সংখ্যার খেলা:
এবার শুরু হবে সংখ্যা খেলা, আর এর জন্য আপনার প্রয়োজন হবে ক্যালকুলেটরের! বাজারে আপনি যে সকল লেন্স পাবেন সেগুলোর ফোকাল লেন্থ হয়তোবা লেখা রয়েছে ১৮-৫৫ মি.মি., ৫০ মি.মি., ১৮-১০৫ মি.মি ইত্যাদি। কিন্তু ৩৫ মি.মি. ফিল্মের সাথে তুলনা করলে এই হিসেবটাতে একটু গণ্ডগোলের সৃষ্টি হয়। চিত্রগ্রাহকেরা একে ডিজিটাল ফ্যাক্টর হিসেবে অভিহিত করছেন। সাধারণভাবে ডিজিটাল এসএলআর ব্যবহার করে এপিএস-সি সেন্সর যা ৩৫ মি.মি. ফিল্ম ক্যামেরার সেন্সরের চাইতে ১.৫x অথবা ১.৬x ছোট হয়ে থাকে। অর্থাৎ আপনি যে কিট লেন্সটি পাচ্ছেন তা ১৮-৫৫ মি.মি. লেখা থাকলেও ৩৫ মি.মি. হিসেবে হয়ে যাচ্ছে ২৭-৮২.৫ মি.মি. (১৮-৫৫x১.৫)। তবে এই হারটি আবার নির্ভর করে তৈরি কারক এবং মডেলের উপর। যেমন, অলিম্পাস এবং প্যানাসনিক এর মাইক্রো ফোর থার্ড ক্যামেরাগুলোর ক্ষেত্রে এই বিভাজনটি হবে ২x হিসেবে, নিকোনের ১এস এ ২.৭x, পেনট্যাক্স কিউ ৫.৫x। তবে ফুল ফ্রেম ছবি তুলতে সক্ষম এমন ক্যামেরাগুলোর ক্ষেত্রে অবশ্য এই হিসাবটা আপনাকে করতে হবে না। ফুল ফ্রেম ক্যামেরা হিসেবে পাবেন নিকনের ডি ৮০০ অথবা ক্যাননের ফাইভ ডি বা ওয়ান ডি সিরিজটি। কিন্তু এই ধরণের ক্যামেরা কিনতে হলে আপনাকে খরচ করতে হবে ২ হাজার মার্কিন ডলারের অধিক।
জুম এবং প্রাইম লেন্স:
বাজারে সর্বাধিক প্রাপ্ত লেন্সগুলোই হচ্ছে জুম লেন্স। মাত্র একটি লেন্স ব্যবহার করেই আপনি পাচ্ছেন বিভিন্ন দূরত্বের ছবি তোলার ক্ষমতা। এ ক্ষেত্রে বাজারে আপনি সাধারণ মানের ৩x ছাড়াও পাবেন ৭x এবং ১২x জুম লেন্স। এক্ষেত্রে যে সংখ্যাগুলি আপনাকে সাহায্য করবে সেগুলো হচ্ছে, ১৮-১২৫ মি.মি. অথবা ১৮-২০০ মি.মি., ৫৫-২১০ মি.মি. ইত্যাদি। বুঝতেই পারছেন, এর ফলে মাত্র একটি লেন্স ব্যবহার করেই আপনি কাছের এবং দূরের ছবি অনায়াসে তুলতে পারবেন।
আগেই বলেছি এ ক্ষেত্রে আপনার পছন্দ করার মত লেন্সের সংখ্যা প্রচুর। আপনি যেই ক্যামেরাটি পছন্দ করেছেন সেই প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইট থেকে আপনি লেন্সের ধরণ এবং দাম সম্পর্কে আরো বিশদ জানতে পারবেন। তবে নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ছাড়াও ট্যামরন, সিগমার মত বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান রয়েছে যারা স্বল্পমূল্যে বিভিন্ন ক্যামেরার জন্য ভালো লেন্স তৈরি করে থাকে।
প্রাইম লেন্স বা ফিক্সড ফোকাল লেন্থ গ্লাসগুলো সাধারণত দক্ষ স্থির চিত্রগ্রাহকদের পছন্দ। যেমন ধরুন ৫০ মি.মি. প্রাইম লেন্সটি পোর্ট্রেট ছবি তোলার ক্ষেত্রে বেশিরভাগ সময় ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এছাড়া মিররলেস ক্যামেরার ক্ষেত্রে ২৮ মি.মি. লেন্সটি একই ধরণের ছবি তোলার ক্ষেত্রে ভালো দক্ষতা প্রকাশ করেছে। তবে, এর সবকিছুই নির্ভর করবে আপনার পছন্দের উপর। আপনি ব্যবহার করতে পারেন ৮ মি.মি. ফিশআই, ১৪ মি.মি. ওয়াইড অ্যাঙ্গেল, ৬০ মি.মি. ম্যাক্রো অথবা ৫০০ মি.মি. টেলিফটো। পছন্দ আপনার!
ওয়াইড লেন্স
পছন্দের ক্যামেরাটি আপনি কিনে ফেলেছেন, এখন লেন্সের জন্য বাজারে ঢু মারার উদ্যোগ নিয়েছেন। দেখলেন একই নির্মাতার একটি ৫০ মি.মি. লেন্সের মূল্য $১২০ আবার আরেকটির মূল্য $১৬০০। এই দু'টি লেন্সের মধ্যেকার প্রধান পার্থক্য হচ্ছে অ্যাপারচার বা লেন্সটি কত ওয়াইড ওপেন হবে তার উপর। একে মাপা হয় f/stops এর মাধ্যমে, সংখ্যাটি যত নিচের দিকে হবে আপনি আলো তত বেশি ধরতে পারবেন। যেমন ধরুন এফ/১.৮ লেন্সের মূল্য ১২০ ডলার হলেও এফ/১.২ এর মূল্য হবে অনেক বেশি। এফ/১.২ শ্রেণীর লেন্সগুলোতে উন্নত মাণের গ্লাস ব্যবহৃত হওয়ায় এবং তৈরির মাণ ভালো হবার কারণে দামটাও অধিক। আপনি যদি স্বল্প আলোতে, ফ্ল্যাশ বিহীন ছবি তুলতে আগ্রহী হন তাহলে আপনার উচিত হবে এ ধরণের লেন্সের পেছনে খরচ করা। অ্যাপারচার যত কম হবে ছবির ব্যাকগ্রাউন্ডে তত অস্বচ্ছ ইফেক্ট পাবেন। ৫০ মি.মি. লেইকা লেন্স এ রয়েছে সবচেয়ে কম এফ/স্টপ, এফ/০.৯৫ এই লেন্সটির মূল্য ১১ হাজার মার্কিন ডলার।
ইমেজ স্ট্যাবিলাইজার:
অনেক বিনিমেয় লেন্স ক্যামেরার বডিতে ইমেজ স্ট্যাবিলাইজার থাকলেও ক্যানন এবং নিকন এর ক্যামেরাগুলোতে এই সুবিধাটি দেয়া থাকেনা। তবে এদের লেন্সগুলোর অনেক সংস্করণে ইমেজ স্ট্যাবিলাইজার দেয়া হয়ে থাকে। ক্যানন এ ক্ষেত্রে লেন্সের উপর আইএস (IS) আর নিকন ভিআর (VR) চিহ্নের মাধ্যমে ইমেজ স্ট্যাবিলাইজার এর বৈশিষ্ট্যটি নির্দেশ করে থাকে। আপনি যদি টেলিফটো ছবি তুলতে আগ্রহী হন তাহলে এই বৈশিষ্ট্য হবে আপনার জন্য অবশ্য বিবেচ্য।
ডিজিটাল এসএলআর ক্রয়ের মাধ্যমে আপনি বিনিমেয় লেন্সের এক অদ্ভুত জগতে প্রবেশ করেছেন। এখানে আপনাকে জানতে হবে অনেক কিছু, শিখতে হবে অনেক কিছু। এখানে দেয়া কয়েকটি বৈশিষ্ট্য ছাড়াও আপনাকে জানতে হবে লেন্সে ব্যবহার করা কাচের মাণ এবং এদের তৈরি করার পদ্ধতি সম্পর্কে। আপনি হয়তো ভাবছেন এ কোন দুনিয়ায় পা দিলাম। কিন্তু ঘাবড়ানোর কোন প্রয়োজন নেই। কম্প্যাক্ট ক্যামেরা বাদ দিয়ে ডিজিটাল এসএলআরের জগতে প্রবেশ করার মাধ্যমে প্রথম পদক্ষেপটিতো আপনি গ্রহণ করেই ফেলেছেন এখন শুধু অভিজ্ঞতাটাই বাকি!
Source : Internet