Daffodil International University

Faculty of Engineering => EEE => Topic started by: mdashraful.eee on July 04, 2018, 04:53:25 PM

Title: স্বাধীনতা : ইসলামেই মুক্তি, ইসলামেই স্বাধীনতা
Post by: mdashraful.eee on July 04, 2018, 04:53:25 PM
মুক্তি ও স্বাধীনতার চাহিদা মানুষের স্বভাবজাত চাহিদা। মানুষ মুক্তি চায়, মুক্ত ও স্বাধীন থাকতে চায়। পরাধীনতার শৃঙ্খলে তার প্রাণ হাঁপিয়ে ওঠে। মানুষের স্বভাবের এই মুক্তিপ্রিয়তা একটি প্রয়োজনীয় প্রেরণা। এটি কল্যাণকর হতে পারে, যদি তা সঠিক ক্ষেত্রে, সঠিক লক্ষ্যে পরিচালিত হয়। তদ্রƒপ এই প্রেরণাই হয়ে উঠতে পারে মানুষের ব্যক্তি-জীবন ও সমাজ-জীবনে অনিষ্ট-অকল্যাণের কারণ, যদি এর অপব্যবহার বা ভুল ব্যবহার হয়। অর্থাৎ মানুষের সকল প্রেরণার মতো এই প্রেরণাও একটি শক্তি, যার সঠিক ব্যবহার মানুষের কল্যাণ নিশ্চিত করে।

ইসলামী শিক্ষা ও দাওয়াতের এক গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, মানবীয় যোগ্যতা ও প্রেরণাসমূহের সঠিক ও নিয়ন্ত্রিত ব্যবহারের নির্দেশনা। পরিভাষায় একে বলা হয় ‘হিদায়া’ (পথনির্দেশ, সুপথে পরিচালনা)। কুরআনে কারীমের প্রথম দুই সূরায় ‘হিদায়া’ প্রসঙ্গটি সুস্পষ্টভাবে উল্লেখিত হয়েছে। প্রথম সূরা- সূরাতুল ফাতিহায় তা এসেছে বান্দার প্রার্থনারূপে-

اِهْدِنَا الصِّرَاطَ الْمُسْتَقِیْمَ.

‘আমাদের সরল পথে পরিচালিত করুন।’

আর দ্বিতীয় সূরা- সূরাতুল বাকারার শুরুতেই তা এসেছে নির্দেশনারূপে। বান্দাকে জানানো হয়েছে-

ذٰلِكَ الْكِتٰبُ لَا رَیْبَ  فِیْهِ  هُدًی لِّلْمُتَّقِیْنَ.

‘এই সেই কিতাব, এতে কোনো সন্দেহ নেই, এটি মুত্তাকীদের জন্য হেদায়েত।’

বস্তুত ‘হেদায়েত’ই হচ্ছে মানুষের সবচেয়ে বড় প্রয়োজন, যা দ্বারা তার সকল যোগ্যতা ও প্রেরণার যথার্থ ব্যবহার নিশ্চিত হয়। বলাই বাহুল্য যে, যেকোনো শক্তির যথার্থ ব্যবহারই লক্ষ্য-উদ্দেশ্য সাধনে সহায়ক হয়।

এর দৃষ্টান্ত হচ্ছে সফররত দুটি কাফেলা। একটি গন্তব্যের দিকে সঠিক পথে চলছে আর একটি চলছে ভুল পথে। উভয় কাফেলা পথ চলছে এবং তাদের চলার শক্তি ব্যবহার করছে। কিন্তু উভয় কাফেলার পরিণাম এক নয়।

যে কাফেলা সঠিক পথে চলছে, তার ব্যবহৃত শক্তি তাকে গন্তব্যের দিকে এগিয়ে নিয়ে চলেছে আর যে কাফেলা ভুল পথে চলছে সে তো গন্তব্যের দিকে এগুচ্ছেই না; বরং গন্তব্য থেকে বহু দূরে সরে যাচ্ছে। একারণে শুধু শক্তি যথেষ্ট নয়, শক্তির যথার্থ ব্যবহারও জরুরি। মানবের অন্তর্নিহিত শক্তিসমূহের কাক্সিক্ষত ফল লাভের জন্য ‘হেদায়েত’ ও নির্ভুল নির্দেশনা তাই অপরিহার্য। মানবস্বভাবের মুক্তি ও স্বাধীনতার যে প্রেরণা এরও সঠিক বিকাশ ঘটে আল্লাহ-প্রদত্ত হেদায়েতের মাধ্যমে।

মুক্তিকামী মানব-স্বভাবের সাথে ইসলামী দাওয়াত কত সামঞ্জস্যপূর্ণ! মানুষও মুক্তি পেতে চায়, ইসলামও এসেছে মুক্তি দেয়ার জন্য। ইসলাম মানুষকে পরিচিত করে মুক্তি ও স্বাধীনতার প্রকৃত সংজ্ঞা ও ক্ষেত্রসমূহের সাথে। ফলে ইসলামী জ্ঞানে আলোকিত হৃদয় ও মস্তিষ্ক কখনো এই ক্ষেত্রে প্রতারিত হয় না। জীবন ও জগতে পরাধীনতার ক্ষেত্রগুলো তার সামনে স্পষ্ট থাকে। মুক্তি ও স্বাধীনতার উপায় সম্পর্কেও সে থাকে ওয়াকিফহাল।

ইসলামী দাওয়াতের এক দায়ী হযরত রিবয়ী ইবনে আমের রা.-এর কণ্ঠে ধ্বনিত হয়েছিল ইসলামী দাওয়াতের এই মর্মবাণী। পারস্য-সেনাপতি রুস্তমের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেছিলেন- ‘আমরা এই ভূখণ্ডে প্রবেশ করেছি, মানুষকে সৃষ্টির দাসত্ব থেকে মুক্তি দিয়ে এক আল্লাহর ইবাদতে নিয়োজিত করার জন্য; পৃথিবীর সংকীর্ণতা থেকে মুক্তি দিয়ে পৃথিবীর প্রশস্ততার দিকে নিয়ে আসার জন্য এবং সকল ধর্ম ও মতবাদের যুলুম-অবিচার থেকে মুক্ত করে ইসলামের সাম্য ও সুবিচারের ছায়াতলে নিয়ে আসার জন্য।’

ইসলামের এই প্রাজ্ঞ দায়ী, আল্লাহর পথের এই মুজাহিদের কণ্ঠে উচ্চারিত এই বাক্যগুলোতে যেমন ধ্বনিত হয়েছে ইসলামী দাওয়াতের লক্ষ্য-উদ্দেশ্য তেমনি নির্দেশিত হয়েছে মানুষের দাসত্ব ও মুক্তির ক্ষেত্রগুলোও।

আর তা উচ্চারিত হয়েছিল তৎকালীন বিশ্বের এক ‘সুসভ্য’ পরাশক্তির মহাক্ষমতাধর সেনাপতির সম্মুখে। অর্থাৎ তৎকালীন বিশ্বে শক্তি-সভ্যতায় অনন্য জাতিটি দাসত্বের যে ডাণ্ডা-বেড়িতে বন্দী-জীবন যাপন করছিল তার প্রতিই অঙ্গুলি নির্দেশ করছিল মুসলিম বাহিনীর এই মহান দায়ী ও মুজাহিদের উচ্চারণ।

সেই দাসত্বের প্রধান শিরোনাম হচ্ছে, সৃষ্টির উপাসনা। মানুষের স্রষ্টা আল্লাহ। গোটা বিশ্বজগতের সৃষ্টিকর্তা তিনি। মানুষকে তিনি সৃষ্টি করেছেন তাঁর ইবাদতের জন্য আর পৃথিবীর সকল কিছুকে সৃষ্টি করেছেন মানুষের প্রয়োজন পূরণের জন্য; মানুষেরই কল্যাণার্থে। অথচ যুগে যুগে অসংখ্য মানুষ, অসংখ্য জাতি-গোষ্ঠী সৃষ্টির উপাসনায় লিপ্ত হয়েছে। অসংখ্য কল্পিত দেব-দেবীর উপাসনা ও প্রভুত্বের শৃঙ্খলে নিজেদের আষ্টেপৃষ্ঠে আবদ্ধ করেছে। ইসলাম এসেছে মানবজাতিকে এই পৌত্তলিকতার শৃঙ্খল থেকে মুক্তি দেয়ার জন্য।

মনুষ্যসমাজেও একশ্রেণির মানুষ প্রভুর আসনে সমাসীন হয়েছে; শক্তি, ক্ষমতা, নানাবিধ কুসংস্কার ও মতাদর্শের ভিত্তিতে এরা উঠে যায় সকল জবাবদিহিতার ঊর্ধ্বে। পক্ষান্তরে মানুষের বৃহত্তর শ্রেণিটি নেমে আসে দাসের পর্যায়ে, বঞ্চিত হয় যুক্তিসঙ্গত অধিকার থেকেও। মনুষ্যসমাজের এই দাস-প্রভুর সমীকরণ সমাজে অন্যায়-অবিচারের বিস্তার ঘটায়। মানুষের জান-প্রাণ, অর্থ-সম্পদ, ইজ্জত-আব্রুকে অনিরাপদ করে তোলে। বাহ্যত এই মানুষগুলো মুক্ত-স্বাধীন হলেও এরা বাস করে ভয় ও আতঙ্ক, অবিচার ও বঞ্চনার যিন্দানখানায়। ইসলাম মানুষে-মানুষে প্রভু-ভৃত্যের এই সংস্কৃতি নির্মূল করেছে। তার দ্ব্যর্থহীন ঘোষণা- সকল মানুষ আল্লাহর সৃষ্টি। তিনিই একমাত্র রব, প্রভু ও পরওয়ারদেগার। তাঁরই আদেশ পালনে সবাই বাধ্য। তাঁর বিধানে কেউ জবাবদিহিতার ঊর্ধ্বে নয়। আইন ও অধিকারের এই সাম্যই তো মুক্তি ও স্বাধীনতা।

বন্দিত্বের আরেক বিস্তৃত ও ভয়াবহ রূপ হচ্ছে, নানা অহেতুক রীতি-নীতিতে ভারাক্রান্ত জীবন। মানুষ যখন জীবন ও কর্মে আল্লাহর আনুগত্য ত্যাগ করে তখন ইচ্ছায়-অনিচ্ছায় সে বন্দি হয়ে পড়ে অসংখ্য মনগড়া বিধি-নিষেধের নিগড়ে। যে জীবনে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস ও ভরসার অবলম্বন নেই সেই জীবনে সংশয় ও অস্থিরতার কোনো শেষ নেই। তেমনি জীবনের বিস্তৃত অঙ্গনে- শিক্ষা-দীক্ষা, বিয়ে-শাদি, দাম্পত্য, সামাজিক মান-মর্যাদা, আয়-ব্যয় ইত্যাদি নানা ক্ষেত্রে এমন সব রীতি-নীতি ও নিয়ম-কানুনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়ে যায়, বাস্তবে যেগুলোর কোনোই অর্থ নেই। এ যেন এক স্বেচ্ছাবন্দিত্ব। সমাজের প্রচলিত ধারা ও ব্যবস্থাই এই অপ্রয়োজনীয় ভার বহনে মানুষকে বাধ্য করে।

বন্দিত্বের আরেক রূপ হচ্ছে, মানবরচিত নানা মতবাদের শৃঙ্খলে আবদ্ধ হওয়া? যুগে যুগে কত মতবাদ রচিত হয়েছে আর বিলুপ্ত হয়েছে কে তার হিসাব রাখে? আসমানী ধর্মসমূহের যে বিকৃত রূপ সে-ও তো এক অর্থে মানবরচিত মতবাদ। ধর্মের পাদ্রি-পুরোহিতেরা মূল ধর্ম-ব্যবস্থাকে পরিবর্তন করে তদস্থলে নানা মনগড়া চিন্তা ও বিশ্বাসের বাধ্যবাধকতা, বিভিন্ন আরোপিত রীতি-নীতি পালনের আবশ্যকতা ঘোষণা করেছে, যার ভার মানবজাতিকে বহন করে যেতে হচ্ছে। এইসব আরোপিত রীতি ও বিশ্বাসের কারণে যুগে যুগে কত যে মানুষের প্রাণহানী, সম্পদহানী ও সম্মানহানী ঘটেছে তার খবর কে রাখে? যুগে যুগে বিপ্লবের বার্তা নিয়ে একেক মতবাদের উদ্ভব ঘটেছে আর লক্ষ-কোটি আদমসন্তানের মেধা-শ্রম-আয়ু এর প্রচার-প্রতিষ্ঠায় শেষ হয়ে গিয়েছে। কিছুকাল পর এর অসারতা প্রমাণিত ও প্রকাশিত হওয়ার পর লোকেরা আরেক মতবাদের  পেছনে পঙ্গপালের মত ছুটে গিয়েছে। এই যে বন্দিত্ব ও দাসত্ব এর কি কোনো জবাব আছে?

মানুষ তো চিরজীবী নয়, তার আয়ুও লক্ষ বছরের নয়। প্রত্যেক মানুষকে নিজ নিজ বিশ্বাস ও কর্ম নিয়েই জবাবদিহিতার কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে। তাহলে বিভ্রান্তির এত চোরাগলিতে ঘুরে মরার অবকাশ মানুষের জীবনে কোথায়?

এই সকল প্রকারের বন্দিত্বের শৃঙ্খল থেকে মানুষকে মুক্তি দেয়ার জন্যই ইসলামের আবির্ভাব। মানুষের কর্তব্য, স্বাধীনতা ও পরাধীনতার স্বরূপ সঠিকভাবে উপলব্ধি করে মুক্তির পথের পথিক হওয়া।

আল্লাহ তাআলার মহা অনুগ্রহ যে, তিনি আমাদের ঈমানের সম্পদ দান করেছেন, ইসলামের মাধ্যমে আমাদের দান করেছেন এক যথার্থ বিশ্বাস-ব্যবস্থা ও ইবাদত-ব্যবস্থা, যা সবরকমের ভ্রান্তি, বিচ্যুতি ও কুসংস্কার থেকে মুক্ত। ইসলামের কল্যাণেই আমরা লাভ করেছি এক সাম্য ও সুবিচারভিত্তিক সমাজ-ব্যবস্থা, এক যথার্থ ও পূর্ণাঙ্গ জীবন-ব্যবস্থা।

এই মহা নিআমতের  মূল্যায়ন ও শোকরগোযারি আমাদের কর্তব্য। আর আমাদের ব্যক্তি-জীবন, পারিবারিক-জীবন, সমাজ-জীবন ও রাষ্ট্রীয়-জীবন যে অশান্তি-অস্থিরতা, অনাচার-অরাজকতা, অবক্ষয়-উচ্ছৃঙ্খলায় ভারাক্রান্ত; এর কারণ- ইসলামের জীবন-ব্যবস্থা ত্যাগ করে অনৈসলামিক জীবন-ব্যবস্থা গ্রহণ। ফলে মুসলিম হয়েও আমরা যাপন করে চলেছি এক বন্দী-জীবন।

আমাদের কর্তব্য, আবারো ইসলামের দিকে ফিরে আসা। পূর্ণাঙ্গরূপে ইসলামে দাখিল হওয়া। তাহলেই আমরা আবার মুক্ত হব, স্বাধীন হব।
Title: Re: স্বাধীনতা : ইসলামেই মুক্তি, ইসলামেই স্বাধীনতা
Post by: abdussatter on July 07, 2018, 01:46:12 PM
Nice Post!!
Title: Re: স্বাধীনতা : ইসলামেই মুক্তি, ইসলামেই স্বাধীনতা
Post by: S. M. Enamul Hoque Yousuf on July 09, 2018, 02:01:19 PM
 :)
Title: Re: স্বাধীনতা : ইসলামেই মুক্তি, ইসলামেই স্বাধীনতা
Post by: khyrul on July 09, 2018, 02:25:45 PM
Thanks for sharing the important post.