Mental Health Awareness (কখন আমি মানসিক স্বাস্থ্য সেবা গ্রহণ করব?)

Author Topic: Mental Health Awareness (কখন আমি মানসিক স্বাস্থ্য সেবা গ্রহণ করব?)  (Read 1425 times)

Offline Abu Tareque

  • Newbie
  • *
  • Posts: 18
    • View Profile
                                                   কখন আমি মানসিক স্বাস্থ্য সেবা গ্রহণ করব?

                                                       

     দুঃখের পরে সুখ। আঁধার রাতের শেষে যেমন দেখিস আলোর মুখ।
জন্ম নিলে সবার তরে আছেরে মরণ,ভাঙ্গা গড়া এই জীবনে আছে সর্বক্ষণ।
চলে যায় যদি কেউ…
সৈয়দ আব্দুল হাদীর এই কালজয়ী গানে এবং কবি কৃষ্ণচন্দ্র মজুমদারের কবিতা "কাঁটা হেরি ক্ষান্ত কেন কমল তুলিতে, দুঃখ বিনা সুখ লাভ হয় কি মহীতে? " এই প্রশ্নের মধ্যে মানব মনের আবেগ এবং সময়ের সাথে সাথে তার অবসানের আশ্বাসের কথা উঠে এসেছে।  এভাবেই যুগে যুগে কবি সাহিত্যিকরা  সাহিত্যের ভাষায় মনের আবেগ প্রকাশ করতে গিয়ে বিভিন্ন গান, কবিতা, গল্প, উপন্যাস রচনা করেছেন। পৃথিবীর প্রথম মানুষ থেকে শুরু করে বর্তমান সময় পর্যন্ত মানব মনের আবেগ জোয়ার ভাটার মতো কখনো বেড়েছে বা কমেছে। মানুষের মনে ইতিবাচক এবং নেতিবচক এই দুই ধরোনার আবেগের  সৃষ্টি হওয়া খুব স্বাভাবিক । নেতিবচোক আবেগ কোন সময় স্বল্পস্থায়ী হয় আবার কখনো ধীর্ঘস্থায়ী হয়। কেন এমন হয়? এই প্রশ্নের উত্তর বিজ্ঞানের অগগ্রতির সাথে সাথে আমারা জানতে পেরেছি যে, ইতিবাচক বা নেতিবাচক আবেগের পিছনে আমাদের মানসিক প্রক্রিয়া, অভিজ্ঞতা, কিছু জৈব-রাসায়নিক পদার্থের ঘাটতি বা বাড়তি এবং কিছু সামাজিক কারণ দায়ী।

সাধারণত মানসিক রোগ দুই ধরনের। নিউরোসিস এবং সাইকোসিস। নিউরোসিসে ব্যক্তি তার  নিজের রোগ সম্পর্কে সচেতন থাকে এবং  বুঝতে পারে যে, সে কিছু সমস্যার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে।  এ ধরনের রোগগুলো অপেক্ষাকৃত কম গুরুতর।  যেমন মৃদু উদ্বিগ্নতা, মৃদু বিষণ্নতা, সম্পর্কের টানাপোড়েন ইত্যাদি। মৃদু মাত্রার মানসিক রোগে  কাউন্সেলিং বা সাইকোথেরাপি অত্যন্ত কার্যকরী। আবার কিছু কিছু ক্ষেত্রে মৃদু মানসিক রোগের ক্ষেত্রেও কাউন্সেলিং বা সাইকোথেরাপির সাথে  ঔষধও প্রয়োজন হতে পরে।  যেমন অবসেসিভ কম্পালসিভ ডিজঅর্ডার (ওসিডি)।

অন্যদিকে সাইকোসিসে ব্যক্তি তার  নিজের রোগ সম্পর্কে বুঝতে পারেনা এবং স্বীকারও করেন না যে তাঁর কোনো মানসিক সমস্যা হচ্ছে। এই রোগগুলো খানিকটা গুরুতর। যেমন সিজোফ্রেনিয়া, গুরুতর বিষণ্নতা, বাইপোলার মুড ডিজঅর্ডার ইত্যাদি। এই গুরুতর ধরনের মানসিক রোগ বা সাইকোসিসের চিকিৎসায় ওষুধের ভূমিকা অনেক বেশি। কারণ এই রোগগুলোতে মস্তিষ্কের রাসায়নিক পদার্থের ভারসাম্য বেশি মাত্রায় নষ্ট হয়। তাই মস্তিষ্কের রাসায়নিক পদার্থের ভারসাম্য  ফিরিয়ে আনতে ঔষধের মাধ্যমে সেবা গ্রহণ করতে হয়। ঔষুধ দিয়ে একটি পর্যায় পর্যন্ত অবস্থার উন্নতি হলে ব্যক্তিকে কাউন্সেলিং বা  সাইকোথেরাপি দেওয়া যেতে পারে। মেনে নিতে কষ্ট হলেও এটাই সত্য যে মানসিক রোগের চিকিৎসা সাধারণত দীর্ঘ মেয়াদি হয়। কিছু কিছু রোগের ক্ষেত্রে আজীবন চিকিৎসা নিতে হয়। সাধারণত ঔষুধ কাজ করে রাসায়নিক পদার্থ বা নিউরোট্রান্সমিটারের ওপর এবং সাইকোথেরাপি বা কাউন্সেলিং কাজ করে জ্ঞানীয় বিকাশ (কগনিশন), আচরণ ও মনের গড়নের ওপর। তাই এক-দুটি কাউন্সেলিং সেশন করে বন্ধ করে দিলে বা কিছুদিন ঔষধ খাওয়ার পর ঔষধ খাওয়া বন্ধ করলে চিকিৎসার আশানরুপ ফল পাওয়া সম্ভব নয়।  আর কাউকে ঔষধ খেতে হবে কি হবেনা সেটা একজন চিকিৎসক  ব্যক্তিকে জানিয়ে দিবেন।

তাই যে কোন মানসিক সংকটে বা অসুস্থতায় আমরা মানসিক স্বাস্থ্য সেবা গ্রহণ করতে পারি।  মানসিক স্বাস্থ্য সেবা গ্রহণ করা কোন লজ্জার বিষয় নয়।  তাই সমাজে প্রচলিত  কুসংস্কারের তোয়াক্কা না করে মানসিক স্বাস্থ্য সেবা গ্রহণ করা যেতে পারে। এজন্য প্রথমে জানা দরকার কোন কোন ক্ষেত্রে একজন ব্যক্তি মানসিক স্বাস্থ্য সেবা  গ্রহণ করতে পারে। সাময়িক সময়ের জন্য আমাদের সবার মধ্যে কিছু কিছু মানসিক সংকট তৈরী হতে পারে বা আচরণের অস্বাভাবিকতা পরিলক্ষিত  হতে পারে। সেক্ষেত্রে সবাইকে তখন মানসিক রোগী হিসেবে গণ্য করা  যাবে না। মানসিক সংকটে বা রোগে সাধারণত ব্যক্তির   ব্যক্তিগত, পারিবারিক, পেশাগত, বিনোদনমূলক, শিক্ষামূলক জীবনে নেতিবাচক প্রভাব পরে।   এর ফলে যদি তার স্বাভাবিক বা প্রাত্যহিক কর্মকাণ্ডে লক্ষণীয় ব্যাঘাত ঘটে  তখন বুঝতে হবে যে, সে হয়তো মানসিকভাবে অসুস্থ। আমাদের সবারই কখনো কখনো মন খারাপ হতে পারে। কিন্তু সেটা বেশিক্ষণ বা বেশিদিন থাকার কথা নয়। যদি দুই সপ্তাহের বেশি সময় ধরে টানা মনখারাপ ভাব বা বিষণ্ণতা থাকে, তখন সেটা মানসিক রোগের উপসর্গ বলে ধরে নিতে হবে। মানসিক রোগের পরিধি অনেক বিস্তর। তাই কারো মধ্যে যদি নিম্ন লিখিত আচরণ অথবা আবেগীয় পরিবর্তন পরিলক্ষিত হয় তাহলে সে মানসিক স্বাস্থ্য সেবা গ্রহণ করতে পারেন বা তাকে তার  পরিবারের সদস্যগণ মানসিক চিকিৎসা করাতে পারেন। যেমন
১। হঠাৎ করে বেশি উত্তেজিত হয়ে ওঠা বা অতিরিক্ত রাগ
২। দীর্ঘদিন ধরে একা একা থাকা
৩। টানা দুই সপ্তাহের বেশি সময় ধরে মন খারাপ থাকা
৪। অন্যদের সঙ্গে একেবারে কথা বলতে না চাওয়া
৫। সবার সাথে ঝগড়া করা
৬। গায়েবি আওয়াজ বা কথা শুনতে পাওয়া
 ৭। অকারণে অন্যদের প্রতি সন্দেহ প্রবণতা বৃদ্ধি পাওয়া। 
৮। প্রাত্যহিক কাজের প্রতি মনোযোগ কমে  যাওয়া এনং নিজের যত্ন না নেয়া
৯। আনন্দের  কাজে আনন্দ না পওয়া বা আগ্রহ কমে যাওয়া
১০। সামাজিক সম্পর্ক থেকে নিজেকে সরিয়ে নেয়া
১১। নিজেকে নিয়ে নেতিবাচক চিন্তা করা
১২। সবকিছুতে নিজেকে দায়ী মনে করা
১৩। সিদ্ধান্তহীনতা বা মনোযোগ কমে যাওয়া
১৪। আত্মহত্যার চিন্তা, পরিকল্পনা বা চেষ্টা করা
১৫। একই কাজ বার বার করা
১৬। ঘুম অথবা খাবারে রুচিতে অস্বাভাবিক পরিবর্তন পরিলক্ষিত হওয়া
১৭। বাসার, অফিসের বা পেশাগত কাজের প্রতি অনীহা তৈরি হওয়া বা আগ্রহ হারিয়ে ফেলা
১৮। তাছাড়া পারিবারিক অশান্তি, পারিবারিক দ্বন্দ্ব , সম্পর্কের দ্বন্দ্ব ইত্যাদি।
উপরোক্ত লক্ষণের ক্ষেত্রে একজন পেশাগত মনোবিজ্ঞানী বা মনোরোগ বিশেষজ্ঞের কাছ থেকে সেবা গ্রহণ করা যেতে পারে।


লেখক : আবু তারেক, সাইকোলজিস্ট, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি।
Psychologist