সালাতুল হাজতের নিয়ম ও ফজিলত

Author Topic: সালাতুল হাজতের নিয়ম ও ফজিলত  (Read 624 times)

Offline ashraful.diss

  • Full Member
  • ***
  • Posts: 162
  • 'শীঘ্রই রব তোমাকে এত দিবেন যে তুমি খুশি হয়ে যাবে'
    • View Profile
    • Daffodil Institute of Social Sciences - DISS
সালাতুল হাজতের নিয়ম ও ফজিলত

সামাজিক জীবনে কোনো না কোনো প্রয়োজনে একে অপরের পারস্পরিক সহযোগিতা প্রয়োজন। অনেক সময় কঠিন বিপদাপদে অসহায় হয়ে পড়ে মানুষ। যখন কেউ কাউকে সাহায্য করতে পারে না। সেই কঠিন বিপদের সময় মানুষের করণীয় কী? তখন কীভাবে সাহায্য চাইবে মানুষ? সালাতুল হাজত কী?সালাতুল হাজত বলতেই প্রয়োজনে নামাজ পড়া বুঝায়। তাই বৈধ যে কোনো প্রয়োজন পূরণের জন্য আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে দুই রাকাআত নফল নামাজ আদায় করাকে সালাতুল হাজত বলে। (ইবনে মাজাহ)

হ্যাঁ, যখন কেউ সাহায্য করতে পারে না, তখন মানুষের একমাত্র সাহায্যকারী হলেন মহান আল্লাহ। তিনিই পারেন মানুষকে বিপদ থেকে উদ্ধার করতে। মানুষের বিপদ যত সহজ আর কঠিনই হোক না কেন, তিনি পারে মানুষকে তা থেকে রক্ষা করতে। এ ক্ষেত্রে অন্যতম মাধ্যম হলো বিপদ থেকে মুক্তি পেতে নামাজ পড়া। এ নামাজ ‘সালাতুল হাজত’ হিসেবে পরিচিত। এ নামাজের দিকে ইঙ্গিত করে আল্লাহ তাআলা বলেন-‘হে ইমানদারগণ! তোমরা ধৈর্য ও নামাজের মাধ্যমে আল্লাহর কাছে সাহায্য চাও। নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআলা ধৈর্যশীলদের সাথে আছেন।’ (সুরা বাকারা : আয়াত ১৫৩)
 
এ আয়াতে বিপদে ধৈর্যধারণ করে নামাজের মাধ্যমে আল্লাহর কাছে সাহায্য চাওয়ার কথা বলেছেন আল্লাহ তাআলা। সালাতুল হাজতের ফজিলত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যে কোনো প্রয়োজন পূরণে নিজেই এ নামাজ পড়তেন এবং সাহাবায়ে কেরামকে এ নামাজ পড়ার নির্দেশ দিয়েছেন। হাদিসে পাকে এ নামাজ পড়ার গুরুত্ব ওঠে এসেছে। হজরত হুজাইফা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সামনে যখন গুরুত্বপূর্ণ কোনো প্রয়োজন বা বিষয় (বিপদ-আপদ) চলে আসতো; তখন তিনি সঙ্গে সঙ্গে নামাজে দাঁড়িয়ে যেতেন। (আবু দাউদ)

বিশ্বনবি যেভাবে সালাতুল হাজত পড়তেন সালাতুল হাজত পড়ার জন্য নির্ধারিত কোনো নিয়ম, দিনক্ষণ বা সময় নেই। অন্যান্য নামাজের মতোই এটি পড়তে হয়। তবে নিষিদ্ধ সময় (সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্ত, দ্বিপ্রহর) ও মাকরুহ সময় ব্যতিত অন্য যেকোনো সময় তা পড়া যাবে। হাদিসে এসেছে-‘রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তির আল্লাহর কাছে বা মানুষের কাছে কোনো প্রয়োজন দেখা দেয়, সে যেন উত্তমরূপে অজু করে দুই রাকাআত নফল নামাজ আদায় করে আল্লাহ তাআলার প্রশংসা করে এবং রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ওপর দরুদ পাঠ করে।’ (তিরমিজি)

মনে রাখতে হবে,কারণ নামাজ ও দরূদ পাঠের বরকত ও ফজিলতে মহান আল্লাহ মানুষের যে কোনো বিপদ দূর করে দেবেন। সে কারণেই বিপদের সময় উত্তমভাবে অজু করে হাজত পূরণের নিয়তে দুই রাকাআত নফল নামাজ আদায় করা। আর নামাজ শেষে আল্লাহ তাআলার প্রশংসা ও রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ওপর দরুদ পাঠ করে আল্লাহর কাছে নিজ ভাষায় বৈধ প্রয়োজনের জন্য এ দোয়া করা-

 ﻻَ ﺇِﻟَﻪَ ﺇِﻻَّ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﺍﻟْﺤَﻠِﻴﻢُ ﺍﻟْﻜَﺮِﻳﻢُ ﺳُﺒْﺤَﺎﻥَ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺭَﺏِّ ﺍﻟْﻌَﺮْﺵِ ﺍﻟْﻌَﻈِﻴﻢِ ﺍﻟْﺤَﻤْﺪُ ﻟِﻠَّﻪِ ﺭَﺏِّ ﺍﻟْﻌَﺎﻟَﻤِﻴﻦَ ﺃَﺳْﺄَﻟُﻚَ ﻣُﻮﺟِﺒَﺎﺕِ ﺭَﺣْﻤَﺘِﻚَ ﻭَﻋَﺰَﺍﺋِﻢَ ﻣَﻐْﻔِﺮَﺗِﻚَ ﻭَﺍﻟْﻐَﻨِﻴﻤَﺔَ ﻣِﻦْ ﻛُﻞِّ ﺑِﺮٍّ ﻭَﺍﻟﺴَّﻼَﻣَﺔَ ﻣِﻦْ ﻛُﻞِّ ﺇِﺛْﻢٍ ﻻَ ﺗَﺪَﻉْ ﻟِﻲ ﺫَﻧْﺒًﺎ ﺇِﻻَّ ﻏَﻔَﺮْﺗَﻪُ ﻭَﻻَ ﻫَﻤًّﺎ ﺇِﻻَّ ﻓَﺮَّﺟْﺘَﻪُ ﻭَﻻَ ﺣَﺎﺟَﺔً ﻫِﻲَ ﻟَﻚَ ﺭِﺿًﺎ ﺇِﻻَّ ﻗَﻀَﻴْﺘَﻬَﺎ ﻳَﺎ ﺃَﺭْﺣَﻢَ ﺍﻟﺮَّﺍﺣِﻤِﻴﻦَ

উচ্চারণ : ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহুল হালিমুল কারিম। সুবহানাল্লাহি রাব্বিল আরশিল আজিম। আলহামদুলিল্লাহি রাব্বিল আলামিন। আসআলুকা মুঝিবাতি রাহমাতিকা ও আযায়িমা মাগফিরাতিকা ওল গানিমাতা মিন কুল্লি বিররি ওয়াস-সালামাতা মিন কুল্লি ইছমিন লা তাদা’ লি জাম্বান ইল্লা গাফারাতহু ওয়া লা হাম্মান ইল্লা ফাররাঝতাহু ওয়া লা হাঝাতান হিয়া লাকা রিদান ইল্লা ক্বাদাইতাহা ইয়া আরহামার রাহিমিন।’

সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত, শারীরিক-মানসিক, পারিবারিক-সামাজিকসহ যে কোনো বিপদ-আপদ ও দুঃশ্চিন্তায় মহান আল্লাহর কাছে নামাজ ও দরূদ পড়ে এ দোয়ার মাধ্যমে সাহায্য চাওয়া। সালাতুল হাজত কিংবা বিপদে নামাজ ও দরূদ পড়ার বিকল্প নেই। বৈধ পন্থায় বিপদ থেকে রক্ষা পেতে সালাতুল হাজতের ভূমিকাই অনন্য। আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে কঠিন বিপদে সালাতুল হাজাত ও দরূদ পড়ে এ দোয়ার মাধ্যমে সাহায্য প্রার্থনা করার তাওফিক দান করুন। হাদিসের ওপর যথাযথ আমল করার তাওফিক দান করুন। আমীন !

Hafez Maulana Mufti. Mohammad Ashraful Islam
Ethics Education Teacher, DISS
Khatib, Central Mosque, Daffodil Smart City
Ashuli , Savar, Dhaka