করোনায় চালকবিহীন গাড়ি, ড্রোন ব্যবহারে চীনের অভিনব হোম ডেলিভারি সার্ভিস

Author Topic: করোনায় চালকবিহীন গাড়ি, ড্রোন ব্যবহারে চীনের অভিনব হোম ডেলিভারি সার্ভিস  (Read 445 times)

Offline Md. Sumon-ul Islam

  • Newbie
  • *
  • Posts: 43
  • Test
    • View Profile
    • Md. Sumon-ul Islam
করোনাভাইরাসের উৎপত্তিস্থল চীনে সংক্রমণ ঠেকাতে দুর্দান্ত ভূমিকা রেখেছে দেশটির শক্তিশালী হোম ডেলিভারি সার্ভিস। সংস্পর্শ এড়িয়ে বাড়িতে টাটকা শাক-সবজি, ফলমূলসহ প্রয়োজনীয় জিনিস পৌঁছে দিতে অভিনব ব্যবস্থা চালু করেছে প্রতিষ্ঠানগুলো। হোম ডেলিভারির জন্য চালকবিহীন গাড়ি ও সর্বোচ্চ আক্রান্ত অঞ্চলগুলোতে ড্রোন ব্যবহার করে ক্রেতার বাড়িতে জিনিসপত্র পৌঁছে দিচ্ছে অনেক প্রতিষ্ঠান।

সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট জানায়, গত জানুয়ারিতে উহানে লকডাউন শুরু হওয়ার পরপরই আতঙ্কিত লোকজন সুপার শপগুলোতে ভিড় করছিলেন।

নতুন ভাইরাসের খবর শোনার পর বাজার থেকে বেশি পরিমাণে চাল, ডাল, তেল ও শুকনো খাবার সংগ্রহ করেছিলেন উহানের বাসিন্দা লিয়ু ইলিন। আগে থেকে খাবারের বন্দোবস্ত রাখলেও দীর্ঘসময় ঘরবন্দি থাকার প্রস্তুতি ছিল না অবসরপ্রপ্ত এই স্কুল শিক্ষিকার। বাইরে বের হওয়ার ব্যপারে কঠোর নিষেধাজ্ঞার জারির পরপরই বাজার করা নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েন তার মতো অনেকেই। টাটকা শাক-সবজি, ফলমূল, মাছ-মাংস কীভাবে পাওয়া যাবে সে ব্যাপারে সবাই উদ্বিগ্ন ছিলেন।

স্বস্তির মিলল সার্বক্ষণিক হোম ডেলিভারি সার্ভিস চালু হবার পর। লিয়ু ইলিন বলেন, ‘মারাত্মক দুঃশ্চিন্তার মধ্যেই আমি জানতে পারলাম স্বেচ্ছাসেবী ও কমিউনিটি কর্মীদের একটি দল বাড়িতে খাবার পৌঁছে দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে। এরকম শক্তিশালী ব্যবস্থাপনার কারণেই লকডাউনের সময় আমাদের জীবন সহজ হয়েছে।’

বেইজিং এর রাজনৈতিক অর্থনীতিবিদ হু জিংদু বলেন, ‘করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের মধ্যে হোম ডেলিভারি সার্ভিস গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। বিভিন্ন অঞ্চলে যখন সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার জন্য কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছিল তখনও কাউকে না খেয়ে দিন কাটাতে হয়নি। তাদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে প্রয়োজনীয় সামগ্রী সরবরাহ করা হয়েছে।’

ইন্টারনেটের মাধ্যমে সব ধরনের যোগাযোগ চলছিল। কৃষক থেকে শুরু করে সুপার মার্কেট পর্যন্ত অনলাইনে যোগাযোগ চালু ছিল। ক্রেতারা অনলাইনে অর্ডার করতেন, ডেলিভারি কর্মীরা নিয়ম মেনে বাড়িতে পৌঁছে দিতেন।

লিউ জানান, নাম, ঠিকানা ও ফোন নম্বর ব্যবহার করে প্রয়োজনীয় জিনিস অর্ডার করতেন তিনি। এরপর নাম ও অর্ডার নম্বর এলাকার কমিউনিটি কর্মীদের কাছে পাঠাতেন। তারা এলাকার গেট থেকে জিনিসগুলো সংগ্রহ করে তার বাড়িতে দরজায় রেখে আসতেন।

শহর অঞ্চলের জনসংখ্যার ঘনত্ব ও উন্নত প্রযুক্তির প্রতি আগ্রহের জন্য চীন শক্তিশালী একটি হোম ডেলিভারি ব্যবস্থা চালু করতে পেরেছে বলে জানান সুইজারল্যান্ডের আইএমডি বিজনেস স্কুলের অধ্যাপক মার্ক গ্রিভেন।

তিনি বলেন, ‘ওষুধ থেকে শুরু করে তাজা মাছ-মাংস এমনকি হার্ডওয়ারের যন্ত্রপাতি পর্যন্ত সবকিছুই বাড়িতে পৌঁছে দেওয়ার মতো ব্যবস্থা চীনে আছে। অন্যদিকে, ডিজিটাল পেমেন্ট ব্যবস্থার কারণে নোট আদান প্রদানেরও প্রয়োজন হয় না। লেনদেনেও স্বচ্ছতা থাকে। কারও কাছে বাড়তি দাম নেওয়ার সুযোগ নেই। এরকম একটি সংকট মোকাবিলায় চীন তার প্রযুক্তিগত দক্ষতা দেখিয়েছে।’

জেডি ফ্রেশ, মেইটুয়ান ডিয়ানপিংসহ বেশ কয়েকটি ই-কর্মাস প্রতিষ্ঠান সূত্রে জানা গেছে, জানুয়ারির ২০ থেকে ফেব্রুয়ারির শেষ পর্যন্ত প্রতিদিন ব্যাপক হারে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র সরবরাহ করা হয়েছে।

এক মাসে ২২ কোটি জিনিস ক্রেতাদের কাছে পৌঁছে দিয়েছে জেডি ফ্রেশ। জেডি ফ্রেশের পরিচালক ট্যং আইশেন বলেন, ‘ক্রেতাদের কাছে খাদ্য সামগ্রী পাঠাতে গিয়ে আমরা ব্যাপক ইতিবাচক সাড়া পেয়েছি। সবাই আমাদের বেশ প্রশংসা করেছে। এর মাধ্যমে আমরা ক্রেতাদের আস্থা অর্জন করতে পেরেছি। ভবিষ্যতেও তারা আমদের কাছ থেকে জিনিস কিনবেন।’

মেইটুয়ান ডিয়ানপিং সূত্রে জানা যায়, গত বছরের তুলনায় এই বছরের শুরুতেই তাদের ৪০০ শতাংশ বেশি বিক্রি বেড়েছে। এক মাসে তারা সবচেয়ে বেশি বিক্রি করেছে ফেস মাস্ক, জীবাণুনাশক, ফলমূল ও আলু।

কোনো ধরনের সংস্পর্শ ছাড়াই বাড়িতে প্রয়োজনীয় জিনিস পৌঁছানোর ক্ষেত্রে অভিনব পদ্ধতি বেছে নিয়েছে এই প্রতিষ্ঠানগুলো। কর্মীরা কখনো আবাসিক এলাকার গেটের বাইরে, কখনো লিফটের বাইরে, কখনো আবার ডেলিভারি প্রোডাক্ট রাখার জন্য বিশেষ বাক্সে এগুলো রেখে আসতেন। বেইজিং শহরে মেইটুয়ান ডিয়ানপিং হোম ডেলিভারির জন্য কোনো চালক ছাড়াই চলতে পারে এমন এক ধরনের গাড়ি ব্যবহার করছে। জিপিএসের সাহায্যে ঠিকানা অনুযায়ী স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাজার নিয়ে বাড়ির সামনে উপস্থিত হচ্ছে ওই গাড়ি।

আলিবাবা ডট কমের হোম ডেলিভারি সার্ভিস এলে ডট মি সর্বোচ্চ আক্রান্ত অঞ্চলগুলোতে ড্রোন ব্যবহার করে ক্রেতার বাড়িতে জিনিসপত্র পৌঁছে দিয়েছে।

গ্লোবাল কনসাল্টেন্সি গার্টনারের গবেষণা পরিচালক স্যান্ডি শেন জানান, হোম ডেলিভারি প্রতিষ্ঠানে কর্মী সংকটের কারণে অনেক রেস্তোরা, ছোট প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা সাময়িকভাবে সেগুলোতে ডেলিভারি কর্মী হিসেবে যুক্ত হয়েছেন। ফলে, যারা অর্থনৈতিকভাবে স্বচ্ছল না, তারাও একটা কাজের সন্ধান, উপার্জনের পথ খুঁজে পেয়েছেন।

ডেলিভারি কর্মী মো বলেন, ‘এরকম একটি সংকটের সময়ে কোনো প্রকার অর্থ উপার্জন ছাড়া বেঁচে আমার পক্ষে কঠিন ছিল। তাই আমি ডেলিভারি কর্মী হিসেবে একটি প্রতিষ্ঠানে যোগ দেই।’

কাজে যোগ দেওয়ার আগে তার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়েছিল জানিয়ে বলেন, ‘প্রচন্ড শীতের মধ্যেও দিনে ১০ ঘণ্টা কাজ করেছি।’

 ‘কখনো কখনো চাল, ডাল ও অন্যান্য জিনিসপত্রের বস্তা বহন করতে গিয়ে আমার হাত ব্যথা করতো। ঘাড় নাড়াতে পারতাম না। তবুও আমার অনুশোচনা নেই। আমি মানুষকে এই বিপদের সময়ে সাহায্য করতে পেরেছি এটাই আমার সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি।’

গত বছরের তুলনায় এ বছর প্রায় তিন গুণ দাম দিয়ে শাকসবজি কিনতে হচ্ছে বলে জানান উহানের বাসিন্দা লিউ। তিনি বলেন, ‘সব জিনিসপত্রের দামই কম-বেশি বেড়েছে। তবে, তাতেও আমার কোনো অভিযোগ নেই। এই বিপদের দিনে ঘরে বসেই বাজার পাচ্ছি এটাই আমার মতো সাধারণ মানুষের জন্য অনেক বেশি।'

সূত্রঃ https://www.thedailystar.net/bangla/%E0%A6%86%E0%A6%A8%E0%A7%8D%E0%A6%A4%E0%A6%B0%E0%A7%8D%E0%A6%9C%E0%A6%BE%E0%A6%A4%E0%A6%BF%E0%A6%95/%E0%A6%9A%E0%A6%BE%E0%A6%B2%E0%A6%95%E0%A6%AC%E0%A6%BF%E0%A6%B9%E0%A7%80%E0%A6%A8-%E0%A6%97%E0%A6%BE%E0%A6%A1%E0%A6%BC%E0%A6%BF-%E0%A6%A1%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A7%8B%E0%A6%A8-%E0%A6%AC%E0%A7%8D%E0%A6%AF%E0%A6%AC%E0%A6%B9%E0%A6%BE%E0%A6%B0%E0%A7%87-%E0%A6%9A%E0%A7%80%E0%A6%A8%E0%A7%87%E0%A6%B0-%E0%A6%85%E0%A6%AD%E0%A6%BF%E0%A6%A8%E0%A6%AC-%E0%A6%B9%E0%A7%8B%E0%A6%AE-%E0%A6%A1%E0%A7%87%E0%A6%B2%E0%A6%BF%E0%A6%AD%E0%A6%BE%E0%A6%B0%E0%A6%BF-%E0%A6%B8%E0%A6%BE%E0%A6%B0%E0%A7%8D%E0%A6%AD%E0%A6%BF%E0%A6%B8-143038
Md.Sumon-ul Islam
BSc in Computer Science & Engineering 
Daffodil International University