Show Posts

This section allows you to view all posts made by this member. Note that you can only see posts made in areas you currently have access to.


Topics - faruque

Pages: 1 ... 41 42 [43]
631
                সূরা কাদর
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
১ নিশ্চয়ই আমি এটা অবতীর্ণ করেছি মহিমান্বিত রজনীতে;
২ তুমি কি জান সেই মহিমান্বিত রজনীটি কি ?
৩ মহিমান্বিত রজনী সহস্র মাস অপেক্ষা উত্তম।
৪ ঐ রাত্রিতে ফেরেশতাগণ ও (তাদের সর্দার) ‘রুহ’ অবতীর্ণ হর প্রত্যেক কাজে তাদের প্রতিপালকের অনুমতিক্রমে।
৫ শান্তিই শান্তি, সেই রজনী ঊষার অভ্যুদয় পর্যন্ত।
________________________________________
ইমাম আবূ মুহাম্মদ ইবনে আবী হাতিম (র) এই সূরার তাফসীর প্রসঙ্গে একটি বিস্ময়কর রিওয়াইয়াত আনয়ন করেছেন। হযরত কা’ব রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন যে, সপ্তম আকাশের শেষ সীমায় জান্নাতের সাথে সংযুক্ত রয়েছে সিদরাতুল মুনতাহা, যা দুনিয়া ও আখিরাতের দূরত্বের উপর অবস্থিত। এর উচ্চতা জান্নাতে এবং এর শিকড় ও শাখা প্রশাখাগুলো কুরসীর নিচে প্রসারিত। তাতে এতো ফেরেশতা অবস্থান করেন যে, তাদের সংখ্যা নির্ণয় করা আল্লাহ পাক ছাড়া আর কারো পক্ষে সম্ভব নয়। এমন কি চুল পরিমাণও জায়গা নেই যেখানে ফেরেশতা নেই। ঐ বৃক্ষের মধ্যভাগে হযরত জিরবাঈল আলাইহি সালাম অবস্থান করেন।
আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে হযরত জিবরাঈল আলাইহি সালামকে ডাক দিয়ে বলা হয়, “হে জিবরাঈল (আ) কদরের রাত্রিতে সমস্ত ফেরেশতাকে নিয়ে পৃথিবীতে চলে যাও।” এই ফেরেশতাদের সবারই অন্তর স্নেহ ও দয়ায় ভরপুর। প্রত্যকে মুমিনের জন্যে তাঁদের মনে অনুগ্রহের প্রেরণা রয়েছে। সূর্যাস্তের সাথে সাথেই কদরের রাত্রিতে এসব ফেরেশতা হযরত জিরবাঈল আলাইহি সালাম এর সাথে নেমে সমগ্র পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়েন এবং সব জায়গায় সিজদায় পড়ে যান। তাঁরা সকল ঈমানদার নারী পুরুষের জন্য দুয়া করেন। কিন্তু তাঁরা গীর্জায় মন্দিরে, অগ্নিপূজার জায়গায়, মূর্তিপূজার জায়গায়, আবর্জনা ফেলার জায়গায়, নেশা খোরের অবস্থান স্থলে, নেশাজাত দ্রব্যাদি রাখার জায়গায়, মূর্তি রাখার জায়গায়, গান বাজনার সাজ সরঞ্জাম রাখার জায়গায় এবং প্রস্রাব পায়খানার জায়গায় গমন করেন না। বাকি সব জায়গায় ঘুরে ঘুরে তাঁরা ঈমানদার নারী পুরুষের জন্যে দুয়া করে থাকেন। হযরত জিরবাঈল আলাইহি সালাম সকল ঈমানদারের সাথে করমর্দন করেন। তাঁর করমর্দনের সময় মুমিন ব্যক্তির শরীরের লোমকূপ খাড়া হয়ে যায়, মন নরম হয় এবং অশ্রুধারা নেমে আসে। এসব নিদর্শন দেখা দিলে বুঝতে হবে তার হাত হযরত জিরবাঈল আলাইহি সালাম এর হাতের মধ্যে রয়েছে।
হযরত কা’ব রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন যে, ঐ রাত্রে যে ব্যক্তি তিনবার লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ পাঠ করে, তার প্রথমবারের পাঠের সাথে সাথেই সমস্ত গুনাহ মাফ হয়ে যায়, দ্বিতীয়বার পড়ার সাথে সাথেই আগুন থেকে মুক্তি পেয়ে যায় এবং তৃতীয়বারের পাঠের সাথে সাথেই জান্নাতে প্রবেশ সুনিশ্চিত হয়ে যায়। বর্ণনাকারী বলেন; হে আবু ইসহাক (র) ! যে ব্যক্তি সত্য বিশ্বাসের সাথে এ কালেমা উচ্চারণ করে তার কি হয়? জবাবে তিনি বলেন; সত্য বিশ্বাসীর মুখ হতেই তো এ কালেমা উচ্চারিত হবে। যে আল্লাহর হাতে আমার প্রাণ রয়েছে তাঁর শপথ ! লায়লাতুল কাদর কাফির ও মুনাফিকদের উপর এতো ভারী বোধ হয় যে, যেন তাদের পিঠে পাহাড় পতিত হয়েছে। ফজর পর্যন্ত ফেরেশতারা এভাবে রাত্রি কাটিয়ে দেন।
তারপর হযরত জিরবাঈল আলাইহি সালাম উপরের দিকে উঠে যান এবং অনেক উপরে উঠে স্বীয় পালক ছড়িয়ে দেন। অতঃপর তিনি সেই বিশেষ দুটি সবুজ পালক প্রসারিত করেন যা অন্য কোন সময় প্রসারিত করেন না। এর ফলে সূর্যের কিরণ মলিম ও স্তিমিত হয়ে যায়। তারপর তিনি সমস্ত ফেরেশতাকে ডাক দিয়ে নিয়ে যান। সব ফেরেশতা উপরে উঠে গেলে তাদের নূর এবং হযরত জিরবাঈল আলাইহি সালাম এর পালকের নূর মিলিত হয়ে সূর্যের কিরণকে নিষ্প্রভ করে দেয়। ঐ দিন সূর্য অবাক হয়ে যায়। সমস্ত ফেরেশতা সেদিন আকাশ ও জমীনের মধ্যবর্তী স্থানের ঈমানদার নারী পুরুষের জন্য রহমত কামনা করে তাদের জন্যে ক্ষমা প্রার্থনা করতে থাকেন। তাঁরা ঐ সকল লোকের জন্যেও দুয়া করেন যারা সৎ নিয়তে রোযা রাখে এবং সুযোগ পেলে পরবর্তী রমযান মাসেও আল্লাহর ইবাদত করার মনোভাব পোষণ করে।
সন্ধ্যায় সবাই প্রথম আসমানে পৌঁছে যান। সেখানে অবস্থানকারী ফেরেশতারা এসে তখন পৃথিবীতে অবস্থানকারী ঈমানদারদের অমুকের পুত্র অমুক, অমুকের কন্যা অমুক, বলে বলে খবরাখবর জিজ্ঞেস করেন। নির্দিষ্ট ব্যক্তি সম্পর্কে জিজ্ঞেস করার পর কোন কোন ব্যক্তি সম্পর্কে ফেরেশতারা বলেন; তাকে আমরা গত বছর ইবাদতে লিপ্ত দেখেছিলাম, কিন্তু এবার সে বিদআতে লিপ্ত হয়ে পড়েছে। আবার অমুককে গত বছর বিদআতে লিপ্ত দেখেছিলাম, কিন্তু এবার তাকে ইবাদতে লিপ্ত দেখে এসেছি।
প্রশ্নকারী ফেরেশতা তখন শেষোক্ত ব্যক্তির জন্য আল্লাহর দরবারে মাগফিরাত, রহমতের দুয়া করেন। ফেরেশতারা প্রশ্নকারী ফেরেশতাদেরকে আরো জানান যে, তাঁরা অমুক অমুককে আল্লাহর যিকর করতে দেখেছেন, অমুক অমুককে রুকূতে, অমুক অমুককে সিজদায় পেয়েছেন। এবং অমুক অমুককে কুরআন তিলাওয়াত করতে দেখেছেন। একরাত একদিন প্রথম আসমানে কাটিয়ে তাঁরা দ্বিতীয় আসমানে গমন করেন। সেখানেই একই অবস্থার সৃষ্টি হয়। এমনি করে তাঁরা নিজেদের জায়গা সিদরাতুল মুনতাহায় গিয়ে পৌঁছেন। সিদরাতুল মুনতাহা তাঁদেরকে বলেঃ আমাতে অবস্থানকারী হিসেবে তোমাদের প্রতি আমাদের দাবী রয়েছে। আল্লাহকে যারা ভালোবাসে আমিও তাদেরকে ভালবাসি। আমাকে তাদের অবস্থার কথা একটু শোনাও, তাদের নাম শোনাও।
হযরত কা’ব রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন; ফেরেশতারা তখন আল্লাহর পূণ্যবান বান্দাদের নাম ও পিতার নাম জানাতে শুরু করেন। তারপর জান্নাত সিদরাতুল মুনতাহাকে সম্বোধন করে বলে; তোমাতে অবস্থানকারীরা তোমাকে যে সব খবর শুনিয়েছে সেসব আমাকেও একটু শোনাও। তখন সিদরাতুল মুনতাহা জান্নাতকে সব কথা শুনিয়ে দেয়। শোনার পর জান্নাত বলে ; অমুক পুরুষ ও নারীর উপর আল্লাহর রহমত বর্ষিত হোক। হে আল্লাহ ! অতি শীঘ্রই তাদেরকে আমার সাথে মিলিত করুন।
হযরত জিরবাঈল আলাইহি সালাম সর্বপ্রথম নিজের জায়গায় পৌঁছে যান। তাঁর উপর তখন ইলহাম হয় এবং তিনি বলেন; হে আল্লাহ ! আমি আপনার অমুক অমুক বান্দাকে সিজদারত অবস্থায় দেখেছি। আপনি তাদেরকে ক্ষমা করে দিন। আল্লাহ তায়ালা তখন বলেনঃ আমি তাদেরকে ক্ষমা করে দিলাম। হযরত জিরবাঈল আলাইহি সালাম তখন আরশ বহনকারী ফেরেশতাদরকে এ কথা শুনিয়ে দেন। তখন ফেরেশতারা পরস্পর বলাবলি করেন যে, অমুক অমুক নারী পুরুষের উপর আল্লাহর রহমত ও মাগফিরাত হয়েছে। তারপর হযরত জিরবাঈল আলাইহি সালাম বলেন; হে আল্লাহ ! গত বছর আমি অমুক অমুক ব্যক্তিতে সুন্নাতের উপর আমলকারী এবং আপনার ইবাদতকারী হিসেবে দেখেছি কিন্তু এবার সে বিদআতে লিপ্ত হয়ে পড়েছে এবং আপনার বিধি বিধানের অবাধ্যতা করেছে। তখন আল্লাহ তাবারাক ওয়া তা’য়ালা বলেনঃ হে জিবরাঈল (আ) ! সে যদি মৃত্যুর তিন মিনিট পূর্বেও তাওবা করে নেয় তাহলে আমি তাকে মাফ করে দেবো। হযরত জিরবাঈল আলাইহি সালাম তখন হঠাৎ করে বলেনঃ হে আল্লাহ ! আপনারই জন্যে সমস্ত প্রশংসা। আপনি সমস্ত প্রশংসা পাওয়ার যোগ্য। হে আমার প্রতিপালক ! আপনি আপনার সৃষ্ট জীবের উপর সবচেয়ে বড় মেহেরবান। বান্দা তার নিজের উপর যেরূপ মেহেরবানী করে থাকে আপনার মেহেরবানী তাদের প্রতি তার চেয়েও অধিক। ঐ সময় আরশ এবং ওর চারপাশের পর্দাসমূহ এবং আকাশ ও র মধ্যস্থিত সবকিছুই কেঁপে ওঠে বলেঃ “করুণাময় আল্লাহর জন্যেই সমস্ত প্রশংসা”। হযরত কা’ব রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেনঃ যে ব্যক্তি রমযানের রোযা পূর্ণ করে রমযানের পরেও পাপমুক্ত জীবন যাপনের মনোভাব পোষণ করে সে বিনা প্রশ্নে ও বিনা হিসেবে জান্নাতে প্রবেশ করবে।
________________________________________
মুসনাদে আহমাদে হযরত আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু হতে বর্ণিত আছে যে, রমযান মাস এসে গেলে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলতেন; “(হে জনমণ্ডলী) তোমাদের উপর রমযান মাস এসে পড়েছে। এ মাস খুবই বরকতপূর্ণ বা কল্যাণময়। আল্লাহ তায়ালা তোমাদের উপর এ মাসের রোযা ফরয করেছেন। এ মাসে জান্নাতের দরজা খুলে দেয়া হয় এবং জাহান্নামের দরজা বন্ধ করে দেয়া হয়। আর শয়তানদেরকে বন্দী করে রাখা হয়। এ মাসে এমন একটি রাত্রি রয়েছে যে রাত্রি হাজার মাসের চেয়েও উত্তম। এ মাসে কল্যাণ হতে যে ব্যক্তি বঞ্চিত হয় সে প্রকৃতই হতভাগ্য।” (আহমাদ, নাসায়ী)
আবূ দাউদ তায়ালাসী (র) বর্ণনা করেছেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন; “লায়লাতুল কাদর পরিষ্কার, স্বচ্ছ, শান্তিপূর্ণ এবং শীত গরম হতে মুক্ত রাত্রি। এ রাত্রি শেষে সূর্য স্নিগ্ধ আলোকআভায় রক্তিম বর্ণে উদিত হয়।”
হযরত আবূ আসিম নুবায়েল (র) স্বীয় সনদে হযরত জাবির (রাদিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণনা করেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একবার বলেছিলেন; “আমাকে লায়লাতুল কাদর দেখানো হয়েছে। তারপর ভুলিয়ে দেয়া হয়েছে। রমযান মাসের শেষ দশ রাত্রির মধ্যে এটা রয়েছে। এ রাত্রি খুবই শান্তিপূর্ণ, মর্যাদাপূর্ণ, স্বচ্ছ ও পরিষ্কার। এ রাত্রে শীতও বেশি থাকে না এবং গরমও বেশি থাকে না। এ রাত্রি এতো বেশি রওশন ও উজ্জ্বল থাকে যে, মনে হয় যেন চাঁদ হাসছে। রৌদ্রের তাপ ছড়িয়ে পড়ার আগে সূর্যের সাথে শয়তান আত্মপ্রকাশ করে না।”
আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু হতে আরো বর্ণিত আছে যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন;“যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে ও সওয়াবের নিয়তে কদরের রাত্রিতে ইবাদত করে, তার পূর্বাপর সমস্ত গুনাহ মার্জনা করে দেয়া হয়।” (বুখারী, মুসলিম)
সোর্সঃ তাফসীর ইবনে কাসীর, অষ্টাদশ খণ্ড (সূরা কাদর এর তাফসীরের অংশবিশেষ)


632
Ramadan and Fasting / Last Ten Days of Ramadan & Its Fazilat
« on: July 28, 2013, 12:07:45 PM »
রমজানের শেষ দশকের ফজিলত ও তাৎপর্য

রমজান মাসের শেষ দশকের বিশেষ ফজিলত রয়েছে এবং আছে বেশ কিছু বৈশিষ্ট্য।
এগুলো হল :

(১) এ দশ দিনের মাঝে রয়েছে লাইলাতুল কদর নামের একটি রাত। যা হাজার মাস থেকেও শ্রেষ্ঠ। যে এ রাতে ঈমান ও ইহতিসাবের সাথে ইবাদত-বন্দেগি করবে তার অতীতের পাপগুলো ক্ষমা করে দেয়া হবে।

(২) নবী করিম (সাঃ) এ রাতে ইবাদত-বন্দেগিতে বেশি সময় ও শ্রম দিতেন, যা অন্য কোন রাতে দেখা যেত না। যেমন মুসলিম শরীফে আয়েশা (রাঃ) বর্ণিত হাদিসে এসেছে যে, তিনি এ রাতে কোরআন তিলাওয়াত, জিকির, সালাত ও দোয়ার মাধ্যমে জাগ্রত থাকতেন এরপর সেহরি গ্রহণ করতেন।
রমজানের শেষ দশকের ফজিলত ও তাৎপর্য রমজান মাসের শেষ দশকের বিশেষ ফজিলত রয়েছে এবং আছে বেশ কিছু বৈশিষ্ট্য। এগুলো হল :

(১) এ দশ দিনের মাঝে রয়েছে লাইলাতুল কদর নামের একটি রাত। যা হাজার মাস থেকেও শ্রেষ্ঠ। যে এ রাতে ঈমান ও ইহতিসাবের সাথে ইবাদত-বন্দেগি করবে তার অতীতের পাপগুলো ক্ষমা করে দেয়া হবে।

(২) নবী করিম (সাঃ) এ রাতে ইবাদত-বন্দেগিতে বেশি সময় ও শ্রম দিতেন, যা অন্য কোন রাতে দেখা যেত না। যেমন মুসলিম শরীফে আয়েশা (রাঃ) বর্ণিত হাদিসে এসেছে যে, তিনি এ রাতে কোরআন তিলাওয়াত, জিকির, সালাত ও দোয়ার মাধ্যমে জাগ্রত থাকতেন এরপর সেহরি গ্রহণ করতেন।

(৩) রমজানের শেষ দশক আসলে রাসুলুল্লাহ (সাঃ) পরনের লুঙ্গি শক্ত করে নিতেন। রাত্রি জাগরণ করতেন এবং পরিবারের সকলকে জাগিয়ে দিতেন। যেমন বোখারি ও মুসলিমে আয়েশা (রাঃ) বর্ণিত হাদিসে এসেছে। তিনি এ দশদিনের রাতে মোটেই নিদ্রা যেতেন না। পরিবারের সকলকে তিনি এ রাতে ইবাদত-বন্দেগি করার জন্য জাগিয়ে দিতেন। রাসুলুল্লাহ (সাঃ) লুঙ্গি শক্ত করে নিতেন’ কথাটির অর্থ হল তিনি এ দিনগুলোতে স্ত্রীদের থেকে আলাদা হয়ে যেতেন।

(৪) এ দশদিনের একটি বৈশিষ্ট্য হল, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এ শেষ দশদিনে মসজিদে এতেকাফ করতেন। প্রয়োজন ব্যতীত তিনি মসজিদ থেকে বের হতেন না। লাইলাতুল কদরের গুরুত্ব আল্লাহ রাব্বুল আলামিন এ রাতকে সকল রাতের চেয়ে শ্রেষ্ঠত্বের মর্যাদা দিয়েছেন। তিনি তার কালামে এ রাতকে প্রশংসার সাথে উল্লেখ করেছেন। তিনি তাঁর কালাম সম্পর্কে বলতে যেয়ে এরশাদ করেন :—
إِنَّا أَنْزَلْنَاهُ فِي لَيْلَةٍ مُبَارَكَةٍ إِنَّا كُنَّا مُنْذِرِينَ ﴿৩﴾ فِيهَا يُفْرَقُ كُلُّ أَمْرٍ حَكِيمٍ ﴿৪﴾. (الدخان)
‘আমি তো ইহা অবতীর্ণ করেছি এক বরকতময় রজনিতে। আমি তো সতর্ককারী। এ রজনিতে প্রত্যেক প্রজ্ঞাপূর্ণ বিষয় স্থিরকৃত হয়।’ সূরা আদ-দুখান : ৩-৪
বরকতময় রজনি হল লাইলাতুল কদর। আল্লাহ তাআলা একে বরকতময় বলে অভিহিত করেছেন। কারণ এ রাতে রয়েছে যেমন বরকত তেমনি কল্যাণ ও তাৎপর্য। বরকতের প্রধান কারণ হল এ রাতে আল-কোরআন নাজিল হয়েছে। এ রাতে প্রত্যেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়-সিদ্ধান্ত লওহে মাহফুজ থেকে ফেরেশতাদের হাতে অর্পণ করা হয় বাস্তবায়নের জন্য। এ রাতের অপর একটি বৈশিষ্ট্য হল আল্লাহ তাআলা এ রাত সম্পর্কে একটি পূর্ণ সূরা অবতীর্ণ করেছেন। যা কিয়ামত পর্যন্ত পঠিত হতে থাকবে।
إِنَّا أَنْزَلْنَاهُ فِي لَيْلَةِ الْقَدْرِ ﴿১﴾ وَمَا أَدْرَاكَ مَا لَيْلَةُ الْقَدْرِ ﴿২﴾ لَيْلَةُ الْقَدْرِ خَيْرٌ مِنْ أَلْفِ شَهْرٍ ﴿৩﴾ تَنَزَّلُ الْمَلَائِكَةُ وَالرُّوحُ فِيهَا بِإِذْنِ رَبِّهِمْ مِنْ كُلِّ أَمْرٍ ﴿৪﴾ سَلَامٌ هِيَ حَتَّى مَطْلَعِ الْفَجْرِ ﴿৫﴾ القدر
‘নিশ্চয় আমি কোরআন অবতীর্ণ করেছি এক মহিমান্বিত রজনিতে। আর মহিমান্বিত রজনি সম্পর্কে তুমি কী জান ? মহিমান্বিত রজনি সহস্র মাস অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ। সে রাতেই ফেরেশতাগণ ও রুহ অবতীর্ণ হয় প্রত্যেক কাজে তাদের প্রতিপালকের অনুমতিক্রমে। শান্তিই শান্তি, সে রজনি উষার আবির্ভাব পর্যন্ত।
সূরা আল-কদর এ সুরাতে যে সকল বিষয় জানা গেল তা হল:

(১) এ রাত এমন এক রজনি যাতে মানবজাতির হেদায়াতের আলোকবর্তিকা মহা গ্রন্থ আল-কোরআন অবতীর্ণ হয়েছে।
(২) এ রজনি হাজার মাস অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ। অর্থাৎ তিরাশি বছরের চেয়েও এর মূল্য বেশি।
(৩) এ রাতে ফেরেশতাগণ রহমত, বরকত ও কল্যাণ নিয়ে পৃথিবীতে অবতরণ করে থাকে।
(৪) এ রজনি শান্তির রজনি। আল্লাহর বান্দারা এ রাতে জাহান্নামের শাস্তি থেকে মুক্তি পেয়ে শান্তি অর্জন করে থাকে।
(৫) সময়ের প্রতি গুরুত্ব দেয়া। এ আয়াতগুলোতে অল্প সময়ে বেশি কাজ করার জন্য উৎসাহ প্রদান করা হল। যত সময় বেশি তত বেশি কাজ করতে হবে। সময় নষ্ট করা চলবে না।
(৬) গুনাহ ও পাপ থেকে ক্ষমা লাভ। এ রাতের এই ফজিলত সম্পর্কে বোখারি ও মুসলিম বর্ণিত হাদিসে এসেছে—
إن النبي صلى الله عليه وسلم قال : من قام ليلة القدر إيمانا واحتسابا غفر له ما تقدم من ذنبه. رواه البخاري ومسلم
নবী করিম (সাঃ) বলেছেন : যে লাইলাতুল কদরে ঈমান ও ইহতিসাবের সাথে সালাত আদায় ও ইবাদত-বন্দেগি করবে তার অতীতের পাপসমূহ ক্ষমা করে দেয়া হবে। বর্ণনায় : বোখারি ও মুসলিম
লাইলাতুল কদর কখন ?
আল-কোরআনে নির্দিষ্ট করে বলা হয়নি লাইলাতুল কদর কোন রাত। তবে কুরআনের ভাষ্য হল লাইলাতুল কদর রমজান মাসে। কিয়ামত পর্যন্ত রমজান মাসে লাইলাতুল কদর অব্যাহত থাকবে। এবং এ রজনি রমজানের শেষ দশকে হবে বলে সহি হাদিসে এসেছে। এবং তা রমজানের শেষ দশকের বেজোড় রাতগুলোতে হওয়ার সম্ভাবনা বেশি বলে হাদিসে এসেছে।
تحروا ليلة القدر في العشر الأواخر من رمضان. رواه البخاري
‘তোমরা রমজানের শেষ দশকে লাইলাতুল কদর অন্বেষণ কর।’ বর্ণনায়: বোখারি
এবং রমজানের শেষ সাত দিনে লাইলাতুল কদর থাকার সম্ভাবনা অধিকতর। যেমন হাদিসে এসেছে
. . . فمن كان متحر بها فليتحرها في السبع الأواخر. متفق عليه
‘যে লাইলাতুল কদর অন্বেষণ করতে চায় সে যেন শেষ সাত দিনে অন্বেষণ করে।’ বর্ণনায় : বোখারি ও মুসলিম
অধিকতর সম্ভাবনার দিক দিয়ে প্রথম হল রমজান মাসের সাতাশ তারিখ। দ্বিতীয় হল পঁচিশ তারিখ। তৃতীয় হল ঊন ত্রিশ তারিখ। চতুর্থ হল একুশ তারিখ। পঞ্চম হল তেইশ তারিখ। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন এ রাতকে গোপন রেখেছেন আমাদের উপর রহম করে। তিনি দেখতে চান এর বরকত ও ফজিলত লাভের জন্য কে কত প্রচেষ্টা চালাতে পারে। লাইলাতুল কদরে আমাদের করণীয় হল বেশি করে দোয়া করা। আয়েশা (রাঃ) নবী করিম (সাঃ) কে জিজ্ঞেস করলেন, লাইলাতুল কদরে আমি কি দোয়া করতে পারি? তিনি বললেন, বলবে—
اَللّهُم إِنَّكَ عَفُوٌّ تٌحِبُّ العَفْوَ فَاعْفُ عَنِّيْ . رواه الترمذي
‘হে আল¬াহ ! আপনি ক্ষমাশীল, ক্ষমাকে ভালোবাসেন, অতএব আমাকে ক্ষমা করুন।’ বর্ণনায় : তিরমিজি
এতেকাফ : এতেকাফ হল সকল কাজ থেকে মুক্ত হয়ে আল্লাহর ইবাদতের জন্য মসজিদে অবস্থান করা। এটা হল সুন্নত। আয়েশা (রাঃ) বলেন :—
كان النبي صلى الله عليه وسلم يعتكف في العشر الأواخر من رمضان حتى توفاه الله عز وجل، ثم اعتكف أزوجه من بعده. رواه البخاري ومسلم
‘রাসুলুল্লাহ (সাঃ) রমজান মাসের শেষ দশকে মসজিদে এতেকাফ করতেন। যতদিন না আল্লাহ তাকে মৃত্যু দান করেছেন ততদিন তিনি এ আমল অব্যাহত রেখেছেন। তার ইন্তেকালের পর তার স্ত্রী-গণ এতেকাফ করেছেন।’ বর্ণনায় : বোখারি ও মুসলিম

এতেকাফের উদ্দেশ্য:

মানুষের ঝামেলা থেকে দূরে থেকে আল্লাহ তাআলার ইবাদতে একাগ্রচিত্তে নিয়োজিত হওয়া। এ লক্ষ্যে কোন মসজিদে অবস্থান করে আল্লাহর তরফ থেকে সওয়াব ও লাইলাতুল কদর লাভ করার আশা করা। এতেকাফকারীর কর্তব্য হল অনর্থক কথা ও কাজ পরিহার করে সালাত, কোরআন তিলাওয়াত, জিকির-আজকার, ইস্তিগফার, দোয়া ইত্যাদি ইবাদত-বন্দেগিতে লিপ্ত থাকা। তবে পরিবার পরিজন বা অন্য কারো সাথে অতিপ্রয়োজনীয় কথা বলতে দোষ নেই। এতেকাফকারী নিজ অন্তরকে সর্বদা আল্লাহর সাথে সম্পৃক্ত রাখতে চেষ্টা করবে। নিজের অবস্থার দিকে খেয়াল করবে। আল্লাহর আদেশ-নিষেধ পালনের ব্যাপারে নিজের অলসতা ও অবহেলা করার কথা মনে করবে। নিজের পাপাচার সত্ত্বেও আল্লাহ যে কত নেয়ামত দিয়েছেন তা স্মরণ করে তার প্রতি কৃতজ্ঞ হবে। গভীরভাবে আল্লাহর কালাম অধ্যয়ন করবে। খাওয়া-দাওয়া, নিদ্রা ও গল্প গুজব কমিয়ে দেবে। কেননা এ সকল কাজ-কর্ম আল্লাহর স্মরণ থেকে অন্তরকে ফিরিয়ে রাখে। অনেকে এতেকাফকে অত্যধিক খাওয়া-দাওয়া ও সাথিদের সাথে গল্প-গুজব করে সময় কাটানোর সুযোগ হিসেবে গ্রহণ করে থাকেন। এতে এতেকাফের ক্ষতি হয় না বটে তবে আল্লাহর রাসূলের এতেকাফ ছিল অন্য রকম। এতেকাফ অবস্থায় স্ত্রী সহবাস, চুম্বন, স্পর্শ নিষেধ। যেমন আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেন :
وَلَا تُبَاشِرُوهُنَّ وَأَنْتُمْ عَاكِفُونَ فِي الْمَسَاجِد .(البقرة : ১৮৭)
‘তোমরা মসজিদে এতেকাফরত অবস্থায় স্ত্রীদের সাথে মিলিত হবে না।’ সূরা আল-বাকারা : ১৮৭
শরীরের কিছু অংশ যদি মসজিদ থেকে বের করা হয় তাতে দোষ নেই। নবী করিম (সাঃ) এতেকাফ অবস্থায় নিজ মাথা মসজিদ থেকে বের করতেন। তখন আম্মাজান আয়েশা (রাঃ) তাঁর মাথার চুল বিন্যস্ত করে দিতেন।
এতেকাফ অবস্থায় মসজিদ থেকে বের হওয়া ও তার বিধান : এতেকাফ অবস্থায় মসজিদ থেকে বের হওয়া তিন ধরনের হতে পারে:—
এক.
মানবীয় প্রয়োজনে বের হওয়ার অনুমতি আছে। যেমন পায়খানা, প্রস্রাবের জন্য, খাওয়া-দাওয়ার জন্য, পবিত্রতা অর্জনের জন্য। তবে শর্ত হল এ সকল বিষয় যদি মসজিদের গণ্ডির মাঝে সেরে নেয়া যায় তবে মসজিদ থেকে বের হওয়া যাবে না।
দুই.
এমন সকল নেক আমল বা ইবাদত-বন্দেগির জন্য বের হওয়া যাবে না যা তার জন্য অপরিহার্য নয়। যেমন রোগীর সেবা করা, জানাজাতে অংশ নেয়া ইত্যাদি। তিন. এমন সকল কাজের জন্য মসজিদ থেকে বের হওয়া যাবে না যা এতেকাফের বিরোধী। যেমন ক্রয়-বিক্রয়, চাষাবাদ ইত্যাদি। এতেকাফ অবস্থায় এ সকল কাজের জন্য মসজিদ থেকে বের হলে এতেকাফ বাতিল হয়ে যায়।


633
এতেকাফের সংজ্ঞা

বিশেষ নিয়তে বিশেষ অবস্থায় আল্লাহ তা-আলার আনুগত্যের উদ্দেশ্যে মসজিদে অবস্থান করাকে এতেকাফ বলে।
এতেকাফের ফজিলত
এতেকাফ একটি মহান ইবাদত, মদিনায় অবস্থানকালীন সময়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রতি বছরই এতেকাফ  পালন করেছেন। দাওয়াত, তরবিয়ত, শিক্ষা এবং জিহাদে ব্যস্ত থাকা সত্ত্বেও রমজানে তিনি এতেকাফ ছাড়েননি। এতেকাফ ঈমানি তরবিয়তের একটি পাঠশালা, এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হিদায়েতি আলোর একটি প্রতীক। এতেকাফরত অবস্থায় বান্দা নিজেকে আল্লাহর ইবাদতের জন্য দুনিয়ার অন্যান্য সকল বিষয়  থেকে আলাদা করে নেয়।  ঐকান্তিকভাবে মশগুল হয়ে পড়ে আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের নিরন্তর সাধনায়। এতেকাফ  ঈমান বৃদ্ধির একটি মূখ্য সুযোগ। সকলের উচিত এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে নিজের ইমানি চেতনাকে প্রাণিত করে তোলা ও উন্নততর পর্যায়ে পৌছেঁ দেয়ার চেষ্টা করা।
আল-কুরআনুল কারিমে বিভিন্নভাবে এতেকাফ সম্পর্কে বর্ণনা এসেছে, ইবরাহিম আ. ও ইসমাইল আ.  এর কথা উল্লেখ করে এরশাদ হয়েছে :
وَعَهِدْنَا إِلَى إِبْرَاهِيمَ وَإِسْمَاعِيلَ أَنْ طَهِّرَا بَيْتِيَ لِلطَّائِفِينَ وَالْعَاكِفِينَ وَالرُّكَّعِ السُّجُودِ) ﴿১২৫﴾ سورة البقرة
“এবং আমি ইবরাহিম ও ইসমাইলকে আদেশ করলাম, তোমরা আমার গৃহকে তাওয়াফকারী, এতেকাফকারী ও রুকু-সেজদাকারীদের জন্য পবিত্র করো।” ( সূরা বাকারা : ১২৫)
এতেকাফ অবস্থায় স্ত্রীদের সাথে কি আচরণ হবে তা বলতে গিয়ে আল্লাহ তা-আলা বলেন :
وَلَا تُبَاشِرُوهُنَّ وَأَنْتُمْ عَاكِفُونَ فِي الْمَسَاجِدِ.  سورة البقرة ১৮৭
“আর তোমরা মসজিদে এতেকাফ কালে স্ত্রীদের সাথে মেলামেশা করো না।” ( সূরা বাকারা : ১৮৭)
ইবরাহিম আ.  তাঁর পিতা এবং জাতিকে লক্ষ্য করে মূর্তির ভর্ৎসনা করতে যেয়ে যা বলেছিলেন, আল্লাহ তা-আলা তা উল্লেখ করে বলেন:
إِذْ قَالَ لِأَبِيهِ وَقَوْمِهِ مَا هَذِهِ التَّمَاثِيلُ الَّتِي أَنْتُمْ لَهَا عَاكِفُونَ ﴿৫২﴾ سورة الأنبياء
“যখন তিনি তাঁর পিতা ও তাঁর সম্প্রদায়কে বললেন: “এই মূর্তিগুলো কি, যাদের পূজারি (এতেকাফকারী) হয়ে) তোমরা বসে আছ” ?  (সূরা আম্বিয়া : ৫২)
রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অসংখ্য হাদিস এতেকাফ সম্পর্কে বর্ণিত হয়েছে, তার মধ্য হতে ফজিলত সম্পর্কিত কিছু হাদিস নিচে উল্লেখ করা হল।
عن عائشة رضي الله عنها قالت: كان رسول الله صلي الله عليه وسلم يعتكف العشر الأواخر حتي توفاه الله، ثم أزواجه من بعده.     رواه البخاري و مسلم
আয়েশা রাদি-আল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমজানের শেষের দশকে এতেকাফ করেছেন, ইন্তেকাল পর্যন্ত। এরপর তাঁর স্ত্রীগণ এতেকাফ করেছেন। [ বুখারি ও মুসলিম]
عن عائشة رضي الله عنها قالت: كان رسول الله صلي الله عليه وسلم يعتكف في كل رمضان . ( البخاري  رقم الحديث :  ২০৪১)
অর্থাৎ: আয়েশা রাদি-আল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি  ওয়াসাল্লাম প্রত্যেক রমজানে এতেকাফ করতেন। (বুখারি ২০৪১)
অন্য এক হাদিসে এসেছে—
إني اعتكفت العشر الأول ألتمس هذه الليلة، ثم اعتكفت العشر الأوسط، ثم أُتيت فقيل لي إنها في العشر الأواخر فمن أحب منكم أن يعتكف فليعتكف، فاعتكف الناس معه، قال: وإني أُريتها ليلة وتر وأني أسجد صبيحتها في طين وماء، فأصبح من ليلة إحدى وعشرين وقد قام إلى الصبح، فمطرت السماء فوكف المسجد، فأبصرت الطين والماء، فخرج حين فرغ من صلاة الصبح وجبينه وروثة أنفه فيهما الطين والماء، وإذا هي ليلة إحدى وعشرين
আমি (প্রথমে) এ রাতের সন্ধানে প্রথম দশে এতেকাফ পালন করি। অত:পর এতেকাফ পালন করি মাঝের দশে। পরবর্তীতে ওহির মাধ্যমে আমাকে জানানো হয় যে, এ রাত শেষ দশে রয়েছে। সুতরাং তোমাদের মাঝে যে (এ দশে) এতেকাফ পালনে আগ্রহী, সে যেন তা পালন করে। লোকেরা তার সাথে এতেকাফ পালন করল। রাসূল বলেন—আমাকে তা এক বেজোড় রাতে দেখানো হয়েছে এবং দেখানো হয়েছে যে, আমি সে ভোরে কাদা ও মাটিতে সেজদা দিচ্ছি। অত:পর রাসূল একুশের রাতের ভোর যাপন করলেন, ফজর পর্যন্ত তিনি কিয়ামুল্লাইল করেছিলেন। তিনি ফজর আদায়ের জন্য দণ্ডায়মান হয়েছিলেন। তখন আকাশ ছেপে বৃষ্টি নেমে এল, এবং মসজিদে চুঁইয়ে চুঁইয়ে পানি পড়ল। আমি কাদা ও পানি দেখতে পেলাম। ফজর সালাত শেষে যখন তিনি বের হলেন, তখন তার কপাল ও নাকের পাশে ছিল পানি ও কাদা। সেটি ছিল একুশের রাত।
আবু হুরাইরা রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন :
كان النبي صلي الله عليه و سلم يعتكف في كل رمضان عشرة أيام، فلما كان العام الذي قبض فيه اعتكف عشرين يوماً
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রতি রমজানে দশ দিন এতেকাফ  করতেন, তবে যে বছর তিনি পরলোকগত হন, সে বছর তিনি বিশ দিন এতেকাফে কাটান।
আবু হুরাইরা  রা. হতে বর্ণিত হাদিসে উভয়টির উল্লেখ পাওয়া যায়।  তিনি বলেন —
عن أبي هريرة رضي الله عنه قال: كان النبي صلي الله عليه وسلم يعتكف في كل رمضان عشرة أيام فلما كان العام الذي قبض فيه اعتكف عشرين يوما. رواه البخاري
আবু হুরাইরা রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন : রাসূলুল্লাহ  সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রতি রমজানের শেষ দশদিন এতেকাফ করতেন। তবে যে বছর পরলোকগত হন তিনি বিশ দিন এতেকাফ করেছেন। ( বুখারি)
عن عائشة رضي الله عنها أن النبي صلي  الله عليه وسلم اعتكف معه بعض نسائه وهي مستحاضة تري الدم فربما وضعت الطست تحتها من الدم) رواه البخاري
আয়শা রাদিয়াল্লাহু  আনহা বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে তাঁর জনৈকা স্ত্রীও এতেকাফ করলেন। তখন তিনি ছিলেন এস্তেহাজা  অবস্থায়, রক্ত দেখছেন। রক্তের কারণে হয়তো তাঁর নীচে গামলা রাখা হচ্ছে। ( বুখারি)
রাসূল বলেন—
إني اعتكفت العشر الأُوَل ألتمس هذه الليلة، ثم اعتكفت العشر الأوسط، ثم أُتيت فقيل لي: إنها في العشر الأواخر؛ فمن أحب منكم أن يعتكف فليعتكف؛ فاعتكف الناس معه
আমি কদরের রাত্রির সন্ধানে প্রথম দশ দিন এতেকাফ করলাম। এরপর এতেকাফ করলাম মধ্যবর্তী দশদিন। অত:পর ওহি প্রেরণ করে আমাকে জানানো হল যে তা শেষ দশদিনে। সুতরাং তোমাদের যে এতেকাফ পছন্দ করবে, সে যেন এতেকাফ করে। ফলে, মানুষ তার সাথে এতেকাফ যাপন করল।
এতেকাফের উপকারিতা

১- এতেকাফকারী এক নামাজের পর আর এক নামাজের জন্য অপেক্ষা করে থাকে, আর এ অপেক্ষার অনেক ফজিলত রয়েছে। আবু হুরাইরা রাদি-আল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
إن الملائكة تصلي على أحدكم ما دام في مصلاه ما لم يحدث: اللهم اغفر له، اللهم ارحمه لا يزال أحدكم في مصلاه ما دامت الصلاة تحبسه، لا يمنعه أن ينقلب إلي أهله إلا الصلاة.   رواه البخاري
অর্থাৎ: নিশ্চয় ফেরেশতারা তোমাদের একজনের জন্য দোয়া করতে থাকেন যতক্ষণ সে কথা না বলে, নামাজের স্থানে অবস্থান করে। তারা বলতে থাকে আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দিন, আল্লাহ তার প্রতি দয়া করুন, যতক্ষণ তোমাদের কেউ নামাজের স্থানে থাকবে, ও নামাজ তাকে আটকিয়ে  রাখবে, তার পরিবারের নিকট যেতে নামাজ ছাড়া আর কিছু বিরত রাখবে না, ফেরেশতারা তার জন্য এভাবে দোয়া করতে থাকবে।

২- এতেকাফকারী কদরের রাতের তালাশে থাকে, যে রাত অনির্দিষ্টভাবে রমজানের যে কোন রাত হতে পারে। এই রহস্যের  কারণে আল্লাহ তা-আলা সেটিকে বান্দাদের থেকে গোপন রেখেছেন, যেন তারা মাস জুড়ে তাকে তালাশ করতে থাকে।

৩- এতেকাফের ফলে আল্লাহ তা’আলার সাথে সম্পর্ক দৃঢ় হয়,এবং আল্লাহ তা’আলার জন্য মস্তক অবনত করার প্রকৃত চিত্র ফুটে উঠে। কেননা আল্লাহ তা’আলা বলেন:
وَمَا خَلَقْتُ الْجِنَّ وَالْإِنْسَ إِلَّا لِيَعْبُدُونِ) ﴿৫৬﴾الذاريات
অর্থাৎ: আমি মানুষ এবং জিন জাতিকে একমাত্র আমারই ইবাদতের জন্য সৃষ্টি করেছি। [সুরা আজ-জারিয়াত: ৫৬]
আর এ ইবাদতের বিবিধ  প্রতিফলন ঘটে এতেকাফ অবস্থায়। কেননা এতেকাফ অবস্থায় একজন মানুষ নিজেকে পুরোপুরি আল্লাহর ইবাদতের সীমানায় বেঁধে নেয় এবং আল্লাহর সন্তুষ্টির কামনায় ব্যকুল হয়ে পড়ে।  আল্লাহ তা-আলাও তাঁর বান্দাদেরকে নিরাশ করেন না, বরং তিনি বান্দাদেরকে নিরাশ হতে নিষেধ করে দিয়ে বলেছেন:
قُلْ يَا عِبَادِيَ الَّذِينَ أَسْرَفُوا عَلَى أَنْفُسِهِمْ لَا تَقْنَطُوا مِنْ رَحْمَةِ اللَّهِ إِنَّ اللَّهَ يَغْفِرُ الذُّنُوبَ جَمِيعًا إِنَّهُ هُوَ الْغَفُورُ الرَّحِيمُ ﴿৫৩﴾الزمر
অর্থাৎ: বলুন, হে আমার বান্দাগণ! যারা নিজেদের উপর জুলুম করেছ তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ও না। নিশ্চয় আল্লাহ সমস্ত গুনাহ মাফ করে দেন। তিনি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। [সুরা ঝুমার : ৫৩]
(وَإِذَا سَأَلَكَ عِبَادِي عَنِّي فَإِنِّي قَرِيبٌ أُجِيبُ دَعْوَةَ الدَّاعِ إِذَا دَعَانِ فَلْيَسْتَجِيبُوا لِي وَلْيُؤْمِنُوا بِي لَعَلَّهُمْ يَرْشُدُونَ ﴿১৮৬ سورة البقرة)
অর্থাৎ: আর আমার বান্দারা যখন তোমার কাছে জিজ্ঞেস করে আমার ব্যাপারে- বস্তুত আমি রয়েছি সন্নিকটে। প্রার্থনাকারীর প্রার্থনা কবুল করি যখন সে  প্রার্থনা করে। কাজেই তারা যেন আমার হুকুম মান্য করে এবং আমার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে। সম্ভবত তারা পথ প্রাপ্ত হবে। (আল-বাকারা : ১৮৬)

৪- যখন কেউ মসজিদে অবস্থান করা পছন্দ করতে লাগে— যা সম্ভব প্রবৃত্তিকে অভ্যস্ত করানোর  মাধ্যমে,  কেননা প্রবৃত্তিকে যে বিষয়ে  অভ্যস্ত করানো  হবে  সে বিষয়েই সে অভ্যস্ত হয়ে পড়বে— মসজিদে অবস্থান করা পছন্দ হতে শুরু করলে মসজিদকে সে  ভালোবাসবে,  সেখানে নামাজ আদায়কে ভালোবাসবে। আর এ প্রক্রিয়ায় আল্লাহর সাথে তার সম্পর্ক মজবুত হবে। হৃদয়ে সৃষ্টি হবে নামাজের ভালোবাসা, এবং নামাজ আদায়ের মাধ্যমেই অনুভব করতে শুরু করবে হৃদয়ের প্রশান্তি। যে প্রশান্তির কথা  রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এভাবে বলেছিলেন:
(أرحنا بها يا بلال، أرحنا بها يا بلال)
অর্থাৎ: নামাজের মাধ্যমে আমাদেরকে শান্ত করো হে বেলাল, নামাজের মাধ্যমে আমাদেরকে শান্ত করো হে বেলাল।

৫- মসজিদে এতেকাফের মাধ্যমে একমাত্র আল্লাহ তা’আলার উদ্দেশে নিজেকে আবদ্ধ করে নেওয়ার কারণে মুসলমানের  অন্তরের কঠোরতা দূরীভূত হয়, কেননা কঠোরতা সৃষ্টি হয়  দুনিয়ার প্রতি ভালোবাসা ও পার্থিবতায় নিজেকে আরোপিত করে রাখার কারণে। মসজিদে নিজেকে আবদ্ধ করে  রাখার কারণে দুনিয়ার প্রতি ভালোবাসায় ছেদ পড়ে এবং আত্মিক উন্নতির অভিজ্ঞতা অনুভূত হয়। মসজিদে এতেকাফ করার কারণে ফেরেশতারা দোয়া করতে থাকে, ফলে এতেকাফকারী ব্যক্তির আত্মা নিম্নাবস্থার নাগপাশ কাটিয়ে  ফেরেশতাদের স্তরের দিকে ধাবিত হয়। ফেরেশতাদের পর্যায় থেকেও বরং ঊর্ধ্বে ওঠার প্রয়াস পায়।  কেননা ফেরেশতাদের প্রবৃত্তি নেই বিধায় প্রবৃত্তির ফাঁদে তারা পড়ে না।  আর মানুষের  প্রবৃত্তি থাকা সত্ত্বেও সব কিছু থেকে মুক্ত হয়ে আল্লাহর জন্য একাগ্রচিত্ত হয়ে যায়।
৬- এতেকাফের মাধ্যমে অন্তরে প্রশান্তি আসে।
৭- বেশি বেশি  কুরআন তিলাওয়াতের সুযোগ সৃষ্টি হয়।
৮- ঐকান্তিকভাবে তওবা করার সুযোগ লাভ হয়।
৯- তাহাজ্জুদে অভ্যস্ত হওয়া যায়।
১০-সময়কে সুন্দরভাবে কাজে লাগানো যায়।

634
সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য, যিনি সমগ্র জগতের প্রতিপালক। আর সালাত ও সালাম নাযিল হোক সমস্ত নবী ও রাসূলদের সরদার আমাদের নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উপর এবং তার পরিবার-পরিজন ও তার সমস্ত সাহাবীদের উপর।
আল্লাহ তা‘আলা আমাকে যে সব আমল করা দ্বারা একজন মানুষ জান্নাতে প্রবেশ করতে পারে বা জান্নাতী ব্যক্তিদের গুণাবলী ও বৈশিষ্ট্যগুলো কি সে বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে।

জান্নাতে প্রবেশকারী ব্যক্তিদের গুণাবলী

এক- নরম দিল হওয়া
যাদের অন্তর নরম হবে, যারা খোশ মেজাজের অধিকারী হবে, সর্বদা আল্লাহ-ভীতু হয়, কারো কোনো ক্ষতিকারক নয়, ধৈর্যশীল ব্যক্তি, এমন লোক জান্নাতী হবে।
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رضى الله عنه عَنْ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ: « يَدْخُلُ الْجَنَّةَ أَقْوَامٌ أَفْئِدَتُهُمْ مِثْلُ أَفْئِدَةِ الطَّيْرِ»
আবু হুরাইরাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “জান্নাতে প্রবেশ করবে এমন ব্যক্তি যাদের অন্তরসমূহ হবে পাখির অন্তরের ন্যায়[1]”।

দুই- দুর্বল অসহায় হওয়া:-
জান্নাতে গরীব-মিসকিন, ফকির, পরমুখাপেক্ষী, দুর্বল লোকদের সংখ্যাধিক্য হবে। পক্ষান্তরে যারা তাদের বিপরীত হবে, অর্থাৎ অহংকারী, দুশ্চরিত্র ও ঝগড়াটে ব্যক্তি জাহান্নামে প্রবেশ করবে।
عَنْ حَارِثَةَ بْنَ وَهْبٍ رضى الله عنه سَمِعَ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم قَال: «أَلَا أُخْبِرُكُمْ بِأَهْلِ الْجَنَّةِ؟ قَالُوا بَلَى قَالَ صلى الله عليه وسلم كُلُّ ضَعِيفٍ مُتَضَعِّفٍ لَوْ أَقْسَمَ عَلَى اللهُ لَأَبَرَّهُ ثُمَّ قَالَ أَلَا أُخْبِرُكُمْ بِأَهْلِ النَّارِ؟ قَالُوا بَلَى قَالَ كُلُّ عُتُلٍّ جَوَّاظٍ مُسْتَكْبِرٍ»
“হারেসা ইবন ওহাব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছেন, তিনি বলেছেন: “আমি কি তোমাদেরকে জান্নাতি লোকদের গুণাবলীর কথা বলব না?” সাহাবাগণ বললেন: হ্যাঁ বলুন। তিনি বললেন: “প্রত্যেক দুর্বল, লোক চোখে হেয়, কিন্তু সে যদি কোন বিষয়ে আল্লাহর নামে কসম করে তাহলে আল্লাহ তার কসম পূর্ণ করবেন।” অতঃপর তিনি বললেন: আমি কি তোমাদেরকে জাহান্নামী লোকদের কথা বলব না? তারা বললেন: বলুন। তিনি বললেন: “প্রত্যেক ঝগড়াকারী, দুশ্চরিত্র, অহংকারী ব্যক্তি[2]।”

তিন- নম্র-ভদ্র ও গ্রহণযোগ্য ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবে:-

নম্র-ভদ্র, মানুষের নিকট গ্রহণযোগ্য ও মানুষের কাছের লোক- যাকে মানুষ বিপদ আপদে কাছে পায়- এমন খোশ মেজাজ, পরিচিত ও ভাল লোক জান্নাতে প্রবেশ করবে। এ ধরনের লোকের জন্য আল্লাহ তা‘আলা জাহান্নামকে হারাম করে দিয়েছেন।
عَنِ ابْنِ مَسْعُودٍ رضى الله عنه قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهُ صلى الله عليه وسلم قَالَ:«حُرِّمَ عَلَى النَّارِ كُلُّ هَيِّنٍ لَيِّنٍ سَهْلٍ قَرِيبٍ مِنْ النَّاسِ»
“ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন- রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “প্রত্যেক নরম দিল ভদ্র এবং মানুষের সাথে মিশুক লোকদের জন্য জাহান্নাম হারাম”। যাদের জন্য জাহান্নাম হারাম তারা অবশ্যই জান্নাতে প্রবেশ করবে[3]। 

চার- রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর অনুসরণকারী জান্নাতে যাবে:-

যে ব্যক্তি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অনুসরণ করবে, সে জান্নাতে যাবে। পক্ষান্তরে যে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর অনুসরণ করবে না সে জাহান্নামে যাবে। সুতরাং, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর অনুসরণ করা দ্বারাই জান্নাতে প্রবেশ করা নিহিত। প্রমাণ-
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رضى الله عنه أَنَّ رَسُولَ اللهُ صلى الله عليه وسلم قَالَ: «كُلُّ أُمَّتِي يَدْخُلُونَ الْجَنَّةَ إِلَّا مَنْ أَبَى قَالُوا يَا رَسُولَ اللهُ وَمَنْ يَأْبَى قَالَ مَنْ أَطَاعَنِي دَخَلَ الْجَنَّةَ وَمَنْ عَصَانِي فَقَدْ أَبَى »
“আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- আমার সমস্ত উম্মত জান্নাতে যাবে তবে ঐ সমস্ত লোক ব্যতীত যারা অস্বীকার করে। সাহাবাগণ জিজ্ঞেস করল হে আল্লাহর রাসূল! কে অস্বীকার করে? তিনি বললেন, যে ব্যক্তি আমার অনুসরণ করে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে, আর যে আমার নাফরমানী করে সে অস্বীকার করে[4]।”

পাঁচ- দৈনিক বারো রাকাত সালাত আদায়কারী

আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যে যে ব্যক্তি প্রতি দিন বারো রাকাআত সালাত (ফজরের পূর্বে দুই রাকাআত, যোহরের পূর্বে চার রাকাআত, পরে দুই রাকাআত, মাগরিবের পরে দুই রাকাআত, এশার পরে দুই রাকাআত সুন্নত) আদায় করে সে জান্নাতে যাবে। প্রমাণ:
عَنْ أُمِّ حَبِيبَةَ رضي الله عنها زَوْجِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم أَنَّهَا قَالَتْ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللهُ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ: «مَا مِنْ عَبْدٍ مُسْلِمٍ يُصَلِّي لِلهِ كُلَّ يَوْمٍ ثِنْتَيْ عَشْرَةَ رَكْعَةً تَطَوُّعًا غَيْرَ فَرِيضَةٍ إِلَّا بَنَى اللهُ لَهُ بَيْتًا فِي الْجَنَّةِ»
“রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর স্ত্রী উম্মে হাবীবা ˆরাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, তিনি বলেন- “যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে প্রতিদিন ফরয ব্যতীত বারো রাকাআত নফল সালাত আদায় করবে, আল্লাহ তার জন্য জান্নাতে একটি ঘর নির্মাণ করবেন[5]।”

ছয়-আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষাকারী ব্যক্তি জান্নাতে যাবে

যে ব্যক্তি আল্লাহর ইবাদতে তার সাথে কাউকে শরীক করবে না, সালাত কায়েম করবে, যাকাত করবে এবং আত্মীয়তা সম্পর্ক বজায় রাখবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।
عَنْ أَبِي أَيُّوبَ رضى الله عنه قَالَ جَاءَ رَجُلٌ إِلَى النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ دُلَّنِي عَلَى عَمَلٍ أَعْمَلُهُ يُدْنِينِي مِنْ الْجَنَّةِ وَيُبَاعِدُنِي مِنْ النَّارِ قَالَ: «تَعْبُدُ اللهَ لَا تُشْرِكُ بِهِ شَيْئًا وَتُقِيمُ الصَّلَاةَ وَتُؤْتِي الزَّكَاةَ وَتَصِلُ ذَا رَحِمِكَ فَلَمَّا أَدْبَرَ قَالَ رَسُولُ اللهُ صلى الله عليه وسلم إِنْ تَمَسَّكَ بِمَا أُمِرَ بِهِ دَخَلَ الْجَنَّةَ»
“আবূ আয়্যুব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট এসে বলল: হে আল্লাহর রাসূল! আমাকে এমন কোনো আমলের কথা বলুন যা আমাকে জান্নাতের নিকটবর্তী এবং জাহান্নাম থেকে দূরে রাখবে। তিনি বললেন: আল্লাহর ইবাদত কর এবং তাঁর সাথে কাউকে অংশীদার সাব্যস্ত করবে না। সালাত কায়েম কর, যাকাত আদায় কর, আর আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখ। যখন ঐ লোক ফিরে যেতে লাগল, তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: তাকে যা করতে বলা হল, যদি সে এর ওপর আমল করে তাহলে সে অবশ্যই জান্নাতে প্রবেশ করবে[6]।

সাত-তাহাজ্জুদ আদায়কারী, রোজা পালনকারী ও অন্যকে খাদ্য দানকারী:

মনে রাখবে, চরিত্রবান, তাহাজ্জুদগুজার, অধিক পরিমাণে নফল রোযা আদায়কারী ও অন্যকে খাদ্য দানকারী জান্নাতে যাবে। এ ধরনের লোকদের জন্য জান্নাতে বিশেষ ঘর নির্মাণ করা হয়েছে। প্রমাণ-
عَنْ عَلِيٍّ رضى الله عنه قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم: «إِنَّ فِي الْجَنَّةِ لَغُرَفًا تُرَى ظُهُورُهَا مِنْ بُطُونِهَا وَبُطُونُهَا مِنْ ظُهُورِهَا فَقَامَ أَعْرَابِيٌّ فَقَالَ لِمَنْ هِيَ يَا رَسُولَ اللهُ؟ قَالَ هي لِمَنْ أَطَابَ الْكَلَامَ وَأَطْعَمَ الطَّعَامَ وَأَدَامَ الصِّيَامَ وَصَلَّى لِلهِ بِاللَّيْلِ وَالنَّاسُ نِيَامٌ»
“আলী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: জান্নাতে এমন কিছু ঘর আছে যার ভিতর থেকে বাহিরের সব কিছু দেখা যাবে। আবার বাহির থেকে ভিতরের সব কিছু দেখা যাবে। এক বেদুইন ব্যক্তি দাঁড়িয়ে বলল, ইয়া রাসূলুল্লাহ! ঐ ঘর কার জন্য? তিনি বললেন: ঐ ব্যক্তির জন্য যে ভাল ও নরম কথা, বলে, অন্যকে আহার করায়, অধিক পরিমাণে নফল রোযা রাখে, আর যখন লোকেরা আরামে নিদ্রারত থাকে তখন উঠে সে সালাত আদায় করে[7]।”

আট:- ন্যায় পরায়ণ বাদশাহ জান্নাতে যাবে:-

ন্যায়পরায়ণ বাদশাহ, অপরের প্রতি অনুগ্রহকারী, নরম অন্তর, কারো নিকট কোন কিছু চায়না এমন ব্যক্তিও জান্নাতে যাবে।
عَنْ عِيَاضِ بْنِ حِمَارٍ الْمُجَاشِعِيِّ رضى الله عنه أَنَّ رَسُولَ اللهُ صلى الله عليه وسلم قال: «ذَاتَ يَوْمٍ فِي خُطْبَتِهِ وَأَهْلُ الْجَنَّةِ ثَلَاثَةٌ ذُو سُلْطَانٍ مُقْسِطٌ مُتَصَدِّقٌ مُوَفَّقٌ وَرَجُلٌ رَحِيمٌ رَقِيقُ الْقَلْبِ لِكُلِّ ذِي قُرْبَى وَمُسْلِمٍ وَعَفِيفٌ مُتَعَفِّفٌ ذُو عِيَالٍ»
“ইয়াদ্ব ইবন হিমার মাজাশে‘য়ী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: তিন প্রকারের লোক জান্নাতে যাবে। এক- ন্যায়পরায়ণ বাদশাহ, সত্যবাদী, নেক আমলকারী। দুই- ঐ ব্যক্তি যে প্রত্যেক আত্মীয়ের সাথে এবং প্রত্যেক মুসলমানের সাথে দয়া করে। তিন-ঐ ব্যক্তি যে লজ্জা স্থানকে সংরক্ষণ করে এবং বিনা প্রয়োজনে কারো নিকট কোন কিছু চায় না[8]।
যদি রাজা বাদশার ন্যায় বিচার করে, তাহলে তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে। আর যদি অন্যায় করে, তাহলে তাদের জন্য জাহান্নাম অবধারিত। সুতরাং ক্ষমতাশীলদের প্রতি দাওয়াত থাকল, তারা যেন প্রজাদের প্রতি কোন প্রকার অন্যায়-অনাচার ও জুলুম অত্যাচার না করে।
আত্মীয় স্বজনদের সাথে ভালো ব্যবহার করা একটি মহৎ গুন। কিন্তু দুঃখের বিষয় বর্তমানে আমরা আত্মীয় স্বজনদের সাথে দুর্ব্যবহার করে থাকি। আত্মীয় স্বজনদের খোজ খবর নেই না।
মানুষের কাছে হাত না পাতা খুবই জরুরি। বর্তমানে দেখা যায় ভিক্ষা ভিত্তি একটি পেশা হয়ে দাড়িয়েছে। যাদের অভাব তারাও চায় আবার যাদের অভাব নাই তারাও চায়। কিন্তু তারপরও কিছু লোক আছে, যারা মানুষের কাছে হাত পাতে না। তারা লজ্জার কারণে ঘরে বসে কষ্ট করে, তাদের জন্য রয়েছে জান্নাত।

নয়- আল্লাহ ও আল্লাহর রাসূল এবং দ্বীনের প্রতি সন্তুষ্টি জ্ঞাপন

আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি ঈমান আনায় আনন্দ অনুভবকারী, ইসলামকে সন্তুষ্ট চিত্তে স্বীয় দ্বীন হিসেবে বিশ্বাসকারীও জান্নাতে যাবে।
عَنْ اَبِيْ سَعِيدٍ الْخُدْرِيَّ رضى الله عنه أَنَّ رَسُولَ اللهُ صلى الله عليه وسلم قَالَ: «مَنْ قَالَ رَضِيتُ بِاللهُ رَبًّا وَبِالْإِسْلَامِ دِينًا وَبِمُحَمَّدٍ رَسُولًا وَجَبَتْ لَهُ الْجَنَّةُ»
“আবু সাঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: যে ব্যক্তি বলে যে আল্লাহকে রব হিসেবে, ইসলামকে দ্বীন হিসেবে এবং মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে নবী হিসেবে পেয়ে আমি সন্তুষ্ট। তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব হয়ে যাবে[9]।

দশ:- দুই বা দুইয়ের অধিক কন্যাকে লালন-পালন করা:-

দুই বা দুইয়ের অধিক কন্যাকে লালন-পালন করে সু-শিক্ষা দানকারী এবং বালেগা হওয়ার পর তাদেরকে সু-পাত্রে পাত্রস্থকারী ব্যক্তিও জান্নাতি হবে। প্রমাণ-
عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ رضى الله عنه قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهُ صلى الله عليه وسلم: «مَنْ عَالَ جَارِيَتَيْنِ حَتَّى تَبْلُغَا جَاءَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ أَنَا وَهُوَ وَضَمَّ أَصَابِعَهُ »
“আনাস ইবন মালেক রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: যে ব্যক্তি দুইজন কন্যাকে তাদের প্রাপ্তবয়স্কা হওয়া পর্যন্ত লালন-পালন করল, কিয়ামতের দিন আমি ও ঐ ব্যক্তি এক সাথে উপস্থিত হব। একথা বলে তিনি তাঁর দুই আঙ্গুলকে একত্রিত করে দেখালেন (যে এভাবে)[10]।

এগার- ওযুর পর দুই রাকাআত নফল সালাত (তাহিয়্যাতুল ওযু) রীতিমত আদায়কারীও জান্নাতি হবে।

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رضى الله عنه قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم لِبِلَالٍ عِنْدَ صَلَاةِ الْغَدَاةِ «يَا بِلَالُ حَدِّثْنِي بِأَرْجَى عَمَلٍ عَمِلْتَهُ فِي الْإِسْلَامِ منفعة فاني فَإِنِّي سَمِعْتُ اللليلة خشف نَعْلَيْكَ بَيْنَ يَدَيَّ فِي الْجَنَّةِ » قَالَ بلال مَا عَمِلْتُ عَمَلًا أَرْجَى عِنْدِي منفعة من أَنِّي لَمْ أَتَطَهَّرْ طَهُورًا تَامًّا فِي سَاعَةِ مِنْ لَيْلٍ أَوْ نَهَارٍ إِلَّا صَلَّيْتُ بِذَلِكَ الطُّهُورِ مَا كُتِبَ لِي أَنْ أُصَلِّيَ
“আবু হুরাইরাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদিন ফজরের নামাযের পর বেলাল রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুকে জিজ্ঞেস করলেন, হে বেলাল! ইসলাম গ্রহণের পর তোমার এমন কি আমল আছে যার বিনিময়ে তুমি পুরস্কৃত হওয়ার আশা রাখ? কেননা আজ রাতে আমি জান্নাতে আমার সামনে তোমার চলার শব্দ পেয়েছি। বেলাল রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন: আমি এর চেয়ে অধিক কোন আমল তো দেখছি না যে, দিনে বা রাতে যখনই আমি ওযু করি তখনই যতটুকু আল্লাহ তাওফিক দেন ততটুকু নফল সালাত আমি আদায় করি[11]।
অপর একটি হাদিসে বর্ণিত-
عن عقبة بن عامر رضى الله عنه قال كانت علينا رعاية الإبل فجاءت نوبتي فروحتها بعشي فأدركت رسول الله صلى الله عليه وسلم قائما يحدث الناس فأدركت من قوله « ما من مسلم يتوصأ فيحسن وضوءه ثم يقوم فيصلى ركعتين مقبل عليهما بقلبه و وجهه إلا وجبت له الجنة »
“উকবা ইবনে আমের রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, আমাদের উপর দায়িত্ব ছিল উট চরাবার। যখন আমার পালা আসল তখন আমি এক বিকালে সেগুলো ছেড়ে আসলাম। তখন আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে দেখলাম যে তিনি মানুষদের নিয়ে কথা বলছেন, তখন তার যে কথা আমি ধারণ করতে পেরেছি তার মধ্যে ছিল, “তোমাদের যে কেউ ওযু করল, আর সে তার ওযু সুন্দর করে সম্পন্ন করে, তারপর দুই রাকাত তাহিয়্যাতুল অজুর দুই রাকাত সালাত ভালোভাবে আদায় করল, তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব হয়ে যাবে[12]।”

বার- যে নারীর মধ্যে হাদিস বর্ণিত পাঁচটি গুণ পাওয়া যাবে:-

এক-যে নারী সময় মত যথাযথ সালাত আদায় করে। দুই- যে নারী তার স্বামীর অনুগত স্ত্রী হয়। তিন- যে নারী রমযান মাসের রোজা পালন করে। চার-যে নারী তার লজ্জা-স্থানের হেফাজত করে। সে জান্নাতের যে কোন দরজা দিয়ে প্রবেশ করতে পারবে।
عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ رضى الله عنه قال: قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم : «إِذَا صَلَّتِ الْمَرْأَةُ خَمْسَهَا ، وَصَامَتْ شَهْرَهَا ، وَحَصَنَتْ فَرْجَهَا ، وَأَطَاعَتْ بَعْلَهَا قِيْلَ لَهَا اَدْخُلِيْ الْجَنَّةَ مِنْ أَيِّ أَبْوَابِ الْجَنَّةِ شِئْتِ»
“আবু হুরাইরাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: যে মহিলা পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায় করে, রমযান মাসে রোযা রাখে, স্বীয় লজ্জা-স্থান সংরক্ষণ করে, স্বীয় স্বামীর অনুগত থাকে, কিয়ামতের দিন তাকে বলা হবে যে, জান্নাতের যে দরজা দিয়ে খুশি তুমি জান্নাতে প্রবেশ কর[13]।

তের- শহীদ, নবজাত শিশু ও জীবন্ত প্রোথিত সন্তান:-

আম্বিয়া, শহীদ, মৃত্যুবরণকারী ঈমানদারদের নবজাতক শিশু এবং জীবন্ত প্রোথিত সন্তান (জাহিলিয়াতের যুগে যা করা হত) তারা জান্নাতি হবে।
حَسْنَاءُ بِنْتُ مُعَاوِيَةَ رضي الله عنها قَالَتْ حَدَّثَنَا عَمِّي قَالَ قُلْتُ لِلنَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم مَنْ فِي الْجَنَّةِ؟ قَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم :«وَالشَّهِيدُ فِي الْجَنَّةِ وَالْمَوْلُودُ فِي الْجَنَّةِ وَالْوَئِيدُ فِي الْجَنَّةِ»
“হাসনা বিনতে মুয়াবিয়া রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: আমাকে আমার চাচা এ হাদিস বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন: আমি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞেস করেছি যে, কোন ধরনের লোকেরা জান্নাতি হবে? তিনি বললেন: শহীদরা জান্নাতি। মৃত্যুবরণকারী নবজাতক শিশু জান্নাতি। (জাহিলিয়াতের যুগে) জীবন্ত প্রোথিত শিশু জান্নাতি[14]।”

চৌদ্দ-আল্লাহর পথের সৈনিক:

আল্লাহর পথে জিহাদকারী জান্নাতি হবে। আল্লাহর পথে জিহাদ করতে গিয়ে শহীদ হলে, সে অবশ্যই জান্নাতি। প্রমাণ-
عَنْ مُعَاذِ بْنِ جَبَلٍ رضى الله عنه عَنْ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ:«مَنْ قَاتَلَ فِي سَبِيلِ اللهُ مِنْ رَجُلٍ مُسْلِمٍ فُوَاقَ نَاقَةٍ وَجَبَتْ لَهُ الْجَنَّةُ »
“মু‘আয ইবন জাবাল রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর পথে ততক্ষণ পর্যন্ত জিহাদ করেছে যতক্ষণ কোনো উটের দুধ দোহন করতে সময় লাগে তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব[15]।

পনের- মুত্তাকী এবং চরিত্রবান লোক:

মুত্তাকী এবং চরিত্রবান লোক জান্নাতে যাবে। অধিকাংশ মানুষকে তার তাকওয়া ও সুন্দর চরিত্র জান্নাতে প্রবেশ করাবে। আর অধিকাংশ মানুষকে তার মুখ ও লজ্জা-স্থান জাহান্নামে প্রবেশ করাবে।
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رضى الله عنه قَالَ سُئِلَ رَسُولُ اللهُ صلى الله عليه وسلم عَنْ أَكْثَرِ مَا يُدْخِلُ النَّاسَ الْجَنَّةَ فَقَالَ: «تَقْوَى اللهُ وَحُسْنُ الْخُلُقِ وَسُئِلَ عَنْ أَكْثَرِ مَا يُدْخِلُ النَّاسَ النَّارَ فَقَالَ الْفَمُ وَالْفَرْجُ »
“আবু হুরাইরাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞেস করা হল কোন আমলের কারণে সর্বাধিক লোক জান্নাতে প্রবেশ করবে? তিনি বললেন: তাকওয়া (আল্লাহ ভীতি) ও উত্তম চরিত্র[16]।



635
Ramadan and Fasting / Ramadan
« on: July 25, 2013, 12:23:12 PM »
রমযানের গুরুত্ব:
রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, “রমযানের আগমনে জান্নাতের দরজাগুলোকে খুলে দেয়া হয়”। রমযানে অধিক পরিমাণে ভাল কাজ করে জান্নাতের নিকটবর্তী হওয়া যায়। রমযানে সিয়াম পালনের মাধ্যমে পূর্ববর্তী গুনাহ মাফ করিয়ে নেয়ার চমৎকার সুযোগ আসে। আবু হুরায়রা (রা) রাসূলুল্লাহ (সাঃ) থেকে উদ্ধৃত করেছেন:
“যে রমযানে বিশুদ্ধ বিশ্বাসের সাথে আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রতিদান লাভের আশায় সিয়াম পালন করবে, আল্লাহ তার পূর্বের সকল গুনাহ মাফ করে দিবেন।”
তেমনি তিনি (সা:) বলেছেন: ঈমান সহকারে রমযানে রাতে যে কিয়াম করবে (রাতে সালাত আদায় করবে), তার অতীতের সমস্ত গুনাহ আল্লাহ মাফ করে দেবেন। একবার রাসূলুল্লাহ (সাঃ) মিম্বরে ওঠার সময় তিনবার আমিন বলেন। পরবর্তীতে তিনি ব্যাখ্যা করেন, জিবরীল (আঃ) এঁর তিনটি প্রার্থনার উত্তরে তিনি আমিন বলেন। তার মধ্যে একটি দুআ ছিল, যার ওপর রমযান আসে এবং চলে যায় অথচ তার গুনাহ মাফ হয় না, সে ক্ষতিগ্রস্ত/লাঞ্চিত হোক। বিশুদ্ধ নিয়তে সিয়াম পালন করলে মন্দের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ার আত্মিক শক্তি অর্জিত হয়। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন: “রোযা ঢাল স্বরুপ”. একান্তভাবে আলল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলার জন্য রোযা পালনকারীর জন্য বিশেষ পুরস্কার রয়েছে। একটি হাদীসে কুদসীতে এসেছে আল্লাহ বলেন:
“আদম সন্তানের সকল কাজই তার নিজের জন্য, সিয়াম ব্যতীত। এটা শুধুই আমার জন্য, এবং আমি নিজেই এর প্রতিদান দেব।”
রমযানের এইরূপ মর্যাদার প্রধান কারণ হচ্ছে এই মাসে কুরআন নাযিল হয়েছে, যা স্রষ্টার পক্ষ থেকে প্রেরিত সর্বশেষ এবং পৃথিবীতে বিদ্যমান একমাত্র অপরিবর্তিত কিতাব। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা কুরআনে উল্লেখ করেছেন:
“রমযান মাস সেই মাস, যে মাসে মানবজাতির জন্য পথনির্দেশ স্বরুপ কুরআন নাযিল করা হয়েছে। এতে রয়েছে সত্য পথ প্রদর্শনের জন্য বিশুদ্ধ শিক্ষা এবং (সত্য থেকে মিথ্যাকে পার্থক্য করার) মানদন্ড।” (সূরা আল বাক্বারাহ, ২:১৮৫)
কুরআন নাযিল মানবজাতির প্রতি আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলার সর্ববৃহৎ অনুগ্রহ, যে মানবজাতি এর পূর্ববর্তী ওহী নাযিল হওয়ার পরবর্তী সময় থেকে নিয়ে অজ্ঞানতার অন্ধকারে ডুবে গিয়েছিল। তাঁর দয়া নিঃসৃত এই অনুপম অনুগ্রহ ছাড়া হেদায়েতের স্তিমিত-প্রায় আলোটুকুও হারিয়ে যেত এবং গোটা মানবসমাজে প্রতিষ্ঠা হত অন্যায়ের রাজত্ব।
সিয়ামের উদ্দেশ্য:
রোযার মূল লক্ষ্য তাকওয়া (আল্লহ-ভীতি এবং তাঁর সম্পর্কে সচেতনতা) অর্জন। যেমনটি আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা কুরআনুল কারীমে উল্লেখ করেছেন:
“…যেন তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পার।” (সূরা আল বাক্বারাহ, ২ : ১৮৩)
তাকওয়া সর্বোচ্চ নৈতিক গুণগুলোর একটি, তাকওয়া অর্জনের মাধ্যমে একজন মুসলিম আল্লাহর ক্রোধ এবং নিজের মাঝে একটি ঢাল তৈরী করতে পারে। তাকওয়া হচ্ছে আল্লাহর সমস্ত আদেশ-নিষেধ সম্পর্কে সর্বদা সচেতন থাকা, অর্থাৎ হারাম পরিহার করা, মাকরূহ পরিহার করা এবং এমনকি সন্দেহের অবস্থায় হালালও পরিত্যাগ করা। বিশেষজ্ঞ ডাক্তারেরা এটাও পরীক্ষা করে দেখেছেন যে রোযা বহুভাবে স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটায়। যেমন এ সময় শরীরে সঞ্চিত অতিরিক্ত কোলেস্টেরল ব্যবহৃত হয়। এভাবে রোযা শরীরকে সবল রাখে এবং হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়।
বর্তমান মুসলিম সংস্কৃতিতে রোযা:
বর্তমান মুসলিম সংস্কৃতিতে রোযা ধর্মীয় চিন্তা-ভাবনা এবং সংযমের পরিবর্তে পরিণত হয়েছে উৎসবের মাসে! রমযানের রাতগুলি পরিণত হয় পার্টি এবং ভোজের রাত্রিতে যা কিনা কোন কোন দেশে ভোর পর্যন্ত চলে। সেখানে রাত পরিবর্তিত হয় দিনে, দিন পরিবর্তিত হয় রাতে (বহু মানুষই রোযার সময়টুকু ঘুমিয়ে কাটায়)। সাধারণতঃ সেহেরীতে মানুষ হালকা খাবারের বদলে পেট ভরে খায়। ফলে রোযা অবস্থায় খুব কম মানুষই প্রকৃত ক্ষুধার তাড়না বোধ করে। আবার ইফতারীতে আরেক দফা ভরপেট খাওয়া চলে, সেই সাথে রয়েছে রকমারী খাবারের আয়োজন। ফলে অনেকেই রমযান শেষে ওজন বেড়ে যাওয়ার অভিযোগ করে!
মুসলিম চরিত্রে সাওমের কাঙ্খিত প্রভাব: রমযানের শিক্ষাসমূহ
রমযানের সময়কাল অনেকটা বিদ্যালয়ের মত, যে সময়টিতে শেখার মত কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় রয়েছে। কোন কারণে নামায ছুটে গেলে আমরা তা পরবর্তীতে আদায় করে নিতে পারি, কিংবা রোযাও পরবর্তীতে রাখতে পারি, কিন্তু রমযানের সময়টি সেরকম নয়, এ সময় যদি পার হয়ে যায় এমন অবস্থায় যে আমরা রমযানের গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা গুলো নিতে পারলাম না, তবে তা বিরাট ক্ষতি।
প্রথম শিক্ষা: আল্লাহ সম্পর্কে সচেতনতা বা তাকওয়া সৃষ্টি
কুরআনের যে আয়াতে সিয়ামের আদেশ দেয়া হয়েছে, সে আয়াতেই এ কথা উল্লেখ করা হয়েছে:
“হে বিশ্বাসীগণ। তোমাদের জন্য সিয়াম পালনকে নির্ধারণ করা হল যেমনটি তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর করা হয়েছিল, যেন তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পার।” (সূরা আল বাক্বারাহ, ২ : ১৮৩)
এই তাকওয়া আল্লাহ সম্পর্কে সচেতনতা, তাঁর উপস্থিতির উপলব্ধি, এবং এটা জানা যে তিনি আমাদের দেখছেন – যা আমাদেরকে ব্যক্তিগত জীবনে উন্নততর মানুষ হতে সাহায্য করবে। এই তাকওয়াকে আলী (রাঃ) বর্ণনা করেছেন “আল্লাহর প্রতি ভয়, অল্পে সন্তুষ্টি এবং (পরবর্তী জীবনের পানে) যাত্রার প্রস্তুতি হিসেবে”। তাই ভয় তাকওয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। একদল লোক কেবল আল্লাহকে ভালবাসার কথা বলে থাকে এবং দাবী করে যে আল্লাহকে ভয় করে তাঁর ইবাদত করা ঠিক নয়, বরং তাঁকে শুধুমাত্র ভালবেসে ইবাদত করাটাই ঈমানের উন্নততর শর্ত । কিন্তু এ কথা ঠিক নয়। কুরআনের পাতায় পাতায় আল্লাহকে ভয় করার কথা বলা হয়েছে। এই ভয়ের অর্থ তাঁর অবাধ্যতার কারণে যে শাস্তি রয়েছে, সেই শাস্তিকে ভয় করা। মানুষ আল্লাহর আদেশ পালনের জন্য সাধনা করার মাধ্যমে তাকে ভালবাসবে, একই সাথে তাঁর শাস্তির ভয়ও অন্তের পোষণ করতে হবে। এ দুটো অবিচ্ছেদ্য এবং প্রকৃত ঈমানের মৌলিক দুটি উপাদান। আবু হুরায়রা (রাঃ) বর্ণনা করেন, “যে রোযাদার লাইলাতুল ক্বদর লাভ করবে, তার পূর্ববর্তী পাপসমূহ ক্ষমা করে দেয়া হবে। এবং যে আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে ঈমান সহকারে রমযানে সিয়াম পালন করবে, তার পূর্ববর্তী গুনাহ সমূহকেও ক্ষমা করে দেয়া হবে“। এজন্য সিয়াম হতে হবে সঠিক পদ্ধতিতে এবং সঠিক প্রেরণার ভিত্তিতে। যেমনটি রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন:
“যে রোযা অবস্থায় মিথ্যা বলা এবং মিথ্যার ওপর আচরণ করা থেকে বিরত হল না, তার ক্ষুধা এবং তৃষ্ণায় আল্লাহর কোন প্রয়োজন নেই।”
রোযা অবস্থায় আমাদের দিনগুলো রোযা না রাখা অবস্থায় আমাদের দিনগুলোর মত হওয়া উচিৎ নয় – এর মাঝে পার্থক্য থাকা উচিৎ। এই তাকওয়াই মানুষকে সর্বাবস্থায় অন্যায় থেকে বিরত রাখে, যদিও বা কেউ তাকে দেখতে না পায়। তাকওয়ার অসংখ্য উপকারিতা রয়েছে। কুরআনের আলোকে তাকওয়ার কয়েকটি উপকারিতা হচ্ছে:
•   সন্তান-সন্ততির কল্যাণ: আল্লাহ পাক বলেন: “দেয়ালের ব্যাপারটি হল এই যে এটা শহরের দুজন এতিম বালকের। এর নিচে এদের কিছু সম্পদ প্রোথিত রয়েছে, আর তাদের বাবা ছিলেন একজন সৎকর্মপরায়ণ ব্যক্তি। তাই তোমার রব চাইলেন যে তারা তাদের যৌবনে পৌঁছে যেন এই সম্পদ বের করে আনতে পারে, তাদের রবের পক্ষ থেকে করুণাস্বরুপ (সূরা আল কাহফ, ১৮ : ৮২)
•   আসমান এবং জমীন থেকে কল্যাণ:আল্লাহ পাক বলেন: “শহরগুলোর লোকেরা যদি কেবল ঈমান আনত এবং তাকওয়া অবলম্বন করত, আমরা তাদের জন্য আসমান ও জমীন থেকে কল্যাণের দরজা উন্মুক্ত করে দিতাম।”(সূরা আল আ’রাফ, ৭ : ৯৬)
•   আল্লাহর পক্ষ থেকে রিযিক এবং কঠিন পরিস্থিতি থেকে মুক্তি: আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা বলেন: “যেই তাকওয়া অবলম্বন করবে, আমি তার জন্য পথ বের করে দেব এবং এমন স্থান থেকে তাকে রিযিক দেব যা তার ধারণাতেই ছিল না।” (সূরা আত তালাক্ব, ৬৫ : ২-৩)
•   নিরাপত্তা: আল্লাহ পাক বলেন: “এবং আমি তাদেরকে রক্ষা করলাম যারা আমার প্রতি ঈমান এনেছিল ও মুত্তাকী ছিল।”
•   সার্বক্ষণিক আল্লাহর সাহায্যের উপস্থিতি: আল্লাহ পাক বলেন: “নিশ্চয়ই আল্লাহ তাদের সাথে রয়েছেন যারা তাকওয়া অবলম্বনকারী এবং সর্বদা ইহসানকারী।” (সূরা আন নাহল, ১৬ :১২৮)
•   বিজয়: আল্লাহ পাক বলেন: “যারাই আল্লাহ এবং তার রাসূলের আনুগত্য করে এবং আল্লাহকে ভয়ের যোগ্য হিসেবে জানে এবং তাকওয়া অবলম্বন করে, তারাই বিজয়ী।” (সূরা আন নূর, ২৪ : ৫২)
•   জীবনের সুন্দর পরিসমাপ্তি: আল্লাহ পাক বলেন: “নিশ্চয়ই তাকওয়া অবলম্বনকারীদের জন্য রয়েছে সুন্দর পরিণতি।” (সূরা সোয়াদ, ৩৮ : ৪৯)
•   জান্নাত: আল্লাহ পাক বলেন: “এই হচ্ছে সেই জান্নাত, যা আমি আমার দাসেদের মধ্য থেকে তাদেরকে দেব, যারা তাকওয়া অবলম্বন করত।” (সূরা মারইয়াম, ১৯ : ৬৩)


636
Life Style / Life Style
« on: August 28, 2012, 03:31:25 PM »
PROTECT YOURSELF FROM IDENTITY THEFT!

Identity Theft occurs when someone wrongfully uses your personal identification to obtain credit, loans, services, even rentals and mortgages in your name. They may even commit crimes while impersonating you!
Identity Theft is a frightening and overwhelming experience if it does happen to you. You may not know it is happening for months or years! It is my desire to help other people prevent the nightmare I have had to go through myself.
Enclosed you will find the sample letter to send to the three credit reporting agencies. You may copy it for all three, fill in the blanks, and keep a copy for yourself. Make sure that you send it Return Receipt Requested and keep the postal receipt with your copy.
I cannot guarantee that the three credit reporting agencies will honor these requests. I can tell you that I am actively working to help consumers by promoting protective legislation on the Federal and State levels.
Please also know that these protective measures will not guarantee that a criminal will not get access to your credit from a "less than cautious" credit grantor. As you know, there are many ways to steal private information about you (i.e., anyone who has access to your social security number and other identifying information.) All of these offices have your information: Your doctor, accountant, lawyer, loan officer, health insurance, schools, courts, etc. A shady employee of these people could steal your identity! Remember, you don't have to lose your wallet or have it stolen to become a victim of identity theft.
In addition, here are some other things that you should do to protect your privacy, which will help to reduce the risk of Identity Theft.
PREVENTION:
1. Buy a cross-cut type shredder (you can purchase cross-cut type shredder very cost effectively for approximately $60 - $70.) Shred all your important papers and especially pre-approved credit applications received in your name and other financial information that provides access to your private information. Don't forget to shred your credit card receipts.
2. Be careful of "Dumpster Diving." Make sure that you do not throw anything away that someone could use to become you. Anything with your identifiers must be shredded (cross-cut) before throwing away.
3. Be careful at ATM's and using Phone Cards. "Shoulder Surfers" can get your "Pin Number" and get access to your accounts.
4. Get all of your checks delivered to your bank - not to your home address.
5. Do not put checks in the mail from your home mailbox. Drop them off at a BD Mailbox or the BD. Post Office. Mail theft is common. It's easy to change the name of the recipient on the check with an acid wash.
6. When you order new credit cards in the mail, or your previous ones have expired, watch the calendar to make sure that you get the card within the appropriate time. If it is not received by a certain date, call the credit card grantor immediately and find out if the card was sent. Find out if a change of address was filed if you don't receive the card or a billing statement.
7. Cancel all credit cards that you do not use or have not used in 6 months. Thieves use these very easily - open credit is a prime target.
8. Put passwords on all your accounts and do not use your mother's maiden name. Make up a fictitious word.
9. Get a post office box or a locked mailbox, if you possibly can.
10. Ask all financial institutions, doctors' offices, etc., what they do with your private information and make sure that they shred it and protect your information. Tell them why.
11. Empty your wallet of all extra credit cards and social security numbers, etc. Do not carry any identifiers you do not need. Don't carry your birth certificate, social security card, or passport, unless necessary.
12. Memorize social security numbers and passwords.
13. When a person calls you at home or at work, and you do not know this person, never give out any of your personal information. If they tell you they are a credit grantor of yours call them back at the number that you know is the true number, and ask for that party to discuss personal information. Provide only information that you believe is absolutely necessary.
14. Do not put your social security number on your checks or your credit receipts. If a business requests your social security number, give them an alternate number and tell them why. They do not need that to identify you. If a government agency requests your social security number, there must be a privacy notice accompanying the request.
15. Do not put your telephone number on your checks.
16. Get credit cards and business cards with your picture on them.
17. Do not put your credit card account number on the Internet (unless it is encrypted on a secured site.) Don't put account numbers on the outside of envelopes, or on your checks.
18. When you are asked to identify yourself at schools, employers, or any other kind of institutional identification, ask to have an alternative to your social security number. Unfortunately, your health insurance carrier often uses your social security number as your identification number. Try to change that if you can.
19. In conjunction with a credit card sale do not put your address, telephone number, or driver's license number on the statement.
20. Monitor all your bank statements from every credit card every month. Check to see if there is anything that you do not recognize and call the credit grantor to verify that it is truly yours.
21. Order your credit report at least twice a year (I have enclosed the addresses for you on the sample letter.) Review it carefully. If you see anything that appears fraudulent, immediately put a fraud alert on your reports by calling the numbers below.
22. Immediately correct all mistakes on your credit reports in writing. Send those letters Return Receipt Requested, and identify the problems item by item with a copy of the credit report back to the credit reporting agency. You should hear from them within 30 days.
23. Take your name off all promotional lists. Call the three credit reporting agency numbers to opt out of pre-approved offers.

637
Food Habit / Food Habit
« on: August 28, 2012, 10:54:34 AM »
সকালে রাজার মতো, দুপুরে প্রজার মতো এবং রাত্রে ভিখারীর মতো খান। বাইরে খেতে চাইলে ফল থেকে জুস তৈরি করিয়ে নিয়ে খান। রিক্সা না নিয়ে হাটুন। অল্প আহার এবং দীর্ঘ জীবন হাত ধরাধরি করে চলে।

Pages: 1 ... 41 42 [43]