Show Posts

This section allows you to view all posts made by this member. Note that you can only see posts made in areas you currently have access to.


Messages - shilpi1

Pages: [1] 2 3 ... 9
1
তাকওয়া অর্জন ও চরিত্র গঠনের জন্য রমাদান ও সিয়াম। রমাদান ও সিয়ামের সঙ্গে ইসলামের অপরাপর বিষয়গুলোর সরাসরি সম্পৃক্ততা রয়েছে। রমাদান হলো প্রশিক্ষণের মাস, যে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে মানুষ আল্লাহর হক ও বান্দার হক পূরণ করতে সক্ষম হয়। রমাদান মাস ইবাদতের মাস; পিতা-মাতার খেদমত অন্যতম ইবাদত। মিরাজ রজনীতে নামাজ ও রোজা ফরজ হয় এবং মিরাজের চৌদ্দটি সিদ্ধান্তের মধ্যে প্রথম হলো আল্লাহর সঙ্গে শরিক না করা ও দ্বিতীয় হলো পিতা-মাতার সঙ্গে সদ্ব্যবহার করা।

মাতা-পিতার খেদমত না করার কারণে যারা জান্নাত থেকে বঞ্চিত হলো, রাসুল (সা.) তাদের অভিসম্পাত দিয়েছেন। হাদিস শরিফে এসেছে: একদা জুমার দিনে রাসুল (সা.) মিম্বারের প্রথম ধাপে পা রাখলেন এবং বললেন, আমিন! অতঃপর দ্বিতীয় ধাপে পা রাখলেন এবং বললেন, আমিন! তারপর তৃতীয় ধাপে পা রাখলেন এবং বললেন, আমিন! এরপর খুতবা দিলেন ও নামাজ আদায় করলেন। নামাজ শেষে সাহাবায়ে কিরাম প্রশ্ন করলেন, ইয়া রাসুল (সা.) ! আজ যা দেখলাম, তা ইতিপূর্বে কখনো দেখিনি (আপনি একেক ধাপে পা রেখে, আমিন! আমিন!! আমিন!! বললেন) ; এটা কি কোনো নতুন নিয়ম! নাকি?

নবী করিম (সা.) বললেন: না, এটা নতুন কোনো নিয়ম নয়; বরং আমি মিম্বারে ওঠার সময় হজরত জিবরাইল (আ.) এলেন, আমি যখন মিম্বারের প্রথম ধাপে পা রাখি, তখন হজরত জিবরাইল (আ.) বললেন, আল্লাহ তাআলা বলেছেন, যারা পিতা-মাতা উভয়কে বা একজনকে বার্ধক্য অবস্থায় পেয়েও তাঁদের খেদমতের মাধ্যমে জান্নাত অর্জন করতে পারল না, তারা ধ্বংস হোক। তখন আমি সম্মতি জানিয়ে বললাম, আমিন! (তাই হোক)। আমি যখন মিম্বারের দ্বিতীয় ধাপে পা রাখি, তখন তিনি বললেন, আল্লাহ তাআলা বলেছেন, যারা রমজান পেল, কিন্তু ইবাদতের মাধ্যমে তাদের গুনাহ মাফ করাতে পারল না, তারা ধ্বংস হোক। তখন আমি সম্মতি জানিয়ে বললাম, আমিন! আমি যখন মিম্বারের তৃতীয় ধাপে পা রাখি, তখন তিনি বললেন, আল্লাহ তাআলা বলেছেন, যারা আপনার পবিত্র নাম মোবারক (মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) শুনল কিন্তু দরুদ (নবীজির প্রতি শুভকামনা) শরিফ পাঠ করল না, তারা ধ্বংস হোক। তখন আমি সম্মতি জানিয়ে বললাম, আমিন! (মুসলিম শরিফ)।

মানুষের দায়িত্ব দ্বিবিধ, আল্লাহর হক ও বান্দার হক। মানুষের প্রতি আল্লাহর হক হলো মানুষ একমাত্র আল্লাহরই ইবাদত করবে এবং আল্লাহর সঙ্গে শরিক করবে না। বান্দার হকের মধ্যে প্রথম ও প্রধান হলো পিতা-মাতার হক। সন্তানের প্রতি পিতা-মাতার হক বা অধিকার হলো সন্তান পিতা-মাতার সঙ্গে সদ্ব্যবহার করবে এবং তাঁদের কষ্ট দেবে না। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন: ‘তোমরা আল্লাহর ইবাদত করো, তাঁর সঙ্গে শরিক কোরো না এবং পিতা-মাতার সঙ্গে সদ্ব্যবহার করো।’ (সুরা-৪ নিসা, আয়াত: ৩৬)। ‘আর আমি নির্দেশ দিয়েছি মানুষকে, তার পিতা-মাতার সঙ্গে ভালো ব্যবহার করার জন্য।’ (সুরা-৪৬ আহকাফ, আয়াত: ১৫)। ‘আমি মানুষকে নির্দেশ দিয়েছি যে তুমি আমার এবং তোমার পিতা-মাতার প্রতি কৃতজ্ঞ হও। অবশেষে আমার কাছেই তো ফিরে আসতে হবে।’ (সুরা-৩১ লোকমান, আয়াত: ১৪)।

পিতা-মাতার অবাধ্যতার জন্য যেমন রয়েছে অভিসম্পাত, তেমনি তাঁদের আনুগত্যের জন্য রয়েছে পুরস্কারের ঘোষণা। শুধু তা-ই নয়, তাঁদের প্রতি নেক নজরে তাকালেও হজের সওয়াব পাওয়া যায়। হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, যখন কোনো অনুগত সন্তান
স্বীয় পিতা-মাতার প্রতি অনুগ্রহের নজরে দৃষ্টিপাত করে, আল্লাহ তাআলা তার প্রতিটি দৃষ্টির বিনিময়ে একটি করে কবুল হজের সওয়াব দান করেন। (বায়হাকি শরিফ)।

2
অহমিকা। আত্মপূজা থেকে উঠে আসা একটি মানসিক প্রবণতা। মানুষ যখন নিজেকে সামর্থ্য কিংবা যোগ্যতার চেয়ে বেশি মূল্যায়ন করে তখনই তার ভেতরে অহমিকা নামের অসৎ গুণ সৃষ্টি হয়।


সমাজে আমরা এমন বহু রকমের পেশা ও কাজের লোকজনের সঙ্গে এবং বিচিত্র নৈতিক গুণের মানুষের সঙ্গে মেলামেশা করি, যাদের পারস্পরিক উপলব্ধি বিভিন্ন রকমের। সেজন্য তাদের সম্পর্কে মূল্যায়ন করা খুব সহজ কাজ নয়। ধৈর্য এবং মনোবল ছাড়া এমন মানুষের মাঝে বসবাস করা কঠিন। অহংকারী লোকদের কেউ পছন্দ করে না। সবাই চায়, তাদের আশেপাশের লোকজন মাটির মতো প্রশান্ত মানুষ হোক, মিথ্যা অহংকারমুক্ত ভালোবাসার মানুষ হোক।

অহংকার মানুষকে তার কাঙ্খিত লক্ষে পৌঁছার পথে প্রতিবন্ধক। অহংকার এমন এক জিনিস, যা অন্যদের সঙ্গে পরামর্শ করা কিংবা অন্যের সাহায্য চাওয়ার মানসিকতা পর্যন্ত নষ্ট করে দেয়। এ ছাড়া অহংকারী স্বার্থপর লোকের আচার-আচরণ, কর্মকাণ্ড ইত্যাদি ভয় কিংবা ত্রাস সৃষ্টি করে। যার ফলে অন্যদের অধিকার পদদলিত হয়। মঙ্গল ও কল্যাণ অনুভবের পথে প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয়। এমনকি নিজের যোগ্যতা, সামর্থ্য ইত্যাদি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। মেধার বিকাশ রুদ্ধ হয়ে যায়। তাই তো জ্ঞানীরা বলেন, ‘মেধা ও প্রতিভা ধ্বংসের সহজতম উপায় হলো- অহমিকা।’

অহংকারী যে ধ্বংসপ্রাপ্ত- এর উদাহরণ হলো- ইবলিস শয়তান। ইবলিস ছিলো- জিনদের অন্তর্ভুক্ত এবং ছয় হাজার বছর পর্যন্ত সে আল্লাহর ইবাদতে মশগুল ছিলো। ফেরেশতাদের কাতারেও তার একটা বিশেষ পদমর্যাদা ছিলো। কিন্তু যখন ইবলিস আল্লাহর নির্দেশ অমান্য করে অহংকার দেখালো তখনই সে প্রত্যাখ্যাত হয়ে গেলো। একেবারে চিরদিনের জন্য বিতাড়িত, পথভ্রষ্ট হয়ে গেল সে।

আল্লাহতায়ালার কোনো সৃষ্টিরই অহংকার করা সাজে না। গর্ব ও অহংকার একমাত্র আল্লাহর জন্য প্রযোজ্য। হজরত লোকমান আলাইহিস সালাম তার ছেলেকে অহংকার থেকে দূরে থাকার আদেশ দিয়ে বলেছেন, ‘ঘৃণা ও অবজ্ঞাভরে মানুষের কাছ থেকে তোমার দৃষ্টি ফিরিয়ে নিও না, গর্ব ও অহংকারের সঙ্গে দুনিয়াতে চলো না। নিশ্চয়ই আল্লাহঅহংকারী লোকদেরকে পছন্দ করেন না।’
হাদিসে এ বিষয়ে কঠোর সতর্কবার্তা এসেছে। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘এমন কোনো ব্যক্তি জাহান্নামে প্রবেশ করবে না, যার অন্তরে শস্যদানা পরিমাণ ঈমান থাকবে এবং এমন কোনো ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবে না, যার অন্তরে শস্যদানা পরিমাণ অহংকার থাকবে।’ –সহিহ মুসলিম শরীফ: ১/৬৫

বর্ণিত হাদিসে জান্নাত থেকে দূরে এবং জাহান্নামে প্রবেশের কারণ হিসেবে অহংকারকে উল্লেখ করা হয়েছে। অর্থাৎ অহংকার এতো মারাত্মক গোনাহ, যার থেকে সামান্য অহংকার প্রকাশ পাবে, সে জান্নাতে স্থান পাবে না; তার ঠিকানা হবে একমাত্র জাহান্নাম। এতে সুস্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয়- অহংকার আল্লাহর কাছে কী পরিমাণ নিকৃষ্ট।

3
পবিত্র হাদিসে মহানবী হজরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঘোষণা করেছেন, ‘রোজাদারের মুখের গন্ধ আল্লাহর কাছে মেশ্ক আম্বরের চেয়েও প্রিয়।’ এ গন্ধ মানে মেসওয়াক না করার কারণে মুখের দুর্গন্ধ আল্লাহর কাছে প্রিয় নয়।

এ হাদিসের আলোকে অনেকেই ভুল করে থাকেন, আর তা হলো- যেহেতু রোজাদারের মুখের গন্ধ আল্লাহর কাছে অনেক প্রিয়, তাই রোজা অবস্থায় মেসওয়াক করা যাবে না। মেসওয়াক করলে আল্লাহর কাছে প্রিয় গন্ধ দূর হয়ে যাবে। আর রোজাদার সে ফজিলত থেকে বঞ্চিত হবে। আসলে বিষয়টি এমন নয়।

রবং মেসওয়াক করা সুন্নত, এটা রোজা রাখা অবস্থায় সকাল, দুপুর, বিকালসহ সব নামাজের ওয়াক্তে আদায় করাই সুন্নত। আর সব অবস্থায়ই রোজাদারের মুখের ঘ্রাণ আল্লাহর কাছে প্রিয়। তাই বলে মেসওয়াক না করার ফলে রোজাদারের মুখের দুর্গন্ধ আল্লাহর কাছে প্রিয় নয়। এ ব্যাপারে রোজাদারের সাবধানতা অবলম্বন করা জরুরি।

রোজা রাখা অবস্থায় দাঁত ব্রাশের মাসআলা আলাদা। সাধারণত মানুষ ব্রাশের সঙ্গে পেস্ট ব্যবহার করে থাকে। যেমনটি মেসওয়াকের সঙ্গে ব্যবহার করা হয় না। 

মনে রাখতে হবে, রোজা অবস্থায় পেস্ট, গুল, মাজন বা কয়লা ইত্যাদি দিয়ে দাঁত পরিস্কার করা নিষিদ্ধ। কারণ এগুলো গলার ভেতরে গেলে রোজাই নষ্ট হয়ে যাবে। আর যদি ভেতরে চলে না-ও যায়, তবুও রোজা ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

যদি কেউ শুধু পেস্ট ছাড়া শুধু ব্রাশ করতে চায়; তবে তা করতে পারবে। তবে উত্তম হলো মেসওয়াক করা। তাতে মেসওয়াক করার সুন্নতও আদায় হবে আবার রোজা নষ্ট হওয়ার ক্ষতি থেকেও বেঁচে থাকা যাবে।

4
জীবনযাপনের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় হলো- ‘মানসিক চাপ।’ মানসিক চাপ জীবনের একটি ধ্রুব বাস্তবতা। মানবজীবনে বিচিত্র ধরনের উত্থান-পতন রয়েছে, রয়েছে অসংলগ্নতা, দু:খ-কষ্ট, অপ্রাপ্তি ও বেদনা ইত্যাদি।

এসব কিছু মানুষের ভেতরটাকে অস্থির ও বিষন্ন করে তোলে, অহেতুক বিরক্তির উদ্রেক ঘটায়। মানসিক চাপ ব্যক্তির ওপর তো বটেই পরিবেশের ওপরও মারাত্মক প্রভাব ফেলে।

মানুষ যখন মানসিক চাপের সম্মুখিন হয়- তখন এক ধরনের নেতিবাচকতা তাকে পেয়ে বসে। নিজের সম্পর্কে বা নিজের দিকে নেতিবাচক দৃষ্টিতে তাকাতে শুরু করে দেয়। যার ফলে আত্মবিশ্বাস নড়বড়ে হয়ে ওঠে, বিষন্নতা অবসাদ পেয়ে বসে। এমন অনাকাঙ্ক্ষিত মানসিক অবস্থার কুপ্রভাব ব্যক্তি আচরণের ওপর প্রভাব ফেলে। ফলে সে অশালীন ও অসংলগ্ন আচরণ করতে শুরু করে, অযথা উত্তেজিত হয়ে যায়।

অতএব মানসিক চাপ কীভাবে প্রতিহত করা যায়, কী করে তা মোকাবেলা করা যায়; তা জানা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।

গবেষণায় দেখা গেছে, ধর্মীয় বোধ ও বিশ্বাস উত্তেজনা মোকাবেলায় মানুষকে হেফাজত করার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলে। আধুনিক চিকিৎসাবিদরা মানসিক কষ্ট বা মর্মযাতনা দূর করার জন্য ধর্মীয় মূল্যবোধগুলোকে ব্যক্তি মনে দৃঢ়ভাবে স্থাপনের ওপর সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকেন।

এক গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব লোক নিয়মিতভাবে ধর্মীয় অনুষ্ঠানাদিতে যোগ দেয় সেসব লোকের সুস্থতার পরিমাণ যারা নিয়মিতভাবে ধর্মীয় অনুষ্ঠানাদিতে যোগ দেয় না তাদের তুলনায় অনেক বেশি।

এই গবেষণায় প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্ত থেকে প্রমাণ হয় যে, শারীরিক সুস্থতার সঙ্গে আধ্যাত্মিকতার শক্তিশালী সম্পর্ক রয়েছে। আর ধর্মীয় বিশ্বাস ও আচরণগুলোই প্রকৃত সুস্থতার কার্যকরী উপাদান।

পবিত্র কোরআনের বিভিন্ন জায়গায় এ বিষয়ে আলোচনা রয়েছে। ওই সব আলোচনার সারমর্ম হলো- যাদের অন্তর ইমানের নূরে আলোকিত, তারা সমগ্র পৃথিবীতে সুন্দর, কল্যাণ আর ভালো ছাড়া অন্য কিছুই চোখে দেখেন না। তারা বিশ্বব্যবস্থাকে সবোর্ত্তম ব্যবস্থা বলে মনে করেন। তারা মহাপ্রজ্ঞাবান সেই স্রষ্টা ও প্রতিপালক খোদার প্রার্থনা করেন যিনি এই বিশ্ব সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য-উদ্দেশ্য নিয়েসৃষ্টি করেছেন এবং যিনি সুন্দর ও কল্যাণ ছাড়া তার সৃষ্টিকূলের জন্য অন্য কোনো কিছুই পছন্দ করেন না। এক্ষেত্রে যদি কোনো কিছুতে ঘাটতি থাকে কিংবা জটিলতা থাকে তাহলে সেসব অসংগতি সহনীয় এবং সমাধানের পর্যায়ে পড়ে।
সূরা বাকারার ১৫৬ নম্বর আয়াতে এ সম্পর্কে ইরশাদ হয়েছে, ‘যারা আল্লাহর ওপর বিশ্বাসী তারা যেকোনো বিপদ আপদের সময় এই সত্য ও বাস্তবতার প্রতি মনোযোগ আকৃষ্ট করে বলে যে, আমরা আল্লাহর জন্য এবং আল্লাহর দিকেই আমাদের ফিরে যেতে হবে।’

বলা হয়, ভয় মানসিক চাপের অন্যতম কারণ। আর ভয় কাটিয়ে ওঠার জন্য যত রকম উপায়ের কথা বলা হয়েছে, সেসবের মধ্যে ধর্মীয় বিশ্বাস সবচেয়ে কার্যকরী ভূমিকা রাখে। ভয়ের উৎপত্তি যেখান থেকে ধর্মীয় বিশ্বাস সেই উৎপত্তিস্থলটাকেই ধ্বংস করে দেয়।

ইসলামি স্কলারদের অভিমত হলো, যেসব মানুষ ইসলামি শিক্ষার ছায়াতলে লালিত পালিত হয়, পবিত্র কোরআনের দৃষ্টিতে তারা মানসিক চাপ থেকে নিরাপদ। কারণ, শক্তির মূল যে উৎস তার সঙ্গে যে মানুষের সম্পর্ক সৃষ্টি হয় পৃথিবীর অন্য কোনো শক্তি তাকে আর প্রভাবিত করতে পারে না। সুতরাং আল্লাহর সঙ্গে মানে শক্তির উৎসের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনকারী মানুষ আর কোনো কিছুকেই ভয় করে না।

পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, ‘যে এক আল্লাহ ও আখেরাতের ওপর ঈমান আনবে এবং সৎকাজ করবে নি:সন্দেহে তার কোনো ভয় বা মর্ম বেদনার কারণ নেই।’

মনে রাখবেন, আপনি একজন বিশেষ মানুষ এবং নিজের সঙ্গেসবোর্ত্তম আচরণ করার যোগ্যতা রাখেন। ধর্মীয় শিক্ষাও তাই। তাই বিপদ-আপদে আল্লাহর স্মরণ, ধৈর্যধারণ, খোদাভীতি বা তাকওয়াবান হওয়া, বিপদাপদে ভেঙে না পড়ে সুস্থির থাকা, বিষন্নতা পরিহারে জন্য সৎকাজ করা এবং অপরের কল্যাণ ও সেবায় এগিয়ে যাওয়া ইসলামের শিক্ষা। কোনো মানুষ এসব অভ্যন্তরীণ বিশ্বাস দিয়ে মানসিক চাপ ও আঘাতকে সুন্দরভাবে রোধ করে দূরন্ত ঝড়ের মুখেও স্থির থাকতে পারেন।
আল্লাহতায়ালার সঙ্গে সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও কার্যকর উপায় হচ্ছে- দোয়া এবং নামাজ। এগুলো মানসিক অস্থিরতাকে কমিয়ে দেয়। সেইসঙ্গে ব্যক্তি মনে দৃঢ় আশার সঞ্চার করে। কারণ কোরআনে কারিমে বলা হয়েছে, ‘একমাত্র আল্লাহর জিকির বা স্মরণের মাধ্যমেই অন্তরগুলো প্রশান্তি পায়।’

5
একটি বেসরকারি মুঠোফোন প্রতিষ্ঠানের কর্মী খালিদ হোসাইন (ছদ্মনাম)। বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশোনা শেষ করে ছয় বছর হলো পেশাজীবন নিয়ে ব্যস্ত। মাঝেমধ্যেই অফিসে বড় কর্তাদের রোষানলে পড়েন খালিদ। ছোটখাটো ভুলত্রুটির জন্যও অফিসে সবার সমানে বেশ অপদস্থ হয়েছেন। তাঁর অধীনেও ৯ জন কর্মী কাজ করছেন। তাঁদের সামনেও এমন ঘটনা ঘটে। তিনি বললেন, ভুল হলে কথা শুনতে সমস্যা নেই। কিন্তু সবার সামনে সব পরিস্থিতে শুনলে সেটা সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়।

কর্মস্থলে নেতিবাচক আচরণ নয়
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিটিউটের (আইবিএ) বিবিএ প্রোগ্রাম চেয়ারম্যান রিদওয়ানুল হক এমন আচরণকে ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান ও কর্মস্থলের জন্য নেতিবাচক বলে মনে করেন। রিদওয়ানুল হক বলেন, প্রতিষ্ঠানে কর্মীদের কাজের সমালোচনা করার অবশ্যই বিশেষ ধারা আছে। প্রতিষ্ঠানগুলোতে যাঁরা কর্তা পর্যায়ের ব্যক্তি, তাঁরা অধস্তনদের ওপর প্রভাব দেখানোর চেষ্টা করেন। সবার সামনে রাগারাগি কিংবা ভিন্ন কোনো পরিবেশে নেতিবাচক আচরণ কর্মীদের মনে অসন্তোষ তৈরি করে। যেসব প্রতিষ্ঠানে এমন নেতিবাচকতার চর্চা আছে, সেখানে তরুণ মেধাবী কর্মীদের কাজের আগ্রহ থাকে না, দিন শেষে প্রতিষ্ঠানই বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

প্রকাশ্যে রাগারাগি করা দক্ষতা নয়, দুর্বলতা
২০১৫ সালে ই-কর্মাস প্রতিষ্ঠান আমাজন ডটকম বেশ সমালোচনার মুখে পড়েছিল। বিভিন্ন দাপ্তরিক সভায় আমাজনের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা প্রভাব খাটাতেন আর কর্মীদের ওপর মানসিক চাপ তৈরি করতেন বলে অভিযোগ ওঠে। পরবর্তী সময়ে আমাজনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জেফ বেজস ক্ষমা চেয়ে নিজ প্রতিষ্ঠানে সংস্কার আনার ঘোষণা দেন।
হার্ভার্ড বিজনেস রিভিউতে যুক্তরাষ্ট্রের ব্র্যান্ডিস ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস স্কুলের অধ্যাপক অ্যান্ডি মলিনস্কি লিখেছেন, ‘কর্মস্থলে কাজের সমালোচনা আর কর্মীদের ভুল ধরিয়ে দেওয়ার একটি ধরন (স্টাইল) আছে, যা প্রতিষ্ঠানের “সংস্কৃতি” সংজ্ঞায়িত করে। কর্মীদের ভুলত্রুটিকে কেন্দ্র করে হট্টগোল, তর্কাতর্কি করা, সবার সামনে বকাঝকা করা আধুনিক করপোরেট প্রতিষ্ঠানের সংস্কৃতি হতে পারে না।’
অফিসে আলাদা ঘরে ডেকে নিয়ে কর্মীদের ভুলত্রুটি সম্পর্কে বলা যায়। এমনভাবে বলতে হবে, যেন অন্য কর্মীরা কিছুই টের না পায়। কর্মীদের খুব বড় ভুল কিংবা ব্যর্থতার জন্য প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাদের নিজেদের ওপর দায় নেওয়া শিখতে হয়। জাপান, সুইডেন, নরওয়েসহ বিভিন্ন দেশের প্রতিষ্ঠানগুলোতে এমন চর্চা দেখা যায়। দক্ষ ব্যবস্থাপকের সেরা ৫টি গুণের একটি হচ্ছে দলের ভুলের দায় নিজে নিয়ে কর্মীদের অনুপ্রেরণা দেন।

বন্ধুকে ছোট করবেন না
শুধু কর্মক্ষেত্রেই নয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাসরুম থেকে শুরু করে বন্ধুদের আড্ডাতেও আমরা অন্যকে ছোট করার মতো কাজ করে থাকি। এ ধরনের আচরণে যে মানুষটিকে ছোট করা হচ্ছে, তিনি বেশ হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েন, যা হয়তো কারও সঙ্গে তিনি শেয়ারও করতে পারেন না। ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সাইকো সোশ্যাল কাউন্সেলর ও প্রভাষক আয়েশা সিদ্দিকা জানান, বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডার সময় আমরা অনেকেই অন্যকে ছোট করে কথা বলি, যা কিন্তু আসলে বুলিংয়ের মতো অপরাধ। অন্যের মনে আঘাত দেওয়া কিংবা তার ওপর যেকোনোভাবেই মানসিক চাপ তৈরি করা একধরনের সামাজিক অন্যায়।
আপনি যদি কোনো আড্ডায় কিংবা বন্ধুমহলে এমন অন্যায় আচরণের শিকার হন, তাহলে বন্ধুদের বোঝানোর চেষ্টা করুন কিংবা শিক্ষকদের শরণাপন্ন হতে পারেন। বিভিন্ন ঘরোয়া পার্টি বা অনুষ্ঠানে এমন আচরণ কখনোই করবেন না। যাঁরা এমন আচরণ করছেন, তাঁদের সর্বোচ্চ চেষ্টা দিয়ে বোঝানোর চেষ্টা করুন। বন্ধুর কথাবার্তার ধরন, হাঁটাচলার স্টাইল কিংবা পোশাক-আশাক নিয়ে নেতিবাচক কথা বললে আসলে নিজেকেই ছোট ও অসম্মান করা হয়।

পরিবারে ইতিবাচক আচরণ করুন
সন্তানকে অতিথির সামনে কিংবা আত্মীয়স্বজনের সামনে বকাঝকা করেন অনেক বাবা-মা। যেসব শিশু এমন পরিবেশে বড় হয়, তারা অন্যকে সম্মান করার নৈতিক শিক্ষা পায় না, সহিষ্ণুতাও শেখে না। নিজেকে ছোট ভাবার কারণে এমন শিশুদের সৃজনশীলতা বিকাশে বাধা পায়। আয়েশা সিদ্দিকা জানান, সন্তানের পরীক্ষার খারাপ ফলাফল কিংবা যেকোনো কারণেই হোক না কেন, সবার সামনে কখনোই বকবেন না কিংবা তুলনা করে কথা বলবেন না। এতে আসলে আপনার সঙ্গে সন্তানের দূরত্ব তৈরি হয়, যার কারণে সন্তান মানসিক অস্থিরতায় ভোগে। ব্যর্থতা কিংবা ভুলত্রুটিতে সন্তানকে বোঝানোর চেষ্টা করুন একান্তে। আপনি আপনার সন্তানকে নিয়ে ভাবছেন, এমন ধারণা সন্তানের মনে প্রতিষ্ঠার দিকে গুরুত্ব দিন।
পরিবারের এক সন্তানকে অন্য সন্তানের সামনে বকুনি দেওয়ার অভ্যাস থেকেও বিরত থাকুন। যেসব পরিবারে সন্তানকে অভিভাবকেরা প্রকাশ্যেই বকুনি দেন, সে পরিবারগুলোর মানসিক স্থিরতা বেশ ভঙ্গুর হয়।

ইতিবাচকভাবে সমালোচনা
একান্তে কথা বলুন: প্রকাশ্যে মেজাজ দেখানোর চেয়ে ব্যক্তিগতভাবে কর্মীদের সঙ্গে কথা বলুন। এতে কর্মীরা ইতিবাচকভাবে কাজ করতে উৎসাহ বোধ করেন। পরিবারের ক্ষেত্রে সন্তানকে একান্তে তার ভুলগুলো ধরিয়ে আলোচনা করুন। বন্ধুদের কোনো কিছু বলতে চাইলে একান্তে বুঝিয়ে বলুন। দূরত্ব তৈরি যেন না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখুন।
ইতিবাচকভাবে সমালোচনা করুন: সন্তানকে ‘তোমার ফলাফল কেন খারাপ হয়েছে’, এমন বাক্যে বকুনি না দিয়ে ‘তোমার ভবিষ্যতে ফল যেন ভালো হয়। তুমি তো গণিতে ভালো, তাহলে কেন ইংরেজিতে ভালো করছ না?’, এভাবে ইতিবাচক উপায়ে কথা বলুন। প্রতিষ্ঠানে কর্মীকে কোনো ত্রুটি বা ভুলের সমালোচনা শুরু করুন এভাবে, আপনার কাজের মান বাড়ানোর জন্য আমার কিছু পরামর্শ আছে। আপনি কাজটি যেভাবে করেছেন, তা একটু অন্যভাবে করলে আমরা যা চাই, তা-ই করা সম্ভব কিন্তু! প্রশংসা বা ইতিবাচক বাক্য দিয়ে সমালোচনা বা ভুল ধরিয়ে দেওয়া শিখুন।
সমস্যা কোথায় তা খুঁজে বের করুন: কর্মক্ষেত্রে ভুলত্রুটি নিয়ে সমালোচনার ক্ষেত্রে আমিত্ব জাহিরের চেষ্টা করবেন না। কোথায় সমস্যা হয়েছে, তা খুঁজে বের করুন। অনুসন্ধিৎসু মনন তৈরির মাধ্যমে সমস্যার সূত্র খুঁজে বের করুন।
নির্দিষ্ট বর্ণনা দিন: সন্তানকে বকুনি দেওয়ার সময় ‘তোমার ফল এর-ওর চেয়ে ভালো না কেন?’, এমন ধরনের বাক্য পরিহার করে ‘তোমার জ্যামিতিতে ভালো করতে হবে’ কিংবা ‘তোমার প্রতিদিন আরও দুই ঘণ্টা বেশি পড়া উচিত ছিল’, এমন কথা বলুন।
কীভাবে উন্নতি করা যায়, তা নিয়ে পরামর্শ দিন: প্রতিষ্ঠানে কর্মীর ভুলত্রুটিতে তাঁকে জবাবদিহির সুযোগ দিয়ে তাঁর কাজকে আরও উন্নত করা যায় কীভাবে, তা নিয়ে পরামর্শ দেওয়ার চর্চা শুরু করুন। পরিবারের সন্তানের ভুল কীভাবে কমানো যায়, কিংবা পরীক্ষায় কীভাবে আরও ভালো করা যায়, তা সন্তানকে জানান।
নিয়মিত যোগাযোগের মধ্যে থাকুন: যেকোনো ভুলত্রুটি নিয়ে কথা বলার পরে নিয়মিত প্রতিষ্ঠানে কর্মীর সঙ্গে যোগাযোগ রাখুন। তাঁর উন্নতি নিয়ে তাঁর সঙ্গে কথা বলুন। প্রতিষ্ঠানের নির্বাহী কিংবা দলের নেতা হিসেবে নিয়মিত জানতে হবে আপনার সহকর্মীর অগ্রগতির বিষয়ে। সারা বছর সন্তানের খোঁজ রাখেন না, অথচ ফলাফলের দিন সন্তানকে বেধড়ক পিটুনি দেওয়া একটি সামাজিক অপরাধ। এতে সন্তানের সঙ্গে আপনার দূরত্ব তৈরি হয়। এমন নেতিবাচক আচরণ পরিহার করুন।

 

6
স্তন ক্যানসার—শব্দটি কানে এলেই আমাদের চোখে ভেসে ওঠে নারীদের মুখ। আমরা প্রায় সবাই মনে করি যে স্তন ক্যানসার তো নারীদের রোগ! একেবারেই ভুল ধারণা। রোগটি পুরুষেরও হতে পারে। আরও দুশ্চিন্তার কথা হলো সাম্প্রতিককালে পুরুষদের এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা বাড়ছে!
যুক্তরাষ্ট্রের ক্যানসার সোসাইটির আনুমানিক হিসাব অনুযায়ী, ২০১৫ সালে স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত হয়েছিলেন ২ লাখ ৩১ হাজার ৮৪০ জন নারী। সে বছর একই রোগে ভুগেছেন ২ হাজার ৩৫০ জন পুরুষ। এর মধ্যে আনুমানিক ৪৪০ জন পুরুষের এ বছর মৃত্যুর আশঙ্কা রয়েছে। স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত নারীদের তুলনায় পুরুষদের হার বেশ কম মনে হতে পারে। কিন্তু ভুলে গেলে চলবে না, নারীদের তুলনায় পুরুষদের স্তন ক্যানসার বেশি বিপজ্জনক।
লুইভিলের নরটন ক্যানসার ইনস্টিটিউটের ‘অনকোলজিস্ট’ জ্যানেল সেগের যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম ‘ইউএসএ টুডে’কে জানিয়েছেন, পুরুষের স্তনে কোষের সংখ্যা কম থাকাটা আশীর্বাদের সঙ্গে অভিশাপও। পুরুষের স্তনে কোষের ঘনত্ব বেশ কম। এ কারণে স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত হলে ভেতরকার ‘গোটা’ শনাক্ত করা সহজ। আবার কোষের ঘনত্ব কম হওয়ায় পুরুষের স্তন থেকে ক্যানসার ছড়িয়ে পড়ার হার অনেক বেশি। পুরুষের স্তনে ক্যানসার শনাক্ত করার পর অনেক ক্ষেত্রেই দেখা গেছে, রোগটা ছড়িয়ে পড়েছে দেহের অন্যান্য অংশেও।
পরিসংখ্যান বলছে, গত ২৫ বছরে পুরুষের স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার হার শতকরা ২৬ শতাংশ বেড়েছে। পুরুষদের স্তন ক্যানসারের চিকিৎসায় ‘একটু দেরি’ প্রাণঘাতী হতে পারে। পুরুষদের স্তনকোষ যেহেতু নারীদের মতো অতটা ঘন নয়, তাই সেখানে কোনো ‘টিউমার’ সৃষ্টি হলে তা দ্রুতই পাঁজরের পেশি ও চামড়ায় ছড়িয়ে পড়ে। বিপদের এখানেই শেষ নয়। চিকিৎসকদের মতে, স্তন ক্যানসার শনাক্ত করতে নারীদের নিয়মিত ম্যামোগ্রাফি করার পরামর্শ দেওয়া হলেও পুরুষদের ক্ষেত্রে সেটা সম্ভব নয়। কারণ, পুরুষদের স্তনকোষ সুগঠিত নয়। তারপরও ৩৫ বছর বয়স থেকে প্রতি ছয় মাস অন্তর পুরুষদের একবার করে পরীক্ষা করানো উচিত বলে মনে করছেন চিকিৎসকেরা।

7
আমরা মুসলিম। আর এই কারণেই নামাজ আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আর এই নামাজের মাধ্যমেই আমরা নিজেদেরকে আল্লাহর সামনে পেশ করতে পারি। তাছাড়াও নামাজ হচ্ছে ইসলামের পাঁচ স্তম্ভের মাঝে দ্বিতীয় স্তম্ভ। ইসলামের প্রথম স্তম্ভ হচ্ছে কালেমা শাহাদাত। সুতরাং আমারা আমাদের সন্তানদেরকে এই গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভটি আদায়ের প্রতি অনুপ্রেরণা দিতে পারি এবং তাদেরকে নামাজ পড়তে অভ্যস্ত করে তুলতে পারি। আমরা সবাই চাই তারা নিজেরাই নামাজ পড়তে শিখুক এবং দোয়া করতে শিখুক। এগুলো তারা বাবা-মার জন্য বাধ্য হয়ে করুক এটা কেউই চায় না। একজন সন্তানকে আগে বুঝতে হবে যে ‘ইবাদাত’ হচ্ছে আল্লাহর পক্ষ থেকে আরোপিত একটি বিষয় এটা ইচ্ছা বা স্বাধীনভাবে পালন করার কোন বিষয় নয়। নিম্নে এমন কিছু পথ উল্লেখ করছি যার মাধ্যমে আপনি আপনার সন্তানকে নামাজ পড়ার প্রতি উৎসাহিত করতে পারবেন।

১. উদাহরণের মাধ্যমে শেখানো : শিশু সন্তানরা সাধারণত মা-বাবার অনুকরণ করে থাকে। সুতরাং তাদেরকে দেখান যে আজান শুনার সাথে সাথে আপনি অজু করে নামাজের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন। মুসলিম মা-বাবা হিসেবে আপনি আপনার সন্তানের কাছে প্রথম উদাহরণ। আপনি যদি সারা দিন ইবাদত-বন্দেগীকে অগ্রাধিকার দেন এবং এই ক্ষেত্রে কোন অলসতা বা অবহেলা না করেন তাহলেই আপনার সন্তান নামাজের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠবে। আপনি তাদেরকে বলতে পারেন, নামাজের সময় হয়ে গেছে এখন আমি আর দেরি করতে পারবো না।

২. ছোট থেকেই শুরু করুন : আমাদের নবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.) বলেছেন, তোমরা তোমাদের সন্তানদেরকে নামাজ শিক্ষা দাও, যখন তাদের বয়স থাকে সাত। আর যখন তারা দশ বছরে পৌঁছে যাবে তখন তোমারা তোমাদের সন্তানদেরকে নামাজের জন্য প্রহার করো। এবং তাদের বিছানা আলাদা করে দাও (আবু দাউদ) যদিও সাত বছর বয়সে শিশুরা নামাজ আদায় করতে বাধ্য নয় কিন্তু তারা সাত বছর থেকে নামাজে অভ্যস্ত হয়ে পড়লে, তরুণ হওয়ার পরেও নামাজের বিষয়ে অনাগ্রহী হবে না।

৩. সন্তানের জন্য নামাজের জায়গা নির্ধারণ করে দিন : আপনার বাসায় যদি জায়গা থাকে তাহলে নামাজের জন্য একটি রুমকে নির্দিষ্ট করে রাখুন। আর যদি অতিরিক্ত জায়গা না থাকে তাহলে অন্তত একটি রুমের এক কোণায় সামান্য জায়গা নামাজের জন্য নির্ধারণ করে রাখুন। যাতে করে আপনার সন্তান বুঝতে পারে নামাজ পড়া অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয়। যার কারণে একটা নির্দিষ্ট জায়গা রাখা হয়েছে। আপনার সন্তানদেরকে শিক্ষা দিন যে, এটা শুধু নামাজের জন্য নির্ধারিত জায়গা। এই জায়গাকে সব সময় পরিষ্কার ও পবিত্র রাখতে হবে।

৪. সন্তানদের চাক্ষুষ বিষয়ের প্রতি গুরুত্ব দিন : ছোটরা চক্ষুষ বিষয় ও পুরস্কারের প্রতি বেশি আগ্রহী হয়ে থাকে। আপনার বাসায় ইসলামী ক্যালেন্ডার ঝুলিয়ে রাখুন। এটা আপনার সন্তানদের প্রার্থনা করতে উৎসাহিত করবে। কেননা ইসলামী ক্যালেন্ডারটি আপনার সন্তানের চাক্ষুষ অনুস্মারক হিসাবে কাজ করবে। আর প্রতিটি শুক্রবার তাকে স্মরণ করিয়ে দিন।

৫. টাইম ম্যানটেইন : যখন আপনার সন্তানের বয়স সাত হয়ে যাবে তখন তাদেরকে নামাজের সময় শিক্ষা দিন। তাদের জীবনের এই নতুন অধ্যায়কে উৎসাহিত করার জন্য আপনার সন্তানের বন্ধুদের বাসায় আমন্ত্রণ জানান এবং তাদেরকে হিজাব, তাজবিহ অথবা আজান দেয় এমন এলার্ম ঘড়ি প্রদান করুন যাতে করে তারা নামাজ আদায় করতে পারে।

৬. আল্লাহ সম্পর্কে তাদেরকে শিক্ষা দিন : আল্লাহর বিষয়টি বোঝা ছাড়া, প্রার্থনা শুধু একটি অনুষ্ঠান হয়ে উঠবে এবং পালনকর্তার সাথে আধ্যাত্মিক এবং মানসিক সংযোগের অভাব হয়ে পরবে। শৈশব থেকে, আপনার সন্তানদের আল্লাহর বিষয়ে শিক্ষা দিন। আল্লাহ কীভাবে কীভাবে সবকিছু তৈরি করেছেন। তাদেরকে কি কি দিয়েছেন এবং তাদেরকে কীভাবে রক্ষা করবেন ইত্যাদি বিষয়ে তাদের সাথে কথা বলুন। এর মাধ্যমে আপনার সন্তানদের অন্তরে আল্লাহর প্রতি এক গভীর ভালোবাসা তৈরি হবে।

৭. নবীদেরকে তাদের জন্য মডেল হিসাবে তুলে ধরুন : নবীদের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বাসায় কথা বলুন। তাদের জীবনী পাঠ করুন এবং তাদের সিরাত নিয়ে কথা বলুন। এটা আপনার জীবনে দৈনিক একটা রুটিন বানিয়ে নিন। নবীদেরকে তাদের সামনে মডেল হিসেবে তুলে ধরুন। তাহলে তারা তার মতো হতে চেষ্টা করবে। এবং তাদের মতো ইবাদত করতে চেষ্টা করবে।

৮. ছোট ধাপ : এটা একটা নাটকীয় পরিবর্তন হতে পারে, যে একদমই নামাজ পরে না সে প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ছে। তো শুরু হোক এই ছোট পরিবর্তন দিয়ে।

৯. অটুট থাকুক : আমরা সব সময়ই চাই আমাদের সন্তানরা নামাজকে ভালোবাসুক। কিন্তু এমন সময়ও আসবে যে, তারা অলসতা করবে এবং নামাজ পড়তে চাইবে না। মা-বাবা হিসেবে তাদের দায়িত্ব হবে তারা যেন সব সময়ই নামাজ পড়ে সেই ব্যবস্থা করা। বিশেষত তাদের বয়স যখন দশ বছর হয়ে যায়। তখন নামাজ ছেড়ে দেওয়া কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য হবে না। নামাজ পড়ার বিষয়টা অভ্যাসে পরিণত হয়ে গেলে কঠিন কিছু নয়।

১০. পারিবারিক সময় : নামাজ একটি ইতিবাচক মনোভাব, এটাকে উৎসাহিত করার একটি উপায় হচ্ছে এটি নিয়ে একটি যৌথ অনুশীলন করতে হবে। প্রতিদিন পরিবারিকভাবে কমপক্ষে একবার নামাজ পড়ার চেষ্টা করুন। আপনার সন্তান যদি আজান দিতে সক্ষম হয় তাহলে তাকে আজান দেওয়ার দায়িত্ব দিন। যদি সম্ভব হয় তাহলে শুক্রবারের নামাজে এবং ঈদের নামাজে আপনার সন্তানদের নিয়ে এক সাথে যান। একসঙ্গে নামাজ পড়ার বিষয়টা একটু ভিন্ন বিষয়। এতে নিজেদের মনোবল বৃদ্ধি পায়।

8
কথায় আছে, সকালে খাবার খেতে হয় রাজার মতো, দুপুরে রাজপুত্র আর রাতে প্রজার মতো।
কিন্তু আমরা কী করি?

আমরা পুরো নিয়মটাকেই পাল্টে নিয়েছি। সকালে স্কুল, কলেজ, অফিসে যাওয়ার ব্যস্ততায় কোনো রকম নাস্তা করে বেরিয়ে যাচ্ছি, অনেকে তো সকালে খাওয়ারই সময় পান না, দুপুরে কাজের ফাঁকে একটু খেয়ে নেয়া।

এবার সারাদিনের কাজ শেষে পরিবারের সবাই এক হয়ে জমিয়ে আড্ডা দিতে দিতে ভুড়িভোজ। এরপর টিভি দেখতে দেখতে আবার কোনো খাবার এবং বেশিরভাগ সময়ই চিপস, চানাচুর-কেক, মিষ্টি। এরও পরে অনেকেই শখ করে একটু চা কফি খান, ঘুমের আগে ক্যাফেইন মানে রাতের ঘুমটাও ঠিকভাবে হয় না।

আমরা যতোই পরামর্শ পড়ি কিন্তু অনেকেই রাতে বেশি খাওয়ার প্রবণতা থেকে আসলে বের হতে পারিনা। যারা মাঝ রাতেও কিছু খেতে চান তারা কিছু কম ক্যালোরির স্বাস্থ্যকর খাবার ঘরে রাখুন, আর একটু বেশি খেলেও ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখুন।


কর্নফ্লেক্স বা সিরিয়াল খেতে পারেন লো-ফ্যাট দুধ দিয়ে। অবশ্যই বাড়তি চিনি দেবেন না।

ছোট এক বাটি দই খেতে পারেন। মাত্র ১০০-১৫০ ক্যালোরি পাবেন এতে, কিন্তু দই আমাদের মেটাবলিজম বাড়াবে আর অ্যাসিডিটি কমাবে।

মুরগির দুই পিস বুকের মাংসও খাওয়া যাবে। সঙ্গে নিন কিছু পলং শাক আর ওপরে দিন একটু অলিভ ওয়েল। এবার পরিমাণ মতো লবণ দিয়ে সেদ্ধ করে নিন। আমরা সাধারণত মাংস যেভাবে ভুনা করে খাই এতে অনেক বেশি তেল মশলা দেওয়া হয়, ফলে ক্যালোরি-ফ্যাট সবই বেশি থাকে, ফলাফল মুটিয়ে যাওয়া।

একটা আপেল খান। এমনি এমনি খেতে ভালো লাগছে না? এক চামচ পিনাট বাটার দিয়ে নিন।

খাবেন নাকি, ক্রিমে ভরা চকলেট পুডিং? মাঝে মাঝে একটু খেয়ে নিন, মাত্র ৯০ ক্যালোরি পাবেন ছোট একটা পিস থেকে।

মাত্র চার ক্যালোরির একটা খাবার আছে! পুষ্টিগুণে ভরা ছোট একটা গাজর খান নিশ্চিন্তে। 

রান্নাঘর গোছানো শেষে এখন আর কিছু করতে ভালো না লাগলে একটি কলা খেয়ে নিন। আশঁযুক্ত এই ফলটি থেকে আমরা প্রায় ১০০ ক্যালোরি পাচ্ছি।

তবে চেষ্টা করুন ঘুমাতে যাওয়ার অন্তত দুই ঘণ্টা আগে থেকে কিছু না খাওয়াi

9
১/ টমেটো

আপনার ক্লান্তিযুক্ত, নিষ্প্রাণ এবং নিষ্প্রভ ত্বকের মাঝে প্রাণশক্তি এবং উজ্জ্বলতা নিয়ে আসার ক্ষেত্রে টমেটো চমৎকার উপকারী একটি উপাদান। ত্বকের লাবণ্য, তারুণ্য এবং নমনীয় ভাব পুনরায় নিয়ে আসার জন্যে খুব পাতলা করে কাটা টমেটো স্লাইস মুখের উপরে ২০ মিনিটের জন্য দিয়ে রাখুন।  এছাড়াও, আপনার যদি মুখের ত্বকে জ্বালাপোড়া ভাব থাকে তবে সেক্ষেত্রে টমেটোর রস মুখে লাগাতে পারেন। সবশেষে, যদি ত্বকের রঙ সুন্দর করতে চান তবে টমেটো এবং অলিভ অয়েল দিয়ে তৈরি ফেসমাস্ক ব্যবহার করতে পারেন।

২/ আলু

আলু খেতে যেমন অনেক দারুণ, তেমন দারুণ আপনার ত্বকের জন্যেও। ত্বকের তারুণ্য ধরে রাখার জন্যে আলু খুব উপকারী একটি উপাদান। ত্বকে বয়সের ছাপ কমানোর জন্যে প্রতিদিন কমপক্ষে ১৫ মিনিট সময় নিয়ে আলু কুচি দিয়ে তৈরি ফেসমাস্ক অথবা আলুর রস মুখে লাগিয়ে রাখতে পারেন।  এছাড়া ত্বকের নমনীয়তা বাড়াতে চাইলে লেবুর রস দিয়ে তৈরি আলুর মাস্ক ব্যবহার করতে পারেন।

৩/ লেবু

মুখের ত্বকের রোদে পোড়াভাব, ব্রণের দাগ এবং বয়সের ছাপ মুছে ফেলার জন্যে লেবুর চাইলে কার্যকরি উপাদান আর নেই। এমনকি, আপনার ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করতেও লেবু অনেক উপকারী একটি উপাদান।

৪/ অ্যালোভেরা

আপনি কি আপনার ত্বকের জন্যে জাদুকরী কোন উপাদান খুঁজছেন? তবে অ্যালোভেরা হবে আপনার সেই কাঙ্ক্ষিত উপাদানটি। অ্যালোভেরা পাতার ভেতরের ঘন এবং আঠালো অংশটি ভালোভাবে তুলে নিয়ে সমানভাবে মুখের ত্বকে লাগিয়ে নিন। অ্যালোভেরা আপনার মুখের ত্বক উজ্জ্বল এবং দীপ্তিময় করতে দারুনভাবে কাজে দেবে। শুধুমাত্র ব্রণের দাগ কিংবা রোদে পোড়াভাব নয়, পুড়ে যাওয়ার ছোটখাটো দাগ পর্যন্ত সারিয়ে তুলতে অ্যালো জেল খুব দারুনভাবে কাজে দেয়। এর জন্যে প্রতিদিন অ্যালোভেরা জেল অন্তত দশ মিনিট মুখের ত্বকে ব্যবহার করুন।

৫/ শসা

ত্বকের যেকোন ধরণের সমস্যার জন্যে শসা খুব চমৎকারভাবে কাজ করে থাকে। বিশেষ করে যাদের ব্রণের সমস্যা রয়েছে, তাদের জন্য শসা খুবই উপকারী। চোখের নীচে যাদের ডার্ক সার্কেল এর সমস্যা রয়েছে তারা শসা কুচি করে চোখে দিয়ে রাখতে পারেন। এতে ডার্ক সার্কেল কমে যাবে অনেকখানি। আর মুখের ত্বকের জন্য শসা পাতলা করে কেটে মুখে দিয়ে রাখতে হবে ১৫-২০ মিনিট এর জন্য। ভালো ফলাফল পেতে চাইলে প্রতিদিন এই নিয়মটি মানতে হবে।

৬/ মধু

ত্বকের ময়েশ্চারাইজার বাড়াতে মধু সবচেয়ে উপকারী এবং প্রয়োজনীয় একটি উপাদান। মধুতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে মিনারেলস এবং বিভিন্ন ধরণের অর্গানিক মাইক্রোএনামেলস, যা ত্বকে নতুন করে কোষ তৈরির প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করে। যদি নিয়মিতভাবে মধু ব্যবহার করা যায় তবে অনেক গাড় বয়সের ছাপও চলে যাওয়ার সম্ভবনা থাকে। শুধু একটা ব্যাপার মনে রাখতে হবে, আপনার যদি কোন ধরণের এলার্জির সমস্যা থাকে তবে মধু ব্যবহার না করাই ভালো হবে সেক্ষেত্রে।

মুখের এবং ঘাড়ের কালো দাগ এবং বয়সের ছাপ মুছে ফেলার জন্যে মধু লাগিয়ে এরপর হালকা গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। আর বয়স-প্রতিরোধক মাস্ক বানাতে চাইলে সমপরিমাণ মধু ও দারুচিনি গুঁড়া একসাথে ভালমতো মিশিয়ে ব্যবহার করুন।

৭/ চিনি

চিনি এমন একটি উপাদান যা সকলের বাসাতেই খুব সহজলভ্য। চিনি শুধুমাত্র মিষ্টি কোন খাবার তৈরিতেই নয়, আপনার চেহারার তারুণ্য ধরে রাখার জন্যেও অপরিহার্য একটি জিনিস। চিনি দিয়ে তৈরি প্রাকৃতিক স্ক্রাব ত্বকের পুষ্টি যোগাতে, ত্বকের মরা চামড়া তুলে ফেলতে, ত্বক নরম নমনীয় এবং ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধিতে চমৎকারভাবে কাজ করে থাকে।

পানি দিয়ে মুখ ধোয়ার পরে মুখ না মুছে ভেজা মুখেই চিনি দিয়ে খুব ভালোভাবে এবং যত্নসহকারে ঘষুন। সপ্তাহে অন্তত একবার চিনির স্ক্রাব ব্যবহার করলে ত্বকের নমনীয়তা আলাদাভাবে টের পাবেন আপনি।

10



অচ্ছুত সামন্ত ছবি: সাজিদ হোসেন২৭ জুলাই। গুলশান ক্লাবে অনুষ্ঠানটি তখনো শুরু হয়নি। শান্ত ভঙ্গিতে কক্ষে এসে ঢুকলেন সাদা শার্ট, জিনস ও কালো কোটি পরা একজন। মুখে সাদা খোঁচা খোঁচা দাড়ি। হাতে বন্ধুপত্নীকে উপহার দেওয়ার জন্য আনা শাড়ি। উঠে দাঁড়ালেন হলভরা লোকজন। জানলাম, ইনিই অধ্যাপক অচ্ছুত সামন্ত। তাঁকে সম্মানিত করতেই এই অনুষ্ঠান।

হতদরিদ্র ঘরে জন্ম নেওয়া অকৃতদার এই অধ্যাপক ভারতের ওডিশায় একদম একা হাতে গড়ে তুলেছেন দুটি বিশ্বমানের বিশ্ববিদ্যালয়। কলিঙ্গ ইনস্টিটিউট অব ইন্ডাস্ট্রিয়াল টেকনোলজি (কিট) ও কলিঙ্গ ইনস্টিটিউট অব সোশ্যাল সায়েন্স (কিস)। কিট একটি পূর্ণাঙ্গ বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, যার বার্ষিক আয় ৩০০ কোটি রুপির ওপরে। কিন্তু যে কারণটি অধ্যাপক সামন্তকে নিয়ে গেছে অন্য এক উচ্চতায়, তা হলো কিস। শিক্ষা দিয়ে দারিদ্র্যকে জয় করার এক ‘মেগা প্রজেক্ট’ হাতে নিয়েছেন তিনি। এখানে ১৫ হাজারের বেশি আদিবাসী শিক্ষার্থী একদম বিনা মূল্যে পড়ছেন স্নাতকোত্তর পর্যায় পর্যন্ত। শুধু পড়ালেখা নয়, কিসের সব ছাত্রছাত্রীর জন্য থাকা, খাওয়া, বিনোদন, খেলাধুলা, স্বাস্থ্যসেবা—সবকিছুই বিনা মূল্যে। কিটের আয়ের কিছু অংশ এখানে ব্যয় হয়। কিসের শিক্ষার্থীদের তিন বেলা খাওয়ার দৃশ্য নিয়েই তৈরি হয়েছে অনেক তথ্যচিত্র। সে এক এলাহি ব্যাপার, কেউ কেউ এটিকেই ভারতের বৃহত্তম রান্নাঘর আখ্যা দিয়েছেন। বিশ্বের বরেণ্য লোকজন এই দুটি বিশ্ববিদ্যালয় ঘুরে কেউ তাকে আখ্যা দিয়েছেন ঈশ্বরের আশ্চর্য সৃষ্টি, কেউ বলেছেন বাতিঘর। কেউবা এ প্রতিষ্ঠানকে আখ্যা দিয়েছেন ভারততীর্থ নামে।

সেই অধ্যাপক সামন্ত এসেছিলেন ঢাকায়। গত ২৭ জুলাই ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির সঙ্গে এক চুক্তি করতে। ড্যাফোডিলের মাধ্যমে ঢাকাতেও বিস্তৃত হচ্ছে কিসের কার্যক্রম।

গত বৃহস্পতিবার গুলশান ক্লাবে তাঁর সম্মানে এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিল ড্যাফোডিল। সেখানেই কথা হয় অধ্যাপক সামন্তের সঙ্গে।

কথা শুরু হওয়ার পরপর বাংলাদেশের ছেলেমেয়েদের দেখিয়ে ভাঙা বাংলায় বললেন, ‘আমি হান্ড্রেডস অব ছেলেমেয়েদের সঙ্গে কথাবার্তা বলেছি। তারা খুবই সম্ভাবনাময়, মেধাবী ও ভালো শিখছে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, তারা যথাযথ গুরুত্ব পাচ্ছে কি না। আমি বলব, ঢাকায় তারা অনেক যত্ন পাচ্ছে।’ জানতে চাইলাম, শিক্ষার লক্ষ্যটা কী? অধ্যাপক বললেন, ‘একজন সফল মানুষ হওয়ার চেয়ে ভালো মানুষ হওয়া বেশি জরুরি। ভালো মানুষ হতে পারলে সাফল্য তার পেছনে ঘুরবে। আমরা একাডেমিক শিক্ষার পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের আরও অনেক কিছুই শেখাই। যাতে তারা ভবিষ্যতে ভালো মানুষ ও দায়িত্ববান নাগরিক হতে পারে। এসবের জন্য আমি আমার জীবনটা তাদের জন্য উৎসর্গ করেছি।’

কিস পরিদর্শনের পর ভুটানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী লিওনচেন জিগমি ওয়াই থিনলে লিখেছেন, ‘এখানে শিক্ষার্থীদের সবকিছু বিনা মূল্যে। কিন্তু কোনো কিছুই বিনা মূল্যে নয়, শিক্ষার্থীদের সেই মূল্য দিতে প্রস্তুত থাকতে হবে।’

কী হতে পারে সেই মূল্য, জানতে চাইলে অচ্ছুত সামন্ত বলেন, ‘আমরা তাদের কাছে কোনো মূল্য প্রত্যাশা করি না। কিন্তু যে প্রতিষ্ঠানটি তাদের একজন ভালো মানুষ হিসেবে গড়ে তুলছে, সম্মানজনক জীবন দিচ্ছে তার প্রতি, সেই সমাজের শিক্ষার্থীদের কর্তব্য রয়েছে, দায় রয়েছে।’

ভারত ও বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ ও ভারতের শিক্ষাব্যবস্থার ভালো-মন্দটা জায়গাভেদে নির্ভর করে। ভারত সরকার এখন ভোকেশনাল শিক্ষার বিষয়ে অনেক গুরুত্ব দিচ্ছে, অনেক কিছু করছে। যার কারণে এই শিক্ষার দৃশ্যমান প্রসার ঘটছে। আমি আশা করব, বাংলাদেশেও কর্মমুখী শিক্ষার প্রসার ঘটবে।’ তিনি বলেন, বাংলাদেশেও অনেক নামী বিশ্ববিদ্যালয় আছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সবচেয়ে পুরোনো ও বড়। এখানে বেসরকারি পর্যায়েও অনেকগুলো ভালো বিশ্ববিদ্যালয় হয়েছে। এই বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ধীরে ধীরে এগোচ্ছে। কারণ, এক্সিলেন্স এক দিনে অর্জিত হয় না। এ জন্য সময় লাগবে।

‘তবে যা-ই হোক না কেন, শিক্ষা হতে হবে মানবিক ও মানসম্মত। আমার বিবেচনায় শিক্ষাহীনতার চেয়ে অর্ধেক শিক্ষা ক্ষতিকর।’

ছেলেমেয়েদের অস্থিরতা, উগ্রপন্থায় যুক্ত হওয়া প্রসঙ্গে এই অধ্যাপক বলেন, শিক্ষায় নৈতিকতা থাকতে হবে অবশ্যই। তাতে তারা ইতিবাচক ও সৃষ্টিশীল হয়। শিক্ষিত খারাপ মানুষ খুব ক্ষতির কারণ হতে পারেন। নৈতিক শিক্ষার পাশাপাশি কর্মসংস্থান ও সম্মানজনক জীবনের নিশ্চয়তা থাকাটাও বড় বিষয়। এ বিষয়গুলো ঠিক থাকলে অন্তত শিক্ষার্থীর মধ্যে হতাশা থাকবে না। তারা বিপথে যাবে না।

খুব অল্প সময়ের মধ্যে কয়েকবারই বলেছেন, ‘যত কিছুই বলুন, পড়ার কোনো বিকল্প নেই। এ অভ্যাস গড়তে হবেই। অনেক কিছুর সমাধান আছে এখানেই।’

11
 কর্পোরেট দুনিয়া যখন কর্মীদের জন্য দিন দিন আরও অমানবিক ও কঠোর হয়ে উঠছে, তখন এমন একটি খবরে সবারই একটু স্বস্তির নিশ্বাস ফেলা উচিত।

মেডালিন পার্কার মিশিগানের অ্যান আর্বার শহরের একটি প্রতিষ্ঠানের ওয়েব ডেভলপার। কয়েক সপ্তাহ আগে তিনি তার দলের অন্যান্য কর্মীদের ও সিইও কে তার মানসিক অসুস্থতার কথা জানিয়ে কিছুদিনের জন্য ছুটি চান।

মেডালিনের ছুটির মেইলের জবাবে তার সিইও বেন কঙ্গেলটন লিখেন, ‘হাই মেডালিন, তোমার ছুটির আবেদনের জন্য আমি তোমাকে ব্যক্তিগতভাবে ধন্যবাদ জানাতে চাই। তুমি যখন ছুটি চাও, তখন মানসিক অসুস্থতার গুরুত্ব উপলব্ধি করতে পারি আমি। আমি এখনো বিশ্বাস করতে পারছি না যে অনেক প্রতিষ্ঠানে এখনও এই রীতি নেই। তুমি আমাদের সবার জন্য উদাহরণ।

সিইওর কাছ থেকে এমন মেইল পেয়ে উচ্ছস্বিত মেডালিন সেটি শেয়ার করেন টুইটারে। বেনের এমন মেইল অন্যন্য ব্যাবহারকারীদের হৃদয়েও নাড়া দেয়। টুইটটি ভাইরাল হতে থাকে। এই যুগে এতটা মানবিক হওয়ার জন্য বেনকে ধন্যবাদ জানিয়ে টুইট করতে শুরু করেন অনেকে।

মেডালিনের টুইটটি ভাইরাল হওয়ার পর বিষয়টি নিয়ে মিডিয়াম.কম-এ আরও বিস্তারিত লিখেন বেন কঙ্গেলটন। লেখাটির শিরোনাম ছিল, ‘এটা ২০১৭ সাল। মানসিক অসুস্থতা এখনো কর্মক্ষেত্রে একটি বড় সঙ্কট।’

বেন লিখেন, ‘এটা ২০১৭, আমি এখনো বিশ্বাস করতে পারছি না, কর্মক্ষেত্রে মানসিক অসুস্থতা নিয়ে কথা বলাটা এখনো অনেকটা বিতর্কিত বিষয় যেখানে প্রতি ছয় জন আমেরিকানের মধ্যে একজনকে এই রোগের চিকিৎসা নিতে হয়েছে।’

‘এটা ২০১৭, আমি এখনো বিশ্বাস করতে পারছি না অসুস্থতার জন্য বেতনসহ ছুটি এখনো অনেকের কাছে বিতর্কিত একটি ব্যাপার। আপনি কি জানেন যুক্তরাষ্ট্রে মাত্র ৩৩ শতাংশ কর্মী বেতনসহ অসুস্থতার ছুটি পেয়ে থাকে?’

‘এটা ২০১৭। এখন জ্ঞানই হচ্ছে অর্থের উৎস। কাজ করার জন্য মানসিক অবস্থা সর্বোচ্চ ভালো থাকা চাই। যখন একজন ক্রীড়াবিদ ইনজুরিতে পড়েন, তখন তিনিও বিশ্রাম নেন। তাইলে কর্মক্ষেত্রে সেটা হবে না কেন? এ ধরণের মানসিকতা থেকে বেরিয়ে আসুন।’

মেডালিনকে ধন্যবাদ জানিয়ে ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছেন ফেসবুকের প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা শেরিল স্যান্ডবার্গ, যাকে জাকারবার্গের পর ফেসবুকে সবচেয়ে প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব বলে মনে করা হয় এবং তিনি বিশ্বের প্রভাবশালী একশ’ নারীর অন্যতম।

নিজের ফেসবুক পোস্টে শেরিল স্যান্ডবার্গ লিখেছেন, নিজের মানসিক অসুস্থতা নিয়ে খোলামেলাভাবে কথা বলার জন্য মেডালিনকে ধন্যবাদ। এটা মোটেই সহজ কাজ নয়। আর অনন্য উদাহরণ স্থাপনের জন্য তার সিইও বেনকেও অসংখ্য ধন্যবাদ। বেন দেখিয়েছেন, কেন কর্মক্ষেত্রে আমাদের এ ধরণের আরও নের্তৃত্ব দরকার যারা কর্মীদের প্রতি সদয় হয়ে তাদেরকে কাজে উৎসাহিত করবে।

12
ঈদে বাড়ি যাচ্ছেন। ছোট-বড় সবার জন্য নানা উপহার তো নিচ্ছেনই। কিন্তু বিপদ-আপদ-অসুস্থতার কথাও মনে রাখবেন। তাই সঙ্গে নেবেন কিছু জরুরি ওষুধপথ্যসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম।

* ডায়াবেটিসের রোগীরা তাঁদের ইনসুলিন তো নেবেন, কিন্তু মনে রাখবেন, অতিরিক্ত তাপ ও রোদে ইনসুলিন নষ্ট হয়। থার্মোফ্লাস্ক থাকলে ভালো। নয়তো রেফ্রিজারেটর থেকে যাওয়ার আগমুহূর্তে বের করে একটি জিপার ব্যাগে রাখুন। এই ব্যাগটি রোদের মধ্যে বা বাসের নিচে লাগেজ রাখার গরম জায়গায় দেবেন না। যথেষ্ট সিরিঞ্জ ও সুইও সঙ্গে নিন।

* হাঁপানি রোগীদের ইনহেলার নেওয়ার সময়ও একই নিয়ম। ইনহেলারের মধ্যে যথেষ্ট ওষুধ আছে কি না, ঝাঁকিয়ে পরখ করে দেখুন। যাঁদের শ্বাসকষ্ট বেশি হয়, তাঁরা নেবুলাইজার যন্ত্রও নিতে পারেন। কাজে আসবে।

* যাঁরা নিয়মিত ওষুধ খান, যেমন উচ্চ রক্তচাপের বা হার্টের রোগী, তাঁরা যথেষ্ট ওষুধ সঙ্গে নিন। দিনরাতের ওষুধ আলাদা জিপার ব্যাগে নিলে ভালো। প্রেসক্রিপশনের ফটোকপি সঙ্গে রাখুন। কোনো কারণে অসুস্থ হয়ে পড়লে স্থানীয় চিকিৎসকেরা যেন আপনার রোগ সম্পর্কে ধারণা পান।

* গ্রামে বা মফস্বলেও হাসপাতাল, স্বাস্থ্যকেন্দ্র, ওষুধের দোকান পাবেন। কিন্তু পথে সব সময় পাবেন না। আর পথ যে কত লম্বা হতে পারে, তা তো জানা নেই। তাই হাতব্যাগে টুকিটাকি প্রাথমিক চিকিৎসার জিনিসপত্র রাখা ভালো। যেমন খানিকটা তুলা, গজ, পোড়া জায়গায় লাগানোর মলম, অ্যান্টিসেপটিক দ্রবণ ইত্যাদি। এক পাতা প্যারাসিটামল, খাবার স্যালাইনের প্যাকেট নিলেও ভালো।

* যাঁরা যাত্রাপথে অসুস্থ বোধ করেন, তাঁরা আগেই একটি বমির ওষুধ খেয়ে নিতে পারেন। আজকাল মোশন সিকনেসের ভালো ওষুধ পাওয়া যায়। চিকিৎসকের কাছে ডোজ জেনে নিন। ব্যাগের মধ্যেও রাখুন। পথে বমি করলে পানি ও লবণশূন্যতা হতে পারে। তাই এর সঙ্গে এক বোতল ডাবের পানি বা খাওয়ার স্যালাইন নিতে পারেন। পথের ধারের ডাব বা জুসজাতীয় দ্রব্য ভুলেও পান করবেন না।

* পথে অপরিচিত কারও কাছ থেকে কোনো খাবার খাবেন না। এমনকি ফেরিওয়ালা থেকেও না। বাড়ি থেকে পথের খাবার সঙ্গে নিন। খাবার খেয়ে নিজেদের মধ্যে কারও বিপদ দেখা দিলে স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে যান। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে কোনো চিকিৎসা লাগে না। সব সময় ব্যাগে বা পকেটে নিজের বাড়ির ঠিকানা ও ফোন নম্বর লিখে রাখবেন।

ঈদের যাত্রাপথ হোক আনন্দময় ও আশঙ্কাহীন। সতর্ক থাকুন ও ভালো থাকুন।

ডা. আ ফ ম হেলালউদ্দিন

মেডিসিন বিভাগ, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ

13
ইতিকাফের উদ্দেশ্য : ইবাদত করা ও আধ্যাত্মিক উৎকর্ষ সাধনের উদ্দেশ্যে মসজিদে পূর্ণাঙ্গ অবস্থানকে ইতিকাফ বলে। যিনি ইতিকাফ করেন তাকে ‘মুতাকিফ’ বলে। ইতিকাফ যে কোনো সময় করা যায়। যখনই কেউ ইতিকাফের নিয়তে মসজিদে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য অবস্থান করেন, তখনই তা ইতিকাফ বলে পরিগণিত হয়। তবে রমজান মাসের শেষ দশ দিন ইতিকাফ করা সুন্নাত।

ইতিকাফের গুরুত্ব : আত্মার পরিশুদ্ধি ও আল্লাহ তায়ালার নৈকট্য লাভের জন্য ইতিকাফ একটি উত্তম পন্থা। দুনিয়ায় মানুষকে হাজারো ব্যস্ততা ও ঝামেলার মধ্য দিয়ে জীবন যাপন করতে হয়। শয়তান মানুষের পিছে অবিরাম লেগে আছে। প্রতিটি কাজে সে মানুষকে ধোকা দেবার চেষ্টা করে। সে মানুষের পাপাত্মাকে সুড়সুড়ি দিয়ে জাগ্রত করে তোলে। তাই দুনিয়ার প্রতিটি কাজেই মানুষকে অবিরাম পরীক্ষা দিয়ে যেতে হয়। এ পরীক্ষায় কখনো কখনো মানুষের পদঙ্খলন হয়ে যায়। স্ত্রী-সন্তানাদির মায়া, তাদের সুখের চিন্তা, দারিদ্র্যের অনুভূতি, লোভ, মোহ, আকর্ষণ মানুষকে প্রতিনিয়ত গুনাহের দিকে টানতে চায়। অথচ পবিত্র, পরিশুদ্ধ ও পরহেযগারীর জীবনই আল্লাহ তা’য়ালার পছন্দনীয়। কেবল পবিত্র আত্মার লোকেরাই আল্লাহর নৈকট্য লাভ করতে পারে। কেবল আল্লাহর ধ্যান ও তাঁর চিন্তাই মানুষকে আল্লাহর নিকটে পৌঁছে দেয়। যে ব্যক্তি যতো বেশি পরিচ্ছন্ন ও গভীরভাবে আল্লাহকে উপলব্ধি করতে পারে,সে ততো বেশি আল্লাহর নৈকট্য লাভে সক্ষম হয়।

বস্তুত ইতিকাফ মানুষের জীবনে একটি সুযোগ এনে দেয়। সংসার ও সামাজিক যাবতীয় কাজকর্ম ও লেনদেন থেকে কিছু সময় কিছু দিনের জন্য মুক্ত হয়ে মানুষ একান্তভাবে আল্লাহর ধ্যানে মশগুল থাকার সুযোগ পায় ইতিকাফের মাধ্যমে। এখানে স্ত্রীর চিন্তা নেই, স্বামীর চিন্তা নেই, সন্তানাদির চিন্তা নেই, সম্পদের চিন্তা নেই। মোটকথা, সকল চিন্তার ঊর্ধ্বে ওঠে মানুষ এখানে একমাত্র আল্লাহর চিন্তায় মশগুল হবার সুযোগ পায়। সে প্রতিটি মুহূর্ত আল্লাহকে ধ্যান করে, তাঁকে গভীরভাবে অনুভব করে। তাঁর আজাবের কথা মনে করে ভীত-কম্পিত হয়ে ওঠে। তাঁর পুরস্কারের কথা স্মরণ করে আনন্দে উদ্বেলিত হয়ে ওঠে। তাঁরই পথে চলার জন্য তাঁরই জন্য নিজেকে কুরবানী করার জন্য সে মানসিকভাবে সুদৃঢ় সিদ্ধান্তে পৌঁছতে সক্ষম হয়। ইতিকাফ মানুষের উপর এমন নৈতিক ও আধ্যাত্মিক প্রভাব সৃষ্টি করে, যা তাকে দীর্ঘদিন আল্লাহর পথে তথা পরহেযগারীর পথে পরিচালিত করে। তাই ইতিকাফের মাধ্যমে মানুষ অনেক পুণ্য ও নেকী অর্জন করে আল্লাহর নৈকট্য লাভ করতে পারে। ইতিকাফ মুমিন জীবনের পাথেয়।

ইতিকাফের প্রকারভেদ : ইতিকাফ প্রধানত তিন প্রকার। যেমন- ১. ওয়াজিব ইতিকাফ, ২. সুন্নাত ইতিকাফ ও ৩. মুস্তাহাব ইতিকাফ। ক. ওয়াজিব ইতিকাফ : মান্নতের ইতিকাফ ওয়াজিব। চাই তা শর্তে হোক কিংবা হোক বিনা শর্তে। শর্তে হবার অর্থ হচ্ছে, কারো একথা বলা, আমার অমুক উদ্দেশ্য হাসিল হলে আমি ইতিকাফ করবো। ওয়াজিব ইতিকাফ কমপক্ষে একদিন হতে হবে। ওয়াজিব ইতিকাফের জন্য রোজা রাখা শর্ত। হাদিসে আছে, হযরত ওমর (রা.) একদিন রাসূলকে (সা.) বললেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ! জাহেলী যুগে আমি মসজিদে হারামে এক রাত ইতিকাফ করার মান্নত করেছিলাম। হুজুর (সা.) বললেন, তোমার মান্নত পূর্ণ করো। (বুখারী) খ. সুন্নাত ইতিকাফ : রমজান মাসের শেষ দশদিনের ইতিকাফ হচ্ছে সুন্নত। (কেবলমাত্র হানাফী মাযহাবে রমজানের শেষ দশ দিনের) এ ইতিকাফ হচ্ছে সুন্নতে মুয়াক্কাদা। তবে কিছু সংখ্যক লোক ইতিকাফ করলে অন্যরা দায়িত্বমুক্ত হবে বলে এ মাজহাবের রায়। হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, হুযুর (স) সব সময় রমজানের শেষ দশদিন ইতিকাফ করতেন। ইন্তেকাল পর্যন্ত এ নিয়ম তিনি পালন করেছেন। তার ইন্তেকালের পর তার স্ত্রীগণ ইতিকাফের সিলসিলা জারি রাখেন। (বুখারী) গ. মুস্তাহাব ইতিকাফ : রমজানের শেষ দশ দিন ব্যতীত অন্য যে কোন সময় ইতিকাফ করা মুস্তাহাব। মুস্তাহাব ইতিকাফের জন্য কোনো সময় নির্দিষ্ট নেই। এ ইতিকাফ সামান্য সময়ের জন্যও হতে পারে কিংবা এক দিন বা একাধিক দিনের জন্যও হতে পারে।

ইতিকাফের শর্তাবলী : ১. মুসলমান হওয়া। ২. বালেগ ও আকেল হওয়া। ৩. পবিত্র থাকা। ৪. ইতিকাফের নিয়ত করা। ৫. পূর্ণাঙ্গ সময় (আবশ্যকীয় প্রয়োজন ব্যতীত) মসজিদে অবস্থান করা ইত্যাদি।

নারীদের ইতিকাফ : হাদিস থেকে জানা যায, নারীরাও ইতিকাফ করতে পারে। নারীদের ইতিকাফ গৃহকোণে (নামাজের স্থানে) বাঞ্ছনীয়। নারীদের ইতিকাফের জন্য স্বামীর অনুমতি আবশ্যক। সন্তান প্রসব করলে বা গর্ভপাত হলে কিংবা ঋতুরাব দেখা দিলে ইতিকাফ ছেড়ে দিতে হবে।

ইতিকাফ অবস্থায় করণীয় : ইতিকাফ অবস্থায় আল্লাহর জিকির, তাসবিহ, ইস্তেগফার, দরূদ, কুরআন তিলাওয়াত ও জ্ঞানচর্চা করা মুস্তাহাব। মসজিদে থেকে করা সম্ভব এমন সব ইবাদতই ইতিকাফ অবস্থায় করা যায়।

ইতিকাফ বাতিল হয়ে যায় যেসব কারণে : ১. মসজিদ বা ইতিকাফের স্থান থেকে নিস্প্রয়োজনে বের হলে। ২. ইসলাম পরিত্যাগ করলে। ৩. অজ্ঞান, পাগল বা মাতাল হলে| ৪. মাসিক দেখা দিলে। ৫. সন্তান ভূমিষ্ট হলে বা গর্ভপাত হলে। ৬. সহবাস করলে। ৭. বীর্যপাত ঘটালে। ৮. মুতাকিফকে কেউ জোরপূর্বক মসজিদে থেকে বের করে দিলেও ইতিকাফ বাতিল হয়ে যাবে।

14
১। দারুচিনি

হজমশক্তি বৃদ্ধির জন্য দারুচিনি বেশ উপকারী একটি মশলা। এক কাপ পানিতে আধা চা চামচ দারুচিনি মিশিয়ে নিন। এটি চুলায় কয়েক মিনিট জ্বাল দিন। এটি দিনে দুই থেকে তিনবার পান করুন।এছাড়া স্যুপ কিংবা সালাদে দারুচিনির গুঁড়ো মেশাতে পারেন।

২। জিরা

পাকস্থলীর এসিডকে নিরপেক্ষ করে পেটের ব্যাথা দূর করতে এবং হজমক্রিয়ায় জিরা চমৎকার কাজ করে। দেড় কাপ পানিতে এক চা চামচ করে জিরা, ধনে ও মৌরী গুঁড়া এবং সামান্য চিনি মিশিয়ে খালি পেটে খেতে পারেন অথবা এক গ্লাস পানিতে সামান্য জিরার গুঁড়া মিশিয়ে বা ফুটিয়ে ছেঁকে নিয়ে প্রতিবেলা খাবার পর খেতে পারেন।

৩। অ্যাপেল  সাইডার ভিনেগার

এর ক্ষারধর্মী প্রভাব পাকস্থলীর অ্যাসিডিটির সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে। ১-২ চা চামচ  ভিনেগার এক কাপ পানিতে মিশিয়ে খাবার আগে বা দিনে এক বা দুইবার খেতে পারেন।

৪। আদা

আদার রস পাকস্থলীর এসিডকে প্রশমিত করতে সাহায্য করে। অ্যাসিডিটির সময় এক টুকরো আদা মুখে নিয়ে চুষলে বা এক কাপ পানিতে কয়েক টুকরো আদা দিয়ে কিছুক্ষন ফুটিয়ে রেখে খেতে পারেন কিংবা শুধু এক চা চামচ করে আদার রস দিনে ২/৩ বার খেলে অ্যাসিডিটির থেকে মুক্তি পেটে পারেন।

৫। মৌরী

পুদিনা পাতার মতো মৌরীতেও রয়েছে বায়ু নিরোধক ক্ষমতা যার ফলে খাবার হজম করতে এবং পেটের গ্যাস দূর করতে এটা বেশ কার্যকরী। ভারী ও ঝাল খাবারের পর কিছু মৌরী মুখে দিয়ে চুষতে পারেন। আবার এক বা দুই চা চামচ মৌরী এক কাপ গরম পানিতে দিয়ে কিছুক্ষন রেখে ছেঁকে নিয়ে দিনে ।

৬। লবঙ্গ

লবঙ্গ পাকস্থলীর অ্যাসিডিটি ও গ্যাস দূর করতে পারে এর বায়ু নিরোধক ক্ষমতার জন্য। ২/৩ টি লবঙ্গ মুখে নিয়ে চুষলে বা সমপরিমান এলাচ ও লবঙ্গ গুঁড়ো একসাথে মিশিয়ে খেলে অ্যাসিডিটির জ্বালা এবং মুখের দুর্গন্ধ দূর হয়।

৭। ঠান্ডা দুধ

দুধে থাকা ক্যালসিয়াম পাকস্থলীতে এসিড তৈরিতে বাধা দেয়। শুধুমাত্র এক গ্লাস ঠান্ডা দুধ পান করেই অ্যাসিডিটির সমস্যা প্রতিরোধ বা উপশম করা সম্ভব।

15
শুধু বড়দের নয় বাচ্চাদেরও স্ট্রেস হয়। আমরা ভাবি ওদের আর কীসের চিন্তা, কীসের চাপ। কিন্তু নিজের ছোটবেলার কথা একবার ভেবে দেখুন। আপনি কি কখনও চিন্তা করতেন না? পড়াশোনার ভারে চাপের মুখে পড়তেন না? বাবা-মায়ের ঝগড়া হলে মন খারাপ হত না? অথবা ভাই বা বোনের প্রতি বাবা, মা পক্ষপাতদুষ্ট হলে নিজেকে গুটিয়ে নিতেন না? এগুলোর কারণে শিশুদের মনে স্ট্রেস পড়ে। আপনার সন্তানও এমন কোনও স্ট্রেসের শিকার নয় তো? জেনে নিন কোন লক্ষণগুলো দেখলে বুঝবেন আপনার সন্তান স্ট্রেসে ভুগছে কিনা।

১. প্রায়শই কি আপনার সন্তান স্কুল যেতে পারে না? কখনও শরীর খারাপ, কখনও অন্য কোনও কারণের জন্য?

২. শিশুদের মাথা ধরা খুব একটা স্বাভাবিক ঘটনা নয়। কিন্তু আপনার সন্তান কি মাথা যন্ত্রণায় বোগে? অথবা প্রায়ই কি ওর পেট খারাপ হয়?

৩. প্রায়ই কি জ্বরে ভোগে আপনার সন্তান? এবং তা কি কমতে বেশ সময় লাগে? অথবা অ্যাস্থমার মতো ক্রনিক সমস্যা রয়েছে ওর?

৪. কোনও কারণে কি আপনার সন্তানের মধ্যে উৎকণ্ঠা লক্ষ্য করছেন? ওকে সাহায্য করুন যাতে আপনাদের মনের কথা খুলে বলতে পারে। ছোটবেলা থেকে এই সমল্যায় ভুগতে থাকলে পরবর্তীকালে অনেক বড় সমস্যা দেখা দিতে পারে।

৫. কোনো ভাবে আপনার বাচ্চা আত্মমর্যাদার অভাবে ভুগছে? সতর্ক থাকুন। ছোট থেকেই এই সমস্যা হলে বড় হলেও কিন্তু থেকে যাবে সমস্যা।

৬. আপনার সন্তান আগে যেই কাজগুলো করতে (ছবি আঁকা, খেলা, বাগান করা) উপভোগ করত, এখনও কি সেগুলো করছে? নাকি উৎসাহের অভাব লক্ষ্য করছেন?

৭. আপনার সন্তানের কি খাওয়া দাওয়ায় অনীহা লক্ষ্য করছেন? ঘুমোতে সময় নিচ্ছে?

৮. ক্রমশই কি আপনার সন্তান পড়াশোনায় খারাপ হয়ে যাচ্ছে? অমনযোগের কারণে পরীক্ষার ফল ভাল হচ্ছে না?

Pages: [1] 2 3 ... 9