মনের টানে মনপুরা
নিগার সুলতানা
কো অর্ডিনেশন অফিসার
ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি
মনপুরা, যেখানে রয়েছে প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্যের লীলাভূমি । ভোলা দ্বীপ থেকে প্রায় ৮০ কিলোমিটার দূরে বঙ্গোপসাগর এলাকার উত্তরদিকে মেঘনা নদীর মোহনায় অবস্থিত নয়নাভিরাম দ্বীপের নামই হল মনপুরা । এই দ্বীপের আয়তন ৩৭৩ বর্গ কিলোমিটার এবং জনসংখ্যা প্রায় ৫০ হাজার। সুবিশাল নদী বিস্তীর্ণ বনভূমি বিশাল ম্যানগ্রোভ প্রজাতির গাছের বাগান মাছ ধরার নৌকা কিংবা ট্রলার মনপুরার এই সহজ সরল প্রকৃতি বলে দেয় আমার দেশ কতই না সুন্দর কত নিষ্পাপ । মনপুরাতে দেখার মত বেশ কিছু জায়গা আছে তার মধ্যে হাজিরহাট জেটিঘাট, নতুন ব্রিজ, ম্যানগ্রোভ বন , চারার বাগান, চৌধুরী প্রজেক্ট ,দখিন হাওয়া সি বিচ । প্রাকৃতিক সৌন্দর্যতে ভরপুর এই দ্বীপটির অবস্থান একটু দুর্গম। কিন্তু প্রকৃতির এই ভিন্ন রূপ দেখতে এবং তাঁর স্বাদ নেবার জন্য প্রতি বছর অসংখ্য পর্যটক এ দ্বীপে ভ্রমণ করে ।
ঢাকা সদরঘাট থেকে সন্ধ্যা ছয়টা থেকে রাত দশটা পর্যন্ত মনপুরা গামী লঞ্চগুলো ছাড়ে তার মধ্যে তাসরিফ এবং ফারহান অন্যতম । আমরা গিয়েছিলাম ফারহান ৮ এ । ঢাকা সদরঘাট থেকে ঠিক সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায় ছেড়ে যায় লঞ্চটি মনপুরার উদ্দেশ্যে, মনপুরাতে পৌঁছায় রাত তিনটে নাগাদ । এখান থেকে বাইকে করে আমরা চারজন চলে গেলাম আগে থেকে বুকিং দেওয়া হানিফ হোটেলে । পৌঁছে ফ্রেশ হয়ে আমরা সকালের নাস্তা করে একটা অটো রিজার্ভ করে ফেললাম সারাদিনের জন্য প্রথমেই গেলাম মনপুরার প্রধান আকর্ষণ দখিন হওয়া সিবিচে। মনপুরা এসে সমুদ্র দেখার সুযোগটা কাজে লাগিয়ে ফেললাম ।
দখিনা হাওয়া সী বিচের কিছু সুন্দর জিনিস চোখে পড়ার মতো যেমন সেখানে গাছের উপর ছোট্ট করে ট্রি হাউজ বানানো ঠিক কিছুটা কুঁড়েঘরের মত, আছে উঁচু উঁচু গাছের সাথে টাঙানো ,দোলনা সাগর পাড়ে বসার জন্য আছে কিছু আরাম চেয়ার, সব কিছু মিলিয়ে মনে হবে যেন প্রকৃতি তার সম্পূর্ণ সৌন্দর্য নিয়ে বসে আছে আমাদের অভিবাদন জানাতে । দখিন হওয়া সিবিচ থেকে ফেরার সময় আমাদের অটো ড্রাইভার আমাদেরকে পর্যাপ্ত পরিমাণে সুলভ মূল্য গাছের টাটকা ডাব খাওয়ার বন্দোবস্তু করে দিয়েছিল আসলেই অসাধারণ ছিল । তারপর আমরা ফিরে আসি হোটেলে দুপুরের খাবার শেষে কিছুটা সময় বিশ্রাম নিয়ে যাই লেন্ডিং স্টেশন । আগে এখানে ট্রলার এবং লঞ্চগুলো ভীড়তো । তীব্র স্রোতের ফলে ল্যান্ডিং স্টেশনটি এখন আর ব্যবহৃত হয় না, স্থানীয় ভাষায় এই লন্ডন স্টেশন কে বলে হাজিরহাট জেটিঘাট । আমাদের হোটেলটা এই ঘাট থেকে ৫ মিনিটের হাঁটা পথ । এখানের মূল আকর্ষণ এখান থেকে সূর্যাস্তটা খুব সুন্দর ভাবে দেখা যায় সাথে আছে মন জুড়ানো হিমেল হাওয়া আর নিস্তব্ধতা । এখানে দিনের শেষে মেঘনা নদীতে সূর্যটা অস্ত যায় যা ছিল এক অদ্ভুত সুন্দর দৃশ্য । প্রথম দিনটা এভাবেই শেষ হয়ে গেল আমাদের পরিকল্পনা ছিল পরদিনই দুপুর একটার লঞ্চটা তে করে ঢাকা চলে আসা কিন্তু এই দিন ঘটলো একটা আশ্চর্য ঘটনা । পরদিন সকালে আমরা গেলাম স্থানীয় বাজারে নদীর টাটকা মাছ কিনতে । মাছ কেনার পর রান্না করা হলো মনপুরার স্থানীয় মাতবরের বাড়িতে ।
মাদবরের পরিবারের আতিথিয়তায় আমরা এতটাই মুগ্ধ হলাম যে সেদিন ঢাকা আসার পরিকল্পনা বদলিয়ে পরদিন আসার সিদ্ধান্ত নিলাম । সকালে খাবার শেষ করে আমরা গেলাম মাদবরের ট্রলারে করে স্থানীয় কিছু চর এ সেখানকার মানুষের জীবন যাপন দেখতে । যেখানে ছিল বানর আর হরিণের অবাধ বিচরণ ভূমি । যেতে যেতে চর আর নদীর অপরূপ রূপ দেখে মন ভরে যাবে । আসলে চরের মধ্যে যে এতটা মায়া লুকিয়ে থাকে সেটা এখানে না আসলে বোঝানো সম্ভব না । চর ঘুরে এসে আমরা দেখলাম মাদবরের বাসায় আমাদের জন্য নদীর টাটকা মাছ আর হাঁসের মাংস রান্না করা হয়েছে । আমরা সবাই কলপাড়ে গোসল করে তাড়াতাড়ি খাবারটা সেরে নিলাম তারপর একটু বিশ্রাম নিয়ে বিকেলে গেলাম সেই জেঠি ঘাটে সঙ্গে মাদবরের ছোট্ট মেয়ে মুসকানও ছিল । সেদিন বেশ রাত পর্যন্ত আমরা সেই মেঘনা নদীর পাড়ে বসেছিলাম । পরদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি মাদবরদের পুকুরে মাছ ধরার ধুম সাথে পুকুরপাড়ের গাছ থেকে পাড়া টাটকা তেতুল মাখানো সে এক অন্যরকম অনুভূতি । সেই মাছ দিয়ে দুপুরের খাবার শেষ করে আমরা চলে এলাম লঞ্চঘাটে, এবার যে ফিরতে হবে ঘরে, যদি কখনো আবারও সময় সুযোগ হয়ে ওঠে ফিরে যাব মুসকানদের মাতবর বাড়িতে………..