কোভিডের কারণে সপ্তাহে এক দুইবার বের হওয়া হয়। দরকারী জিনিস কিনতে। আমাদের বাসার কাছেই উত্তরার বিডিআর বাজার। বাজারে ঢোকা অনেক আগেই বাদ দিয়েছি। যা কেনার তা বাজারের বাইরে ভ্যান গাড়ী থেকেই কিনে ফেলি। বাজারের বাইরের দৃশ্য পুরো পালটে গিয়েছে। আগে এইখানে থাকতো ফল ওয়ালারা। সবাই বাজার শেষে বের হয়ে খুশি মনে ফলমূল কিনত। মনে কিছুটা আতঙ্ক জাগে দেশ ও বিশ্বের অবস্থা নিয়ে। এইখানে এখন অভাবী মানুষেরা অপেক্ষায় থাকে। কখন কেউ বাজার করে বের হবে এর জন্য। আর তার কাছে সাহায্য চাইবে। আজকে এদেরকে একটু খেয়াল করে দেখালাম। আসল অভাবীরা রাস্তার দূরের ফুটপাথে বসে থাকে। দুই একজনের লজ্জা ও বিনয়ের সাথে সাহায্য চাওয়া দেখলেই বোঝা যায় এদের আগে কখনও অন্যের কাছে সাহায্য চাইতে হয়নি আর চায়ওনি।
আবার দেখি কেউ বাজার করে বের হয়েছে। সাহায্য চাইতে চাইতে তার পিছনে চলেছে দুই তিন জন দরিদ্র মানুষ।
বাজারের পাশের রাস্তায় ন্যায্য মুল্যে জিনিস বিক্রি করতে একটি ট্রাক আসে। নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস যেমন চাল ডাল তেল বিক্রি করে তারা। শুনে মনে হল বাজার বা দোকানের থেকে বড়জোর সব মিলিয়ে ২০০ - ৩০০ টাকা কম পড়ে তাদের। রাস্তাটা আরেক মাথায় আমাদের বাসা। প্রতিদিন দেখি কোন সকাল থেকে মানুষজন দাঁড়িয়ে আছে সিরিয়াল দিয়ে ওই ন্যায্য মুল্যের ট্রাকের অপেক্ষায়। কি রোদ কি বৃষ্টি।
বাজারের বাইরে রিক্সা ওয়ালাদের রিক্সা নিয়ে সিরিয়াল দিয়ে দাড়িয়ে থাকতে দেখি। আগের মত যাত্রীদের জন্য ডাকাডাকি নাই। যাত্রী পেলে ভাড়া নিয়ে দর কষাকষি ছাড়াই নীরবে গন্তব্যে যাত্রা শুরু করে। কেউ কেউ হয়তো সদয় হয়ে নির্দিষ্ট ভাড়ার অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে দিচ্ছে।
মন বলে অজানা আশংকার কথা। কোথায় যাচ্ছে পৃথিবী? অভাবী মানুষ দেখলে মনে হয় জীবনে কোন যুদ্ধ অবস্থা দেখি নাই। কিংবা কোন দুর্ভিক্ষ দেখি নাই। এখন কেন যেন অজানা আশংকায় মন ছেয়ে যায়।
দোয়া করি আল্লাহ যেন আমাদের প্রতি সদয় হোন ও ক্ষমা করে দেন। দৃঢ় মনোবল ও বিশ্বাসের সাথে যেন আমরা এই পরীক্ষা পার হতে পারি।
(আমার ফেসবুক পোস্ট থেকে নেয়া।)