Show Posts

This section allows you to view all posts made by this member. Note that you can only see posts made in areas you currently have access to.


Messages - khadija kochi

Pages: 1 [2] 3 4 ... 7
16

নারকেল দিয়ে বরিশাল অঞ্চলে তৈরি হয় নানা সুস্বাদু খাবার‌। তেমনি কিছু খাবারের রেসিপি দিয়েছেন ইশরাত হক

চিচিঙ্গা ভাজিতে নারকেল চিংড়ি

উপকরণ: চিচিঙ্গা আধা কেজি, চিংড়ি আধা কাপ, নারকেলবাটা আধা কাপ, তেল ২ টেবিল চামচ, পেঁয়াজকুচি ২ টেবিল চামচ, হলুদ ও মরিচের গুঁড়া আধা চা-চামচ, কাঁচা মরিচ ৫/৬টা, আদা আধা চা-চামচ, রসুন আধা চা-চামচ, জিরাবাটা আধা চা-চামচ, জিরাগুঁড়া (টেলে নিয়ে) আধা চা-চামচ, তেজপাতা ১টা ও লবণ পরিমাণমতো।

প্রণালি: প্রথমে চিচিঙ্গাগুলো ছোট ছোট টুকরা করুন। কড়াইয়ে তেল গরম করে পেঁয়াজকুচি ও তেজপাতা দিয়ে একটু ভেজে চিংড়ি ও সব মসলা দিয়ে কষাতে হবে। এবার নারকেলবাটা দিয়ে আবার কষান। এরপর এতে চিচিঙ্গা দিন। ঢাকনা দিয়ে ঢেকে কিছুক্ষণ চুলায় রাখুন, যতক্ষণ পর্যন্ত না এটা সেদ্ধ হয়। সেদ্ধ হলে কাঁচা মরিচ ও জিরাগুঁড়া দিয়ে নামিয়ে গরম গরম ভাতের সঙ্গে পরিবেশন করুন।

 বরিশালের পানীয় মোলিদা

উপকরণ: পোলাওয়ের চাল আধা ছটাক, কোরানো নারকেল আধা কাপ, আদা আধা ইঞ্চি, এলাচি ২টা, পানি ৪ গ্লাস, চিনি ২ টেবিল চামচ ও মুড়ি ২ টেবিল চামচ।

প্রণালি: পোলাওয়ের চাল ধুয়ে পানিতে ভিজিয়ে রাখুন। এরপর এর সঙ্গে সব উপকরণ মিশিয়ে শিলপাটায় বেটে নিন অথবা ব্লেন্ডারে ব্লেন্ড করে নিন। এরপর পানি মিশিয়ে পাতলা করে নিন। ওপর থেকে একটু মুড়ি ছড়িয়ে দিন। এবার পান করুন মোলিদা।

 নারকেল দুধে ডিমের কোরমা

উপকরণ: আমড়া ২টা, মুরগির ডিম ২টা (সেদ্ধ), নারকেলের দুধ আধা কাপ, আদা, রসুন, পেঁয়াজবাটা ২ টেবিল চামচ, তেল ২ টেবিল চামচ, লবণ পরিমাণমতো, হলুদ, মরিচগুঁড়া এক চিমটি করে, এলাচি ২টা, দারুচিনি ১ টুকরা (ছোট), তেজপাতা ১টা, চিনি ১ চিমটি ও কাঁচা মরিচ ৫/৬টা।

প্রণালি: প্রথমে আমড়া ছিলে একটু চিড়ে নিন। একটি পাত্রে তেল দিয়ে চুলায় বসিয়ে দিন। তেল তেতে উঠলে গরমমসলাসহ সব মসলা দিয়ে কিছুক্ষণ কষাতে হবে। কষানো হলে প্রথমে আমড়া দিয়ে আরেকটু কষিয়ে সেদ্ধ ডিম দিয়ে দিন। এবার নারকেলের দুধ দিয়ে আমড়া সেদ্ধ করতে হবে। আমড়া সেদ্ধ হয়ে যখন মাখা মাখা ঝোল হবে, তখন চিনি, লবণ ও কাঁচা মরিচ দিয়ে নামিয়ে পরিবেশন করুন। ভাত বা পোলাওয়ের সঙ্গে এটা খাওয়া যাবে।

নারকেল চিংড়ি দিয়ে কলমিশাক

উপকরণ: কলমিশাকের কুচি আধা কেজি, নারকেলবাটা আধা কাপ, চিংড়ি আধা কাপ, তেল ২ টেবিল চামচ, পেঁয়াজ ও রসুনকুচি ২ টেবিল চামচ, হলুদ ও মরিচের গুঁড়া আধা চা-চামচ করে, আদা ও জিরাবাটা আধা চামচ করে, ভাজা জিরাগুঁড়া আধা চা-চামচ, লবণ পরিমাণমতো ও কাঁচা মরিচ ৫/৬টা।

প্রণালি: প্রথমে কড়াইয়ে তেল গরম করে পেঁয়াজ ও রসুনকুচি দিয়ে ভাজুন। তারপর এতে চিংড়ি ও বাকি সব মসলা দিন। আবার একটু ভেজে নিন। তারপর দিন নারকেলবাটা। আরও একটু ভাজুন। এবার এতে কলমিশাকের কুচি দিয়ে কিছুক্ষণ ঢেকে রাখুন সেদ্ধ হওয়া পর্যন্ত। সেদ্ধ হলে শাকের পানি সব শুকিয়ে ভাজা ভাজা করতে হবে। এবার কাঁচা মরিচ ও জিরাগুঁড়া দিয়ে নামিয়ে ভাতের সঙ্গে পরিবেশন করুন।

17
Faculty Forum / Re: মৃত্যু কী, কখন ঘটে?
« on: July 23, 2018, 01:40:22 PM »
nice

18
উপকরণ

✿ মুরগি- ৪টি
✿ লবণ- ১ চা-চামচ
✿ ভিনেগার- ১ টে চামচ
✿ ফুড কালার- সামান্য
✿ পোস্ত বাটা- ১/২ টে চামচ
✿ রসুন বাটা- ২ টে চামচ
✿ আদা বাটা- ১/২ টে চামচ
✿ জয়ত্রী ও জায়ফল বাটা- ১/২ টে চামচ করে
✿ পেস্তাবাদাম বাটা- ১ টে চামচ
✿ শাহজিরা বাটা- ১ টে চামচ
✿ গোলমরিচের গুঁড়া- ১/২ টে চামচ
✿ টক দই- ৩ কাপ
✿পিয়াজ বাটা- আধা কাপ
✿লবণ- পরিমাণমতো
✿তেল – ২ টে চামচ
✿ঘি – ১/২ কাপ
✿চিনি- সাদমতো
✿বেরেস্তা- ১/২ কাপ
✿কাঁচামরিচ- পরিমাণমতো
প্রণালী

মুরগি রোস্টের মতো টুকরা করে ভিনেগার ও লবণ দিয়ে ২০ মিনিট মেরিনেড করে রাখতে হবে। এরপর তেল গরম করে তাতে মুরগির মাংসগুলো হালকা বাদামি করে ভেজে নিতে হবে। আরেকটি পাত্রে ঘি অল্প আঁচে গরম করে তাতে আদা বাটা, রসুন বাটা, পেঁয়াজ বাটা, পোস্তবাটা , পেস্তাবাদাম বাটা, জায়ফল ও জয়ত্রী এবং সামান্য খাবারের রং দিয়ে অল্প পানি দিয়ে কষিয়ে নিতে হবে। এবার ভাজা মুরগির মাংসগুলো এই কষানো মসলার মিশ্রণে ঢেলে দিতে হবে। এ সময় আরেকটু লবণ, টক দই ও চিনি দিয়ে দিতে হবে। ভালোভাবে কষানো হলে পরিমানমতো পানি,শাহ জিরা,বেরেস্তা ও কাঁচামরিচ দিয়ে ঢেকে দিন।
ঝোল শুকিয়ে ভুনা হলে নামিয়ে উপরে বেরেস্তা ছড়িয়ে গরম পোলাউয়ের সাথে পরিবেশন করুন।

19
Faculty Forum / ডেজার্টে নানা স্বাদ
« on: July 23, 2018, 01:28:19 PM »
ব্লুবেরি চিজ ডেলাইট
উপকরণ: ক্রিম চিজ ২০০ গ্রাম, টকদই সিকি কাপ (ঘন), কনডেন্সড মিল্ক ২ থেকে ৩ টেবিল চামচ (বা স্বাদমতো), লেবুর রস ১ চা-চামচ, ওরিও বিস্কুট মাঝারি ১ প্যাকেট, মাখন সিকি কাপ (গলানো), পিচ ফল (কিংবা পছন্দমতো যেকোনো ফল) পরিমাণমতো ও ব্লুবেরি সস পরিমাণমতো (কিনতে পাওয়া যায় সুপার শপগুলোয়)।
প্রণালি: ওরিও বিস্কুটের মাঝের ক্রিমটুকু ফেলে ভালোমতো গুঁড়া করে মাখন মিশিয়ে নিন। এবার একটি পাত্রে ক্রিম চিজ নিয়ে ভালোমতো বিট করুন। চিজ নরম ক্রিমের মতো হলে এতে একে একে টকদই, কনডেন্সড মিল্ক ও লেবুর রস দিন। পিচ ফল কেটে টুকরা করে রাখুন। এবার সাজানোর গ্লাস নিয়ে প্রথমে ওরিও বিস্কুটের গুঁড়ার আধা ইঞ্চি স্তর দিন। এরপর চিজের মিশ্রণ দিন এর ওপরে। এর ওপর পিচ ফলের কিছু টুকরা ছড়িয়ে দিয়ে আবার চিজের মিশ্রণ দিন। এবার ফ্রিজে জমতে দিন ১ ঘণ্টা। নামিয়ে ওপরে ব্লুবেরি সস দিয়ে সাজিয়ে পরিবেশন করুন।

ছানার সন্দেশছানার সন্দেশ
উপকরণ: ছানা ২ কাপ, ব্রাউন সুগার পরিমাণমতো, সাদা চিনি ১ চা-চামচ, মাখন ২ টেবিল চামচ, ক্রিম ২ থেকে ৩ টেবিল চামচ, হোয়াইট কুকিং চকলেট আধা কাপ (কোরানো), তরল দুধ ১ টেবিল চামচ ও ডার্ক কুকিং চকলেট পরিমাণমতো।
প্রণালি: চুলায় ছানা ও মাখন দিয়ে কিছুক্ষণ ভুনে নিন। এতে ব্রাউন সুগার ও সাদা চিনি দিয়ে ভুনতে থাকুন। এবার ক্রিম দিয়ে মিষ্টি পরখ করে নামিয়ে একটি গোলাকার পাত্রে পুরু করে চেপে চেপে বিছিয়ে দিন। ঠান্ডা হলে বরফি বা অন্য আকারে সন্দেশ কেটে নিন। এবার হোয়াইট চকলেট ও দুধ মাইক্রোওয়েভ ওভেনে ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপে কিছুক্ষণ দিয়ে গলিয়ে নিন। এটি সন্দেশের ওপর ঢেলে দিয়ে ফ্রিজে রাখুন। ৩০ মিনিট পর ডার্ক চকলেট একইভাবে মাইক্রোওয়েভ ওভেনে গলিয়ে ওপরে দিয়ে পরিবেশন করুন।

কুনাফাকুনাফা
উপকরণ: লাচ্ছা সেমাই ১ প্যাকেট, মাখন সিকি কাপ (গলানো), তরল দুধ সিকি কাপ, ছানা দেড় কাপ, কনডেন্সড মিল্ক ৩ টেবিল চামচ, ক্রিম ১ টেবিল চামচ, চিনি ১ কাপ, পানি ১ কাপের ৩ ভাগের ২ ভাগ, কমলার রস ১ টেবিল চামচ, লেবুর রস ১ চা-চামচ, চেরি বা বাদাম কুচি সাজানোর জন্য, ফুড কালার ১ ফোঁটা (কমলা বা যেকোনো)।
প্রণালি: চিনি পানি দিয়ে জ্বাল দিয়ে হালকা আঠালো হলে কমলা ও লেবুর রস দিয়ে শিরা তৈরি করে রাখুন। অন্যদিকে, সেমাইতে মাখন ও ধাপে ধাপে দুধ মিশিয়ে নিন যেন সেমাই দলা না পাকিয়ে যায়। হাত দিয়ে সেমাই ঝুরি ঝুরি করে নিন। এবার ছানা ভালোমতো ময়ান দিয়ে মিহি করে তাতে কনডেন্সড মিল্ক ও ক্রিম মিশিয়ে নিন। একটি প্যানে কিছু মাখন ও ফুড কালার ব্রাশ করুন চারপাশে। এবার প্রথমে সেমাইয়ের ১ ইঞ্চি পুরু একটা স্তর করুন। এ সময় প্যানের ভেতরে ধারগুলোতেও সেমাইয়ের স্তর দিন। এবার ছানার পুর দিন। ভালোমতো চেপে চেপে বসিয়ে দিন। সবশেষে আবার সেমাইয়ের স্তর দিয়ে চেপে চেপে ওভেনে ১৭০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপে বেক করুন ৩০ মিনিট। নামিয়ে পরিবেশনের প্লেটে নিয়ে ওপরে শিরা ঢেলে দিন। এবার সাজিয়ে পরিবেশন করুন কুনাফা।

টুটি ফ্রুটি পুডিংটুটি ফ্রুটি পুডিং
উপকরণ: গুঁড়া দুধ ২ টেবিল চামচ, দুধ ১ লিটার, কনডেন্সড মিল্ক সিকি কাপ, হুইপড ক্রিম পাউডার ২ টেবিল চামচ, চিনি প্রয়োজনমতো, চীনা গ্রাস ১২-১৫ গ্রাম, জেলো ১ প্যাকেট (লেমন, ম্যাঙ্গো বা অরেঞ্জ ফ্লেভার) ও টুটি ফ্রুটি পরিমাণমতো।
প্রণালি: চীনা গ্রাস কুচি করে ১ কাপ পানিতে ভিজিয়ে রাখুন ৩০ মিনিট। প্যানে দুধ জ্বাল দিন। ফুটে উঠলে গুঁড়া দুধ, কনডেন্সড মিল্ক ও হুইপড ক্রিম পাউডার মিশান। এবার একই সঙ্গে অন্য চুলায় চীনা গ্রাস ভেজানো পানিসহ চুলায় দিয়ে গলিয়ে নিন। গলে গেলে দুধের মিশ্রণে ঢেলে দিন। এবার নামিয়ে ঠান্ডা হতে দিন। যে পাত্রে পুডিং জমাবেন, সে পাত্রে ১ প্যাকেট জেলো প্যাকেটের নিয়ম অনুযায়ী মিশিয়ে ঢেলে দিন। এর মধ্যে টুটি ফ্রুটি যোগ করুন। এবার জেলো মোটামুটি জমে গেলে ওপরে দুধের মিশ্রণ ঢেলে ফ্রিজে জমতে দিন সারা রাত, অথবা ৪ থেকে ৫ ঘণ্টা। এরপর নামিয়ে উল্টে পরিবেশন করুন টুটি ফ্রুটি পুডিং।

সাবুদানার পায়েসসাবুদানার পায়েস
উপকরণ: তরল দুধ ২ লিটার, সাবুদানা ৩-৪ কাপ, চিনি স্বাদমতো, এলাচি ৩টা, কুকিং চকলেট ১ কাপ (মাইক্রোওয়েভ ওভেনে গলিয়ে নেওয়া) ও তেজপাতা ১টি।
পদ্ধতি: দুধ জ্বাল দিয়ে দেড় লিটারে নামিয়ে আনুন। এ সময় সাবুদানা ডুবো পানিতে ভিজিয়ে রাখুন। দুধ ঘন হলে এলাচি, তেজপাতা ও চিনি দিন। সাবুদানা পানি ঝরিয়ে নিয়ে দুধে দিয়ে দিন। জ্বাল দিয়ে ঘন হলে নামিয়ে নিন। এবার এই পায়েস অর্ধেকটা নিয়ে তাতে ২ টেবিল চামচ গলানো চকলেট মিশিয়ে নিন। সার্ভিং কাপে প্রথমে চকলেট মেশানো পায়েস দিন। একটা জমে যাওয়ার পর ওপরে সাদা পায়েস ঢেলে দিন। সবশেষে ওপরে গলানো চকলেট ঢেলে পরিবেশন করুন।

চকলেট ফ্রুট ভাসচকলেট ফ্রুট ভাসচকলেট ফ্রুট ভাস
উপকরণ: সেমি সুইট কুকিং চকলেট পরিমাণমতো (কোরানো), বিভিন্ন রকমের ফল (আপেল, আনারস, আঙুর) ও বিভিন্ন রকমের স্প্রিংকলস (সাজানোর জন্য)।
প্রণালি: ফলগুলো খোসা ছাড়িয়ে কাঠিতে গেঁথে নিন। একটি কাপে কুকিং চকলেট কোরানো নিয়ে মাইক্রোওয়েভ ওভেনে ২০ সেকেন্ড করে দুবারে গলিয়ে নিন। ফলগুলো চকলেটে ডুবিয়ে স্প্রিংকলসে গড়িয়ে নিয়ে একটি ভাসে সাজিয়ে নিন। এবার ফ্রিজে রাখুন। পরিবেশনের আগে নামিয়ে নিন।

20
প্রচণ্ড গরমে বাচ্চারা অল্পতেই ঘেমে যায়। তাদের দুষ্টুমি আর ছোটাছুটি বেশি। ঘামের ফলে প্রচুর পানি শরীর থেকে বেরিয়ে যায়। কখনো তা আধা লিটার থেকে এক লিটারও হতে পারে। এই পানিশূন্যতা পূরণ করা জরুরি। কিন্তু পানি পানের প্রতি বাচ্চাদের আছে অদ্ভুত এক অনীহা। স্কুলব্যাগে পানির ফ্লাস্কভরা অবস্থাতেই ফেরত আসে। অনেকে আবার জুস বা কোমল পানীয় পানে যত আগ্রহী, পানি পানে ততটা নয়। যদিও এগুলো পানির অভাব পূরণ করে না।

আমাদের শরীরের ৬০ শতাংশই পানি। শিশুদের ক্ষেত্রে কোষের বাইরে (এক্সট্রা সেলুলার) তরল বেশি থাকে। তাই অল্পতেই তারা পানিশূন্যতায় আক্রান্ত হয়।

কতটুকু পানি প্রয়োজন, তা নির্ভর করে শিশুর ওজন ও বয়সের ওপর। সাত থেকে বারো মাস বয়সী শিশুর প্রতিদিন আধা লিটার থেকে পৌনে এক লিটার, এক থেকে তিন বছরের শিশুর এক থেকে সোয়া এক লিটার, চার থেকে আট বছরের শিশুর দেড় থেকে দুই লিটার এবং নয় থেকে ষোলো বছরের শিশুর জন্য দুই থেকে আড়াই লিটার পানি প্রয়োজন। এই পরিমাণটা হলো মোট জলীয় অংশের। অর্থাৎ এটা যে কেবল পানিই হতে হবে, এমন নয়। যেমন: দুধে ৮৭ শতাংশই জলীয় অংশ, আবার নানা ধরনের ফলমূলেও আছে যথেষ্ট জলীয় অংশ। সুতরাং পানির সঙ্গে তাজা ফলমূল, সবজি ও দুধকেও হিসাবে ধরুন। কিন্তু পানির অভাব পূরণের জন্য কোল্ড ড্রিংকস বা প্যাকেটজাত জুস পান করাবেন না।

এবার জেনে নিন কীভাবে বুঝবেন শিশুর পানি যথেষ্ট খাওয়া হচ্ছে না। প্রাথমিকভাবে বুঝবেন তার প্রস্রাব দেখে। শিশু প্রতিদিন যে পরিমাণ প্রস্রাব করত, পানিশূন্যতা হলে তার চেয়ে কম করবে। পানিশূন্যতার অন্যান্য লক্ষণ হলো অস্থিরতা, চোখ ভেতরের দিকে ঢুকে যাওয়া, জিভ শুকিয়ে যাওয়া, দ্রুত নাড়ির স্পন্দন ইত্যাদি।

ছয় মাসের পর থেকেই শিশুকে বাড়তি পানি পান করাতে হবে। এর আগ পর্যন্ত মায়ের বুকের দুধই যথেষ্ট। এক বছর বয়সে শিশুরা সাধারণত নিজে নিজে পানি পান করতে পারে। শিশুকে রঙিন আকর্ষণীয় মগ বা গ্লাসে পানি ঢেলে ধীরে ধীরে পানি পান করতে শেখান। চুষনিযুক্ত বোতল স্বাস্থ্যসম্মত নয়। শিশুকে পানির উপকারিতা সম্পর্কে বলুন ও পানি পান করতে উৎসাহ দিন।

ডায়রিয়া, বমি বা জ্বর হলে দৈনিক চাহিদার চেয়ে বেশি পানি পান করতে হবে।

21
সিদ্ধান্তহীনতা কী?
সিদ্ধান্তহীনতা বলতে আসলে কী বুঝব—
 সিদ্ধান্ত নিতে অনেক সময় লাগা
 যেকোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া কষ্টকর মনে হওয়া
 সিদ্ধান্ত নিয়ে অনিশ্চয়তায় ভোগা
 সিদ্ধান্ত গ্রহণ এড়িয়ে চলা
 সিদ্ধান্ত নিজে না নিয়ে অন্যের ওপর চাপিয়ে দেওয়া
 বারবার সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করা
 সিদ্ধান্ত নিয়ে দুশ্চিন্তায় থাকা বা অনুতাপ বোধ করা ইত্যাদি।

সিদ্ধান্তহীনতার মনোবৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা
কোনো কিছুর ব্যাপারে সহজে সিদ্ধান্ত না নিতে পারার মূল কারণ এর অন্তর্নিহিত ‘উদ্বেগ’
 সম্ভাব্য ফলাফল নিয়ে অনিশ্চয়তা বোধ
 অতিরিক্ত খুঁতখুঁতে মনোভাব বা সবকিছু নিখুঁত করার প্রবণতা
 নিজের প্রতি অনাস্থা বা আত্মবিশ্বাসহীনতা
 সবকিছু নেতিবাচকভাবে দেখা
 হীনম্মন্যতা
 কোনো অবস্থাতেই ব্যর্থতা মেনে না নেওয়ার মনোভাব বা ব্যর্থতার ভয়

কেন অনেকে সহজে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না?
যাঁরা সহজে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না, তাঁদের সমস্যা তৈরি হয় মূলত শৈশবে।

কিছু কারণ:
 সন্তানের মতামত প্রাধান্য না দিয়ে ব্যক্তিগত প্রতিটি বিষয়ে মা-বাবা বা অভিভাবক নিজের মতামত চাপিয়ে দেন (যেমন কখন কোন জামাটা পরবে, কী খাবে, কার সঙ্গে বন্ধুত্ব করবে ইত্যাদি)। এমন হলে শিশুদের নিজেদের প্রতি আস্থা তৈরি হয় না।
 সন্তানকে কঠোর শাসনে মানুষ করা, হেয় করে কথা বলা, সমালোচনা করা, সন্তানের মতামত গ্রাহ্য না করা, ভুলত্রুটি সহজভাবে না নেওয়া, অন্যের সঙ্গে তুলনা করা ইত্যাদি।
 অতিরিক্ত প্রশ্রয়মূলক অভিভাবকত্বও (সন্তান যা চায় তাই দেওয়া, ব্যক্তিগত কাজগুলো নিজে করে দেওয়া, যেমন বড় হওয়ার পরও খাইয়ে দেওয়া, জামাকাপড় বা ব্যাগ গুছিয়ে দেওয়া ইত্যাদি) সন্তানের মধ্যে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা কমিয়ে দিতে পারে।

সিদ্ধান্ত নেওয়ার দক্ষতা কীভাবে তৈরি হবে?
ব্যক্তির সিদ্ধান্ত গ্রহণের দক্ষতা তৈরি হয়ে যায় শৈশব ও কৈশোরে। যেখানে শিশুর সঙ্গে মা-বাবার আচরণ বা অভিভাবকত্বের ধরন অনেকখানি নির্ভরশীল।

অভিভাবকেরা যা করতে পারেন—
 একদম ছোটবেলা থেকেই শিশুদের ব্যক্তিগত কিছু বিষয়ে বড়দের ইচ্ছা না চাপিয়ে তাকে স্বাধীনভাবে বেছে নেওয়ার সুযোগ দিন। যেমন খাবারের মেনুতে কোনো নির্দিষ্ট খাবার না দিয়ে বেশ কয়েকটি খাবারের (আটার রুটি, পাউরুটি, সিরিয়াল বা ডিম পোচ, সেদ্ধ ডিম, ডিম ভাজি) মধ্যে তাকে তার পছন্দের খাবারটি বেছে নিতে দিন।
 সন্তানের সিদ্ধান্তে সব সময় ভুলত্রুটি ধরতে বিরত থাকুন। বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পরিবারের কিছু কিছু কাজে তার মতামত জানতে চান এবং ক্ষেত্রবিশেষে গ্রহণ করুন।
 নিজের কাজ নিজে করার ব্যাপারে উৎসাহ দিন।
 দোকানে গেলে আপনার পরিবারের মূল্যবোধ অনুযায়ী তার প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিজে বেছে নিতে উৎসাহ দিন।
 সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলে তার প্রশংসা করুন।

সিদ্ধান্তহীনতার সমস্যা থেকে কীভাবে বেরিয়ে আসবেন?
• প্রথমে ছোটখাটো বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া শুরু করেন।
 নিজের প্রতিদিনকার কাজগুলোতে (কী করবেন, কখন করবেন) অন্যের ওপর নির্ভরশীল না হয়ে নিজে করার চেষ্টা করুন।
 বন্ধুদের সঙ্গে মেলামেশায় কিছু বিষয়ে দায়িত্ব নিজের কাঁধে নিন। যেমন কোন রেস্তোরাঁয় যাবেন, কী খাবার খাবেন, কখন যাবেন ইত্যাদি।
 যত ছোট বিষয়ই হোক না কেন, সিদ্ধান্ত সফল হলে সেটায় আলাদা করে মনোযোগ দিন।

সিদ্ধান্ত গ্রহণে যা বিবেচনা করবেন
 সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে চাইছেন, সে ব্যাপারে যথেষ্ট তথ্য সংগ্রহ করুন।
 জীবনের কোন বিষয়কে আপনি অগ্রাধিকার দেবেন, সে ব্যাপারে পরিষ্কার থাকুন।
 শুধু নির্দিষ্ট একটি সিদ্ধান্তের কথা না ভেবে বেশ কয়েকটি সিদ্ধান্তের কথা মাথায় রাখুন। এর মধ্যে সবকিছুর বিবেচনায় যা সবচেয়ে ভালো মনে হবে, সেটি গ্রহণ করুন।
 দু-তিনটি সুযোগের মধ্যে দ্বন্দ্ব তৈরি হলো, আপনার মন যেদিকে টানে সেটি বিবেচনা করুন।

জীবনের বড় সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে
 আবেগের বশবর্তী হয়ে (যেমন রেগে গিয়ে, কষ্ট পেয়ে, অতিরিক্ত খুশি অবস্থায়) কখনো হঠাৎ জীবনের বড় সিদ্ধান্ত নেবেন না। যেমন ডিভোর্স দেওয়া, বিয়ের সিদ্ধান্ত, বিদেশে যাওয়া ইত্যাদি)। অতিরিক্ত আবেগে আক্রান্ত অবস্থায় আমাদের চিন্তা এককেন্দ্রিক হয়ে যায়, ফলে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ বাধাপ্রাপ্ত হয়। এ ক্ষেত্রে আবেগ প্রশমিত হওয়ার জন্য সময় নিন।
 যেকোনো বড় সিদ্ধান্ত অনেক ক্ষেত্রেই আমাদের জীবনের পথপরিক্রমা নির্ধারণ করে। কখনো মোড় ঘুরিয়ে দেয়। তাই এসব বিষয়ে প্রয়োজনে আত্মীয়, বন্ধুবান্ধব বা গুরুজনের পরামর্শ বিবেচনার মধ্যে আনুন।
 বড় কোনো বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণে অস্বস্তিবোধ করলে, সেই ‘অস্বস্তি’ বা ‘গাট ফিলিং’কে গুরুত্বের সঙ্গে নিন। অনেক কিছুই আছে, যা আমরা সচেতনভাবে দেখতে চাই না, কিন্তু আমাদের অবচেতন মন নানাভাবে সেটা জানান দেয়।

ছোটখাটো সিদ্ধান্তের বেলায়
প্রতিদিনকার ছোটখাটো বিষয়ে সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত বিশ্লেষণ করবেন না। এসব বিষয়ে ছোটখাটো ভুল আপনার জীবনধারার গতিপথে খুব বেশি পরিবর্তন আনবে না। বরং এসব নিয়ে অতিরিক্ত বিশ্লেষণ আপনার অযথা সময়ক্ষেপণ করবে।

পেশাগত জীবনের সিদ্ধান্ত
 পেশা নির্বাচন, পরিবর্তন, বদলি, চাকরি ছেড়ে দেওয়া, ঊর্ধ্বতন/অধস্তন সহকর্মীদের সঙ্গে আচরণ ইত্যাদি নানা ক্ষেত্রেই নানা সিদ্ধান্ত নিতে হয়।
 পেশা নির্বাচন বা পরিবর্তনের ক্ষেত্রে আপনার ভালো লাগা বা মনের টানকে এবং দক্ষতার বিষয়কে প্রাধান্য দেওয়া ভালো। কারণ, পেশাগত জীবন আমাদের অনেকটা জুড়ে থাকে। পেশার প্রতি ভালোবাসা আপনার দক্ষতার উৎকর্ষ ঘটাতে সাহায্য করবে।
 যথেষ্ট কারণ থাকলেও বদলি বা চাকরি ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত কখনো হুট করে বা রাগ করে নেবেন না। এ ক্ষেত্রে পরিবারের পরামর্শ বা সুবিধা-অসুবিধা বিবেচনায় আনবেন। এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত কয়েক দফায় এবং যথেষ্ট সময় নিয়ে নিন।
 ঝুঁকিপূর্ণ কাজে (যেমন ব্যবসায় অনেক টাকা খাটানো, বাড়ি কেনা) নামার আগে প্রত্যাশিত ফলাফলের বাইরে নেতিবাচক ফলাফল ভেবে দেখুন। নেতিবাচক ফলাফল আপনাকে কতটুকু ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে বা আপনি কতটুকু সামাল দিতে পারবেন বা গ্রহণ করতে পারবেন—সবদিক ভালোভাবে বিশ্লেষণ করুন।
 পরিবার ও বিশ্বস্ত বন্ধুদের সঙ্গে আলোচনা করুন। ঝুঁকি নেওয়ার ক্ষেত্রে কাছের মানুষের সাপোর্ট গুরুত্বপূর্ণ। সিদ্ধান্তের আগে বিষয়টা নিয়ে যথেষ্ট তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে নেওয়া ভালো।
 প্রতিনিয়ত না চাইলেও ব্যক্তিজীবন থেকে শুরু করে পেশাগত বা সামাজিক জীবনে আমাদের অনেক সিদ্ধান্ত নিতে হয়। সময়মতো ভালো সিদ্ধান্ত নেওয়া খুব গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, সঠিক সিদ্ধান্তের ওপর অনেক ক্ষেত্রে আমাদের জীবনের গতিপথ নির্ধারণ করে। শুধু তা-ই না, প্রতি মুহূর্তের ভালো-খারাপ থাকার নির্ণায়কও ছোট ছোট নানা সিদ্ধান্ত।

22
বিবাহবিচ্ছেদ সন্তানের জীবনে খুব নেতিবাচক প্রভাব ফেলে
তাজিন আহমেদ, অধ্যক্ষ, সানিডেইল স্কুল, ঢাকা।

স্কুলে শিক্ষার্থীকে একটু পর্যবেক্ষণ করলেই বোঝা যায় সে কোনো সমস্যার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে কি না। আমাদের স্কুলে কাউন্সেলর আছেন, ফলে কোনো ছাত্রছাত্রীর মনঃকষ্টের মধ্য দিয়ে গেলে আলাদা করে ওদের সঙ্গে কথা বলা হয়। আমি নিজেও বলি। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায়, ওরা কোনো কথা বলতে চায় না। কিন্তু আচরণ বা পরীক্ষার ফল হঠাৎ খারাপ হওয়া দেখলে বোঝা যায়, বাচ্চাটার কোনো সমস্যা হচ্ছে। মা-বাবার বনিবনা না হওয়া বা বিবাহবিচ্ছেদ সন্তানের জীবনে খুব নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। সন্তানের সামনে আপনারা যে ধরনের আচরণ করবেন, সন্তান আপনার অজান্তে তা শিখে ফেলবে। পরে আপনি যখন তাকে ভালো কিছু শেখাতে যাবেন, সে শিখবে না।
বিবাহবিচ্ছেদ হলে বাচ্চা রাখা নিয়ে অনেক সময় মামলা আদালত পর্যন্ত গড়ায়। সন্তান যাঁর কাছেই থাকুক, আমরা মা-বাবা দুজনকে ডেকে কথা বলি। তাঁরা যেন সন্তানের সামনে এমন কোনো কথা না বলেন, যাতে সন্তান নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে। সন্তান জন্মদানের আগে মা-বাবার পূর্বাপর পরিস্থিতি বুঝে সন্তান নিতে হবে। সন্তানকে এত অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতিতে ফেলার আগে তাঁদের ভাবনাচিন্তার দরকার।

সন্তানের চাওয়া মা-বাবাকে গুরুত্ব দিতে হবে
মাহবুবা নাসরীন, সমাজবিজ্ঞানী
সমাজে বিবাহবিচ্ছেদ যে হারে বাড়ছে, সেভাবে মানসিকতার পরিবর্তন আসেনি আমাদের। আমরা মানসিকভাবে সমাজের পরিবর্তন নিতে প্রস্তুত হইনি। যে কারণে মা-বাবার সম্পর্কে কোনো সমস্যা হলে সেই পরিবারের সন্তানকে কিংবা ব্রোকেন ফ্যামিলির সন্তানকে কেউ কেউ হেয় করে কথা বলে। এই দোষ সন্তানের নয়। অনেক ক্ষেত্রে মা-বাবা একটু সহনশীল হলে বা সন্তানের প্রয়োজনে ছাড় দিতে হলে সন্তানের মনের কষ্ট কিছুটা কমানো যায়।

সন্তানের চাওয়া মা-বাবাকে গুরুত্ব দিতে হবে। নিজেদের মতামত সন্তানের ওপর চাপানো যাবে না। পারিবারিক সমঝোতা, পরিবারের গুরুত্ব—এগুলো সন্তানকে শেখানোর আগে মা-বাবাকে বিষয়গুলোর গুরুত্ব বুঝতে হবে। মা-বাবা ছাড়াও চারপাশের অন্যান্য মানুষ, কাছের মানুষ ও আত্মীয়দের সহনশীল হতে হবে। তাঁরা বুঝে না বুঝে মনে আঘাত দিয়ে কথা বলেন। এমন কোনো আচরণ করেন, যা সন্তানের মন ছোট করে দেয়। মা-বাবা কারও নামেই কোনো সমালোচনা সন্তানের সামনে করা উচিত নয়।

এই সন্তানদের ব্যক্তিত্বের বিকাশ বাধাগ্রস্ত হয়
হেলাল উদ্দিন আহমেদ, সহযোগী অধ্যাপক, জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট, ঢাকা।
মা-বাবার বিবাহবিচ্ছেদ হলে বা একই সঙ্গে থেকেও বনিবনা না হলে তার সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়ে সন্তানের ওপর। মা-বাবা যদি সন্তানের সামনে ঝগড়া করেন বা পরস্পরকে দোষারোপ করতে থাকেন, তাহলে সন্তানের ব্যক্তিত্বের বিকাশ বাধাগ্রস্ত হয়। সব সময় অতি উৎকণ্ঠায় থাকে সেসব সন্তান। সন্তান যখন বড় হয়, তার ব্যক্তিজীবনেও এই প্রভাব পড়ে। তখন পরিবার গঠন করার সময় মা-বাবার আচরণের প্রতিফলন ঘটাতে পারে। যারা নেতিবাচক পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে বড় হয়, দেখা যায়, তাদের আত্মবিশ্বাস ও দৃঢ়তা কম থাকে।
সন্তান জন্মদানের পর দায়িত্ববান হতে হবে। মা-বাবার আচরণ সংবেদনশীল না হলে সন্তানও অসংবেদনশীল আচরণ করবে। সেটা মাথায় রেখে দাম্পত্য জীবনে আচরণ-কথাবার্তায় সচেতন হতে হবে।

সন্তানের সামনে পরস্পরকে ছোট করা উচিত নয়
তানজীব উল আলম, আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট
এই ধরনের পরিস্থিতিতে সন্তানই মূলত ভিকটিম হয়ে থাকে। বিবাহবিচ্ছেদে দেখি মা-বাবা পরস্পর পরস্পরকে অনেক ছোট করে অসম্মানজনক কথা বলেন। সেটি সন্তানের মনের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে আমরা দেখি সন্তানের হেফাজত পাওয়ার জন্য মা-বাবা মিথ্যা কথার আশ্রয় নেন। সন্তানকেও সেগুলো শেখাতে থাকেন। যা খুবই অনুচিত। সন্তান যাঁর কাছে থাকলে ভালো থাকবে, আদালত সেই সিদ্ধান্তই নেন। যাঁর হেফাজতেই সন্তান থাকুক না কেন, সন্তানকে এটা বোঝাতে হবে মা-বাবা দুজনেই তার সঙ্গে আছে। মা-বাবা সব সন্তানের কাছে আদর্শ। পরস্পরের বিরুদ্ধে এমন কোনো কথা বলা উচিত নয়, যাতে সন্তান মা বা বাবা কাউকে ভুল বোঝে।
একসঙ্গে থাকতে না পারলে সন্তানকে বলতে হবে, ‘স্বামী-স্ত্রী হিসেবে আমাদের আদর্শগত মিল হয়নি। তাই থাকিনি। কিন্তু তোমার পাশে থাকব।’ সন্তান যার কাছেই থাকুক, তাকে মূল্যবোধের শিক্ষা দেওয়াটা জরুরি। এটাও ঠিক, একজনের কাছ থেকে সঠিক শিক্ষা পেয়েও সন্তান মানুষ হতে পারে। সন্তানের সঙ্গে দেখা করা নিয়েও কোনো সমস্যা করা ঠিক নয়। সন্তান যখন যাঁর সঙ্গে থাকতে চাইবে, দেখা করতে চাইবে, সেটি তাঁকে করতে দিতে হবে। মা বা বাবা যদি সন্তানকে দেখতে চান, সেটিও প্রাধান্য দিতে হবে।

মা-বাবাকে একসঙ্গে দেখতে চাই
মহিউদ্দিন ফারুক
ঢাকার কাছাকাছি একটি শহরে থাকে ছেলেটি। সবে কলেজে উঠেছে। পড়াশোনা, খেলাধুলা, বন্ধুদের সঙ্গে ঘোরাঘুরি—কমবেশি সবই করে ছেলেটি। কিন্তু সব সময় তার মুখে বিষাদের একটা ছায়া দেখা যায়। ছেলেটি বাবার সঙ্গে থাকে ছোট এক বাড়িতে। বাবা আর ছেলে মিলেই খাওয়াদাওয়া আর ঘর-গেরস্থালির কাজ সামলায়।

ছেলেটির মা যেমন আছেন, তেমনি আছে ভাইও। বছর কয়েক আগে মা-বাবার বিচ্ছেদ হয়েছে। দুই ছেলের একজন মায়ের সঙ্গে, একজন বাবার সঙ্গে। পিঠাপিঠি দুই ভাই ছিল বন্ধুর মতো। এখন দুই ভাইয়ের দেখা হয় কালেভদ্রে। মায়ের সঙ্গে এক ছেলে, বাবার সঙ্গে এক ছেলে—দুই জায়গায় দুইভাবে হয়তো জীবন চালিয়ে নিচ্ছে। কিন্তু ওই যে বিষাদ, তা এই চারজনের মধ্যেই দেখা যায়।

কারণ যা-ই হোক ভেঙে যাওয়া পরিবার বা ব্রোকেন ফ্যামিলির সন্তানেরা ভালো থাকে না। মা-বাবার বিচ্ছেদের সবচেয়ে ভুক্তভোগী তারাই।

ছেলেমেয়েরা চায় মা-বাবার সঙ্গে একসঙ্গে একটা স্বাভাবিক, সুখী পরিবার হয়ে থাকতে। বিবাহবিচ্ছেদের ঘটনা নতুন নয়, আবার কোনো কোনো ক্ষেত্রে অযৌক্তিকও হয়তো নয়। কিন্তু সন্তান থাকলে তার বা তাদের ওপর এর যে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে, তাও অস্বীকার করার মতো না। আবার সন্তানের দৃষ্টিকোণ থেকেও তো বিচ্ছেদর বিষয়টি দেখা দরকার।

সম্প্রতি আদালতের একটা ঘটনা উঠে এসেছে সংবাদমাধ্যমে। মা ও বাবার সঙ্গে একত্রে থাকার জন্য দুই ছেলের যে আকুতি, তা স্পর্শ করেছে অনেককে। ২৫ জুনের ঘটনা এটা।

রাজশাহীর কামরুন্নাহার মল্লিকা ও মাগুরার মেহেদী হাসানের বিয়ে হয়েছিল ২০০২ সালের ডিসেম্বরে। দুজনই উচ্চশিক্ষিত ও পেশাজীবী। দাম্পত্যজীবনে মনোমালিন্যের কারণে গত বছরের ১২ মে স্বামী ডিভোর্স লেটার পাঠান স্ত্রীকে। এর এক সপ্তাহ আগে দুই সন্তানকে মাগুরায় নিজের বাড়িতে পাঠিয়ে দেন বাবা। এরপর আর দুই ছেলের দেখা পাননি মা।

দুই ছেলের হেফাজত চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন করেন মা। শুনানি নিয়ে গত ২৯ মে হাইকোর্ট রুল দেন। রুলে শিশুদের কেন মায়ের হেফাজতে দেওয়া হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়। পাশাপাশি দুই শিশুকে ২৫ জুন আদালতে হাজির করতে সংশ্লিষ্ট পুলিশ ও শিশুদের বাবাকে নির্দেশ দেওয়া হয়।

সেদিনের আদালতকক্ষের ঘটনা ছুঁয়ে যায় কমবেশি সবাইকে। দুই ভাইয়ের বড় জনের বয়স ১২ আর ছোট জনের ৯ বছর। ১৩ মাস পর আদালতকক্ষে দুই ভাইয়ের দেখা হয় তাদের মায়ের সঙ্গে। মাকে পেয়ে জড়িয়ে ধরে দুই ভাইয়ের সে কী কান্না। বড় ভাই বলে, ‘আমরা আর কিছু চাই না, শুধু মা-বাবাকে একত্র দেখতে চাই।’

এ দৃশ্য বিচারক, আইনজীবীসহ আদালতকক্ষে থাকা সবার চোখই ভিজিয়ে দেয়। এই শুনানি হচ্ছিল বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি মো. খায়রুল আলমের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চে। একপর্যায়ে বড় ছেলে মাকে জড়িয়ে ধরে বাবাকে ডাকে। সে বলে, ‘বাবা, তুমি মাকে সরি বলো।’ মাকে বলে, ‘তুমিও বাবাকে সরি বলো। আমরা একসঙ্গে থাকতে চাই।’

আদালত দুই শিশুর কথাও শোনেন। তারা মা-বাবাকে একত্র দেখতে চায়। আদালত বলেন, ‘তোমরা জোরে বলো, তোমরা একসঙ্গে থাকতে চাও।’ বাবা ও মাকে আদালত বলেন, ‘এ দৃশ্য দেখেও কি আপনাদের মন গলে না? আপনারা কি সন্তানের জন্য নিজেদের স্বার্থ ত্যাগ করতে পারবেন না? সামনে তাকিয়ে দেখেন, আপনাদের এ দৃশ্য দেখে সবার চোখে পানি চলে এসেছে।’

দুই পক্ষের আইনজীবীসহ উপস্থিত আইনজীবীরা দাঁড়িয়ে সমস্বরে সন্তানদের সর্বোচ্চ কল্যাণ বিবেচনা করে বিভেদ ভুলে মা-বাবাকে একত্র হয়ে থাকার চিন্তা করতে অনুরোধ জানান। আদালত খাসকামরায় দুই শিশু, তাদের মা-বাবা, নানি ও ফুফুর বক্তব্যও শোনেন। পরে তিনি আদেশ দেন, শিশু দুজন ৪ জুলাই পর্যন্ত তাদের মায়ের হেফাজতে থাকবে। তবে তাদের বাবা যেকোনো সময় শিশু দুজনের দেখাশোনা করার সুযোগ পাবেন। ৪ জুলাই আদেশের জন্য দিন ধার্য করা হয়। দুই শিশুকেও আনতে বলা হয়।

৪ জুলাই। সকালে মায়ের হাত ধরেই আদালতে আসে দুই ছেলে। সেদিনও আবেগঘন পরিবেশ তৈরি হয় সেখানে। পারিবারিক এ বিষয়ের প্রসঙ্গ টেনে একপর্যায়ে আদালত বলেন, এই ঘটনা গণমাধ্যমে কীভাবে এসেছে দেখেছেন? জনমত এটি কীভাবে দেখেছে? এটি একটি সামাজিক সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। আদালত আগামী ১ আগস্ট আদেশের জন্য পরবর্তী দিন ধার্য করেন।

আইন-আদালতে যা-ই হোক না কেন, মা-বাবার পক্ষে-বিপক্ষে যত যুক্তিই থাকুক না কেন, ‘মা-বাবাকে একত্রে দেখতে চাই’—দুই শিশুর এই আকুতি ছুঁয়ে গেছে আমাদের সবাইকে, এই সমাজকে।

23

অনেক খাবারেই ক্যালসিয়াম থাকে। পরিমাণ বুঝে সেসব খাবার খাওয়া যায়।
অনেক খাবারেই ক্যালসিয়াম থাকে। পরিমাণ বুঝে সেসব খাবার খাওয়া যায়।
ক্যালসিয়াম নামের খনিজ উপাদানটি আমাদের হাড় ও দাঁত শক্ত করে, ক্ষয় রোধ করে। স্নায়ু, হৃৎস্পন্দন, মাংসপেশির কাজেও লাগে। এর অভাবে হাড় ক্ষয় বা অস্টিওপোরাসিস রোগ হতে পারে। হাড়ের ক্ষয়রোগ প্রধানত প্রবীণদের হয়ে থাকে। হরমোনজনিত কিছু তারতম্যের কারণে প্রবীণ নারীদের এই রোগ হওয়ার ঝুঁকি বেশি। কিছু অসুখের কারণে অনেক সময় তরুণেরাও এই রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকেন। কৈশোরে পর্যাপ্ত পরিমাণে ক্যালসিয়াম-জাতীয় খাবার গ্রহণ করলে পরবর্তী সময়ে ক্যালসিয়ামের ঘাটতিজনিত সমস্যাগুলো কম হবে।

অনেক সময় কিছু কিছু রোগে তরুণেরাও আক্রান্ত হতে পারেন। যেমন কিছু বাতজনিত সমস্যা। কোমরের বাত, আবার অন্ত্রের প্রদাহের কারণে এগুলো ব্যক্তি ঠিকমতো গ্রহণ করতে পারেন না। শরীরের যে প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো থাকে যেমন: ক্যালসিয়াম, ভিটামিন ডি, খনিজ বা মিনারেল—এগুলো ভালোভাবে গ্রহণ করতে না পারলে অনেক আগেই হয়তো শরীরে অস্টিওপোরোসিস হয়ে যায়।

কেউ বললেই ক্যালসিয়াম ট্যাবলেট খাবে?

একটু হাত-পা ব্যথা, জোড় বা জয়েন্টের ব্যথা, শরীর ম্যাজম্যাজ করছে বা বয়স হয়েছে বলেই ক্যালসিয়াম ট্যাবলেট খেতে হবে, এমন কোনো কথা নেই। কেননা, দৈনন্দিন নানা খাবারেও পর্যাপ্ত পরিমাণে ক্যালসিয়াম আছে। প্রতিদিন এ রকম খাবার থেকেই ক্যালসিয়ামের চাহিদা পূরণ করা যায়। অনেকে আবার নিজে নিজেই ওষুধের দোকান থেকে কিনে ক্যালসিয়াম বড়ি খান, যা ঠিক নয়। এতে হিতে বিপরীত হতে পারে। অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শমতো ওষুধটি সেবন করতে হবে।

শরীরে ভিটামিন ‘ডি’র অভাব থাকলে কিন্তু ক্যালসিয়াম থেকে উপকার পাওয়া যাবে সামান্যই। অতিরিক্ত ক্যালসিয়াম গ্রহণে কিডনিতে পাথর পর্যন্ত হতে পারে। আবার যাঁদের আগে কখনো কিডনিতে পাথর হয়েছিল, তাঁদের অতিরিক্ত ক্যালসিয়াম গ্রহণে পুনরায় পাথর হওয়ার আশঙ্কা আরও বেশি। তাই চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করার সময় তথ্যটি সবার আগে জানবেন। কারণ ওষুধের মাত্রা ঠিক করতে এবং সমস্যাটির জন্য বাড়তি যেসব সতর্কতা প্রয়োজন তা নির্ধারণে তথ্যটি ভূমিকা পালন করবে।

দৈনন্দিন কতটুকু ক্যালসিয়াম প্রয়োজন?

একজন পূর্ণ বয়স্ক মানুষের দৈনিক ১০০০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম ও ৬০০ ইউনিট ভিটামিন ডি হলে চলে। রজর্নিবৃত্তির (মেনোপজ) পর নারীদের এবং সত্তরোর্ধ্ব পুরুষদের ১২০০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম দরকার হয়। গর্ভবতী ও বুকের দুধ পান করান যে মায়েরা তাঁদের লাগে একটু বেশি। ভিটামিন ডি-ও খেতে হবে কেননা এটি শরীরে ক্যালসিয়ামকে শোষণ করতে সাহায্য করে। ভিটামিন ডি পাওয়া যায় সূর্যের আলো থেকে এবং দুধজাতীয় খাবার থেকে আসে ক্যালসিয়াম। এ ছাড়া সবুজ শাকসবজি, বাদাম, টফু, কমলা ইত্যাদিতে ক্যালসিয়াম পাওয়া যায়।

ক্যালসিয়াম ট্যাবলেট ছাড়া কীভাবে সমাধান পেতে পারি?

দুধ, দই, পনির, কাঁচা বাদাম, সয়াবিন, আখরোট, সামুদ্রিক মাছ, কাঁটাযুক্ত ছোট মাছ, কালো ও সবুজ কচুশাক, শজনেপাতা, পুদিনাপাতা, সরিষাশাক, কুমড়ার বীজ, সূর্যমুখীর বীজ, চিংড়ি শুঁটকি, ডুমুর ইত্যাদি হলো উচ্চ ক্যালসিয়ামযুক্ত খাবার। ১০০ গ্রাম দুধে ক্যালসিয়াম আছে ৯৫০ মিলিগ্রাম, একই পরিমাণ পাবদা মাছে ৩১০ মিলিগ্রাম, সামুদ্রিক মাছে ৩৭২ মিলিগ্রাম, শজনেপাতায় ৪৪০ মিলিগ্রাম, ট্যাংরা মাছে ২৭০ মিলিগ্রাম। এক কাপ টকদইয়ে থাকে আরও বেশি ৪০০ মিলিগ্রামের মতো। আধা বাটি রান্না করা সবুজ পাতা আছে এমন শাক খেলে ১০০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম খাওয়া হবে। এক গ্লাস কমলার রসে ১৫০ থেকে ২০০ মিলিগ্রাম।

তবে অন্ত্রে ক্যালসিয়াম শোষণে বাধা দেয় কিছু জিনিস, যেগুলো ক্যালসিয়ামযুক্ত খাবারের সঙ্গে না খাওয়াই ভালো। যেমন উচ্চমাত্রার চর্বি ও অক্সালিক অ্যাসিডযুক্ত খাবার। চকলেট, পালংশাক, কার্বোনেটযুক্ত পানীয় ইত্যাদিও ক্যালসিয়াম শোষণে বাধা দেয়। কিন্তু ক্যালসিয়াম শোষণে সাহায্য করে ভিটামিন এ, সি এবং ডি। আয়রনও ম্যাগনেশিয়ামযুক্ত খাবারও ক্যালসিয়ামের কাজে সাহায্য করে।

এরপরও প্রয়োজন হলে...

তারপরও চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ক্যালসিয়াম বড়ি সেবন করা যাবে বটে, তবে এর কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও আছে। সবচেয়ে সাধারণ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হলো গ্যাস্ট্রিক, কোষ্ঠকাঠিন্য ইত্যাদি। বেশ কিছু ওষুধ অন্ত্রে ক্যালসিয়ামের শোষণ কমিয়ে দেয়, বিশেষ করে যেসব ওষুধ অ্যাসিডিটি কমাতে ব্যবহৃত হয়। একসঙ্গে ৫০০ মিলিগ্রামের বেশি ক্যালসিয়াম ওষুধ অন্ত্রে শোষিত হয় না, তাই বেশি মাত্রার ওষুধ খেয়ে লাভ হয় না। ক্যালসিয়াম অন্ত্রে শোষণ করতে ভিটামিন ডি লাগে, তাই ভিটামিন ডি কম থাকলে এটিসহ খেতে হবে। সূর্যালোকে আছে প্রচুর ভিটামিন ডি। ডিমের কুসুম, লোনাপানির মাছেও আছে ডি ভিটামিন।

বয়স একটু বেড়ে গেলেই যে ক্যালসিয়ামের ঘাটতির কারণে সমস্যায় পড়তে হয়, তা এড়াতে কৈশোর থেকেই প্রয়োজন সচেতনতা। দুধ ও দুধজাতীয় খাবারের পাশাপাশি খেতে হবে কাঁটাসহ ছোট মাছও। বাড়ন্ত এই বয়সটায় এমন খাদ্যাভ্যাস গড়ে তুললে একটি মেয়ের শরীরের হাড়ের মূল অংশটা ঠিকমতো তৈরি হবে। এভাবে ভবিষ্যতে হাড়ক্ষয় বা হাড়ে ফুটো হয়ে হাড় দুর্বল হয়ে যাওয়ার সমস্যা এড়ানো সম্ভব।

24





নারী-পুরুষ সাম্যের প্রশ্নে বারবার যে বিষয়টি সামনে এসেছে, তা হলো শারীরিক ও মানসিক সক্ষমতা। সমাজের এমন কোনো স্তর নেই যেখান থেকে এ ধরনের সংশয় প্রকাশ করা হয়নি। যদিও অগ্রসর মানুষ মাত্রই জানেন এটি পুরুষাধিপত্য বজায় রাখার একটি কৌশল মাত্র। বহু আগে থেকেই তারা বলছেন, সভ্যতার ইতিহাসে নারী-পুরুষ উভয়েরই সমান অবদান। যারা এ সত্যই মানতে রাজি নন, তাদের জন্য দুঃসংবাদ হচ্ছে বিজ্ঞানীরা বলছেন, মস্তিষ্কের সক্রিয়তার দিক থেকে নারী বরং পুরুষের চেয়ে এগিয়ে রয়েছে।

নারী-পুরুষ সাম্যের প্রশ্নে উন্নত বিশ্বের ঘটনাবলি পর্যবেক্ষণ করলেই বিজ্ঞানীদের এ বক্তব্যের গুরুত্বটি অনুধাবন করা সম্ভব। সর্বশেষ আধুনিক প্রযুক্তি বিশ্বের রাজধানী খ্যাত সিলিকন ভ্যালিও উন্মাতাল হয়ে উঠেছে এ সাম্যের প্রশ্নেই। এমনকি প্রযুক্তি বিশ্বের নেতৃত্ব দানকারী অন্যতম প্রতিষ্ঠান গুগলের এক প্রকৌশলীকেও সম্প্রতি ছাঁটাই হতে দেখা গেছে নারী-বিষয়ক পুরোনো ধ্যানধারণা পোষণের কারণে। আর ঠিক এ সময়েই গুরুত্বপূর্ণ একটি গবেষণার ফলাফল সামনে নিয়ে এসেছে জার্নাল অব আলঝেইমার’স ডিজিজ। গত ৭ আগস্ট এ-বিষয়ক গবেষণা প্রতিবেদনটির সারসংক্ষেপ প্রকাশ করেছে সায়েন্সডেইলি।

আমেরিকার ক্যালিফোর্নিয়ার আমেন ক্লিনিকস ইনকরপোরেশনের প্রতিষ্ঠাতা ও মনোবিজ্ঞানী ড্যানিয়েল জি আমেন এ গবেষণা পরিচালনা করেন। এতে নয়টি ক্লিনিকের কাছ থেকে পাওয়া মোট ৪৬ হাজার ৩৪ ব্যক্তির মস্তিষ্কের স্পেক্ট (সিংগেল ফোটন এমিশন কম্পিউটেড টমোগ্রাফি) ইমেজ পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে।
স্পেক্ট ইমেজিং হচ্ছে এমন একটি পদ্ধতি, যেখানে তেজস্ক্রিয় রাসায়নিকের সাহায্যে শরীরের কোনো একটি অঙ্গে বা টিস্যুতে রক্ত সঞ্চালন হার ও পর্যবেক্ষণ করা হয়। শরীরের কোনো একটি অঙ্গে রক্ত সঞ্চালন হারই ওই অঙ্গের সক্রিয়তার সবচেয়ে বড় প্রমাণ। কারণ কোষের ক্রিয়ার জন্য প্রয়োজনীয় অক্সিজেন পরিবহন করে রক্ত।
গবেষণাটিতে প্রতিটি মস্তিষ্কের মোট ১২৮টি অঞ্চল পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে। এতে দেখা যায়, প্রায় প্রতিটি অঞ্চলেই পুরুষের তুলনায় নারীদের মস্তিষ্কে রক্ত সঞ্চালনের হার উল্লেখযোগ্য মাত্রায় বেশি। এ বিষয়ে প্রধান গবেষক ড্যানিয়েল জি আমেন বলেন, ‘নারী ও পুরুষের মস্তিষ্কের পার্থক্য অনুধাবনে এ গবেষণা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় আমাদের সামনে হাজির করেছে। একই সঙ্গে এটি লৈঙ্গিক ভিন্নতার কারণে কার কতটা মস্তিষ্কের রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে, তাও উন্মোচন করে।’
গবেষণায় দেখা গেছে, নারীর মস্তিষ্কের বেশ কিছু অংশ পুরুষের অনুরূপ অংশের চেয়ে বেশি সক্রিয়। বিশেষত নারীর প্রিফ্রন্টাল কর্টেক্স বা অগ্রমস্তিষ্ক পুরুষের চেয়ে উল্লেখযোগ্য মাত্রায় বেশি সক্রিয়। মস্তিষ্কের এ অংশটি মনোযোগ ও উদ্দীপনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। এ ছাড়া মস্তিষ্কের অনুভূতি সংশ্লিষ্ট অংশ লিমবিকের সক্রিয়তাও নারীদেরই বেশি। এ কারণে পুরুষের তুলনায় নারীদের আবেগ ও উদ্বেগের মাত্রা দুইই বেশি হতে দেখা যায়। তবে মস্তিষ্কের দর্শনেন্দ্রীয় সংশ্লিষ্ট অংশের দিক থেকে পুরুষ এগিয়ে রয়েছে।
এ বিষয়ে জার্নাল অব আলঝেইমার’স ডিজিজের প্রধান সম্পাদক ও টেক্সাস বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজ অব সায়েন্সেসের ডিন ড. জর্জ পেরি সায়েন্সডেইলিকে বলেন, চিকিৎসা ক্ষেত্রে এ গবেষণা ফলাফল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি আমাদের নিজেদের সঙ্গীকে অনুধাবনের ক্ষেত্রেও সহায়তা করবে।


25
Faculty Forum / ভর্তার নানা স্বাদ
« on: June 23, 2018, 02:43:02 PM »


চিংড়ি মাছ ভর্তা

উপকরণ: চিংড়ি মাছ এক কাপ, হলুদ বাটা ১/৪ চা চামচ, কাঁচা মরিচ দুটি, কালিজিরা ১/৪ চা চামচ, পেঁয়াজ তিনটি ছোট আকারের, লবণ স্বাদ অনুযায়ী, ধনে পাতা দুই টেবিল চামচ, সরিষার তেল এক টেবিল চামচ, শুকনা মরিচ তিনটি, রসুন এক কোয়া।
প্রণালি: চিংড়ি মাছ, হলুদ বাটা, রসুন, শুকনা মরিচ, সামান্য পেঁয়াজ কুচি প্রথমে সয়াবিন তেলে ভেজে নিতে হবে। তারপর স্বাদ অনুযায়ী লবণ দিয়ে পাটায় বেটে নিতে হবে। এখন সরিষার তেল, ধনে পাতা, পেঁয়াজ কুচি ভালোভাবে মিশিয়ে পরিবেশন করতে হবে।

বরবটি ভর্তা

উপকরণ: বরবটি ৬০০ গ্রাম, পেঁয়াজ কুচি এক কাপ, রসুন বাটা ১/২ চা চামচ, কাঁচা মরিচ ১০টি (ঝাল বেশি খেতে চাইলে), হলুদ গুঁড়া ১/২ চা চামচ, লবণ এক চা চামচ, সরিষার তেল দুই টেবিল চামচ, ধনে পাতা কুচি দুই টেবিল চামচ।
প্রণালি: বরবটি ধুয়ে কাঁচা মরিচসহ ব্লেন্ড করে নিতে হবে। একটি প্যানে তেল গরম করে নিতে হবে। গরম তেলে রসুন বাটা, হলুদ গুঁড়ো, লবণ ও ব্লেন্ড করা বরবটি পানি না শুকানো পর্যন্ত নাড়তে হবে। ঠান্ডা হলে পেঁয়াজ কুচি, সরিষার তেল ও ধনে পাতা দিয়ে মাখিয়ে পরিবেশন করতে হবে।

কাঁঠালের বিচি দিয়ে লইট্টা শুঁটকি ভর্তা

উপকরণ: কাঁঠালের বিচি এক কাপ, লইট্টা শুঁটকি ১ কাপ, কাঁচা মরিচ আটটি, লবণ স্বাদ অনুযায়ী, সরিষার তেল দুই টেবিল চামচ, পেঁয়াজ কুচি এক কাপ, ধনে পাতা দুই টেবিল চামচ।
প্রণালি: প্রথমে লইট্টা শুঁটকি ধুয়ে নিতে হবে। এরপর একটা গরম তাওয়ায় কাঁচা মরিচ, কাঁঠাল বিচি ও শুঁটকি টেলে নিতে হবে। এখন পাটায় কাঁচা মরিচ, কাঁঠাল বিচি ও শুঁটকি বেটে নিতে হবে। এখন পুরো মিশ্রনটিকে নিয়ে সরিষার তেল, লবণ, ধনে পাতা ও পেঁয়াজ কুচি দিয়ে মাখিয়ে পরিবেশন করতে হবে।

26

 
 

‘আজ আমার নিশ্বাস নেওয়ার মতো সময় নেই।’ এমন উক্তি একজন মায়ের মুখে প্রায়ই শোনা যায়। মনে হতে পারে এটা অতিরঞ্জন। কিন্তু বাস্তব জীবনে দেখা যায়, একজন মা সকাল থেকে রাত পর্যন্ত সারাক্ষণ ব্যস্ত থাকেন। সংসারের চাকা ঠিক রাখতে তিনি সব সময় কিছু না কিছু করছেন। ঘুম থেকে ওঠার পর থেকেই শুরু হয় তাঁর ব্যস্ততা। ঘুমাতে যাওয়া পর্যন্ত সেভাবেই চলে। এ-তো গেল সেই পরিবারের কথা, যার ছোট-বড় সব সদস্যই সুস্থ ও স্বাভাবিক। কিন্তু যে পরিবারে একটি শিশু থাকে যে কিনা অন্য দশটি শিশুর মতো নয়, যার কিনা রয়েছে কোনো না কোনো ধরনের ‘ডিজঅ্যাবিলিটি’, সেই পরিবারটি কিন্তু অন্য পরিবারের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে পারে না।
নিজের অভিজ্ঞতার কথা আগে বলি। বিয়ের পরে আমার সংসার শুরু হলো স্বামী, শ্বশুর, শাশুড়ি ও ননদকে নিয়ে। তখনই সারা দিন ব্যস্ত থাকতাম। পরে যখন আমার প্রথম সন্তান- মেয়ের জন্ম হলো, কাজ আরও বেড়ে গেল। একই সময়ে এল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতার সুযোগ। সুতরাং সারাক্ষণই ব্যস্ত। তবু সব মিলিয়ে ভালোই ছিলাম সেই সময়।
দ্বিতীয়বার মা হলাম ১৯৯৮ সালে। এবার হলো একটি ছেলে সন্তান। শুরুতে সবাই খুব আনন্দিত। সবার মতো আমিও। কিন্তু বছর ঘুরতেই এক অজানা ভয় আমাদের পুরো পরিবারকে ঘিরে ধরল। বুঝতে পারলাম, আমার ছেলে অন্য শিশুদের মতো নয়। সে আর সবার মতো আচরণ করে না। ক্রমে সেই আশঙ্কা সত্যি হলো। বুঝতে পারলাম, আমার ছেলে অটিস্টিক। ডায়াগনোসিসের পর সঠিক কারণ জেনে পুরো পরিবার বাকরুদ্ধ হয়ে গেল। আমি যেন হঠাৎ করে বিষণ্নতায় ডুবে গেলাম। বুঝতে পারছিলাম না, কি হলো? আমি কি অপরাধ করলাম? সবাই যেন সন্তানের এই অবস্থার জন্য আমাকে দায়ী করছে।
এটা ঠিক যে, এই ব্যাপারে সমাজের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন হওয়া দরকার। একজন অটিস্টিক সন্তানের দায়িত্ব কেন শুধু একজন মায়ের হবে? যখন কোনো শিশু বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশু হিসেবে চিহ্নিত হয়; অর্থাৎ তার আচরণ ও জীবনযাত্রা অন্যদের মতো নয়, তখন সেই পরিবারের প্রতি অন্যদের আচরণ কেমন যেন বদলে যায়। শারীরিক অসুস্থতাকেও সবাই মেনে নিতে পারে। কিন্তু সমস্যাটি যদি মানসিক বা আচরণগত হয়, তবে সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টে যায়। ওই শিশুটিসহ তার পরিবারকে অন্য চোখে দেখতে শুরু করে আত্মীয়স্বজন ও পাড়া প্রতিবেশীরা।
আমার জীবনে আমি দেখেছি, একজন অটিস্টিক সন্তানের মা হওয়ায় সবাই আমাকে করুণার চোখে দেখতে শুরু করল। কিন্তু কেন? যে সময়টাতে ঐক্যবদ্ধ হয়ে, বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুটির উন্নয়নে একে অন্যকে সাহায্য করার কথা, সেই সময়ে আমরা ওই শিশুর পরিবারকে ত্যাগ করি। এমনকি পরিহাসও করি কখনো কখনো।অনেক মা-বাবা সন্তানের অটিজমের কথা স্বীকার করতে সংকোচ বোধ করেন। জাতিসংঘ সদর দপ্তরে উচ্চপদে কর্মরত জল–এর বাবা-মা এখানে ব্যতিক্রম। নিউইয়র্কে সবাই অটিস্টিকদের বলে স্পেশাল। আর সৃষ্টিকর্তা যাকে বেশি ভালোবাসেন, তাকেই তো স্পেশাল সন্তান উপহার দেন। ছবির মডেল কাজী সারাফ জল। সঙ্গে তাঁর বাবা কবি কাজী জহিরুল ইসলাম, মা মুক্তি জহির ও ভাই অগ্নি।অনেক মা-বাবা সন্তানের অটিজমের কথা স্বীকার করতে সংকোচ বোধ করেন। জাতিসংঘ সদর দপ্তরে উচ্চপদে কর্মরত জল–এর বাবা-মা এখানে ব্যতিক্রম। নিউইয়র্কে সবাই অটিস্টিকদের বলে স্পেশাল। আর সৃষ্টিকর্তা যাকে বেশি ভালোবাসেন, তাকেই তো স্পেশাল সন্তান উপহার দেন। ছবির মডেল কাজী সারাফ জল। সঙ্গে তাঁর বাবা কবি কাজী জহিরুল ইসলাম, মা মুক্তি জহির ও ভাই অগ্নি।
প্রকৃতপক্ষে এ জন্য একটি বড় সামাজিক আন্দোলন হওয়া প্রয়োজন। এ জন্য প্রত্যেক মা-বাবাকে সচেতন হতে হবে। আমার যেমন আত্মসম্মান নিয়ে বাঁচার অধিকার আছে, তেমনি আমার অটিস্টিক সন্তানেরও আত্মসম্মান নিয়ে বাঁচার অধিকার আছে। তার অধিকার প্রতিষ্ঠার দায়িত্ব প্রথমত মা-বাবার, তার সঙ্গে সঙ্গে সমাজের প্রত্যেকের।
আমার সন্তানকে নিয়ে আমি নিউইয়র্কের যেকোনো সামাজিক অনুষ্ঠানে যেতে দ্বিধাবোধ করি না। করা উচিতও নয়। যে অনুষ্ঠান সে উপভোগ করবে, সেখানে অবশ্যই তাকে নিয়ে যেতে হবে। সেই অনুষ্ঠানে অনেকেই হয়তো সেই বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুটির ব্যবহার সম্পর্কে ওয়াকিবহাল নয়। সেই ক্ষেত্রে অভিভাবক হিসেবে আমরা তাদের জানিয়ে দিতে পারি— ‘আমার সন্তানটি অটিস্টিক বা বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন।’ ফলে অন্যদের বিভ্রান্ত হওয়ার সুযোগ কমে আসবে। অটিস্টিক সন্তানের মা-বাবা হিসেবে আমাদের দায়িত্ব একটু বেশি থাকে। কারণ আমরাই পারি সচেতন করতে।
তবে শুধু সমাজের দোষ দিই কেন। অনেক মা-বাবাও পারেন না সন্তানের ডিজঅ্যাবিলিটি মেনে নিতে। তাদের নিজেদের জীবনও অনেক সময় সংঘাতময় হয়ে ওঠে এই কারণে। অটিস্টিক সন্তানের মা-বাবার প্রতি আমার একটাই কথা— ধৈর্য হারাবেন না।
যখন প্রথম নিউইয়র্কে আসি, অটিস্টিক সন্তানকে কোলে নিয়ে সাবওয়ে স্টেশনের সিঁড়ি বেয়ে উঠতে দম বেরিয়ে যেত। কারণ আমার ছেলে স্ট্রলারে উঠতে চাইত না। একদিন সাবওয়ে স্টেশনের সিঁড়িতে বসে ছেলেকে কোলে নিয়ে অনেকক্ষণ কেঁদেছি। আবার চোখের পানি মুছে ঘুরে দাঁড়িয়েছি। এই দেশে পড়াশোনা করেছি। আইনি প্রতিষ্ঠানে চাকরি নিয়েছি। প্রতিষ্ঠা করেছি আমার মতো অটিস্টিক সন্তানের মা-বাবাদের নিয়ে সংগঠন।
একটি অটিস্টিক সন্তানের সবচেয়ে বড় অবলম্বন তার মা-বাবা। দুজনের যৌথ প্রয়াসেই সে বিকশিত হতে পারে। তার বিকাশের জন্য প্রয়োজন সমাজের অন্যদের সম্মিলিত সমর্থন। যারা সদ্য জানতে পেরেছেন, আপনার সন্তানের বিকাশজনিত সমস্যা আছে, তাদের উদ্দেশ্যে বলতে চাই— হতাশ হবেন না। সন্তানের ভবিষ্যৎ নিয়ে এখনই দিশেহারা হবেন না। অটিজম সমস্যা নিয়ে কোনো ভবিষ্যদ্বাণী করা কঠিন। আপনার সন্তানের ভবিষ্যৎ জীবন কেমন হতে পারে, এই নিয়ে হুট করে কোনো উপসংহারে উপনীত হবেন না। অন্য সবার মতো অটিস্টিক শিশুরও সামর্থ্য বৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে।
সব শেষে বলব, আপনার অটিস্টিক সন্তানের সঙ্গে অন্য শিশুদের তুলনা টেনে মন খারাপ করবেন না। বরং ওর ছোট ছোট অর্জনে তৃপ্তি খুঁজুন। ওকে উৎসাহিত করুন যাতে ও সামনের দিকে এগোতে পারে।

27
পাপ ক্ষমার সর্বোত্তম মাস হলো রমজান। রমজানের দিনগুলোতে আমরা যদি একান্তই আল্লাহর জন্য রোজা রাখি এবং নিজের দোষ-ত্রুটির ক্ষমা চাই, তাহলে আল্লাহ আমাদের ক্ষমা করবেন এবং অতীতের সব গুনাহও ক্ষমা করবেন। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন কোরআন মজিদে এরশাদ করেন, ‘আর তিনিই (আল্লাহ) তাঁর বান্দাদের তওবা কবুল করেন এবং পাপগুলো ক্ষমা করে দেন।’ (সুরা আশ শুরা: ১৫)

হজরত আবু সাঈদ খুদার (রা.) বর্ণনা করেন, হুজুর (সা.) বলেছেন, ‘যখন কেউ রমজানের প্রথম দিন রোজা রাখে, তখন তার আগের সব গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হয়। এমনিভাবে রমজান মাসের সমস্ত দিন চলতে থাকে এবং প্রতিদিন তার জন্য ৭০ হাজার ফেরেশতা সকালের নামাজ থেকে শুরু করে তাদের পর্দার অন্তরালে যাওয়ার আগ পর্যন্ত তার ক্ষমার জন্য দোয়া করতে থাকে।’ (কানজুল উম্মাল, কিতাবুস সাওম)।

হজরত উম্মে সালমা (রা.) বর্ণনা করেন, নবী করিম (সা.) বলেন, ‘রজব আল্লাহর মাস, শাবান আমার মাস, রমজান আমার উম্মতের মাস।’ রাসুল (সা.) বলেন: ‘যে ব্যক্তি ইমানের সঙ্গে সওয়াবের নিয়তে রমজান মাসে রোজা রাখবে, তার অতীতের সব গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে। যে ব্যক্তি ইমানের সহিত সওয়াবের নিয়তে রমজান মাসে তারাবিহর নামাজ পড়বে, তার অতীতের সব গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে।’

‘যে ব্যক্তি ইমানের সঙ্গে সওয়াবের নিয়তে শবে কদরে ইবাদত করবে, তার অতীতের সব গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে।’ (বুখারি ও মুসলিম)।

একবার মহানবী (সা.) বলেন, ‘ফেরেশতারা রোজাদারের জন্য দিন-রাত ইস্তিগফার করতে থাকেন’ (মাজমাউজ জাওয়ায়েদ)। হাদিসে এ বিষয়ে আরও বর্ণিত হয়েছে যে হজরত আবদুর রহমান বিন আওফ (রা.) বর্ণনা করেন, হজরত মুহাম্মদ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি রমজান মাসে ইমানের সঙ্গে সওয়াব এবং এখলাসের সঙ্গে ইবাদত করে, সে নিজ গুনাহ থেকে এভাবে পবিত্র হয়ে যায়, যেভাবে সেদিন সে তার মাতৃগর্ভ থেকে জন্মলাভ করেছিল।’ (সুনানে নিশাই, কিতাবুস সাওম)।

হজরত আবু সাঈদ খুদরি (রা.) বর্ণনা করেন, হজরত মুহাম্মদ (সা.) বলেছেন, ‘যে বান্দা খোদার পথে এক দিন রোজা রাখে আল্লাহ তায়ালা তার চেহারা থেকে আগুনকে দূরে সরিয়ে দেন।’ (সহিহ মুসলিম)।

রমজানে পাঁচ ওয়াক্ত ফরজ নামাজ অবশ্যই মসজিদে জামাতে পড়ার চেষ্টা করতে হবে। তারাবিহর নামাজ জামাতে পড়ার জন্য যথাসময়ে মসজিদে যাওয়ার পূর্বপ্রস্তুতি থাকতে হবে। খতমে তারাবিহ পড়া সবচেয়ে উত্তম। ইবাদতের সময়ের সঙ্গে মিলিয়ে কাজকর্মের রুটিন পরিবর্তন করে পুনর্নির্ধারণ করতে হবে। রমজানের পাঁচটি সুন্নত পালনে সচেষ্ট থাকতে হবে। যথা: ১. সাহ্‌রি খাওয়া, ২. ইফতার করা, ৩. তারাবিহর নামাজ পড়া, ৪. কোরআন তিলাওয়াত করা, ৫. ইতিকাফ করা। যাঁরা কোরআন তিলাওয়াত জানেন না, তাঁরা শেখার চেষ্টা করবেন। যাঁরা তিলাওয়াত জানেন, তাঁরা শুদ্ধ করে তিলাওয়াত করার চেষ্টা করবেন। যাঁরা বিশুদ্ধ তিলাওয়াত জানেন, তাঁরা অর্থ বোঝার চেষ্টা করবেন। যাঁরা তরজমা জানেন, তাঁরা তফসির অধ্যয়ন করবেন। সাহাবায়ে কেরাম সাধারণত প্রতি সপ্তাহে এক খতম (পূর্ণ কোরআন করিম তিলাওয়াত সম্পন্নকরণ) করতেন—এভাবে প্রতি মাসে অন্তত চার খতম হয়ে যেত। আবার সেসব সাহাবাই দীর্ঘ এক যুগ ধরে মাত্র একটি সুরা গভীরভাবে অধ্যয়ন করেছেন।

রমজানের অতীব গুরুত্বপূর্ণ একটি সুন্নত হলো ইতিকাফ। রমজানের শেষ দশক ইতিকাফ করা সুন্নতে মুআক্কাহ কিফায়া। এর কম সময় ইতিকাফ করলে তা নফল হিসেবেই গণ্য হবে। পুরুষেরা মসজিদে ইতিকাফ করবেন। নারীরাও নিজ নিজ ঘরে নির্দিষ্ট কক্ষে ইতিকাফ করতে পারবেন। রমজানের বিশেষ তিনটি আমল হলো: ১. কম খাওয়া, ২. কম ঘুমানো এবং ৩. কম কথা বলা। হারাম থেকে বেঁচে থাকা, চোখের হেফাজত করা, কানের হেফাজত করা এবং জবানের হেফাজত করা।

তাকওয়া অর্জনই রমজানের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য। আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনে বলেছেন: ‘হে মুমিনগণ! তোমাদের প্রতি রোজা ফরজ করা হয়েছে, যেরূপ ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের প্রতি; আশা করা যায় যে তোমরা তাকওয়া অর্জন করবে।’ (সুরা বাকারার ১৮৩ নম্বর আয়াত)। রমজান হলো তাকওয়ার প্রশিক্ষণ। লক্ষ্য হলো রমজানের বাইরের বাকি ১১ মাস রমজানের মতো পালন করার সামর্থ্য অর্জন করা, দেহকে হারাম খাদ্য গ্রহণ ও হারাম কর্ম থেকে বিরত রাখা এবং মনকে অপবিত্র চিন্তাভাবনা, হারাম কল্পনা ও পরিকল্পনা থেকে পবিত্র রাখা। যে ব্যক্তি রোজার হেফাজত করে এবং পরিপূর্ণ শর্ত সাপেক্ষে রোজা রাখে আর এ দিনগুলো ইবাদতে রঙিন করে—তার জন্যই কেবল এই রোজা শয়তানি শক্তির মোকাবিলায় ঢাল হিসেবে কাজ করবে।

28

দোয়া কবুলের মাস রমজান

দোয়া হচ্ছে আল্লাহ তাআলার সঙ্গে বান্দার কথোপকথনের অন্যতম প্রধান মাধ্যম। তাই আল্লাহর দরবারে যেকোনো সময় দোয়া করা যায়। আল্লাহর আরেক নাম গাফ্ফার—অর্থ পরম ক্ষমাশীল, আরেক নাম আল ওয়াহাব, যার অর্থ সবকিছু দানকারী। আল্লাহ ওই মুহূর্তটিকে বেশি পছন্দ করেন, যখন বান্দা চরম বিপদ-আপদে ধৈর্যধারণ ও সম্পূর্ণ আত্মসমর্পণ করে কায়মনোবাক্যে আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনা করেন, তাঁর কাছে মাগফিরাত ও নাজাত কামনা করেন। মাহে রমজান দোয়া কবুলের সময়। আল্লাহ রোজাদারদের গুনাহ থেকে মুক্ত হয়ে নতুন জীবন লাভ করার সুযোগ সৃষ্টি করে দিয়েছেন। তাই নবী করিম (সা.) বলেছেন, ‘রোজাদারের নিদ্রা ইবাদততুল্য, চুপ থাকা তাসবিহ-তাহলিলতুল্য, আমল ইবাদত সওয়াব হাসিলে বেশি অগ্রগণ্য, দোয়া কবুলযোগ্য ও তার গুনাহ ক্ষমার যোগ্য।’ (বায়হাকি)। আল্লাহর কাছে দোয়া করলেই তা কবুল হয়। যা চাওয়া হয় তাই দেওয়া হয়। কারও কারও মনে এই প্রশ্ন আসে যে, কেন তাঁর দোয়া কবুল হচ্ছে না। এর উত্তর হচ্ছে, অনেক দোয়া পরকালের জন্য জমা রাখা হয় অথবা দোয়ায় যা চাইছেন তা আপনার জন্য কল্যাণকর নয়, তাই দেওয়া হয় না।

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘এমন দুটি বাক্য আছে, যা উচ্চারণ করতে খুবই সহজ, কিন্তু কিয়ামতের দিন আমলনামা ওজনের পাল্লায় খুব ভারী এবং আল্লাহর কাছে খুবই পছন্দনীয়। তা হলো, ‘সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহি, সুবহানাল্লাহিল আজিম।’ (বুখারি ও মুসলিম)। আয়াতুল কুরসি, ইসমে আজম বা আল্লাহর ৯৯টি নামের অর্থসহ আল্লাহর প্রশংসা ও দরুদ শরিফসহ দোয়া করলে তা কবুল হয়। আল্লাহর প্রশংসা যেমন, ‘আলহামদু লিল্লাহি রাব্বিল আলামিন’ দোয়ার শুরুতে বলা। ‘ওয়া ইলাহুকুম ইলাহু ওয়াহিদুন লা ইলাহা ইল্লা হুয়ার রাহমানুর রাহিম’ (সুরা বাকারা ১৬৩)। ‘আলিফ লাম মীম। আল্লাহু লা ইলাহা ইল্লাহুয়াল হাইয়্যুল কাইয়্যুম’ (সুরা আল ইমরান ১)।

নবী করিম (সা.) রমজান মাসে দোয়া ও ক্ষমা প্রার্থনা সম্পর্কে বলেছেন, ‘এই মাসে তোমরা চারটি কাজ অধিক পরিমাণে করো, ১. বেশি বেশি “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ”-এর জিকির করা; ২. আল্লাহর কাছে মাগফিরাত তথা ক্ষমা প্রার্থনা করা। ৩. জান্নাত চাওয়া, ৪. জাহান্নাম থেকে মুক্তি চাওয়া।’ রোজা অবস্থায় দোয়া কবুল হয়। হজরত মুহাম্মদ (সা.) ইরশাদ করেছেন, তিন ব্যক্তির দোয়া ফিরিয়ে দেওয়া হয় না। তাঁদের একজন হলেন রোজাদার ব্যক্তি। অন্য এক বর্ণনায় এসেছে, ইফতারের আগ পর্যন্ত তাঁর দোয়া কবুল হয়। আরেক বর্ণনায় এসেছে ইফতারের সময় দোয়া কবুল হয়। রোজাদার ব্যক্তির উচিত সময়-সুযোগমতো আল্লাহর কাছে দোয়া করতে থাকা।

সাধারণত দোয়ার নিয়ম হলো- একাকী দোয়া করা। অজু না থাকলেও দোয়া করা যায়। এমনকি হাত না তুলে মনে মনে কিংবা মুখে বান্দা নিজের সব কামনা-বাসনার কথা আল্লাহর কাছে বলতে পারেন। হজরত আদম (আ.) থেকে এ পর্যন্ত যত নর-নারী পৃথিবীতে এসেছেন এবং কবরে শায়িত আছেন, তাঁদের সবার জন্য দোয়া করতে হবে।

 রাতের শেষ তৃতীয়াংশে অজু করে পবিত্র হয়ে দুই রাকাত নামাজ পড়ে ও তাহাজ্জুদের নামাজ পড়ে সুবাহানাল্লা (আল্লাহ পবিত্র) আলহামদুলিল্লাহ (সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্য) আল্লাহু আকবার (আল্লাহ সর্বশ্রেষ্ঠ) ইয়া ওয়াহহাব (আল্লাহ সবকিছু দানকারী) আসতাগফিরুল্লাহ (আমি আমার আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাচ্ছি) দোয়া ইউনুছ তথা লা ইলাহি ইল্লা আনতা সুবহানাকা ইন্নি কুন-তু মিনাজ জোয়ালেমিন (আল্লাহ ছাড়া কোনো মাবুদ নেই, আল্লাহ পবিত্র মহান, আমি তো সীমা লঙ্ঘনকারী) এবং রাসুল (সা.)–এর ওপর দরুদ শরিফ পড়ে দোয়া করলে দোয়া কবুল হয়।

হাদিসে এসেছে, হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘প্রত্যেক রাতের শেষ তৃতীয়াংশে আল্লাহ মহান সবচেয়ে কাছের আকাশে নেমে আসেন এবং বলেন, কে আমাকে ডাকছ? আমি তোমার ডাকে সাড়া দেব। কে আমার কাছে চাইছ? আমি তাকে তা দেব। কে আছ আমার কাছে ক্ষমা প্রার্থনাকারী, আমি তোমাকে ক্ষমা করে দেব (মুসলিম)।

ইহকাল ও পরকালের সফলতার জন্য কীভাবে দোয়া করতে হবে, এই মর্মে আল্লাহ তাআলা মানবজাতিকে শিক্ষা দিয়েছেন, ‘হে আমার প্রতিপালক! আমাদের ইহকালে কল্যাণ দাও এবং পরকালেও কল্যাণ দাও এবং আমাদের আগুনের আজাব থেকে রক্ষা করো (সুরা বাকারা ২০১)

প্রতিদিন ইফতারের আগে ও পরে, সাহ্‌রির আগে ও পরে, তাহাজ্জুদ নামাজের শেষে আল্লাহর কাছে প্রাণভরে দোয়া ও ক্ষমা প্রার্থনা করলে তিনি তা কবুল করেন। বেশি করে দোয়া, ক্ষমা প্রার্থনা, তওবা, ইস্তিগফার, দরুদ শরিফ, তাসবিহ, তাহলিল প্রভৃতি জিকির করা যায়।

29
Faculty Forum / আল কুদস দিবস
« on: June 23, 2018, 01:56:54 PM »


কুদস অর্থ পবিত্র। ‘আল কুদস’ বলতে বোঝায় ফিলিস্তিনের জেরুজালেমে পবিত্র ভূমিতে অবস্থিত পবিত্র মসজিদ, যা মসজিদুল আকসা বা ‘বায়তুল মুকাদ্দাস’ নামে পরিচিত। হজরত ইবরাহিম (আ.) কর্তৃক কাবাঘর নির্মাণের ৪০ বছর পর তাঁর ছেলে হজরত ইসহাক (আ.)-এর সন্তান হজরত ইয়াকুব (আ.) ফিলিস্তিনের জেরুজালেম নামক স্থানে ‘আল আকসা’ মসজিদটি নির্মাণ করেন। এরপর তাঁর ছেলে হজরত ইউসুফ (আ.)-এর বংশধর হজরত দাউদ (আ.)-এর সন্তান হজরত সুলায়মান (আ.) তা পুনর্নির্মাণ করেন। রমজান মাসের শেষ শুক্রবার জেরুজালেম নগর প্রতিষ্ঠা করেন।
আদিতে ‘কাবা’ কিবলা থাকলেও মসজিদুল আকসা বা বায়তুল মুকাদ্দাস স্থাপনের পর এটি কিবলা হিসেবে স্বীকৃতি পায়। আমাদের প্রিয় নবী (সা.) ওহি লাভ ও নবুওয়াত প্রকাশের সময় বায়তুল মুকাদ্দাসই কিবলা ছিল। মদিনায় হিজরতের প্রায় দেড় বছর পর এই কিবলা পরিবর্তন হয়ে পুনরায় কাবা কিবলা হিসেবে নির্ধারিত হয়। মদিনা থেকে মক্কা দক্ষিণ দিকে এবং বায়তুল মুকাদ্দাস উত্তর দিকে। নবীজি (সা.) সাহাবায়ে কিরামসহ জামাতে জোহরের নামাজে আদায়রত অবস্থায় কিবলা পরিবর্তনের নির্দেশ হয়। তখন নামাজ অবস্থায় নবীজি (সা.) ও সাহাবাগণ উত্তর দিক থেকে দক্ষিণ দিকে ঘুরে গিয়ে কাবামুখী হয়ে কিবলা পরিবর্তন করে নামাজ সম্পন্ন করলেন। মদিনা শরিফে মসজিদুল কিবলাতাইন বা দুই কিবলার মসজিদও রয়েছে। ঐতিহাসিক এই ঘটনাকে ‘তাহবিলে কিবলা’ বা কিবলা পরিবর্তন বলা হয়। (সুরা-২ বাকারা, আয়াত: ১৪২-১৫১)। এই সূত্রে
ইসলামের দ্বিতীয় কিবলা বায়তুল মুকাদ্দাস মুসলমানদের প্রথম কিবলা হিসেবে পরিচিত হয়। হাদিসে আছে: ‘কাবা শরিফ তথা মসজিদুল হারামে নামাজে এক লক্ষ গুণ সওয়াব, মদিনা শরিফে মসজিদে নববীতে নামাজে পঞ্চাশ হাজার গুণ
সওয়াব, বায়তুল মুকাদ্দাসে নামাজে পঁচিশ হাজার
গুণ সওয়াব।’
বায়তুল মুকাদ্দাস মুসলমানদের কাছে সব সময় সম্মানিত। রাসুলুল্লাহ (সা.) মিরাজ রজনীতে মসজিদুল হারাম তথা কাবা শরিফ থেকে মসজিদুল আকসা তথা বায়তুল মুকাদ্দাস প্রথম সফর করেন, যা ইসরা নামে পরিচিত। (সুরা-১৭ বনী ইসরাইল, আয়াত: ১)। প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মাদ (সা.) মিরাজ গমনের সময় এই মসজিদে নামাজ আদায় করেন। এ এলাকা অসংখ্য নবী–রাসুলের স্মৃতিবিজড়িত, এর আশপাশে অনেক নবী–রাসুলের সমাধি রয়েছে। এটি দীর্ঘকালের ওহি অবতরণের স্থল, ইসলামের কেন্দ্র এবং ইসলামি সংস্কৃতির চারণভূমি ও ইসলাম প্রচারের লালনক্ষেত্র। এই পবিত্র ভূমির ভালোবাসা প্রত্যেক মোমিনের হৃদয়ের গভীরে প্রোথিত।
ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা হজরত উমর (রা.)-এর খিলাফতকালে ৬৩৮ সালে বায়তুল মুকাদ্দাস, জেরুজালেমসহ পুরো ফিলিস্তিন সম্পূর্ণরূপে মুসলমানদের অধিকারে আসে। ১০৯৬ সালে খ্রিষ্টান ক্রুসেডাররা সিরিয়া ও ফিলিস্তিন জবরদখল করে নেয়। ১১৮৭ সালে মুসলিম বীর সিপাহসালার সুলতান সালাহুদ্দীন আইয়ুবী (রহ.) পুনরায় জেরুজালেম শহর মুসলমানদের অধিকারে নিয়ে আসেন।
এরপর থেকে খ্রিষ্টান ও ইহুদি চক্র ফিলিস্তিনে ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ষড়যন্ত্র করতে থাকে। এ অসৎ উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের জন্য ইহুদিরা তৎকালীন তুরস্কের শাসক সুলতান আবদুল হামিদের কাছে ফিলিস্তিনে বসতির অনুমতি চায়; দূরদর্শী সুলতান তাদের এ দুরভিসন্ধিমূলক প্রস্তাবে রাজি হননি। ১৯১৭ সালে ইংরেজরা ফিলিস্তিনে অনুপ্রবেশ করে এবং ১৯২০ খ্রিষ্টাব্দে পূর্ণ কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করে; অল্প সময়ের মধ্যে ইহুদিরা ফিলিস্তিনে স্থায়ীভাবে বসতি স্থাপন করে। ফিলিস্তিনের পবিত্র ভূমিতে ইহুদির সংখ্যা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মুসলমানদের সঙ্গে রাজনৈতিক ও ধর্মীয় দাঙ্গা নিত্যদিনের ঘটনায় পরিণত হয়। এ সময় ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদীরা অন্যায়ভাবে মুসলমানদের ফিলিস্তিন ভূমিকে মুসলমান ও ইহুদিদের মাঝে ভাগ করে দেয়। ফলে ১৯৪৮ সালে ১৫ মে, বেলফোর ঘোষণার মাধ্যমে জায়নবাদী অবৈধ ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়। তখন থেকে মুসলমানদের প্রতি ইহুদিদের জুলুম, নির্যাতন ও অত্যাচারের মাত্রা বাড়তে থাকে।
ইসরায়েল ‘মসজিদুল আকসা’ জবরদখল করে নেয় ১৯৬৭ সালে। এরপর থেকে মুসলিম জনগণ স্বাধীনতাযুদ্ধের সূচনা করে। ইসরায়েল নতুন নতুন মুসলিম এলাকা জবরদখল করে ইহুদি বসতি সম্প্রসারণ অব্যাহত রেখেছে এবং হত্যা, গুম চালিয়ে যাচ্ছে। ইহুদিদের ঘৃণ্য পরিকল্পনা সচেতন মুসলমানদের সংগ্রামী প্রতিরোধ আন্দোলনের মুখে পরিপূর্ণভাবে সফল হতে পারেনি। সারা বিশ্বের বিভিন্ন দেশের জনগণ ফিলিস্তিনি মুসলিমদের এ প্রতিরোধ আন্দোলন সমর্থন করেছে। ১৯৭৯ সাল থেকে আল আকসা মসজিদ মুক্তির লক্ষ্যে সমগ্র মুসলিম উম্মাহ প্রতিবছর রমজান মাসের শেষ দশকের শুক্রবারে আল কুদস দিবস পালন করে। তখন থেকে সারা বিশ্বে এ দিনটি মুসলিম মুক্তির প্রতীকরূপে পালিত হয়ে আসছে।



30
Faculty Forum / শাওয়াল মাসের ফজিলত
« on: June 23, 2018, 01:50:24 PM »
আরবি চান্দ্রবর্ষের দশম মাস শাওয়াল। এই মাসের বহুবিধ তাৎপর্য আছে। এটি হজের তিন মাসের (শাওয়াল, জিলকদ, জিলহজ) অগ্রণী। এই মাসের প্রথম তারিখে ঈদুল ফিতর বা রমজানের ঈদ। পয়লা শাওয়াল সদকাতুল ফিতর বা ফিতরা আদায় করা এবং ঈদের নামাজ পড়া ওয়াজিব। এই মাসের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা রয়েছে হজের; এর সঙ্গে সম্পৃক্ততা রয়েছে ঈদের; এর সঙ্গে সম্পর্ক রয়েছে রোজা ও রমজানের এবং এর সঙ্গে যোগ রয়েছে সদকা ও জাকাতের। এই মাস আমল ও ইবাদতের জন্য অত্যন্ত উপযোগী। প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) বলেছেন, আল্লাহ তাআলা শাওয়াল মাসের ছয় দিনে আসমান ও জমিন সৃষ্টি করেছেন। সুতরাং যে ব্যক্তি এই মাসে ছয় দিন রোজা রাখবে, আল্লাহ তাআলা তাকে প্রত্যেক সৃষ্ট জীবের সংখ্যার সমান নেকি দেবেন, সমপরিমাণ গুনাহ মুছে দেবেন এবং পরকালে তাকে উচ্চ মর্যাদা দান করবেন।

 ‘শাওয়াল’ আরবি শব্দ। এর অর্থ হলো উঁচু করা, উন্নতকরণ, উন্নত ভূমি, পূর্ণতা, ফলবতী, পাল্লা ভারী হওয়া, গৌরব করা, বিজয়ী হওয়া, প্রার্থনায় হস্ত উত্তোলন করা বা ভিক্ষায় হস্ত প্রসারিত করা, পাত্রে অবশিষ্ট সামান্য পানি, ফুরফুরে ভাব, দায়ভারমুক্ত ব্যক্তি, ক্রোধ প্রশমন ও নীরবতা পালন, সৃজন করা শুকনো কাঠ। এসব অর্থের প্রতিটির সঙ্গেই শাওয়ালের সুগভীর সম্পর্ক রয়েছে। এই মাসের আমলের দ্বারা উন্নতি লাভ হয়; পূর্ণ ফল লাভ হয়; নেকির পাল্লা ভারী হয়; গৌরব অর্জন হয় ও সাফল্য আসে। ফলপ্রার্থী আল্লাহর কাছে হস্ত সম্প্রসারিত করে প্রার্থনা করে, পুরো মাস রোজা পালনের পর আরও কয়েকটি রোজা রাখে, প্রাপ্তির আনন্দে বিভোর হয়, ফরজ রোজা পালন শেষে নফল রোজার প্রতি মনোনিবেশ করে, আত্মনিয়ন্ত্রণের শক্তি অর্জন করে, পরিপক্বতা ও স্থিতি লাভ করে। এ সবই হলো শাওয়াল মাসের নামের যথার্থতা।

এই মাসে ছয়টি নফল রোজা রাখা সুন্নত। রাসুল (সা.) বলেন, যারা রমজানে রোজা পালন করবে এবং শাওয়ালে আরও ছয়টি রোজা রাখবে; তারা যেন পুরো বছরই রোজা পালন করল। (মুসলিম: ১১৬৪; আবু দাউদ: ২৪৩৩; তিরমিজি, নাসায়ি, ইবনে মাজাহ, সহিহ-আলবানি)। চান্দ্র মাস হিসাবে ৩৫৪ বা ৩৫৫ দিনে এক বছর হয়। প্রতিটি নেক আমলের সওয়াব আল্লাহ রাব্বুল আলামিন কমপক্ষে ১০ গুণ করে দিয়ে থাকেন। এই হিসাবে রমজান মাসে এক মাসের (৩০ দিনের) রোজা ১০ গুণ হয়ে ৩০০ দিনের সমান হয়। অবশিষ্ট ৫৪ বা ৫৫ দিনের জন্য আরও ছয়টি পূর্ণ রোজার প্রয়োজন হয়।

হজরত আয়িশা (রা.) বলেন, আমার ওপর রমজানের যে কাজা রোজা বাকি থাকত, তা পরবর্তী শাবান ব্যতীত আমি আদায় করতে পারতাম না। (বুখারি: ১৯৫০; মুসলিম: ১১৪৬)। এই হাদিস দ্বারা প্রমাণিত হয়, রমজানের ছুটে যাওয়া কাজা রোজা পরবর্তী রমজান মাস আসার আগে যেকোনো সময় আদায় করা যাবে। রমজানের কাজা রোজা রাখার জন্য সময় সংকীর্ণ না হলে তার আগে নফল রোজা রাখা বৈধ ও শুদ্ধ।সুতরাং সময় যথেষ্ট থাকলে ফরজ রোজা কাজা আদায় করার আগে নফল রোজা রাখতে পারবেন। তবে সম্ভব হলে আগে ফরজ রোজার কাজা আদায় করাই উত্তম। (ফাতাওয়া ইসলামিয়াহ, খণ্ড: ২, পৃষ্ঠা: ১৬৬)।

শাওয়াল মাসে কাজা রোজা আদায় করলে এবং এর সঙ্গে নফলের নিয়ত করলে ফরজ আদায়ের পাশাপাশি নফল রোজা (একের দ্বারা উভয়)
পালন হবে না। কারণ এটি যুক্তিযুক্ত নয়, বোধগম্যও নয় এবং নবী করিম (সা.) ও সাহাবায়ে কেরামের আমলও নয়।

মাসের যেকোনো সময় এই রোজা আদায় করা যায়। ধারাবাহিকভাবে বা মাঝে মাঝে বিরতি দিয়েও আদায় করা যায়। উল্লেখ্য, রমজান মাসে ফরজ রোজা ছাড়া অন্য সব রোজার নিয়ত সাহ্‌রির সময়ের মধ্যেই করতে হবে। ঘুমানোর আগে বা তারও আগে যদি এই দিনের রোজার দৃঢ় সংকল্প থাকে, তাহলে নতুন নিয়ত না হলেও চলবে এবং সাহ্‌রি না খেতে পারলেও রোজা হবে। (ফাতাওয়া শামি)।

হজরত আয়িশা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিস দ্বারা প্রমাণিত: শাওয়াল মাসে বিয়েশাদি সুন্নত, যেরূপ শুক্রবারে জামে মসজিদে ও বড় মজলিসেআক্‌দ অনুষ্ঠিত হওয়া সুন্নত। কারণ, মা আয়িশার বিয়ে শাওয়াল মাসের শুক্রবারে মসজিদে নববিতেই হয়েছিল। (মুসলিম)।

শুভ কাজের শুভ সূচনার জন্য এ মাসটি খুবই উপযোগী। এ মাসে বিভিন্ন ইসলামি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান তাদের কর্ম বছর শুরু করে থাকে। ইসলামি ধর্মীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো এ মাসে তাদের শিক্ষাবর্ষের নতুন ভর্তি ও নব পাঠদান আরম্ভ করে।


Pages: 1 [2] 3 4 ... 7