Show Posts

This section allows you to view all posts made by this member. Note that you can only see posts made in areas you currently have access to.


Topics - habib

Pages: 1 [2] 3 4 ... 8
16
এশিয়া কাপ মাতিয়েছেন সাব্বির রহমান, এখানে প্রথম দুই ম্যাচেই দারুণ দুটি ইনিংস খেলেছেন তিনি নিজে (তামিম ইকবাল) । তার পরও কাল ধর্মশালায় উৎপল শুভ্রকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে তামিম ইকবাল দাবি করলেন, টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশ দলের সেরা ব্যাটসম্যান তাঁরা কেউই নন!

২২ গজে তামিম যখন ছন্দে l

*ব্যাটসম্যানদের কখনো কখনো এমন একটা সময় আসে, যখন ব্যাটিং করাটা খুব সহজ মনে হয়। আপনার কি এখন সেই সময় চলছে?
তামিম ইকবাল: সেই সময় বা সেরা সময়, যা-ই বলুন আমি ঠিক জানি না। তবে এটা জানি, ভালো ব্যাটিং করছি। মূল কথা প্ল্যান, প্ল্যানটা ভালো থাকলেই ব্যাটিংও ভালো হয়। মাঠে প্ল্যানটা ঠিকভাবে কাজে লাগাতে পারাটাই আসল।

* সাম্প্রতিক সময়ের কথা যদি বলি, সেই প্ল্যানটা কী? এটা নিশ্চয়ই প্রতিপক্ষ, ম্যাচের পরিস্থিতি অনুযায়ী বদলে যায়...
তামিম: তা তো যায়ই, তবে এখন আমি যতটা সম্ভব শান্ত থাকার চেষ্টা করি। হঠাৎ করে তাড়াহুড়ো করতে গেলে শট যা পারি তা না মেরে ওই শট মারতে হবে, জোরে মারতে হবে এসব মাথায় চলে আসে। রান করার অনেক সুযোগ উল্টো হাতছাড়া হয়ে যায়। তা ছাড়া টি-টোয়েন্টি এমন দ্রুতলয়ের খেলা যে, মাথা খুব ঠান্ডা রাখতে হয়।
 
* এটা তো সবাই জানে, কিন্তু জানা আর করা ভিন্ন ব্যাপার। তা করতে ভিন্ন কিছু কি করছেন, মেডিটেশন-জাতীয় কিছু?
তামিম: আমি নিজের সঙ্গে কথা বলি। নিজেই নিজেকে বলি—শান্ত থাকো, শান্ত থাকো। দলের অনেক সিনিয়র আমাকে মেডিটেশন করতে বলেছে। বিশ্বের সব বড় অ্যাথলেটই এটি করে। আমিও হয়তো করব, তবে আপাতত এমন কিছু করছি না।

* টি-টোয়েন্টিতে আপনার রেকর্ড খুব ভালো ছিল না। ইদানীং যে ভালো খেলছেন, সেই রহস্যটা কী?
তামিম: টি-টোয়েন্টি নিয়ে আমার খুব হতাশা ছিল। আসলেই ভালো করছিলাম না। কোচের সঙ্গে অনেক কথা বলেছি। উনি আমাকে ভালো কিছু পরামর্শ দিয়েছেন। গত বিপিএলে কঠিন উইকেটে খেলাটাও খুব কাজে এসেছে। কঠিন উইকেটে আপনি যা খুশি তা করতে পারবেন না। নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। সবচেয়ে বড় কথা, আমি এখন টি-টোয়েন্টিটা উপভোগ করতে শুরু করেছি। কোনো কিছু উপভোগ না করলে ভালো করা যায় না।

* আমরা তো আমাদের মতো বুঝি। আপনার চোখে টেস্ট-ওয়ানডের তুলনায় টি-টোয়েন্টির ব্যাটিংয়ে মূল পার্থক্যটা কী?
তামিম: কয়েক দিন আগে বিরাট কোহলির একটা ইন্টারভিউ দেখছিলাম। ও বলছিল, আমি বিগ হিটার না। গায়ে এমন শক্তিও নেই যে, গেইলের মতো প্রথম বলেই ছক্কা মেরে দেব। আমি তাই প্রপার ক্রিকেট শটই খেলি। টেস্টে যেমন খেলি, তেমনই খেলি। কোহলির ওই কথাটা থেকে আমি অনেক কিছু শিখেছি। টি-টোয়েন্টিতে ওর গড় ৫০, এটা কিন্তু বিরাট ব্যাপার।
টেস্ট ম্যাচ আলাদা। ওটার সঙ্গে আমি তুলনাই করব না। ওখানে সময় পাওয়া যায়, সময় নিতে হয়। ওয়ানডে আর টি-টোয়েন্টি আমি একইভাবে দেখি। প্রথম বল ভালো হলে ঠেকাব, মারার হলে মারব। তবে টি-টোয়েন্টিতে একটু বাড়তি ঝুঁকি নিতে হয়। প্রথম ৬ ওভার পাওয়ার প্লেটা কাজে লাগাতে হয়।

* এই টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপটা তো আপনার দারুণ শুরু হলো। পরপর দুটি ভালো ইনিংস খেললেন...
তামিম: দেখেন, একটা টুর্নামেন্টে সবাই ভালো খেলে না। ২০১৫ বিশ্বকাপে যেমন রিয়াদ ভাই আর মুশফিক ভালো খেলেছে। সবাই সব সময় রান করবে না, এটাই নিয়ম। যারা করবে, তারা যদি প্রতি দ্বিতীয় ইনিংসে রান করে, তাহলে দলের কাজটা সহজ হয়।

* বিশ্বকাপ হলো সুপার স্টার হওয়ার সুযোগ। ২০১৫ বিশ্বকাপে দুটি সেঞ্চুরি যেমন অমর হয়ে গেছে। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ বলে কি ভালো করার তাড়নাটা একটু বেশি?
তামিম: তা তো অবশ্যই। টিমের প্রত্যেকের মধ্যেই এটি আছে। পুরো বিশ্ব দেখছে, ইডেন গার্ডেনের মতো বিখ্যাত সব স্টেডিয়ামে খেলা হবে। এখানে ভালো খেললে আনন্দটা অনেক বেশি হবে। আমি হয়তো আমার ক্যারিয়ারে ১০০টা ছয় মেরেছি, মানুষ কিন্তু এখনো একটা ছয় নিয়েই কথা বলে। জহির খানকে ত্রিনিদাদে মারা ওই ছয়টা। কারণ ওটা ছিল বিশ্বকাপ। আমি হয়তো ১০-১২টা সেঞ্চুরি করেছি। কিন্তু রিয়াদ ভাইয়ের দুটি সেঞ্চুরি আলাদা। কারণ তা ছিল বিশ্বকাপে। এখানে ভালো করলে সবাই তা মনে রাখে।

* আপনার আর সৌম্যর ভালো একটা শুরুর ওপর দলের আশা-নিরাশা দোলে। সৌম্য যে বড় রান পাচ্ছেন না, এটা নিয়ে সিনিয়র পার্টনার হিসেবে ওর সঙ্গে কোনো কথা বলেছেন?
তামিম: আমি আবারও বলি, সৌম্য হলো বাংলাদেশের ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ। মনে হয়, পাকিস্তানের বিপক্ষে প্রথম দুই ম্যাচে সেঞ্চুরি করার পর সংবাদ সম্মেলনে সৌম্যকে নিয়ে প্রশ্ন করায় আমি এই কথাটা বলেছিলাম। পরের ম্যাচেই ও সেঞ্চুরি করেছিল। এখনো আমি একই কথা বলব। এটা এমন একটা ফরম্যাট, যাতে একটা-দুটি ম্যাচে খারাপ করলেই প্রশ্ন তোলা উচিত নয়। ওর যে ক্ষমতা, বড় রান পাওয়াটা শুধু সময়ের ব্যাপার। মুশফিককে নিয়েও একই কথা বলব। ওরা ফর্মে ফিরলে আমাদের দলের অবস্থা কী হবে ভাবেন।

* মুশফিকের প্রসঙ্গটা আমিই তুলতাম। সম্প্রতি তিনি যে রান পাচ্ছেন না, আপনার ব্যাখ্যাটা কী?
তামিম: আমি জানতাম, হি ওয়াজ ডিউ টু ফেইল। গত ২-৩ বছরে সব ফরম্যাটে ও ছিল বাংলাদেশের সেরা ব্যাটসম্যান। এমন একটা সময় তো আসতে বাধ্য। তবে আমি এখনো মনে করি, ও বাংলাদেশের সেরা টি-টোয়েন্টি ব্যাটসম্যান। পিএসএলে ওকে যখন বসিয়ে রেখেছিল, কোচ মুশতাক আহমেদকেও এ কথাই বলেছি। ওর হাতে যে শট আছে, ওর যে ক্ষমতা, আমার কোনো সন্দেহই নেই, মুশফিকই টি-টোয়েন্টিতে আমাদের সেরা ব্যাটসম্যান।
 
* বাংলাদেশের সাম্প্রতিক সাফল্যে মাশরাফি বিন মুর্তজার অধিনায়কত্বের বড় ভূমিকা দেখেন সবাই। অধিনায়ক মাশরাফি সম্পর্কে আপনার কী মূল্যায়ন?
তামিম: এভাবে বলি, আমি যদি দল থেকে বাদ পড়ে যাই, কেউ না কেউ আমার জায়গা পূরণ করে ফেলবে। কিন্তু মাশরাফি ভাইয়ের জায়গা কখনো পূরণ করা যাবে না। উনি যখন অবসর নেবেন, বিরাট একটা শূন্যতা তৈরি হবে। উনি হয়তো নিয়মিত ৫ উইকেট নেন না বা ফিফটি করেন না, কিন্তু যেভাবে তরুণ খেলোয়াড়দের আগলে রাখেন, ভালো খেলি-খারাপ খেলি যেভাবে আমাদের উৎসাহ দেন, এটা স্পেশাল কোয়ালিটি। এটা সবার মধ্যে থাকে না। আমরা খুব লাকি যে, ওনার মতো একজনকে পেয়েছি।
 
* আপনি যত অধিনায়কের অধীনে খেলেছেন, মাশরাফিই কি সেরা?
তামিম: আমি ৬-৭ জন অধিনায়কের আন্ডারে খেলেছি। তুলনা করতে বললে শুধু মাহেলা জয়াবর্ধনের কথাই বলব। তবে জয়াবর্ধনের সঙ্গে যেহেতু আমি সবকিছু শেয়ার করতে পারি না, মাশরাফি ভাইয়ের সঙ্গে পারি, তাই ওনাকেই এগিয়ে রাখব। বিশ্বকাপে আমার কেমন অবস্থা হয়েছিল, আপনি তো জানেন। উনি তখন যা করেছেন, তা স্পেশাল।

* আপনার চোখে বিশ্বের সেরা টি-টোয়েন্টি ব্যাটসম্যান কে?
তামিম: বিরাট কোহলি ও এবি ডি ভিলিয়ার্স।

* দুজন তো দুই রকম। কোহলির দর্শনটা তো আপনিই বললেন। ও প্রথাগত, আর এবি ডি ভিলিয়ার্সের ব্যাটিং সব ব্যাকরণ ভেঙেচুরে দেয়...
তামিম: আসলেই তাই। তবে দুজনের মধ্যে যদি একজনকে আমার দলে নিতে হয়, আমি কোহলিকেই নেব।

17
‘বাংলাদেশ ক্রিকেটের জন্য আমার শুধু ভালোবাসাই আছে’

রমিজ রাজা
     
আমি মনে করি, বাংলাদেশ হ্যাভ টু টেক ইট ইজি। বাংলাদেশ দারুণ একটা ক্রিকেট জাতিতে পরিণত হচ্ছে, তবে সেটির সঙ্গে দায়িত্ববোধের ব্যাপারও চলে আসে ।

নানা সময়ে নানা মন্তব্যে বাংলাদেশে তুমুল বিতর্কিত তিনি। বাংলাদেশ-বিরোধী হিসেবেও একটা পরিচিতি হয়ে গেছে। কিন্তু কাল ধর্মশালা স্টেডিয়ামের ধারাভাষ্যকক্ষে উৎপল শুভ্রকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে রমিজ রাজা দাবি করলেন, তাঁকে ভুল বোঝা হয়েছে।

* মোহাম্মদ আমিরকে না ফেরানোর ব্যাপারে আপনার তো শক্ত অবস্থান ছিল। আমির তো ঠিকই ফিরলেন। আপনার কী প্রতিক্রিয়া?
রমিজ: আমার অবস্থান এখনো পরিষ্কার। ওই বিতর্কে আমার কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা ছিল না। পাকিস্তান ক্রিকেটের অন্ধকার একটা অধ্যায় আমি দেখেছি, ওই সময়টায় খেলেছি। আমিরের ব্যাপারে আমি যে অবস্থান নিয়েছিলাম, তা ছিল ক্রিকেট, আবেগ ও যুক্তির দৃষ্টিকোণ থেকে। আমি শুধু আমার মতটাই জানিয়েছিলাম। তার পরও আমির ফিরেছে, এখন ও মাঠে কেমন করছে, তা নিয়েই আলোচনা হওয়া উচিত। ওকে আবার দেশের পক্ষে খেলার সুযোগ দেওয়া হয়েছে, আমাকে ধারাভাষ্য দিতে হচ্ছে, আমি সেটি নির্মোহভাবে দেব। তবে কলঙ্কিত খেলোয়াড়দের আবার খেলায় ফেরানোর ব্যাপারটা আমার পছন্দ নয়।

* আমির যখন বোলিং করেন আর আপনি ধারাভাষ্যে, আপনার অপছন্দ বেরিয়ে এল, এমন কোনো চাপ কি অনুভব করেন?
রমিজ: মোটেই না। আমার কাজ হলো, আবেগ-টাবেগ সব বাদ দিয়ে মাঠে যা হচ্ছে তা বর্ণনা করা। আমি সেটাই করি।

* ফেরার পর আমিরের সঙ্গে কি দেখা হয়েছে?
রমিজ: না, হয়নি। খেলোয়াড়দের জগৎ আলাদা, আমাদের আলাদা। পেশাগত প্রয়োজন ছাড়া আমি ওদের সঙ্গে কথা বলতে যাই না।

* পেশাগত প্রয়োজনেই যদি কখনো আমিরের সাক্ষাৎকার নিতে হয়, নেবেন?
রমিজ: ওই যে বললাম, পেশায় আবেগের স্থান নেই।

* আমিরের দুর্দান্ত কামব্যাকে আপনি কি একটু বিস্মিত?
রমিজ: অবশ্যই বিস্মিত। ওর ওপর নিশ্চয়ই প্রচণ্ড চাপ ছিল। আমি ভেবেছিলাম, পাঁচ বছর নির্বাসনে থাকার ধাক্কা ও সামলাতে পারবে না। কারণ পাঁচ বছরে টি-টোয়েন্টি ব্যাটিং, ওয়ানডে ব্যাটিং অনেক বদলে গেছে। ও বরাবরই খুব স্মার্ট বোলার ছিল। শুধু ওই পাঁচ বছরের বিরতির ধাক্কা সামলানোই নয়, ওকে যখন পাকিস্তানের পক্ষে গুরুত্বপূর্ণ সময়ে বোলিং করতে হচ্ছে, ক্রিকেটীয় চাপ, পরিস্থিতির চাপ, দর্শকদের চাপ সবকিছুই একসঙ্গে সামলাতে হচ্ছে । ও দারুণভাবে তা সামলাচ্ছে।

* আপনি তো একসময় পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ছিলেন। এখনো তা থাকলে কি আমিরকে ফিরতে দিতেন?
রমিজ: আমার যদি ক্ষমতা থাকত, আমি খেলাটাকে কলঙ্কিত করা সব খেলোয়াড়কেই বের করে দিতাম। কারণ অনেক বছর ধরে এদের কারণে পাকিস্তান ক্রিকেটের অনেক ক্ষতি হয়েছে এবং এরা বরাবরই বেনিফিট অব ডাউট পেয়ে এসেছে। আমার কথা হলো, আমির ভুল করেছে, গুরুতর ভুল করেছে। কিন্তু স্যরি, আমাদের কিছু করার নেই। কারণ এটি খেলাটির সমর্থক ও দর্শকদের বিশ্বাসটা ধ্বংস করে দেবে। আমরা তা চাই না।

* আপনি শুনেছেন কি না পিএসএলে আপনাকে নিয়ে বাংলাদেশে বড় একটা বিতর্ক হয়েছে। পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে আপনি তামিম ইকবালের সাক্ষাৎকার নিতে গিয়ে জিজ্ঞেস করেছেন, “ইংলিশ অর হোয়াট?” যেটিকে অনেকের কাছেই মনে হয়েছে তামিমকে দিয়ে আপনি উর্দুতে কথা বলাতে চেয়েছিলেন...
রমিজ: (হাসি) ওরা পুরোপুরি ভুল বুঝেছে। তামিমকে আমি প্রশ্নটা করেছিলাম, কারণ আমি বাংলা বলতে পারি না। সে হয়তো উর্দু জানে না। তাহলে কী হবে—ইংলিশ না উর্দু? এটা ছিল খুব সাধারণ একটা ব্যাপার। কিন্তু পরে আমি বুঝেছি, এটিকেই অনেক বড় বানিয়ে ফেলা হয়েছে। এটা সত্যিই খুব দুঃখজনক। একটা নন-ইস্যুকে এমন বিশাল বিতর্কিত ব্যাপার বানিয়ে ফেললে সেটি নিয়ে দিনের পর দিন ব্যাখ্যা দিয়ে যাওয়া কঠিন।

* এর আগেও কি কেউ আপনার কাছে এর ব্যাখ্যা চেয়েছে?
রমিজ: না, কেউ একজন আমাকে এটা বলেছে।

* এমন তীব্র প্রতিক্রিয়ার একটা কারণ হলো, বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের মধ্যে যাঁরা ভালো ইংরেজি বলতে পারেন, তামিম সম্ভবত তাঁদের মধ্যে সবচেয়ে এগিয়ে। এটা তো আপনার জানা না থাকার কারণ নেই...
রমিজ: না, আমি জানতাম না। ওর সঙ্গে আমার পরিচয় ছিল না।

* আগে কখনো আপনি তামিমের ইন্টারভিউ করেননি?
রমিজ: না, করিনি।

* এই যে আপনি দাবি করছেন, একটা নন-ইস্যুকে বিরাট বিতর্কিত ব্যাপার বানিয়ে ফেলা হয়েছে, এ নিয়ে আপনার মন্তব্য কী?
রমিজ: আমি মনে করি, বাংলাদেশ হ্যাভ টু টেক ইট ইজি। বাংলাদেশ দারুণ একটা ক্রিকেট জাতিতে পরিণত হচ্ছে, তবে সেটির সঙ্গে দায়িত্ববোধের ব্যাপারও চলে আসে। বাংলাদেশকে এমন ভালো করতে দেখাটা দারুণ ব্যাপার, তবে একটা ভারসাম্য কিন্তু রাখতে হবে। সব সময়ই এমন আক্রমণাত্মক হয়ে থাকলে কীভাবে হবে? আমার মনে হয়েছে, বাংলাদেশের কিছু সমর্থক মনে করে পুরো বিশ্বই বাংলাদেশের বিপক্ষে। সবাই মিলে বাংলাদেশকে টেনে ধরার চেষ্টা করছে। এটা একদমই ঠিক নয়। আমাদের পেশাটা খুব স্বচ্ছ। ভালো কোনো পারফরম্যান্স দেখলে আমরা তা বর্ণনা করি, সেটির প্রশংসা করি, খুশিও হই। পারফরম্যান্স খারাপ হলে সেটিও আমাদের বলতে হবে। পাকিস্তানেও লোকজন মনে করে, আমি পাকিস্তানের স্বার্থ সেভাবে তুলে ধরি না। আমি বারবারই বলে এসেছি, আমার কাজ হলো যতটা সম্ভব নিরপেক্ষ থাকা। বাংলাদেশ আধুনিক মানসিকতার একটা জাতি, অর্থনীতি ও অন্য অনেক ক্ষেত্রেই খুব ভালো করছে। এখন এটা বোঝার সময় এসেছে যে, কারও কোনো মন্তব্য পছন্দ না-ই হতে পারে। সবকিছুতেই এমন তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখালে তাতে নিজেদেরই ক্ষতি।

* আপনি যা বললেন, বাংলাদেশ ক্রিকেটকে টেনে নামানোর চেষ্টা হচ্ছে, এমন একটা ধারণা কিন্তু বাংলাদেশে আছে। তাসকিন-সানির বোলিং অ্যাকশন নিয়ে প্রশ্ন তোলাটাকেও যেমন দেখা হচ্ছে একটা ষড়যন্ত্র হিসেবে...
রমিজ: এটি এই উপমহাদেশেরই চরিত্র—যেন পুরো বিশ্বই আমাদের বিপক্ষে। ষড়যন্ত্র-তত্ত্ব খুব বাজার পায় এখানে। পাকিস্তানের বোলারদের অ্যাকশন প্রশ্ন ওঠার সময়ও পাকিস্তানে সবাই বলতে শুরু করল, অন্য দেশের বোলারদের কেন ধরা হচ্ছে না, ওই বোলার কেন খেলে যাচ্ছে...। এসব না ভেবে যেখানে নিজেদের সমস্যা সমাধান করা উচিত।

* বাংলাদেশের সাম্প্রতিক উত্থান কি আপনাকে চমকে দিয়েছে?
রমিজ: কিছুটা তো বটেই। তবে এর কারণ হলো, বাংলাদেশ দারুণ কিছু নতুন খেলোয়াড় পেয়েছে। সঙ্গে যোগ হয়েছে আত্মবিশ্বাস। ওরা খুব অনুপ্রাণিত, আগের ১০ বছরে যত হতাশা জমেছে, ম্যাচ জিতে যেন সেই হতাশা ঘোচাতে চাইছে। এটা দারুণ ব্যাপার। হতাশা-ক্ষোভ এসব মেটানোর মাধ্যম যদি পারফরম্যান্স হয়, এর চেয়ে ভালো আর কী হতে পারে! কে কী বলল, তাতে পাত্তা দেওয়ার কী দরকার? এখন বাংলাদেশ এমন এক দল যেটি ভারত, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কার সঙ্গে সমানে সমানে লড়তে পারে। গত দুই-আড়াই বছরে বাংলাদেশের পারফরম্যান্স দারুণ এক গল্প। এটা বিশ্ব ক্রিকেটের জন্য ভালো, এশিয়ান ব্লকের জন্য আরও বেশি ভালো।

* পাকিস্তান তো ব্যতিক্রমী বোলার উপহার দেওয়ার জন্য বিখ্যাত। বাংলাদেশও এমন একজনকে পেয়েছে। মুস্তাফিজুর রহমানকে কি দেখেছেন?
রমিজ: হ্যাঁ, দারুণ বোলার। মুস্তাফিজ অনেকটা মোহাম্মদ আমিরের মতো। কীভাবে উইকেট নিতে হয়, তা জানে। আমাদের এদিকে তো অল্প বয়সে সব হাতে ধরে শেখাতে হয়। কিন্তু ও বয়সের তুলনায় অনেক পরিণত। মাঠে ওকে দেখে মনেই হয় না নতুন এসেছে। ও স্লোয়ার দিচ্ছে, বোঝার পরও অনেক সময়ই ব্যাটসম্যানদের কিছু করার থাকে না। তার মানে ওর মধ্যে বিশেষ কিছু আছে। ম্যাচ রিড করার ক্ষমতা দারুণ, গুরুত্বপূর্ণ সময়ে ভয় পাওয়ার বদলে উল্টো জ্বলে ওঠে। শুধু বোলিং না, যেভাবে ও চ্যালেঞ্জ নেয়, সেটাই বুঝিয়ে দেয় ও মানসিকভাবে কত পরিণত।

* আপনি জানেন কি না, মুস্তাফিজের আইডলও তো কিন্তু আমির...
রমিজ: আমির আর মুস্তাফিজ এশিয়ার সবচেয়ে স্মার্ট দুই বোলার। ওর এখন উচিত, টেস্টে ভালো করার দিকে মন দেওয়া। টেস্টে ভালো করলে বাকি সব ফরম্যাটেও ভালো করবে।

* আগের বাংলাদেশ আর এই বাংলাদেশের মধ্যে কী পার্থক্য দেখেন?
রমিজ: নিজেদের ওপর বিশ্বাস। এই বিশ্বাস তখনই আসে, যখন জানবেন আপনি ভালো। বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা এখন বিশ্বাস করে, ওরা সেরাদের সমকক্ষ। যে কারণে চ্যালেঞ্জ নিতে ভয় পায় না। মাশরাফি বিন মুর্তজার প্রভাবও ভুলে গেলে চলবে না। ও খুব আক্রমণাত্মক, বাংলাদেশের উত্থানে এটা খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। এ কারণেই বাংলাদেশ খুব আক্রমণাত্মক ক্রিকেট খেলে। দারুণ কিছু ফাস্ট বোলার পেয়ে যাওয়ায় বোলিং এখন খুব ভালো, ফিল্ডিংটায় আরেকটু উন্নতি করতে হবে। ব্যাটিংটা এমনিতেই ভালো হবে, কারণ এখনো ওরা তরুণ।

* শেষ প্রশ্ন ও অপ্রীতিকর প্রশ্ন—বাংলাদেশের মানুষ আপনাকে বাংলাদেশ-বিরোধী মনে করে। এটা শুনে আপনার কেমন লাগছে?
রমিজ: আমার জন্য এটা খুব দুঃখজনক। কারণ "বাংলাদেশের ক্রিকেটের জন্য আমার শুধু ভালোবাসাই আছে।" কিছু কথার ভুল ব্যাখ্যা হওয়ায় আমাকে সবাই ভুল বুঝেছে। আমি আশা করব, এই সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে সবাই আমাকে একটু বুঝতে পারবে।

18
সৌরভ গাঙ্গুলীর সাক্ষাৎ​কার
বাংলাদেশ অনেকটা পথ এগিয়ে গেছে


সৌরভ গাঙ্গুলী: উত্তরার রূপায়ন সিটিতে প্রথম আলোর মুখোমুখি

যুব ক্রিকেট দলের সদস্য, ভারতীয় দলের সাধারণ সদস্য, অধিনায়ক, ধারাভাষ্যকার—বিভিন্ন ভূমিকায় বাংলাদেশে এসেছেন সৌরভ গাঙ্গুলী। এবার এলেন রূপায়ন সিটি উত্তরার শুভেচ্ছাদূত হিসেবে। নিজের খেলোয়াড়ি ও ব্যক্তিজীবন নিয়ে মুখোমুখি হলেন প্রথমআলোর সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন নাইর ইকবাল

* বাংলাদেশে আসাটা আপনার জন্য নিয়মিত ব্যাপারই । এ দেশে প্রথম সফরের স্মৃতিটা মনে পড়ে?

সৌরভ গাঙ্গুলী: খুব মনে পড়ে। আমি প্রথম এখানে এসেছিলাম ১৯৮৯ সালে। অনূর্ধ্ব-১৯ এশিয়া কাপের আসর ছিল ওটা। এরপর ১৯৯১ সালে, পশ্চিম বাংলা দলের হয়ে।

* ১৯৯২ সালে ভারতীয় দলে অভিষেকের পর মাঝখানে চার বছরের বিরতি।ভারতীয় দলে ফিরলেন ১৯৯৬ সালে।একেবারে নতুন চেহারায়।এই চার বছরের বিরতিকে কি আপনি আশীর্বাদ মনে করেন?

সৌরভ: না না, আশীর্বাদ মনে করার কোনো কারণই নেই। এই চারটি বছর ভারতীয় দলে নিয়মিত খেললে আমি হয়তো আর ৫ হাজার রান বেশি করতাম। তবে এটা ঠিক, প্রথমবার যখন আমার অভিষেক হলো, তখন বয়সটা ছিল অনেক কম। অনেক কিছু বোঝার বয়স তখনো হয়নি। মাঝখানের বিরতিটার সময় আমি অনেক কিছুই শিখেছি। পরিণত হয়েছি। তাই সে হিসেবে চার বছরের বিরতিটা আমার জন্য খুব একটা ক্ষতির কারণ হয়নি। তার পরও চার বছর কিন্তু অনেকটা সময়।

* আপনি ক্রিকেট ছেড়ে এখন অনেক কিছুই করছেন।টেলিভিশনে অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করছেন।ক্রিকেটের সঙ্গে সংস্কৃতিজগতের কি কোনো মিল খুঁজে পান, না
কি এই দুটি ক্ষেত্র সম্পূর্ণ ভিন্ন? ক্রিকেটার ছিলেন, এখন জনপ্রিয় উপস্থাপক।এর রহস্যটাই বা কী?

সৌরভ: সম্পূর্ণ ভিন্ন। ক্রিকেট আর বিনোদন-সাংস্কৃতিক জগৎ সম্পূর্ণ আলাদা। এই দুটির মধ্যে কোনো মিল নেই। আর ভিন্ন এই দুই জগতে সাফল্য পেতে হলে আপনাকে অবশ্যই ‘সেরা’ হতে হবে। জীবনে যা-ই করেন, সেরা হওয়ার বিকল্প নেই। আপনি ক্রিকেটই খেলুন কিংবা টেলিভিশন ব্যক্তিত্বই হোন, আপনাকে সেরাই হতে হবে। আর ক্রিকেটার ছিলাম, এখন উপস্থাপনা করছি কীভাবে—এ প্রশ্নের উত্তরে বলতে হয়, উপস্থাপনাকে আমি অভ্যাস বানিয়ে ফেলেছি।

* অনেকে বলেন, আপনার হাতে ভারতীয় ক্রিকেট দল একধরনের নবজন্ম লাভ করেছিল। ভারত পরিণত হয়েছিল আক্রমণাত্মক একটি দলে। এটা কীভাবে করলেন?

সৌরভ: এটা কিছুই না। খেলার একটা ধরন। আমাদের দলটা খুব ভালো ছিল। দারুণ ক্রিকেট খেলছিল। দলের প্রতিটি খেলোয়াড়েরই মনোভাব ছিল আক্রমণাত্মক। প্রতিটি খেলোয়াড়ই লড়তে উদ্‌গ্রীব ছিল। আমি কিছুই করিনি।

* বাংলাদেশের ক্রিকেট নিয়ে আপনার মূল্যায়নটা জানতে চাচ্ছি। কেমন লাগছে মাশরাফিদের খেলা?

সৌরভ: আমি খুবই খুশি বাংলাদেশের ক্রিকেটের উন্নতি দেখে। দুর্দান্ত উন্নতি করছে দলটা। ২০০০ সালে ঢাকায় বাংলাদেশের প্রথম টেস্টটা ছিল ভারতীয় ক্রিকেট দলের অধিনায়ক হিসেবে আমার প্রথম টেস্ট। সেই জায়গা থেকে আজকে বাংলাদেশের ক্রিকেট কত দূর চলে এসেছে। খুব ভালো লাগে। কেবল সিনিয়র ক্রিকেটে নয়, বয়সভিত্তিক ক্রিকেটেও বাংলাদেশ অনেকটা পথ এগিয়ে গেছে। এবারের যুব বিশ্বকাপ ক্রিকেটই তার প্রমাণ। যে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে অল্পের জন্য হেরে ফাইনালে ওঠা হয়নি বাংলাদেশের, সেই ওয়েস্ট ইন্ডিজই তো শেষ পর্যন্ত যুব বিশ্বকাপ জিতে নিল। যেহেতু বয়সভিত্তিক ক্রিকেটে উন্নতি হচ্ছে, তাই বাংলাদেশের ক্রিকেট উন্নত হতে বাধ্য।

* আপনি দুজন বিদেশি কোচের অধীনে খেলেছেন। আমি গ্রেগ চ্যাপেলের প্রসঙ্গ আনব না। যদি প্রশ্ন করি, জন রাইট ভারতীয় দলের উত্থানে কী ধরনের ভূমিকা রেখেছিলেন?

সৌরভ: গ্রেগ চ্যাপেল নিয়ে আমিও কিছু বলতাম না (হাসি)। জন রাইটের কথা বলি, ওর অনেক ভূমিকা। রাইট ছিল ভারতীয় ক্রিকেট দলের প্রথম বিদেশি কোচ। প্রথম যেকোনো কিছুরই একটা প্রভাব থাকে। রাইটেরও ছিল। সে ভারতীয় ক্রিকেটের চেহারাটাই বদলে দিয়ে গিয়েছিল।

* একটা ক্রিকেট দলে অধিনায়ক আর কোচের ক্ষমতার ভারসাম্য কেমন হওয়া উচিত? ধরুন, কোচ যদি তাঁর নিজের ক্যারিয়ারে খুব বড় তারকা হয়ে থাকেন...

সৌরভ: পুরো বিষয়টিই আসলে সমন্বয়। ব্যবস্থাপনা। আর কিছুই নয়। আমি যখন অধিনায়ক ছিলাম, তখন আমার দলে পাঁচটা মহা মহা তারকা ছিল। কেউ কারও থেকে কম নয়—শচীন টেন্ডুলকার, রাহুল দ্রাবিড়, ভিভিএস লক্ষ্মণ, অনিল কুম্বলে আর বীরেন্দর শেবাগ। আমার তো কোনো সমস্যা হয়নি। এখানে আপনার মনোভাবটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। বোঝাপড়াটা নির্ভর করে অনেকটাই এর ওপর।

* শচীন টেন্ডুলকার, রাহুল দ্রাবিড়, ভিভিএস লক্ষ্মণ, অনিল কুম্বলে কিংবা বীরেন্দর শেবাগ—এঁদের সম্পর্কে যদি আলাদাভাবে কিছু বলতে বলা হয় আপনাকে...

সৌরভ: (হেসে) দেখুন, এদের নিয়ে আমি নিজেই অনেকবার অনেক কিছু বলেছি। বলার তো কিছু বাকি নেই। শুধু বলি, ক্রিকেটার হিসেবে তারা ছিল অনন্যসাধারণ। ক্রিকেটার বলি কেন, মানুষ হিসেবেই তারা অন্য রকম। দুর্দান্ত। শচীন, দ্রাবিড়, লক্ষ্মণ, শেবাগ—সবাই আমার খুব ভালো বন্ধু। একসঙ্গে ১৫ বছর খেলেছি। দারুণ কেটেছে সেই সময়টা।

* ক্রিকেট কীভাবে একটা দেশকে ব্র্যান্ডিং করতে পারে?

সৌরভ: ব্র্যান্ডিং তো করছেই। বাংলাদেশের কথাই ধরুন। ক্রিকেট দিয়েই তো সারা দুনিয়া চেনে বাংলাদেশকে। শুধু ক্রিকেট কেন, যেকোনো খেলাধুলাই তো এই কাজটা করে। ব্রাজিলকে মানুষ তো চেনে ফুটবল দিয়েই। ব্রাজিলে খুব ভালো কফি হয় ঠিকই, কিন্তু বিশ্বে তাদের পরিচিতিটা তো ফুটবলের জন্যই। আর্জেন্টিনা নামটা বললেও তো প্রথমেই আসে ফুটবলের কথা। তাই নয় কি!

* ফুটবলের প্রসঙ্গ যখন এলই, তখন ভারতীয় ফুটবলে আপনার সংশ্লিষ্টতার বিষয়টা চলেই আসে, ইন্ডিয়ান সুপার লিগে (আইএসএল) আপনার একটি দল আছে। এটা কেন করলেন? আপনি ফুটবলেরও ভক্ত, এটা সবাই জানে। কোনো নস্টালজিয়া কি কাজ করেছে, ইস্টবেঙ্গল-মোহনবাগান ইত্যাদি?

সৌরভ: আইএসএল তো দারুণ একটা ব্যাপার। সত্যি কথা বলতে কী, আইএসএল সবকিছুকে ছাড়িয়ে গেছে। ইস্টবেঙ্গল-মোহনবাগানের প্রভাবও ছাড়িয়ে গেছে এই আইএসএল।

* আপনি ক্রিকেট প্রশাসক হিসেবে কাজ শুরু করেছেন। ভারত, পাকিস্তান, বাংলাদেশের মতো দেশগুলোতে যেখানে দলীয় রাজনীতি, দলীয় আনুগত্যের ওপর অনেক কিছু চলে, সেখানে একজন ‘ব্যক্তি সৌরভ’ তাঁর ব্যক্তিত্ব নিয়ে কতটুকু স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারবেন?

সৌরভ: প্রশাসক হয়ে খুব ভালো লাগছে। যে যা-ই বলুক, আমার কোনো অসুবিধা হচ্ছে না। আশা করি, হবেও না।

* আপনি শিক্ষাপ্রসারেও কাজ করছেন...

সৌরভ: তিনটি স্কুল করছি। বলতে পারেন, এটা আমার একটা শখ। বাচ্চাদের খুব ভালো লাগে। আমি চাই, শিক্ষিত হয়ে বড় হোক ওরা। ওখানে পড়াশোনা, খেলাধুলা সবই হবে। একটা স্কুল ১০ একর জমির ওপর দাঁড়াচ্ছে। আমি নিজে একটা ক্রিকেট একাডেমিও করছি। ওটা হচ্ছে ৫ একর জমির ওপর।

* তরুণ উদ্যোক্তাদের নিয়ে একটা অনুষ্ঠান করছেন পশ্চিম বাংলায়, এর প্রভাব কেমন দেখছেন?

সৌরভ: ‘এগিয়ে বাংলা’ নামের একটা প্রকল্প করেছি আমাদের ওখানে। পশ্চিম বাংলার মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী করতে বললেন, রাজি না হয়ে পারিনি। প্রভাব ভালোই। আমার বেশ ভালো লাগছে। তবে প্রভাব অবশ্যই ‘দাদাগিরি’র মতো নয় (হাসি)।

* কোথায় যেন পড়েছি, আপনার মেয়ে সানা বাবার কাছে পড়াশোনা করতে খুব ভালোবাসে। সৌরভ গাঙ্গুলী তাহলে একজন ভালো শিক্ষকও...

সৌরভ: (হাসি) আরে, ওটা কিছু নয়। সানা আমার কাছে পড়তে চায়, কারণ আমি বকুনি দিই না। কম পড়াই। ওর মার কাছে পড়তে বসলে বেশি পড়তে হয়, আমার কাছে কম, এই তো! যখন সে বলে, বাবা আর পড়তে ইচ্ছা করছে না; ব্যস, আমিও বলি, ঠিক আছে, আর পড়তে হবে না।

19
বিদায়বেলায় ম্যাককালাম
'এই নিউজিল্যান্ড নতুন উচ্চতায় উঠবে’


আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ব্রেন্ডন ম্যাককালামের বিদায়ী মুহূর্তের সাক্ষী হতে কাল মাঠে এসেছিলেন তাঁর স্ত্রী এলিসা ও তিন সন্তান। বিদায়ী বক্তৃতায় আলাদা করে পরিবারকে ধন্যবাদ দিয়ে নিজের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলেন ম্যাককালাম l এএফপি

তাঁর ক্যারিয়ারের শেষ টেস্টটা ব্যক্তিগত অর্জনে উজ্জ্বল। কিন্তু সেই অর্জনের উল্টো পিঠেই রইল দলের নিদারুণ হারের বেদনা। মিশ্র অনুভূতি নিয়েই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট শেষ করলেন ব্রেন্ডন ম্যাককালাম। সিরিজ শেষের পুরস্কার বিতরণী মঞ্চে খুব স্বাভাবিকভাবেই বি-ম্যাক ছিলেন আবেগাপ্লুত। তাঁর বিদায়ী বক্তৃতায় উঠে এল ক্রিকেটের প্রতি তাঁর ভালোবাসা, সতীর্থ-প্রতিপক্ষ-পরিবারের কাছে কৃতজ্ঞতা। শোনালেন নিউজিল্যান্ড ক্রিকেট নিয়ে আশার কথাও—

অস্ট্রেলিয়া দল নিয়ে
তোমরা প্রমাণ করেছ, কেন তোমরা বিশ্বের এক নম্বর দল। যখন এ সিরিজটা খেলতে তোমরা এখানে এসেছিলে, আমরা ভেবেছিলাম, আমাদের ভালোই সুযোগ আছে। কিন্তু দুটি টেস্টেই অস্ট্রেলিয়া নিউজিল্যান্ডকে উড়িয়ে দিয়েছে এবং তোমরা দেখিয়েছ তোমরা কতটা ভালো। তোমরা সবাই তোমাদের দেশের দারুণ দূত এবং তোমাদের দলে স্টিভেন স্মিথের মতো একজন দুর্দান্ত নেতা আছে। তোমাদের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের জন্য শুভকামনা রইল। আশা করি, সামনের বছরগুলোয়ও আমরা একসঙ্গে অনেক বিয়ার পান করতে পারব।

নিউজিল্যান্ড ক্রিকেট বোর্ডকে
নিউজিল্যান্ড ক্রিকেটের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবাই, যাঁরা সর্বশেষ কয়েক বছর সব সময় এ দলটির পাশে থেকেছেন, আমরা আপনাদের কাছে কৃতজ্ঞ। আমি বিশ্বাস করি, আপনারা যে অবস্থায় দায়িত্ব নিয়েছিলেন, যখন ছাড়বেন তার চেয়ে ভালো অবস্থায় থাকবে নিউজিল্যান্ড ক্রিকেট।

কিউই ক্রিকেটপ্রেমীদের

আমরা অনেক উত্থান-পতনের মধ্য দিয়ে গেছি। কিন্তু আপনারা সব সময় আমাদের পাশে ছিলেন। শুধু এই সিরিজে নয়, অনেক বছর ধরেই। সর্বশেষ ৬ কিংবা ১২ মাসে আপনারা যেভাবে প্রতিটি মাঠে এসেছেন আমাদের সমর্থন দিতে, এটা ছিল অসাধারণ ব্যাপার। আশা করছি, এই সমর্থন ভবিষ্যতেও থাকবে। আমি নিশ্চিত থাকবেই।

সতীর্থদের প্রতি
সর্বশেষ কয়েকটা বছর ছিল আমাদের জন্য এক অসাধারণ অভিজ্ঞতা। আমরা কিছু দারুণ কীর্তি গড়েছি, আবার কিছু ম্যাচ হেরেছিও। কিন্তু কখনোই আমাদের মন ভাঙেনি। তোমরা সবাই বাকি জীবন আমার হৃদয়ে থাকবে। নিউজিল্যান্ড দলের হয়ে দেশে ও দেশের বাইরে আমাদের সময়টা আমি সব সময় মনে রাখব। আমি জানি, এ দলটাকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য তোমাদের মধ্যেই কিছু দারুণ নেতা আছে। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, এই নিউজিল্যান্ড আগামী বছর দুয়েকের মধ্যে নতুন উচ্চতায় উঠবে। আর আমার দর্শনটা ধারণ করার জন্য ধন্যবাদ। তোমাদের সবার জন্য শুভকামনা। আমাদের কিন্তু একসঙ্গে অনেক বিয়ার পান করা বাকি।

পরিবারের প্রতি
একজন ক্রিকেটারের জন্য এত দীর্ঘদিন খেলে যাওয়া এবং পরিবারকে ছাড়া কাটানো খুব কঠিন ব্যাপার। পরিবারের সমর্থন ও ভালোবাসা না পেলে সেটা সম্ভব না। তোমরা আমাকে সুযোগ দিয়েছ সর্বশেষ ১৪টি বছর আমার স্বপ্নের পথে হাঁটতে। লিস (স্ত্রী এলিসা), তোমাকে বলছি, বাকি জীবন আমি এটার প্রতিদান দিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করব। আর এটা কোনো কথার কথা নয়। ২০ বছর বয়সী এক তরুণ হয়ে এসেছিলাম নিউজিল্যান্ড দলে, ৩৪ বছর বয়সে ৩টি ফুটফুটে বাচ্চার বাবা এবং দারুণ একজন স্ত্রীকে নিয়ে ফিরে যাচ্ছি। এটাও দারুণ ব্যাপার।

20
নায়ক বনে গেছেন রেফারিকে লাল কার্ড দেখানো ফুটবলার !!

          
রেফারিকেই লাল কার্ড দেখাচ্ছেন সালিহ দারসুন।

রেফারিকেই লাল কার্ড!

ফুটবল মাঠে অভূতপূর্ব এক ঘটনারই জন্ম দিয়েছিলেন সালিহ দারসুন। সতীর্থকে লাল কার্ড দেখানোর প্রতিবাদ জানিয়ে রেফারিকেই লাল কার্ড দেখিয়ে মাঠ ছেড়ে বের হয়ে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন তুরস্কের এই ফুটবলার। রেফারির সঙ্গে এমন বিরুদ্ধাচারণের জন্য দারসুনকে শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে, এমন আশঙ্কা ছিল অনেকের। কিন্তু উল্টো এখন নায়ক বনে গেছেন রেফারিকে লাল কার্ড দেখানো সেই ফুটবলার। গ্যালাতাসারাইয়ের মাঠ থেকে ২-১ গোলের হার নিয়ে ফেরার পর দারসুনকে অভ্যর্থনা জানিয়েছে ত্রাবজোন্সপোরের সমর্থকরা। দারসুনের সমর্থনে হাতে লাল কার্ড নিয়ে রাস্তায় মিছিল করেছে শত শত মানুষ।

গ্যালাতাসারাইয়ের বিপক্ষে বিতর্কিত সেই ম্যাচে ৭০ মিনিটের মধ্যেই লাল কার্ড দেখে মাঠ ছেড়েছিলেন ত্রাবজোন্সপোরের দুই খেলোয়াড়। নয় জনের দল নিয়েও হার এড়ানোর আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছিল তুরস্কের শীর্ষ লিগের মধ্যম সারির ক্লাবটি। কিন্তু ৮৭ মিনিটের মাথায় বিতর্কিতভাবে ত্রাবজোন্সপোরের আরেক খেলোয়াড়কে সরাসরি লাল কার্ড দেখিয়েছিলেন রেফারি। এর পরই সেই লাল কার্ড কাণ্ড ঘটান দারসুন। তাঁকেও মাঠ ছেড়ে বেরিয়ে যেতে হয় লাল কার্ড দেখে। সাতজনের দল নিয়ে খেলা শেষ করে ত্রাবজোন্সপোর। ম্যাচটাও তারা হেরে যায় ২-১ গোলে। তবে মাঠে রেফারিকে লাল কার্ড দেখানোর দুঃসাহসের জন্য এখন প্রশংসার জোয়াড়ে ভাসছেন দারসুন। তাঁর সেই লাল কার্ড দেখানোর ছবি দিয়ে একটি টি-শার্টও বিক্রি করছে ত্রাবজোন্সপোর।

তুরস্কের ত্রাবজোন শহরে শত শত মানুষ হাতে লাল কার্ড নিয়ে সমর্থন জানিয়েছেন দারসুনের প্রতি। ক্লাবের চেয়ারম্যান মুহাররেম উস্তা বলেছেন, ‘দারসুন তুরস্কের ফুটবল অঙ্গনকেই লাল কার্ড দেখিয়েছে। এটা বিদ্রোহের প্রতীক না। এটা হলো পুনর্জাগরণের প্রতীক।’ ‘ক্ষমতার অপব্যবহার’ ও ‘বিদ্বেষ ছড়ানোর’ দায়ে তুরস্কের পশ্চিমাঞ্চলে একটি মামলাও দায়ের করা হয়েছে রেফারির বিরুদ্ধে।

তুরস্কের রেফারিদের কেন্দ্রীয় কমিশনের প্রধান কুদ্দুসি মুফতোগলুও দাঁড়িয়েছেন ত্রাবজোন্সপোরের পাশে। তিনি বলেছেন, ‘আমরা ত্রাবজোন্সপোরের হতাশাটা বুঝতে পারছি। আমরা সফল রেফারিদের যেমন পুরস্কার দেই, তেমনি ব্যর্থ রেফারিদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেই।’ গণহারে লাল কার্ড দেখানোর দায়ে এখন সেই রেফারিকেই শাস্তির মুখে পড়তে হয় কি না, সেটাই দেখার বিষয়।

21
Cricket / বিদায় ‘বি-ম্যাক’
« on: February 23, 2016, 01:59:33 PM »
বিদায় ‘বি-ম্যাক’

 
লারার মতো মুখে হয়তো ‘ডিড আই এন্টারটেইন ইউ?’ বলেননি, তবে নির্মল বিনোদন দেওয়ার তৃপ্তি নিয়েই শেষবারের মতো ব্যাট হাতে মাঠ ছেড়ে যাচ্ছেন ব্রেন্ডন ম্যাককালাম। কাল ক্রাইস্টচার্চের হ্যাগলি ওভালে l ছবি: এএফপি


আগের বলেই জশ হ্যাজলউডকে স্কয়ার লেগের ওপর দিয়ে উড়িয়ে মেরেছিলেন মাঠের বাইরে। ২৬ বলে ২৫ রান হয়ে গেল তাঁর। বেসিন রিজার্ভে ফিসফিসানি, চাপা স্বরে জল্পনাকল্পনা—শেষবারের মতো আরেকটি ঝড় তুলবেন ম্যাককালাম? আগের ইনিংসে ৭৯ বলে ১৪৫ রানের তাণ্ডবের মতো না হোক, ছোটখাটো একটা ঝড় হলে মন্দ কী!

হলো না। হ্যাজলউডের পরের বলটাও উইকেট ছেড়ে বেরিয়ে লেগ সাইডে উড়িয়ে মারতে গিয়েছিলেন। মিড উইকেটে ছোঁ মেরে অবিশ্বাস্য এক ক্যাচ নিলেন ডেভিড ওয়ার্নার। মাঠে কয়েক মুহূর্ত পিনপতন নীরবতার মধ্যে শুধু শোনা গেল অস্ট্রেলীয়দের উল্লাসধ্বনি। গ্লাভস খুলে যখন প্যাভিলিয়নের দিকে হাঁটা শুরু করলেন, পুরো বেসিন রিজার্ভ উঠে দাঁড়াল তাঁর সম্মানে। মাঠ পেরিয়ে ড্রেসিংরুমে ঢোকার টানেলে যতক্ষণ তাঁকে দেখা যায়, করতালি চলল ততক্ষণ। ক্যারিয়ারের শেষ ইনিংসটা খেলে ফিরলেন ব্রেন্ডন ব্যারি ম্যাককালাম। কারও কাছে যিনি ‘বি-ম্যাক’, কারও কাছে ‘বাজ’।

নিজের হাতে লেখা চিত্রনাট্য অনুযায়ীই যেন খেলেছিলেন বিদায়ী টেস্টের প্রথম ইনিংসটা। ৩২ রানে দলের ৩ উইকেট পড়ে যাওয়ার পর ক্রিজে এসে ৫৪ বলে বিশ্ব রেকর্ড গড়া সেঞ্চুরি। কাল দ্বিতীয় ইনিংসে যখন ব্যাট করতে নামেন, পরিস্থিতি প্রায় একই রকম। অস্ট্রেলিয়ার ৫০৫ রানের পর ১৩৫ রান পিছিয়ে থাকা নিউজিল্যান্ড জেমস প্যাটিনসনের আগুনে বোলিংয়ে আবার ৩ উইকেট হারাল ৭২ রানে! এবার আর ম্যাককালাম উদ্ধার করতে পারলেন না দলকে। তাঁর উইকেটটাও চলে যাওয়ায় দিন শেষে নিউজিল্যান্ড ৪ উইকেটে ১২১। অস্ট্রেলিয়ার জয়ের সামনে শেষ বড় বাধা হয়ে ছিল শুধু কেন উইলিয়ামসন আর কোরি অ্যান্ডারসন জুটি। এখান থেকে এই টেস্টটা অবিশ্বাস্যভাবে ড্র হলেও ১-০ ব্যবধানে সিরিজ জিতে টেস্ট র‍্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষে উঠে যাবে অস্ট্রেলিয়া।

সব সময় দলকেই প্রাধান্য দিয়ে এসেছেন। সেই দলের পারফরম্যান্স অবশ্য খুব একটা ভালো হলো না ম্যাককালামের বিদায়ী সিরিজে। তবে ক্যারিয়ারের শেষ টেস্টে দুর্দান্ত সব রেকর্ড এসে ধরা দিয়েছে তাঁর ব্যাটে। টেস্টে দ্রুততম সেঞ্চুরির রেকর্ড গড়েছেন, শুধুই নিজের করে নিয়েছেন টেস্টে সবচেয়ে বেশি ছক্কার রেকর্ডও। কাল বিদায়ী ইনিংসটা খেলার পর আরও একটা রেকর্ড তাঁর হয়ে গেছে। প্রথম ইনিংসে করেছিলেন ১৪৫, দুই ইনিংস মিলিয়ে রান হয়েছে ১৭০, যা বিদায়ী টেস্টে কোনো অধিনায়কের সবচেয়ে বেশি রান। ১৯৩০ সালে কিংসটনে ওয়েস্ট ইন্ডিজের অধিনায়ক রবার্ট কার্ল নুনেস নিজের শেষ টেস্টে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ১৫৮ (৬৬ ও ৯২) রান করে এত দিন সেই রেকর্ডের মালিক হয়ে ছিলেন। ক্যারিয়ারের শেষ টেস্টে সেঞ্চুরি করা প্রথম অধিনায়কও একমাত্র ম্যাককালামই।

ব্যক্তিগত অর্জনে এমন ঝলমলে শেষই বা আর কার হয়েছে!

ম্যাককালামের যত রেকর্ড

টেস্ট

সবচেয়ে বেশি ছক্কা          ১০৭

একবারও বাদ না পড়ে      ১০১

সবচেয়ে বেশি ম্যাচ         

দ্রুততম সেঞ্চুরি              ৫৪ বল

দ্রুততম ১৫০                ১০৩ বল

ওয়ানডে

বিশ্বকাপের দ্রুততম ফিফটি      ১৮ বল

টি–টোয়েন্টি

সবচেয়ে বেশি রান          ২১৪০

সবচেয়ে বেশি সেঞ্চুরি       ২

সবচেয়ে বেশি চার           ১৯৯

সবচেয়ে বেশি ছয়           ৯১

অধিনায়কত্বের রেকর্ড

                  ম্যাচ   জয়      হার  ড্র/টাই/পরি.           

টেস্ট             ৩১*    ১১      ১০          ৯

ওয়ানডে        ৬২     ৩৬      ২২         ১/৩

টি-টোয়েন্টি    ২৮     ১৩      ১৪         ০/১

* অসমাপ্ত

ব্রেন্ডন ম্যাককালামের ব্যাটিং ক্যারিয়ার

                      ম্যাচ   ইনিংস       অপ.     রান     সর্বোচ্চ          গড়    ১০০/৫০   ক্যাচ/স্টাম্পিং

টেস্ট                ১০১      ১৭৬        ৯       ৬৪৫৩       ৩০২      ৩৮.৬৪      ১২/৩১       ১৯৭/১১

ওয়ানডে           ২৬০      ২২৮       ২৮      ৬০৮৩       ১৬৬      ৩০.৪১      ৫/৩২        ২৬২/১৫

টি-টোয়েন্টি        ৭১        ৭০        ১০      ২১৪০        ১২৩      ৩৫.৬৬      ২/১৩          ৩৬/৮


 

22
জাতিসংঘের শুভেচ্ছাদূত হচ্ছেন মাশরাফি

     
মাশরাফির মুকুটে আরেকটি পালক

এক মাসেরও বেশি সময় ধরে চলছিল আলোচনা। তাঁর খেলোয়াড়ি ও ব্যক্তিগত জীবন নিয়েও নেওয়া হয়েছে অনেক খোঁজখবর। যাচাই করা হয়েছে দেশের সর্বসাধারণের মধ্যে গ্রহণযোগ্যতা ও রাজনৈতিক নিরপেক্ষতা। সবকিছুতেই দশে দশ পেয়ে বাংলাদেশের প্রথম ব্যক্তিত্ব হিসেবে জাতিসংঘের শুভেচ্ছাদূত হচ্ছেন সীমিত ওভারের ক্রিকেটে বাংলাদেশের অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা। আগামী বৃহস্পতিবার ঢাকায় আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলন করে জাতিসংঘের পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেওয়ার কথা।

মুঠোফোনে মাশরাফিও বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেছেন, ‘জাতিসংঘের ঢাকা অফিস থেকে ব্যক্তিগত পর্যায়ে আমাকে জানানো হয়েছে, আমাকে তাদের শুভেচ্ছাদূত করা হয়েছে। তবে এ ব্যাপারে আনুষ্ঠানিক কোনো কাগজপত্র এখনো পাইনি।’ তবে জাতিসংঘ কর্মকর্তাদের সঙ্গে গত কিছুদিনের আলোচনার সূত্র ধরেই শুভেচ্ছাদূত হিসেবে নিজের দায়িত্বটা বুঝতে পারছেন বাংলাদেশ অধিনায়ক, ‘শুনেছি একটা দেশ থেকে এ রকম একজনকেই নেওয়া হয়। আর্জেন্টিনায় যেমন লিওনেল মেসি, শ্রীলঙ্কায় মুত্তিয়া মুরালিধরন। মাস খানেক ধরে আমার সঙ্গে কথা বলে এবং অনেক খোঁজখবর নিয়ে ওনারা এটি করেছেন বলে শুনেছি।’

বাংলাদেশ থেকে এর আগে ইউনিসেফের শুভেচ্ছাদূত হয়েছিলেন ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান ও চিত্রনায়িকা মৌসুমী। তবে বাংলাদেশের কারও জাতিসংঘের শুভেচ্ছাদূত হওয়াটা হবে এটাই প্রথম। ‘জাতিসংঘের শুভেচ্ছাদূত হিসেবে আমার কাজের পরিধি হবে অনেক বড়। ইউনেসকো ও ইউনিসেফের মতো তাদের যেকোনো অঙ্গসংগঠনের হয়েই আমাকে কাজ করতে হতে পারে। আমি মনে করি, এটা শুধু আমার নয়, পুরো দেশের জন্যই একটা গর্বের ব্যাপার।

23
Football / লা লিগায় মেসির ৩০০ গোল
« on: February 18, 2016, 02:30:23 PM »
লা লিগায় মেসির ৩০০ গোল

     
লা লিগায় ৩০০ গোল করে রেকর্ড গড়লেন লিওনেল মেসি।

অনন্য এক গৌরবের সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন লিওনেল মেসি। এমন একটা গৌরব, যার স্বাদ পাননি আর কোনো ফুটবলার—লা লিগায় ৩০০ গোল। এই মাইলফলক ছোঁয়ার জন্য আর মাত্র একটি গোলের দরকার ছিল বার্সার আর্জেন্টাইন প্লে-মেকারের। গতরাতে স্পোর্টিং গিজনের বিপক্ষে মাঠে নেমে এই মাইলফলক ছোঁয়ার জন্য খুব বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়নি। গিজনের মাঠে ম্যাচের ২৫ মিনিটেই গোল করলেন। লা লিগায় ৩০০ গোল হয়ে গেল মেসির।

ম্যাচ শেষে লা লিগায় মেসির নামের পাশে ৩০১ গোল। তাঁর জোড়া গোলের রাতে গোল পেয়েছেন লুইস সুয়ারেজও। বার্সেলোনা জিতেছে ৩-১ ব্যবধানে।

মেসির দুই গোলের মাঝখানে সময়ের ব্যবধান ৬ মিনিট। তবে এর মধ্যে একটি গোল করে গিজনকে ম্যাচে ফিরিয়েছিলেন কার্লোস কাস্ত্রো।
এই জয়ে লিগে শীর্ষে নিজেদের অবস্থানটাকে আরও সুসংহত করল বার্সেলোনা। ২৪ ম্যাচে ৬০ পয়েন্ট নিয়ে এই মুহূর্তে পয়েন্ট তালিকার শীর্ষে থাকা বার্সেলোনার সঙ্গে দ্বিতীয়স্থানে থাকা অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের পয়েন্টের ব্যবধান ৬। সমান ম্যাচ খেলে তিনে থাকা রিয়ালের পয়েন্ট ৫৩।

২৫ মিনিটে বার্সেলোনাকে এগিয়ে দেন মেসি। একটু আড়াআড়ি দৌড়ে বক্সের সামান্য বাইরে থেকে জোরালো শটে করেন গোলটি। বার্সেলোনার উচ্ছ্বাস অবশ্য বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি। দুই মিনিট পরেই স্পোর্টিং গিজনকে সমতায় ফেরান কার্লোস কাস্ত্রো। একটি প্রতিআক্রমণে মেনেনদেসের এক নিচু ক্রসে মাটিতে শুয়ে পা লাগিয়ে গোল করেন তিনি।

৪ মিনিট পরেই আবার মেসির গোল। তাঁর কাছ থেকে বল পেয়ে সুয়ারেজ এগিয়ে গিয়ে বল আবার বাড়িয়ে দেন মেসিকে। দারুণ এক শটে গোল করেন মেসি।
৬২ মিনিটে পেনাল্টি পেয়েও গোল করতে পারেননি সুয়ারেজ। এই মৌসুমে এটি বার্সেলোনার অষ্টম পেনাল্টি-হতাশা। নিজের পেনাল্টি ব্যর্থতার আক্ষেপ উরুগুইয়ান স্ট্রাইকার ঘুচিয়ে দেন ৬৭ মিনিটে। গিজনের বক্সের ডানপ্রান্তে বেশ কয়েকজন রক্ষণ-সেনার মধ্যে থেকে দুর্দান্ত এক শটে গোল করেন সুয়ারেজ। ২৪টি গোল করে এই মৌসুমে এখনো পর্যন্ত লিগে সর্বোচ্চ গোলদাতার আসনেই তিনি। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২১ গোল রোনালদোর। কালকের দুটি নিয়ে মেসির গোল সংখ্যা—১৫।

ম্যাচ শেষে বার্সেলোনা কোচ লুইস এনরিকের কণ্ঠে ছিল তৃপ্তির সুর, ‘আমরা এই মুহূর্তে সে অবস্থানে আছি, সেই অবস্থানটাই আমরা প্রত্যাশা করি। নিজেদের খেলা দিয়েই আমরা এই জায়গায় এসেছি।’
ম্যাচে ৮০ শতাংশ সময়ই বল বার্সেলোনার দখলে ছিল। গোলের সুযোগও যথেষ্ট তৈরি হয়েছিল। গোলের ব্যবধান আরও বড় হতে পারত বলে মনে করেন এনরিকে। না হওয়ার জন্য গিজনের অতি রক্ষণাত্মক কৌশলকেই দায়ী করেছেন বার্সা কোচ, ‘আমরা প্রচুর গোলের সুযোগ তৈরি করেছি। ম্যাচটা পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করেছি। কিন্তু সত্যি কথা বলতে কী, যখন কোনো দল অতিরিক্ত রক্ষণাত্মক হয়ে যায়, তখন তাদের বিপক্ষে গোল করা একটু কঠিনই।’

মাইলফলক ছোঁয়া মেসির প্রশংসাও ঝরল এনরিকের কণ্ঠে, ‘প্রতিপক্ষ যে-ই হোক দলে মেসির উপস্থিতি কোচ হিসেবে আপনাকে বাড়তি সুবিধাই দেবে।’

24
মাবিয়ার কাছে লজ্জিত বাংলাদেশ !!
   
সেদিন পোডিয়ামে দাঁড়িয়ে থাকা মাবিয়ার চোখে জল!

ভাবুন তো একবার, জাতীয় ক্রিকেট দল বিদেশ থেকে কোনো সিরিজ জিতে ফিরে এসেছে, কিংবা জাতীয় ফুটবল দল দেশে ফিরেছে কোনো বড় দলকে হারিয়ে। বিমানবন্দরে ঠিক ওই মুহূর্তের পরিস্থিতি কেমন হতো! সংবাদকর্মীরা ভিড় করতেন, বোর্ড কিংবা ফেডারেশনের বিভিন্ন শ্রেণির কর্মকর্তারা দাঁড়িয়ে থাকতেন ফুলের মালা নিয়ে। লোকে লোকারণ্য। অগুনতি আলোকচিত্রীর মুহুর্মুহু ক্যামেরার ঝলকানি। টেলিভিশন ক্যামেরাগুলোর হুল্লোড়।

এসএ গেমসের স্বর্ণ-কন্যা মাবিয়া আক্তার শিলং থেকে দেশে ফিরেছেন সদ্যই। বিমানবন্দর দিয়ে নয় অবশ্য। ফিরেছেন সীমান্ত হয়ে। মাবিয়া অত কিছু আশাও করেননি। অত গিজগিজে ভিড়। অত আয়োজন, সংবর্ধনা। কিন্তু নিদেনপক্ষে শুধু একটা ফুলেল শুভেচ্ছা কি পেতে পারতেন না? হলো না কিছুই! এসএ গেমসে ভারোত্তোলনে সোনার পদক জিতে মাবিয়া দেশে ফিরলেন নীরবে-নিভৃতে। দেশকে সাফল্যের রঙে রাঙানো এই ক্রীড়াবিদ কারও কাছ থেকে পাননি ছোট্ট একটা ফুলের পাপড়ি। একটা ফোন কলও। মাবিয়া অভিমানে কেঁদেছিলেন। হয়তো গোপন সেই কান্না।

সোনার পদক জিতে জাতীয় সংগীতের সুরে পোডিয়ামে দাঁড়িয়ে অঝোর কান্নায় কেঁদেছিলেন মাবিয়া। জাতীয় পতাকাকে স্যালুট দেওয়ার ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে তাঁর কান্না কাঁদিয়েছিল দেশের মানুষকেও। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সেই কান্নার দৃশ্য ছড়িয়ে উত্তাল এক আবেগ তৈরি করেছিল সবার মধ্যে। এসএ গেমস হয়তো বিশ্ব মানচিত্রে বড় কোনো ক্রীড়া আসর নয়। কিন্তু তবুও দক্ষিণ এশিয়ার শ্রেষ্ঠত্বের সেই আসরেও বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত বেজে ওঠে খুব কমই। কেউ সোনা জিতলেই তবে পদক অনুষ্ঠানে গর্বিত ভঙ্গিতে ওড়ে লাল-সবুজ পতাকা। নেপথ্যে ভেসে আসে সেই সুর, যে সুরের মধ্যে কী যেন একটা আছে, বাংলার মানুষ আবেগতাড়িত হয়ে কেঁদে ফেলে।

মাবিয়ার অর্জনটি আরও বড় ছিল। এবারের এসএ গেমসে বাংলাদেশের পক্ষে প্রথম সোনা এনে দিয়েছিলেন তিনিই। দেশকে এমন সম্মান এনে দেওয়া মাবিয়ারা রাজসিক অভ্যর্থনার স্বপ্ন দেখেন না। কিন্তু চান না অবহেলাও। দেশের মাটিতে পা রেখে যখন এতটুকু সম্ভাষণও মেলে না, কেউ পিঠটা পর্যন্ত চাপড়ে দেওয়ার থাকে না; তখন কষ্টে বুক তাঁদের ভেঙে যাওয়াই কি স্বাভাবিক নয়?

এমনিতেই শত অবহেলার বাধা ডিঙিয়ে সোনার পদক জিততে হয় আমাদের ক্রীড়াবিদদের। ভারোত্তোলক মাবিয়া ওজন বিশাল ভারী ওজনের ভার তোলেন, সেই ভারের সঙ্গে মিশে থাকে অনেক প্রতিকূলতা, সমাজের চাপিয়ে দেওয়া নানা বাধা-নিষেধের গল্পও।

দেশের মাটিতে পা রাখার পর তাঁকে প্রাপ্য সম্মানটুকু না দেওয়ায় আমরা আবার নতুন করেই কী লজ্জিত হলাম না!

মাবিয়ার অবশ্য এসব নিয়ে কোনো অভিযোগ নেই। সারল্যমাখা গলায় বললেন, ‘নিশ্চয়ই কোনো ভুল-বোঝাবুঝি হয়েছে দেখে আমাদের ফেরার দিনটা কারও মাথায় ছিল না। দেশকে সোনার পদক জিতিয়েছি, এটাই আমার আনন্দ। সোনার পদক জিতেই আমি অনেক সম্মানিত। বিমানবন্দরে দাঁড়িয়ে একটা ফুলের মালা না হয়, না-ই বা পেলাম।’

দেশকে যাঁরা দেন, তাঁরা কোনো কিছু ফেরত পাওয়ার আশায় দেন না। মাবিয়া সেই কথাটিই যেন তাঁর মন্তব্যের ভেতর আমাদের সবাইকে নতুন করে বুঝিয়ে দিলেন। এমনিতেই তো না–পাওয়ার অভ্যাস তাঁদের আছে। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের এঁদো জিমনেশিয়ামে ঘামে ভিজে, মশার কামড় খেয়ে বড় কোনো প্রতিযোগিতার জন্য নিজেদের তৈরি করাটা ভারোত্তোলনের মতো খেলার ক্রীড়াবিদদের গা-সওয়া হয়ে গেছে। বিমানবন্দরে ফুল না পাওয়ার ব্যাপারটা তাদের তাই নতুন করে মন খারাপ করে দেয় না।

‘কষ্ট’ শব্দটার সঙ্গে মাবিয়াদের পরিচয় যে শৈশব থেকেই। ভারোত্তোলন ফেডারেশনের সেক্রেটারি উইং কমান্ডার মহিউদ্দিন আহমেদের প্রতিদিন আসা-যাওয়ার ভাড়া দিতেন নিজের পকেট থেকে। টাকার অঙ্কটি খুবই ক্ষুদ্র, মাত্র ৫০ টাকা। কিন্তু মাবিয়ার জন্য সেটাই ছিল অনেক বড় কিছু। দোকানি বাবা কী যে কষ্ট করে তাঁদের তিন ভাই-বোনকে বড় করেছেন, সেটা ভেবে আজও শিউরে ওঠেন এই নারী ভারোত্তোলক।

খেলাটিতে শরীর থেকে যে প্রাণশক্তি ক্ষয় হয়, সেটা পুষিয়ে দিতে প্রতিদিন খাদ্য-তালিকায় আমিষের উপস্থিতি আবশ্যক। দুপুরে মাছ হলে রাতে মাংস, কিংবা দুপুরে মাংস হলে রাতে মাছ। সকাল-বিকেল দুধ-ডিমের খরচটা তো আছেই। কিন্তু মাবিয়ার বাবা কষ্ট হলেও মেয়েকে এগুলো জুগিয়ে গেছেন। রক্ষণশীল সমাজ ব্যবস্থায় মেয়েদের খেলাধুলাকে নিরুৎসাহিত করার যে প্রবণতা আছে, পাড়া-প্রতিবেশী কিংবা হঠাৎ বেড়াতে আসা আত্মীয়-স্বজনের ঠোঁট উল্টে করা কটুকাটব্যগুলো পোডিয়ামে দাঁড়িয়ে বারবারই মনে পড়ছিল মাবিয়ার।

যতই বলুন কোনো আক্ষেপ নেই, কোনো অভিযোগ নেই; সোনা জয়ের পর সরকারের তরফ থেকে নিদেনপক্ষে একটি ফোন কলের আশা করেছিলেন মাবিয়া। সেটা তিনি নিজের মুখেই বললেন, ‘দেশ থেকে উচ্চ পর্যায়ের কারও একটা ফোন পেলে খুব ভালো লাগত। আমরা তো দেশের জন্যই খেলি। সব সময় সঙ্গে থাকে লাল-সবুজ পতাকা। কেউ আমার সঙ্গে কথা বলেনি। হয়তো তাঁদের সময় হয়নি। তবে কারও বিরুদ্ধে আমার কোনো অভিযোগ নেই।’

নিজের জন্য কোনো চাওয়াও নেই। বিশ্বমানের সুযোগ-সুবিধা চাইছেন না। চাইছে যে ভারত-শ্রীলঙ্কার প্রতিযোগীদের সঙ্গে লড়তে হয়, অন্তত তাদের মানের প্রশিক্ষণ সুবিধা যেন দেশের ভারোত্তোলকেরা পায়। ‘আমরা কী পরিবেশে অনুশীলন করি। কী ধরনের পোশাক বা কোন ব্র্যান্ডের জুতা পরি, এসব শুনে ভারতীয় ও শ্রীলঙ্কান বন্ধুরা খুব অবাকই হয়েছে। আমাদের বারবার বলছিল, “কীভাবে তোমরা এমন অপ্রতুল সুযোগ-সুবিধা নিয়ে ভারোত্তোলনের মতো একটি খেলা খেলার সাহস পাও!” আমরা কেউই তাদের প্রশ্নগুলোর উত্তর দিতে পারিনি’—বলছিলেন তিনি।

এসএ গেমসের ঠিক আগেই অনুশীলন করতে গিয়ে হাতের হাড় ভেঙে গিয়েছিল মাবিয়ার। গেমসেও ৮২ কেজি তিনি তুলেছেন ভাঙা হাড় ঠিকমতো জোড়া লাগার আগেই। প্রসঙ্গটা তুলতেই হেসে ফেললেন। যেন কোনো ব্যাপারই নয়।

জীবন-যুদ্ধে জয়ী মাবিয়ার কাছে কোনো কিছুই এখন আর অসম্ভব মনে হয় না।

25
মেসি-সুয়ারেজের ‘শতাব্দী সেরা’ পেনাল্টি!

     
মেসির পেনাল্টিতে সতীর্থরাও অবাক। সুয়ারেজ​ তখনো বুঝিয়ে দিচ্ছেন আলবাকে! ছবি: রয়টার্স

ডিয়েগো ম্যারাডোনার শতাব্দী সেরা গোল তিনি অনেক আগেই করে দেখিয়েছেন। হ্যান্ড অব গড গোলও। এবার লিওনেল মেসি যা করলেন, সেটি ম্যারাডোনারও বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ারে নেই। আছে ফুটবলের সবচেয়ে তীক্ষ্ণ মেধার অধিকারী একজনের—ইয়োহান ক্রুইফ। ক্রুইফের বহুল আলোচিত পেনা​ল্টি শটের কথা মনে করিয়ে দিলেন মেসি। কাল মেসি-সুয়ারেজের যুগল-বন্দী হলো এমনই এক গোল। যেটিকে বলা হচ্ছে ‘পেনাল্টি অব দ্য সেঞ্চুরি’।

ম্যাচের ৮০ মিনিটে পেনাল্টি পেয়েছিল বার্সা। সেল্টা ডিফেন্ডার কাস্ত্রোর বাঁয়ে বল ঠেলে ডান দিক দিয়ে বের হয়ে ছিলেন মেসি। ডান-বামের এই বিভ্রান্তিতে পড়ে কাস্ত্রো বক্সে ফেলে দিল মেসিকে। পেনাল্টি। মেসি তখন দাঁড়িয়ে মাইলফলকের সামনে। লা লিগায় নিজের ৩০০তম গোল!

পেনাল্টি শট মেসিই নিলেন। কিন্তু গোলে শট না করে আলতো পাস বাড়িয়ে দিলেন। যেন সুয়ারেজকে দিয়ে হ্যাটট্রিকটাই করাতে চান! মেসির আলতো পাস থেকে গোল করার জন্য ছুটে এসেছিলেন নেইমারও। কিন্তু সুয়ারেজের উসাইন বোল্টীয় দৌড়ের কাছে হেরে গেলেন। সুয়ারেজের জোরালো শট জালে জড়াল। শট আলতো করে নিলেও সমস্যা হতো না। এমন পেনাল্টিতে যে গোলরক্ষক রীতিমতো ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গিয়েছিল।

শুধু গোলরক্ষক? সেল্টা ডিফেন্ডাররা হতবুদ্ধি, রেফারিরও যেন বাঁশিয়ে ফুঁ দিতে খানিকটা দেরিই হলো। সত্যি বলতে কি বার্সা খেলোয়াড়দের সবাইও এর জন্য প্রস্তুত ছিলেন না। এক-দুজন তো গোল উদযাপনের সময় মেসির কানে কানে কী যেন জানতেও চাইলেন। মেসি তখন দুষ্টুমিষ্টি হাসছেন। বার্সা কোন এনরিকে তাঁর সহকারীর দিকে তাকালেন। সহকারীও আলতো চোখ টিপে বললেন, ‘সব ঠিক আছে।’

এমন যে একটা পেনাল্টি নেওয়া হবে, সেটি অনুশীলনেই ঠিক করা ছিল বলে জানিয়েছেন নেইমার। তবে সেটি মেসি-সুয়ারেজ নয়, মেসি-নেইমার যুগলবন্দীতেই নাকি হওয়ার কথা ছিল, ‘এটা আমার জন্যই পরিকল্পনা করা ছিল। আমরা এটা অনুশীলনও করেছি। কিন্তু লুইস বলের কাছে আগে চলে গেছে। যা-ই হোক, ব্যাপার না। ও গোল ​করেছে, পরিকল্পনাটা তাই কাজেই লেগেছে।’

ক্যারিয়ারে ৮৩ পেনাল্টির ১৭টি মিস করা মেসি​র পেনাল্টি নিয়ে আলোচনা এই প্রথম নয়। তবে এবারেরটি যেন ছাপিয়ে গেল বাকি সবকিছুকেই। স্প্যানিশ ক্রীড়া দৈনিক তো এরই মধ্যে এর নাম দিয়েছে ‘শতাব্দীর সেরা পেনাল্টি’। বার্সা কিংবদন্তি ক্রুইফ ১৯৮২ সালে আয়াক্সের হয়ে এমন একটি পেনাল্টি নিয়েছিলেন। হেলমন্ড স্পোর্টের বিপক্ষে ওই ম্যাচটিতে পেনাল্টি থেকে সরাসরি গোলে শট না নিয়ে সতীর্থ জেসপার ওলসেনের সঙ্গে ওয়ান-টু খেলেন। এরপর ফিরতি পাস থেকে ক্রুইফের গোল। ২০০৫ সালে আর্সেনালের থিয়েরি অঁরি আর রবার্ট পিরেস ম্যানচেস্টার সিটির বিপক্ষে একই চেষ্টা করেছিলেন। যদিও তাতে গোল করতে তাঁরা ব্যর্থ হন।

মেসি-সুয়ারেজের যুগলবন্দীর এই গোল একই সঙ্গে প্রশংসা আর বিতর্ক তৈরি করেছে। প্রতিপক্ষের প্রতি যথাযোগ্য সম্মান দেখানোর প্রশ্নও উঠেছে। এভাবে গোল করা তো প্রতিপক্ষের অপমান। মেসিরা কি তবে লিগের প্রথম সাক্ষাতে ৪-১ গোলে হেরে যাওয়ার শোধই এভাবে দিতে চাইলেন সেল্টা ভিগোকে?

টিভিতে দেখে মনে হয়েছে, মেসি যে এমন কিছু করবেন বার্সার অনেকেই জানত না। এমনকি কোচ এনরিকেও। এ গোল নিয়ে তাঁর প্রতিক্রিয়া, ‘ক্রুইফের সেই গোলটা তো আমাদের সবারই মনে আছে। আমি হলে অবশ্য এটা করার সাহস পেতাম না। আমি সরাসরি বলে কিকই নিতাম।’

এমন গোল কি করা উচিত? এনরিকের উত্তর, ‘কেউ এটা পছন্দ করবে, কেউ করবে না। তবে বার্সার খেলোয়াড় কিংবা এই ক্লাবের সদস্যরা মনে করে, শিরোপা জয়ের চেয়েও মুগ্ধকর খেলা দিয়ে ফুটবলটা উপভোগ করা জরুরি। আমাদের ফুটবল উপভোগ করতে হবে, প্রতিপক্ষকে সম্মানও দেখাতে হবে। দেখাতে হবে, আমরা যেভাবে খেলি, এতে আমরাই সেরা।’ এ নিয়ে ম্যাচের পরপরই একটু বেশিই কথা হচ্ছিল জন্যই হ​য়তো এনরিকে পাল্টা জবাব দিতেও কসুর করলেন না, ‘স্পেন এমন একটা দেশ, যেখানে স্কিলের এক টুকরো প্রদর্শনীর চেয়ে বলে শুধু লাথি মারাটা বেশি হাততালি পায়। এ নিয়ে আমরা তাই ভাবি না।’

সেল্টা কোচ এদুয়ার্দো বেরিজ্জোও মনে করেন, এটা প্রতিপক্ষকে অসম্মান নয়। তবে এমন পেনাল্টি নেওয়া হতে পারে, সেটা তিনিও ভাবতে পারেননি।

প্রতিপক্ষের কথা বাদই দিন, খোদ জর্ডি আলবাও ​স্বীকার করলেন, এমনটা হবে তাঁরা জানতেনই না। বার্সা ফুলব্যাক বলেছেন, ‘লিও সব সময়ই কিছু না কিছু আবিষ্কার করে, আর এটা নিখুঁতভাবে কাজেও লাগে। আমরা অবশ্য অনুশীলনে এর কিছুই দেখিনি, আমরা কিছুই জানতাম না।’ তবে কি শুধু নেইমারই জানতেন? এমনকি সুয়ারেজও নয়?

26
Cricket / ‘ওদের সাহস অপরিসীম’
« on: February 15, 2016, 10:08:11 AM »
‘ওদের সাহস অপরিসীম’
অনূর্ধ্ব-১৯ দলের পরামর্শক হিসেবে বিসিবির সঙ্গে আপাতত চুক্তি শেষ স্টুয়ার্ট লর। তবে ভবিষ্যতে বিসিবির ডেভেলপমেন্ট কমিটির কার্যক্রমে তাঁর থাকার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। অস্ট্রেলিয়ান এই কোচ সে ব্যাপারে যেমন আশাবাদী, আশাবাদী এবারের যুব বিশ্বকাপে খেলা বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দল নিয়েও। ভবিষ্যৎ জাতীয় দলে এই দলের কয়েকজনকে এখনই দেখতে পাচ্ছেন তিনি—

স্টুয়ার্ট ল

* যুব বিশ্বকাপে বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দল সেরা সাফল্য পেল এবারই। কীভাবে মূল্যায়ন করবেন এই ফলাফলকে?
স্টুয়ার্ট ল: ফাইনালে উঠতে না পারায় কিছুটা হতাশ তো অবশ্যই। তবে দক্ষিণ আফ্রিকা, পাকিস্তানের মতো দল থাকার পরও তৃতীয় হওয়াটা ভালো ফলাফল। পুরো টুর্নামেন্টে আমাদের ছেলেরা মাত্র একটা ম্যাচই হেরেছে। দুর্ভাগ্যবশত সেটা ছিল সেমিফাইনাল।

* বাংলাদেশ কাপের ফাইনাল খেলবে, এমন আশা কি শুরু থেকেই ছিল আপনার?
স্টুয়ার্ট ল: দল হিসেবে আমরা ভালোই ছিলাম। আমাদের জন্য ফাইনাল খেলাটা অস্বাভাবিক হতো না। তবে সেমিফাইনালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে আমরা ভালো খেলিনি। দিনটা আমাদের জন্য খারাপ ছিল, অন্যদিকে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সেদিন খুব ভালো ক্রিকেট খেলেছে।

* সেমিফাইনালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে হারটাকে অঘটন বলবেন?
স্টুয়ার্ট ল: বিশ্বকাপের আগে তাদের আমরা ৩-০ ব্যবধানে সিরিজ হারিয়েছি। তবে এটা স্বীকার করতেই হবে, কন্ডিশনের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ায় বিশ্বকাপে এসে ভালো খেলতে শুরু করে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। দল হিসেবেও উন্নতি করতে থাকে। সিরিজের সময় এতটা ভালো অবস্থায় তারা ছিল না।

* বাংলাদেশের তরুণ ক্রিকেটারদের খুব কাছ থেকে দেখলেন। তাদের শক্তিমত্তা ও দুর্বলতার জায়গাগুলো কোথায়?
স্টুয়ার্ট ল: শক্তিমত্তার কথা বললে ওদের সাহস অপরিসীম। দুর্বলতা খুব বেশি নেই। তবে চাপের মধ্যেও ফর্ম, আস্থা এবং দক্ষতা ধরে রাখার ব্যাপারটি তাদের বুঝতে হবে। তাদের কাছে জাতির অনেক প্রত্যাশা। এ রকম প্রত্যাশার ভার নিয়ে ক্রিকেট খেলাটা সহজ কাজ নয়। আমার বিশ্বাস অভিজ্ঞতা অর্জনের সঙ্গে সঙ্গে এসব জায়গায়ও তারা আরও উন্নতি করবে। আমি নিশ্চিত সবাই না হলে এই দলের বেশ কয়েকজন একসময় জাতীয় দলে জায়গা করে নেবে।

* কারও নাম কি নির্দিষ্ট করে বলবেন?
স্টুয়ার্ট ল: না, সেটা বলতে চাচ্ছি না।

* কিন্তু কিছু ব্যতিক্রম থাকলেও অনেক সময়ই দেখা গেছে বাংলাদেশের অনূর্ধ্ব-১৯ পর্যায়ে ভালো খেলা ক্রিকেটাররা পরের ধাপে গিয়ে পারফরম্যান্স ধরে রাখতে পারে না। এই দলের খেলোয়াড়দের কাছে আপনার আশাটা কী রকম?
স্টুয়ার্ট ল: আমি মনে করি, তারা পারবে এই পারফরম্যান্সকে পরের ধাপে নিয়ে যেতে। কিন্তু অতিরিক্ত প্রত্যাশা না করাই ভালো। ওরা বিশ্বকাপে ভালো খেলেছে, সেটা অন্য ব্যাপার। তারা যদি কঠোর পরিশ্রম করতে থাকে, ঘরোয়া ক্রিকেটে ভালো খেলতে থাকে এবং নিজেদের পারফরম্যান্সকে উঁচুতে নিয়ে যেতে পারে, তারা যেকোনো জায়গায় খেলতে পারবে।

* বয়সভিত্তিক ক্রিকেটে আরও উন্নতির জন্য বিসিবির আর কী করা উচিত বলে মনে করেন আপনি?
স্টুয়ার্ট ল: বিসিবির যা আছে, তা নিয়ে সামর্থ্যের সর্বোচ্চটাই করছে তারা। বয়সভিত্তিক ক্রিকেটেও সাফল্যও আসছে। অন্যান্য দেশের মতো এখানেও তরুণ ক্রিকেটাররা উঠে আসছে। তবে আমি মনে করি, ঘরোয়া ক্রিকেটের পারফরম্যান্সটাকে কীভাবে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া যায়, দৃষ্টিটা এখন সেদিকেই বেশি করে দিতে হবে।

* ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও ভারত যদিও ফাইনাল খেলল...আপনার দৃষ্টিতে এই টুর্নামেন্টের সেরা দল কোনটি?
স্টুয়ার্ট ল: এই পর্যায়ের ক্রিকেটে কোনো একটা নির্দিষ্ট দলকে বেছে নেওয়া আসলে কঠিন। ওয়েস্ট ইন্ডিজ প্রথম ম্যাচের পর থেকে খুব ভালো খেলেছে। ভারত তো শুরু থেকেই ধারাবাহিক ছিল। শ্রীলঙ্কাও ভালো খেলেছে। এ রকম বেশ কয়েকটা দলই আসলে ভালো। কোনো একটাকে সেরা বলা কঠিন। বয়সভিত্তিক পর্যায়ে যেকোনো দল যেকোনো দলকে হারাতে পারে।

* বিসিবির সঙ্গে তো আপনার চুক্তি আপাতত শেষ। নতুন করে চুক্তিবদ্ধ হওয়ার সম্ভাবনা আছে?
স্টুয়ার্ট ল: আমি চেষ্টা করছি আরও কিছু কাজ করতে। আসলে এখানে কাজ করার সুযোগ পেলে আমার ভালোই লাগবে।

27
‘রেকর্ড–পাগল’দের খেলায় আম্পায়ারের কথা কেউ বলে না!

     
টেস্টে সেঞ্চুরি করা প্রথম দুই আম্পায়ার বাকনর-কোয়ের্তজেন।—ছবি: ক্রিকইনফো

ক্রিকেট মানে খেলাটা এখন আর শুধু ব্যাট আর বলের নয়, রেকর্ডেরও! কোনো দিন ব্যাটসম্যানরা রেকর্ড গড়ছেন, কোনো দিন বোলাররা। ফিল্ডাররাও বাদ যাচ্ছেন না, কিংবা কোন উইকেট কিপার কবে কত ক্যাচ ধরছেন তা নিয়েও পাতার পর পাতা লেখা হয়। অথচ ক্রিকেট মাঠের অবিচ্ছেদ্য অংশ যে আম্পায়ার, তাঁদের রেকর্ড-টেকর্ড নিয়ে কজনাই বা ভাবেন! গতকাল প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে অভিষেকের পর টানা ১০০ টেস্ট খেলার রেকর্ড গড়েছেন ব্রেন্ডন ম্যাককালাম, এটা অনেকেরই জানা। কিন্তু কয়জন আম্পায়ার টেস্ট ম্যাচ পরিচালনার সেঞ্চুরি করেছেন এটা জানেন কয়জন?

টেস্টের প্রায় দেড় শ বছরের ইতিহাসে টেস্ট খেলার সেঞ্চুরি করেছেন ৬৪ জন কিন্তু টেস্টে ম্যাচ পরিচালনার সেঞ্চুরি করতে পেরেছেন মাত্র তিনজন। সবচেয়ে বেশি ১২৮ টেস্টে ‘মাঠের সবচেয়ে ক্ষমতাধর ব্যক্তি’র দায়িত্বে ছিলেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের স্টিভ বাকনার। এর পরেই আছেন দক্ষিণ আফ্রিকান রুডি কোয়ের্তজেন। তবে তিনি বাকনার থেকে পিছিয়ে আছেন অনেক বেশি। ১০৮টি টেস্ট পরিচালনা করেছেন তিনি। এই দুজনের পরেই আছেন আলিম দার—১০১ টেস্টে দায়িত্ব পালন করেছেন। পাকিস্তানের দারের বয়স মাত্র ৪৭, সাইমন টফেলের মতো অকস্মাৎ অবসর না নিলে বাকনারের রেকর্ডটা হয়তো একদিন তাঁরই হবে।

টেস্টের তুলনায় ওয়ানডেতে ‘সেঞ্চুরিয়ান’ আম্পায়ারের সংখ্যা অনেক বেশি। ১৬ জন আম্পায়ার ওয়ানডেতে ১০০ বা তার চেয়ে বেশি ম্যাচ প​রিচালনা করেছেন। ডাবল সেঞ্চুরি করেছেন মাত্র দুজন। এখানে অবশ্য সবার আগে কোয়ের্তজেন। ২০৯ টি ওয়ানডেতে মাঠে ছিলেন তিনি। এরপর নিউজিল্যান্ডের বিলি বাউডেন। মাঠে মজা করার জন্য বিখ্যাত এই আম্পায়ার ঠিক ২০০টি ওয়ানডে পরিচালনা করেছেন। এরপরই আছেন বাকনার (১৮১) ও দার (১৭৮)।

তবে টি-টোয়েন্টিতে এখনো ফিফটিও করতে পারেননি কেউ। টি-টোয়েন্টি ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগের কারণে আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি খেলা হয় খুব কম। এর মাঝেও ৩৫টি ম্যাচে দায়িত্ব পালন করেছেন দার। আর অস্ট্রেলিয়ার টফেল অবসরের আগে পরিচালনা করেছিলেন ৩৪টি ম্যাচ।

28
ছক্কায় লেখো নাম, সে নাম রয়ে যাবে

ওয়ানডেতে ছক্কার ডাবল সেঞ্চুরি ম্যাককালামের। ছবিঃ এএফপি।২৬০ ম্যাচে ৩০.৪১ গড়ে ৬০৮৩ রান। স্ট্রাইকরেট ৯৬.৩৭, ৫টি সেঞ্চুরির সঙ্গে ৩২টি হাফ সেঞ্চুরি। এক নজরে এটাই ব্রেন্ডন ম্যাককালামের ১৪ বছরের ওয়ানডে ক্যারিয়ারের পরিসংখ্যান। যে ক্যারিয়ার শেষ হয়েছে কাল, হ্যামিল্টনে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে চ্যাপেল-হ্যাডলি ট্রফির শেষ ওয়ানডে দিয়ে।

এই পরিসংখ্যান দেখে স্ট্রাইকরেট ছাড়া ম্যাককালামের বাকি সবকিছু ‘গড়পড়তা’ মনে হচ্ছে কী? সেটাই হওয়ারই কথা। বোবা পরিসংখ্যানের সাধ্য কী নিজের শরীরে কতগুলো সংখ্যা ঝুলিয়ে রেখে ম্যাককালামকে প্রকাশ করে!

অধিনায়ক হয়ে নিউজিল্যান্ড দলটাকে আমূল বদলে দিয়েছেন, সাদামাটা একটা দলকে বানিয়েছেন বিশ্ব ক্রিকেটের সবচেয়ে আক্রমণাত্মক দলগুলোর একটা, নিজে হয়ে উঠেছেন ক্রিকেটের সবচেয়ে শ্রদ্ধাভাজন অধিনায়কদের একজন—এসব তো আর পরিসংখ্যানে লেখা থাকছে না।

ওয়ানডেতে ছক্কার ডাবল সেঞ্চুরি ম্যাককালামের।

অর্জনও তো কম নয়। গত বছর নিউজিল্যান্ডকে বিশ্বকাপের ফাইনালে নিয়ে গেছেন প্রথমবারের মতো। ৬২টি ওয়ানডেতে দলকে নেতৃত্ব দিয়ে জিতিয়েছেন ৩৬টিতে। কিউই অধিনায়কদের মধ্যে তাঁর ৬১.৮৬ শতাংশ জয়ের হারের কাছাকাছি আছেন শুধু ড্যানিয়েল ভেট্টোরি (৫৫.৩৩ শতাংশ)। গত বছর ডিসেম্বরে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ডানেডিন টেস্টে ইতিহাসের মাত্র দ্বিতীয় ব্যাটসম্যান (প্রথম জন অ্যাডাম গিলক্রিস্ট) হিসেবে টেস্ট ক্রিকেটে ১০০ ছক্কার মাইলফলক ছুঁয়েছিলেন, কাল বিদায়ী ওয়ানডেতে নাম লেখালেন ২০০ ছক্কার অভিজাত ক্লাবেও। ওয়ানডে ইতিহাসে চতুর্থ ব্যাটসম্যান হিসেবে ২০০ ছক্কার মাইলফলক ছুঁয়েছেন ম্যাককালাম!

ওয়ানডেতে তাঁর চেয়ে বেশি ছক্কা আছে শুধু পাকিস্তানের শহীদ আফ্রিদি (৩৬৯ ইনিংসে ৩৭১টি ছক্কা), শ্রীলঙ্কার সনাৎ জয়াসুরিয়া (৪৩৩ ইনিংসে ২৭০) ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের ক্রিস গেইলের (২৬৪ ইনিংসে ২৩৮)।

বিস্ময়কর লাগতে পারে, কাল যিনি ছক্কার ডাবল সেঞ্চুরি করেছেন, সেই ম্যাককালামের ক্যারিয়ারের প্রথম ১৭ ইনিংসে কোনো ছক্কাই ছিল না! প্রথম ছক্কাটি মেরেছেন ১৮তম ইনিংসে এসে, প্রথম ৫০ ইনিংসে ছক্কা ছিল মাত্র ১১টি, ১০০ ইনিংসে ৫২টি। সেই ম্যাককালামেরই পরের ১২৮ ইনিংসে ১৪৮ ছক্কা!

ঘটনাচক্রে গেইল আর জয়াসুরিয়ার ক্যারিয়ারের শুরুটাও খুব বেশি ‘ছক্কাময়’ ছিল না। গেইলের প্রথম ২২ ইনিংসে মাত্র ১টি ছক্কা, জয়াসুরিয়ার প্রথম ২৫ ইনিংসে মাত্র ২টি! আফ্রিদি আবার উল্টো। ওয়ানডে ক্যারিয়ারের প্রথম ইনিংসেই ১১টি ছক্কা মেরেছিলেন পাকিস্তানি অলরাউন্ডার। ক্যারিয়ারের প্রথম ১০০ ইনিংস শেষে ছক্কার সংখ্যায়ও আফ্রিদি বেশ এগিয়ে বাকিদের চেয়ে। প্রথম ১০০ ইনিংসেই আফ্রিদির ছক্কা ছিল ৮১টি, যেখানে গেইলের ছিল ৫৩টি, ম্যাককালামের ৫২ আর জয়াসুরিয়ার ৫১টি।

ক্যারিয়ার শেষের পর ছক্কার সংখ্যায় জয়াসুরিয়া, গেইলের চেয়ে পিছিয়ে থাকলেও একটা জায়গায় কিন্তু এ দুজনের চেয়ে এগিয়ে ম্যাককালাম। ২০০ ছক্কা মারতে এই কিউই ব্যাটসম্যানের খেলতে হয়েছে ২২৮ ইনিংস। গেইলের লেগেছিল ২৪১ ইনিংস, জয়াসুরিয়ার ৩৪৩!

এই জায়গায়ও শুধু আফ্রিদিই এগিয়ে ম্যাককালামের চেয়ে। ২০০ ছক্কার মারতে পাকিস্তানি অলরাউন্ডারকে খেলতে হয়েছিল ১৯৫ ইনিংস।

29
আমার কাছে দুই জীবনই উপভোগ্য !!

     
কাটার মুস্তাফিজুর রহমান

১ কোটি ৪০ লাখ রুপিতে মুস্তাফিজুর রহমানকে নিয়েছে আইপিএলের দল সানরাইজার্স হায়দরাবাদ। কাল দুপুরে বিসিবি একাডেমি ভবনে বাংলাদেশ দলের এই বাঁহাতি পেসারের সঙ্গে কথা হলো আইপিএল, তাঁর চোট ও ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে-

* পাকিস্তান সুপার লিগে (পিএসএল) খেলতে পারলেন না চোটের কারণে। এবার আরও বড় সুযোগ, খেলতে যাবেন আইপিএলে। আইপিএলে দামটা কি আরও বেশি পেতে পারতেন?
মুস্তাফিজুর রহমান: আমি আসলে এসব ভালো বুঝি না।

* আইপিএলে দল পাওয়ার ব্যাপারে কতটা আত্মবিশ্বাসী ছিলেন?
মুস্তাফিজ: আত্মবিশ্বাসী বলতে...জুনে ভারত সিরিজে ভালো করায় ওদের নজরে এসেছিলাম। সে কারণেই হয়তো ভেবেছিলাম...

* ওই সিরিজের পর থেকেই ভারতীয় সংবাদমাধ্যম আপনাকে ভীষণ গুরুত্ব দিচ্ছে।
মুস্তাফিজ: ওদের মিডিয়া আমাকে কেন গুরুত্ব দিচ্ছে, তা তো বলতে পারব না।

* কেন, ভারত সিরিজে দুর্দান্ত বোলিংয়ের জন্য!
মুস্তাফিজ: (হাসি) হবে হয়তো!

* শুনেছেন নিশ্চয়ই, অস্ট্রেলিয়া সিরিজে অভিষিক্ত ভারতীয় বাঁহাতি পেসার বারিন্দর স্রানকে দেশটির সংবাদমাধ্যম বলছে ভারতের ‘মুস্তাফিজ’!
মুস্তাফিজ: আইপিএলে স্রান আর আমি তো একই দলে।

* তাঁর সঙ্গে একই দলে খেলতে কেমন লাগবে?
মুস্তাফিজ: সময় হোক, তার পর বলা যাবে। কিছু হওয়ার আগে তো ভেবে লাভ নেই।

* সম্প্রতি কাঁধের চোটে পড়েছেন। চোট নিয়ে মনে হচ্ছে চিন্তিত...
মুস্তাফিজ: এখন বেশ ভালো আছি। জোরে বোলিং করলে ব্যথা লাগে না। তবে আমার বলগুলো (বিশেষ করে কাটার) করলে ব্যথা অনুভব হয়। আর বোলিং করলাম মাত্র কয়দিন। এখন বুঝতে পারছি না সামনে কী হবে। তবে আত্মবিশ্বাস আছে যে চোট কাটিয়ে উঠতে পারব। কিন্তু পুরোপুরি ফিট থাকা আর চোটের চিন্তা নিয়ে খেলার মধ্যে পার্থক্য তো থাকেই। এতটুকু বলতে পারি, এখন অবস্থা ভালো। দোয়া করবেন ওপরওয়ালা যেন এশিয়া কাপ-বিশ্বকাপের আগে আরও ভালো করে দেন।

* আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পা রাখার পর এই প্রথম এমন অভিজ্ঞতা হলো।
মুস্তাফিজ: প্রথম ব্যথা অনুভূত হয়েছিল জিম্বাবুয়ে সিরিজের শেষ ওয়ানডেতে। এর পর বিপিএল খেললাম। তবে বেশি সমস্যা হলো জিম্বাবুয়ের সঙ্গে টি-টোয়েন্টি সিরিজে। ওই সময় খুব একটা বোলিং করিনি। কোচকে বলার পর একপর্যায়ে তিনি আমাকে বিশ্রাম দিলেন।

* আপনার বেশির ভাগ সাফল্য পুরোনো বলে। নতুন বলে ভালো করার জন্য কী করছেন?
মুস্তাফিজ: চেষ্টা করছি নতুন বলে ভালো করার। ধরুন, নতুন বলে ভালো কিছু করতে গতি বাড়ানোর চেষ্টা করলাম। কিন্তু সেটা করতে গিয়ে ওভারপ্রতি ১০-এর ওপরে রান দিলাম, তাতে লাভ হলো কী!

* আপনি তো উইকেটশিকারি বোলার। টি-টোয়েন্টিতে কি উইকেট শিকারের দিকে বেশি নজর থাকে?
মুস্তাফিজ: না। টি-টোয়েন্টিতে উইকেট পাওয়ার চেয়ে রান চেক দেওয়াটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আমার লক্ষ্য থাকে যত সম্ভব রান কম দেওয়া।

* অল্প সময়ে অনেক অর্জন আপনার। কোন জীবনটা বেশি উপভোগ্য মনে হয়, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আসার আগে নাকি পরের?
মুস্তাফিজ: একেক জীবন একেক রকম। আমার কাছে দুই জীবনই উপভোগ্য। বাড়িতে গেলে আগের জীবনে ফিরে যাই। আর ঢাকায় ফিরলে ফিরে আসি বর্তমান জীবনে।

* এখন তো টিভি পর্দায় সরব উপস্থিতি আপনার! এরই মধ্যে বিজ্ঞাপন করেছেন বেশ কয়েকটি। ক্যামেরার সামনে দাঁড়াতে কতটা স্বচ্ছন্দ বোধ করেন?
মুস্তাফিজ: আসলে সবচেয়ে স্বচ্ছন্দ বোধ করি খেলায়। তবে বিজ্ঞাপন করলে সেখানে তো কিছু করতেই হয়। স্বচ্ছন্দ বোধ না করলেও কিছু না-কিছু করতে হয়। বিজ্ঞাপন হোক আর সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি, যেকোনো ক্যামেরার সামনে দাঁড়াতেই অস্বস্তি বোধ করি। তবে দুটির পার্থক্য হচ্ছে, বিজ্ঞাপনের ক্যামেরার সামনে মজা-টজা করা যায়। সাংবাদিকদের সামনে সেটা করা যায় না। কেমন যেন ভয় লাগে! এটা শুধু আমার নয়, সব খেলোয়াড়ের লাগে।

* অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ প্রসঙ্গে আসা যাক। গত যুব বিশ্বকাপ খেলেছিলেন। ওই বিশ্বকাপে খেলা আপনার পাঁচ সতীর্থ বর্তমান দলটিতে খেলছেন। সেই দলটির কথা নিশ্চয়ই মনে পড়ে?
মুস্তাফিজ: সেই সময়টা আর ওদের কথা তো মনে পড়েই। ওরা যখন এখানে (একাডেমি ভবনে) থাকে, ওদের সঙ্গই আমি বেশি পাই। জাতীয় দলের সতীর্থদের চেয়ে ওদের সঙ্গে বেশি সময় কাটে।

* বাংলাদেশ দলে মাশরাফি বিন মুর্তজার অধীনে খেলছেন আর অনূর্ধ্ব-১৯ দলে খেলেছেন মেহেদী হাসান মিরাজের অধীনে। দুই অধিনায়কের মধ্যে কী পার্থক্য দেখেন?
মুস্তাফিজ: দুজন যার যার জায়গায় সফল। মাশরাফি ভাই জাতীয় দলে আর মিরাজ বয়সভিত্তিক ক্রিকেটে। দুজন যার যার দায়িত্ব ভালোভাবে পালন করে যাচ্ছে। তবে মিরাজ আমার ভালো বন্ধু। ও জাতীয় দলে এলে অনেক ভালো লাগবে।

* এবার যুব বিশ্বকাপে বাংলাদেশের শিরোপা জেতার ব্যাপারে কতটা আশাবাদী?
মুস্তাফিজ: এখনই বলতে পারছি না। আগে থেকে কিছু বলাও ঠিক নয়। তবে বাংলাদেশ যেভাবে খেলছে, খেলতে থাকুক। দেখা যাক কী হয়।

* ব্যক্তিগত বিষয়ে কিছু জানতে চাই। খেলা না থাকলে সাধারণত কী করেন?
মুস্তাফিজ: ঢাকায় যেখানে থাকি (বিসিবির একাডেমি ভবন), সেখানেই সময় কাটে। যাওয়ার তো খুব একটা জায়গা নেই এখানে। আর বাড়িতে গেলে নানা জায়গায় ঘুরি। ভাই-বন্ধুদের নিয়ে সময় দারুণ কেটে যায়।

* সবচেয়ে ভালো লাগে কোন সময়?
মুস্তাফিজ: উইকেট পাওয়ার পর আর বাড়িতে যাওয়ার সময়। দুটি দুই রকম ভালো লাগা।

* সম্প্রতি আইসিসি বর্ষসেরা ওয়ানডে একাদশে জায়গা পেয়েছেন, এর পর পিএসএলে ও আইপিএলে দল পেয়েছেন। এর মধ্যে কোন খবরটা বেশি আনন্দ দিয়েছে?
মুস্তাফিজ: সবগুলোই সমান আনন্দ দিয়েছে। কোনোটাই ছোট করে দেখতে চাই না।

Source: http://www.prothom-alo.com/sports/article/763333/

30
পূর্বসূরিদের ভার নামালেন মেহেদীরা !!

আত্মবিশ্বাসী মিরাজরা ম্যাচ শেষে সেলফি তুলেই করে নিলেন সেমিফাইনালে ওঠার উদ্‌যাপন

সাকিব আল হাসান-মুশফিকুর রহিম-তামিম ইকবাল এই মুহূর্তে রয়েছেন দুবাইয়ে, খেলছেন পাকিস্তান সুপার লিগে। খবরটা তাঁরা নিশ্চয়ই পেয়ে থাকবেন। যুব বিশ্বকাপে তো বটেই, ক্রিকেটের কোনো বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় এই প্রথম সেমিফাইনালে উঠেছে বাংলাদেশ। এমন সুখবরে তারকা-ত্রয়ী নিজেদের একটু হালকা বোধ করতেই পারেন। তাঁদের বুকের ওপর থেকে কি নেমে গেল না একটা পাথর ভার!
শুধু সাকিব-তামিম-মুশফিক কেন; দেশের কত ক্রিকেটার দীর্ঘশ্বাসটা বয়ে বেড়াচ্ছিলেন বছরের পর বছর। এমনিতে দ্বিপক্ষীয় সিরিজে দারুণ খেলে, কিন্তু বয়সভিত্তিক ক্রিকেটের সর্বোচ্চ টুর্নামেন্টে গিয়ে কেন যেন বাংলাদেশ পথ হারিয়ে ফেলে! এর আগে কোয়ার্টার ফাইনাল থেকেই বাংলাদেশ ফিরেছে তিনবার। পূর্বসূরিরা যা পারেননি, মেহেদী-নাজমুল-জাকিররা তা-ই করে দেখিয়েছেন। কাল মিরপুরে কোয়ার্টার ফাইনালে নেপালকে হারিয়ে পূর্বসূরিদের ভারটা নামিয়েছে মেহেদী হাসান মিরাজের দল।

যুবাদের এমন অর্জনে সাবেক অনূর্ধ্ব-১৯ অধিনায়কেরাও ভীষণ তৃপ্ত। নিউজিল্যান্ডে অনুষ্ঠিত ২০০২ যুব বিশ্বকাপে বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দেওয়া নাফিস ইকবাল তো মেহেদীদের সাফল্যে অভিভূত, ‘অভিনন্দন! নিঃসন্দেহে বিরাট অর্জন। মিরাজ ও তাঁর দলকে কৃতিত্ব দিতেই হবে। আশা করি, এই দল অনেক দূরে যাবে।’

কাল মেহেদী-জাকির হাসানের অসাধারণ ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশ পেয়েছে কাঙ্ক্ষিত জয়। এই দুজনের ব্যাটিং মুগ্ধতার আবেশ ছড়িয়ে দিয়েছে নাফিসের মনে, ‘আজ (কাল) খানিকটা চাপে ছিল ওরা। তবে জাকির-মিরাজ যেভাবে ব্যাটিং করল, দুর্দান্ত! এই বয়সে ওরা যে পরিপক্বতার পরিচয় দিয়েছে, এক কথায় অসাধারণ!’

বয়সভিত্তিক ক্রিকেটে অলরাউন্ড পারফরম্যান্সে মেহেদী যেমন নিজেকে চিনিয়েছেন আলাদাভাবে, এর আগে সেভাবে চিনিয়েছিলেন মাহমুদুল হাসানও। বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দলের হয়ে ৫৭ ম্যাচে করেছিলেন ১১৬৮ রান, নিয়েছিলেন ৬৬ উইকেট। খেলেছিলেন ২০০৮ যুব বিশ্বকাপ। দলকে নেতৃত্ব দিয়েছেন নিউজিল্যান্ডে অনুষ্ঠিত ২০১০ যুব বিশ্বকাপে। শিরোপা দূরে থাক, মাহমুদুলরা সেমিফাইনালেও উঠতে পারেননি। মিরাজদের সাফল্যে সেই আক্ষেপ কি দূর হলো? স্পষ্ট কিছু না বললেও মেহেদীদের সাফল্য ছুঁয়ে যাচ্ছে মাহমুদুলকেও, ‘আক্ষেপ বলতে...আসলে এই দলকে নিয়ে অনেক প্রত্যাশা তৈরি হয়েছে। এই প্রত্যাশা ওরা নিজেরাই তৈরি করেছে। দলটা অনেক দিন ধরে শুধু একসঙ্গে খেলছে না, দারুণ করছেও।’

যুব বিশ্বকাপে বাংলাদেশের হয়ে সর্বোচ্চ ৫১৯ রান করা এনামুল হক খেলেছেন ২০১০ বিশ্বকাপে। দলকে নেতৃত্ব দিয়েছেন অস্ট্রেলিয়ায় হওয়া ২০১২ যুব বিশ্বকাপে। উত্তরসূরিরা পেছনের সব সাফল্য ছাড়িয়ে যাওয়ায় আপ্লুত এনামুলও। এই ‘ছাড়িয়ে’ যাওয়াকে দেশের ক্রিকেটের উন্নতির সূচক মনে করছেন তিনি, ‘সবাই তো চায়, আগের অর্জনকে ছাড়িয়ে যেতে। ধাপে ধাপে এগিয়ে যেতে। নইলে উন্নতি হবে কী করে? আমাদের ক্রিকেট যে এগোচ্ছে, এটা তারই প্রমাণ। আশা করি, ভবিষ্যতে যেকোনো পর্যায়ের ক্রিকেটে বাংলাদেশ আরও ভালো করবে।’

এনামুলের কাছে সেমিফাইনাল এখন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। শেষ চারে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ হতে পারে পাকিস্তান-ওয়েস্ট ইন্ডিজের যেকোনো এক দল। এনামুল মনে করেন, এই কঠিন ধাপটা পেরোলেই ইতিহাস গড়া কঠিন হবে না মেহেদীদের, ‘মনে হয় সেমিফাইনাল পেরোতে পারলে চ্যাম্পিয়ন হওয়াটা কঠিন কিছু হবে না, সে প্রতিপক্ষ যে-ই হোক। সেমিফাইনালটা অনেক গুরুত্বপূর্ণ।’

মাহমুদুলও একমত এনামুলের সঙ্গে। মেহেদীরা এত দূরে এসেছেন ধাপে ধাপে এগিয়ে। বাকি পথটাও তাঁরা পেরিয়ে যান একইভাবে!

Pages: 1 [2] 3 4 ... 8