Show Posts

This section allows you to view all posts made by this member. Note that you can only see posts made in areas you currently have access to.


Messages - shawket

Pages: 1 2 [3] 4 5 ... 7
31
ক্ষোভ পুষে রাখা
অফিসের কর্তাব্যক্তি বা সহকর্মী বা অন্য কারো প্রতি ক্ষোভ থাকতেই পারে। কিন্তু তা পুষে রাখতে নেই। কর্মক্ষেত্রে স্বাস্থ্যকর পরিস্থিতি বজায় রাখতে রাগ প্রশমিত করতে হবে। অনেকেই জানেন না, হতাশাজনক মানসিকতা থেকে বেরিয়ে আসতে কী করতে হয়। এ ক্ষেত্রে তাঁরা মনের যত নেতিবাচক আবেগ মনেই জমা করে রাখেন। একসময় তা বিস্ফোরিত হয়। এর মধ্যে কর্মোদ্যম শূন্যের কোঠায় চলে যায়। তাই ক্ষোভ থাকলে মনের ব্যায়াম করতে হবে। বিষয়টি ভুলে যাওয়ার চেষ্টা করুন। এ জন্য মেডিটেশনও করতে পারেন।

ঘুম নিয়ে কাজ করা
সুষ্ঠুভাবে কাজ করতে কর্মীদের পর্যাপ্ত ঘুমের দরকার আছে। সকাল হতেই পেশা ঘিরে যে উদ্দীপনার বিস্ফোরণ ঘটে, তাতে গোটা দিনে প্রাণশক্তির ব্যাপক ক্ষয় ঘটতেই থাকে। এটা পূরণ করতে হয়। নয়তো পরদিনের কর্মশক্তি কোথায় মিলবে? ঘুমের অভাবে প্রাণের ক্ষয় ঘটতে থাকে। আজ রাতে যথেষ্ট ঘুম না দিলে আগামীকাল দেখবেন কাজ করতে ভালো লাগছে না। তাই ঘুমের সঙ্গে কোনো বাড়াবাড়ি করা যাবে না।

অফিসের কাজ বাড়িতে
অনেক সময়ই অফিসের কিছু কাজ বাড়িতে সারতে হয়। কিন্তু বিষয়টি মোটেও ইতিবাচক নয়। পরিবারকে যে সময় দিতেন এর অপচয় ঘটবে এতে। ক্রমেই তা বদভ্যাসে পরিণত হবে। তাই অফিসের কাজ অফিসেই শেষ করুন।

টানা বসে থাকা
এটা সাধারণ মনে হলেও কিন্তু ব্যাপক ক্ষতিকর। মুটিয়ে যাবেন, মেরুদণ্ডের হাড়ে ব্যথা সৃষ্টি হবে, উদ্দীপনা কমে আসবে—এমন অনেক ক্ষতিকর দিক রয়েছে। গবেষণা বলছে, প্রতিঘণ্টা কাজের পর অন্তত পাঁচ মিনিটের জন্য চেয়ার ছাড়া উচিত। এদিক-সেদিক হেঁটে আসাটা সবচেয়ে স্বাস্থ্যকর কাজ।

http://www.kalerkantho.com/online/lifestyle/2017/07/10/517447

32
সৌরজগতের বাইরে আরো ১০টি নতুন গ্রহের অস্তিত্ব খুঁজে পেল মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা। তাদের টেলিস্কোপে ধরা পড়েছে এই ১০ টি গ্রহ। যেখানে থাকতে পারে প্রাণের অস্তিত্ব।
নাসার বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, প্রাণ সৃষ্টি হতে গেলে যে পরিবেশের প্রয়োজন তা রয়েছে এই গ্রহ গুলিতে। মহাকাশে অন্য গ্রহের অস্তিত্ব সম্পর্কে বহুদিন ধরেই খোঁজ চালাচ্ছিল নাসার কেপলার টেলিস্কোপ।

অভিযান শেষে সোমবার নাসার পক্ষ থেকে ঘোষণা করা হয়েছে, এই টেলিস্কোপেই ধরা পড়েছে ৪৯ টি নতুন গ্রহ। যাদের মধ্যে ১০টি রয়েছে প্রাণ সঞ্চার হওয়ার মতো পরিবেশ।

এই বিষয়ে গবেষণা চালানো বিজ্ঞানী মারিও পেরেৎ জানিয়েছেন, সম্ভবত আমরা একা নেই। কারণ চার বছর ধরে খোঁজ চালিয়ে পৃথিবীর মতো আরও কিছু গ্রহের খোঁজ পাওয়া গিয়েছে।

http://www.bd-pratidin.com/features/2017/06/20/241578

33
দিনাজপুরের বিরলে বিষ্ণুপুর ঢিপি (বুড়ির থান) প্রত্ন স্থানে আদিকালের নির্মিত সপ্তরথ হিন্দু মন্দির খুঁজে পেয়েছেন প্রত্নতত্ত্ব নিদর্শন খননকারী জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের একটি দল।

চলমান এই খননে আবিষ্কৃত মন্দিরটির আনুমানিক বয়স প্রায় এক হাজার বছর বলে ধারণা করছেন।

স্থানীয় জনসাধারণ ইতিপূর্বে মাটির ঢিপি সংলগ্ন ওই স্থানে বুড়িমাতা ঠাকুরাণী মন্দির নির্মাণ করে নিয়মিত পূজা অর্চনা পরিচালনা করে আসছিল।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. স্বাধীন সেন জানান, পূর্ব পশ্চিমে ৮০ মিটার ও উত্তর দক্ষিণে ৫০ মিটার প্রশস্ত এলাকা খনন কাজ চলছে। ঢিবিটি পশ্চিম ও দক্ষিণ পশ্চিমে লিচু বাগানের মধ্যেও বিস্তৃত। আবিষ্কৃত মন্দিরটি ঢিবির আকারের তুলনায় বেশ ছোট। এটি দুটি অংশে বিভক্ত। পশ্চিম দিকের অংশটি অভিক্ষেপ বিশিষ্ট শক্ত কাঠামোর (৬.২৫ মিটার দৈর্ঘ্য ও ৬.২৫ মিটার প্রস্থ), মাঝখানে গর্ভগৃহ (২ মিটার দৈর্ঘ্য ও ২ মিটার প্রস্থ)। পূর্বদিকে সংযুক্ত রয়েছে ৮ মিটার বর্গাকার একটি কক্ষ। এই কক্ষটিতে ছিল মন্দিরের মন্ডপ।
ফলে প্রথমে ৩ মাস খনন কাজের সময় নির্ধারণ করা হলেও আরো ৩ থেকে ৪ মাস সময় প্রয়োজন হতে পারে পুরো খনন কাজ শেষ হতে। তবে বরেন্দ্র অঞ্চলের ইতিহাসে এ প্রত্নতত্ত্বটির ভূমিকা কি, খনন কাজ শেষ হলে বলা যেতে পারে।

পুরো মন্দিরটির আকার ও বৈশিষ্ট্য বুঝতে আরো সময় লাগবে বলে জানান খনন দলের পরিচালক জাবির প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. স্বাধীন সেন। রথ শব্দটি প্রাচীন মন্দির স্থাপত্য গঠন ও শৈলী প্রকাশকারী পরিভাষা। দেয়ালের বহির্গাত্রের উলম্ব অভিক্ষেপগুলোকে রথ বলা হয়।
তিনি জানান, এই মন্দিরটি পূর্বেকার আরেকটি স্থাপনার ধ্বংসাবশেষের উপরে নির্মিত। ওই স্থাপনার অংশবিশেষ উন্মোচিত হওয়ায় তার প্রকৃতি ও পরিবর্তন এখনো স্পষ্টভাবে বোঝা সম্ভব নয়। ওই স্থাপনাগুলোর স্বরূপ উন্মোচন করতে আরো সময় প্রয়োজন।

৪ জুলাই দিনাজপুরের বিরলে রাণীপুকুর ইউপি’র বিষ্ণপুর গ্রামে প্রত্নতত্ত্ব নিদর্শন খনন কাজ পরিদর্শন করেন জেলা প্রশাসক মীর খায়রুল আলম। এসময় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. স্বাধীন সেন, অধ্যাপক সৈয়দ মোঃ কামরুল হাসান, বিরল উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) এ,বি,এম, রওশন কবীর, সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোঃ মেজবাউল হোসেন, সাংবাদিকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

জেলা প্রশাসক মীর খায়রুল আলম সাংবাদিকদের জানান, সার্বিক সহযোগিতা খনন কাজে প্রদান করা হচ্ছে। প্রত্নতত্ত্বটি সংরক্ষণে যথাযথ ব্যবস্থা প্রশাসনের পক্ষ হতে নেয়া হবে।

উল্লেখ্য, গত ২ মে বিরলে বিষ্ণুপুর ঢিপি (বুড়ির থান) প্রত্ন স্থানে প্রত্নতাত্ত্বিক খনন কাজ আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়েছে। এখানে জাবির ১৪ জন শিক্ষার্থী, মহাস্থানগড় থেকে আসা ১৫ জন বিশেষজ্ঞ শ্রমিক ও কাহারোল থেকে আসা ২৫ জন শ্রমিক প্রত্ন স্থানটি খননে অংশ নিচ্ছেন।
সংস্কৃতি মন্ত্রনালয়ের প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের অনুমোদনক্রমে ঢাকা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের একটি দল এ খনন কাজ করছেন।
খননদলের সহযোগী পরিচালক জাবির শিক্ষক অধ্যাপক ড. সৈয়দ মোহাম্মদ কামরুল আহছান সাংবাদিকদের বলেন, বিরল উপজেলার এই প্রত্নস্থানগুলো প্রথম শনাক্ত করেন ২০০৪-৫ সালে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের স্নাতকোত্তর পর্বের গবেষণা শিক্ষার্থী খন্দকার মেহবুবুল ইসলাম। তার গবেষণা ও পরবর্তী গবেষণায় এই উপজেলায় মোট ১২২টি বিভিন্ন কালপর্বের প্রত্ন স্থান চিহ্নিত করা হয়েছিল।

http://www.bd-pratidin.com/features/2017/07/05/245170

34
বলতে দ্বিধা নেই মানব সভ্যতার ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়ংকর সেনাবাহিনী হল মধ্যযুগের মোঙ্গল বাহিনী যার সূচনা হয়েছিল চেঙ্গিস খানের হাতে। মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপে তাতার বাহিনী নামে পরিচিত ছিল মোঙ্গল বাহিনী। ১২০৬ সালে চেঙ্গিস খানকে মঙ্গোলিয়ার স্তেপের একচ্ছত্র অধিপতি বা গ্রেট খান হিসাবে ঘোষণা করার পর মোঙ্গল বাহিনী একে একে জয় করে নিয়েছিল এশিয়া ও ইউরোপ বিস্তীর্ণ অঞ্চল।

ইতিহাসের সবচেয়ে বড় সাম্রাজ্যের মালিক ছিল মোঙ্গলরা। চেঙ্গিসখানের সময় থেকে শুরু হওয়া মোঙ্গলদের জয়যাত্রা অব্যাহত ছিল পরবর্তী গ্রেট খানদের সময়ও। ভাবতে অবাক লাগে ১২০৬ সাল থেকে ১২৬০ সাল এই অর্ধশত বছরে তাঁরা  একটি যুদ্ধেও হারেন নি। বাগদাদ, সমরখন্দ, বেইজিং, বুখারা, আলেপ্পোর মত বড় বড় শহর তাতারি হামলায় মাটির সাথে মিশে গিয়েছিল। কি পূর্ব কি পশ্চিম এমন একটিও রাজ্য ছিলনা যারা মোঙ্গলদের গতি পথে বিন্দুমাত্র বাঁধা সৃষ্টি করতে পেরেছিল। বিশ্বজয়ের যে আকাঙ্খা অপূর্ণ রেখে মারা গিয়েছিলেন চেঙ্গিস খান, তার পুত্র ও পৌত্ররা সেইটার যেন সত্য করতে যাচ্ছিলেন। তাঁদের বর্বরতায় ইউরোপ ও এশিয়ার কোটি কোটি নিরীহ মানুষ প্রাণ দিয়েছ অনেকটা বিনা প্রতিরোধে। তাই সারা দুনিয়ার মানুষ ভাবতে শুরু করেছিল মোঙ্গলদের  থামানো বোধ হয় অসম্ভব। কিন্তু ১২৬০ সালে হঠাৎই থেমে গেল অপ্রতিরোধ্য মোঙ্গলদের জয়রথ। এক অসাধ্য সাধন হল ফিলিস্তিনের গাজার অদূরে আইন জালুত প্রান্তরে। মোঙ্গল প্রথম পরাজয়ে সেই অবিশ্বাস্য কাহিনী নিয়ে লেখা হয়েছে এই প্রতিবেদনটি।

পটভূমি
মোঙ্গলদের উত্থানের যুগে মধ্যপ্রাচ্যের মুসলিম দেশগুলো বেশ কয়েকটি ছোট ছোট বিচ্ছিন্ন রাজ্যে বিভক্ত ছিল যেটা ইসলামের উত্থানের শুরু থেকে তখন পর্যন্ত ৬০০ বছরের ইতিহাসে কখনও ঘটেনি। ইসলামী খিলাফত তখন আব্বাসীয়দের হাতে। নাম মাত্র আব্বাসীয় খলিফাদের রাজধানী ছিল বাগদাদে। খলিফা হারুন উর রশিদ, খলিফা মুহতাসিম বিল্লাহ কিংবা খলিফা মামুন, মনসুর ও মুন্তাসিরদের পরাক্রম তখন কেবলই কিংবন্তি। বাস্তবের আব্বাসীয় শাসকরা আধ্যাত্নিক কিংবা সামরিক কোন ক্ষেত্রেই পূর্বসুরীদের ধারের কাছেও ছিলেন না। আব্বাসীয় খিলাফত তখন অন্তর কোন্দল এবং ভোগবিলাসে মত্ত। এরকম অবস্থায় মোঙ্গলদের গ্রেট খান ছিলেন মঙ্গে খান। তাঁরই ভাই হালাকু তখন মধ্যপ্রাচ্যে মোঙ্গল বাহিনীর দায়িত্বে। বৌদ্ধধর্মে দিক্ষিত হালাকু খান ধর্মীয় কারণে সুনজরে দেখতেন না বাগদাদের আব্বাসীয় খিলাফতকে। তার উপর আব্বাসীয় খিলাফিতের সঞ্চিত রাশি রাশি ধন ভান্ডার হালাকু খানকে প্ররোচিত করেছিল বাগদাদ আক্রমণে। হালাকু খানের আক্রমণে মাটির সাথে মিশে যায় বাগদাদ। ইতিহাসের নজিরবিহীন বর্বরতায় বাগদাদে প্রাণ হারান প্রায় ১০ লক্ষ মানুষ।

শুধু বাগদাদ ধ্বংস করেই হালাকু খানের বাহিনী থেমে থাকেনি। ইরাক থেকে সিরিয়া হয়ে তাঁরা এগিয়ে চলছিলেন মিশরের দিকে। পথে সিরিয়ার দামেস্ক ও আলেপ্পোর পতন হয় তাঁদের হাতে। সেই শহরের মানুষগুলোকেও বরণ করতে হয়েছিল বাগদাদবাসীর মত ভয়াবহ পরিণতি। মোঙ্গলদের ভয়ে সিরিয়া থেকে পালিয়ে তখন দলে দলে মানুষ আশ্রয় নিচ্ছিল মিশরে। এদিকে হালাকুর পরবর্তী পরিকল্পনা ছিল মিশর দখল করা। কেননা তখনকার সময়ে মিশর জয় করার অর্থ সমগ্র উত্তর আফ্রিকা জয় করে ফেলা। আর উত্তর আফ্রিকা থেকে জিব্রাল্টার হয়ে একবার স্পেনে ঢোকার মানে হল নিমিষেই ইউরোপকে পদানত করা। সেটি করতে পারলেই পূর্ণ হবে পিতামহ চেঙ্গিসের বিশ্ব জয়ের স্বপ্ন। তাই মোঙ্গলদের বিশ্ব জয়ের স্বপ্নে একমাত্র বাঁধা তখন মিশরের তরুণ মামলুক  সুলতান সাইফউদ্দিন কুতুজ।

মিশর আক্রমণ
সিরিয়া থেকে মিশর আক্রমণের পূর্বে হালাকু খান মোঙ্গলদের স্বভাব সুলভ “হয় আত্মসমর্পণ নয় ভয়াবহ মৃত্যু” এই হুমকি দিয়ে চিঠি পাঠালেন মিশরের সুলতানের কাছে। সেই চিঠির ভাষা এতটাই ভয়ঙ্কর যে চিঠিটি প্রিয় পাঠকদের জন্য অনুবাদ করে দেওয়া হল যাতে বোঝা যায় মোঙ্গলদের হুমকি আসলে কতটা পিলে চমকানো।

আমাদের তরবারির ভয়ে পালিয়ে যাওয়া মিশরের মামলুক সুলতান কুতুজের প্রতি পূর্ব ও পশ্চিমের সকল রাজার রাজাধিরাজ বিশ্বধিপতি খানের ফরমান–

“অন্যদেশগুলোর ভাগ্যে কী ঘটেছিল তোমার সেটা চিন্তা করে আমাদের কাছে আত্মসমর্পণ করা উচিত। তুমি শুনেছ কীভাবে আমরা বিশাল বিশাল সাম্রাজ্য জয় করেছি এবং বিশৃখলাময় দূষিত পৃথিবীকে পরিশুদ্ধ করেছি। আমরা বিস্তীর্ণ ভূখণ্ড জয় করে সেখানকার সব মানুষকে হত্যা করেছি। তাই আমাদের আতংকের হাত থেকে তুমিও পালিয়ে বাঁচতে পারবে না।

তুমি কোথায় লুকাবে? কোন রাস্তায় দিয়ে পালিয়ে যাবে? আমাদের ঘোড়াগুলো যেমন তেজী, আমাদের শরগুলোও তেমন তীক্ষ্ণ। আমাদের তরবারিগুলো বজ্রের মত আর আমাদের হৃদয় পর্বতের মত শক্ত। মরুবালুকার মত আমাদের সৈন্যসংখ্যাও গুণে শেষ করা যাবে না। না কোন দুর্গ আমাদের আটকাতে পারবে, না কোন সৈন্যদল পারবে আমাদের রুখতে। তোমার আল্লাহর কাছে তোমাদের ফরিয়াদ আমাদের বিরুদ্ধে কোন কাজেই আসবে না। কোন শোকের মাতম আমাদের হৃদয়কে স্পর্শ করতে পারবেনা, না অশ্রু গলাতে পারবে আমাদের মন। শুধু যারা প্রাণ ভিক্ষা চাইবে তারাই আমাদের হাত থেকে বাঁচতে পারবে।

যুদ্ধের দাবানল ছড়িয়ে পড়ার আগেই তোমার উত্তর পাঠিয়ে দিও। কোন প্রতিরোধ গড়ে তোলার চেষ্টা করলে তার ফল হবে ভয়ঙ্করতম। আমরা তোমাদের মসজিদগুলো ভেঙ্গে চুরমার করে ফেলব আর তোমাদের রবের দুর্বলতা সবার সমানে প্রকাশ করব তারপর তোমাদের শিশু-বৃদ্ধ নির্বিশেষে সবাইকে হত্যা করব। মনে রেখ এই মুহুর্তে তোমরা আমদের একমাত্র শত্রু”।

সাইফউদ্দিন কুতুজ ভালভাবেই জানতেন ইতিপূর্বে যারা বিনা যুদ্ধে মোঙ্গলদের ভয়ে আত্মসমর্পণ করেছিল তাঁদের কী করুণ পরিণতি হয়েছিল। তাই কাপুরুষের মত বিনা যুদ্ধে অপমানের সাথে মারা পড়ার চেয়ে তিনি চাইলেন এই বর্বর বাহিনীকে মোকাবেলা করতে। উপরে উল্লেখ করা চিঠির উত্তরটা সুলতান কুতুজ দিয়েছিলেন মোঙ্গল দূতের শিরশ্ছেদ করে। এর ফলাফলটা সকলের কাছেই নিশ্চয়ই অনুমেয়।

অবধারিতভাবে বেঁধে গেল যুদ্ধ। সুলতান কুতুজ প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন মোঙ্গলদের মোকাবেলা করার। ঠিক সেই সময়ে মিশরে মস্ত বড় ইসলামিক স্কলার ছিলেন শেখ ইজ্জউদ্দিন আব্দুস সালাম । তিনি তার বক্তব্যে সুপষ্টভাবে সুলতান কুতুজের এই সিদ্ধান্তকে সমর্থন জানালেন এবং জনগণকে দলে দলে কুতুজের বাহিনীতে যোগ দেওয়ার আহ্বান করলেন। এছাড়া সিরিয়া থেকে আরেক কিংবদন্তী কমান্ডার জহির উদ্দিন বাইবার্স কুতুজের সাথে যোগ দিলেন। এদিকে যাত্রা পথে হালাকু খবর পেলেন তাঁর ভাই গ্রেট খান মঙ্গে মারা গেছেন। তাই ৬ লক্ষ সৈন্যের প্রায় সাড়ে ৫ লক্ষ নিজের সাথে নিয়ে তিনি মংগোলিয়া ফিরে গেলেন গ্রেট খানের শেষকৃত্যে যোগ দিতে। বাকিদের তিনি রেখে গেলেন তাঁর বিশ্বস্ত ও দক্ষ সেনাপতি কিতবুকার অধীনে মিশর আক্রমণের জন্য।

যুদ্ধের অসাধারণ কৌশল
দুর্ধর্ষ মোঙ্গল বাহিনীর মূল শক্তি ছিল তাঁদের ক্ষিপ্রতা এবং দ্রুতগামী ঘোড়াগুলো। এছাড়া ঘোড়ার উপর থেকে তীর ছুড়ে মারার বিশেষ দক্ষতা ছিল তাঁদের যা ইউরোপ ও এশিয়ার সেনাবাহিনীগুলোর ছিলনা। মোঙ্গল ধনুকগুলো ছিল হালকা কিন্তু অসম্ভব শক্তিশালী।  হালকা কিন্তু পাল্লা বেশী হওয়ায় ঘোড়ার উপর চড়েও ব্যবহার যেত ধনুকগুলো।

মোঙ্গলরাদের আরেকটি স্ট্র্যাটেজি ছিল পর পর অনেকগুলো সারিতে বিন্যস্ত না হয়েই যতটা সম্ভব পাশাপাশি দাড়িয়ে হামলা চালানো যাতে সুযোগ বুঝে শত্রু বাহিনীকে চারদিক থেকে ঘিরে ফেলা যায়। সুলতান কুতুজ বুঝতে পারলেন চওড়া প্রান্তরে মোঙ্গলদের মুখোমুখি হওয়া মানে সাক্ষাৎ ধ্বংস ঢেকে আনা। তিনি মোঙ্গলদের আগে যুদ্ধ ক্ষেত্র পছন্দ করার সুযোগই দিতে চাইলেন না বরং নিজেই সৈন্য নিয়ে এগিয়ে গেলেন তাঁদের মোকাবেলা করার জন্য এবং বেছে নিলেন ফিলিস্তিনের তাবারিয়ার আইনজালুত প্রান্তর।

আইন জালুত প্রান্তরটি এর আগে থেকেই ঐতিহাসিকভাবে বিখ্যাত। কারণ ওল্ড টেস্টামেন্টে ডেভিড ও গোলিয়াথের যে যুদ্ধের কথা বলা আছে সেটাও অনুষ্ঠিত হয়েছিল এই প্রান্তরেই।

কুতুজ শুরুতেই তার সব সৈন্যদের দিয়ে আক্রমণ করালেন না বরং প্রথমে ছোট একটি দল পাঠিয়ে মোঙ্গল প্ররোচিত করলেন আগে হামলা করার। শুধু তাই নয় তিনি জানতেন তাঁর সিরীয় সৈন্যরা আগেও একবার মোঙ্গলদের কাছে হেরে পালিয়ে এসেছে তাই বিপদে পড়লে এরা আবারও পালাবে। যাতে পালাতে না পারে সেজন্য তিনি এদের রাখলেন সবার সামনে।

যুদ্ধের বর্ণনা
শুরুতে মোঙ্গলদের প্রবল আক্রমণের মুখে কুতুজের সৈন্যদের অবস্থা  ছিল টালমাটাল। তখন সুলতান নিজে শিরস্ত্রাণ খুলে উঁচু জায়গা থেকে দাঁড়িয়ে চিৎকার করে সৈন্যদের সাহস যোগালেন আর নিজেই ঝাঁপিয়ে পড়লেন সাধারণ সৈন্যদের মাঝে দৃষ্টান্ত স্থাপনের জন্য। যেহেতু প্রান্তরটি সরু তাই মোঙ্গলরা তাঁদের পুরনো সেই ট্যাক্টিক্স ব্যবহার করতে পারলনা। উপরন্তু সিরীয় সৈন্যদের ভেদকরে কুতুজের ব্যূহের ভেতরে প্রবেশ করার পর তারা মুখোমুখি হল কুতুজের এলিট বাহিনীর। এদিকে সামনের সারির সিরীয় সৈন্যদের জন্য তাঁরা পিছিয়েও আসতে পারছিলনা। সাথে সাথে দুই পাশ থেকে মোঙ্গলদের উপর নেমে আসল তীর বৃষ্টি। এক পর্যায়ে তাঁদের সেনাপতি কিতবুকা মারা যান। তারপরই ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়ে মোঙ্গল সেনাবাহিনী। পালিয়ে যেতে থাকে দিগ্বিদিক বিক্ষিপ্ত মোঙ্গলরা। কুতুজের সৈন্যরা প্রায় ৬০০ কিলোমিটার তাড়িয়ে শেষ হানাদার সৈন্যটিকেও হত্যা করে। এভাবেই মামলুক সৈন্যদের কাছে পরাজয় ঘটে অহংকারী, বর্বর ও জালিম হালাকু বাহিনীর। নিমিষেই চূর্ণ হয়ে যায় তাঁদের আকাশছোঁয়া দম্ভ।

কেন আইন জালুতের যুদ্ধ এত গুরুত্বপূর্ণ
আইনজালুতের ঐতিহাসিক প্রান্তরে অবসান হয় মোঙ্গলদের অপরাজেয় মিথের। তাঁদের ভয়ে স্বদেশ থেকে পালিয়ে যেতে থাকা হাজার হাজার মানুষ একে একে আবার ফিরে আসতে শুরু করল। এই পরাজয়ের পরও মোঙ্গলরা যথেষ্ট শক্তিশালী ছিল কিন্তু আর কখনই আগের মত সেই মনোবল ফিরে পায়নি তারা। শুধু মধ্যপ্রাচ্যের নয় পৃথিবীর ইতিহাসে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যুদ্ধগুলোর মধ্যে একটি হল আইন জালুতের যুদ্ধ কেননা এই যুদ্ধে সুলতান কুতুজ হেরে গেল উত্তর আফ্রিকা, স্পেন ও ইউরোপ পরিণত হত বাগদাদ, সমরখন্দ ও বেইজিং এর মত বধ্যভুমিতে। আদৌ মানব সভ্যতার ঐ ক্ষত সেরে উঠত কিনা সেই প্রশ্নের উত্তর কারও জানা নেই। তবে বর্বর মোঙ্গল বাহিনীকে রুখে দেওয়ার অনন্য কীর্তির প্রতিদান হিসাবে যে বিশ্ববাসী চিরকাল সুলতান সাইফউদ্দিন কুতুজকে মনে রাখবে সেটা বলে দেওয়া যায় নিঃসন্দেহে।

তথ্যসূত্র:
১) http://wol.jw.org/en/wol/d/r1/lp-e/10201208
২) historyofislam.com
৩) https://www.strategypage.com/articles/?target=mongol.htm
৪) https://global.britannica.com/event/Battle-of-Ayn-Jalut

35
কয়েক হাজার বছর আগের সভত্যার অন্যতম নিদর্শন প্রাচীন রোমান সভ্যতা। রোমান কলোসিয়াম, বাড়িঘরের ধ্বসাংবশেষ, রোমান দেবদেবীর মূর্তি প্রযুক্তিবিদদের কাছে বিস্ময়ের বিষয়। কীভাবে এত বছর পরেও সেগুলি ধূলিসাৎ হয়ে যায়নি, তা নিয়ে এতদিন চিন্তাভাবনার অন্ত ছিল না তাদের। 

রোমান সভ্যতার নমুনার উপর দীর্ঘ দিনের পরীক্ষা নিরীক্ষা চালিয়ে অবশেষে সেই রহস্যের কিনারা তারা খুঁজে পেয়েছেন বলে দাবি করেছেন একদল গবেষক এবং বিজ্ঞানী। নতুন তথ্যে তারা জানাচ্ছেন, প্রাচীন রোমান প্রযুক্তিবিদরা পাথরের কাঠামো গাঁথতে চুন এবং আগ্নেয়গিরির ছাই থেকে তৈরি এক ধরনের মিশ্রন ব্যবহার করত। 

গবেষকরা জানিয়েছেন, ওই মিশ্রনে অ্যালুমিনিয়াম টোবারমাইট নামে এক বিরল খনিজ পদার্থ আছে। এই খনিজ পদার্থটি চুনের সঙ্গে মিশে উত্তপ্ত হয়ে উঠে সমুদ্রের নোনা জলে রাসায়নিক বিক্রিয়ার পরে পাথরের গাঁথুনি আরও শক্ত করেছে। প্রাচীন সভ্যতার বন্দর লাগোয়া বাড়িঘরগুলির নমুনায় ইলেক্ট্রনিক মাইক্রোস্কোপ, এক্সরে মাইক্রো ডিফ্র‌্যাকশন এবং রামন স্পেক্ট্রোস্কোপি দিয়ে গবেষণা চালান বিজ্ঞানীরা। 

তারা বুঝতে পারেন, সময়ের সঙ্গে টোবারমাইট সমুদ্রের নোনা জলে আরও বেড়ে গিয়ে মিশেছে ঝাঁঝরির মতো ছিদ্রক খনিজ পদার্থ ফিলিপসাইটের সঙ্গে। যার ফলে গাঁথুনির মিশ্রনকে ক্ষয়ে যাওয়ার বদলে আরও কঠিন করেছে। 

বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, আজকের যুগের সিমেন্টের থেকে এই মিশ্রন অনেক বেশি শক্তপোক্ত। যার অন্যতম নিদর্শন রোমান সভ্যতা। তা ছাড়া পরিবেশবান্ধব এই মিশ্রন তৈরিতে কোনও বিষাক্ত গ্যাসও নির্গত হয় না যা পরিবেশের ক্ষতি করে। তাদের মতে, পরিবেশ এবং বাড়িঘরকে রক্ষা করতে প্রাচীন রোমান প্রযুক্তিবিদদের কাছ থেকেই শিক্ষা নেওয়া উচিত আজকের যুগের শিল্পপতি এবং প্রযুক্তিবিদদের।

বিডি-প্রতিদিন/ সালাহ উদ্দীন
Source: http://www.bd-pratidin.com/features/2017/07/08/245851

36
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম উপাচার্য কে? উত্তরটা হলো স্যার ফিলিপ জোসেফ হার্টগ বা পি জে হার্টগ। এটা না শিখে সম্ভবত কেউ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতি সারতে পারে না। আমিও পারিনি। আরও অনেক প্রথম কে বা কী—উত্তরগুলোর সঙ্গে আমি এটাও শিখেছিলাম। এরপর উত্তীর্ণ হয়ে শিক্ষার্থী হলাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের। কিন্তু ক্যাম্পাসের কোথাও এই নামটা চোখে পড়ল না। পরে জানলাম, আমরা যেটাকে ইন্টারন্যাশনাল হল বলি, সেটা আসলে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম উপাচার্যের নামে। এরপর ক্লাস, পড়াশোনা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য কর্মকাণ্ডের মধ্যে হার্টগকে নিয়ে আর কিছু জানার সুযোগ হয়নি।

বিশ্ববিদ্যালয়-জীবনে পি জে হার্টগ সম্পর্কে আমি আসলে কিছুই জানিনি। বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ চুকানোর পর তাঁর সম্পর্কে আর কী জানব? তবে শেষ পর্যন্ত তাঁর সম্পর্কে আর না জেনে থাকতে হয়নি। একদিন প্রথমার দোকানে চোখে পড়ল ‘স্যার ফিলিপ হার্টগ: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম উপাচার্য’ বইটা। লেখক বিশিষ্ট কলামিস্ট সৈয়দ আবুল মকসুদ। বইটা কিনে ফেললাম। বেশ আগ্রহ নিয়ে পড়া শুরু করলাম।

বইটি পড়ার রেশ কাটতে না কাটতেই চলে এল ১ জুলাই। প্রাচ্যের অক্সফোর্ড-খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবার উদ্‌যাপন করল ৯৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সাবেক-বর্তমান শিক্ষার্থীদের আবেগপূর্ণ স্ট্যাটাস বলে দিল, বিশ্ববিদ্যালয়টিকে তাঁরা কত ভালোবাসেন। তখন আমার মনে একটা প্রশ্ন এল—আমি যেমন এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রথম উপাচার্য সম্পর্কে তেমন কিছু জানতাম না, তাঁরাও কি এমন? নাকি সবকিছু জানেন তাঁরা!

যাঁরা জানেন, তাঁদের প্রতি আমার অনেক শ্রদ্ধা। কারণ, তাঁরা আমার মতো নন। তাঁরা নিজের প্রাণপ্রিয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিকড় সম্পর্কে জানেন। কাদের হাত ধরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্ম, কারা এটাকে আজকের অবস্থানে আনতে অবদান রেখেছেন—তাঁরা সেসব জানেন। কিন্তু যাঁরা জানেন না, তাঁদের সঙ্গে বইটা থেকে পাওয়া কিছু তথ্য তুলে ধরার ভাগাভাগি না করে পারছি না।

স্যার হার্টগের জন্ম ১৮৬৪ সালের ২ মার্চ। তাঁর কয়েক পূর্বপুরুষের বাস ছিল হল্যান্ডে। সেখান থেকে উনিশ শতকের প্রথম দিকে তাঁর এক পূর্বপুরুষ ফ্রান্সে যান। একপর্যায়ে তাঁর বাবা ফরাসি ভাষার শিক্ষকের চাকরি নিয়ে ইংল্যান্ডে যান। সেখানেই পরিবারটি থিতু হয়। সে সূত্রে তিনি ব্রিটিশ আর ধর্মীয় পরিচয়ে তিনি ছিলেন ইহুদি। তিন ভাই ও এক বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন তৃতীয়।

শিক্ষাগত যোগ্যতা ও প্রশাসনিক দক্ষতা উভয় ক্ষেত্রেই স্যার পি জে হার্টগ ছিলেন অসাধারণ। তাঁর সময়ের সবচেয়ে আধুনিক শিক্ষা অর্জন করেছিলেন তিনি। মাধ্যমিক শিক্ষা লন্ডনের ইউনিভার্সিটি কলেজ স্কুলে। উচ্চশিক্ষা নেন ফ্রান্সের প্যারিস বিশ্ববিদ্যালয়, জার্মানির হাইডেলবার্গ বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ দ্য ফ্রান্স থেকে। সবশেষে তিনি ম্যানচেস্টারের ওয়েলস কলেজে বিশপ বার্কলে স্কলার ছিলেন। তাঁর কর্মজীবনের শুরু ভিক্টোরিয়া ইউনিভার্সিটিতে রসায়নের সহকারী প্রভাষক হিসেবে। এরপর তিনি শিক্ষকতা থেকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনে যোগ দেন ম্যানচেস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ে। লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ে একাডেমিক রেজিস্ট্রার ছিলেন প্রায় ১৭ বছর।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত হওয়ার পর প্রশাসনিক দক্ষতার কথা বিবেচনায় নিয়ে উপাচার্যের দায়িত্ব দেওয়া হয় স্যার ফিলিপ জোসেফ হার্টগকে। চার হাজার টাকা বেতন ও বাসভবন-সুবিধা নিয়ে ১৯২০ সালের ১ ডিসেম্বর তিনি যোগ দেন কলকাতায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকল্প অফিসে। তাঁর সঙ্গে ছিলেন স্ত্রী লেডি ম্যাবেল হেলেন হার্টগ ও দুই শিশুপুত্র।

১৯২১ সালের ৭ জানুয়ারি ঢাকার বলধার বাগানবাড়ি প্রাঙ্গণে হার্টগ দম্পতিকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম উপাচার্য সেদিন বলেন, ‘এই বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ঐতিহাসিক পটভূমি আপনারা জানেন। নতুন প্রদেশ বাতিলের পর লর্ড হার্ডিঞ্জের কাছে মুসলমান প্রতিনিধিদের আলাপ-আলোচনার ফসল এই বিশ্ববিদ্যালয়।’ তিনি চেয়েছিলেন পূর্ব বাংলায় একটি অসাম্প্রদায়িক ও জ্ঞানভিত্তিক মধ্যবিত্ত সমাজ গড়ে উঠুক, বিশেষ করে পিছিয়ে পড়া বাঙালি মুসলমানদের মধ্যে। যাতে তাঁরা রাজনৈতিক ব্যাপারে আরও বেশি অংশ নিতে পারেন এবং ভবিষ্যতে বাংলার সরকার পরিচালনায় যথেষ্ট যোগ্যতা ও দক্ষতার পরিচয় দিতে পারেন।

হার্টগ যে কত বড় স্বপ্নদ্রষ্টা ছিলেন; ব্রিটিশ শাসন থেকে মুক্ত হয়ে ভারত-পাকিস্তানের জন্ম, পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জন, স্বাধীন বাংলাদেশে জাতীয় জীবনের যেকোনো আন্দোলনে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অবদান, তারই প্রমাণ। প্রশাসনের দিকে তাকালেও কিন্তু তাঁর স্বপ্ন সত্য হওয়ার চিত্র পাওয়া যায়।

বিশ্ববিদ্যালয় কোর্টের মাধ্যমে তখন গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তগুলো নেওয়া হতো। হার্টগ সেটাকে একটি গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করেন। সমাজের বিভিন্ন স্তর থেকে মনোনীত সদস্যদের তিনি স্বাধীন মতপ্রকাশের সুযোগ দিতেন, কেউ কোনো বিরূপ মন্তব্য করলে সেটাও গুরুত্ব দিয়ে শুনতেন। প্রতিটি ছাত্রের সুবিধা-অসুবিধা দেখতেন। সমস্যার সমাধান করতেন। পাস করে স্নাতক-মাস্টার্স করে কে কোথায় চাকরি পাচ্ছেন, সে খবরও রাখতেন। ছাত্ররা ঠিকমতো ক্লাস করছেন কি না, সে খোঁজ নিতেন। শিক্ষার মানের প্রশ্নে তিনি কখনোই নমনীয় হননি।

বাজেটের সীমিত অর্থ দিয়ে কাজ চালাতে গিয়ে হিমশিম খেতে হতো হার্টগকে। পাঠাগারের জন্য তাই তিনি ভিন্ন ধরনের উদ্যোগ নেন। বিভিন্ন পারিবারিক ও ব্যক্তিগত লাইব্রেরি থেকে বই সংগ্রহ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠাগার গড়ে তোলেন। কোন শিক্ষক কেমন ক্লাস নিচ্ছেন, ছাত্রদের কাছ থেকে তিনি সেটা জেনে নিতেন। কারও কোনো দুর্বলতা থাকলে গোপনে সে সম্পর্কে বলতেন। সবার সঙ্গে আচরণ ছিল সহানুভূতিপূর্ণ।

বইটিতে স্যার হার্টগের স্ত্রী লেডি ম্যাবেল হেলেন হার্টগ সম্পর্কে সুন্দর কিছু তথ্য আছে। এই নারী চাইতেন—বাঙালি মেয়েরা বেশি করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হোক। ছেলেসর্বস্ব ক্লাসে কোনো মেয়ের পক্ষে ক্লাস করা সেকালের সামাজিক অবস্থায় সম্ভব ছিল না। পাঁচ বছর তিনি কয়েকজন ছাত্রীকে ক্লাসে সঙ্গ দিয়েছেন। পর্দা-প্রথার সেই যুগে ক্লাস শেষ হওয়ার পর ঘোড়ার গাড়িতে করে পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করেছেন। আবার কখনো কখনো ছাত্রীদের নিজেদের বাসভবনে নিয়ে গেছেন, আপ্যায়ন করেছেন, তারপর তাদের পরিবারের কোনো পুরুষ আত্মীয় গিয়ে তাদের নিয়ে গেছেন।

স্যার পি জে হার্টগ পাঁচ বছর এই বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯২৬ সালের জানুয়ারিতে তিনি ঢাকা ছাড়েন। ১৯৪৭ সালের ২৭ জুন তাঁর মৃত্যু হয়। তবে, আমৃত্যু তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে চিঠিপত্রে যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছিলেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম উপাচার্য সম্পর্কে লেখকের মূল্যায়ন, ‘তিনি শুধু উপমহাদেশের শ্রেষ্ঠ বিশ্ববিদ্যালয়-সংগঠক ও শিক্ষাবিদ ছিলেন না, তিনি ছিলেন একজন সংস্কারক ও মানবতাবাদী ব্যক্তিত্ব। তিনি ছিলেন পূর্ব বাংলার মানুষের পরম হিতার্থী ও বন্ধু।’ তবে এমন মানুষকে নিয়ে বৃহত্তর পরিসরে কাজ না হওয়াটাকে অকৃতজ্ঞতা বলে মন্তব্য তাঁর।

সৈয়দ আবুল মকসুদের এ মন্তব্যটি আমাকে ভীষণভাবে নাড়া দিয়েছে। দেশের এত বড় একটা বিদ্যাপীঠে নিজের সব শ্রম আর মেধা-মনন যিনি অকাতরে বিলিয়ে দিলেন, তাঁর সম্পর্কে সুস্পষ্টভাবে জানব না—এটা কেমন কথা? সত্যিই তো, আমরা অকৃতজ্ঞ। অন্যের কথা জানি না, নিজের কথা বলতে পারি। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে কতশত মানুষের ত্যাগ-অবদানের কথা আমি জানি না। যে প্রতিষ্ঠান নিয়ে গর্ব করি, আপ্লুত হই; সে প্রতিষ্ঠান কাদের শ্রমে, ঘামে, মেধায় গড়ে উঠেছে, সেটা না জানাটা অবশ্যই আমার অকৃতজ্ঞতা। কিন্তু আমি কৃতজ্ঞ হতে চাই, জানতে চাই আমার পূর্বসূরিদের কথা। হাত বাড়ালেই যেন তাঁদের গল্পগুলো পাই, সে ব্যবস্থা করে আমাকে ও আমার মতো আরও অনেককে কৃতজ্ঞ হওয়ার সুযোগ দেবে কে?

http://www.prothom-alo.com/we-are/article/1236901/কেমন-ছিলেন-ঢাকা-বিশ্ববিদ্যালয়ের-প্রথম-উপাচার্য

37
প্রাচীন পারস্যের জনগণ ন্যায়বিচার বিশ্বাস করতো। যেকোনো অপরাধ করার জন্যই অপরাধীদের জন্য ছিল খুবই কড়া এবং উপযুক্ত শাস্তি। কোনো অপরাধীকেই তার প্রথম অপরাধের ফলে কঠিন শাস্তি দেওয়া হতো না। বরং বিচার করার আগে তার ভালো কাজগুলোও বিবেচনায় আনা হতো। এত কিছু করার পর শুধুমাত্র তাদেরই শাস্তি দেওয়া হতো যাদের কৃতকর্মের জন্য উপযুক্ত শাস্তি আবশ্যক হয়ে দাঁড়িয়েছে।

যদি কোনো অপরাধীর পাপের বোঝা যথেষ্ট হতো, পারস্যবাসীরা তার শাস্তি দিতে কোনোরকম কার্পণ্য বোধ করত না। তারা এমন সব অভাবনীয় পদ্ধতির শাস্তির প্রচলন ঘটিয়েছিল যা একইসাথে সৃজনশীল এবং নারকীয়ও বটে! মধ্যযুগের গিলোটিন কিংবা আধুনিক যুগের বুলেটের মতো শাস্তিগুলো মোটেই স্বল্পসময়ের জন্য না, প্রাচীন পারস্যবাসীরা দীর্ঘসময় ধরে অপরাধীদের স্নায়ুতন্ত্রের শেষ সহ্যক্ষমতাও নিংড়ে নেওয়ার জন্য সর্বদা প্রস্তুত ছিল।

চামড়ার চেয়ার এবং একজন সিসামনেস
পারস্যের বিখ্যাত এক বিচারক সিসামনেস ঘুষ নেওয়ার সময় ধরা পড়লে রাজা দারিউস দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়ার জন্য উঠেপড়ে লাগলেন। রাজা দারিউসের সভার অন্যান্য ব্যক্তিবর্গরা চিন্তাভাবনা করতে থাকলেন কিভাবে ন্যায়বিচার হতে পারে। পরবর্তী বিচারক যেন ভুল করেও ঘুষ নেওয়ার পথ না মাড়ায় সেজন্য অভাবনীয় এক শাস্তির বিধান প্রবর্তন করলেন তারা।

সিসামনেসকে গলা কেটে জবাই করার পর দারিউস জল্লাদদের আদেশ দিলেন সিসামনেসের দেহের প্রতিটি ইঞ্চি থেকে তার চামড়া আলাদা করে ফেলার জন্য! তারপর এসব টুকরো সেলাই করে জোড়া দিয়ে বানানো হলো চেয়ার! মানুষের চামড়া দিয়ে তৈরি করা এই চেয়ার তৈরি করা হলো পরবর্তী বিচারকদের জন্য, যেন তারা তাদের পূর্ববর্তীদের অপরাধ থেকে শিক্ষা নিতে পারে।

দুর্ভাগ্যজনকভাবে সিসামনেসের চামড়ার চেয়ারে বসা প্রথম ব্যক্তি হলো তারই নিজের ছেলে! বিচারকাজ চালানোর জন্য প্রতিদিনই সিসামনেসের ছেলেকে তার বাবার চামড়া দিয়ে বানানো চেয়ারে বসতে হতো। এভাবেই নিজের সাম্রাজ্যে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করলেন রাজা দারিউস!

ছাই এবং শ্বাসরোধ
প্রাচীন পারস্যদেশে নৃশংসভাবে শাস্তি দেওয়ার আরেকটি বিধান ছিলো ছাইয়ের মাধ্যমে শ্বাসরোধ করে মৃত্যুদন্ড এবং এগুলো বরাদ্দ ছিল সবচেয়ে খারাপ অপরাধের জন্য। রাজ্যের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা এবং দেবতাদের বিরুদ্ধাচরণ করা ব্যক্তিদের জন্য শাস্তিটি আসলেই ছিল ভয়াবহ দুঃস্বপ্নের মতো।

অপরাধীদেরকে প্রায় ৭৫ ফুট উঁচু একটি ছাইয়ে ভরা টাওয়ার থেকে নিচে ফেলে দেওয়া হতো। ছাইয়ের স্তূপ অপরাধীর পতন কিছুটা রোধ করলেও দুই-একটা হাড় ভাঙা অসম্ভব কিছু ছিল না। এরপর চাকা ঘুরিয়ে অপরাধীর উপর চাপিয়ে দেওয়া হতো ছাইয়ের বিশাল স্তূপ। আসামীর নাক-গলার ভিতরে কিছুক্ষণের মধ্যেই ছাই ঢুকে যেত এবং শ্বাসরোধ হয়ে মৃত্যুবরণ করত। অপরাধী ব্যক্তির মৃতদেহের অবশেষটুকুও তার পরিবার নিয়ে যেতে পারত না।

রোমান সম্রাট এবং গলিত সোনা
রোমান সম্রাট ভ্যালেরিয়ান পার্সিয়ান সৈন্যদের কাছে ধরা পড়ার পর তার জীবন সোজা কোথায় নরকে পরিণত হয়। তৎকালীন পারস্য সম্রাট প্রথম শাপুর ভ্যালেরিয়ানকে নিজের দাস হিসেবে ব্যবহার শুরু করেন এবং যতটা সম্ভব তাকে অপদস্থ করার চেষ্টা করেন।

শাপুর ভ্যালেরিয়ানকে তার বিশাল পার্সিয়ান বাহিনীর সামনে হাত-পা শিকল দিয়ে বাঁধা অবস্থায় হামাগুড়ি দিয়ে হাঁটার আদেশ দিতেন এবং তার সাথে কুকুরের মতো আচরণ করতেন। শাপুর ঘোড়ায় ওঠার আগে ভ্যালেরিয়ান হাত-পায়ের উপর ভর দিয়ে থাকতেন এবং শাপুর তার পিঠের উপর পা রেখে ঘোড়ায় চড়তেন!

শাপুর তার পোষা রোমান সম্রাটের উপর বিরক্ত হয়ে যাওয়ার পর ভ্যালেরিয়ানকে হত্যা করার আদেশ দিলেন। ভ্যালেরিয়ানকে জীবিত অবস্থাতেই গলিত সোনা খাইয়ে দেওয়া হলো; অসহনীয় গরম সোনা ভ্যালেরিয়ানের মুখ, গলা, পাকস্থলী পোড়াতে পোড়াতে নিচে নেমে যেতে থাকে। এরপর ভ্যালেরিয়ানের দেহকে মমিতে রুপান্তরিত করা হলো। খড় আর সোনার মিশেলে ভ্যালেরিয়ানের দেহের মমি বানানো হলো পার্সিয়ান মন্দিরের শোভাবর্ধনকারী বস্তু হিসেবে!

পাথর মেরে হত্যা
দানিয়ুব থেকে সিন্ধু, কাস্পিয়ান থেকে নাইলের বিশাল স্রোত পর্যন্ত বিস্তৃত বিশাল প্রাচীন পারস্য সাম্রাজ্য ন্যায়বিচারকে গুরুত্ব দিলেও সামাজিক অবস্থান উপেক্ষা করে বিচারকার্য চালানোর মতো অবস্থায় ছিল না। যার কারণে রাজপরিবারের অপরাধ উড়ে এসে জুড়ে বসেছিল দাসদের কাঁধে। ঘটনাটাই শোনা যাক।

‘কিং অফ কিংস’ উপাধি নেওয়া দ্বিতীয় আরতেজেরজিস-এর মা ছিলেন প্যারিসাতিস। প্যারিসাতিস তার ছেলের প্রধান স্ত্রী স্তাতেইরাকে চরমভাবে ঘৃণা করতেন। দুজন দুজনকে এতটাই ঘৃণা করতেন যে সামনাসামনি খুন করার সুযোগ থাকলে হয়তো তা-ই করে ফেলতেন। এবং আরতেজেরজিসকে দুদিকেই তাল মিলিয়ে চলতে হতো।

তিনি তার মা ও স্ত্রী দুজনকে একইসাথে খাবার খেতে ডাকতেন এবং খাবারের একই টুকরো সমান দুইভাগ করে খাওয়ার নির্দেশ দিতেন। এত কিছু করার পরও শেষরক্ষা হয়নি। প্যারিসাতিসের নির্দেশে তার এক দাস ছুরির এক পাশে বিষ লাগিয়ে রাখেন। বিষ মাখানো মাংস খাওয়ার পর প্রিয়তমা স্ত্রী মারা যাওয়ায় আরতেজেরজিস মারাত্মক রেগে যান। কিন্তু তার এই রাগ তার মায়ের উপর ফলাতে যাওয়ার সুযোগ ছিল না। ফলে তার পুরোটাই গিয়ে পড়ে খাবার পরিবেশনকারী দাসদের উপর। তিনি একে একে সবার উপর নিপীড়ন চালাতে থাকেন এবং অবশেষে পেয়ে যান তার মাংস কাটা ব্যক্তিকে। জীবিত অবস্থাতেই তার মাথা পাথর মেরে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। প্যারিসাতিস মৃত্যুদণ্ড থেকে বেঁচে গেলেও তাকে নির্বাসনে পাঠানো হয়।

পোকার আক্রমণ
কোনো জীবন্ত মানুষকে একগাদা ক্ষুধার্ত পোকার সামনে ফেলে রাখলে কেমন হবে? অমানবিক আর নিষ্ঠুর এই নির্যাতন শুধুমাত্র রাজার ব্যক্তিগতভাবে অপছন্দকারী ব্যক্তির উপরই প্রয়োগ করা হতো।

প্রথমে ঐ ব্যক্তিকে সম্পূর্ণভাবে নগ্ন করে ফেলা হতো এবং ফাঁকা গাছের গুড়ির মধ্যে রেখে দেওয়া হতো; রৌদ্রতপ্ত দিনের আলোতে হাত-পা এবং মাথাটুকু শুধু বাইরে থাকত। এরপর তাকে জোর করে খাওয়ানো হতো দুধ আর মধু; যতক্ষণ না পর্যন্ত তার শরীরে ডায়রিয়ার লক্ষণ দেখা যায় এবং এভাবেই তার মল-মূত্রের উপরেই তাকে শুইয়ে রাখা হতো। এরপর তার দেহের অনাবৃত জায়গাগুলোতে মধু লাগিয়ে পোকামাকড়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হতো। ছারপোকা, তেলাপোকার আক্রমণে ধীরে ধীরে তার দেহ থেকে মাংস অদৃশ্য হওয়ার সাথে সাথে ভিমরুল আর মৌমাছির হুলের আঘাততো রয়েছেই।

এভাবে যতটা ধীরে সম্ভব তাকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেওয়া হতো। কিছুদিনের মধ্যেই আক্রান্ত ব্যক্তির মাংস পচা শুরু হয়ে যেত এবং দুর্গন্ধ ছড়াত। যার উপর এই পদ্ধতিটি প্রথম প্রয়োগ করা হয়েছিল, সে প্রায় ১৭ দিন নরকযন্ত্রণা ভোগ করার পর পাড়ি জমিয়েছিল পরপারের উদ্দেশ্যে।

তৃতীয় মৃত্যু
‘বীরেরা মরে একবার, কাপুরুষেরা মরে বারবার‘ প্রবাদটি পার্সিয়ানদের ক্ষেত্রে অকাট্য সত্যি এবং তারা বিশ্বাসও করত কিছু মানুষ একবারের চেয়েও বেশিবার মৃত্যুযন্ত্রণা ভোগ করার অবস্থায় এসেছে। এজন্য শাস্তি দেওয়ার ক্ষেত্রে তিন সংখ্যাটি বেশ ভালোভাবেই মেনে চলা হতো এবং এটি পরিচিত ছিল ‘দ্য ট্রিপল ডেথ’ নামে।

প্রাচীন পারস্য সাম্রাজ্যের অধিপতিদের মধ্যে অন্যতম বিখ্যাত রাজা সাইরাস দ্য গ্রেটের স্ত্রীকে রাগিয়ে দেয়ার জন্য এক খোজার উপর নেমে আসে ভয়াবহ ট্রিপল ডেথ। প্রথমে তার অক্ষিকোটর থেকে সাঁড়াশি দিয়ে চোখ বের করে আনা হয়। চোখের ব্যথা কমে যাওয়ার পরে তার শরীরের চামড়া ছিলে ফেলা হয় এবং শেষমেশ কাঠের উপর বেঁধে হাত-পায়ের উপর পেরেক ঢুকিয়ে মেরে ফেলা হয়।

সাইরাসের ছেলেকে মেরে ফেলার মিথ্যা গুজব ছড়িয়ে নায়ক হওয়ার চেষ্টা করতে গিয়ে ট্রিপল ডেথের খড়গ নেমে আসে এক সৈন্যের উপর। সাইরাসের স্ত্রী প্রথমে তাকে ১০ দিন ক্যাথেরিন হুইলে টান টান করে ঝুলিয়ে রাখেন; এরপর চোখ খুলে নিয়ে গলিত কাঁসা শরীরের উপর ঢেলে তাকে হত্যা করেন!

সন্তান ভক্ষক
গল্পটা এক সেনাপতির; নাম তার হারপাগাস। যদিও কাহিনীটি গুজব বলে উড়িয়ে দেওয়া হয়, তবুও জিনিসটি একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যায় না।

রাজা আসতাগিয়েস একবার স্বপ্নে দেখেন তার নাতি সিংহাসন থেকে তাকে ছুঁড়ে ফেলে দিবে; এ কারণে তিনি তার সেনাপতি হারপাগাসকে আদেশ দেন বাচ্চাটিকে জঙ্গলে ফেলে দিয়ে আসতে। হারপাগাস দয়াপরবশ হয়ে তা করেননি, বরং এক মেষপালকের উপর বাচ্চাটির দায়িত্ব দিয়ে আসেন। যখন পারস্যরাজ তার আদেশ অমান্য করার ব্যাপারটি জানতে পারলেন, তখন হারপাগাসের কপাল পোড়া শুরু হলো। হারপাগাসের ছেলেকে ধরে এনে তাকে জবাই করা হলো। তারপর তার শরীর টুকরো টুকরো করে তেলে ভেজে হারপাগাসের সামনে পরিবেশন করা হলো। হারপাগাস তখনও জানতেন না যে তিনি তার ছেলের মাংস খাচ্ছেন। এমনকি তার ছেলে যে মৃত সেটাই জানতেন না। তিনি খাওয়া শুরু করলে আসতাগিয়েস তার ছেলের কাটা মাথা তার মুখের সামনে ধরে বলেছিলেন, “তুমি কি জানো তুমি কোন জন্তুর মাংস এইমাত্র খেলে?”

হারপাগাস জানতেন প্রতিশোধ নেওয়ার চেষ্টা করলে তার পরিণতি তার ছেলের চেয়ে ব্যতিক্রম কিছু হবে না। নিজের কান্না আটকিয়ে আসতাগিয়েসের আক্রোশ থেকে বাঁচতে বলেই ফেললেন, “রাজা যা করেছেন, ভালোই করেছেন!” তারপর রাজার কাছে অনুরোধ করে ছেলের মৃতদেহের বাকি অংশটুকু নিয়ে দাফন করলেন!

https://roar.media/bangla/history/inhuman-punishments-in-ancient-persia/

38
ফিলিস্তিনের গাজা থেকে দুই মাইল উত্তরে কিবুটস এলাকা। এখানে ১৯৩০'র দশকে পোল্যান্ড থেকে আসা ইহুদীরা কৃষি খামার গড়ে তুলেছিল। পাশেই ছিল ফিলিস্তিনী আরবদের বসবাস। সেখানে আরবদের কৃষি খামার ছিল। তারা কয়েক শতাব্দী ধরে সেখানে বসবাস করছিল।

সে সময় মুসলমান এবং ইহুদীদের মধ্যে সম্পর্ক মোটামুটি বন্ধুত্বপূর্ণ ছিল। কিন্তু ১৯৩০'র দশকে ফিলিস্তিনীরা বুঝতে পারলো যে তারা ধীরে-ধীরে জমি হারাচ্ছে। ইহুদিরা দলে-দলে সেখানে আসে এবং জমি ক্রয় করতে থাকে।

ইসরায়েল রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠার সময় প্রায় সাত লাখের মতো ফিলিস্তিনী বাস্তু-চ্যুত হয়েছে। তারা ভেবেছিল দ্রুত সমস্যার সমাধান হলে তারা বাড়ি ফিরে আসতে পারবে। কিন্তু ইসরায়েল তাদের আর কখনোই বাড়িতে ফিরতে দেয়নি।

ইসরায়েলের সাবেক প্রেসিডেন্ট শিমন পেরেজ বছর দশেক আগে বিবিসির সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ফিলিস্তিনদের কেন এই দশা হলো সেজন্য তাদের নিজেদেরই প্রশ্ন করা উচিত।

পেরেজ বলেন, অধিকাংশ জমি ফিলিস্তিনদের হাতেই থাকতো। তাদের একটি আলাদা রাষ্ট্র হতো। কিন্তু তারা সেটি প্রত্যাখ্যান করেছে। ১৯৪৭ সালে তারা ভুল করেছে। আমরা কোন ভুল করিনি। তাদের ভুলের জন্য আমরা কেন ক্ষমা চাইবো?

১৮৯৭ সাল থেকেই ইহুদীরা চেয়েছিলেন নিজেদের জন্য আলাদা একটি রাষ্ট্র গড়ে তুলতে। ১৯১৭ সালে থেকে ১৯৪৮ সাল পর্যন্ত ফিলিস্তিনের ভূমি ব্রিটেনের নিয়ন্ত্রণে ছিল। ১৯১৭ সালের নভেম্বর মাসে তুরস্কের সেনাদের হাত থেকে জেরুজালেম দখল করে ব্রিটেন। তখন ব্রিটিশ সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল যে ফিলিস্তিনের মাটিতে ইহুদিদের জন্য একটি আলাদা রাষ্ট্র গঠনের জন্য সহায়তা করবে।

ব্রিটেনের তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী লর্ড আর্থার জেমস বেলফোর বিষয়টি জানিয়ে চিঠি লিখেছিলেন ইহুদি আন্দোলনের নেতা ব্যারন রটসচাইল্ডকে। তৎকালীন ব্রিটেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সে চিঠি 'বেলফোর ডিক্লারেশন' হিসেবে পরিচিত।

ইহুদীদের কাছে ব্রিটেন প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল যে ফিলিস্তিনের জমিতে তাদের জন্য একটি রাষ্ট্র গঠনের সুযোগ করে দিবে।
যদিও রোমান সময় থেকে ইহুদীদের ছোট্ট একটি ধর্মীয় গোষ্ঠী সে জায়গায় বসবাস করতো।

ইউরোপে ইহুদীদের প্রতি যে নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি ছিল সেটি তাদের একটি নিজস্ব রাষ্ট্র গঠনের ভাবনাকে আরো তরান্বিত করেছে। ১৯৩৩ সালের পর থেকে জার্মানির শাসক হিটলার ইহুদিদের প্রতি কঠোর হতে শুরু করেন। ইতোমধ্যে জাহাজে করে হাজার হাজার ইহুদি অভিবাসী ফিলিস্তিনী ভূখণ্ডে আসতে থাকে। তখন ফিলিস্তিনী আরবরা বুঝতে পারে যে তাদের অস্তিত্ব হুমকির মুখে পড়ছে।

ফিলিস্তিনী আরবরা নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার জন্য বিদ্রোহ করে। তাদের হামলার লক্ষ্যবস্তু হয়েছিল ব্রিটিশ সৈন্য এবং ইহুদি নাগরিকরা। কিন্তু আরবদের সে বিদ্রোহ কঠোর হাতে দমন করেছে ব্রিটিশ সৈন্যরা।

ফিলিস্তিনদের উপর ব্রিটিশ সৈন্যরা এতো কঠোর দমন-পীড়ন চালিয়েছিল যে আরব সমাজে ভাঙন তৈরি হয়েছিল। ইহুদীরা তাদের জন্য একটি আলাদা রাষ্ট্র গঠনে বদ্ধপরিকর ছিল। ব্রিটেনের সহায়তায় সে অনুযায়ী তারা কাজ এগিয়ে নিচ্ছিল।

১৯৩০'র দশকের শেষের দিকে ব্রিটেন চেয়েছিল হিটলারের নাৎসি বাহিনীর বিরুদ্ধে মধ্যপ্রাচ্যে তাদের অবস্থান জোরালো করতে। সেজন্য আরব এবং ইহুদী দুই পক্ষকেই হাতে রাখতে চেয়েছে ব্রিটেন।

১৯৩৯ সালের মাঝামাঝি ব্রিটেনের সরকার একটি শ্বেতপত্র প্রকাশ করে যেখানে বলা হয়েছিল পরবর্তী পাঁচ বছরের জন্য পঁচাত্তর হাজার ইহুদী অভিবাসী আসবে ফিলিস্তিনী ভূখণ্ডে। অর্থাৎ সংখ্যা কমিয়ে আনা হয়েছিল।

ব্রিটেনের এ ধরনের পরিকল্পনাকে ভালোভাবে নেয়নি ইহুদীরা। তারা একই সঙ্গে ব্রিটেন এবং হিটলারের বিরুদ্ধে লড়াই করার পরিকল্পনা করে। তখন ৩২ হাজার ইহুদী ব্রিটিশ সেনাবাহিনীতে যোগ দেয়। সেখান থেকে সামরিক প্রশিক্ষণ নিয়ে ইহুদী সৈন্যরা ব্রিটেন এবং আরবদের বিরুদ্ধে লড়াই শুরু করে।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় হিটলারের বাহিনীর দ্বারা লাখ-লাখ ইহুদি হত্যাকাণ্ডের পর নতুন আরেক বাস্তবতা তৈরি হয়।
১৯৪৫ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হবার পর যেসব ইহুদি বেঁচে ছিলেন তাদের জন্য জন্য কী করা যায় সেটি নিয়ে আলোচনা শুরু হয়।

তখন ফিলিস্তিনী ভূখণ্ডে ইহুদীদের জন্য একটি আলাদা রাষ্ট্র গঠনের চিন্তা আরো জোরালো হয়। আমেরিকার তৎকালীন প্রেসিডেন্ট হ্যারি ট্রুম্যান ইসরায়েল রাষ্ট্রের পক্ষে জোরালো অবস্থান তুলে ধরেন। ট্রুম্যান চেয়েছিলেন হিটলারের হাত থেকে বেঁচে যাওয়া এক লক্ষ ইহুদিকে অতি দ্রুত ফিলিস্তিনের ভূখণ্ডে জায়গা দেয়া হোক। কিন্তু ব্রিটেন বুঝতে পারছিল যে এতো বিপুল সংখ্যক ইহুদিদের ফিলিস্তিনী ভূখণ্ডে নিয়ে গেলে সেখানে গৃহযুদ্ধ হবে।

এ সময় ইহুদিদের সশস্ত্র দলগুলো ব্রিটিশ সৈন্যদের উপর ফিলিস্তিনের বিভিন্ন জায়গায় হামলা চালানো শুরু করে।
তখন ইউরোপ থেকে ফিলিস্তিনের উদ্দেশ্যে জাহাজে বোঝাই হয়ে আসা হাজার-হাজার ইহুদিদের বাধা দেয় ব্রিটিশ বাহিনী। কিন্তু তাতে খুব একটা লাভ হয়নি।

ইহুদি সশস্ত্র দলগুলো ব্রিটিশ বাহিনীর উপর তাদের আক্রমণের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। তাদের উদ্দেশ্য ছিল এমন একটি পরিস্থিতির তৈরি করা যাতে ইহুদি রাষ্ট্র গঠনের জন্য ব্রিটেন এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় দ্রুত সিদ্ধান্ত নেয়। তখন সমাধানের জন্য ব্রিটেনের উপর চাপ বাড়তে থাকে। এরপর বাধ্য হয়ে ব্রিটেন বিষয়টিকে জাতিসংঘে নিয়ে যায়।

১৯৪৭ সালের নভেম্বর মাসে ফিলিস্তিনের ভূখণ্ডে দু'টি রাষ্ট্র গঠনের সিদ্ধান্ত নেয় জাতিসংঘ। একটি ইহুদিদের জন্য এবং অন্যটি আরবদের জন্য। ইহুদিরা মোট ভূখণ্ডের ১০ শতাংশের মালিক হলেও তাদের দেয়া হয় মোট জমির অর্ধেক। কিন্তু আরবদের জনসংখ্যা এবং জমির মালিকানা ছিল আরবদের দ্বিগুণ।

স্বভাবতই আরবরা এ সিদ্ধান্ত মেনে নেয়নি। তারা জাতিসংঘের এ সিদ্ধান্ত খারিজ করে দেয়। কিন্তু ফিলিস্তিনীদের ভূখণ্ডে তখন ইহুদিরা বিজয় উল্লাস শুরু করে। অবশেষে ইহুদিরা একটি স্বাধীন ভূখণ্ড পেল। কিন্তু আরবরা অনুধাবন করেছিল যে কূটনীতি দিয়ে এ সমস্যার সমাধান হবে না।

জাতিসংঘের এ সিদ্ধান্তের পর আরব এবং ইহুদীদের মধ্যে দাঙ্গা শুরু হয়ে যায়। তখন ফিলিস্তিনী ভূখণ্ড ছেড়ে যাবার জন্য ব্রিটিশ সৈন্যরা দিন গণনা করছিল। তখন ইহুদীদের সশস্ত্র দলগুলো প্রকাশ্যে আসা শুরু করে। তাদের গোপন অস্ত্র কারখানাও ছিল। কিন্তু ইহুদিদের সবচেয়ে বড় সুবিধা ছিল তাদের বিচক্ষণ নেতৃত্ব। এর বিপরীতে আরবদের কোন নেতৃত্ব ছিলনা। ইহুদীরা বুঝতে পেরেছিল যে নতুন রাষ্ট্র গঠনের পর আরবরা তাদের ছেড়ে কথা বলবে না। সম্ভাব্য যুদ্ধের জন্য আগে থেকেই তৈরি ছিল ইহুদিরা।

পূর্ব জেরুজালেমে একটি ইসরায়েলি সৈন্যদের অভিযানের সময় দুইজন ফিলিস্তিনি নারী। সবার দৃষ্টি ছিল জেরুজালেম শহরের দিকে। মুসলমান, ইহুদি এবং খ্রিস্টানদের জন্য পবিত্র এ জায়গা।

জাতিসংঘ যে সিদ্ধান্ত দিয়েছিল সেখানে জেরুজালেম আন্তর্জাতিক নিয়ন্ত্রণে থাকার কথা ছিল। কিন্তু আরব কিংবা ইহুদি- কোন পক্ষই সেটি মেনে নেয়নি। ফলে জেরুজালেম শহরের নিয়ন্ত্রণের জন্য দুই পক্ষের মধ্যে যুদ্ধ অনিবার্য হয়ে উঠেছিল।

জেরুজালেমে বসবাসরত ইহুদীদের অবরুদ্ধ করে রেখেছিল আরবরা। অন্য জায়গার সাথে জেরুজালেমের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। ১৯৪৮ সালের মার্চ মাসে ইহুদীরা আরবদের উপর পাল্টা আক্রমণ শুরু করে।

অনেক বিশ্লেষক বলেন, তখন ইহুদীরা আরবদের নিশ্চিহ্ন করার পরিকল্পনা করেছিল। যেহেতু আরবদের মধ্যে কোন সমন্বয় ছিল না সেজন্য ইহুদিরা একের পর এক কৌশলগত জায়গা দখল করে নেয়। তখন ফিলিস্তিনের একজন নেতা আল-হুসেইনি সিরিয়া গিয়েছিলেন অস্ত্র সহায়তার জন্য। কিন্তু সিরিয়া সরকার ফিলিস্তিনদের সে সহায়তা দিতে অস্বীকৃতি জানায়। সেখান থেকে ফিরে এসে আল হুসেইনি আবারো যুদ্ধে নামেন। এর কয়েকদিন পরেই তিনি নিহত হন।

ইহুদিরা যখন তাদের আক্রমণের মাত্রা বাড়িয়ে দিলে ১৯৪৭ সালের ডিসেম্বর মাস নাগাদ বহু ফিলিস্তিনী আরব তাদের বাড়ি ঘর ছেড়ে পালিয়ে যায়। ইহুদি সশস্ত্র গ্রুপগুলোর নৃশংসতা আরবদের মনে ভয় ধরিয়ে দেয়। অন্যদিকে ফিলিস্তিনী সশস্ত্র দলগুলো ইহুদিদের উপর কয়েকটি আক্রমণ চালায়।

কিন্তু ইহুদিদের ক্রমাগত এবং জোরালো হামলার মুখে ভেঙ্গে পড়তে শুরু করে ফিলিস্তিনীরা। তারা বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়ে যায়।

অন্যদিকে জর্ডানের বাদশাহ আব্দুল্লাহ এবং অন্য আরব দেশগুলোর সরকার তাদের নিজ দেশের ভেতরে চাপে পড়ে যায়।
ইসরায়েল রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠার পর আরবদের সাথে দুবার যুদ্ধ হয়েছিল। সেসব দেশের জনগণ চেয়েছিল, যাতে ফিলিস্তিনদের সহায়তায় তারা এগিয়ে যায়।

১৯৪৮ সালের ১৪ই মে ফিলিস্তিন ছেড়ে চলে যায় ব্রিটেন। একই দিন তৎকালীন ইহুদী নেতারা ঘোষণা করেন যে সেদিন রাতেই ইহুদি রাষ্ট্রের জন্ম হবে।

ইসরায়েল রাষ্ট্রের জন্মের এক ঘন্টার মধ্যেই আরবরা আক্রমণ শুরু করে। একসাথে পাঁচটি আরব দেশ ইসরায়েলকে আক্রমণ করে। যেসব দেশ একযোগে ইসরায়েলকে আক্রমণ করেছিল তারা হচ্ছে - মিশর, ইরাক, লেবানন, জর্ডান এবং সিরিয়া। তাদের সৈন্য সংখ্যা ছিল প্রায় ত্রিশ হাজারের মতো।

অন্যদিকে ইসরায়েলের সৈন্য সংখ্যা ছিল প্রায় ৩৫ হাজার। কিন্তু আরব দেশগুলোর মধ্যে কোন সমন্বয় ছিলনা। তাছাড়া আরব নেতৃত্ব একে অপরকে বিশ্বাস করতো না। জেরুজালেম দখলের জন্য আরব এবং ইসরায়েলের মধ্যে চলছে তীব্র লড়াই।

ইহুদিরা ভাবছিল জেরুজালেম ছাড়া ইহুদি রাষ্ট্রের কোন অর্থ নেই। অন্যদিকে মুসলমানদের জন্যও জেরুজালেম পবিত্র জায়গা।

তীব্র লড়াইয়ের এক পর্যায়ে ইসরায়েলি বাহিনী পিছু হটতে থাকে। তাদের অস্ত্রের মজুত শেষ হয়ে যায়।
সম্ভাব্য পরাজয় আঁচ করতে পেরে ইহুদিরা নিজেদের শক্তি সঞ্চয়ের জন্য সময় নেয়।

আর কিছুদূর অগ্রসর হলেই মিশরীয় বাহিনী তেল আবিবের দিকে অগ্রসর হতে পারতো। তখন জাতিসংঘের মাধ্যমে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়।

যুদ্ধবিরতির সময় দু'পক্ষই শক্তি সঞ্চয় করে। কিন্তু ইসরায়েল বেশি সুবিধা পেয়েছিল। তখন চেকোস্লোভাকিয়ার কাছ থেকে আধুনিক অস্ত্রের চালান আসে ইসরায়েলের হাতে।

যুদ্ধ বিরতী শেষ হলে নতুন করে আরবদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে ইসরায়েলি বাহিনী। একর পর এক গুরুত্বপূর্ণ জায়গা দখল করে নেয় ইহুদিরা। তেল আবিব এবং জেরুজালেমের উপর তাদের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা হয়।

জাতিসংঘের মাধ্যমে আরেকটি যুদ্ধ বিরতির মাধ্যমে সে সংঘাত থামে। ইসরায়েলী বাহিনী বুঝতে পরে তারা স্বাধীনতা লাভ করছে ঠিকই কিন্তু লড়াই এখনো থামেনি।

১৯৪৭ সালের নভেম্বর মাস থেকে ১৯৪৯ সালের জানুয়ারি মাস পর্যন্ত ছয় হাজার ইহুদি নিহত হয়েছিল। ইহুদিরা মনে করে তারা যদি সে যুদ্ধে পরাজিত হতো তাহলে আরবরা তাদের নিশ্চিহ্ন করে দিতো।

ইসরায়েলিরা মনে করেন ১৯৪৭ সালে জাতিসংঘ সেভাবে দুইটি দেশের স্বীকৃতি দিয়েছিল, সেটি যদি ফিলিস্তিনীরা মেনে নিতো তাহলে ফিলিস্তিন এবং ইসরায়েল নামের দুটি দেশ এখন পাশাপাশি শান্তিপূর্ণ অবস্থান করতো।

আরব দেশগুলোর মধ্যে পারষ্পরিক আস্থা না থাকার কারণেই ১৯৪৮ সালের যুদ্ধে তারা পরাজিত হয়েছে এবং ইসরায়েল দেশটির জন্ম হয়ে সেটি স্থায়ী হতে পেরেছে। অনেক ঐতিহাসিক বিষয়টিকে এভাবেই দেখেন।

১৯৪৮ সালের পর থেকে সামরিক, রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক দিক থেকে অতি দ্রুত উন্নতি লাভ করে ইসরায়েল। তারা সুপার পাওয়ার হিসেবে আবির্ভূত হয়।

বিডি প্রতিদিন/০৩ জুলাই ২০১৭/আরাফাত

39
আজ থেকে অনেক বছর আগেকার ঘটনা। তা প্রায় যিশু খ্রিস্টের জন্মের তিনশো বছর পূর্বের কথা। আলেকজান্ডার দ্য গ্রেট, পরাক্রমশালী এক যোদ্ধা ও সম্রাট, প্রাচীন গ্রিসের ম্যাসিডনের রাজা ছিলেন তিনি। তাকে বলা হতো অর্ধেক পৃথিবীর রাজা। তিনি ছিলেন মেসিডোনিয়ার রাজা দ্বিতীয় ফিলিপ ও তার চতুর্থ স্ত্রী অলিম্পাসের সন্তান। তার অধীনে মূল রাজ্য ছিল গ্রিসের ছোট্ট রাজ্য ম্যাসিডন।

অত্যন্ত সুপুরুষ ছিলেন আলেকজান্ডার। বলিষ্ট চেহারায় রূপ আর শক্তির মিশেলে তিনি অন্য সকল রাজার থেকে ছিলেন স্বতন্ত্র। সিংহের মতোই বিক্রম ছিল তার। মাথায় সবসময় সিংহের চামড়া জড়িয়ে রাখতেন। তার বাবা ফিলিপ আলেকজান্ডারকে বলেছিলেন, “ম্যাসিডন বড়ই ছোট তোমার পক্ষে, একদিন সারা পৃথিবী জয় করবে তুমি।” তার বাবার কথাই সত্যি হয়েছিল। একের পর এক দেশ জয় করতে করতে পারস্য, মিশর, এশিয়া মাইনর হয়ে ভারতের পশ্চিমেও চলে এসেছিল আলেকজান্ডারের সেনাবাহিনী।

মাত্র ত্রিশ বছরের মধ্যেই অ্যাড্রিয়াটিক সাগর থেকে সিন্ধু নদ পর্যন্ত এক বিশাল সাম্রাজ্যের অধিশ্বর হয়ে ওঠেন আলেকজান্ডার। তিনি নিজেকে দেবতা জিউসের বরপুত্র ভাবতেন। তাকে নিয়ে প্রতিনিয়ত তৈরি হতে থাকে নানা রোমাঞ্চকর গল্প। শোনা যায়, প্রাচীন গ্রিসে দেবী আর্টেমিসের মন্দির ছিল পৃথিবীর অন্যতম এক আশ্চর্যময় স্থান। আলেকজান্ডারের জন্মের দিন সেই মন্দিরটি নাকি পুড়ে যায়। চারদিকে রটে যায়, স্বয়ং আর্টেমিস নাকি এসেছিলেন আলেকজান্ডারের জন্মের সাক্ষী থাকতে। এরকম নানা কিংবদন্তীতে ভরপুর সম্রাট আলেকজান্ডারের জীবন। তার মৃত্যু নিয়েও রয়েছে নানারকম কাহিনী।

৩২৩ খ্রিস্টপূর্বাব্দে ব্যাবিলনে দ্বিতীয় নেবুচাদনেজারের প্রাসাদে তার মৃত্যু হয়। তার মৃত্যুর কারণ নিয়েও নানা মতভেদ আছে। কারো কারো মতে, তিনি ম্যালেরিয়ায় মারা গেছেন, কারো মতে অত্যাধিক মদ্যপানের কারণে তার মৃত্যু হয়। আবার কেউ কেউ বলে বিষ দিয়ে নাকি মারা হয়েছিলো তাকে। তখন তার বয়স ছিলো মাত্র বত্রিশ বছর। কিন্তু বিষ দিয়ে মেরে ফেলার পেছনে কোনো বিশ্বাসযোগ্য তথ্য প্রমাণ পাওয়া যায়নি। সম্প্রতি ওটাগো বিশ্ববিদ্যালয় এবং ‘ন্যাশনাল পয়জন সেন্টার’-এর টক্সিকোলজিস্ট ড. লিও এসচেপ এক দীর্ঘ গবেষণার পর জানান যে, ইউরোপীয় ‘হোয়াইট হেলেবোর’ নামক বিষাক্ত উদ্ভিদই আলেকজান্ডারের মৃত্যুর জন্য দায়ী। তবে আজকের এই লেখায় আমরা আলেকজান্ডারের মৃত্যুর কারণ অনুসন্ধান করবো না। বরং মৃত্যুর পর তার শবদেহ নিয়ে ঘটা নানা রহস্যময় ও চমকপ্রদ কাহিনীই জানার চেষ্টা করবো।

অল্প বয়সে বিশাল সাম্রাজ্যের রাজা হয়ে খুব আত্মবিশ্বাসী হয়ে পড়েন আলেকজান্ডার। আর তাই মারা যাওয়ার প্রাক্কালে জিউসের সন্তান হিসেবে তিনি চেয়েছিলেন গ্রিসের আমন শহরে জিউসের মন্দিরেই যেন তাকে সমাধিস্থ করা হয়। ইতিহাসবিদ প্লুটার্ক ও কোরিটিসের বর্ণনায়, মৃত্যুর ছ’দিন পর্যন্ত আলেকজান্ডারের সমাধির কোনো ব্যবস্থা করা হয়নি। সবাই ব্যস্ত ছিল শোক আর পরবর্তী সরকার গঠনের রাজনীতি নিয়ে। তার রানী রোক্সান তখন সন্তানসম্ভবা ছিলেন। তার সন্তান না হওয়া পর্যন্ত সিদ্ধান্ত হয় সেনাপতি পারডিকাস ও রানী রোক্সান যৌথভাবে দেশ পরিচালনা করবেন।

এরপর সবাই ব্যস্ত হয়ে পড়লেন রাজার শেষযাত্রা সম্পন্ন করার কাজে। ঐতিহাসিক ডিওডোরাস লিপিবদ্ধ করেন আলেকজান্ডারের অন্তিম শবযাত্রার পুরো ঘটনাবলী। এক বিশাল সোনার শববাহী গাড়ি তৈরি করা হলো। সোনার কফিনের মধ্যে তার মৃতদেহ রেখে দ্বিতীয় আরেকটি সোনার ক্যাসকেটে তা ভরা হয়। তারপর যাবতীয় অস্ত্রশস্ত্র সহ কফিনটি তোলা হয় গাড়িতে। সে একটি জমকালো ব্যাপার। উপযুক্ত সোনা দিয়ে তৈরি শবাধার আর তার সাথে রাজকীয় গাড়ি। প্রায় দু’বছর লেগেছিল তার শবযাত্রা করতে। সেনাপতি পারডিকাসের নেতৃত্বে শববাহী গাড়ি চলতে লাগলো মেসিডোনিয়ার উদ্দেশ্যে।

কিন্তু আলেকজান্ডারের শেষ ইচ্ছে পূর্ণ হলো না। মেসিডোনিয়ায় যাওয়ার পথে ঘটলো এক দুর্ঘটনা। আর এর মধ্য দিয়েই তৈরি হলো এক রহস্যময় ধাঁধা। ৩২১ খ্রিস্টপূর্বাব্দে সেই বিশাল শবযাত্রাকে বাঁধা দিতে ঢুকে পড়লেন আলেকজান্ডারেরই এক ক্ষমতাশালী সেনাপতি প্রথম টলেমি সোটার। সমাধিবাহী গাড়িটি বেমালুম ছিনতাই করে প্রথমে সিরিয়া, তারপর মিশরের মেমফিসে নিয়ে আসেন তিনি। এ চুরির পেছনে রয়েছে আলেকজান্ডারের রাজজ্যোতিষী অ্যারিস্টান্ডার এক ভবিষ্যদ্বাণী। তিনি বলেছিলেন, যেখানে আলেকজান্ডারের সমাধি হবে, সেই দেশ হবে সমৃদ্ধশালী, অপরাজেয় এবং চিরশান্তির এক দেশ।

এ কারণেই টলেমির মাথায় কুবুদ্ধিটি চাপে। তিনি ভেবেছিলেন, মিশরে সম্রাটের দেহ সমাধিস্থ করলে এর উন্নতি কেউ ঠেকাতে পারবে না। তারপর তিনি এখানকার রাজা হয়ে বসবেন। টলেমির ইচ্ছে ফলেও অবশ্য। টলেমীয় বংশ দীর্ঘদিন রাজত্ব চালায় মিশরে। এসব ভেবেই টলেমির ছিনতাই করে আনা আলেকজান্ডারের শবদেহকে মিশরীয় রীতিতে মমি করে (যেহেতু পূর্বে তিনি মিশরের ফারাও ছিলেন) কফিনের মধ্যে রাখা হয় এবং মিশরীয় প্রথায় সমাধিস্থ করা হলো গ্রিক সম্রাটকে। এত বড় সম্রাটের কী শেষ পরিণতি!

কিন্তু ইতিহাস এখানেই থেমে থাকলো না। রাজাকে নিয়ে চলতে লাগলো টানাহেঁচড়া। খ্রিস্টপূর্ব চতুর্থ শতকের শেষ বা তৃতীয় শতকের শুরুর দিকে প্রথম টলেমির মৃত্যুর পর তার ছেলে দ্বিতীয় টলেমি হন মিশরের রাজা। তিনি মেমফিস থেকে আলেকজান্ডারের সমাধি নিয়ে আসেন আলেকজান্দ্রিয়ায়। এবার তাকে সমাধিস্থ করা হলো তারই নামে রাখা সেই শহরে। এতেও থেমে থাকেনি কাহিনী। তারও কিছুদিন পর রাজার মনে হলো প্রয়াত রাজার প্রতি আরো একটু বেশি সম্মান জানানো উচিত। তখন আলেকজান্দ্রিয়া শহরের ‘সোমা’ বা ‘সেমা’ (গ্রিক ভাষায় দেহ) নামক এক জেলায় একটি সমাধিসৌধ করে তাকে চিরকালের মতো বিশ্রাম দেওয়া হলো।

ইতিহাসে এ পর্যন্ত তথ্যই পাওয়া যায়। কিন্তু তারপর? সৌধের বড় বড় পাঁচিলের আড়ালে থাকা আলেকজান্ডারের সোনার কফিনের কথা মনে আছে তো? শোনা যায়, টলেমি বংশেরই এক অপদার্থ উত্তরাধিকারী, নবম টলেমি নাকি আলেকজান্ডারের সোনার কফিন পাল্টে করে দেন ক্রিস্টালে। আর পুরনো সোনার কফিনটি গলিয়ে মুদ্রা করে নেন লোভী রাজা! তিনি ভাবলেনও না ইতিহাসের কত বড় ক্ষতি তিনি করে গেলেন।

অনেকের মতে, দীর্ঘদিন আলেকজান্দ্রিয়াতেই ছিল এই গ্রিক বীরের মরদেহ। আলেকজান্ডারের খ্যাতি ছিল সারা পৃথিবী জুড়ে। আর তাই যিশু খ্রিষ্টের জন্মের ৪৫ বছর আগে তার সমাধি দেখতে অগাস্টাস, ক্যালিগুলা, জুলিয়াস সিজারের মতো ডাকসাইটে রোমান সম্রাটরা আলেকজান্দ্রিয়ায় এসেছিলেন বলে জানা যায়। সম্রাট ক্যালিগুলা নাকি তার সারকোফেগাসের (মানুষের মতো দেখতে শবাগার) বুক থেকে বর্ম ছিড়ে স্মারক হিসেবে রেখেও দেন! আর রাজা অগাস্টাস সমাধির উপরে ফুল ছড়িয়ে দেন, মমির মাথায় পরিয়ে দেন মুকুট। তবে তিনি নাকি সারকোফেগাসের উপর ঝুঁকে সম্রাটকে চুমু খেতে গিয়ে তার নাকও ভেঙে দিয়েছিলেন! যদিও এ ধরনের সম্মান জানানো অনেকেরই পছন্দ হয়নি।

তখনো আলেকজান্ডারের সমাধি নিয়ে খুব এক গন্ডগোলের কথা শোনা যায়নি। তৃতীয় শতক পর্যন্ত এ সৌধ সাধারণ জনগণকে দেখার অনুমতি দেয়া হয়নি। এ মহান বীরের মরদেহ যদি সেখানেই চিরকালের জন্য থাকতো, তাহলে তো আর কথা ছিল না। কিন্তু আবারো ঘটলো এক দুর্ঘটনা।

(৩৭৯-৩৯৫) সময়কালে আলেকজান্দ্রিয়ার ব্যাপক ক্ষতিসাধিত হয়। পঞ্চদশ শতকে এ শহরের গুরুত্ব ধীরে ধীরে কমতে থাকে। এর পাঁচ দশক পরই হঠাৎ আলেকজান্ডারের সমাধি অদৃশ্য হয়ে যায়। কিন্তু বিখ্যাত এ গ্রিক সম্রাটের দেহাবশেষ কোথায় রাখা আছে- তার উত্তর এখন পর্যন্ত পাওয়া যায়নি।

এখন পর্যন্ত ১৪০ বার অনুসন্ধান চালিয়ে আজও মিশরের পুরাতত্ত্ববিদরা বলতে পারেননি কোথায় রয়েছে রাজার দেহাবশেষ। তবে মাঝেমধ্যে হঠাৎ একেকটা আবিষ্কারে চমকে উঠতেই হয়। ঠিক তেমনি কয়েক বছর আগরে এক ঘটনা। একদল বিজ্ঞানী জানান দেন যে, একসময় যেখানে ম্যাসিডন ছিল, সেখানে প্রাচীন শহর অ্যাম্ফিপোলিসের কাস্তা সমাধিক্ষেত্রে পাওয়া গেছে মার্বেলে মোড়া এক রাজকীয় সমাধির খোঁজ। সবাই ভেবে নিল এটাই বুঝি সম্রাটের সমাধি। অনেকে অনুমান করতে লাগলেন, রোমান সম্রাট কারাকালা ছিলেন আলেকজান্ডারের শোর্যবীর্যের খুব ভক্ত। দ্বিতীয় খ্রিস্টাব্দ নাগাদ হয়তো তিনিই রাজার মরদেহকে সসম্মানে রাজার নিজ জন্মভূমি গ্রিসে এনে সমাধিস্থ করেছেন।

এখানেও প্রশ্ন থেকে যায়। অনেকেই বলেন, সমাধিটি আলেকজান্ডারের জন্যই তৈরি করা হয়েছিল। কিন্তু টলেমি সোটার সম্রাটের শববাহী গাড়ি নিয়ে কেটে পড়ায় এটি পরিত্যক্ত ছিল। পরে রাজপরিবারেরই কাউকে এখানে সমাধি দেওয়া হয়।

ফলে আজও এ কাহিনীর ইতি টানা সম্ভব হয়নি। বিজ্ঞানীরা এখনো হন্য হয়ে খুঁজে বেড়াচ্ছেন রাজা আলেজান্ডারের সমাধি। সময়ের সাথে সাথে ঐতিহাসিক স্থানসমূহের পরিবর্তন ঘটেছে। বিভিন্ন দেশের মানচিত্রেও এসেছে নানা পরিবর্তন। তাই অনেক ঐতিহাসিক স্থানেরই এখন আর কোনো অস্তিত্ব নেই। অনেক স্থানেই তৈরি হয়েছে বিশাল বিশাল অট্টালিকা। এর ফলে দিন দিন এ রহস্যের উন্মোচন করা আরো কঠিন হয়ে পড়ছে। তারপরও বিজ্ঞানীদের মতো আমরাও আশায় আছি একদিন না একদিন হয়তবা এ রহস্যের যবনিকাপাত ঘটবে। আর ততদিন পর্যন্ত এ রাজকাহিনীর শেষটা হয়ে থাকবে এক রহস্যের আধার।

ফিচার ইমেজঃ biography.com

40
চিকুনগুনিয়া নামক ভাইরাস জ্বরের প্রকোপ এবার একটু বেশিই দেখা যাচ্ছে। ভাইরাসজনিত এ জ্বরটি প্রাণঘাতী না হলেও এ রোগে আক্রান্তরা তীব্র থেকে তীব্রতর অস্থিসন্ধি বা জয়েন্ট ব্যথায় ভুগে থাকেন। সাধারণত এ জ্বর দুই থেকে পাঁচ দিনের মধ্যে ভালো হয়ে গেলেও সন্ধির ব্যথা মাসব্যাপী রোগীকে কষ্ট দিতে থাকে। তাই ব্যথার কষ্ট থেকে মুক্তি পেতে কিছু পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে : ১। আক্রান্ত জয়েন্টে বরফ সেঁক দিলে তা খুব ভালো ফল দেয়। একটা তোয়ালো বা নরম কাপড়ে বরফকুচি নিয়ে ব্যথার স্থানে তিন থেকে পাঁচ মিনিট ধরে রাখুন। এভাবে ১০-১৫ মিনিট বরফ সেঁক দেওয়া যেতে পারে। এতে প্রদাহ কমে ব্যথা কমে আসবে। সরাসরি বরফ লাগাবেন না, এতে কোল্ড বার্ন হতে পারে। ২। ব্যথার স্থানে তিলের তেল দিয়ে হালকা ম্যাসাজ করা যেতে পারে। ম্যাসাজের ফলে উক্ত স্থানের রক্ত চলাচল বেড়ে ব্যথা কমবে। তবে অধিক হারে ও দীর্ঘ সময় ম্যাসাজ করা থেকে বিরত থাকুন। এর ফলে জয়েন্টের টিস্যু ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। ৩। অনেক চিকিৎসক এক গ্লাস দুধে আধা চা চামচ হলুদ গুঁড়া মিশিয়ে দিনে দুবার খেতে বলেন। হলুদের প্রদাহবিরোধী উপাদান চিকুনগুনিয়াজনিত ব্যথা কমাতে   সাহায্য করে বলে প্রমাণ পাওয়া গেছে।

৪। ফিজিওথেরাপি : যে কোনো প্রদাহজনিত ব্যথা নিরাময়ে ফিজিওথেরাপি ব্যথানাশক বা অন্য যে কোনো কিছুর চেয়ে অনেক বেশি কার্যকর। ইলেক্ট্রো ও ওয়াক্স থেরাপি ব্যথা কমাতে খুব কার্যকর। তবে চিকিৎসানির্ভর করবে রোগীর বর্তমান অবস্থার ওপর। এ ক্ষেত্রে  বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।

ডা. মোহাম্মদ আলী, পেইন ও ফিজিওথেরাপি বিশেষজ্ঞ, এইচপিআরসি, উত্তরা,  ঢাকা।

- See more at: http://www.bd-pratidin.com/news/2017/06/19/241233#sthash.uN57E5E7.dpuf

41
 সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে কর্মী নিয়োগে একটি বিশেষ নিয়ম মেনে থাকেন প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মার্ক জাকারবার্গ। কর্মী নিয়োগের সাক্ষাৎকারের জন্য তিনিই প্রশ্নগুলো তৈরি করেন।

তাঁর এই নিয়োগপদ্ধতি নিয়ে জাকারবার্গ বলেন, ‘কর্মী নিয়োগ দেওয়ার ক্ষেত্রে পৃথিবীর সবচেয়ে মেধাবীদেরই নিয়োগ দিতে হবে, এমন কোনো কথা নেই। তাঁকে আমার আসনে বসে দেখতে হবে, সে কতটা স্বাছন্দ্যের সঙ্গে কাজ করতে পারে। তার মানে এ নয় যে তাঁকে আমার আসনই দিয়ে দেব।’ পাশাপাশি আগ্রহী প্রার্থীদের এমন কোনো নতুন পরিকল্পনার কথা জানাতে হবে, যার মাধ্যমে ফেসবুক লাভবান হবে। না হলে বাদ পড়তে হবে নিয়োগ-প্রক্রিয়া থেকে। কর্মী নিয়োগে মার্কের এমন সিদ্ধান্তই হয়তো অন্যান্য প্রতিষ্ঠান থেকে ফেসবুককে আলাদা করেছে।

এ ক্ষেত্রে জাকারবার্গ ফেসবুকে শেরিল স্যান্ডবার্গের নিয়োগ-প্রক্রিয়ার উদাহরণও টেনে এনেছেন। তিনি জানান, ২০০৭ সালের ডিসেম্বরে বড়দিনের এক অনুষ্ঠানে দেখা করে ফেসবুকের বিভিন্ন দিক এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে ঘণ্টাখানেক কথা হয় তাঁদের মধ্যে। এর কয়েক মাস পর জাকারবার্গ সিদ্ধান্তে পৌঁছান যে শেরিল স্যান্ডবার্গকে নিয়োগ দেওয়া যায়। ফেসবুকের প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা পদে তাঁকে নিয়োগ দেওয়াটা এখন পর্যন্ত সেরা ব্যবসায়িক সিদ্ধান্ত ছিল বলে মনে করেন মার্ক জাকারবার্গ।

২০০৮ সালে ৪৫০ জন কর্মী এবং প্রায় ২৮ কোটি মার্কিন ডলার রাজস্ব নিয়েও সাড়ে ৫ কোটি ডলারের বেশি লোকসান করে ফেসবুক। আর গত বছরেই ফেসবুকের রাজস্ব আয় ছিল প্রায় ২ হাজার ৭০০ কোটি ডলার, কর্মীর সংখ্যা ১৭ হাজারেরও বেশি। ব্যবসায় উন্নতি সাধনের মূলনীতিটা নাকি স্যান্ডবার্গের কাছ থেকেই শিখেছেন জাকারবার্গ, এমনটাই বলেছেন ফেসবুকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা।

Source: http://www.bhorerkagoj.net/ফেসবুকে-কর্মী-নিয়োগ-পদ্ধ/

42
অত্যন্ত সুখের জীবন। অবৈধ কোনো লেনদেন নেই।

নেই কোনো ধারদেনা। দরদামের কোনো কাজ কারবার নেই। তাই কোনো উপরিও নেই। সরকারের দেওয়া বেতনেই চলে সংসার।
এভাবেই জীবনের কথা জানালেন এক পুলিশ কর্মকর্তা। বলেন, ‘সৎ জীবনযাপনের চেষ্টা করছি। এ জন্য হারামকে একদম না করেছি। হালালের ওপরই নির্ভরশীল। এতে কোনো কষ্ট নেই। ’

বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীর এই সদস্যের নাম মো. গোলাম রুহুল কুদ্দুস। কক্সবাজার সদর সার্কেলে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তিনি। ‘ঘুষ বাণিজ্যে’ জড়িত নেই এমন পুলিশ নেই-এমন অভিযোগ মানতে নারাজ গোলাম কুদ্দুস। বলেন, ‘সৎ থাকার চেষ্টা করলেই হলো। একবার যখন সৎ হিসেবে পরিচিতি মেলে, তখন সততাই প্রতিনিয়ত তাঁকে টেনে তোলে। ’

কক্সবাজার শহর কমিউনিটি পুলিশিং কমিটির সভাপতি মিজানুর রহমান বলেন, ‘সদর সার্কেলের বর্তমান এএসপি একজন সৎ ব্যক্তি হিসেবে সর্বত্র জানাজানি রয়েছে। এ কারণে তাঁর কাছে কেউ অন্যায় আবদার নিয়ে যেতে চান না। তিনি অপরাধমুক্ত সমাজ গড়ার কাজে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছেন। ’

মো. গোলাম রুহুল কুদ্দুস প্রসঙ্গে কক্সবাজার জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আফরুজুল হক টুটুল বলেন, ‘পুলিশ বিভাগে তাঁর মতো একজন সৎ নিষ্ঠাবান কর্মকর্তা পাওয়াটা ভাগ্যের ব্যাপার। তিনি অত্যন্ত সততা ও দক্ষতার সাথে কাজ করছেন। ’

কক্সবাজার সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রণজিত বড়ুয়া বলেন, ‘আমি যে কদিন স্যারকে পেয়েছি, বুঝেছি তিনি একজন মহৎ ব্যক্তি। ’

জানা গেছে, মো. গোলাম রুহুল কুদ্দুস কলেজে অনার্স দ্বিতীয় বর্ষে পড়ার সময় বন্ধুদের সাথে তাবলিগ জামায়াতে যোগ দিয়েছিলেন। তাবলিগে একেবারে ৪০ দিনের এক চিল্লা সময় দিয়ে তাঁর আমূল পরিবর্তন ঘটে। সেদিন থেকে কোনো অনৈতিক কাজে তিনি পা দেননি। কলেজজীবনে মুখে দাড়ি রেখে দেন। একদিন কলেজে যাওয়ার সময় ছেলের মুখে দাড়ি দেখে মা সেভ করার জন্য বারে বারে পীড়াপীড়িও করেছিলেন। মা বলেছিলেন, ‘বিসিএস পরীক্ষা দিতে গেলে এসব নিয়ে আবার কোনো ঝক্কি-ঝামেলা হবে না তো!’

সেই মা গত ৯ জুন কক্সবাজার শহরে ছেলের সরকারি বাসায় বসে কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘জানেন বিমানে চাকরি পেয়ে ছেলেটা কিছুতেই বিসিএস দিতে রাজি হচ্ছিল না। কিন্তু আমি নাছোড়বান্দা। তাকে পাঠালাম বিসিএসে। আল্লাহর কাছে শোকরিয়া আমার সন্তানের ভাগ্যে আমারই পছন্দের চাকরিটা জুটেছে। ’

মো. গোলাম রুহুল কুদ্দুস বলেন, ‘আমি সাদা জুব্বা, সাদা পায়জামা, মাথায় সাদা টুপি এবং কালো জুতা পরেই যাই বিসিএস মৌখিক পরীক্ষা দিতে। ছিল মুখ ভর্তি দাড়ি। মনে মনে সিদ্ধান্ত নিই, আমার মেধা বাদ দিয়ে পোশাক-আশাককে প্রাধান্য দেওয়া হলেও মনে কষ্ট পাব না। কিন্তু তা হয়নি। আমি সঠিক রায় পেয়েছি। ’

কেবল অফিসেই পুলিশের পোশাকে থাকেন তিনি। বাদবাকি সময় পায়জামা-পাঞ্জাবি পরেন। কক্সবাজারে ইতিমধ্যে জানাজানি হয়ে গেছে, পুলিশের চৌকশ এই কর্মকর্তার সততার কথা। তিনি কোনো অবৈধ লেনদেনের ধারেকাছেও নেই। তাঁকে নিয়ে এই প্রতিবেদন তৈরি করতে গিয়েও যথেষ্ট বেগ পেতে হয়েছে প্রতিবেদককে। তিনি কিছুতেই এ প্রসঙ্গে আলাপে রাজি হচ্ছিলেন না। বলেন, ‘সৎ থাকাটা কোনো কৃিতত্ব হতে পারে না। তাই লেখারইবা কি আছে। ’ শেষপর্যন্ত তাঁকে বুঝানো হয়, দুর্নীতিগ্রস্ত এবং অসাধুদের সৎ জীবনে উৎসাহিত করতেই এই প্রতিবেদন। তিনি বলেন, ‘সরকার আমাকে মাসিক যে বেতন দিয়ে থাকে তা যথেষ্ট। স্ত্রী ও মাকে নিয়ে সুখের সংসার আমার। ’

তাঁর সঙ্গে আলাপকালে জানা গেছে, তাঁর সংসারের চাহিদা একেবারেই সীমিত। বাসায় রয়েছে তার বাবার ব্যবহৃত এক সেট সোফা। পরিবারের সদস্যদেরও একদম সাধাসিধে জীবনযাপন। এমনকি সারা বছরে মাত্র দুবার কাপড় দিতে হয় স্ত্রীকে। তিন ভাইয়ের মধ্যে কনিষ্ঠ তিনি। তাঁর সাথে থাকেন মা। বড় ভাই গোলাম রব্বানী চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার অফিসে চাকরি করেন। মেজ ভাই গোলাম মোরশেদ বেসরকারি চ্যানেল দীপ্ত টেলিভিশনের জেনারেল ম্যানেজার (জিএম) মার্কেটিং। চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা শহরের মৃধা পাড়া শান্তিমোড়ের স্থায়ী বাসিন্দা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. গোলাম রুহুল কুদ্দুসের বাবা মরহুম অধ্যাপক মো. আবদুল জব্বার ছিলেন শরিয়তপুর সরকারি কলেজের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক।

ছাত্রজীবনে মেধাবী ছাত্র ছিলেন তিনি। রাজশাহী কলেজ থেকে প্রাণিবিদ্যায় মাস্টার্স করা মো. গোলাম রুহুল কুদ্দুস লেখাপড়ার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সব খানেই প্রথম। ২০০৭ সালে মাস্টার্স পাস করে চাকরি নেন বাংলাদেশ বিমানে। বিমানে চাকরির প্রশিক্ষণ চলাকালীন সময়ে তিনি বিসিএসে উত্তীর্ণ হন। যোগ দেন সহকারী পুলিশ সুপার পদে। শুরুতে কাজ করেন র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নে (র‌্যাব)।

সিলেটের একটি ঘটনার বিবরণ দিয়ে তিনি জানান, সেখানকার বিশাল জনগোষ্ঠী লন্ডনে থাকেন। তাঁদের অনেকের অট্টালিকা রয়েছে সিলেটে। লন্ডন প্রবাসীদের সহায়-সম্পদ কেড়ে নিতে সক্রিয় সংঘবদ্ধ ডাকাত দল। সিলেটে এ রকম ১২ সদস্যের একটি ডাকাত দল ধরে পুলিশের এই চৌকশ কর্মকর্তা অসীম সাহসিকতার পরিচয় দেন চাকরির শুরুতে।

পুলিশ দুর্নীতিগ্রস্ত এবং ঘুষ লেনদেনের অভিযোগ প্রসঙ্গে অতিরিক্ত এই পুলিশ সুপার বলেন, ‘আসলে সবক্ষেত্রেই আছে এমন অভিযোগ। তবে পুলিশের অভিযোগটি ব্যাপকভাবে প্রচারিত হয়। ’

তিনি সৎ জীবনযাপনের জন্য সকল শ্রেণি-পেশায় সততার চর্চার ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, ‘একজন সৎ মানুষের জন্য দুনিয়ায় যেমনি সাময়িক সুখ রয়েছে, তেমনি পরকালে দীর্ঘকালীন শান্তির নিশ্চয়তাও রয়েছে।

Source: http://www.kalerkantho.com/print-edition/2nd-rajdhani/2017/06/14/508511

43
আপনি কলকাতার টালিগঞ্জের দিকে কোনোদিন রিকশা চেপেছেন? হয়তো জানেন না‚ যে রিকশাচালক আপনাকে গন্তব্যে পৌঁছে দিয়েছিলেন তার পূর্বপুরুষ একসময় ছিলেন গোটা দাক্ষিণাত্যের অধীশ্বর। খোদ ব্রিটিশ সরকার তার ভয়ে কাঁপত।

এতটাই সমীহ‚ তাকে নেপোলিয়ন বোনাপার্তের সঙ্গে একাসনে বসান ব্রিটিশ ইতিহাসবিদরা। তিনি টিপু সুলতান। তার উত্তরসূরীরা এখন কলকাতার বাসিন্দা। কেউ কেউ এতটাই সঙ্গীন অবস্থায় আছেন‚ অন্নসংস্থানের জন্য রিকশা টানছেন। কেউ অন্যের বাড়িতে ঠিকে ঝি হয়ে কাজ করছেন।
১৭৯৯ খ্রিস্টাব্দে চতুর্থ ইঙ্গ মহীশূর বা শ্রীরঙ্গপত্তনমের যুদ্ধে পরাজিত হন মহীশূরের শাসক হায়দার আলির পুত্র টিপু সুলতান। তাঁকে হত্যা করে ব্রিটিশরা। এরপর তাঁর একাধিক স্ত্রী‚ ১২ জন পুত্র-সহ পরিবারের মোট ৩০০ জন সদস্যকে কলকাতায় নির্বাসনে পাঠানো হয়।

সম্প্রতি তাঁদের ওপর তৈরি হয়েছিল একটি তথ্যচিত্র। আধ ঘণ্টা দৈর্ঘ্যের ওই তথ্যচিত্রের নাম ‘Tipu Sultan : The Misery of History’।

সেখানে দেখানো হয়েছে ‘ প্রিন্স‘ আনোয়ার আলি শাহ-কে। টিপুর পরবর্তী সপ্তম প্রজন্মের উত্তরসূরী। সংসার চালাতে রিকশা চালান। স্ত্রী সন্তানদের মুখে ভাত তুলে দিতে প্রিন্স আনোয়ার শাহ রোডের উপরে রিক্সার প্যাডেলে চাপ দেন তিনি। ভাগ্যের পরিহাসে এই রাস্তা যাঁর নামে‚ সেই প্রিন্স গুলাম মহম্মদ আনোয়ার শাহ ছিলেন তাঁর প্রপিতামহ।

আনোয়ার আলি-র বাকি ভাইরাও কেউ রিক্সা চালান। কেউ সেলাইয়ের কাজ করেন। কেউ ছোট কারবার চালান। সবাই থাকেন ঘিঞ্জি বস্তির ঘুপচি কামরায়। এঁদো পরিবেশ বসে ভাবেন একদিন যাবেন মহীশূর। যেখানে একদিন সূর্যের আলোয় ঝকঝকিয়ে উঠত টিপু সুলতানের তরবারি।

অথচ কলকাতাতেই রাজার হালে থাকার কথা তাঁদের। কারণ এই শহরে বিস্তর সম্পত্তি ছিল টিপু সুলতানের। আজকের রয়াল ক্যালকাটা গল্ফ ক্লাব‚ টালিগঞ্জ ক্লাব সব ছিল মহীশূরের সুলতান টিপুর। কিন্তু এখন তার দেখভালের দায়িত্ব প্রিন্স গুলাম মহম্মদ ট্রাস্টের। নামমাত্র ভাড়ায় লিজ নেওয়া আছে গল্ফ ক্লাব এবং টালিগঞ্জ ক্লাব।

সংবাদমাধ্যমে টিপুর উত্তরসূরীদের অভিযোগ‚ ট্রাস্টের মাধ্যমে বঞ্চিত হচ্ছেন তাঁরা। আবার ট্রাস্টের অভিযোগ‚ টাকা দিলে নয়ছয় করেন টিপুর বংশধররা। তাছাড়া ট্রাস্টের মূল দায়িত্ব হল টিপু সুলতানের নামাঙ্কিত মসজিদ রক্ষণাবেক্ষণ করা।

এছাড়াও আজকের পার্ক স্ট্রিট‚ চৌরঙ্গি‚ থিয়েটার রোড এবং দক্ষিণ কলকাতার বিস্তীর্ণ চাষ জমির মালিক ছিলেন টিপু সুলতান। কিন্তু তাঁর বংশধররা বঞ্চিতই থেকে গেছেন।

কলকাতায় টিপু সুলতানের বংশধররা সবাই যে দিন আনা দিন খাওয়া অবস্থায় আছেন তা নয়। কেউ কেউ মধ্যবিত্ত জীবনও যাপন করছেন। কিন্তু কারওর জীবনেই ‘রয়্যাল‘ শব্দটার ছিটেফোঁটাও নেই। অথচ ভারতে এখনও রাজবংশের উত্তরসূরীরা আছেন‚ যাঁরা‚ রাজত্ব চলে গেলেও প্রাসাদে আছেন। রাজার হালেই নবাবি করছেন। তফাৎটা হল‚ যাঁরা ব্রিটিশদের সঙ্গে আপস করে মাথা নুইয়েছিলেন ‚তাঁরা টিকে গেছেন। কিন্তু যাঁরা ব্রিটিশ শাসনের প্রতিবাদ করেছিলেন তাঁদের গরিমা ধুলোয় মিশে গেছে।

Source: http://www.kalerkantho.com/online/miscellaneous/2017/06/10/507299

44
এনেস্থেশিয়া আবিষ্কারের আগের কথা।

অপারেশন করা হত রোগীকে কোনো রকম এনেস্থেশিয়া দেয়া ছাড়াই (কি ভয়ানক রে ভাই)।
 
সেই সময়ে পৃথিবীর একজন বিখ্যাত সার্জন ছিলেন রবার্ট লিস্টন। এনেস্থেসিয়া না ব্যবহার করায় যত দ্রুত অপারেশন করা যেতো রোগীর কষ্ট তত কম হতো এবং রবার্ট লিস্টন ছিলেন এই বিষয়ে পারদর্শী।

তিনি ২.৫ মিনিটে একটি পা ব্যবচ্ছেদ ও মাত্র ৪ মিনিটে ২০ কেজি scrotal tumor রিমুভ করেন। তার অপারেসন প্রসিডিউর এত দ্রুত ছিল যে, ছোট খাট অপারেশন মাত্র কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে শেষ হতো।

একবার লিস্টনের কাছে রোগী আসে গলায় টিউমার নিয়ে। লিস্টনের সহযোগী এটাকে Abscess (ফোঁড়া) বললে লিস্টন বলেন এটা aneurysm of carotid artery (এক ধরণের টিউমার) এবং তর্কের একপর্যায়ে লিস্টন পকেট থেকে সার্জিকাল ছুরি বের করে সেই রোগীর ক্যারোটিড আর্টারী কেটে দেখান যে এটা aneurysm of carotid artery। রোগী তখন মারা যায়। রোগী মারা গেলেও ক্যারোটিড আর্টারিটা বেঁচে আছে এখনো  ফরমালিনের কল্যাণে! (ক্যারোটিড আর্টারি কাইট্টালাইছে!! কি ডাক্তার রে ভাউ)। সেই ক্যারোটিড আর্টারী এখনো আছে Liston University College Hospital pathology museum, specimen No. 1256.

লিস্টন একবার মাত্র ২মিনিট ১৫ সেকেন্ডে রোগীর পা কেটে ফেলেন। অপারেশন এত দ্রুত ছিলো যে অপারেশনের সময় তার এসিস্টেন্টের একটা আঙ্গুলও কেটে পড়ে যায়। এমনকি সাথে উপস্থিত একজন দর্শকের গাউন কেটে যায়। সেই দর্শক ভেবেছিল তার কোন মেজর আর্গান কেটে গেছে তখন সে ভয়ে Vasovagal attack হয়ে মারা যায়। রোগী এবং এসিস্ট্যান্ট দুজনই পরে গ্যাংগ্রিন এবং ইনফেকশন হয়ে মারা যায়। ইতিহাসে এটাই একমাত্র অপারেশন যেখানে মৃত্যুর হার ৩০০%।

১৮৪৭ সালে ১৬ অক্টোবর আমেরিকান ডেন্টিস্ট ডা. টি জে মর্টন প্রথম ইথার কে এনেস্থেশিয়া হিসেবে ব্যবহার করে অপারেশন করেন। সেটা সাকসেসফুল হলে সেই বছর ১৯ ডিসেম্বর, আরও দুজন ডেন্টিস্ট ডা. ফ্রান্সিস বুট এবং ডা. জেমস রবিনসন টুথ এক্সট্রাকশনে সফলভাবে ইথার ব্যবহার করেন ২য় বারের মত। এই খবর প্রকাশিত হলে ডা. লিস্টন পা কেটে ফেলার জন্য প্রথমবারের মত ইথার ব্যবহার করে সফল হলে মন্তব্য করেন – ‘আমেরিকানদের এই কৌশল দেখি হিপনোসিস এর চেয়ে ভাল কাজ করে। (এনেস্থেশিয়া আবিষ্কারের পূর্বে হিপনোসিস বা রোগীকে সম্মোহন করাই ছিল একমাত্র উপায়। তবে বেশিরভাগ সময়েই যেটা সম্ভব হত না।)

তথ্যসূত্রঃ

https://www.woodlibrarymuseum.org/history-of-anesthesia/
https://en.wikipedia.org/wiki/William_T._G._Morton
https://en.wikipedia.org/wiki/Robert_Liston

 
তথ্য সংগ্রহে এবং অনুবাদে ঃ মাহমুদুর রহমান মামুন,  পাইওনিয়ার ডেন্টাল কলেজ।

45
ধরুন, আপনি থাকেন ঢাকায়। গ্রামের বাড়িতে বাবা-মা থাকে। মাসশেষে বাড়ির ঠিকানায় বিদ্যুত্ বিল আসে। কেউ একজন জমা দিয়ে দেয়। কোনো মাসে বাবা-মা বলে, বিদ্যুত্ বিল ব্যবহারের তুলনায় বেশি এসেছে। শুনে আপনারও খারাপ লাগে। কেউ হয়ত আপনার বিদ্যুত্ চুরি করে ব্যবহার করছে, বিল গুনতে হল আপনার।

ইন্টারনেটের যুগে প্রযুক্তি এখন সহজলভ্য। প্রযুক্তি মানুষের জীবনকে করছে সহজ। স্মার্টমিটার ব্যবস্থায় আপনার বিদ্যুত্ব্যবহারের পরিমাণ জানতে পারবেন মুহুর্তে। মিটার চালু করার পর আপনি স্মার্টফোন থেকে ঘণ্টা, দিন, সপ্তাহ এমনকি মাসের বিদ্যুত্ ব্যবহার জানতে পারবেন। আপনি স্মার্টফোনে সেট করে দিতে পারবেন কোনো নির্দিষ্ট মাসে কী পরিমাণ বিদ্যুত্ ব্যবহার করতে চান। বিদ্যুতের ব্যবহার নির্দিষ্ট সীমা অতিক্রম করলে আপনার ই-মেইলে মেসেজ আসবে।

স্মার্টফোন দিয়ে কেনাকাটা করা যায়। বাড়ির সবজি থেকে শুরু করে বিমান টিকেট অর্ডার করা যায়। পরিশোধ করা যায় তাদের মূল্য। স্মার্টমিটার ব্যবহার করলে ঘরে বসেই বিল পরিশোধ করা যায়। স্মার্টমিটারের ক্ষেত্রে মিটার এবং কেন্দ্রীয় ব্যবস্থার মধ্যে দ্বিমুখী যোগাযোগ হয়ে থাকে। স্মার্টমিটার প্রধানত বিদ্যুতের ব্যবহারের ক্ষেত্রে ব্যবহূত হলেও গ্যাস ও পানির ক্ষেত্রেও ব্যবহূত হয়।

১৯৭২ সালে থিওডর জর্জ টেড পারাসকেভাকস যুক্তরাষ্ট্রের আলবামায় এক ধরনের মনিটরিং সিস্টেম চালু করেন যাতে নিরাপত্তা, আগুন, স্বাস্থ্য সংকেত এবং মিটার পড়ার সক্ষমতা ছিল। স্মাটমিটার থেকে গ্রাহক দুই ধরনের সুবিধা পেয়ে থাকে। যে কোনো গ্রাহক তাত্ক্ষণিকভাবে তা দেখতে পায়। বাসার সামনে মিটারে বিদ্যুত্ ব্যবহারের পরিমাণ দৃশ্যমান হওয়ায় ভোক্তা তার ব্যবহার নিয়ে সচেতন থাকে। স্মার্টমিটার ব্যবহারের কারণে বিদ্যুত্ সাশ্রয়ী হওয়ায় বিভিন্ন দেশ সরকারিভাবে তাদের সকল নাগরিকের বাসায় স্মার্টমিটার লাগানোর প্রকল্প হাতে নিয়েছে। যুক্তরাজ্যে ২০২০ সালের মধ্যে তাদের সকল নাগরিকের বাড়িতে স্মার্টমিটার লাগানো নিশ্চিত করছে।

উন্নত দেশের পাশাপাশি বাংলাদেশেও স্মার্টমিটার ব্যবহারের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। গত ২৫ মে বিদ্যুত্ ভবনে ‘বিপিডিবি স্মার্ট মিটার’ উদ্বোধন করা হয়। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিদ্যুত্ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ এবং বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক। কুমিল্লার ৫০০ বাড়ি এবং ১০০ শিল্পকারখানায় পাইলট প্রকল্প শেষে আনুষ্ঠানিকভাবে এ স্মার্টমিটার কাজ করছে। এ প্রকল্প বাস্তবায়নে বাংলাদেশ বিদ্যুত্ উন্নয়ন বোর্ডকে সহযোগিতা করেছে অ্যাপ্লম্বটেকবিডি নামে দেশীয় এক কোম্পানি। বর্তমানে সেখানে ওয়েবসাইট, অ্যান্ড্রয়েড এবং আইওএস অ্যাপ ব্যবহার করে বিকাশ, রবিক্যাশ বা ডেবিট/ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে যে কোনো সময় বিল পরিশোধ করা যাচ্ছে। বিদ্যুত্ ব্যবহারকারী যে কোনো সময় তার স্মার্টফোন থেকে ব্যবহারের পরিমাণ জানতে পারছে। ভবিষ্যতে বিল কত হবে তা অনুমান করা যাবে।

সাধারণত আমাদের বড় বড় উন্নয়ন প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে বিদেশি প্রতিষ্ঠানের কারিগরি সহযোগিতা নেয়া হয়। প্রকল্প বাস্তবায়ন শেষে তারা চলে যায়। পরবর্তীসময়ে উন্নয়ন প্রকল্পে কোনো সমস্যা সৃষ্টি হলে সমাধান করতে অনেক সময় লেগে যায়। আবার কিছু কিছু প্রকল্পে সমাধান করা সম্ভব হয় না। দেশীয় প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে উন্নয়ন প্রকল্প সম্পন্ন হলে তিন ধরনের সুবিধা পাওয়া যায়।

প্রথমত, উন্নয়ন প্রকল্পের পেছনে মোটা অঙ্কের খরচের বড় একটি অংশ দেশে থেকে যায়। শুধুমাত্র কারিগরি যন্ত্রপাতি আমদানির টাকা বাইরে যায়। বাকি টাকা দেশে থাকে। দেশের রিজার্ভে চাপ কম পড়ে। দ্বিতীয়ত, প্রকল্পের কোনো অংশে সমস্যা দেখা দিলে বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠান তা দ্রুততম সময়ে সমাধান করে দিতে পারে। কারিগরি কার্যক্রম বিদেশি প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করলে তা সম্ভব হয় না। তৃতীয়ত, প্রকল্পগুলোতে দেশিয় প্রতিষ্ঠান কাজ করার সুযোগ পেলে প্রতিষ্ঠানগুলোর অভিজ্ঞতা বাড়ে। দেশ স্বনির্ভর হওয়ার সুযোগ পায়।

বাংলাদেশের সমগ্র বিদ্যুত্ ব্যবস্থায় স্মার্টমিটার চালু হলে আমাদের জীবনযাপনে কয়েক ধরনের পরিবর্তন আসবে। কোনো কারণে লোডশেডিং হওয়ার মত অবস্থা হলে বিদ্যুত্ বিতরণকারী কর্তৃপক্ষ গ্রাহকের কাছে মেসেজ পাঠাবে যেন আপনার বিদ্যুত্ ব্যবহারের পরিমাণ একটি নির্দিষ্ট পরিমাণের নিচে রাখুন, নাহয় আপনার সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হবে। স্মার্টমিটার ব্যবস্থা চালুর কারণে বাংলাদেশে বিদ্যুত্ ব্যবহারে সচেতনতা বাড়বে। বিদ্যুতের সাশ্রয় হবে। ভবিষ্যতে স্মার্টহোম, স্মার্টসিটি এবং স্মার্টগ্রিডের পথে এগিয়ে যাওয়া সহজ হচ্ছে।

Pages: 1 2 [3] 4 5 ... 7