বিষয়ঃ আল্লাহর নিকট দোয়া করা ও তার উপকারিতা
খতীবঃ শায়খ আব্দুল মুহসিন ইবনে আব্দির রাহমান
মহান আল্লাহর জন্যই সমস্ত প্রশংসা যিনি বনী আদম সৃষ্টি করত তাদের হিদায়াতের নিমিত্তে তাদের মধ্য থেকেই নবী প্রেরণ করেছেন ও তাঁর নিকট দোয়া করতে শিক্ষা দিয়েছেন। হাজারো দরূদ ও সালাম মানবতার মুক্তিদিশারী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি। তাঁর পরিবার পরিজন ও সাহাবীদের প্রতিও রহমত বর্ষিত হোক।
সম্মানিত উপস্থিতি
আল্লাহ তায়ালাকে ভয় করে চলুন ও জেনে রাখুন দোয়া করা ইবাদাতের অন্যতম প্রকারের অন্তর্ভুক্ত। বিশিষ্ট সাহাবী হযরত নু'মান ইবন বশীর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, প্রিয়নবী (সঃ) ইরশাদ করেন, “দোয়া করাই হলো ইবাদত।†অতঃপর তিনি পবিত্র কুরআনের একটি বাণী উদ্ধৃত করেন যার ভাবার্থ হলো, “তোমাদের পালনকর্তা বলেন, তোমরা আমাকে ডাক, আমি সাড়া দেব। যারা আমার ইবাদাতের অহংকার করে তারা সত্তরই জাহান্নামে দাখিল হবে, লাঞ্ছিত হয়ে।†(সূরা মু'মিন, ৬০)
এ বাণীগুলো সুনানে আবু দাউদ ও তিরমিযীতে বর্ণনা করা হয়েছে। এটি হাসান তথা উত্তম হাদীস হিসেবে পরিগণিত। মহান আল্লাহ তাঁর নিকট দোয়া করার জন্য অনেক আয়াত ইঙ্গিত প্রদান করেন, তা কবুল হওয়ার ওয়াদা করেন ও দোয়া প্রার্থনাকারী অনেক নবীদের জন্য প্রশংসাবাণী উল্লেখ করে ইরশাদ করেন- “তারা সৎকর্মে ঝাঁপিয়ে পড়ত, তারা আশা ও ভীতি সহকারে আমাকে ডাকত এবং তারা ছিল আমার কাছে বিনীত। (সূরা আল আম্বিয়া, ৯০)
তিনি আরো উল্লেখ করেন যে, বান্দার অতি নিকট থেকে তিনি তাদের ডাকে সাড়া প্রদান করে থাকেন। এ মর্মে ইরশাদ করেন- “আর আমার বান্দারা যখন তোমার কাছে জিজ্ঞেস করে আমার ব্যাপারে বস্তুত আমি রয়েছি সন্নিকটে। যারা প্রার্থনা করে, তাদের প্রার্থনা কবুল করে নেই, যখন আমার কাছে প্রার্থনা করে। কাজেই আমার হুকুম মান্য করা এবং আমার প্রতি নিঃসংশয়ে বিশ্বাস করা তাদের একান্ত কর্তব্য, যাতে তারা সৎপথে আসতে পারে।†(সূরাতুল বাকারাহ, ১৮৬)
মহান আল্লাহ তার বান্দাদেরকে সর্বাবস্থায় বিশেষত বিপদ-মুসিবতে তাঁর প্রতি কাকুতি-মিনতিসহ দোয়া করার নির্দেশ প্রদান করেন। তিনি আরও জানিয়ে দেন যে, একমাত্র আল্লাহ ব্যতীত আর কেউ বিপদগ্রস্ত ব্যক্তির করুণ আহ্বানে সাড়া দেয় না। তিনি ইরশাদ করেন- “বলতো কে নিঃসহায়ের ডাকে সাড়া দেন যখন সে ডাকে এবং কষ্ট দূরীভূত করেন?†(সূরা আন নামল, ৬২)
পবিত্র কুরআনে বিপদগ্রস্ত ব্যক্তিদের আল্লাহ তায়ালা থেকে মুখ ফিরানোর কারণে তাদের প্রতি ভর্ৎসনা করা হয়েছে। তিনি ইরশাদ করেন- “আর আমি কোন জনপদে কোন নবী পাঠাইনি, তবে এমতাবস্থায় যে, পাকড়াও করেছি সে জনপদের অধিবাসীদিগকে কষ্ট ও কঠোরতার মধ্যে, যাতে তারা শিথিল হয়ে পড়ে।†(সূরা আল আরাফ, ৯৪) এ মর্মে পবিত্র কুরআনে আরো ইরশাদ হয়েছে- “আর আমি আপনার পূর্ববর্তী উম্মতদের প্রতিও পয়গাম্বর প্রেরণ করেছিলাম। অতঃপর আমি তাদেরকে অভাব-অনটন, রোগ-ব্যধি দ্বারা পাকড়াও করেছিলাম যাতে তারা কাকুতি-মিনতি করে। অতঃপর তাদের কাছে যখন আমার আযাব আসল, তখন কোন কাকুতি-মিনতি করল না। বস্তুত তাদের অন্তর কঠোর হয়ে গেল এবং শয়তান তাদের কাছে সুশোভিত করে দেখাল, যে কাজ তারা করছিল।†(সূরা আল আন আম, ৪২, ৪৩)
একটি বিষয় চিন্তা করলে আমাদের আশ্চবাম্বিত হতে হয় যে, আল্লাহ তায়ালা সর্বদিক থেকে মুখাপেীহীন হওয়া সত্ত্বেও তিনি তাঁর বান্দাদের একমাত্র তাঁরই কাছে যাঞ্চা করতে বলেন শুধুমাত্র আমাদের প্রতি তাঁর অজস্র রহমত বরকতের ইঙ্গিত স্বরূপ। কেননা আমরাই তাঁর প্রতি সর্বেেত্র মুখাপেী। এ প্রসঙ্গে পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হচ্ছে যার ভাবার্থঃ “হে মানুষ, তোমরা আল্লাহর গলগ্রহ। আর আল্লাহ; তিনি অভাবমুক্ত, প্রশংসিত।†(সূরা ফাতির, ১৫) আরো ইরশাদ হচ্ছে- “আল্লাহ অভাবমুক্ত এবং তোমরা অভাবগ্রস্ত।†(সূরা মুহাম্মাদ, ৩৮)
এ মর্মে হাদীসে কুদসীতে ইরশাদ হয়েছে- “হে আমার বান্দারা! আমি যাকে হেদায়াত দিয়েছি সে ছাড়া তোমাদের প্রত্যেকেই পথভ্রষ্ট। কাজেই আমার কাছে হেদায়াত চাও, আমি তোমাদিগকে হেদায়াত দেব। হে আমার বান্দারা! আমি যাকে খাদ্য দিয়েছি সে ছাড়া তোমাদের প্রত্যেকেই ুধার্ত। কাজেই আমার কাছে খাদ্য চাও, আমি তোমাদিগকে খাদ্য দেব। হে আমার বান্দারা! আমি যাকে কাপড় দিয়েছি সে ছাড়া তোমাদের প্রত্যেকেই উলংগ। কাজেই আমার কাছে কাপড় চাও, আমি তোমাদেরকে কাপড় দেব। হে আমার বান্দারা! তোমরা রাত-দিন ভুল করে থাক, আর আমি সমস্ত গুনাহ মাফ করে দেই। কাজেই তোমরা আমার কাছে গুনাহ মাফ চাও, আমি তোমাদেরকে মাফ মরে দেব।†(সহীহ মুসলিম)
আল্লাহর বান্দাগণ
জেনে রাখুন দোয়া কবুল হওয়ার জন্য কিছু শর্ত রয়েছে, সেগুলো পূরণ না হলে সাধারণত দোয়া কবুল হয় না। মহান আল্লাহ দোয়াকারীর দোয়া কবুল হওয়ার ওয়াদা করেছেন। তিনি যেহেতু ওয়াদা খেলাফ করেন না, তাই আমাদের অত্যন্ত বিনীতভাবে তাঁর কাছে দোয়া করতে হবে। দোয়া কবুল না হওয়ার কতগুলো কারণ নিুে উল্লেখ করছিঃ
০ বান্দাহ যদি আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত ফরযসমূহ লঙ্ঘন করে ও আল্লাহর নিষিদ্ধ কার্যাবলী ও তাঁর নাফরমানীতে লিপ্ত হয়ে থাকে, তাহলে দোয়া কবুল হয় না। এ মর্মে পবিত্র কোরআনে ফেরআউনের সাঙ্গ-পাঙ্গরা যখন পানিতে ডুবে মরছিল সে মুহূর্তে দোয়া করছিল, মহান আল্লাহ তাদের সে সময়কার দোয়া প্রত্যাখ্যান করে ইরশাদ করেনঃ “এখন একথা বলছ। অথচ তুমি ইতিপূর্বে নাফরমানী করছিলে এবং পথভ্রষ্টদের অন্তর্ভুক্ত ছিলে।†(সূরা ইউনুস, ৯১)
ঈমানদার ভাইগণ
দোয়া কবুল না হওয়ার আরো একটি উল্লেখযোগ্য কারণ হল হারাম খাদ্য-দ্রব্য ও পানীয় গ্রহণ করা, হারাম পোশাকাদী পরিধান করা। নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের একটি বিশুদ্ধ হাদীস থেকে তার প্রমাণ মেলে। তিনি একদা এমন এক লোক সম্পর্কে আলোচনা করলেন; যে দীর্ঘ পথ সফর করেছে। ফলে তার অবস্থা হয়েছে স্কো স্কো ও ধূলিমলিন। এমতাবস্থায় সে তার হাত দু'খানি আকাশের দিকে প্রসারিত করে, হে প্রভু, হে প্রভু, বলতে থাকে। অথচ সে যা খায় তা হারাম, যা পান করে তাও হারাম, যা পরিধান করে তাও হারাম। এককথায় তার জীবন ধারণের সবকিছুই হারাম। সুতরাং কিভাবে তার দোয়া কবুল হতে পারে?†(সহীহ মুসলিম) এ মহান হাদীস থেকে বুঝা যায়, হারাম আয়-উপার্জন দ্বারা সংগ্রহীত যাবতীয় খাদ্য-পানীয় ও বস্ত্র গ্রহণ করা হলে তা দোয়া কবুল না হওয়ার বড় কারণ দাঁড়ায়। এ মর্মে প্রিয় নবীর আরো একটি হাদীস প্রণিধানযোগ্য, তিনি ইরশাদ করেনঃ “তোমার রান্নাঘরের (তাতে যা রান্না করা হয় তা হালাল কিনা তার) পবিত্রতার দিকে ভালভাবে ল্য রেখো, তাহলে তুমি দোয়া কুবলকারীদের অন্তর্ভুক্ত হবে।†(মুসনাদে আহমাদ)
হযরত আবদুল্লাহ ইবন ইমাম আহমাদ তাঁর ‘আয-যুহদ' নামক কিতাবে উল্লেখ করেন, একবার নবী ইসরাইলের কতিপয় লোক পবিত্র থাকার নিমিত্তে এক জায়গায় যাওয়ার ইচ্ছা পোষণ করলে মহান আল্লাহ তাঁদের নবীকে নির্দেশ প্রদান করে বলেন, তোমরা একটি ভাল স্থানে যাওয়ার ইচ্ছা পোষণ করলেও মুক্তি পাবে না, কারণ তোমাদের শরীরে অবৈধ খাদ্য বিদ্যমান, তোমরা দোয়ার জন্য এমন হাতগুলো সম্প্রসারিত করছ যেগুলো নিরপরাধ লোকদের হত্যায় কলঙ্কিত, তোমাদের বাড়ী-ঘরে হারাম জিনিসে ভর্তি হয়ে আছে। কাজেই এখন আমি তোমাদের উপর অসন্তুষ্ট হলে তোমাদের তিই বৃদ্ধি পাবে।
সম্মানিত উপস্থিতি
উপরোক্ত বর্ণনা থেকে আমাদের সবার সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত যাতে আমাদের খাদ্য-পানীয় ও কাপড়-চোপড় তথা জীবনের সর্বেেত্র হারাম থেকে সর্বাÃকভাবে মুক্ত থাকা যায়। তাতেই কেবল দোয়া কবুল হওয়ার আশা করা যায়।
০ দোয়া কবুল না হওয়ার আরো একটি বড় কারণ হল, একনিষ্ঠতা ও আন্তরিকতাশূন্য অবস্থায় দোয়া করা। কেননা মহান আল্লাহ খাঁটি বিশ্বাসের সাথে দোয়া করতে নির্দেশ দিয়ে ইরশাদ করেনঃ “অতএব, তোমরা আল্লাহকে খাঁটি বিশ্বাস সহকারে ডাক, যদিও কাফিররা তা অপছন্দ করে। অতএব তোমরা আল্লাহ তায়ালার সাথে কাউকে ডেকো না।†(সূরা আল জিন, ১৮)
উপরোক্ত আয়াতগুলো সুস্পষ্টভাবে ইঙ্গিত প্রদান করছে, যারা আল্লাহর সাথে অন্য কাউকে অংশীদার সাব্যস্ত করে, কবর পূজা করে, আউলিয়া ও সৎলোকদের কাছে মনষ্কাম হাসিলের জন্য মানত করে, যেমনিভাবে কবরপূজারীরা মৃতদেহ নিকট ফরিয়াদ করে, এ সমস্ত লোকদের দোয়া কখনো আল্লাহ কবুল করবেন না। কেননা তারা আল্লাহর সাহায্য-সহযোগিতা থেকে সম্পূর্ণভাবে বিমুখ হয়েছে।
হাদীস শরীফে বর্ণিত হয়েছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেনঃ “বান্দা যখন স্বচ্ছলতায় আল্লাহর বিধান যথাযথভাবে পালন করবে, তাকওয়া অবলম্বন করবে আল্লাহ তায়ালা ঐ ব্যক্তির দুর্দিনে তাকে বিশেষ সহযোগিতা ও রহমত বর্ষণ করেন, ঐ ব্যক্তির সাথে আল্লাহর একটি বিশেষ সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এর ফলে সে বিপদাপদে নাজাত পেয়ে থাকে। এ মর্মে হাদীসে কুদসীতে বর্ণিত আছেঃ মহান আল্লাহ ইরশাদ করেনঃ “আমার বান্দা আমার আরোপিত ফরয কাজের মাধ্যমে এবং নফল কাজের মাধ্যমে আমার নৈকট্য লাভ করতে থাকে। এভাবে (এক স্তরে) আমি তাকে ভালবাসতে থাকি। আর যখন আমি তাকে ভালবাসি তখন আমি তার কান হয়ে যাই যা দিয়ে সে শুনে, তার চোখ হয়ে যাই যা দিয়ে সে দেখে, তার হাত হয়ে যাই যা দিয়ে সে ধরে এবং তার পা হয়ে যাই যা দিয়ে সে চলাফেরা করে। আর যদি সে আমার নিকট কিছু চায়, আমি তাকে দেই। আর যদি আমার নিকট আশ্রয় চায় তাহলে আমি তাকে আশ্রয় দেই।†(সহীহ বুখারী)
যারা তাদের স্বচ্ছলতায় তাকওয়া অবলম্বন করবে মহান আল্লাহ তাদের বিপদের সময় সহযোগিতা করে থাকেন। যেমন ঘটেছিল তাঁর এক প্রিয় নবী হযরত ইউনুস (আঃ)-এর সাথে। যখন তাঁকে মাছ পেটে পুরে রেখেছিল। সে করুণ কাহিনীর কিঞ্চিত ইঙ্গিত প্রদান করে মহান আল্লাহ ইরশাদ করেনঃ “যদি তিনি আল্লাহর তাসবীহ পাঠ না করতেন তবে তাকে কিয়ামতের দিবস পর্যন্ত মাছের পেটে থাকতে হত।†(সূরা আস-সাফফাত, ১৪৪) যেহেতু তিনি একজন উন্নততর নবী ছিলেন এবং তিনি সর্বদা আল্লাহর তাসবীহ করতেন, সেজন্য আল্লাহ তাঁর কঠিন বিপদে বিশেষভাবে তাঁকে সাহায্য প্রদান করে বিশ্ববাসীর নিকট সত্যপন্থী ও তাঁর প্রতি নিবেদিতদের সহায়তার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন এবং কিয়ামত পর্যন্ত মাছের পেটে থাকা থেকে তাঁকে নিষ্কৃতি প্রদান করেন।
অন্যদিকে ফিরাউন মহান আল্লাহর অস্তিত্বে অস্বীকার করে বিদ্রোহী হয়ে উঠে। অবশেষে সে তার সাঙ্গপাঙ্গ সহ নীল নদে ডুবতে থাকে এক পর্যায়ে ঈমানের ঘোষণা দিতে থাকে। কিন্তু সে সময়ের ঈমান আনা তার কোন উপকারে আসেনি। সে সত্যটি পবিত্র কুরআনে সুন্দরভাবে ফুটে উঠেছে। যার ভাবার্ত নিুরূপঃ
“আর বনী ইসরাইলকে আমি পার করে দিয়েছি নদী। অতঃপর তাদের পশ্চাদ্ধাবন করেছে ফিরআউন ও তার সেনাবাহিনী দুরাচার ও বাড়াবাড়ির উদ্দেশ্যে। এমনকি যখন তারা ডুবতে আরম্ভ করল, তখন বলল, ‘এবার আমরা বিশ্বাস করে নিচ্ছি যে, কোন মাবুদ নেই তাঁকে ছাড়া যাঁর উপর ঈমান এনেছে বনী ইসরাইলরা।†(সূরা ইউনুস, ৯০)
ফিরআউন ও তার সহচরদের যেমন আল্লাহর উপর খালিস বিশ্বাসের অভাবে ঈমান নসীব হয়নি, তেমনি এ যুগেও যারা বিভিন্ন মানুষের দোহাই দিয়ে ওয়াসিলা করে তাদের দোয়াও আল্লাহ কবুল করবেন না, কেননা তারা ইসলাম ও ইবাদাতের নামে বিদয়াত প্রবর্তন করত মূল ইসলামের চরম তি সাধন করেছে। ইসলামের কোথাও এ ধরনের ওয়াসিলার সঠিক প্রমাণ মেলে না; আল্লাহ কোন ব্যক্তির বা তার মর্যাদার ওয়াসিলা দিয়ে দোয়া করার বিধানও প্রবর্তন করেননি; বরং তিনি শুধুমাত্র তাঁর কাজেই দোয়া করার নির্দেশ প্রদান করেন। ইরশাদ হচ্ছেঃ “আর আমার বান্দার যখন তোমার কাছে জিজ্ঞেস করে আমার ব্যাপারে- বস্তুত আমি রয়েছি সন্নিকটে। যারা প্রার্থনা করে, তাদের প্রার্থনা কবুল করে নেই, যখন আমার কাছে প্রার্থনা করে। (সূরা আল বাকারাহ, ১৮৬) তিনি আরো ইরশাদ করেনঃ “তোমাদের পালনকর্তা বলেন, তোমরা আমাকে ডাক, আমি সাড়া দেব।†(সূরা মু'মিন, ৬০) এতে প্রতীয়মান হয় যে, আমাদের শিরক ও বিদয়াতমুক্ত দোয়া থেকে সম্পূর্ণভাবে মুক্ত থাকতে হবে যার খেলাপ আজ কোথাও কোথাও পরিলতি হচ্ছে।
বান্দার দোয়া কবুল না হওয়ার আরো একটি কারণ হল অমনোযোগী ও আন্তরিকতাশূন্য অবস্থায় দোয়া কর। এ মর্মে হাদীসে ইরশাদ হচ্ছেঃ “তোমরা এ অবস্থায় দোয়া করবে যাতে তোমরা তা কবুল হওয়ার ব্যাপারে দৃঢ় বিশ্বাস পোষণ কর, জেনে রেখো মহান আল্লাহ গাফিল ও অমনযোগীদের দোয়া কবুল করেন না।†(হাকিম)
মু'মিন বান্দার দোয়া কবুল না হওয়ার আরো একটি কারণ হল সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধ না করা। হযরত হুযায়ফা ইবনুল ইয়ামান থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেনঃ “তোমরা অবশ্যই সত্য-ন্যায়ের আদেশ এবং অন্যায় ও অসত্যের প্রতিরোধ করবে। অন্যথায়, অচিরেই আল্লাহ তোমাদিগকে শাস্তি দেবেন। (গযবে নিপতিত হবে) তোমরা দোয়া করবে কিন্তু তখন তোমাদের ডাকে সাড়া দেয়া হবে না। (দোয়া কবুল হবে না) (তিরমিযি শরীফ) ইমাম হাকিম তাঁর মুস্তাদরাক কিতাবে হযরত আলী রাদিআল্লাহ আনহু থেকে বর্ণনা করেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, “দোয়া মু'মিনের জন্য হাতিয়ার স্বরূপ, দ্বীনের খুঁটি বা ভিত্তির সমতুল্য ও তা আসমান জমীনের আলোকবর্তিকা স্বরূপ।†(মুস্তাদরাক হাকেম)
আল্লাহর বান্দাগণ
সবাই আল্লাহকে যথাযথভাবে ভয় করে তাঁর আদেশাবলী পালন ও নিষেধাবলী থেকে বিরত থাকুন। তাঁর কাছে কাকুতি-মিনতি সহকারে দোয়া করুন। এ মর্মে হযরত আয়েশা (রাদিয়াল্লাহু আনহা) থেকে বর্ণিত বর্ণিত আছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, “কাকুতি-মিনতি সহকারে যারা দোয়া করেন মহান আল্লাহ তাদের পছন্দ করেন।†(তাবরানী শরীফ)
উপরোক্ত বর্ণনাগুলোতে সুস্পষ্ট হয়ে উঠে দোয়া মূলত বড় ধরনের ইবাদাতের অন্তর্ভুক্ত। কেননা তা আল্লাহর নিকট অতিশয় বিনয় প্রকাশ ও বান্দাহ যে প্রতি মুহূর্তে তাঁর প্রতি নির্ভরশীল তা দোয়াতে সুস্পষ্টভাবে প্রকাশ পায়। অপরদিকে যারা দোয়া করে না তাদের অন্তরের কঠোরতা, অহংকার ও আল্লাহবিমুখিতার ইঙ্গিত বহন করে যা জাহান্নামের অধিকারীদের গুণাবলীর অন্তর্ভুক্ত।