আপনি কিভাবে ফজরে উঠেন?

Author Topic: আপনি কিভাবে ফজরে উঠেন?  (Read 577 times)

Offline Khan Ehsanul Hoque

  • Hero Member
  • *****
  • Posts: 549
  • Test
    • View Profile
আপনি কিভাবে ফজরে উঠেন?
« on: November 19, 2022, 12:04:59 PM »
আপনি কিভাবে ফজরে উঠেন?

আমি কিন্তু একদিন বা দুইদিন ফজরে উঠার কথা বলছি না। বরং আমি বলছি আপনি কিভাবে প্রতিদিন, কোনোদিন মিস না করেই  নিয়মিত ফজরে উঠেন?
অনলাইনে ভুরি ভুরি ওয়েবসাইট আপনাকে সকাল সকাল ঘুম থেকে জাগার টিপস ও উপদেশ নিয়ে বসে আছে। কিন্তু আমাদের আজকের এ আলোচনার ফোকাস কিন্তু দুনিয়াবি টিপস দেয়া না, আমাদের ফোকাস হল ফজরে উঠার আধ্যাত্মিক কলা-কৌশল নিয়ে আলোচনা করা।
প্রতিদিন আপনি কমপক্ষে ১৭ বার সূরা ফাতিহা পাঠ করেন। আপনি তিলাওয়াত করেন, “আমরা কেবল আপনারই ইবাদত করি, আর আপনারই নিকট সাহায্য প্রার্থনা করি”। আপনি আল্লাহর ইবাদত করতে চান?- “হ্যা!” তবে আপনার প্রয়োজন আল্লাহর সাহায্য। আপনি ফজরে উঠতে চান? – “হ্যা, অবশ্যই।” এক্ষেত্রেও আপনার আল্লাহর সাহায্য প্রয়োজন। আপনি কোনোভাবেই আল্লাহর সাহায্য ছাড়া ফজরে উঠতে পারবেন না। আমি আবারো বলছি, আপনি পারবেন না। এখন নিজেকে প্রশ্ন করুন, আমি সত্যিই ফজরে উঠতে চাই- তা আল্লাহর নিকট উপস্থাপন করতে আমি কি করতে পারি?
আপনার কি এমন দিন গেছে যে আপনি ঘুমাতে যাচ্ছেন আর গভীরভাবে অনুভব করছেন যে আপনি অবশ্যই ফজরে উঠবেন? এবং আপনার কি এমন দিন গেছে যেদিন আপনি নিশ্চিত ছিলেন আপনি অতিরিক্ত ঘুমাবেন? এ দুটি দৃশ্য কল্পনা করুন। আমি নিশ্চিত, আমাদের কেউ কেউ এমন অভিজ্ঞতার ভিতর দিয়ে গিয়েছেন:
◾দৃশ্য এক◾
আপনার ঈমান খুব বেশি আজ। রাতে আপনি এশা ও বিতর নামায পড়েছিলেন। কিছু সময় ধরে তিলাওয়াত করলেন পবিত্র কুরান। দেখা গেল, ফজর পর্যন্ত ঘুমানোর সময় আছে আর মাত্র ২ ঘন্টা। আপনি নিশ্চিত যে আপনি ফজরে উঠবেন কারণ, আপনি নিজের মন ঠিক করে নিয়েছেন। আসলে কখনো কখনো আপনি মাঝরাতে না ঘুমিয়ে হাটাচলা করতে থাকেন। আপনি ভাবেন, একটু পরই ফজর শুরু হবে, ঘুমিয়ে গেলেই নামাজ মিস হবে। আচ্ছা, আপনার যদি এমনটা করার অভিজ্ঞতা না থাকে তবে ওই দিনের কথা মনে করুন, যেদিন খুব ভোরে আপনার বিমান, বাস বা ট্রেইনে উঠার কথা ছিল। আপনি চিন্তা করুন, আপনার শরীর, মন ও মস্তিষ্ক সেদিন কেমন ‘সুইচ অন’ ছিল। আপনি সেদিন কতসময় ঘুমিয়েছেন তাতে কিছু আসে যায় না, আপনি জেগে উঠেছিলেন।
◾দৃশ্য দুই◾
আবার এমন দিনও আছে যেদিন আপনি আসলে ঘুমে ডুবে থাকতে চান, উঠতে চান না। আপনি মনে মনে আশা করেন ‘অতিরিক্ত ঘুম’ হোক আজ, যাতে আপনি ফজরে না উঠলে নিজেকে কম দোষী ভাবতে পারেন। আল্লাহ আপনাকে ক্ষমা করুন, কিন্তু আপনি জেগে যান। এলার্মের শব্দের সাথে যুদ্ধ শুরু হয় এবং শুরু হয় শয়তানের সেই পুরোনো কৌশল, “এই তো, আর পাঁচ মিনিট”…!
প্রতিদিন আমরা কিভাবে ‘দৃশ্য এক’ মেইনটেইন করব?
উপরের দুটি দৃশ্যের একটিতে আপনি হৃদয়ের গভীর থেকে অনুভব করেন, আপনি অবশ্যই ভোরে জেগে উঠবেন। আর অন্যটিতে আপনি হৃদয়ের গভীরে এমন মনোভাব রাখেন, আপনি আসলে ঘুম থেকে উঠতে চান না। আপনি ভোরে উঠার ক্ষেত্রে শয়তানের যে বাধা, সেটির সাথে যুদ্ধ করতে প্রস্তুত নন।
নিচে আমরা কিছু বাস্তব ও আধ্যাত্মিক উপায়ের কথা বলব, যেগুলো আপনাকে ‘দৃশ্য এক’ বাস্তবায়ন করতে সাহায্য করবে  অর্থাৎ ফজরে জাগ্রত হতে সাহায্য করবে, ইন শা আল্লাহ…
◾ফজরে উঠার আধ্যাত্মিক কলা-কৌশল◾
◾আল্লাহকে জানুন: এটা ফজরে জাগার মূল ও এক নম্বর অস্ত্র। আপনি যদি জানেন যে আপনি কার ইবাদত করছেন, এবং আপনি জানেন যে তিনি আপনাকে ভোরে উঠে তার উদ্দেশ্যে সালাত আদায় করতে বলেছেন; তবে আপনি উঠে পড়বেন। এটা আমাদের কমতি যে আমরা আল্লাহকে চিনতে পারি নি, ফলে আমরা সর্বদাই ‘দৃশ্য দুই’ এর মধ্যে নিপতিত হই (ভোরে/ফজরে উঠতে পারি না)। এজন্য আপনার করণীয়, আপনার রবকে জানুন, এটাই প্রধানতম উপায়।
◾আন্তরিক হোন: ফজরে উঠার ব্যাপারে অন্তরিক মনোভাব লালন করুন। কেবল নিজেকে এটা বললেই হবে না- “ইন শা আল্লাহ, ফজরে উঠলে তো ভালই হয়!” ফজরে উঠা নিয়ে আন্তরিক হোন, দৃঢ় নিয়ত রেখে বলুন- “আমি ফজরে উঠব, কিভাবে উঠব জানি না, তবে অবশ্যই উঠব”। আমি ব্যক্তিগত ভাবে এমনটি বলাতে উপকার পেয়েছি।
◾ঘুমানোর পূর্বে ওযু করুন: ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ইরশাদ করেন,
“এ অঙ্গ প্রত্যঙ্গগুলো ধৌত পবিত্র কর, আল্লাহও তোমাদের পবিত্র করবেন। যে বান্দা পবিত্র অবস্থায় ঘুমাতে যায়, একজন ফেরেশতা তার সাথে রাতে অবস্থান করে। যতবার বান্দা এপাশ ওপাশ করে, ফেরেশতা ততবার বলে, ‘হে আল্লাহ! আপনার এ বান্দাকে আপনি ক্ষমা করুন, কেননা সে পবিত্র অবস্থায় ঘুমিয়েছে।”
আপনার কি মনে হয়, যে বান্দার জন্য ফেরেশতারা এমন দু'আ করে, সে বান্দা কি অতিরিক্ত ঘুমাতে পারে, এবং ফজর মিস করতে পারে?
◾বিতরের নামায ও দু'আ: বিতর নামায পড়ে ঘুমানো নিশ্চিত করুন। বিতরের সালাতে মহান আল্লাহর নিকট দোয়া করুন যাতে তিনি আপনাকে ফজরে উঠতে সাহায্য করেন। মনে রাখবেন, আমরা প্রতিনিয়তই তিলাওয়াত করি, “আমরা তোমারই ইবাদত করি, এবং তোমারই নিকট সাহায্য চাই।”
◾পবিত্র কুরআন থেকে কিছু অংশ তিলাওয়াত করুন: মহা পবিত্র কুরানের আয়াত পাঠের মাধ্যমে আপনার দিনের সমাপ্তি সালাতের জন্য জাগ্রত হওয়ার ফোকাস নিশ্চিত করে। নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদেরকে ঘুমানোর পূর্বে সূরা আস-সাজদাহ ও সূরা আল-মুলক তিলাওয়াতের উপদেশ দিয়েছেন।
◾ঘুমানোর পূর্বে আল্লাহর যিকর: এ বিষয়টির কথা আমি প্রথমেই বলেছিলাম। ঘুমানোর পূর্বে যতরকম মাসনূন দু'আ আছে, সেগুলো আপনি খুব সহজেই জানতে পারেন। প্রথম দিকে হয়ত আপনাকে প্রিন্ট করা পেইজ দেখে দেখে এগুলো পড়তে হবে, কিন্তু এভাবে এক-দুই সপ্তাহ চললে এ দু'আগুলো আপনার পুরোপুরি মুখস্ত হয়ে যাওয়াই উচিত। আপনার কাজ শুধু চোখ বুজার আগে এগুলো পাঠ করা।
◾ফজরের নামায আদায়ের পুরস্কারসমূহের কথা মনে করুন: ফজরের নামায পড়লে আপনি মুনাফিক হওয়া থেকে বেচে থাকবেন।  বিচার দিবসে নূরের জ্যোতি লাভ করবেন। পুরোদিন মহান আল্লাহর নিরাপত্তার চাদরে আবৃত থাকবেন। ফজর নামায আদায়ে আমাদের মধ্য হতে অলসতা দূর হবে, আমরা প্রোডাক্টিভ হয়ে উঠব- ঘুমানোর সময় ফজর নামাযের এসব পুরস্কারের কথা স্মরণ করুন, আশা করাযায়, আপনি অবশ্যই ফজরে উঠে পড়বেন।
◾ফজরে উঠার অন্যান্য কলা-কৌশল◾
◾বন্ধু বা পরিবারের সদস্যদের বলুন আপনাকে জাগিয়ে দিতে: এটা ফজরে উঠার এক নম্বর রুল। পরিবারের একজন সদস্য, বন্ধু বা স্ত্রীকে জাগিয়ে দিতে বলুন। আপনারা এক্ষেত্রে একে অপরকে সহযোগিতা করুন। আপনি যদি তাদের আগে উঠে পড়েন, তাহলে স্বার্থপর না হয়ে তাদের উঠাও নিশ্চিত করুন।
◾১.৫ আওয়ার স্লিপ রুল: হ্যা… একটি গোপন কৌশল, স্লিপ সাইন্সের এ থিউরি বলে,প্রতিটি মানুষ ১.৫ ঘন্টায় পুরো একটি ‘স্লিপ সাইকেল’ পূর্ণ করে। অতএব, আপনি বহু ১.৫ ঘন্টা পর জাগ্রত হতে পারবেন (যেমন ১.৫ ঘন্টা পর, ৩ ঘন্টা পর, বা ৪.৫ ঘন্টা পর। এমন ১.৫ ঘন্টার সাইকেল মেনে ঘুম থেকে জাগ্রত হলে আপনি সতেজ ও উজ্জীবিত বোধ করবেন। অন্যথায়, আপনি অলস অবস্থায় জাগ্রত হবেন। ফলে যদি ফজরের সময় থাকে ভোর ৫ টায়, আর আপনি ১২ টায় ঘুমাতে যান তবে আপনি ৪ টা ৩০ মিনিটে এলার্ম দিন। কারণ, এভাবে আপনি ৪.৫ ঘন্টা ঘুমানোর সুযোগ পাচ্ছেন অর্থাৎ স্লিপ সাইকেল পূর্ণ হচ্ছে, ফলে আপনার ঘুম থেকে উঠা সহজ হবে। (আর অবশ্যই, যদি আপনার ঘুমাতেই লেগে যায় ১.৫ ঘন্টা, তবে সময়ের হিসাব সে অনুযায়ীই ঠিক করবেন।)
◾সন্ধায় হালকা ঘুম: এটা আরেকটি লাইফ হ্যাক, যা সুন্নাহ ও বিভিন্ন বিজ্ঞ মানুষের কাছ থেকে পাওয়া। তা হল, নিশ্চিত করুন, আপনার এই একটু ঘুমের পরিমাণ যেন মাত্র ২০ মিনিটের হয়। হ্যা, মাত্র ২০ মিনিট! বিশ্বাস করুন, বিগত ৩ বছর ধরে আমি সন্ধ্যাহ এ ২০ মিনিট ঘুমাই। আর কখনোই এটি আমাকে উজ্জীবিত করতে ব্যর্থ হয় নি। আপনার যদি এই সময়টুকু ঘুমানোতে প্রশিক্ষণ নিতে চান, তবে pzizz ডট com ওয়েবসাইট ব্যবহার করতে পরামর্শ দিচ্ছি। এই অসাধারণ সফটওয়্যারটি আপনাকে  এই স্বল্প সময় ঘুমানোর প্রশিক্ষণ দিবে। আমি নিজেও এখানে প্রশিক্ষণ নিয়েছি। 
◾নিজেকে ট্রিট দিন: আমি একজন ব্রেকফাস্ট পাগল মানুষ। তো যদি আম সকালে উঠতে পারি, আমি ব্রেকফাস্টে বিশাল খাবারের আয়োজন করি। কখনো কখনো আমি এ ব্রেকফাস্টের জন্য আগের দিন সন্ধ্যা থেকে মুখিয়ে থাকি।  ফজরে উঠার ছোট্ট পুরস্কার হিসেবে সকালের বিশাল ব্রেকফাস্ট ভক্ষণ করে নিজেকে ট্রিট দিন। এটি আপনার দিনকে সুষম রাখবে, ইন শা আল্লাহ!
ফজরে ঘুম থেকে উঠার ব্যাপারে আমার কাছে  থাকা পরামর্শ এগুলোই।

Source: https://www.facebook.com/royhanaakter.rimu
Khan Ehsanul Hoque

Daffodil International University
01847334702
fd@daffodilvarsity.edu.bd
www.daffodilvarsity.edu.bd