাম বাযলুল মাউন ফি ফাজলিত তাউন।

তথ্যগুলো দেয়া হল যাতে কেউ মনে না করেন এমন বিশ্বব্যাপী ছড়িয়েপড়া ভাইরাস এই প্রথম। যারা ভাবছেন করোনাভাইরাস পৃথিবীর ইতিহাসে সবচে বড় মহামারীর আকার ধারণ করছে তাদের আরেকটু অপেক্ষা করা উচিত। যারা করোনাকে হেলা করছেন তাদেরও সচেতন হওয়া উচিত।

২০২০ থেকে ২০২৫ বা ২৬ সাল পর্যন্ত যদি চলতে থাকে এ মহামারী তাহলে পৃথিবীর চিত্রই হয়ত বদলে যাবে। অনেক বক্তা বিভিন্ন উত্তেজক বক্তৃতা করছেন জুমার নামাজ নিয়ে। পরিস্থিতি কী হয় কিছুই বলা যায় না।

বাংলাদেশে আল্লাহ না করুন যদি একদিনে ৭০ হাজার মানুষ মারা যায় তখন এভাবে ওয়াজ করতে পারবেন তো? আগাম কিছুই বলা যাচ্ছে না। সবার আগে প্রয়োজন ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে একতাবদ্ধ হয়ে ভাইরাস মুকাবিলার জন্য চেষ্টা করা।


উন্নত বিশ্বে প্রচুর চিকিৎসক ও চিকিৎসা সরঞ্জমাদি রয়েছে। সেই তুলনায় আমাদের অবস্থা খুবই করুণ। আমাদের প্রয়োজন হতে পারে অনেক স্বেচ্ছাসেবী। বিশেষ প্রশিক্ষণ দিয়ে করোনা রোগীদের সেবার জন্য প্রস্তুত করা লাগতে পারে।

এমন পরিস্থিতিতে জুমার নামাজ নিয়ে বিতর্ক খুবই হাস্যকর। যারা হুমকি দিয়ে ইউটিউব গরম করছেন তারা নিজেদেরই খাটো করছেন। নিজেদের মর্যাদা নষ্ট করার জন্য তাড়াহুড়োর কিছু নেই। পরিস্থিতি আমাদের কল্পনার চেয়েও খারাপ হতে পারে।

এহেন সময়ে শরিয়তের দৃষ্টিতে কয়েকটি মাসআলা তবু আলোচনা করা যেতে পারে।

প্রথমেই আসে আজান পরিবর্তনের কথা। সম্প্রতি কুয়েতের একটি আজান সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে। এক মুআজ্জিন তার আজানে হাইয়া আলাস সালাহ-এর স্থানে আলা সাল্লু ফি বুয়ুতিকুম বলে কান্নায় ভেঙে পড়েছেন।

এ নিয়েও আমাদের দেশের কতিপয় মুফতি মাসআলা দেয়া শুরু করেছেন। আজান বিকৃত করা হয়েছে বলে মাতম করছেন। অথচ বুখারী, মুসনাদু আহমাদ ও সুনান নাসাই প্রভৃতি গ্রন্থে সহি হাদীসেই এভাবে আজান দেয়ার কথা এসেছে।

নাফে’ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, যাজনান নামক স্থানে এক শীতের রাতে ইবনে ওমর রা. আজান দিলেন। এরপর তিনি ঘোষণা করলেন, ‘তোমরা আবাসস্থলেই নামায আদায় করে নাও!’

পরে তিনি আমাদের জানালেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সফরে বৃষ্টি বা শীতের রাতে মুয়াযযিনকে আজান দিতে বলতেন এবং সঙ্গে সঙ্গে একথাও ঘোষণা করতে বলতেন যে, ‘তোমরা আবাসস্থলেই নামায আদায় করে নাও!’ (সহিহ বুখারী, মুসলিম)

অঝোর বৃষ্টি ও প্রচণ্ড ঠাণ্ডায় রাসূল সা. বেলালকে নির্দেশ দিতেন এভাবে আজান দিতে। অবশ্য সাল্লু ফি রিহালিকুম বাক্যটি আজানের কোথায় উচ্চারণ করবে এ নিয়ে চার ইমামের মাঝে মতানৈক্য রয়েছে।

ইমাম আবু হানীফা রহ.-এর মতে সবভাবেই বলার অবকাশ রয়েছে। আজানের শেষে বা মাঝে যেমন, তেমনই পরিবর্তিত আজানে বলারও অবকাশ রয়েছে বিভিন্ন মাজহাবে। দুর্যোগের কারণে জামাতে নামাজ ত্যাগের অবকাশ যেমন আছে প্রয়োজনে মসজিদে জুমা বন্ধ করার নির্দেশ আসলে সেটাও শরীয়তের দৃষ্টিতে অসম্ভব নয়।

বিশেষত হানাফি মাজহাবে জুমার নামাজের জন্য মসজিদ শর্ত নয়। বড় জামাতও শর্ত নয়। ইমাম আবু ইউসুফ রহ.-এর মতে ইমাম ছাড়া মাত্র দু'জন থাকলেই জুমা আদায় করা যায়। এর অর্থ হচ্ছে প্রত্যেকে যার যার বাড়িতে পরিবারের সদস্যদের নিয়েও জুমা আদায় করতে পারে ফিকহে ইসলামীর দৃষ্টিতে।

এ সবই বলা হচ্ছে সামনের পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে। তা না হলে এখনও আমাদের দেশে সে পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। ইতালির মতো লক ডাউনের ঘোষণা আসেনি।

বিশ্ববিখ্যাত পরিব্রাজক ইবনে বতুতা রহ. ৭৪৯ হিজরির দামেস্কের বর্ণনা দিয়েছেন। সেখানে মহামারীর ফলে পথে-ঘাটে মানুষ মরে পড়ে ছিল। আকাশে শকুন উড়ছিল। বড় বড় গর্ত খুঁড়ে লাশগুলো টেনে গর্তে নামানো হচ্ছিল। এ সময় মুসলমানরা সবাই কুরআন হাতে পথে বেরিয়ে আসে। তিনদিন সবাই রোজা রেখেছিল।

খৃস্টানরা বাইবেল হাতে ইহুদিরা তাওরাত হাতে পথে নেমে আসে। সম্মিলিতভাবে সবাই মহান প্রভুর কাছে মিনতি করে। অবশেষে আল্লাহ তায়ালা রহম করেন। বস্তুত অবস্থা যদি সেই পর্যায়ে যায় আমাদের কোনো সতর্কতাই কাজে আসবে না।

অবশ্যই আমাদের আল্লাহমুখি হতে হবে। এখনও আমাদের পাপাচার কি বন্ধ হয়েছে? এখনও কি আমরা আল্লাহর দিকে ফিরতে পেরেছি? কোনো ধর্মের অনুসারীরাই আজকের দিনে ধর্ম মানে না।

এখন সময় হয়েছে ধার্মিক ও মানবিক বোধে উজ্জীবিত হওয়ার। আল্লাহ আমাদের সবাইকেই তাওফিক দিন। আমীন।

https://www.jugantor.com/islam-life

MD. SIDDIQUL ALAM (REZA)
Senior Assistant Director
(Counseling & Admission)
Employee ID: 710000295
Daffodil International University
Cell: 01713493050, 48111639, 9128705 Ext-555
Email: counselor@daffodilvarsity.edu.bd