এখনই তৃতীয় প্রজন্মের (থ্রি জি) মোবাইল প্রযুক্তির সেবা উন্মুক্ত করার পক্ষে নয় কয়েকটি মোবাইল ফোন অপারেটর। বরং বেশ কিছুদিন থেকে থ্রিজি’র লাইসেন্স দেওয়ার বিষয়টি তারা ঠেকিয়ে রেখেছেন বলেও জানিয়েছে শীর্ষ এক অপারেটরের একজন কর্মকর্তা। তার ভাষ্যমতে, জুনে থ্রিজি’র জন্যে কয়েক হাজার কোটি টাকা দিয়ে পরে ২০১৪ সালে আবার ফোর-জি বা "লং টার্ম ইভ্যালুয়েশনের" (এলটিই) জন্যে আরো একবার টাকা দিতে পারবেন না তারা। সে কারণে প্রয়োজনে থ্রিজি’র নিলাম আরো কিছুদিন ঠেকিয়ে রাখা হবে।
এদিকে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি "প্রিয় টেক"কে বলছে, অপারেটরদের ইচ্ছা অনিচ্ছায় তারা তাদের সিদ্ধান্ত নেন না বা আবার সিদ্ধান্ত বদলও করেন না। সরকারের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমেই বিটিআরসি চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে বলেও জানান বিটিআরসি’র চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) জিয়া আহমেদ।
এদিকে থ্রিজি সেবা দেওয়ার বিষয়ে তৃতীয় গ্রাহক সেরা অপারেটর রবি’র প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মাইকেল কুহেইনার বলেন, এইজ (Edge) প্রযুক্তির মাধ্যমে এখনই তারা থ্রিজি’র অনেক সেবা দিচ্ছেন। তিনি বলেন, রবি এখন যে সেবা দিচ্ছে তা থ্রিজি’র সঙ্গে খুব বেশী পার্থক্য তৈরী করবে না। অন্যদিকে মার্চেই রাষ্ট্রায়ত্ত্ব মোবাইল ফোন অপারেটর টেলিটককে থ্রিজি’র সুযোগ দেওয়া সঠিক হয়নি বলে দাবি করেন তিনি।
এ বিষয়ে বাংলালিংকের এক কর্মকর্তা বলেন, জুনে যদি থ্রিজি’র লাইসেন্স দিতেই হয় তাহলে একই সঙ্গে এলটিই’র বিষয়টিও বিবেচনায় রাখতে হবে। ইতিমধ্যে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এলটিই প্রযুক্তি চলে এসেছে। সুতরাং একবার থ্রিজি আবার এলটিই এভাবে বারবার একই বিষয়ে টাকা খরচ না করে বরং একটি সমন্বিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে কাজগুলো করা হলে সেটিই বরং ভালো হবে।
অন্যদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সিটিসেলের অপর এক কর্মকর্তাও প্রিয় টেককে বলেন, থ্রিজি’র চেয়েও তারা এলটিই’র প্রতি অনেক বেশী আগ্রহী। সুতরাং সরকার সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিলেই অনেক ভালো হবে। তাছাড়া ফোর-জি বা এলটিই’র বিষয়ে তারা এখনই একটি আবেদন করে রাখবেন বলে জানান ওই কর্মকর্তা।
তবে গ্রাহক সংখ্যার বিবেচনায় দেশের সেরা অপারেটর গ্রামীণফোন বলছে, তারা থ্রিজি’ই আগে পেতে চান। সে জন্যে তারা যথেষ্ট প্রস্তুতিও নিয়ে রেখেছেন। এখন অনুমোদন পেলেই গ্রাহকদের থ্রিজি’র সেবা দিতে পারবেন বলে জানান গ্রামীণফোনের চিফ কমিউনিকেশন অফিসার কাজী মনিরুল কবীর।
বিটিআরসি ২০০৮ সাল থেকে জরুরী অবস্থার মধ্যেই থ্রিজি’র বিষয়ে নীতিমালা প্রনয়নের কাজ করছে। কিন্তু নানা কারণে এখনো তারা নীতিমালা চূড়ান্ত করেনি। তবে তারা বলছেন, জুনের মধ্যে নীতিমালা চূড়ান্ত করে নিলাম অনুষ্ঠান করা সম্ভব হবে। যদিও নীতিমালা চূড়ান্ত করতে এখনো পরামর্শকও নিয়োগের কাজ শেষ করতে পারেনি বিটিআরসি।
এদিকে নীতিমালা করার আগেই থ্রিজি’র মাধ্যমে ৮ হাজার কোটি টাকা আয়ের পরিকল্পনা সাজাচ্ছে বিটিআরসি। আর এখনেই নতুন চিন্তা করছে অপারেটরগুলো। লাইসেন্স দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে থ্রিজি’র নিলাম অনুষ্ঠান নিয়েও সিন্ডিকেশনের বিষয়টি তুলে ধরেন কেউ কেউ। স্পেকট্রামের মূল্য কমিয়ে রাখাতে সব অপারেটরা মিলে নিলামে সিন্ডিকেশন করে নামতে পারেন বলেও ধারণা দিয়েছেন একজন। এমনকি স্পেকট্রামের মূল্য বাড়াতে বিদেশী অপারেটরকেও ডেকে আনা হবে বলে বিটিআরসিকে জানানো হলেও তিনি বলেন, বিদেশীদের নিয়েও কি সিন্ডিকেট করা সম্ভব নয়? কে চাইবে অহেতুক বেশী টাকা দিতে।
এ বিষয়ে বিটিআরসি’র চেয়ারম্যান বলেন, সিন্ডিকেটের কথা তাদের বিবেচনায়ও আছে। সে কারণে নিলামের ফ্লোর প্রাইস অনেক বাড়িয়ে নির্ধারণ করা হবে। যাতে কেউ নির্দিষ্ট একটি অংকের নীচে না নামতে পারে।