Daffodil International University

Health Tips => Health Tips => Blood Pressure => Topic started by: taslima on October 15, 2016, 01:18:44 PM

Title: রক্তঃ চিরসুস্থতার আসল উপায়
Post by: taslima on October 15, 2016, 01:18:44 PM
রক্তঃ চিরসুস্থতার আসল উপায়
আমরা সবাই সুন্দর থাকতে চাই,চিরসতেজ থাকতে চাই,ধরে রাখতে চাই যৌবনের ঐশ্বর্য। কিন্তু কিভাবে? সুন্দর থাকা মানে কি? ‘সুন্দর থাকা’ বলতে বোঝায় টান টান সুস্থ চামড়া! চকচকে চুল, সুস্থ সবল দাঁত, দৃপ্ত দৃষ্টি, ক্ষিপ্র শরীর, সপ্রতিভ ধারালো বুদ্ধি? বয়স ক্রমশ এইগুলি আক্রমণ করে একযোগে, তখন ক্রমশ কমে যায় রূপের প্রভা, বুদ্ধির দীপ্তি, যাকে আমরা বলি বুড়ো হওয়া, বার্ধক্য, জরার গ্রাস। অথচ জরাকে রূখে দেওয়া যায়, প্রলম্বিত করা যায় যৌবনের রং, বাইরে থেকে ত্বক মেরামতি নয়, প্রয়োজন শুধু রক্ত শুদ্ধ রাখা, সতেজ রাখা। কেননা রক্ত থেকেই তৈরি হয় শরীরের অধিকাংশ কলকব্জা Ñ নতুন ত্বক, নতুন নখ, নতুন চুল, নতুন যৌন প্রবাহ, নতুন আগ্রহ, নতুন আকাঙ্খা Ñ সবই রক্তে খেলা। জানা থাকলে আপনি নিজেই সিদ্ধান্ত নিতে পারেন কী ভাবে কতটুকু লাইফস্টাইল বদলে অন্তত করতে পারেন বেঁচে থাকার সকল মজা, সমস্ত আনন্দ।
রক্তের তেজ মানে কী
বয়স হয়েছে তো রক্তের জোর কমে গেছে, আগের মতো আর খাটতে পারি না। ‘ রক্তের আর তেজ নেই, চোখের জ্যোতিও কমে গেছে, দম ফুরিয়ে আসে তাড়াতাড়ি।…. খুব চেনা এই কথাগুলো আসলে এদেশের সাধারণ বয়স্ক মানুষের শ্বাশ্বত সংলাপ। একদিন আমাদের কন্ঠেও শোনা যাবে এ ধরণের সংলাপ। পৃথিবীর সমস্ত অঞ্চলের সভ্য মানুষের মধ্যে সেই সুদুর অতীতেই ধারণা তৈরি হয়ে গিয়েছিল, রক্তের জোরই শরীরও মনের আসল জোরের উৎস।’ রক্তের জোরেই যৌবনে মানুষ থাকে প্রাণ চঞ্চল, কর্মক্ষম, রক্তের তেজ কমে এলেই জরা ব্যাধি গ্রাস করে শরীরকে। জাতি ধর্ম দেশ কাল নির্বিশেষে পৃথিবীর সকল মানুষের মনেবদ্ধমূল ধারণাÑবীরত্ব, পরিশ্রম বা আরও সঠিক অর্থে যৌবনের বার্তা বয়ে আনে রক্ত। এই দার্শনিক ধারণাটির মূল কিন্তু সত্যিই বৈজ্ঞানিক। আর বিজ্ঞান এখন জানিয়েছে রক্তই জীবন, রক্ত ধারাই মাদল বাজায় যৌবনের কিন্তু সত্যিই কি রক্তেই যৌবন?
রক্তের মধ্যেই লুকিয়ে আছে তা জানতে হলে আমাদের জানতে হবে রক্তের জন্মবৃত্তান্ত, রক্ত কী, কেন এবং কী করে আমাদের রূপ যৌবন নিয়ন্ত্রণ করে এই লাল নদী। রক্তের বিভিন্ন উপাদানের মধ্যে অন্যতম তিনটি, লোহিত কণিকা, শ্বেত কণিকা এবং প্লাজমা। লোহিত কণিকার হিমোগ্লোবিন নামের লৌহঘটিত জটিল যৌগটি কোষে কোষে নিরন্তর অক্সিজেন সরবরাহ করে ও কার্বনডাইঅক্সাইডমুক্ত করে, শ্বেত কণিকা সদা জাগ্রত সীমান্ত প্রহরীর মতোই শরীরকে নানা রোগজীবাণুর হাত থেকে বাঁচায়। আর রক্তরস বা প্লাজমায় অবস্থিত কিছু প্রেটিন কোষে কোষে জোগান দেয় পুষ্টির সম্ভার। বয়স বাড়লে এই তিনটি উপাদানের পরিমানগত কোনও তারতম্য হয় না, কিন্তু কমতে থাকে গুণগত মান।
নিরন্তর বিপাক ক্রিয়ার ফলে উৎপন্ন প্রি র‌্যাডিক্যালসের সংখ্যার বৃদ্ধিই গুণগত মান নেমে যাওয়ার কারণ। একই সঙ্গে শ্বেতকণিকার যুদ্ধ করার ক্ষমতা কমে যায়, প্লাজমার প্রোটিন অনুগুলিও বিপাক ক্রিয়ায় আগের মতো সাহায্য করে না। ৪৫ থেকেই এই পিছিয়ে পড়ার পালা শুরু হয়। দূরে সরে যেতে থাকে যৌবন। নেমে আসে বার্ধক্যের মেঘলা আকাশ।
দীর্ঘজীবনের রহস্য
কোথায় লুকিয়ে আছে শতায়ূ মানুষদের দীর্ঘজীবনের রহস্য? কোথা থেকে তারা পান বাড়তি রক্তের তেজ? একটু খোজ নিলেই দেখা যাবে, এঁরা হয় আজীবন অথবা বহু বছরের ফলাহারী, নিরামিষাশী। নেশা এদের কাছে বিষবৎ। আসলে ফলমূল শাকসবজিতে থাকা পর্যাপ্ত অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এদের রক্তের জোর বাড়ায়। আজকের এই ব্যস্ততার যুগেও ধূমপান ও নেশা করার বদভ্যাস ছেড়ে, ডায়েটে একটু টাটকা শাকসবজি, ফলমূলের পরিমাণ বাড়িয়ে, কিছু এক্সারসাইজ ও মেডিটেশন করে, আর একটু টেনশন-মুক্ত দিন কাটাতে পারলে রক্তের গুণগত মানও অনেকদিন ভাল থাকবে। শুধু মনে নয় শরীরেও থাবেন তরতাজা।

সন্তান ধারণ ও রক্ত
সন্তান ধারণ মেয়েদের জীবনের এক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। এ সময়ে শরীরে আসে নানা পরিবর্তন। গর্ভস্থ শিশুর প্রয়োজনীয় পুষ্টি ও অক্সিজেনের চাহিদা পূরণ করে মায়ের রক্ত। ভ্রুণের বৃদ্ধি পুষ্টিসব কিছুই যায় মায়ের শরীরের মাধ্যমে। তাই প্রকৃতিই হবু মাকে সুরক্ষিত করেছে। মায়ের রক্তের পরিমাণ গর্ভাবস্থায় ৩৫ থেকে ৪০ শতাংশ বেড়ে যায়। এই অবস্থায় রক্তের হিমোগ্লোবিন কমে গেলে তা মা ও শিশু দু’জনের শরীরের পক্ষেই ক্ষতিকর। প্রসূতির রক্তে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ হওয়া উচিত ১১ গ্রাম পার্সেন্ট। এই পরিমাণ ঠিক রাখতে গর্ভাবস্থার শুরু থেকে ফলিক অ্যাসিড খেতে হবে নিয়মিত। সবচেয়ে ভাল হয় প্রি-প্রেগনেন্সি কাউন্সেলিংয়েরপর সন্তান ধারণের সিদ্ধান্ত নিতে হবে। গর্ভস্থ ভ্রƒণের পুষ্টির জন্য বাড়তি রক্ত ছাড়াও প্রসবের সময়ও মায়ের শরীর থেকে যথেষ্ট পরিমাণে রক্তপাত হয়। স্বাভাবিক প্রসবে ৫০০-৭০০ মিলি রক্ত বেরিয়ে যায়। অন্য দিকে সিজারিয়ান প্রসবে রক্ত বেরিয়ে যায় ৭৫০ মিলিথেকে-১ লিটার পর্যন্ত। [ *আজকাল বেশির ভাগ শিশু পৃথিবীতে পদার্পন করে অসময়ে বিজ্ঞ ডাক্তারের ছুরির আচঁড়ে।] এছাড়া প্রসবের পর ঋতু স্রাব তো আছেই। তাই এসময়ে রক্তের উপাদানগুলির তারতম্য হয়ে এক দিকে শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে, অল্পেই হাঁপিয়ে উঠতে হয়, তেমনিই গর্ভস্থ ভ্রƒণের বৃদ্ধি ঠিকমত হয় না বা প্রসবের পরে মায়ের দুধ থেকে শিশু যথাযথ পুষ্টি পায় না। মিউট্রিশনাল ডেফিসিয়েন্সি অ্যানিমিয়ায় ভুগতে থাকে মেয়েটি। ফলে এক দিকে কর্মক্ষমতা কমে যায় ও একই সঙ্গে অন্য দিকে মেয়েটি চট করে বুড়িয়ে যায়। সুষম খাবারে প্রতিদিন ১৫ মিগ্রা আয়রন পাওয়া যায়। এর ১.৫ মিগ্রা শরীরে শোষিত হয়। কিন্তু গর্ভাবস্থায় এই পরিমাণ অনেকটাই বেড়ে যায়। প্রতিদিন ৩-৬ মিগ্রা আয়রণ প্রয়োজন হয় যা শুধুমাত্র খাবার থেকে পাওয়া মুশকিল। সুতরাং গর্ভাবস্থায় আয়রন ট্যাবলেট খেতে হবে। একই সঙ্গে লেবু ও অন্যান্য টকজাতীয় ফল খেলে এতে থাকা ভিটামিন সি আয়রন শোষণে সাহায্য করে।
রক্ত ও রক্তচাপ
অ্যানিমিয়ার সঙ্গে রক্তচাপ বাড়া-কমার কোনও সম্পর্ক নেই। তবে প্রচুর রক্তপাত হলে রক্তচাপ কমে যেতে পারে হু হু করে। আবার অন্যদিক থেকে বলতে গেলে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ না করলে বিপদ আসতে পারে আচমকা।
রক্ত চাপ কী
রক্তচাপের প্রসঙ্গ সিস্টোলিক এবং ডায়াস্টোলিক এই দুটো শব্দ প্রায়ই শোনা যায়। চিকিৎসা বিজ্ঞানের মতে ডায়াস্টোলিক রক্ত চাপ ৮০ মিমি পারদ স্তম্ভের সমান এবং সিস্টোলিক ১২০ মিমি। হার্ট যেভাবে পাম্প করে রক্তকে ধমনীতে পাঠায় তা হল সিস্টোলিক চাপ। আর ধমনীর প্রাচীর রক্তকে যে চাপে আটকে রাখতেপারে তা হল ডায়াস্টোলিক প্রেসার। আগে মনে করা হত বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে রক্তচাপ বেড়ে যাওয়াটা স্বাভাবিক। কিন্তু এখন প্রমাণিত হয়েছে বয়স বাড়লেই রক্তচাপ বাড়বে তা মোটেও স্বাভাবিক নয়। তবু রক্তচাপের ব্যাপারে তিনটি ভাগ আছে আদর্শ রক্তচাপ ৮০/১২০, অপটিমাম ব্লাডপ্রেশার ৮০/১৩০, ম্যাক্সিমাম ৮৫/১৪০, কিছু কিছু অসুখের কারণে রক্তচাপ বেড়ে যেতে পারে, যেমন কিডনির সমস্যায় রক্তচাপের তারতম্য হয়। অনেকের ধারণা রক্তচাপ কম থাকলে মানুষ অসুস্থ ও দুর্বল হয়ে পড়ে। ব্যাপারটা ঠিক তা নয়। বংশগতভাবে অনেকের রক্তচাপ স্বাভাবিকের তুলনায় অনেক কম থাকে। যেমন কারও কারও সারা জীবনই ৭০/১০০। এর জন্য বেশি খাবারদাবার বা টেংরার ঝোল বা আধসিদ্ধ ডিম খাওয়ার প্রয়োজন নেই। কিন্তু যদি কারও স্বাভাবিক প্রেশার ৮০/১২০ থাকে, এবং হঠাৎ প্রচুর রক্তচাপ বা অন্য কোনও কারণে তা থেমে গিয়ে ৬৫/৯৫ হয়ে যায় তখন কিন্তু অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত। রক্তচাপ হঠাৎ নেমে গেলে ওষুধ খেতে হয়। উচ্চ রক্তচাপ থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শে নিয়মিত ওষুধ খেয়ে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করা দরকার। অনিয়ন্ত্রিত রক্তচাপ থেকে আচম্বিতে হার্ট এ্যাটাক অর্থাৎ বা সেরিব্রাল অ্যাটাক অর্থাৎ ষ্ট্রোক হতে পারে। এছাড়া অনিয়ন্ত্রিত রক্তচাপ শরীরের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গকে বিকল করে দিতে পারে। রক্তচাপের রোগীদের সবসময় নুন কম খেতে বলা হয়, নুনের সোডিয়াম রক্তচাপ বাড়িয়ে দেয়।
রক্তের আয়না:ত্বক
আগে কথায় কথায় এত পরীক্ষা-নীরিক্ষা করার চল ছিল না তখন ত্বক দেখেই অনেক রোগ নির্ণয় করা হত। ডাক্তার বাবুর কাছে গেলেই জিব বের করে,চেখের নীচের পাতা টেনে, নখ উলটে পালটে দেখতেন। কারণটা নিশ্চয় বুঝতে অসুবিধা হচ্ছে না। ফ্যাকাশে জিব, সাদাটে চোখ বা ফাটা নখ দেখে চিকিৎসক অনুমান করতেন রোগীর রক্তাল্পতা আছে কি না। হ্যাঁ, রক্তের তেজ কম থাকলে প্রথমেই তারছাপ পড়ে ত্বকে। ত্বক খসখসে, ম্যাড়ম্যাড়ে, ছাল ওঠা দেখায়, নি®প্রভ লাগে, বুড়োটে দেখায়। ত্বকের প্রয়োজনীয় উপাদান প্রোটিন, লোহা, ভিটামিন মিনারেলের ঘাটতি হলেই ত্বক নি®প্রভ হয়ে পড়ে। শুধু তাই নয়, রক্তের আর এক উপাদান হল পানি। শরীরে পানির অভাব হলেও কিন্তু রক্তের জোর কমে যেতে পারে। ত্বক শিথিল হয়ে যায়, টানটান ভাব চলে যায়। সুন্দর থাকতে গেলে শুধু ত্বকের যতœ নিলেই হবে না, যতœ নিতে হবে রক্তেরও। টাটকা তাজা ফলমূল, শাকসবজি, চিকেন, মেটে মাছ, সুষম খাবার খেতে হবে। দিনে আড়াই থেকে তিন লিটার পানি পান করা জরুরি। মনটাও রাখতে হবে টেনশন ফ্রি, এ জন্য নিয়মিত ধ্যান করা জরুরি।
কেন রক্তের রোগে ত্বক নিষ্প্রভ
ত্বকসহ শরীরের যাতীয় অঙ্গকে পুষ্টি ও অক্সিজেন সরবরাহ করে বাঁচিয়ে রাখে রক্ত। ত্বকের বিভিন্ন অংশের মধ্যেসারকিউটেনিয়াস ডারমিস স্তরে থাকে অজস্র ্রসূক্ষ্ম রক্তবাহী জালিকা। ডাক্তারি পরিভাষায় একে বলে ডারমাল ক্যাপিলারি। এর মাধ্যমে ত্বকের বিভিন্ন অংশ পুষ্টি পায়। হেয়ার ফলিকল থেকে শুরু করে সোয়েট গ্ল্যান্ড, সিবেসাস গ্ল্যান্ড সব কিছুকেই সুস্থ রাখে রক্ত। রক্তের সমস্যা হলে বিশেষত অ্যানিমিয়ায় রক্তের অক্সিজেন বহন করার ক্ষমতা কমে যায়। ফলে পর্যাপ্ত অক্সিজেন ও পুষ্টির অভাবে ত্বকের স্বাভাবিক জৌলুস চলে যায়। সিবেসাস গ্ল্যান্ড ঠিকমত কাজ না করায় ত্বকের তৈলাক্ত ভাব চলে গিয়ে খসখসে হয়ে পড়ে। চুলের গোড়াতেও ঠিকমত পুষ্টি না যাওয়ায় চুল বিবর্ণ হয়ে যায়। প্রয়োজনীয় ভিটামিন মিনারেলের অভাবে চুল ভঙ্গুর হয়ে পড়ে। প্রচুর পরিমাণে চুল উঠে যায়। ত্বকে কালচে ছোপ পড়ে র‌্যাশ বেরোয়, আরও নানারকম সমস্যা দেখা দেয়।

রক্তের রোগ ও ত্বক
আমাদের গায়ের রং কি রকম হবে তা নির্ভর করে ত্বকের নীচে থাকা মেলানোসা-ইট কোষের উপর। আমাদের দেশের মানুষের কাছে শ্বেতী এক মারাত্মক অসুখ। কিন্তু চিকিৎসকরা এই ব্যাপারটাকে ঠিক বড়সড় অসুখের পর্যায়ে ফেলেন না। যাই হোক, পার্নিসাস অ্যানিমিয়া নামক রক্তের অসুখে ত্বকে মেলানেসাইট কোষ তৈরি হতে পারে না। তাই এ রোগের যথাযথ চিকিৎসা না করলে শ্বেতী হতে পারে।
# অনেকের ত্বকে একটাও মেলানোসাইট কোষ থাকে না, এদের এ্যারবিনো বলা হয়। অ্যানিমিয়া অনেক সময় অ্যারবিনোর কারণ হতে পারে।
# অ্যানিমিয়া থেকে সোরিয়াসিস নামে এক ধরনের ত্বকের ওপর থেকে আঁশের মতো ছাল ওঠে, সারানো মুশকিল।
# অ্যানিমিয়া থেকে ত্বকের রং কালো হয়ে যায়। মেচেতা ও পিগমেন্টেশন হতে পারে।
# রক্তের উপাদানের তারতম্য হলে জিবের স্বাদ-কোরক বা প্যাপিলা নষ্ট হয়ে যেতে পারে। এর ফলে কিছু খেতে গেলেই জিব জ্বালা করে।
# রক্তের অসুখে চুল উঠে টাক পড়ে যেতে পারে। চুল হয়ে ওঠে ভঙ্গুর। চুলের বাড়বৃদ্ধি থেমে যায়। চুলের রং ফ্যাকাশে হয়ে যায়।
# রক্তহীনতায় পায়ের গোড়ালি ফেটে যায়।
# ত্বকের নান সংক্রমণও কিন্তু হয় রক্তের ত্র“টির জন্য। বিভিন্ন ফোড়া, ফুসকুড়ি ছত্রাকের সংক্রামণের প্রবণতা বাড়ে।
# রক্তের উপাদানের তারতম্য হলে বা রক্তে কোনও ভিটামিন মিনারেলস বা লোহার অভাব হলে তার প্রভাব পড়ে নখেও। বলাই বাহুল্য, নখ ত্বকেরই একটি অংশ। নখের স্বাভাবিক ঔজ্জ্বল্য চলে যায়, ম্যাড়ম্যাড়ে আর ফ্যাকাশে হয়ে যায়।
# নখের ভার্টিকাল রিজিং হয় অর্থাৎ লম্বাটে হয়ে ফেটে যায়।
# নখে সাদাটে স্পট হয়, নখের কোণে পাঙ্গাল ইনফেকশন হয়।
# রক্তে ক্রনিক ও বেশি রকমের অসুখে নেলবেড অর্থাৎ নখের মাংসের ওপর থেকে নখ খুলে আসে। সুতরাং রক্তের সমস্যা হলে বাইরে থেকে ত্বকের যতœ না নিয়ে সুষম খাবার খেয়ে প্রয়োজনে ভিটামিন, আয়রন খেয়ে রক্তকে ভাল করতে হবে।
রক্ত ভাল রাখতে কী খাবেন
রক্তের উপাদানগুলির মধ্যে সবচেয়েগুরুত্বপূর্ণ হিমোগ্লোবিন। কেননা হিমোগ্লোবিনই আমাদের প্রাণবায়ূ অক্সিজেন কোষ থেকে কোষান্তরে পৌঁছে দেয়। পুষ্টির যোগান দেয়। সতেজ রাখে শরীরে যাবতীয় কোষকলাকে। আমাদের কাজ করার ক্ষমতা সর্বোপরি ‘দম’ মূলত নির্ভর করে এই অক্সিজেনের ওপর। শরীরে অক্সিজেনের ঘাটতি হলেই আমাদের দম ফুরিয়ে যায়, চট করে হাঁপিয়ে পড়ি। সোজা কথায় কার রক্তের জোর বেশি তা কিন্তু মূলত নির্ভর করে হিমোগ্লোবিনের ওপর। তা ছাড়া অন্যান্য উপাদান তো আছে।হিমোগ্লোবিনের দু’টি অংশ ‘হিম’ অর্থাৎ আয়রন বা লোহা এবং এবং ‘গ্লোবিন’ অংশ তৈরি প্রেটিন নিয়ে। অবশ্য শুধু হিমোগ্লেবিনই নয়, লোহিতকণিকা থেকে শুরু করে রক্তের বেশিরভাগ অংশই প্রেটিন নিয়ে তৈরি। তাই রক্তের জোর বজায় রাখতে আয়রন খাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রোটিন খাওয়াও জরুরি। বাঙালির স্বাভাবিক খাওয়া দাওয়া যেমন ভাত, মাছ, ডাল সবজি ইত্যাদি থেকে প্রয়োজনীয় প্রেটিন পেয়ে যাই; কিন্তু এর থেকে অনেক সময় আয়রন বা লোহার জোগান ঠিকমত আসে না, বিশেষত মেয়েদের। যেহেতু তাদের মাসিক ঋতুচক্র,সন্তান ধারণ ইত্যাদি বিভিন্ন কারণে রক্তপাত হয়। এই ঘাটতিপূরণ করতে বাড়তি লৌহযুক্ত খাবার খাওয়া আবশ্যক। না হলে অ্যানিমিয়া বা রক্তাপ্লতার সম্ভাবনা থেকে যায়।
[* মেয়েদের কাচাঁ ফলমূল অল্প কিন্ত বারে বারে খেতে হবে, দুধ, ডিম, কলা, পেপেঁ মৌসুমি ফলফলাদি প্রয়োজন।]

কার কতটা লোহা দরকার
একজন প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষের ৭ মিগ্রা/দৈনিকএকজন প্রাপ্তবয়স্ক মহিলার ১১ মিগ্রা/দৈনিক প্রি-মেনোপজল নারীর ১২-১৬ মিগ্রা/ প্রতিদিন পোস্ট মেনোপজাল নারীর ৫-৭মিগ্রা/প্রতিদিন গর্ভাবস্থায় এই চাহিদা বেড়ে দাঁড়ায় দৈনিক ৫৫০ মিগ্রাভাগটা এই রকম; ভ্রƒণের প্রয়োজন-৪০০ মিগ্রা প্লাসেন্টার ১০০ মিগ্রা ইউটেরজিন মাসলের-৫০ মিগ্রা সন্তানের জন্মের পর স্তন্যদানের সময়ে মায়ের শরীরে আয়রনের চাহিদা বেড়ে যায়। তাই মেয়েদের জীবনে রক্তের উপাদান যথাযথ রাখতে আয়রন-সমৃদ্ধ খাবারের ভূমিকা গুরুত্বপুর্ণ।

ভিটামিন সি জরুরি
আয়রন-যুক্ত খাবার খেলেই হবেনা, তা ঠিকঠাক শরীরের কাজে লাগছে কি না সে দিকেও নজর রাখা উচিত। অনেকের মনে একটা ভুল ধারণা আছে, গর্ভাবস্থায় বা প্রসবের পরে টকফল খেলে শরীর খারপ হয়, রক্ত পানি হয়ে যায় ইত্যাদি। বলাই বাহুল্য, এ সবের কোনও যুক্তি নেই। বরং ভিটামিন-সি আয়রন অ্যাবজরপশন করতে সাহায্য করে। টকজতীয় ফলে ভিটামিন সি থাকে অত্যন্ত বেশি। মধ্যাহ্ন ভোজনের আগে কমলালেবু বা মুসম্বির রস বা খাওয়ার পরে আমলকির টুকরো, পাতিলেবু ইত্যাদি খাবার খেলে এই সব ফলে থাকা সাইট্রিক এসিড আয়রন শোষণে সাহায্য করে।

মাছের ঝোলে কাঁচকলা খাবেন না
অনেকের ধারণা কাঁচকলা দিয়ে টাটকা মাছের ঝোল খেলে,গায়ে রক্ত হয়। কেননা কাঁচকলায় প্রচুর আয়রন থাকে। একই রকম ধারণা, ডুমুর,থোড়, বা মোচা সম্পর্কেও। জেনে অবাক হবেন, এই সমস্ত সবজিতে থাকে প্রচুর পরিমাণে ট্যানিন বা ট্যানিক এসিড, যা আয়রন অ্যাবজরপনে বাধা দেয়। তাই মাগুর বা সিঙি মাছের সঙ্গে কাঁচকলা দিয়ে ঝোল রাঁধলে মাছের আয়রনটাও শরীরে শোষিত না হয়ে বেরিয়ে যাবে। ডুমুর ,থোড়, মোচা খেতে পারেন, কিন্তু এতে রক্ত তৈরী হবে না বা অ্যানিমিয়া দূর হবে না একথা গ্যারান্টি দিয়ে বলা যায়। এ প্রসঙ্গে আরও একটা কথা জেনে রাখুন, অনেকেরই বার বারে চা পানের অভ্যেস আছে। লাঞ্চ বা ডিনারের আগে পরে চা খাবেন না। কেননা চায়ে থাকা ট্যানিন খাবারের আয়রন মলের সঙ্গে শরীরের বাইরে বের করে দেয়। নিতান্ত যদি খেতেই চান খাবার খাওয়ার অন্তত এক ঘন্টা পরে চা পান করুন।

আয়রন-সমৃদ্ধ খাবারদাবার
শাকে সবচেয়ে বেশি আয়রন পাওয়া যায়। পালংশাক সহজপাচ্য ও আয়রন-সমৃদ্ধ। এ ছাড়া নটে শাক, কুমড়ো শাক ইত্যাদি সব টাটকা শাকেই পর্যাপ্ত পরিমাণে আয়রন থাকে। ফুলকপির পাতাও অত্যন্ত আয়রন সমৃদ্ধ। এছাড়া শালগম, তেতুঁল, হলুদ সব রকমের তাজা শাকসবজিতে লোহা আছে। এ ছাড়া ঢেঁকিছাটা চাল, ডাল, গম, মাছ, নারকেল, সয়াবিন, টোসু (সয়াবিনের ছানা), চিকেন, মেটে, মাংস, চিংড়ি,তোপসে মাছ ইত্যাদিতে প্রচুর পরিমাণে আয়রন আছে। রোজকারের খাবারে এই সব খাবার নিয়মিত খেলে অ্যানিমিয়ার সম্ভাবনা অনেকটাই কমে। এ ছাড়া আগেকার নিয়ম অনুযায়ী লোহার কড়াইতে রান্না করলে কিছুটা বাড়তি আয়রন তো পাওয়া যায়ই।
রক্তের জোর বাড়াতে মিক্স ডায়েট
রক্ত ভাল রাখতে শুধুই যে আয়রন যুক্ত খাবার খেলেই হল তা কিন্তু নয়। ফাইবার-যুক্ত খাবার, দুধ,সিরিয়াল, ভিটামিন সি ইত্যাদি আয়রন শোষণে সাহায্য করে। তাই রক্তের উপাদান যথাযথ রাখতে মিক্স ডায়েট করাই বাঞ্ছনীয়। তাই ঢেঁকিছাটা চালের ভাত,ডাল, সবজি,স্যালাড,মাছ বা চিকেন,দই বা দুধ ইত্যাদি খেলে রক্ত ভাল থাকবে। বার্ধক্যকে কিছুকাল ঠেকিয়ে রাখতে পারবেন। তবে শুধু খেলেই হবে না, নিয়ম করে এক্সারসাইজ ও ধ্যান করতে হবে। আর যাই খান,একগাদা খেয়ে মেদ বাড়তে দেবেন না। বেশি ভাজাভুজি ও ঘি-মাখন খাওয়া মানা। পানি খেতে হবে বেশি করে। ধূমপান, মদ্যপান, বা অন্যান্য নেশাও রক্তের জোর কমিয়ে বার্ধক্য ডেকে আনে অকালে।

ফল ও রক্ত
ফলে থাকা অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট, বিভিন্ন ভিটামিন ও মিনারেল শরীর ভাল রাখতে সাহায্য করে। কিন্তু ‘বেদনা খেলে রক্ত হয়’ এই ধারণাটা সত্যিই অযৌক্তিক। সত্যি কথা বলতে, কোনও ফলেই সেরকম উল্লেখযোগ্য পরিমানে আয়রন নেই। কিন্তু ফলের ভিটামিন সি আয়রন শোষনে সাহায্য করে।

http://roudrodin.com/wp/blood-way-of-health
Title: Re: রক্তঃ চিরসুস্থতার আসল উপায়
Post by: Anuz on November 03, 2016, 09:39:21 AM
Informative..........
Title: Re: রক্তঃ চিরসুস্থতার আসল উপায়
Post by: smriti.te on November 22, 2016, 01:04:11 AM
Informative post....