“কাগজে খবর পড়ছেন মানে আপনিও গাছ কাটছেনâ€- বাংলাদেশের প্রথম সারির একটি অনলাইন নিউজসাইটের বিজ্ঞাপণটি দেখে থমকে দাঁড়িয়েছেন অনেকেই। তথ্যের আদান-প্রদানই যদি হয় মূল লক্ষ্য তাহলে সেটা শক্ত কাগজেই হোক কিংবা ইলেক্ট্রনিক্যাল যন্ত্রেই হোক; তাতে কিইবা আসে যায়? ক্ষুদ্র জ্ঞানে বুঝি- আসে যায়! কাগজ তৈরীর কাঁচামাল জোগান দিতে দিতে দেশের বনভূমি সাফ করে দেয়াটা মোটেই কাজের কথা না। খুলনা নিউজপ্রিন্টের কাঁচামাল কেওড়া গাছের যোগান দিতে গিয়ে বর্তমান সুন্দরবনের কেওড়াগাছশূন্যতাই তার বড় প্রমাণ। মাসখানেক আগে বইমেলায় গিয়ে দেখি এলাহী কারবারঃ মাত্র ১০০পাতার পাতলা একেকটা বইয়ের দাম ২০০টাকা! কাগজের এই অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি সমাধান কি? অদূর ভবিষ্যতে “কাগজশূন্য পৃথিবীâ€র স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দেয়া হয়ত সম্ভব হবে না কিন্তু কাগজের বিকল্প খুঁজে নিয়ে কাগজের উপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে নিয়ে আসার কাজটা খুবই সম্ভব। আর হালের “ইবুক রিডারগুলো†ঠিক এই কাজটাই করে যাচ্ছে, ঘটিয়ে যাচ্ছে নিরব বিপ্লব।
Kindle
অনলাইন কেনাবেচার সাইট অ্যামাজনের অফিসিয়াল প্রেস রিলিজ অনুযায়ী গতবছরের তুলনায় এবছর তাদের ইবুক রিডার কিন্ডেলের বিক্রি বেড়েছে প্রায় ১৭৭%! শুধুমাত্র ২০১০সালের প্রথম ছয়মাসে কিন্ডেলের বিক্রিকৃত ইবুকের সংখ্যা ২২মিলিয়ন! মজার বিষয় হচ্ছে, ঐ সময় প্রতি ১০০ হার্ডকপি বইয়ের বিপরীতে কিন্ডেল ইবুক বিক্রি হয়ছে ১৪৩টি! Nicholas Negroponte’র মত অতি উৎসাহী কেউ কেউ তো আগামী ৫ বছরের মধ্যে হার্ডকপি বইয়ের মৃত্যুঘন্টা বাজবার ভবিষ্যতবাণীও করে বসেছেন। আপাতত সেই বিতর্কিত ভবিষ্যতবানীর কথা থাক। বরং অ্যামাজনের ইবুক রিডার নিয়ে ঘাটাঘাটি করা যাক!
1st & 2nd Gen Kindle
২০০৭ সালের নভেম্বরে অ্যামাজন শুধুমাত্র আমেরিকার বাজারে রিলিজ করে তাদের তৈরি করা প্রথম ইবুক রিডার- First generation: Kindle। ৩৯৯ডলারের উচ্চমূল্য সত্ত্বেও রিলিজের মাত্র সাড়ে পাঁচ ঘন্টার মধ্যেই বিক্রি হয়ে যায় প্রতিটি ডিভাইস। সময়ের চাহিদার সাথে সাথে আরও দুই জেনারেশন পেরিয়ে বর্তমানে কিন্ডেল পেরোচ্ছে তাদের চতুর্থ জেনারেশন।
3rd & 4th Gen
কিন্ডেলের বিশেষত্বঃ
ডিসপ্লের জন্য প্রথাগত এলসিডির পরিবর্তে কিন্ডেলে ব্যবহার করা হয়েছে “Most Advanced E Ink Display†যা সত্যিকার কাগুজে বই পড়ার স্বাদ যোগায়। এলসিডির মত ব্যাকলাইটের ব্যবহার না করার কারনে সূর্যের আলোতে বসেও আরামে পড়া চালিয়ে যাওয়া যায় ক্রিনে রিফ্লেকশনের ঝামেলা ছাড়াই। ব্যাকলাইট না থাকায় দীর্ঘ সময় পড়াশুনা করলেও চোখের উপর কোন চাপ পড়েনা।
Kindle With Ipad
ই-ইঙ্ক প্রযুক্তির আরও একটা বড় সুবিধা হচ্ছে একটি লেখা একবার ক্রিনে দেখানোর পর সেটি বদলানোর আগে পর্যন্ত অতিরিক্ত কোন বিদ্যুতের দরকার হয়না। তাই ব্যাটারী ব্যাকআপ লাইফও অসাধারণঃ একবার ফুলচার্জে অনায়াসে চলে যাবে পুরো ১-২ মাস! আর চার্জিং এর জন্য আলাদা অ্যাডাপটার কেনার দরকার নেই, ইউএসবি কেবল দিয়ে পিসি/ল্যাপটপে লাগিয়ে রাখলেই চার্জ নিয়ে নেবে।
কিন্ডেলের জন্য বই পাব কই?
ইন্টারন্যাশনাল ক্রেডিট কার্ড থাকলে কিন্ডেল স্টোরের ১মিলিয়নেরও বেশী বইয়ের ভান্ডার থেকে কয়েক সেকেন্ডে কিনে নিতে পারবেন আপনার পছন্দের ইবুকটি। ফ্রিতে চাইলে গুগলে “Free Kindle Ebooks†লিখে সার্চ দিলেই কয়েকশো বই পাওয়া যাবে। আর টরেন্টের হাজার হাজার পাইরেটেড ইবুকের কথা নাহয় নাই বলি। পিসি থেকে ফাইলপত্তর কিন্ডেলে নেয়ার জন্য ইউএসবি ক্যাবল তো আছেই!
ফাইল ফর্মেট সাপোর্টঃ
কিন্ডেলের ইবুকগুলোর নিজস্ব ফর্মেট .mobi । পাশাপাশি নোটপ্যাড ডকুমেন্ট (TXT), PDF-সহ HTML, DOC, DOCX এমনকি ছবির ফর্মেট JPEG, GIF, PNG, BMP- ফাইলগুলোও কিন্ডেলে অনায়াসে চলে। এর বাইরে আনসাপোর্টেড ফাইল কনভার্টের জন্য ফ্রি কনভার্টর থাকতে আর চিন্তা কি?
Reading in Sunlight
দাম?
টাচ, থ্রিজি, ডিসপ্লে সাইজ, স্টোরেজ ক্যাপাসিটি ইত্যাদি ফিচারের থাকা-না থাকার উপর ভিত্তি করে একবছরের ওয়ারেন্টিসহ বর্তমান বাজারে ৫টি মডেলের কিন্ডেল পাওয়া যাচ্ছে। Kindle, Kindle Touch, Kindle Touch 3G, Kindle Keyboard 3G এবং Kindle DX এর দাম যথাক্রমে ১০৯, ১৩৯, ১৮৯, ১৮৯ এবং ৩৮৯ মার্কিন ডলার। আমি কিনেছি এড সাপোর্টেড স্পেশাল অফারসহ কিন্ডেল মাত্র ৭৯ডলারে। ফিচারগুলো বিস্তারিত দেখে নিতে পারেন এখান থেকে
বাংলাদেশে কই পাওয়া যায় এই জিনিষ?
বাংলাদেশে বসে পেতে চাইলে বিদেশে থাকে এমন কোন আত্মীয় বলে হাতে হাতে আনিয়ে নিতে পারাটাই সবচেয়ে ভালো ও নিরাপদ। ইন্টারন্যাশনাল শিপিং-এ ভরসা পাইনা। তাছাড়া দেশে আসার পর জিপিওতে দুর্নীতিবাজ আমলাদের সাথে ট্যাক্স সমঝোতার ঝক্কিঝামেলায় না পড়াটাই ভালো। বাংলাদেশী অনলাইন কেনাবেচার সাইট আইফেরি.কম-এ বেশ কিছুদিন আগে কিন্ডেলের বিজ্ঞাপণ দেখেছিলাম। ওদের স্টকে থাকলে ওখান থেকেও কিনে নিতে পারেন। আপনার জানামতে কেনার অন্যকোন সোর্স থাকলে দয়া করে শেয়ার করেন।
কিন্ডেলের খোঁজে আইডিবি, এলিফ্যান্ট রোডের কম্পিউটারের দোকানগুলো ঘুরে ঘুরে ব্যর্থ হয়ে শেষমেষ ইউএসএ- থেকে লোকমারফত আনাতে বাধ্য হয়েছি। গত দুই সপ্তাহ আগে হাতে পাওয়ার পর থেকেই চুটিয়ে গুতাগুতি চলছে। পিসিতে ব্যক্তিগত কালেকশনে থাকা প্রায় আড়াইশ সিলেক্টেড ইবুকগুলো কিন্ডেলে ট্রান্সফারের কাজটাও শেষ। টের পাচ্ছি কাগুজে ছাপার অক্ষর থেকে অভ্যস্ততা কাটতে বেশী সময় লাগবেনা আর।
_______
শেষকথাঃ ঘরের বুকসেলফগুলোর দিকে তাকালে আজকাল কেমন যেন হাসি পায়, মাত্র শখানেক গল্পের বই রাখাতে কত কি আয়োজন! বিশাল সেলফের ছোট্ট কোণায় বাস করে আমার কিন্ডেল; যার ভিতরে লুকিয়ে থাকে প্রায় হাজারখানেকেরও বেশী বই। ভাবতে ভালোই লাগে!