Show Posts

This section allows you to view all posts made by this member. Note that you can only see posts made in areas you currently have access to.


Messages - abdussatter

Pages: [1] 2 3 ... 25
1
জানুয়ারি থেকে শুরু। এক শহর থেকে আরেক শহর। এক দেশ থেকে আরেক দেশ। এক মহাদেশ থেকে আরেক মহাদেশ। বিশ্বজুড়ে এই কমাসে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ছাড়া যেন আর কোনো আলোচনা নেই। কতজন হারালেন প্রিয়জন। কেউ মৃদু, কেউ ভয়াবহ অভিজ্ঞতা নিলেন সংক্রমিত হয়ে। অন্যরা দুশ্চিন্তা, আতঙ্ক নিয়ে সংক্রমিত হওয়ার আশঙ্কায় দিন যাপন করছেন। অনেকে হারালেন জীবিকা। অনেকের জীবিকা আজ হুমকির মুখে।

হাঁপ ধরা এমন পরিস্থিতিতে কীভাবে টিকে থাকতে হবে, তা নিয়ে নতুন পরিকল্পনা সাজানোর দিকে বিশ্বকে ঠেলে দিয়েছে করোনাভাইরাস। ভয়াবহ এই সংকট পাল্টে দিচ্ছে চেনা বিশ্বটাকে। একটি ভাইরাস এসে যেন বিশ্বকে বুঝিয়ে দিল, কোনো দেশই ‘যথার্থ’ নয়। উন্নয়নশীল ভুবনের বাসিন্দারা উন্নত দেশগুলোর দিকে আফসোসের দৃষ্টিতে তাকিয়ে যে দীর্ঘশ্বাস ফেলতেন, আর উন্নত দেশগুলোর বাসিন্দারা গর্বিত ভঙ্গিতে তা দেখে তৃপ্তির ঢেকুর তুলতেন, এর সবই এখন মিলেমিশে একাকার। করোনায় পাল্টে যাওয়া চেহারা নিয়ে খোলনলচে বদলাতে চাইছে বিশ্ব।
রূপান্তরের এই সময়ে সবচেয়ে বেশি দৃশ্যমান রেস্তোরাঁ, জিম, বার আর পার্ক। বিবিসি ফিউচারে তুলে আনা হয়েছে সেসব বিষয়।

অনেক দেশ এখন লকডাউন শিথিল করেছে। মুক্তির আনন্দ পেয়ে বাসিন্দারা তাঁদের পরিচিত জায়গাগুলোতে ছুটে যাচ্ছেন। তবে সেই চেনা জায়গাই এখন তাঁদের কাছে অচেনা ঠেকছে। জায়গাটি যে পাল্টে গেছে, তা নয়। তবে জায়গাটিতে অবস্থান করার জন্য যা কিছুর মধ্য দিয়ে তাঁদের যেতে হচ্ছে, তার সঙ্গে কয়েক মাস আগেও পরিচিতি ছিলেন না। মাস্ক পরতে হবে। একসঙ্গে প্রবেশ করতে পারবেন অল্পসংখ্যক মানুষ। কারণ, করোনার সংক্রমণ যদি আবার ছড়ায়, তাহলে ভ্যাকসিন না আসা পর্যন্ত নতুনভাবে এটা দীর্ঘমেয়াদি রূপে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা থাকবে। এটা হতে পারে নয় মাস থেকে দুই বছরের জন্য। বিজ্ঞানীরা আরও মনে করেন, ২০২০ সালে করোনাভাইরাস যা করেছে, ভবিষ্যতে নতুন ও একই ধরনের ভয়াবহ রোগ মানবতাকে পঙ্গু করে ফেলতে পারে।
ভবিষ্যৎ নগর গড়ে তোলার পরিকল্পনায় যাঁরা কাজ করেন, তাঁদের জন্য এই মহামারি একই সঙ্গে দুটো জিনিস শিখিয়ে দিল। এক. তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়ার প্রয়োজনীয়তা। দুই. আমরা কীভাবে জীবান যাপন করব, চলাফেরা করব এবং একসঙ্গে বসবাস করব, তা নিয়ে নতুন করে ভাবনা।
করোনা দেখিয়েছে, মানুষ আইসোলেশনে ভালো থাকতে পারে না। বিভিন্ন গবেষণা বলছে, কোয়ারেন্টিনে একা থাকতে থাকতে মানুষের মানসিক স্বাস্থ্যে তা প্রভাব ফেলে। কখনো তা গুরুতর আকারও ধারণ করে। মানুষের জন্য সামাজিক মেলামেশার জায়গাটি নিরাপদ করে গড়ে তোলা অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের চেয়েও অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত।
ইউরোপের দেশগুলো যখন প্রথম লকডাউনে প্রবেশ করল, তখন স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি কী কী পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে, বিষয়টি বুঝতে বিশেষজ্ঞরা ইতালিকে গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করেছেন। ইতালীয় অ্যাসোসিয়েশন অব সিটিজ অ্যান্ড মিউনিসিপলিটিজের একজন নীতিনির্ধারণী বিশেষজ্ঞ সিমোনে দি অ্যান্তোনিও ‘কেফারে’ ওয়েবপোর্টালে বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে লিখেছেন, ‘ইতালির এখন ভয় ও আশঙ্কার সমাজের পরিবর্তে উজ্জীবিত সমাজ পুনরুদ্ধার করা জরুরি।’
বিবিসি ফিউচারকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সিমোনে বলেছেন, ‘এই সংকট থেকে বেরিয়ে আসার পর নুতন করে সবকিছু শুরু করার এক সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। জনস্বাস্থ্যের নতুন ঝুঁকি মোকাবিলার পাশাপাশি মানুষের হারানো অনুভূতি ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে কাজ করতে হবে। এর মানে হচ্ছে, জনসাধারণের জন্য তৈরি স্থান, স্থাপনা নিয়ে নতুন করে ভাবতে হবে। আমাদের সামাজিক আচার-আচরণ পাল্টাতে হবে। তবে সেটাকে সুযোগ হিসেবেও দেখা যেতে পারে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, যেসব স্থানকে লোকজন অবহেলা করতেন, সেসব জায়গাতেও যাওয়া শুরু করতে পারেন।’ এ ক্ষেত্রে তিনি মিউনিখের ঐতিহ্যবাহী বিয়ার গার্ডেনের কথা উল্লেখ করেন, যেখানে খোলা জায়গায় লম্বা টেবিলে লোকজন পানাহার করেন। অন্য শহরগুলোর প্রতিষ্ঠানগুলোও দূরত্ব বজায় রাখতে বসার আদর্শ ব্যবস্থা করতে পারে।

ভেনিসের কাছাকাছি শহর সান দোনা দি পিয়াভের ডেপুটি মেয়র দানিয়েলে তেরজারিওল লকডাউন খুলে দেওয়ার পর বলেন, প্রশাসন চায় জনগণের জন্য উন্মুক্ত স্থানগুলোকে আরও কার্যকর ও সুন্দরভাবে ব্যবহার করতে। দূরত্ব রেখে জনসমাগমের জন্য শহরের কেন্দ্রস্থলের মূল জায়গাগুলোকে পায়ে চলাচলের উপযোগী করা হয়েছে। রেস্তোরাঁ ও বারের মালিকদের জন্য সবচেয়ে ভালো আউটডোর তৈরির জন্য পুরস্কারের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে, রেস্তোরাঁ ও বারে একসঙ্গে আসা-যাওয়া যেন নিরাপদ রেখে প্রবেশের সামনের জায়গাটির নকশা করা হয়।
ভারতের মতো দেশে গণপরিবহনে দূরত্ব বজায় রাখা কঠিন। ছবি: রয়টার্স
ভারতের মতো দেশে গণপরিবহনে দূরত্ব বজায় রাখা কঠিন। ছবি: রয়টার্স
ভারতে লকডাউন শিথিল করে ধীরে ধীরে দোকানপাট খোলা হচ্ছে, সীমিত আকারে যোগাযোগব্যবস্থা চালু হচ্ছে। গোয়ার রেস্তোরাঁমালিক শেফালী গান্ধীর মতে, এই সময়ে প্রবেশপথের বাইরের অংশটুকু মূল গুরুত্ব পাবে। মুম্বাইয়ের মতো শহরে লোকজন দুই মাস ধরে খুপরি অ্যাপার্টমেন্টে বন্দী হয়ে পড়েছিলেন। লকডাউনের এই স্মৃতি মানুষের মনে দীর্ঘদিন থেকে যাবে। মানুষ খোলা জায়গায় সামাজিক জীবনের আনন্দ খুঁজে বেড়াবে। তাঁর মতে, বাস্তব দিক বিবেচনায় বাইরে বসার স্থান পরিকল্পনার ক্ষেত্রে বাগান একটি ভালো জায়গা হতে পারে।
তবে আউটডোর হোক বা ইনডোর, ছোট জায়গাগুলোর ক্ষেত্রে যথাযথ দূরত্ব বজায় রাখা কঠিন হবে। সে ক্ষেত্রে অনেকে প্রতিটি টেবিলের জায়গা প্লাস্টিকের পর্দা দিয়ে ঘিরে দূরত্ব বজায় রাখার পরিকল্পনার কথা বলছেন। তবে অনেকে এর বিরোধিতা করছেন। বিরোধীদের মতে, এতে খাবার ভাগাভাগির আনন্দ থেকে মানুষ যেমন বঞ্চিত হবেন, তেমনি এতে এক ধরনের ‘জেলখানা’ ‘জেলখানা’ ভাবও আসবে।

অনেক গবেষণা বলছে, এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে আস্থা অর্জনের বিষয়টি। সেসব গবেষণায় আস্থার বিষয়টিকে চিহ্নিত করা হয়েছে সামাজিক ও অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের মেরুদণ্ড হিসেবে। স্বাভাবিক জীবেন ফিরে যেতে যেকোনো স্থানে মানুষের মনে এই বিশ্বাস আনতে হবে যে তিনি সেখানে নিরাপদ এবং অন্যরাও নিজেদের নিরাপত্তার বিষয়টি দেখভাল করছে।
ভারতের অলাভজনক প্রতিষ্ঠান অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের অদিতি রাঠোর মতে, উন্মুক্ত বা ব্যক্তিগত যেকোনো স্থানে সমাগমের ক্ষেত্রে মানুষের আত্মবিশ্বাস পুনর্গঠনে আস্থাই এখন মূল চাবিকাঠি।

জিমগুলো তাদের সদস্যদের নিরাপত্তার স্বার্থে এই মহামারির শুরুতেই ব্যবস্থা নেয়। জিমগুলোই প্রথম সরকারের দেওয়া বিধিনিষেধের আগেই পরিচ্ছন্নতাসহ নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেয়। যুক্তরাজ্যভিত্তিক প্রতিষ্ঠান এস্কেপ ফিটনেসের ৮০টিরও বেশি দেশে চেইন জিম রয়েছে। প্রতিষ্ঠানের হেড অব কনটেন্ট হ্যাকনে-উইলিয়ামসের মতে, এই লকডাউনে মানুষের মধ্যে এই উপলব্ধি এসেছে যে নিজেকে ফিট রাখতে জিমে ঘণ্টার পর ঘণ্টা সময় দেওয়া জরুরি নয়। পার্কে দৌড়ানো বা হালকা রুটিন মেনে চলাই সুস্থ থাকার জন্য যথেষ্ট। কোভিড-১৯ পরবর্তী সময়ে মানুষ জিমকে অভিজাত স্থান হিসেবে না দেখে সুস্থ থাকার জায়গা হিসেবে দেখবেন বলে তাঁর আশা।
করোনাভাইরাস মহামারি সর্বসাধারণের চলাচলের বা ব্যবহারের জায়গাকে নতুনভাবে বিন্যাস করতে বাধ্য করেছে। লকডাউন মানুষকে ভাবতে সময় দিয়েছে যে আমরা সামাজিক জীবনকেও এই রকম দেখতে চাই। ভিড়-ভাট্টা, লোকে গিজগিজ বার, থিয়েটার ও জিমকে আমাদের বিদায় জানাতে হতে পারে, যেসব ছিল আমাদের পছন্দের বিষয়, অন্তত কিছু সময়ের জন্য হলেও। তবে আমাদের সামনে অনন্য সুযোগ তৈরি হয়েছে নতুন স্থানে একসঙ্গে থাকার মানে আবারও আবিষ্কারের, করোনাভাইরাসের এই দাগ থেকে নতুন কিছু কল্পনার।


Source: Prothom Alo

2
মৃত্যু অবধারিত। প্রতিনিয়ত মানুষ মরছে রোগ–শোক বা দুর্ঘটনায়। মৃত্যু হচ্ছে রাস্তাঘাটে, হাসপাতালে কিংবা বাড়িতে বা যুদ্ধের ময়দানে। কিন্তু ঠিক কোন কোন কারণে কত মানুষ মারা যাচ্ছে, বিভিন্ন গবেষণার তথ্য বিশ্লেষণ করে জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।

মনে হতে পারে সন্ত্রাস, যুদ্ধ ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ মানুষের মৃত্যুর সবচেয়ে বড় কারণ। কিন্তু গবেষণা থেকে জানা যাচ্ছে, বিশ্বে মোট মৃত্যুর মাত্র দশমিক ৫ শতাংশের পেছনে দায়ী এগুলো। মানুষ মরছে এমন সব কারণে, যা একটু সচেতন হলেই প্রতিরোধ করা যায়। সরকারি পদক্ষেপও কমিয়ে আনতে পারে অনেক মৃত্যু।

গবেষণার তথ্য অনুযায়ী, সবচেয়ে বেশি মানুষের মৃত্যুর পেছনে যে কারণটি এককভাবে সবচেয়ে বেশি দায়ী, সেটি হলো হৃদ্‌রোগ। প্রতিবছর যত মানুষের মৃত্যু হচ্ছে, তার প্রতি তিনজনে একজন মরছে হৃদ্‌রোগে। ক্যানসারে মৃত্যুর চেয়ে যা দ্বিগুণ। ক্যানসার বিশ্বে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ মৃত্যুর কারণ। প্রতি ছয়টি মৃত্যুর একটির কারণ ক্যানসার। অন্য অসংক্রামক রোগ যেমন ডায়াবেটিস, শ্বাসকষ্টজনিত রোগ ও স্মৃতিভ্রংশতা মানুষের মৃত্যুর কারণের তালিকায় ওপরের দিকে রয়েছে।

অবাক করার বিষয় হলো মানুষ এখনো প্রতিরোধযোগ্য কারণেই বেশি মরছে। ২০১৭ সালে বিশ্বে প্রায় ১৬ লাখ লোক মারা গেছে ডায়রিয়ায়। এই পরিসংখ্যান ডায়রিয়াকে মানুষের মৃত্যুর কারণের তালিকায় শীর্ষ দশে তুলে এনেছে। কোনো কোনো দেশে এটি এখনো অন্যতম প্রাণঘাতী রোগ।

অন্যদিকে, নিওনেটাল ডিজঅর্ডারে নবজাতকের মৃত্যুও আছে তালিকায়। ২০১৭ সালে বিশ্বে মারা গেছে ১৮ লাখ নবজাতক। জন্মের ২৮ দিনের মধ্যেই মৃত্যুকে নবজাতকের মৃত্যু বলা হচ্ছে। ধনী দেশের চেয়ে দরিদ্র দেশে নবজাতক মৃত্যুর হার বেশি। জাপানে প্রতি এক হাজারে একটি নবজাতক মারা যায়। দরিদ্র দেশগুলোতে এই সংখ্যা প্রতি ২০টিতে একটি।

সড়ক দুর্ঘটনা ধনী-গরিব উভয় দেশেই মানুষের মৃত্যুর একটি বড় কারণ। ২০১৭ সালে বিশ্বে ১২ লাখ লোক সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছে। তবে এখানেও ধনী দেশ মৃত্যুহার কমের দিক দিয়ে এগিয়ে।

বিশ্বে খুনের শিকার হয়ে যত লোক মারা যায়, তার দ্বিগুণ মানুষ মরে আত্মহত্যা করে। যুক্তরাজ্যে আত্মহত্যার সংখ্যা পৃথিবীর গড়ের চেয়ে ১৬ গুণ বেশি। দেশটিতে ২০ থেকে ৪০ বছর বয়সী পুরুষদের মৃত্যুর অন্যতম কারণ এটি।

শিশুরা সংক্রামক রোগে বেশি আক্রান্ত হয় ও মারা যায়। উনিশ শতকে প্রতি তিনটি শিশুর একটি পাঁচ বছর বয়সের আগেই সংক্রামক রোগে মারা গেছে। তবে বর্তমানে টিকা, পরিষ্কার–পরিচ্ছন্নতা, পুষ্টি, স্বাস্থ্যসেবা ও বিশুদ্ধ পানি পানের কারণে শিশুমৃত্যু হার অনেক কমেছে।

এইচআইভি বা এইডসের মতো নতুন রোগের বিস্তার বিশ্বে মৃত্যুহার কমার গতি টেনে ধরতে পারে। সাহারা আফ্রিকায় এইডসে মৃত্যুহার অনেক বেশি। গত কয়েক দশকে মৃত্যুহার ওই এলাকায় কমতে শুরু করলেও এইডসের কারণে মৃত্যুহার এখন বেড়েছে।

Source: Prothom-alo

3
ডিএনএর মধ্যে তথ্য সংরক্ষণ করে পরে তা পুনরুদ্ধার করা যাবে। পরীক্ষাগারে ডিএনএ ডেটা স্টোরেজ তৈরিতে সফলতা পাওয়ার পর তা বাজারে আনার কথা ভাবছেন গবেষকেরা। যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকেদের সঙ্গে যৌথভাবে ডিএনএ ডেটা স্টোরেজ তৈরিতে কাজ করছে বিশ্বের বৃহত্তম সফটওয়্যার নির্মাতা প্রতিষ্ঠান মাইক্রোসফট। একে বলা হচ্ছে প্রথম পরিপূর্ণ স্বয়ংক্রিয় বা অটোমেটেড ডিএনএ ডেটা স্টোরেজ।

এই গবেষণাবিষয়ক নিবন্ধ নেচার সায়েন্টিফিক রিপোর্টস নামের সাময়িকীতে প্রকাশিত হয়েছে। এতে বলা হয়, গবেষকেরা ‘হ্যালো’ বার্তাটিকে ডিএনএতে রেখে তা ডিজিটাল তথ্য হিসেবে ২১ ঘণ্টার মধ্যেই আবার ফেরত আনতে পেরেছেন।

ইন্দো এশিয়ান নিউজ সার্ভিসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, গবেষকেরা এমন এক ডিভাইস তৈরি করেছেন, যা ডিজিটাল ডেটা বা তথ্যকে ডিএনএ রাখতে পারে, আবার তা ডিএনএ থেকে উদ্ধার করতেও পারে। অর্থাৎ, এখন ছবি, ভিডিও বা বার্তা ডিজিটাল তথ্য হিসেবে ডিএনএতে রাখা যাবে। মাইক্রোসফটের এক ব্লগ পোস্টেও বিটস আকারে তথ্য পুনরুদ্ধারের সফলতার কথা বলা হয়েছে। এখন এ প্রযুক্তি বাণিজ্যিক ডেটা সেন্টারে প্রয়োগের চিন্তা করছে মাইক্রোসফট।

মাইক্রোসফটের গবেষক কারিন স্ট্রস বলেছেন, ‘আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে এমন একটি সিস্টেম তৈরি করা, যাতে ব্যবহারকারীরা সাধারণ ক্লাউড স্টোরেজ সেবার মতোই তথ্য রাখতে পারেন। এতে ডেটা সেন্টারে বিটস পাঠানো হবে, যা সংরক্ষিত থাকবে ডিএনএতে। গ্রাহক চাইলে আবার সে তথ্য উদ্ধার করা যাবে। এটা অটোমেশনের দিক থেকে প্রয়োগযোগ্য কি না, তা প্রমাণ করতে হয়েছে। এ পদ্ধতিতে এখন পর্যন্ত ডিএনএতে এক গিগাবাইট তথ্য সংরক্ষণ করা যায়, যার মধ্যে বিড়ালের ছবি, সাহিত্যকর্ম, পপভিডিও ও বিভিন্ন আর্কাইভাল রেকর্ডিং রয়েছে। পরে ডিএনএ থেকে কোনো সমস্যা ছাড়াই তা উদ্ধার করা গেছে।’

এ পদ্ধতিতে বিশেষ সফটওয়্যার ব্যবহার করা হয়েছে, যা ‘ওয়ান’ ও ‘জিরো’ ডিজিটাল ডেটাকে ডিএনএর বিল্ডিং ব্লক হিসেবে পরিচিত ‘এএস’, ‘টিএস’, ‘সিএস’ ও ‘জিএস’–এ রূপান্তর করতে পারে। এরপর সাশ্রয়ী যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে প্রয়োজনীয় তরল প্রবাহ ও রাসায়নিক পদ্ধতিতে সংরক্ষণ করা হয়। যখন ওই তথ্য উদ্ধারের প্রয়োজন হয়, তখন আরেক ধরনের রাসায়নিক মিশিয়ে ডিএনএকে প্রস্তুত করে। সেই ডিএনএর তথ্য রূপান্তর করে কম্পিউটারে ফুটিয়ে তোলে।

এ পদ্ধতিতে অবশ্য মানুষ বা জীবিত কোনো প্রাণীর ডিএনএ ব্যবহার করা হয়নি। গবেষকেরা পরীক্ষাগারে তৈরি সিনথেটিক ডিএনএ ব্যবহার করেছেন। এ পদ্ধতিতে তথ্য এনক্রিপশন করা যাবে। এতে বিশেষ তথ্য অনুসন্ধান করার সুবিধাও থাকবে।

ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক লুইস সিজ বলেন, ‘নতুন কম্পিউটার পদ্ধতির জন্ম হচ্ছে, যাতে অণু ব্যবহার করে তথ্য সংরক্ষণ করা হবে এবং ইলেকট্রনিক পদ্ধতিতে তা প্রক্রিয়াকরণ ও নিয়ন্ত্রণ করা যাবে। এ ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে দারুণ সম্ভাবনা তৈরি হচ্ছে।’
Source: Prothom-alo

4
কল্পবিজ্ঞাননির্ভর ছবি ‘অ্যাভাটার’-এ পরিচালক জেমস ক্যামেরন দেখিয়েছিলেন, একে-অপরের সঙ্গে যোগাযোগ করছে গাছেরা! রূপালি পর্দার এমন ঘটনা কিন্তু বাস্তবেও ঘটে। গবেষকেরা এখন বলছেন, গাছেরা নিজেদের মধ্যে বার্তা আদান-প্রদান করতে পারে। শুধু তাই নয়, এই যোগাযোগে নাকি নাক গলায় হ্যাকাররাও!

অবশ্য এই হ্যাকার বলতে প্রচলিত অর্থে তথ্যপ্রযুক্তিতে দক্ষ কোনো ব্যক্তিকে বোঝানো হচ্ছে না। ব্রিটিশ সাময়িকী দ্য ইকোনমিস্ট বলছে, একটি বিশেষ প্রজাতির পোকা এই হ্যাকারের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে। সম্প্রতি চীনের একদল গবেষক দেখেছেন, সংকটের সময়ে গাছেরা তাদের চারপাশে যোগাযোগ করে। বিশেষ করে, কোনো গাছ রোগাক্রান্ত হলে বা কীট-পতঙ্গের আক্রমণের শিকার হয়ে হুমকির সম্মুখীন হলে সেটি চারপাশের অন্য গাছদের সতর্ক করতে সংকেত বার্তা পাঠায়।

গবেষণাটি করেছেন চীনের জিলিয়াং বিশ্ববিদ্যালয়ের হাং জুন-চাং, জিয়াও-পিং ইয়ু ও তাদের সহকর্মীরা। তাঁরা দেখতে পেয়েছেন, জীবাণু অথবা কীট-পতঙ্গ দ্বারা আক্রান্ত হওয়ার পর গাছেরা দুই ভাবে সতর্ক সংকেত পাঠায়। হয় বাতাসের মাধ্যমে অথবা শেকড়ের সাহায্যে মাটির মাধ্যমে বার্তা পাঠানোর চেষ্টা করা হয়।

কোনো গাছে যখন জীবাণু আক্রমণ করে, তখন গাছ ব্যাপক হারে স্যালিসিলিক অ্যাসিড উৎপাদন করে। এই অ্যাসিড জীবাণুকে প্রতিহত করে, আর চারপাশের বাতাসে মিশে অন্য গাছদের সতর্ক করে দেয়। অন্যদিকে কোনো পোকামাকড় আক্রমণ করলে গাছ উৎপাদন করে জ্যাসমোনিক অ্যাসিড। এই অ্যাসিড বাতাসে ছড়িয়ে পড়ে ওই পতঙ্গ খায় এমন শিকারি প্রাণীকে আকৃষ্ট করে। এর পাশাপাশি সতর্ক করে দেয় অন্য গাছকে।

ঠিক এই জায়গাতেই সমস্যা সৃষ্টি করছে হোয়াইটফ্লাইস নামের একটি পোকা। এটি গাছকে বিভ্রান্ত করতে সক্ষম। শুধু তাই নয়, গাছকে বোকা বানিয়ে ভুল সতর্ক বার্তা পাঠাতেও বাধ্য করে এগুলো। এ জন্যই গবেষকেরা এই নির্দিষ্ট পোকাগুলোকে ‘হ্যাকার’ বলে অভিহিত করছেন।

‘প্রসিডিং অব দ্য ন্যাশনাল একাডেমি অব সায়েন্স’ নামের একটি বিজ্ঞান বিষয়ক সাময়িকীতে সম্প্রতি বিজ্ঞানীরা তাদের প্রাপ্ত ফলাফল প্রকাশ করেছেন। হাং জুন-চাং ও জিয়াও-পিং ইয়ু তাদের গবেষণায় দেখেন, হোয়াইটফ্লাইসের লালাতে এক ধরনের পদার্থ রয়েছে যা গাছেদের ধোঁকা দিতে সক্ষম। ওই পোকাগুলো এমন ভাবে আক্রমণ করে, যাতে গাছ সেগুলোকে পোকা নয়, বরং জীবাণু ভাবে। ফলে গাছ জ্যাসমোনিক অ্যাসিড তৈরির পরিবর্তে স্যালিসিলিক অ্যাসিড উৎপাদন বাড়িয়ে দেয়। এর ফলে চারপাশে ভুল সতর্ক বার্তা ছড়িয়ে পড়ে। বিজ্ঞানীরা দেখেছেন, এই ভুল সতর্ক বার্তায় আশপাশের গাছগুলো আরও বেশি ঝুঁকির মুখে পড়ে। কারণ পোকার আক্রমণ প্রতিহত করার মতো প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা তৈরি হয় না গাছগুলোর। ফলে হোয়াইটফ্লাইসের বিনা বাধায় গাছের ক্ষতি করতে পারে।

বিজ্ঞানীরা এ বিষয়টি নিশ্চিত হতে টমেটো গাছের ওপর গবেষণা চালান। তারা কিছু টমেটো চারাকে কাচের ছোট ছোট কক্ষে উৎপাদন করেন। কয়েকটি টমেটো গাছে হোয়াইটফ্লাইস ছেড়ে দেওয়া হয়। আর বাকিগুলো থাকে সুস্থ অবস্থায়। এভাবে কয়েক দিন চলার পরে আক্রান্ত কক্ষ ও সুস্থ কক্ষ পাশাপাশি রেখে, একটি থেকে অপরটিতে বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা করা হয়। এভাবে ২৪ ঘণ্টা রাখার পর দেখা যায়, ওই সুস্থ টমেটো গাছেও হোয়াইটফ্লাইস আক্রমণ করেছে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, দুই ধরনের গাছেই হোয়াইটফ্লাইস সমান সংখ্যক ডিম দিয়েছে। তবে দ্বিতীয় ধাপে আক্রান্ত গাছে পোকাগুলো দ্রুত বেড়ে উঠছে।

বিজ্ঞানীরা এ নিয়ে আরও একটি পরীক্ষা করেন। এবার তাঁরা মনোযোগ দেন, দুই ধরনের কক্ষের গাছে কী ধরনের অ্যাসিড উৎপাদিত হচ্ছে তার ওপর। তারা এ জন্য দুই কক্ষের বাতাসকে নমুনা হিসেবে বেছে নেন। এ সময় দেখা গেছে-সুস্থ বাতাসে থাকা টমেটো গাছে যখন হোয়াইটফ্লাইস প্রথমবার আক্রমণ করছে, তখন জ্যাসমোনিক অ্যাসিড বেশি উৎপাদিত হচ্ছে। কিন্তু যখন ওই কক্ষের বাতাস অন্য সুস্থ কক্ষে যাওয়ার ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়, তখন সেখানে হোয়াইটফ্লাইস আক্রমণ করলে অপেক্ষাকৃত কম পরিমাণে জ্যাসমোনিক অ্যাসিড উৎপাদিত হয়।

অপরদিকে বিপরীত ঘটনা ঘটছে স্যালিসিলিক অ্যাসিডের ক্ষেত্রে। সতেজ গাছে প্রথমবার হোয়াইটফ্লাইসের আক্রমণে কম পরিমাণে স্যালিসিলিক অ্যাসিড উৎপাদিত হলেও, দ্বিতীয় কক্ষে বাতাস সরবরাহের পরে আক্রান্ত গাছেরা অধিক পরিমাণে স্যালিসিলিক অ্যাসিড তৈরি করছে। এই ঘটনায় বিজ্ঞানীর ভুল বার্তা প্রদানের বিষয়টি নির্ধারণ করেছেন।

প্রাপ্ত ফলাফলের গুরুত্ব বোঝাতে গবেষক হাং জুন-চাং বলেন, গাছের এমন ধরনের দৈহিক কর্মকাণ্ডের খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে, যা পোকার কারণে ভুল সংকেত পাঠাচ্ছে। সে ক্ষেত্রে কৃষি খাতে আরও কার্যকর প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তোলা যাবে। গোপনে আক্রমণ চালানো কীট-পতঙ্গ থেকে নিজেদের ফসলকে রক্ষা করতে পারবেন কৃষকেরা। এতে প্রতি বছর বিশ্বব্যাপী লাখ লাখ ডলারের অপচয় রোধ করা যাবে।
Source: Prothom-alo

6
Extra-curricular Activities / Re: How to make a Video resume?
« on: April 02, 2019, 11:31:05 AM »
 :)

7
‘ভাই কী লাগবে? এই দিকে আসেন!’
‘থিসিস আছে?’
‘প্লাস্টিক কার্ড তো?’
‘হুম’
‘এই দিকে আসেন।’
বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী পরিচয়ে নীলক্ষেতের সিটি করপোরেশন মার্কেটের তৃতীয় গলিতে ছাপা ও বাঁধাইয়ের একটি দোকানে গবেষণাপত্রর খোঁজ করছিলেন এই প্রতিবেদক। দোকানির ভাষায় সেটাই প্লাস্টিক কার্ড।

কিন্তু সাংকেতিক ভাষা কেন? নীলক্ষেতের এ দোকানগুলোতে চুরি করা গবেষণাপত্র তথা থিসিস বিক্রি হয়। স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ের অনেক শিক্ষার্থী পানির দরে তা কিনে নিজের গবেষণা হিসেবে জমা দেন। এ অভিযোগের সত্যতা অনুসন্ধানের শেষে প্রমাণ সংগ্রহের জন্যই গত ১৬ নভেম্বর ছদ্মপরিচয়ে সেখানে প্রতিবেদকের যাওয়া।

ক্রিকেট অথবা সামাজিক বিজ্ঞানের যেকোনো বিষয়ে থিসিস চাইলে দোকানি কম্পিউটার ঘেঁটে একটি পিডিএফ কপি দেখান। সেটায় মূল লেখকের নাম ছিল না। দোকানি সফট কপির দাম চাইলেন ১৫০ টাকা। আর সম্পাদনা, প্রিন্ট ও বাঁধাই বাবদ ৮০০ টাকা। দাম রফা হলে তিনি থিসিসটিকে পিডিএফ থেকে ওয়ার্ড ফাইল করলেন। তারপর গবেষণার সূচনা ও সাক্ষাৎকারদাতাদের নাম রদবদল আর বিভিন্ন অনুচ্ছেদ ওপর-নিচ করা বা বাদ দেওয়ার কাজ চলল। ঘণ্টা তিনেকের মধ্যে তৈরি হয়ে গেল স্নাতকোত্তর শ্রেণির একটি গবেষণাপত্র।

গত ১২ ও ১৪ নভেম্বর এই বাজার ঘুরে এমন অন্তত ২১টি দোকানের খোঁজ পাওয়া যায়। সাইনবোর্ডগুলোতে লেখা ‘এখানে থিসিস, মনোগ্রাফ, টার্মপেপার প্রিন্ট ও বাঁধাই করা হয়’।

পরিচিত একজন দোকানি বলেন, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মৌলিক গবেষণাপত্র চুরি করে নতুন থিসিসের রূপ দেওয়া হয়। শিক্ষার্থীরা দোকানে গবেষণাপত্র ছাপাতে ও বাঁধাই করতে এলে সেটার একটি সফট কপি তাঁরা রেখে দেন। ইন্টারনেট থেকেও বিভিন্ন গবেষণার কপি সংগ্রহ করেন।

কয়েকজন দোকানি বলেন, বিশেষ চাহিদা জানিয়ে ফরমাশ করলে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের সাহায্য নিয়ে তাঁরা সেটাও বানিয়ে দেন। দাম পড়ে চার হাজার টাকা। সেপ্টেম্বর থেকে জানুয়ারি—এই ছয় মাস বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে গবেষণার কোর্স পড়ানো হয়। এটাই ব্যবসার মৌসুম।

দুদিনে চার ঘণ্টা নীলক্ষেতে বিভিন্ন দোকানে ঘুরেছেন এই প্রতিবেদক। তখন তিনটি দোকান থেকে সাতজনকে থিসিস কিনতে দেখেছেন। তাঁদের চারজনের পরিচয় জানা যায়। দুজন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, একজন স্ট্যামফোর্ড আর একজন প্রাইম এশিয়া ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী।

শেষোক্ত শিক্ষার্থী পর্যটনবিষয়ক থিসিস খুঁজছিলেন। দোকানি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংশ্লিষ্ট বিভাগের একটি থিসিস দেখান। পছন্দ না হওয়ায় শিক্ষার্থী দুই নম্বর গলির আরেকটি দোকানে যান। সেখানে ২০১২ সালে করা একটি থিসিস তাঁর পছন্দ হয়। দাম ঠিক হয় ৮০০ টাকা। তাঁর চাহিদামতো বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম ও তারিখসহ রদবদল করে দেন দোকানি।

দুই দিন পর মুঠোফোনে এ শিক্ষার্থীর সঙ্গে সাংবাদিক পরিচয়ে কথা বলতে চাইলে নাম না প্রকাশের অনুরোধ করে তিনি বলেন, ‘ওই থিসিস জমা দেইনি। আমার গবেষণার বিষয়ের সঙ্গে মিলে নাই।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের মানদণ্ড হলো গবেষণা। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ‘কিন্তু এখন শিক্ষকদের বিরুদ্ধে পিএইচডি চুরির অভিযোগ ওঠে, শিক্ষার্থীদের থিসিস বিক্রি হয় রাস্তার ধারের দোকানে। রাস্তাতেই যদি গবেষণা হয় তাহলে বিশ্ববিদ্যালয়ের কি দরকার?’

মৌলিক জ্ঞানচর্চা শেখানোর জন্য স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে গবেষণার কোর্স থাকে। মৌলিক বিষয় নির্বাচন থেকে মাঠে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ করা এবং গবেষণা প্রতিবেদন লেখার কাজটি শিক্ষার্থী করেন একজন শিক্ষকের তত্ত্বাবধানে। তিনি ছয় মাস থেকে এক বছর সময় পান। নীলক্ষেতে গবেষণাপত্র কিনলে এর কিছুই করতে হয় না।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষকেরা রচনাচুরি (প্লেজ্যারিজম) ধরার জন্য বিশেষ সফটওয়্যার ব্যবহার করেন। কিন্তু দোকানিরা বলেছেন, তাঁরাও একই ধাঁচের সফটওয়্যার ব্যবহার করে রচনাচুরি ধরা পড়ার সম্ভাব্য ক্ষেত্রগুলো শনাক্ত করেন। তারপর সেগুলো এদিক-সেদিক করে রচনাচুরির আলামত কমানো হয়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে বিভিন্ন সময় শিক্ষার্থীদের গবেষণা তত্ত্বাবধান করেছেন অধ্যাপক ফাহমিদুল হক। তিনি বলেন, শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গবেষণা জালিয়াতি শিখে পাশ করলে কর্মক্ষেত্রেও তাঁরা জালিয়াতির আশ্রয় নেবেন। এই দুই শিক্ষকেরই মত, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এখন খুব কম গবেষণা হয়। চুরি করা গবেষণাপত্রের কেনাবেচা চলতে থাকলে সেটুকুও হবে না।

২০১৭ সালের নভেম্বরে এই অনুসন্ধানের গোড়ায় নীলক্ষেতে একই বাজারের দুই নম্বর গলিতে গিয়ে প্রতিবেদক এক দোকানিকে স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থীর জন্য থিসিস সম্পাদনা করতে দেখেন। প্রতিবেদক জরুরি ভিত্তিতে ক্রিকেটবিষয়ক একটি থিসিসের সফট কপি কিনতে চান। দোকানি ‘প্রেডিক্টিং এ টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট ম্যাচ রেজাল্ট হোয়াইল দ্যা ম্যাচ ইজ ইন প্রোগ্রেস’ নামের একটি গবেষণাপত্র দশ মিনিটের মধ্যে কিছু রদবদল করে পেনড্রাইভে দিয়ে দেন।

গবেষণাপত্রের প্রচ্ছদে লেখক হিসেবে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (সিএসই) বিভাগের চার শিক্ষার্থীর নাম ছিল। তাঁরা ২০১৫ সালের ২৩ আগস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ে থিসিসটি জমা দিয়েছিলেন। আর দোকানটির কম্পিউটারে এর ফাইল ঢুকেছিল (ক্রিয়েটেড) ২০১৭ সালের ১৫ নভেম্বর।

গত ১৬ নভেম্বর গিয়ে দেখা যায়, এ যাবৎ থিসিসটি ছয়বার সম্পাদিত ও বিক্রি হয়েছে। গবেষণাটির সহ-তত্ত্বাবধায়ক প্রভাষক মঈন মোস্তাকিম বলছেন, গবেষণাটি করতে এক বছর লেগেছিল। গবেষণাপত্রটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে দেওয়া হয়। সেখান থেকে অথবা প্রিন্ট করার সময় সেটি চুরি হয়ে থাকতে পারে।

এই শিক্ষক প্রথম আলোকে বলেন, ‘গবেষণায় বেশ কিছু জটিল গাণিতিক পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়েছিল। সাধারণ একজন দোকানি কীভাবে গবেষণা সম্পাদনা করেছেন, সেটিই তো মাথায় ঢুকছে না।’

শিক্ষার্থীরা কেন নীলক্ষেতমুখী?
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৬-১৭ সালে স্নাতকোত্তর পাস করা এক শিক্ষার্থী প্রথম আলোকে বলেন, ‘পরিচিত বড়ভাইয়ের মাধ্যমে নীলক্ষেতে গবেষণা তৈরির কথা শুনি। পরে সেখান থেকে কিনে বিভাগে জমা দিয়েছিলাম।’ রচনাচুরি ধরা পড়ায় প্রথমে তাঁর গবেষণাপত্রটি গৃহীত হয়নি। শিক্ষকেরা সংশোধন করে আনতে বললে তিনি দোকান থেকে রচনাচুরির হার কমিয়ে এনে জমা দেন। আর সমস্যা হয়নি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো শিক্ষার্থীর গবেষণা জালিয়াতি ধরা পড়লে বিভাগীয় পর্যায়ে ব্যবস্থা নেওয়াটাই রেওয়াজ। নৃবিজ্ঞান বিভাগ ২০১৬-১৭ সালে চারজন শিক্ষার্থীকে জালিয়াতির জন্য জরিমানা করেছিল। তৎকালীন বিভাগীয় প্রধান হাসান আল শাফী প্রথম আলোকে বলেন, প্রতিবছরই পাঁচ-ছয়জন শিক্ষার্থীর মনোগ্রাফ ও থিসিস জালিয়াতির অভিযোগ পাওয়া যায়। তবে তাঁদের সফটওয়্যার বাংলা লেখায় রচনাচুরি ধরতে পারে না।

Source: Prothom-alo

8
শিক্ষক মানুষ গড়ার কারিগর। প্রযুক্তির যতই উন্নয়ন হোক, ভালো শিক্ষকের গুরুত্ব সব সময় রয়েছে। বিশেষ করে দরিদ্র দেশগুলোয় কার্যকরী শিক্ষাব্যবস্থার ক্ষেত্রে শিক্ষকের গুরুত্ব অনেক বেশি। কিন্তু একাধারে শুধু শিক্ষার্থীদের হাতে স্মার্টফোন-ট্যাব-ল্যাপটপ ধরিয়ে দিলেই কি শিক্ষাব্যবস্থা উন্নত হয়ে যাবে? বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শিক্ষার্থীদের হাতে ডিজিটাল যন্ত্র তুলে দেওয়ার আগে শিক্ষকদের বিষয়েও নজর দেওয়া দরকার।

ইকোনমিস্টের সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দরিদ্র দেশগুলোয় অদক্ষ শিক্ষকদের দক্ষ করে তুলতে পারে প্রযুক্তি। এর বাইরে ক্লাসে শিক্ষকদের অনুপস্থিতি ঠেকাতেও প্রযুক্তি সাহায্য করতে পারে। শিক্ষা খাতে প্রযুক্তির সমন্বয় করতে পারলে লাভের পাল্লাই বেশি ভারী হবে।

ইকোনমিস্টের প্রতিবেদনে বলা হয়, ১৯১৩ সালে টমাস এডিসন বলেছিলেন, শিগগিরই স্কুল থেকে বই হারিয়ে যাবে। এর জায়গা নেবে নির্বাক ছবি। যখনই রেডিও, টেলিভিশন, কম্পিউটারের মতো তথ্যপ্রযুক্তির নতুন ঢেউ উঠেছে, তখনই এ ধরনের পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। কিন্তু প্রতিবারই পুরোনো সেই বই, শ্রেণিকক্ষ আর শিক্ষকেরা আশ্চর্যভাবে টিকে গেছেন। শিক্ষকের মতোই ডিজিটাল শিক্ষাব্যবস্থা নানা রকমভাবে গৃহীত হয়েছে। প্রচলিত শিক্ষার সঙ্গেই যদি ডিজিটাল শিক্ষাব্যবস্থাকে যথাযথভাবে প্রয়োগ করা যায়, তবে দরিদ্র দেশগুলোর স্কুলগুলোয় তা আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে। কারণ, এসব জায়গায় অনেক শিক্ষকের বিষয় সম্পর্কে যথাযথ জ্ঞান থাকে না বা অনেকই ঠিকমতো ক্লাসে হাজির হন না।

জাতিসংঘের সহস্রাব্দের উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে ছিল ২০১৫ সালের মধ্যে বিশ্বের সব শিশু প্রাথমিক শিক্ষা পাবে। এ লক্ষ্যের বিশাল অংশ পূরণ করা গেছে। এখন প্রতি দশটির মধ্যে নয়টি শিশু স্কুলে ভর্তি হয়। কিন্তু স্কুলে ভর্তি হওয়া আর সেখান থেকে ঠিকমতো শিক্ষা পাওয়া কি এক কথা? বিশ্বব্যাংকের সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে, আফ্রিকার দেশগুলোয় নয় বছর বয়সী শিশুদের মধ্যে অর্ধেকের কাছাকাছি শিশু একটি সহজ শব্দ পড়তে পারে না। এক-তৃতীয়াংশ শিশু একটি সহজ বাক্য পড়তে পারে না। এর কারণ কী? এর কারণ হচ্ছে যথাযথ শিক্ষার অভাব। ওই গবেষণায় দেখা গেছে, ৭ শতাংশের কাছাকাছি শিক্ষকের কার্যকরভাবে পড়া ও লেখার নির্দেশনা দেওয়ার সামান্য জ্ঞান আছে।

প্রশ্ন হচ্ছে, শিক্ষকের বেতন-ভাতা বাড়ালে বা বেশি অর্থ দিলেই কি সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে? না। অনেক দরিদ্র দেশে শিক্ষকের বেতন স্থানীয় অনেকের আয়ের তুলনায় বেশি। তাঁদের বেতন কম-বেশির সঙ্গে যথাযথ পড়ালেখা শেখানোর সম্পর্ক নেই। ২০০৫ সালে ইন্দোনেশিয়ায় শিক্ষকদের বেতন বাড়ানোর পরেও কোনো প্রভাব পড়তে দেখা যায়নি। এর বাইরে শিক্ষকদের অনুপস্থিতির একটি বিষয়ও রয়েছে। বেতন বেশি পাওয়া শিক্ষকেরা যদি ক্লাস না নেন, তবে কি সরকার তাঁদের বাদ দেবে? এটা বলা সহজ হলেও করা কঠিন। শিক্ষক ক্লাসে উপস্থিত হচ্ছেন কি না, তা অনেক সময় সরকারের পক্ষে নজরদারি করা সম্ভব হয় না। এ ছাড়া শিক্ষকদের জোট বা খুঁটির জোর থাকে। তাই ক্লাস না নিয়েও অনেক শিক্ষকের চাকরি নিরাপদ।

এখানেই শিক্ষা খাতের ডিজিটাল প্রযুক্তির ব্যবহারের আসল কারিশমা। তাই শিক্ষাক্ষেত্রে প্রযুক্তির ব্যবহারে উন্নত দেশগুলোর তুলনায় দরিদ্র দেশগুলোর উন্নতি বেশি। কয়েকটি গবেষণায় দেখা গেছে, ছোট আকারের ক্লাসরুম, পুষ্টি সরবরাহ, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর জন্য সুবিধার ক্ষেত্রে প্রযুক্তি বড় ভূমিকা রাখতে পারে। শিক্ষাপ্রযুক্তির ক্ষেত্রে শিক্ষকদের ওপর সম্পদের যথাযথ বিনিয়োগ করলে সুফল বেশি। অবশ্য এর মানে এই নয় যে স্কুলে কম্পিউটার বা প্রযুক্তিপণ্য দিয়ে ভর্তি করে ফেললে সুফল আসবে। বরং এতে হিতে বিপরীত হতে পারে। স্কুলে কম্পিউটার দিলেই শিক্ষার্থীরা তা চালানো শিখে যাবে—এ কথা ভাবলে শুধু টাকার শ্রাদ্ধই হবে। এর পরিবর্তে স্কুলগুলোকে শিক্ষার্থীবান্ধব যথাযথ সফটওয়্যার সরবরাহ করলে বেশি উপকার পাওয়া যাবে। কোনো শিক্ষক বা সহকারীর সামান্য সাহায্য নিয়ে যদি শিক্ষার্থীরা ওই সফটওয়্যার চালানো শেখে এবং কোনো কাজ যথাযথভাবে করতে পারে, তবে যথার্থ শেখা হবে। এতে শিক্ষার্থীর সক্ষমতা বাড়ে। এ ছাড়া শিক্ষক কোনটি শেখাবেন এবং ক্লাসরুমে কী ঘটবে, তা কর্তৃপক্ষ পরীক্ষা করতে পারবে। এ ছাড়া ক্লাসে শিক্ষকের উপস্থিতিও পরীক্ষা করা যাবে এতে।

অনেকে প্রশ্ন তুলতে পারেন, দুর্গম ও দরিদ্র এলাকার স্কুলগুলোয় শিক্ষাপ্রযুক্তির যথাযথ অবকাঠামো কোথায় পাওয়া যাবে? কিন্তু বিবেচনা করতে হবে আফ্রিকার দরিদ্র দেশগুলোর মতোই অনেক দেশে দ্রুত বিদ্যুৎ–সুবিধা বাড়ছে। বিদ্যুৎ–সুবিধার পাশাপাশি অনেক এলাকায় সৌরবিদ্যুৎও পৌঁছে গেছে। তাই সব স্কুলে ইন্টারনেট থাকতে হবে—এমন কথা নেই। যেখানে ইন্টারনেট আছে, সেখানে ডিভাইস একবার নিয়ে গিয়ে কনটেন্ট ডাউনলোড বা আপলোড করে আনলেই হলো। এ ক্ষেত্রে খরচ কিন্তু খুব বেশি নয়।

কেনিয়ায় এমনই একটি স্কিম বা কর্মসূচি চালু আছে। এ স্কিমের নাম ‘তুসাম’। কিসওয়াহিলিতে যার অর্থ ‘চলো পড়ি’। সফল ও স্কিমে প্রতিবছরে শিশুপ্রতি চার মার্কিন ডলার খরচ হয়। সেখানকার সরকারি স্কুলগুলোয় এ স্কিম চালু হয়েছে। এ কর্মসূচির সফলতা দেখে বলা যায়, শিক্ষাক্ষেত্রে সরকারের সদিচ্ছা ও প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন আসল কথা।

একটি বিষয় মনে রাখতে হবে, প্রযুক্তি সব রোগের ওষুধ নয়। এখনো দক্ষ শিক্ষকের প্রয়োজন রয়েছে। শিক্ষকের মাধ্যমে প্রচলিত শিক্ষাপদ্ধতি দ্রুত বিলুপ্ত হওয়ার আশঙ্কা নেই। তাই কর্তৃপক্ষকে শিক্ষকদের গুরুত্ব দিতে হবে। তাঁদের জন্য শিক্ষাসহায়ক প্রযুক্তি যুক্ত করতে হবে। এতেই কেবল শিক্ষার বারোটা বাজা ঠেকানো যাবে।

Prothom-Alo

10
দৈনন্দিন কাজের মাঝেই প্রয়োজনীয় হাঁটাহাঁটির অনেকটা অংশ সেরে নেওয়া যায়। লিফটের বদলে সিঁড়ির ব্যবহার, গাড়ির পরিবর্তে অল্প দূরত্ব হেঁটে যাওয়া, হেঁটে বাজারে যাওয়া ও হেঁটে বাড়ি ফেরা—এ রকম ‘উচিত’ কাজগুলোর কথা কমবেশি সবাই জানেন।

দিনের বেশির ভাগ সময় বসে কাজ করার কারণে স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ে। এ ধরনের জীবনযাত্রাকে বলা হয় ‘আসনাশ্রিত’ বা আলসে জীবনধারা। কর্মক্ষম প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে যাঁরা প্রতিদিন পাঁচ হাজারের কম পদক্ষেপ ফেলেন, তাঁরা এই আলসে গোছের মানুষের অন্তর্ভুক্ত। দৈনিক সাড়ে সাত হাজারের কম পদক্ষেপ ফেলা মানুষদের বলা হয় শারীরিকভাবে নিষ্ক্রিয়। আর ১০ হাজার বা তার বেশিবার পদক্ষেপ ফেলা মানুষেরা শারীরিকভাবে সক্রিয়। যাঁরা এর মাঝামাঝি, অর্থাৎ দৈনিক ৭৫০০-৯৯৯৯টি পদক্ষেপ ফেলেন, তাঁরা হলেন মাঝারি মাত্রায় সক্রিয়। প্রতিদিন অন্তত সাড়ে ১২ হাজার বার পদক্ষেপ ফেলা মানুষেরা শারীরিকভাবে সবচেয়ে বেশি সক্রিয়।

এই সক্রিয়তার হিসাব দিয়ে হৃদ্‌রোগ ও অন্যান্য ঝুঁকির মাত্রা নির্ণয় করা যায়। গবেষণায় দেখা গেছে, শারীরিকভাবে যিনি যতটা সক্রিয়, তাঁর ঝুঁকির মাত্রা ততটাই কম। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ঝুঁকির মাত্রা বাড়ে। হৃদ্‌রোগ ছাড়াও ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, স্ট্রোক, মুটিয়ে যাওয়ার ঝুঁকি শারীরিক সক্রিয়তার সঙ্গে সম্পর্কিত। নারীদের মধ্যে শারীরিকভাবে সক্রিয়দের তুলনায় নিষ্ক্রিয়দের মধ্যে স্বাস্থ্যঝুঁকি দ্বিগুণের বেশি। আর পুরুষদের ক্ষেত্রে শারীরিকভাবে সবচেয়ে সক্রিয়দের তুলনায় নিষ্ক্রিয়দের মধ্যে এ হার তিন গুণের বেশি।

তাই বসে বসে অনেক কাজ করে বা বিশাল প্রতিষ্ঠান চালিয়ে নিজেকে ‘সক্রিয়’ বা কর্মঠ মনে করা ঠিক হবে না। ব্যায়াম না করলেও অন্তত হাঁটুন। ব্যস্ত সময়ে হাঁটুন, কাজের চাপ না থাকলেও হাঁটুন। রান্নাঘর থেকে কফি তৈরির সামগ্রী নিজেই নিয়ে আসুন হেঁটে। ঘরের অন্যান্য কাজেও নিজে হাঁটুন। টেলিভিশন দেখার সময়ও হাঁটুন। ঘুমের আগে হাঁটুন, জেগে ওঠার পরেও হাঁটুন। অফিসে সহকর্মীকে ফোন না করে বা ডেকে না নিয়ে হেঁটে তাঁর কাছে যান। প্রয়োজনে হেঁটে দুজনে কথা সেরে নিন। এভাবে দৈনন্দিন কাজগুলোর বিন্যাস করে নিন, যাতে ন্যূনতম ১০ হাজার কদম হাঁটা হয় প্রতিটি দিন। আর হ্যাঁ, প্রতিদিন কয় কদম হাঁটলেন, তার হিসাব রাখার জন্য আজকাল বিভিন্ন মোবাইল ফোন অ্যাপ পাওয়া যায়। ডাউনলোড করে নিতে পারেন ওগুলো। এর মাধ্যমে প্রতিদিনকার হিসাব রাখা সহজ হবে। এভাবে নিজেই বুঝতে পারবেন, আপনি কতটা সক্রিয়।

11
২০১৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের এমআইটি মিডিয়া ল্যাবে জরিপের জন্য একটি গেম বানানো হয়। দুর্ঘটনার ঠিক আগ মুহূর্তের কিছু বর্ণনা দিয়ে ব্যবহারকারীকে বলা হয়, এমন পরিস্থিতিতে চালকবিহীন গাড়ি কী করবে, কাকে আঘাত হানবে। যন্ত্রের নৈতিকতার পরীক্ষা বলে গেমটির নাম দেওয়া হয় ‘মোরাল মেশিন’।

গত চার বছরে চার কোটির বেশিবার খেলা হয় গেমটি। পৃথিবীর ২৩৩টি এলাকার মানুষ জানিয়েছেন সংকটের মুহূর্তে চালকবিহীন গাড়ির কী করা উচিত। নৈতিক সিদ্ধান্তের ওপর চালানো বড় জরিপগুলোর একটি এটি। চার বছর আগে নির্মাতারা চিন্তাও করেননি এমন সাড়া ফেলবে মোরাল মেশিন।

জরিপ থেকে পাওয়া তথ্য–উপাত্ত বিশ্লেষণ করে দেখা গেল নৈতিক সিদ্ধান্ত নির্ভর করে একজন মানুষের সংস্কৃতি, তার অবস্থান, তার অর্থনৈতিক অবস্থার ওপর। সেটা হোক তথ্যপ্রযুক্তি কিংবা আরও সুনির্দিষ্ট করে চালকবিহীন গাড়ির মতো বিষয়। এমআইটির সে গবেষণাপত্র ছাপা হয়েছে নেচার সাময়িকীতে।

মোরাল মেশিনের পরীক্ষা অনেকটা সেই ট্রলি প্রবলেমের মতো। রেলপথ ধরে দুর্বার বেগে ধেয়ে আসছে ট্রলি। সামনে দুদিকে ভাগ হয়ে গিয়েছে রেলপথ। একটি পথের ওপর পাঁচজন, অন্যটিতে একজন মানুষ। ট্রলিটি কোন পথে যাবে, মানে পথ পরিবর্তনের চাবি আছে একজনের হাতে। ট্রলির গতি এতই বেশি যে থামিয়ে বা পথ থেকে সরিয়ে মানুষ বাঁচানোর সুযোগ নেই। হয় একজন, নাহয় পাঁচজনের মৃত্যু হবে। চাবি আপনার হাতে, সিদ্ধান্ত আপনার—কোন পথে ট্রলি যাবে?

মোরাল মেশিনেও ট্রলি প্রবলেমের মতো নয়টি প্রশ্ন করা হয়েছে। পরিস্থিতির সচিত্র বর্ণনা দিয়ে বলা হয়েছে, একটি চালকবিহীন গাড়ি কাদের প্রাধান্য দেবে—মানুষ নাকি প্রাণী? যাত্রী নাকি পথচারী? কম নাকি বেশি মানুষ? উচ্চবিত্ত নাকি নিম্নবিত্ত? নারী নাকি পুরুষ? দুর্বল নাকি সবল? যুবক না বৃদ্ধ? আইন মান্যকারী নাকি অমান্যকারী? শেষমেশ যে পথে ছিল সে পথেই থাকবে, নাকি অবস্থা বুঝে পথ বদলে কিছু করার চেষ্টা করবে?

আবার এমন প্রশ্নও ছিল যে গাড়িটি কি সোজা চালিয়ে তিন বৃদ্ধ পথচারীকে ধাক্কা দেবে, নাকি বাঁক ঘুরে তিন যুবক যাত্রীকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেবে। এমন প্রশ্নের উত্তর নির্ভর করে উত্তরদাতার দেশে ও অর্থনৈতিক অবস্থার ওপর। যেমন চীন বা জাপানের মতো দেশের নাগরিক বৃদ্ধদের বাঁচানোর পক্ষে মত দিয়েছে। সেটা বয়োবৃদ্ধদের প্রতি তাদের সম্মানবোধের জন্যই।

বেপরোয়া হলেও পথচারীকে বাঁচানোর পক্ষে মত দিয়েছে তুলনামূলক দরিদ্র দেশগুলোর নাগরিকেরা। আর যেসব দেশের জনগণের মধ্যে অর্থনৈতিক তারতম্য প্রকট, তাদের উত্তরে উচ্চবিত্ত ও নিম্নবিত্তের ব্যাপারটা এসেছে বেশি। আর যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্যের মতো দেশগুলোর নাগরিক অল্প মানুষের চেয়ে বেশি মানুষকে বাঁচানোর পক্ষে মত দিয়েছে। কাছাকাছি দেশের নাগরিকদের উত্তরে সাদৃশ্য বেশি। জরিপের ফলাফলে সামষ্টিক দিক থেকে পশ্চিম, পূর্ব আর দক্ষিণের দেশগুলোর মধ্যে মানুষদের উত্তরে বৈচিত্র্য পাওয়া গেছে।

এমআইটির গবেষণাটির প্রয়োগগত গুণ রয়েছে। কারণ, যেসব দেশে স্বয়ংক্রিয় গাড়ি ব্যবহার করা হবে এবং যেসব জায়গায় এসব গাড়ি তৈরি হবে সে দেশের সরকারপ্রধানেরা আইন প্রণয়নে বিবেচনায় আনতে পারবেন। পাশাপাশি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তায় নৈতিকতার দিকটিকেও গবেষণাটি সাহায্য করবে বলে মনে করেন গবেষকেরা।

সূত্র: এমআইটি টেকনোলজি রিভিউ

12
কম্পিউটার দেখতে কেমন? সাধারণত ডেস্কটপ কম্পিউটারে চৌকোনা বাক্সের সিপিইউ থাকে। থাকে মনিটর-মাউস। কিন্তু এখন বিজ্ঞানীরা এমন এক কম্পিউটার তৈরি করতে ঘাম ঝরাচ্ছেন, যা দেখতে হবে উল্টো কেকের মতো! চার-পাঁচ স্তরের কেক উল্টো করে ঝুলিয়ে দিলে যেমন হয়, ঠিক তেমন। থাকবে অনেক ধাতব সিলিন্ডার ও প্যাঁচানো তার। আর সবকিছুর নিচে থাকবে ছোট্ট একটি কালো চিপ। কিম্ভূতকিমাকার এই বস্তুকেই বলা হচ্ছে কোয়ান্টাম কম্পিউটার। বিজ্ঞানীদের ধারণা, এই কম্পিউটার বদলে দেবে পুরো প্রযুক্তিবিশ্ব!

বদলটা আসলে কেমন হবে? এ জায়গাতেই কিছু ‘কিন্তু’ আছে। বর্তমান কম্পিউটার ব্যবস্থার তুলনায় সম্পূর্ণ নতুন এই কোয়ান্টাম কম্পিউটার। যেসব গাণিতিক সমস্যা মানুষ দূরে থাক, হালের সুপার কম্পিউটারের করতেও বছরের পর বছর লাগে, সেসব সমস্যা এক তুড়িতে সমাধান করতে পারবে কোয়ান্টাম কম্পিউটার। নতুন নতুন ওষুধ আবিষ্কার করতে সহায়তা করবে এটি। নতুন পদার্থ আবিষ্কারেও আসবে বৈপ্লবিক গতি। এক কথায় কোয়ান্টাম কম্পিউটার প্রযুক্তিবিশ্বে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করবে। পুরো কম্পিউটার ব্যবস্থাই বদলে যাবে।

হাতের উল্টো পিঠও আছে। কোয়ান্টাম কম্পিউটারের বিপত্তি অনেক। বর্তমানে ইন্টারনেটের মাধ্যমে পুরো বিশ্ব মানুষের হাতের মুঠোয় চলে এসেছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যক্তিগত জীবনের ছোট ছোট অনুভূতি প্রকাশ করা থেকে শুরু করে ব্যাংকের তাবৎ কাজও নির্ভরশীল অন্তর্জালের ওপর। বর্তমানের এই ইন্টারনেট ব্যবস্থা কিছু নির্দিষ্ট এনক্রিপশন অনুসরণ করে। ক্রিপ্টোগ্রাফি বা সংকেত লিখন পদ্ধতি ব্যবহার করে এসব এনক্রিপশন তৈরি হয়। এনক্রিপটেড থাকার কারণে ইন্টারনেট ব্যবহার নিরাপদ থাকে এবং ব্যবহারকারীর তথ্য বেহাত হওয়া প্রতিরোধ করে। সমস্যা হলো, ভবিষ্যতের কোয়ান্টাম কম্পিউটার হালের ইন্টারনেট এনক্রিপশনের যমে পরিণত হবে। এক তুড়িতে বর্তমানের ইন্টারনেট ক্রিপ্টোগ্রাফি হ্যাক করতে পারবে কোয়ান্টাম কম্পিউটার। তাই কোয়ান্টাম কম্পিউটার প্রযুক্তি যদি অসৎ হ্যাকারের হাতে পড়ে, তবে বিশ্বজুড়ে কোটি কোটি ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর তথ্য ঝুঁকিতে পড়ে যাবে! এমনকি রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ তথ্য নিরাপদ থাকবে না। গোপন গোয়েন্দা ও প্রতিরক্ষা তথ্যও আর গোপন রইবে না।

কোয়ান্টাম কম্পিউটার তৈরি করতে এখন কোমর বেঁধে নেমে পড়েছে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশ। ওদিকে তলোয়ারে শাণ দিচ্ছে চীন। কোয়ান্টাম কম্পিউটার যে তাদেরও চাই। তবে কোয়ান্টাম কম্পিউটার–সংক্রান্ত গবেষণায় সবচেয়ে বেশি হুড়োহুড়ি করছে গুগল, আইবিএম, মাইক্রোসফটসহ নানা টেক জায়ান্ট। কারণ খুব স্পষ্ট। যে প্রতিষ্ঠান এই প্রতিযোগিতায় জিতবে অর্থাৎ প্রথম কোয়ান্টাম কম্পিউটার তৈরি করতে পারবে, সেই প্রতিষ্ঠানই নতুন প্রজন্মের প্রযুক্তি ব্যবসায় একাধিপত্য প্রতিষ্ঠা করতে পারবে। এটি অনেকটা লটারির জ্যাকপট জেতার মতো! তাই দেদার খরচ হচ্ছে কোয়ান্টাম গবেষণায়।


কোয়ান্টাম কম্পিউটার কী?
সাধারণ কম্পিউটার কাজ করে বাইনারি সংখ্যা দিয়ে। বাইনারি পদ্ধতিতে সংখ্যা মাত্র দুটি: ০ ও ১। এই দুটি সংখ্যা দিয়েই যাবতীয় কাজ করে এখনকার কম্পিউটার। দ্য টেলিগ্রাফের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বর্তমান ব্যবস্থায় প্রতিবার হয় ০ নতুবা ১ ব্যবহার করতে পারে কম্পিউটার। কিন্তু কোয়ান্টাম কম্পিউটার ০ ও ১—দুটিরই প্রতিনিধিত্ব করতে পারে। আবার একই সময়ে একই সঙ্গে ০ ও ১–এর প্রতিনিধিত্ব করতে পারে কোয়ান্টাম কম্পিউটার। বিশেষ এই কম্পিউটারের মৌলিক একককে বলা হয় কিউবিটস। বাইনারি সংখ্যা হিসেবে ০ ও ১ ব্যবহারের অনবদ্য বৈশিষ্ট্যের কারণেই কোয়ান্টাম কম্পিউটার জটিল গাণিতিক সমস্যার দ্রুত সমাধান করতে পারে।

ইকোনমিস্টের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দুর্বোধ্য ও জটিল কোয়ান্টাম মেকানিকসের ওপর নির্ভরশীল কোয়ান্টাম কম্পিউটার। কোয়ান্টাম মেকানিকসের সুপারপজিশন ও এনট্যাংগেলমেন্ট পদ্ধতি ব্যবহার করে কাজ করে এই কম্পিউটার। খুব বেশিসংখ্যক গাণিতিক সমস্যার সমাধান এটি করে না। তবে যে অল্পসংখ্যক জটিল গাণিতিক সমস্যার সমাধান কোয়ান্টাম কম্পিউটার করে, সেগুলো বর্তমানের কম্পিউটারের পক্ষে করা অত্যন্ত কঠিন এবং সময়সাপেক্ষ। কিছু ক্ষেত্রে অসম্ভবও।

সংবাদমাধ্যম ওয়্যারড বলছে, কোয়ান্টাম বিটস বা কিউবিটস নানা পদ্ধতিতে গঠিত হতে পারে। তবে এগুলো সব সময়ই ০ ও ১-এর প্রতিনিধিত্ব করে এবং এই পুরো প্রক্রিয়া ইলেকট্রনিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যায়। তবে প্রথাগত কম্পিউটার বিটসের চেয়ে বহুগুণ বেশি কাজ করতে পারে কিউবিটস।


সুফল কী?
টেলিগ্রাফ বলছে, কার্যকর কোয়ান্টাম কম্পিউটার অসীম সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দিতে পারে। নতুন টেকসই নির্মাণসামগ্রী তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে কোয়ান্টাম কম্পিউটার। ক্যানসার বা এইডসের মতো দুরারোগ্য ব্যাধির পথ্য তৈরিতে সহায়তা করবে এটি।

মাইক্রোসফটের কর্মকর্তা ক্রিস্তা সোরে বলেন, ‘এর প্রভাব হবে অভাবনীয়। কোয়ান্টাম কি করতে পারে—সেই সম্ভাবনার বিশাল সমুদ্রের কেবল উপরিভাগে আছি আমরা। কোয়ান্টাম কম্পিউটারের সাহায্য নিয়ে বৈশ্বিক উষ্ণতার সমস্যার প্রকৃতি বুঝতে পারব আমরা। একই সঙ্গে কীভাবে কার্বন ধরে রাখা যাবে এবং আমাদের পৃথিবীকে বাঁচানো যাবে, তাও জানতে পারব।’

প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান আইবিএমের কোয়ান্টাম বিভাগের ভাইস প্রেসিডেন্ট বব সুটর মনে করেন, কোয়ান্টাম কম্পিউটার প্রযুক্তিতে নতুন বিপ্লবের সূচনা করবে। তিনি বলেন, সাধারণ মানুষ এখনো এ বিষয়ের বিস্তৃতি আঁচ করতে পারছে না। কোয়ান্টাম কম্পিউটারের কল্যাণে মানুষ আরও ভালো পণ্য হাতে পাবে, খাবারে আসবে নতুন স্বাদ। তৈরি হবে নতুন নতুন ওষুধ। জটিল গাণিতিক সমস্যার সমাধানের মাধ্যমে বর্তমানের উড়োজাহাজকে আরও দ্রুতগামী করা যাবে। এসব উন্নত উড়োজাহাজতে আবার জ্বালানিও কম খরচ হবে।

আইবিএমের গবেষণা বিভাগ জানাচ্ছে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার বিকাশে যুগান্তকারী ভূমিকা রাখতে পারে কোয়ান্টাম কম্পিউটার। এতে করে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে আরও নিখুঁত করে তোলা সম্ভব হবে।


গন্ডগোল কোথায়?
কথায় আছে—‘সৎ সঙ্গে স্বর্গবাস, অসৎ সঙ্গে সর্বনাশ।’ ঠিক তেমনি ভালো মানুষের হাতে পড়লে কোয়ান্টাম কম্পিউটারের সম্ভাবনার শেষ নেই। আর ভুল মানুষের হাতে পড়লে এই কোয়ান্টাম কম্পিউটার হয়ে দাঁড়াবে সীমাহীন ভোগান্তির কারণ। শুধু একবার ভেবে দেখুন—আপনার ফোনের কন্টাক্ট লিস্ট থেকে শুরু করে এটিএম পাসওয়ার্ডও চলে গেছে অন্যের হাতে! কী, গা শিউরে উঠছে না?

টেলিগ্রাফ বলছে, কোয়ান্টাম কম্পিউটার হালের ইন্টারনেটের ক্রিপ্টোগ্রাফি নিমেষে ব্রেক করতে পারবে। ফলে অপরাধীদের নিয়ন্ত্রণে এই কম্পিউটার থাকলে এত দিন ধরে চলে আসা ইন্টারনেট ব্যবস্থা পুরোপুরি ভেঙে পড়তে পারে। কোটি কোটি মানুষের ব্যক্তিগত তথ্য বেহাত হয়ে যাবে। হ্যাক করা যাবে সরকারি ডেটাবেইস। ব্যাংকিং ব্যবস্থায় ধস নামবে। ইন্টারনেটভিত্তিক অর্থ লেনদেন নিয়ন্ত্রণ করে আঙুল ফুলে কলাগাছ হতে পারবে অসৎ হ্যাকাররা। আবার রাষ্ট্রীয় প্রতিরক্ষাব্যবস্থাও ধসিয়ে দেওয়া যাবে।

নটিংহাম ট্রেন্ট ইউনিভার্সিটির কোয়ান্টাম কম্পিউটিং বিশেষজ্ঞ কলিন উইলমট বলেন, যে পক্ষ সবার আগে কোয়ান্টাম কম্পিউটারের মালিক হবে, সেই পক্ষই এই অসীম ক্ষমতার অধিকারী হবে। কোয়ান্টাম কম্পিউটার ক্ল্যাসিক ক্রিপ্টোগ্রাফি ব্যবস্থাকে বিশাল ঝুঁকির মুখে ফেলবে।

ইকোনমিস্ট বলছে, কোয়ান্টাম কম্পিউটারের অপব্যবহার বিশ্বব্যাপী দুই ট্রিলিয়ন ডলার মূল্যমানের ই-কমার্স শিল্পকে ধ্বংস করে দিতে পারে। কারণ, বর্তমানে প্রচলিত ইন্টারনেট ক্রিপ্টোগ্রাফি ব্যবহার করেই এসব আর্থিক লেনদেন করা হয়ে থাকে। এই ক্রিপ্টোগ্রাফি রাষ্ট্রীয় তথ্যের গোপনীয়তাকেও সুরক্ষিত রাখে। সুতরাং এই ক্রিপ্টোগ্রাফি ব্যবস্থাকে ভেঙে ফেলতে পারলে ডেবিট-ক্রেডিট কার্ডের বিস্তারিত তথ্য, ব্যাংকে লেনদেন, যাবতীয় ই-মেইল—এক কথায় ইন্টারনেট–সংশ্লিষ্ট সব তথ্যই অরক্ষিত হয়ে পড়বে। তখন যে–কেউ এসব তথ্যে নাক গলাতে পারবে, পারবে চুরি করতেও।

সমস্যা আছে রাষ্ট্রযন্ত্র নিয়েও। নেদারল্যান্ডসের রাডবাউন্ড ইউনিভার্সিটির ক্রিপ্টোগ্রাফার পিটার সোয়েব বলেন, ‘আজ থেকে ১০-২০ বছর পর কেউ যদি আমার আজকের খুদে বার্তা বা ব্যাংক হিসাব দেখতে পান, তবে আমার মতো সাধারণ মানুষের হয়তো কিছু যাবে–আসবে না। কিন্তু একবার ভেবে দেখুন, আমি যদি একটি দমনমূলক রাষ্ট্রের নাগরিক হই, তখন কী হবে? এটি কি তখন দমনের অন্যতম হাতিয়ার হয়ে উঠবে না?’


কে যাবে কার আগে?
কিছু কিছু বিশেষজ্ঞ বলছেন, আগামী পাঁচ বছরের মধ্যেই ইন্টারনেটে ব্যবহারের উপযোগী কোয়ান্টাম কম্পিউটার তৈরি হয়ে যেতে পারে। অনেকে অবশ্য বলছেন, আরও ১২ থেকে ১৫ বছরের আগে পূর্ণাঙ্গ ও কার্যকর কোয়ান্টাম কম্পিউটার পাওয়ার আশা নেই। তবে যেভাবে বিভিন্ন শক্তিশালী রাষ্ট্র ও প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলো কোমর বেঁধে লেগেছে, তাতে ধারণা করা হচ্ছে, সেদিন খুব বেশি দূরে নয়।

যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার মাউন্টেন ভিউয়ে কড়া পাহারায় কোয়ান্টাম কম্পিউটার নিয়ে গবেষণা চালাচ্ছে গুগল। বসে নেই আইবিএম ও মাইক্রোসফট। এই দুটি প্রতিষ্ঠানই জোরেশোরে চালাচ্ছে এ–সংক্রান্ত গবেষণা। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অন্যদের চেয়ে কিছুটা এগিয়েই আছে গুগল। আন্তর্জাতিক প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোর এই প্রতিযোগিতায় শামিল হয়েছে চীনা আলিবাবা ও হুয়াওয়ে।

শক্তিশালী রাষ্ট্রগুলোও নাম লিখিয়েছে এই রেসে। টেলিগ্রাফের দাবি, কোয়ান্টাম গবেষণায় যুক্তরাজ্য নাকি সবচেয়ে বেশি অর্থ বিনিয়োগ করেছে! ব্রিটিশ সরকার ২০১৩ সালে জাতীয় কোয়ান্টাম প্রযুক্তি কর্মসূচির গবেষণাকাজে মোট ২৭০ মিলিয়ন পাউন্ড বিনিয়োগের ঘোষণা দেয়। কোয়ান্টাম প্রযুক্তির উন্নতির জন্য ১০ বছর মেয়াদি বিনিয়োগের প্রকল্প আনছে যুক্তরাষ্ট্র। অন্যদিকে, ২০২০ সালের মধ্যে জাতীয় পর্যায়ে কোয়ান্টাম ইনফরমেশন সায়েন্সভিত্তিক পরীক্ষাগার প্রতিষ্ঠা করতে ১০ বিলিয়ন ডলার বরাদ্দ করেছে চীন।

সুতরাং, বোঝাই যাচ্ছে, কোয়ান্টাম কম্পিউটার তৈরিতে কে কার আগে যাবে, তা নিয়ে ইঁদুরদৌড়ে নেমেছে সবাই। টেক জায়ান্ট বা শক্তিধর রাষ্ট্র—কারও মধ্যেই তফাত নেই। তবে যে পক্ষই এই কোয়ান্টাম জ্যাকপটে প্রথম হাত দিতে পারবে, তারাই বিশ্বের অর্থনৈতিক ও প্রাযুক্তিক নেতৃত্বে আসতে পারবে। প্রযুক্তিপ্রেমী তথা সাধারণ মানুষের আশা একটাই—কোয়ান্টাম কম্পিউটার যেন হ্যাকারদের হাতে না পড়ে!

Source: Prothom-Alo

13
Research & Publication / থিওরি অব এভরিথিং
« on: October 04, 2018, 11:26:54 AM »
পপুলার কালচারে একটা কথা প্রচলিত আছে যে ‘স্ট্রিং থিওরি ইজ দ্য থিওরি অব এভরিথিং’। অর্থাৎ সহজ ভাষায় বলতে হয়, স্ট্রিং তত্ত্ব হচ্ছে সবকিছুর তত্ত্ব। তবে এই বিবৃতি আমার সব সময় বিভ্রান্তিকর বলে মনে হয়। কেন? সেটা ব্যাখ্যা করা যাক।

আমার পাঁচ বছর বয়সী মেয়ে ডাইনোসরের মহাভক্ত। একদিন সে আমার কাছে এল ডাইনোসর-বিষয়ক একটা বই হাতে নিয়ে। সেখান থেকে সে আমাকে একটা বিশেষ ডাইনোসরের ছবি দেখাল, যার নাকে একটা গোলাপি রঙের শুণ্ড (Snout) আছে। সে আমার কাছে জানতে চাইল, এটা কেন আছে? পাঠক নিশ্চয় অনুমান করতে পারছেন আমার থিওরি অব এভরিথিংয়ের জ্ঞান সেদিন তেমন কোনো কাজে আসেনি। তবে আমি বাচ্চাদের সঙ্গে যতটা সম্ভব সৎ থাকার চেষ্টা করি। তাই আমি ওকে কোনো মনগড়া কাল্পনিক উত্তর দিইনি। শুধু বলেছিলাম, আমি জানি না। সে এরপর চলে গেল তার মায়ের কাছে এবং প্রশ্নের বিভিন্ন ধরনের উত্তর পেল। তবে কোনো উত্তরই তার পছন্দ হলো না। শেষমেশ সে নিজে ভেবে একটা উত্তর দাঁড় করাল। ‘এই প্রজাতির ডাইনোসররা ফুল খুব পছন্দ করে। যেহেতু বেশির ভাগ ফুলই গোলাপি রঙের হয়, তাই এই ডাইনোসরদের গোলাপি রঙের শুণ্ড আছে।’

এই যুক্তি আমার মেয়ের নিজের কাছেই খুব যুক্তিসংগত বলে মনে হলো। কাজেই পাঠক নিশ্চয় অনুধাবন করতে পারছেন, স্ট্রিং তত্ত্বকে কেন আমি থিওরি অব এভরিথিং বলতে চাই না।


আসলে এই বিভ্রান্তি সম্ভবত তৈরি হয়েছে আইনস্টাইনের শেষ দিকের গবেষণাকে কেন্দ্র করে। আইনস্টাইন চেষ্টা করেছিলেন পদার্থবিজ্ঞানের একটা সম্মিলিত তত্ত্ব দাঁড় করাতে। প্রশ্ন হলো, এই সম্মিলিত তত্ত্ব বলতে ঠিক কী বোঝায়? সহজ ভাষায় সম্মিলিত তত্ত্ব হলো সেই তত্ত্ব, যা অন্য অনেক খণ্ড খণ্ড তত্ত্ব বা ধারণাকে একটি তত্ত্বে একীভূত করতে পারে। পদার্থবিজ্ঞানের একটি সম্মিলিত তত্ত্ব বের করার যে প্রচেষ্টা, তার সর্বাধুনিক এবং সবচেয়ে সফল ফলাফল বলা যেতে পারে স্ট্রিং তত্ত্বকে।

স্ট্রিং তত্ত্ব মূলত তিনটি বিষয়কে একীভূত করতে চায়। এক. পদার্থবিজ্ঞানের বিভিন্ন তত্ত্ব; দুই. প্রকৃতির মৌলিক বলসমূহ এবং তিন. প্রকৃতির মৌলিক কণাসমূহ।

আমি আজ তিন নম্বর বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করতে চাইছি। কারণ, বিষয়টি স্ট্রিং তত্ত্বের কেন্দ্রীয় ভাবনা নিয়ে আলোকপাত করে। এ ছাড়া এটাই সম্ভবত স্ট্রিং তত্ত্বের জন্ম নিয়ে কথা বলার জন্য আদর্শ জায়গা।

পদার্থবিজ্ঞান রিডাকশনাজম (খণ্ডতাবাদ) ব্যবহার করে। আমি এখানে প্রক্রিয়াগত খণ্ডতাবাদের কথা বলছি। মূল কথা, একটা বস্তুকে ভাঙতে থাকলে আমরা একসময় বিন্দুর মতো কণা পাব। কণাতত্ত্ব অনুযায়ী আমাদের প্রকৃতির মৌলিক বিল্ডিং ব্লক হচ্ছে এই কণা। লক্ষ করার বিষয় হলো এ ক্ষেত্রে আমরা একটা আদর্শীকরণ করি। এই কণাগুলোকে ধরি বিন্দুর মতো যার কোনো ‘মাত্রা’ নেই, শুধু ভর আছে। এখন ধরা যাক, একটা বিন্দু কণা সৃষ্ট মহাকর্ষীয় প্রভাব বলয়ের (পটেনশিয়াল) কথা, যা কিনা দূরত্বের প্রতি-সমানুপাতিক। এখান থেকে খুব দ্রুতই আমরা উপলব্ধি করতে পারি যে দূরত্ব যখন শূন্য হয়ে যায়, তখন এই পরিমাপকটা অসীম হয়ে যায়। পদার্থবিজ্ঞান অসীম পছন্দ করে না। পদার্থবিজ্ঞানের ক্ষেত্রে অসীম পাওয়ার অর্থ হচ্ছে এ ক্ষেত্রে ঠিক কী হচ্ছে, পদার্থবিজ্ঞান তা বুঝতে পারছে না।

তাহলে প্রশ্ন হলো এটা কি প্রমাণ করে যে সমীকরণটা ভুল? ঠিক তা না আসলে।

আরও গোড়া থেকে শুরু করা যাক। পদার্থবিজ্ঞানে আসলে আমরা কী করি? গণিত ব্যবহার করে আমরা কতগুলো পরিমাপক সংজ্ঞায়িত করি, যাদের কিছু গাণিতিক আর কিছু ভৌত। ভৌত পরিমাপকগুলো আমরা পরীক্ষাগারে মাপতে পারি। যখন আমরা পরিমাপ করি, তখন এটা জানা আবশ্যক যে পরিমাপের স্কেলটা কী। ম্যাকক্রোসকপিক ইভেন্টে আমরা আসলে মাইক্রোসকপিক্যালি পরিমাপকের সংজ্ঞাটা ব্যর্থ হলো কি না, তা নিয়ে দুশ্চিন্তা করি না। কিন্তু দিন শেষে এটা একটা প্র্যাকটিক্যাল স্ট্যান্ড পয়েন্ট। ধরা যাক, আমরা আসলে জানতে চাই মাইক্রোসকপিক্যালি কী হচ্ছে? লক্ষ করুন যে ‘অসীম’টা আমরা পাচ্ছি, তা আসলে কণাকে বিন্দুর মতো চিন্তা করার জন্য হচ্ছে। এই সমস্যা থেকে বের হতে হলে আমাদের ধরে নিতে হবে, প্রকৃতির একটা সর্বনিম্ন দৈর্ঘ্য আছে। এটাকে আমরা প্ল্যাঙ্ক দৈর্ঘ্য বলি। এটি ১০ টু দ্য পাওয়ার-৩৩ সেন্টিমিটার (দশমিকের পর ৩২টা শূন্য তারপর এক) বা শক্তি এককে ১০ টু দ্য পাওয়ার ১৯ জিইভির (গিগা ইলেকট্রন ভোল্ট) সমান। এখানেই স্ট্রিং থিওরির ব্যুৎপত্তি। স্ট্রিং থিওরি বলে আমাদের প্রকৃতির মৌলিক বিল্ডিং ব্লক হলো এক মাত্রার সুতা বা তন্তুর মতো বস্তু, যার দৈর্ঘ্য প্ল্যাঙ্কের দৈর্ঘ্যের কাছাকাছি।

কণাতত্ত্ব (আরও নির্দিষ্ট করে বললে স্টান্ডার্ড মডেল) থেকে আমরা দেখতে পাই, প্রকৃতিতে ৬০ টির মতো মৌলিক কণা আছে। এই সংখ্যা ‘কণা’কে আমাদের প্রাকৃতিক মৌলিক বিল্ডিং ব্লক দাবি করার জন্য বেশ বড়। মোদ্দা কথা হলো, যা মৌলিক তার সংখ্যা কম হওয়ায় যুক্তিযুক্ত। এই কণার চিড়িয়াখানা মৌলিক বিল্ডিং ব্লক ধারণার পরিপন্থী। ঠিক এই ব্যাপারে স্ট্রিং তত্ত্ব এগিয়ে আসে।

এই তত্ত্ব অনুযায়ী আমাদের প্রকৃতির মৌলিক বিল্ডিং ব্লক হচ্ছে শুধুই একধরনের অতি ক্ষুদ্র তন্তু (স্ট্রিং), আর কিছু না। এই তন্তুর বিভিন্ন ধরনের কম্পনের ফলে ভিন্ন ভিন্ন কণার উৎপত্তি হয়। এভাবেই স্ট্রিং সব কণাকে এক মালায় গাঁথে। আগেই বলা হয়েছে, এই স্ট্রিং খুবই ছোট (১০ টু দ্য পাওয়ার-৩২ বা শক্তি এককে ১০ টু দ্য পাওয়ার ১৪ গিগা ইলেকট্রন ভোল্ট)। পাঠকের সুবিধার্থে এই সংখ্যাগুলো সম্পর্কে একটু অন্যভাবে ধারণা দেওয়া যাক। আমরা সবাই আমাদের সৌরজগৎ সম্পর্কে জানি। আমাদের সৌরজগতের দৈর্ঘ্য (ব্যাস) কী হতে পারে, তার একটা ধারণা আমরা পাই পৃথিবী থেকে সূর্যের দূরত্ব চিন্তা করলে। এখন এ ধরনের বিলিয়ন বিলিয়ন সৌরজগৎ মিলে একটা গ্যালাক্সি হয়। কাজেই তাঁর দৈর্ঘ্য কী হতে পারে, তা কল্পনা করাও কঠিন। এখন এ রকম প্রায় এক বিলিয়ন গ্যালাক্সির দৈর্ঘ্য আমাদের হাতের নখের দৈর্ঘ্যের তুলনায় যে রকম বড়, হাতের নখটা একটা স্ট্রিংয়ের তুলনায় সে রকমই বড়। কাজেই পর্যবেক্ষণ করার কোনো প্রশ্নই আপাতত আসে না।

Source: Prothom alo
ড. সাজিদ হক: শিক্ষক ও গবেষক, স্ট্রিং থিওরি অ্যান্ড কসমোলজি, ইউনিভার্সিটি অব উইন্ডসর, কানাডা
ই-মেইল: shajidhaque@gmail.com

14
পাঁচটি বিষধর সাপ নিয়ে শুরু হয়েছে সাপের কামড়ের ওষুধ অ্যান্টিভেনম তৈরির প্রথম পর্যায়ের কাজ। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের তত্ত্বাবধানে প্রাথমিকভাবে পাঁচটি সাপকে লালন-পালন করা হচ্ছে। এ সাপগুলোর বৃদ্ধি, সুস্থতাসহ অন্যান্য বিষয় পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে বিষ বা ভেনম সংগ্রহের উপযোগী হওয়ার অপেক্ষায় রয়েছেন গবেষকেরা। আট কোটি টাকা ব্যয়ে দেশে প্রথমবারের মতো অ্যান্টিভেনম তৈরির লক্ষ্যে এই প্রকল্প নেওয়া হয়েছে।

আমাদের দেশে প্রতিবছরই অনেক মানুষ মারা যায়। এ ব্যাপারে মৃত্যুর হার উল্লেখযোগ্য হলেও বিভিন্ন গবেষণায় ভিন্ন পরিসংখ্যান পাওয়া যায়। বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, দেশে সাপের কামড়ে বছরে মারা যায় ৬ হাজার ৪১ জন। সাপ কামড়ানোর পর ৮৬ শতাংশ মানুষ ওঝার কাছে যায়। চিকিৎসকের কাছে যায় মাত্র ৩ শতাংশ। দেশে সাপের কামড়ের চিকিৎসায় এখন যেসব অ্যান্টিভেনম প্রয়োগ করা হয়, তা ভারত থেকে আসে।

প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, পরীক্ষামূলক অ্যান্টিভেনম তৈরির জন্য ভেনম সংগ্রহে ১০০টি সাপ নিয়ে গবেষণা করার প্রাথমিক লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। সেগুলো হলো ২০টি কমন ক্রেইট বা কেউটে (bungaruscaeruleus), ২০টি ওয়ালস ক্রেইট (bungaruswalli), ১০টি গ্রেটার ব্ল্যাক ক্রেইট (bungarus niger), ৫টি ব্র্যান্ডেড ক্রেইট (bungarus fasciatus), ৫টি লেসার ব্ল্যাক ক্রেইট (bungaruslividus), ২০টি মনোক্লেড কোবরা (najakaouthia) ও ২০টি স্পেকটেকলড কোবরা বা চশমা গোখরো (najanaja)। এখন পর্যন্ত পাঁচটি সাপ সংগ্রহ করা হয়েছে। তবে বিষ বা ভেনম সংগ্রহ এখনো শুরু হয়নি।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের আর্থিক সহায়তায় পাঁচ বছর মেয়াদি অ্যান্টিভেনম তৈরির প্রকল্পটিতে যুক্ত রয়েছে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগ, টক্সিকোলজি সোসাইটি অব বাংলাদেশ এবং জার্মানির গ্যোটে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষজ্ঞরা। জার্মানি থেকে জীববিজ্ঞানীরা এসে নিজেকে নিরাপদ রেখে বিষধর সাপ ধরা ও সাপগুলোকে খাইয়ে সুস্থ অবস্থায় বাঁচিয়ে রাখার জন্য প্রশিক্ষণ দিয়ে গেছেন।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) নির্দেশনা অনুসারে, সাপের কামড়ের রোগীর চিকিৎসার জন্য স্থানীয় সাপ থেকে অ্যান্টিভেনম তৈরি হলে তা সবচেয়ে কার্যকর হয়। কারণ, একেক দেশের সাপের প্রকৃতি একেক রকম। ভারতে যেসব সাপ থেকে ভেনম সংগ্রহ করা হয়, সেগুলোর ২০ শতাংশ মাত্র বাংলাদেশের সাপের সঙ্গে মেলে। অথচ বছরের পর বছর ধরে ভারতের অ্যান্টিভেনম দিয়েই বাংলাদেশের সাপের কামড়ের রোগীদের সেবা দেওয়া হচ্ছে।

তিনভাবে সাপের বিষ শরীরে প্রভাব ফেলে। হেমোটক্সিন হয় বা রক্তকে দূষিত করে, মায়োটক্সিন বা মাংসপেশিকে অকার্যকর করে দেয় এবং নিউরোটক্সিন অর্থাৎ মস্তিষ্কের কার্যকারিতা নষ্ট করে দেয়।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নন-কমিউনেকেবল ডিজিজ কন্ট্রোল প্রোগ্রামের ডেপুটি প্রোগ্রাম ম্যানেজার ডা. মো. রাজীব আল-আমিন প্রথম আলোকে জানান, পরীক্ষামূলকভাবে অ্যান্টিভেনম তৈরির লক্ষ্যে পাঁচ বছরের এই প্রকল্পের জন্য আট কোটি টাকা বাজেট বরাদ্দ রয়েছে। গত বছরের জুলাই মাস থেকে প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে। সাপ সংগ্রহসহ অন্যান্য কাজে ইতিমধ্যে ৯৫ লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে। তিনি বলেন, সাপের কামড়ের বিষয়টিকে দেশে অবহেলিত জনস্বাস্থ্য হিসেবে ধরা হয়। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বছরে ছয় হাজার অ্যান্টিভেনম ডব্লিউএইচওর কাছ থেকে পেয়ে থাকে। সিভিল সার্জনের কাছ থেকে চাহিদা পাওয়ার ভিত্তিতে জেলা সদরে অ্যান্টভেনম সরবরাহ করা হয়। সাপ কামড়ানোর পর একেকজন রোগীকে ১০টি করে অ্যান্টিভেনম দিতে হয়।

সূত্রমতে, চাহিদার তুলনায় সরকারিভাবে অ্যান্টিভেনমের সরবরাহ অপ্রতুল। সরকারি হাসপাতালে অনেক রোগী বিনা মূল্যে তা পান না। তাঁদের হাসপাতালের বাইরে থেকে চড়া দামে কিনে নিতে হয়।

গাজীপুরে সদর উপজেলার পুবাইল ইউনিয়নের খোরাইদ গ্রামের বাসিন্দা মো. খোকন (৪৫) গত ২৭ মে গোখরো সাপের কামড় খেয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নেন। প্রথম আলোকে তিনি জানান, হাসপাতাল থেকে তাঁকে অ্যান্টিভেনম বিনা মূল্যে দেওয়ার কথা অথচ তাঁকে ১০টি ইনজেকশন ১১ হাজার টাকা দিয়ে কিনতে হয়েছে।

যেভাবে বিষ সংগ্রহ হবে
অ্যান্টিভেনম তৈরি প্রকল্পের মূল দায়িত্বে থাকা চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক অনিরুদ্ধ ঘোষ প্রথম আলোকে বলেন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের তত্ত্বাবধানে বিষ সংগ্রহের জন্য মোট পাঁচটি বিষধর সাপ রাখা হয়েছে। এর মধ্যে তিনটি কোবরা, একটি কেউটে এবং একটি সবুজ পিট ভাইপার (সবুজ সাপের একটি প্রজাতি)। বিষ সংগ্রহের উপযোগী করে তোলার জন্য এই সাপগুলোকে পালন করা হচ্ছে। বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত ভেনম স্ট্যান্ডার্ডের জন্য ভেনম সংগ্রহ, ভেনম ক্যারেকটারাইজেশন অর্থাৎ প্রাপ্ত ভেনমে কী কী ধরনের প্রোটিন উপাদান আছে, তা নির্ণয় করা ও যেসব অ্যান্টিভেনম দেশে আছে, সেগুলোকে সংগৃহীত ভেনম কতটা নিউট্রলাইজ করতে পারে বা কার্যকরী হয়, তা পরীক্ষা করা। এসব প্রক্রিয়া ধাপে ধাপে শেষ করে পরীক্ষামূলক অ্যান্টিভেনম তৈরি করে তা বিভিন্ন প্রাণীর ওপর প্রয়োগ করা হবে। সেটায় সফলতা পেলেই মানবদেহে প্রয়োগ করা হবে।

অনিরুদ্ধ ঘোষ জানান, ডব্লিউএইচওর নির্দেশনা হচ্ছে যে দেশে যে ধরনের সাপ আছে, সেই সাপের বিষ থেকে অ্যান্টিভেনম তৈরি করা। এতে সাপের কামড়ের রোগীর ক্ষেত্রে ওই ওষুধ শতভাগ কাজ করবে। অন্য দেশের অ্যান্টিভেনম এই দেশে শতভাগ কার্যকর নাও হতে পারে। তিনি জানান, সাপুড়ের কাছ থেকে নয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের প্রশিক্ষিত শিক্ষার্থীরা বিষধর সাপ নিজেরাই ধরে দেখভাল করছেন। সম্পূর্ণ বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে বিষ সংগ্রহ করা হবে। যে পাঁচটি সাপ এখন লালন-পালন করা হচ্ছে, বিষ সংগ্রহের জন্য সেগুলো এখনো উপযোগী হয়নি। বিষ সংগ্রহের জন্য সাপের নির্দিষ্ট কোনো বয়স লাগে কি না, তা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সুনির্দিষ্ট কোনো বয়সের প্রয়োজন হয় না। তবে ছোট সাপ থেকে বিষ সংগ্রহ না করার সিদ্ধান্ত রয়েছে। বিষ সংগ্রহের জন্যও কিছু ধাপ অনুসরণ করতে হয়।’

এ প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত অধ্যাপক ডা. এম আবুল ফয়েজ প্রথম আলোকে বলেন, বাংলাদেশে যে অ্যান্টিভেনম রয়েছে, তা ভারত থেকে আসে। ভারতে ছয়টি প্রতিষ্ঠান অ্যান্টিভেনম তৈরি করে। দক্ষিণ ভারতের প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে বাল্ক ভেনম আমদানি করে প্রক্রিয়াজাতের মাধ্যমে অ্যান্টিভেনম ইনজেকশন বিক্রি করে দেশের একটি ওষুধ প্রতিষ্ঠান। ভারতে গোখরো, কেউটে, চন্দ্রবোড়া ও স স্কেলড (একধরনের আঁশযুক্ত সাপ) এই চার ধরনের সাপ থেকে ভেনম সংগ্রহ করা হয়। এই সাপগুলোর কোনো কোনোটা বাংলাদেশে নেই। আবার কোনো কোনো প্রজাতির সাপ ভারতের চেয়ে বাংলাদেশে বেশি রয়েছে।

এম আবুল ফয়েজ জানান, ভারতে এক প্রজাতির গোখরো (যেগুলো ফণা তুললে পেছনে দুটো বলয় দেখা যায়, এগুলোকে স্পেকটেকলড কোবরা বা চশমা গোখরাও বলা হয়) সাপ পাওয়া যায়। এটিসহ বাংলাদেশে আরেক ধরনের গোখরো সাপও রয়েছে। এই ধরনের গোখরো সাপগুলো ফণা তুললে পেছনে একটি বলয় দেখা যায়। ভারতে একধরনের কেউটে সাপ রয়েছে। আর বাংলাদেশে কেউটে সাপ রয়েছে চার ধরনের। চন্দ্রবোড়া সাপ ভারতে বেশি হলেও বাংলাদেশে কম। আর স স্কেলড সাপ বাংলাদেশে একেবারেই নেই।

এতে অ্যান্টিভেনম তৈরির জন্য ভারত থেকে আসা সব বিষই বাংলাদেশের জন্য কার্যকর নয়। অথচ যখন ভেনম আসে, তখন তা আলাদা আলাদাভাবে নয়, সম্মিলিতভাবে আসে। কিছু ভেনম বাংলাদেশের জন্য অপ্রয়োজনীয়। তিনি বলেন, অ্যান্টিভেনম তৈরির কাজটি এখন একেবারে প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। এটা দীর্ঘমেয়াদি প্রক্রিয়া। প্রথম ধাপে ভেনম স্ট্যান্ডার্ড নিশ্চিত করা হবে। কারণ, অ্যান্টিভেনম তৈরির আগে ভেনম স্ট্যান্ডার্ড তৈরি আবশ্যক। পাঁচ বছরে পরীক্ষামূলক অ্যান্টিভেনম তৈরি করা গেলে পরে বিদেশি প্রযুক্তির সঙ্গে সম্পৃক্ত করে বাণিজ্যিকভাবেই দেশে অ্যান্টিভেনম তৈরি করা সম্ভব হবে।

সাপের কামড়ের ওপর চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে থিসিস করেছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. রোবেদ আমিন। এ ব্যাপারে তাঁর অভিজ্ঞতা থেকে প্রথম আলোকে বলেন, সাপের কামড়ে আক্রান্ত রোগীরা এলে প্রথমেই তাঁকে কোন ধরনের সাপ কামড়েছে, তা নিশ্চিত হতে হয়। সাপের ছবি দেখিয়ে কখনো কখনো রোগীর কাছ থেকে নিশ্চিত হতে হয়। এ ছাড়া রোগীর ওপর বিষ কেমন প্রভাব ফেলছে, সেটাও লক্ষ করা হয়। যেমন: গোখরো সাপ কামড় দিলে স্থানটি ফুলে যায়, নিউরোটক্সিন হয়। রোগীর চোখ বন্ধ হয়ে যেতে থাকে। সবুজ সাপ কামড়ালে স্থানটি ফুলে যায় ও রক্ত ঝরে। চন্দ্রবোড়া কামড়ালে এসব লক্ষণের পাশাপাশি প্রস্রাব বন্ধ হয়ে যায়। আর কেউটে কামড়ালে নিউরোটক্সিন হয়।

রোবেদ আমিন জানান, সাপের কামড়ের রোগীদের ক্ষেত্রে একটা প্রবণতা দেখা যায়, সাপ কামড় দেওয়ার পরপর তাঁদের হাত বা পা শক্ত করে বেঁধে ফেলা হয়। অনেকে এতই শক্ত করে বাঁধেন যে রক্ত চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এতে কারও কারও গ্যাংগ্রিনও হয়ে যায়। এত শক্ত করে বাঁধার কোনো প্রয়োজন নেই। আক্রান্ত হাত বা পা যেন নড়াচড়া করা না হয়, সেদিকে লক্ষ রাখলেই হবে। সে ক্ষেত্রে সতর্কতা হিসেবে হাত বা পায়ের দুই পাশে কাঠের টুকরো দিয়ে কাপড় দিয়ে আলতো করে বেঁধে যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসকের কাছে নিয়ে আসতে হবে।

রোবেদ আমিন জানান, দেশে ৮২ প্রজাতির সাপ রয়েছে। কারও কারও মতে, সাপের প্রজাতির সংখ্যা ১০০। এর মধ্যে ছয় ধরনের সাপ বিষধর। বাকি সাপগুলো কামড় দিলেও কিছু হয় না। এই সুযোগটাই নেন ওঝারা। দেশে সাপের কামড়ের রোগীদের স্বজনেরা চিকিৎসকের কাছে না এনে ওঝার কাছে নেন। বিষধর সাপ না হলে কোনো চিকিৎসা ছাড়াই ওই রোগীরা সুস্থ হয়ে যান। আর স্বজনেরা ভাবেন, ওঝার ঝাড়ফুঁকে ভালো হয়ে গেছে। বিপদটা তখনই হয়, যখন বিষধর সাপ কামড়ায়। ওঝার কাছে নেওয়ার কারণে সময় নষ্ট হয়। পরে চিকিৎসকের কাছে আনা হলেও রোগীকে বাঁচানো সম্ভব হয় না।

৮৬ শতাংশ চিকিৎসা নেয় ওঝার কাছে
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে জানা গেছে, গত বছর বন্যার সময় সাপের কামড়ে ২৩ জন মারা গেছেন। সাপের কামড়ের বিষয়ে নিয়মিতভাবে তথ্য সংগৃহীত হয় না সরকারিভাবে। সাধারণত বন্যার সময় উপকূলীয় এলাকায় সাপের কামড় বেড়ে যায়, সেই সময়ের কিছু তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। সাপের কামড়ে আক্রান্ত রোগী হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে এলে তথ্য পাওয়া যায়। এর বাইরে সাপের কামড় খেয়ে অনেকে চিকিৎসকের কাছে না এসে ওঝার দ্বারস্থ হন। সেই তথ্য লিপিবদ্ধ হয় না।

দেশে সাপের কাপড়ের ওপর সাম্প্রতিক কোনো সরকারি গবেষণাও নেই। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, রিদওয়ানুর রহমান, এম আবুল ফয়েজ, শাহজাদা সেলিম, বায়েজিদুর রহমান, আরিফুল বাশার, মোয়াজ্জেম হোসেন, জিয়াউল ইসলাম, হাবিব আহমেদ, আবুল হাসনাত মিলটন এবং অস্ট্রেলিয়ার অ্যালিসন জোনস ও ক্যাথেরিন ডি’এস্তে—দেশি-বিদেশি একদল চিকিৎসক ২০১০ সালে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অধীনে সাপের কামড়ের ওপর এক গবেষণা করেন। এতেও দেশের পুরো চিত্র উঠে আসেনি। ওই গবেষণায় বলা হয়, বাংলাদেশে বছরে গড়ে এক লাখ মানুষের মধ্যে ৬২৩ দশমিক ৪ জন সাপের কামড়ের শিকার হয়। বছরে মারা যায় ৬ হাজার ৪১ জন। সাপে কামড়ানোর পর ৮৬ শতাংশ মানুষ ওঝার কাছে যায়। চিকিৎসকের কাছে যায় মাত্র ৩ শতাংশ।

সাপের কামড়ের ওপর দেশে ২০১৬ সালে প্রকাশিত পৃথক এক গবেষণায় বলা হয়, দেশে প্রতিবছর গড়ে এক লাখ মানুষের মধ্যে ১০ দশমিক ৯৮ জন মানুষ সাপের কামড়ের শিকার হন। মারা যান এক লাখে ১ দশমিক ২২ জন। বছরে গড়ে ১৫ হাজার ৩৭২টি সাপের কামড়ের ঘটনা ঘটে। এর মধ্যে মারা যান ১ হাজার ৭০৯ জন। ‘স্নেক বাইট এপিডেমিওলজি ইন বাংলাদেশ—এ ‘ন্যাশনাল কমিউনিটি বেজড হেলথ অ্যান্ড ইনজুরি সার্ভে’ শীর্ষক গবেষণাটি যৌথভাবে করেছিল সেন্টার ফর ইনজুরি প্রিভেনশন অ্যান্ড রিসার্চ, বাংলাদেশ (সিআইপিআরবি) ও সুইডেনের ওরেব্রো ইউনিভার্সিটি।

Source: Prothom-alo

15
অস্ট্রেলিয়ার বিজ্ঞানীরা এমন একটি ঘড়ি তৈরি করেছেন, যাকে বিশ্বের সবচেয়ে নিখুঁত ঘড়ি বলা হচ্ছে। তাঁদের দাবি, কাইরোজেনিক স্যাফায়ার অসিলেটর নামের ঘড়িটি বিশ্বের যেকোনো বাণিজ্যিক সিস্টেমের চেয়ে নিখুঁত। এটি চার কোটি বছরে কোনো সময় নষ্ট করবে না।

গবেষকেরা বলেন, ঘড়িটির সিস্টেম তৈরিতে ১ হাজার ২০০ ক্যারেটের স্যাফায়ার ক্রিস্টাল ব্যবহার করা হয়েছে।

প্রযুক্তিবিষয়ক ওয়েবসাইট সিনেটের প্রতিবেদনে বলা হয়, কাইরোজেনিক স্যাফায়ার অসিলেটর অন্যান্য বাণিজ্যিক ঘড়ির চেয়ে হাজার গুণ নিখুঁত। এ স্যাফায়ার ঘড়ি তৈরির মূল কারণ প্রতিরক্ষা রাডার নেটওয়ার্কে রাডার সংকেতের স্পর্শকাতরতার বিষয় হালনাগাদ করা। এটি নেটওয়ার্কের স্পর্শকাতরতার বিষয়টি উন্নত করবে।

বর্তমানে ব্যবহৃত রাডার প্রযুক্তির চেয়ে হাজার গুণ নিখুঁতভাবে আকাশপথ বা সমুদ্রপথে বৈদেশিক হুমকি শনাক্ত করতে সক্ষম হবে এ প্রযুক্তি।

Source: Prothom-alo

Pages: [1] 2 3 ... 25