মুক্তগদ্য

Author Topic: মুক্তগদ্য  (Read 957 times)

Offline Al Mahmud Rumman

  • Full Member
  • ***
  • Posts: 203
  • Test
    • View Profile
মুক্তগদ্য
« on: November 18, 2020, 01:40:39 AM »
কিছুতেই আমার কিছু এসে যায় না। কে মরলো কে গুম হলো তাতে আমার কি। কোথায় আগুন জ্বললো, কোথায় ফাগুন এল আমি  জানি না। আমি কোন দলে নাই। আমি কোন কোন্দলে নাই। আমার কিছুতেই কিছু এসে যায় না।

যে লোকটা আমার দশহাত সামনেই পিষে গেল ট্রাকের তলায় আমি তার গড়িয়ে যাওয়া রক্ত লাফ দিয়ে সামনে চলে যাই। আমি মানব বন্ধনে নাই, আমি রাখি বন্ধনে নাই। কে মুখে পতাকা মাখলো, কে যুদ্ধে গেল তাতে আমার কিছু এসে যায় না। ছোট ভাইটা যেদিন প্রতিবাদী সাজতে গিয়ে পুলিশের ঠ্যাঙানি খেলো, আমি রুমে বসে গান শুনছিলাম। মা দৌড়ে এল আমার কাছে, বলল কিছু করতে। আমি হেডফোনের ভল্যুম বাড়িয়ে দিলাম। পুলিশ শাস্তি দিতেই পারে। প্রতিবাদ ভালো না।
বোনটার বিয়ে হয়েছিল বছর দু’য়েক আগে। একেবারে দেশের অন্য প্রান্তে। নামে নয় নিয়তিতে হৈমন্তী হয়ে জন্মেছিল। তাই সহ্য করতে হচ্ছিল অকথ্য অত্যাচার। গেল মাসে বিষ খেয়ে মরে গেল ধুম করে। মা খুব কাঁদল। বাবা মামলা ঠুকল। আমার কিছুই আসলো গেল না। মেয়েটা মরে বেঁচে গেছে। আর চল্লিশার গরুটার স্বাদ আজও মুখে লেগে আছে।

এসবের পর বাবা খুব চটে আছেন আমার নির্লিপ্ততা নিয়ে। তাতে আমার কিছু এসে যায় না। যে মেয়েটাকে ভালোবাসতাম সে একদিন ঝগড়া করে চলে গেল। গন ফরেভার। টানা পাঁচ ঘণ্টা ধরে আমার অনেক কিছু এসে গেল। মদ খেলাম। এলোপাথাড়ি পথ হাঁটলাম। ওভারব্রীজের ওপরে দাঁড়িয়ে মুতে দিলাম মানুষের মাথার ওপর। বমি হল হড়বড় করে। তারপর আস্তে আস্তে সব ঠিক হয়ে এল। এক অন্ধ ভিখারির থালা থেকে দশটাকা নিয়ে বাদাম কিনে খেলাম। নতুন একটা মেয়ে জোটাতে কিছুদিন লাগতে পারে। লাগুক। কে জানি ফতোয়া দিয়ে গেছে, প্রত্যেকটা প্রেমই প্রথম প্রেম।

একদিন বাবার মানিব্যাগ মোবাইল ছিনতাই হল। হাতের তালুতে পাঁচটা সেলাই। আমি হাসলাম। বেঁচে তো আছে। একদিন আমাকেই ধরল ছিনতাইকারিরা। নিয়ে নিল মোবাইল মানিব্যাগ। ক্রেডিট কার্ড আর সিমটা তুলতে পারবো বলে তেমন কিছু এসে গেল না। একদিন ট্রেনে করে বাড়ি ফিরছি। ডান হাতটা বের করে ক্যামেরায় কাশফুল ধরতে চাইলাম। ওতপেতে থাকা কেউ দা দিয়ে কুপিয়ে আমার ডান হাত কেটে নিল। আমার তেমন কিছু এসে গেল না। বা’হাতের দামি ঘড়িটা তো রক্ষা পেল! বাম হাতে খেতে শিখে গেলাম কিছুদিনের মধ্যেই।

গেল সপ্তাহে বিতিকিচ্ছিরি এক ঘটনা হল। ভার্সিটি এরিয়ায় হাঁটছিলাম। ছাত্রদের একটা আন্দোলন চলছিল। তারা পড়ার নামে এসবই তো করে। পাশ কাটিয়ে একটু সামনে গেলেই আচমকা পুলিশের রাবার বুলেট আর কাঁদানো গ্যাসের মহড়া শুরু। ভয় পেয়ে উল্টোদিকে দৌড়ালাম। অতি উৎসাহী কোন গাধা পুলিশের দিকে ককটেল ছুঁড়ল। হতচ্ছাড়া ককটেল এক কনস্টেবলের গায়ে লেগেও গেল। ব্যস! পুলিশও গুলি করতে শুরু করল এলোপাথাড়ি। কোন শালার কিছু হল না, আমার ডান পায়ে আর পিঠে এসে লাগল গোটাদুই বুলেট। জ্ঞান হারালাম। নিজেকে পরে আবিস্কার করলাম হাসপাতালে। ফিনাইলের জঘন্য গন্ধ ঠেলে মায়ের কান্না ভেসে আসছে। পরের দিন কিছু ছাত্র এল দেখা করতে। সে কি রাগ ওদের! রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার নাকি আমি। ওরা বিচার চায়। খুব রাগ হল। ওদের জন্যই তো আমার...থাকুক, বললাম না কিছুই।

আজ তারা মানব বন্ধনে দাঁড়িয়েছে। আমাকে গুলি করার প্রতিবাদে। প্রেসক্লাবে হুড়মুড় ভেঙে পড়েছে মানুষ। আমার বোকা বাপকে কে জানি ধরে নিয়ে গেছে সেখানে। মাইক্রোফোন হাতে কাঁদছেন। কথা আটকে যাচ্ছে। অবশ্য এসবে আমার কিছু এসে যায় না। যতক্ষণ হৃদপিন্ড চলছে, যতক্ষণ আমি সজাগ আছি, যতক্ষণ আমি বেঁচে আছি, আমার কিছুই এসে যায় না।



(কিছু এসে যায় না -  রুম্মান মাহমুদ)