Show Posts

This section allows you to view all posts made by this member. Note that you can only see posts made in areas you currently have access to.


Topics - habib

Pages: 1 ... 5 6 [7] 8
91
প্রশ্নোত্তরে সহজ তাওহীদ শিক্ষা


অনুবাদকের কথা

যাবতীয় প্রশংসা আল্লাহ্‌র জন্য। দরূদ ও সালাম বর্ষিত হোক আমাদের প্রিয় নবী মুহাম্মাদ

(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম), তাঁর পরিবার-পরিজন, ছাহাবায়ে কেরাম (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুম) এবং

কিয়ামত পর্যন্ত তাঁদের পথের পথিকদের উপর। অতঃপর আরয এই যে, আক্বীদা ইসলামের সবচেয়ে

গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, একজন মুসলিমের জীবনে যার প্রয়োজন সদা-সর্বদা। কিন্তু বাংলাদেশে আমাদের

মাতৃভাষা বাংলায় সহীহ আক্বীদা বিষয়ক বই-পুস্তক নিতান্তই অপ্রতুল। তাছাড়া বাংলা ভাষাভাষী অনেক

মুসলিমের এ সংক্রান্ত জ্ঞানের অভাবও যথেষ্ট। সেজন্য আমরা تَسْهِيْلُ تَعَلُّمِ التَّوْحِيْدِ বা ‘সহজ তাওহীদ

শিক্ষা’ বইটি অনুবাদের কাজে হাত দেই। বইটির নামের মাঝেই তার পরিচয় লুকায়িত আছে। বইটিতে একদিকে

যেমন তাওহীদের মৌলিক বিষয়গুলি তুলে ধরা হয়েছে, অন্যদিকে তেমনি বিষয়গুলিকে প্রশ্নোত্তর

আকারে খুব সহজ ও সাবলীলভাবে ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করা হয়েছে। লক্ষণীয় যে, বইটির প্রত্যেকটি

বক্তব্যের পেছনে কুরআন ও সহীহ হাদীস থেকে এক বা একাধিক দলীল পেশ করা হয়েছে।

বইটির অনুবাদের কাজে আমাকে সহযোগিতা করার জন্য আমি মদীনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র

আব্দুল্লাহিল কাফী এবং আব্দুল গণির প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি। বইটি অনুবাদ এবং

প্রকাশের পেছনে যাদের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ মদদ রয়েছে, আল্লাহ তাদের সবাইকে উত্তম প্রতিদান

দান করুন। আশা করি, সম্মানিত পাঠকগণ বইটি পড়ে উপকৃত হবেন। আমরা বইটির ভুলভ্রান্তি সংশোধন

এবং এটির মানোন্নয়নের জন্য বিজ্ঞ পাঠকগণের প্রয়োজনীয় পরামর্শ, নির্দেশনা ও সহযোগিতা

কামনা করছি। মহান আল্লাহ আমাদের এই ক্ষুদ্র প্রয়াসটুকু কবূল করুন। আমীন!

বিনীত                                                                   

আব্দুল আলীম ইবনে কাওসার

abdulalim.kawsar@yahoo.com

ভূমিকা

বিসমিল্লাহির রহমানির রহীম

যাবতীয় প্রশংসা মহান রব্বুল আলামীনের জন্য। দরূদ ও সালাম বর্ষিত হোক নবীগণের সরদার আমাদের শেষ

নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং তাঁর পরিবার-পরিজন ও সকল সাহাবীর উপর।

এই ছোট্ট পুস্তিকাটি একজন মুসলিমের জানা অতীব যরূরী বিষয় ‘তাওহীদ’-এর উপর প্রণীত হয়েছে।

তাওহীদের বিষয়গুলি বিখ্যাত চার ইমাম এবং তাঁদের অনুসারীগণের আক্বীদা বিষয়ক বই-পুস্তক থেকে সংগৃহীত

হয়েছে। উল্লেখ্য যে, আক্বীদার ক্ষেত্রে চার ইমামের বক্তব্য একই, তাঁদের মধ্যে কোনো মতানৈক্য নেই।

অতএব, আপনি যদি চার মাযহাবের কোনো একটির অনুসারী হয়ে থাকেন, তাহলে মনে রাখবেন, এই পুস্তিকার

আক্বীদাই হচ্ছে আপনার ইমামের আক্বীদা। আপনি নানাবিধ বিধি-বিধানের ক্ষেত্রে যেমন তাঁকে অনুসরণ করেন,

আক্বীদার ক্ষেত্রেও তেমনি তাঁর অনুসরণ করবেন। পুস্তিকাটিকে প্রশ্নোত্তর আকারে সাজানো হয়েছে।

মহান আল্লাহ্‌র কাছে প্রার্থনা করি, তিনি সবাইকে হক্ব গ্রহণের তাওফীক্ব দান করুন। আমাদেরকে তিনি

প্রত্যেকটা আমল আল্লাহ্‌র সন্তুষ্টির জন্য এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পদ্ধতিতে পালন

করার তাওফীক্ব দিন।

মহান আল্লাহ আমাদের শেষ নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং তাঁর পরিবার-পরিজন ও

সকল সাহাবীর উপর দরূদ ও সালাম বর্ষণ করুন।

প্রশ্নোত্তর

প্রশ্ন ১: আপনার রব কে?

উত্তরঃ আমার রব হচ্ছেন আল্লাহ।

প্রশ্ন ২: রব অর্থ কি?

উত্তরঃ রব দ্বারা উদ্দেশ্য, মালিক, সৃষ্টিকর্তা, রিযিক্বদাতা, নিয়ন্ত্রণকারী, আকৃতিদানকারী ও

প্রতিপালনকারী। তাঁর অনুমতি ব্যতীত কিছুই হয় না এবং তাঁর অনুমতি ও ইচ্ছা ব্যতীত কোনো কিছু

সামান্যতম নড়াচড়াও না।

প্রশ্ন ৩: আল্লাহ অর্থ কি?

উত্তরঃ যাবতীয় ইবাদত এবং উপাসনা পাওয়ার যোগ্য একমাত্র সত্ত্বা-ই হচ্ছেন আল্লাহ।

প্রশ্ন ৪: আল্লাহ কোথায়?

উত্তরঃ আমার প্রভু আল্লাহ উর্ধ্বে, আরশের উপরে আছেন। মহান আল্লাহ নিজের সম্পর্কে বলেন,

﴿ ٱلرَّحۡمَٰنُ عَلَى ٱلۡعَرۡشِ ٱسۡتَوَىٰ ٥ ﴾ [طه: ٥]

“পরম দয়াময় আল্লাহ আরশের উপর উঠেছেন” (ত্বা-হা ৫)। সত্যিকার অর্থেই আল্লাহ্‌র সত্ত্বার

সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ এমনভাবে তিনি আরশের উপর উঠেছেন; তাঁর আরশের উপর উঠার বিষয়টিকে

কোনোরূপ পরিবর্তন-পরিবর্ধন করা যাবে না এবং এটির কল্পিত কোনো আকৃতি যেমন স্থির করা

যাবে না, তেমনি কোনো সৃষ্টির সাথে এর কোনোরূপ সাদৃশ্য বিধানও করা চলবে না।

অতএব, আপনি কোনো অবস্থাতেই বলতে পারেন না যে, আল্লাহ সর্বত্র বিরাজমান। কেননা

সর্বোচ্চে অবস্থান মহান আল্লাহ্‌র একটি প্রশংসনীয় বিশেষণ। আর সে কারণেই তো আমরা সেজদাতে

বলে থাকি, ‘আমার প্রভু সর্বোচ্চ’। ইমামগণ একমত পোষণ করেছেন যে, মহান আল্লাহ যমীনে অবতরণ

করেন না। যে ব্যক্তি এই আক্বীদা পোষণ করে যে, আল্লাহ তাঁর কোনো সৃষ্টির মধ্যে প্রবিষ্ট হন, সে

ব্যক্তির কুফরীতে নিপতিত হওয়ার ব্যাপারেও তাঁরা একমত পোষণ করেছেন। বরং মহান আল্লাহ দুনিয়ার

নিকটতম শেষ আসমানে এমনভাবে অবতরণ করেন, যেমন অবতরণ করা তাঁর মহত্ত্বের সাথে

মানানসই। রাতের শেষাংশে আল্লাহ্‌র শেষ আসমানে অবতরণ এবং অবস্থানের ধরণ সম্পর্কে কেউ কিছুই

জানে না। এই সময় তিনি বলেন,

“কোনো প্রার্থনাকারী আছে কি? আমি তার প্রার্থনা মঞ্জুর করব” (বুখারী ও মুসলিম)।

কেউ প্রশ্ন করতে পারে, তাহলে নিম্নোক্ত আয়াতটির অর্থ কি?

“তিনি তোমাদের সাথে আছেন, তোমরা যেখানেই থাক” (হাদীদ ৪)। তোমরা যা কর, আল্লাহ তা

দেখেন। জবাবে বলব, এখানে সবার সঙ্গে থাকার অর্থ হচ্ছে, আল্লাহ্‌র ইলম এবং শক্তি। কারণ তাঁর

পবিত্র সত্ত্বা সর্বোচ্চ আরশে আছে; কিন্তু তাঁর জ্ঞান এবং শক্তি সবার সাথে আছে। কোনো কিছুই

তাঁর শক্তি এবং জানার বাইরে নেই।

প্রশ্ন ৫: আপনি কিভাবে আপনার প্রভুকে চিনেন?

উত্তরঃ আল্লাহ্‌র নানা নিদর্শন এবং তাঁর সৃষ্টিসমূহ দেখে আমি তাঁকে চিনি। মহান আল্লাহ বলেন,

“তাঁর নিদর্শনসমূহের মধ্যে রয়েছে রাত, দিন, সূর্য ও চন্দ্র” (ফুছছিলাত ৩৭)।

তাঁর সৃষ্টিসমূহের মধ্যে সাত আসমান, সাত যমীন এবং এতদুভয়ের মধ্যবর্তী সবকিছু

অন্যতম। এরশাদ হচ্ছে,

﴿  وَٱلۡقَمَرَ وَٱلشَّمۡسَ حَثِيثٗا يَطۡلُبُهُۥ ٱلنَّهَارَ ٱلَّيۡلَ يُغۡشِي ٱلۡعَرۡشِۖ عَلَى ٱسۡتَوَىٰ ثُمَّ أَيَّامٖ سِتَّةِ فِي وَٱلۡأَرۡضَ ٱلسَّمَٰوَٰتِ خَلَقَ ٱلَّذِي ٱللَّهُ رَبَّكُمُ إِنَّ

“নিশ্চয়ই তোমাদের প্রতিপালক আল্লাহ, যিনি আসমানসমূহ ও যমীন ছয় দিনে সৃষ্টি

করেছেন। অতঃপর আরশের উপর আরোহন করেছেন। তিনি রাতের ভেতর দিনকে প্রবেশ করান এমনভাবে

যে, দিন দৌড়ে রাতের পেছনে আসে। তিনি সূর্য, চন্দ্র ও নক্ষত্ররাজি সৃষ্টি করেছেন; সেগুলি তাঁর

আদেশের অনুগামী। জেনে রেখো, তাঁরই কাজ সৃষ্টি করা এবং আদেশ দান করা। বিশ্বজগতের প্রতিপালক

আল্লাহ বরকতময়” (আ‘রাফ ৫৪)।

«هَلْ مِنْ دَاعٍ فَأَسْتَجِيبَ لَهُ»

﴿وَهُوَ مَعَكُمۡ أَيۡنَ مَا كُنتُمۡۚ وَٱللَّهُ بِمَا تَعۡمَلُونَ بَصِيرٞ ٤ ﴾ [الحديد: ٤]

﴿ وَمِنۡ ءَايَٰتِهِ ٱلَّيۡلُ وَٱلنَّهَارُ وَٱلشَّمۡسُ وَٱلۡقَمَرُۚ ﴾ [فصلت: ٣٧]

وَٱلنُّجُومَ مُسَخَّرَٰتِۢ بِأَمۡرِهِۦٓۗ أَلَا لَهُ ٱلۡخَلۡقُ وَٱلۡأَمۡرُۗ تَبَارَكَ ٱللَّهُ رَبُّ ٱلۡعَٰلَمِينَ ٥٤ ﴾ [الاعراف: ٥٤]

প্রশ্ন ৬: আল্লাহ আপনাকে কেন সৃষ্টি করেছেন?

উত্তরঃ সর্ব প্রকার শির্ক বর্জন করে যাবতীয় ইবাদত কেবলমাত্র তাঁর উদ্দেশ্যে সম্পাদন এবং

তাঁর আদিষ্ট বিষয়সমূহের বাস্তবায়ন ও নিষিদ্ধ বিষয়সমূহকে পরিত্যাগের মাধ্যমে তাঁর আনুগত্যের

জন্যই তিনি আমাকে সৃষ্টি করেছেন। এরশাদ হচ্ছে,

﴿  لِيَعۡبُدُونِ إِلَّا وَٱلۡإِنسَ ٱلۡجِنَّ خَلَقۡتُوَمَا٥٦  [الذاريات:﴾٥٦]  “শুধুমাত্র আমার ইবাদত করার জন্যই আমি মানব

ও জিন জাতি সৃষ্টি করেছি” (যারিয়াত ৫৬)।

অন্যত্র ঘোষিত হয়েছে,

“আর তোমরা আল্লাহ্‌র ইবাদত কর এবং তাঁর সাথে কাউকে শরীক করো না” (নিসা ৩৬)।

প্রশ্ন ৭: আল্লাহ্‌র নিকট সবচেয়ে বড় পাপ কোন্‌টি?

উত্তরঃ যে গুনাহ দিয়ে আল্লাহ্‌র নাফরমানি করা হয়, তার সবচেয়ে বড়টি হচ্ছে, শির্ক। মহান আল্লাহ

﴿  فَقَدۡ بِٱللَّهِ يُشۡرِكۡ مَن إِنَّهُۥ وَرَبَّكُمۡۖ رَبِّي ٱللَّهَ ٱعۡبُدُواْ إِسۡرَٰٓءِيلَ يَٰبَنِيٓ ٱلۡمَسِيحُ وَقَالَ مَرۡيَمَۖ ٱبۡنُ ٱلۡمَسِيحُ هُوَ ٱللَّهَ إِنَّ قَالُوٓاْ ٱلَّذِينَ كَفَرَ لَقَدۡ

“যারা বলে যে, মারিয়াম-তনয় মাসীহ-ই আল্লাহ, তারা কাফের। অথচ মাসীহ বলেন, হে বনী

ইসরাঈল! তোমরা আমার পালনকর্তা এবং তোমাদের পালনকর্তা আল্লাহ্‌র ইবাদত কর। নিশ্চয় যে

ব্যক্তি আল্লাহ্‌র সাথে শির্ক করে, আল্লাহ তার জন্য জান্নাত হারাম করে দিয়েছেন; তার বাসস্থান হচ্ছে

জাহান্নাম। আর অত্যাচারীদের কোনো সাহায্যকারী নেই” (মায়েদাহ ৭২)।

আর শির্ক হচ্ছে, আল্লাহ্‌র সমকক্ষ সাব্যস্ত করা, চাই তা হোক কোনো বাদশাহ, কিংবা নবী-

রাসূল বা কোনো অলী। আল্লাহ ব্যতীত অথবা আল্লাহ্‌র সাথে তাকে ডাকা, বা তাকে ভয় করা বা তার

উপর ভরসা করা বা তার কাছে কোনো কিছু চাওয়া অথবা অন্য কোনো ইবাদত তার জন্য সম্পাদন

﴿۞وَٱعۡبُدُواْ ٱللَّهَ وَلَا تُشۡرِكُواْ بِهِۦ شَيۡ‍ٔٗاۖ﴾ [النساء: ٣٦]

حَرَّمَ ٱللَّهُ عَلَيۡهِ ٱلۡجَنَّةَ وَمَأۡوَىٰهُ ٱلنَّارُۖ وَمَا لِلظَّٰلِمِينَ مِنۡ أَنصَارٖ ٧٢ ﴾ [المائ‍دة: ٧٢]

প্রশ্ন ৮: ইবাদত অর্থ কি?

উত্তরঃ আল্লাহ ভালবাসেন এবং সন্তুষ্ট হন প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য এমন যাবতীয় কথা ও কাজকে

ইবাদত বলে। যেমনঃ দো‘আ করা। আল্লাহ বলেন,

“আর (এই অহিও করা হয়েছে যে,) মসজিদসমূহ আল্লাহকে স্মরণ করার জন্য। অতএব, তোমরা

আল্লাহ্‌র সাথে কাউকে ডেকো না” (জিন ১৮)।

আর আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকে ডাকলে যে কাফের হয়, তার প্রমাণ হচ্ছে,

﴿ وَمَن يَدۡعُ مَعَ ٱللَّهِ إِلَٰهًا ءَاخَرَ لَا بُرۡهَٰنَ لَهُۥ بِهِۦ فَإِنَّمَا حِسَابُهُۥ عِندَ رَبِّهِۦٓۚ إِنَّهُۥ لَا يُفۡلِحُ ٱلۡكَٰفِرُونَ ١١٧ ﴾ [المؤمنون: ١١٧]

“যে ব্যক্তি আল্লাহ্‌র সাথে অন্য উপাস্যকে ডাকে, যে ডাকার পক্ষে কোনো প্রমাণ নেই, তার

হিসাব তো তার পালনকর্তার কাছেই। নিশ্চয়ই কাফেররা সফলকাম হবে না” (মুমিনূন ১১৭)।

প্রশ্ন ৯: দো‘আ কি ইবাদতের অন্তর্ভুক্ত?

﴿ وَأَنَّ ٱلۡمَسَٰجِدَ لِلَّهِ فَلَا تَدۡعُواْ مَعَ ٱللَّهِ أَحَدٗا ١٨ ﴾ [الجن: ١٨]   

উত্তরঃ দো‘আ শুধু ইবাদতের অন্তর্ভুক্তই নয়, বরং তা গুরুত্বপূর্ণ ইবাদতসমূহের অন্যতম। মহান

﴿ وَقَالَ رَبُّكُمُ ٱدۡعُونِيٓ أَسۡتَجِبۡ لَكُمۡۚ إِنَّ ٱلَّذِينَ يَسۡتَكۡبِرُونَ عَنۡ عِبَادَتِي سَيَدۡخُلُونَ جَهَنَّمَ دَاخِرِينَ ٦٠ ﴾ [غافر: ٦٠]

“আর তোমাদের পালনকর্তা বলেন, তোমরা আমাকে ডাক, আমি তোমাদের ডাকে সাড়া

দেব। নিশ্চয়ই যারা আমার ইবাদতের ক্ষেত্রে অহংকার করে, তারা অচিরেই লাঞ্ছিত অবস্থায় জাহান্নামে

প্রবেশ করবে” (গাফির ৬০)।

তাছাড়া হাদীসে এসেছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

“দো‘আই হচ্ছে ইবাদত” (তিরমিযী, শায়খ আলবানী হাদীসটিকে ‘সহীহ’ বলেছেন)।

প্রশ্ন ১০: আল্লাহ তাঁর বান্দার উপর সর্বপ্রথম কোন্‌ বিষয়টি ফরয করেছেন?

উত্তরঃ আল্লাহ কর্তৃক তাঁর বান্দার প্রতি ফরযকৃত সর্বপ্রথম বিষয়টি হচ্ছে, আল্লাহ্‌র প্রতি

ঈমান আনা এবং তাগূতকে অস্বীকার করা। মহান আল্লাহ বলেন,

﴿  فِي فَسِيرُواْ ٱلضَّلَٰلَةُۚ عَلَيۡهِ حَقَّتۡ مَّنۡ وَمِنۡهُم ٱللَّهُ هَدَى مَّنۡ فَمِنۡهُم ٱلطَّٰغُوتَۖ وَٱجۡتَنِبُواْ ٱللَّهَ ٱعۡبُدُواْ أَنِ رَّسُولًا أُمَّةٖ كُلِّ فِي بَعَثۡنَا وَلَقَدۡ

“আমি প্রত্যেক উম্মতের মধ্যেই রাসূল প্রেরণ করেছি এই নির্দেশ দিয়ে যে, তোমরা আল্লাহ্‌র

ইবাদত কর এবং ত্বাগূত থেকে বেঁচে থাক। অতঃপর তাদের মধ্যে কিছু সংখ্যককে আল্লাহ হেদায়াত

করেছেন। পক্ষান্তরে কিছু সংখ্যকের জন্যে পথভ্রষ্টতা অবধারিত হয়ে গেছে। সুতরাং তোমরা পৃথিবীতে

ভ্রমণ কর এবং দেখ, মিথ্যারোপকারীদের কিরূপ পরিণতি হয়েছে” (নাহ্‌ল ৩৬)।

আর ত্বাগুত হচ্ছে, বান্দা যাকে নিয়ে তার সীমা অতিক্রম করেছে। চাই তা উপাসনার মাধ্যমে হোক,

বা অনুসৃত হওয়ার দিক থেকে হোক, অথবা আনুগত্যের ক্ষেত্রেই হোক[1]।

অথবা বলা যায়, আল্লাহ ছাড়া যার ইবাদত করা হয়, সে-ই হচ্ছে ত্বাগূত- যদি সে ঐ ইবাদতে রাযী-খুশী

ٱلۡأَرۡضِ فَٱنظُرُواْ كَيۡفَ كَانَ عَٰقِبَةُ ٱلۡمُكَذِّبِينَ ٣٦ ﴾ [النحل: ٣٦]

প্রশ্ন ১১: আপনার দ্বীন কোন্‌টি?

উত্তরঃ আমার দ্বীন হচ্ছে, ইসলাম।

আর ‘ইসলাম’-এর অর্থ হচ্ছে, তাওহীদ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে আল্লাহ্‌র নিকট আত্মসমর্পণ

করা, আনুগত্যের মাধ্যমে তাঁর নিকট নত হওয়া এবং শির্ক ও শির্কপন্থীদের থেকে নিজেকে মুক্ত

করা। যেমন আল্লাহ বলেন,

﴿  ٱللَّهَ فَإِنَّ ٱللَّهِ بِ‍َٔايَٰتِ يَكۡفُرۡ وَمَن بَيۡنَهُمۡۗ بَغۡيَۢا ٱلۡعِلۡمُ جَآءَهُمُ مَا بَعۡدِ مِنۢ إِلَّا ٱلۡكِتَٰبَ أُوتُواْ ٱلَّذِينَ ٱخۡتَلَفَ وَمَا ٱلۡإِسۡلَٰمُۗ ٱللَّهِ عِندَ ٱلدِّينَ إِنَّ

“নিঃসন্দেহে আল্লাহ্‌র নিকট একমাত্র গ্রহণযোগ্য দ্বীন হচ্ছে ইসলাম। আর যারা কিতাব প্রাপ্ত

হয়েছে, তাদের নিকট প্রকৃত জ্ঞান আসার পরও শুধুমাত্র পরস্পর বিদ্বেষবশতঃ তারা মতবিরোধে লিপ্ত

হয়েছে। যারা আল্লাহ্‌র নিদর্শনসমূহের সাথে কুফরী করে, (তাদের জানা উচিত যে,) নিশ্চয়ই আল্লাহ হিসাব

গ্রহণে অত্যন্ত দ্রুত” (আলে ইমরান ১৯)।

অন্যত্র এরশাদ হচ্ছে,

سَرِيعُ ٱلۡحِسَابِ ١٩ ﴾ [ال عمران: ١٩]

﴿ وَمَن يَبۡتَغِ غَيۡرَ ٱلۡإِسۡلَٰمِ دِينٗا فَلَن يُقۡبَلَ مِنۡهُ وَهُوَ فِي ٱلۡأٓخِرَةِ مِنَ ٱلۡخَٰسِرِينَ ٨٥ ﴾ [ال عمران: ٨٥]   

“যে ব্যক্তি ইসলাম ছাড়া অন্য কোন দ্বীন তালাশ করে, কস্মিনকালেও তা তার পক্ষ থেকে গ্রহণ

করা হবে না এবং আখেরাতে সে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে” (আলে ইমরান

৮৫)। রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«  إِنِ الْبَيْتَ وَتَحُجَّ رَمَضَانَ وَتَصُومَ الزَّكَاةَ وَتُؤْتِىَ الصَّلاَةَ وَتُقِيمَ اللَّهِ رَسُولُ مُحَمَّدًا وَأَنَّ اللَّهُ إِلاَّ إِلَهَ لاَ أَنْ تَشْهَدَ أَنْالإِسْلاَمُ

“ইসলাম হচ্ছে একথা সাক্ষ্য দেওয়া যে, আল্লাহ ছাড়া কোনো হক্ব মা‘বূদ নেই ও মুহাম্মাদ

আল্লাহ্‌র রাসূল-একথার সাক্ষ্য দেওয়া, ছালাত ক্বায়েম করা, যাকাত দেওয়া, রামাযান মাসে ছিয়াম পালন

করা এবং সামর্থ্য থাকলে কা‘বায় হজ্জ করা” (মুসলিম)।

প্রশ্ন ১২: ‘আল্লাহ ছাড়া সত্য কোনো মা‘বূদ নেই এবং মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি

ওয়াসাল্লাম আল্লাহ্‌র রাসূল’- একথার সাক্ষ্য দেওয়ার অর্থ কি?

উত্তরঃ ‘আল্লাহ ছাড়া কোনো মা‘বূদ নেই’-এর অর্থ হচ্ছে,  الله إِلاَّ بِحَقٍّ مَعْبُوْدَلاَ অর্থাৎ:

‘আল্লাহ ছাড়া কোনো হক্ব মা‘বূদ নেই’। এরশাদ হচ্ছে,

“এ কথাটিকে তিনি (ইবরাহীম ‘আলাইহিস সালাম) অক্ষয় বাণী রূপে তাঁর পরবর্তীদের মধ্যে রেখে

গেছেন, যাতে তারা আল্লাহ্‌র দিকেই ফিরে যেতে পারে” (যুখরুখ ২৮)।

আর ‘মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আল্লাহ্‌র রাসূল’-

এর অর্থ হচ্ছে, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি

ওয়াসাল্লাম আল্লাহ্‌র বান্দা ও রাসূল। তিনি আল্লাহ্‌র এমন একজন বান্দা, যার ইবাদত করা যাবে না

এবং এমন একজন নবী, যাঁকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করা যাবে না; বরং তাঁর নির্দেশিত বিষয়ে তাঁকে অনুসরণ

করতে হবে, তাঁর থেকে বর্ণিত বিষয়সমূহকে সত্য প্রতিপন্ন করতে হবে এবং তাঁর নিষিদ্ধ বিষয়সমূহ থেকে

বিরত থাকতে হবে। অনুরূপভাবে তাঁর নির্দেশিত পদ্ধতিতে আল্লাহ্‌র ইবাদত করতে হবে। সেজন্য তিনি

সবধরনের বিদ‘আতকে নিষিদ্ধ করেছেন। ফলে ইসলামে ‘উত্তম বিদ‘আত’ বলতে কিছু নেই। রাসূল

সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন,

“তোমরা শরী‘আতে নবাবিষ্কার থেকে বেঁচে থাকো। কেননা নবাবিষ্কৃত প্রত্যেকটা বস্তুই

হচ্ছে বিদ‘আত এবং প্রত্যেকটি বিদ‘আতই হচ্ছে পথভ্রষ্টতা” (মুসনাদে আহমাদ)।

তিনি আরো বলেন,

“যে ব্যক্তি আমাদের নির্দেশের বাইরে কোনো আমল করলো, তার সেই আমল

প্রত্যাখ্যাত” (মুসলিম)।

আয়েশা (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা) থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

“যে ব্যক্তি আমাদের এই শরী‘আতে নতুন কিছু সৃষ্টি করল- যা তার অন্তর্ভুক্ত নয়, তবে তা

প্রত্যাখ্যাত” (বুখারী ও মুসলিম)।

﴿ وَجَعَلَهَا كَلِمَةَۢ بَاقِيَةٗ فِي عَقِبِهِۦ لَعَلَّهُمۡ يَرۡجِعُونَ ٢٨ ﴾ [الزخرف: ٢٨]

«إِيَّاكُمْ وَمُحْدَثَاتِ الأُمُورِ  فَإِنَّ كُلَّ مُحْدَثَةٍ بِدْعَةٌ وَكُلَّ بِدْعَةٍ ضَلاَلَةٌ»

«مَنْ عَمِلَ عَمَلاً لَيْسَ عَلَيْهِ أَمْرُنَا فَهُوَ رَدٌّ»

«مَنْ أَحْدَثَ فِى أَمْرِنَا هَذَا مَا لَيْسَ مِنْهُ فَهُوَ رَدٌّ»

প্রশ্ন ১৩: ছালাত, যাকাত, ছিয়াম এবং হজ্জ ফরয হওয়ার দলীল কি?

উত্তরঃ ছালাত এবং যাকাত ফরয হওয়ার দলীল হচ্ছে,

﴿ وَمَآ أُمِرُوٓاْ إِلَّا لِيَعۡبُدُواْ ٱللَّهَ مُخۡلِصِينَ لَهُ ٱلدِّينَ حُنَفَآءَ وَيُقِيمُواْ ٱلصَّلَوٰةَ وَيُؤۡتُواْ ٱلزَّكَوٰةَۚ وَذَٰلِكَ دِينُ ٱلۡقَيِّمَةِ ٥ ﴾ [البينة: ٥]

“তাদেরকে কেবলমাত্র এই নির্দেশ করা হয়েছে যে, তারা খাঁটি বিশ্বাসের সাথে এবং একনিষ্ঠভাবে

আল্লাহ্‌র ইবাদত করবে, ছালাত কায়েম করবে এবং যাকাত আদায় করবে। এটিই সঠিক দ্বীন”। (বাইয়্যেনাহ

৫)। উক্ত আয়াতে সর্বপ্রথম তাওহীদ প্রতিষ্ঠা এবং শির্ক থেকে মুক্ত হওয়ার কথা বলা

হয়েছে। সেকারণে আল্লাহ্‌র সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আদেশ হচ্ছে, তাওহীদ আর সবচেয়ে বড়

নিষেধ হচ্ছে, শির্ক। অতঃপর আল্লাহ ছালাত প্রতিষ্ঠা এবং যাকাত প্রদানের আদেশ করেছেন।

আর ছিয়াম ফরয হওয়ার দলীল হচ্ছে, আল্লাহর বাণী,

﴿  تَتَّقُونَ لَعَلَّكُمۡ قَبۡلِكُمۡ مِن ٱلَّذِينَ عَلَى كُتِبَ كَمَا ٱلصِّيَامُ عَلَيۡكُمُ كُتِبَ ءَامَنُواْ ٱلَّذِينَ يَٰٓأَيُّهَا١٨٣  مَّرِيضًا مِنكُم كَانَ فَمَن مَّعۡدُودَٰتٖۚ أَيَّامٗا

  لَّكُمۡ خَيۡرٞ تَصُومُواْ وَأَن لَّهُۥۚ خَيۡرٞ فَهُوَ خَيۡرٗا تَطَوَّعَ فَمَن مِسۡكِينٖۖ طَعَامُ فِدۡيَةٞ يُطِيقُونَهُۥ ٱلَّذِينَ وَعَلَى أُخَرَۚ أَيَّامٍ مِّنۡ فَعِدَّةٞ سَفَرٖ عَلَىٰأَوۡ

  تَعۡلَمُونَ كُنتُمۡإِن١٨٤  ٱلشَّهۡرَ مِنكُمُ شَهِدَ فَمَن وَٱلۡفُرۡقَانِۚ ٱلۡهُدَىٰ مِّنَ وَبَيِّنَٰتٖ لِّلنَّاسِ هُدٗى ٱلۡقُرۡءَانُ فِيهِ أُنزِلَ ٱلَّذِيٓ رَمَضَانَ شَهۡرُ

  ٱللَّهَ وَلِتُكَبِّرُواْ ٱلۡعِدَّةَ وَلِتُكۡمِلُواْ ٱلۡعُسۡرَ بِكُمُ يُرِيدُ وَلَا ٱلۡيُسۡرَ بِكُمُ ٱللَّهُ يُرِيدُ أُخَرَۗ أَيَّامٍ مِّنۡ فَعِدَّةٞ سَفَرٖ عَلَىٰ أَوۡ مَرِيضًا كَانَ وَمَنفَلۡيَصُمۡهُۖ

“হে মুমিনগণ! তোমাদের জন্য সিয়ামের  বিধান দেয়া হল, যেমন বিধান তোমাদের পূর্ববর্তীদেরকে

দেয়া হয়েছিল , যাতে তোমরা তাকওয়ার অধিকারী হতে পার। এগুলো গোনা কয়েক দিন। অতঃপর

তোমাদের মধ্যে কেউ অসুস্থ হলে বা সফরে থাকলে  অন্য দিনগুলোতে এ সংখ্যা পূরণ করে নিতে

হবে । আর যাদের জন্য সিয়াম কষ্টসাধ্য তাদের কর্তব্য এর পরিবর্তে ফিদ্ইয়া- একজন মিসকীনকে খাদ্য

দান করা। যদি কেউ স্বতঃস্ফূর্তভাবে সৎকাজ করে তবে তা তার জন্য কল্যাণকর। আর সিয়াম পালন

করাই তোমাদের জন্য অধিকতর কল্যাণের যদি তোমরা জানতে। রমাদান মাস, এতে কুরআন নাযিল করা

হয়েছে মানুষের হেদায়াতের জন্য এবং হিদায়াতের স্পষ্ট নিদর্শন ও সত্যাসত্যের পার্থক্যকারীরূপে।

কাজেই তোমাদের মধ্যে যে এ মাস পাবে সে যেন এ মাসে সিয়াম পালন করে । তবে তোমাদের কেউ অসুস্থ

থাকলে বা সফরে থাকলে অন্য দিনগুলোতে এ সংখ্যা পূরণ করবে । আল্লাহ্ তোমাদের জন্য সহজ চান

এবং তোমাদের জন্য কষ্ট চান না। আর যাতে তোমরা সংখ্যা পূর্ণ কর এবং তিনি তোমাদেরকে যে

হিদায়াত দিয়েছেন সে জন্য তোমরা আল্লাহর মহিমা ঘোষণা কর এবং যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ

কর।” [সূরা আল-বাকারাহ: ১৮৩-১৮৫]

আর হজ্জ ফরয হওয়ার দলীল হচ্ছে,

﴿  عَنِ غَنِيٌّ ٱللَّهَ فَإِنَّ كَفَرَ وَمَن سَبِيلٗاۚ إِلَيۡهِ ٱسۡتَطَاعَ مَنِ ٱلۡبَيۡتِ حِجُّ ٱلنَّاسِ عَلَى وَلِلَّهِ ءَامِنٗاۗ كَانَ دَخَلَهُۥ وَمَن إِبۡرَٰهِيمَۖ مَّقَامُ بَيِّنَٰتٞ ءَايَٰتُۢفِيهِ

“আল্লাহ্‌র উদ্দেশ্যে এ ঘরের হজ্জ করা মানুষের উপর ফরয, যার এ পর্যন্ত পৌঁছার সামর্থ্য

রয়েছে। আর যে ব্যক্তি তা মানে না, (তার ক্ষেত্রে বক্তব্য হলো) আল্লাহ সৃষ্টিকুলের কোনো

কিছুরই মুখাপেক্ষী নন” (আলে ইমরান ৯৭)।

প্রশ্ন ১৪: নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দ্বীন ব্যতীত অন্য কোনো ধর্ম

উত্তরঃ মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দ্বীন ব্যতীত অন্য কোনো ধর্ম গৃহীত

হবে না। এর প্রমাণ আল্লাহর বাণী,

عَلَىٰ مَا هَدَىٰكُمۡ وَلَعَلَّكُمۡ تَشۡكُرُونَ ١٨٥ ﴾ [البقرة: ١٨٣،  ١٨٥]   

ٱلۡعَٰلَمِينَ ٩٧ ﴾ [ال عمران: ٩٧]

﴿ وَمَن يَبۡتَغِ غَيۡرَ ٱلۡإِسۡلَٰمِ دِينٗا فَلَن يُقۡبَلَ مِنۡهُ وَهُوَ فِي ٱلۡأٓخِرَةِ مِنَ ٱلۡخَٰسِرِينَ ٨٥ ﴾ [ال عمران: ٨٥]   

“যে ব্যক্তি ইসলাম ছাড়া অন্য কোন ধর্ম তালাশ করে, কস্মিনকালেও তা তার পক্ষ থেকে গ্রহণ

করা হবে না এবং আখেরাতে সে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে” (আলে ইমরান ৮৫)।

প্রশ্ন ১৫: ‘আন্তঃধর্মীয় ঐক্য (وحدة الأديان)’ মতবাদ জায়েয কি?

উত্তরঃ উক্ত মতবাদ জায়েয নয়। কেননা দ্বীন ইসলাম পরিপূর্ণ। মহান আল্লাহ বলেন,

“আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পরিপূর্ণ করে দিলাম, তোমাদের প্রতি আমার

নে'মতসমূহ সম্পূর্ণ করলাম এবং  তোমাদের জন্য ইসলামকে দ্বীন হিসাবে পছন্দ করলাম” (মায়েদাহ

৩)। অতএব, ইসলামের সাথে অন্য কোনো দ্বীনকে যুক্ত করার কোনোই প্রয়োজন নেই। তাছাড়া

মহান আল্লাহ দ্বীন ইসলাম ব্যতীত অন্য কোনো দ্বীন কস্মিনকালেও গ্রহণ করবেন না। এর প্রমাণ

হচ্ছে আল্লাহর বাণী,

“যে ব্যক্তি ইসলাম ছাড়া অন্য কোন ধর্ম তালাশ করে, কস্মিনকালেও তা তার পক্ষ থেকে গ্রহণ

করা হবে না এবং আখেরাতে সে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে” (আলে ইমরান ৮৫)। তাছাড়া রাসূল

সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«  مِنْ كَانَ إِلاَّ بِهِ أُرْسِلْتُ بِالَّذِى يُؤْمِنْ وَلَمْ يَمُوتُ ثُمَّ نَصْرَانِىٌّ وَلاَ يَهُودِىٌّ الأُمَّةِ هَذِهِ مِنْ أَحَدٌ بِى يَسْمَعُ لاَ بِيَدِهِ مُحَمَّدٍ نَفْسُوَالَّذِى

“মুহাম্মাদের জীবন যে সত্ত্বার হাতে, তার কসম করে বলছি, এই উম্মতের যে কেউ ইয়াহূদী হোক বা

নাছারা হোক আমার কথা শোনে অথচ আমার রিসালাতের প্রতি ঈমান না আনা অবস্থায় মৃত্যুবরণ

করে, সে হবে জাহান্নামীদের অন্তর্ভুক্ত” (মুসলিম)।

প্রশ্ন ১৬: ঈমানের রুকন কয়টি ও কি কি?

উত্তরঃ ঈমানের রুকন ৬টি। সেগুলি হচ্ছে, আল্লাহ্‌র প্রতি ঈমান, তাঁর ফেরেশতামণ্ডলীর প্রতি

ঈমান, তাঁর কিতাবসমূহের প্রতি ঈমান, তাঁর রাসূলগণের প্রতি ঈমান, আখেরাতের প্রতি ঈমান এবং

তাক্বদীরের ভাল-মন্দের প্রতি ঈমান। কুরআনুল কারীম এবং সহীহ হাদীসের বক্তব্য অনুযায়ী উক্ত

রুকনসমূহের প্রত্যেকটির প্রতি ঈমান না আনা পর্যন্ত কারো ঈমান পূর্ণ হবে না। যে ব্যক্তি এগুলির

কোনো একটিকে অস্বীকার করবে, সে ঈমানের গণ্ডি থেকে বের হয়ে যাবে। মহান আল্লাহ বলেন,

﴿  وَقَالُواْ رُّسُلِهِۦۚ مِّن أَحَدٖ بَيۡنَ نُفَرِّقُ لَا وَرُسُلِهِۦ وَكُتُبِهِۦ وَمَلَٰٓئِكَتِهِۦ بِٱللَّهِ ءَامَنَ كُلٌّ وَٱلۡمُؤۡمِنُونَۚ رَّبِّهِۦ مِن إِلَيۡهِ أُنزِلَ بِمَآ ٱلرَّسُولُ ءَامَنَ

“রাসূলের নিকট তাঁর প্রতিপালকের পক্ষ থেকে যে অহি অবতীর্ণ হয়েছে, তাকে তিনি এবং মুমিনগণ

মনেপ্রাণে বিশ্বাস করেছেন। তাঁরা সবাই ঈমান এনেছেন আল্লাহ্‌র প্রতি, তাঁর

ফেরেশতামণ্ডলীর প্রতি, তাঁর কিতাবসমূহের প্রতি এবং তাঁর রাসূলগণের প্রতি। (তাঁরা বলে,) আমরা

তাঁর রাসূলগণের মধ্যে কোন তারতম্য করি না। তাঁরা বলে, আমরা শুনেছি এবং মেনে নিয়েছি। হে আমাদের

পালনকর্তা! আমরা আপনার কাছে ক্ষমা চাই এবং আপনারই নিকট প্রত্যাবর্তন করতে হবে” (বাক্বারাহ

﴿ٱلۡيَوۡمَ أَكۡمَلۡتُ لَكُمۡ دِينَكُمۡ وَأَتۡمَمۡتُ عَلَيۡكُمۡ نِعۡمَتِي وَرَضِيتُ لَكُمُ ٱلۡإِسۡلَٰمَ دِينٗاۚ﴾ [المائ‍دة: ٣]

﴿ وَمَن يَبۡتَغِ غَيۡرَ ٱلۡإِسۡلَٰمِ دِينٗا فَلَن يُقۡبَلَ مِنۡهُ وَهُوَ فِي ٱلۡأٓخِرَةِ مِنَ ٱلۡخَٰسِرِينَ ٨٥ ﴾ [ال عمران: ٨٥]

سَمِعۡنَا وَأَطَعۡنَاۖ غُفۡرَانَكَ رَبَّنَا وَإِلَيۡكَ ٱلۡمَصِيرُ ٢٨٥ ﴾ [البقرة: ٢٨٥]   

তাছাড়া রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে ঈমান সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন,

“ঈমান হচ্ছে, আল্লাহ্‌র প্রতি, তাঁর ফেরেশতামণ্ডলীর প্রতি, তাঁর কিতাবসমূহের প্রতি, তাঁর

রাসূলগণের প্রতি এবং তাক্বদীরের ভাল-মন্দের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করা” (মুসলিম)।

প্রশ্ন ১৭: ঈমানের এই ৬টি মূলনীতির দাবী কি?

উত্তরঃ আল্লাহ্‌র প্রতি ঈমানের দাবী হচ্ছে, তিনি আরশের উপর আছেন তার স্বীকৃতি দিতে

হবে। তাঁর রুবূবিইয়াত, উলূহিইয়াত এবং সুন্দরতম নামসমূহ ও গুণাবলীরও স্বীকৃতি দিতে

হবে। ফেরেশতামণ্ডলীর প্রতি ঈমান আনার অর্থ হচ্ছে, তাঁদের বিদ্যমানতা এবং নানাবিধ কর্মকাণ্ড

সম্পর্কে বিশ্বাস পোষণ করা। কিতাবসমূহের প্রতি ঈমান আনার অর্থ হচ্ছে, এই বিশ্বাস করতে হবে

যে, আল্লাহ তাঁর রাসূলগণের উপর আসমানী কিতাবসমূহ অবতীর্ণ করেছেন। যেমনঃ

তাওরাত, ইঞ্জীল, যাবূর, ছুহুফে ইবরাহীম এবং কুরআন। আমাদেরকে আরো বিশ্বাস করতে হবে

যে, কুরআন ব্যতীত অন্যান্য মৌলিক আসমানী কিতাবসমূহে পরিবর্তন-পরিবর্ধন সাধিত

হয়েছে। রাসূলগণের প্রতি ঈমান আনার অর্থ হচ্ছে, আমাদেরকে এই বিশ্বাস করতে হবে যে, আল্লাহ মানব

জাতির হেদায়াতের জন্য অনেক রাসূল প্রেরণ করেছেন, আল-কুরআনুল কারীমে তাঁদের অনেকের নাম উল্লেখ

করা হয়েছে। সর্বপ্রথম রাসূল হলেন, নূহ আলাইহিস সালাম এবং সর্বশেষ ও সর্বোত্তম হচ্ছেন, মুহাম্মাদ

সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম। আখেরাতের প্রতি ঈমান আনার অর্থ হচ্ছে, আখেরাতের হিসাব-

নিক্বাশ, প্রতিদান, জান্নাত-জাহান্নাম এবং এই দিন সম্পর্কে কুরআন-হাদীসের বক্তব্যের প্রতি

বিশ্বাস স্থাপন করা। আর তাক্বদীরের প্রতি ঈমান আনার অর্থ হচ্ছে, আমাদেরকে এই বিশ্বাস করতে

হবে যে, সবকিছুকে আল্লাহ সৃষ্টি করেছেন, সেগুলি সৃষ্টি হওয়ার আগেই তিনি সে সম্পর্কে জ্ঞান

রাখতেন, তিনি তা লাওহে মাহফূযে লিখে রেখেছেন এবং সবকিছু তাঁর ইচ্ছাতেই সংঘটিত হয়েছে। মহান আল্লাহ

«أَنْ تُؤْمِنَ بِاللَّهِ وَمَلاَئِكَتِهِ وَكُتُبِهِ وَرُسُلِهِ وَالْيَوْمِ الآخِرِ وَتُؤْمِنَ بِالْقَدَرِ خَيْرِهِ وَشَرِّهِ»

﴿ إِنَّا كُلَّ شَيۡءٍ خَلَقۡنَٰهُ بِقَدَرٖ ٤٩ ﴾ [القمر: ٤٩]

“নিশ্চয় প্রত্যেকটি জিনিসকে আমরা পরিমিতরূপে সৃষ্টি করেছি” (আল-ক্বামার ৪৯)। অন্যত্র

﴿  ٱلۡأَرۡضِ ظُلُمَٰتِ فِي حَبَّةٖ وَلَا يَعۡلَمُهَا إِلَّا وَرَقَةٍ مِن تَسۡقُطُ وَمَا وَٱلۡبَحۡرِۚ ٱلۡبَرِّ فِي مَا وَيَعۡلَمُ هُوَۚ إِلَّا يَعۡلَمُهَآ لَا ٱلۡغَيۡبِ مَفَاتِحُ ۞وَعِندَهُۥ

“তাঁর কাছেই গায়েবী জগতের চাবি রয়েছে; এগুলি তিনি ব্যতীত কেউ জানে না। স্থলে ও জলে

যা কিছু আছে, তিনিই জানেন। তাঁর জানার বাইরে (গাছের) কোন পাতাও ঝরে না। তাক্বদীরের লিখন

ব্যতীত কোন শস্যকণা মৃত্তিকার অন্ধকার অংশে পতিত হয় না এবং কোন আর্দ্র ও

শুষ্ক দ্রব্যও পতিত হয় না” (আন‘আম ৫৯)। মহান আল্লাহ আরো বলেন,

“তুমি কি জানো না যে, আসমান ও যমীনে যা কিছু আছে, সে সম্পর্কে আল্লাহ সম্যক অবগত। এসবই

কিতাবে লিখিত আছে। নিশ্চয়ই তা আল্লাহ্‌র কাছে সহজ” (হজ্জ ৭০)। তিনি আরো এরশাদ করেন,

وَلَا رَطۡبٖ وَلَا يَابِسٍ إِلَّا فِي كِتَٰبٖ مُّبِينٖ ٥٩ ﴾ [الانعام: ٥٩]

﴿ أَلَمۡ تَعۡلَمۡ أَنَّ ٱللَّهَ يَعۡلَمُ مَا فِي ٱلسَّمَآءِ وَٱلۡأَرۡضِۚ إِنَّ ذَٰلِكَ فِي كِتَٰبٍۚ إِنَّ ذَٰلِكَ عَلَى ٱللَّهِ يَسِيرٞ ٧٠ ﴾ [الحج: ٧٠]

﴿وَمَا تَشَآءُونَ إِلَّآ أَن يَشَآءَ ٱللَّهُ رَبُّ ٱلۡعَٰلَمِينَ ٢٩ ﴾ [التكوير: ٢٩]

“তোমরা আল্লাহ রব্বুল আলামীনের ইচ্ছার বাইরে কোনো কিছুই ইচ্ছা করতে পার না” (তাকভীর

২৯)। তাছাড়া রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«  عَلَى اجْتَمَعَتْ لَوْ الأُمَّةَ أَنَّ وَاعْلَمْ بِاللَّهِ، فَاسْتَعِنْ اسْتَعَنْتَ وَإِذَا اللَّهَ، فَاسْأَلِ سَأَلْتَ إِذَا تُجَاهَكَ، تَجِدْهُ اللَّهَ احْفَظِ يَحْفَظْكَ، اللَّهَاحْفَظِ

  اللَّهُ كَتَبَهُ قَدْ بِشَيْءٍ إِلاَّ يَضُرُّوكَ لَمْ بِشَيْءٍ يَضُرُّوكَ أَنْ عَلَى اجْتَمَعُوا وَلَوْ لَكَ، اللَّهُ كَتَبَهُ قَدْ بِشَيْءٍ إِلاَّ يَنْفَعُوكَ لَمْ بِشَيْءٍ يَنْفَعُوكَأَنْ

“আল্লাহ্‌র আদেশ-নিষেধের হেফাযত কর, তাহলে তিনি তোমাকে হেফাযত করবেন। আল্লাহ্‌র অধিকার

রক্ষা কর, তাহলে তুমি তাঁকে তোমার সামনে পাবে। যখন কোনো কিছু চাইবে, তখন আল্লাহ্‌র কাছেই

চাও। অনুরূপভাবে যখন সাহায্য প্রার্থনা করবে, তখন আল্লাহ্‌র কাছেই সাহায্য প্রার্থনা কর। জেনে

রেখো, যদি পৃথিবীর সবাই একত্রিত হয়ে তোমার উপকার করতে চায়, তাহলে আল্লাহ যতটুকু লিখে

রেখেছেন, তার চেয়ে সামান্যতম বেশী উপকার করতে পারবে না। পক্ষান্তরে যদি তারা সবাই একত্রিত হয়ে

তোমার ক্ষতি সাধন করতে চায়, তাহলে আল্লাহ যতটুকু লিখে রেখেছেন, তার চেয়ে বেশী ক্ষতি করতে

পারবে না। তাক্বদীরের লিখন শেষ হয়ে গেছে” (তিরমিযী, তিনি হাদীসটিকে ‘হাসান-সহীহ’

বলেছেন)। তিরমিযী ছাড়া অন্য বর্ণনায় এসেছে, “তুমি আল্লাহ্‌র অধিকার রক্ষা কর, তাহলে তাঁকে তুমি

তোমার সামনে পাবে। তোমার সুখ-স্বাচ্ছন্দের সময় আল্লাহকে চিনো, তাহলে কষ্ট-কাঠিন্যের সময়

তিনি তোমাকে চিনবেন। জেনে রেখো, তাক্বদীরে যদি লেখা থাকে, তোমার কিছু ভুল হবে, তাহলে তা

কখনই সঠিক হতে পারে না। পক্ষান্তরে তাক্বদীরে যদি লেখা থাকে, তোমার সঠিক কিছু হবে, তাহলে তা

কখনই ভুল হতে পারে না। জেনে রেখো, ধৈর্য্যের সাথেই রয়েছে প্রকৃত বিজয়, দুঃখ-কষ্টের সাথেই রয়েছে

আনন্দ এবং জটিলতার সাথেই রয়েছে সহজতা”।

প্রশ্ন ১৮: কবরে সুখ-শান্তির বিষয়টি কি কুরআন-সুন্নাহ্‌ দ্বারা প্রমাণিত?

উত্তরঃ হ্যাঁ, মহান আল্লাহ বলেন,

“সকালে ও সন্ধ্যায় তাদেরকে আগুনের সামনে পেশ করা হয়। আর কিয়ামতের দিন আদেশ করা

হবে, ফেরাউন গোত্রকে কঠিনতর আযাবে দাখিল কর” (গাফির ৪৬)। অন্য আয়াতে এসেছে,

“মহান আল্লাহ মুমিনদেরকে পার্থিব জীবনে এবং আখেরাতে মজবুত বাক্য দ্বারা অবিচল

রাখেন” (ইবরাহীম ২৭)।

হাদীসে ক্বুদসীতে এরশাদ হয়েছে, “আসমান থেকে একজন ঘোষণাকারী ঘোষণা দেন যে, আমার বান্দা

সত্য বলেছে। অতএব, তার জন্য জান্নাতের বিছানা বিছিয়ে দাও, তাকে জান্নাতের পোষাক পরিয়ে দাও

এবং তার জন্য জান্নাত পর্যন্ত একটি দরজা খুলে দাও, যেদিক দিয়ে তার কাছে জান্নাতের সুবাতাস ও

সুঘ্রাণ আসবে। আর যত দূর তার চোখ যায়, তত দূর পর্যন্ত তার কবরকে সম্প্রসারিত করা

হবে। পক্ষান্তরে মৃত ব্যক্তি কাফের হলে সে ফেরেশতাদ্বয়ের প্রশ্নোত্তরে ব্যর্থ হবে। ফলে একজন

ঘোষণাকারী এমর্মে ঘোষণা দিবেন যে, সে মিথ্যা বলেছে। অতএব, তার জন্য জাহান্নামেরর বিছানা

বিছিয়ে দাও, তাকে জাহান্নামের পোষাক পরিয়ে দাও এবং তার জন্য জাহান্নাম পর্যন্ত একটি দরজা খুলে

عَلَيْكَ، رُفِعَتِ الأَقْلاَمُ وَجَفَّتْ الصُّحُفُ»

﴿ ٱلنَّارُ يُعۡرَضُونَ عَلَيۡهَا غُدُوّٗا وَعَشِيّٗاۚ وَيَوۡمَ تَقُومُ ٱلسَّاعَةُ أَدۡخِلُوٓاْ ءَالَ فِرۡعَوۡنَ أَشَدَّ ٱلۡعَذَابِ ٤٦ ﴾ [غافر: ٤٦]

﴿يُثَبِّتُ ٱللَّهُ ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ بِٱلۡقَوۡلِ ٱلثَّابِتِ فِي ٱلۡحَيَوٰةِ ٱلدُّنۡيَا وَفِي ٱلۡأٓخِرَةِۖ﴾ [ابراهيم: ٢٧]

দাও, যেদিক দিয়ে তার কাছে জাহান্নামের তাপ ও বিষ আসবে। আর তার কবরকে তার জন্য এমন সংকীর্ণ

করা হবে যে, তার পাজরের হাড়-হাড্ডি একটা আরেকটার মধ্যে ঢুকে যাবে” (তিরমিযী, ‘সহীহ’)।

অন্য বর্ণনায় এসেছে, “অতঃপর কাফেরের জন্য লোহার হাতুড়ি দিয়ে একজন অন্ধ এবং বধির

ফেরেশতা নিযুক্ত করা হবে; ঐ হাতুড়ি দিয়ে যদি পাহাড়কেও মারা হয়, তবুও পাহাড় মাটি হয়ে যাবে। ফেরেশতা

ঐ হাতুড়ি দিয়ে তাকে এমন আঘাত করবেন, মানুষ ও জিন ব্যতীত সবাই তার চিৎকার শুনতে পাবে। অতঃপর

সে মাটির সাথে মিশে যাবে, তারপর তার মধ্যে আবার রূহ প্রদান করা হবে” (আবূ দাঊদ)।[2]

প্রশ্ন ১৯: কুরআন কি আল্লাহ্‌র পক্ষ থেকে নাযিলকৃত নাকি আল্লাহ্‌র সৃষ্ট?

উত্তরঃ কুরআন সৃষ্ট নয়; বরং তা আল্লাহ্‌র পক্ষ থেকে নাযিলকৃত। এর প্রমাণ আল্লাহর বাণী,

“নিশ্চয়ই আমরা আপনার প্রতি কুরআনকে সুস্পষ্টভাবে অবতীর্ণ করেছি” (ইনসান ২৩)। অন্য

আয়াতে বলা হয়েছে,

“নিশ্চয়ই আমরা কুরআন অবতীর্ণ করেছি এবং আমরা নিজেরাই এর সংরক্ষক” (হিজর ৯)।

প্রশ্ন ২০: আমল ছাড়া ঈমান কি কোনো কাজে আসবে?

উত্তরঃ একজন মুমিনের ভেতর অবশ্যই ঈমান এবং আমল উভয়ের সমন্বয় থাকতে হবে। প্রমাণ

﴿ إِنَّا نَحۡنُ نَزَّلۡنَا عَلَيۡكَ ٱلۡقُرۡءَانَ تَنزِيلٗا ٢٣ ﴾ [الانسان: ٢٣]

﴿ إِنَّا نَحۡنُ نَزَّلۡنَا ٱلذِّكۡرَ وَإِنَّا لَهُۥ لَحَٰفِظُونَ ٩ ﴾ [الحجر: ٩]

﴿ وَمَن يَأۡتِهِۦ مُؤۡمِنٗا قَدۡ عَمِلَ ٱلصَّٰلِحَٰتِ فَأُوْلَٰٓئِكَ لَهُمُ ٱلدَّرَجَٰتُ ٱلۡعُلَىٰ ٧٥ ﴾ [طه: ٧٥]

“আর যারা ঈমানদার হয়ে এবং সৎকর্ম করে তাঁর কাছে হাযির হবে, তাদের জন্যই রয়েছে সুউচ্চ

মর্যাদা” (ত্ব-হা ৭৫)। উক্ত আয়াতে মহান আল্লাহ জান্নাতে প্রবেশের জন্য ঈমান এবং আমল উভয়ের

শর্তারোপ করেছেন।

প্রশ্ন ২১: 'ইহ্‌সান' কাকে বলে?

উত্তরঃ 'ইহ্‌সান'-এর সংজ্ঞায় রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

“ইহ্‌সান অর্থ: এমনভাবে আল্লাহ্‌র ইবাদত করা, যেন তুমি তাঁকে দেখছ। যদি তুমি তাঁকে দেখতে সক্ষম

না হও, তাহলে মনে করবে, তিনি তোমাকে দেখছেন” (বুখারী)।

প্রশ্ন ২২: একজন মুমিনের আমল কখন বন্ধ হয়ে যায়?

উত্তরঃ কেবলমাত্র মৃত্যুর মাধ্যমে একজন মুমিনের আমল বন্ধ হয়ে যায়। মহান আল্লাহ বলেন,

“মৃত্যু অবধি আপনি আপনার পালনকর্তার ইবাদত করুন।” হাদীসে এসেছে,

«أَنْ تَعْبُدَ اللَّهَ كَأَنَّكَ تَرَاهُ فَإِنْ لَمْ تَكُنْ تَرَاهُ فَإِنَّهُ يَرَاكَ»

﴿ وَٱعۡبُدۡ رَبَّكَ حَتَّىٰ يَأۡتِيَكَ ٱلۡيَقِينُ ٩٩ ﴾ [الحجر: ٩٩]

«إِذَا مَاتَ الإِنْسَانُ انْقَطَعَ عَنْهُ عَمَلُهُ إِلاَّ مِنْ ثَلاَثَةٍ إِلاَّ مِنْ صَدَقَةٍ جَارِيَةٍ أَوْ عِلْمٍ يُنْتَفَعُ بِهِ أَوْ وَلَدٍ صَالِحٍ يَدْعُو لَهُ»

“মানুষ যখন মারা যায়, তখন তিনটি আমল ব্যতীত তার সমস্ত আমল বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়ঃ ছাদাক্বায়ে

জারিয়াহ, তার রেখে যাওয়া এমন ইলম, যদ্বারা উপকার সাধিত হয় এবং এমন সৎ সন্তান, যে তার জন্য

দো‘আ করে” (মুসলিম)। তাছাড়া নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর জীবদ্দশায় কখনই আমল

পরিত্যাগ করেন নি।

প্রশ্ন ২৩: মানুষ কি বাধ্যগত জীব নাকি স্বাধীন?

উত্তরঃ এধরনের শব্দ ব্যবহার করা উচিৎ নয়। কেননা এ দু’টিই ভুল। কুরআনুল কারীম ও সহীহ

হাদীসের বক্তব্য অনুযায়ী প্রমাণিত হয়, মানুষের ইচ্ছাশক্তি রয়েছে এবং সে তার ইচ্ছাশক্তি প্রয়োগের

মাধ্যমেই আমল করে থাকে। তবে এসবকিছুই আল্লাহ্‌র ইলম এবং ইচ্ছার অধীন। এরশাদ হচ্ছে,

“(এই উপদেশ) তার জন্য, তোমাদের মধ্যে যে সরল পথে চলতে চায়। তোমরা আল্লাহ রাব্বুল

আলামীনের ইচ্ছার বাইরে অন্য কিছুই ইচ্ছা করতে পার না” (তাকভীর ২৮-২৯)।

প্রশ্ন ২৪: তাওহীদ কয় প্রকার ও কি কি?

উত্তরঃ তাওহীদ বা আল্লাহ্‌র একত্ববাদ তিন প্রকারঃ

   ১. ইবাদতের ক্ষেত্রে আল্লাহ্‌র একত্ববাদঃ এর অর্থ হচ্ছে, আমাদেরকে এমর্মে অকাট্য বিশ্বাস

পোষণ করতে হবে যে, একমাত্র আল্লাহই এককভাবে ইবাদত পাওয়ার যোগ্য, এতে তাঁর কোনো

অংশীদার নেই। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

“তাদেরকে কেবলমাত্র এই নির্দেশ করা হয়েছে যে, তারা খাঁটি বিশ্বাসের সহিত এবং একনিষ্ঠভাবে

আল্লাহ্‌র ইবাদত করবে” (বাইয়্যেনাহ ৫)।

   ২. রুবুবিয়াত তথা প্রতিপালনের ক্ষেত্রে আল্লাহ্‌র একত্ববাদঃ অর্থাৎ আমাদেরকে এই অকাট্য

বিশ্বাস পোষণ করতে হবে যে, একমাত্র আল্লাহই সবকিছুর সৃষ্টিকর্তা, রিযিক্বদাতা এবং

পরিচালক; এক্ষেত্রে তার কোনো অংশীদার নেই এবং নেই কোনো সহযোগীও। মহান আল্লাহ বলেন,

“আল্লাহ ব্যতীত এমন কোন স্রষ্টা আছে কি, যে তোমাদেরকে আসমান ও যমীন থেকে রিযিক্ব দান

করে? তিনি ব্যতীত সত্য কোন উপাস্য নেই। অতএব, তোমরা কিভাবে (তাঁর তাওহীদ থেকে) ফিরে

যাচ্ছ?” (ফাতির ৩)। তিনি আরো বলেন,

“নিশ্চয় মহান আল্লাহই একমাত্র রিযিক্বদাতা, মহাশক্তিমান এবং পরাক্রান্ত” (যারিয়াত

৫৮)। তিনি আরো বলেন,

“তিনি আকাশ থেকে পৃথিবী পর্যন্ত সবকিছু পরিচালনা করেন” (সাজদাহ ৫)।

   ৩. আল্লাহ্‌র সুন্দরতম নামসমূহ এবং গুণাবলীর ক্ষেত্রে একত্ববাদঃ অর্থাৎ এই বিশ্বাস করতে

হবে যে, মহান আল্লাহ্‌র সুন্দরতম নামসমূহ এবং পরিপূর্ণ গুণাবলী রয়েছে, যেগুলি কুরআনুল কারীম ও সহীহ

হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। মহান আল্লাহ বলেন,

﴿لِمَن شَآءَ مِنكُمۡ أَن يَسۡتَقِيمَ ٢٨ وَمَا تَشَآءُونَ إِلَّآ أَن يَشَآءَ ٱللَّهُ رَبُّ ٱلۡعَٰلَمِينَ ٢٩ ﴾ [التكوير: ٢٨،  ٢٩]

﴿ وَمَآ أُمِرُوٓاْ إِلَّا لِيَعۡبُدُواْ ٱللَّهَ مُخۡلِصِينَ لَهُ ٱلدِّينَ حُنَفَآءَ﴾ [البينة: ٥]   

﴿هَلۡ مِنۡ خَٰلِقٍ غَيۡرُ ٱللَّهِ يَرۡزُقُكُم مِّنَ ٱلسَّمَآءِ وَٱلۡأَرۡضِۚ لَآ إِلَٰهَ إِلَّا هُوَۖ فَأَنَّىٰ تُؤۡفَكُونَ﴾ [فاطر: ٣]

﴿ إِنَّ ٱللَّهَ هُوَ ٱلرَّزَّاقُ ذُو ٱلۡقُوَّةِ ٱلۡمَتِينُ ٥٨ ﴾ [الذاريات: ٥٨]

﴿ يُدَبِّرُ ٱلۡأَمۡرَ مِنَ ٱلسَّمَآءِ إِلَى ٱلۡأَرۡضِ﴾ [السجدة: ٥]

﴿ وَلِلَّهِ ٱلۡأَسۡمَآءُ ٱلۡحُسۡنَىٰ فَٱدۡعُوهُ بِهَاۖ﴾ [الاعراف: ١٨٠]   

“আর আল্লাহ্‌র রয়েছে সুন্দরতম নামসমূহ। অতএব, সেগুলির মাধ্যমেই তাঁকে ডাকো” (আ'রাফ

১৮০)। এই নামসমূহ এবং গুণাবলীতে কোনোরূপ পরিবর্তন-পরিবর্ধন করা যাবে না এবং এগুলির

কল্পিত কোনো আকৃতি যেমন স্থির করা যাবে না, তেমনি কোনো সৃষ্টির সাথে সেগুলির কোনোরূপ

সাদৃশ্য বিধানও করা চলবে না। আমাদেরকে আরো বিশ্বাস করতে হবে যে, মহান আল্লাহ্‌র মত আর কেউ

নেই। আল্লাহ বলেন,

“কোন কিছুই তাঁর অনুরূপ নয়। তিনি সর্বশ্রোতা এবং সর্বদ্রষ্টা” (শূরা ১১)।

প্রশ্ন ২৫: নভোমণ্ডল ও ভূমণ্ডল এবং এতদুভয়ের মধ্যবর্তী বস্তুসমূহকে পরিচালনা করেন?

উত্তরঃ নভোমণ্ডল ও ভূমণ্ডল এবং এতদুভয়ের মধ্যবর্তী সকল বস্তু একমাত্র আল্লাহই

পরিচালনা করেন; এসব পরিচালনার ক্ষেত্রে তার কোনো অংশীদার নেই এবং নেই কোনো

সহযোগী। এরশাদ হচ্ছে,

“এতে তাদের কোন অংশও নেই এবং তাদের কেউ আল্লাহ্‌র সহযোগীও নয়” (সাবা ২২)।

প্রশ্ন ২৬: কোনো ব্যক্তি যদি বিশ্বাস করে, সমস্ত পৃথিবী চার কুতুব বা চারটি মূল শক্তি দ্বারা

নিয়ন্ত্রিত হয়, তাহলে আমরা তার ব্যাপারে কি বলতে পারি?

উত্তরঃ কোনো ব্যক্তি যদি এই ধরনের বিশ্বাস পোষণ করে, তাহলে সকল আলেমের ঐকমত্যের

ভিত্তিতে সে কাফের। কেননা সে এই ভ্রান্ত আক্বীদা পোষণের মাধ্যমে মূলতঃ আল্লাহ্‌র নিম্নোক্ত

বাণীকে অস্বীকার করেঃ

“এতে তাদের কোন অংশও নেই এবং তাদের কেউ আল্লাহ্‌র সহযোগীও নয়” (সাবা ২২)। উপরন্তু সে

বিশ্ব-জগত পরিচালনার ক্ষেত্রে আল্লাহ্‌র উপর অপারগতার অপবাদ দেয়।

প্রশ্ন ২৭: আপনার নবী কে?

উত্তরঃ আমার নবী মুহাম্মাদ ইবনে আব্দুল্লাহ ইবনে আব্দুল মুত্তালিব ইবনে হাশেম ইবনে আবদে

মানাফ। তাঁকে আল্লাহ  ইসমাঈল-এর উত্তরসূরী কুরাইশ বংশ থেকে মনোনীত করে মানব এবং জিন

জাতির নিকট নবী হিসাবে প্রেরণ করেন। আর তার উপর অবতীর্ণ করেন অহি। ফলে তিনি মানুষকে

একমাত্র আল্লাহ্‌র ইবাদত করার উদাত্ত আহ্বান জানান। পক্ষান্তরে আল্লাহ ছাড়া তারা যেসব

প্রতিমা, পাথর, গাছ-গাছালি, নবী-রাসূল, নেককার ব্যক্তি, ফেরেশতা ইত্যাদির ইবাদত করত, তা ছেড়ে

দিতে আহ্বান জানান। এক কথায় তিনি শির্ক বর্জন করে খালেছ তাওহীদ প্রতিষ্ঠার আহ্বান

জানান। সাথে সাথে তিনি একথাও ঘোষণা করেন যে, আল্লাহ ছাড়া আর কেউ কল্যাণ সাধন বা অকল্যাণ

দূরীকরণে সক্ষম নন। মহান আল্লাহ বলেন,

﴿ أَمَّن يُجِيبُ ٱلۡمُضۡطَرَّ إِذَا دَعَاهُ وَيَكۡشِفُ ٱلسُّوٓءَ وَيَجۡعَلُكُمۡ خُلَفَآءَ ٱلۡأَرۡضِۗ أَءِلَٰهٞ مَّعَ ٱللَّهِۚ قَلِيلٗا مَّا تَذَكَّرُونَ ٦٢ ﴾ [النمل: ٦٢]

﴿لَيۡسَ كَمِثۡلِهِۦ شَيۡءٞۖ وَهُوَ ٱلسَّمِيعُ ٱلۡبَصِيرُ ١١ ﴾ [الشورا: ١١]

﴿وَمَا لَهُمۡ فِيهِمَا مِن شِرۡكٖ وَمَا لَهُۥ مِنۡهُم مِّن ظَهِيرٖ ﴾ [سبا: ٢٢]

﴿وَمَا لَهُمۡ فِيهِمَا مِن شِرۡكٖ وَمَا لَهُۥ مِنۡهُم مِّن ظَهِيرٖ ٢٢ ﴾ [سبا: ٢٢]

“কে নিরূপায়ের ডাকে সাড়া দেন, যখন সে ডাকে এবং কে কষ্ট দূরীভূত করেন? আর কে তোমাদেরকে

পৃথিবীতে পূর্ববর্তীদের স্থলাভিষিক্ত করেন? সুতরাং আল্লাহ্‌র সাথে অন্য কোন উপাস্য আছে

কি? তোমরা অতি সামান্যই উপদেশ গ্রহণ কর” (নামল ৬২)। অনুরূপভাবে তিনি মানুষকে একথাও অবগত

করেছেন যে, কল্যাণ সাধন এবং অদৃশ্যের জ্ঞান একমাত্র আল্লাহ্‌র নিকটেই। এক্ষেত্রে নবী-

রাসূল, ফেরেশতামণ্ডলী, অলী-আউলিয়া কারো কোনো ক্ষমতা নেই। এরশাদ হচ্ছে,

“আপনি বলুন, আমি তোমাদেরকে বলি না যে, আমার কাছে আল্লাহ্‌র ভাণ্ডার রয়েছে। তাছাড়া আমি

অদৃশ্য বিষয়ও অবগত নই। আমি এমনও বলি না যে, আমি ফেরেশতা”(আন‘আম ৫০)।

প্রশ্ন ২৮: অলী-আওলিয়ারা কি গায়েবের খবর জানেন? তারা কি মৃতকে জীবিত করতে পারেন?

উত্তরঃ একমাত্র আল্লাহ ছাড়া গায়েবের খবর আর কেউই জানে না। মহান আল্লাহ বলেন,

“আর আমি যদি গায়বের কথা জানতাম, তাহলে বহু কল্যাণ অর্জন করে নিতে পারতাম এবং কোনো

অকল্যাণ আমাকে স্পর্শ করতে পারত না” (আ'রাফ ১৮৮)। অনুরূপভাবে একমাত্র আল্লাহ ছাড়া মৃতকে

আর কেউই জীবিত করতে পারে না। আল্লাহ বলেন,

“আপনি বলুন, আল্লাহই তোমাদেরকে জীবন দান করেন, অতঃপর মৃত্যু দেন। অতঃপর তিনিই

তোমাদেরকে কিয়ামতের দিন একত্রিত করবেন, যে দিনের ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু

অধিকাংশ মানুষ বুঝে না” (জাছিয়াহ ২৬)।

চার ইমামের সকলেই এ মর্মে একমত পোষণ করেছেন, যে ব্যক্তি দাবি করবে রাসূলুল্লাহ

সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম গায়েবের খবর রাখেন অথবা মৃতকে জীবিত করেন, সে মুরতাদ অর্থাৎ

ইসলামের গণ্ডির বাইরে। কেননা সে এর মাধ্যমে আল্লাহ্‌র উপর মিথ্যারোপ করে। কারণ আল্লাহ তাঁর

রাসূলকে মানুষ এবং জিন জাতিকে নিম্নোক্ত বাণী পৌঁছে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেনঃ

 “আপনি বলুন, আমি তোমাদেরকে বলি না যে, আমার কাছে আল্লাহ্‌র ভাণ্ডার রয়েছে। তাছাড়া আমি

অদৃশ্য বিষয়ও অবগত নই। আমি এমনও বলি না যে, আমি ফেরেশতা” (আন‘আম ৫০)। ইমাম বুখারী তাঁর

স্বীয় সহীহ গ্রন্থে আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু)-এর সূত্রে বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ

সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘অদৃশ্যের চাবি পাঁচটি, যা আল্লাহ ছাড়া কেউই জানেন না:

﴿  أَرۡضٖ بِأَيِّ نَفۡسُۢ تَدۡرِي وَمَا غَدٗاۖ تَكۡسِبُ مَّاذَا نَفۡسٞ تَدۡرِي وَمَا ٱلۡأَرۡحَامِۖ فِي مَا وَيَعۡلَمُ ٱلۡغَيۡثَ وَيُنَزِّلُ ٱلسَّاعَةِ عِلۡمُ عِندَهُۥ ٱللَّهَ إِنَّ

  “নিশ্চয় আল্লাহ্‌র কাছেই কিয়ামতের জ্ঞান রয়েছে। তিনিই বৃষ্টি বর্ষণ করেন এবং গর্ভাশয়ে যা

থাকে, তা তিনি জানেন। কেউ জানে না যে, সে আগামীকাল কি উপার্জন করবে এবং কেউ জানে না যে, সে

কোন্‌ দেশে মৃত্যুবরণ করবে। নিশ্চয়ই আল্লাহ সর্বজ্ঞ, সর্ববিষয়ে সম্যক জ্ঞাত” (লুক্বমান ৩৪)'।

তবে নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম অদৃশ্যের খবর ঠিক ততটুকুই জানেন, যতটুকু আল্লাহ

রাব্বুল আলামীন তাঁকে জানান। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম কখনো এই দাবি করেন নি

﴿ قُل لَّآ أَقُولُ لَكُمۡ عِندِي خَزَآئِنُ ٱللَّهِ وَلَآ أَعۡلَمُ ٱلۡغَيۡبَ وَلَآ أَقُولُ لَكُمۡ إِنِّي مَلَكٌۖ ﴾ [الانعام: ٥٠]

﴿وَلَوۡ كُنتُ أَعۡلَمُ ٱلۡغَيۡبَ لَٱسۡتَكۡثَرۡتُ مِنَ ٱلۡخَيۡرِ وَمَا مَسَّنِيَ ٱلسُّوٓءُۚ﴾ [الاعراف: ١٨٨]   

﴿قُلِ ٱللَّهُ يُحۡيِيكُمۡ ثُمَّ يُمِيتُكُمۡ ثُمَّ يَجۡمَعُكُمۡ إِلَىٰ يَوۡمِ ٱلۡقِيَٰمَةِ لَا رَيۡبَ فِيهِ وَلَٰكِنَّ أَكۡثَرَ ٱلنَّاسِ لَا يَعۡلَمُونَ ٢٦ ﴾ [الجاثية: ٢٦]

﴿ قُل لَّآ أَقُولُ لَكُمۡ عِندِي خَزَآئِنُ ٱللَّهِ وَلَآ أَعۡلَمُ ٱلۡغَيۡبَ وَلَآ أَقُولُ لَكُمۡ إِنِّي مَلَكٌۖ ﴾ [الانعام: ٥٠]

تَمُوتُۚ إِنَّ ٱللَّهَ عَلِيمٌ خَبِيرُۢ ٣٤ ﴾ [لقمان: ٣٤]

যে, তিনি তাঁর কোনো সাহাবীকে অথবা তাঁর প্রয়াত কোনো সন্তানকে জীবিত করেছেন। আর যদি

সর্বশ্রেষ্ঠ নবী ও অলীর দ্বারা এটি সম্ভব না হয়, তাহলে যারা তাঁর থেকে নিম্ন পর্যায়ের, তাদের দ্বারা

এগুলি কিভাবে সম্ভব হতে পারে?!

প্রশ্ন ২৯: ঈসা আলাইহিস সালাম মৃতদেরকে জীবিত করতে পারতেন এবং মানুষ তাদের বাড়িতে যা কিছু

সঞ্চয় করত, তা জানতেন। প্রশ্ন হচ্ছে, তাহলে অন্যান্য আউলিয়াদের দ্বারা কি এমনটি সম্ভব?

উত্তরঃ এটি আল্লাহ তা‘আলা তাঁর রাসূল ঈসা আলাইহিস সালাম-এর জন্য একটি স্বতন্ত্র্য

অলৌকিক ঘটনা হিসাবে নির্ধারণ করেছেন, যেটি অন্য কারো জন্য করেন নি। আর নবী

সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈসা আলাইহিস সালাম-এর চেয়ে মর্যাদাবান হওয়া সত্ত্বেও উক্ত দাবি

করেন নি। তাহলে কিভাবে কেউ দাবি করতে পারে যে, আল্লাহ্‌র প্রিয় বান্দারা মৃতদেরকে জীবিত করতে

প্রশ্ন ৩০: আল্লাহ্‌র অলী হওয়ার বিষয়টি কি শুধু কতিপয় মুমিনের সাথে নির্দিষ্ট নাকি সকল

মুমিনের ক্ষেত্রেই তা সম্ভব?

উত্তরঃ প্রত্যেক প্রকৃত মুমিন-মুত্তাক্বী ব্যক্তিই আল্লাহ্‌র অলী। মহান আল্লাহ বলেন,

“মনে রেখো, যারা আল্লাহ্‌র অলী, তাদের কোন ভয় নেই এবং তারা চিন্তিতও হবে না। তারা

হচ্ছে, যারা ঈমান এনেছে এবং তাক্বওয়া অর্জন করেছে” (ইউনুস ৬২-৬৩)। আর তাক্বওয়া

হচ্ছে, আল্লাহ এবং তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর যাবতীয় আদেশ-নিষেধ মেনে

চলা। অতএব, আল্লাহ্‌র অলী হওয়ার বিষয়টি সকল মুমিন নর-নারীর জন্য উন্মুক্ত; বিশেষ কারো জন্য

﴿ أَلَآ إِنَّ أَوۡلِيَآءَ ٱللَّهِ لَا خَوۡفٌ عَلَيۡهِمۡ وَلَا هُمۡ يَحۡزَنُونَ ٦٢ ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ وَكَانُواْ يَتَّقُونَ ٦٣ ﴾ [يونس: ٦٢،  ٦٣]

প্রশ্ন ৩১: আল্লাহ তা‘আলা বলেন,  يَحْزَنُونَ﴾ هُمْ وَلَا عَلَيْهِمْ خَوْفٌ لَا اللَّهِ أَوْلِيَاءَ إِنَّ﴿أَلَا ‘মনে রেখো, যারা

আল্লাহ্‌র অলী, তাদের কোন ভয় নেই এবং তারা চিন্তিতও হবে না’ (ইউনুস ৬২)। উক্ত আয়াত কি অলী-

আউলিয়াদের নিকট প্রার্থনা করার বৈধতা নির্দেশ করে?

উত্তরঃ আয়াতটি অলী-আউলিয়াদের নিকট প্রার্থনা করা অথবা সাহায্য চাওয়ার বৈধতা নির্দেশ

করে না; বরং আউলিয়াদের মর্যাদা নির্দেশ করে। কেননা দুনিয়াতে তাঁদের কোনো ভয় নেই এবং

আখেরাতেও তাঁরা চিন্তিত হবেন না। মনে রাখতে হবে, আল্লাহ ব্যতীত অন্যের কাছে প্রার্থনা করা

প্রশ্ন ৩২: মুমিনগণ জান্নাতে তাঁদের প্রতিপালককে দেখতে পাবেন কি?

উত্তরঃ হ্যাঁ, মুমিনগণ জান্নাতে তাঁদের প্রতিপালককে দেখতে পাবেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

“সেদিন অনেক মুখমণ্ডল উজ্জ্বল হবে। তারা তাদের পালনকর্তার দিকে তাকিয়ে থাকবে” (কিয়ামাহ

২২-২৩)। নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

﴿ وُجُوهٞ يَوۡمَئِذٖ نَّاضِرَةٌ ٢٢ إِلَىٰ رَبِّهَا نَاظِرَةٞ ٢٣ ﴾ [القيامة: ٢٢،  ٢٣]

“নিশ্চয়ই তোমরা তোমাদের প্রতিপালককে (জান্নাতে) দেখবে” (বুখারী ও মুসলিম)।

প্রশ্ন ৩৩: নবী-রাসূল বাদে আল্লাহ্‌র অন্যান্য অলী-আউলিয়া কি ছগীরা এবং কাবীরা গোনাহে

পতিত হওয়া থেকে মুক্ত?

উত্তরঃ নবী-রাসূলগণ ছাড়া কোনো অলী-আউলিয়া ছগীরা এবং কাবীরা গোনাহে পতিত হওয়া

প্রশ্ন ৩৪: খিযির কি এখনো জীবিত?

উত্তরঃ নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম পৃথিবীতে প্রেরিত হওয়ার আগেই খিযির মারা

গেছেন। কারণ, আল্লাহ তা‘আলা এরশাদ করেন,

“আপনার পূর্বে কোন মানুষকে আমি অনন্ত জীবন দান করিনি। সুতরাং আপনার মৃত্যু হলে তারা কি

চিরঞ্জীব হবে?” (আম্বিয়া ৩৪)।

আর যদি তিনি জীবিত থাকতেন, তাহলে তিনি নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর অনুসরণ

করতেন এবং তাঁর সাথে জিহাদে শরীক হতেন। কেননা আমাদের নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি

ওয়াসাল্লাম সকল মানুষ এবং জিন জাতির নিকট প্রেরিত হয়েছিলেন। মহান আল্লাহ বলেন,

“বলুন, হে মানবমণ্ডলী! তোমাদের সবার নিকটে আমি আল্লাহ প্রেরিত রাসূল” (আ'রাফ ১৫৮)।

ইবনে ওমর (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর জীবনের

শেষাংশে একবার আমাদেরকে নিয়ে এশার ছালাত আদায় করলেন। তিনি সালাম ফিরে উঠে দাঁড়ালেন এবং

﴿ وَمَا جَعَلۡنَا لِبَشَرٖ مِّن قَبۡلِكَ ٱلۡخُلۡدَۖ أَفَإِيْن مِّتَّ فَهُمُ ٱلۡخَٰلِدُونَ ٣٤ ﴾ [الانبياء: ٣٤]

﴿ قُلۡ يَٰٓأَيُّهَا ٱلنَّاسُ إِنِّي رَسُولُ ٱللَّهِ إِلَيۡكُمۡ جَمِيعًا﴾ [الاعراف: ١٥٨]   

«أَرَأَيْتُمْ لَيْلَتَكُمْ هَذِهِ فَإِنَّ عَلَى رَأْسِ مِائَةِ سَنَةٍ مِنْهَا لاَ يَبْقَى مِمَّنْ هُوَ عَلَى ظَهْرِ الأَرْضِ أَحَدٌ»

“তোমরা আজকের রাত সম্পর্কে কিছু জানো কি? (মনে রেখো) বর্তমানে যারা ভূ-পৃষ্ঠে

রয়েছে, তাদের কেউ এই রাত থেকে নিয়ে একশত বৎসরের মাথায় বেঁচে থাকবে না” (বুখারী ও

মুসলিম)। উক্ত হাদীসও প্রমাণ করে যে, খিযির মৃত্যুবরণ করেছেন। অতএব, তিনি কারো ডাকে সাড়া

দেন না এবং কাউকে পথ প্রদর্শনও করেন না।

প্রশ্ন ৩৫: শির্ক কত প্রকার?

উত্তরঃ শির্ক দুই প্রকার। যথাঃ

১. বড় শির্কঃ যেমন: মৃত ব্যক্তির নিকট সাহায্য চাওয়া, আল্লাহ ছাড়া আর কেউ বাস্তবায়নে

অক্ষম- এমন কোনো বিষয়ে অন্যের কাছে সাহায্য প্রার্থনা করা, আল্লাহ ছাড়া অন্যের উপর ভরসা

করা, আল্লাহ ব্যতীত অন্যের উদ্দেশ্যে যবেহ করা ইত্যাদি। শির্কের গোনাহ আল্লাহ ক্ষমা করেন

না। আল্লাহ বলেন,

“নিশ্চয়ই আল্লাহ শির্কের গোনাহ ক্ষমা করেন না” (নিসা ১১৬)। নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি

﴿ إِنَّ ٱللَّهَ لَا يَغۡفِرُ أَن يُشۡرَكَ بِهِۦ﴾ [النساء: ٤٨]

«مَنْ لَقِىَ اللَّهَ لاَ يُشْرِكُ بِهِ شَيْئًا دَخَلَ الْجَنَّةَ وَمَنْ لَقِيَهُ يُشْرِكُ بِهِ دَخَلَ النَّارِ»

“যে ব্যক্তি আল্লাহ্‌র সাথে শির্ক না করে মৃত্যুবরণ করবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। পক্ষান্তরে

যে ব্যক্তি আল্লাহ্‌র সাথে শির্ক করে মৃত্যুবরণ করবে, সে জাহান্নামে প্রবেশ করবে” (মুসলিম)।

২. ছোট শির্কঃ যেমন: লোক দেখানো ইবাদত। নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

“যে বিষয়ে আমি তোমাদের উপরে সবচেয়ে বেশি ভয় করি, তা হল ছোট শির্ক”। ছাহাবায়ে কেরাম

(রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুম) তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহ্‌র রাসূল! ছোট শির্ক কি? তিনি

বললেন, “ছোট শির্ক হচ্ছে লোক দেখানো ইবাদত” (মুসলিম)। অনুরূপভাবে আল্লাহ ছাড়া অন্যের নামে

শপথ করাও ছোট শির্কের অন্তর্ভুক্ত। নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

“যে ব্যক্তি আল্লাহ ছাড়া অন্যের নামে শপথ করে, সে কুফরী করে অথবা শির্ক করে” (তিরমিযী)।

প্রশ্ন ৩৬: মৃত ব্যক্তিরা কি শ্রবণ করে এবং আহ্বানকারীর আহ্বানে সাড়া দেয়?

উত্তরঃ মৃত ব্যক্তিরা শ্রবণ করে না এবং আহ্বানকারীর আহ্বানে সাড়াও দেয় না। আল্লাহ বলেন,

“আপনি কবরে শায়িতদেরকে শুনাতে সক্ষম নন” (ফাতির ২২)। তিনি আরো বলেন,

“আপনি মৃতদেরকে আহ্বান শোনাতে পারবেন না” (নামল ৮০)। তিনি অন্যত্র বলেন,

﴿  قِطۡمِيرٍ مِن يَمۡلِكُونَ مَا دُونِهِۦ مِن تَدۡعُونَوَٱلَّذِينَ١٣  ٱلۡقِيَٰمَةِ وَيَوۡمَ لَكُمۡۖ ٱسۡتَجَابُواْ مَا سَمِعُواْ وَلَوۡ دُعَآءَكُمۡ يَسۡمَعُواْ لَا تَدۡعُوهُمۡ إِن

“তাঁর পরিবর্তে তোমরা যাদেরকে ডাক, তারা তুচ্ছ খেজুর বীচির আবরণেরও অধিকারী

নয়। তোমরা তাদেরকে ডাকলে তারা তোমাদের সে ডাক শুনে না। আর শুনলেও তোমাদের ডাকে সাড়া

দেয় না। কিয়ামতের দিন তারা তোমাদের শির্ক অস্বীকার করবে। বস্তুতঃ আল্লাহ্‌র ন্যায়

কেউ তোমাকে অবহিত করতে পারবে না” (ফাতির ১৩-১৪)।

প্রশ্ন ৩৭: মূর্খ ব্যক্তিরা যেসব কবরবাসীকে সম্মান করে, তাদের কবরে মাঝে মাঝে কিসের শব্দ

উত্তরঃ মূর্খ ব্যক্তিদের নিকটে বিভ্রান্তি সৃষ্টির উদ্দেশ্যে শয়তানরূপী জিনেরা এমন শব্দ করে

থাকে। কেননা সরাসরি কুরআনের বাণী দ্বারা প্রমাণিত যে, কবরবাসীরা কোনো আহ্বানকারীর

আহ্বানে সাড়া দিতে পারে না। পূর্ববর্তী প্রশ্নের উত্তরের দলীলগুলি দ্রষ্টব্য।

প্রশ্ন ৩৮: আল্লাহ্‌র অলী-আউলিয়া এবং অন্যান্য মৃতব্যক্তি কি কোনো সাহায্য

প্রার্থনাকারীর ডাকে সাড়া দেন?

উত্তরঃ আল্লাহ্‌র অলী-আউলিয়া এবং অন্যান্য মৃতব্যক্তি কোনো সাহায্য প্রার্থনাকারী বা

আহ্বানকারীর ডাকে সাড়া দেন না। কেননা মহান আল্লাহ বলেন,

«إِنَّ أَخْوَفَ مَا أَخَافُ عَلَيْكُمُ الشِّرْكُ الْأَصْغَرُ " قَالُوا: وَمَا الشِّرْكُ الْأَصْغَرُ يَا رَسُولَ اللهِ ؟ قَالَ: " الرِّيَاءُ»

«مَنْ حَلَفَ بِغَيْرِ اللَّهِ فَقَدْ كَفَرَ أَوْ أَشْرَكَ»

﴿وَمَآ أَنتَ بِمُسۡمِعٖ مَّن فِي ٱلۡقُبُورِ ٢٢ ﴾ [فاطر: ٢٢]   

﴿ إِنَّكَ لَا تُسۡمِعُ ٱلۡمَوۡتَىٰ﴾ [النمل: ٨٠]   

يَكۡفُرُونَ بِشِرۡكِكُمۡۚ وَلَا يُنَبِّئُكَ مِثۡلُ خَبِيرٖ ١٤ ﴾ [فاطر: ١٣،  ١٤]   

﴿  قِطۡمِيرٍ مِن يَمۡلِكُونَ مَا دُونِهِۦ مِن تَدۡعُونَوَٱلَّذِينَ١٣  ٱلۡقِيَٰمَةِ وَيَوۡمَ لَكُمۡۖ ٱسۡتَجَابُواْ مَا سَمِعُواْ وَلَوۡ دُعَآءَكُمۡ يَسۡمَعُواْ لَا تَدۡعُوهُمۡ إِن

“তাঁর পরিবর্তে তোমরা যাদেরকে ডাক, তারা তুচ্ছ খেজুর বীচির আবরণেরও অধিকারী

নয়। তোমরা তাদেরকে ডাকলে তারা তোমাদের সে ডাক শুনে না। আর শুনলেও তোমাদের ডাকে সাড়া

দেয় না। কিয়ামতের দিন তারা তোমাদের শির্ক অস্বীকার করবে। বস্তুতঃ আল্লাহ্‌র ন্যায়

কেউ তোমাকে অবহিত করতে পারবে না” (ফাতির ১৩-১৪)। উক্ত আয়াতে তাদের নিকট প্রার্থনা করাকে

শির্ক আখ্যায়িত করা হয়েছে।

প্রশ্ন ৩৯: আল্লাহ বলেন,  يُرْزَقُونَ﴾ رَبِّهِمْ عِندَ أَحْيَاءٌ بَلْ أَمْوَاتًا اللَّهِ سَبِيلِ فِي﴿وَلَا تَحْسَبَنَّ الَّذِينَ قُتِلُوا ‘আর যারা

আল্লাহ্‌র রাহে নিহত হয়, তাদেরকে তুমি কখনো মৃত মনে করো না। বরং তারা তাদের পালনকর্তার

নিকট জীবিত এবং রিযিক্বপ্রাপ্ত’ (আলে ইমরান ১৬৯)। উক্ত আয়াতে বর্ণিত ‘আহ্‌ইয়া’ (أَحْيَاءٌ) শব্দের

উত্তরঃ উক্ত আয়াতে ‘আহ্‌ইয়া’ বলতে শহীদগণের স্বাচ্ছন্দ্যময় জীবনের কথা বুঝানো

হয়েছে। কেননা আল্লাহ্‌র রাস্তায় শহীদগণের রূহসমূহ জান্নাতে পরম সুখ-শান্তি ভোগ করে থাকে। আর

সেজন্যই তো বলা হয়েছে,

“তারা তাদের পালনকর্তার নিকট রিযিক্বপ্রাপ্ত” (আলে ইমরান ১৬৯)। তবে মনে রাখতে

হবে, তাদের মৃত্যু পরবর্তী বারযাখী জীবন বা কবরের জীবন দুনিয়ার জীবনের মত নয়; উভয় জীবনের

মধ্যে কোনো প্রকার তুলনা চলবে না। তাছাড়া বারযাখী জীবনে তারা কারো ডাক শোনে এবং জবাব

দেয় মর্মে কোনো প্রমাণই নেই।

প্রশ্ন ৪০: নাম রাখার ক্ষেত্রে আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো দিকে আরবী ‘আবদ’ (দাস) শব্দের

সম্বন্ধ যেমনঃ আব্দুন্নবী, আব্দুল হুসাইন ইত্যাদি বৈধ হবে কি?

উত্তরঃ নাম রাখার ক্ষেত্রে আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো দিকে আরবী ‘আবদ’ (দাস) শব্দের

সম্বন্ধ হারাম হওয়ার বিষয়ে ইমামগণ একমত পোষণ করেছেন। তাঁদের মতে, এই ধরনের নাম পরিবর্তন

করা ওয়াজিব। কেননা ঐ নামগুলির অর্থ হচ্ছে, নবীর বান্দা, হুসাইনের বান্দা। আর মানুষ আল্লাহ ব্যতীত

অন্য কারো বান্দা হতে পারে না।

উল্লেখ্য যে, আল্লাহ্‌র কাছে সবচেয়ে প্রিয় নাম হচ্ছে, আব্দুল্লাহ এবং আব্দুর রহমান- যার অর্থ

হচ্ছে, আল্লাহ্‌র বান্দা ও রহমানের বান্দা। রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

“আল্লাহ্‌র কাছে সবচেয়ে প্রিয় নাম হচ্ছে আব্দুল্লাহ এবং আব্দুর রহমান” (মুসলিম)। তবে মৃত

ব্যক্তিদের নাম পরিবর্তন করতে হবে না।

প্রশ্ন ৪১: হিংসা ও বদনযর প্রতিরোধের জন্য রিং, সূতা ইত্যাদি হাতে, গলায় বা যানবাহনে ঝুলিয়ে

يَكۡفُرُونَ بِشِرۡكِكُمۡۚ وَلَا يُنَبِّئُكَ مِثۡلُ خَبِيرٖ ١٤ ﴾ [فاطر: ١٣،  ١٤]   

﴿عِندَ رَبِّهِمۡ يُرۡزَقُونَ﴾ [ال عمران: ١٦٩]   

«أَحَبُّ الأَسْمَاءِ إِلَى اللَّهِ تَعَالَى عَبْدُ اللَّهِ وَعَبْدُ الرَّحْمَنِ»

উত্তরঃ হিংসা ও বদ নযর প্রতিরোধের জন্য রিং, সূতা ইত্যাদি হাতে, গলায় বা যানবাহনে ঝুলিয়ে

রাখা শির্ক। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

“যে ব্যক্তি মাদুলি বা তাবিজ ঝুলাল, সে শির্ক করল” (মুসনাদে আহমাদ)। রাসূলুল্লাহ

সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেন,

“কোনো উটের গলায় যদি মালা বা বালা জাতীয় কিছু থাকে, তাহলে তা কেটে ফেলতে

হবে” (বুখারী)। তিনি আরো বলেন,

“যে ব্যক্তি তার দাড়িতে গিঁঠ দিল (পেঁচিয়ে রাখল) অথবা সূতার মালা পরিধান করল অথবা পশুর মল

বা হাড্ডি দিয়ে ইস্তেনজা করল, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার জিম্মাদারী থেকে

মুক্ত” (আহমাদ)। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেন,

“ঝাড়-ফুঁক এবং মাদুলি ও তেওয়ালা ব্যবহার করা শির্ক” (আবু দাউদ)। অন্য হাদীসে তিনি আরো

«مَنْ عَلَّقَ تَمِيمَةً فَقَدْ أَشْرَكَ»

«لاَ يُبْقَيَنَّ فِى رَقَبَةِ بَعِيرٍ قِلاَدَةٌ مِنْ وَتَرٍ وَلاَ قِلاَدَةٌ إِلاَّ قُطِعَتْ»

«مَنْ عَقَدَ لِحْيَتَهُ، أَوْ تَقَلَّدَ وَتَرًا، أَوْ اسْتَنْجَى بِرَجِيعِ دَابَّةٍ أَوْ عَظْمٍ، فَإِنَّ مُحَمَّدًا بَرِيءٌ مِنْهُ»

«إِنَّ الرُّقَى وَالتَّمَائِمَ وَالتِّوَلَةَ شِرْكٌ»

«مَنْ عَلَّقَ تَمِيمَةً فَلاَ أَتَمَّ اللَّهُ لَهُ»

“যে ব্যক্তি মাদুলি ব্যবহার করবে, আল্লাহ তা'আলা তার উদ্দেশ্য পূর্ণ করবেন না” (ইবনে হিব্বান)।

হাদীসে ‘তেওয়ালা’ (التِّوَلَة) বলতে এমন বস্তুকে বুঝানো হয়েছে, যা স্বামীকে স্ত্রীর নিকটে অধিকতর

প্রিয় করে বলে ধারণা করা হয়। এটি সম্পূর্ণ মিথ্যা এবং বানোয়াট।

আর ‘তামীমাহ’ (تَمِيمَة) বা ‘তামায়েম’ (تمَائِم) বলতে এমন জিনিসকে বুঝানো হয়েছে, যা সাধারণতঃ

বাচ্চাদের গলায় হিংসা, বদনযর ইত্যাদি প্রতিরোধের জন্য ঝুলানো হয়। এটি নিছক শির্ক। কেননা

আল্লাহ ছাড়া আর কেউ রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা রাখে না।

প্রশ্ন ৪২: মাটি, পাথর বা গাছ-গাছালির মাধ্যমে বরকত কামনা করা জায়েয আছে কি?

উত্তরঃ এটি শির্কের অন্তর্ভুক্ত। আবু ওয়াক্বিদ লাইছী (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু) থেকে বর্ণিত, তিনি

বলেন, আমরা রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে হুনাইন যুদ্ধের উদ্দেশ্যে রওয়ানা

হলাম। আমরা তখন সবেমাত্র ইসলাম গ্রহণ করেছি। মুশরিকদের একটি কুলগাছ ছিল, যার চারপাশে তারা

অবস্থান গ্রহণ করত এবং তাতে তারা তাদের সমরাস্ত্র ঝুলিয়ে রাখতো। গাছটিকে ‘যাতু

আনওয়াত্ব’ বলা হত। সাহাবী (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু) বলেন, আমরা ঐ কুলগাছের পার্শ্ব দিয়ে অতিক্রম

করার সময় রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বললাম, হে আল্লাহ্‌র রাসূল! মুশরিকদের

যেমন ‘যাতু আনওয়াত্ব’ আছে, আমাদের জন্যও অনুরূপ ‘যাতু আনওয়াত্ব’ নির্ধারণ করে দিন। তখন

রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, “আল্লাহু আকবার, তোমাদের এই দাবীটি পূর্ববর্তী

লোকদের রীতি-নীতি বৈ আর কিছুই নয়। যার হাতে আমার জীবন, তাঁর কসম করে বলছি, তোমরা এমন

কথাই বলেছ, যেমন কথা বনী ইসরাইল মূসাকে বলেছিল। তারা বলেছিলো, হে মূসা, মুশরিকদের যেমন ইলাহ

আছে, আমাদের জন্যও তেমন ইলাহ বানিয়ে দাও। মূসা বললেন, তোমরা মূর্খের মতো কথাবার্তা

বলছো (আ‘রাফ ১৩৮)। তোমরা অবশ্যই তোমাদের পূর্ববর্তী লোকদের রীতিনীতিই অবলম্বন

করছ” (আহমাদ ও তিরমিযী)।

প্রশ্ন ৪৩: কাউকে সন্তুষ্ট করার জন্য আল্লাহ ব্যতীত তার নামে যবেহ করার হুকুম কি?

উত্তরঃ আল্লাহ ব্যতীত অন্য কাউকে সন্তুষ্ট করার জন্য তার নামে যবেহ করা শির্ক। মহান

﴿ فَصَلِّ لِرَبِّكَ وَٱنۡحَرۡ ٢ ﴾ [الكوثر: ٢]

“অতএব, আপনার পালনকর্তার উদ্দেশ্যে ছালাত আদায় করুন এবং ক্বুরবানী করুন” (কাওছার

২)। অন্য আয়াতে এরশাদ হয়েছে,

“আপনি বলুন, আমার ছালাত, আমার ক্বুরবানী এবং আমার জীবন ও মরণ বিশ্ব-প্রতিপালক

আল্লাহ্‌রই জন্য” (আন‘আম ১৬২-১৬৩)। রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

“আল্লাহ ছাড়া অন্যের উদ্দেশ্যে যে ব্যক্তি যবেহ করে, তার উপর আল্লাহ্‌র অভিশাপ” (মুসলিম)।

প্রশ্ন ৪৪: আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো উদ্দেশ্যে মানত করার হুকুম কি?

উত্তরঃ আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো উদ্দেশ্যে মানত করা বড় শির্ক। রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি

ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহ্‌র আনুগত্যের মানত করে, সে যেন তাঁর আনুগত্য

করে। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি তাঁর অবাধ্য হওয়ার মানত করে, সে যেন তার অবাধ্য না হয়' (বুখারী)। এর

অর্থ হলো, মানত একমাত্র আল্লাহ্‌র জন্যই করতে হবে, অন্য কারো জন্য করলে তা শির্ক হবে।

প্রশ্ন ৪৫: আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো কাছে আশ্রয় চাওয়ার হুকুম কি?

উত্তরঃ আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো কাছে আশ্রয় চাওয়া শির্ক। মহান আল্লাহ বলেন,

“কিছু মানুষ কতিপয় জিনের আশ্রয় নিত। ফলে জিনেরা মানুষদের ভয়-ভীতি বাড়িয়ে দিত” (জিন

৬)। কেননা আশ্রয় প্রার্থনা করা ইবাদত। আর ইবাদত একমাত্র আল্লাহ্‌র উদ্দেশ্যেই হতে হবে। মহান

﴿ قُلۡ إِنَّ صَلَاتِي وَنُسُكِي وَمَحۡيَايَ وَمَمَاتِي لِلَّهِ رَبِّ ٱلۡعَٰلَمِينَ ١٦٢ ﴾ [الانعام: ١٦٢]

«لَعَنَ اللَّهُ مَنْ ذَبَحَ لِغَيْرِ اللَّهِ»

﴿ وَأَنَّهُۥ كَانَ رِجَالٞ مِّنَ ٱلۡإِنسِ يَعُوذُونَ بِرِجَالٖ مِّنَ ٱلۡجِنِّ فَزَادُوهُمۡ رَهَقٗا ٦ ﴾ [الجن: ٦]

﴿وَإِمَّا يَنزَغَنَّكَ مِنَ ٱلشَّيۡطَٰنِ نَزۡغٞ فَٱسۡتَعِذۡ بِٱللَّهِۚ إِنَّهُۥ سَمِيعٌ عَلِيمٌ ٢٠٠﴾ [الاعراف: ٢٠٠]

“যদি শয়তানের পক্ষ থেকে আপনি কিছু কুমন্ত্রণা অনুভব করেন, তাহলে আল্লাহ্‌র নিকট আশ্রয়

প্রার্থনা করুন। নিশ্চয় তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ” (ফুছছিলাত ৩৬)।

তবে জীবিত এবং উপস্থিত ব্যক্তির কাছে সে যে বিষয়ে ক্ষমতা রাখে, সে বিষয়ে আশ্রয় চাওয়া যাবে।

প্রশ্ন ৪৬: (কোনো স্থানে ক্ষতিকারক পোকা-মাকড় ইত্যাদির ভয় থাকলে) সেখানে অবস্থান

গ্রহণের দো‘আ কি?

উত্তরঃ রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো স্থানে অবস্থান

গ্রহণ করবে, সে বলবে,

«أَعُوذُ بِكَلِمَاتِ اللَّهِ التَّامَّاتِ مِنْ شَرِّ مَا خَلَقَ»

“আমি আল্লাহ্‌র পরিপূর্ণ কালিমা দ্বারা তার সৃষ্টির অনিষ্ট থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছি”, তাহলে

যতক্ষণ পর্যন্ত সে ঐ স্থান ত্যাগ না করবে, ততক্ষণ পর্যন্ত কোনো কিছু্ই তার ক্ষতি করতে

পারবে না” (মুসলিম)।

প্রশ্ন ৪৭: কল্যাণ সাধন, অনিষ্ট দূরীকরণ সহ যেসব বিষয়ে আল্লাহ ছাড়া অন্য কেউ সহযোগিতা

করতে সক্ষম নয়, সেসব বিষয়ে অন্য কারো কাছে সহযোগিতা চাওয়া যাবে কি?

উত্তরঃ এটি শির্কের অন্তর্ভুক্ত। মহান আল্লাহ বলেন,

﴿ أَمَّن يُجِيبُ ٱلۡمُضۡطَرَّ إِذَا دَعَاهُ وَيَكۡشِفُ ٱلسُّوٓءَ وَيَجۡعَلُكُمۡ خُلَفَآءَ ٱلۡأَرۡضِۗ أَءِلَٰهٞ مَّعَ ٱللَّهِۚ قَلِيلٗا مَّا تَذَكَّرُونَ ٦٢ ﴾ [النمل: ٦٢]

“কে নিরূপায়ের ডাকে সাড়া দেন, যখন সে ডাকে এবং কষ্ট দূরীভূত করেন?” (নামল ৬২)।। অর্থাৎ

আল্লাহ ছাড়া তার ডাকে কেউ সাড়া দিবে না এবং কষ্টও দূর করবে না। আর এটি শির্ক এ কারণে

যে, আল্লাহ্‌র কাছে সাহায্য চাওয়া ইবাদত। আর ইবাদত একমাত্র আল্লাহ্‌র জন্যই হতে হবে। মহান

﴿ إِذۡ تَسۡتَغِيثُونَ رَبَّكُمۡ فَٱسۡتَجَابَ لَكُمۡ﴾ [الانفال: ٩]   

“তোমরা যখন তোমাদের প্রতিপালকের সাহায্য প্রার্থনা করেছিলে, তখন তিনি তোমাদের ডাকে

সাড়া দিলেন” (আনফাল ৯)। আবু হুরায়রাহ (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু) থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি

«  لاَ أَبْلَغْتُكَ. قَدْ شَيْئًا لَكَ أَمْلِكُ لاَ فَأَقُولُ أَغِثْنِى. اللَّهِ رَسُولَ يَا يَقُولُ رُغَاءٌ لَهُ بَعِيرٌ رَقَبَتِهِ عَلَى الْقِيَامَةِ يَوْمَ يَجِىءُ أَحَدَكُمْ أُلْفِيَنَّلاَ

أُلْفِيَنَّ أَحَدَكُمْ يَجِىءُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ عَلَى رَقَبَتِهِ فَرَسٌ لَهُ حَمْحَمَةٌ فَيَقُولُ يَا رَسُولَ اللَّهِ أَغِثْنِى. فَأَقُولُ لاَ أَمْلِكُ لَكَ شَيْئًا قَدْ أَبْلَغْتُكَ»

“আমি তোমাদের কাউকে কিয়ামতের দিন যেন এ অবস্থায় না পাই যে, সে তার কাঁধে উট বয়ে বেড়াচ্ছে

আর তা চিৎকার দিচ্ছে। ঐ ব্যক্তি আমাকে বলবে, হে আল্লাহ্‌র রাসূল! আমাকে সাহায্য করুন। আমি

বলব, আমিতো (দুনিয়ায়) তোমাকে জানিয়ে দিয়েছিলাম যে, আমি তোমার জন্য কিছু করতে পারব

না।  আমি তোমাদের কাউকে কিয়ামতের দিন যেন এ অবস্থায় না পাই যে,  সে তার কাঁধে ঘোড়া বয়ে

বেড়াচ্ছে আর তা চিৎকার করছে। ঐ ব্যক্তি আমাকে বলবে, হে আল্লাহ্‌র রাসূল! আমাকে সাহায্য

করুন। আমি বলব, আমিতো (দুনিয়ায়) তোমাকে জানিয়ে দিয়েছিলাম যে, আমি তোমার জন্য কিছু

করতে পারব না” (বুখারী ও মুসলিম)।

তবে জীবিত এবং উপস্থিত ব্যক্তি যে বিষয়ে সহযোগিতা করতে সক্ষম, সে বিষয়ে তার

সহযোগিতা চাওয়া যাবে। যেমনভাবে মূসা আলাইহিস সালামের স্বগোত্রীয় এক ব্যক্তি তাঁর কাছে

তাদের শত্রুর বিরুদ্ধে সাহায্য চেয়েছিলেন। এরশাদ হচ্ছে,

“অতঃপর যে তাঁর নিজ দলের, সে তার শত্রু পক্ষের লোকটির বিরুদ্ধে তাঁর কাছে সাহায্য প্রার্থনা

করল” (ক্বাছাছ ১৫)। আগেই বলা হয়েছে, মৃত ও অনুপস্থিত ব্যক্তির কাছে সাহায্য চাওয়া শির্ক। চার

ইমাম এ বিষয়ে ঐক্যমত পোষণ করেছেন।

প্রশ্ন ৪৮: মুনাফেক্বী কত প্রকার?

উত্তরঃ মুনাফেক্বী দুই প্রকারঃ

১. বড় মুনাফেক্বীঃ বড় মুনাফেক্বী হচ্ছে, বাইরে ঈমান প্রকাশ করা এবং ভিতরে কুফরী লুকিয়ে রাখা।

﴿ فَٱسۡتَغَٰثَهُ ٱلَّذِي مِن شِيعَتِهِۦ عَلَى ٱلَّذِي مِنۡ عَدُوِّهِۦ﴾ [القصص: ١٥]   

২. ছোট মুনাফেক্বীঃ ছোট মুনাফেক্বী হচ্ছে, ভিতরে কুফরী গোপন না রেখে অর্থাৎ মুসলিম

হওয়ার পরও মুনাফেক্বদের চরিত্রের সাথে সাদৃশ্য রাখা। যেমনঃ মিথ্যা বলা, ওয়াদা ভঙ্গ

করা, আমানতের খেয়ানত করা। রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

“মুনাফেক্বের নিদর্শন তিনটিঃ যখন সে কথা বলে, মিথ্যা বলে; যখন তার কাছে আমানত রাখা

হয়, তখন সে তার খেয়ানত করে এবং যখন ওয়াদা করে, তখন সে তা ভঙ্গ করে” (বুখারী)।

প্রশ্ন ৪৯: কুফরী কত প্রকার?

উত্তরঃ কুফরী দুই প্রকারঃ

১. বড় কুফরীঃ যা মানুষকে দ্বীন থেকে বের করে দেয়। যেমনঃ আল্লাহ, তাঁর রাসূল এবং তাঁর

মনোনীত ধর্ম ইসলামকে গালি দেওয়া অথবা ইসলামের রুকনসমূহ সহ আল্লাহ কর্তৃক ফরযকৃত দ্বীনের

অন্যান্য যরূরী বিষয়ের কোনো কিছুকে অস্বীকার করা। মহান আল্লাহ বলেন,

“আপনি বলুন, তোমরা কি আল্লাহ্‌র সাথে, তাঁর আয়াতের সাথে এবং তাঁর রাসূলের সাথে ঠাট্টা

করতে? ওযর পেশ করো না, নিশ্চয় তোমরা ঈমান আনার পর (ঠাট্ট-বিদ্রূপের কারণে) কাফের হয়ে

গেছ” (তাওবাহ ৬৫-৬৬)।

২. ছোট কুফরীঃ যেমনঃ আল্লাহ্‌র নে‘মত অস্বীকার করা অথবা কোনো মুসলিম ব্যক্তির সাথে

অন্যায়ভাবে কলহ-বিবাদ ও মারামারি করা। রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

“মুসলিম ব্যক্তিকে গালি দেওয়া ফাসেক্বী এবং তার সাথে কলহ-বিবাদ ও মারামারি করা

«آيَةُ الْمُنَافِقِ ثَلاَثٌ إِذَا حَدَّثَ كَذَبَ وَإِذَا اؤْتُمِنَ خَانَ وَإِذَا وَعْدَ أَخْلَفَ»

﴿قُلۡ أَبِٱللَّهِ وَءَايَٰتِهِۦ وَرَسُولِهِۦ كُنتُمۡ تَسۡتَهۡزِءُونَ ٦٥ لَا تَعۡتَذِرُواْ قَدۡ كَفَرۡتُم بَعۡدَ إِيمَٰنِكُمۡۚ﴾ [التوبة: ٦٥،  ٦٦]   

«سِبَابُ الْمُسْلِمِ فُسُوقٌ وَقِتَالُهُ كُفْرٌ»

প্রশ্ন ৫০: শাফা‘আত কত প্রকার?

উত্তরঃ শাফা‘আত দুই প্রকারঃ

১. কিয়ামত দিবসের শাফা‘আতঃ যা আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো কাছে চাওয়া যাবে না। মহান আল্লাহ

﴿ قُل لِّلَّهِ ٱلشَّفَٰعَةُ جَمِيعٗاۖ ﴾ [الزمر: ٤٤]   

“বলুন, সমস্ত সুপারিশ আল্লাহরই ক্ষমতাধীন” (যুমার ৪৪)। এই প্রকার শাফা‘আতের দু‘টি শর্ত

ক. আল্লাহ্‌র পক্ষ থেকে শাফা‘আতকারীর জন্য শাফা‘আত করার অনুমতি থাকতে হবে। যেমন মহান

﴿ مَن ذَا ٱلَّذِي يَشۡفَعُ عِندَهُۥٓ إِلَّا بِإِذۡنِهِۦۚ﴾ [البقرة: ٢٥٥]   

“কে আছ এমন, যে তাঁর কাছে তাঁর অনুমতি ছাড়া সুপারিশ করবে?” (বাক্বারাহ ২৫৫)।

খ. যার জন্য শাফা‘আত করা হবে, তার উপর আল্লাহ্‌র সন্তুষ্টি থাকতে হবে। মহান আল্লাহ বলেন,

﴿وَلَا يَشۡفَعُونَ إِلَّا لِمَنِ ٱرۡتَضَىٰ﴾ [الانبياء: ٢٨]   

“তারা শুধুমাত্র তাদের জন্য সুপারিশ করে, যাদের প্রতি আল্লাহ সন্তুষ্ট” (আম্বিয়া

২৮)। সুতরাং কিয়ামত দিবসে কেউ যদি তার নিজের জন্য শাফা‘আত কামনা করে, তাহলে সে যেন একমাত্র

আল্লাহ্‌র কাছে তা প্রার্থনা করে; অন্য কারো কাছে নয়। কেননা রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি

ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

“তুমি যখন চাইবে, তখন আল্লাহ্‌র কাছেই চাও” (তিরমিযী)। সেজন্য নিম্নোক্ত পদ্ধতিতে প্রার্থনা

করা যাবে: হে আল্লাহ! আমাকে তাদের অন্তর্ভুক্ত কর, যাদের জন্য কিয়ামত দিবসে শাফা‘আত করা

হবে অথবা হে আল্লাহ! কিয়ামত দিবসে আপনি আমার ভাগ্যে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-

এর শাফা‘আত নছীব করুন। তবে নিম্নোক্তভাবে প্রার্থনা করা হারাম: হে রাসূল! আপনি আমার জন্য

কিয়ামতের দিন শাফা‘আত করুন।

২. দুনিয়ার জীবনে মানুষের পরস্পরের মধ্যে শাফা‘আতঃ এই প্রকার শাফা‘আত ভাল কাজের জন্য হলে

মোস্তাহাব আর মন্দ কাজের জন্য হলে হারাম। মহান আল্লাহ বলেন,

“যে ব্যক্তি সৎকাজের জন্য কোন সুপারিশ করবে, তা থেকে সেও একটি অংশ পাবে। আর

যে ব্যক্তি মন্দ কাজের জন্য সুপারিশ করবে, সে তার বোঝারও একটি অংশ পাবে” (নিসা ৮৫)।

প্রশ্ন ৫১: রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেহেতু কিয়ামতের দিন শাফা‘আত করবেন, সেহেতু

তাঁর কাছে কি শাফা‘আত চাওয়া যাবে?

উত্তরঃ সমস্ত শাফা‘আত আল্লাহ্‌র একক মালিকানায়। মহান আল্লাহ বলেন,

“বলুন, সমস্ত সুপারিশ আল্লাহরই ক্ষমতাধীন” (যুমার ৪৪)। অতএব, রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি

ওয়াসাল্লাম-এর নির্দেশ “যখন চাইবে, তখন আল্লাহ্‌র কাছেই চাইবে” পালন করতে হলে আল্লাহ্‌র কাছেই

শাফা'আত চাইতে হবে। সেজন্য আমাদের এভাবে প্রার্থনা করা উচিত যে, হে আল্লাহ! কিয়ামত দিবসে

রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম যাদের জন্য শাফা‘আত করবেন, আমাকে আপনি তাদের

অন্তর্ভুক্ত করে দিন।

প্রশ্ন ৫২: অসীলা কত প্রকার?

উত্তরঃ অসীলা বা মাধ্যম ধরা দুই প্রকারঃ

১. বৈধ অসীলাঃ সৎ আমলকে আল্লাহ্‌র নৈকট্য লাভের অসীলা বা মাধ্যম হিসাবে গ্রহণ করার নাম

বৈধ অসীলা। আর যে কোনো আমল সৎ হওয়ার জন্য শর্ত হচ্ছে, শুধুমাত্র আল্লাহ্‌র সন্তুষ্টির জন্য

তা সম্পাদন করা এবং তাতে রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রদর্শিত পদ্ধতি তথা সুন্নাতের

অনুসরণ থাকা। যেমন, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি বিশ্বাস স্থাপনকে অসীলা হিসাবে গ্রহণ, রাসূল

সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সুন্নাতের অনুসরণকে অসীলা হিসাবে গ্রহণ অথবা আল্লাহ্‌র জন্য

একনিষ্ঠ যে কোনো আমলকে অসীলা হিসাবে গ্রহণ। এই অসীলা সম্পর্কেই মহান আল্লাহ বলেন,

﴿مَّن يَشۡفَعۡ شَفَٰعَةً حَسَنَةٗ يَكُن لَّهُۥ نَصِيبٞ مِّنۡهَاۖ وَمَن يَشۡفَعۡ شَفَٰعَةٗ سَيِّئَةٗ يَكُن لَّهُۥ كِفۡلٞ مِّنۡهَاۗ﴾ [النساء: ٨٥]   

﴿ قُل لِّلَّهِ ٱلشَّفَٰعَةُ جَمِيعٗاۖ ﴾ [الزمر: ٤٤]

﴿وَٱبۡتَغُوٓاْ إِلَيۡهِ ٱلۡوَسِيلَةَ﴾ [المائ‍دة: ٣٥]   

“আর তোমরা তাঁর অসীলা অন্বেষন কর” (মায়েদাহ ৩৫)। সুতরাং কেউ এভাবে প্রার্থনা করতে

পারে, “হে আল্লাহ! আপনার প্রতি আমার একনিষ্ঠতা এবং আমা কর্তৃক আপনার রাসূল

সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর আনুগত্যের মাধ্যমে আপনি আমাকে সুস্থতা ও রিযিক্ব দান

করুন। যেমনটি পাহাড়ের গুহায় আশ্রয় নেওয়া তিন ব্যক্তিকে একখণ্ড পাথর এসে গুহায় আটকিয়ে দিলে

তারা তাদের সৎ আমলকে মাধ্যম হিসাবে গ্রহণ করে গুহার মুখ থেকে পাথর সরিয়ে দেওয়ার জন্য মহান

আল্লাহ্‌র নিকট প্রার্থনা করেছিলেন এবং আল্লাহ তাদের প্রার্থনা কবূল করেছিলেন” (বুখারী)।

অনুরূপভাবে কোনো সৎ ব্যক্তির দো‘আকে অসীলা বা মাধ্যম হিসাবে গ্রহণ করা

বৈধ। যেমনিভাবে সাহাবীগণ (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুম) বৃষ্টি প্রার্থনার জন্য আব্বাস (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু)-

এর দো‘আর শরণাপন্ন হয়েছিলেন এবং আল্লাহ তাঁদের জন্য বৃষ্টি বর্ষণ করেছিলেন (বুখারী)।

২. অবৈধ অসীলাঃ আল্লাহ বা তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে প্রমাণিত নয়- এমন

অসীলাকে অবৈধ অসীলা বলে। যেমনঃ মৃত ব্যক্তিকে অসীলা হিসাবে গ্রহণ করে তার কাছে সাহায্য ও

শাফা‘আত চাওয়া। আর এই অসীলা হারাম হওয়ার ব্যাপারে ইমামগণ ঐকমত্য পোষণ করেছেন- যদিও

গৃহীত সেই অসীলা নবী কিংবা অলী হন।

প্রশ্ন ৫৩: ইবাদত কবূল হওয়ার শর্ত কয়টি ও কি কি?

উত্তরঃ ইবাদত কবূল হওয়ার শর্ত দু'টিঃ

   ১. ইবাদত একমাত্র আল্লাহ্‌র সন্তুষ্টির জন্য হওয়া। মহান আল্লাহ বলেন,

“তাদেরকে কেবলমাত্র এই নির্দেশ করা হয়েছে যে, তারা খাঁটি বিশ্বাসের সাথে এবং একনিষ্ঠভাবে

আল্লাহ্‌র ইবাদত করবে” (বাইয়্যেনাহ ৫)।

   ২. ইবাদত রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রদর্শিত পদ্ধতিতে হওয়া। মহান আল্লাহ

﴿وَمَآ أُمِرُوٓاْ إِلَّا لِيَعۡبُدُواْ ٱللَّهَ مُخۡلِصِينَ لَهُ ٱلدِّينَ حُنَفَآءَ﴾ [البينة: ٥]   

﴿قُلۡ إِن كُنتُمۡ تُحِبُّونَ ٱللَّهَ فَٱتَّبِعُونِي يُحۡبِبۡكُمُ ٱللَّهُ﴾ [ال عمران: ٣١]   

“বলুন, যদি তোমরা আল্লাহকে ভালবাস, তাহলে আমাকে অনুসরণ কর, তাহলে আল্লাহও

তোমাদেরকে ভালবাসবেন” (আলে ইমরান ৩১)। রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

“যে ব্যক্তি আমাদের নির্দেশের বাইরে কোনো আমল করলো, তার সেই আমল

প্রত্যাখ্যাত” (মুসলিম)।

প্রশ্ন ৫৪: কোনো আমল ছাড়াই নিয়্যত বিশুদ্ধ হওয়া কি যথেষ্ট?

উত্তরঃ যে কোনো আমল কবূল হওয়ার জন্য নিয়্যত বিশুদ্ধ হওয়ার সাথে সাথে তা রাসূল

সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রদর্শিত পদ্ধতিতে হওয়া যরূরী। মহান আল্লাহ বলেন,

“অতএব, যে ব্যক্তি তার পালনকর্তার সাক্ষাত কামনা করে, সে যেন সৎকর্ম সম্পাদন করে এবং

তার পালনকর্তার ইবাদতে কাউকে শরীক না করে” (কাহ্‌ফ ১১০)। উক্ত আয়াতে মহান আল্লাহ আমল

কবূল হওয়ার জন্য বিশুদ্ধ নিয়্যত এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রদর্শিত পদ্ধতির

«مَنْ عَمِلَ عَمَلًا لَيْسَ عَلَيْهِ أَمْرُنَا فَهُوَ رَدٌّ»

﴿فَمَن كَانَ يَرۡجُواْ لِقَآءَ رَبِّهِۦ فَلۡيَعۡمَلۡ عَمَلٗا صَٰلِحٗا وَلَا يُشۡرِكۡ بِعِبَادَةِ رَبِّهِۦٓ أَحَدَۢا ١١٠ ﴾ [الكهف: ١١٠]   

শর্তারোপ করেছেন। মনে রাখতে হবে, খাঁটি নিয়্যত উপকারে আসলেও ঈমানের অন্যতম শর্ত

প্রশ্ন ৫৫: পুরুষদের জন্য কবর যিয়ারত কত প্রকার?

উত্তরঃ দুই প্রকারঃ

১. বৈধ যিয়ারতঃ আখেরাত ও মৃত্যুকে স্মরণ করা এবং মৃত ব্যক্তির জন্য দো‘আ করার উদ্দেশ্যে

কবর যিয়ারত করাই হচ্ছে, বৈধ যিয়ারত। এই যিয়ারতের মাধ্যমে যিয়ারতকারী ছওয়াবের অধিকারী

হয়। রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

“আমি তোমাদেরকে কবর যিয়ারত করতে নিষেধ করেছিলাম কিন্তু এখন তোমরা কবর যিয়ারত

কর। কেননা তা আখেরাতকে স্মরণ করিয়ে দেয়” (মুসলিম)।

   ২. নিষিদ্ধ যিয়ারতঃ যে যিয়ারতের মাধ্যমে মৃত ব্যক্তির নিকটে সাহায্য প্রার্থনা করা

হয়, সুপারিশ চাওয়া হয়, তা-ই নিষিদ্ধ যিয়ারত। এই যিয়ারতের মাধ্যমে যিয়ারতকারী গোনাহগার

হয়; বরং এরূপ আমল বড় শির্কের অন্তর্ভুক্ত। মহান আল্লাহ বলেন,

﴿  قِطۡمِيرٍ مِن يَمۡلِكُونَ مَا دُونِهِۦ مِن تَدۡعُونَوَٱلَّذِينَ١٣  ٱلۡقِيَٰمَةِ وَيَوۡمَ لَكُمۡۖ ٱسۡتَجَابُواْ مَا سَمِعُواْ وَلَوۡ دُعَآءَكُمۡ يَسۡمَعُواْ لَا تَدۡعُوهُمۡ إِن

“তাঁর পরিবর্তে তোমরা যাদেরকে ডাক, তারা তুচ্ছ খেজুর বীচির আবরণেরও অধিকারী

নয়। তোমরা তাদেরকে ডাকলে তারা তোমাদের ডাক শুনে না। আর শুনলেও তোমাদের ডাকে সাড়া দেয়

না। কিয়ামতের দিন তারা তোমাদের শির্ক অস্বীকার করবে। বস্তুতঃ আল্লাহ্‌র ন্যায়

কেউ তোমাকে অবহিত করতে পারবে না” (ফাতির ১৩-১৪)।

প্রশ্ন ৫৬: কবর যিয়ারতের সময় কোন্‌ দো‘আ পড়তে হয়?

উত্তরঃ কবর যিয়ারতের সময় নিম্নলিখিত দো‘আ পড়তে হয়, যা রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি

ওয়াসাল্লাম তাঁর সাহাবীগণকে শিক্ষা দিতেনঃ

“হে মুমিন-মুসলিম কবরবাসীগণ! আপনাদের উপর শান্তি বর্ষিত হোক। নিশ্চয়ই আমরা (আপনাদের)

সাথে মিলিত হব ইনশাআল্লাহ। আমরা আল্লাহর নিকট আমাদের এবং আপনাদের জন্য মুক্তি-নিরাপত্তা

প্রার্থনা করছি” (মুসলিম)।

প্রশ্ন ৫৭: নেককার লোকের কবরের নিকট গিয়ে আল্লাহ্‌র কাছে প্রার্থনা করার হুকুম কি?

উত্তরঃ নেককার লোকের কবরের নিকট গিয়ে আল্লাহ্‌র কাছে প্রার্থনা করা বিদ‘আত। যা মানুষকে

শির্কের দিকে ধাবিত করে। আলী ইবনে হুসাইন থেকে বর্ণিত, তিনি এক ব্যক্তিকে রাসূল

সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কবরের নিকট আল্লাহ্‌র কাছে প্রার্থনা করতে দেখে তাকে নিষেধ

করেন এবং বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “তোমরা আমার কবরকে ঈদে

পরিণত কর না” (যিয়া মাক্বদেসী, আল-মুখতারাহ, হা/৪২৮)।

«كُنْتُ نَهَيْتُكُمْ عَنِ زِيَارَةِ الْقُبُورِ أَلاَ فَزُورُوهَا فَإِنَّهَا َتُذَكِّرُ الآخِرَةَ»

يَكۡفُرُونَ بِشِرۡكِكُمۡۚ وَلَا يُنَبِّئُكَ مِثۡلُ خَبِيرٖ ١٤ ﴾ [فاطر: ١٣،  ١٤]   

«السَّلاَمُ عَلَيْكُمْ أَهْلَ الدِّيَارِ مِنَ الْمُؤْمِنِينَ وَالْمُسْلِمِينَ وَإِنَّا إِنْ شَاءَ اللَّهُ لَلاَحِقُونَ أَسْأَلُ اللَّهَ لَنَا وَلَكُمُ الْعَافِيَةَ» 

প্রশ্ন ৫৮: আল্লাহ্‌র কাছে কোনো কিছু চাওয়ার ক্ষেত্রে মৃত ব্যক্তিকে সুপারিশকারী হিসাবে

গ্রহণ করার হুকুম কি?

উত্তরঃ এটি বড় শির্কের অন্তর্ভুক্ত। কেননা মহান আল্লাহ তাদেরকে তিরষ্কার করে বলেন,

“তারা বলে, এরা তো আল্লাহ্‌র কাছে আমাদের সুপারিশকারী” (ইউনুস ১৮)। তিনি তাদের সম্পর্কে

﴿وَيَقُولُونَ هَٰٓؤُلَآءِ شُفَعَٰٓؤُنَا عِندَ ٱللَّهِۚ﴾ [يونس: ١٨]   

﴿مَا نَعۡبُدُهُمۡ إِلَّا لِيُقَرِّبُونَآ إِلَى ٱللَّهِ زُلۡفَىٰٓ﴾ [الزمر: ٣]   

“তারা বলে, আমরা তাদের এবাদত এজন্যই করি যে, তারা যেন আমাদেরকে আল্লাহ্‌র নিকটবর্তী করে

প্রশ্ন ৫৯: কা‘বা ছাড়া অন্য কিছুকে ত্বওয়াফ করা কি বৈধ?

উত্তরঃ কা‘বা ছাড়া অন্য কিছুকে ত্বওয়াফ করা বৈধ নয়। কেননা মহান আল্লাহ কা‘বাকেই

ত্বওয়াফ করার জন্য নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন, অন্য কিছুকে ত্বওয়াফের অনুমতি তিনি দেন নি। এরশাদ

﴿وَلۡيَطَّوَّفُواْ بِٱلۡبَيۡتِ ٱلۡعَتِيقِ ٢٩ ﴾ [الحج: ٢٩]   

“তারা যেন এই সুসংরক্ষিত গৃহের ত্বওয়াফ করে” (হজ্জ ২৯)। এ ত্বওয়াফ দ্বারা যদি জীবিত কিংবা

মৃত কোনো ব্যক্তির নৈকট্য লাভ উদ্দেশ্য হয়, তবে তা বড় শির্কের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে এবং

ত্বওয়াফকারী দ্বীন থেকে বের হয়ে যাবে। কেননা ত্বওয়াফ হচ্ছে ইবাদত। আর আল্লাহ ছাড়া অন্য

কারো জন্য ইবাদত করা শির্ক।

প্রশ্ন ৬০: হাদীসে বর্ণিত তিন মসজিদ ছাড়া ইবাদতের উদ্দেশ্যে অন্য কোনো স্থানে সফর করার

উত্তরঃ তিন মসজিদ ছাড়া ইবাদতের উদ্দেশ্যে অন্য স্থানে সফর করা বৈধ নয়। উক্ত তিনটি

মসজিদ হচ্ছে, মসজিদে হারাম, মসজিদে নববী এবং মসজিদে আকছা। রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি

«لاَ تُشَدُّ الرِّحَالُ إِلاَّ إِلَى ثَلاَثَةِ مَسَاجِدَ مَسْجِدِى هَذَا وَمَسْجِدِ الْحَرَامِ وَمَسْجِدِ الأَقْصَى»

“তিনটি মসজিদ ছাড়া অন্য কোনো স্থানে ইবাদতের উদ্দেশ্যে সফর করা যাবে না। আমার এই

মসজিদ (মসজিদে নববী), মসজিদে হারাম এবং মসজিদে আক্বছা” (মুসলিম)।

প্রশ্ন ৬১: নিম্নবর্ণিত হাদীসগুলি কি সহীহ নাকি রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উপর

সেগুলি মিথ্যারোপ? “তোমরা যখন সংকীর্ণ অবস্থায় পতিত হও, তখন কবর যিয়ারত কর”, “যে

ব্যক্তি হজ্জ করল অথচ আমার কবর যিয়ারত করল না, সে আমার সাথে শত্রুতা পোষণ করল”, “যে

ব্যক্তি একই বছরে আমাকে এবং আমার পিতা ইবরাহীমকে যিয়ারত করে, আমি তার জন্য জান্নাতের

যিম্মাদার হয়ে যাবো”, “যে ব্যক্তি আমার মৃত্যুর পর আমার কবর যিয়ারত করল, সে যেন আমার

জীবদ্দশায় আমার সাথে সাক্ষাত করল”, “আল্লাহ্‌র কোনো অলী যদি কোনো কিছুকে

বলে, ‘হও’, তাহলে তা হয়ে যায়”, “কোনো ব্যক্তি যদি কিছুতে দৃঢ় বিশ্বাস স্থাপন করে, তবে তা তার

উত্তরঃ উপরোক্ত সবগুলি হাদীসই জাল এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর

নামে মিথ্যাচারিতা। এগুলি বিদ‘আতী ও কবর পূজারীদের সৃষ্টি। মনে রাখতে হবে, যিনি কোনো কিছু হয়ে

যেতে বললে হয়ে যায়, তিনি হচ্ছেন একমাত্র আল্লাহ; কোনো নবী-রাসূল বা অলী-আউলিয়া কখনই এটি

করতে সক্ষম নন। মহান আল্লাহ বলেন,

“তিনি যখন কোন কিছু করতে ইচ্ছা করেন, তখন তাকে কেবল বলে দেন, ‘হও’, তখনই তা হয়ে

যায়” (ইয়াসীন ৮২)।

প্রশ্ন ৬২: নেককার লোকদের পুরাতন চিহ্ন ও নিদর্শনাবলী অনুসন্ধান করা এবং সেগুলির

মাধ্যমে বরকত কামনা করা কি ইবাদত নাকি বিদ‘আত?

উত্তরঃ এমন কর্মকাণ্ড বিদ‘আত। কেননা সাহাবীগণ (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুম) আবু

বকর, ওমর, উছমান ও আলী (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুম)-এর নিদর্শনাবলী অনুসন্ধান ও সেগুলি দ্বারা বরকত

কামনা করেন নি; অথচ নবীগণের পরে তাঁরা ছিলেন এই উম্মতের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষ। কেননা

সাহাবীগণ (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুম) জানতেন যে, এটি রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জীবদ্দশায়

তাঁর জন্য নির্দিষ্ট ছিল। যে গাছের নীচে ‘বাই‘আতুর রেদওয়ান’ সংঘটিত হয়েছিল, সে গাছটি দ্বারা বরকত

কামনার আশঙ্কায় ওমর (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু) তা কেটে ফেলেছিলেন। আর যেহেতু সাহাবীগণ

(রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুম) কল্যাণের দিকে আমাদের থেকে অনেক বেশী অগ্রগামী ছিলেন, সেহেতু এগুলি দ্বারা

বরকত গ্রহণ ইবাদত হলে তাঁরা আমাদের আগেই তা করতেন।

প্রশ্ন ৬৩: কোনো ব্যক্তিকে জান্নাতী বা জাহান্নামী বলে আখ্যায়িত করা যাবে কি?

উত্তরঃ কুরআনুল কারীম ও সহীহ হাদীসের দলীল ছাড়া কাউকে জান্নাতী বা জাহান্নামী বলা যাবে

না। তবে নেককার-মুত্তাক্বী ব্যক্তির জন্য ছওয়াবের আশা করা যায় এবং অসৎ ব্যক্তির ক্ষেত্রে

শাস্তির আশঙ্কা করা যায়।

প্রশ্ন ৬৪: পাপাচার করার কারণে কোনো মুসলিম ব্যক্তিকে ‘কাফের’ বলা যাবে কি?

উত্তরঃ অন্যায় বা অপরাধ করার কারণে কোনো মুসলিম ব্যক্তিকে কাফের বলা যাবে না; বরং সে

তাওহীদপন্থীদের মধ্যে পাপী মুমিন হিসাবে গণ্য হবে। তবে বড় কুফরী বা বড় শির্ক অথবা বড়

মুনাফেক্বীর মধ্যে লিপ্ত হলে তা ভিন্ন কথা। অর্থাৎ সে তখন ঈমানী গণ্ডি থেকে বের হয়ে যাবে।

প্রশ্ন ৬৫: বান্দার কাজ-কর্ম কি আল্লাহ্‌র সৃষ্টি?

উত্তরঃ হ্যাঁ, বান্দার কাজ-কর্ম একদিকে যেমন আল্লাহ্‌র সৃষ্টি, অন্যদিকে তেমনি তা বান্দার

অর্জন। মহান আল্লাহ বলেন,

“আল্লাহই সবকিছুর স্রষ্টা” (যুমার ৬২)। অতএব, মানুষকে পরীক্ষা করার জন্য আল্লাহ ভাল-মন্দ

দু’টিই সৃষ্টি করেছেন। আর বান্দার কাজ-কর্ম যে তার নিজস্ব উপার্জন, তার দলীল হচ্ছে,

﴿ إِنَّمَآ أَمۡرُهُۥٓ إِذَآ أَرَادَ شَيۡ‍ًٔا أَن يَقُولَ لَهُۥ كُن فَيَكُونُ ٨٢ ﴾ [يس: ٨٢]   

﴿ ٱللَّهُ خَٰلِقُ كُلِّ شَيۡءٖۖ ﴾ [الزمر: ٦٢]   

﴿لَهَا مَا كَسَبَتۡ وَعَلَيۡهَا مَا ٱكۡتَسَبَتۡۗ﴾ [البقرة: ٢٨٦]   

“সে তাই পায়, যা সে উপার্জন করে এবং তাই তার উপর বর্তায়, যা সে করে” (বাক্বারাহ ২৮৬)।

প্রশ্ন ৬৬: মসজিদের ভেতরে মৃত দাফন করা অথবা কবরের উপরে মসজিদ নির্মাণ করা কি জায়েয?

উত্তরঃ না, জায়েয নয়; বরং উভয়ই হারাম। যদি কেউ আল্লাহ ব্যতীত কোনো কবরের ইবাদত

করে বা কবরবাসীর নিকট দো‘আ করে অথবা তার নিকট সাহায্য প্রার্থনা করে, তাহলে তা ‘বড় শির্ক’-

এর অন্তর্ভুক্ত গণ্য হবে। পক্ষান্তরে যদি কবরের উপর বা কবরকে কেন্দ্র করে মসজিদ নির্মাণ করে

বা মসজিদের ভেতরে মৃতকে দাফন করে, কিন্তু কবরবাসীর উদ্দেশ্যে কোনো প্রকার ইবাদত না

করে, তথাপিও তা গর্হিত কাজ হিসাবে এবং শির্কে পতিত হওয়ার বড় একটি মাধ্যম হিসাবে গণ্য হবে। মনে

রাখতে হবে, কবরের উপরে নির্মিত মসজিদে ছালাত জায়েয হবে না; বরং এ জাতীয় নির্মাণ হারাম। আয়েশা

(রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা) বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর মৃত্যুশয্যায় শায়িত অবস্থায়

«لَعْنَةُ اللَّهِ عَلَى الْيَهُودِ وَالنَّصَارَى اتَّخَذُوا قُبُورَ أَنْبِيَائِهِمْ مَسَاجِدَ يُحَذِّرُ مَا صَنَعُوا»

“আল্লাহ ইয়াহূদ এবং নাছারাদের উপর অভিশাপ করুন, কারণ তারা তাদের নবীগণের কবরসমূহকে

মসজিদ হিসাবে গ্রহণ করেছে।” আয়েশা (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা) বলেন, ইয়াহূদী-খৃষ্টানদের এহেন কর্মকাণ্ড

থেকে সতর্ক করার জন্য তিনি একথা বলেছেন (বুখারী ও মুসলিম)।

জুনদুব ইবনে আব্দুল্লাহ (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু) বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম মৃত্যুর

পাঁচ দিন আগে বলেন,

«أَلاَ وَإِنَّ مَنْ كَانَ قَبْلَكُمْ كَانُوا يَتَّخِذُونَ قُبُورَ أَنْبِيَائِهِمْ وَصَالِحِيهِمْ مَسَاجِدَ أَلاَ فَلاَ تَتَّخِذُوا الْقُبُورَ مَسَاجِدَ إِنِّى أَنْهَاكُمْ عَنْ ذَلِكَ»

“সাবধান! তোমাদের পূর্ববর্তীরা তাদের নবী এবং নেককার মুমিনগণের কবরসমূহকে মসজিদ হিসাবে

গ্রহণ করতো! খবরদার! তোমরা কবরসমূহকে মসজিদ হিসাবে গ্রহণ করো না। কেননা আমি

তোমাদেরকে এ থেকে নিষেধ করছি” (মুসলিম)।

অতএব, মসজিদের উপর বা মসজিদকে কেন্দ্র করে নির্মিত কবর ভেঙ্গে ফেলা ওয়াজিব। আর

মসজিদের ভেতরে মৃতকে দাফন করা হলে মসজিদ ভাঙতে হবে না; বরং কবর খনন করে মৃতকে সেখান থেকে

সরিয়ে সাধারণ কবরস্থানে দাফন করতে হবে।

প্রশ্ন ৬৭: কবরের উপর ঘর নির্মাণ করার বিধান কি?

উত্তরঃ কবরের উপর ঘর নির্মাণ করা নিকৃষ্ট বিদ‘আত। এর মাধ্যমে দাফনকৃত ব্যক্তির সম্মানের

ক্ষেত্রে চরম বাড়াবাড়ি করা হয় এবং এমন কর্মকাণ্ড শির্কের অন্যতম একটি মাধ্যম হিসাবে গণ্য

হয়। অতএব, নিকৃষ্ট বিদ‘আত প্রতিরোধ কল্পে এবং শির্কের অন্যতম এই মাধ্যমকে প্রতিহত করতে

সম্ভব হলে কবরের উপরে নির্মিত ভবন ভেঙ্গে মাটির সাথে মিশিয়ে দেওয়া ওয়াজিব। তবে এক্ষেত্রে

সরকারের অনুমতি এবং সহযোগিতা থাকতে হবে। আবুল হাইয়াজ আসাদী (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু) বলেন, আলী

(রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু) আমাকে বলেন,

«أَلاَّ أَبْعَثُكَ عَلَى مَا بَعَثَنِى عَلَيْهِ رَسُولُ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- أَنْ لاَ تَدَعَ تِمْثَالاً إِلاَّ طَمَسْتَهُ وَلاَ قَبْرًا مُشْرِفًا إِلاَّ سَوَّيْتَهُ» 

“রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে যে কাজে পাঠিয়েছিলেন, আমিও কি তোমাকে সেই

কাজে পাঠাব না? আর তা হচ্ছে এই যে, কোনো ছবি-মূর্তি পেলে তা ভেঙ্গে চুরমার করে দিবে এবং

কোনো উঁচু কবর পেলে তা ভেঙ্গে মাটির সাথে মিশিয়ে দিবে” (মুসলিম)।

প্রশ্ন ৬৮: রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে কি মসজিদের ভেতরে দাফন করা হয়েছিল?

উত্তরঃ রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে মূলতঃ আয়েশা (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা)-এর কামরায়

দাফন করা হয়েছিল। দাফনের পর ৮০ বছরেরও বেশী সময় পর্যন্ত রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি

ওয়াসাল্লাম-এর কবর মসজিদের বাইরেই ছিল। এরপর একজন উমাইয়া খলীফা মসজিদে নববী সম্প্রসারণ

করলে আয়েশা (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা)-এর কামরা মসজিদের ভেতরে পড়ে যায়। উল্লেখ্য যে, তৎকালীন

আলেমগণ কর্তৃক উক্ত কামরা মসজিদের ভেতরে প্রবেশ করানোর বিরোধিতা খলীফা গ্রাহ্য করেন

নি। রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম কবরের উপরে মসজিদ নির্মাণ থেকে সতর্ক করে

বলেন, “সাবধান! তোমাদের পূর্ববর্তীরা তাদের নবী এবং নেককার মুমিনগণের কবরসমূহকে মসজিদ

হিসাবে গ্রহণ করতো! খবরদার! তোমরা কবরসমূহকে মসজিদ হিসাবে গ্রহণ করো না। কেননা আমি

তোমাদেরকে এ কাজ থেকে নিষেধ করছি” (মুসলিম)। রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম কবরের

উপরে মসজিদ নির্মাণকারী এবং বাতি প্রজ্জ্বলনকারীদেরকে অভিসম্পাত করেছেন (সুনানে আরবা‘আহ)।

প্রশ্ন ৬৯: রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি তাঁর কবরে জীবিত আছেন? মীলাদুন্নবী

অনুষ্ঠানে কি তিনি উপস্থিত হন?

উত্তরঃ চার ইমাম এমর্মে একমত পোষণ করেছেন যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর

পবিত্র দেহ থেকে রূহ বের না হওয়া পর্যন্ত ছাহাবায়ে কেরাম (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুম) তাঁকে দাফন করেন

নি। তাঁরা তাঁকে জীবিত অবস্থায় দাফন করেছেন- একথা কি কল্পনা করা যায়!

চার ইমাম এবং একজন সাহাবী থেকেও বর্ণিত হয় নি যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর

মৃত্যু এবং দাফনের পর কখনও জনসম্মুখে উপস্থিত হয়েছেন। সুতরাং যে ব্যক্তি দাবী করবে যে, রাসূল

সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম মানুষের জাগ্রত অবস্থায় তাদের সামনে উপস্থিত হন, সে মিথ্যুক এবং

রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উপর মিথ্যা আরোপকারী।

প্রশ্ন ৭০: বিদ‘আত কাকে বলে ও কত প্রকার? প্রত্যেক প্রকারের হুকুম

কি? ইসলামে 'উত্তম বিদ‘আত' বলে কিছু আছে কি?

উত্তরঃ বিনা দলীলে বান্দা কর্তৃক তার প্রভুর ইবাদত করার নাম বিদ‘আত। বিদ‘আত দুই প্রকারঃ

১. কাফেরে পরিণতকারী বিদ‘আতঃ যেমনঃ কোনো কবরবাসীর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য তার কবরে

২. কুফরীতে নয়; বরং পাপে নিমজ্জিতকারী বিদ‘আতঃ যেমনঃ কোনো নবী বা সৎ মানুষের

জন্মবার্ষিকী পালন করা।

ইসলামে 'উত্তম বিদ‘আত' বলতে কিছু নেই। কেননা প্রত্যেকটি বিদ‘আতই হারাম। রাসূল

সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “তোমরা শরী‘আতে নবাবিষ্কার থেকে বেঁচে থাকো। কেননা

নবাবিষ্কৃত প্রত্যেকটা বস্তুই হচ্ছে বিদ‘আত এবং প্রত্যেকটি বিদ‘আতই হচ্ছে পথভ্রষ্ট”; অন্য

বর্ণনায় এসেছে, “প্রত্যেকটি পথভ্রষ্টতাই জাহান্নামে যাবে” (মুসনাদে

আহমাদ)। রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোনো বিদ‘আতকে এই হুকুম থেকে বের করে দেন

নি। সুতরাং প্রত্যেকটি বিদ‘আতই হারাম এবং বিদ‘আতী গোনাহগার। আর তার ঐ আমল

প্রত্যাখ্যাত। রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “যে ব্যক্তি আমাদের নির্দেশের বাইরে

কোনো আমল করলো, তার সেই আমল প্রত্যাখ্যাত” (মুসলিম)। আয়েশা (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা) থেকে

বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “যে ব্যক্তি আমাদের শরী‘আতে নতুন কিছু সৃষ্টি

করল, তার সৃষ্ট সেই আমল প্রত্যাখ্যাত” (বুখারী ও মুসলিম)।

প্রশ্ন ৭১: যদি কেউ প্রশ্ন করে, তাহলে নীচের হাদীসটির অর্থ কি? ‘যে ব্যক্তি উত্তম সুন্নাত চালু

করলো, সে উক্ত সুন্নাতের এবং উক্ত সুন্নাত বাস্তবায়নকারীর নেকী পাবে’।

উত্তরঃ উক্ত হাদীসে উত্তম সুন্নাত বলতে এমন আমল বুঝানো হয়েছে, ইসলামে যার ভিত্তি

রয়েছে। কেননা হাদীসটি দান-ছাদাক্বার ক্ষেত্রে বর্ণিত হয়েছে। আর দান-সাদাক্বার বিষয়টি কুরআন-

হাদীসে এসেছে। তাছাড়া যে মহান ব্যক্তি উক্ত হাদীসটি উল্লেখ করেছেন, স্বয়ং তিনিই ‘সর্বপ্রকার

বিদ‘আত পথভ্রষ্ট’ মর্মের হাদীসটিও বর্ণনা করেছেন। আরেকটি বিষয় হচ্ছে, সুন্নাতের ভিত্তি কুরআনুল

কারীম ও হাদীসে রয়েছে, কিন্তু বিদ‘আতের কোনো ভিত্তি তাতে নেই।

প্রশ্ন ৭২: ওমর (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু) তারাবীহ্‌র ছালাত সম্পর্কে বলেছেন,  هَذِهِ» الْبِدْعَةُ«نِعْمَتِ ‘এটি

উত্তম বিদ‘আত’। আর উসমান (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু)-এর খেলাফতকালে জুম‘আর দ্বিতীয় আযান চালু

হয়। এক্ষণে প্রশ্ন হচ্ছে, তাহলে উক্ত বিষয় দু’টির ব্যাখ্যা কি?

উত্তরঃ ওমর (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু) উক্ত উক্তি দ্বারা বিদ‘আতের আভিধানিক অর্থ

বুঝিয়েছেন; পারিভাষিক অর্থ নয়। কেননা তিনি এমন একটি ইবাদত সম্পর্কে এই মন্তব্য করেছেন, যা

স্বয়ং রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বাস্তবায়ন করে গেছেন। সুতরাং ওমর (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু)-

এর আমল রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর আমলের সাথে মিলে গেছে। আর রাসূল

সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর আমলের সাথে যা মিলে যায়, তা বিদ‘আত হওয়ার কোনো প্রশ্নই

উছমান (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু)-এর দ্বিতীয় আযান চালুর বিষয়ে বলব, যে কয়জন খলীফার সুন্নাত

অনুসরণের জন্য রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে আদেশ করেছেন, উছমান

(রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু) তাঁদের মধ্যে একজন। রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

“তোমরা আমার সুন্নাত এবং খোলাফায়ে রাশেদীনের সুন্নাত আঁকড়ে ধর”। সেজন্য খোলাফায়ে

রাশেদীনের সুন্নাত ব্যতীত অন্য কারো সুন্নাত আমরা গ্রহণ করব না। কেননা নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি

ওয়াসাল্লাম নির্দিষ্ট করে তাঁর নিজের সুন্নাত এবং খোলাফায়ে রাশেদীনের সুন্নাতের কথাই

বলেছেন; অন্য কারো কথা তিনি উল্লেখ করেননি। তাছাড়া ছাহাবায়ে কেরামও বিদ‘আত থেকে হুশিয়ার

করেছেন। ইবনে মাসঊদ (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু) একদল লোককে দলবদ্ধভাবে আল্লাহ্‌র যিক্‌র করতে দেখে

বলেন, তোমরা কি মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং তাঁর সাহাবীগণের চেয়ে বেশী জ্ঞান

রাখো নাকি তোমরা অন্যায়ভাবে বিদ‘আত চালু করেছো? জবাবে তারা যখন বললেন, আমরা কল্যাণ বৈ

কিছুই উদ্দেশ্য করি নি, তখন তিনি তাদেরকে বলেছিলেন, ‘ভাল কিছু উদ্দেশ্য করলেও সবাই ভাল জিনিস

«عَلَيْكُمْ بِسُنَّتِي وَسُنَّةِ الْخُلَفَاءِ الرَّاشِدِينَ»

অর্জন করতে পারে না’ (দারেমী)। ইবনে ওমর (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু) বলেন,  ‘প্রত্যেকটি বিদ‘আতই

পথভ্রষ্টতা, যদিও মানুষ তা ভাল চোখে দেখে’।

প্রশ্ন ৭৩: মীলাদুন্নবী অনুষ্ঠান উদযাপন করা সুন্নাত নাকি বিদ‘আত?

উত্তরঃ মীলাদুন্নবী অনুষ্ঠান পালন করার কোনো দলীল কুরআন ও সহীহ হাদীসে নেই। কোনো

সাহাবী থেকেও এমর্মে কিছুই বর্ণিত হয় নি। এমনকি চার ইমামের কেউও এর পক্ষে কথা বলেন নি। বরং

নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মৃত্যুর কয়েক যুগ পরে খ্রিষ্টানদের অনুসরণে ফাতেমীরা

সর্বপ্রথম এ বিদ‘আত চালু করে। কারণ খ্রিষ্টানরা ঈসা আলাইহিস সালামের জন্ম বার্ষিকী পালন করে

থাকে। রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিদ‘আত থেকে হুশিয়ার করে বলেন, “যে ব্যক্তি আমাদের

শরী‘আতে নতুন কিছু সৃষ্টি করল, তার সৃষ্ট সেই আমল প্রত্যাখ্যাত’ (বুখারী)।

প্রশ্ন ৭৪: জাদু শেখা এবং তদনুযায়ী আমল করার বিধান কি?

উত্তরঃ জাদু শেখা এবং তদনুযায়ী আমল করা কুফরী। মহান আল্লাহ বলেন,

﴿ وَٱتَّبَعُواْ مَا تَتۡلُواْ ٱلشَّيَٰطِينُ عَلَىٰ مُلۡكِ سُلَيۡمَٰنَۖ وَمَا كَفَرَ سُلَيۡمَٰنُ وَلَٰكِنَّ ٱلشَّيَٰطِينَ كَفَرُواْ يُعَلِّمُونَ ٱلنَّاسَ ٱلسِّحۡرَ﴾ [البقرة: ١٠٢]   

“তারা ঐ শাস্ত্রের অনুসরণ করল, যা সুলায়মানের রাজত্বকালে শয়তানরা আবৃত্তি করত। সুলায়মান

কুফরী করেন নি; বরং শয়তানরাই কুফরী করেছিল। তারা মানুষকে জাদুবিদ্যা শিক্ষা দিত” (বাক্বারাহ

অন্য আয়াতে এসেছে,

“তারা জাদু এবং তাগূতকে বিশ্বাস করে” (নিসা ৫১)। উক্ত আয়াতে الْجِبْتِ (জিব্‌ত) শব্দের অর্থ

হচ্ছে, জাদু। এখানে আল্লাহ জাদুকে তাগূতের সাথে তুলনা করেছেন। সেজন্য তাগূতের প্রতি ঈমান আনা

যেমন কুফরী, জাদুকে বিশ্বাস করাও তেমনি কুফরী। মহান আল্লাহ অন্য আয়াতে বলেন,

“(আশ্রয় প্রার্থনা করছি) গ্রন্থিতে ফুঁৎকার দিয়ে জাদুকারিণীদের অনিষ্ট থেকে” (ফালাক্ব

৪)। রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

“তোমরা সাতটি ধ্বংসাত্মক বিষয় থেকে বেঁচে থাকো...'। সাতটি ধ্বংসাত্মক বস্তুর মধ্যে তিনি

জাদুর কথাও উল্লেখ করেছেন। জুনদুব (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু) থেকে মারফূ‘ সূত্রে বর্ণিত হয়েছে, “জাদুকারীর

শাস্তি হচ্ছে, তাকে তরবারী দিয়ে আঘাত করতে হবে”। অর্থাৎ মুসলিম সরকার তাকে হত্যা করবে। রাসূল

সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

“যে গিঁঠ দিল এবং গিরায় ফুঁক দিল, সে জাদু করল। আর যে জাদু করল, সে শির্ক

করল” (মুসলিম)। রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেন,

﴿يُؤۡمِنُونَ بِٱلۡجِبۡتِ وَٱلطَّٰغُوتِ﴾ [النساء: ٥١]   

﴿ وَمِن شَرِّ ٱلنَّفَّٰثَٰتِ فِي ٱلۡعُقَدِ ٤ ﴾ [الفلق: ٤]

«اجْتَنِبُوا السَّبْعَ الْمُوبِقَاتِ»

«مَنْ عَقَدَ عُقْدَةً ثُمَّ نَفَثَ فِيهَا فَقَدْ سَحَرَ وَمَنْ سَحَرَ فَقَدْ أَشْرَكَ»

«لَيْسَ مِنَّا مَنْ تَطَيَّرَ أَوْ تُطُيِّرَ لَهُ، أَوْ تَكَهَّنَ أَوْ تُكُهِّنَ لَهُ، أَوْ سَحَرَ أَوْ سُحِرَ لَهُ»

“সেই ব্যক্তি আমাদের অন্তর্ভুক্ত নয়, যে মন্দের লক্ষণ গ্রহণ করে, বা লক্ষণ বের করায়,

অনুরূপভাবে যে ভবিষ্যদ্বাণী করে বা করায় অথবা যে জাদু করে বা

করায়” (বাযযার)। ওমর (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু) তাঁর গভর্ণরগণকে নির্দেশ দিয়ে লিখেছিলেন যে,

“তোমরা প্রত্যেকটি জাদুকর এবং জাদুকরীকে হত্যা কর” (বুখারী)।

প্রশ্ন ৭৫: জাদুকরের কাছে কি কোনো উপকার বা কল্যাণ আছে?

উত্তরঃ জাদুকরের কাছে না আছে কোনো কল্যাণ, আর না আছে কোনো উপকার। এরশাদ হচ্ছে,

“জাদুকর যেখানেই থাকুক, সফল হবে না” (ত্ব-হা ৬৯)।

প্রশ্ন ৭৬: নিজেদের দেহে আঘাত করা, শক্ত কোনো বস্তু খাওয়া ইত্যাদি যেসব কর্মকাণ্ড

ভেলকিবাজরা করে থাকে, সেগুলি কি জাদু ও ভেলকিবাজি নাকি বাস্তব ও কারামত?

উত্তরঃ ভেলকিবাজরা এ জাতীয় যেসব কাজ করে থাকে, তা জাদু এবং এর মাধ্যমে মানুষের চোখে জাদু

করা হয়। ফলে তারা বাস্তব জিনিসটা আর দেখতে পায় না। যেমনটি মূসা আলাইহিস সালাম-এর সময়ে

ঘটেছিল; তিনি দেখতে পাচ্ছিলেন যে, জাদুকরদের রশিগুলি চলছে, অথচ সত্যিকার অর্থে সেগুলি চলছিল

না। মহান আল্লাহ বলেন,

“তাদের জাদুর প্রভাবে তাঁর মনে হচ্ছিল, যেন সেগুলি (জাদুকরদের রশিগুলো ও লাঠিগুলো) ছুটাছুটি

করছে” (ত্ব-হা ৬৬)। যদি ভেলকিবাজদের নিকটে আয়াতুল কুরসী এবং সূরা ফালাক্ব ও সূরা নাস পড়া

হয়, তাহলে আল্লাহ্‌র ইচ্ছায় জাদু এবং ভেলকিবাজি নষ্ট হয়ে যাবে। মনে রাখতে হবে, কারামত বা

অলৌকিক ঘটনা নেককার, তাওহীদপন্থী এবং শির্ক-বিদ‘আত মুক্ত ব্যক্তি ব্যতীত অন্য কারো দ্বারা

ঘটা সম্ভব নয়। কোনো মুমিনের কল্যাণার্থে বা তার থেকে অকল্যাণ দূর করার জন্য কারামত ঘটে

থাকে। কারামত অর্থ এই নয় যে, সে অন্যান্য মুমিনের চেয়ে উত্তম।

প্রশ্ন ৭৭: চিকিৎসার জন্য জাদুকরের কাছে যাওয়া জায়েয আছে কি?

উত্তরঃ কোনো অবস্থাতেই জাদুকর বা জাদুকরীর কাছে যাওয়া জায়েয নেই। রাসূল

সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জাদু দিয়ে জাদু নষ্ট করার বিষয়ে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন,

“এটি হচ্ছে শয়তানের কাজ” (আবূ দাঊদ)।

প্রশ্ন ৭৮: জ্যোতিষী, গণক, ভবিষ্যদ্বক্তা ইত্যাদির কাছে যাওয়া কি বৈধ?

উত্তরঃ তাদের কাছে যাওয়া এবং তাদেরকে জিজ্ঞেস করা হারাম। এদের থেকে মানুষকে সাবধান করা

ওয়াজিব। রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«اقْتُلُوا كُلَّ سَاحِرٍ وَسَاحِرَةٍ»

﴿وَلَا يُفۡلِحُ ٱلسَّاحِرُ حَيۡثُ أَتَىٰ ٦٩ ﴾ [طه: ٦٩]   

﴿يُخَيَّلُ إِلَيۡهِ مِن سِحۡرِهِمۡ أَنَّهَا تَسۡعَىٰ ٦٦ ﴾ [طه: ٦٦]   

«هِيَ مِنْ عَمَلِ الشَّيْطَانِ»

«مَنْ أَتَى عَرَّافًا أَوْ كَاهِنًا فَصَدَّقَهُ بِمَا يَقُولُ فَقَدْ كَفَرَ بِمَا أُنْزِلَ عَلَى مُحَمَّدٍ»

“যে ব্যক্তি গণক বা জ্যোতিষীর কাছে আসল এবং তার কথা বিশ্বাস করল, সে মুহাম্মাদের উপর

অবতীর্ণ বিষয়ের সাথে কুফরী করল” (আবূ দাঊদ, তিরমিযী, নাসাঈ ও ইবনে মাজাহ)। অন্য

হাদীসে রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

“যে ব্যক্তি গণকের কাছে আসে এবং তার কাছে কিছু জিজ্ঞেস করে, চল্লিশ দিন পর্যন্ত তার ছালাত

কবূল হয় না” (মুসলিম)।

প্রশ্ন ৭৯: জাদুতে আক্রান্ত হওয়ার আগে বা পরে তা থেকে বাঁচার উপায় কি?

উত্তরঃ সকাল এবং সান্ধ্যকালীন যিকর-আযকারের প্রতি যত্নশীল হওয়া। বিশেষ করে সকাল-

সন্ধ্যায় তিনবার নিম্নোক্ত দো‘আটি পড়তে হবে,

“আল্লাহ্‌র নামে শুরু করছি, যার নামে শুরু করলে আসমান ও যমীনের কোনো কিছুই কোনো ক্ষতি

করতে পারে না। তিনি সর্বশ্রোতা এবং সর্বজ্ঞ”। আরো পড়তে হবে,

“আমি আল্লাহ্‌র পরিপূর্ণ কালিমা দ্বারা তার সৃষ্টির অনিষ্ট থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছি।”

সন্তান-সন্ততির জন্য এই দো‘আ পড়তে হবে,

“আমি তোমাদের জন্য আল্লাহ্‌র পরিপূর্ণ কালিমা দ্বারা প্রত্যেকটি শয়তান, ক্ষতিকর কীট-পতঙ্গ এবং

কুনযর থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছি।”

এছাড়া সকাল-সন্ধ্যায় সূরা এখলাছ, সূরা ফালাক্ব এবং সূরা নাস তিনবার করে পড়তে হবে। আর রাতে

আয়াতুল কুরসী এবং সূরা বাক্বারাহ্‌র শেষ আয়াত দু’টি পড়তে হবে।

আর জাদুতে আক্রান্ত হলে সাথে সাথে এ মর্মে কুরআনুল কারীম ও সহীহ হাদীসে বর্ণিত আয়াত এবং

দো‘আসমূহ পড়তে হবে।

প্রশ্ন ৮০:  بِهِ تَعْمَلُوْا وَلاَ السِّحْرَتَعَلَّمُوْا “তোমরা জাদু শিখ, কিন্তু জাদুর প্রতি আমল করো না” উক্ত

উত্তরঃ উক্ত হাদীসটি সহীহ নয়; বরং তা রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উপর

মিথ্যারোপ। তিনি জাদু থেকে সতর্ক করে কিভাবে আবার তা শেখার আহ্বান করতে পারেন?!

প্রশ্ন ৮১: কল্যাণ সাধন বা অকল্যাণ দূরীকরণে তারকারাজির কোনো প্রভাব আছে- এমন

বিশ্বাস করা কি জায়েয?

উত্তরঃ এমন বিশ্বাস করা জায়েয নয়। কেননা কল্যাণ সাধনে বা অকল্যাণ দূরীকরণে সেগুলির

বিন্দুমাত্র কোনো প্রভাব নেই। বরং এমন বিশ্বাস করা শির্ক। হাদীসে ক্বুদসীতে এসেছে, আল্লাহ

«  مُؤْمِنٌ بِى كَافِرٌ فَذَلِكَ وَكَذَا. كَذَا بِنَوْءِ مُطِرْنَا قَالَ مَنْ وَأَمَّا بِالْكَوْكَبِ وَكَافِرٌ بِى مُؤْمِنٌ فَذَلِكَ وَرَحْمَتِهِ اللَّهِ بِفَضْلِ مُطِرْنَا قَالَمَنْ

«مَنْ أَتَى عَرَّافًا فَسَأَلَهُ عَنْ شَىْءٍ لَمْ تُقْبَلْ لَهُ صَلاَةٌ أَرْبَعِينَ لَيْلَةً»

«بِسْمِ اللَّهِ الَّذِى لاَ يَضُرُّ مَعَ اسْمِهِ شَىْءٌ فِى الأَرْضِ وَلاَ فِى السَّمَاءِ وَهُوَ السَّمِيعُ الْعَلِيمُ»

«أَعُوذُ بِكَلِمَاتِ اللَّهِ التَّامَّاتِ مِنْ شَرِّ مَا خَلَقَ»

«أُعِيذُكُمْ بِكَلِمَاتِ اللَّهِ التَّامَّةِ مِنْ كُلِّ شَيْطَانٍ وَهَامَّةٍ وَمِنْ كُلِّ عَيْنٍ لاَمَّةٍ»

“যে ব্যক্তি বলে, আমরা আল্লাহ্‌র অনুগ্রহ এবং রহমতের কারণে বৃষ্টি প্রাপ্ত হয়েছি, সে ব্যক্তি

আমার প্রতি ঈমান আনল এবং তারকারাজির প্রভাব অস্বীকার করল। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি

বলল, আমরা অমুক অমুক তারকার মাধ্যমে বৃষ্টি প্রাপ্ত হয়েছি, সে আমাকে অস্বীকার করল এবং

তারকার প্রতি ঈমান আনল” (বুখারী ও মুসলিম)। উল্লেখ্য যে, জাহেলী যুগে মানুষেরা বিশ্বাস করত

যে, বৃষ্টিপাতের ক্ষেত্রে তারকারাজির প্রভাব রয়েছে।

প্রশ্ন ৮২: ভবিষ্যতে মানুষের যা ঘটবে, সেক্ষেত্রে কি রাশির কোনো প্রভাব থাকে?

উত্তরঃ রাশির কোনো প্রভাব থাকে- এই বিশ্বাস পোষণ করা জায়েয নয়। কেননা অদৃশ্যের বিষয়

সম্পূর্ণ আল্লাহ্‌র সাথে নির্দিষ্ট। এরশাদ হচ্ছে,

“বলুন, আল্লাহ ব্যতীত আসমানসমূহ ও যমীনে কেউ গায়েবের খবর জানে না” (নামল ৬৫)। তাছাড়া

কল্যাণকারী এবং অকল্যাণ প্রতিহতকারী একমাত্র আল্লাহই। সুতরাং যে ব্যক্তি বিশ্বাস করবে

যে, রাশিচক্রের কোনো প্রভাব আছে, সে কুফরী করবে।

প্রশ্ন ৮৩: আল্লাহ্‌র বিধান অনুযায়ী সবকিছু পরিচালনা করা কি আমাদের উপর ওয়াজিব?

উত্তরঃ সকল মুসলিমের আল্লাহ্‌র বিধান অনুযায়ী সবকিছু পরিচালনা করা ওয়াজিব। মহান আল্লাহ

﴿ قُل لَّا يَعۡلَمُ مَن فِي ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلۡأَرۡضِ ٱلۡغَيۡبَ إِلَّا ٱللَّهُۚ﴾ [النمل: ٦٥]   

﴿ أَفَحُكۡمَ ٱلۡجَٰهِلِيَّةِ يَبۡغُونَۚ وَمَنۡ أَحۡسَنُ مِنَ ٱللَّهِ حُكۡمٗا لِّقَوۡمٖ يُوقِنُونَ ٥٠ ﴾ [المائ‍دة: ٥٠]   

“তারা কি জাহেলী যুগের ফায়ছালা কামনা করে? বিশ্বাসীদের জন্য আল্লাহ অপেক্ষা উত্তম

ফায়ছালাকারী আর কে?!” (মায়েদাহ ৫০)।

প্রশ্ন ৮৪: যে ব্যক্তি আল্লাহ্‌র সাথে বা আল্লাহ্‌র কোনো আয়াতের সাথে বা তাঁর রাসূল

সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে অথবা ইসলামের সাথে ঠাট্টা করে, তার হুকুম কি?

উত্তরঃ যে ব্যক্তি এগুলির কোনো একটির সাথে ঠাট্টা করবে, সে কাফের হয়ে যাবে। এরশাদ হচ্ছে,

“আপনি বলুন, তোমরা কি আল্লাহ্‌র সাথে, তাঁর আয়াতের সাথে এবং তাঁর রাসূলের সাথে ঠাট্টা

করতে? ওযর পেশ করো না, নিশ্চয় তোমরা ঈমান আনয়নের পর কাফের হয়ে গেছ” (তাওবাহ ৬৫-৬৬)।

প্রশ্ন ৮৫: ‘লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ’-এর শর্তসমূহ কি কি?

উত্তরঃ ‘লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ’-এর শর্ত ৭টি, যথাঃ

১. এই কালিমাটির না-সূচক এবং হ্যাঁ-সূচক দু’টি অর্থই এমনভাবে জানতে হবে যে, মুখে যা উচ্চারিত

হবে, অন্তরও তা উপলব্ধি করবে। মহান আল্লাহ বলেন,

“জেনে রাখো, আল্লাহ ব্যতীত সত্য কোনো উপাস্য নেই” (মুহাম্মাদ ১৯)। অন্য আয়াতে এসেছে,

﴿قُلۡ أَبِٱللَّهِ وَءَايَٰتِهِۦ وَرَسُولِهِۦ كُنتُمۡ تَسۡتَهۡزِءُونَ ٦٥ لَا تَعۡتَذِرُواْ قَدۡ كَفَرۡتُم بَعۡدَ إِيمَٰنِكُمۡۚ﴾ [التوبة: ٦٥،  ٦٦]   

﴿ فَٱعۡلَمۡ أَنَّهُۥ لَآ إِلَٰهَ إِلَّا ٱللَّهُ﴾ [محمد: ١٩]   

﴿وَلَا يَمۡلِكُ ٱلَّذِينَ يَدۡعُونَ مِن دُونِهِ ٱلشَّفَٰعَةَ إِلَّا مَن شَهِدَ بِٱلۡحَقِّ وَهُمۡ يَعۡلَمُونَ ٨٦ ﴾ [الزخرف: ٨٦]   

“তিনি ব্যতীত তারা যাদের পূজা করে, তারা সুপারিশের অধিকারী হবে না। তবে যারা জেনেবুঝে হক্ব

স্বীকার করত, (তারা সুপারিশের অধিকারী হবেন)” (যুখরুখ ৮৬)। রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম

«مَنْ مَاتَ وَهُوَ يَعْلَمُ أَنْ لاَ إلَهَ إِلاَّ اللَّهُ دَخَلَ الْجَنَّةَ» 

“যে ব্যক্তি লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ জানা অবস্থায় মৃত্যুবরণ করল, সে জান্নাতে প্রবেশ

করল” (মুসলিম)। আর এই কালিমাটির অর্থ হচ্ছে,  الله إِلاَّ بِحَقٍّ مَعْبُوْدَلاَ আল্লাহ ছাড়া কোনো হক্ব মা‘বূদ

আর ইবাদতের সংজ্ঞা হচ্ছে, আল্লাহ ভালবাসেন এবং সন্তুষ্ট হন প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য এমন

যাবতীয় কথা ও কাজকে ইবাদত বলে।

২. এই কালিমাটির প্রতি দৃঢ় বিশ্বাস রাখতে হবে, কোনো প্রকার সন্দেহ-সংশয় থাকা চলবে

﴿  ٱلصَّٰدِقُونَ هُمُ أُوْلَٰٓئِكَ ٱللَّهِۚ سَبِيلِ فِي وَأَنفُسِهِمۡ بِأَمۡوَٰلِهِمۡ وَجَٰهَدُواْ يَرۡتَابُواْ لَمۡ ثُمَّ وَرَسُولِهِۦ بِٱللَّهِ ءَامَنُواْ ٱلَّذِينَ ٱلۡمُؤۡمِنُونَ إِنَّمَا١٥  ﴾

“মুমিন তো তারাই, যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি ঈমান আনার পর সন্দেহ পোষণ করে নি

এবং জান ও মাল দিয়ে আল্লাহ্‌র পথে জিহাদ করেছে। তারাই হচ্ছে সত্যনিষ্ঠ” (হুজুরাত

1৫)। রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন,

“যে ব্যক্তি বলবে, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া কোনো হক্ব মা’বূদ নেই এবং আমি

মুহাম্মাদ আল্লাহ্‌র রাসূল এবং এই কালিমা দু’টিতে কোনো প্রকার সন্দেহ পোষণ না করা অবস্থায়

আল্লাহ্‌র সাথে সাক্ষাত করবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে” (মুসলিম)।

৩. ইখলাছ থাকতে হবে। মহান আল্লাহ বলেন,

“আল্লাহ্‌র জন্যই শির্কমুক্ত ইবাদত” (যুমার ৩)। তিনি আরো বলেন,

“তাদেরকে কেবলমাত্র এই নির্দেশ করা হয়েছে যে, তারা খাঁটি বিশ্বাসের সাথে এবং একনিষ্ঠভাবে

আল্লাহ্‌র ইবাদত করবে” (বাইয়্যেনাহ ৫)। রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন,

“কিয়ামতের দিন ঐ ব্যক্তি আমার শাফা‘আত লাভে সবচেয়ে বেশী ধন্য হবে, পরিপূর্ণ ইখলাছের সাথে

লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ বলেছে” (বুখারী)।

৪. এই কালিমা ও তার উদ্দেশ্যকে ভালবাসতে হবে এবং তাতে খুশী থাকতে হবে। মহান আল্লাহ বলেন,

“আর কিছু লোক এমনও রয়েছে, যারা অন্যান্যকে আল্লাহ্‌র সমকক্ষ সাব্যস্ত করে। তাদেরকে

তেমনি ভালবাসে, যেমন আল্লাহ্‌র প্রতি ভালবাসা হয়ে থাকে। কিন্তু যারা ঈমান এনেছে, আল্লাহ্‌র প্রতি

তাদের ভালবাসা ওদের তুলনায় বহুগুণ বেশী” (বাক্বারাহ ১৬৫)। রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম

«أَشْهَدُ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَأَنِّى رَسُولُ اللَّهِ لاَ يَلْقَى اللَّهَ بِهِمَا عَبْدٌ غَيْرَ شَاكٍّ فِيهِمَا إِلاَّ دَخَلَ الْجَنَّةَ» 

﴿ أَلَا لِلَّهِ ٱلدِّينُ ٱلۡخَالِصُۚ﴾ [الزمر: ٣]   

﴿ وَمَآ أُمِرُوٓاْ إِلَّا لِيَعۡبُدُواْ ٱللَّهَ مُخۡلِصِينَ لَهُ ٱلدِّينَ حُنَفَآءَ﴾ [البينة: ٥]

«أَسْعَدُ النَّاسِ بِشَفَاعَتِي يَوْمَ الْقِيَامَةِ مَنْ قَالَ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ خَالِصًا مِنْ قِبَلِ نَفْسِهِ»

﴿ وَمِنَ ٱلنَّاسِ مَن يَتَّخِذُ مِن دُونِ ٱللَّهِ أَندَادٗا يُحِبُّونَهُمۡ كَحُبِّ ٱللَّهِۖ وَٱلَّذِينَ ءَامَنُوٓاْ أَشَدُّ حُبّٗا لِّلَّهِۗ﴾ [البقرة: ١٦٥]   

«  وَأَنْ لِلَّهِ إِلاَّ يُحِبُّهُ لاَ الْمَرْءَ يُحِبَّ وَأَنْ سِوَاهُمَا مِمَّا إِلَيْهِ أَحَبَّ وَرَسُولُهُ اللَّهُ كَانَ مَنْ الإِيمَانِ حَلاَوَةَ بِهِنَّ وَجَدَ فِيهِ كُنَّ مَنْثَلاَثٌ

“তিনটি বিষয় যার মধ্যে থাকবে, সে এগুলোর দ্বারা ঈমানের প্রকৃত স্বাদ আস্বাদন করবে। আল্লাহ

এবং তাঁর রাসূল ঐ ব্যক্তির নিকটে অন্য সবার চেয়ে প্রিয়তর হবেন। সে কাউকে ভালবাসলে শুধু আল্লাহ্‌র

উদ্দেশ্যেই ভালবাসবে। আর আল্লাহ তাকে কুফরী থেকে রক্ষা করার পর তাতে পুনরায় ফিরে যাওয়াকে

তেমন ঘৃণা করবে, যেমন সে জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হওয়াকে ঘৃণা করে” (মুসলিম)।

৫. এই কালিমাকে সত্য হিসাবে গ্রহণ করতে হবে, কোনো প্রকার মিথ্যা বা নিফাক্বী থাকা চলবে

يَكْرَهَ أَنْ يَعُودَ فِى الْكُفْرِ بَعْدَ أَنْ أَنْقَذَهُ اللَّهُ مِنْهُ كَمَا يَكْرَهُ أَنْ يُقْذَفَ فِى النَّارِ» 

﴿فَلَيَعۡلَمَنَّ ٱللَّهُ ٱلَّذِينَ صَدَقُواْ وَلَيَعۡلَمَنَّ ٱلۡكَٰذِبِينَ ٣ ﴾ [العنكبوت: ٣]   

“অতঃপর আল্লাহ্‌ জেনে নিবেন, (প্রকাশ করে দিবেন) তাদের মধ্যে কারা (তাদের ঈমানের দাবীতে)

সত্যবাদী, আর অবশ্যই জেনে নিবেন (প্রকাশ করে দিবেন) কারা (তাদের ঈমানের দাবীতে)

মিথ্যাবাদী” (আনকাবূত ৩)।

অন্য আয়াতে এসেছে,

‘যারা সত্য নিয়ে আগমন করেছে এবং সত্যকে সত্য বলে মেনে নিয়েছে, তারাইতো

আল্লাহভীরু” (যুমার ৩৩)।

রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

“যে ব্যক্তি মনে-প্রাণে লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লা-হ-এর সাক্ষ্যের উপর অটল থাকা

অবস্থায় মৃত্যুবরণ করবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে” (আহমাদ)।

৬. এই কালিমার দাবিসমূহের নিকট আত্মসমর্পণ করতে হবে। এর অর্থ হচ্ছে, শুধুমাত্র আল্লাহ্‌র

সন্তুষ্টির জন্য আমল করে যেতে হবে। আল্লাহ বলেন,

“তোমরা তোমাদের কাছে আযাব আসার পূর্বে তোমাদের পালনকর্তার দিকে প্রত্যাবর্তন কর

এবং তাঁর কাছেই আত্মসমর্পণ কর। (কারণ) এরপর তোমরা সাহায্যপ্রাপ্ত হবে না” (যুমার ৫৪)।

তিনি আরো বলেন,

“যে ব্যক্তি সৎকর্মপরায়ণ হয়ে নিজেকে আল্লাহ অভিমুখী করে, সে এক মজবুত হাতল ধারণ

করে” (লুক্বমান ২২)।

৭. এই কালিমাকে মনে-প্রাণে গ্রহণ করতে হবে; যাতে তা প্রত্যাখ্যান না করা হয়। মহান আল্লাহ

﴿وَٱلَّذِي جَآءَ بِٱلصِّدۡقِ وَصَدَّقَ بِهِۦٓ أُوْلَٰٓئِكَ هُمُ ٱلۡمُتَّقُونَ ٣٣ ﴾ [الزمر: ٣٣]   

«مَنْ مَاتَ وَهُوَ يَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ، وَأَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللهِ صَادِقًا مِنْ قَلْبِهِ، دَخَلَ الْجَنَّةَ»

﴿وَأَنِيبُوٓاْ إِلَىٰ رَبِّكُمۡ وَأَسۡلِمُواْ لَهُۥ مِن قَبۡلِ أَن يَأۡتِيَكُمُ ٱلۡعَذَابُ ثُمَّ لَا تُنصَرُونَ ٥٤ ﴾ [الزمر: ٥٤] 

﴿۞وَمَن يُسۡلِمۡ وَجۡهَهُۥٓ إِلَى ٱللَّهِ وَهُوَ مُحۡسِنٞ فَقَدِ ٱسۡتَمۡسَكَ بِٱلۡعُرۡوَةِ ٱلۡوُثۡقَىٰۗ﴾ [لقمان: ٢٢]   

﴿ إِنَّهُمۡ كَانُوٓاْ إِذَا قِيلَ لَهُمۡ لَآ إِلَٰهَ إِلَّا ٱللَّهُ يَسۡتَكۡبِرُونَ ٣٥ ﴾ [الصافات: ٣٥]

“তাদের যখন বলা হত, আল্লাহ ব্যতীত সত্য কোনো উপাস্য নেই, তখন তারা অহংকার প্রদর্শন

করত” (ছফফাত ৩৫)।

প্রশ্ন ৮৬: ইসলাম বিনষ্টকারী বিষয়সমূহ কয়টি এবং কি কি?

উত্তরঃ ইসলাম বিনষ্টকারী বিষয় ১০টি, সেগুলি হচ্ছেঃ

১. আল্লাহ্‌র ইবাদতের ক্ষেত্রে অন্যকে শরীক করা। মহান আল্লাহ বলেন,

“যে ব্যক্তি আল্লাহ্‌র সাথে শির্ক করবে, আল্লাহ তার জন্য জান্নাত হারাম করে দিবেন। আর তার

বাসস্থান হবে জাহান্নাম। বস্তুতঃ অত্যাচারীদের কোন সাহায্যকারী নেই” (মায়েদাহ ৭২)।

অন্য আয়াতে এসেছে,

“নিঃসন্দেহে আল্লাহ শির্কের গোনাহ ক্ষমা করেন না। তিনি শির্ক ব্যতীত অন্য যে কোনো

গোনাহ যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করবেন” (নিসা ১১৬)।

শির্কের উদাহরণ হচ্ছে, মৃত ব্যক্তির নিকট প্রার্থনা করা, তার কাছে সাহায্য চাওয়া, তার জন্য

নযর মানা, তার উদ্দেশ্যে কুরবানী করা ইত্যাদি।

২. যে ব্যক্তি আল্লাহ এবং আল্লাহ্‌র মাঝে অসীলা গ্রহণ করতঃ তাদের সুপারিশ চায় এবং তাদের উপর

ভরসা করে, সর্বসম্মতিক্রমে সে কাফের। আল্লাহ বলেন,

“বলুন, আমি তো কেবল আমার পালনকর্তাকেই ডাকি এবং তাঁর সাথে কাউকে শরীক করি না”। (জিন

৩. যে ব্যক্তি মুশরিকদেরকে কাফের ভাবে না বা তাদের কুফরীতে সন্দেহ পোষণ করে অথবা তাদের

মতবাদকে সঠিক মনে করে, সে কাফের হয়ে যায়। কেননা কুফরীর প্রতি সন্তুষ্ট থাকাও কুফরী।

৪. যে ব্যক্তি বিশ্বাস করবে যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বিধান ব্যতীত অন্য

কারো বিধান অধিক পরিপূর্ণ অথবা তাঁর ফায়ছালা ব্যতীত অন্য কারো ফায়ছালা অধিক উত্তম, সে

সর্বসম্মতিক্রমে কাফের। যেমন, আল্লাহ এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ফায়ছালার

উপর তাগূতের ফায়ছালাকে প্রাধান্য দেওয়া।

৫. রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম যা নিয়ে এসেছেন, তার কোনো কিছুকে যে ব্যক্তি ঘৃণা

করবে, সে ব্যক্তি কাফের হয়ে যাবে- যদিও সে ঐ বিষয়ের উপর আমল করে। এরশাদ হচ্ছে,

“এটা এজন্য যে, আল্লাহ যা নাযিল করেছেন, তারা তা অপছন্দ করেছে। অতএব, আল্লাহ তাদের আমল

নষ্ট করে দিয়েছেন” (মুহাম্মাদ ৯)।

৬. যে ব্যক্তি রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দ্বীনের কোনো বিষয় নিয়ে অথবা

আখেরাতের সুখ বা শাস্তির কোনো বিষয় নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রুপ করবে, সে কাফের হয়ে যাবে। মহান আল্লাহ

﴿إِنَّهُۥ مَن يُشۡرِكۡ بِٱللَّهِ فَقَدۡ حَرَّمَ ٱللَّهُ عَلَيۡهِ ٱلۡجَنَّةَ وَمَأۡوَىٰهُ ٱلنَّارُۖ وَمَا لِلظَّٰلِمِينَ مِنۡ أَنصَارٖ ٧٢ ﴾ [المائ‍دة: ٧٢]   

﴿إِنَّ ٱللَّهَ لَا يَغۡفِرُ أَن يُشۡرَكَ بِهِۦ وَيَغۡفِرُ مَا دُونَ ذَٰلِكَ لِمَن يَشَآءُۚ﴾ [النساء: ١١٦]   

﴿ قُلۡ إِنَّمَآ أَدۡعُواْ رَبِّي وَلَآ أُشۡرِكُ بِهِۦٓ أَحَدٗا ٢٠ ﴾ [الجن: ٢٠]

﴿ ذَٰلِكَ بِأَنَّهُمۡ كَرِهُواْ مَآ أَنزَلَ ٱللَّهُ فَأَحۡبَطَ أَعۡمَٰلَهُمۡ ٩ ﴾ [محمد: ٩]   

﴿قُلۡ أَبِٱللَّهِ وَءَايَٰتِهِۦ وَرَسُولِهِۦ كُنتُمۡ تَسۡتَهۡزِءُونَ ٦٥ لَا تَعۡتَذِرُواْ قَدۡ كَفَرۡتُم بَعۡدَ إِيمَٰنِكُمۡۚ﴾ [التوبة: ٦٥،  ٦٦]   

“আপনি বলুন, তোমরা কি আল্লাহ্‌র সাথে, তাঁর আয়াতের সাথে এবং তাঁর রাসূলের সাথে ঠাট্টা

করতে? ওযর পেশ করো না, নিশ্চয় তোমরা ঈমান আনায়নের পর কাফের হয়ে গেছ” (তাওবাহ ৬৫-৬৬)।

৭. জাদু করা। যে ব্যক্তি জাদু করবে বা এর প্রতি খুশী থাকবে, সে কাফের হয়ে যাবে। আল্লাহ বলেন,

﴿ وَٱتَّبَعُواْ مَا تَتۡلُواْ ٱلشَّيَٰطِينُ عَلَىٰ مُلۡكِ سُلَيۡمَٰنَۖ وَمَا كَفَرَ سُلَيۡمَٰنُ وَلَٰكِنَّ ٱلشَّيَٰطِينَ كَفَرُواْ يُعَلِّمُونَ ٱلنَّاسَ ٱلسِّحۡرَ﴾ [البقرة: ١٠٢]   

“তারা ঐ শাস্ত্রের অনুসরণ করল, যা সুলাইমানের রাজত্বকালে শয়তানরা আবৃত্তি করত। সুলাইমান

কুফরী করেন নি; বরং শয়তানরাই কুফরী করেছিল। তারা মানুষকে জাদুবিদ্যা শিক্ষা দিত” (বাক্বারাহ

৮. মুসলিমদের বিরুদ্ধে কাফেরদেরকে সাহায্য-সহযোগিতা করা। এরশাদ হচ্ছে,

“তোমাদের মধ্যে যে তাদের সাথে আন্তরিক বন্ধুত্ব স্থাপন করবে, সে তাদেরই অন্তর্ভুক্ত

হবে। নিশ্চয়ই আল্লাহ যালেম সম্প্রদায়কে পথ প্রদর্শন করেন না” (মায়েদাহ ৫১)।

৯. যে ব্যক্তি বিশ্বাস করবে যে, কারও পক্ষে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর

শরী‘আত থেকে বের হয়ে যাওয়ার সুযোগ আছে, যেমনিভাবে খিযির আলাইহিস সালাম মূসা আলাইহিস সালাম-

এর শরী‘আতের বাইরে ছিলেন, সে কাফের হয়ে যাবে। আল্লাহ বলেন,

“যে ব্যক্তি ইসলাম ছাড়া অন্য কোনো দ্বীন তালাশ করে, কস্মিনকালেও তা তার পক্ষ থেকে গ্রহণ

করা হবে না এবং আখেরাতে সে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে” (আলে ইমরান ৮৫)।

১০. আল্লাহ্‌র দ্বীনকে উপেক্ষা করে চলা, দ্বীন না শেখা এবং তদনুযায়ী আমলও না করা। মহান

﴿وَمَن يَتَوَلَّهُم مِّنكُمۡ فَإِنَّهُۥ مِنۡهُمۡۗ إِنَّ ٱللَّهَ لَا يَهۡدِي ٱلۡقَوۡمَ ٱلظَّٰلِمِينَ ٥١ ﴾ [المائ‍دة: ٥١]

﴿ وَمَن يَبۡتَغِ غَيۡرَ ٱلۡإِسۡلَٰمِ دِينٗا فَلَن يُقۡبَلَ مِنۡهُ وَهُوَ فِي ٱلۡأٓخِرَةِ مِنَ ٱلۡخَٰسِرِينَ ٨٥ ﴾ [ال عمران: ٨٥]   

﴿وَمَنۡ أَظۡلَمُ مِمَّن ذُكِّرَ بِ‍َٔايَٰتِ رَبِّهِۦ ثُمَّ أَعۡرَضَ عَنۡهَآۚ إِنَّا مِنَ ٱلۡمُجۡرِمِينَ مُنتَقِمُونَ ٢٢ ﴾ [السجدة: ٢٢]

“ঐ ব্যক্তির চেয়ে বড় যালেম আর কে হতে পারে, যাকে তার প্রভুর আয়াতসমূহের মাধ্যমে উপদেশ দান

করা হয়, অথচ সে তা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়? নিশ্চয়ই আমি অপরাধীদেরকে শাস্তি দেব” (সাজদাহ ২২)।

প্রশ্ন ৮৭: সর্বপ্রথম এবং সর্বশেষ রাসূল কে? নবীগণের পরে সর্বোত্তম মানুষ কে?

উত্তরঃ সর্বপ্রথম রাসূল হলেন, নূহ আলাইহিস সালাম এবং সর্বশেষ রাসূল হলেন, মুহাম্মাদ

সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম। নবীগণের পরে সর্বোত্তম মানুষ হলেন, ছাহাবায়ে কেরাম

(রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুম)। তাঁদের মধ্যে সর্বোত্তম হলেন, আবূ বকর (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু), অতঃপর ওমর

(রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু), অতঃপর উছমান (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু), অতঃপর আলী (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু), অতঃপর

অন্যান্য সাহাবী (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুম)।

ছাহাবায়ে কেরাম (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুম) সবাই চার খলীফার খেলাফতে সন্তুষ্ট ছিলেন। ছাহাবায়ে কেরাম

(রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুম) পরস্পর পরস্পরকে ভালবাসতেন। সে কারণে আলী (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু) তিন

খলীফার নামানুসারে তাঁর তিন সন্তানের নাম আবূ বকর, ওমর এবং উছমান রাখেন। যে ব্যক্তি বলে

যে, ছাহাবায়ে কেরাম (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুম) রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পরিবারের

মুমিনগণকে ভালবাসতেন না, সে মিথ্যা বলে।

প্রশ্ন ৮৮: ছাহাবায়ে কেরাম (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুম)-এর প্রতি আমাদের কর্তব্য কি?  তাঁদের কাউকে

গালি দেওয়ার হুকুম কি?

উত্তরঃ সকল সাহাবীকে ভালবাসতে হবে, তাঁদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করতে হবে এবং তাঁদের প্রতি

সন্তুষ্ট থাকতে হবে। কেননা মহান আল্লাহ তাঁদের সকলের প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছেন; তাঁদের কাউকেই তিনি

তাঁর সন্তুষ্টি থেকে বাদ দেন নি। এরশাদ হচ্ছে,

“আল্লাহ তাঁদের প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছেন এবং তাঁরাও তাঁর প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছেন” (মুজাদালাহ ২২)।

অনুরূপভাবে রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর স্ত্রীগণকে ভালবাসতে হবে এবং সম্মান

করতে হবে। মনে রাখতে হবে, তাঁদের কাউকে গালি দেওয়া সম্পূর্ণ হারাম এবং কাবীরা

গোনাহ। রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর স্ত্রীগণ মুমিনদের মাতা। মহান আল্লাহ বলেন,

“তাঁর স্ত্রীগণ তাদের মা” (আহযাব ৬)। আয়াতে স্পষ্ট বলা হয়েছে যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি

ওয়াসাল্লাম-এর সকল স্ত্রী মুমিনদের মাতা; তাঁদের কাউকে এই হুকুম থেকে বাদ দেওয়া হয় নি। ছাহাবায়ে

কেরাম (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুম) কে গালি দেওয়া প্রসঙ্গে আবূ সাঈদ খুদরী (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু) বর্ণনা

করেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

“তোমরা আমার সাহাবীগণকে গালি দিওনা। কেননা তোমাদের কেউ যদি উহুদ পাহাড় পরিমাণ স্বর্ণ

আল্লাহ্‌র রাস্তায় ব্যয় করে, তথাপিও সে তাঁদের কোনো একজনের পূর্ণ এক মুদ্দ([3]) বা অর্ধ মুদ্দ

দান সমপরিমাণ পর্যন্তও পৌঁছতে পারবে না” (বুখারী ও মুসলিম)।

প্রশ্ন ৮৯: যে ব্যক্তি কোনো সাহাবীকে বা রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কোনো

স্ত্রীকে গালি দেয়, তার শাস্তি কি?

উত্তরঃ যে ব্যক্তি কোনো সাহাবীকে বা রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কোনো

স্ত্রীকে গালি দিবে, সে আল্লাহ্‌র রহমত থেকে বঞ্চিত হয়ে তাঁর ক্রোধে নিপতিত হবে। রাসূল

সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

“যে ব্যক্তি আমার সাহাবীদেরকে গালি দিবে, তার উপর আল্লাহ্‌র, ফেরেশতামণ্ডলীর এবং সকল

মানুষের অভিশাপ বর্ষিত হবে” (ত্ববারানী)। সুতরাং যে ব্যক্তি কোনো সাহাবীকে বা রাসূল

সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কোনো স্ত্রীকে গালি দিবে, তার এহেন ন্যাক্কারজনক

কর্মকাণ্ডের তীব্র প্রতিবাদ করা উচিৎ।

প্রশ্ন ৯০: আল্লাহ বলেন,   تَوَّابًا اللَّهَ لَوَجَدُوا الرَّسُولُ لَهُمُ وَاسْتَغْفَرَ اللَّهَ فَاسْتَغْفَرُوا جَاءُوكَ﴿وَلَوْ أَنَّهُمْ إِذ ظَّلَمُوا أَنفُسَهُمْ

رَّحِيمًا﴾  “আর তারা যখন নিজেদের প্রতি যুলম করেছিল, তখন যদি তারা আপনার কাছে আসত, অতঃপর

আল্লাহ্‌র নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করত এবং রাসূলও যদি তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করতেন, তাহলে

অবশ্যই তারা আল্লাহকে তওবাহ কবূলকারী এবং মেহেরবানরূপে পেত” (নিসা ৬৪)। উক্ত আয়াত কি প্রমাণ

করে যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মৃত্যুর পরেও তাঁর কাছ থেকে আল্লাহ্‌র নিকট ক্ষমা

চাওয়ার আবেদন করা যাবে?

﴿رَضِيَ ٱللَّهُ عَنۡهُمۡ وَرَضُواْ عَنۡهُۚ﴾ [المجادلة: ٢٢]   

﴿وَأَزۡوَٰجُهُۥٓ أُمَّهَٰتُهُمۡۗ﴾ [الاحزاب: ٦]   

«لَا تَسُبُّوا أَصْحَابِي فَلَوْ أَنَّ أَحَدَكُمْ أَنْفَقَ مِثْلَ أُحُدٍ ذَهَبًا مَا بَلَغَ مُدَّ أَحَدِهِمْ وَلَا نَصِيفَهُ» 

«مَنْ سَبَّ أَصْحَابِي فَعَلَيْهِ لَعْنَةُ اللَّهِ وَالْمَلَائِكَةِ وَالنَّاسِ أَجْمَعِينَ»

উত্তরঃ রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছ থেকে আল্লাহ্‌র নিকট ক্ষমা চাওয়ার

আবেদনের বিষয়টি তাঁর জীবিত অবস্থার সাথে নির্দিষ্ট; তাঁর মৃত্যুর পরে এটি প্রযোজ্য নয়। একটি

সহীহ হাদীসেও প্রমাণিত হয় নি যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মৃত্যুর পর ছাহাবায়ে

কেরাম (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুম) তাঁর কাছ থেকে আল্লাহ্‌র নিকট ক্ষমা প্রার্থনার আবেদন

করেছেন। আয়েশা (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা) রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট দো‘আ এবং

ক্ষমা প্রার্থনার আবেদন করলে রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আমি যদি বেঁচে

থাকি, তাহলে তোমার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করব এবং তোমার জন্য দো‘আ করব (বুখারী, নং

৫৬৬৬)। এই হাদীসটি উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যা করে। সুতরাং রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর

কাছে আল্লাহ্‌র নিকট ক্ষমা প্রার্থনার আবেদনের বিষয়টি তাঁর জীবদ্দশার সাথে নির্দিষ্ট; মৃত্যুর পরে

পরিশেষে বলব, চার ইমাম এবং তাঁদের অনুসারীদের বক্তব্যের আলোকে তাঁদের আক্বীদা

সংক্ষিপ্তাকারে সংকলন করা হলো। তাঁদের এই আক্বীদা নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দিক-

নির্দেশনার সাথে হুবহু মিলে যায়। সুতরাং হে মুসলিম ভাই ও বোন! আপনি সত্যকে আঁকড়ে ধরুন, এ পথে

মানুষকে আহ্বান করুন এবং যাবতীয় শির্ক ও তার উপকরণ থেকে তাদেরকে সতর্ক করুন। সাবধান

থাকবেন, যেন নিম্নোক্ত হাদীসটির আওতায় আপনি না পড়ে যান, যেখানে রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি

«وَلاَ تَقُومُ السَّاعَةُ حَتَّى تَلْحَقَ قَبَائِلُ مِنْ أُمَّتِى بِالْمُشْرِكِينَ وَحَتَّى تَعْبُدَ قَبَائِلُ مِنْ أُمَّتِى الأَوْثَانَ»

“ততদিন পর্যন্ত কিয়ামত সংঘটিত হবে না, যতদিন আমার উম্মতের কিছু লোক মুশরিকদের সাথে

যোগ না দিবে এবং যতদিন আমার উম্মতের কিছু লোক মূর্তি পূজা না করবে” (হাদীসটির সনদ

সহীহ)। রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর প্রভুর কাছে প্রার্থনা করেছেন, যেন তাঁর মৃত্যুর পরে

তাঁর কবরকে দো‘আ করা, সাহায্য প্রার্থনা করা এবং সুপারিশ চাওয়ার স্থান হিসাবে গ্রহণ না করা

হয়; যেমনিভাবে কিছু কিছু মূর্খ লোক তাদের নবী-রাসূলের কবরের নিকট করে থাকে। রাসূল

সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন,

“হে আল্লাহ! আপনি আমার কবরকে এমন পূজনীয় বস্তুতে পরিণত করবেন না, যার ইবাদত করা হয়। ঐ

সম্প্রদায়ের উপর আল্লাহ্‌র ক্রোধ প্রচণ্ড হয়েছে, যারা তাদের নবীগণের কবরসমূহকে মসজিদ হিসাবে

গ্রহণ করেছে” (মুওয়াত্বা)। চার ইমাম যে হক্বের অনুসরণ করেছেন, তার পরিপন্থী যঈফ এবং মিথ্যা

হাদীসসমূহ থেকে হুশিয়ার থাকবেন।

মহান আল্লাহ আমাদের নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উপর, তাঁর পরিবার-

পরিজন এবং সকল সাহাবীর উপর দরূদ ও সালাম বর্ষণ করুন। আমীন!

«اللَّهُمَّ لَا تَجْعَلْ قَبْرِي وَثَنًا يُعْبَدُ اشْتَدَّ غَضَبُ اللَّهِ عَلَى قَوْمٍ اتَّخَذُوا قُبُورَ أَنْبِيَائِهِمْ مَسَاجِدَ»

সূচীপত্র

প্রশ্নাবলী পৃষ্

ঠা

প্রশ্ন ১: আপনার রব কে?

প্রশ্ন ২: রব অর্থ কি?

প্রশ্ন ৩: আল্লাহ মানে কি?

প্রশ্ন ৪: আল্লাহ কোথায়?

প্রশ্ন ৫: আপনি কিভাবে আপনার প্রভুকে চিনেন?

প্রশ্ন ৬: আল্লাহ আপনাকে কেন সৃষ্টি করেছেন?

প্রশ্ন ৭: আল্লাহ্‌র সাথে কৃত সবচেয়ে বড় পাপ কোন্‌টি?

প্রশ্ন ৮: ইবাদত অর্থ কি?

প্রশ্ন ৯: দো‘আ কি ইবাদতের অন্তর্ভুক্ত?

প্রশ্ন ১০: আল্লাহ তাঁর বান্দার উপর সর্বপ্রথম কোন্‌ বিষয়টি ফরয

প্রশ্ন ১১: আপনার দ্বীন কোন্‌টি?

প্রশ্ন ১২: ‘আল্লাহ ছাড়া কোনো মা‘বূদ নেই এবং মুহাম্মাদ সাল্লাল্ল

াহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহ্‌র রাসূল’-

 একথার সাক্ষ্য দেওয়ার অর্থ কি?

প্রশ্ন ১৩: ছালাত, যাকাত, ছিয়াম এবং হজ্জ ফরয হওয়ার দলীল কি?

প্রশ্ন ১৪: নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দ্বীন

ব্যতীত অন্য কোনো ধর্ম কি গৃহীত হবে?

প্রশ্ন ১৫: 'আন্তঃধর্মীয় ঐক্য (وحدة الأديان)'

প্রশ্ন ১৬: ঈমানের রুকন কয়টি ও কি কি?

প্রশ্ন ১৭: ঈমানের এই ৬টি মূলনীতির দাবী কি?

প্রশ্ন ১৮: কবরে সুখ-শান্তির বিষয়টি কি কুরআন-হাদীস দ্বারা

প্রশ্ন ১৯: কুরআন কি আল্লাহ্‌র পক্ষ থেকে নাযিলকৃত নাকি আল্লাহ

প্রশ্ন ২০: আমল ছাড়া ঈমান কি কোনো কাজে আসবে?

প্রশ্ন ২১: 'ইহ্‌সান' কাকে বলে?

প্রশ্ন ২২: একজন মুমিনের আমল কখন বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়?

প্রশ্ন ২৩: মানুষ কি বাধ্যগত জীব নাকি স্বাধীন?

প্রশ্ন ২৪: তাওহীদ কয় প্রকার ও কি কি?

প্রশ্ন ২৫: নভোমণ্ডল ও ভূমণ্ডল এবং এতদুভয়েরমধ্যবর্তী

বস্তুসমূহ কে পরিচালনা করেন?

প্রশ্ন ২৬: কোনো ব্যক্তি যদি বিশ্বাস করে, সমস্ত পৃথিবী চারটি

মেরু বা চারটি মূল শক্তি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়, তাহলে আমরা তার

ব্যাপারে কি বলতে পারি?

প্রশ্ন ২৭: আপনার নবী কে?

প্রশ্ন ২৮: অলী-আওলিয়ারা কি গায়েবের খবর জানেন? তারা কি মৃতকে

জীবিত করতে পারেন?

প্রশ্ন ২৯: ঈসা আলাইহিস সালাম মৃতদেরকে জীবিত করতে পারতেন এবং

মানুষেরা তাদের বাড়িতে যা কিছু সঞ্চয় করত, তা জানতেন। প্রশ্ন

হচ্ছে, তাহলে অন্যান্য আউলিয়াদের দ্বারা কি এমনটি সম্ভব?

প্রশ্ন ৩০: আল্লাহ্‌র অলী হওয়ার বিষয়টি কি শুধু কতিপয় মুমিনের সাথে

নির্দিষ্ট নাকি সকল মুমিনের ক্ষেত্রেই তা সম্ভব?

প্রশ্ন ৩১: আল্লাহ তা‘আলা বলেন,   هُمْ وَلَا عَلَيْهِمْ خَوْفٌ لَا اللَّهِ أَوْلِيَاءَ إِنَّ﴿أَلَا

يَحْزَنُونَ﴾ “মনে রেখো, যারা আল্লাহ্‌র অলী, তাদের কোন ভয় নেই এবং

তারা চিন্তিতও হবে না” (ইউনুস ৬২)। উক্ত আয়াত কি অলী-

আউলিয়াদের নিকট প্রার্থনা করার বৈধতা নির্দেশ করে?

প্রশ্ন ৩২: মুমিনগণ জান্নাতে তাঁদের প্রতিপালককে দেখতে পাবেন কি?

প্রশ্ন ৩৩: নবী-রাসূল বাদে আল্লাহ্‌র অন্যান্য অলী-আউলিয়া কি

ছগীরা এবং কাবীরা গোনাহে পতিত হওয়া থেকে মুক্ত?

প্রশ্ন ৩৪: খিযির আলাইহিস সালাম কি এখনো জীবিত?

প্রশ্ন ৩৫: শির্ক কত প্রকার?

প্রশ্ন ৩৬: মৃত ব্যক্তিরা কি শ্রবণ করে এবং আহ্বান কারীর আহ্বানে

প্রশ্ন ৩৭: মূর্খ ব্যক্তিরা যেসব কবরবাসীকে সম্মান করে, তাদের

কবরে মাঝে মাঝে কিসের শব্দ শোনা যায়?

প্রশ্ন ৩৮: আল্লাহ্‌র অলী-আউলিয়া এবং অন্যান্য মৃতব্যক্তি কি

কোনো সাহায্য প্রার্থনাকারীর ডাকে সাড়া দেন?

প্রশ্ন ৩৯: আল্লাহ বলেন,   أَحْيَاءٌ بَلْ أَمْوَاتًا اللَّهِ سَبِيلِ فِي﴿وَلَا تَحْسَبَنَّ الَّذِينَ قُتِلُوا

 يُرْزَقُونَ﴾ رَبِّهِمْعِندَ “আর যারা আল্লাহ্‌র রাহে নিহত হয়, তাদেরকে তুমি

কখনো মৃত মনে করো না। বরং তারা তাদের পালনকর্তার নিকট

জীবিত এবং রিযিক্বপ্রাপ্ত” (আলে ইমরান ১৬৯)। উক্ত আয়াতে

বর্ণিত 'আহ্‌ইয়া' (أَحْيَاءٌ) শব্দের অর্থ কি?

প্রশ্ন ৪০: নাম রাখার ক্ষেত্রে আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো দিকে

আরবী 'আবদ' শব্দের সম্বন্ধ যেমনঃ আব্দুন্নবী, আব্দুল হুসাইন

প্রশ্ন ৪১: হিংসা ও বদ নযর প্রতিরোধের জন্য বালা, সূতা ইত্যাদি

হাতে, গলায় বা যানবাহনে ঝুলিয়ে রাখার হুকুম কি?

প্রশ্ন ৪২: মাটি, পাথর বা গাছ-গাছালির মাধ্যমে বরকত কামনা করা

প্রশ্ন ৪৩: কাউকে সন্তুষ্ট করার জন্য আল্লাহ ব্যতীত তার নামে

যবেহ করার হুকুম কি?

প্রশ্ন ৪৪: আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো জন্য মানত করার হুকুম কি?

প্রশ্ন ৪৫: আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো কাছে আশ্রয় চাওয়ার হুকুম

প্রশ্ন ৪৬: (কোনো স্থানে ক্ষতিকারক পোকা-মাকড় ইত্যাদির ভয়

থাকলে) সেখানে অবস্থান গ্রহণের দো‘আ কি?

প্রশ্ন ৪৭: কল্যাণ সাধন, অনিষ্ট দূরীকরণ সহ যেসব বিষয়ে আল্লাহ

ছাড়া অন্য কেউ সহযোগিতা করতে সক্ষম নয়, সেসব বিষয়ে অন্য

কারো কাছে সহযোগিতা চাওয়া যাবে কি?

প্রশ্ন ৪৮: মুনাফেক্বী কত প্রকার?

প্রশ্ন ৪৯: কুফরী কত প্রকার?

প্রশ্ন ৫০: শাফা'আত কত প্রকার?

প্রশ্ন ৫১: রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেহেতু কিয়ামতের

দিন শাফা'আত করবেন, সেহেতু তাঁর কাছে কি শাফা'আত চাওয়া যাবে?

প্রশ্ন ৫২: অসীলা কত প্রকার?

প্রশ্ন ৫৩: ইবাদত কবূল হওয়ার শর্ত কয়টি ও কি কি?

প্রশ্ন ৫৪: কোনো আমল ছাড়াই নিয়্যত বিশুদ্ধ হওয়া কি যথেষ্ট?

প্রশ্ন ৫৫: পুরুষদের জন্য কবর যিয়ারত কত প্রকার?

প্রশ্ন ৫৬: কবর যিয়ারতের সময় কোন্‌ দো‘আ পড়তে হয়?

প্রশ্ন ৫৭: নেককার লোকের কবরের নিকট আল্লাহ্‌র কাছে প্রার্থনা

প্রশ্ন ৫৮: আল্লাহ্‌র কাছে কোনো কিছু চাওয়ার ক্ষেত্রে মৃত

ব্যক্তিকে সুপারিশকারী হিসাবে গ্রহণ করার হুকুম কি?

প্রশ্ন ৫৯: কা'বা ছাড়া অন্য কিছুকে ত্বওয়াফ করা কি বৈধ?

প্রশ্ন ৬০: হাদীসে বর্ণিত তিন মসজিদ ছাড়া ইবাদতের উদ্দেশ্যে অন্য

কোনো স্থানে সফর করার বিধান কি?

প্রশ্ন ৬১: রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কবর যিয়ারত

সংক্রান্ত হাদীসগুলি কি সহীহ?

প্রশ্ন ৬২: নেককার লোকদের পুরাতত্ত্ব ও নিদর্শনাবলী

অনুসন্ধান করা এবং সেগুলির মাধ্যমে বরকত কামনা করা কি ইবাদত

প্রশ্ন ৬৩: কোনো ব্যক্তিকে জান্নাতী বা জাহান্নামী বলে

আখ্যায়িত করা যাবে কি?

প্রশ্ন ৬৪: অন্যায়-অপকর্ম করার কারণে কোনো মুসলিম

ব্যক্তিকে ‘কাফের’ বলা যাবে কি?

প্রশ্ন ৬৫: বান্দার কাজ-কর্ম কি আল্লাহ্‌র সৃষ্টি?

প্রশ্ন ৬৬: মসজিদের ভেতরে মৃত দাফন করা অথবা কবরের উপরে

মসজিদ নির্মাণ করা কি জায়েয?

প্রশ্ন ৬৭: কবরের উপর ভবন নির্মাণ করার বিধান কি?

প্রশ্ন ৬৮: রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে শুরুতেই কি

মসজিদের ভেতরে দাফন করা হয়েছিল?

প্রশ্ন ৬৯: রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি তাঁর কবরে

জীবিত আছেন? মীলাদুন্নবী অনুষ্ঠানে কি তিনি উপস্থিত হন?

প্রশ্ন ৭০: বিদ‘আত কাকে বলে ও কত প্রকার? প্রত্যেক   প্রকারের

হুকুম কি? ইসলামে ‘উত্তম বিদ‘আত’ বলে কিছু আছে

প্রশ্ন ৭১: যদি কেউ প্রশ্ন করে, তাহলে নীচের হাদীসটির অর্থ কি? 'যে

ব্যক্তি উত্তম সুন্নাত চালু করলো, সে উক্ত সুন্নাতের এবং উক্ত

সুন্নাত বাস্তবায়নকারীর নেকী পাবে'।

প্রশ্ন ৭২: ওমর (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু) তারাবীহ্‌র ছালাত সম্পর্কে

বলেছেন, « هَذِهِ الْبِدْعَةُنِعْمَتِ» ‘এটি উত্তম বিদ‘আত’। আর উছমান

(রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু)-এর খেলাফতকালে জুম'আর দ্বিতীয় আযান চালু

হয়। এক্ষণে প্রশ্ন হচ্ছে, তাহলে উক্ত বিষয় দু'টির ব্যাখ্যা কি?

প্রশ্ন ৭৩: মীলাদুন্নবী অনুষ্ঠান উদযাপন করা সুন্নাত নাকি বিদ‘আত?

প্রশ্ন ৭৪: জাদু শেখা এবং তদ্‌নুযায়ী আমল করার বিধান কি?

প্রশ্ন ৭৫: জাদুকরের কাছে কি কোনো উপকার বা কল্যাণ আছে?

প্রশ্ন ৭৬: নিজেদের দেহে আঘাত করা, শক্ত কোনো বস্তু খাওয়া

ইত্যাদি যেসব কর্মকাণ্ড ভেলকিবাজরা দেখিয়ে থাকে, সেগুলি কি জাদু ও

ভেলকিবাজি নাকি বাস্তব ও কারামত?

প্রশ্ন ৭৭: চিকিৎসার জন্য জাদুকরের কাছে যাওয়া জায়েয আছে কি?

প্রশ্ন ৭৮: জ্যোতিষী, গণক, ভবিষ্যদ্বক্তার কাছে যাওয়া কি বৈধ?

প্রশ্ন ৭৯: জাদু লাগার আগে বা পরে এর প্রতিষেধক কি?

প্রশ্ন ৮০: “তোমরা জাদু শিখ, কিন্তু জাদুর প্রতি আমল করো না”-

 উক্ত হাদীসটি কি সহীহ?

প্রশ্ন ৮১: কল্যাণ সাধনে বা অকল্যাণ দূরীকরণে তারকারাজির

কোনো প্রভাব আছে- একথা বিশ্বাস করা কি জায়েয?

প্রশ্ন ৮২: ভবিষ্যতে মানুষের যা ঘটবে, সেক্ষেত্রে কি রাশির কোনো

প্রশ্ন ৮৩: আল্লাহ্‌র বিধান অনুযায়ী সবকিছু পরিচালনা করা কি

আমাদের উপর ওয়াজিব?

প্রশ্ন ৮৪: যে ব্যক্তি আল্লাহ্‌র সাথে বা আল্লাহ্‌র কোনো আয়াতের

সাথে বা তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে অথবা

ইসলামের সাথে ঠাট্টা করে, তার হুকুম কি?

প্রশ্ন ৮৫: ‘লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ’-এর শর্তসমূহ কি কি?

প্রশ্ন ৮৬: ইসলাম বিনষ্টকারী বিষয়সমূহ কয়টি এবং কি কি?

প্রশ্ন ৮৭: সর্বপ্রথম এবং সর্বশেষ রাসূল কে? নবীগণের পরে

সর্বোত্তম মানুষ কে?

প্রশ্ন ৮৮: ছাহাবায়ে কেরাম (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুম)-এর প্রতি আমাদের

কর্তব্য কি?  তাঁদের কাউকে গালি দেওয়ার হুকুম কি?

প্রশ্ন ৮৯: যে ব্যক্তি কোনো সাহাবীকে বা রাসূল

সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কোনো স্ত্রীকে গালি দেয়, তার

প্রশ্ন ৯০: সূরা নিসার ৬৪ নং আয়াত কি প্রমাণ করে যে, রাসূল

সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মৃত্যুর পরেও তাঁর কাছ থেকে

আল্লাহ্‌র নিকট ক্ষমা চাওয়ার আবেদন করা যাবে?

[1] অর্থাৎ কোনো কিছুকে তার সীমা অতিক্রম করে স্রষ্টার স্থানে পৌঁছে দেওয়া। সেটা কয়েকভাবে হতে পারে, সে

বস্তুর ইবাদতের মাধ্যমে, অথবা সেটার অনুসরণের ক্ষেত্রে আল্লাহর অনুসরণের কাছে নিয়ে যাওয়া, অথবা সেটার আনুগত্য

করার ক্ষেত্রে এমনভাবে আনুগত্য করা যে, সেটা আল্লাহর আনুগত্যের পর্যায়ে চলে যায়।

তবে সে বস্তুটি তাগুত হওয়ার জন্য শর্ত হচ্ছে সে ঐ ইবাদতে, কিংবা আনুগত্যে অথবা অনুসরণে রাযী-খুশী থাকা।

[2] অন্য হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চোগলখোর ও পেশাব থেকে যে বেঁচে থাকত

না তার সম্পর্কে বলেন, তারা দু’জন আযাব প্রাপ্ত হচ্ছে, (অর্থাৎ কবরে) তবে তারা বড় কোনো কিছুতে আযাব

পাচ্ছে না। তাদের একজন পেশাব থেকে বেঁচে থাকতো না, অপরজন চোগলখুরী করত। [বুখারী]

([3])   ‘মুদ্দ’ হল এক ‘সা‘-এর চার ভাগের এক ভাগ । অর্থাৎ চার মুদ্দে হয় এক ‘ছা’।  গ্রামের হিসাবে প্রায় ৬২৫

তবে সম্ভবত, বেশি বিশুদ্ধ মত হচ্ছে, এক মুদ বর্তমান ওজনে ৫১০ গ্রাম পরিমান। -সম্পাদক।


সংকলন: একদল বিজ্ঞ আলেম
অনুবাদক: আব্দুল আলীম ইবনে কাওসার
সম্পাদনা: ড. আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া
সূত্র: ইসলাম প্রচার ব্যুরো, রাবওয়াহ, রিয়াদ, সৌদিআরব

92
প্রশ্নোত্তরে ইসলামী জ্ঞান

(১ম পর্ব)

বিষয়: ঈমান ও আক্বীদা

১. প্রশ্নঃ আমাদের সৃষ্টিকর্তার নাম কি?

২. প্রশ্নঃ আল্লাহর কতগুলো নাম রয়েছে?

উত্তরঃ আল্লাহ তা’আলার নাম অসংখ্য-অগণিত।

৩. প্রশ্নঃ আমাদের সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ্‌ কোথায় আছেন?

উত্তরঃ সপ্তাকাশের উপর আরশে আযীমে। (সূরা ত্বহাঃ ৫)

৪. প্রশ্নঃ আল্লাহর আরশ কোথায় আছে?

উত্তরঃ সাত আসমানের উপর।

৫. প্রশ্নঃ আল্লাহ কি সর্বস্থানে বিরাজমান?

উত্তরঃ না। আল্লাহ্‌ সবজায়গায় বিরাজমান নন। তিনি সপ্তকাশের উপর সুমহান আরশে সমুন্নত। (সূরা ত্বাহাঃ ৫)

৬. প্রশ্নঃ আল্লাহর কাজ কি?

উত্তরঃ সৃষ্টি করা, রিযিক প্রদান, বৃষ্টি বর্ষণ, লালন-পালন করা, সাহায্য করা, জীবন-মৃত্যু প্রদান, পরিচালনা

করা, সবকিছুর উপর কর্তৃত্ব করা, তত্বাবধান করা ইত্যাদি।

৭. প্রশ্নঃ তাওহীদ কাকে বলে?

উত্তরঃ তাওহীদ অর্থ একত্ববাদ। পরিভাষায়ঃ ইবাদতের ক্ষেত্রে আল্লাহকে একক নির্দিষ্ট করার নাম তাওহীদ।

৮. প্রশ্নঃ তাওহীদ কত প্রকার?

উত্তরঃ তাওহীদ ৩ প্রকার।

৯. প্রশ্নঃ তিন প্রকার তাওহীদ কি কি?

উত্তরঃ (১) তাওহীদে রুবূবিয়্যাহ্‌ বা কর্ম ও পরিচালনার একত্ববাদ (২) তাওহীদে উলূহিয়্যাহ্‌ বা দাসত্বের

একত্ববাদ (৩) তাওহীদে আসমা ওয়া ছিফাত বা নাম ও গুণাবলীর একত্ববাদ।

১০. প্রশ্নঃ তাওহীদে রুবূবিয়্যাহ্‌ কাকে বলে?

উত্তরঃ আল্লাহ্‌ তাঁর কর্ম সমূহে একক- তাঁর কোন শরীক নেই, একথা মেনে নেয়ার নাম তাওহীদে রুবূবিয়্যাহ্‌

১১. প্রশ্নঃ তাওহীদে উলূহিয়্যাহ্‌ কাকে বলে?

উত্তরঃ বান্দার ইবাদত-বন্দেগী ও দাসত্ব এককভাবে আল্লাহর জন্যে নির্দিষ্ট করার নাম তাওহীদে উলূহিয়্যাহ্‌।

১২. প্রশ্নঃ তাওহীদে আসমা ওয়াস্‌ সিফাত কাকে বলে?

উত্তরঃ কুরআন ও হাদীছে আল্লাহর অনেক সুন্দর সুন্দর নাম ও গুণাবলী উল্লেখ রয়েছে, যা তাঁর শ্রেষ্ঠত্ব ও

পরিপূর্ণতার প্রমাণ বহন করে, সেগুলোকে কোন প্রকার ধরণ-গঠন নির্ধারণ না করে বা অস্বীকার না করে

সেভাবেই মেনে নেয়ার নাম তাওহীদে আসমা ওয়াস্‌ সিফাত।

১৩. প্রশ্নঃ তাওহীদে রুবূবিয়্যাহ্‌র উদাহরণ কি?

উত্তরঃ সৃষ্টি করা, রিযিক দেয়া, বৃষ্টি দেয়া, লালন-পালন করা, সবকিছুর উপর কর্তৃত্ব করা, তত্বাবধান করা

১৪. প্রশ্নঃ তাওহীদে উলূহিয়্যাহ্‌র উদাহরণ কি?

উত্তরঃ ঈমান, ভয়-ভীতি, আশা-আকাঙ্খা, ভালবাসা, দু’আ-প্রার্থনা, সাহায্য কামনা, উদ্ধার কামনা, রুকূ-সিজদা

১৫. প্রশ্নঃ তাওহীদে আসমা ওয়া ছিফাতের উদাহরণ কি?

উত্তরঃ الرحمن আর্‌ রাহমান, السميع আস্‌ সামী’ (শ্রবণকারী) البصير আল বাছীর (মহাদ্রষ্টা), العلو আল ঊলু (সুউচ্চ)

১৬. প্রশ্নঃ আল্লাহর ৯৯টি নাম মুখস- করার ফযীলত কি?

উত্তরঃ মুখস- করে আমল করলে বিনিময় জান্নাত।

১৭. প্রশ্নঃ ‘মুমিনের কলব আল্লাহর আরশ’ এটা কার কথা?

উত্তরঃ এটা মানুষের বানানো কথা। আল্লাহ বা রাসূলের কথা নয়। (জাল হাদীছ)

১৮. প্রশ্নঃ আল্লাহ কি নিরাকার?

উত্তরঃ না। কেননা তাঁর অসি-ত্ব ও সত্তা আছে। যার সত্তা ও অসি-ত্ব থাকে তাকে নিরাকার বলা যায় না।

১৯. প্রশ্নঃ “আল্লাহ সর্বস’ানে বিরাজমান নন, তিনি সপ্তকাশের উপর আরশে থাকেন।” একটি যুক্তি দিয়ে কথাটি

উত্তরঃ “আল্লাহ্‌ কোথায় আছেন?” এ প্রশ্নটি ছোট্ট একটি শিশুকে জিজ্ঞেস করলে, তার নিষ্পাপ মুখ থেকে

জবাব আসবে ‘তিনি উপরে বা আকাশে আছেন’- সে কখনোই বলবে না ‘আল্লাহ্‌ সবজায়গায় আছেন’।

২০. প্রশ্নঃ আল্লাহ যদি নিরাকার না হন, তবে তাঁকে কি দেখা সম্ভব?

উত্তরঃ হ্যাঁ, তাঁকে দেখা সম্ভব। তবে এ দুনিয়ায় চর্ম চোখে সম্ভব নয়। আখেরাতে জান্নাতীগণ আল্লাহকে

দেখবেন। (সূরা ক্বিয়ামাহ্‌ঃ ২২-২৩, বুখারী, মুসলিম, নাসাঈ)

২১. প্রশ্নঃ ঈমান কাকে বলে?

উত্তরঃ ঈমান মানে বিশ্বাস। পরিভাষায়ঃ অন-রে বিশ্বাস, মুখে স্বীকার ও কর্মে বাস-বায়নকে ঈমান বলে।

২২. প্রশ্নঃ ঈমান কি কমে ও বাড়ে?

উত্তরঃ হ্যাঁ, ঈমান কমে ও বাড়ে।

২৩. প্রশ্নঃ কিভাবে ঈমান কমে বাড়ে?

উত্তরঃ সৎকাজের মাধ্যমে ঈমান বাড়ে, আর অসৎ কাজ করলে ঈমান কমে।

২৪. প্রশ্নঃ ঈমানের শাখা কতটি?

উত্তরঃ সত্তরের অধিক।

২৫. প্রশ্নঃ ঈমানের সর্বোচ্চ স-র কি?

উত্তরঃ কালেমা ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু’ পাঠ করা।

২৬. প্রশ্নঃ ঈমানের সর্বনিম্ন শাখা কি?

উত্তরঃ রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক বস্তু অপসারণ করা।

২৭. প্রশ্নঃ ঈমানের স্তম্ভ কয়টি? কি কি?

উত্তরঃ ঈমানের স্তম্ভ ৬টি। সেগুলো হচ্ছেঃ (১) আল্লাহ (২) ফেরেশতাকুল (৩) আসমানী কিতাব (৪) নবী-রাসূল

(৫) শেষ দিবস ও (৬) তক্বদীরের ভাল-মন্দের প্রতি ঈমান

২৮. প্রশ্নঃ ইসলাম কাকে বলে?

উত্তরঃ ইসলাম অর্থ, আত্মসমর্পন। পরিভাষায়ঃ তাওহীদ ও আনুগত্যের মাধ্যমে আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পন

করা এবং শির্ক ও মুশরিকদের সাথে সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করা।

২৯. প্রশ্নঃ ইসলামের স-ম্ভ কয়টি ও কি কি?

উত্তরঃ ইসলামের স-ম্ভ ৫টি। সেগুলো হচ্ছেঃ (১) কালেমায়ে শাহাদাত উচ্চারণ করা, (২) নামায প্রতিষ্ঠা করা, (৩)

যাকাত প্রদান করা (৪) রামাযান মাসে রোযা রাখা (৫) সামর্থ থাকলে আল্লাহর ঘরের হজ্জ আদায় করা।

৩০. প্রশ্নঃ আল্লাহর ফেরেশতাগণ কিসের তৈরী?

উত্তরঃ তাঁরা নূরের তৈরী?

৩১. প্রশ্নঃ ফেরেশতাদের সংখ্যা কত?

উত্তরঃ তাঁদের সংখ্যা কত তা আল্লাহ ছাড়া কেউ জানে না।

৩২. প্রশ্নঃ প্রধান চার ফেরেশতার নাম কি?

উত্তরঃ জিবরাঈল, ইসরাফীল, মীকাঈল ও মালাকুল মওত (আঃ)।

৩৩. প্রশ্নঃ ওহী নাযিল করার দায়িত্ব কোন ফেরেশতার ছিল?

উত্তরঃ জিবরাঈল (আঃ) এর।

৩৪. প্রশ্নঃ কোন ফেরেশতাকে সকল ফেরেশতার সরদার বলা হয়?

উত্তরঃ জিবরাঈল (আঃ) কে।

৩৫. প্রশ্নঃ ইসরাফীল (আঃ) এর দায়িত্ব কি?

উত্তরঃ আল্লাহর নির্দেশ ক্রমে শিংগায় ফুৎকার দেয়া।

৩৬. প্রশ্নঃ মীকাঈল ফেরেশতার কাজ কি?

উত্তরঃ তিনি বৃষ্টি বর্ষণ, উদ্ভিদ উৎপাদন প্রভৃতি কাজে নিয়োজিত।

৩৭. প্রশ্নঃ প্রাণীকুলের জান কবজের কাজে নিয়োজিত ফেরেশতার নাম কি?

উত্তরঃ মালাকুল মওত। (আজরাঈল নাম বিশুদ্ধ নয়)

৩৮. প্রশ্নঃ কোন ফেরেশতা কি মানুষের কল্যাণ-অকল্যাণ করতে পারে?

উত্তরঃ না, আল্লাহ্‌ ছাড়া কেউ কারো কোন কল্যাণ-অকল্যাণের মালিক নয়- ফেরেশতা, জিন, মানুষ- নবী, ওলী

৩৯. প্রশ্নঃ প্রসিদ্ধ আসমানী কিতাব কতখানা?

৪০. প্রশ্নঃ কোন্‌ কিতাব কোন্‌ নবীর উপর নাযিল হয়েছে?

উত্তরঃ কুরআন- মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর উপর, তাওরাত- মূসা (আঃ)এর উপর, ইঞ্জিল-

ঈসা (আঃ) এর উপর এবং যাবূর- দাউদ (আঃ)এর উপর।

৪১. প্রশ্নঃ সর্বশেষ আসমানী কিতাবের নাম কি?

উত্তরঃ কুরআনুল কারীম।

৪২. প্রশ্নঃ কালেমা “লাইলাহা ইল্লাল্লাহু’ এর অর্থ কি?

উত্তরঃ আল্লাহ্‌ ছাড়া সত্য কোন মা’বূদ নেই।

৪৩. প্রশ্নঃ আল্লাহ্‌ আমাদের কেন সৃষ্টি করেছেন?

উত্তরঃ শুধু তাঁর ইবাদত করার জন্য। (সূরা যারিয়াত- ৫৬)

৪৪. প্রশ্নঃ মানুষ মৃত্যু বরণ করলে, কবরে তাকে তিনটি প্রশ্ন করা হবে। সেগুলো কি কি?

উত্তরঃ প্রশ্ন করা হবে- তোমার রব কে? তোমার নবী কে? তোমার দ্বীন কি?

৪৫. প্রশ্নঃ ইবাদত কাকে বলে?

উত্তরঃ আল্লাহ পছন্দ করেন এমন প্রত্যেক গোপন ও প্রকাশ্য কথা ও কাজকে ইবাদত বলা হয়।

৪৬. প্রশ্নঃ ইবাদত কবূল হওয়ার শর্ত কয়টি ও কি কি?

উত্তরঃ ইবাদত কবূল হওয়ার শর্ত দু’টিঃ (১) ইবাদতটি একনিষ্টভাবে আল্লাহর জন্য করা (২) নবী (সাল্লাল্লাহু

আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর সুন্নাত মোতাবেক করা।

৪৭. প্রশ্নঃ সঠিক ইবাদতের মূল ভিত্তি কয়টি ও কি কি?

উত্তরঃ যে কোন ইবাদত সঠিক হওয়ার জন্য তিনটি মূল ভিত্তি রয়েছে। (১) আল্লাহর প্রতি ভালবাসা, (২) তাঁকে

ভয় করা ও (৩) তাঁর কাছে আশা-আকাংখা করা

৪৮. প্রশ্নঃ শির্ক কাকে বলে?

উত্তরঃ ইবাদতের কোন একটি বিষয় আল্লাহ ছাড়া অন্যের উদ্দেশ্যে সম্পাদন করা।

৪৯. প্রশ্নঃ শির্ক কত প্রকার ও কি কি?

উত্তরঃ শির্ক দু’প্রকারঃ বড় শির্ক ও ছোট শির্ক।

৫০. প্রশ্নঃ বড় শির্ক কাকে বলে?

উত্তরঃ আল্লাহর ইবাদতে অন্য কাউকে অংশী করাকে বড় শির্ক বলে।

৫১. প্রশ্নঃ বড় শির্কের উদাহরণ কি?

উত্তরঃ এর অনেক উদাহরণ রয়েছেঃ যেমনঃ আল্লাহ ছাড়া কাউকে সিজদা করা, আল্লাহ ছাড়া অন্যকে ডাকা, সাহায্য

প্রার্থনা, সন-ান কামনা করা, বিপদাপদে উদ্ধার কামনা করা, গাইরুল্লাহর উদ্দশ্যে কুরবানী করা, কবর-মাজারে

নযর-মান্নত করা ইত্যাদি।

৫২. প্রশ্নঃ বড় শির্কের পরিণাম কি?

উত্তরঃ ইসলাম থেকে বের হয়ে যাবে এবং তওবা না করে মৃত্যু বরণ করলে, চিরকাল জাহান্নামের অধিবাসী হবে। (সূরা

৫৩. প্রশ্নঃ কোন্‌ পাপ নিয়ে তওবা ছাড়া মৃত্যু বরণ করলে চিরকাল জাহান্নামে থাকতে হবে?

৫৪. প্রশ্নঃ নবী-ওলীকে উসীলা করে দু’আ করার বিধান কি?

উত্তরঃ নবী, ওলী, ফেরেশতা বা যে কোন মানুষকে উসীলা করে দু’আ করা বড় শির্ক।

৫৫. প্রশ্নঃ মক্কার কাফেরগণ কি মোটেও আল্লাহকে বিশ্বাস করত না?

উত্তরঃ তারা তাওহীদে রুবুবিয়্যার প্রতি বিশ্বাস রাখত।

৫৬. প্রশ্নঃ মক্কার কাফেরগণ তাওহীদে রুবুবিয়্যার প্রতি বিশ্বাস রাখত, একথার প্রমাণ কি?

উত্তরঃ আল্লাহ্‌ বলেন, “তাদের যদি জিজ্ঞেস কর যে, কে আসমান যমীন সৃষ্টি করেছে, তবে তারা জবাবে অবশ্যই

বলবে, আল্লাহ্‌।” (সূরা লোকমান- ৩১)

৫৭. প্রশ্নঃ মক্কার কাফেরগণ কি কোনই ইবাদত করত না?

উত্তরঃ তারা বিভিন্নভাবে আল্লাহর ইবাদত করত। যেমন, তারা কা’বা ঘরের তওয়াফ করত। হজ্জ পালন করত

৫৮. প্রশ্নঃ মক্কার কাফেরগণকে মুশরিক বলার কারণ কি?

উত্তরঃ কেননা তারা মুর্তি পুজা করত।

৫৯. প্রশ্নঃ তাদের মুর্তি পুজার ধরণ কিরূপ ছিল?

উত্তরঃ তারা মুর্তিগুলোকে আল্লাহর কাছে পৌঁছার মাধ্যম বা উসীলা মনে করত।

৬০. প্রশ্নঃ বিপদ-মুসীবতে পড়লে কাফেরদের অবস’া কেমন হত?

উত্তরঃ বিপদ-মুসীবতে পড়লে তারা শির্ক করত না। তখন তারা একনিষ্টভাবে আল্লাহকে ডাকত।

৬১. প্রশ্নঃ বর্তমান যুগে অনেক লোক বিপদ-মুসীবতে পড়লে কী করে থাকে?

উত্তরঃ এ অবস’ায় অনেক মানুষ শির্কে লিপ্ত হয়। মাজারে দরবারে ধর্ণা দেয়। পীরের দরগায় নযর-মান্নত করে

থাকে। তাবীজ-কবচ ব্যবহার কও ইেত্যাদি।

৬২. প্রশ্নঃ নবী-রাসূলগণের দা’ওয়াতের মূল বক্তব্য কী ছিল?

উত্তরঃ “হে আমার সমপ্রদায়ের লোকেরা, তোমরা আল্লাহ্‌র ইবাদত কর। তিনি ব্যতীত তোমাদের সত্য কোন

মা’বূদ নেই।” (সূরা আ’রাফঃ ৫৯)

৬৩. প্রশ্নঃ ছোট শির্ক কাকে বলে?

উত্তরঃ যে সমস- কাজকে শরীয়তে শির্ক নামে আখ্যা দেয়া হয়েছে, কিন’ উহা বড় শির্কের পর্যায়ভুক্ত নয়।

৬৪. প্রশ্নঃ ছোট শির্কের উদাহরণ কি?

উত্তরঃ মানুষকে দেখানো কিংবা প্রশংসা কুড়ানো কিংবা দুনিয়া অর্জনের উদ্দেশ্যে ইবাদত করা, তাবিজ-কবচ

ব্যবহার করা, আল্লাহ ছাড়া অন্যের নামে শপথ করা, গণক-জ্যোতিষীর কাছে যাওয়া ইত্যাদি।

৬৫. প্রশ্নঃ তাবিজ-কবচ ব্যবহার সম্পর্কে ইসলামের হুকুম কি?

উত্তরঃ এ কাজ ছোট শির্কের অন-র্ভূক্ত। তবে এটাকেই ত্রাণকর্তা ও আরোগ্য দাতা বিশ্বাস করলে বড়

৬৬. প্রশ্নঃ ছোট শির্কে লিপ্ত হলে তার পরিণতি কি?

উত্তরঃ সে ইসলাম থেকে বের হবে না। তবে তার এই কাজ কাবীরা গুনাহের চাইতে বড় গুনাহ।

৬৭. প্রশ্নঃ পিতা-মাতা, সন-ান, মসজিদ, কা’বা প্রভৃতির নামে শপথ করার হুকুম কি?

উত্তরঃ এরূপ শপথ বা কসম করা ছোট শির্কের অন-র্ভূক্ত।

৬৮. প্রশ্নঃ আব্দুর রাসূল (রাসূলের বান্দা), আবদুন্‌ নবী, গোলাম মোস-ফা, আব্দুল মুত্তালেব (মুত্তালেবের

বান্দা) প্রভৃতি নাম রাখা কি?

উত্তরঃ এরূপ নাম রাখা ছোট শির্কের অন-র্ভূক্ত।

৬৯. প্রশ্নঃ ইবাদতে ‘রিয়া’ বলতে কী বুঝায়?

উত্তরঃ মানুষকে দেখানো বা তাদের প্রশংসা ও ভালবাসা পাওয়ার উদ্দেশ্যে কোন ইবাদত সম্পাদন করা।

৭০. প্রশ্নঃ গণক বা জ্যোতীষীদের কাছে যাওয়ার ক্ষতি কি?

উত্তরঃ তাদের কাছে গিয়ে কোন কিছু জিজ্ঞেস করলে ৪০দিনের নামায কবূল হবে না। (মুসলিম)

৭১. প্রশ্নঃ গণক বা জ্যোতীষীদের কথা বিশ্বাস করার পরিণাম কি?

উত্তরঃ তাদের কথা বিশ্বাস করলে নবী (সাঃ)এর নিকট প্রেরীত কুরআনের সাথে কুফরী করা হবে। (মুসলিম)

৭২. প্রশ্নঃ কোন মানুষ ভুলবশতঃ কুফরী কাজ করে ফেললে বা কথা বলে ফেললে তার কি হবে?

উত্তরঃ তার কোন গুনাহ হবে না। তবে তার ভুল শুধরে দিতে হবে।

৭৩. প্রশ্নঃ অসুখ-বিসুখ হলে ঝাড়-ফুঁক করার হুকুম কি?

উত্তরঃ কুরআনের আয়াত ও হাদীছের দু’আ পড়ে ঝাড়-ফুঁক করা জায়েয।

৭৪. প্রশ্নঃ কুরআনের আয়াত লিখে তাবিজ ব্যবহারের হুকুম কি?

উত্তরঃ নাজায়েয। কেননা এটা জায়েয হওয়ার পক্ষে নবী (সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়া সাল্লাম) বা সাহাবা-তাবেঈনের

কারো থেকে কোন দলীল নেই। তাছাড়া কুরআনকে এভাবে ব্যবহার করলে, কুরআনের অবমাননা হয়।

৭৫. প্রশ্নঃ বিদআত কাকে বলে?

উত্তরঃ ছোয়াবের নিয়ত করে যে ইবাদত করা হয়; অথচ তার পক্ষে শরীয়তে দলীল পাওয়া যায় না, তাকেই বিদআত

৭৬. প্রশ্নঃ বর্তমানে প্রচলিত কিছু বিদআতের উদাহরণ কি?

উত্তরঃ নামাযে মুখে নিয়ত পাঠ, মীলাদুন্নবী উদযাপন, দলবদ্ধভাবে যিকির, কুলখানি, চল্লিশা, খতমে জালালী, খতমে

ইউনুস, ফাতেহাখানি, জন্মবার্ষীকি, মৃত্যুবার্ষীকি, শবে বরাত উদযাপন ইত্যাদি।

৭৭. প্রশ্নঃ বিদআত দু’প্রকারঃ ভাল বিদআত ও মন্দ বিদআত। এ সম্পর্কে আপনার মত কি?

উত্তরঃ এরূপ ভাগ করার কোন দলীল নেই। কেননা নবী (সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, “প্রত্যেক

বিদআতই ভ্রষ্টতা।” (মুসলিম)

৭৮. প্রশ্নঃ সাইকেল, বাস, ট্রেন, প্লেনে চড়া, বিদ্যুৎ, মাইক ব্যবহার ইত্যাদি কি বিদআত নয়?

উত্তরঃ না, কেননা একাজগুলো ইবাদত মনে করে ছোয়াবের উদ্দেশ্যে করা হয় না। এগুলো দুনিয়াবী কাজ।

৭৯. প্রশ্নঃ জিন জাতি কিসের তৈরী ?

উত্তরঃ আগুনের তৈরী।

৮০. প্রশ্নঃ জিনদেরকে আল্লাহ্‌ কেন তৈরী করেছেন?

উত্তরঃ তাঁর ইবাদত করার জন্য। (সূরা যারিয়াতঃ ৫৬)

৮১. প্রশ্নঃ জিনেরা কি মানুষের ভাল-মন্দ করতে পারে?

উত্তরঃ না, আল্লাহ্‌ ছাড়া কেউ কারো ভাল-মন্দ করতে পারে না।

৮২. প্রশ্নঃ জিনদের নিকট থেকে সাহায্য নেয়া জায়েয আছে কি?

উত্তরঃ না, তাদের থেকে কোন সাহায্য নেয়া জায়েয নেই।

৮৩. প্রশ্নঃ জিন তাবে করার হুকুম কি?

উত্তরঃ জিন তাবে করা জায়েয নেই।

৮৪. প্রশ্নঃ সর্বপ্রথম আল্লাহ্‌ তা’আলা নবী (সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়া সাল্লাম)এর নূর সৃষ্টি করেন, একথাটি কি

উত্তরঃ না, কেননা এ সম্পর্কে সহীহ্‌ কোন হাদীছ নেই। জাল (বানোয়াট) হাদীছের ভিত্তিতে অনেকে একথাটি বলে

৮৫. প্রশ্নঃ নবী (সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়া সাল্লাম) কি নূর থেকে সৃষ্টি?

উত্তরঃ না, আদম সন-ান যে উপাদানে সৃষ্টি, তিনিও সেই উপাদানে সৃষ্টি। (সূরা কাহাফঃ ১১০)

৮৬. প্রশ্নঃ নবী (সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়া সাল্লাম) কি গায়েব জানতেন?

উত্তরঃ না, তিনি কোন গায়েব জানতেন না। (সূরা আনআমঃ ৫০)

৮৭. প্রশ্নঃ নবী (সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়া সাল্লাম) কি জীবিত?

উত্তরঃ না, তিনি মৃত্যু বরণ করেছেন। (সূরা যুমারঃ৩০)

৮৮ প্রশ্নঃ নবী (সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়া সাল্লাম) কি হাযের-নাযের (অর্থাৎ সবখানে তিনি উপসি’ত হতে পারেন,

এরূপ বিশ্বাস করা কি)?

উত্তরঃ না, তিনি হাযের-নাযের নন। এরূপ বিশ্বাস করা কুফরী।

৮৯. প্রশ্নঃ নবী (সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়া সাল্লাম) কি কারো উপকার-অপকারের ক্ষমতা রাখেন?

উত্তরঃ না। (সূরা জিনঃ ২১)

৯০. প্রশ্নঃ নবী (সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়া সাল্লাম) এর জন্ম দিবস উপলক্ষে ঈদে মীলাদুন্নবী উদযাপন করার হুকুম

উত্তরঃ নাজায়েয, বিদআত।

৯১. প্রশ্নঃ কোন মুসলমানকে কাফের বলার পরিণতি কি?

উত্তরঃ ঐ ব্যক্তি কাফের না হলে, কথাটি যে বলেছে তার উপর পতিত হবে।

৯২. প্রশ্নঃ ফাসেক ব্যক্তির ইমামতিতে নামায পড়া জায়েয কি?

উত্তরঃ ফাসেককে ইমাম নিযুক্ত করা জায়েয নয়; তবে সে ইমাম হয়ে গেলে তার পিছনে নামায পড়া জায়েয।

৯৩. প্রশ্নঃ মুসলামনদের সাথে চুক্তিবদ্ধ কোন কাফেরকে হত্যা করার হুকুম কি?

উত্তরঃ হারাম। এরকম কাফেরকে যে ব্যক্তি হত্যা করবে, সে জান্নাতের সুঘ্রাণ পাবে না।

৯৪. প্রশ্নঃ হিন্দু, ইহুদী, খৃষ্টান প্রভৃতি কাফেরকে কেউ যদি কাফের না বলে, তাতে কোন ক্ষতি আছে কি?

উত্তরঃ তাদেরকে যে ব্যক্তি কাফের বিশ্বাস করবে না বা তাদেরকে কাফের বলতে দ্বিধা করবে, সে কাফের হয়ে

৯৫. প্রশ্নঃ আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত কারা?

উত্তরঃ যারা আকীদা ও আমলের ক্ষেত্রে কুরআন ও সুন্নাতকে আঁকড়ে ধরে থাকে এবং তার উপর ঐক্যবদ্ধ থাকে।

আর সাহাবায়ে কেরাম তথা সালাফে সালেহীনের রীতি-নীতিকে অনুসরণ করে।

৯৬. প্রশ্নঃ ইসলাম বা তার কোন বিষয় নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রুপ করলে, পরিণতি কি?

উত্তরঃ যে এরূপ করবে সে ইসলাম থেকে বের হয়ে যাবে।

৯৭. প্রশ্নঃ বৈধ অসীলা কত প্রকার ও কি কি?

উত্তরঃ তিন প্রকারঃ (১) আল্লাহর নাম ও গুণাবলীর অসীলা (২) নেক আমলের অসীলা (৩) সৎ ব্যক্তির দু’আর

৯৮. প্রশ্নঃ অবৈধ অসীলার উদাহরণ কি?

উত্তরঃ যেমনঃ নবী-রাসূল, ফেরেশতা, ওলী-আউলিয়া ইত্যাদির অসীলা করা। মৃত ব্যক্তির কাছে দু’আ চাওয়াও

নিষিদ্ধ অসীলার অন-র্ভূক্ত।

৯৯. প্রশ্নঃ কবরে বা মাজারে বা কোন পীরের উদ্দেশ্যে মানত করার হুকুম কি?

(২য় পর্ব)

বিষয়: পবিত্র কুরআন

১০০)প্রশ্নঃ পবিত্র কুরআনুল কারীমে কতটি সূরা আছে?

১০১) প্রশ্নঃ পবিত্র কুরআনের প্রথম সূরার নাম কি?

১০২) প্রশ্নঃ পবিত্র কুরআনের সবচেয়ে বড় সূরার নাম কি?

১০৩) প্রশ্নঃ পবিত্র কুরআনের সবচেয়ে ছোট সূরার নাম কি?

উত্তরঃ সূরা কাওছার।

১০৪) প্রশ্নঃ পবিত্র কুরআনের মধ্যে সবচেয়ে বড় আয়াত কোনটি কোন সূরায়?

উত্তরঃ সূরা বাক্বারার ২৮২ নং আয়াত।

১০৫) প্রশ্নঃ পবিত্র কুরআনের মধ্যে সবচেয়ে ফযীলতপূর্ণ আয়াত কোনটি?

উত্তরঃ আয়াতুল কুরসী। (সূরা বাক্বারা ২৫৫ নং আয়াত।

১০৬) প্রশ্নঃ ফরয নামাযান্তে কোন আয়াতটি পাঠ করলে, মৃত্যু ছাড়া জান্নাতে যেতে কোন বাধা থাকে না?

উত্তরঃ আয়াতুল কুরসী।

১০৭) প্রশ্নঃ পবিত্র কুরআনের কোন্‌ সূরাটি পাঠ করলে কবরের আযাব থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে?

উত্তরঃ সূরা মুলক। (৬৭নং সূরা)

১০৮) প্রশ্নঃ পবিত্র কুরআনের কোন সূরাটি কুরআনের এক তৃতীয়াংশের সমান?

উত্তরঃ সূরা ইখলাছ। (112 নং সূরা)

১০৯) প্রশ্নঃ পবিত্র কুরআনের কোন সূরার প্রতি ভালবাসা মানুষকে জান্নাতে নিয়ে যাবে?

১১০) প্রশ্নঃ কোন সূরাটি পবিত্র কুরআনের চতুর্থাংশের সমপরিমাণ?

উত্তরঃ সূরা কাফেরূন। (109 নং সূরা)

১২২. প্রশ্নঃ পবিত্র কুরআনের কোন সূরাটি জুমআর দিন বিশেষভাবে পাঠ করা মুস্তাহাব?

উত্তরঃ সূরা কাহাফ (18 নং সূরা))

১২৩ প্রশ্নঃ পবিত্র কুরআনের কোন সূরার প্রথমাংশ তেলাওয়াতকারীকে দাজ্জালের ফেতনা থেকে রক্ষা করবে?

উত্তরঃ সূরা কাহাফের প্রথম দশটি আয়াত। (18 নং সূরা))

১২৪) প্রশ্নঃ পবিত্র কুরআনের কোন দু’টি সূরা জুমআর দিন ফজরের নামাযে তেলাওয়াত করা সুন্নাত?

উত্তরঃ সূরা সাজদা ও দাহার।

১২৫ প্রশ্নঃ পবিত্র কুরআনের কোন দু’টি সূরা জুমআর নামাযে তেলাওয়াত করা সুন্নাত?

উত্তরঃ সূরা আ’লা ও গাশিয়া।

১২৬) প্রশ্নঃ পবিত্র কুরআন কত বছরে নাযিল হয়?

১২৭) প্রশ্নঃ ‘মুহাম্মাদ’ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এরনাম পবিত্র কুরআনে কত স্থানে উল্লেখ হয়েছে?

উত্তরঃ চার স্থানে। (১) সূরা আল ইমরান আয়াত- ১৪৪। (২) সূরা আহযাব আয়াত নং ৪০। (৩) সূরা মুহাম্মাদ আয়াত

নং ২। (৪) সূরা ফাতাহ্‌ আয়াত নং ২৯।

১২৮) প্রশ্নঃ পবিত্র কুরআনের সর্বপ্রথম কোন আয়াত নাযিল হয়?

উত্তরঃ সূরা আলাকের প্রথম পাঁচটি আয়াত। ইক্বরা বিসমি রাব্বিকাল্লাযী…..

১২৯) প্রশ্নঃ পবিত্র কুরআনের কোন আয়াতটি সর্বশেষ নাযিল হয়?

উত্তরঃ আল্লাহ্‌ বলেন, (وَاتَّقُوا يَوْمًا تُرْجَعُونَ فِيهِ إِلَى اللَّهِ ثُمَّ تُوَفَّى كُلُّ نَفْسٍ مَا كَسَبَتْ وَهُمْ لَا يُظْلَمُونَ) সূরা বাক্বারার ২৮১ নং

আয়াত। (ইবনু আবী হাতেম সাঈদ বিন জুবাইর (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, এই আয়াত নাযিল হওয়ার পর নবী

(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নয় দিন জীবিত ছিলেন।- আল ইতক্বান ফি উলূমিল কুরআন)

১৩০) প্রশ্নঃ পবিত্র কুরআনের সর্বপ্রথম কোন সূরাটি পূর্ণাঙ্গরূপে নাযিল হয়?

১৩১) প্রশ্নঃ পবিত্র কুরআন প্রথম যুগে কিভাবে সংরক্ষিত ছিল?

উত্তরঃ ছাহাবায়ে কেরামের স্মৃতিতে, লিখিত অবস্থায় চামড়ায়, হাড়ে, পাতায় এবং পাথরে।

১৩) প্রশ্নঃ সর্বপ্রথম কে কুরআন একত্রিত করেন?

উত্তরঃ আবু বকর (রাঃ)।

১৩৩) প্রশ্নঃ কোন সাহাবীকে কুরআন একত্রিত করার দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল?

উত্তরঃ যায়েদ বিন ছাবেত (রাঃ)কে।

১৩৪) প্রশ্নঃ কার পরামর্শে এই কুরআন একত্রিত করণের কাজ শুরু হয়?

উত্তরঃ ওমর বিন খাত্তাব (রাঃ)

১৩৫) প্রশ্নঃ রাসূলুল্লাহ্‌ (সাঃ) এর ওহী লেখক কে কে ছিলেন?

উত্তরঃ আলী বিন আবী তালেব, মুআবিয়া বিন আবী সুফিয়ান, যায়েদ বিন ছাবেত ও উবাই বিন কা’ব প্রমুখ (রাঃ)।

১৩৬) প্রশ্নঃ কোন যুগে কার নির্দেশে কুরআনের অক্ষরে নকতা দেয়া হয়?

উত্তরঃ উমাইয়া খলীফা আবদুল মালিকের যুগে হাজ্জাজ বিন ইউসূফের নির্দেশে একাজ হয়।

১৩৭) প্রশ্নঃ কুরআনে নকতা দেয়ার কাজটি কে করেন?

উত্তরঃ নসর বিন আছেম বিন ই’য়ামার (রহঃ)।

১৩৮) প্রশ্নঃ কুরআনে কে হরকত (যের যবর পেশ ইত্যাদি) সংযোজন করেন?

উত্তরঃ খলীল বিন আহমাদ আল ফারাহীদী (রহঃ)।

১৩৯) প্রশ্নঃ পবিত্র কুরআনে কতবার ‘দুনিয়া’ শব্দটি এসেছে?

১৪০) প্রশ্নঃ পবিত্র কুরআনে কতবার ‘আখেরাত’ শব্দটি এসেছে?

১৪১) প্রশ্নঃ পবিত্র কুরআনে কতটি অক্ষর রয়েছে?

উত্তরঃ ৩২৩৬৭১টি।

১৪২)প্রশ্নঃ পবিত্র কুরআনে কতটি শব্দ আছে?

১৪৩) প্রশ্নঃ পবিত্র কুরআনে কতটি আয়াত আছে?

১৪৪) প্রশ্নঃ কোন সূরার শেষ দু’টি আয়াত কোন মানুষ রাত্রে পাঠ করলে তার জন্য যথেষ্ট হবে?

উত্তরঃ সূরা বাক্বারার শেষের আয়াত দু’টি। (285 ও ২৮৬ নং আয়ত)

১৪৫) প্রশ্নঃ পবিত্র কুরআনে কতটি সিজদা আছে এবং কোন কোন সূরায়?

উত্তরঃ১৫টি। আ’রাফ (২০৬নং আয়াত), রা’দ (১৫নং আয়াত), নাহাল (৪৯নং আয়াত), ইসরা (১০৭নং আয়াত),

মারইয়াম (৫৮নং আয়াত), হাজ্জ (১৮ ও ৭৭ নং আয়াত), ফুরক্বান (৬০নং আয়াত), নামাল (২৫নং আয়াত), সজিদা

(১৫নং আয়াত), সোয়াদ (২৪নং আয়াত), হা-মীম আস সাজদাহ (৩৭নং আয়াত), নাজম (৬২নং আয়াত), ইনশক্বিাক

(২১নং আয়াত), আলাক (১৯নং আয়াত)।

১৪৬) প্রশ্নঃ কোন সূরায় দু’টি সিজদা রয়েছে?

উত্তরঃ সূরা হজ্জ। (18 ও ৭৭ নং আয়াত)

১৪৭) প্রশ্নঃ পবিত্র কুরআনে কতবার ‘রহমান’ শব্দের উল্লেখ হয়েছে?

১৪৮)প্রশ্নঃ পবিত্র কুরআনে কতবার ‘জান্নাত’ শব্দ এসেছে?

উত্তরঃ ১৩৯ বার। (একবচন, দ্বিবচন ও বহুবচন শব্দে)

১৪৯) প্রশ্নঃ পবিত্র কুরআনে কতবার ‘জাহান্নাম’ শব্দ এসেছে?

১৫০) প্রশ্নঃ পবিত্র কুরআনে কতবার ‘নার বা আগুন’ শব্দ এসেছে?

(৩য় পর্ব)

বিষয়: কুরআন

140. প্রশ্নঃ পবিত্র কুরআনে কতবার ‘আল হামদু লিল্লাহি রাব্বিল আলামীন’ বাক্যটি এসেছে?

141. প্রশ্নঃ পবিত্র কুরআনের কোন্‌ আয়াতে আরবী ২৯টি অক্ষরই রয়েছে?

উত্তরঃ সূরা ফাতাহ এর ২৯ নং আয়াতে।

142. প্রশ্নঃ সূরা ফাতিহায় ‘মাগযূবে আলাইহিম’ বলতে কাদেরকে বোঝানো হয়েছে এবং ‘যাল্লীন’ বলতে কাদেরকে

উত্তরঃ ‘মাগযূবে আলাইহিম’ বলতে ইহুদীদেরকে এবং ‘যাল্লীন’ বলতে খৃষ্টানদেরকে বোঝানো হয়েছে।

143. প্রশ্নঃ পবিত্র কুরআনের কোন সূরায় ‘মীম’ অক্ষরটি নেই?

উত্তরঃ সূরা কাওছার।

144. প্রশ্নঃ পবিত্র কুরআনের কোন সূরায় ك ‘কাফ’ অক্ষরটি নেই?

উত্তরঃ সূরা কুরায়শ, ফালাক ও আছর।

145. প্রশ্নঃ পবিত্র কুরআনের কোন সূরায় দুবার বিসমিল্লাহির রহমানির রাহীম রয়েছে?

উত্তরঃ সূরা নামল। (২৭ নং সূরা)

146. প্রশ্নঃ কুরআনের কোন সূরার প্রথমে বিসমিল্লাহ নেই?

উত্তরঃ সূরা তাওবা। (৯নং সূরা)

147. প্রশ্নঃ পবিত্র কুরআনে মোট কতবার ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম রয়েছে?

148. প্রশ্নঃ কোন্‌ সূরা সম্পর্কে ইমাম শাফেঈ বলেন, “মানুষের জন্য এ সূরাটি ব্যতীত অন্য সূরা নাযিল না হলেও

149. প্রশ্নঃ পবিত্র কুরআনে কতজন নবীর নাম উল্লেখ করা হয়েছে?

150. প্রশ্নঃ মাক্কী সূরা ও মাদানী সূরা বলতে কি বুঝায়?

উত্তরঃ মাক্কীঃ মদীনায় হিজরতের পূর্বে যা নাযিল হয়েছে।

মাদানীঃ মদীনায় হিজরতের পর যা নাযিল হয়েছে।

151. প্রশ্নঃ মাক্কী সূরার মৌলিক বৈশিষ্ট কি কি?

উত্তরঃ ১) তাওহীদ এবং আল্লাহর ইবাদতের প্রতি আহবান। জান্নাত-জাহান্নামের আলোচনা এবং মুশরিকদের

২) মুশরকিদের খুন-খারাবী, ইয়াতীমের সম্পদ ভক্ষণ প্রভৃতি কর্মের নিন্দাবাদ।

৩) সংক্ষিপ্ত বাক্য অথচ অতি উচ্চাঙ্গের সাহিত্য সমৃদ্ধ।

৪) নবী মুহাম্মাদ (সাঃ)কে সান্তনা দেয়া ও উপদেশ গ্রহণ করার জন্য ব্যাপকভাবে নবী-রাসূলদের কাহিনীর

অবতারনা, এবং কিভাবে তাঁদের সমপ্রদায়ের লোকেরা তাঁদেরকে মিথ্যাবাদী বলেছে ও কষ্ট দিয়েছে তার বর্ণনা।

152. প্রশ্নঃ মাদানী সূরার মৌলিক বৈশিষ্ট কি কি?

উত্তরঃ (১) ইবাদত, আচার-আচরণ, দন্ডবিধি, জিহাদ, শান্তি, যুদ্ধ, পারিবারিক নিয়ম-নীতি, শাসন প্রণালী

অন্যান্য বিধি-বিধানের আলোচনা।

(২) আহলে কিতাব তথা ইহুদী খৃষ্টানদেরকে ইসলামের প্রতি আহবান।

(৩) মুনাফেকদের দ্বিমুখী নীতির মুখোশ উম্মোচন এবং ইসলামের জন্য তারা কত ভয়ানক তার আলোচনা।

(৪) সংবিধান প্রণয়ণের ধারা ও তার লক্ষ্য-উদ্দেশ্য নির্ধারণ করার জন্য দীর্ঘ আয়াতের অবতারণা।

153. প্রশ্নঃ মাদানী সূরা পরিচয়ের নিয়ম কি?

উত্তরঃ (১) যে সকল সূরায় কোন কিছু ফরয করা হয়েছে বা দন্ডবিধির আলোচনা করা হয়েছে।

(২) যে সকল সূরায় মুনাফেকদের সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে।

(৩) যে সকল সূরায় আহলে কিতাবদের সাথে বিতর্ক করা হয়েছে।

(৪) যে সকল সূরা “ইয়া আইয়্যুহাল্লাযীনা আমানূ” দ্বারা আরম্ভ হয়েছে।

154. প্রশ্নঃ মাক্কী সূরার সংখ্যা কতটি?

155. প্রশ্নঃ মাদানী সূরার সংখ্যা কতটি?

156. প্রশ্নঃ পবিত্র কুরআনের কোন্‌ সূরার প্রতিটি আয়াতে ‘আল্লাহ্‌ শব্দ আছে?

উত্তরঃ সূরা মুজাদালা। (৫৮ নং সূরা)

157. প্রশ্নঃ পবিত্র কুরআনের কোন্‌ কোন্‌ সূরা ‘আল হামদুলিল্লাহ দ্বারা শুরু হয়েছে?

উত্তরঃ সূরা ফাতিহা, সূরা আনআম, সূরা কাহাফ, সূরা সাবা ও সূরা ফাতির। (সূরা নং যথাক্রমে, ১,৬,১৮,৩৪ ও ৩৫)

158. প্রশ্নঃ পবিত্র কুরআনে ছয়জন ব্যক্তির নাম উল্লেখ আছে যাঁরা সকলেই নবীর পুত্র নবী ছিলেন।

উত্তরঃ (১) ইবরাহীমের পুত্র ইসমাঈল

(২) ইবরাহীমের পুত্র ইসহাক,

(৩) ইসহাকের পুত্র ইয়াকূব

(৪) ইয়াকূবের পুত্র ইউসুফ,

(৫) যাকারিয়ার পুত্র ইয়াহইয়া ও

(৬) দাউদের পুত্র সুলাইমান (আলাইহিমুস্‌ সালাম)

159. প্রশ্নঃ পবিত্র কুরআনে জাহান্নামের ৬টি নাম উল্লেখ হয়েছে। উহা কি কি?

উত্তরঃ (১) জাহান্নাম (সূরা নাবা: 21)

(২) সাঈর (সূরা নিসা: 10)

(৩) হুতামা (হুমাযা:  4)

(৪) লাযা (সূরা মাআরেজ: 15)

(৫) সাক্বার (সূরা মুদ্দাসসির: 42)

(৬) হাভিয়া (সূরা কারিয়া: 9)

160. প্রশ্নঃ কুরআনের কোন সূরায় মুবাহালার আয়াত রয়েছে?

উত্তরঃ সূরা আলে ইমরান- আয়াত নং- ৬১।

মুবাহালা: হক ও বাতিলের মাঝে দ্বন্দ্ব হলে, বাতিল পন্থীর সামনে যাবতীয় দলীল-প্রমাণ উপস্থাপন করার পরও সে

যদি হঠকারিতা করে, তবে তাকে মুবাহালার জন্য আহবান করা হবে। তার নিয়ম হচ্ছেঃ উভয় পক্ষ নিজের স্ত্রী,

সন্তান-সন্ততিকে উপস্থিত করবে, অতঃপর প্রত্যেক পক্ষ বলবে, আমরা যদি বাতিল পন্থা উপর প্রতিষ্ঠিত

থাকি, তবে মিথ্যাবাদীদের উপর আল্লাহর লা’নত (অভিশাপ)। এটাকেই বলে মুবাহালা।

161. প্রশ্নঃ পবিত্র কুরআনের কোন্‌ সূরার কোন্‌ আয়াতে ব্যভিচারের দন্ডবিধির আলোচনা আছে?

উত্তরঃ সূরা নূর- আয়াত নং- ২।

162. প্রশ্নঃ পবিত্র কুরআনের কোন সূরার কত নং আয়াতে ওযুর ফরয সমূহ উল্লেখ করা হয়েছে?

উত্তরঃ সূরা মায়েদা- আয়াত নং- ৬।

163. প্রশ্নঃ পবিত্র কুরআনের কোন সূরার কোন আয়াতে চুরির দন্ডবিধি উল্লেখ হয়েছে?

উত্তরঃ সূরা মায়েদা- আয়াত নং- ৩৮।

164. প্রশ্নঃ পবিত্র কুরআনের কোন সূরার কোন আয়াতে মিথ্যা অপবাদের শাস্তির বিধান উল্লেখ হয়েছে?

উত্তরঃ সূরা নূর- আয়াত নং- ৪।

165. প্রশ্নঃ পবিত্র কুরআনের কোন সূরার কোন আয়াতে মুমিন নারী-পুরুষকে দৃষ্টি অবনত রেখে চলাফেরা

উত্তরঃ সূরা নূর- আয়াত নং ৩০-৩১।

166. প্রশ্নঃ পবিত্র কুরআনের কোন সূরার কোন আয়াতে মীরাছ (উত্তরাধীকার সম্পদ বন্টন) সম্পর্কে

আলোচনা করা হয়েছে?

উত্তরঃ সূরা নিসা- আয়াত নং- ১১, ১২ ও ১৭৬।

167. প্রশ্নঃ পবিত্র কুরআনের কোন সূরার কোন আয়াতে বিবাহ হারাম এমন নারীদের পরিচয় দেয়া হয়েছে?

উত্তরঃ সূরা নিসা- আয়াত নং- ২৩, ২৪।

168. প্রশ্নঃ পবিত্র কুরআনের কোন সূরার কোন আয়াতে যাকাত বন্টনের খাত সমূহ আলোচনা করা হয়েছে?

উত্তরঃ সূরা তওবা- আয়াত নং- ৬০।

169. প্রশ্নঃ পবিত্র কুরআনের কোন সূরার কোন আয়াতে ছিয়াম সম্পর্কিত বিধি-বিধান উল্লেখ হয়েছে?

উত্তরঃ সূরা বাক্বারা- আয়াত নং ১৮৩-১৮৭।

170. প্রশ্নঃ পবিত্র কুরআনের কোন সূরার কোন আয়াতে বাহনে আরোহনের দুআ উল্লেখ করা হয়েছে?

উত্তরঃ সূরা যুখরুফ- আয়াত নং- ১৩।

171. প্রশ্নঃ পবিত্র কুরআনের কোন সূরার কোন আয়াতে নবী (সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর প্রতি দরূদ

পড়ার আদেশ করা হয়েছে?

উত্তরঃ সূরা আহযাব- আয়াত নং ৫৬।

172. প্রশ্নঃ কোন সূরার কোন আয়াতে হুনায়ন যুদ্ধের কথা আলোচনা করা হয়েছে?

উত্তরঃ সূরা তওবা- আয়াত নং- ২৫, ২৬।

173. প্রশ্নঃ কোন সূরায় বদর যুদ্ধের ঘটনাবলী উল্লেখ করা হয়েছে?

উত্তরঃ সূরা আনফাল। (আয়াত নং : 5-19, 41-48, 67-69)

174. প্রশ্নঃ কোন সূরায় বনী নযীরের যুদ্ধের ঘটনা উল্লেখ আছে?

উত্তরঃ সূরা হাশর।(আয়াত নং ২-১৪)

175. প্রশ্নঃ কোন সূরায় খন্দক যুদ্ধের ঘটনা উল্লেখ আছে?

উত্তরঃ সূরা আহযাব (আয়াত নং ৯-২৭)।

176. প্রশ্নঃ কোন সূরায় তাবুক যুদ্ধের ঘটনা উল্লেখ আছে?

উত্তরঃ সূরা তওবা (আয়াত নং ৩৮-১২৯)।

177. প্রশ্নঃ কোন সূরায় নবী (সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হিজরতের ঘটনা উল্লেখ আছে?

উত্তরঃ সূরা তওবা (আয়াত নং ৪০)

178. প্রশ্নঃ কোন সূরার কোন আয়াতে হারূত-মারূতের ঘটনা উল্লেখ আছে?

উত্তরঃ সূরা বাক্বারা- আয়াত নং- ১০২।

179. প্রশ্নঃ কোন সূরার কোন আয়াতে কারূনের কাহিনী উল্লেখ আছে?

উত্তরঃ সূরা ক্বাছাছ আয়াত ৭৬-৮৩।

180. প্রশ্নঃ কোন সূরার কোন আয়াতে সুলায়মান (আঃ)এর সাথে হুদহুদ পাখীর ঘটনা উল্লেখ আছে?

উত্তরঃ সূরা নমল আয়াত নং ২০, ৪৪।

181. প্রশ্নঃ কোন সূরার কোন আয়াতে ক্বিবলা পরিবর্তনের ঘটনা উল্লেখ আছে?

উত্তরঃ সূরা বাক্বারা- আয়াত নং ১৪২-১৫০।

182. প্রশ্নঃ কোন সূরায় নবী সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর ইসরা-মেরাজের ঘটনা উল্লেখ আছে?

উত্তরঃ সূরা বানী ইসরাঈল (আয়াত নং ১) ও সূরা নজম (আয়াত: ৮-১৮)

183. প্রশ্নঃ কোন সূরায় হস্তি বাহিনীর ঘটনা উল্লেখ আছে?

184. প্রশ্নঃ কোন সূরার কোন আয়াতে যুল ক্বারানাইন বাদশাহর ঘটনা উল্লেখ আছে?

উত্তরঃ সূরা কাহাফ- আয়াত নং- ৮৩-৯৮।

185. প্রশ্নঃ কোন সূরার কোন আয়াতে ত্বালুত ও জালুতের ঘটনা উল্লেখ আছে?

উত্তরঃ সূরা বাক্বারা- আয়াত নং- ২৪৬-২৫২।

186. প্রশ্নঃ কোন সূরার কোন আয়াতে মসজিদে আক্বসার কথা উল্লেখ আছে?

উত্তরঃ সূরা বানী ইসরাঈল- আয়াত নং-১

187. প্রশ্নঃ কোন সূরার কোন আয়াতে পিতা-মাতার ঘরে প্রবেশের জন্য অনুমতি নেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে?

উত্তরঃ সূরা নূর- আয়াত নং- ৫৮, ৫৯

188. প্রশ্নঃ সর্বপ্রথম কোন সাহাবী মক্কায় উচ্চ:স্বরে কুরআন পাঠ করেন?

উত্তরঃ আবদুল্লাহ্‌ বিন মাসউদ (রাঃ)।

189. প্রশ্নঃ পবিত্র কুরআনের কোন সূরাটি ওমর (রাঃ)এর ইসলাম গ্রহণের কারণ ছিল?

190. প্রশ্নঃ পবিত্র কুরআনের মধ্যে কোন পরিবর্তন-পরিবর্ধন হবে না। আল্লাহ নিজেই তার হেফাযতের

দায়িত্ব নিয়েছেন। কথাটি কোন সূরার কত নং আয়াতে আছে?

উত্তরঃ সূরা হিজ্‌র ৯ নং আয়াত।

(চতুর্থ পর্ব)

বিষয়: হাদীছ শরীফ

191.প্রশ্নঃ হাদীছ কাকে বলে?

উত্তরঃ নবী (সাঃ)এর কথা, কাজ ও সমর্থনকে হাদীছ বলে।

192. প্রশ্নঃ হাদীছ কত প্রকার ও কি কি?

উত্তরঃ হাদীছ দুপ্রকারঃ মাকবূল (গ্রহণযোগ্য) হাদীছ ও (মারদূদ) অগ্রহণযোগ্য হাদীছ।

193. প্রশ্নঃ মাকবূল হাদীছ কত প্রকার ও কি কি?

উত্তরঃ মাকবূল হাদীছ দুপ্রকারঃ ছহীহ ও হাসান।

194. প্রশ্নঃ মারদূদ বা অগ্রহণযোগ্য হাদীছ কত প্রকার ও কি কি?

উত্তরঃ দুপ্রকারঃ যঈফ (দুর্বল) ও জাল (বানোয়াট)।

195. প্রশ্নঃ সহীহ হাদীছ কাকে বলে?

উত্তরঃ যে হাদীছটি নির্ভরযোগ্য ও পূর্ণ স্মৃতিশক্তি সম্পন্ন বর্ণনাকারী বর্ণনা করেছেন, উহার সনদ পরস্পর

সম্পৃক্ত, তার মধ্যে গোপন কোন ত্রুটি নেই এবং উহা শাযও (তথা অন্য কোন অধিকতর নির্ভরযোগ্য

বর্ণনাকারীর বর্ণনার বিরোধী) নয় তাকে সহীহ হাদীছ বলে।

196. প্রশ্নঃ প্রসিদ্ধ হাদীছ গ্রন্থ কয়টি ও কি কি?

উত্তরঃ ৬টি। সহীহ বুখারী, সহীহ মুসলিম, সুনানে তিরমিযী, সুনানে আবু দাউদ, সুনানে নাসাঈ, সুনানে ইবনে মাজাহ।

197. প্রশ্নঃ সিহাহ সিত্তা বলতে কি বুঝায়?

উত্তরঃ হাদীছের ছয়টি গ্রন্থকে বুঝানো হয়। সহীহ বুখারী, সহীহ মুসলিম, সুনানে তিরমিযী, সুনানে আবু দাউদ,

সুনানে নাসাঈ, সুনানে ইবনে মাজাহ। (বুখারী ও মুসলিমের সবগুলো এবং অন্য কিতাবগুলোর অধিকাংশ হাদীছ

বিশুদ্ধ, তাই এগুলোকে একসাথে সিহাহ সিত্তা বা ছয়টি বিশুদ্ধ হাদীছ গ্রন্থ বলা হয়)

198. প্রশ্নঃ সহীহ বুখারীতে কতটি হাদীছ রয়েছে?

উত্তরঃ ৭০০৮টি। মতান্তরেঃ ৭৫৬৩টি।

199. প্রশ্নঃ সহীহ মুসলিমে কতটি হাদীছ রয়েছে?

200. প্রশ্নঃ সুনানে তিরমিযীতে কতটি হাদীছ রয়েছে?

201. প্রশ্নঃ সুনানে আবু দাউদে কতটি হাদীছ রয়েছে?

202. প্রশ্নঃ সুনানে নাসাঈতে কতটি হাদীছ রয়েছে?

203. প্রশ্নঃ সুনানে ইবনে মাজাহতে কতটি হাদীছ রয়েছে?

204. প্রশ্নঃ হাদীছ গ্রন্থগুলোর মধ্যে কোন কিতাবে সবচেয়ে বেশী হাদীছ সংকলিত হয়েছে?

উত্তরঃ মুসনাদে আহমাদে।

205. প্রশ্নঃ মুসনাদে আহমাদে কতটি হাদীছ রয়েছে?

206. প্রশ্নঃ ছয়টি প্রসিদ্ধ হাদীছ গ্রন্থ ছাড়া আরো ৫টি হাদীছ গ্রন্থের নাম উল্লেখ কর?

উত্তরঃ মুসনাদে আহমাদ, মুআত্ত্বা মালেক, দারাকুত্বনী, সুনানে দারেমী, সুনানে বায়হাক্বী।

207. প্রশ্নঃ রিয়াযুস্‌ সালেহীন কিতাবটির লিখক কে?

208. প্রশ্নঃ জাল হাদীছ কাকে বলে?

উত্তরঃ যে কথাটি মানুষে তৈরী করেছে, অতঃপর তা নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর নামে চালিয়ে দেয়া

হয়েছে, তাকে জাল হাদীছ বলে।

209. প্রশ্নঃ আল্লাহর কুরআনের পর সর্বাধিক বিশুদ্ধতম গ্রন্থ কোনটি?

210. প্রশ্নঃ সহীহ বুখারীর একটি সবচেয়ে প্রসিদ্ধ ভাষ্য (ব্যাখ্যা) গ্রন্থের নাম কি?

উত্তরঃ হাফেয ইবনে হাজার আসকালানী (রহঃ) প্রণীত ফাতহুল বারী।

211. প্রশ্নঃ কোন দুটি হাদীছ গ্রন্থকে সহীহায়ন বলা হয়?

উত্তরঃ সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিম।

212. প্রশ্নঃ মুত্তাফাকুন আলাইহে বলতে কি বুঝানো হয়?

উত্তরঃ যে হাদীছটি ইমাম বুখারী ও ইমাম মুসলিম নিজ নিজ গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন, সে হাদীছ সম্পর্কে বলা হয়

মুত্তাফাকুন আলাইহে।

213. প্রশ্নঃ সুনানে তিরমিযীর একটি প্রসিদ্ধ ভাষ্য (ব্যাখ্যা) গ্রন্থের নাম উল্লেখ কর?

উত্তরঃ তুহফাতুল আহওয়াযী। লেখকঃ আবদুর্‌ রহমান মুবারকপুরী (রহঃ)।

214. প্রশ্নঃ সুনানে আবু দাউদের একটি প্রসিদ্ধ ভাষ্য (ব্যাখ্যা) গ্রন্থের নাম উল্লেখ কর?

উত্তরঃ আউনুল মাবূদ। লেখকঃ শামসূল হক আযীমাবাদী (রহঃ)।

215. প্রশ্নঃ মারফূ হাদীছ কাকে বলে?

উত্তরঃ যে হাদীছটি নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর কথা, কাজ বা সমর্থন হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে

তাকে মারফূ হাদীছ বলে।

216. প্রশ্নঃ মাওকূফ হাদীছ কাকে বলে?

উত্তরঃ যে হাদীছটি কোন সাহাবীর কথা, কাজ বা সমর্থন বলে উল্লেখ করা হয়েছে, তাকে মাওকূফ হাদীছ বলে।

217. প্রশ্নঃ মাকতূ হাদীছ কাকে বলে?

উত্তরঃ যে হাদীছটি কোন তাবেঈর কথা, কাজ বা সমর্থন বলে উল্লেখ করা হয়েছে, তাকে মাক্বতূ হাদীছ বলে।

218. প্রশ্নঃ যঈফ হাদীছের কয়েকটি প্রকার উল্লেখ কর?

উত্তরঃ মুরসাল, মুনকাতে, মুযাল, মুনকার, মাক্বলূব, মুয্‌তারাব ইত্যাদি।

219. প্রশ্নঃ যঈফ হাদীছের উপর আমল করার হুকুম কি?

উত্তরঃ যঈফ হাদীছের উপর আমল করা উচিত নয়।

220. প্রশ্নঃ হাদীছের সনদ বলতে কি বুঝায়?

উত্তরঃ হাদীছ বর্ণনার সময় বর্ণনাকারীদের সিলসিলা বা ধারাবাহিকভাবে তাদের নাম উল্লেখকে সনদ বলা হয়।

221. প্রশ্নঃ হাদীছের মতন কাকে বলা হয়?

উত্তরঃ হাদীছের মূল বক্তব্যটিকে মতন বলা হয়।

222. প্রশ্নঃ কোন খলীফার যুগে সর্বপ্রথম হাদীছ কিতাব আকারে লিপিবদ্ধ করা শুরু হয়?

উত্তরঃ খলীফা ওমর বিন আবদুল আযীযের (রহঃ) যুগে।

223. প্রশ্নঃ হাদীছের গ্রন্থ জগতে সর্বপ্রথম কোন কিতাবটি লিপিবদ্ধ করা হয়?

উত্তরঃ মুআত্ত্বা ইমাম মালেক। এতে ১৭০০টি হাদীছ লিপিবদ্ধ করা হয়েছে।

224. প্রশ্নঃ ইমাম বুখারী কখন মৃত্যু বরণ করেন?

225. প্রশ্নঃ ইমাম মুসলিম কখন মৃত্যু বরণ করেন?

226. প্রশ্নঃ ইমাম তিরমিযী কখন মৃত্যু বরণ করেন?

227. প্রশ্নঃ ইমাম নাসাঈ কখন মৃত্যু বরণ করেন?

228. প্রশ্নঃ ইমাম আবু দাউদ কখন মৃত্যু বরণ করেন?

229. প্রশ্নঃ ইমাম ইবনে মাজাহ কখন মৃত্যু বরণ করেন?

230. প্রশ্নঃ ইমাম বুখারীর প্রকৃত নাম কি?

উত্তরঃ মুহাম্মাদ বিন ইসমাঈল বুখারী (রহঃ)।

231. প্রশ্নঃ ইমাম মুসলিমের প্রকৃত নাম কি?

উত্তরঃ মুসিলম বিন হাজ্জাজ নিশাপুরী (রহঃ)।

232. প্রশ্নঃ ইমাম তিরমিযীর আসল নাম কি?

উত্তরঃ মুহাম্মাদ বিন ঈসা তিরমিযী (রহঃ)।

233. প্রশ্নঃ ইমাম নাসাঈর নাম কি?

উত্তরঃ আহমাদ বিন শুআইব নাসাঈ (রহঃ)।

234. প্রশ্নঃ ইমাম আবু দাউদের নাম কি?

উত্তরঃ আবু দাউদ সুলাইমান ইবনে আছআছ সিজিসতানী (রহঃ)।

235. প্রশ্নঃ ইমাম ইবনে মাজাহর নাম কি?

উত্তরঃ মুহাম্মাদ বিন ইয়াযীদ ইবনে মাজাহ কাযবীনী (রহঃ)।

236. প্রশ্নঃ বর্তমান যুগের সর্বশ্রে মুহাদ্দিসের নাম কি?

উত্তরঃ শায়খ নাসেরুদ্দীন আলবানী (রহঃ) মৃত্যু ১৪২০ হিঃ।

(পর্ব- ৫)

বিষয়: আমাদের প্রিয় নবী মুহাম্মাদ (সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)

এর জীবনী

237. প্রশ্নঃ আমাদের প্রিয় নবীজীর নাম কি?

উত্তরঃ মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)।

238. প্রশ্নঃ তাঁর পিতা- মাতা ও দাদার নাম কি?

উত্তরঃ পিতাঃ আবদুল্লাহ, মাতাঃ আমেনা, দাদাঃ আবদুল মুত্তালিব।

239. প্রশ্নঃ তাঁর দুধমাতার নাম কি?

উত্তরঃ প্রথম দুধমাতা ছুওয়াইবা (আবু লাহাবের কৃতদাসী) তারপর হালিমা সাদিয়া (রাঃ)।

240. প্রশ্নঃ আমাদের প্রিয় নবীজীর নাম কয়টি ও কি কি?

উত্তরঃ পাঁচটি। মুহাম্মাদ, আহমাদ, মাহী, হাশের, আক্বেব (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)। (বুখারী)

241. প্রশ্নঃ তিনি কখন জন্মলাভ করেন?

উত্তরঃ ৯ই রবিউল আওয়াল। মতান্তরে ১২ই রবিউল আওয়াল সোমবার দিন। ৫৭০ মতান্তরে ৫৭১খৃঃ। হস্তি

242. প্রশ্নঃ জন্মলাভের পর কে তাঁর লালন-পালনের দায়িত্বভার গ্রহণ করেন?

উত্তরঃ দাদা আবদুল মুত্তালিব।

243. প্রশ্নঃ কে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর নাম মুহাম্মাদ রাখেন?

উত্তরঃ দাদা আবদুল মুত্তালিব।

244. প্রশ্নঃ নবীজীর কত বছর বয়সে তাঁর পিতা-মাতা ইন্তেকাল করেন?

উত্তরঃ তাঁর জন্মের পূর্বে পিতা এবং তাঁর বয়স ৬ বছর হলে মাতা ইন্তেকাল করেন।

245. প্রশ্নঃ নবীজীর কত বছর বয়সে তাঁর দাদা আবদুল মুত্তালেব ইন্তেকাল করেন?

উত্তরঃ তখন তাঁর বয়স ৮ বছর।

246. প্রশ্নঃ দাদা আবদুল মুত্তালেব ইন্তেকাল করার পর কে তাঁর লালন-পালনের দায়িত্ব নেন?

উত্তরঃ চাচা আবু তালেব।

247. প্রশ্নঃ নবীজী কত বছর বয়সে চাচা আবু তালেবের সাথে শাম দেশ (সিরিয়া) সফর করেন?

উত্তরঃ ১২ বছর বয়সে।

248. প্রশ্নঃ কৈশরে নবীজী কি কাজ করতেন?

উত্তরঃ অল্প বেতনে মক্কাবাসীদের ছাগল চরানোর কাজ করতেন।

249. প্রশ্নঃ কৈশরে নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পিতৃব্যদের সাথে একটি যুদ্ধে অংশ নেন। যুদ্ধটির নাম

উত্তরঃ হারবুল ফুজ্জার।

250. প্রশ্নঃ হিলফুল ফযূল কি?

উত্তরঃ মক্কার সম্মানিত লোকেরা অত্যাচারিতের সাহায্য করার জন্য একটি চুক্তি সম্পাদন করে তাকে হিলফুল

ফযূল বলা হয়। নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পিতৃব্যদের সাথে এই চুক্তিতে অংশ গ্রহণ করেন।

251. প্রশ্নঃ নবূওতের পূর্বে নবীজীর একটি বিচক্ষণতা পূর্ণ ফায়সালার বিবরণ দাও?

উত্তরঃ তাঁর বয়স ৩৫ বছর। সে সময় কাবা সংস্করণ করা হয়। শেষে কে হজরে আসওয়াদ স্থাপন করে সম্মানিত

হবে এনিয়ে মক্কার লোকেরা বিবাদে লিপ্ত হলে নবীজী তাদের মাঝে মিমাংসা করে দেন। একটি চাদরে পাথরটি রেখে

সকল গোত্রের প্রধানদের তার কিনারা ধরে নিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেন এবং তিনি নিজ হাতে পাথরটি স্থাপন

করেন। এতে সবাই খুশি হয়।

252. প্রশ্নঃ যুবক বয়সে নবীজী কি কাজ করতেন?

253. প্রশ্নঃ তিনি কখন কার সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন?

উত্তরঃ তাঁর বয়স যখন ২৫ বছর তখন খাদিজা (রাঃ) এর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। সে সময় খাদিজার বয়স

254. প্রশ্নঃ তাঁর কতজন স্ত্রী ছিলেন? তাঁদের নাম কি?

উত্তরঃ ১১ জন। তাঁরা হচ্ছেনঃ

1- খাদিজা বিনতে খুওয়াইলিদ

2- সাওদা বিনতে যামআ

3- আয়েশা বিনতে আবু বকর

4- যায়নাব বিনতে খুযায়মা (উম্মুল মাসাকীন)

5- হাফছা বিনতে ওমর বিন খাত্তাব

6- যায়নাব বিনতে জাহাশ

7- উম্মু সালামা হিন্দ বিনতে আবী উমাইয়া

8- জুআইরিয়া বিনতে হারেছ

9- ছাফিয়া বিনতে হুওয়াই বিন আখতাব

10- মায়মূনা বিনতে হারেছ

11- উম্মে হাবীবা রামলা বিনতে আবী সুফিয়ান। (রাঃ)

255. প্রশ্নঃ রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর সর্বপ্রথম ও সর্বশেষ স্ত্রীর নাম কি?

উত্তরঃ সর্ব প্রথম স্ত্রী ছিলেন, খাদিজা (রাঃ) এবং সর্বশেষে যাকে বিবাহ করেছিলেন তিনি ছিলেন, মায়মূনা বিনতে

256. প্রশ্নঃ রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর একমাত্র কুমারী স্ত্রী কে ছিলেন?

257. প্রশ্নঃ রাসূলুল্লাহ (সাঃ)এর কতজন সন্তান ছিলেন?

উত্তরঃ ৭ জন। কাসেম, আবদুল্লাহ, যায়নাব, উম্মু কুলছুম, রুকাইয়া, ফাতেমা ও ইবরাহীম (রাঃ)।

258. প্রশ্নঃ নবীজীর নাতী-নাতনীর সংখ্যা কত ছিল?

উত্তরঃ ৭ জন। যায়নাবের সন্তান দুজনঃ আলী ও উমামা। রুকাইয়্যার সন্তান একজনঃ আবদুল্লাহ (শিশুবস্থায়

তিনি মৃত্যু বরণ করেন) ফাতিমার সন্তান চার জনঃ হাসান, হুসাইন, উম্মে কুলছুম, যায়নাব।

259. প্রশ্নঃ কতবার এবং কখন নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর বক্ষ বিদীর্ণ করা হয়?

উত্তরঃ দুবার। একবার শিশুকালে চার বছর বয়সে এবং দ্বিতীয়বার মেরাজে যাওয়ার সময়।

260. প্রশ্নঃ নবুওতের পূর্বে নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কিভাবে ইবাদত করতেন?

উত্তরঃ ইবরাহীম (আঃ) এর দ্বীন অনুসারে ইবাদত করতেন।

261. প্রশ্নঃ কোন পাহাড়ের কোন গুহায় নবীজী ধ্যানমগ্ন থাকতেন?

উত্তরঃ নূর পাহাড়ের হেরা গুহায়।

262. প্রশ্নঃ কত বছর বয়সে নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর উপর ওহী নাযিল হয়?

উত্তরঃ ৪০ বছর ৬ মাস ১২ দিন।

263. প্রশ্নঃ কখন নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর উপর ওহী নাযিল হয়?

উত্তরঃ ২১ রামাযানের রাতে সোমবার। ১০ আগস্ট ৬১০ খৃষ্টাব্দ।

264. প্রশ্নঃ গারে হেরা থেকে ফিরে এলে স্ত্রী খাদিজা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)কে নিয়ে কার

কাছে গমণ করেন এবং তিনি কি বলেন?

উত্তরঃ ওরাকা বিন নওফলের নিকট। তিনি বলেন, ইনি এ উম্মতের নবী।

265. প্রশ্নঃ নবুওত লাভের পর নবীজী কিভাবে মানুষকে ইসলামের দাওয়াত দিতেন?

266. প্রশ্নঃ সাহাবীদের সাথে গোপনে কোথায় মিলিত হতেন?

উত্তরঃ আরকাম বিন আবুল আরকামের গৃহে।

267. প্রশ্নঃ গোপন দাওয়াতের সময় কাল কত বছর ছিল?

268. প্রশ্নঃ মক্কী জীবনের দাওয়াতী কাজ কয়টি পর্যায়ে বিভক্ত ছিল? প্রত্যেক পর্যায়ের সময়কাল কত ছিল?

উত্তরঃ ৩টি পর্যায়ে।

ক) গোপন দাওয়াত প্রথম তিন বছর।

খ) মক্কাবাসীদের মাঝে প্রকাশ্যে দাওয়াত। নবুওতের ৪র্থ বছর থেকে ১০ম বছর পর্যন্ত।

গ) মক্কার বাইরে দাওয়াত। নবুওতের ১০ম বছরের শেষ সময় থেকে হিজরতের পূর্ব পর্যন্ত।

269. প্রশ্নঃ সর্বপ্রথম কারা ইসলাম গ্রহণ করেন?

উত্তরঃ নারীদের মধ্যে খাদীজা (রাঃ)

পুরুষদের মধ্যে আবু বকর (রাঃ)

বালকদের মধ্যে আলী (রাঃ)

ক্রীতদাসদের মধ্যে যায়দ বিন হারেছা (রাঃ)

270. প্রশ্নঃ কাফের হওয়া সত্বেও দাওয়াতী কাজে কে নবীজীকে সহযোগিতা করেন?

উত্তরঃ চাচা আবু তালেব।

271. প্রশ্নঃ সর্বপ্রথম মুসলমানগণ কোথায় হিজরত করেন এবং কখন?

উত্তরঃ নবুওতের ৫ম বর্ষে সর্বপ্রথম মুসলমানগণ হাবশায় (বর্তমানে আফ্রিকার ইথিউপিয়া নামক দেশ) হিজরত

272. প্রশ্নঃ আবিসিনয়া বা হাবশার দ্বিতীয় হিজরতে কতজন পুরুষ ও কতজন নারী ছিলেন?

উত্তরঃ ৮৩ জন পুরুষ ও ১৯ জন নারী ছিলেন।

273. প্রশ্নঃ কেন সেই দেশে হিজরত করার জন্য নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সাহাবীদেরকে পরামর্শ

উত্তরঃ কেননা সেখানকার বাদশা নাজ্জাশী ন্যায় পরায়ন ও দয়ালু লোক ছিলেন।

274. প্রশ্নঃ কোথায় কতদিন নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)কে বয়কট করে রাখা হয়েছিল?

উত্তরঃ নবুওতের ৭ম থেকে ১০ম বছর পর্যন্ত ৩ বছর শেবে আবী তালেবে নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া

সাল্লাম)কে বয়কট করে রাখা হয়েছিল।

275. প্রশ্নঃ নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর নবুওতী জীবনের কোন সময়কে আমুল হুযন বা দুশ্চিন্তার

উত্তরঃ ১০ম বছরকে। সে বছর তাঁর জীবন সঙ্গীনী খাদিজা (রাঃ) ও তাঁকে সহযোগিতাকারী আবু তালেব মৃত্যু বরণ

করেন। আর তখন থেকেই নেমে আসে তাঁর প্রতি অবর্ণনীয় নির্যাতন।

276. প্রশ্নঃ কোন কোন কাফের রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে সবচেয়ে বেশী কষ্ট দিয়েছিল?

উত্তরঃ আবু লাহাব, আবু জাহেল, উক্ববা বিন আবী মুআইত্ব, ওতবা, শায়বা, উমাইয়া বিন খালাফ।

277. প্রশ্নঃ একজন কাফের রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)কে খুবই কষ্ট দিত। তার ধ্বংসের জন্য তার

নামে কুরআনে একটি সূরা নাযিল হয়। ঐ কাফেরের নাম কি এবং সূরাটির নাম কি?

উত্তরঃ কাফেরের নামঃ আবু লাহাব। সূরাটির নামঃ সূরা লাহাব।

278. প্রশ্নঃ নবীজী কখন মেরাজে গমণ করেন ?

উত্তরঃ নবুওতের ১০ম বছরে।

279. প্রশ্নঃ আক্বাবার প্রথম বায়আত কখন অনুতি হয়?

উত্তরঃ নবুওতের ১১তম বছরে।

280. প্রশ্নঃ আক্বাবার প্রথম বায়আতে কোন্‌ গোত্র থেকে কতজন লোক অংশ নিয়েছিলেন?

উত্তরঃ মদীনার আওস ও খাজরায গোত্রের ১২ জন লোক।

281. প্রশ্নঃ আক্বাবার দ্বিতীয় বায়আত কখন অনুতি হয়?

উত্তরঃ নবুওতের ১২তম বছরে মিনায় আক্বাবার দ্বিতীয় বায়আত অনুতি হয়।

282. প্রশ্নঃ এই বায়আতে কতজন লোক অংশ নিয়েছিলেন?

উত্তরঃ মদীনার আওস ও খাজরায গোত্রের ৭৩ জন পুরুষ ও ২ জন নারী এতে অংশ নিয়েছিলেন।

283. প্রশ্নঃ নবীজী নবুওতের কত বছর মক্কায় অতিবাহিত করেন?

284. প্রশ্নঃ নবীজী কত বছর মদীনায় কাটান?

285. প্রশ্নঃ কখন নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)কে হিজরতের আদেশ করা হয়?

উত্তরঃ মক্কার কুরায়শগণ দারুন্নদওয়ায় বসে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে যে তারা একযোগে মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু

আলাইহি ওয়া সাল্লাম)কে হত্যা করবে। তখন আল্লাহ তাকে মক্কা পরিত্যাগ করার নির্দেশ প্রদান করেন।

286. প্রশ্নঃ নবীজী কখন মক্কা ছেড়ে মদীনায় হিজরত করেন?

উত্তরঃ ছফর মাস ১ম হিঃ। ৬২২ খৃষ্টাব্দ।

287. প্রশ্নঃ হিজরতের পূর্বে নবীজী কাকে তাঁর বিছানায় শায়িত রেখে গিয়েছিলেন?

উত্তরঃ আলী (রাঃ)কে।

288. প্রশ্নঃ নবীজীর হিজরতের সময় সফর সঙ্গী কে ছিলেন?

উত্তরঃ আবু বকর (রাঃ)।

289. প্রশ্নঃ হিজরতের সময় তিনি কোন গুহায় কত দিন আত্মগোপন করেন?

উত্তরঃ গারে ছাওরে। তিন দিন।

290. প্রশ্নঃ হিজরতের সময় নবীজী রাস্তা দেখানোর জন্য একজন কাফেরকে পথপ্রদর্শক হিসেবে ভাড়া করে

উত্তরঃ আবদুল্লাহ বিন উরাইকাত।

291. প্রশ্নঃ নবীজীকে ধরিয়ে দেয়ার জন্য কাফেরগণ কি পুরস্কারের ঘোষণা দিয়েছিল?

292. প্রশ্নঃ নবীজীর উটনীর নাম কি ছিল?

293. প্রশ্নঃ নবীজী কখন মদীনায় পৌঁছেন?

উত্তরঃ নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ও আবু বকর (রাঃ) সোমবার দিন ৮ রবিউল আওয়াল প্রথম

মদীনার কুবায় পৌঁছেন।

294. প্রশ্নঃ নবীজি কখন মদীনায় প্রবেশ করেন?

উত্তরঃ ১২ই রবিউল আওয়াল। শুক্রবার দিন।

295. প্রশ্নঃ নবীজী মদীনায় গিয়ে কার বাড়িতে অবস্থান করেন?

উত্তরঃ আবু আইয়্যুব আনছারীর (রাঃ) বাড়িতে।

296. প্রশ্নঃ নবীজী সর্বপ্রথম কোন মসজিদটি নির্মাণ করেন?

উত্তরঃ মসজিদে কূবা।

297. প্রশ্নঃ মদীনায় গিয়ে নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) স্থানীয় ইহুদীদের সাথে একটি চুক্তি সম্পাদন

করেন। ইসলামের ইতিহাসে এটাকে কি নামে আখ্যায়িত করা হয়েছে?

উত্তরঃ মদীনার সনদ।

298. প্রশ্নঃ নবীজী কতবার ওমরা করেন?

299. প্রশ্নঃ নবীজী কতবার হজ্জ করেন?

উত্তরঃ একবার। বিদায় হজ্জ ১০ম হিজরী।

300. প্রশ্নঃ বিদায় হজ্জে কতজন লোক নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর সাথে হজ্জ করেছেন?

উত্তরঃ ১ লক্ষ লোক। অন্য বর্ণনায় ১ লক্ষ ৪৪ হাজার।

301. প্রশ্নঃ নবীজী কতটি রামাযান রোযা রাখেন?

উত্তরঃ নয়টি রামাযান।

302. প্রশ্নঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কখন মৃত্যু বরণ করেন?

উত্তরঃ ১২ই রবিউল আওয়াল। সোমবার। ১১ হিজরী।

303. প্রশ্নঃ মৃত্যুর সময় নবীজীর বয়স কত ছিল?

304. প্রশ্নঃ নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)কে কোথায় দাফন করা হয়েছে?

উত্তরঃ তাঁর নিজ গৃহে তথা আয়েশা (রাঃ)এর গৃহে।

305. প্রশ্নঃ নবীজীর নামাযে জানাযা কে পড়িয়েছে?

উত্তরঃ নির্দিষ্টভাবে কোন ইমাম ছিল না। এককভাবে লোকেরা আয়েশা (রাঃ)এর গৃহে প্রবেশ করেন এবং জানাযা

(পর্ব- ৬)

306. প্রশ্নঃ নবীজী কতটি যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন?

307. প্রশ্নঃ নবীজী সর্ব প্রথম কোন যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন?

উত্তরঃ আল্‌ আব্‌ওয়া।

308. প্রশ্নঃ নবীজী সর্বশেষ কোন যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন?

উত্তরঃ তাবুক যুদ্ধ। ৯ম হিজরী।

309. প্রশ্নঃ বদর যুদ্ধ কখন সংঘটিত হয়?

উত্তরঃ ১৭ই রামাযান, শুক্রবার। ২য় হিজরী।

310. প্রশ্নঃ বদর যুদ্ধে মুসলমান ও কাফেরদের সৈন্য সংখ্যা কত ছিল?

উত্তরঃ মুসলমানদের সৈন্য সংখ্যা ৩১৩ জন। কাফের ১০০০ জন।

311. প্রশ্নঃ এ যুদ্ধের ফলাফল কি ছিল?

উত্তরঃ মুসলমানগণ ঐতিহাসিক বিজয় লাভ করেন।

312. প্রশ্নঃ কত জন কাফের নিহত হয় ও বন্দী হয় এবং কতজন মুসলমান শহীদ হয়?

উত্তরঃ ৭০ জন নিহত হয় ও ৭০ জন বন্দী হয়। ১৪ জন মুসলমান শহীদ হন।

313. প্রশ্নঃ এ যুদ্ধে কাফেরদের একজন বড় নেতা নিহত হয়। তার নাম কি?

314. প্রশ্নঃ আবু জাহেলকে কে হত্যা করে?

উত্তরঃ মুআয বিন আমর ও মুআব্বেয বিন আফরা নামে দুজন কিশোর।

315. প্রশ্নঃ কে আবু জাহেলের শিরোচ্ছেদ করে?

উত্তরঃ আবদুল্লাহ বিন মাসউদ (রাঃ)।

316. প্রশ্নঃ কোন যুদ্ধের দিনকে কুরআনে ইয়াউমুল ফুরকান বা সত্য-মিথ্যার মাঝে পার্থক্যকারী দিন বলে

উত্তরঃ বদর যুদ্ধের দিনকে।

317. প্রশ্নঃ তৃতীয় হিজরীতে কোন যুদ্ধটি সংঘটিত হয়?

318. প্রশ্নঃ কোন যুদ্ধে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর দাঁত শহীদ হয়?

319. প্রশ্নঃ উহুদ যুদ্ধে মুসলমান ও কাফেরদের সৈন্য সংখ্যা কত ছিল?

উত্তরঃ মুসলমান ৭০০ জন। কাফের ৩০০০ জন।

320. প্রশ্নঃ এ যুদ্ধে কতজন মুসলমান শহীদ হন?

321. প্রশ্নঃ চতুর্থ হিজরীতে ইহুদীদের সাথে একটি যুদ্ধ সংঘটিত হয় এবং ইহুদীদেরকে মদীনা থেকে বের করে দেয়া

হয়। ইতিহাসে এ যুদ্ধের নাম কি?

উত্তরঃ বানু নাযীরের যুদ্ধ।

322. প্রশ্নঃ খন্দকের যুদ্ধ কখন সংঘটিত হয়?

উত্তরঃ পঞ্চম হিজরীতে।

323. প্রশ্নঃ এ যুদ্ধকে খন্দকের যুদ্ধ বলে নামকরণের কারণ কি?

উত্তরঃ এ জন্যে যে, মদীনার চারপাশে খন্দক বা পরিখা খনন করে শত্রুদের মোকাবেলা করা হয়েছে।

324. প্রশ্নঃ এ যুদ্ধের আরেকটি নাম আছে। তা কি?

উত্তরঃ আহযাবের যুদ্ধ।

325. প্রশ্নঃ এ যুদ্ধকে আহযাবের যুদ্ধ হিসেবে নামকরণের কারণ কি?

উত্তরঃ এজন্য যে, তখন আরবের অধিকাংশ গোত্র মুসলমানদের বিরূদ্ধে লড়াই করতে ঐক্যবদ্ধ হয়।

326. প্রশ্নঃ খন্দকের যুদ্ধ কত দিন স্থায়ী ছিল?

327. প্রশ্নঃ এ যুদ্ধে কারা বিজয় লাভ করে?

328. প্রশ্নঃ এ যুদ্ধকে কেন্দ্র করে পবিত্র কুরআনে একটি সূরা নাযিল হয়। সূরাটির নাম কি?

উত্তরঃ সূরা আহযাব।

329. প্রশ্নঃ ৫ম হিজরীতে মদীনার আর এক ইহুদী গোত্রের সাথে যুদ্ধ হয়। গোত্রটির নাম কি?

উত্তরঃ বানু কুরায়যা।

330. প্রশ্নঃ নবী (সাঃ)এর হিজরতের ৬ বছরে কাফেরদের সাথে মুসলমানদের একটি সন্ধি-চুক্তি হয়। ইতিহাসে এটাকে

কি নামে আখ্যা দেয়া হয়েছে?

উত্তরঃ হুদায়বিয়ার সন্ধি।

331. প্রশ্নঃ হুদায়বিয়ার সন্ধির আরেকটি নাম আছে। তা কি?

উত্তরঃ বাইয়াতুর্‌ রিয্‌ওয়ান।

332. প্রশ্নঃ হুদায়বিয়ার সন্ধিতে কতজন মুসলমান উপস্থিত ছিলেন?

333. প্রশ্নঃ হুদায়বিয়ার সন্ধির ধারা সমূহ কি কি ছিল?

উত্তরঃ (ক) এ বছর রাসূল (সাঃ) সাহাবীদেরকে নিয়ে মক্কা প্রবেশ করতে পারবেন না। আগামী বছর তিন দিনের

জন্য মক্কা আসতে পারবেন।

(খ) দশ বছরের জন্য মুসলমান ও মক্কার কাফেরদের সাথে যুদ্ধ বিরতী।

(গ) আরবের যে কোন গোত্র চুক্তিবদ্ধ যে কোন দলের (মুসলমান অথবা কাফেরদের) সাথে শামিল হতে পারে।

(ঘ) কোন লোক যদি ইসলাম গ্রহণ করে মদীনা চলে যায়, তবে তাকে ফেরত দিতে হবে। কিন্তু কোন লোক

মুহাম্মাদের নিকট থেকে মক্কা পালিয়ে আসে, তবে তাকে ফেরত দেয়া হবে না।

334. প্রশ্নঃ হুদায়বিয়ার সন্ধি ছিল মূলতঃ মুসলমানদের জন্যে একটি সুস্পষ্ট বিজয় এ সুসংবাদ দিয়ে আল্লাহ একটি

সূরা নাযিল করেন। সূরাটির নাম কি?

উত্তরঃ সূরা আল্‌ ফাতাহ।

335. প্রশ্নঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)যে সকল বাদশার নিকট পত্র প্রেরণ করেন তাদের তিন

উত্তরঃ হাবশার বাদশা নাজ্জাশী, পারস্যের বাদশা কিসরা, রোমের বাদশা কায়সার।

336. প্রশ্নঃ কোন্‌ বাদশা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর পত্র ছিঁড়ে ফেলে। ফলে আল্লাহ তার

রাজত্ব ধ্বংস করে দেন?

উত্তরঃ পারস্যের বাদশা কিসরা।

337. প্রশ্নঃ কোন্‌ বাদশা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর পত্র পেয়ে ইসলাম গ্রহণ করেন?

উত্তরঃ বাদশা নাজ্জাশী।

338. প্রশ্নঃ কখন খায়বার বিজয় হয়?

উত্তরঃ ৭ম হিজরীতে।

339. প্রশ্নঃ খায়বার যুদ্ধটি কাদের সাথে ছিল?

উত্তরঃ ইহুদীদের সাথে।

340. প্রশ্নঃ খায়বার যুদ্ধে কত জন মুসলমান অংশ নিয়েছিলেন?

উত্তরঃ হুদায়বিয়ার সন্ধি থেকে প্রত্যাবর্তনকারী ১৪শত মুসলমান।

341. প্রশ্নঃ খায়বার যুদ্ধে হতাহতের পরিমাণ কি ছিল?

উত্তরঃ ৯৩জন ইহুদী নিহত হয়। মুসলমানদের মধ্যে শহীদ হন ১৬ জন।

342. প্রশ্নঃ খায়বার থেকে ফেরার পথে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যুদ্ধ বন্দি এক ইহুদী

সরদারের কন্যাকে মুক্ত করে দেন অতঃপর তাকে বিবাহ করেন। তাঁর নাম কি?

উত্তরঃ উম্মুল মুমেনীন সফিয়্যা বিনতে হুওয়াই (রাঃ)।

343. প্রশ্নঃ ৮ম হিজরীতে রোমান সৈন্যদের সাথে মুসলমানদের একটি বিশাল যুদ্ধ হয়। তার নাম কি?

344. প্রশ্নঃ মূতার যুদ্ধে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পরপর তিনজন সেনাপতি নিয়োগ করেন।

তারা সকলেই যুদ্ধে শহীদ হন। তারা কে কে ছিলেন?

উত্তরঃ যায়দ বিন হারেছা, জাফার বিন আবী তালেব, আবদুল্লাহ বিন রাওয়াহা (রাঃ)।

345. প্রশ্নঃ মূতার যুদ্ধে উভয় পক্ষে সৈন্য সংখ্যা কত ছিল?

উত্তরঃ মুসলমান ৩ হাজার। রোমান সৈন্য ২ লক্ষ।

346. প্রশ্নঃ মূতার যুদ্ধে হতাহতের সংখ্যা কত ছিল?

উত্তরঃ ১২ জন মুসলমান শহীদ হন। নিহত রোমানদের সংখ্যা কত ছিল তা প্রকৃতভাবে জানা যায় না। তবে তা

347. প্রশ্নঃ কোন্‌ সেনাপতির হাতে এ যুদ্ধে মুসলমানগণ জয়লাভ করেন?

উত্তরঃ খালিদ বিন ওয়ালিদ (রাঃ)

348. প্রশ্নঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) খালিদকে কি খেতাবে ভূষিত করেন?

উত্তরঃ সাইফুল্লাহ বা আল্লাহর কোষমুক্ত তরবারী।

349. প্রশ্নঃ ৮ম হিজরীতে আরেকটি বড় বিজয় মুসলমানগণ লাভ করেন। তা কি?

উত্তরঃ মক্কা বিজয়।

350. প্রশ্নঃ মক্কা বিজয় কোন্‌ মাসে হয়েছিল?

উত্তরঃ ১৭ রামাযান।

351. প্রশ্নঃ মক্কা বিজয়ে কত জন মুসলমান অংশ নিয়েছিলেন?

352. প্রশ্নঃ মক্কা বিজয়ের সময় কাফেরদের একজন বড় নেতা ইসলাম গ্রহণ করেন। তার নাম কি?

উত্তরঃ আবু সুফিয়ান (রাঃ)।

353. প্রশ্নঃ মক্কা বিজয়ের সময় জনৈক কাফের কাবা ঘরের গিলাফ ধরেছিল। তবুও নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া

সাল্লাম) তাকে হত্যা করার নির্দেশ প্রদান করেন। কারণ কি ছিল? কাফেরটির নাম কি ছিল?

উত্তরঃ কেননা সে নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)কে গালি দিত। তার নাম ছিল আবদুল্লাহ বিন খাত্বাল।

354. প্রশ্নঃ হুনায়ন যুদ্ধ কখন সংঘটিত হয়?

উত্তরঃ ৮ম হিজরীতে। শাওয়াল মাস।

355. প্রশ্নঃ কোন সেই যুদ্ধ যেখানে কাফেরদের তুলনায় মুসলমানদের সৈন্য সংখ্যা বেশী ছিল?

উত্তরঃ হুনায়ন যুদ্ধ।

356. প্রশ্নঃ কোন্‌ সেই যুদ্ধ যেখানে কাফেরদের তুলনায় মুসলমানদের সৈন্য সংখ্যা বেশী থাকা সত্বেও প্রথমে

মুসলমানগণ পরাজিত হয়, অতঃপর বিজয় লাভ করে?

উত্তরঃ হুনায়ন যুদ্ধ।

357. প্রশ্নঃ হুনায়ন যুদ্ধের কথা পবিত্র কুরআনের কোন্‌ সূরায় উল্লেখ আছে?

উত্তরঃ সূরা তওবা, ২৫-২৬ নং আয়াত।

358. প্রশ্নঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর জীবনের শেষ যুদ্ধ কোনটি ছিল?

359. প্রশ্নঃ তাবুক যুদ্ধ কখন সংঘটিত হয়?

উত্তরঃ ৯ম হিজরী। রজব মাস।

360. প্রশ্নঃ কাদের বিরুদ্ধে তাবুক যুদ্ধ হয়?

উত্তরঃ রোমানদের বিরুদ্ধে।

361. প্রশ্নঃ তাবুক যুদ্ধে মুসলমানদের সৈন্য সংখ্যা কত ছিল?

362. প্রশ্নঃ তাবুক যুদ্ধের ফলাফল কি ছিল?

উত্তরঃ এ যুদ্ধে শত্রুর সাথে সম্মুখ কোন লড়াই হয়নি। শত্রু বাহিনী মুসলমানদের আগমনে ভীত হয়ে আগ্রসর না

হয়েই ফেরত যায়। এটা প্রকৃত পক্ষে মুসলমানদেরই বিজয়।

363. প্রশ্নঃ ইসলামের ইতিহাসে কোন যুদ্ধের বাহিনীকে جيش العسرة জাইশুল উশরা বা কঠিন অভাবী বাহিনী বলা

উত্তরঃ তাবুক যুদ্ধের মুসলিম বাহিনীকে।

364. প্রশ্নঃ কোন্‌ সূরায় তাবুক যুদ্ধের ঘটনা উল্লেখ আছে?

উত্তরঃ সূরা তওবা ৩৮-১২৯।

365. প্রশ্নঃ তাবুক যুদ্ধের প্রস্তুতির সময় মুসলমানদের ধোকা দেয়ার জন্য মুনাফিকরা একটি মসজিদ নির্মাণ

করে। নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মসজিদটি ধ্বংস করে দেন। কুরআনে মসজিদটিকে কি নামে উল্লেখ

উত্তরঃ মসজিদে যেরার।

366. প্রশ্নঃ নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর জীবদ্দশাতেই দুজন লোক নবুওতের দাবী করে তাদের নাম

কি? তারা কোথাকার অধিবাসী?

উত্তরঃ (১) বনু হানীফা গোত্রের মুসায়লামা। সে ইয়ামামার অধিবাসী। নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)

তাকে কায্‌যাব বা মিথ্যুক নামে আখ্যায়িত করেন। (২) আসওয়াদ আনাসী। সে ইয়ামানের অধিবাসী ছিল। নবীজীর

মৃত্যুর একদিন এক রাত আগেই তাকে হত্যা করা হয়।

367. প্রশ্নঃ বর্তমান যুগে জনৈক ভন্ড নবুওত দাবী করে। তার নাম কি এবং সে কোথাকার অধিবাসী?

উত্তরঃ ভারতের কাদিয়ান নামক এলাকার গোলাম আহমাদ কাদীয়ানী, তার পিতার নামঃ গোলাম মোর্তজা ও

মায়ের নাম চেরাগ বিবি।

368. প্রশ্নঃ বর্তমান বিশ্বে সর্বাধিক আলোড়ন সৃষ্টিকারী রাবেতা আলমের পক্ষ থেকে প্রথম পুরস্কার প্রাপ্ত

নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর জীবনী গ্রন্থের নাম কি?

উত্তরঃ আর্‌ রাহীকুল মাখতূম। (বইটি বাংলায় পাওয়া যায়)

369. প্রশ্নঃ আর্‌ রাহীকুল মাখতূম গ্রন্থের লেখক কে?

উত্তরঃ শায়খ সফিউর রহমান মোবারকপুরী (রহঃ) মৃত্যুঃ ১৪২৭হিঃ।

(পর্ব- ৭)

বিষয়: নবী-রাসূল

370. প্রশ্নঃ সর্বপ্রথম নবী কে?

371. প্রশ্নঃ কোন নবীর পিতা-মাতা কেউ ছিল না?

372. প্রশ্নঃ আদম (আঃ)এর শারিরীক দৈর্ঘ কত ছিল?

373. প্রশ্নঃ কোন নবী পিতা ছাড়াই মায়ের গর্ভে এসেছিলেন?

374. প্রশ্নঃ কোন নবী নিজ জাতিকে ৯৫০ (সাড়ে নয়শত) বছর দাওয়াত দেন?

375. প্রশ্নঃ কোন নবীর মোজেযা চিরন্তন, যা কখনো বিলীন হবে না। উহা কি?

উত্তরঃ মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)। উহা হচ্ছে আল কুরআন।

376. প্রশ্নঃ কোন নবীকে আল্লাহ দীর্ঘকাল কঠিন অসুখ দিয়ে পরীক্ষা করেছিলেন? কিন্তু তিনি ধৈর্য ধারণ

উত্তরঃ আইয়্যুব (আঃ)।

377. প্রশ্নঃ কোন নবী পশু-পাখী, বাতাসের সাথে কথা বলতেন?

উত্তরঃ সুলাইমান (আঃ)

378. প্রশ্নঃ পিতা-পুত্র উভয়েই নবী। কিন্তু উভয়কেই ইহুদীরা হত্যা করেছিল?

উত্তরঃ যাকারিয়া ও ইয়াহইয়া (আঃ)।

379. প্রশ্নঃ কোন নবীকে আল্লাহ আসমানী কিতাব যাবুর দিয়েছিলেন এবং লোহা তাঁর হাতে নরম হয়ে যেত?

380. প্রশ্নঃ “উলুল আযমে মিনার্‌ রুসুল” বা দৃঢ়পদ সম্পন্ন নবী কাদেরকে বলা হয়?

উত্তরঃ তাঁরা হচ্ছেন পাঁচ জন: নূহ, ইবরাহীম, মূসা, ঈসা ও মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহিম ওয়া সাল্লাম)।

381. প্রশ্নঃ কোন চারজন নবী সকলেই আরব বংশদ্ভূত?

উত্তরঃ হুদ, ছালেহ, শুআইব ও মুহাম্মাদ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহিম ওয়া সাল্লাম)।

382. প্রশ্নঃ কোন দুজন সহোদর ভাই দুজনই নবী?

উত্তরঃ ইসমাঈল ও ইসহাক এবং মূসা ও হারূন (আঃ)

383. প্রশ্নঃ কোন নবীকে মাছে গিলে ফেলেছিল? দুআ করার পর আল্লাহ তাকে মুক্তি দিয়েছেন?

384. প্রশ্নঃ কোন দুজন নবীর স্ত্রীরা কাফের ছিল?

উত্তরঃ নূহ ও লূত (আঃ)

385. প্রশ্নঃ কোন নবীকে আল্লাহ আদ জাতির নিকট প্রেরণ করেছিলেন?

386. প্রশ্নঃ কোন দুজন নবীকে বৃদ্ধ বয়সে আল্লাহ সন্তান দিয়েছিলেন? অথচ তাদের স্ত্রীগণ বন্ধ্যা ছিলেন?

উত্তরঃ ইবরাহীম ও যাকারিয়া (আঃ)

387. প্রশ্নঃ কোন নবীর ছেলেকে কুফরীর কারণে আল্লাহ ডুবিয়ে মেরেছিলেন?

উত্তরঃ নূহ (আঃ) এর ছেলে কেনানকে।

388. প্রশ্নঃ কোন নবীর সমপ্রদায়ের লোকেরা ওযনে কম দেয়ায় খ্যাতি অর্জন করেছিল?

উত্তরঃ শুআইব (আঃ)এর সমপ্রদায়ের লোকেরা।

389. প্রশ্নঃ পবিত্র কুরআনে কয়জন নবীর নাম উল্লেখ আছে?

390. প্রশ্নঃ কুরআনে উল্লেখিত পঁচিশ জন নবীর নাম উল্লেখ কর।

উত্তরঃ আদম, ইদরীস, নূহ, হূদ, ছালেহ, ইবরাহীম, লূত, ইসমাঈল, ইসহাক্ব, ইয়াকূব, ইউসূফ, শুআইব, আইয়্যুব, যুল

কিফল, মূসা, হারূন, দাউদ, সুলাইমান, ইল্‌য়াস, আল ইয়াসা, ইউনুস, যাকারিয়া, ইয়াহইয়া, ঈসা ও মুহাম্মাদ (ছাল্লাল্লাহু

আলাইহিম ওয়া সাল্লাম)।

391. প্রশ্নঃ মারইয়াম বিনতে ইমরান কোন নবীর দায়িত্বে প্রতিপালিত হন?

উত্তরঃ যাকারিয়া (আঃ)

392. প্রশ্নঃ কোন নবী কাঠুরে ছিলেন?

উত্তরঃ যাকারিয়া (আঃ)।

393. প্রশ্নঃ কোন নবী বৃদ্ধাবস্থায় আল্লাহর কাছে সন্তান চেয়েছিলেন? আর আল্লাহ তাঁর প্রার্থনাও মঞ্জুর

উত্তরঃ যাকারিয়া (আঃ)।

394. প্রশ্নঃ কোন্‌ নারী বন্ধ্যা ও বৃদ্ধা হওয়ার পরও সন্তান লাভ করেছিলেন?

উত্তরঃ যাকারিয়া (আঃ) এর স্ত্রী।

395. প্রশ্নঃ কোন নবীকে বলা হয় আল্লাহর কালেমা ও তাঁর রূহ?

396. প্রশ্নঃ জনৈক মহিয়সী রমণী ও তাঁর সন্তানকে পবিত্র কুরআনে “জগতবাসীর জন্য নিদর্শন হিসেবে আখ্যা

দেয়া হয়েছে”? তাঁরা কে কে?

উত্তরঃ মারিয়াম বিনতে ঈমরান ও তাঁর সন্তান ঈসা (আঃ)।

397. প্রশ্নঃ ইউসূফ (আঃ) এর সহদোর ভাইয়ের নাম কি ছিল?

398. প্রশ্নঃ কোন নবী নিজের হাতে রোজগার করে সংসার চালাতেন?

399. প্রশ্নঃ কোন নবী সারাবছর একদিন রোযা রাখতেন, আরেকদিন রাখতেন না?

400. প্রশ্নঃ দাউদ (আঃ)কে কোন গ্রন্থ দেয়া হয়েছে?

401. প্রশ্নঃ ইউনূস (আঃ)কে কোন জাতির নিকট নবী হিসেবে প্রেরণ করা হয়েছিল?

উত্তরঃ নিনুওয়া এলাকার লোকদের নিকট।

402. প্রশ্নঃ কোন্‌ নবী জেল খেটেছেন?

উত্তরঃ ইউসুফ (আঃ)।

403. প্রশ্নঃ ইউসুফ নবীর জেল খাটার কারণ কি?

উত্তরঃ মিসরের রাণীর অন্যায় আবদার প্রত্যাখ্যান করার কারণে।

404. প্রশ্নঃ ইউসুফ (আঃ) কতদিন জেল খেটেছেন?

405. প্রশ্নঃ কোন মহান ব্যক্তি নিজে নবী ছিলেন, তাঁর পিতা, তাঁর দাদা এবং পরদাদাও নবী ছিলেন?

উত্তরঃ ইউসুফ (আঃ)। তাঁর পিতা ইয়াকূব (আঃ), দাদা ইসহাক (আঃ) ও পরদাদা ইবরাহীম (আঃ)।

406. প্রশ্নঃ কোন নবী মিসরের খাদ্য মন্ত্রী হয়েছিলেন?

407. প্রশ্নঃ যে রমণী ইউসুফ (আঃ)কে বিভ্রান্ত করতে চেয়েছিলেন তার নাম কি?

408. প্রশ্নঃ কোন নবীকে ছামূদ জাতীর নিকট প্রেরণ করা হয়?

উত্তরঃ ছালেহ (আঃ)কে।

409. প্রশ্নঃ ছালেহ (আঃ) এর মোজেযা কি ছিল?

410. প্রশ্নঃ নূহের সমপ্রদায়কে তুফান দ্বারা ধ্বংস করার পর সর্বপ্রথম কোন নবীর সমপ্রদায়ের লোকেরা

মূর্তি পুজায় লিপ্ত হয় এবং আল্লাহ তাদেরকে প্রচন্ড ঝড় দ্বারা ধ্বংস করে দেন?

411. প্রশ্নঃ কোন নবীকে আবুল আম্বিয়া বা নবীদের পিতা বলা হয়?

উত্তরঃ ইবরাহীম (আঃ)।

412. প্রশ্নঃ কোন নবীর জীবনের বিনিময়ে আল্লাহ বিরাট একটি প্রাণী প্রেরণ করেছিলেন?

উত্তরঃ ইসমাঈল (আঃ)

413. প্রশ্নঃ ইবরাহীম (আঃ) যখন ইসমাঈলকে যবেহ করার জন্য নিজের সিদ্ধান্তের কথা বললেন, তখন ইসমাঈল

(আঃ) জবাবে কি বলেছিলেন?

উত্তরঃ “পিতা! আপনাকে যা আদেশ করা হয়েছে, তা বাস্তবায়ন করুন। আল্লাহ চাহেতো আপনি আমাকে ধৈর্য

ধারণকারী পাবেন।” (সূরা সাফাতঃ ১০২)

414. প্রশ্নঃ ইবরাহীম (আঃ)এর পিতার নাম কি ছিল? তার কাজ কি ছিল?

উত্তরঃ আযর। সে মুর্তি বানাত ও বিক্রি করত।

415. প্রশ্নঃ কোন নবীকে তাঁর সমপ্রদায়ের লোকেরা আগুনে নিক্ষেপ করেছিল?

উত্তরঃ ইবরাহীম (আঃ)।

416. প্রশ্নঃ কোন নবীকে খালিলুল্লাহ বলা হয়?

উত্তরঃ ইবরাহীম (আঃ)কে।

417. প্রশ্নঃ কোন্‌ নবী সর্বপ্রথম মানুষকে বায়তুল্লাহর হজ্জ করার জন্য আহবান করেন?

উত্তরঃ ইবরাহীম (আঃ)।

418. প্রশ্নঃ কোন্‌ বাদশা ইবরাহীম (আঃ)কে অগ্নিকুন্ডে নিক্ষেপ করে?

419. প্রশ্নঃ কি অপরাধে ইবরাহীম (আঃ)কে আগুনে নিক্ষপ করা হয়েছিল?

উত্তরঃ তিনি মূর্তী ভেঙ্গেছিলেন।

420. প্রশ্নঃ কোন নবী তাঁর ছেলেকে সাথে নিয়ে কাবা ঘর নির্মাণ করেন?

উত্তরঃ ইবরাহীম (আঃ) তাঁর ছেলে ইসমাঈল (আঃ)কে নিয়ে কাবা ঘর নির্মাণ করেন।

421. প্রশ্নঃ ইবরাহীম (আঃ)এর স্ত্রী এবং ইসহাক (আঃ)এর মাতা তাঁর নাম কি?

422. প্রশ্নঃ ইবরাহীম (আঃ)এর কোন ছেলেকে আল্লাহ যবেহ করার আদেশ করেছিলেন?

উত্তরঃ ইসমাঈল (আঃ)কে।

423. প্রশ্নঃ ইসমাঈল (আঃ)এর মাতার নাম কি?

424. প্রশ্নঃ ইসমাঈল (আঃ) মক্কায় যেখানে থাকতেন সে জায়গাটার নাম কি?

উত্তরঃ কাবা ঘরের হাতীমে তিনি থাকতেন। জায়গাটির আরেক নাম হিজরে ইসমাঈল।

425. প্রশ্নঃ ইবরাহীম (আঃ) পুত্র ইসমাঈলকে যবেহ করার জন্য কোথায় নিয়ে গিয়েছিলেন?

426. প্রশ্নঃ ইবরাহীম (আঃ) কোথায় জন্ম গ্রহণ করেন?

427. প্রশ্নঃ ইবরাহীম (আঃ) কোথায় বসতি স্থাপন করেন?

428. প্রশ্নঃ ইবরাহীম (আঃ) নিজ স্ত্রী ও শিশু সন্তান ইসমাঈল কোথায় রেখে আসেন? তখন সে জায়গার অবস্থা

উত্তরঃ মক্কায়। তখন মক্কা জনমানবহীন স্থান ছিল।

429. প্রশ্নঃ কোন নবী জন্ম লাভের পর, তার মাতা তাকে বাক্সে ভরে নীল নদে ভাসিয়ে দেন এবং কেন?

উত্তরঃ মূসা (আঃ)। এ জন্যে যে, জালেম বাদশা ফেরাউন বানী ইসরাঈলের সকল শিশুপুত্রকে হত্যা করার নির্দেশে

430. প্রশ্নঃ কোন নবী নিজ শত্রুর বাড়ীতে লালিত-পালিত হন?

431. প্রশ্নঃ মূসা (আঃ)কে কোন কাফের বাদশার নিকট ইসলামের দাওয়াত দিয়ে প্রেরণ করা হয়েছিল?

উত্তরঃ ফেরাউনের নিকট।

432. প্রশ্নঃ মূসা (আঃ) লাঠি দ্বারা পাথরে আঘাত করলে কতটি ঝর্ণা নির্গত হয়েছিল?

433. প্রশ্নঃ কোন নবী আল্লাহকে দেখতে চেয়েছিলেন?

434. প্রশ্নঃ ফেরাউন তার দলবল নিয়ে কোন্‌ সময় মূসা (আঃ) ও তাঁর সাথীদেরকে ধাওয়া করে?

উত্তরঃ সূর্য উঠার সময়। (সূরা শুআরাঃ ৬০ নং আয়াত)

435. প্রশ্নঃ ফেরাউন তার দলবল নিয়ে মূসা (আঃ) ও তাঁর সাথীদের ধাওয়া করে আসলে, লোকেরা বলেছিল “আমরা

তো ধরা পড়ে গেলাম” তখন মূসা (আঃ) জবাবে কি বলেছিলেন?

উত্তরঃ “তিনি বললেন, কখনই নয়; নিশ্চয় আমার পালনকর্তা আমার সাথে আছেন। তিনি আমাকে পথ দেখাবেন।”

436. প্রশ্নঃ কোন নবী সর্বপ্রথম জ্ঞান শিক্ষার জন্য সফর করেন এবং কার কাছে?

উত্তরঃ মূসা (আঃ)। খিজির (আঃ)এর কাছে। (সূরা কাহাফঃ ৬০-৮২)

437. প্রশ্নঃ ফেরাউন মূসা (আঃ) ও তার দলবলকে ধাওয়া করে আসলে তারা কিভাবে মুক্তি পান?

উত্তরঃ মূসা (আঃ) হাতের লাঠি দ্বারা সমুদ্রে আঘাত করলে সেখানে ১২টি শুকনো রাস্তা হয়ে যায়। সেই রাস্তা দিয়ে

তারা নির্বিঘ্নে পার হয়ে যান।

438. প্রশ্নঃ আল্লাহ তাআলা কিভাবে ফেরাউনকে ধ্বংস করেন?

উত্তরঃ মূসাকে ধাওয়া করতে গিয়ে তাঁর পিছনে পিছনে সমুদ্রের শুকনো রাস্তায় নামলে আল্লাহ তাকে ডুবিয়ে

439. প্রশ্নঃ মূসা (আঃ)কে আল্লাহ কি কি মোজেযা দিয়েছিলেন?

উত্তরঃ লাঠি, শুভ্র হাত, উকুন, ব্যাঙ, রক্ত, দুর্ভিক্ষ, সমুদ্র, তুফান, ফড়িং।

440. প্রশ্নঃ মূসা (আঃ)এর হাতের লাঠিতে কি ধরণের মোজেযা ছিল?

উত্তরঃ লাঠিটা মাটিতে রেখে দিলে তা বিশাল বড় সাপে পরিণত হত।

441. প্রশ্নঃ কোন নবী মূসা (আঃ)এর উযীর ছিলেন?

442. প্রশ্নঃ কোন নবীকে কালীমুল্লাহ (আল্লাহর সাথে বাক্যালাপকারী) বলা হয়?

উত্তরঃ মূসা (আঃ)কে।

443. প্রশ্নঃ মূসা (আঃ) কোথায় আল্লাহর সাথে বাক্যালাপ করেন?

444. প্রশ্নঃ মূসা (আঃ) একজন কিবতীকে হত্যা করেছিলেন। কখন তিনি এই হত্যাকান্ড ঘটিয়েছিলেন?

উত্তরঃ নবুওতের পূর্বে। (সূরা শুআরাঃ ১৯ ও ২০)

445. প্রশ্নঃ মূসা (আঃ)কে আল্লাহ কোন কিতাব প্রদান করেছেন?

446. প্রশ্নঃ আল্লাহ তাআলা মূসা (আঃ)কে তাওরাত কিতাব কোথায় প্রদান করেছিলেন?

447. প্রশ্নঃ মূসা (আঃ)এর সমপ্রদায় বানী ইসরাঈলের মাথার উপর আল্লাহ কোন্‌ পাহাড় উঠিয়েছিলেন?

448. প্রশ্নঃ মূসা (আঃ) যখন তূর পাহাড়ে গমণ করেন, তখন তাঁর অনুসারীরা একটি শির্কে লিপ্ত হয়েছিল। সেটা কি?

উত্তরঃ তারা বাছুর পুজায় লিপ্ত হয়েছিল।

449. প্রশ্নঃ কে তাদেরকে বাছুর পুজায় উদ্বুদ্ধ করেছিল?

উত্তরঃ সামেরী নামক একজন লোক।

450. প্রশ্নঃ কোন নবীর নাম পবিত্র কুরআনে সবচেয়ে বেশী সংখ্যায় উল্লেখ হয়েছে?

451. প্রশ্নঃ মূসা নবীর নাম পবিত্র কুরআনে কতবার উল্লেখ হয়েছে?

452. প্রশ্নঃ বনী ইসরাঈলের প্রথম ও শেষ নবীর নাম কি?

উত্তরঃ তাদের প্রথম নবী মূসা ও শেষ নবী ঈসা (আঃ)।

453. প্রশ্নঃ কোন্‌ নবী সর্বপ্রথম কাপড় সিলাই করে পরিধান করেন?

উত্তরঃ ইদরীস (আঃ)।

454. প্রশ্নঃ কোন্‌ নবীর উপাধী ছিল ইসরাঈল[3]?

উত্তরঃ ইয়াকূব (আঃ)।

455. প্রশ্নঃ কোন নবীর উম্মাত বলেছিল “আপনি যদি সত্যবাদী হন, তবে আমাদের উপর আসমান থেকে শাস্তি

উত্তরঃ শুআইব (আঃ) এর উম্মাত। (সূরা শুআরাঃ ১৮৭)

456. প্রশ্নঃ কোন্‌ নবী নিজ উম্মাতের উপর বদদুআ করেছিলেন, ফলে তাদেরকে ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে?

উত্তরঃ নূহ (আঃ)। (সূরা নূহঃ ২৬)

457. প্রশ্নঃ মূসা (আঃ) কেন মিসর ছেড়ে মাদায়েন শহরে চলে গিয়েছিলেন?

উত্তরঃ এ জন্যে যে তিনি একজন কিবতীকে হত্যা করেছিলেন। (সূরা কাসাসঃ ১৫)

458. প্রশ্নঃ দুজন নবী তাঁদের সন্তানদের উদ্দেশ্যে যে নসীহত করেছেন তা উল্লেখ করে আল্লাহ বলেন, “হে আমার

সন্তানগণ নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের জন্য দ্বীন ইসলামকে মনোনিত করেছেন। অতএব তোমরা মুসলমান না হয়ে

মৃত্যু বরণ করো না”। নবী দুজন কে কে?

উত্তরঃ ইবরাহীম ও ইয়াকূব (আঃ)। (সূরা বাকারাঃ ১৩২)

459. প্রশ্নঃ পূর্ববর্তী জাতীর মধ্যে কোন জাতী সবচেয়ে বেশী শক্তিশালী ছিল?

উত্তরঃ আদ জাতী। (সূরা ফুস্‌সিলাতঃ ১৫)

460. প্রশ্নঃ একজন নবী আরেক নবীর কাছে তাঁর কন্যাকে বিবাহ করার জন্য প্রস্তাব করেন। সেই নবী দুজনের

উত্তরঃ শুআইব (আঃ) মূসা (আঃ)এর নিকট প্রস্তাব পেশ করেন।

461. প্রশ্নঃ আল্লাহর একজন নবী কাফেরদের হেদায়াতের পথে আনতে না পেরে নিজের দুর্বলতার বিষয় উল্লেখ

করে আল্লাহর কাছে দুআ করেছিলেন, “আমি পরাজিত, আপনি আমাকে সাহায্য করুন”? কে ছিলেন সেই নবী?

উত্তরঃ নূহ (আঃ)। (সূরা কামারঃ ১০)

462. প্রশ্নঃ কোন নবীর সমপ্রদায় আল্লাহকে ¯^‡Pv‡L দেখার আবেদন করেছিল?

উত্তরঃ মূসা (আঃ) এর সমপ্রদায়।

463. প্রশ্নঃ কোন দুজন নবী মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর আগমণের ব্যাপারে সুসংবাদ প্রদান

উত্তরঃ ইবরাহীম ও ঈসা (আঃ)।

464. প্রশ্নঃ ইয়াকূব (আঃ)এর আরেক নাম কি?

465. প্রশ্নঃ ইউনূস (আঃ)এর আরেক নাম কি ?

466. প্রশ্নঃ ঈসা (আঃ)এর আরেক নাম কি?

467. প্রশ্নঃ কোন্‌ কোন্‌ নবীর নাম জন্মের পূর্বেই রাখা হয়েছে?

উত্তরঃ (ক) মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর জন্মের পূর্বেই তাঁর নাম রাখা হয়েছে আহমাদ (সূরা

(খ) ইয়াহইয়া (আঃ) (সূরা মারইয়ামঃ ৭)

(গ) ঈসা (আঃ) (সূরা আল ঈমরানঃ ৪৫)

(ঘ) ইসহাক (আঃ) ও ইয়াকূব (আঃ) (সূরা হূদঃ ৭১)

468. প্রশ্নঃ আদম ও শীছ (আঃ)এর পর যিনি নবী হিসেবে এসেছেন তিনি সর্বপ্রথম কলম দ্বারা লিখেন। আল্লাহ

তাঁকে সিদ্দীক হিসেবে কুরআনে আখ্যা দিয়েছেন। তাঁর নাম কি?

উত্তরঃ ইদরীস (আঃ)।

469. প্রশ্নঃ পূর্ববর্তী সমস্ত নবীর অধিকাংশ উম্মত তাঁদের সাথে কুফরী করেছে, তাঁরা যে মিশন নিয়ে এসেছিলেন

তা প্রত্যাখ্যান করেছে। কিন্তু একজন নবীর উম্মত সবাই ঈমান এনেছিলেন। সেই নবীর নাম কি?

উত্তরঃ ইউনুস (আঃ)। (সূরা ইউনুসঃ ৯৮)

470. প্রশ্নঃ একজন নবীকে কিশোর অবস্থাতেই আল্লাহ জ্ঞানী করেছিলেন এবং তাকে তাওরাতের শিক্ষা

উত্তরঃ ইয়াহইয়া (আঃ)। (সূরা মারইয়ামঃ ১২)

471. প্রশ্নঃ কোন নবী সম্পর্কে তাঁর জন্মের পূর্বেই বিজ্ঞ বলে সুসংবাদ দেয়া হয়েছিল?

উত্তরঃ ইসমাঈল (আঃ)। (সূরা হিজরঃ ৫৩)

(পর্ব- ৮)

বিষয়: সাহাবায়ে কেরাম (রা:)

৪৭২. প্রশ্নঃ সাহাবী কাকে বলে?

উত্তরঃ যাঁরা ঈমানের সাথে নবী (সাঃ)এর সাথে সাক্ষাত লাভ করেছেন এবং ঈমানের উপর অটল থেকে মৃত্যু বরণ

করেছেন তাঁদেরকে বলা হয় সাহাবী।

৪৭৩.  প্রশ্নঃ জান্নাতের সুসংবাদপ্রাপ্ত দশজন সাহাবী কে কে?

উত্তরঃ (১) আবু বকর (রাঃ)

(২) ওমর বিন খাত্তাব (রাঃ)

(৩) ঊছমান বিন আফ্‌ফান (রাঃ)

(৪) আলী বিন আবী তালেব (রাঃ)

(৫) আবদুর রহমান বিন আউফ (রাঃ)

(৬) সাঈদ বিন যায়েদ (রাঃ)

(৭) সাদ বিন আবী ওয়াক্কাস (রাঃ)

(৮) আবু উবাইদা ইবনুল জার্‌রাহ (রাঃ)

(৯) ত্বলহা বিন উবাইদুল্লাহ (রাঃ)

(১০) যুবাইর বিন আওয়াম (রাঃ)

৪৭৪. প্রশ্নঃ ইসলামের চার খলীফার নাম কি?

উত্তরঃ ১) আবু বকর (রাঃ)

২) ওমর বিন খাত্তাব (রাঃ)

৩) উছমান বিন আফ্‌ফান (রাঃ)

৪) আলী বিন আবী তালেব (রাঃ)

৪৭৫. প্রশ্নঃ কোন সাহাবী সম্পর্কে নবী (সাঃ) বলেন, আমার পরে নবী এলে তিনি হতেন? কিন্তু আমার পর কোন

উত্তরঃ ওমর বিন খাত্তাব (রাঃ)।

৪৭৬. প্রশ্নঃ কোন সাহাবীকে বলা হয় যুন্‌নূরাইন?

উত্তরঃ উছমান বিন আফ্‌ফান (রাঃ)।

৪৭৭. প্রশ্নঃ কেন উছমান বিন আফ্‌ফান (রাঃ)কে যুন্‌নূরাইন বলা হত।

উত্তরঃ এজন্যে যে তিনি নবী (সাঃ)এর দুকন্যাকে বিবাহ করেছিলেন। (প্রথমে যায়নাব, তাঁর মৃত্যুর পর উম্মে কুলছুম

রাঃকে বিবাহ করেছিলেন)

৪৪৮. প্রশ্নঃ কোন সাহাবীর উপাধী ছিল আবু তুরাব।

৪৪৯. প্রশ্নঃ কোন্‌ সাহাবীকে দেখলে ফেরেশতারা লজ্জিত হতেন?

উত্তরঃ উছমান বিন আফ্‌ফান (রাঃ)। তিনি ছিলেন খুবই লাজুক।

৪৫০.প্রশ্নঃ কোন সাহাবীর ঈমানের সাথে সমস্ত মানুষের ঈমান ওযন করলে তাঁর ঈমানের পাল্লা ভারী হয়ে যাবে?

উত্তরঃ আবু বকর (রাঃ)

৪৫১.প্রশ্নঃ আবু বকর (রাঃ) এর প্রকৃত নাম কি?

উত্তরঃ আবদুল্লাহ বিন উছমান (রাঃ)।

৪৫২. প্রশ্নঃ কোন সাহাবী নবী (সাঃ)এর দশ বছর খিদমত করেন?

উত্তরঃ আনাস বিন মালেক (রাঃ)

৪৫৩.প্রশ্নঃ কোন সাহাবীকে বলা হত জীবন্ত শহীদ?

উত্তরঃ ত্বলহা বিন উবাইদুল্লাহ (রাঃ)।

৪৫৪. প্রশ্নঃ কোন সাহাবীকে বলা হত উড়ন্ত শহীদ?

উত্তরঃ জাফার বিন আবী তালেব (রাঃ)।

৪৫৫. প্রশ্নঃ ফেরেশ্‌তাগণ কোন সাহাবীর গোসল দিয়েছিলেন?

উত্তরঃ হানযালা (রাঃ)।

৪৫৬. প্রশ্নঃ কোন সাহাবীকে বলা হত সাইফুল্লাহ বা আল্লাহর তরবারী?

উত্তরঃ খালিদ বিন ওয়ালিদ (রাঃ)।

৪৫৭.প্রশ্নঃ খালিদ বিন ওয়ালিদ কোন্‌ যুদ্ধে নয়টি তরবারী ভেঙ্গেছিলেন?

৪৫৮. প্রশ্নঃ খালিদ বিন ওয়ালিদ কোন যুদ্ধে সাইফুল্লাহ উপাধী লাভ করেছিলেন?

৪৫৯. প্রশ্নঃ কোন সাহাবীকে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) গোপন বিষয় জানাতেন?

উত্তরঃ হুযাইফা ইবনুল ইয়ামান (রাঃ)।

৪৬০. প্রশ্নঃ কোন সাহাবী রাসূলুল্লাহ (সাঃ)এর সময় ফতোয়া দিতেন?

উত্তরঃ মুআয বিন জাবাল (রাঃ)।

৪৬১. প্রশ্নঃ কোন সাহাবীর মৃত্যুতে আল্লাহর আরশ কেঁপে উঠেছিল?

উত্তরঃ সাদ বিন মুআয (রাঃ)

৪৬২. প্রশ্নঃ কোন সাহাবীকে জান্নাতের আটটি দরজা থেকেই আহবান করা হবে?

উত্তরঃ আবু বকর (রাঃ)।

৪৬৩. প্রশ্নঃ কোন সাহাবীকে সাইয়্যেদুশ্‌ শোহাদা বলা হয়?

উত্তরঃ হামযা বিন আবদুল মুত্তালেব (রাঃ)

৪৬৪. প্রশ্নঃ হামযা (রাঃ) কোন যুদ্ধে শহীদ হন?

৪৬৫.প্রশ্নঃ কোন সাহাবীকে নবী (সাঃ) ইসলামের প্রথম দূত (শিক্ষক) হিসেবে মদীনায় প্রেরণ করেন?

উত্তরঃ মুসআব বিন উমাইর (রাঃ)।

৪৬৬. প্রশ্নঃ কোন সাহাবী নবী (সাঃ)এর চাচা এবং দুধ ভাই ছিলেন?

উত্তরঃ হামযা বিন আবদুল মুত্তালিব (রাঃ)।

৪৬৭.প্রশ্নঃ নবী (সাঃ) মেরাজে গিয়ে কোন সাহাবীর পায়ের আওয়ায শুনতে পান?

উত্তরঃ বেলাল বিন রাবাহ (রাঃ)।

৪৬৮. প্রশ্নঃ কোন সাহাবী ইসলামের প্রথম মুআয্‌যিন ছিলেন?

উত্তরঃ বেলাল বিন রাবাহ (রাঃ)।

৪৬৯. প্রশ্নঃ নবী (সাঃ) এর কতজন মুআয্‌যিন ছিলেন?

উত্তরঃ তিনজন। বেলাল বিন রাবাহ, আবদুল্লাহ বিন উম্মে মাকতূম ও আবু মাহযূরা (রাঃ)

৪৭০. প্রশ্নঃ নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কোন সাহাবীর নিকট থেকে কুরআন তেলাওয়াত শুনেছেন?

উত্তরঃ আবদুল্লাহ বিন মাসউদ (রাঃ)

৪৭১. প্রশ্নঃ কোন সাহাবী সূরা বাকারা তেলাওয়াত করার সময় আসমান থেকে ফেরেশতা নাযিল হয়েছিল?

উত্তরঃ উসাইদ বিন হুযাইর (রাঃ)।

৪৭২. প্রশ্নঃ কোন সাহাবীকে তরজুমানুল কুরআন (কুরআনের অনুবাদক) ও সাইয়্যেদুল মুফাস্‌সিরীন (শ্রে

তাফসীরকারক) বলা হত?

উত্তরঃ আবদুল্লাহ বিন আব্বাস (রাঃ)।

৫৭৩. প্রশ্নঃ কোন সাহাবীর জন্য নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দুআ করেছিলেন, “হে আল্লাহ তাকে

দ্বীনের গভীর জ্ঞান দান কর এবং কুরআনের তাফসীর শিক্ষা দান কর”?

উত্তরঃ আবদুল্লাহ বিন আব্বাস (রাঃ)

515.    প্রশ্নঃ কোন তিনজন সাহাবী তাবুক যুদ্ধে অংশ নেয়া থেকে বিরত ছিলেন?

উত্তরঃ (১) মুরারা বিন রাবীআ (২) কাব বিন মালেক (৩) হিলাল বিন উমাইয়্যা (রাঃ)

516.প্রশ্নঃ কোন সাহাবী দুআ করলেই আল্লাহ কবূল করতেন?

উত্তরঃ সাদ বিন আবী ওয়াক্কাস (রাঃ)।

517.    প্রশ্নঃ জান্নাতের সুসংবাদ প্রাপ্ত দশজন সাহাবীর মধ্যে সবশেষে কার মৃত্যু হয়?

উত্তরঃ সাদ বিন আবী ওয়াক্কাস (রাঃ)।

518.    প্রশ্নঃ কোন সাহাবী নবী (সাঃ)এর মামা ছিলেন?

উত্তরঃ সাদ বিন আবী ওয়াক্কাস (রাঃ)।

519.প্রশ্নঃ কোন সাহাবীকে নবী (সাঃ)এর কবি বলা হত?

উত্তরঃ হাস্‌সান বিন ছাবেত (রাঃ)।

520.    প্রশ্নঃ কোন সাহাবী সম্পর্কে নবী (ছাঃ) বলেন, আমার উম্মতের মধ্যে হালাল-হারাম সম্পর্কে সর্বাধিক

উত্তরঃ মুআয বিন জাবাল (রাঃ)।

521.প্রশ্নঃ বদর যুদ্ধে জনৈক সাহাবীর তরবারী ভেঙ্গে গেলে নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার হাতে

একটি ডাল তুলে দেন। ডালটি তরবারির কাজ করে। সাহাবীর নাম কি?

উত্তরঃ উক্কাশা বিন মেহসান (রাঃ)।

522.     প্রশ্নঃ কোন সাহাবী সম্পর্কে নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, তুমি দুনিয়া ও আখেরাতে

উত্তরঃ আলী বিন আবু তালেব (রাঃ)।

523.    প্রশ্নঃ কোন সাহাবীকে নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মক্কা বিজয়ের পূর্বে ওমরা করার

অনুমতি দেন? তিনি প্রকাশ্যে তালবিয়া পড়ে মক্কা প্রবেশ করেন কিন্তু মুশরেকরা বাধা দেয়ার সাহস পায়নি।

উত্তরঃ ছুমামা বিন আছাল (আঃ)।

524.    প্রশ্নঃ কোন খলীফাকে পঞ্চম খোলাফায়ে রাশেদা বলা হয়?

উত্তরঃ উমাইয়া খলীফা ওমর বিন আবুদল আযীয (রহঃ)কে।

525.    প্রশ্নঃ সর্বপ্রথম কোন সাহাবী রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)কে ইসলামী অভিভাদন সালাম

উত্তরঃ আবু যর গিফারী (রাঃ)

526.    প্রশ্নঃ কোন সাহাবী সম্পর্কে নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, “প্রত্যেক নবীর একজন

বিশেষ সাহায্যকারী থাকে, আমার সাহায্যকারী হচ্ছে..?

উত্তরঃ যুবাইর বিন আওয়াম (রাঃ)

527.    প্রশ্নঃ কোন সাহাবীকে খোঁড়া শহীদ বলা হয়?

উত্তরঃ আমর বিন জামূহ (রাঃ)। কেননা তিনি খোঁড়া অবস্থায় উহুদ যুদ্ধে অংশ নিয়ে শহীদ হয়েছিলেন।

528.     প্রশ্নঃ কোন সাহাবীকে রাস্তা দিয়ে চলতে দেখলে শয়তান অন্য রাস্তা দিয়ে চলত?

উত্তরঃ ওমর বিন খাত্তাব (রাঃ)।

529.     প্রশ্নঃ ওমর (রাঃ)কে ফারূক্ব নামে অভিহিত করার কারণ কি ছিল?

উত্তরঃ কেননা তাঁর ইসলাম গ্রহণের কারণে প্রকাশ্যে ইসলাম ও কুফরের মাঝে পার্থক্য সুস্পষ্ট হয়ে পড়ে।

530.  প্রশ্নঃ কোন সাহাবীকে নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছিলেন, “হারূন যেমন মূসার

স্থলাভিষিক্ত ছিলেন, তুমি আমার নিকট সেই রকম মর্যাদা সম্পন্ন, তবে আমার পরে কোন নবী নেই।”

       উত্তরঃ আলী (রাঃ)কে।

531.    প্রশ্নঃ ২০ বছর বয়স পূর্ণ হওয়ার আগেই কোন সাহাবীকে একটি যুদ্ধের সেনাপতি নিয়োগ করা হয়?

উত্তরঃ উসামা বিন যায়েদ (রাঃ)কে।

532.  প্রশ্নঃ সর্বপ্রথম কোন সাহাবী কাবা ঘরে আযান প্রদান করেন?

533. প্রশ্নঃ কোন সাহাবী সবচেয়ে বেশী হাদীছ বর্ণনা করেন?

উত্তরঃ আবু হুরায়রা (রাঃ)।

 534.     প্রশ্নঃ আবু হুরায়রা (রাঃ) এর আসল নাম কি?

উত্তরঃ আবদুর রহমান বিন সাখার আদ্‌ দাওসী (রাঃ)।

535.  প্রশ্নঃ কোন সাহাবীকে জিনে হত্যা করেছিল?

উত্তরঃ সাদ বিন উবাদা (রাঃ)কে।

536.     প্রশ্নঃ কোন সাহাবীকে সর্বশ্রে কুরআন পাঠক বলা হত?

উত্তরঃ উবাই বিন কাব (রাঃ)।

537.   প্রশ্নঃ কোন সাহাবীকে আবু বকর (রাঃ) কুরআন একত্রিত করার দায়িত্ব প্রদান করেন?

উত্তরঃ যায়েদ বিন ছাবেত (রাঃ)।

538.   প্রশ্নঃ কোন সাহাবীর পরামর্শে নবী (সাঃ) মদীনায় খন্দক খনন করেন?

উত্তরঃ সালমান ফারেসী (রাঃ)।

539.    প্রশ্নঃ কোন মহিলা সাহাবী সবচেয়ে বেশী হাদীছ বর্ণনা করেন?

উত্তরঃ উম্মুল মুমেনীন আয়েশা (রাঃ)।

540.    প্রশ্নঃ জনৈক সাহাবী উহুদ যুদ্ধে শহীদ হন। কিন্তু আল্লাহর জন্যে তিনি একটি সিজদাও করার সুযোগ

উত্তরঃ আমর বিন ছাবেত বিন ক্বায়স (রাঃ)। কেননা তিনি ইসলাম গ্রহণ করেই যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেন।

541.প্রশ্নঃ কোন সাহাবী সর্বশেষ মৃত্যু বরণ করেন?

উত্তরঃ আবু তুফাইল আমের বিন ওয়াছেলা (রাঃ)।

542.    প্রশ্নঃ কোন্‌ সাহাবীকে হাজ্জাজ বিন ইউসুফ মক্কায় হত্যা করেছিল?

উত্তরঃ আবদুল্লাহ বিন যুবাইর (রাঃ)।

543.    প্রশ্নঃ কোন সাহাবী দাজ্জালকে দেখেছেন যে, সে একটি দ্বীপে বন্দী অবস্থায় রয়েছে?

উত্তরঃ তামীম বিন আওস আদ্‌দারী (রাঃ)।

544.    প্রশ্নঃ কোন সাহাবীর আকৃতী ধারণ করে নবী (ছাঃ)এর নিকট জিবরীল ফেরেশতা নাযিল হতেন।

উত্তরঃ দেহইয়া আল কালবী (রাঃ)।

545.    প্রশ্নঃ কোন সাহাবী কিসরার হাতের বাদশাহী চুরি পরিধান করেন?

উত্তরঃ সুরাকা বিন মালেক (রাঃ)।

546.    প্রশ্নঃ কোন সাহাবী মানত করেছিলেন যে, তিনি যেন কোন মুশরিককে স্পর্শ না করেন এবং কোন

মুশরিকও যেন তাকে স্পর্শ করতে না পারে?

উত্তরঃ আছেম বিন ছাবেত (রাঃ)।

547.    প্রশ্নঃ কোন সাহাবী গোপনে নয় বরং প্রকাশ্যে হিজরত করেছিলেন?

উত্তরঃ ওমার বিন খাত্তাব (রাঃ)।

548.    প্রশ্নঃ কোন সাহাবীর উপাধি ছিল সাইফুল্লাহ বা আল্লাহর উন্মুক্ত তরবারী।

উত্তরঃ খালেদ বিন ওয়ালিদ (রাঃ)।

]549.    প্রশ্নঃ কোন সাহাবী সর্বপ্রথম আল্লাহর পথে তীর নিক্ষেপ করেন?

উত্তরঃ সাদ বিন আবী ওয়াক্কাস (রাঃ)।

550.   প্রশ্নঃ সর্বপ্রথম কোন সাহাবীকে বায়তুল মালের দায়িত্ব প্রদান করা হয়?

উত্তরঃ আবু উবাইদা বিন জার্‌রাহ (রাঃ)।

551.    প্রশ্নঃ কোন সাহাবীর উপাধি ছিল এ উম্মতের আমানতদার।

উত্তরঃ আবু ঊবাইদা বিন জার্‌রাহ (রাঃ)।

552.    প্রশ্নঃ কোন খলীফা সর্বপ্রথম আমীরুল মুমেনীন উপাধিতে ভূষিত হন?

উত্তরঃ ওমর বিন খাত্তাব (রাঃ)।

553.   প্রশ্নঃ রাসূলুল্লাহ (সাঃ) মদীনায় হিজরত করার পর সর্বপ্রথম যে শিশু জন্ম গ্রহণ করে তার নাম কি?

উত্তরঃ আবদুল্লাহ বিন যুবাইর (রাঃ)।

554.    প্রশ্নঃ আবু বকর ও আবদুল্লাহ বিন যুবাইর (রাঃ)এর মাঝে আত্মীয়তার সম্পর্ক কিরূপ?

উত্তরঃ আবু বকর (রাঃ) আবদুল্লাহ বিন যুবাইর (রাঃ)এর নানা।

555.   প্রশ্নঃ সর্বপ্রথম কোন সাহাবী হিজরী সন গণনার প্রবর্তন করেন?

উত্তরঃ ওমর বিন খাত্তাব (রাঃ)।

556.    প্রশ্নঃ কোন সাহাবী সর্বপ্রথম নিহত হওয়ার পূর্বে দুরাকাত নামাযের প্রচলন করেন?

উত্তরঃ খুবাইব বিন আদী (রাঃ)।

557.   প্রশ্নঃ আনসারী সাহাবীদের মধ্যে সর্বপ্রথম কোন সাহাবী ইসলাম গ্রহণ করেন?

উত্তরঃ মুআয বিন আফরা (রাঃ)।

558.   প্রশ্নঃ সর্বপ্রথম কোন সাহাবী হাবশায় (আবিসিনিয়া) হিজরত করেন?

উত্তরঃ উছমান বিন আফ্‌ফান (রাঃ)।

559.    প্রশ্নঃ কোন সাহাবীর উপাধি ছিল আসাদুল্লাহ।

উত্তরঃ আলী বিন আবী তালিব (রাঃ)।

560. প্রশ্নঃ কোন সাহাবী সম্পর্কে নবী (সাঃ) বলেন, আমার এ ছেলে নেতা, সম্ভবতঃ আল্লাহ তার মাধ্যমে

মুসলমানদের বিবাদমান বড় দুটি দলের মধ্যে বিরোধ মিমাংসা করে দিবেন?

উত্তরঃ হাসান বিন আলী (রাঃ)

561.প্রশ্নঃ কোন দুজন সাহাবীকে জান্নাতের যুবকদের সরদার বলা হয়েছে?

উত্তরঃ হাসান ও হুসাইন (রাঃ)কে।

562.    প্রশ্নঃ কোন সাহাবী নবী (সাঃ)এর কবর খনন করেছিলেন?

উত্তরঃ আবু তালহা (রাঃ)।

563.    প্রশ্নঃ কোন মহিলা সাহাবীকে আল্লাহ তাআলা জিবরীল মারফত সালাম পাঠিয়েছেন?

উত্তরঃ খাদীজা (রাঃ)।

564.    প্রশ্নঃ রাসূলুল্লাহ (সাঃ) কাকে সবচেয়ে বেশী ভালবাসতেন?

উত্তরঃ আয়েশা (রাঃ)কে?

565.     প্রশ্নঃ পুরুষদের মধ্যে কাকে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) সবচেয়ে বেশী ভালবাসতেন?

উত্তরঃ আবু বকর (রাঃ)কে?

566.        প্রশ্নঃ রাসূলুল্লাহ (সাঃ)এর কোন্‌ স্ত্রী ছিলেন অধিক সিয়াম পালন কারীনী ও অধিক নফল নামায

উত্তরঃ হাফছা বিনতে ওমর (রাঃ)।

567.    প্রশ্নঃ উহুদ যুদ্ধে জনৈক মহিলা সাহাবীর পিতা, ভাই, চাচা ও চাচাতো ভাই শহীদ হন। যখন তিনি শুনলেন

নবী (সাঃ) বেঁচে আছেন, তখন বলেন তার সকল দুঃখ তুচ্ছ। সেই মহিলার নাম কি?

উত্তরঃ আসমা বিনতে ইয়াযীদ ইবনু সাকান (রাঃ)।

568.    প্রশ্নঃ স্বপ্নের মাধ্যমে নির্দেশ প্রাপ্ত হয়ে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) একটি বিবাহ করেন। কে ছিলেন সেই স্ত্রী?

উত্তরঃ আয়েশা (রাঃ)।

569.    প্রশ্নঃ রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর কোন স্ত্রীর পবিত্রতায় পবিত্র কুরআনে ১০ টি

উত্তরঃ আয়েশা (রাঃ)।

570.   প্রশ্নঃ রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর কোন স্ত্রীকে আল্লাহ তাআলা জিবরীল (আঃ)

মারফত সালাম দিয়েছেন?

571.    প্রশ্নঃ নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)একদা তাঁর জনৈক স্ত্রীকে তালাক প্রদান করেন। তখন

জিবরীল (আঃ) এসে তাঁকে বলেন, আপনি তাকে ফিরিয়ে নিন। কেননা তিনি অধিক ছিয়াম পালনকারীনী এবং অধিক নফল

নামায আদায় কারীনী। আর তিনি জান্নাতে আপনার স্ত্রী। তাঁর নাম কি?

উত্তরঃ হাফছা বিনতে ওমর বিন খাত্তাব (রাঃ)

572.    প্রশ্নঃ নবী (সাঃ)এর কন্যা যায়নাব মৃত্যু বরণ করলে জনৈক মহিলা সাহাবী তাকে গোসল দেন। সেই মহিলার

উত্তরঃ উম্মে আত্বিয়্যা আনসারী (রাঃ)।

573.   প্রশ্নঃ কোন সেই সৌভাগ্যবান সাহাবী যার ইমামতিতে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) নামায আদায় করেছেন?

উত্তরঃ আবু বকর (রাঃ)।

574.    প্রশ্নঃ আবু বকর ব্যতীত আরেকজন সৌভাগ্যবান সাহাবী আছেন যার ইমামতিতে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) নামায

আদায় করেছেন। কে তিনি?

উত্তরঃ আবদুর রহমান বিন আউফ (রাঃ)।

575.   প্রশ্নঃ কোন সাহাবী বদর যুদ্ধে নিজ পিতা মুশরিক হওয়ার কারণে তাকে হত্যা করেন?

উত্তরঃ আবু উবাইদা ইবনুল জার্‌রাহ (রাঃ)।

576.    প্রশ্নঃ কোন মহিলা সাহাবীকে দুই শহীদের মাতা বলা হয়? তিনি মৃত্যু বরণ করলে রাসূল (সাঃ) নিজের জামা

দ্বারা কাফন পরান এবং নিজে তাকে কবরে রাখেন।

উত্তরঃ ফাতেমা বিনতে আসাদ (রাঃ)

577.   প্রশ্নঃ রাসূল (সাঃ)এর মৃত্যুর পর তাঁর স্ত্রীদের মধ্যে কে সর্বপ্রথম মৃত্যু বরণ করেন?

উত্তরঃ যায়নাব বিনতে জাহাশ (রাঃ)।

578.   প্রশ্নঃ কোন সাহাবী নবী (সাঃ)এর দশ বছর খেদমত করেন?

উত্তরঃ আনাস বিন মালেক (রাঃ)।

579.    প্রশ্নঃ কোন সাহাবীর জন্য নবী (সাঃ) দুআ করেছিলেন, “হে আল্লাহ তার ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্তুতি

বাড়িয়ে দাও এবং তাতে বরকত প্রদান কর।”

উত্তরঃ আনাস বিন মালেক (রাঃ)।

580.   প্রশ্নঃ কোন সাহাবী নবী (সাঃ)এর ওহী লিখক ছিলেন এবং আত্মীয়তার দিক থেকে তাঁর শ্যালক ছিলেন?

উত্তরঃ মুআবিয়া বিন আবু সুফিয়ান (রাঃ)।

581.    প্রশ্নঃ কোন সাহাবীর জান্নাতী স্ত্রীকে নবী (সাঃ) জান্নাতে দেখে এসেছেন?

উত্তরঃ ওমর বিন খাত্তাব (রাঃ)।

582.    প্রশ্নঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ৬৩ বয়সে মৃত্যু বরণ করেন। সাহাবীদের মধ্যে কে

কে এই বয়সে মৃত্যু বরণ করেছিলেন?

উত্তরঃ আবু বকর, ওমর ও আলী (রাঃ)।

583.   প্রশ্নঃ একজন মহিলা সাহাবী- দুবার হিজরত করেন, দুই ক্বিবলার দিকে নামায পড়েন, ¯^vgx মারা গেলে নিজে

তার গোসল দেন, নবীজীর সাথে বিদায় হজ্জে বের হয়ে রাস্তায় সন্তান প্রসব করেন। তাঁর নাম কি?

উত্তরঃ আসমা বিনতে উমাইস (রাঃ)।

584.    প্রশ্নঃ উহুদ যুদ্ধে কোন সাহাবীকে তীরন্দাজ বাহীনীর নেতৃত্ব দেয়া হয়?

উত্তরঃ আবদুল্লাহ বিন জুবাইর আনছারী (রাঃ)।

585.   প্রশ্নঃ কোন সাহাবী কাদেসিয়ার যুদ্ধে সেনাপতি ছিলেন?

উত্তরঃ সাদ বিন আবু ওয়াক্কাস (রাঃ)।

586.    প্রশ্নঃ রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর কন্যা যায়নাবের (রাঃ) স্বামী কে ছিলেন?

উত্তরঃ আবুল আস বিন রাবী (রাঃ)।

587.   প্রশ্নঃ কোন সেই সাহাবী যিনি রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর দুকন্যা প্রথমে রুকাইয়্যা ও

পরে উম্মে কুলছুমের (রাঃ) ¯^vgx ছিলেন?

উত্তরঃ উছমান বিন আফ্‌ফান (রাঃ)।

588.   প্রশ্নঃ মক্কা বিজয়ের দিন নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কারে হাতে কাবা ঘরের চাবি দিয়েছিলেন?

উত্তরঃ উছমান বিন ত্বলহা (রাঃ)।

589.    প্রশ্নঃ কোন সাহাবী সম্পর্কে নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, তার পদযুগল ক্বিয়ামতের

দিবসে উহুদ পাহাড়ের চাইতে অধিক ভারী হবে?

উত্তরঃ আবদুল্লাহ বিন মাসঊদ (রাঃ)।

590.    প্রশ্নঃ যে সাহাবী ¯^‡cœ আযান দেয়ার পদ্ধতি শিখেছিলেন তাঁর নাম কি?

উত্তরঃ আবদুল্লাহ বিন যায়দ ইবনে আব্দে রাব্বেহী (রাঃ)।

591.প্রশ্নঃ উম্মতে মুহাম্মাদীর মধ্যে সব চাইতে করুণাশীল ব্যক্তি কে ছিলেন?

উত্তরঃ আবু বকর (রাঃ)।

592.    প্রশ্নঃ কোন নারী জান্নাত বাসীদের রমনীদের সর্দার?

উত্তরঃ ফাতিমা (রাঃ)।

593.    প্রশ্নঃ জনৈক ব্যক্তি নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর চাচা হামযা (রাঃ)কে উহুদ যুদ্ধে শহীদ

করেন। পরবর্তিতে তিনি মুসলমান হয়ে যান। কিন্তু তিনি যখনই নবী (সাঃ)এর সম্মুখে আসতেন তিনি বলতেন:

তোমাকে দেখলেই চাচা হামযার কথা আমার মনে এসে যায়, তাই তুমি আমার সামনে এসো না। সেই ব্যক্তির নাম কি?

উত্তরঃ ওয়াহশি (রাঃ)

594.    প্রশ্নঃ জনৈক সাহাবী যাতু সালাসেল যুদ্ধে ¯^cœ‡`v‡li কারণে নাপাক হয়ে যান। কিন্তু পানি ভীষণ ঠান্ডা

হওয়ার কারণে তিনি গোসল না করে তায়াম্মুম করেন এবং দলীল পেশ করেন যে, আল্লাহ বলেনঃ “তোমরা

নিজেদেরকে হত্যা করো না।” (সূরা নিসাঃ ২৯)। নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর এই ঘটনা শুনে

হেঁসেছেন কিন্তু কোন মন্তব্য করেন নি। (আবু দাউদ) উক্ত সাহাবীর নাম কি?

উত্তরঃ আমর বিন আস (রাঃ)।

595.    প্রশ্নঃ কোন মহিলা সাহাবীকে কুরআনের প্রহরী হিসেবে আখ্যা দেয়া হয়েছে?

উত্তরঃ হাফসা বিনতে ওমর বিন খাত্তাব (রাঃ)

(পর্ব- ৮)

বিষয়: পবিত্রতা ও সালাত

515. প্রশ্নঃ নামায বিশুদ্ধ হওয়ার পূর্বশর্ত কি?

516. প্রশ্নঃ ওযুর ফরয কয়টি ও কি কি?

উত্তরঃ ওযুর ফরয ৬টি।

ক) সমস্ত মুখমন্ডল ধৌত করা।

খ) কুনুই পর্যন্ত দুহাত ধৌত করা।

গ) সম্পূর্ণ মাথা মাসেহ করা।

ঘ) টাখনুসহ দুপা ধৌত করা।

ঙ) তারতীব (ধারাবাহিকতা) রক্ষা করা।

ছ) পরষ্পর করা। (এক অঙ্গ না শুকাতে অন্য অঙ্গ ধৌত করা)

517. প্রশ্নঃ ওযুর অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ কি তিনবার করে ধৌত করা ওয়াজিব?

উত্তরঃ না, বরং সুন্নাত।

518. প্রশ্নঃ ওযুর শুরুতে কি বলতে হয়?

519. প্রশ্নঃ রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, “ক্বিয়ামত দিবসে আমার উম্মতের পরিচয় হচ্ছে,

তাদের কপাল ও পদযুগল শুভ্র আলোকময় হবে।” কি কারণে তা হবে?

520. প্রশ্নঃ কোন সময় দুহাত কব্জি পর্যন্ত ধৌত করা ওয়াজিব?

উত্তরঃ নিদ্রা থেকে উঠে পানির পাত্রে হাত প্রবেশ করানোর আগে।

521. প্রশ্নঃ টয়লেটে প্রবেশ ও সেখান থেকে বের হওয়ার আদব কি?

উত্তরঃ প্রথমে বাম পা তারপর ডান দিয়ে প্রবেশ করতে হবে। বের হওয়ার সময় প্রথমে ডান পা তারপর বাম দিয়ে

522. প্রশ্নঃ ওযু নামায বা যে কোন ইবাদতের শুরুতে নাওয়াইতু.. বলে মুখে নিয়ত উচ্চারণ করার হুকুম কি?

উত্তরঃ নাজায়েয- বিদআত। (হাদীছে এর কোন প্রমাণ নেই)

523. প্রশ্নঃ কোনো পাত্রে কুকুরে মুখ দিলে কি করতে হবে?

উত্তরঃ পাত্রের বস্তু ফেলে দিয়ে উহা সাতবার ধৌত করতে হবে একবার মাটি দিয়ে।

524. প্রশ্নঃ পেশাব-পায়খান করার সময় কিবলার দিকে মুখ করে বসার বিধান কি?

উত্তরঃ ফাঁকা মাঠে পেশাব-পায়খানা করলে কিবলা সামনে বা পিছনে রাখা জায়েয নয়।

525. প্রশ্নঃ কোন দুটি কাজে মানুষের লানত পেতে হয়?

উত্তরঃ রাস্তা এবং ছায়াদ্বার বা ফলদ্বার বৃক্ষের নীচে পেশাব-পায়খানা করলে।

526. প্রশ্নঃ পেশাব করার পর কুলুখ ধরে চল্লিশ কদম হাঁটার বিধান কি?

উত্তরঃ বিদআত। (হাদীছে এর কোন প্রমাণ নেই)

527. প্রশ্নঃ পবিত্রতার জন্য পানি ব্যবহার করার পূর্বে কি অবশ্যই কলুখ ব্যবহার করতে হবে?

উত্তরঃ আবশ্যক নয়। এটা বাড়াবাড়ি।

528. প্রশ্নঃ যদি সন্দেহ হয় যে পেশাব শেষ করার পরও যেন কিছু বের হচ্ছে। তখন কি করতে হবে?

উত্তরঃ সন্দেহের দিকে ভ্রুক্ষেপ করবে না। ওযু শেষ করে লজ্জাস্থানের সামনে পানির ছিটা দিবে।

529. প্রশ্নঃ কোন্‌ কোন্‌ বস্তু দ্বারা কলুখ নেয়া জায়েয নয়?

উত্তরঃ হাড়, গোবর, খাদ্য জাতীয় এবং প্রত্যেক সম্মানিত বস্তু।

530. প্রশ্নঃ ওযুতে তারতীব রক্ষা করার অর্থ কি?

উত্তরঃ এর অর্থ হচ্ছে, ধারাবাহিকতা রক্ষা করা অর্থাৎ- ওযুর অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ যেটা আগে ধোয়ার নিয়ম সেটার

আগে অন্যটা না ধোয়া।

531. প্রশ্নঃ পরস্পর ওযু করার অর্থ কি?

উত্তরঃ এক অঙ্গ ধোয়ার পর পরবর্তী অঙ্গ ধৌত করতে এতটুকু দেরী না করা যাতে আগের অঙ্গ শুকিয়ে যায়।

532. প্রশ্নঃ ওযুতে ঘাড় মাসেহ করার বিধান কি?

উত্তরঃ বিদআত, কেননা এক্ষেত্রে কোন সহীহ হাদীছ নেই।

533. প্রশ্নঃ কোন্‌ কোন্‌ কাজের জন্য ওযু আবশ্যক?

উত্তরঃ নামায, কাবা ঘরের তওয়াফ ও কুরআন স্পর্শ করার জন্য।

534. প্রশ্নঃ মেসওয়াক ব্যবহার করার হুকুম কি?

535. প্রশ্নঃ মেসওয়াক ব্যবহার করার উপকারিতা কি?

উত্তরঃ মুখের দুর্গন্ধ দূর হয় এবং এতে আল্লাহ সন্তুষ্ট হন।

536. প্রশ্নঃ বিশেষভাবে কখন মেসওয়াক করা সুন্নাত?

উত্তরঃ ওযুর পূর্বে, নামাযের পূর্বে, কুরআন পাঠের পূর্বে, নিদ্রা থেকে উঠার পর।

537. প্রশ্নঃ রোযাদার কি মেসওয়াক করতে পারে?

উত্তরঃ রোযাদারের মেসওয়াক করা সুন্নাত।

538. প্রশ্নঃ নাক থেকে রক্ত বের হলে কি ওযু নষ্ট হবে?

উত্তরঃ না, ওযু নষ্ট হবে না।

539. প্রশ্নঃ শরীরের কোন স্থান কেটে অল্প/বেশী রক্ত বের হলে ওযু থাকবে কি?

উত্তরঃ হ্যাঁ, এতে ওযু নষ্ট হয় না। কোন কোন ইমামের মতে অধিক রক্ত বের হলে ওযু নষ্ট হয়ে যায়।

540. প্রশ্নঃ ওযু ভঙ্গের কারণ কি?

উত্তরঃ পেশাব-পায়খানার রাস্তা দিয়ে কোন কিছু বের হওয়া, নিদ্রা প্রভৃতির মাধ্যমে অজ্ঞান হওয়া, কোন

আড়াল ছাড়া লজ্জাস্থান স্পর্শ করা, উটের মাংশ খাওয়া।

541. প্রশ্নঃ কি খেলে ওযু নষ্ট হয়?

উত্তরঃ উটের মাংশ খেলে ওযু নষ্ট হয়।

542. প্রশ্নঃ বসে বসে নিদ্রা গেলে কি ওযু নষ্ট হয়?

উত্তরঃ না, বসে বসে কোন কিছুতে হেলান না দিয়ে নিদ্রা গেলে ওযু নষ্ট হয় না।

543. প্রশ্নঃ ওযুর প্রারম্ভে দুহাত কব্জি পর্যন্ত ধৌত করা ওয়াজিব না সুন্নাত?

544. প্রশ্নঃ পবিত্রাবস্থায় মোজা পরিধান করলে কি তার উপর মাসেহ করা যাবে?

উত্তরঃ হ্যাঁ কোন অসুবিধা নেই।

545. প্রশ্নঃ কোন্‌ ধরনের পবিত্রতায় মোজার উপর মাসেহ চলবে?

উত্তরঃ ছোট নাপাকী থেকে পবিত্রতা অর্জনের ক্ষেত্রে।

546. প্রশ্নঃ মুক্বীম কতক্ষণ মোজার উপর মাসেহ করতে পারবে?

উত্তরঃ একদিন এক রাত বা ২৪ ঘন্টা।

547. প্রশ্নঃ মুসাফির কতদিন মোজার উপর মাসেহ করতে পারবে?

উত্তরঃ তিনদিন তিন রাত বা ৭২ ঘন্টা।

548. প্রশ্নঃ মোজার কোন্‌ স্থানে মাসেহ করতে হয়?

উত্তরঃ পায়ের উপর অংশ।

549. প্রশ্নঃ মোজার উপর মাসেহ কখন বাতিল হয়?

উত্তরঃ (১) গোসল ফরয হওয়ার কারণ ঘটলে এবং (২) নির্দিষ্ট সময় শেষ হলে।

550. প্রশ্নঃ গোসল ফরয হওয়ার দুটি কারণ বল?

উত্তরঃ বীর্যপাত হওয়া, স্ত্রী সহবাস করা।

551. প্রশ্নঃ ফরয গোসল বিশুদ্ধ হওয়ার পূর্বশর্ত কি নিয়ত করা?

উত্তরঃ হ্যাঁ, যেহেতু ফরয গোসল একটি ইবাদত।

552. প্রশ্নঃ ফরয গোসলের ক্ষেত্রে কোন বিষয়ে সবচেয়ে গুরুত্বারোপ করতে হবে?

উত্তরঃ সমস্ত শরীর ভিজানো- কোন কিছু যেন শুকনা না থাকে।

553. প্রশ্নঃ জুমআর দিন গোসল করা সুন্নাত না ওয়াজিব?

554. প্রশ্নঃ ইহরামের পূর্বে গোসল করা ওয়াজিব। সত্য না মিথ্যা?

উত্তরঃ মিথ্যা, বরং সুন্নাত।

555. প্রশ্নঃ নাপাক ব্যক্তির উপর কোন কাজটি করা হারাম? নামায 5 খানাপিনা 5?

556. প্রশ্নঃ হায়েয-নেফাস শেষ হলে গোসল করা সুন্নাত। সত্য না মিথ্যা?

উত্তরঃ মিথ্যা, বরং তখন গোসল করা ফরয।

557. প্রশ্নঃ স্ত্রী সহবাস করার পর যদি বীর্যপাত না হয়, তবে করার বিধান কি?

উত্তরঃ গোসল করা ওয়াজিব।

558. প্রশ্নঃ নাপাক ব্যক্তির উপর কি কি হারাম?

উত্তরঃ নামায, তওয়াফ, কুরআন স্পর্শ ও পাঠ করা, মসজিদে অবস্থান করা।

559. প্রশ্নঃ কোন ধরণের শুকনো বস্তু দ্বারা পবিত্রতা অর্জন করা যায়?

উত্তরঃ মাটি দ্বারা তায়াম্মুমের মাধ্যমে।

560. প্রশ্নঃ তায়াম্মুম করে নামায পড়ার পর সময় পার হওয়ার আগেই যদি পানি পাওয়া যায়, তবে নামায কি ফিরিয়ে

উত্তরঃ না, নামায ফিরিয়ে পড়তে হবে না।

561. প্রশ্নঃ কোন ধরণের অসুস্থতায় তায়াম্মুম করতে পারবে?

উত্তরঃ পানি ব্যবহার করলে যদি অসুখ বেড়ে যায়, বা ভাল হতে দেরী হয়, তবে তায়ম্মুম করতে পারবে।

562. প্রশ্নঃ কোন ধরণের নাপাকীতে তায়াম্মুম করতে পারবে?

উত্তরঃ ছোট-বড় সব ধরণের নাপাকীতে।

563. প্রশ্নঃ সংক্ষেপে তায়াম্মুমের পদ্ধতি উল্লেখ কর?

উত্তরঃ দুহাতে পবিত্র মাটি নিয়ে, তাতে ফুঁ দিয়ে মুখমন্ডল ও দুহাতের কব্জি পর্যন্ত মাসেহ করবে।

564. প্রশ্নঃ তায়াম্মুমের জন্য কয়বার মাটি নিতে হবে?

565. প্রশ্নঃ ঋতুবতী নারীর জন্য কি কি করা হারাম?

উত্তরঃ সহবাস, নামায, রোযা, তওয়াফ, কুরআন স্পর্শ করা, মসজিদে অবস্থান করা।

566. প্রশ্নঃ ঋতুবতী ছালাতের কাযা আদায় করবে না, কিন্তু রোযার কাযা আদায় করবে। সত্য না মিথ্যা?

567. প্রশ্নঃ ছালাত শব্দের আভিধানিক অর্থ কি?

568. প্রশ্নঃ মুসলমানদের উপর ছালাত কখন ফরয হয়?

উত্তরঃ মেরাজের রাতে।

569. প্রশ্নঃ ছালাত ইসলামের কয় b¤^i স্তম্ভ?

উত্তরঃ দ্বিতীয় স্তম্ভ।

570. প্রশ্নঃ ঈমানের পর মুসলমানদের উপর সর্বপ্রথম কোন্‌ ইবাদত ফরয করা হয়?

571. প্রশ্নঃ নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মৃত্যুর পূর্বে সর্বশেষ কোন বিষয়ে নসীহত করেন?

উত্তরঃ সালাত এবং দাস-দাসী চাকর-চাকরানীদের সাথে সদ্ববহারের।

572. প্রশ্নঃ মানুষ ক্বিয়ামতের মাঠে সর্বপ্রথম কোন বিষয়ে জিজ্ঞাসিত হবে?

উত্তরঃ ছালাত সম্পর্কে।

573. প্রশ্নঃ মেরাজে প্রথমে কত ওয়াক্ত নামায ফরয করা হয়? অতঃপর কত ওয়াক্তে তা স্থির হয়?

উত্তরঃ প্রথমে ৫০ ওয়াক্ত। পরে পাঁচ ওয়াক্তে স্থির হয়েছে।

574. প্রশ্নঃ সন্তানের বয়স কত হলে তাকে নামাযের আদেশ দিতে হবে?

575. প্রশ্নঃ কোন্‌ ইবাদত পরিত্যাগ করলে কুফরী হয়?

576. প্রশ্নঃ সর্বপ্রথম কখন আযান প্রচলিত হয়?

উত্তরঃ প্রথম হিজরীতে।

577. প্রশ্নঃ ক্বিয়ামতের দিন কোন ব্যক্তি সর্বোচ্চ কাঁধ বিশিষ্ট হবে?

578. প্রশ্নঃ যে ব্যক্তি বার বছর আযান দিবে তাকে কি পুরস্কার দেয়া হবে?

উত্তরঃ তাকে জান্নাতে দেয়া হবে।

579. প্রশ্নঃ একজন মানুষ অজ্ঞতা বশতঃ কাপড়ে নাপাকী নিয়ে নামায আদায় করেছে। তাকে কি করতে হবে?

উত্তরঃ নামায ফিরিয়ে পড়তে হবে না।

580. প্রশ্নঃ কোন কোন স্থানে নামায আদায় করা জায়েয নয়?

উত্তরঃ গোরস্থান, শৌচাগার, উট বাঁধার স্থান, ময়লাযুুক্ত স্থান এবং রাস্তার মধ্যে।

581. প্রশ্নঃ পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের নিয়ত কিভাবে করতে হবে?

উত্তরঃ প্রত্যেক নামাযের জন্য আলাদাভাবে অন্তরে নিয়ত করতে হবে। মুখে নিয়ত উচ্চারণ করা বিদআত।

582. প্রশ্নঃ কোন্‌ ধরণের নামাযের জন্য ক্বিবলামুখী হওয়া শর্ত?

উত্তরঃ শুধুমাত্র ফরয নামাযের জন্য।

583. প্রশ্নঃ কোন্‌ ধরণের নামায বিনা শর্তে আরোহীর উপর পড়া জায়েয?

উত্তরঃ সুন্নাত, নফল, বিতর ইত্যাদি।

584. প্রশ্নঃ কোন্‌ ধরণের নামায আরোহীর উপর ক্বিবলামুখী না হয়েও পড়া জায়েয?

উত্তরঃ সুন্নাত, নফল, বিতর ইত্যাদি।

585. প্রশ্নঃ ক্বিবলা অনুসন্ধান করে ব্যর্থ হয়ে অনুমান করে নামায আদায় করেছে। পরে জানতে পারল যে,

ক্বিবলার দিকে সে নামায পড়েনি। তাকে কি করতে হবে?

উত্তরঃ নামায হয়ে যাবে, উহা ফিরিয়ে পড়তে হবে না।

586. প্রশ্নঃ নামাযে মহিলাদের সতর কতটুকু?

উত্তরঃ মুখমন্ডল এবং কব্জি পর্যন্ত দুহাত ব্যতীত সমস্ত শরীর আবৃত করা ফরয।

587. প্রশ্নঃ নামায অবস্থায় কারো ওযু ভঙ্গ হয়ে গেলে কিভাবে বের হয়ে আসবে।

উত্তরঃ নিজের নাক ধরে বের হয়ে আসবে।

588. প্রশ্নঃ রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, “তার পানি পবিত্র এবং উহার মৃতপ্রাণী হালাল।”

কোন্‌ পানি সম্পর্কে তিনি একথা বলেছেন?

উত্তরঃ সমুদ্রের পানি।

589. প্রশ্নঃ কাফেরদের ব্যবহৃত পাত্র ব্যবহার করার হুকুম কি?

উত্তরঃ অন্য পাত্র না পেলে ভালভাবে ধুয়ে ব্যবহার করা যাবে।

590. প্রশ্নঃ রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, “কোন পান পাত্রে মাছি পড়লে, তাকে ডুবিয়ে দিবে,

তারপর মাছিটি ফেলে দিয়ে উক্ত পানীয় ব্যবহার করবে।” কেন তাকে ডুবাতে হবে?

উত্তরঃ কেননা মাছির এক ডানায় থাকে জীবানু আর অন্য ডানায় থাকে তার ঔষুধ।

591. প্রশ্নঃ কোন কারণে সর্বাধিক কবরের আযাব হয়ে থাকে?

উত্তরঃ শরীরে পেশাবের ছিটা লাগার কারণে।

592. প্রশ্নঃ নামায আদায়ের সর্বোত্তম সময় কোনটি?

উত্তরঃ প্রথম ওয়াক্ত। (সময় হওয়ার সাথে সাথে আদায় করা উত্তম।)

593. প্রশ্নঃ কোন্‌ নামায আদায় করলে মানুষ আল্লাহর যিম্মাদারীর মধ্যে এসে যায়?

উত্তরঃ ফজরের নামায।

594. প্রশ্নঃ কোন নামায জামাতের সাথে আদায় করলে অর্ধেক রাত্রি নফল নামায পড়ার ছোয়াব পাওয়া যায়?

595. প্রশ্নঃ কোন নামায জামাতের সাথে আদায় করলে পূর্ণ রাত্রি নফল নামায পড়ার ছোয়াব পাওয়া যায়?

উত্তরঃ ফজর নামায।

596. প্রশ্নঃ কোন দুরাকাত নামাযে একটি মাকবূল হজ্জ ও একটি মাকবূল উমরার ছোয়াব পাওয়া যায়?

উত্তরঃ ফজরের নামায পড়ে স্বীয় মুসল্লায় বসে থেকে সূর্য উঠার পর দুরাকাত নামায পড়লে।

597. প্রশ্নঃ কোন নামায ছুটে গেলে মানুষ পরিবার-পরিজন ও ধন সম্পদ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়?

উত্তরঃ আসরের নামায।

598. প্রশ্নঃ রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, “মানুষ যদি জানতো এই দুনামাযে কি পুরস্কার

রয়েছে, তবে হামাগুড়ি দিয়ে হলেও তাতে উপস্থিত হত।” নামায দুটি কি কি?

উত্তরঃ এশা ও ফজর নামায।

599. প্রশ্নঃ কোন দুটি নামায মুনাফেক্বদের উপর সবচেয়ে ভারী ও কষ্টকর?

উত্তরঃ এশা ও ফজর নামায।

600. প্রশ্নঃ ফরয নামাযের পর সর্বোত্তম নামায কোনটি?

উত্তরঃ রাতের নফল (তাহাজ্জুদ) নামায।

601. প্রশ্নঃ যে ব্যক্তি দিনে-রাতে ১২ রাকাত সুুন্নাত নামায নিয়োমিত আদায় করবে, তাকে কি পুরস্কার দেয়া

উত্তরঃ তার জন্য জান্নাতে একটি ঘর তৈরী করা হবে।

602. প্রশ্নঃ জামাতের সাথে নামায পড়লে কতগুণ বেশী ছওয়াব পাওয়া যায়?

উত্তরঃ ২৫ গুণ বা ২৭ গুণ।

603. প্রশ্নঃ সিজদার সময় কয়টি অঙ্গ মাটিতে রাখা আবশ্যক এবং তা কি কি?

উত্তরঃ ৭টি, (দুপা, দুহাঁটু, দুহাত এবং মুখমন্ডল তথা নাক ও কপাল)

604. প্রশ্নঃ সফর অবস্থায় কোন কোন নামায একত্রিত করা যায়?

উত্তরঃ যোহর-আছর একসাথে ও মাগরিব-এশা একসাথে।

605. প্রশ্নঃ ক্বিবলা পরিবর্তন হওয়ার পর মুসলমানগণ সর্বপ্রথম কোন নামায কাবার দিকে আদায় করেন?

উত্তরঃ আছরের নামায।

606. প্রশ্নঃ কোন নামাযে আযান নেই রুকূ নেই সিজদা নেই?

উত্তরঃ জানাযার নামায।

607. প্রশ্নঃ কোন দুরাকাত সুন্নাত নামায সম্পর্কে নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, “উহা দুনিয়া

এবং উহার মধ্যস্থিত সকল বস্তু চাইতে উত্তম।”?

উত্তরঃ ফজরের দুরাকাত সুন্নাত।

608. প্রশ্নঃ কোন নামাযে আযান নেই- আগে পরে কোন সুন্নাত নামায নেই?

উত্তরঃ দুঈদের নামায।

609. প্রশ্নঃ ঈদের নামায কয় তাকবীরে আদায় করা সুন্নাত?

উত্তরঃ ১২ (বার) তাকবীরে।

610. প্রশ্নঃ নামাযে কোথায় হাত বাঁধা সুন্নাত?

611. প্রশ্নঃ নামাযে কখন কখন রফউল ইয়াদায়ন (দুহাত উত্তোলন) করা সুন্নাত?

উত্তরঃ (১) তাকবীরে তাহরিমা বলার সময় (২) রুকূ করার সময় (৩) রুকূ থেকে উঠার সময় এবং (৪) দুরাকাত শেষ

করে তৃতীয় রাকাতের জন্য উঠার সময়।

612. প্রশ্নঃ যে লোক তাড়াহুড়া করে নামায পড়ে- ঠিক মত রুকূ করে না- রুকূ থেকে সোজা হয়ে দাঁড়ায় না- ঠিক মত

সিজদা করে না- তাকে হাদীছে কি বলা হয়েছে?

উত্তরঃ নামায চোর।

613.প্রশ্নঃ নামাযে তাওয়ার্‌রুক করা কাকে বলে? উহার হুকুম কি?

উত্তরঃ তিন বা চার রাকাত নামাযের শেষ তাশাহুদে বসার সময় ডান পায়ের নীচ দিয়ে বাম পা বের করে দিয়ে নিতম্ব

মাটিতে রেখে বসাকে তাওয়াররুক করা বলে। এরূপ করা সুন্নাত।

614. প্রশ্নঃ জায়নামায পাক করার জন্য ইন্নী ওয়াজ্জাহতু… দুআ পাঠ করার হুকুম কি?

উত্তরঃ বিদআত। (হাদীছে এর কোন প্রমাণ নেই)

615. প্রশ্নঃ ফরয নামায শেষে দলবদ্ধভাবে মুনাজাত করার নিয়ম কি?

উত্তরঃ এরূপ করা বিদআত।

616. প্রশ্নঃ ঈদের নামায কোথায় পড়া সুন্নাত? বড় জামে মসজিদে 5 মাঠে 5 বাড়ীতে 5 ?

617. প্রশ্নঃ মেয়েরা যদি জামাত করে ফরয নামায পড়ে, তবে তাদের ইমাম কোথায় দাঁড়াবে?

উত্তরঃ কাতারের মধ্যবর্তী স্থানে।

618. প্রশ্নঃ পুরুষ ইমামের সাথে যদি একজন নারী জামাতে নামায পড়ে তবে সে কোথায় দাঁড়াবে?

উত্তরঃ একাকী তার পিছনে।

619. প্রশ্নঃ জানাযার নামায (ফরযে কেফায়াহ?  সুন্নাত ?, নাকি ফরযে ?)

উত্তরঃ ফরযে কেফায়া।

620. প্রশ্নঃ কোন কাজটি নামাযের রুকন (সূরা ফাতিহা ⏎ ছানা পাঠ ⏎হাত বাঁধা ⏎)?

উত্তরঃ সূরা ফাতিহা পাঠ।

621. প্রশ্নঃ জানাযার তাকবীর কয়টি? (৩ ⏎ ৪ ⏎ ৬ ⏎)?

622. প্রশ্নঃ কোন মানুষ যদি নামায পড়তে ভুলে যায় তবে উহা কখন আদায় করবে? (পরবর্তী দিন ⏎ স্মরণ

হওয়ার সাথে সাথে ⏎ পরবর্তী ফরয নামাযের সময় ⏎)?

উত্তরঃ স্মরণ হওয়ার সাথে সাথে।

 623. প্রশ্নঃ কোন্‌ মুক্তাদী যদি ইচ্ছাকৃতভাবে ইমামের পূর্বে রুকূ করে, তবে তার (নামায বিশুদ্ধ ⏎, নামায

বাতিল ⏎, নামায বিশুদ্ধ কিন্তু এরূপ করা মাকরূহ⏎)

উত্তরঃ নামায বাতিল।

624. প্রশ্নঃ মসজিদে প্রবেশ করার সময় কিভাবে প্রবশে করবে?

উত্তরঃ ডান পা আগে রাখবে এবং বের হওয়ার সময় বাম পা আগে বের করবে।

625. প্রশ্নঃ নারীদের নামায আদায় করার সর্বোত্তম স্থান কোথায়?

উত্তরঃ নিজের গৃহের মধ্যে।

626. প্রশ্নঃ নারীদের মসজিদে গিয়ে জামাতের সাথে নামায পড়া (ওয়াজিব ⌨ সুন্নাত ⌨ জায়েয ⌨)?

627. প্রশ্নঃ পুরুষদের মসজিদে গিয়ে জামাতের সাথে নামায পড়ার হুকুম কি?

 628. প্রশ্নঃ কোন্‌ স্থানে নামায পড়া নিষেধ? (গৃহে ⌨কবরস্থানে বা মাজারে ⌨ফাঁকা মাঠে⌨)?

উত্তরঃ কবরস্থানে বা মাজারে।

629. প্রশ্নঃ সর্বপ্রথম কোন্‌ মসজিদটি নির্মাণ করা হয়? (মসজিদে আক্বসা ⌨ মসজিদে হারাম ⌨ মসজিদে নববী

উত্তরঃ মসজিদে হরাম (মক্কা)।

630. প্রশ্নঃ মসজিদে হারামে নামায আদায় করার ছওয়াব কত?

উত্তরঃ অন্যান্য মসজিদের তুলনায় একলক্ষ গুণ বেশী।

631. প্রশ্নঃ মসজিদে নববীতে নামায আদায় করার ছওয়াব কত?

উত্তরঃ এক হাজার গুণ।

632. প্রশ্নঃ কোন মসজিদে দুরাকাত নামায পড়লে একটি ওমরার ছওয়াব পাওয়া যায়?

উত্তরঃ মদীনার মসজিদে কুবায়।

633. প্রশ্নঃ নামাযের এক্বামত হয়ে গেছে এবং পেশাব বা পায়খানার চাপ পড়েছে। এসময় কোন কাজটি আগে করতে

উত্তরঃ পেশাব বা পায়খানা আগে সারতে হবে।

634. প্রশ্নঃ কোন্‌ ধরণের লোকদের বাড়ী-ঘর নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে

উত্তরঃ বিনা ওযরে যারা জামাতের নামাযে অনুপস্থিত থাকে।

635. প্রশ্নঃ নামাযে জোরে আমীন বলা কি? (ওয়াজিব⏎  সুন্নাত⏎  হারাম ⏎)?

636. প্রশ্নঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, “চার রাকাত নামাযের জন্য আসমানের দরজা

খুলে দেয়া হয়।” কোন সেই চার রাকাত নামায?

উত্তরঃ যোহরের পূর্বে চার রাকাত সুন্নাত।

637. প্রশ্নঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, “যে ব্যক্তি বার রাকাত নামায যথারীতি আদায়

করবে, তার জন্য জান্নাতে একটি ঘর নির্মাণ করা হবে।” উক্ত বার রাকাত নামায কি?

উত্তরঃ পাঁচ ওয়াক্তের সাথে সংশ্লিষ্ট ১২ রাকাত সুন্নাত।

638. প্রশ্নঃ কোন্‌ ধরণের নামায গৃহে আদায় করলে বেশী ছওয়াব পাওয়া যায়?

উত্তরঃ ফরয ছাড়া যাবতীয় সুন্নাত-নফল নামায।

639. প্রশ্নঃ বিতর নামাযের হুকুম কি: ওয়াজিব ⏎ ফরজ ⏎, সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ⏎ ?

উত্তরঃ সুন্নাতে মুআক্কাদা।

640. প্রশ্নঃ বিতর নামায আদায় করার সর্বোত্তম সময় কোনটি?

উত্তরঃ শেষ রাতে ফজরের পূর্বে।

641. প্রশ্নঃ বিতর নামাযের সর্ব নিম্ন রাকাত সংখ্যা কত?

642. প্রশ্নঃ বিতর নামাযে দুআ ক্বনূত পাঠ করাঃ ওয়াজিব ⏎ ফরয⏎ মুস্তাহাব ⏎?

643. প্রশ্নঃ ইমামের খুতবা চলা অবস্থায় কেউ মসজিদে প্রবেশ করলে কি করবে?

উত্তরঃ ২ রাকাত নামায পড়ে বসবে।

644. প্রশ্নঃ ইমামের খুতবা চলাবস্থায় পরস্পর কথা বলার হুকুম কি?

উত্তরঃ যারা কথা বলবে তারা জুমআর ছওয়াব থেকে বঞ্ছিত হবে।

645. প্রশ্নঃ বিশেষভাবে সপ্তাহের কোন্‌ দিন নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর প্রতি বেশী বেশী দরূদ

646. প্রশ্নঃ সপ্তাহের সর্বশ্রে দিন কোনটি?

647. প্রশ্নঃ পাঁচটি বিষয় একজন মুসলমানের পক্ষ থেকে আরেক জনের উপর ওয়াজিব। বিষয়গুলো কি কি?

উত্তরঃ ১) সালামের জবাব ২) হাঁচির জবাব ৩) দাওয়াত গ্রহণ ৪) অসুস্থের সুশ্রসা ৫) জানাযায় উপস্থিত হওয়া।

648. প্রশ্নঃ কোন্‌ নামাযে এক ক্বিরাত (বড় একটি পাহাড়) পরিমাণ ছওয়াব পাওয়া যায়?

উত্তরঃ জানাযার নামাযে।

(পর্ব- ৯)

বিষয়: যাকাত

 হিজরীতে? ১ম  ৩য় ৬৪৯. প্রশ্নঃ কত হিজরীতে যাকাত ফরয হয়? ২য়

উত্তরঃ ২য় হিজরীতে।

৬৫০. প্রশ্নঃ যাকাত ইসলামের কয় নম্বর স্তম্ভ?

৬৫১. প্রশ্নঃ কোন ধরণের পশুতে যাকাত দিতে হয়?

উত্তরঃ যা বছরের অধিকাংশ সময় মাঠে চরে খায়।

৬৫২. প্রশ্নঃ গরু সর্বনিম্ন কতটি হলে যাকাত ফরয হবে?

উত্তরঃ ৩০টি হলে পূর্ণ ১ বছরের ১টি গরু দিতে হবে।

৬৫৩. প্রশ্নঃ ছাগল সর্বনিম্ন কতটি হলে যাকাত ফরয হবে?

উত্তরঃ ৪০টি হলে ১টি ছাগল যাকাত দিতে হবে।

৬৫৪. প্রশ্নঃ উট সর্বনিম্ন কতটি হলে যাকাত ফরয হবে?

উত্তরঃ ৫টি থাকলে একটি ছাগল যাকাত হিসেবে দিবে।

৬৫৫. প্রশ্নঃ যাবতীয় সম্পদে যাকাত ফরয হওয়ার সময় কখন?

উত্তরঃ নেসাব পূর্ণ হওয়ার পর তাতে এক বছর অতিবাহিত হলে।

৬৫৬. প্রশ্নঃ যমীন থেকে উৎপাদিত কোন্‌ ধরণের ফসলে যাকাত দিতে হয়?

উত্তরঃ যে সমস্ত ফসল রবি শষ্য বলে গণ্য এবং যা দীর্ঘ মেয়াদের জন্য গুদামজাত করা যায় তাতে যাকাত ফরয।

৬৫৭. প্রশ্নঃ শাক-সব্জিতে যাকাতের পরিমাণ কি?

উত্তরঃ শাক-সব্জিতে কোন যাকাত নেই।

৬৫৮. প্রশ্নঃ যমীন থেকে উৎপাদিত ফসলে যাকাতের নেসাব কি?

উত্তরঃ ৩০০ সা তথা ৬২০ কে.জি।

৬৫৯. প্রশ্নঃ যমীন থেকে উৎপাদিত ফসল যদি বৃষ্টির পানিতে হয়, তবে তাতে যাকাতের পরিমাণ কত?

উত্তরঃ উশর তথা দশভাগের একভাগ।

৬৬০. প্রশ্নঃ যমীন থেকে উৎপাদিত ফসল যদি সেচের পানিতে হয়, তবে তাতে যাকাতের পরিমাণ কত?

উত্তরঃ নেছফুল উশর (তথা বিশভাগের এক ভাগ)।

৬৬১. প্রশ্নঃ যাকাতের জন্য স্বর্ণের নেসাব কি?

উত্তরঃ বিশ মিছকাল তথা ৮৫ গ্রাম।

৬৬২. প্রশ্নঃ যাকাতের জন্য রৌপ্যের নেসাব কি?

উত্তরঃ ১৪০ মিছকাল তথা ৫৯৫ গ্রাম।

৬৬৩. প্রশ্নঃ স্বর্ণ-রোপ্যে যাকাতের পরিমাণ কত।

উত্তরঃ ৪০ ভাগের একভাগ তথা ২.৫% (আড়াই শতাংশ)

৬৬৪. প্রশ্নঃ টাকাতে যাকাতে পরিমাণ কত?

উত্তরঃ স্বর্ণ বা রৌপ্যের নেসাব পরিমাণ টাকা থাকলে তাতে ২.৫০% হারে যাকাত দিতে হবে।

? কোনটাই নয়  সুন্নাত ৬৬৫. প্রশ্নঃ মুসলমানদের উপর ফিৎরা আদায় করাঃ ফরয

৬৬৬. প্রশ্নঃ ফিৎরা কখন আদায় করা উত্তম।

উত্তরঃ ঈদের চাঁদ উঠার পর।

৬৬৭. প্রশ্নঃ ফিৎরা আদায় করার শেষ সময় কখন?

উত্তরঃ ঈদের নামায শুরু হওয়ার পূর্বে।

৬৬৮. প্রশ্নঃ ফিৎরার পরিমাণ কত?

উত্তরঃ এক সা পরিমাণ খাদ্য।

৬৬৯. প্রশ্নঃ কয় শ্রেণীর মানুষকে যাকাত দেয়া যায়?

উত্তরঃ ৮ শ্রেণীর মানুষকে।

৬৭০. প্রশ্নঃ যাকাতের হকদার কারা?

৩) যাকাত আদায়কারী কর্মচারী

৪) ইসলামের প্রতি বিধর্মীদিগকে আকৃষ্ট করা

৮) বিপদ গ্রস্থ মুসাফির।

৬৭১. প্রশ্নঃ কোন অবস্থায় দান করা উত্তম- সুস্থ থাকাবস্থায় নাকি অসুস্থ হলে?

উত্তরঃ সুস্থ অবস্থায় দান করা উত্তম।

৬৭২. প্রশ্নঃ বছরের কোন মাসে দান করলে বেশী ছওয়াব পাওয়া যায়?

উত্তরঃ রামাযান মাসে।

৬৭৩. প্রশ্নঃ কোন ধরণের দানে দ্বিগুণ ছওয়াব পাওয়া যায়?

উত্তরঃ নিকটাত্মীয় গরীবকে দান করলে।

(পর্ব- ১০)

বিষয়: সিয়াম

674 .প্রশ্নঃ কত হিজরীতে সিয়াম ফরয হয়?

উত্তরঃ ২য় হিজরীতে।

675 .প্রশ্নঃ সিয়াম ফরয হওয়ার কথা কুরআনের কোন সূরার কত নং আয়াতে উল্লেখ হয়েছে?

উত্তরঃ সূরা বাক্বারা ১৮৩ নং আয়াত।

676 .প্রশ্নঃ সিয়াম ইসলামের কত নম্বর স্তম্ভ?

677 .প্রশ্নঃ কোন আমলের বিনিময়ে মানুষকে রাইয়্যান নামক দরজা দিয়ে জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে?

678.প্রশ্নঃ রোযদারকে একটি বিশেষ দরজা দিয়ে জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে। দরজাটির নাম কি?

679 .প্রশ্নঃ বছরের কোন মাসে শয়তানকে শৃঙ্খলাবদ্ধ করে রাখা হয়?

উত্তরঃ রামাযান মাসে।

680 .প্রশ্নঃ বছরের কোন মাসে জান্নাতের দরজা খোলা রাখা হয় এবং জাহান্নামের দরজা বন্ধ রাখা হয়?

উত্তরঃ রামাযান মাসে।

681 .প্রশ্নঃ ফরয সিয়ামের জন্য কখন নিয়ত করতে হয়?

উত্তরঃ ফজরের পূর্বে।

682 .প্রশ্নঃ সিয়াম পালকারীর কখন সাহুর খাওয়া মুস্তাহাব?

683.প্রশ্নঃ কোন বস্তু দিয়ে ইফতার করা সুন্নাত।

উত্তরঃ টাটকা খেজুর না পেলে যে কোন খেজুর, তা না পেলে পানি দ্বারা।

684.প্রশ্নঃ রোযাদারের মেসওয়াক করার হুকুম কী?

685 .প্রশ্নঃ সফর যদি আরাম দায়ক হয়- কষ্ট না হয়, তবে রোযা ভঙ্গের হুকুম কি?

উত্তরঃ রোযা ভঙ্গ করা জায়েয। তবে রাখা উত্তম।

686.প্রশ্নঃ নারীদের কোন্‌ অবস্থায় রোযা ভঙ্গ করা ওয়াজিব?

উত্তরঃ ঋতু বা নেফাস হলে?

687 .প্রশ্নঃ বছরের কোন কোন দিন রোযা রাখা হারাম?

উত্তরঃ দুঈদের দিন এবং আইয়্যামে তাশরীক (জিলহজ্জ মাসের ১১, ১২, ১৩ তারিখ)

688.প্রশ্নঃ কোন কাজ করলে রোযা ভঙ্গ হয় এবং কাফ্‌ফারা স্বরূপ দুমাস রোযা রাখতে হয় অথবা ৬০

মিসকীনকে খাদ্য প্রদান করতে হয়?

উত্তরঃ রামাযানের রোযা রেখে স্ত্রী সহবাস করলে।

689.প্রশ্নঃ কোন অবস্থায় রামাযানের দিনে পানাহার করলেও রোযা ভঙ্গ হবে না?

উত্তরঃ ভুলক্রমে পানাহার করলে।

690.প্রশ্নঃ মাহে রামাযানের পর সর্বোত্তম নফল ছিয়াম কোনটি?

উত্তরঃ আশুরার রোযা।

691.প্রশ্নঃ আশুরার রোযা রাখার ফযীলত কি?

উত্তরঃ এর মাধ্যমে বিগত এক বছরের গুনাহ মাফ হয়।

692.প্রশ্নঃ আশুরার রোযা কমপক্ষে কয়টি রাখা সুন্নাত?

উত্তরঃ ২টি, মুহাররমের ৯, ১০ অথবা ১০, ১১ তারিখ।

693.প্রশ্নঃ কোন নবী সারা বছর একদিন রোযা রাখতেন একদিন ছাড়তেন?

694.প্রশ্নঃ কোন রোযা রাখলে সারা বছর রোযা রাখার ছওয়াব পাওয়া যায়?

উত্তরঃ শাওয়াল মাসের ৬টি রোযা।

695.প্রশ্নঃ কোন্‌ রোযার বিনিময়ে বিগত এবং আগত দুবছরের গুনাহ মাফ হয়?

উত্তরঃ আরাফাত দিবসের রোযা।

696.প্রশ্নঃ আইয়্যামে বিযের রোযা কাকে বলে?

উত্তরঃ প্রতি চন্দ্র মাসের ১৩,১৪, ১৫ তারিখের রোযাকে।

697.প্রশ্নঃ সপ্তাহের কোন কোন দিন রোযা রাখা সুন্নাত?

উত্তরঃ সোমবার ও বৃহস্পতিবার।

698.প্রশ্নঃ সপ্তাহের কোন দিন এককভাবে নফল রোযা রাখা নাজায়েয?

699.প্রশ্নঃ যে লোক নামায পড়ে না তার রোযার বিধান কী?

উত্তরঃ বাতিল, কেননা নামায ছাড়া রোযা জায়েয নয়।

700.প্রশ্নঃ লায়লাতুল কাদর কখন হয়?

উত্তরঃ রামাযানের শেষ দশকের যে কোন বেজোড় রাতে।

701.প্রশ্নঃ লায়লাতুল কাদরের ফযীলত কি?

উত্তরঃ এক রাতের ইবাদত এক হাজার মাস ইবাদতের চাইতে উত্তম।

702.প্রশ্নঃ তারাবীর নামায আদায় করার হুকুম কি?

উত্তরঃ সুন্নাতে মুআক্কাদাহ

703. প্রশ্নঃ নবী (সাল্লাল্লা আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কতদিন তারাবীর নামায জামাতের সাথে আদায় করেছিলেন?

704.প্রশ্নঃ নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তিন দিন তারাবীর নামায জামাতে আদায় করার পর, আর কেন

জামাতে আদায় করেন নি?

উত্তরঃ ফরয হয়ে যাওয়ার ভয়ে।

705 .প্রশ্নঃ কখন থেকে পুনরায় তারাবীর নামায জামাতের সাথে পড়া চালু হয়?

উত্তরঃ ওমর (রাঃ)এর খেলাফতকালে।

706.প্রশ্নঃ তারাবীর নামায কয় রাকাত আদায় করা সুন্নাত?

উত্তরঃ বিতরসহ ১১ রাকাত।

707.প্রশ্নঃ তারাবীর নামায বিশ রাকাত আদায় করার হুকুম কি?

উত্তরঃ জায়েয, তবে ১১ রাকাতই উত্তম।

(পর্ব- ১১)

বিষয়: হজ্জ

708. প্রশ্নঃ হাজ্জ ইসলামের কয় নম্বর রুকন?

709. প্রশ্নঃ পবিত্র কুরআনের কোন্‌ সূরার কত নং আয়াতে হাজ্জ ফরযের কথা উল্লেখ হয়েছে?

উত্তরঃ সূরা আলে ইমরান ৯৭ নং আয়াত।

710. প্রশ্নঃ কত হিজরী সনে হাজ্জ ফরয হয়?

উত্তরঃ ৯ম অথবা ১০ হিজরী।

711. প্রশ্নঃ হাজ্জ কত প্রকার ও কি কি?

উত্তরঃ হাজ্জ তিন প্রকারঃ তামাত্তু, ক্বিরাণ ও ইফরাদ।

712.প্রশ্নঃ কোন হাজ্জে কুরবানী আবশ্যক নয়?

উত্তরঃ ইফরাদ হাজ্জে।

713. প্রশ্নঃ তামাত্তু হজ্জ কাকে বলে?

উত্তরঃ প্রথমে ওমরা তারপর হাজ্জ- আলাদা আলাদা ইহরামে করাকে তামাত্তু হাজ্জ বলে।

714. প্রশ্নঃ ক্বিরাণ হাজ্জ কাকে বলে?

উত্তরঃ একই ইহরামে হাজ্জ ও ওমরা করাকে।

715. প্রশ্নঃ ইফরাদ হাজ্জ কাকে বলে?

উত্তরঃ ওমরা না করে শুধু হাজ্জ করাকে।

716. প্রশ্নঃ ইহরামের উদ্দেশ্যে গোসল করার হুকুম কি?

717. প্রশ্নঃ শুধুমাত্র ইহরামের নিয়তে দুরাকাত নামায আদায় করার হুকুম কি?

718. প্রশ্নঃ ইহরাম অবস্থায় ইজতেবা কাকে বলে?

উত্তরঃ ইহরামের কাপড়কে ডান বগলের নীচ দিয়ে নিয়ে বাম কাঁধের উপর রাখা এবং ডান কাঁধ খোলা রাখা।

719.প্রশ্নঃ হাজ্জ-ওমরার জন্য ইহরাম বাঁধার বিধান কী?

720. প্রশ্নঃ মীক্বাত বলতে কি বুঝায়?

উত্তরঃ হাজ্জ-ওমরার উদ্দেশ্যে যে স্থান থেকে ইহরাম বাঁধতে হয় তাকে মীক্বাত বলে।

721. প্রশ্নঃ ইহরামের কাপড় দুটি সাদা হওয়ার বিধান কি?

722. প্রশ্নঃ ইজতেবা কখন করা সুন্নাত?

উত্তরঃ তওয়াফ শুরু করার সময়।

723. প্রশ্নঃ ইহরাম অবস্থায় কোন কাজটি হারামঃ আতর ব্যবাহার করা? গোসল করা? মেসওয়াক করা?

উত্তরঃ আতর ব্যবহার।

724. প্রশ্নঃ ইহরাম অবস্থায় কোন কাজটি হারামঃ শরীর চুলকানো ◊ মাথা আঁচড়ানো ◊, মাথা ঢাকা ◊?

725. প্রশ্নঃ ইহরাম অবস্থায় হারামঃ সেলাই করা কাপড় পরা ◊ সেলাই বিহীন রঙ্গিন কাপড় পরা ◊, গামছা ব্যবহার

উত্তরঃ সেলাই করা কাপড় পরা।

726. প্রশ্নঃ হাজ্জের রুকন হচ্ছেঃ যমযম পানি পান ◊ সাফা-মারওয়া সাঈ ◊ কঙ্কর নিক্ষেপ ◊?

উত্তরঃ সাফা-মারওয়া সাঈ।

727. প্রশ্নঃ হাজ্জের রুকন হচ্ছেঃ আরাফাতে অবস্থান □◊, মুযদালিফায় অবস্থান ◊, মাথা মুন্ডন ◊?

উত্তরঃ আরাফাতে অবস্থান।

728. প্রশ্নঃ হাজ্জের রুকন হচ্ছেঃ হজরে আসওয়াদ চুম্বরন করা ◊, তওয়াফ ◊, মাক্বামে ইবরাহীমে নামায আদায়

729. প্রশ্নঃ কাবা ঘরের গিলাফ ধরে দুআ করাঃ ওয়াজিব ◊ সুন্নাত ◊ বিদআত ◊?

730. প্রশ্নঃ ৮ জিলহাজ্জ মিনায় অবস্থান করাঃ রুকন □, ওয়াজিব□, সুন্নত □?

731. প্রশ্নঃ হাজ্জের ওয়াজিব হচ্ছেঃ মুযদালিফায় রাত কাটানো □, মুযদালিফায় পাথর কুড়ানো □,  মুযদালিফায়

সারা রাত ইবাদত করা □?

উত্তরঃ মুযদালিফায় রাত কাটানো।

732. প্রশ্নঃ কোন সময়ের তওয়াফে রমল করতে হয়? তওয়াফে কুদূমে □, হাজ্জের তওয়াফে □, বিদায়ী তওয়াফে □?

উত্তরঃ তওয়াফে কুদূমে।

733. প্রশ্নঃ তওয়াফে রমল করা বলতে কি বুঝায়?

উত্তরঃ ছোট ছোট কদম ফেলে দ্রুত হাঁটার চেষ্টা করা।

734. প্রশ্নঃ কয় চক্করে রমল করতে হয়?

উত্তরঃ প্রথম তিন চক্করে।

735. প্রশ্নঃ রুকনে ইয়ামানীকে (স্পর্শ করা □, চুম্বন করা □, কোনটাই না করা □) সুন্নাত।

উত্তরঃ স্পর্শ করা সুন্নাত।

736. প্রশ্নঃ আরাফাতে যোহর-আসর নামায একত্রে যোহরের সময় আদায় করাঃ (সুন্নাত □, বিদয়াত □,

737. প্রশ্নঃ ১০ তারিখে কঙ্কর মারতে হবেঃ তিনটি জামরাতে □, বড় জামরাতে □, দুটি জামরাতে □?

উত্তরঃ বড় জামরাতে।

738. প্রশ্নঃ জিলহজ্জের ১০ তারিখে বড় জামরাতে কঙ্কর মারার সময় কখন থেকে শুরু হয়?

উত্তরঃ সে দিন সূর্যোদয়ের পর থেকে।

739. প্রশ্নঃ জিলহজ্জের ১১, ১২ তারিখ কয়টি জামরাতে কঙ্কর মারতে হয়?

উত্তরঃ ৩টি জামরাতে।

740. প্রশ্নঃ জিলহজ্জের ১১, ১২ তারিখ জামরাতে কঙ্কর মারার সময় কখন থেকে শুরু হয়?

উত্তরঃ পশ্চিমাকাশে সূর্য ঢলার পর।

741. প্রশ্নঃ মিনাতে কয় রাত থাকা ওয়াজিব?

উত্তরঃ ২ রাত। (১০ ও ১১ তারিখ দিবাগত রাত)

742. প্রশ্নঃ বিদায়ী তওয়াফ করার আগে কোন নারী ঋতুবতী হয়ে পড়লে তাকে বিদায়ী তওয়াফ করতে হবে না।

743. প্রশ্নঃ হজ্জের রুকন কয়টি ও কি কি?

উত্তরঃ ৪টি। ইহরাম, তওয়াফ, সাঈ, আরাফাতে অবস্থান।

744. প্রশ্নঃ ওমরার রুকন কয়টি ও কি কি?

উত্তরঃ ৩টি। ইহরাম, তওয়াফ ও সাঈ।

745. প্রশ্নঃ ওমরার ওয়াজিব কয়টি ও কি কি?

উত্তরঃ ২টি। মীকাত থেকে ইহরাম বাঁধা ও মাথার চুল মুন্ডন করা বা ছোট করা।

746. প্রশ্নঃ রুকন বলতে কি বুঝায়?

উত্তরঃ যে সমস্ত কাজের মধ্যে কোন একটি বাদ পড়লে হজ্জ বা ওমরা হবে না তাকে রুকন বলে।

747. প্রশ্নঃ মিনায় রাত না কাটালেও হজ্জ হয়ে যাবে। কথাটি ঠিক না বেঠিক? বেঠিক হলে করণীয় কি?

উত্তরঃ বেঠিক। করণীয় হচ্ছেঃ ফিদ্‌ইয়া হিসেবে একটি ছাগল যবেহ করতে হবে।

748. প্রশ্নঃ তওয়াফে ইফাযা কাকে বলে?

উত্তরঃ আরাফাত থেকে ফেরত আসার পর যে তওয়াফ করতে হয় তাকে তওয়াফে এফাযা বলে।

749. প্রশ্নঃ বিদায়ী তওয়াফ করাঃ রুকন □, সুন্নাত □, ওয়াজিব □?

750. প্রশ্নঃ মদীনা যিয়ারত করা হজ্জেরঃ সুন্নাত □, ওয়াজিব □, কোনটাই নয় □?

উত্তরঃ কোনটাই নয়।

751. প্রশ্নঃ মদীনা আগমনের পর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর কবর যিয়ারত করাঃ ওয়াজিব

□, ফরয □, মুস্তাহাব □|

752. প্রশ্নঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর কবর যিয়ারতের নিয়তে মদীনা সফর করাঃ

ওয়াজিব □, বিদআত □, মুস্তাহাব □|

753. প্রশ্নঃ মদীনা সফর করার জন্যে কি নিয়ত করতে হবে?

উত্তরঃ মসজিদে নববীতে সালাত আদায় করার নিয়তে সফর করতে হবে।

(পর্ব- ১২)

বিষয়: দুয়া ও যিকির

৭৫৪.    প্রশ্নঃ নিদ্রা যাওয়ার সময় কোন দুআ পাঠ করতে হবে?

উচ্চারণঃ বিসমিকা আল্লাহুম্মা আমূতু ওয়া আহইয়া।

অর্থঃ হে আল্লাহ! তোমার নামে মৃত্যু বরণ করছি, তোমার নামেই জীবিত হব।

৭৫৫.প্রশ্নঃ নিদ্রা থেকে জাগ্রত হয়ে কোন দুআ পাঠ করতে হবে?

الْحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِي أَحْيَانَا بَعْدَ مَا أَمَاتَنَا وَإِلَيْهِ النُّشُورُ

উচ্চারণঃ আল হামদু লিল্লাহিল্লাযী আহইয়ানা বাদা মা আমাতানা ওয়া ইলাইহিন্নুশূর।

অর্থঃ সমস্ত প্রশংসা সেই আল্লাহর যিনি আমাদেরকে মৃত্যুর পর জীবিত করেছেন। আর তার কাছেই আমাদেরকে

প্রত্যাবর্তন করতে হবে।

৭৫৬.    প্রশ্নঃ আযানের শেষে পঠিতব্য দুআটি কি?

اللَّهُمَّ رَبَّ هَذِهِ الدَّعْوَةِ التَّامَّةِ وَالصَّلَاةِ الْقَائِمَةِ آتِ مُحَمَّدًا الْوَسِيلَةَ وَالْفَضِيلَةَ وَابْعَثْهُ مَقَامًا مَحْمُودًا الَّذِي وَعَدْتَهُ

উচ্চারণঃ আল্লাহুম্মা রাব্বা হাজিহিদ্‌ দওয়াতিত্‌ তাম্মাহ ওয়াস্‌ সালাওয়াতিল কায়িমাহ আতি মুহাম্মাদানিল

ওয়াসিলাতি ওয়াল ফযীলাহ ওয়াবআছহু মাকামাম্মাহমূদানিল্লাজি ওয়াআদতাহ।

হে আল্লাহ! এই পরিপূর্ণ আহবান এবং এই প্রতিতি নামাযের তুমিই প্রভূ। মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া

সাল্লাম)কে দান কর সর্বোচ্চ সম্মানিত স্থান এবং সুমহান মর্যাদা। তাঁকে প্রতিষ্ঠিত কর প্রশংসিত স্থানে যার

অঙ্গিকার তুমি তাঁকে দিয়েছো।

৭৫৭.    প্রশ্নঃ ওযুর শুরুতে কি পাঠ করতে হবে?

بسم الله বিসমিল্লাহ। এছাড়া অন্য কোন দুআ পড়া বিদআত।

৭৫৮.প্রশ্নঃ ওযুর শেষে কোন দুআ পাঠ করলে বেহেস্তের আটটি দরজাই খুলে দেয়া হবে?

أشْهَدُ أنْ لإَاِلَهَ إلاَّاللهُ وَحْدَهُ لاَ شَرِيْكَ لَهُ وَأَشْهَدُ أنَّ مُحَمَّدًاعَبْدُهُ وَرَسُوْلُهُ

উচ্চারণঃআশহাদুআল্লা-ইলাহাইল্লাল্লাহুওয়াহদাহুলাশারীকালাহুওয়াআশহাদুআন্নামুহাম্মাদানআবদুহুওয়ারাসূলুহু।

৭৫৯.    প্রশ্নঃ মসজিদে প্রবেশের দুআ কি?

اللَّهُمَّ افْتَحْ لِي أَبْوَابَ رَحْمَتِكَ

উচ্চারণঃ আল্লাহুম্মাফতাহলী আবওয়াবা রাহমাতিকা। হে আল্লাহ! আমার জন্য আপনার রহমতের দরজাসমূহ

৭৬০.প্রশ্নঃ মসজিদ থেকে বের হওয়ার দুআ কি?

আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকা মিন ফাযলিকা। হে আল্লাহ! নিশ্চয় আমি তোমার অনুগ্রহ প্রর্থনা করছি।

৭৬১.    প্রশ্নঃ টয়লেটে প্রবেশের দুআ কি?

اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنَ الْخُبُثِ وَالْخَبَائِثِ

উচ্চারণঃ আল্লাহম্মা ইন্নি আউযুবিকা মিনাল খুবুছি ওয়াল খাবায়িছ। হে আল্লাহ! তোমার নিকট আশ্রয় কামনা

করি- যাবতীয় দুষ্ট জিন ও জিন্নী থেকে।

৭৬২.    প্রশ্নঃ টয়লেট থেকে বের হওয়ার দুআ কি?

(গুফরানাকা) তোমার ক্ষমা চাই হে প্রভু!

৭৬৩.    প্রশ্নঃ রাগম্বিত হলে রাগ দূর করার দুআ কি?

أَعُوذُ بِاللَّهِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيمِ

উচ্চারণঃ আউযু বিল্লাহি মিনাশ্‌ শায়তানির রাযীম।

৭৬৪.    প্রশ্নঃ লাইলাতুল ক্বদরের দুআ কি?

اللَّهُمَّ إِنَّكَ عَفُوٌّ تُحِبُّ الْعَفْوَ فَاعْفُ عَنِّي

উচ্চারণঃ আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুওয়ুন তুহিব্বুল আফওয়া ফাফু আন্নী।

হে আল্লাহ! আপনি ক্ষমাশীল। ক্ষমা করাকে আপনি পছন্দ করেন। তাই আমাকে ক্ষমা করুন।

৭৬৫.    প্রশ্নঃ কেউ কোন উপকার করলে তার জন্য কি দুআ করতে হয়?

৭৬৬.    প্রশ্নঃ রোগী দেখার সময় পাঠ করার দুআ কি?

লা বাস তাহূর ইনশাআল্লাহ।

আপনার কোন অসুবিধা না হোক! আল্লাহ চাহে তো আপনি অতি সত্বর সুস্থ হয়ে উঠবেন।

৭৬৭.    প্রশ্নঃ পানাহারের সময় কি দুআ বলতে হয়?

৭৬৮.    প্রশ্নঃ পানাহারের শুরুতে বিসমিল্লাহ বলতে ভুলে গেলে কি করবে?

বিসমিল্লাহি ফী আওয়ালিহি ওয়া আখিরিহি।

৭৬৯.   প্রশ্নঃ পানাহার শেষ করে পাঠ করার দুআ কি?

الْحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِي أَطْعَمَنِي هَذَا وَرَزَقَنِيهِ مِنْ غَيْرِ حَوْلٍ مِنِّي وَلاقُوَّةٍ

উচ্চারণঃ আলহামদু লিল্লাহিল্লাযী আত্বআমানী হাযা ওয়া রাযাকানীহে মিন গাইরি হাওলিন মিন্নী ওয়ালা কুওয়াতিন।

সকল প্রশংসা সেই আল্লাহর যিনি আমাকে ইহা খাইয়েছেন ও রিযিক হিসেবে দান করেছেন। যাতে আমার শক্তি ও

৭৭০.    প্রশ্নঃ কেউ যদি খানাপিনা করায়, তবে তাকে উদ্দেশ্য করে কি দুআ বলবে?

اللَّهُمَّ أَطْعِمْ مَنْ أَطْعَمَنِي وَأَسْقِ مَنْ أَسْقَانِي

(আল্লাহুম্মা আত্‌য়েম্‌ মান্‌ আত্‌আমানী ওয়াস্‌ কে মান আসক্বানী) হে আল্লাহ আমাকে যে খাইয়েছে তাকে তুমি খাদ্য

দান কর, যে আমাকে পান করিয়েছে তাকে তুমি পান করাও।

৭৭১.    প্রশ্নঃ পিতা-মাতার জন্য কি দুআ পড়তে হয়?

رَّبِّ ارْحَمْهُمَا كَمَا رَبَّيَانِي صَغِيرًا

উচ্চারণঃ রাব্বির হামহুমা কামা রাব্বায়ানী সাগীরা। হে আমার প্রতিপালক! আমার পিতা-মাতার উভয়ের উপর

অনুগ্রহ করুন, যেমনভাবে তারা আমাকে ছোটকালে লালন-পালন করেছিল।

৭৭২.   প্রশ্নঃ জ্ঞান বৃদ্ধির জন্য দুআ কি?

রাব্বি যিদনী ইলমা। হে আমার পালনকর্তা! আমার জ্ঞান বাড়িয়ে দাও।

৭৭৩.    প্রশ্নঃ দুনিয়া-আখেরাতের কল্যাণ কামনার দুআ কি?

رَبَّنَا آتِنَا فِي الدُّنْيَا حَسَنَةً وَفِي الْآخِرَةِ حَسَنَةً وَقِنَا عَذَابَ النَّارِ

উচ্চারণঃ রাব্বানা আতিনা ফিদ্দুনিয়া হাসানাতান ওয়া ফিল আখিরাতি হাসানাতান ওয়া ক্বিনা আযাবান্নার। হে

আমাদের পালনকর্তা! আমাদেরকে দুনিয়াতে কল্যাণ দান কর। আখেরাতেও কল্যাণ দান কর এবং আমাদেরকে

জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা কর।

৭৭৪.   প্রশ্নঃ আদম ও হাওয়া (আঃ) জান্নাত থেকে বের হওয়ার পর কোন্‌ দুআটি পাঠ করে আল্লাহর কাছে ক্ষমা

رَبَّنَا ظَلَمْنَا أَنفُسَنَا وَإِنْ لَمْ تَغْفِرْ لَنَا وَتَرْحَمْنَا لَنَكُونَنَّ مِنْ الْخَاسِرِينَ

উচ্চারণঃ রাব্বানা যালামনা আনফুসানা ওয়া ইন্‌ লাম তাগফির লানা ওয়া তারহামনা লানাকূনান্না মিনাল খাসেরীন। হে

আমাদের পালনকর্তা! আমরা নিজেদের উপর যুলুম করেছি। তুমি যদি আমাদেরকে ক্ষমা না কর, আমাদের প্রতি দয়া

না কর, তবে আমরা ক্ষতিগ্রস্থদের অন্তর্ভূক্ত হয়ে যাব।(সূরা আরাফঃ ২৩)

৭৭৫.    প্রশ্নঃ বিপদ-মুছীবতে পড়লে কোন দুআ পাঠ করবে?

لا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ سُبْحَانَكَ إِنِّي كُنتُ مِنْ الظَّالِمِينَ

লা-ইলাহা ইল্লা আন্‌তা সুবহানাকা ইন্নী কুনতু মিনায্‌যালেমীন।

৭৭৬.   প্রশ্নঃ ঘর থেকে বের হওয়ার সময় কি দুআ পড়তে হয়?

بِسْمِ اللَّهِ تَوَكَّلْتُ عَلَى اللَّهِ لَا حَوْلَ وَلَا قُوَّةَ إِلَّا بِاللَّهِ

বিসমিল্লাহি তাওয়াক্কালতু আলাল্লাহি লা-হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহি।

৭৭৭.   প্রশ্নঃ সোওয়ারীতে আরোহন করার দুআ কি?

سُبْحَانَ الَّذِي سَخَّرَ لَنَا هَذَا وَمَا كُنَّا لَهُ مُقْرِنِينَ وَإِنَّا إِلَى رَبِّنَا لَمُنْقَلِبُونَ

উচ্চারণঃ সুবহানাল্লাযী সাখ্‌খারা লানা হাযা ওয়ামা কুন্না লাহু মুক্বরেনীন, ওয়া ইন্না ইলা রাব্বিনা লামুনক্বালিবূন।

৭৭৮.    প্রশ্নঃ গৃহে প্রবেশ করার দুআ কি?

بِسْمِ اللَّهِ وَلَجْنَا وَبِسْمِ اللَّهِ خَرَجْنَا وَعَلَى اللَّهِ رَبِّنَا تَوَكَّلْنَا

উচ্চারণঃ বিসমিল্লাহি ওয়ালাজনা, ওয়া বিসমিল্লাহি খারাজনা ওয়া আলা রাব্বিনা তাওয়াক্কালনা।

৭৭৯.    প্রশ্নঃ ইউনূস (আঃ) মাছের পেটে থাকাকালিন কোন দুআ পড়েছিলেন?

لا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ سُبْحَانَكَ إِنِّي كُنتُ مِنْ الظَّالِمِينَ

লাইলাহা ইল্লা আন্‌তা সুবহানাকা ইন্নী কুনতু মিনায্‌যালেমীন।

৭৮০.প্রশ্নঃ জান্নাতের একটি গুপ্তধন কি?

লাহাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ।

৭৮১.    প্রশ্নঃ দুটি কালেমা- মুখে উচ্চারণ করতে খুবই সহজ, পাল্লায় অনেক ভারী এবং আল্লাহর কাছে খুবই প্রিয়।

سُبْحَانَ اللَّهِ وَبِحَمْدِهِ، سُبْحَانَ اللَّهِ الْعَظِيمِ

সুবহানাল্লাহি ওয়াবিহামদিহি, সুবহানাল্লাহিল আযীম।

৭৮২.    প্রশ্নঃ নতুন কাপড় পরিধান করার দুআ কি?

الْحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِي كَسَانِي هَذَا الثَّوْبَ وَرَزَقَنِيهِ مِنْ غَيْرِ حَوْلٍ مِنِّي وَلا قُوَّةٍ.

উচ্চারণঃ আল্‌ হামদুলিল্লাহিল্লাযী কাসানী হাযাছ্‌ ছওবা ওয়া রাযাক্বানীহে মিন গায়রে হাওলীন্‌ মিন্নী ওয়ালা

কুওয়াতিন্‌। সমস্ত প্রশংসা সেই আল্লাহর জন্য যিনি আমাকে এই পোষাক পরিয়েছেন এবং জীবিকা হিসেবে দান

করেছেন, যাতে আমার শক্তি ও সামর্থ কিছুই ছিল না।

৭৮৩.    প্রশ্নঃ একটি দুআ আছে কোন মানুষ যদি উহা দিনে একশত বার পাঠ করে, তাকে দশজন ক্রীতদাস মুক্ত

করার ছওয়াব দেয়া হবে, তার জন্য একশতটি নেকী লেখা হবে, একশতটি গুনাহ ক্ষমা করা হবে, সন্ধ্যা পর্যন্ত

সারাদিন উহা তার জন্য রক্ষা কবচ হবে এবং তার চাইতে উত্তম আমল কেউ আর নিয়ে আসতে পারবে না- তবে ঐ

ব্যক্তির কথা ভিন্ন যে এর চাইতে বেশী আমল করবে। সে দুআটি কি?

لاَ إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيكَ لَهُ لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ

উচ্চারণঃ লাইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারীকা লাহু, লাহুল মুলকু ওয়ালাহুল হামদু ওয়াহুওয়া আলা কুল্লী শাইয়্যিন

৭৮৪.    প্রশ্নঃ কোন্‌ তাসবীহটি দৈনিক একশতবার পড়লে- পাপ সমূহ সমুদ্রের ফেনারাশী পরিমাণ হলেও ক্ষমা করা

সুবহানাল্লাহি ওয়াবি হামদিহি।

৭৮৫.    প্রশ্নঃ সকাল-সন্ধ্যায় পঠিতব্য অনেক দুআ আছে তম্মধ্যে একটি উল্লেখ কর?

اللهُمَّ بِكَ أصْبَحْناَ وبِكَ أمسَيْناَ وبِكَ نَحْياَ وَبِكَ نَمُوْتُ وَإلَيْكَ النُّشُوْرُ

উচ্চারণঃ আল্লাহুম্মা বিকা আস্‌বাহনা ওয়া বিকা আমসায়না ওয়া বিকা নাহইয়া ওয়া বিকা নামূতু ওয়া ইলাইকান্‌

নুশূর। হে আল্লাহ তোমার অনুগ্রহে সকাল করেছি এবং তোমার অনুগ্রহে সন্ধ্যা করেছি, তোমার করুণায় জীবন

লাভ করি এবং তোমার ইচ্ছায় আমরা মৃত্যু বরণ করব, আর কিয়ামত দিবসে তোমার কাছেই পূণরুত্থিত হতে হবে।

৭৮৬.    প্রশ্নঃ নব বিবাহিত বরের উদ্দেশ্যে কি দুআ বলবে?

بَارَكَ اللَّهُ لَكَ وَبَارَكَ عَلَيْكَ وَجَمَعَ بَيْنَكُمَا فِي خَيْرٍ

(বারাকাল্লাহু লাকা ওয়া বারাকা ওলাইকা ওয়া জামাআ বাইনাকুমা ফী খাইরিন্‌।)

৭৮৭.    প্রশ্নঃ কোন দুআটি একবার পাঠ করলে আল্লাহ দশবার রহমত নাযিল করবেন?

৭৮৮.    প্রশ্নঃ বিপদ-মুসীবতেপড়লেকোনদুআপাঠকরবে?

إناَّ للهِ وإناَّ إلَيْهِ راَجِعُوْنَ، اللهمَّ أجُرْنِيْ فِيْ مُصِيبَتِيْ واَخْلُفْ لِيْ خَيْراً مِنْهاَ

(ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজেঊন, আল্লাহুম্মাজুরনী ফী মুছীবাতী ওয়াখ্‌লুফলী খায়রান্‌ মিনহা)আমরা

আল্লাহরজন্য এবংআমরা আল্লাহর কাছেই প্রত্যাবর্তন করব।হেআল্লাহ আমার বিপদে আমাকে প্রতিদান দাও

এবং আমাকে এর বিপরীতে উত্তম বিষয় দান কর।

৭৭৯.   প্রশ্নঃ হজ্জের মাঠে (আরাফাতের দিবসের) শ্রেষ্ঠ দুআ কি?

لاَ إِلَهَ إِلا اللَّهُ وَحْدَهُ لا شَرِيكَ لَهُ لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ

উচ্চারণঃ লাইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারীকা লাহু, লাহুল মুলকু ওয়ালাহুল হামদু ওয়াহুওয়া আলা কুল্লী শাইয়্যিন

৭৯০.    প্রশ্নঃ শরীরের কোন স্থানে জখম বা ফোঁড়া হলে কি দুআ পড়বে?

উত্তরঃ তর্জনী আঙ্গুলে থুথু লাগাবে তারপর তা দ্বারা মাটি স্পর্শ করবে এবং সেই মাটি জখম বা ফোঁড়ার স্থানে

লাগাবে ও সে সময় এই দুআ পাঠ করবে: (بِسْمِ الله، تُرْبَةُ أرْضِناَ بِرِيْقَةِ بَعْضِناَ، يُشْفَى سَقِيْمُناَ بإذْنِ رَبِّناَ) (বিসমিল্লাহ, তুরবানতু

আরযেনা বেরীক্বাতে বা’যেনা ইউশ্‌ফা সাক্বীমুনা বিইযনে রাব্বিনা) আল্লাহর নামে, আমাদের যমীনের কিছু মাটি,

আমাদের একজনের থুথুর দ্বারা আমাদের রবের অনুমতিতে আমাদের রুগীর আরোগ্য হবে।

৭৯১.    প্রশ্নঃ বিষধর প্রাণী বা সাপে কাটলে কোন দুআ পড়ে পড়ে রুগীকে ঝাড়-ফুঁক করবে?

উত্তরঃ সূরা ফাতিহা

সংকলন ও গ্রন্থনা : মুহা: আবদুল্লাহ্‌ আল কাফী (লিসান্স, মদীনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়)

93
প্রচলিত বিভিন্ন খতম: তাৎপর্য ও পর্যালোচনা


সূচিপত্র

বিষয়                                           

ভূমিকা                                                 

সুন্নাতের পরিচয় ও গুরুত্ব                                 

সুন্নাতের পরিচয়                                         

সুন্নাতের উপর অবিচল থাকার গুরুত্ব

বিদআতের পরিচয় ও পরিণাম:

বিদআতের সংজ্ঞা                                         

বিদআতের পরিণাম                                       

খতম শব্দের অর্থ ও প্রয়োগ                               

খতমে কুরআন                                           

খতমে ইউনুস                                           

খতমে বুখারী                                           

খতমে না-রী                                             

খতমে ইয়াসিন                                           

খতমে শিফা                                             

খতমে তাহলিল                                           

খতমে তাসমিয়াহ                                         

খতমে খাজেগান                                         

খতমে জালালী                                           

খতমে দুরুদে মাহি                               

ইখলাস দ্বারা কুরআন খতম                     

অভিজ্ঞতা বনাম ধর্মীয় বিশ্বাস                     

পরিশেষ                                         

গ্রন্থপঞ্জি তালিকা

                           

প্রচলিত বিভিন্ন খতম: তাৎপর্য ও পর্যালোচনা

ভূমিকা

      সমস্ত প্রশংসা মহান রাব্বুল আলামিনের, যিনি আমাদেরকে তাঁর শ্রেষ্ঠ মাখলুক হিসেবে সৃষ্টি

করেছেন। অতঃপর তাঁর সর্বশ্রেষ্ঠ রাসূল মুহাম্মদ rএর উম্মত বানিয়েছেন। দিয়েছেন সর্বশ্রেষ্ঠ

চিরস্থায়ী কিতাব আল-কুরআন। এ দুইয়ের মাধ্যমে আমাদেরকে সর্বদা ও সর্বত্র কার্যকর বিধানের

ধারক বাহক বানিয়েছেন। আমাদের উপর মহান আল্লাহর এসব নেয়ামত অপরিসীম। এক নবীর পর যখন

আরেক নবী নতুন দীন নিয়ে আসেন, এক কিতাবের পর যখন আরেক কিতাব নতুন কিছু বিধান নিয়ে

অবতীর্ন হয়, তখন স্বভাবত উম্মতের মধ্যেই দুই শ্রেণি হয়ে যেতে দেখে যায়। এক শ্রেণি নতুন নবীর

উপর ঈমান আনেন, ফলে তারা মুমিনই থাকেন। আরেক শ্রেণি নতুন নবীকে মিথ্যুক আখ্যায়িত করে

বেঈমান বা কাফের হয়ে যায়। আল্লাহর কৃপায় সর্বশেষ নবীর উম্মত হওয়ার সৌভাগ্যে আমরা এমন

পরীক্ষামুক্ত। না নতুন নবী আসবেন, না কোনো নতুন বিধান আসবে। নতুন কোনো দীন বা

পদ্ধতির অনুসরণ করব কি করব না এই ঝামেলায় আমাদেরকে কখনো পড়তে হয় না। যে নবীর মাধ্যমে

আল্লাহ তাঁর দীনকে পরিপূর্ণ করে দিয়েছেন সেই নবীর উম্মত হতে পারা কতই বড় সোভাগ্যের কথা তা

পূর্বের উম্মতের ইতিহাস নিয়ে একটু চিন্তা করলেই বুঝে আসবে। তাই আল্লাহ আমাদেরকে এই বড়

নেয়ামত প্রদানের জন্য আবারো তাঁর শুকরিয়া আদায় করছি।

      রাসূল r এর দীন, তাঁর তরিক্বা, তাঁর আদর্শ প্রচারে সাহাবায়ে কেরাম থেকে নিয়ে যুগে যুগে একশ্রেণি

তাদের জীবন বিলিয়ে দিয়েছেন। ফলে ইবাদত সংক্রান্ত যেকোনো খুটিনাটি বিষয়ে রাসূল r এর আদর্শ

আমাদের মাঝে বিদ্যমান। এখন আমাদের দায়িত্ব শুধুমাত্র তাঁর রেখে যাওয়া দীনের অনুসরণ। দীন পালনে

তাঁর পদ্ধতির অনুসরণ। সালাত, যাকাত, সওম, হজ্জ, তেলাওয়াত দো‘আ, দুরূদ, যিকর সর্বক্ষেত্রে তাঁর

রেখে যাওয়া পদ্ধতির অনুসরণ অনূকরণই একজন মুমিনের কর্তব্য। এমন কোনো ইবাদত বা নেক

আমল নেই যেখানে তাঁর আদর্শ নেই। ইবাদত সংক্রান্ত সব বিষয় বিবেক কর্তৃক নির্ধারণের উর্ধ্বের

বিষয়, যা একমাত্র ওহীর মাধ্যমেই জানা যায়, জ্ঞানের শেষ সীমা থেকেই ওহীর সুচনা, সুতরাং তাঁর

আদর্শ,পদ্ধতি, উদ্দেশ্য যেখানে নেই তা ইবাদত বা নেক আমল বলে গণ্য হওয়ার কোনো সুযোগ নেই।

অনেক দিন থেকেই মনে প্রশ্ন ছিল যে, কুরআন তেলাওয়াত একটি নেক আমল, হাদীস চর্চা একটি নেক

আমল। অনুরূপ দো‘আ, দুরূদ, যিকর সবই নেক আমল। তাই এগুলোর মাঝে

পরিবর্তন, পরিবর্ধন, সংযোজন, বিয়োজন করা, অথবা এগুলোকে রাসূল r এর উদ্দেশ্য বর্জিত

অর্থাৎ তিনি এগুলোকে যে উদ্দেশ্যে করেন নি সে উদ্দেশ্যে করার সুযোগ থাকে কীভাবে? আমাদের

সমাজের প্রচলিত ‘খতম’ কি এর ব্যতিক্রম? খতমের নামে রাসূল r এর সুন্নাত পদ্ধতির ব্যত্যয়

ঘটানো, তিনি যে উদ্দেশ্যে এগুলো করেন নি তা করা কতটুকু সিদ্ধ? আল-হামদু লিল্লাহ, দেখা যায়

অনেক প্রজ্ঞাবান আলেম যারা যুক্তির উর্ধ্বে রাসূল r এর সুন্নাতকে স্থান দেন, পূর্ণাঙ্গ সুন্নাতের

অনুসরণের সর্বদা চেষ্টা করেন, তারা সব সময়ই এসবের বিরোধিতা করে আসছেন। বাংলাদেশে এদের

মাঝে অন্যতম বিশিষ্ট মুফতি, সবার কাছেই যার সুন্নাতের পাবন্দির কথা প্রসিদ্ধ, মুফতি ফয়জুল্লাহ

রাহ.-আল্লাহ তাকে মাগফেরাত ও রাহমাত দিয়ে ঢেকে নিন- তিনি সর্বদা এসবের কঠোর বিরোধিতা

করতেন। তাঁর রচিত কাব্যের কিতাব ‘পান্দে নামাহ খাকী’তে প্রচলিত খতম সম্পর্কে একটি পাঠ

লিখেছেন, যাতে সর্বপ্রকার খতম বিদ‘আত ও সুন্নাহ বহির্ভূত আখ্যা দিয়ে এসব বিদ‘আত কুসংস্কার

পরিহার করে সুন্নাতকে আকড়ে ধরার নসীহত করেছেন।[1] তাঁর প্রতিষ্ঠিত মাদ্রাসা ‘হামিউস্-

সুন্নাহ’ মেখল, চট্টগ্রামে অধ্যয়ন থেকেই মূলত সুন্নাত এবং সুন্নাতের ধারক আলেমদের প্রতি মহব্বত

এবং বিদ‘আতের প্রতি ঘৃণা জন্ম নেয়। আসাতিযায়ে কেরাম সব সময় তাঁর একটি মূল্যবান নসীহত

শুনাতেন। নসীহতটি ছিল,

‘‘কোন পীরের কথা ও কর্ম দলীল নয় * হক্ব বল, আহমদ এর কর্মকে ধর।’’

      যদিও শয়তানের ধোঁকায় বা না জেনে অনেক সময় সুন্নাত বিরোধি বিদআতি কর্মে লিপ্ত হয়ে যাই।

আল্লাহর কাছে তার জন্যে সর্বদা ক্ষমা প্রার্থনা করি।

       সুন্নাহ বহির্ভূত এসব খতম পদ্ধতির প্রতি অনীহা থাকা সত্বেও অনেক সময় ঈমানী দুর্বলতা বা

পরিবেশ পরিস্থিতিতে নিজেকে এসবের মধ্যে জড়িয়েছি। জড়িয়ে থাকার কারণে এসবের আরো অনেক না-

জায়েয দিক সামনে আসলে দিন দিন এগুলোর প্রতি আরো বেশি অনীহা ও সাধারণ জনগণের অজ্ঞতার

উপর আফসোস জন্ম নেয়। সহজভাবে সুন্নাহর পদ্ধতিতে নেক আমল পালন করা ছেড়ে দিয়ে অযথা এসবে

লিপ্ত হয়ে নিজের সময়, টাকা পয়সা কেন ব্যয় করি? এতে আমার কী লাভ? আমার অজ্ঞতার কারণে এক

গোত্রের দুনিয়াবী কিছু স্বার্থ অর্জন হচ্ছে, এই যা। এই কি আমার চাওয়া পাওয়া? একে কি আমি

একবারও নবীর সুন্নাতের সাথে মিলিয়ে দেখেছি? আমাদের এসব কর্ম কতটুকু গ্রহণযোগ্য এই কথাটি

উপলব্ধি করার জন্য এ বিষয়ে কিছু লিখার ইচ্ছা দীর্ঘ দিন থেকে লালন করে আসছিলাম। সর্বশেষ মহান

আল্লাহর ইচ্ছায় এই ক্ষুদ্র রচনাটি লিখতে সক্ষম হয়েছি। এতে যা কিছু ভাল সবই আল্লাহর পক্ষ

থেকে, আর যা মন্দ সব আমি অধমের। এতে কিছু মানুষের উপকার হলে এটাই আমার স্বার্থকতা। এ বিষয়ে

সামান্য হলেও আলোচনা করতে পারায় আবারো আল্লাহর শুকরিয়া জ্ঞাপন করছি।

 হাদীসে রয়েছে : ‘‘যে ব্যক্তি মানুষের কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেনি সে আল্লাহর কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন

করেনি।’’[2] তাই সর্বপ্রথম আমার পিতার জন্য দো‘আ করি, আল্লাহ যেন তাকে মাগফিরাত ও রাহমাত

দ্বারা বেষ্টন করে নেন। যার সর্বাত্মক চেষ্টার ফলেই হয়ত আল্লাহ তাঁর রহমতে দ্বীনি ইলমের সাথে

নিজেকে সংশ্লিষ্ট রাখার তওফিক্ব দিয়েছেন। যিনি দীর্ঘ দিন সরকারী মাদ্রাসায় হাদীসের খেদমাত

"نیست حجت قول و فعل ھیچ پیر *  قول حق گو فعل احمد را بگیر "

করলেও আমাকে শুধু এজন্য কওমি মাদ্রাসায় পড়িয়েছেন যাতে করে আমার মাঝে ইলমি দক্ষতা ও

সুন্নাতের পাবন্দি এই দুটি জিনিস অর্জিত হয়। জানি না তাঁর এ আশা কতটুকু কার্যকর হয়েছে। আজ তিনি

জীবিত থাকলে এই ক্ষুদ্র মেহনতটি দেখলে হয়ত অত্যন্ত খুশি হতেন। আল্লাহ যেন এই খেদমাতটুকু ক্ববুল

করেন। ক্ববুল হলে হাদীসের ভাষায় তিনি অবশ্যই এর ছওয়াবের অংশ পাবেন।

এরপর শুকরিয়া জ্ঞাপন করছি আমার সকল উস্তাদদের যাদের যোগ্যতা ও পরিশ্রমের ফলেই আমার

মাঝে যেটুকুই হোক ইলমের বীজ বপন হয়েছে। তাদের ইলমি অনুদানের সাথে সাথে বিভিন্ন জনের আরো

বিভিন্ন ধরণের অনুদান রয়েছে, ছোট পরিসরে বিস্তারিত আলোচনার অবকাশ নেই। এক কথায় জীবিত

সবার কৃতজ্ঞতা, দীর্ঘ বরকতময় হায়াত কামনা এবং মৃতদের জন্য রাহমাত ও মাগফিরাতের দো‘আ

করছি।

একজনের নাম নিলেই আরেকজনের অবমূল্যায়ন নয়, এর আলোকে যার নাম উল্লেখ না করে পারছি

না, তিনি হলেন আমার উস্তায মুহতারাম মুফতি আবুল কালাম যাকারিয়া। যার ইলমি সহ বিভিন্ন অনুদান

আমার রক্তের প্রতিটি কণায় কণায়। তাঁর ঋন পরিশোধ করা আমার পক্ষে কখনোই সম্ভব নয়।

দ্বীনি ইলমের কিঞ্চিত যা কিছুই অর্জন করেছি তার সিংহভাগই মূলত তাঁর সাথে দীর্ঘ দিনের সুহবতের

ফসল বলে মনে করি। হক্ব বোঝার পর কারো দোহাই দিয়ে এক ইঞ্চি না সরার চেষ্টা মূলত তাঁরই

দীক্ষা। আরো কিছু লিখার ইচ্ছা থাকলেও এ কথাগুলো লিখতেই চক্ষু ছলছল করায় আর লিখতে পারছি

না। আশাকরি তিনি আমার এই ক্ষুদ্র রচনা দেখে আনন্দিত হবেন এবং এটিকে আমার মাঝে তাঁর নিজের

দীক্ষার প্রকাশ মনে করে আমার জন্য দো‘আ করবেন। দো‘আ করি আল্লাহ তাঁর হায়াতকে বরকতময়

করে তুলুন। জাতিকে তাঁর থেকে উপকৃত হওয়ার ধারাবাহিকতা দীর্ঘ করে দিন।

রচনাটি লিখার ক্ষেত্রে আরো যারা উৎসাহ উদ্দীপনা দিয়ে সাহস দিয়েছেন তাদের সবার শুকরিয়া

জ্ঞাপন করছি। বিশেষ করে মাওলানা আব্দুল্লাহ মানসুর ও আমার অত্যন্ত স্নেহভাজন ছাত্র হাফেজ

মাওলানা ইয়াহ্ইয়া রচনাটির প্রুফ দেখার কষ্ট বরণ করায় তাদেরকে অসংখ্য ধন্যবাদের সাথে সাথে তাদের

কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি। আল্লাহ তাদেরকে জাযায়ে খাইর দান করুন।

রচনাটি লিখতে হাদীসের ক্ষেত্রে একমাত্র সহীহ হাদীসের উপরেই নির্ভর করা হয়েছে। দু-একটি হাসান

পর্যায়ের হাদীস উল্লেখ করা হয়েছে যা মুহাদ্দিসীনে কেরামের নিকট গ্রহণযোগ্য। দ‘য়িফ বা দুর্বল

কোনো হাদীসের উপর নির্ভর করা হয় নি.

94
ইসলাম সম্পর্কে অমুসলিমদের ২০টি বিভ্রান্তিকর প্রশ্নের জবাব

মানুষকে আল্লাহর পথে আহবান একটি অর্পিত দায়িত্ব।

মুসলিম জাতির সচেতন অংশ খুব ভালো করেই জানেন যে, ইসলাম একটি বিশ্বজনীন জীবন ব্যবস্থা, যা গোটা

মানব জাতির জন্য দেয়া হয়েছে। আল্লাহ তা’য়ালা সমগ্র সৃষ্টিজগতের সৃষ্টিকর্তা বিধাতা প্রতিপালক এবং তাঁর

প্রতি সম্পূর্ণ সমর্পিত মানুষ, অর্থাৎ ‘মুসলিম’-তাদেরকে বাছাই করে নির্বাচন করা হয়েছে, মানব জাতির

প্রতিটি সদস্যের কাছে তাঁর বাণী যথাযথভাবে পৌঁছে দেবার দায়িত্বশীল করে।

কিন্তু হায়! অধিকাংশ মুসলিম তার সে দায়িত্বের ব্যাপারে সম্পূর্ণ অজ্ঞাত। যেখানে আমাদের নিজেদের স্বার্থে

জীবন যাপনের শ্রেষ্ঠতম পদ্ধতি হিসেবে পরিপূর্ণভাবে ইসলামে প্রবেশ করাই ছিল একমাত্র কাজ। সেখানে

আমাদের বাস্তবতা আজ এই যে, এতটুকু ইচ্ছাও কারো মধ্যে অনুভুত হয়না যে, যাদের কাছে এখন পর্যন্ত এ বাণী

পৌঁছেনি তাদেরকে এই পরম সত্যের অংশীদার করে নেই।

আরবী শব্দ ‘দা’ওয়াহর’ অর্থ আহবান বা আমন্ত্রণ। ইসলামী পরিভাষায় এর তাৎপর্য-ইসলামের প্রচার ও

প্রসারের জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা-প্রচেষ্টা চালানো। জ্যোতীর্ময় কুরআন বলছেঃ

তার চেয়ে বড় জালিম আর কে হতে পারে, যে প্রকাশ করেনা (এমন) ‘উদ্ভাসিত সত্যকে’, আল্লাহর তরফ থেকে যা

তাদের কাছে দেয়া আছে? এই যা কিছু তারা করছে এ ব্যাপারে আল্লাহ আদৌ উদাসীন নন। (২‍:১৪০)

• অত্যন্ত পরিচিত বিশটি সাধারণ প্রশ্ন

মানুষের কাছে ইসলামের বাণী পৌঁছাবার প্রয়োজনে আলাপ আলোচনা ও মৃদু তর্কানুষ্ঠান কাঙ্খিত পদ্ধতি

হিসেবে অনুমোদিত। জ্যোতীর্ময় কুরআন বলছেঃ

আহবান করো (সবাইকে) তোমার প্রভূ-প্রতিপালকের পথে পান্ডিত্যপূর্ণ ও সৌন্দর্যমন্ডিত বাগ্মীতার সাথে

এবং বিতর্ক করো তাদের সাথে এমনভাবে যা হৃদ্যতাপূর্ণ ও আকর্ষণীয়। (১৬:১২৫)

‘একজন অমুসলিমের কাছে ইসলামের বাণী পৌঁছানো’- সাধারণত এটাই যথেষ্ট বলে প্রতিয়মান হয় যে, শুধু তার

ইতিবাচক দিকগুলোকে সামনে তুলে ধরা। কেননা অধিকাংশ অমুসলিম যুক্তিসংগত ও চূড়ান্তভাবে প্রমাণিত

ইসলামের মহাসত্যের সাথে একাত্ম হয়ে উঠতে পারেনা শুধু এই কারণে যে, এমন কিছু নেতীবাচক প্রশ্ন তাদের মনের

গভীরে গেঁথে আছে যা উত্তরহীন হয়েই থেকে যায়। ফলে তাদের বিবেক-বুদ্ধি ইসলামের ‘মানব প্রকৃতি’ সম্মত

ইতিবাচক বিষয়গুলোর দিকে প্রচন্ড আকর্ষণ সৃষ্টি করতে পারলেও সেই উত্তরহীন প্রশ্নগুলো পেছনে টেনে

বিতর্কে বসলে ইসলামের জীবনমুখী, মানবতাবাদী, ইতিবাচক প্রকৃতির প্রতি একমত বলে জানিয়ে দেবার সাথে সাথে

সেই একই নিঃশ্বাসে বলে ফেলবেঃ কিন্তু “তোমরা তো সেই মুসলমান যারা দুই-তিনটা বিয়ে করো”। “তোমরা

তো সেই লোক যারা নারীকে অবরুদ্ধ করে পর্দার নামে ঘরে বন্দী করে রাখো” তোমরা হচ্ছ মৌলবাদী

আমি ব্যক্তিগতভাবে অমুসলিম ভাইদেরকে উদাত্তকণ্ঠে বলতে চাই (ইসলাম সম্পর্কে তাদের ধারণা অত্যন্ত

সীমিত তা ভুল হোক বা শুদ্ধ, যেখান থেকেই তারা পেয়ে থাক) তাদের এই অনুভূতি ভুল বা ভ্রান্ত। আমি তাদেরকে

উৎসাহিত করি খোলা মন নিয়ে সুস্পষ্ট ভাষায় কথা বলতে। এবং আশ্বস্ত করি তাদেরকে যে, ইসলাম সম্পর্কে যে

কোনো কটাক্ষ আমি খোলা মনে গ্রহণ করতে প্রস্তুত।

দা’ওয়াহর ক্ষেত্রে বিগত কয়েকটি বছরে আমার যে অভিজ্ঞাতা তাতে আমার উপলদ্ধি এখানে এসে দাঁড়িয়েছে

যে,সাধারণ একজন অমুসলিম ইসলাম সম্পর্কে খুব বেশি হলে গোটা বিশেক প্রশ্ন করতে পারে। যখনই আপনি

কোনো অমুসলিমকে প্রশ্ন করবেন, ইসলামের মধ্যে কি এমন ভুল আছে যা আপনি বোধ করেন? উত্তরে সে

গড়গড় করে পাঁচ ছয়টা প্রশ্ন করে ফেলবে। যেকোনো ভাবে এগুলো ঐ কুড়িটা প্রশ্নের মধ্যেই গিয়ে পড়বে।

• যুক্তিমসঙ্গত উত্তর অধিকাংশকে আশ্বস্ত করে

সাধারণভাবে ইসলাম সম্পর্কে প্রচলিত কুড়িটি প্রশ্নের জবাব অত্যন্ত শক্তিশালী যুক্তি সহকারে বিবেক

সম্মতভাবে দেয়া যেতে পারে এবং অধিকাংশ অমুসলিম এই সঙ্গত উত্তরের মাধ্যমে আশ্বস্ত হয়ে উঠতে পারেন।

একজন মুসলমান যদি এই উত্তরগুলো মুখস্ত করেন অথবা অন্তত মনে রাখার চেষ্টা করেন-ইনশাআল্লাহ যে

কোনো বিতর্কে তিনিই সফল হবেন। ইসলামের পূর্ণাঙ্গ সত্যকে কোনো প্রতিপক্ষ সহসা মেনে না নিলেও

অন্তত ইসলাম সম্পর্কে তার ভুল ধারণাসমূহ দূর করে ইসলাম ও মুসলমানদের সম্পর্কে নেতিবাচক উর্ধ্বমুখী

চিন্তাধারাকে নিষ্ক্রীয় করে দেয়া যেতে পারে। অত্যন্ত ব্যতিক্রম কিছু অমুসলিম এসব প্রশ্নের জবাবে পাল্টা

প্রশ্ন রাখতে পারে। যার জবাবে হয়তো আরো কিছু তত্ত্ব ও তথ্যের প্রয়োজন পড়তে পারে।

• প্রচার মাধ্যম যেসব ভ্রান্ত ধারণার সৃষ্টি করেছে

অধিকাংশ অমুসলিমদের মনে ইসলাম সম্পর্কে সাধারণ যে ভ্রান্ত ধারণাগুলো বদ্ধমূল হয়েছে তার কারণ

ইসলামের বিরুদ্ধে ওদের ভূল ও মিথ্যা ইতিহাস এবং তথ্যের নিরবচ্ছিন্ন ভাবে ‘তথ্য-বোমা’ বিস্ফোরণ।

আন্তর্জাতিক প্রচার মাধ্যম প্রধানত ক্ষমতার মদো-মত্ত পশ্চিমা বিশ্বের নিয়ন্ত্রণে। হোক তা

আন্তর্জাতিক উপগ্রহ চ্যানেল, বেতার কেন্দ্র, সংবাদপত্র,ম্যাগাজিন অথবা বই-পুস্তক । সাম্প্রতিক কালে

ইন্টারনেট অত্যন্ত শক্তিশালী তথ্য-মাধ্যম হয়ে উঠেছে। এ মাধ্যমটি যদিও বিশেষ কারো নিয়ন্ত্রনে নয়।

কিন্তু তবু, যে কেউ এর মধ্যে ইসলামের জঘন্য প্রচারণার পর্বত সমান আয়োজন দেখতে পাবে।

নিঃসন্দেহে অনেক সচেতন মুসলমান এ হাতিয়ারটি ইসলামের আসল চেহারা তুলে ধরার নিরন্তর চেষ্টায় লিপ্ত।

কিন্তু বিরোধী প্রচারণার তুলনায় তা জোযন জোযন মাইল পেছনে পড়ে আছে। আমার বুক ভরা আশা

যে, মুসলমানদের এই চেষ্টা দিন দিন আরো ব্যাপক আকার ধারণ করবে এবং তার ধারাবাহিকতা একদিন এমন

অবস্থানে পৌঁছাবে যেখানে ওরা আজ অবস্থান করছে।

• ভ্রান্ত ধারণাগুলো সময়ের সাথে সাথে পরিবর্তিত হয়

ইসলাম সম্পর্কে সাধারন প্রশ্নগুলো বিভিন্ন সময় ও যুগের প্রেক্ষিতে ভিন্ন। আমাদের নির্ধারিত কুড়িটি

প্রশ্ন বর্তমান যুগ ও প্রেক্ষিতের ওপর। এক দশক আগে এই প্রশ্নমালা ছিল এর রকম এবং একদশক পরেই এই

প্রশ্ন-মালা হয়তো পরিবর্তিত হয়ে যাবে। এটা নির্ভর করে শুধুমাত্র প্রচার মাধ্যমের ওপর-কিভাবে সে তা

প্রকাশ করছে।

• ভুল ধারণাগুলো সারা বিশ্বে প্রায় একই রকম

পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন মানুষের সাথে মতবিনিময় করে দেখেছে-ইসলাম সম্পর্কে সাধারনভাবে এই কুড়িটি

প্রশ্নই সব পায়গায় একই রকম। সমাজ সভ্যতা ও সংস্কৃতি ভেদে হয়ত দু’-একটি প্রশ্ন এর সাথে যুক্ত হতে

পারে। উদাহরণ হিসেবে আমেরিকায় এর সাথে যুক্ত হবে ‘সুদের লেনদেনকে ইসলাম নিষিদ্ধ করেছে কেন’?

এভাবে ভারতীয় সামাজিকতার প্রেক্ষিতে আমি এই কুড়িটির সাথে আরো একটি যোগ করেছি। যেমন ভারতীয়

অমুসলিমদের প্রশ্ন-মুসলমানরা কেন এত আমিষ খাদ্য খায় বা তারা নিরামিষভোজী নয় কেন? এ প্রশ্নটি

অন্তর্ভুক্তির বিশেষ কারণ হলো, বিশ্ব জনসংখ্যার এক পঞ্চমাংশ ভারতীয়। অন্যকথায় পৃথিবীর শতকরা

২০% ভাগ মানুষ ভারতীয় বংশদ্ভুত এবং পৃথিবীর প্রায় সব দেশেই তারা বসবাস করছে। তাই তাদের প্রশ্নগুলো

বিশ্বব্যাপী অমুসলিদের প্রশ্নগুলোর মতোই সাধারণ পর্যায়ে উঠে এসেছে।

• অসংখ্য অমুসলিম রয়েছে যারা ইসলামকে জানার জন্য অধ্যয়ন করছে

অসংখ্য অমুসলিম রয়েছে যারা ইসলামকে জানার জন্য অধ্যয়ন করে- এবং যারা করছে তাদের অধিকাংশই যেসব

বই-পুস্তক পড়ছে তার লেখক পক্ষপাতদুষ্ট-ইসলামের সমালোচক। এদের বাড়তি সংজোযন হলো কুরআনে তারা

পরস্পর বিরোধী কথা-বার্তা দেখতে পেয়েছে এবং কুরআন অবৈজ্ঞানিক ইত্যাদি।

ইসলাম সম্পর্কে কিছু ধারনা রাখেন এমন অমুসলিমদের সাধারণ কিছু প্রশ্নের জবাব এই শিরোনামে আমার

ভাষণ, বই,ক্যাসেট ও সিডি আকারে সুরক্ষিত আছে। আগ্রহী ব্যক্তি তার যেকোন একটি সংগ্রহ করে, পড়ে বা

শুনে নিতে পারেন।

প্রশ্নঃ ইসলাম একজন পুরুষকে একাধিক স্ত্রী রাখার অনুমতি দেয় কেন? অথবা ইসলামে বহু-বিবাহ অনুমোদিত

ক. বহু-বিবাহের সংজ্ঞা

‘বহু-বিবাহ’ মানে এমন একটি বিবাহ পদ্ধতি যেখানে এক ব্যক্তির একাধিক স্ত্রী থাকে। বহু-বিবাহ দুই ধরনের-

একজন পুরুষ একাধিক নারীকে বিবাহ করে। আর একটি বহু স্বামী বরণ। অর্থাৎ একজন স্ত্রীলোক একাধিক

পুরুষ বিবাহ করে। ইসলামে পুরুষের জন্য সীমিত সংখ্যক ‘বহু-বিবাহ’ অনুমোদিত। অপর দিকে নারীর জন্য

একাধিক পুরুষ বিবাহ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ‘হারাম’।

এবার মূল প্রশ্নে আসা যাক। কেন একজন পুরুষ একাধিক স্ত্রী রাখার অনুমতি পায়?

খ. পৃথিবীতে কুরআ’নই একমাত্র ধর্ম-গ্রন্থ, যে বলে “বিবাহ করো মাত্র একজনকে”

ভূ-পৃষ্টের ওপরে কুরআনই একমাত্র ধর্ম-গ্রন্থ যা এই বাক্যাংশ ধারণ করে আছে-“বিবাহ করো মাত্র

একজনকে” আর কোনো ধর্ম-গ্রন্থ নেই, যা পুরুষকে নির্দেশ একজন স্ত্রীতে সন্তুষ্ট থাকতে। অন্য

কোনো ধর্ম-গ্রন্থ -হোক তা বেদ, রামায়ন,মহাভারত, গীতা, অন্যদিকে তালমুদ অথবা বাইবেল। এ সবের

মধ্যে স্ত্রীদের সংখ্যার ওপর কোনো বিধিনিষেধ বের করতে পারবে কি কেউ? বরং এসব ধর্মগ্রন্থ অনুযায়ী

একজন পুরুষ বিবাহ করতে পারে যতজন তার ইচ্ছা। এটা অনেক পরের কথা যে, হিন্দু ধর্ম গুরু এবং খ্রীস্টান চার্চ

স্ত্রীর সংখ্যা ‘এক’ এ নিয়ন্ত্রিত করে দিয়েছে।

অসংখ্য ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব তাদের ধর্মগ্রন্থ অনুযায়ী একাধিক স্ত্রী রেখেছে। যেমন রামের পিতা রাজা দশরথ।

ভগবান শ্রী কৃষ্ণের তো অনেক স্ত্রী ছিল!

বাইবেল যেহেতু স্ত্রীদের সংখ্যার ওপর কোনো বিধিনিষেধই নেই। সেহেতু আগের কালের খ্রীস্টান পুরুষরা যে-

ক’জন খুশি স্ত্রী রাখতে পারত। মাত্র কয়েক শতাব্দী আগে তাহাদের চার্চ্চ স্ত্রীর সংখ্যা ‘এক’ এর মধ্যে

সীমাবদ্ধ করে দিয়েছে। ইহুদীবাদে বহু বিবাহ অনুমোদিত। তাদের তালমুদিয় বিধান অনুযায়ী আব্রাহামের [ইব্রাহীম

(আ)] তিনজন স্ত্রী ছিল এবং সলোমনের [সুলাইমান (আ)]-এর ছিল শতাধিক স্ত্রী। বহু-বিবাহের এই প্রথা চলে

আসছিল তাদের “রাব্বাঈ” জারসম বিন ইয়াহুদাহ্‌ পর্যন্ত। (৯৬০ সি.ই থেকে ১০৩০ সি.ই) তিনিই এর বিরুদ্ধে

একটি অনুশাসন জারি করেন। ইহুদীদের‘সেফারডিক’ সমাজ যারা প্রধানত মুসলমানদের দেশগুলোতে বসবাস করে

তারা এই প্রথাকে নিকট অতীতের ১৯৫০ সাল পর্যন্ত ধরে রাখে। অতঃপর ইসরাঈলের প্রধান রাব্বাঈ একাধিক

স্ত্রী রাখার ওপর বিধিনিষেধ জারি করে দেয়।

একটি লক্ষণীয় বিষয়ঃ ১৯৭৫ সালের আদম-শুমারী অনুযায়ী ভারতীয় হিন্দুরা বহু বিবাহের ক্ষেত্রে মুসলমানদের

চাইতে অগ্রগামী। কমিটি অফ দি স্টাটাস অফ ওমেন ইন ইসলাম (ইসলামে নারীর মর্যাদা কমিটি) নামে এ বইটি

প্রকাশিত হয়েছে ১৯৭৫ সালে। বইয়ের ৬৬ ও ৬৭ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করা হয়েছে যে, ১৯৫১ থেকে ১৯৬১ পর্যন্ত

একটি পরিসংখ্যানে দেখা যায়, একাধিক স্ত্রী গ্রহণ-সংক্রান্ত বিবাহ, হিন্দুদের মধ্যে শতকরা পাঁচ দশমিক শূন্য

ছয় (৫.০৬%) আর মুসলমানদের মধ্যে চার দশমিক তিন এক (৪.৩১%)। ভারতীয় আইন অনুযায়ী একাধিক স্ত্রী

গ্রহণের অনুমোদন শুধুমাত্র মুসলমানদের জন্য নির্ধারিত। ভারতে যেকোনো অমুসলিমের জন্য একাধিক

স্ত্রী রাখা অবৈধ। এটা অবৈধ হওয়া সত্ত্বেও মুসলমানদের তুলনায় হিন্দুরাই একাধিক স্ত্রী বেশি রাখছে। এর

আগে তো কোনো বিধিনিষেধই ছিলনা। এমনকি হিন্দু পুরুষদের ক্ষেত্রেও একাধিক স্ত্রী রাখা অনুমোদিত

ছিল। এই তো সেদিন ১৯৫৮ সালে হিন্দু বিবাহ-বিধি অনুমোদিত হলো এভাবে যে, একজন হিন্দুর জন্য একাধিক

স্ত্রী রাখা অবৈধ। বর্তমানে এটা একটা ভারতীয় রাষ্ট্রীয় আইন। যা নিয়ন্ত্রিত করেছে একজন হিন্দু পুরুষকে

একাধিক স্ত্রী রাখতে- “হিন্দু ধর্ম-গ্রন্থ” নয়।

আসুন এবার দেখা যাক ইসলাম কেন একজন পুরুষকে একাধিক স্ত্রী রাখার অনুমতি দেয়।

গ. কুরআন একাধিক বিবাহের নিয়ন্ত্রিত রূপকে অনুমতি দেয়

আমি আগে যেমন বলে এসেছি ভূ-পৃষ্ঠের ওপরে কুরআনই একমাত্র ধর্মীয় গ্রন্থ যা বলে ‘বিবাহ করো মাত্র

একজনকে’। কথাটি জ্যোতির্ময় কুরআনের সূরা নিসার নিম্নদ্ধৃত আয়াতের অংশ।

বিবাহ করো তোমাদের পছন্দের নারী- দু’জন অথবা তিনজন অথবা চারজন কিন্তু যদি আশঙ্কা করো

যে, তোমরা (তাদের সাথে) ভারসাম্যপূর্ণ আচরণ করতে না-ও পারতে পারো- তাহলে মাত্র একজন। (৪:৩)

কুরআন অবতীর্ণ হওয়ার পূর্বে বহু-বিবাহের কোনো মাত্রা নির্ধারিত ছিল না এবং ক্ষমতাবান প্রায় প্রতিটি

মানুষ এতে অভ্যস্ত ছিল। কেউ কেউ তো শ’ এর মাত্রা ছাড়ালে ক্ষান্ত হতো না। কুরআন সর্বোচ্চ চার

জনের একটা মাত্রা নির্ধারণ করে দিল। ইসলাম একজন পুরুষকে দুজন, তিনজন অথবা চারজনের যে অনুমতি দিয়েছে

তা কঠিন শর্তের মধ্যে আবদ্ধ যে, কেবলমাত্র তখনই তা সম্ভব যখন তাদের মধ্যে ভারসাম্যপূর্ণ সুবিচারমূলক

আচরণ করতে পারবে।

একই সূরার ১২৯ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে

তুমি কষ্মিকালেও পেরে উঠবে না স্ত্রীদের মধ্যে ভারসাম্যপূর্ণ সঙ্গত আচরণ বজায় রাখতে। (৪:১২৯)

কাজেই ইসলামে বহু-বিবাহ কোনো বিধান নয় বরং ব্যতিক্রম। বহু মানুষ এই ভুল ধারণায় নিমজ্জিত যে, একজন

মুসলিম পুরুষের জন্য একাধিক স্ত্রী রাখা বাধ্যতামূলক।

করা এবং না করার ক্ষেত্রে ইসলামের পাঁচটি শ্রেণী-বিন্যাস করা আছে।

১. ফরজ-অবশ্য করণীয় বা বাধ্যতামূলক।

২.মুস্তাহাব-অনুমোদিত অথবা উৎসাহিত।

৩.মুবাহ-অনুমোদন যোগ্য বা গ্রহণ যোগ্য।

৪.মাকরুহ- অনুমোদিত নয় বা নিরুৎসাহিত।

৫.হারাম- বে-আইনী বা নিষিদ্ধ।

এরমধ্যে বহু-বিবাহ মধ্যম শ্রেণীতে পড়ে। অর্থাৎ অনুমোদন যোগ্য এবং কোনো ভাবে এমন কথা বলা যাবে

না যে,একজন মুসলিম, যার দুজন, তিনজন অথবা চারজন স্ত্রী আছে, সে তার তুলনায় ভালো মুসলিম যার স্ত্রী

মাত্র একজন।

ঘ. গড় আয়ুস্কাল পুরুষের তুলনায় নারীর বেশি

প্রাকৃতিকভাবে নারী ও পুরুষের জন্মহার প্রায় সমান। একটি নারী শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা পুরুষ শিশুর

চাইতে বেশী। একটি নারী শিশু রোগ-জীবানু ও রোগ-ব্যাধির বিরুদ্ধে পুরুষ শিশুর চাইতে লড়াই করতে পারে। এ

কারণে শিশুকালে নারীর তুলনায় পুরুষের মুত্যু হার বেশি।

যে কোনো যুদ্ধের সময় নারীর তুলনায় পুরুষ বেশি মারা যায়। সাধারণ দুর্ঘটনা ও রোগ-ব্যাধিতে নারীর

তুলনায় পুরুষ বেশি মারা যায়। গড় আয়ুষ্কাল পুরুষের চাইতে নারীর বেশি। মহাকালে যে কোনো যুগে খুঁজে দেখলে

দেখা যাবে-বিপত্নীকের চাইতে বিধবার পরিমাণ অনেক বেশি।

ঙ. ভারতে পুরুষের জন্ম-সংখ্যা নারীর তুলনায় বেশি। এর কারণ নারী শিশুর ভ্রুণ-হত্যা ও নারী শিশু হত্যা।

প্রতিবেশি কয়েকটি দেশের মধ্যে তুলনামুলক ভাবে ভারতীয় পুরুষ-জনসংখ্যা নারী-জন সংখ্যার চাইতে বেশি। এর

নেপথ্য কারণ, নারী শিশু হত্যার উচ্চ হার। প্রতি বছর নুন্যতম দশলাখ ‘নারী-ভ্রূনের’ গর্ভপাত ঘটানো হয় এই

দেশে যখনই মায়ের গর্ভে তাকে নারী হিসাবে সনাক্ত করা যায়। যদি এই অভিষপ্ত চর্চ্চা বন্ধ করা যায় তাহলে

ভারতেও পুরুষের তুলনায় নারীর সংখ্যা বেশি হয়ে যাবে।

চ. বিশ্বব্যাপী নারী জনসংখ্যা পুরুষের চাইতে অধিক

আমেরিকায় পুরুষের চাইতে সত্তুর লক্ষ আশি হাজার নারী বেশি। শুধু নিউইয়র্কে পুরুষের চেয়ে দশলাখ নারী।

উপরন্তু নিউইয়র্কের এক তৃতীয়াংশ পুরুষ সমকামী। অর্থাৎ এই লোকেরা কোনা নারী-সঙ্গ বা বিবাহ করতে

আদৌ আগ্রহী নয়। ইংল্যান্ডে পুরুষ জনসংখ্যার সমসংখ্যক নারী বাদ দিলে চল্লিশ লক্ষ অতিরিক্ত নারী। একই

ভাবে জার্মানীতে পঞ্চাশ লাখ অতিরিক্ত নারী। রাশিয়ায় নব্বুই লাখ। এরপর শুধু আল্লাহই বলতে পারেন গোটা

পৃথিবীতে একজন পুরুষের বিপরীতে একজন নারী ধরে নিলে তারপর কত নারী অতিরিক্ত থেকে যাবে।

ছ. প্রতিটি পুরুষের জন্য মাত্র একজন স্ত্রী এই নিয়ন্ত্রণ বাস্তবতা বিবর্জিত

আমেরিকার প্রতিটি পুরুষ যদি একজন করে নারীকে বিবাহ করে তারপরেও তিন কোটির বেশি নারী থেকে যাবে

এমন,যারা তার জন্য কোনো স্বামী পাবে না। উপরন্তু মনে রাখতে হবে, সারা আমেরিকায় সমকামী পুরুষের

সংখ্যা দুই কোটি পঞ্চাশ লাখের বেশী। এভাবে চল্লিশ লাখের বেশি নারী ইংল্যান্ডে। পঞ্চাশ লাখের বেশি

জার্মানিতে এবং প্রায় এক কোটি নারী রাশিয়ায়- যারা কোনো স্বামী পাবে না।

ধরা যাক, আমার বোন আমেরিকা নিবাসী একজন অবিবাহিতা মহিলা অথবা আপনার বোন আমেরিকায়

বসবাসকারী একজন অবিবাহিতা নারী। সেখানে তার জন্য দুটি বিকল্প পথ খোলা আছে- হয় সে এমন একজন

পুরুষকে বিবাহ করবে যার একজন স্ত্রী আছে অথবা তাকে হতে হবে “জনগণের সম্পত্তি”-অন্য কিছুই হওয়া

সম্ভব নয়। তাহলে যারা রুচিশীলা তারা প্রথমটাই বেছে নেবে।

অধিকাংশ নারী অন্য নারীর সাথে তার স্বামীকে ভাগাভাগি করতে রাজি হবে না। কিন্তু ইসলামে পরিস্থিতি

বিবেচনায় তা-ই অপরিহার্য হয়ে ওঠে-“মুসলিম নারী তার যথার্থ ঈমানের কারণে এই সামান্য ক্ষতির বিনিময়ে

অনেক বড় ক্ষতি ঠেকাতে তার আর এক মুসলিম বোনকে জনগণের সম্পত্তি হওয়ার হাত থেকে রক্ষা করতে

জ. জনগনের সম্পত্তি হওয়ার চাইতে একজন বিবাহিতা পুরুষ বিয়ে করা শ্রেয়

পশ্চিমা সমাজের একজন পুরুষের ‘মেয়ে-বন্ধু’ খুবই স্বাভাবিক ব্যাপার। অথবা একাধিক বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক।

এক্ষেত্রে নারীরা যাপন করে মর্যাদাহীন এক অনিশ্চিত-অরক্ষিত জীবন। অথচ সেই একই সমাজ একজন পুরুষের

জন্য একাধিক স্ত্রী গ্রহণ করতে রাজি নয়। যেখানে নারী হতে পারতো একজন সম্মানিতা, মর্যাদাময়

অবস্থানের অধিকারিণী এবং যাপন করতো নিরাপত্তাপূর্ণ নিরাপদ জীবন।

যেখানে নারীর সামনে দুটি পথ খোলা। যে স্বাভাবিকভাবে কোনো স্বামী পাবেনা তাকে হয় একজন বিবাহিত

পুরুষকেই বিয়ে করতে হবে নতুবা হতে হবে জনগনের সম্পত্তি। ইসলাম পছন্দ করে নারীকে সম্মানজনক অবস্থান

দিতে, প্রথম পথের অনুমোদন দিয়ে এবং ঘৃণার সাথে প্রত্যাখ্যান করে দ্বিতীয়টিকে।

আরো কিছু রয়েছে যে সবের জন্য ইসলাম নিয়ন্ত্রিত বহু-বিবাহ অনুমোদন করে। কিন্তু প্রধানত নারীর

সম্মান-মর্যাদা ও সম্ভ্রম সুরক্ষাই লক্ষ্য।

২.একাধিক স্বামী

প্রশ্নঃ একজন পুরুষ যদি একাধিক স্ত্রী রাখার অনুমতি পায়, তাহলে ইসলাম একজন নারীকে কেন একাধিক স্বামী

রাখতে নিষেধ করে?

অসংখ্য মানুষ যার মধ্যে অনেক মুসলমানও রয়েছে, প্রশ্ন করেন-মুসলিম পুরুষ একাধিক স্ত্রী রাখার অনুমতি

পাচ্ছে অথচ নারীর ক্ষেত্রে সে অধিকার অস্বীকার করা হচ্ছে, এর যৌক্তিকতা কি? অত্যন্ত পরিষ্কারভাবে যে

কথাটি প্রথমেই আমাকে বলে নিতে হবে, তা হলো ভারসাম্যপূর্ণ ন্যায় বিচার ও সমতার ভিত্তির ওপরেই একটি

ইসলামী সমাজ প্রতিষ্ঠিত। মানুষ হিসেবে আল্লাহ তা’আলা নারী ও পুরুষকে সমান মান দিয়েই সৃষ্টি করেছেন।

কিন্তু সাথে সাথে সামর্থ ও যোগ্যতার ভিন্নতা এবং সে অনুযায়ী দায়িত্ব কর্তব্যের বিভিন্নতা দিয়ে। শারিরীক

ও মানসিক ভাবে নারী ও পুরুষ সম্পূর্ন ভিন্ন। জীবনের ক্ষেত্রে তাদের ভূমিকা এবং দায়িত্ব-কর্তব্যও বিভিন্ন।

ইসলামে নারী ও পুরুষ সমান কিন্তু একই রকম নয়।

সূরায়ে নিসার ২২ থেকে ২৪ আয়াতে একটি তালিকা দেয়া হয়েছে যে, মুসলিম পুরুষ কোন কোন নারীকে বিবাহ করতে

পারবে না। এর পরে ২৪ আয়াতে আলাদা করে বলা হয়েছে সেই সব নারীও (নিষিদ্ধ) যারা অন্যের বিবাহ বন্ধনে

আবদ্ধ আছে- অর্থাৎ অন্যের বউ।

ইসলামে নারীর জন্য বহু-স্বামী গ্রহণ নিষিদ্ধ কেন, নিম্নোদ্ধৃত বিষয়গুলো তা পরিষ্কার করে দেবে।

ক. একজন পুরুষের একধিক স্ত্রী থাকা সত্ত্বেও তার পরিবারে জন্মগ্রহণকারী শিশুদের মাতা-পিতার পরিচয় খুব

সহজেই পাওয়া যায়। শিশুর পিতা কে আর মাতা কে। অপরদিকে একজন নারী যদি একাধিক স্বামী গ্রহণ করে তবে এ

পরিবার জন্ম নেয়া শিশুর শুধু মায়ের পরিচয় পাওয়া যাবে-বাবার নয়। পিতা ও মাতার সুস্পষ্ট পরিচয়ের ক্ষেত্রে

ইসলাম আপোসহীন। আধুনিক মনোবিজ্ঞানিরা বলেন, যে শিশু তার মাতা-পিতার পরিচয় জানে না, বিশেষ করে

পিতার- সে শিশু তীব্র মানসিক জটিলতা ও হীনমন্যতায় ভোগে। এ শিশুদের শৈশব নিকৃষ্টতর এবং আনন্দহীন ।

দেহপসারিণী বা বেশ্যাদের সন্তানরা এর জলন্ত প্রমাণ। এদের শিশুকাল ও কৈশোর মর্মান্তিক। বহু স্বামী

গ্রহণকারী পরিবারে জন্ম পাওয়া শিশুকে নিয়ে কোনো স্কুলে ভর্তী করতে গেলে যদি মাকে প্রশ্ন করা হয় শিশুর

পিতার নাম? তা হলে সে মাকে দু’জন অথবা তার বেশি পুরুষের নাম বলতে হবে। বিজ্ঞানের অগ্রগতি এখন জেনেটিক

পরীক্ষার মাধ্যমে মাতা ও পিতা উভয়কে সনাক্ত করার কৌশল আবিষ্কার করেছে। কাজেই যে বিষয়টা অতীতে

অসম্ভব ছিল বর্তমানে তা খুব সহজেই হতে পারে।

খ. প্রকৃতি প্রদত্ত যোগ্যতা ও বৈশিষ্ট, বহুগামীতায় নারীর চাইতে পুরুষের বেশি।

গ.শারীরিক যোগ্যতায় একজন পুরুষের পক্ষে কয়েকজন স্ত্রীর স্বামীর দায়িত্ব ও ভূমিকা পালন সহজ। একজন

নারী সেই একই অবস্থানে, অর্থাৎ যার কয়েকজন স্বামী আছে, তাদের স্ত্রী হিসেবে যে দায়িত্ব ও কর্তব্য তার

ওপর বর্তায় তা পালন করা তার পক্ষে আদৌ সম্ভব নয়। কেননা মাসিক ঋতুচক্রের বিভিন্ন পর্যায়ে মানসিক

ও আচরণগত বিভিন্ন পরিবর্তনের মধ্যে তাকে পড়তে হয়।

ঘ. একজন নারী যার একাধিক স্বামী থাকবে-তাকে তো একই সাথে কয়েকজনের যৌন-সঙ্গী হতে হচ্ছে। এ

ক্ষেত্রে সমূহ সম্ভাবনা থাকবে যৌন রোগের এবং যৌনতার মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া অন্যান্য মারাত্মক

ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে পড়ার। উপরন্তু তার মাধ্যমেই সে সব রোগে তার স্বামীর আক্রান্ত হবে। এমনকি যদি

তার স্বামীদের কারো অন্য কোনো নারীর সাথে বিবাহ বহির্র্ভূত যৌন সম্পর্ক নাও থাকে। পক্ষান্তরে

একজন পুরুষ- যার একাধিক স্ত্রী রয়েছে, স্ত্রীদের কারো যদি বিবাহ বহির্ভূত অন্য কারো সাথে যৌন

সম্পর্ক না থাকে তাহলে যৌনতা সংক্রান্ত কোনো রোগে আক্রান্ত হবার আদৌ কোনো সম্ভাবনা

উপরোল্লেখিত কারণগুলো এমন যা যে কারো পক্ষে চেনা এবং বুঝে নেয়া সম্ভব। এছাড়া হয়তো আরো

অসংখ্য কারণ থাকতে পারে যে কারণে অন্তহীন জ্ঞানের আধার সৃষ্টিকর্তা বিধাতা প্রতিপালক আল্লাহ তা‘আলা

নারীদের জন্য বহু স্বামী বরণ নিষিদ্ধ করেছেন।

৩.‘হিজাব’ বা নারীর পর্দা

প্রশ্নঃ ইসলাম পর্দার আড়ালে রেখে নারীদেরকে কেন অবমূল্যায়ন করেছে?

ইসলামে নারীর মর্যাদা’- ধর্মহীন প্রচার মাধ্যমগুলোর উপর্যপুরি আক্রমণের লক্ষ্যস্থল- ‘হিজাব’ বা ইসলামী

পোশাক। ইসলামী বিধি বিধানে নারী নিগ্রহের সবচাইতে বড় প্রমাণ হিসেবে যা কথায় কথায় দেখানো হয়।

ধর্মীয়ভাবে নারীর জন্য রক্ষণশীল পোশাক বা পর্দা ফরয করার নেপথ্য কারণগুলো আলোচনার পূর্বে

ইসলাম আগমনের পূর্বে বিশ্বসমাজে সামগ্রীকভাবে নারীর অবস্থা ও অবস্থান কি ছিল তা নিয়ে কিঞ্চিৎ

পর্যালোচনা প্রয়োজন।

ক. ইসলাম-পূর্ব কালে নারীর-মর্যাদা বলতে কোনো ধারণার অস্তিত্ব ছিলনা। তারা ব্যবহৃত হতো ভোগ্য

সামগ্রী হিসেবে।

নিম্নে বর্ণিত বিষয়গুলো সর্বজনমান্য বিশ্ব-ইতিহাস থেকে তুলে আনা হয়েছে। সমুদয় মিলে যে চিত্র আমাদের

চোখের সামনে উঠে আসবে তাতে আমরা সুস্পষ্ট দেখতে পাবো ইসলাম-পূর্ব সভ্যতাগুলোতে

নারীর ‘মর্যাদা’ বলতে কিছুই ছিলনা। হীন নীচ এমনকি নুন্যতম ‘মানুষ’ হিসেবেও তারা গণ্য ছিল না।

১. ব্যাবিলনীয় সভ্যতাঃ ব্যাবিলনীয় আইনে নারীর কোনো ধরণের কোনো অধিকার স্বীকৃত ছিলনা। মূল্য-

মর্যাদা কি ছিল একটি উদাহরণে তা স্পষ্ট করে দেবে। কোনো পুরুষ যদি ঘটনাক্রমে কোনো নারীকে হত্যা

করে তাহলে তাকে শাস্তি দেবার পরিবর্তে তার স্ত্রীকে মৃত্যুদন্ড দেয়া হতো।

২. গ্রীক সভ্যতাঃ গ্রীক সভ্যতাকে পূর্বকালের সকল সভ্যতার শ্রেষ্ঠতম ও উজ্জ্বলতম গণ্য করা হয়।

তথাকথিত এই উজ্জ্বলতম সভ্যতায় নারী ছিল সব রকম অধিকার থেকে বঞ্চিত। উপরন্তু অস্তিত্বগত ভাবে

অত্যন্ত নিকৃষ্ট। একারণে তাদেরকে ঘৃণার চোখে দেখা হতো। গ্রীক পৌরাণিক শাস্ত্রের এক কাল্পনিক নারী

যার নাম “প্যানডোরা”। বিশ্ব মানবতার সকল দুর্ভাগ্যের মূল কারণ সেই নারী। তাই গ্রীকরা নারীকে ‘প্রায়

মানুষ’ অর্থাৎ মানুষের মতো বটে, কিন্তু সম্পূর্ণ নয় বলে মনে করত। পুরুষের সাথে তার কোনো তুলনাই হয়

না এমন। অপরদিকে নারীর সতীত্ব ছিল মহামূল্যবান কিছু এবং দেবীর মতো সম্মানও করা হতো। কিছুকাল

পরেই এই গ্রীকরা আত্মঅহংকারের উত্তুঙ্গে উঠে ধরা পড়ে বিকৃত যৌনাচারের হাতে, বেশ্যালয়ে গমনাগমন

সমাজের সর্বস্তরের মানুষের সংস্কৃতিতে পরিণত হয়েছি।

৩. রোমান সভ্যতাঃ যখন তার বিকাশের শিখর চূড়ায় তখন একজন পুরুষ যে-কোনো সময় তার স্ত্রীকে হত্যা

করার অধিকার রাখতো। নগ্ন নারী যে-কোনো আসরের সৌন্দর্য এবং বেশ্যালয় যাতায়াত পুরুষের

মিসরীয় সভ্যতাঃ মিসরীয় সভ্যতায় নারী ‘ডাইনী’ এবং শয়তানের নিদর্শন হিসেবে গণ্য হতো।

ইসলাম পূর্ব আরবঃ ইসলাম পূর্ব আরবে নারীর অবস্থান ছিল ঘরের অন্যান্য ব্যবহারীক আসবাবপত্রের

মতো। অনেক পিতা অসম্মানের হেতু হিসেবে তার শিশুকণ্যাকে জীবন্ত কবর দিত।

খ. ইসলাম নারীকে ওপরে উঠিয়েছে। দিয়েছে তাদেরকে সমতা এবং প্রত্যাশা করে- তারা তাদের মর্যাদা রক্ষা

ইসলাম নারীর মর্যাদাকে ওপরে উঠিয়েছে এবং নিশ্চিত করেছে তাদের ন্যায়সঙ্গত অধিকার আজ থেকে ১৪০০ বছর

আগে। ইসলাম নারীর মর্যাদাকে সংরক্ষণ করতে চায়।

পুরুষের পর্দাঃ মানুষ সাধারণত পর্দা নিয়ে আলোচনা করে নারীদের ক্ষেত্রে। অথচ জ্যোতীর্ময় কুরআনে

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা নারীর পর্দার আগে পুরুষের পর্দার কথা বলেছেন। সূরা নূরে বলা হয়েছে।

বলো! বিশ্বাসী পুরুষদেরকে- তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে অবনত রাখে এবং তাদের শালীনতা রক্ষা করে। এটা

তাদেরকে আরো পবিত্র ও পরিচ্ছন্ন (মানসিকতার) করে তুলবে, আর আল্লাহ কিন্তু সেই সব কিছুই জানেন যা

তোমরা করো। (২৪:৩০)

যে মুহুর্তে কোনো পুরুষ একজন নারীর দিকে তাকাবে- লজ্জাকর অশ্লীল চিন্তা তার মনে এসে যেতে পারে।

কাজেই তার দৃষ্টি অবনত রাখাই তার জন্য কল্যাণকর।

নারীর জন্য পর্দাঃ সূরা নূরের পরবর্তী আয়াতে বলা হচ্ছেঃ

এবং বলো, বিশ্বাসী নারীদেরকে- তারা তাদের দৃষ্টি অবনত রাখে এবং তাদের লজ্জাস্থান সমূহের সযত্ন

সংরক্ষণ করে এবং তাদের দৈহীক সৌন্দর্য ও অলংকারের প্রদর্শনী না করে। তবে অনিবার্য্য ভাবে যা

উন্মুক্ত থাকে। তারা যেন তাদের বক্ষের ওপরে চাদর ঝুলিয়ে দেয় এবং প্রদর্শন না করে তাদের

সৌন্দর্য, তাদের স্বামী তাদের পিতা তাদের স্বামীর পিতা (শশুর) এবং সন্তানদের ছাড়া। (২৪:৩১)

গ. হিজাবের ছয়টি শর্ত

কুরআন সুন্নাহ অনুযায়ী হিজাব পালনের ছয়টি শর্ত।

১. মাত্রা বা পরিমাণঃ প্রথম শর্ত হলো দেহের সীমানা যা যতটুকু-অবশ্যই ঢেকে রাখতে হবে। নারী ও পুরুষের

জন্য এটা ভিন্ন ভিন্ন। পুরুষের জন্য ঢেকে রাখার বাধ্যতামূলক পরিসীমা তার দেহের নুন্যতম নাভি থেকে হাঁটু

পর্যন্ত। নারীর জন্য এই পরিসীমা আরো বিস্তৃত- কব্জী পর্যন্ত হাত এবং মুখমন্ডল ছাড়া বাদবাকি শরীরের

সকল অংশ ঢেকে রাখা বাধ্যতামূলক। তারা যদি চায় তাহলে তা-ও আবৃত করে নিতে পারে। ইসলামের বিশেষজ্ঞ

আলেমগণের অনেকেই হাত ও মুখমন্ডলকেও বাধ্যতামূলক ঢেকে রাখার অংশ মনে করেন। বাদবাকি পাঁচটি শর্ত

নারী ও পুরুষের ক্ষেত্রে একই রকম প্রযোজ্য।

২. পরিধেয় পোষাক ডিলেডালা হতে হবে। যেন দেহের মূল কাঠামো প্রকাশ না পায়। ৩. পরিধেয় কাপড় এতটা

পাতলা ও স্বচ্ছ হতে পারবেনা যাতে ভেতরটা দেখা যায়। ৪. পোশাক এতটা আকর্শণীয় ও জাকজমকপূর্ণ হতে

পারবে না যাতে বিপরীত লিঙ্গ আকর্ষিত হয়। ৫. পোশাক এমন হতে পারবে না যা বিপরীত লিঙ্গের পোশাকের

মতো বা সমরুপ। ৬. পোশাক এমন হতে পারবে না দেখতে অবিশ্বাসীদের মতো। তাদের এমন কোনো

পোশাক পরা উচিৎ নয় যা বিশেষভাবে পরিচিত এবং চিহ্নিত অন্য ধর্মাবলম্বীদের (যারা মূলত অবিশ্বাসী)।

ঘ. অন্যান্য জিনিসের মধ্যে আচার-আচারণও হিজাবের অন্তর্ভুক্ত

ছয় ধরনের পরিচ্ছদের পাশাপাশি পূর্ণাঙ্গ পর্দা ব্যক্তির নৈতিক চরিত্র, আচার-আচারণ, অভিব্যক্তি এবং লক্ষ

উদ্দেশ্যকেও একিভূত করে। একজন ব্যক্তি সে যদিও শুধু কাপড়-চোপড়ে হিজাব পালন করে তাহলে

সে ‘হিজাব’ পালক করলো ন্যূনতম পর্যায়ের। পোশাকের পর্দা পালনের সাথে সাথে চোখের পর্দা, মনের

পর্দা ,চিন্তা-ভাবনার পর্দা এবং লক্ষ্য উদ্দেশ্যের পর্দাও থাকতে হবে। পর্দার সীমার মধ্যে আরো যা পড়ে, তা

হলো- ব্যক্তির চলা, কথা বলা এবং তার সার্বিক আচরণ ইত্যাদি।

ঙ. হিজাব বা পর্দা অহেতুক উৎপীড়ন প্রতিরোধ করে

নারীকে কেন পর্দার বিধান দেয়া হয়েছে কুরআন তা স্পষ্ট করে দিয়েছে। সূরা অহ্‌যাবে বলা হয়েছেঃ

হে নবী! বলুন আপনার স্ত্রী ও কন্যাদেরকে এবং বিশ্বাসী নারীদেরকে যে, তারা যেন তাদের বহিরাবরণ পরে থাকে

(যখন বাইরে যাবে)। এটা তাদের পরিচিতির অত্যন্ত উপযোগী। (তারা যেন পরিচিত হয়ে বিশ্বাসী-নারী হিসাবে)

তাহলে আর অহেতুক উৎপিড়ীত হবে না। আল্লাহ পরম ক্ষমাশীল দয়াবান। (৩৩:৫৯)

জ্যোতীময় কুরআন বলছেঃ নারীকে পর্দার বিধান দেয়া হয়েছে এই জন্য যে, তারা যেন রুচিশীলা পরিচ্ছন্ন নারী

হিসেবে চিহ্নিত হতে পারে। এবং এটা তাদেরকে লজ্জাকর উৎপীড়নের হাত থেকে রক্ষা করবে।

চ. দু’টি জমজ বোনের উদাহরণ

ধরা যাক জমজ দু’টি বোন। উভয়ই অপূর্ব সুন্দরী। ফুটপাত দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে। তাদের একজন পরেছে ইসলামী

হিজাব। অর্থাৎ সম্পূর্ণ দেহ আবৃত। শুধু কব্জী পর্যন্ত হাত ও মুখমন্ডল খোলা। অন্যজন পরেছে পশ্চিমা

পোশাক। শরীরের অধিকাংশ খোলা এবং প্রায় অর্ধ-উলঙ্গ। সামনেই এক মোড়ে আড্ডা দিচ্ছে এক দঙ্গল

যুবক। মেয়েদেরকে দেখে হৈ-হল্লা করা, শীশ দেয়া আর বাগে পেলে উত্ত্যক্ত করাই তাদের কাজ। এখন এই দুই

বোনকে যেতে দেখে তারা কাকে উদ্দেশ্য করে হল্লা করবে ? শীশ দেবে ? যে মেয়েটি নিজেকে ঢেকে রেখেছে তাকে

দেখে? না যে মেয়েটি প্রায় উদোম হয়ে আছে তাকে দেখে? খুব স্বাভাবিক ভাবেই তাদের চোখ যাবে যে কিনা

দেখাতে চায় তার দিকে। কার্যত এ ধরনের পোশাক বিপরীত লিঙ্গের প্রতি ‘ভাষাহীন নিরব আমন্ত্রণ’। যে

কারণে বিপরীত লিঙ্গ উত্তেজিত হতে বাধ্য হয়। জ্যোর্তীময় কুরআন যথার্থই বলেছে- ‘হিজাব নারীদের

উৎপীড়ন থেকে রক্ষা করে’।

ছ. ধর্ষকের জন্য দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি মৃত্যুদন্ড

ইসলামের বিধান অনুযায়ী একজন পুরুষ যদি কোনো নারী ধর্ষণের দায়ে দোষী সাব্যস্ত হয় তাহলে তার শাস্তি

প্রকাশ্য মৃত্যুদন্ড। অনেকেই বিস্ময় প্রকাশ করেন এই কঠিন বাক্য শুনে। কেউ কেউ তো বলেই বসেন, ইসলাম

অত্যন্ত নিষ্ঠুর,বর্বরদের ধর্ম। শত শত অমুসলিম পুরুষের কাছে আন্তরিকভাবে জানতে চেয়েছি- ধরুন, আল্লাহ

না করুন কেউ একজন আপনার স্ত্রীকে ধর্ষণ করেছে অথবা আপনার বোন বা কন্যা। আপনাকে বিচারকের

আসনে বসানো হয়েছে এবং ধর্ষণকারীকে আপনার সামনে হাজির করা হয়েছে। কি শাস্তি দেবেন তাকে? প্রত্যেকেই

উত্তর একটিই-“মৃত্যুদন্ড”। কেউ বলেছেন, ফায়ারিং স্কোয়াডে নিয়ে আমার চোখের সামনে ব্রাস ফায়ার করে

ঝাঝরা করে দিতে বলব। কেউ বলেছেন ওকে তিল তিল করে মৃত্যুর স্বাদ দিয়ে মারতে বলব। এই উত্তর দাতাদের

কাছেই আমার প্রশ্ন, আপনার মা-বোন স্ত্রী কন্যাকে কেউ ধর্ষণ করলে তাকে ওভাবে মেরে ফেলতে চান। কিন্তু

এই একই অপরাধ যদি অন্য কারো স্ত্রী-কন্যার ওপর ঘটে তখন এই আপনিই বলেন মৃত্যুদন্ড অত্যন্ত কঠোর

ও নিষ্ঠুর হয়ে যায়। কেন ভাই, একই অপরাধের জন্য ক্ষেত্রভেদে দুই রকম দন্ড?

জ.নারীকে মর্যাদা দেবার পশ্চিমা সমাজের দাবি সর্বৈভ মিথ্যাচার

নারী স্বাধীনতার পশ্চিমা শ্লোগান একটি প্রকাশ্য প্রতারণা। তার দেহের সৌন্দর্যকে খুলে খুলে ব্যবসা করার

একটি লোভনীয় ফাঁদ। তার আত্মার অবমাননা এবং তার সম্মান ও মর্যাদাকে ধ্বংস করে দিয়েছে। আর প্রকাশ্য

বাস্তবতা হলো তাদেরকে তাদের সম্মানিত অবস্থান থেকে নামিয়ে উপপত্নী, রক্ষিতা এবং সৌখিন সমাজের

লালসা পূরনের জন্য উড়ন্ত প্রজাপতি বানিয়ে ছেড়েছে। ফলে তারা এখন বিলাসী পুরুষের নাগালের মধ্যে থাকা

ভোগের পুতুল আর যৌন কারবারীদের ব্যবসায়ের সস্তা পণ্য। যা আড়াল করা হয়েছে শিল্প ও সংস্কৃতির

মনোলোভা রঙিন পর্দা দিয়ে।

ঝ. নারী ধর্ষণের হার আমেরিকায় সর্বোচ্চ

উন্নত বিশ্বের সর্বোচ্চ পর্যায়ের অবস্থানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্য। নৈমিত্যিক সংঘটিত নারী ধর্ষণের হার

সারা বিশ্বে তার রেকর্ড কেউ স্পর্শও করতে পারবে না। ১৯৯০ সালের এফবিআই-এর দেয়া পরিসংখ্যান অনুযায়ী

গোটা আমেরিকা জুড়ে প্রতিদিন গড়ে ১৭৫৬ টি নারী ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। পরবর্তী পর্যায়ে আরো একটি

রিপোর্টে প্রকাশিত হয় যাতে প্রতিদিন সংঘটিত ধর্ষণ অপরাধে সংখ্যা ১৯০০ উল্লেখ করা হয়েছে। রিপোর্টে

সন উল্লেখ করা নেই তবে অনুমান করা হয় তা ১৯৯২ বা ১৯৯৩ সালের কথা। হয়তো আমেরিকানরা পরবর্তী

দু’তিন বছরে আরো ‘সাহসী’ হয়ে উঠেছে।

আবার একটা কাল্পনিক দৃর্শপট পর্যবেক্ষণ করা যাক- আমেরিকান নারী সমাজ ইসলামী হিজাব পালন করছে।

যখনি কোনো পুরুষ কোনো নারীর দিকে তাকাচ্ছে, কোনো অশ্লীল চিন্তা মনে এসে যেতে পারে ভাবার সাথে

সাথে সে তার দৃষ্টিকে নীচে নামিয়ে নিচ্ছে। পথে ঘাটে যেখানেই কোনো নারী দৃশ্য হচ্ছে, কব্জী পর্যন্ত তার দুটি

হাত আর নেহায়েত সাদামাটা সাজগোজহীন মুখমন্ডলের কিয়দাংশ ব্যাস, বাদবাকি সব ডোলাডালা হিজাবে ডাকা।

তদুপুরি রাষ্ট্রীয় বিধান এমন যে, যদি কোনো পুরুষ ধর্ষণের অপরাধ করে তার জন্য নির্দিষ্ট-জনসমক্ষে

প্রকাশ্য মৃত্যুদন্ড।

এবার আপনাকে প্রশ্ন করছি, গোটা পরিবেশটা যদি সত্যি সত্যিই এমন হয় তাহলে আমেরিকার এই নারী ধর্ষণের

ভঙ্ককর হার বাড়তে থাকবে না একই অবস্থানে থাকবে? নাকি কমে যাবে এবং কমতে কমতে একদিন এই জঘন্য

অপরাধ নিঃশেষ হয়ে যাবে।

ঞ. ইসলামী শরীয়তের পুর্ণাঙ্গ বিধান কার্যকর হলে ধর্ষনের হার শূন্যের কোঠায় নেমে আসবে খুব স্বাভাবিক

কেননা শরীয়তের বিধান, মানুষেরই জন্য তাদের সৃষ্টিকর্তা বিধাতার নির্বাচিত বিধিবিধান যদি কার্যকর হয়

তাহলে তার ফলাফল কল্যাণী অমিয় ধারা হযে বেরিয়ে আসতে শুরু করবে। ইসলামী শরীয়ত যদি প্রতিষ্ঠিত হয়ে যায়

পৃথিবীর যে কোনো ভূখন্ডে- তা আমেরিকাই হোক অথবা ইউরোপ বা পৃথিবীর অন্যান্য যে কোনো দেশে।

তার প্রথম প্রতিক্রিয়া হবে এই যে, সে দেশের গোটা সমাজ একসাথে বুক ভরে নিঃশ্বাস নেবে।

কাজেই ‘হিজাব’ নারীকে অপদস্ত করেনি বরং উপরে তুলে সম্মানের আসন দিয়েছে। আর সংরক্ষণ করেছে তার

শালীনতা ও পবিত্রতা।

৪.ইসলাম কি তলোয়ারের মাধ্যমে প্রসারিত হয়েছে ?

প্রশ্নঃ ইসলামকে কিভাবে শান্তির ধর্ম বলা যাবে যেখানে তা প্রচার ও প্রসার হয়েছে তলোয়ারের মাধ্যেমে?

কিছু অমুসলিম এটা একটা সাধারণ অভিযোগ যে, সারা বিশ্ব জুড়ে ইসলাম এত কোটি কোটি অনুগামী পেতে

পারতো না, যদি না তা- শক্তি প্রয়োগে প্রসারিত হতো। নিম্নে বর্ণিত বিষয়গুলো পরিষ্কার করে দেবে, যা

তলোয়ারের মাধ্যমে প্রসারের অভিযোগ থেকে অনেক দূরে। এটা ছিল সত্যের সহজাত শক্তি, সঙ্গত কারণ ও

মানব প্রকৃতি সম্মত যৌক্তিকতা যা এক দ্রুত ইসলামের প্রচার ও প্রসারের বাহন হয়েছে।

ক. ইসলাম মানে শান্তি

ইসলাম এসেছে মূল শব্দ ‘সালাম’ থেকে। যার অর্থ শান্তি। এর আরো একটি অর্থ হলো নিজের সম্পূর্ণ ইচ্ছা-

শক্তিকে আল্লাহর প্রতি সমর্পিত করা। এভাবে ইসলাম একটি শান্তির ধর্ম, যা অর্জন করা যায় সৃষ্টিকর্তা

বিধাতা প্রতিপালক আল্লাহ তা’আলার ইচ্ছার কাছে নিজের ইচ্ছাকে আন্তরিক নিষ্ঠার সাথে সমর্পিত করে দিলে।

খ. শান্তি বজায় রাখতে কখনো কখনো শক্তি প্রয়োগ করতে হয়

পৃথিবীর প্রতিটি মানুষ শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখার অনুকুলে নয়। এমন অসংখ্য মানুষ রয়েছে যারা তাদের

নিজেদের হীন স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য এর বিগ্ন ঘটায়। এসব ক্ষেত্রে শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য

শক্তি ব্যবহার অপরিহার্য হয়ে পড়ে। পৃথিবীর প্রতিটি সভ্য দেশে অপরাধী ও সমাজ বিরোধদের দমন করার

জন্য সুনর্দিষ্ট আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী সুসজ্জিত বাহিনী আছে। যাদের আমরা ‘পুলিশ’ বলি। ইসলাম শান্তির

প্রবর্তক। একই সাথে তার অনুগামীদের উদ্বুদ্ধ করে জুলুম, অত্যাচার ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে লড়াই করতে।

জালিমদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে কোনো কোনো সময় শক্তির প্রয়োগ অপরিহার্য হয়ে ওঠে। ইসলাম কেবল

মাত্র মানুষের সমাজে শান্তি শৃঙ্খলা রক্ষা এবং ভারসাম্যপূর্ণ ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার জন্যই শক্তি প্রয়োগের

অনুমতি দেয়।

গ. ঐতিহাসিক ডি ল্যাসি ওলেরীর মন্তব্য

বিশ্ববরণ্য ঐতিহাসিক ডি ল্যাসী ওলেরী’ লিখিত “ইসলাম আট দা ক্রস রোড” গ্রন্থের অষ্টম পৃষ্ঠায় যে

মন্তব্য তিনি করেছেন তাতে “তরবারীর সাহায্যে ইসলাম প্রসারিত হয়েছে” এই ভ্রান্ত ধারণায় যারা নিমজ্জিত-

তাদের জন্য দাঁত ভাঙ্গা জবাব।

“অবশেষে ইতিহাসই একথা অত্যন্ত স্পষ্টভাবে প্রমাণ করল যে, ধর্মান্ধ মুসলমানদের কাহিনী হলো পৃথিবীর এক

প্রান্ত পর্যন্ত তারা ঝেঁটিয়ে বেরিয়েছে আর বিজিত জাতিগুলোকে তরবারীর অগ্রভাগে রেখে ইসলাম গ্রহণে

বাধ্য করেছে। এটা অনেক গুলোর মধ্যে অন্যতম একটি কল্পনা প্রসূত, উদ্ভট ও অবাস্তব কাহিনী-যা

ঐতিহাসিকরা খুব বেশি পুনরাবৃত্তি করেছে”।

ঘ. মুসলমানরা আটশত বছর স্পেন শাসন করেছে

প্রায় আট’শ বছর স্পেন শাসন করেছে মুসলমানরা। সেখানে মানুষকে ‘তরবারীর শক্তি প্রয়োগ করে

ধর্মান্তরিত করেছে’-এমন কথা চরম শত্রুও বলতে লজ্জা পাবে। আর খ্রীস্টান ক্রুসেডাররা স্পেনে এসে সেই

মুসলমানদেরকেই নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছে। অবশেষে এমন একজন মুসলমান স্পেনে ছিল না যে তার নামাযের জন্য

প্রকাশ্যে আযান দিতে পারত।

ঙ. ১৪ মিলিয়ন আরব মিশরীয় খ্রীস্টান

সমগ্র আরব ভুখন্ডে এক হাজার চারশ বছর মুসলমানরাই ছিল মালিক, মনিক, শাসক। এর মধ্যে সামান্য কিছু বছর

ব্রিটিশ এবং আর কিছু বছর ফরাসীরা দখলদারিত্ব করেছিল। সর্বোপরি মুসলমানরা যদি তরবারী ব্যবহার করত

তাহলে একজন খ্রীস্টানও কি সেখানে এখন খুঁজে পাওয়ার কথা ?

চ. ভারতে ৮০% এর বেশি অমুসলিম

মুসলমানরা ভারত শাসন করেছে প্রায় আটশ বছর। যদি তারা চাইতো তাহলে তাদের সেই রাজ-শক্তি ও ক্ষমতার

বল প্রয়োগ করে ভারতের প্রতিটি অমুসলিমকে ধর্মান্তরিত করে নিতে পারতো। অথচ শতকরা আশি ভাগেরও

বেশি অমুসলিম আজো ভারতেই আছে। এদের প্রতিটি অমুসলিম আজ সুস্পষ্ট সাক্ষ্য বহন করছে যে, “ইসলাম

তরবারীর সাহায্যে প্রসারিত হয়নি।”

ছ. ইন্দোনেশিয়া ও মালয়েশিয়া

ইন্দোনেশিয়া একটি দেশ। পৃথিবীর সর্বোচ্চ-সংখ্যক মুসলমান সেখানে বাস করে। মালয়েশিয়ায় জনসংখ্যার

অধিকাংশ মুসলমান। কেউ একজন প্রশ্ন করতে পারে, কোন মুসলিম সেনাবাহিনী ইন্দোনেশিয়া ও মালয়েশিয়ায়

জ. আফ্রিকার পূর্বপ্রান্ত

একই ভাবে ইসলাম অত্যন্ত দ্রুততার সাথে আফ্রিকার পূর্বতীরে বিকাশ লাভ করে। কেউ একজন আবারো প্রশ্ন

করতে পারে, ইসলাম যদি তরবারীর অগ্রভাগ দিয়েই প্রসারিত হয়ে থাকে তাহলে আফ্রিকার পূর্বতীরে কোন

মুসলিম বাহিনী তরবারী নিয়ে গিয়েছিল?

ঝ. থমাছ কারলাইল

বিশ্ববরেণ্য ঐতিহাসিক থমাস কারলাইল তার রচনা ‘হিরোয এন্ড হিরো ওরশিপ’ গ্রন্থে ইসলামের বিকশিত

হওয়া নিয়ে ভ্রান্ত ধারণা সেই প্রসঙ্গে বলা হয়েছে-“তরবারী, কিন্তু কোথায় পাবে তুমি তোমার

তরবারী? প্রত্যকটি নতুন ‘মত’ তার শুরুতে সুস্পষ্টভাবে নির্দিষ্ট হয়- এক জনের সংখ্যালঘুত্বে। মাত্র একজন

মানুষের মাথায়। সেখানেই তা থাকে। সারা পৃথিবীর একজন মাত্র মানুষ তা বিশ্বাস করে, অর্থাৎ সকল মানুষের

বিপক্ষে মাত্র একজন মানুষ। একখানা তরবারী সে নিল এবং তা দিয়ে তা (তার চিন্তা) প্রচার করতে চেষ্টা

করল। তাতে তার কোনো কাজ হবে কি? তোমার তরবারী তোমাকেই খুঁজে নিতে হবে! মোট কথা একটি জিনিস

নিজে নিজেই প্রচারিত হবে যেমনটা তার ক্ষমতা আছে।”

ঞ. দ্বীন নিয়ে কোন জবরদস্তী নেই।

কোন তরবারী দিয়ে ইসলাম বিকশিত হয়েছে? এমনকি সে তরবারী যদি মুসলমানদের হাতেও থাকতো তাহলেও তারা

তা ইসলাম প্রচারের জন্য ব্যবহার করতে পারত না কারণ তাদের হৃদয় স্পন্দন আল কুরআন বলেছেঃ

দ্বীন নিয়ে কোনো জবরদস্তি নেই। সকল ভ্রান্তি-বিভ্রান্তি ও ভ্রষ্টতা থেকে সরল-শুদ্ধ সত্য-পথ স্পষ্ট

করে দেয়া আছে।

ট. জ্ঞান ও প্রজ্ঞার তরবারী

তা ছিল চেতনা ও জ্ঞানের তরবারী, যে তরবারী মানুষের হৃদয় ও মন অন্তরকে জয় করেছে। জ্যোতীর্ময়

কুরআনের সূরা নাহলে বলা আছেঃ

আহবান করো সকলকে তোমার বিধাতা প্রতিপালকের পথে- পান্ডিত্যপূর্ণ সুন্দরতম বাগ্মীতার সাথে। আর

যুক্তি প্রমাণ দিয়ে আলোচনা করো তাদের সাথে এমনভাবে, যা সর্বোত্তম (এবং সে আহবান হতে হবে এমন

হৃদ্যতাপূর্ণ যেন কোন পাষাণ হৃদয়ের কাছেও তা গ্রহণযোগ্য হয়)। (১৬:১২৫)

ঠ. ১৯৩৪ সাল থেকে ১৯৮৪ পর্যন্ত পৃথিবীতে ধর্ম বর্ধিষ্ণুতার

১৯৮৬ সালের রীডার্স ডাইজেস্টের ‘এলমানাক’ সংখ্যার একটি তথ্য সমৃদ্ধ প্রবন্ধে- পূর্বের অর্ধ শতাব্দীতে

প্রধান প্রধান ধর্মসমূহের বর্ধিষ্ণুতার হার সম্পর্কে একটি পরিসংখ্যান দেয়া হয়েছে। প্রবন্ধটি “প্লেইন

ট্রুথ” মাগ্যাজিনেও প্রকাশিত হয়। সর্বোচ্চ পর্যায়ে রয়েছে ইসলাম-যা বেড়েছে ২৩৫% হারে। এখানে একজন

প্রশ্ন করতে পারে, কোন যুদ্ধ অবস্থান নিয়েছিল এ শতাব্দীতে যা কোটি কোটি মানুষকে ধর্মান্তরীত করে

মুসলমান বানিয়েছিল?

ঢ. আমেরিকা ও ইউরোপে ‘ইসলাম’ দ্রুততম বর্ধিষ্ণু ধর্ম

আজকের দিনে আমেরিকায় দ্রুততম বর্ধিষ্ণু ধর্ম ‘ইসলাম’। মুসলমানের সংখ্যা দ্রুত গতিতে বেড়েই চলেছে

ইউরোপেও। শক্তি ও বিকশিত সভ্যতার অহংকারে চীৎ হয়ে থাকা পাশ্চাত্য সভ্যতার এই সব সু-সভ্য মানুষকে

এত বিরাট সংখ্যায় ইসলাম গ্রহণ করতে কোন তরবারী বাধ্য করছে?

ড. ডক্টর জোসেফ এডাম পিয়ারসন

ডক্টর জোসেফ এডাম পিয়ারসন যথার্থই বলেছেন, যারা আশঙ্কা করছে আনবিক বোমা কোনো একদিন

আরবদের হাতে এসে পড়বে। তারা উপলদ্ধি করতে ব্যর্থ হয়েছে যে, ইসলামী বোমা ইতিমধ্যেই ফেলে দেয়া হয়েছে।

এটা পড়েছে সেদিন যেদিন মুহাম্মদ (স) জন্ম নিয়েছিলেন।

৫.মুসলমানরা মৌলবাদী এবং সন্ত্রাসী

প্রশ্নঃ মুসলমানদের অনেকেই মৌলবাদী ও সন্ত্রাসী কেন?

আন্তর্জাতিক সম্পর্ক অথবা ধর্ম সম্পর্কিত কোনো আলোচনা উঠলেই প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে এ

প্রশ্নটি মুসলমানদের দিকে ছুঁড়ে মারা হয়। সুপরিকল্পিত এ প্রচার, বিরামহীনভাবে প্রচারের প্রতিটি মাধ্যম থেকে

আরো অসংখ্য মিথ্যা ও ভুল তথ্য সহকারে ইসলাম ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে চালানো হচ্ছে। কার্যত এই ধরনের

ভুল তথ্য ও মিথ্যা রটনা মুসলমানদেরকে বর্বর হিসেবে চিহ্নিত করা এবং অন্যান্য ধর্মাবলম্বী মানুষদেরকে

মুসলমানদের বিরুদ্ধে ক্ষেপিয়ে তোলার জন্যই করা হয়।

ওকলাহোমায় বোমা বিষ্ফোরনের পরে আমেরিকান প্রচার মাধ্যমের মুসলিম বিরোধী প্রচারণার একটি

প্রকৃষ্ট নমুনা পাওয়া যায় গেছে। যেখানে এই আক্রমনের নেপথ্যে ‘মধ্যপ্রাচ্যের ষড়যন্ত্র’ কাজ করেছে বলে

সংবাদ মাধ্যম গুলোর ঘোষনা করে দিতে এতটুকু দেরী হয়নি। অথচ মূল অপরাধী হিসেবে পরবর্তীকালে যাকে

সনাক্ত করা হয়েছে সে ছিল ‘আমেরিকান সশস্ত্র বাহিনীরই একজন সৈনিক’। আসুন এবার সন্ত্রাসবাদ ও

মৌলবাদের অভিযোগ দুটি পর্যালোচনা করে দেখি।

ক. মৌলবাদী শব্দটির সংজ্ঞা

মৌলবাদী এমন এক ব্যক্তি যে অনুসরণ ও আনুগত্য করে তার চিন্তা বিশ্বাসের মৌলনীতি ও শিক্ষা সমূহকে।

কেই যদি ভালো ডাক্তার হতে চায় তাহলে তাকে জানতে হবে, বুঝতে হবে এবং কঠোর অনুশীলনী চালাতে হবে

ঔষধের মূল কার্যকারীতার ওপর। অন্য কথায় তাকে হতে হবে ঔষধী জগতের একনিষ্ঠ মৌলবাদী। একইভাবে কেই

যদি গণিতবেত্তা বা গণিতবীদ হতে চায় তাহলে তাকে জানতে হবে, বুঝতে পারতে হবে এবং একাগ্র মনোযোগে

অনুশীলনী চালাতে হবে গণিতের মূল সূত্রে ওপরে। অর্থাৎ তাকে হতে হবে গণিত শাস্ত্রের মৌলবাদী। একইভাবে

কেই যদি বিজ্ঞানী হতে চায় তাহলে তাকে জেনে নিতে হবে, বুঝতে হবে এবং গভীর গবেষণায় নিমগ্ন হয়ে অনুশীলনী

চালাতে হবে বিজ্ঞানের মৌলতত্ত্ব ও মূল সূত্রগুলোর ওপর। অর্থাৎ তাকে হতে হবে বিজ্ঞান জগতের

খ. সব মৌলবাদী একরকম নয়

সব মৌলবাদীর চিত্র যেমন একই তুলি দিয়ে আঁকা যাবে না। তেমনি ভালো কি মন্দ, হুট করে এরকম কোনো

মন্তব্যও করা যাবে না। যে কোনো মৌলবাদীর শ্রেণী বিন্যাস নির্ভর করে তার কাজ ও সে কর্মে জগত

নিয়ে। একটি মৌলবাদী ডাকাত বা চোর সমাজের জন্য ক্ষতিকর সুতরাং সে অনাকাঙ্খিত। অপরদিকে একজন

মৌলবাদী চিকিৎসক সমাজের জন্য কল্যাণকর এবং শ্রদ্ধা ও সম্মানের পাত্র।

গ. একজন মৌলবাদী মুসলিম হতে পেরে আমি গর্বিত

আমি একজন মৌলবাদী মুসলিম। আল্লাহর অসীম কৃপায়-জানি, বুঝি এবং চেষ্টা করি ইসলামের মুলনীতি সমূহকে

অনুশীলন করতে। আল্লাহতে সমর্পিত কোনো একজন মৌলবাদী মুসলিম আখ্যায়িত হতে আদৌ লজ্জিত হবে

না। একজন মৌলবাদী মুসলিম হতে পেরে আমি গর্বিত এবং নিজেকে ধন্য মনে করি কারণ আমি জানি ইসলামের

মৌলনীতি সমূহ বিশ্বমানবতার জন্য শুধুই কল্যাণকর। পৃথিবীর জন্য তা আশির্বাদ স্বরুপ। ইসলামের এমন

একটি মূলনীতি খূঁজে পাওয়া যাবে না যা বিশ্বমানবতার জন্য ক্ষতিকর অথবা সামগ্রীকভাবে মানুষের স্বার্থের

অনেক মানুষই ইসলাম সম্পর্কে তাদের মনে অসংখ্য ভ্রান্ত ধারণা পোষণ করে এবং ইসলামের কিছু কিছু

শিক্ষাকে অযৌক্তিক ও অবিচারমূলক বলে আখ্যায়ীত করে। এটা ইসলাম সম্পর্কে তাদের অশূদ্ধ ও অপ্রতুল

জ্ঞানের কারণে।

কেই যদি মুক্তবুদ্ধি মুক্তমন ও ন্যায়পরায়ন মনোবৃত্তি নিয়ে ইসলামের শিক্ষা সমূহকে সূক্ষ্মভাবে বিচার

বিশ্লেষণ করে দেখেন, তাহলে তারপক্ষে একথা অস্বীকার করার কোনো উপায় থাকবে না যে, ইসলাম ব্যক্তির

স্বতন্ত্র পর্যায়ে অথবা সমাজের সামগ্রীক পর্যায়ে -মানবতার জন্য অফুরন্ত কল্যাণের এক অমিয় ঝর্ণাধারা।

ঘ. মৌলবাদ শব্দটির আভিধানিক অর্থ

ওয়েবেষ্টারস ডিকশনারী অনুযায়ী “ফান্ডামেন্টালিজম” ছিল একটি আন্দোলনের নাম। যা বিংশ শতাব্দীর

গোড়ার দিকে আমেরিকার প্রোটেস্ট্যান বাদীরা গড়ে তুলেছিল। এটা ছিল আধুনিকতাবাদীদের বিরুদ্ধে তীব্র

প্রতিক্রিয়া এবং বাইবেলের নির্ভুল হওয়ার স্বপক্ষে কঠিন চাপ প্রয়োগ। তা শুধু বিশ্বাস ও শিক্ষার ক্ষেত্রেই

নয়- সাহিত্য ও ঐতিহাসিক তথ্যাদির ক্ষেত্রেও। বাইবেলের ভাষা, আক্ষরিক অর্থেই তাদের গড় এর-

এভাবে ‘মৌলবাদ’ এমনই একটি শব্দ যা প্রাথমিক পর্যায়ে ব্যবহৃত হয়েছিল খ্রীস্টানদের একটি দলের জন্য যারা

বিশ্বাস করতো ‘বাইবেল’ কোনো ধরনের ভুল ভ্রান্তিহীন,আক্ষরিক ভাবেই আল্লাহর কথা।

অক্সফোর্ড ডিকশনারীতে বর্ণিত ‘ফান্ডামেন্টালিজম’-এর অর্থ- যে কোনো ধর্মের মৌলিক শিক্ষাসমূহকে

কোনো শৈথীল্য বরদাস্ত না করে কঠোর অনুশীলন, লালন ও পালন করা। বিশেষ করে ইসলামের।

আজ যখনই কেউ ‘মৌলবাদ’ শব্দটি ব্যবহার করে তার ভাবনায় চলে আসে এমন একজন মুসলমান যে সন্ত্রাসী।

ঙ. প্রত্যেক মুসলমানের সন্ত্রাসী হওয়া কাম্য

প্রত্যেক মুসলমানের সন্ত্রাসী একজন সন্ত্রাসী তো হওয়া উচিত। সন্ত্রাসী তো তাকেই বলে যে ত্রাস বা

আতঙ্কের সৃষ্টি করে। যখনই কোনো ডাকাত একজন পুলিশকে দেখে- সে আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। অর্থাৎ একজন

পুলিশ ডাকাতের জন্য‘সন্ত্রাসী’। এভাবেই চোর-ডাকাত, ধর্ষণকারী, বদমাশ তথা সমাজ বিরোধী সকল

দুষ্কৃতকারীর জন্য একজন মুসলমানকে আতঙ্ক সৃষ্টিকারী সন্ত্রাসী হতে হবে। যখনই সমাজ বিরোধী কোনো

বদমাশ একজন মুসলমানকে দেখবে সে যেন আতঙ্কিত হয়ে পড়ে।

এ ব্যাপারে সন্দেহের কোনো অবকাশ নেই যে, ‘সন্ত্রাসী’ শব্দটি সাধারণভাবে ব্যবহৃত হয় এমন এক লোকের

জন্য যে সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্কের সৃষ্টি করে। কাজেই একজন সত্যিকারের মুসলমান সন্ত্রাসী হবে

অপরাধীদের জন্য-নিরীহ সাধারণ জগণের নয়। বস্তুত একজন মুসলমানকে হয়ে উঠতে হবে নিরীহ জনসাধারনের

সামনে শান্তি ও নিরাপত্তার অবলম্বন।

চ. একই ব্যক্তিকে একই কাজের জন্য ভিন্ন ভিন্ন নাম দেয়া হয়েছে- সন্ত্রাসী এবং দেশ প্রেমিক

ইংরেজদের গোলামী থেকে ভারত যখন স্বাধীনতা অর্জন করল তখন ভারত-মুক্তির অসংখ্য যোদ্ধা যারা

গান্ধীবাদী অহিংসার পথকে সমর্থন করেনি। ব্রিটিশ সরকার তাদেরকে ‘সন্ত্রাসী’ লেবেল লাগিয়ে দিয়েছিল। সেই

একই ব্যক্তিত্বদের ভারতীয়রা সম্মানিত করেছে। আর সেই একই কর্মকান্ডের কজন আখ্যা দিয়েছে ‘দেশ

এভাবেই দুটি ভিন্ন ভিন্ন নাম দেয়া হয়েছিল একই লোকদেরকে একই কর্মকান্ডের জন্য। এক শ্রেণী যেখানে তাকে

বলেছে একজন ‘সন্ত্রাসী। সেখানে অন্য শ্রেণী তাকে বলেছে ‘দেশ প্রেমিক’। যারা বিশ্বাস করত ইংরেজদের

অধিকার ছিল ভারত শাসন করার তারা তাদেরকে সন্ত্রাসী বলত। আর যারা বিশ্বাস করত ইংরেজদের কোনো

অধিকার নেই ভারত শাসন করার, তারা তাদেরকে বলত ‘দেশ প্রেমীক’ এবং ‘মুক্তিযোদ্ধা’। কাজেই বিষয়টা

হালকা করে গুরুত্বহীনভাবে দেখার কোনো উপায় নেই। কারো ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করার আগে ভালো

করে শুনে নিতে হবে উভয় পক্ষের যাবতীয় বক্তব্য। অবস্থা ও প্রেক্ষিতের পর্যালোচনা করতে হবে। ব্যক্তির

লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে তারপর বিচার করা যেতে পারে। এবং তারপর প্রশ্ন আসবে চূড়ান্ত

ছ. ইসলাম মানে শান্তি

ইসলাম শব্দের উৎপত্তি ‘সালাম’ থেকে। এর অর্থ শান্তি। একটা শান্তির জীবন ব্যবস্থা। যার মৌলিক নীতি

সমূহ তার অনুসারীদের শিক্ষা দেয় গোটা পৃথিবীতে শান্তির শ্লোগান উচ্চকিত করতে এবং তা অর্জিত হলে তার

ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে।

প্রতিটি মুসলিম মৌলবাদী হবে। তাকে নিষ্ঠার সাথে অনুসরণ করতে হবে শান্তির জীবন বিধান ইসলামের

মৌলিক শিক্ষা সমূহের। তাকে মূর্তিমান আতঙ্ক ও সন্ত্রাসী হয়ে উঠতে হবে সমাজ বিরোধী দুষকৃতিকারীদের

সামনে। যাতে সমাজে ন্যায়পরায়ণা, সুবিচার ও শান্তি-শৃঙ্খলা দিন দিন বৃদ্ধি পায়- বজায় থাকে।

৬. আমিষ খাদ্য গ্রহণ

প্রশ্নঃ একটি পশুকে হত্যা করা নিঃসন্দেহে অত্যন্ত নিষ্ঠুর কাজ। তাহলে মুসলমানরা কেন এতো পশু হত্যা

করে, আমিষ খাদ্য গ্রহন করে।

‘নিরামিষবাদ” বিশ্বব্যাপী এখন একটা আন্দোলনে পরিণত হয়েছে। অনেকেই এমনকি এটাকে যুক্ত করেছে ‘পশু

অধিকারের’ সাথে। সন্দেহ নেই জনগণের একটি বিশাল অংশ মনে করেন মাংস ভক্ষণ এবং অন্যান্য উৎপাদিত

আমিষ দ্রব্যসামগ্রী ‘পশু অধিকার’ কে হরণ করে।

ইসলাম আদেশ করে সকল সৃষ্টি জীবের প্রতি দয়া ও অনুকম্পার নীতি গ্রহণ করতে। একই সাথে ইসলাম এ

বিশ্বাসও লালন করে যে, এ পৃথিবীর যাবতীয় ফুল-ফল তথা উদ্ভিদ ও পশুপাখি এবং জলজপ্রাণী, সৃষ্টিই করা হয়েছে

মানুষের জন্য। এর পরের দায়িত্ব মানুষের, এসব সম্পদ ভারসাম্যপূর্ণ ও ন্যায় সঙ্গত ভাবে ব্যবহার করা এবং

আল্লাহর এই নেয়ামত (বিশেষ অনুগ্রহ) ও আমানত সমূহের যথাযথ সংরক্ষণ তাদেরই দায়িত্বের অন্তর্ভূক্ত।

এ বিতর্কের সম্ভাব্য আরো কিছু দিক পর্যালোচনা করে নেয়া যাক।

ক. একজন মুসলিম সম্পূর্ণ নিরামিষভোজীও হতে পারে

একজন মুসলমান সম্পূর্ন নিরামিষভোজী হয়েও প্রথম শ্রেণীর মুসলিম থাকতে পারেন। এটা বাধ্যতামূলক কিছু নয়

যে,একজন মুসলমানকে আমিষ খাদ্য খেতেই হবে।

খ. জ্যোতির্ময় কুরআন মুসলমানদেরকে আমিষ খাবারের অনুমতি দেয়

মুসলমানদের পথ প্রদর্শক আল-কুরআনের নিম্নোদ্ধৃত আয়াত সমূহ তার প্রমান। বলা হচ্ছেঃ

হে ঈমান ধারণকারীরা! পূরণ করো তোমাদের প্রতি সকল অর্পিত দায়িত্ব। তোমাদের জন্য হালাল করা হয়েছে

(খাবার জন্য) সকল চতুষ্পদ জন্তু-অন্য কারো নামে তা জবাই করা না হয়ে থাকলে। (৫:১)

আর গৃহপালিত পশু তিনি সৃষ্টি করেছেন তোমাদের জন্য ওগুলো থেকে তোমরা উষ্ণতা পাও (গরমের পোশাক)

এবং আরো অসংখ্য উপকারী জিনিষ। আর সেগুলো(গোস্ত) তোমরা খাও। (১৬:৫)

আর গৃহপালিত পশুর মধ্যে তোমাদের জন্য রয়েছে শেখার মতো উদাহরণ। ওগুলো দেহ-অভ্যন্তর থেকে আমরা

এমন কিছু উৎপাদন করি (দুধ) যা তোমরা পান করো। ওগুলোর মধ্যে অসংখ্য উপকার আছে তোমাদের জন্য

আর ওগুলো (গোস্ত) তোমরা খাও। (২৩:২১)

গ. মাংস পুষ্টিকর এবং আমিষে ভরপুর

আমিষ খাদ্য প্রোটিনের অন্যতম শ্রেষ্ঠ উৎস। জৈবীক ভাবেই তা প্রোটিন সমৃদ্ধ। আটটি অতি প্রয়োজনীয়

এমাইনো এসিড যা দেহের দ্বারা সমন্বিত হয় না। তাই খাদ্যের মাধ্যেমে তা সরবরাহ করতে হয়। মাংসের মধ্যে

আরো আছে লৌহ,ভিটামিন বি-১ এবং নিয়াসিন।

ঘ. মানুষের দাঁত সব রকম খাদ্য গ্রহনে সক্ষম করে বিন্যস্ত

আপনি যদি পর্যবেক্ষণ করেন তৃণভোজী প্রাণীর দাঁতের বিন্যাষ-যেমন গরু, ছাগল, ভেড়া, হরিণ ইত্যাদি। আপনি

দেখে আশ্চর্য হবেন যে, তা সব একই রকম। এসব পশুর দাঁত ভোঁতা (সমতল) যা তৃণ জাতীয় খাদ্য গ্রহণের জন্য

উপযোগী। আপনি যদি লক্ষ্য করেন মাংসাশী পশুদের দন্ত বিন্যাস অর্থাৎ বাঘ, সিংহ, লিউপার্ড, শৃগাল, হায়েনা

ইত্যাদি-এগুলোর দাঁত ধারালো যা মাংসের জন্য উপযোগী। মানুষের দাঁত লক্ষ্য করে দেখলে দেখা যাবে

সমতলের ভোঁতা দাঁত যেমন আছে তেমনি ধারালো এবং চোখা দাঁতও আছে। অর্থাৎ মানুষের দাঁত মাংস ও তৃণ

উভয় ধরনের খাদ্য গ্রহনের জন্য উপযোগী। এক কথায় ‘সর্বভূক’।

কেই হয়তো প্রশ্ন করতে পারে সর্বশক্তিমান আল্লাহ যদি চাইতেন মানুষ শুধু তরিতরকারী খাবে তাহলে আমাদের

মুখে ধারালো দাঁত ক’টি দিলেন কেন? এর দ্বারা এটাই কি প্রমাণিত হয়না যে, খোদ সৃষ্টিকর্তাই চান যে, মানুষ

সব ধরনের খাবার গ্রহণ করুক।

ঙ. আমিষ ও নিরামিষ দুই ধরণের খাদ্যই মানুষ হজম করতে পারে।

তৃণভোজী প্রাণির হজম প্রক্রিয়া শুধু তৃণ জাতীয় খাদ্যই হজম করতে পারে। মাংসাশী প্রাণীর হজম প্রক্রিয়া

পারে শুধু মাংস হজম করতে। কিন্তু মানুষের হজম প্রক্রিয়া তৃণ ও মাংস উভয় ধরনের খাদ্যই হজম করতে

সর্বশক্তিমান আল্লাহ যদি চাইতেন আমরা শুধু নিরামিষ ভক্ষণ করি তাহলে তিনি আমাদেরকে এমন হজম শক্তি

দিলেন কেন যা দিয়ে তৃণ ও মাংস উভয় ধরনের খাদ্যই হজম করা যায়?

চ. হিন্দু ধর্ম-গ্রন্থ আমিষ খাদ্য গ্রহণের অনুমতি দেয়

১. অসংখ্য হিন্দু রয়েছে যারা নিষ্ঠাবান নিরামিষ ভোজি। তারা আমিষ খাদ্যকে তাদের ধর্ম বিরোধী মনে করে।

অথচ আসল সত্য হলো, হিন্দু শাস্ত্রই মাংস খাবার অনুমতি দিয়েছে। গ্রন্থসমূহ উল্লেখ করেছে- পরম বিজ্ঞ

সাধু-সন্তরা আমিষ খাবার গ্রহণ করতেন।

২. হিন্দুদের আইনের গ্রন্থ মনুশ্রুতি পঞ্চম অধ্যায় শ্লোক ৩০এ আছে-খাদ্য গ্রহণকারী যে খাবার খায়, সেই

সব পশুর যা খাওয়া যায়,মন্দ কিছু করে না।এমনকি সে যদি তা করে দিনের পর দিন। ঈশ্বর নিজেই সৃষ্টি করেছেন

কিছু ভক্ষিত হবে আর কিছু ভক্ষণ করবে।

৩. মনুশ্রুতীর পঞ্চম অধ্যায়ের ৩১শ্লোকে আবার বলা হয়েছে- যা মাংস ভক্ষণ শুদ্ধ উৎসের জন্য। ঈশ্বরের

বিধান হিসেবে বংশ পরম্পরায় তা জানা আছে।

৪. এরপরে মনুশ্রুতীর পঞ্চম অধ্যায়ের ৩৯ এবং ৪০ শ্লোকে বলা হয়েছেঃ ঈশ্বর নিজেই সৃষ্টি করেছেন

উৎসর্গের পশু উৎসর্গের জন্যই। সুতরাং উৎসর্গের জন্য হত্যা-হত্যা নয়।

৫. মহাভারত অনুশীলন পর্ব ৮৮ অধ্যায় বর্ণনা করছে-ধর্মরাজ যুধিষ্টির ও পিতামহ ভীষ্ম, এদের, এদের মধ্যে

কথোপকথন কেউ যদি শ্রাদ্ধ করতে চায় তাহলে সে অনুষ্ঠানে কি ধরনের খাবার খাওয়ালে স্বর্গীয় পিতৃ পুরুষ

(এবং মাতাগণ) সন্তুষ্ট হবেন। যুধিষ্টির বলল, হে মহাশক্তির মহাপ্রভু! কি সেই সব বস্তু সামগ্রী যাহা-যদি

উৎসর্গ করা হয় তাহলে তারা প্রশান্তি লাভ করবে ? কি সেই বস্তু সামগ্রী যা (উৎসর্গ করলে) স্থায়ী হবে? কি

সেই বস্তু যা (উৎসর্গ করলে) চিরস্থায়ী হবে?

ভীষ্ম বলেছেন, তাহলে শোন হে যুধিষ্টীর! কী সেই সব সামগ্রী। যারা গভীর জ্ঞান রাখে শ্রাদ্ধানুষ্ঠান

সম্পর্কে- যা উপযোগী শ্রাদ্ধের জন্য। আর কি সেই ফল-ফলাদি যা তার সঙ্গে যাবে। সীম বিচীর সাথে

চাল, বার্লী এবং মাশা এবং পানি আর বৃক্ষমূল (আদা, আলু বা মূলা জাতীয়) তার সাথে ফলাহার। যদি স্বর্গীয়

পিতৃদেবদের শ্রাদ্ধে দেয়া হয়। হে রাজা! তা হলে তারা এক মাসের জন্য সন্তুষ্ট থাকবে।

শ্রাদ্ধানুষ্ঠানে মৎস সহকারে আপ্যায়ন করলে স্বর্গীয় পিতৃকুল দুই মাসের জন্য সন্তুষ্ট থাকবে। ভেড়ার মাংস

সহকারে- তিন মাস। খরগোশ সহকারে চারমাস। ছাগ-মাংস সহকারে ৫ মাস। শুকর-মাংস সহকারে ছয় মাস। পাখীর

মাংস দিয়ে আপ্যায়িত করলে সাত মাস। হরিণের মধ্যে ‘প্রিসাতা’ হরিণ শিকার করে খাওয়ালে আট মাস

এবং ‘রুরু’ হরিণ দিলে নয় মাস। আর গাভীর মাংস দিলে দশমাস। মহিসের মাংশ দিলে তাদের সন্তুষ্টি এগারো মাস

বজায় থাকে।

শ্রাদ্ধানুষ্ঠানে গরুর মাংস দিয়ে আপ্যায়ন করলে, বিশেষ করে বলা হয়েছে তাদের সন্তুষ্টি থাকে পুরো এক বছর।

ঘি মিশ্রিত পায়েশ, স্বর্গীয় পিতৃপুরুষের কাছে গরুর মাংসের মতোই প্রিয়। ভদ্রিনাসার (বড় ষাড়) মাংস দিয়ে

আপ্যায়ন করলে পিতৃপুরুষ বার বছর সন্তুষ্ট থাকেন। পিতৃপুরুষের মৃত্যু বার্ষিকি গুলোর যে দিনটিতে সে মারা

গেছে সেই রকম একটি দিন দিন যদি শুক্ল পক্ষের হয় আর তখন যদি গন্ডারের মাংস দিয়ে শ্রাদ্ধানুষ্ঠানে

আপ্যায়ন করা যায়- স্বর্গীয় পিতৃ পুরুষের সন্তুষ্টি অক্ষম হয়ে যায়। ‘কালাসকা’ কাঞ্চন ফুলের পাপড়ি আর লাল

ছাগলের মাংস যদি দিতে পারো তাহলেও তাদের সন্তুষ্টি অক্ষয় হয়ে যাবে।

অতএব আপনি যদি চান আপনার স্বর্গীয় পিতৃপুরুষের সন্তুষ্টি অক্ষয় হয়ে যাক তাহলে লাল ছাগলের মাংস দিয়ে

শ্রাদ্ধানুষ্ঠানে আপ্যায়ন করতে হবে।

ছ.হিন্দু ধর্ম অন্যান্য ধর্মের দ্বারা প্রভাবিত

হিন্দু ধর্ম গ্রন্থ তার অনুসারীদের আমিষ খাদ্য গ্রহনের অনুমতি দেয়। তথাপি অনেক হিন্দু নিরামিষ ভোজনকে

সংযোজন করে নিয়েছে। প্রকৃত পক্ষে এটা এসেছে ‘জৈন’ ধর্ম থেকে।

জ. উদ্ভীদেরও জীবন আছে

বিশেষ কিছু ধর্ম খাদ্য হিসেবে শুধুমাত্র নিরামিষ খাবার বাধ্যতামূলক করে নিয়েছে। কারণ তারা জীব হত্যার

সম্পূর্ণ বিরোধী। যদি কেউ কোনো সৃষ্ট জীবকে হত্যা না করে বেঁচে থাকতে পারে তাহলে নির্দ্বিধায় বলতে

পারি, আমি হবো প্রথম ব্যক্তি যে এধরনের জীবন যাপন পদ্ধতিকে বেছে নেবে।

অতীত কালের মানুষ মনে করত উদ্ভিদের প্রাণ নেই। অথচ আজ তা বিশ্ববাসীর কাছে দিবালোকের মতো স্পষ্ট

যে,উদ্ভীদেরও প্রাণ আছে। কাজেই সম্পূর্ণ নিরামিষ ভোজী হয়েও জীব হত্যা না করার শর্ত পূরণ হচ্ছে না।

ঝ. উদ্ভীদ ব্যাথাও অনুভব করতে পারে

এর পরেও হয়তো নিরামিষ ভোজীরা বলবেন, প্রাণ থাকলে কি হবে উদ্ভীদ ব্যাথা অনুভব করতে পারে না। তাই

পশু হত্যার চাইতে এটা তাদের কম অপরাধ। আজকের বিজ্ঞান পরিষ্কার করে দিয়েছে উদ্ভিদও ব্যাথা অনুভব

করে কিন্তু তাদের সে আর্ত চিৎকার মানুষই শোনার ক্ষমতা রাখে না ২০ Herts থেকে ২০০০ Herts এর ওপরে বা

নীচের কোনো শব্দ মানুষের শ্রুতি ধারণ করতে সক্ষম নয়। একটি কুকুর কিন্তু শুনতে পারে

৪০,০০০ Herts পর্যন্ত। এজন্য কুকুরের জন্য নিরব ‘হুইসেল’ বানানো হয়েছে যার ফ্রীকোয়েন্সী

২০,০০০ Herts এর বেশী এবং ৪০,০০০ Herts এর মধ্যে। এসব হুইসেল শুধু কুকুর শুনতে পারে, মানুষ পারে না।

কুকুর এ হুইসেল শুনে তার মালিককে চিনে নিতে পারে এবং সে চলে আসে তার প্রভুর কাছে।

আমেরিকার এক খামারের মালিক অনেক গবেষণার পর একটি যন্ত্র আবিষ্কার করেছে যা দিয়ে উদ্ভীদের কান্না

মানুষের শ্রুতিযোগ্য করে তোলা যায়। সে বিজ্ঞানী বুঝে নিতে পারত, উদ্ভীদ কখন পানির জন্য চিৎকার

করত। একেবারে এখনকার গবেষণা প্রমাণ করে দিয়েছে যে, উদ্ভীদ সুখ ও দুঃখ অনুভব করতে পারে এবং পারে

চিৎকার করে কাঁদতেও।

ঞ. দু’টি ইন্দ্রীয়ানুভূতী কম সম্পন্ন প্রাণীকে হত্যা করা কম অপরাধ নয়

এবার নিরামিষ ভোজীরা তর্কে অবতীর্ণ হবেন যে, উদ্ভীদের মাত্র দু’টি অথবা তিনটি অনুভূতির ইন্দ্রীয় আছে

আর পশুর আছে পাঁচটি। কাজেই পশু হত্যার চাইতে উদ্ভীদ হত্যা অপরাধের দিক থেকে কম।

ধরুন এক ভাই জন্মগত ভাবেই অন্ধ ও কালো। চোখে দেখেনা কানেও শোনেনা। অর্থাৎ একজন স্বাভাবিক

মানুষের তুলনায় দুটি ইন্দ্রীয় তার কম। সে যখন পূর্ণ যৌবনে এসে প্বৌছাল তখন এক লোক নির্দয়ভাবে

তাকে খুন করল। খুনী ধরা পড়ার পর- বিচারালয়ে দাঁড়িয়ে আপনি কি বিচারপতিকে বলবেন, মহামান্য আদালত

খুনিকে আপনি পাঁচ ভাগের তিন ভাগ শাস্তি দিন?

জ্যোতীর্ময় কুরআন বলেছেঃ

হে মানুষ! পৃথিবীতে যা কিছু আছে তা থেকে পবিত্র ও উত্তম (জিনিসগুলো) খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করো।

ট. গৃহপালিত পশুর সংখ্যাধিক্য

পৃথিবীর প্রতিটি মানুষ যদি ফল-মূল তরিতরকারী ও শাক শব্জীকেই খাবার হিসাবে বেছে নেয় তা হলে গবাদী পশুর

জন্য ভু-পৃষ্ঠ ছেড়ে দিয়ে মানুষকে অন্য কোনো গ্রহে গিয়ে বাস করতে হবে। আর খাল বিল নদী নালা ও সাগর

মহাসাগর পানি শূন্য হয়ে যাবে মাছ ও অন্যান্য জ্বলজ প্রাণীর আধিক্য। কেননা উভয় শ্রেণীর জন্মের হার ও

প্রবৃদ্ধি এত বেশি যে, এক শতাব্দী লাগবে না এ পৃথিবী তাদের দখলে চলে যেতে।

সুতরাং সৃষ্টিকর্তা বিধাতা প্রতিপালক আল্লাহ তা’য়ালা খুব ভালো করে জানেন এবং বোঝেন। তাঁর সৃষ্টিকুলের

ভারসাম্য তিনি কিভাবে রক্ষা করবেন। কাজেই এটা খুব সহজেই অনুমেয় যে, তিনি কি কারণে আমাদেরকে মাছ মাংস

খাবার অনুমতি দিয়েছেন।

{mospagebreak title= পশু জবাই করার ইসলামীপদ্ধতি- দৃশ্যতঃ নির্দয় }

৭.পশু জবাই করার ইসলামীপদ্ধতি- দৃশ্যতঃ নির্দয়

প্রশ্নঃ মুসলমানরা কেন এত ধীরে ধীরে কষ্ট দিয়ে দিয়ে নির্দয়ভাবে পশু জবাই করে?

একটি বিরাট সংখ্যাক সমালোচনার বিষয় পশু জবাইয়ের ইসলামী পদ্ধতি। মুক্ত মনে নিচের বিষয়গুলো

বিবেচনায় আনলে প্রমাণ হয়ে যাবে জবাই পদ্ধতিটি শুধু মানবিকই নয় বৈজ্ঞানিকও বটে।

ক. পশু জবাই করার ইসলামী পদ্ধতি

‘যাক্কায়াতুম’ একটি ক্রিয়া, উৎপন্ন হয়েছে মূল শব্দ ‘যাকাহ’ থেকে (পবিত্র করতে)। এর ক্রিয়া ভাব

প্রকাশক‘তায্‌কীয়াহ’। অর্থাৎ পবিত্রকরণ। ইসলামী পদ্ধতিতে একটি পশু জবাই করতে হলে নিম্নোদ্ধৃত

শর্তগুলো পূরণ করতে হবে।

১. সর্বোচ্চ পর্যায়ের ধারালো অস্ত্র দিয়ে জবাই করতে হবে

অত্যন্ত ধারালো অস্ত্র দিয়ে দ্রুততার সাথে পশুটি জবাই করতে হবে যেন ওটা ব্যাথা কম পায়।

২. গলনালী, শ্বাশ নালী ও রক্তবাহী ঘাড়ের রগ কেটে ফেলতে হবে

‘যাবীহাহ্‌’ একটি আরবী শব্দ যার মানে ‘জবাই করা হয়েছে’। যবাই করতে হবে গলা, শ্বাসনালী ও ঘাড়ের রক্তবাহী

রগগুলো কেটে। মেরুদন্ডের তন্ত্রী (স্পাইনাল কড) কাটা যাবে না।

৩. শরীরের রক্ত প্রবাহিত হয়ে বেরিয়ে যেতে হবে।

দেহ থেকে মাথা বিচ্ছিন্ন করার আগে দেহের সমস্ত রক্ত বের করে দিতে হবে। অধিকাংশ রক্ত বের করে দিতে হবে

এই জন্য যে, তা ব্যাকটেরিয়া ও জীবানু ইত্যাদির নিরাপদ নিবাস ও বংশ বিস্তারের ক্ষেত্র কাজেই মেরুদন্ডের

তন্ত্রী কিছুতেই কাটা যাবে না। কেননা হৃদযন্ত্রের দিকে যেসব স্নায়ু তন্তু রয়েছে সেগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে

যেতে পারে এসময়। যা হৃদপিন্ডের স্পন্দন থামিয়ে দেবার কারণ হবে। ফলে রক্ত নালীসমূহে রক্ত আটকা পড়ে

খ. রক্ত, রোগ-জীবানু ও ব্যাকটেরিয়ার সহজ বাহন

জৈব-বিষ ব্যাকটেরিয়া ও রোগ-জীবানু ইত্যাদির সর্বোত্তম বাহক রক্ত। সুতরাং ইসলামী জবাই পদ্ধতি

সাস্থ্যবিধি সম্মত। কেননা রক্ত, যার মধ্যে জৈব-বিষ, রোগ-জীবানু ও ব্যাকটেরিয়া বাসা বেধে থাকে। যা

অসংখ্য রোগ ব্যাধির কারণ হয়।

গ. গোস্ত বেশি দিন ভাল থাকে

পৃথিবীতে প্রচলিত খাদ্যের জন্য পশু হত্যার মধ্যে ইসলামী পদ্ধতীতে জবাই করা পশুর মাংস বেশিদিন ভালো

থাকে। কেননা তাতে রক্তের পরিমাণ থাকে নাম মাত্র।

ঘ. পশু ব্যাথা অনুভব করে না

ক্ষীপ্রতার সাথে গলনালীগুলো কেটে ফেললে মস্তিষ্কের স্নায়ুতে রক্ত প্রবাহ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। যে রক্ত

প্রবাহ ব্যাথা বোধের কারণ। একারণে পশু ব্যাথা বোধ করে উঠতে পারে না। মৃত্যুর সময় ওটা যে ছট্‌ ফট্‌ করে

তা ব্যাথার জন্য নয় বরং রক্তের ঘাটতি পড়ে যাওয়ায় মাংসপেশির শৈথিল্য ও সংকোচনের জন্য এবং দ্রুত

গতিতে দেহের বাইরে যাবার কারণে।

৮.আমিষ খাদ্য মুসলমানদেরকে প্রচন্ড উগ্র বানিয়ে ফেলে

প্রশ্নঃ বিজ্ঞান আমাদের বলে, যে যা খায় তার আচরণে তার প্রতিক্রিয়া প্রকাশ পায়। তাহলে ইসলাম কেন

মুসলমানদেরকে আমিষ খাদ্য গ্রহণের অনুমতি দেয়। যেখানে পশুর মাংস ব্যক্তিকে হিংস্র ও দুঃসাহসী করে তুলতে

ক. পশুর মধ্যে শুধু তৃনভোজী পশু খাওয়া অনুমোদিত। এ ব্যাপারে আমি সম্পূর্ণ একমত যে, ব্যক্তি যা আহার

করে তার প্রতিক্রিয়া তার আচরণে প্রকাশ পায়। বাঘ, সিংহ, নেকড়ে ইত্যাদি হিংস্র মাংসাশী প্রাণী খাওয়া ইসলাম

নিষিদ্ধ করেছে- এটা তার অন্যতম একটি কারণ। এ ধরনের হিংস্র হয়ে উঠতে পারে। সে কারণে ইসলাম শুধু মাত্র

গরু, মহিশ, ছাগল,ভেড়ার মতো শান্ত ও খুব সহজে পোষমানা প্রাণীর মাংস খেতে অনুমতি দেয়। বস্তুত এ

কারণেই মুসলমানরা শান্তিকামী- শান্তিপ্রিয়।

খ. জ্যোতির্ময় কুরআন বলছে- যা কিছু মন্দ রাসূল তা নিষিদ্ধ করেছেন

রাসূল তাদেরকে ভালো কাজ করতে আদেশ করেন। আর নিষেধ করেন যাবতীয় মন্দ থেকে এবং তিনি তাদের জন্য

হালাল করেছেন যা কিছূ ভাল, পবিত্র, পরিচ্ছন্ন। আর হারাম করেছেন যা কিছু মন্দ অপরিচ্ছন্ন অপবিত্র।

রাসূল তোমাদেরকে যা কিছু দেন তা তোমরা গ্রহণ করো। আর যে সব থেকে নিষেধ করেন সে সব থেকে বিরত

থাকো। (৫৯-৭)

একজন মুসলমানের জন্য তাদের রাসূলের এই বার্তার যথেষ্ট যে, আল্লাহ চান না মানুষ এমন কোনো ধরনের

মাংস খায়- যেখানে অন্য কিছু ধরনকে অনুমোদন দেয়া হয়েছে।

গ. মাংসাশী প্রাণী খাবার ব্যাপারে রাসূল (স)-এর বাণী

সহীহ বুখারী ও মুসলিমে বর্ণিত বেশ কিছু সর্বসম্মত শুদ্ধ হাদীসের মধ্যে ইবনে আব্বাস (রা) বর্ণিত মুলিম

শরীফের‘শিকার ও জবাই’ অধ্যায়ের ৪৭৫ নং হাদীসে, সুনানে ইবনে মাজাহর ১৩ অধ্যায়ের ৩২৩২ থেকে ৩২৩৪

হাদীস সমূহ উল্লেখযোগ্য। রাসূল (স) খেতে নিষেধ করেছেনঃ

১.তীক্ষ্ণ ধারালো দাঁতওয়ালা হিংস্র জন্তু। অর্থাৎ মাংসাশী বন্য পশু প্রধানত বেড়াল ও কুকুর জাতীয়

বাঘ, সিংহ, বেড়াল এবং শেয়াল, কুকুর, নেকড়ে, হায়না ইত্যাদি।

২. তীক্ষ্ণ দন্ডের অন্যান্য প্রাণী যেমন ইঁদুর, ন্যাংটি ইদুর, ছুঁচো ও ধারালো নখওয়ালা খরগোশ ইত্যাদি।

৩. সরিশ্রীপ জাতীয় অন্যান্য প্রাণী যেমন সাপ কুমীর ইত্যাদি।

৪. ধারালো ঠোঁট ও নখরওয়ালা শিকারী পাখি যেমন চিল, শুকুন, কাক, পেচাঁ ইত্যাদি। সন্দেহাতীত ভাবে প্রমাণ

করতে পারে এমন কোনো বৈজ্ঞানীক দলিল নেই যে, আমিষ খাদ্য গ্রহণের ফলে মানুষ উগ্র ও হিংস্র হয়ে উঠতে

৯. মুসলমানরা কা’বার পূজা করে

প্রশ্নঃ ইসলাম যেখানে আকার বা মূর্তি পূজাকে প্রত্যাখ্যান করে সেখানে তারা নিজেরাই কেন তাদের প্রার্থনায়

কাবার প্রতি নত হয়ে তার উপাসনা করে?

কা’বা মুসলমানদের ‘কেবলা’। মুসলমানরা তাদের প্রার্থনায় দিক নির্দেশক হিসেবে গণ্য করে। এখানে লক্ষ্য

করার মতো বিষয় হলো, মুসলমানরা তাদের প্রার্থনায় কা’বার দিকে মুখ করে বটে তবে তারা কাবা ঘরের

উপাসনা করে না। উপাসনা করে সেই ঘরের মালিক অদৃশ্য আল্লাহ তা‘আলার। জ্যোতীর্ময় কুরআনে বলা হয়েছেঃ

তোমার (নির্দেশনার জন্য) বার বার আকাশের দিকে করে তাকানো আমরা দেখেছি। এখন আমরা কি তোমাকে

ঘুরিয়ে দেব সেই কেবলার দিকে যা তোমাকে সন্তুষ্ট করবে? তাহলে ঘুরিয়ে নাও তোমরা থাকনা কেন (নামাযে)

তার দিকেই মুখ ফিরিয়ে নেবে।

ক. ইসলাম চূড়ান্ত ঐক্যকে উৎসাহিত করে

যেমন, মুসলমানরা যদি নামায আদায় করতে চায় তাহলে এমনটা হতেই পারে যে, কারো ইচ্ছা হবে উত্তর দিকে

ফিরে নামায পড়তে, কারো ইচ্ছা হবে দক্ষিণ দিকে দিকে ফিরতে। তাই উপাসনার ক্ষেত্রেও মুসলমানদের

চূড়ান্তভাবে ঐক্যবদ্ধ করার জন্য যেখানেই তারা থাকনা কেন এক আল্লাহর প্রতি এক মুখী হয়ে তাদের নামায

আদায় করতে বলা হয়েছে।‘কাবা’ সেই একটি দিকের দিক-নির্দেশক, অন্য কিছুই নয়। কাবার পশ্চিমাঞ্চলে যে

মুসলমানরা বাস করে তারা মুখ করবে পূর্ব দিকে আর তার পূর্বাঞ্চলে যারা বাস করে তারা মুখ করবে পশ্চিম

দিকে। একইভাবে উত্তরাঞ্চলের লোকেরা দক্ষিণ দিকে আর দক্ষিণাঞ্চলের লোকেরা উত্তর দিকে।

খ. পৃথিবী গোলকের কেন্দ্রবিন্দু কা‘বা

মুসলমানরাই প্রথম পৃথিবীর মানচিত্র এঁকেছিল। তাদের চিত্রে দক্ষিণ ছিল ওপর দিকে আর উত্তর ছিল নিচের

দিকে। তখন কা‘বা ছিল কেন্দ্র বিন্দুতে। পরবর্তিকালে পশ্চিমা মানচিত্রকররা পৃথিবীর যে মানচিত্র আঁকলো

তাতে ওপর দিকটা নিচে আর নিচের দিকটা ওপরে অর্থাৎ উত্তর হলো ওপরের দিকে আর দক্ষিণ হলো নিচের

দিকে। আলহামদুলিল্লাহ এ ক্ষেত্রেও“কাবাই মানচিত্রের কেন্দ্র বিন্দু থেকে গেল”।

গ. কা‘বাকে ঘিরে তওয়াফ করা আল্লাহর একত্বের নির্দেশক

মুসলমানরা কা’বা যেয়ারতে মক্কায় গেলে ‘তাওয়াফ’ করে। অর্থাৎ কা’বা ঘরকে কেন্দ্র করে চারিদিকে প্রদক্ষিণ

করে। কাজটি এক আল্লাহ বিশ্বাস ও উপাসনার নিদর্শন। প্রতিটি বৃত্ত গোলাকার এবং তার একটিই কেন্দ্র

বিন্দু থাকে। কাজেই উপাসনার যোগ্য আল্লাহ-মাত্র একজনই, এটা তারই অন্যতম নিদর্শণ।

ঘ. হযরত উমর (রা) এর হাদীস

হাজরে আসওয়াদ বা কালো পাথর সম্পর্কিত হযরত উমর (রা) এর একটি বিখ্যাত উক্তি রয়েছে। হাদীসে শাস্ত্র

অনুযায়ী যাকে ‘আছার’ বা ঐতিহ্য বলা যায়। বুখারী শরীফের হজ্জ সম্পর্কিত ৩৫৬ অধ্যায়ে ৬৭৫ নং

হাদীসে, উমর (রা) বলেছেন, “আমি জানি তুমি একটি পাথরখন্ড মাত্র এবং না কোনো উপকার করতে সক্ষম না

কোনো ক্ষতি। আমি যদি না দেখতাম খোদ আল্লাহর রাসূল (স) তোমাকে স্পর্শ করেছেন তা হলে কস্মিন

কালেও আমি তোমাকে স্পর্শ করতাম না।”

ঙ. মানুষ কা’বা ঘরের ওপরে উঠে আযান দিয়েছিল

রাসূলুল্লাহ (স) এর সময়ে লোকেরা কা’বা ঘরের ওপরে উঠে আযান দিত। মুসলমানরা কা’বা ঘরের উপাসনা করে

বলে যারা মনে করেন তাদেরকে যদি কেউ প্রশ্ন করে যে, কোন মুর্তী-পূজারী, যে মুর্তী সে পূজা করে, তার মাথার

ওপরে উঠে দাঁড়ায়?

১০. অমুসলিমদের মক্কায় প্রবেশাধিকার নেই

প্রশ্নঃ পবিত্র মক্কা ও মদীনায় অমুসলিমদের প্রবেশাধিকার নেই কেন?

একথা সত্য যে, আইনত মক্কা ও মদীনায় অমুসলিমদের প্রবেশানুমতি নেই। নিম্নে বর্ণিত বিষয়গুলো এই

নিষিদ্ধতার নৈপথ্য কারণগুলো উদঘাটনে সহায়ক হবে।

ক. সেনানিবাস এলাকায় সকল নাগরিক প্রবেশানুমতি পায় না

আমি একজন ভারতীয় নাগরিক। তা সত্ত্বেও এদেশের এমন কিছু এলাকা আছে যেখানে আমার অবাধে প্রশোনুমতী

নেই। যেমন সেনানিবাস। পৃথিবীর প্রত্যিকটি দেশই সাধারণ নাগরিক প্রবেশ করতে পারবে না এমন সব এলাকা

রয়েছে। শুধু মাত্র সেনাবাহিনীর সদস্য এবং প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত বিষয়াদির সাথে জড়িত ব্যক্তিবর্গ সে সব

এলাকায় প্রবেশানুমতি পায়।

একইভাবে ইসলাম সমগ্র বিশ্ববাসীর জন্য একটি বিশ্বজনীন জীবন ব্যবস্থা। মক্কা ও মদীনা এ দুটি পবিত্র

নগরিকে ইসলামের ক্যান্টনমেন্ট ধরা যেতে পারে। এখানে শুধু যারা তার অনুসারী এবং এর প্রতিরক্ষার সাথে

জড়িত তারাই প্রবেশানুমতি পায় অর্থাৎ মুসলমানরা।সেনানিবাস এলাকায় সাধারণ নাগরিকের প্রবেশ নিষেধাজ্ঞার

বিরুদ্ধে আপত্তি তোলা যে কোনো বিবেকবান মানুষের কাছেই অযৌক্তিক বলে গন্য হবে। একই ভাবে

কোনো অমুসলিমের মক্কা-মদীনায় প্রশোধিকার নিয়ে প্রশ্ন তোলা সঙ্গত বলে বিবেচিত নয়।

খ.মক্কা ও মদীনায় প্রবেশের “ভীসা”

১. যখনি কেউ অন্য কোনো দেশে ভ্রমন করতে চায়। প্রথমে তাকে সেদেশের ভিসা পাবার জন্য আবেদন করতে

হয়।অর্থাৎ সে দেশে প্রবেশের অনুমতি। প্রতিটি দেশের এ ক্ষেত্রে নিজ নিজ আইন নীতিমালা এবং কিছু শর্ত

রয়েছে। এসব কিছু পূরণ না হলে তারা ভিসা দেবে না।

২. ভিসা দেবার ব্যাপারে অত্যন্ত কঠিনভাবে রক্ষণশীল দেশগুলোর মধ্যে সবার ওপরে আমেরিকা। বিশেষ ভাবে

তৃতীয় বিশ্বের কোণো নাগরিককে ভিসা দেবার জন্য তাদের আছে অসংখ্য নিয়ম কানুন। আরো আছে দুর্লভ ও

দুরুহ শর্তসমুহ যা সাধারণের আয়ত্বাধীন নয় কোনো ভাবেই।

৩. আমি সিঙ্গাপুর ভ্রমনে গিয়েছিলাম। তাদের অভিবাসন বা ইমিগ্রেশন ফর্মে উল্লেখ ছিল মাদক দ্রব্য

বহনকারীর জন্য“মৃত্যুদন্ড”। এখন সিঙ্গাপুরে প্রবেশানুমতি চাইলে আমাকে তাদের যে আইন তা মেনেই নিতে হবে।

আমি তো আর বলতে পারি না মৃত্যুদন্ড মধ্যযুগীয় নৃশংস বর্বরদের শাস্তি। তাদের সব নিয়ম-কানুন এবং

শর্তগুলোকে যদি আমি মেনে নেই কেবলমাত্র তখনই আমার পক্ষে সে দেশের প্রবেশানুমতি পাওয়া সম্ভব।

৪. ভিসা-পৃথিবীর যে কোনো মানুষের জন্য মক্কা ও মদীনায় প্রবেশের অনুমতি পেতে হলে সর্ব প্রথম যে

শর্তটি পুরণ করতে হবে তা হলো তার মুখে বলতে হবে “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ” অর্থাৎ মানা

যায় এমন কেউ নেই কিছু নেই আল্লাহ ছাড়া এবং মুহাম্মাদ (সঃ) তার প্রেরিত রাসূল।

১১.শুকর মাংস নিষিদ্ধ

প্রশ্নঃ ইসলামে শুকরের মাংস খাওয়া নিষিদ্ধ কেন?

এটা সর্বজন বিদিত যে, শুকুর মাংস ভক্ষণ ইসলামে নিষিদ্ধ। নিম্নে বর্ণিত বিষয়গুলো এই নিষিদ্ধতার বিভিন্ন

দিক তুলে ধরবে।

ক. কুরআনে শুকুর মাংস নিষিদ্ধতা

শুকুরের মাংস খাওয়া নিষেধঅন্তত চারটি স্থানে উল্লেখ করা হয়েছে ২:১৭৩, ৫:৩, ৬:১৪৫, এবং ১৬:১১৫।

“নিষিদ্ধ করা হলো তোমাদের জন্য (খাদ্য- হিসেবে) মৃত জন্তুর মাংস, প্রবাহিত রক্ত, শুকুরের মাংস কেন

নিষেধ করা হয়েছে তার সন্তোষজনক উত্তরের জন্য কুরআনের উল্লেখিত আয়াত সমূহেই যথেষ্ট।

খ. বাইবেল শুকুর মাংস ভক্ষণের নিষিদ্ধতা

একজন খ্রীস্টান তার ধর্মগ্রন্থ সমূহের উল্লেখ দেখে সন্তুষ্ট হলে দেখতে পাবে যে, বাইবেল ‘লেভীটিকাস্থ গ্রন্থে

শুকুরের মাংস খেতে নিষেধ করেছে। বলা হয়েছেঃ

এবং শুকুর যদিও তার খুর দ্বিখন্ডিত এবং খুরযুক্ত পদ বিশিষ্ট। এমন কি সে চিবিয়ে খায়, যাবর কাটেনা। (তবু)

ওটা অপরিচ্ছন্ন (অপবিত্র) তোমার জন্য”।

একই গ্রন্থের ১১ অধ্যায় ৭ ও ৮ স্তবকে বলা হয়েছেঃ

ওগুলোর মাংস তুমি খাবে না এবং ওগুলোর মৃতদেরহ তুমি স্পর্শও করবে না, ওগুলো ‘অপবিত্র’ তোমার

বাইবেলের পঞ্চম গ্রন্থ ‘ডিউট্যারনমী’ তেও শুকর মাংস ‘অপবিত্র’ বলা হয়েছেঃ

“আর শুকর- কারণ তার খুর দ্বিখন্ডিত, এমনকি চিবিয়ে খায়, যাবর কাটেনা, ওটা অপবিত্র তোমার জন্য তুমি

ওগুলোর মাংস খাবে না, না ওগুলোর মৃতদেহ তুমি স্পর্শ করবে। (ডিউট্যারনমীঃ ১৪:৮)

বাইবেলের ‘আইযায়াহ, গ্রন্থের ৬৫ অধ্যায় ২ থেকে ৫ স্তবকেও একই নিষিদ্ধতা।

গ. শুকর মাংস ভক্ষণ বেশ কিছু মারাত্নক রোগের কারণ

অন্যান্য অমুসলিম ও নাস্তিকরা হয়তো উপযুক্ত কারণ ও বিজ্ঞানের যুক্তি প্রমাণের মেনে নিতে পারে- শুকুর

মাংস ভক্ষণ কমপক্ষে সত্তুরটি রোগের উদ্ভব ঘটাতে পারে। প্রথমতঃ আক্রান্ত হতে পারে বিভিন্ন প্রকার

ক্রিমির দ্বারা। যেমন বৃত্তাকার ক্রিমি, ক্ষুদ্র কাঁটাযুক্ত ক্রিমি এবং বক্র ক্রিমি। এর মধ্যে সবচাইতে

ভয়ঙ্কর ও মারাত্মক হলো ‘টাইনিয়া সোলিয়াম’। সাধারণভাবে যেটাকে ফিতা ক্রিমি’ বলা হয়। এটা পেটের মধ্যে

বেড়ে ওঠে এবং অনেক লম্বা হয়। এর ডিম রক্ত প্রবাহে প্রবেশ করে এবং দেহের প্রায় সকল অঙ্গ প্রত্যঙ্গে

ঢুকে পড়তে পারে, যদি এটা মস্তিস্কে ঢোকে, তাহলে কারণ ঘটাতে পারে স্মৃতি ভ্রষ্ট হয়ে যাবার। হৃদ-যন্ত্রের

মধ্যে ঢুকলে বন্ধ করে দিতে পারে হৃদযন্ত্রক্রিয়া। চোখে ঢুকতে পারলে অন্ধত্বের কারণ ,কলিজীতে ঢুকতে

পারলে সেখানে মারাত্মক ক্ষতের সৃষ্টি করে অর্থাৎ এটা শরীরের যে কোনো অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের কর্মক্ষমতাকে

ধ্বংস করে দিতে পারে।

এরপরও আছে আরো ভয়ঙ্কর ‘ত্রীচুরা টিচুরাসীস্থ। এ সম্পর্কে একটা সাধারণ ধারণা হলো ভালো করে

রান্না করলে এর ডিম্ব মারা যায়। এর ওপরে আমেরিকায় গবেষণা চালানো হয়েছে। ফলাফল ভালো করে রান্না

করার পরও প্রতি ২৪ জনের ২২ জন এই ‘ত্রীচুরাসীস্থ দ্বারা আক্রান্ত। প্রমাণিত হলো সাধারণ রান্নায় এ

ডিম্ব ধ্বংস হয় না।

ঘ. শুকর মাংসে চর্বি উৎপাদনের উপাদান প্রচুর

শুকর মাংসে পেশী তৈরীর উপাদান অত্যন্ত নগণ্য পরিমাণ। পক্ষান্তরে চর্বি উৎপাদনের উপাদান প্রচুর। এ

জাতীয় চর্বি বেশিরভাগ রক্ত নালীতে জমা হয়- যা কারণ ঘটায় হাইপার টেনশান এবং হার্ট এটাকের। অবাক হবার

কিছু নেই যে ৫০% ভাগ আমেরিকান হাইপার টেনশানের রুগী।

ঙ. পৃথিবীর বুকে শুকর নোংরা ও পঙ্কিলতম প্রাণী

এ প্রাণীটি বসবাস করতে সাচ্ছন্দ বোধ করে নিজেদের বিষ্ঠা, মানুষের মল ও ময়লাপূর্ণ জায়গায়। আল্লাহ

তা‘আলা সমাজবদ্ধ সৃষ্টি কূলের ধাঙর, মেথর বা ময়লা পরিষ্কারক হিসাবেই বোধকরি এ প্রাণিটি সৃষ্টি করেছেন

আজ থেকে পঞ্চাশ কি ষাট বছর আগেও যখন সেনিটারী পায়খানা আবিষ্কৃত হয়নি তখন যে কোনো শহরের

পায়খানার ধরন ছিল, পেছন থেকে মেথর এসে তা ট্যাঙ্কি ভরে নিয়ে যেত এবং শহরের উপকণ্ঠে কোথাও

ফেলতো। যা ছিল শুকরদের পরম আনন্দ নিবাস এবং শেষ পর্যন্ত সেগুলোই সব বিষ্ঠার রুপান্তর ঘটতো।

অনেকেই হয়তো এখন বিতর্কে নেমে পড়বেন উন্নত বিশ্বে এখন শুকরের পরিচ্ছন্ন খামার করা হয়েছে যেখানে

ওগুলো লালিত পালিত হয়। তাদের এই অনেক উন্নত, স্বাস্থ্যকর খামারেও ওগুলো নোংরা। অত্যন্ত

আনন্দের সাথেই ওরা ওদের নিজেদের ও সঙ্গিদের বিষ্ঠা নিয়ে ওদের চোখা নাক দিয়ে নাড়া চড়া করে আর

উৎসবের খাদ্য হিসেবেই খায়।

চ. শুকর নির্লজ্জতায় জঘন্য পশু

ভু-পৃষ্ঠের ওপরে শুকর অশ্লীলতায় নির্লজ্জতম প্রাণী। একমাত্র পশু যেটা তার স্ত্রী-সঙ্গীর সাথে সংগম করার

জন্য অন্যান্য পুরুষ-সঙ্গীদের ডেকে নেয়। আমেরিকার ও ইউরোপের অধিকাংষ মানুষের প্রিয় খাদ্য শুকর মাংস।

খাদ্যভ্যাস আচরণে প্রকাশ পায়, বিজ্ঞানের এ সূত্রের জীবন্ত নমুনা ওরাই। ওদের প্রিয় সংস্কৃতি ডান্স পার্টি

গুলোতে নেচে নেচে উত্তেজনার উত্তুঙ্গে উঠে একে অপরের সাথে ‘সোয়া’র জন্য বউ বদল করে নেয়। অনেকেই

আবার জীবন্ত নীল ছবি চোখে দেখার জন্য স্ত্রীর সাথে সংগম করতে বন্ধু-বান্ধব ডেকে নেয়। তারপর এক

নারী নিয়ে চলে অনেক পুরুষের সম্মিলিত লীলাখেলা। ধন্য উন্নত বিশ্ব, ধন্য তার সর্বোন্নত সংস্কৃতি।

১২. মদ্যপানের নিষিদ্ধতা

প্রশ্নঃ ইসলামে মদ্যপান নিষিদ্ধ কেন?

স্মরণাতীত কাল থেকে বিশ্বমানবতার জন্য ‘এলকোহল’ তীব্র যন্ত্রনার কারণ হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আসছে। মদ

অসংখ্য অগুনতী মানুষের অকাল মৃত্যুর কারণ এবং বিশ্ব জুড়ে কোটি কোটি মানুষের ভয়ঙ্কর দুর্দশার কারণ।

মানুষের সমাজে অসংখ্য সমস্যার নেপথ্যে আসল হেতু এই ‘এলকোহল’ বা মদ। অপরাধ প্রবনতার তীব্র

উর্ধগতী, ক্রমবর্ধমান মানসিক বিপর্যয় এবং কোটি কোটি ভাঙ সংসার জীবন্ত প্রমাণ বহর করছে বিশ্ব

জুড়ে এলকোহলের নিরব ধ্বংসযজ্ঞের তান্ডবলীলা কি ভাবে চলছে।

ক. কুরআনে মদ্য পানে নিষিদ্ধতা

হে ঈমান গ্রহণকারী লোকেরা! মদ ও জুয়া, পাশা খেলা, তীর ছুঁড়ে ভাগ্র জানা এগুলো শয়তানের নিকৃষ্ট ধরনের

জঘন্য কারসাজি। এসব পরিহার করো যেন তোমরা উন্নত (মানবতার) পথে এগিয়ে আসতে পারো। (৫:৯০)

খ. বাইবেলে মদের নিষিদ্ধতা

১. মদ্য একটি প্রতারক, কঠিন পানীয়, কুৎসীত কাজের উৎসাহক এবং যে এতে অভ্যস্ত হলো সে মুর্খতায়

নিমজ্জিত হলো। (বাইবেলের নীতিবাক্য, মূল গ্রন্থঃ ২০-১)

২. আর মদ্য পানে মাতাল হয়ো না। (এফিসিয়ানেসঃ৫:১৪)

গ. এলকোহল বিবেককে বাধাগ্রস্ত করে

মানুষের মগজে একটি বিবেচনা কেন্দ্র আছে। এ বিবেচনা কেন্দ্র মানুষকে সেই সব কাজ করতে বাধাগ্রস্থ

করে, যেসব কাজ সে মন্দ বলে জ্ঞান করে। যেমন কোনো লোক সাধারণত তার পিতা-মাতা এবং গুরুজনের কথা

বলার সময় অসম্মানজনক ভাষা ব্যবহার করে । তাকে যদি কখনো প্রাকৃতিক ডাকে সাড়া দিতে হয় (পায়খানা

পেশাব) তার বিবেচনা কেন্দ্র তাকে বাধা দেবে জনসমক্ষে এ কাজ করতে। এ জন্য সে গোপন জায়গা ব্যবহার

মানুষ যখন মদ পান করে, তখন তার মগজের এই বিবেচনা কেন্দ্র স্থবীর হয়ে পড়ে (অর্থাৎ নিজেই কাজ করতে

বাধাগ্রস্ত হয় )। মদ্য পানে মাতাল ব্যক্তিকে যে অস্বাভাবিক আচার আচরণ করতে দেখা যায়। তার সুনির্দিষ্ট

কারণ এটাই। যেমন মাতাল লোককে অসন্মানজনক কথা বলতে দেখা যায়, এমনকি সে যদি তার পিতা-মাতার সাথেও

কথা বলতে থাকে। কেননা তখন তার এই ভুলকে উপলদ্ধি করতেই সক্ষম হয় না। মাতাল হয়ে অনেকেই পেশাব করে

দেয় তাদের কাপড়ে। না তখন সে ঠিক মতো কথা বলতে পারে, না পারে সোজা পায়ে হাঁটতে।

ঘ. ব্যভিচার, ধর্ষণ, নিসিদ্ধ আত্মিয়ার সাথে জোরপূর্বক যৌনতা এই সবকিছু মদ্যপায়ীদের মধ্যে বেশি পাওয়া

আমেরিকার ন্যাশনাল ডিপার্টমেন্ট অব জাস্টিস এর ন্যাশনাল ভিকটিমাইযেশান সারভে ব্যুরো অব জাষ্টিস-এর

পরিসংখ্যানে শুধু মাত্র ১৯৯৬ সালে প্রতিদিন গড়ে ২৭১৩ ধর্ষণের ঘটনা সংগ্রহ করা হয়েছিল, রিপোর্টের

মন্তব্য বলা হয়েছে ধর্ষকদের অধিকাংশই ঘটনার সময় মাতাল ছিল, নারী উৎপীড়নের ক্ষেত্রেও এদেরকেই বেশি

একই পরিসংখ্যানে দেখা যায় ৮% আমেরিকান মা-বোন, অথবা কন্যার সাথে যৌন কর্মে লিপ্ত। অর্থাৎ প্রতি

বারো বা তেরে জনের একজন আমেরিকান এই কর্মে অভ্যস্ত এবং দু’জনের একজন অথবা উভয়ে এসময় মাতাল

থাকে। এইড্‌স বিস্তারের ক্ষেত্রে মাদকের ভুমিকা কান ও মাথার মতো (অর্থাৎ কান টানলে মাথা আসে) তাই

মাদকাসক্তিই মারাত্মক ও প্রাণঘাতি ব্যাধি।

ঙ. প্রতিটি মাদকাসক্তিই লোকই প্রাথমিক পর্যায়ে সৌখীন পানকারী থাকে

অনেকেই মদের পক্ষ অবলম্বন করে বলবেন, ভাই পার্টি-পরিবেশে একটু আধটু হলে ভালোই লাগে। আমাদের দৌড়

ঐ পর্যন্তই। এক কি দুপেগ। আমরা নিজেদের নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা রাখি, আমরা মাতাল হইনা কখোনো ইত্যাদি

দীর্ঘ অনুসন্ধানের ফলাফল এই যে, প্রত্যেকটি মদ্যপ মাতালই প্রাথমীক পর্যায়ে সৌখীন পানকারী ছিল। এমন

একজনকেও খুঁজে পাওয়া যায়নি যে মদ্যপ বা মাতাল হয়ে যাবার জন্য মদ পান শুরু করেছিল। অপরদিকে কোনো

সৌখীন মদ পানকারীই একথা বলতে পারবেনা যে, দীর্ঘ দীর্ঘ দিন যাবত এভাবেই দু’এক পেগ করেই খেয়ে এসেছি।

কোনো দিন মাত্রা ছাড়িয়ে যাইনি। আর মাতাল হলে কেমন লাগে সে স্বাদও পাইনি।

চ. জীবনে একবারও যদি কেউ মাতাল হয়ে লজ্জাকর কোনো কাজ করে থাকে সে স্মৃতি তাকে জীবনের শেষ দিনটি

পর্যন্ত ভোগাবে।

ধরুন, কোনো সৌখীন সামাজিক মদপানকারী, জীবনে মাত্র একবার নিজের নিয়ন্ত্রন হারিয়ে মাতাল হয়েছিল।

আর সেই দিনই তার দ্বারা ধর্ষণ বা আপনজন কারো ওপরে যৌন অত্যাচার মূলক কোনো দুর্ঘটনা গিয়েছিল।

পরবর্তীকালে যদি সে,সেই কাজের জন্য দুঃখ প্রকাশ, ক্ষমা প্রার্থনা করে এবং ক্ষমা পেয়েও গিয়ে থাকে তবু সুস্থ

ও স্বাভাবিক একজন মানুষকে সারাজীবন সেই স্মৃতির কুৎসীৎ যন্ত্রণা ভোগ করতে হবে- যে করেছে সে এবং যার

ওপর তা সংঘটিত হয়েছে সে -উভয়কেই এই অপুরণীয় ও অপরিবর্তনীয় ক্ষতির ভোগান্তি পোহাতে হবে।

ছ. হাদীসে মদের নিষিদ্ধতা

রাসূলুল্লাহ (স) বলেছেনঃ

১. মদ সকল মন্দ ও অশ্লীলতার মা (উৎস) এবং যাবতীয় মন্দের মধ্যে ওটা সবচাইতে লজ্জাকর। সুনামে ইবনে

মাজাহ্‌ অধ্যায় ৩০ । হাদীস নং ৩৩৭১।

২. এমন সকল, যা নেশাগ্রস্ত করে অনেক পরিমাণে তা নিষেধ (হারাম)। এমনকি তা অল্প পরিমাণ গ্রহণ করা

হলেও। তাই এক্ষেত্রে কোনো ছাড় নেই। তা এক ঢোক অথবা এক ড্রাম।

৩. হযরত আয়শা (রা) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (স) বলেছেন, মদের সাথে জড়িত এমন দশ শ্রেণীর লোকদের

ওপরে আল্লাহর অভিশাপ। (১) যারা তা তৈরী করে (২) যাদের জন্য তা বানানো হয় (৩) যারা তা পান করে। (৪)

যারা তা বহন করে এক জায়গা থেকে আর এক জায়গায় নিয়ে যায় (৫) যাদের জন্য তা নিয়ে আসা হয় (৬) যারা তা

পরিবেশন করে। (৭) যারা তা বিক্রি করে (৮) যারা তা বিক্রি লব্ধ টাকা ব্যবহার করে (৯) যারা তা কেনে

এবং (১০) যারা তা কেনে অন্য আর একজনের জন্য।

ছ. মদ্যপায়ীরা যে সব রোগে আক্রান্ত হয়

চিকিৎসা বিজ্ঞানের সামনে এমন বেশ কিছু রোগের উৎপত্তি স্পষ্ট হয়ে গেছে যেসব রোগে সাধারনত

মদ্যপায়ীরাই আক্রান্ত হয়। মদ এমন একটি কারণ, যে কারণে সারা বিশ্বে মৃতের সংখ্যা সবচাইতে বেশি। লক্ষ

লক্ষ মানুষ শুধু মদ পানের কারণে পৃথিবী থেকে অকালে বিদায় নিতে বাধ্য হয়। সাধারণত মদ্যপায়ীরাই আক্রান্ত

হয় এমন অতি পরিচিত কিছু রোগের একটি ছোট্ট তালিকা দেয়া হলোঃ

১. যকৃৎ বা কলিজা শুকিয়ে শক্ত হয়ে যাওয়া। যা লিভার সিরোসিস নামে পরিচিত।

২. অম্লনালীর ক্যান্সার এবং মাথা, গলা, কলিজা ও মল নালীর ক্যান্সার।

৩. অগ্ন্যাশয় ও যকৃতের প্রদাহ।

৪. হৃদযন্ত্র ক্রিয়া বা হৃদয় স্পন্দন সংক্রান্ত যাবতীয় রোগ, হাইপার টেনশান।

৫. হৃৎপিন্ডে রক্ত সঞ্চালেন নালী সমূহের যাবতীয় রোগ, গলনালী প্রদাহ এবং হৃদযন্ত্র ক্রিয়া বন্ধ হয়ে

৬. পক্ষাঘাত, সন্যাস রোগ এরকম আরো অন্যান্য প্যারালাইসিস।

৭. স্নায়ু ও মস্তিষ্কের যাবতীয় রোগ।

এরকম আরো অসংখ্য- বাংলা ভাষায় যেসবের নামকরণ বেশ কষ্টসাধ্য। একারণে তালিকাও এখানেই ইতি টানা

জ. মাদকাসক্তিই একটি রোগ

চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা মদ্যপায়ীদের ব্যাপারে এখন চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌছেছেন। তারা এটাকে এখন আর নেশা

বলেন না,বলেন এটা নিজেই একটা রোগ। ‘ইসলামিক রিসার্চ ফাউন্ডেশন’ একটা পোষ্টার বের করেছে, তাতে বলা

হয়েছে যদি‘মদই’ রোগ হয়ে থাকে তাহলে পৃথিবীতে এটাই একমাত্র রোগ যা সুন্দর সুন্দর বোতলে ভরে বিক্রি

: পত্র-পত্রিকা এবং রেডিও টেলিভিশনের মতো প্রচার মাধ্যেমে তার বিজ্ঞাপন করা হয়।

: সরকারেরজন্য রাজস্ব আমদানী করে।

: মৃত্যুকেযে প্রকাশ্য রাজপথে নিয়ে আসে।

: পারিবারিকজীবন ধ্বংস ও অপরাধ প্রবণতার আসল হোতা।

মদ শুধু একটি রোগই নয় - শয়তানের কারসাজি এটা

আল্লাহ সুবহানাহু তা‘আলা মানুষের জন্য তাঁর সর্বোত্তম অনুগ্রহ আল-কুরআনে শয়তানের পাতা এই লোভনীয়

ফাঁদ সম্পর্কে আমাদেরকে সাবধান করে দিয়েছেন। তাই কুরআনে বিদ্ধৃত জীবন যাপন পদ্ধতিতে ‘দ্বীনুল

ফিৎরাহ’ বা মানুষের প্রকৃতিসম্মত জীবনব্যবস্থা ‘ইসলাম’ বলা হয়। এর সকল বিধি-নিষেধের আসল উদ্দেশ্য

মানব প্রকৃতিকে সকল অনিষ্ট থেকে রক্ষা করা। মদ মানুষকে তার প্রকৃতগত স্বভাবের ওপর দাঁড়াতে দেয় না।

একথা স্বতন্ত্র কোনো ব্যক্তির বেলায় যেমন সত্য তেমনি বৃহত্তর কোনো সমাজের ক্ষেত্রেও । এটা

মানুষকে নিচে নামিয়ে পশুর পর্যায়ে নিয়ে আসে অথচ মানুষ দাবি করে যে, সে সৃষ্টিকুলের শ্রেষ্ঠতম। সর্বোপরি

ইসলামে মদ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ “হারাম”।

১৩. সাক্ষীদ্বয়ের সমতা

প্রশ্নঃ কেন দু’জনের সাক্ষী, যারা নারী- সমতূল্য মাত্র একজনের, যে পুরুষ ?

ক. একজন পুরুষ সাক্ষির বিকল্প দুজন নারীর সাক্ষী সর্বক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়।

সাক্ষী প্রদান প্রসঙ্গে কুরআনের কমপক্ষে তিনখানি আয়াত রয়েছে যেখানে পুরুষ ও নারীর পার্থক্য করা হয়নি।

১. উত্তরাধিকারের ওসীয়ত করার সময় সাক্ষী হিসেবে দু’জন ন্যায়পরায়ণ ব্যক্তির কথা বলা হয়েছে।

হে ঈমানধারনকারীরা! তোমাদের মধ্যে কেউ যখন মৃত্যুর দুয়ারে পৌছায় তখন অসীয়ত করতে হলে তোমাদের

মধ্য থেকে সাক্ষী রেখো। তোমাদের নিজেদের মধ্যে থেকে দু’জন ন্যায়পরায়ণ ব্যাক্তি অথবা বাইরের, যখন

তোমরা এপৃথিবীর বুকে (কোথাও) সফরে আছো, আর এমন সময় মৃত্যু এসে উপস্থিত হয়েছে। (সূরা

মায়েদাঃ১০৬)

২.তালাকের ক্ষেত্রে দু’জন ন্যায়পরায়ন সাক্ষীর কথা বলা হয়েছে।

এবং সাক্ষীর জন্য তোমাদের মধ্যে থেকে দুজন ন্যায়পরায়ণ ব্যক্তিকে নাও। আর প্রতিষ্ঠিত করো এসাক্ষী

শুধু আল্লাহর জন্য। (সূরা তালাকঃ২)

২. নারীর প্রতি ব্যভিচারের অভিযোগে চারজন সাক্ষী দাড় করাতে হবে।

আর যারা পবিত্র চরিত্রের নারীদের সম্পর্কে মিথ্যা অভিযোগ আনবে। তারপর চারজন সাক্ষী উপস্থিত করতে

পারবেনা (অভিযোগ প্রমানের জন্য) তাহলে তাদেরকে আশিবার বেত্রঘাত করো। আর কোনো দিন তাদের

কোনো সাক্ষ্য গ্রহণ করবে না। আর এসব লোক তারাই যারা ফাসেক। (সূরা নূরঃ৪)

খ. টাকা পয়সা লেন-দেনের ক্ষেত্রে একজন পুরুষের স্থলে দুজন নারীর সাক্ষীর প্রয়োজন

একজন পুরুষের স্থলে দুজন নারীর সাক্ষীসর্বক্ষেত্রেই প্রযোজ্য একথা সত্য নয় এর সত্যতা শুধু বিশেষ বিশেষ

ক্ষেত্রে । সাক্ষী প্রসঙ্গে কুরআনে পাঁচ খানি আয়াত আছে যেখানে নারী কিংবা পুরুষ আলাদা করে উল্লেখ করা

হয়ণি। আর একজন পুরুষের স্থলে দুজন নারীর সাক্ষির কথা মাত্র একখানি আয়াতে বলা হয়েছে সূরা বাকারা ২৮২

আয়াত। আয়াত খানির বিশেষ বৈশিষ্ট হলো কুরআনের দীর্ঘতম আয়াত এবং তা ব্যাবসা ও টাকা পয়সা লেনদেন

হে ঈমানদারগন যদি নির্দিষ্ট মেয়াদের জন্য তোমরা একে অপরের সাথে লেন-দেন করো। তাহলে তা লিখে নিও --

-অতঃপর তোমাদের নিজেদের মধ্যের দুজন পুরুষকে সাক্ষী বানাও। তখন যদি দুজন পুরুষের আয়োজন না করা

যায়,তাহলে একজন পুরুষ ও যাদের সাক্ষীর ব্যাপারে তোমরা আস্থাশীল এমন দুজন নারী বেছে নাও যে একজন

ভুলকরলে অন্যজন স্মরণ করিয়ে দিতে পারে। (সূরা বাকারাঃ২৮২)

এসব ক্ষেত্রে উভয় পক্ষের মধ্যে একটি লিখিত চুক্তির আদেশ করা হয়েছে এবং সেখানে দুজন সাক্ষীর কথা বলা

হয়েছে। আর সে দুজনই পুরুষ হতে হবে। কিন্তু যদি সে রকম আস্থভাজন দুজন পুরুষ মানুষের ব্যবস্থা না করা যায়

কেবল তখন,অন্ততঃ একজন পুরুষ ও দুজন মহিলা থাকতেই হবে। এখানে একটা উদাহন প্রণিধানযোগ্য। ধরা যাক

কেউ একজন তার একটি বিশেষ রোগের জন্য অপারেশন করতে মনস্থ করেছে। মোটামুটি নিশ্চিত হবার জন্য সে

সমমানের দুজন শল্য চিকিৎসকের পরামর্শ নিবে। কোনো কারণে যদি দুজন সার্জনের ব্যবস্থা করতে সে ব্যর্থ

হয় তখন বিকল্প হিসেবে একজন সার্জন এবং দুজন সাধারণ এম বি বি এস-এর পরামর্শ গ্রহণ করল।

একইভাবে ব্যবসা ও ঋণ লেনদেনের ক্ষেত্রে দু’জন পুরুষকে সাক্ষী রাখতে বলা হয়েছে। ইসলাম চায় পরিবারের ভরণ

পোষণের জন্য উপার্জনের দায়ভার পুরুষ চহন করুক। অর্ধনৈতিক দায়-দায়িত্ব যেখানে পুরুষের কাঁধে ন্যাস্ত।

পৃথিবীতে প্রচলিত সাধারণ বাস্তবতাও তাই। কাজেই অর্থনৈতিক লেন-দেনে নারীর তুলনায় পুরুষই সুদক্ষ।

বিকল্প হিসেবে যে, একজন পুরুষ ও দু’জন নারীর কথা বলা হয়েছে। তার কারণও স্পষ্ট করে বলে দেয়া হয়েছে

যে,একজন যদি কোনো ভুল করে তাহলে আর একজন যেন তাকে স্মরণ করিয়ে দিতে পারে। কুরআন এখানে শব্দ

ব্যবহার করেছে ‘তা’দিল’ যার মানে দালগোল পাকিয়ে ফেলা। অথবা ভুল করা। অনেকেই শব্দটির তরজমা

করেছেন ‘ভুলে যাওয়া’ এটা শুদ্ধ নয়। যা হোক আর্থিক লেনদেনই একমাত্র বিষয় যেখানে সাক্ষী হিসাবে একজন

পুরুষের বিকল্প দু’জন নারী।

গ. হত্যা মামলার ক্ষেত্রেও সাক্ষী হিসেবে একজন পুরুষের বিকল্প দু’জন নারী

কিছু ইসলামী আইন-শাস্ত্রবীদগণের মতে, হত্যা মামলার সাক্ষী দানের ক্ষেত্রে নারীসুলভ অভিব্যক্তি প্রক্রিয়া

সৃষ্টি করতে পারে। এধরনের পরিস্থিতিতে একজন পুরুষের তুলনায় একজন নারী বেশি মাত্রায় ঘাবড়ে যেতে পারে।

তার নারী সুলভ ভাবাবেগ তাকে কিংকর্তব্যবিমূঢ় করে দিতে পারে। এ কারনেই কিছু বিশেষজ্ঞ আলেম খুনের

মামলায় একজন পুরুষের বিকল্প হিসেবে দু’জন নারীর সাক্ষী এই রায় দিয়েছেন। অন্য সব ব্যাপারেই একজন নারীর

সাক্ষী এক জন পুরুষের সাক্ষীর সমান মূল্যমানের।

ঘ. কুরআন সুস্পষ্ট ভাবে নির্দিষ্ট করে দিয়েছে-একজন নারীর সাক্ষী একজন পুরুষের সমান

কিছু বিশেষজ্ঞ আলেম যদিও এ ব্যাপারে জোরালো মতামত দিয়েছেন যে একজন পুরুষের সাক্ষীর বিকল্প দু’জন

নারীর সাক্ষী বিষয়টা সর্বক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। কিন্তু নির্দ্বিধায় একথা মেনে নেয়া যায় না। কেননা খোদ

কুরআনেই তা সমান করে দিয়েছে।

আর যারা তাদের স্ত্রীদের সম্পর্কে অভিযোগ তুলবে অথচ তাদের কাছে তাদের নিজেদের ছাড়া অন্যকোনো

সাক্ষদাতা নেই। তাহলে তাদের একজনের সাক্ষ্যই চার বার (আল্লাহর নামে শপথ করে বললে) গ্রহণ যোগ্য হবে।

(সূরা নূর ঃ ৬)

ঙ. হযরত আয়শা (রাঃ)-এর একক সাক্ষী হাদীসের বিশুদ্ধতার ক্ষেত্রে গ্রহণযোগ্য

মুসলমানদের কাছে কুরআনের পরেই নির্দেশনার জন্য মূল্যবান যে উৎস সেই হাদীস সমূহের মধ্যে হযরত আয়শা

(রাঃ) বর্ণিত ২২২০ খানা হাদূস শুধু মাত্র তাঁর একক সাক্ষীর ওপরেই বিশুদ্ধতার সকল বিবেচনায় উত্তীর্ন।

কাজেই ক্ষেত্র অনুযায়ী একজন নারীর সাক্ষীই যে গ্রহণ ও যোগ্য, এর জন্য আর কোনো দলিলের প্রয়োজন

পড়েনা। ইসলামী আইন-শাস্ত্রবীদগণের অনেকেই এব্যাপারে একমত যে চাঁদ দেখার ব্যাপারে

একজন “মো’মেনা” নারীর সাক্ষই যথেষ্ট। বিষয়টা অবশ্যই ভেবে দেখার মতো। ইসলামের একটি

স্তম্ভ ‘রোযা’র কার্যকরিতার ব্যাপারে সমগ্র মুসলিম জনগোষ্ঠি একজন মাত্র নারীর সাক্ষী দানের ওপরেই

নির্ভর করতে পারে।

কোন কোন ইসলামী পন্ডিত বলেছেজন, রমযানের চাঁদ দেখার জন্য একজন সাক্ষী এবং রমযানের শেষের চাঁদ

অর্থাৎ ঈদের চাঁদ দেখার জন্য দু’জন সাক্ষীর প্রয়োজন। সাক্ষীগণের পুরুষ বা নারী হওয়ার ব্যাপারে কোন

চ. কোন কোন ক্ষেত্রে মহিলার সাক্ষী অগ্রগন্য

কোন কোন ক্ষেত্রে শুধুমাত্র নারীর সাক্ষীই গ্রহণযোগ্য, সেখানে পুরুষের কোনো ভূমিকাই নেই। যেমন

কেনো মহিলার মৃতদেহের গোসল করানোর সাক্ষী একজন নারীর পক্ষেই হওয়া সম্ভব।

দৃশ্যত সাক্ষীদানের ক্ষেত্রে নারী-পুরুষের যে বৈষম্য পরিলক্ষিত হয় তা আদৌ লিঙ্গ বৈষম্যের জন্য নয়। তা

বরং ইসলামের বিবেচনায় সমাজে নারী ও পুরুসের প্রকৃতি ও ভূমিকার পার্থক্যের কারণে।

১৪.উত্তরাধীকার

প্রশ্নঃ ইসলামী আইনে উত্তরাধীকারী সম্পদে একজন নারীর অংশ একজন পুরুষের অর্ধেক কেন?

ক. কুরআনে উত্তরাধিকার

যথাযোগ্য প্রাপকের মধ্যে উত্তরাধিকারী সম্পদ বন্টনের সুনির্দিষ্ট এবং বিস্তারিত নির্দেশনা জ্যোতীর্ময়

কুরআনে বিধৃত আছে।

উত্তরাধিকার সংক্রান্ত কুরআনে আয়াত সমূহঃ

সূরা বাকারাঃ ১৮০

সূরাবাকারাঃ ২৪০

সূরানিসাঃ ৭-৯

সূরানিসাঃ ১৯

সূরানিসাঃ ৩৩

সূরামায়েদাহঃ ১০৬-১০৮

খ. আত্মীয় স্বজনের জন্য উত্তরাধিকারের সুনির্দিষ্ট অংশ

কুরআনের তিনখানি আয়াতে বিস্তারিতভাবে নিকটাত্মীয়দের অংশ বর্ননা করা হয়েছে।

তোমাদের সন্তানদের ব্যাপারে আল্লাহ তোমাদেরকে এই বিধান দিচ্ছেনঃ পুরুষের অংশ দুই নারীর সমান হবে।

(উত্তরাধিকারী) যদি দুই জনের বেশি নারী হয় তাহলে সম্পদের দুই তৃতীয়াংশ দেয়া হবে। আর একজন নারী হলে

মোট সম্পদে অর্ধেক পাবে। মৃত ব্যক্তির সন্তান থাকলে তার পিতা-মাতা প্রত্যেক ছয় ভাগের এক ভাগ করে

পাবে। আর সে যদি নিঃসন্তান হয় পিতা-মাতাই হয় উত্তরাধিকারী তাহলে মাকে দেয়া হবে তিন ভাগের এক ভাগ।

মৃতের ভাই বোন থাকলে মা সেই ছয় ভাগের এক ভাগই পাবে। এসব বণ্টন মৃতের কোনো অসীয়ত থাকলে তা

এবং ঋণ থাকলে তা আদায় করার পরে।

তোমাদের পিতা-মাতা এবং তোমাদের সন্তান-সন্ততী, তোমাদের জানা নাই এদের মধ্যে তোমাদের কল্যাণের

দিক দিয়ে কারা ঘনিষ্ঠতর। এই বণ্টন ব্যবস্থা ফরয করে দেয়া হয়েছে (তোমাদের জন্য) আল্লাহর পক্ষ থেকে।

আল্লাহ তো সব কিছুর ব্যাপারেই পূর্ণ অবহিত এবং মহামহীম জ্ঞানের আধার। আর তোমাদের স্ত্রীরা যা কিছু

রেখে গেছে, তার অর্ধেক তোমরা পাবে যদি তারা নিঃসন্তান হয়। সন্তান থাকলে তোমরা পাবে ত্যাক্ত

সম্পত্তির চারভাগের এক ভাগ- তাদের করে যাওয়া অসীয়ত এবং দেনা থাকলে তা সব আদায়ের পরে। আর

(তোমরা মরে গেলে) তোমাদের রেখে যাওয়া সম্পদের তারা পাবে চার ভাগের একভাগ যদি তোমাদের কোনো

সন্তান না থাকে। সন্তান থাকলে তারা পাবে আট ভাগের একভাগ। তা-ও কার্যকর হবে তোমাদের কোনো

অসীয়ত এবং দেনা থাকলে তা আদায়ের পর।

আর যদি এমন কোনো পুরুষ অথবা স্ত্রীলোক (সম্পদ রেখে মারা যায়) যার না আছে কোনো সন্তান আর

না আছে পিতা-মাতা। আছে এক ভাই অথবা এক বোন তাহলে তাদের প্রত্যেক (কোনো পার্থক্য ছাড়া) পাবে

ছয় ভাগের এক ভাগ। আর ভাই বোন যদি দুই এর বেশি হয় তাহলে তারা সবাই মিলে মোট সম্পদের তিন ভাগের

একভাগ পাবে। তা-ও কোনো অসীয়ত এবং ঋণ থাকলে তা আদায়ের পরে। কোনো ভাবেই কারো কোনো

ক্ষতি করা বা হতে দেয়া যাবে না। (এসব কিছু) আল্লাহর দেয়া উপদেশ মালা। আর আল্লাহ সব কিছুর ব্যাপারেই

পূর্ণ অবহিত এবং পরম ধৈর্য্যশীল। (সূরা নিসাঃ ১১-১২)

তারা আপনার কাছে ফতোয়া জানতে চায়। বলুন, আল্লাহ তোমাদেরকে ফতোয়া দিচ্ছেন- নিঃসন্তান ও পিতৃ-

মাতৃহীন মৃত ব্যক্তির সম্পদ বণ্টন সম্পর্কে। যদি এমন ব্যক্তি মারা যায়, যার কোনো সন্তান নেই, আছে

এক বোন। তাহলে সে (বোন) পাবে সম্পদের অর্ধেক আর যদি (এরকম কোনো) বোন মারা যায় তাহলে ভাই

পুরো সম্পদের উত্তরাধিকারী হবে। মৃতের উত্তরাধীকারী যদি দুই বোন হয় তাহলে ত্যাক্ত সম্পত্তির তিন

ভাগের দুই ভাগের দুই ভাগ তারা পাবে। আর যদি কয়েকজন ভাই বোন হয় তাহলে পুরুষের অংশ নারীর অংশের

দু’জনার সমান।

আল্লাহ (এই সব জটিল বিষয়গুলো খুলে) স্পষ্ট করে দিচ্ছেন তোমাদের জন্য যেন তোমরা বিভ্রান্তির মধ্যে

পড়ে না যাও। প্রত্যেকটি জিনিস সম্পর্কেই আল্লাহ পূর্ণ অবহিত। (সূরা নিসাঃ১৭৬)

গ. প্রতিপক্ষ পুরুষের তুলনায় কোনো কোনো ক্ষেত্রে নারী সমান অথবা বেশির অধিকারী হয়

অধিকাংশ ক্ষেত্রে নারী অধিকারী হয় প্রতিপক্ষ পুরুষের অর্ধেক। যাই হোক এটা কিন্তু সর্বক্ষেত্রে নয়। মৃত

ব্যক্তি এমন,যার পিতা-মাতও নেই, পুত্র কন্যাও নেই। আছে বৈপিত্রীয় ভাই ও বোন। এদের প্রত্যেকে এক

ষষ্টমাংশ করে পাবে।

মৃতের পুত্র কন্যা থাকলে মাত-পিতা উভয়ে এক ষষ্টমাংশ করে পাবে। ক্ষেত্র বিশেষে নারী উত্তরাধিকার হয়

পুরুষে দ্বিগুন। মৃত যদি একজন নারী হয় যার না কোনো সন্তান আছে ভাই বোন, আছে স্বামী এবং মা ও

বাবা। এখানে মৃত্যের স্বামী পাবে অর্ধেক সম্পদ এবং পাবে এক তৃতীয়াংশ বাবা পাবে এক ষষ্টমাংশ। বিশেষ এই

ক্ষেত্রটিতে বাবার তুলনায় মা দ্বিগুন পাচ্ছে।

ঘ. নারী সাধারণত পুরুষের অর্ধেক অংশের উত্তরাধিকারী হয়

১. পুত্র যতটুকু উত্তরাধিকারী হয় কন্যা তার অর্ধেক।

২.মৃতের কোনো সন্তান না-থাকলে স্বামী চারের এক অংশ এবং স্ত্রী আটের এক অংশ।

৩.মৃতের সন্তান থাকলে স্বামী দুইয়ের এক অংশ স্ত্রী চারের এক অংশ।

৪.যদি মৃতের পিতা-মাতা অথবা সন্তান না থাকে তাহলে ভাই যা পাবে বোন পাবে তার অর্ধেক।

ঙ. পুরুষ নারীর চাইতে দ্বিগুন সম্পদের উত্তরাধিকারী হয়, কারণ সে পরিবারের আর্থিক প্রয়োজনের

যোগানদাতা।

ইসলাম নারীর ওপরে কোনো আর্থিক বাধ্যবাধকতা এবং অর্থনৈতিক দায়দায়িত্ব নেই যা পুরুষের কাঁধে ন্যাস্ত

আছে। যে কোনো মেয়ের বিয়ের আগে পর্যন্ত থাকা, খাওয়া, কাপড়-চোপড় এবং অন্যান্য আর্থিক

প্রয়োজনের যোগানদাতা তার বাবা অথবা ভাই। বিবাহের পরে এসব দায়িত্ব স্বামীর অথবা পুত্রের। ইসলাম

পুরুষের ওপরই তার পরিবারের আর্থিক প্রয়োজন পূরণের দায়-দায়িত্ব চাপিয়ে দ্বিগুণ অংশ দেয়া হয়েছে।

উদাহরণ স্বরুপ এক পুত্র ও এক কন্যা এবং নগদ এক লক্ষ পঞ্চাশ হাজার টাকা রেখে এক লোকমারা গেল। এখন

উত্তরাধিকার বণ্টনে পুত্র মালিক হলো পূর্ণ এক লক্ষ টাকার আর কন্যা পেলো মাত্র পঞ্চাশ হাজার টাকা।

কিন্তু পরিবারে যাবতীয় আর্থিক প্রয়োজন পূরণের দায় এখন পুত্রের ঘাড়ে। সে সব প্রয়োজন পূরণে পুত্রকে

প্রায়সব টাকাই ব্যায় করে ফেলতে হচেছ। অথবা ধরা যাক প্রায় আশি হাজার টাকা ব্যায় করে এখন তার কাছে

আছে মাত্র বিশ হাজার টাকা। অপরদিকে কন্যা যে পেয়েছে পঞ্চাশ হাজার টাকা তা থেকে কারো জন্য একটি পয়সা

খরচ করার কোনো দায়-দায়িত্ব তার ওপরে নেই এবং সে বাধ্যও নয়। অর্থাৎ সম্পূর্ণ টাকাটাই তার কাছে

গচ্ছিত আছে।

এখন আশি-নব্বই এমন কি পুরোটাই প্রয়োজণে ব্যয় করতে হতে পারে এমন ঝুকির মুখে, এক লক্ষ টাকা আর

একটি পয়সারও কোনো দায়-দায়িত্ব নেই এমনভাবে সংরক্ষিত পঞ্চাশ হাজার টাকা-কে কোনটা নিতে চাইবেণ?

{mospagebreak title= কুরআন কি আক্ষরিক অর্থেই আল্লাহর কথা ? }

১৫. কুরআন কি আক্ষরিক অর্থেই আল্লাহর কথা ?

প্রশ্নঃ কিভাবে আপনি প্রমাণ করবেন আক্ষরিক অর্থেই কুরআন আল্লাহর কথা?

ইন্টারনেটে পাওয়া যায়নি বলে এখানে দেয়া হলো না। তবে আই, আর, এফ কর্তপক্ষ এর কলের সম্পর্কে ধারণা

দিযেছে য, কমপক্ষে পাঁচ পৃষ্ঠা হবে এই একটি প্রশ্নের জবাব। আমরাও ইনশাআল্লাহ আগামী সংস্করণে তা

সংযোযন করতে পারবো বলে আশা রাখি।

১৬. পরকাল-মৃত্যুর পরবর্তী জীবন

প্রশ্নঃ কিভাবে প্রমাণ করবেন, পরকালের অস্তিত্ব অর্থাৎ ‘মরনের পরে আবার একটি স্থায়ী জীবন আছে’?

ক. পরকালে আস্থা অন্ধ বিশ্বাসের ওপর প্রতিষ্ঠিত নয়

অনেকেই আশ্চার্য হয়ে যান, বৈজ্ঞানিক ও যুক্তিসম্মত প্রকৃতির কোনো মানুষ কিভাবে পরকাল বা মৃত্যু পরে

আর একটি জীবনের ওপরে আস্থা রাখতে পারে? তারা ধারণা করে যে, যারা পরকালে আস্থাশীল তাদের যে

আস্থা, তা একটি অন্ধ বিশ্বাসের ওপর প্রতিষ্ঠিত।

পরকালে আমার আস্থা সঙ্গত যুক্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত।

খ. ‘পরকাল’ একটি যৌক্তিক বিশ্বাস

বৈজ্ঞানিক বিষয়াদি নিয়ে জ্যোতির্ময় কুরআনঅন্তত হাজারের ওপরে আয়াত ধারণ করে আছে (এ প্রসঙ্গে বই

কুরআন ও আধুনিক বিজ্ঞান সুসঙ্গত অথবা অসঙ্গত) বিগত কয়েক শতাব্দীতে কুরআন বর্ণিত বিজ্ঞানের

অসংখ্য বিষয় সত্যায়িত হয়েছে। কিন্তু বিজ্ঞান এখনও সে পর্যায়ে গিয়ে পৌছায়নি যাতে কুরআন বির্ণিত

প্রতিটি বিষয়কে সত্যায়ীত করতে পারে।

যদি কুরআন বর্ণিত বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব সমূহের ৮০% ইতিমধ্যে শতকরা একশ ভাগ সত্যতা নিয়ে প্রমাণিত হয়ে

থাকে। বাকি থাকলো মাত্র ২০% ভাগ, যে সব সম্পর্কে বিজ্ঞানের কাছে সুস্পষ্ট কোনো বক্তব্য নেই।

যেখানে বিজ্ঞানই এখন পর্যন্ত সে পর্যায়ে পৌছায়নি যাতে কুরআনের এসব বর্ণনাকে সত্য বা মিথ্যা বলে

প্রমাণ করতে পারে। কাজেই আমাদের সীমাবদ্ধ জ্ঞান নিয়ে আমরা নিশ্চিত করে ঐ ২০% ভাগ অনুদঘাটিত

সত্যাসত্যের এমন কি একটি আয়াতও ভুল একথা বলতে পারিনা।

তাই কুরআনের ৮০% ভাগ যেখানে চূড়ান্তভাবে সত্য বলে প্রমাণিত এবং বাকি ২০% ভাগ শুধু প্রমাণের

অপেক্ষায়। সেখানে যৌক্তিতা এটাই বলবে যে, ঐ ২০% ভাগও সময়ে সত্য বলেই প্রমাণিত হবে। কুরআনে

বর্নিত পরকালীন স্থায়ী জীবনের বিষয়টি ঐ ২০% ভাগের অন্তর্ভূক্ত, অনুদ্‌ঘাটিত একটি সত্য। যৌক্তিতা

এখানে তার সত্যতার দিকেই মত দেবে।

গ. ‘পরকাল দর্শণ’ ছাড়া শাস্তি ও মানবীক মূল্যবোধসমূহ সম্পূর্ণ অর্থহীন

ডাকাতি করা ভাল না মন্দ কাজ? ভারসাম্যপূর্ণ সাধারন একজন মানুষও বলবেন, এটা জঘন্য কাজ্‌ পরকালের

ভালো-মন্দ যে বিশ্বাস করে না সে কেমন করে একজন শক্তিশালী ও প্রভাবশালী অপরাধীকে বোঝাবে

যে, ডাকাতি একটি জঘন্য অপরাধ?

ধরা যাক, পৃথিবীতে আমি একজন শক্তিশালী অপরাধী , একই সাথে আমি একজন বুদ্ধিমান ও যুক্তি পরায়ন মানুষ।

আমি বলব ডাকাতি একটি ভালো কাজ কেননা এটা আমাকে বিলাস বহুল জীবন যাপন করার সহায়তা করছে- তাই

ডাকাতি আমার জন্য ভালো।

যদি কেউ আমার সামনে উপযুক্ত একটি যুক্তিও দাঁড় করিয়ে দেখাতে পারে যে, ডাকাতি আমার জন্য মন্দ

কেন? তাহলে সাথে সাথে একাজ আমি ছেড়ে দেব। মানুষ সাধারণত যে সব যুক্তি সামনে রাখে।

১.কেউ হয়তো বলবে যার সর্বস্ব ডাকাতি হয়ে গেছে সে সে সমস্যায় পড়বে

আমি অবশ্যই তারা সাথে একমত যে, যার ওপর ডাকাতি চালানো হয়েছে তার জন্য এটা মন্দ। কিন্তু এটা আমার

জন্য তো ভালো। আমি যদি হাজার ডলার ডাকাতি করে থাকি তাহলে অত্যন্ত আনন্দের সাথে কোনো

পাঁচতারা হোটেলে দু’চারবেলা খাবার খেতে পারবো।

২.তোমার ওপরেও কেউ ডাকতি চালাতে পারে

কেউ হয়তো বলবেন একদিন আমার সর্বস্বও ডাকাতি হয়ে যেতে পারে। আমার কাছে থেকে কেউ কিছু কেড়ে নিতে

পারবে না। কারন আমি নিজেই অনেক শক্তিশলী।অন্তত শ’খানেক বডিগার্ড আছে আমার । ডাকাতি আমি করি

আমার ঘরে কে ডাকাতি করবে?

একজন সাধারণ মানুষের জন্য ডাকাতি একটা ঝুঁকিপূর্ণ পেশা হতে পারে কিন্তু আমার মতো প্রভাবশালী মানুষের

৩.পুলিশ তোমাকে গ্রেফতার করতে পারে

কেউ হয়তো বলবেন পুলিশ তোমাকে একদিন ধরে ফেলবে। পুলিশ আমাকে ধরবে না। কারণ পুলিশকে আমি

রীতিমতো টাকা দেই। এমনকি শক্তিশালী এক মন্ত্রীকেও আমি বড় বড় চাঁদা দেই। হাঁ এ ব্যাপারে আমি একমত

যে, একজন সাধারন মানুষ ডাকাতি করলে সে ধরা পড়ে যেতে পারে এবং তার জন্য সে অবস্থা অত্যন্ত ভয়ংকর

হয়ে যাবে। কিন্তু আমার তো এধরণের কোনো ভয়ই নেই। ধরা পড়লেও সাথে সাথে আমি মুক্ত হয়ে যাবে এ

গ্যারান্টি আমার আছে।

যুত্তিপূর্ন একটা কারণ কেউ আমাকে দেখাক-কেন এটা আমার জন্য মন্দ এবং কেনই বা এ পেশা আমি ছেড়ে দেব।

৪.কেউ হয়তো বলবেন এটা ফাঁকা পয়সা, কষ্টার্জিত নয়

আমি তার সাথে সম্পুর্ন একমত- এটা খুব সহজে উপার্জিত টাকা। মূলত এটাই তো আসল কারণ যে জন্য আমে

ডাকাতি করি। যদি কোনো মানুষের সামনে উপার্জনের দু’টো পথ খোলা থাকে-একটা সহজ আর একটা কঠিন-

বুদ্ধিমান যে কোনো মানুষ সহজ পথটাকেই তো বেছে নেবে।

৫. এটা মানবতা বিরোধী

কেউ হয়তো বলবেন এটা মানবতা বিরোধী মানুষের জন্য মানুষের ভাবা উচিৎ। আমি তাদের কাছে পাল্টা প্রশ্ন

করব। মানবতার এ বিধান কে লিখেছে? কেন আমি তা মানতে যাব? এ আইন হতে পারে আবেগ প্রবন অনুভুতিশীল

মানুষের জন্য ভালো। কিন্তু আমি সঙ্গত যুক্তি ছাড়া কিছুই মানতে রাজি না- মানুষের ভাবনা আমি ভাবতে

যাবো কোন দুঃখে?

৬. এটা চরম স্বার্থপরতা

কেউ হয়তো বলবেন ডাকাতি একটি চরম স্বার্থপরতা। হাঁ একথা মানি, ডাকাতি একটা স্বার্থপর কাজ । তাহলে

আমি কি এমার স্বার্থ দেখব না? এটাতো আমাকে আমার জীবন ভোগের উপায় করে দিয়েছে!

১.যুক্তি দিয়ে ডাকাতিকে মন্দ প্রমাণ করা যাবে না

অতঃপর ডাকাতিকে মন্দ কাজ হিসেবে প্রমাণ করার সকল যুক্তি উপস্থাপন ব্যর্থ ও অকার্যকর প্রমানিত

হলো। এসব যুক্তির কথা একজন সাধারণ মানুষকে সন্তুষ্ট করতে পারে কিন্তু আমার মতো একজন সবল

প্রভাবশালী অপরাধীকে নয়। কোনো বিতর্কই শুধুমাত্র যুত্তির ওপর ভিত্তি করে দাঁড়িয়ে থাকতে পারেনা।

কাজেই পৃথিবী জুড়ে অসংখ্য অপরাধীর জয়জয়কারে অবাক হবারও কিছু নেই।

একইভাবে প্রতারণা, নারীধর্ষণ ইত্যাদি আমার মতো ব্যক্তির জন্য ভালো হিসেবেই বিবেচিত হবে এবং

যৌক্তিতার দিক দিয়ে এমন কোনো কারণ নেই যা আমাকে বোঝাতে পারে যে, এসব কাজ মন্দ।

২. একজন শক্তিধর প্রভাবশালী অপারাধীকেএকজন মুসলিম বুঝিয়ে নমনীয় করতে পারে

এবার একটু অন্যভাবে দেখা যাক। ধরুন আপনি এ পৃথিবীর একজন শক্তিশালী প্রভাবশালী অপরাধী। পুলিশ

আপনার বগল তলে। এমনকি দু’চারজন মন্ত্র-মিনিষ্টারও হাতের মুঠোয়। বহু চেলা চাতুন্ডা রয়েছে আপনাকে

পাহারা দেবার জন্য আর আমি একজন মুসলিম যে আপনাকে বোঝাতে সক্ষম হবো- ডাকাতি ধর্ষণ, প্রতারণা

ইত্যাদি জঘন্য কাজ।

এখন আমি যদি একই যুক্তিতর্ক তার সামনে রাখি একইভাবে সে উত্তর দেবে যেমনটা আগে সে দিয়েছে। একথা

সত্যি যে, অপরাদী অত্যন্ত যুক্তিবাদীএবং তার সকল যুক্তি সঠিক। কিন্তু তা কেবল কতখানি সত্য ও সঠিক

যখন সে একজন শক্তি ও প্রভাবশালী অপরাধী।

৩. প্রতিটি মানুষ ন্যায় ও সুবিচারের আকাঙ্ক্ষি

এমনকি এ সুবিচার যদি সে অপরের জন্য না চায়-নিজের জন্য তা অবশ্যই আশা করে। শক্তি ও প্রভাবের কারণে

অনেকে নেশা করে আর অন্যদের দুঃখ কষ্টের কারণ হয়। এই একই মানুষ ফোঁস করে উঠবে যদি তাদের প্রতি

কোনো অবিচার হয়। এধরনের মানুষের অণ্যের দুঃ-কষ্টের প্রতি কোনো অনুভূতি না থাকার কারণে তারা

ক্ষমতা ও প্রভাবের পূজা করে। এই ক্ষমতা ও প্রভাবের জন্য তারা যে শুধু অন্যের ওপরে অবিচার করতে পারছে

তা-ই নয় বরং অন্যে যাতে তাদের প্রতি এই একই আচারণ না করতে পারে তার প্রতিরোধও করছে।

৪. আল্লাহ মহাশক্তিমান এবং ন্যায়পরায়ণ

একজন মুসলমান হিসেবে আমি অপরাধিকে আল্লাহর অস্তিত্ত্ব সম্পর্কে সম্মত করাব যে, এই আল্লাহ তোমার

চাইতে অনেক অনেক বেশি শক্তির অধিকারী এবং একই সাথে তিনি ন্যায়পরায়ণও। জ্যেতির্ময় কুরআণ বলছেঃ

নিশ্চয়ই আল্লাহ অবিচার করেন না (কারো প্রতি) বিন্দু পরিমাণ।

৫. আল্লাহ আমাকে কেন শাস্তি দিচ্ছেন না?

অপরাধী, যুক্তিবাদী এবং বিজ্ঞান মনস্ক হবার কারণে কুরআনের বিজ্ঞান ও উত্তমতম ও যুক্তিসঙ্গত দলিল

প্রমাণ উপস্থাপনের পরে আল্লাহর অস্তিত্ত্বের ব্যাপারে তার কোন আপত্তি থাকল না। এখন সে হয়তো

প্রমাণ করে বসবে যে,আল্লাহ শক্তিমান এবং সুবিচারক হওয়া সত্ত্বেও তাকে কেন শাস্তি দিচ্ছেন না।

৬. যারা অবিচার করে তাদের শাস্তি হওয়া দরকার

প্রতিটি মানুষ, যে কোনো অবিচারের শিকার হয়েছে- তা আর্থিক দিক থেকেই হোক অধবা সামাজিক দিক থেকে-

ভূক্তবোগী প্রতিটি মানুষ চাইবে জালিমের শাস্তি হোক। প্রতিটি সাধারণ মানুষের আন্তরিক কামনা, ডাকাত-

ধর্ষককে উচিত শিক্ষা দেয়া হোক। যদিও অসংখ্য অপরাধি ধরাও পড়ছে, শাস্তিও পাচ্ছে কিন্তু তার চাইতে

আরো অনেক বেশি পরিমাণ মুক্ত থেকে সমাজে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে নিজের ফূর্তিময় বিলাসপূর্ন জীবন

যাপন করছে। যদি শক্তিশালী ও প্রভাবশালী কোনো ব্যক্তির ওপর অবিচার আপতিত হয় এমন একজনের

দ্বারা যে তার চাইতেও বেশি শক্তিধর। তখন এই অপরাধিও চাইবে যে, তার প্রতি অবিচারকারীর চরম শাস্তি

৭. এই জীবন পরকালীন স্থায়ী জীবনের জন্য পরীক্ষার অবকাশ মাত্র

পরকালের অনন্ত জীবনে কৃতকার্যতার সাথে প্রবেশের ছাড়পত্র পাওয়ার জন্য জীবনটা একটা

পরীক্ষা।জ্যোতির্ময় কুরআন বলছেঃ

যিনি সৃষ্টি করেছেন মৃত্যু ও জীবন, যেন তিনি পরীক্ষা করে দেখতে পারেন কাজে-কর্মে তোমাদের মধ্যে কে

সর্বোত্তম। তিনি তো মহাশক্তিমান ক্ষমা দানকারী। (সূরা আল-মুলকঃ২)

৮. চূড়ান্ত ফয়সালা শেষ বিচার দিনে

প্রতিটি প্রানকেই মৃত্যুর যাতনা ভোগ করতে হবে এবং অবশ্যই পুরোপুরি ভাবে বুঝিয়ে দেয়া হবে তাদের পাওনা

কেয়ামতের দিন। তখন যে রক্ষা পেলো আগুন থেকে এবং প্রবেশ করতে দেয়া হলো জান্নাতে নিশ্চিতভাবে সে-ই

লাভ করলো চূড়ান্ত সফলতা। আর কিছুই নয় এই পৃথিবীর জীবন, শুধু (ক্ষনিকের ) মায়া ও মোহময় আয়োজন।

(সূরা আল ইমরানঃ১৮৫)

ভালো মন্দের সবকিছু পরিমাপ করে দেখানো হবে শেষ বিচার দিনে। একজন মানুষের মৃত্যুর পরে তাকে পুনরায়

জীবিত করা হবে সর্বকালের সকল মানুষের সাথে শেষ বিচার দিনে। এটা খুবই সম্ভব যে, একজন মানুষ তার প্রাপ্য

শান্তির কিছু অংশ এই পৃথিবীতে পেলো। আর চূড়ান্ত শাস্তি অথবা পুরস্কার সে পাবে পরকালে।বিধাতা

প্রতিপালক একজন ডাকাত বা একজন ধর্ষককে পৃথিবীতেই কোনো শাস্তি নাও দিতে পারেন, কিন্তু শেষ বিচার

দিনে তাকে অবশ্যই সব কৃতকার্যের হিসেব দিতে হবে এবং সেই স্থায়ী পরকালে তাকে শাস্তি ভোগ করতে হবে।

অর্থাৎ মৃত্যুর পরে যে জীবন সেই জীবনে।

৯. মানুষের আইন হিটলারকে কি শাস্তি দিতে পারে?

হিটলার তার ভয়ঙ্কর ত্রাসের শাসনামলে ৬০ লক্ষ ইহুদিকে পুড়িয়ে মেরেছে। এখন পুলিশ যদি তাকে গ্রেফতার

করতো তাহলে মানুষের আইন ন্যায়সঙ্গত ভাবে তাকে কি শাস্তি দিত? সর্বোচ্চ শাস্তি তারা তাকে যা দিতে

পারত তাহলো সেই গ্যাস চেম্বারে খোদ হিটলারকে ঢুকিয়ে দিতে পারত। কিন্তু তাতে তো শুধুমাত্র একজন ইহুদী

হত্যার প্রতিশোধ হতো! বাকি যে ৫৯ লক্ষ ৯৯হাজার ৯শ ৯৯জন ইহুদী -তাদের হত্যার প্রতিশোধ কিভাবে

১০. শুধুমাত্র আল্লাহ পারেন হিটলারকে জাহান্নামে ফেলে ষাটলক্ষ বারের চাইতেও বেশি বার জ্বালাতে

জ্যোতর্ময় কুরআনে আল্লাহ বলেছেনঃ

যারা আমাদের আয়াতসমূহ প্রত্যাখ্যান করেছে খুব শিঘ্রই আমরা তাদেরকে আগুনে নিক্ষেপ করব। তাদের চামড়া

যখন পুড়ে গলে যাবে তখন তার বদলে আমরা তাদেরকে নতুন চামড়া দিয়ে দিব যেন তারা আযাবের স্বাদ বুঝতে

পারে। নিঃসন্দেহে আল্লাহ মহা শক্তিমান মহাজ্ঞানী। (৪:৫৬)

পরকালের অনন্ত জীবনে হিটরারকে একমাত্র আল্লাহই পারেন ষাট লক্ষ বার পুড়ে মরার স্বাদ কেমন তা বুঝিয়ে

১১. মানবীয় মূল্যবোধ অথবা ভালো ও মন্দের ধারনা-পরকালের নিশ্চিত আস্থা ছাড়া আদৌ কোনো মূল্য

যুক্তির কষ্টিপাথরে যাচাই করা সত্য এই যে, পরকালে যার দৃঢ় আস্থা নেই, মানবীয় মূল্যবোধ এবং ভালো ও

মন্দ কাজের পরিণতি এমন ব্যাক্তির কাছে প্রমাণ করা সম্পূর্ন অসম্ভব-এখানে যে অবিচার , জুলুম অত্যাচার

করেই যাচ্ছে। বিশেষ করে যদি সে ক্ষমতাবান হয়।

১৭. মুসলমানেরা এতভাগে বিভক্ত কেন? চিন্তাধারার বিভিন্নতার

প্রশ্নঃ মুসলমানের যেখানে এক এবং একই কুরআনের অনুসারী তাহলে মুসলমানদের মধ্যে এত বিভক্তি এবং

চিন্তাদারার এত বিভিন্নতা কেন?

ক. মুসলমানদের ঐক্যবদ্ধ থাকা উচিৎ

এটা অস্বীকার করার কোন উপায় নেই যে, আজকের মুলমান নিজেদের মধ্যেই অসংখ্য ভাগে বিভক্ত হয়ে আছে।

আর তার চাইতেও দুঃখজনক হলো এই বিভক্তি খোদ ইসলামের দ্বারা আদৌ স্বীকৃত নয়। ইসলাম বিশ্বাস করে

তার অনুসারীদের মধ্যে ঐক্য এবং একতার লালন করতে। জ্যোতির্ময়ী কুরআন বলছেঃ

এবং আকড়ে ধরো দৃঢ়তার সাথে সবাই মিলে আল্লাহর রজ্জুকে (যা তিনি ঝুলিয়ে রেখেছেন তোমাদের জন্য

কুরআনের আকারে) এবং নিজেরা বিভক্ত হয়ে যেও না।

এ আয়াতে যে রজ্জুর কাথা বলা হয়েছে সে রজ্জু কি বা কোন রজ্জু? জ্যোতীর্ময় কুরআন, মহাবিজ্ঞান আল

কুরআনই সেই আল্লাহর রজ্জু যা সকল মুসলমানের সম্মিলিতভাবে ধরে রাখা উচিত। ঐক্যের ব্যাপারে দ্বিগুন

গুরুত্ব দেয় হয়েছে। অর্থাৎ সবাই মিলে শক্ত করে ধরো বলার সাথে সাথেই বলা হয়েছে বিভক্ত হয়ো না।

কুরআন আরো বলছেঃ

আনুগত্য করো আল্লাহর এবং আনুগত্য করো রাসূলের। (৪:৫৯)

সকল মুসলমানের কুরআন ও বিশুদ্ধ হাদূসসমূহ অনুসরণ করা কর্তব্য এবং নিজেদের মধ্যে বিভক্ত হওয়া উচিত

খ. ফের্কাবাজী ও বিভক্তি ইসলামে নিষিদ্ধ

জ্যোতির্ময় কুরআন বলছেঃ

যারা নিজেদের দ্বীনকে খন্ড খন্ড করে দিয়েছে এবং দলে দলে বিভক্ত হয়ে পড়েছে তাদের সাথে তোমার এতটুকু

সম্পর্ক নেই। তাদের এসব ব্যাপার আল্লাহ কাছে ন্যাস্ত। অবশেষে তাদেরকে তিনি বলে দেবেন সেই সব সম্পর্কে

যেসব কাজ তারা করছিল। (সূরা আনআমঃ১৫৯)

এ আয়াতে আল্লাহ বলেছেন, তাদের থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে রাখতে যারা তাদের দ্বীনকে বিভক্ত করেছে এবং

বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়ে গেছে।

কিন্তু কেউ যখন কোনো মুসলমানকে জিজ্ঞেস করে তুমি কে? সাধারণ উত্তর হলো, আমি একজন সুন্নি অধবা

আমি শিয়া। অনেকেই নিজেদেরকে হানাফী অথবা শা’ফী অথবা মালেকী অথবা হাম্বলী ইত্যাদি হিসেবে পরিচিত হতে

গর্ববোধ করেন। কেউ আবার দেওবন্দী। কেউ ব্রেলোভী।

গ. আমাদের রাসূল ছিলেন একজন ‘মুসলিম’

এ ধরনের একজন মুসলমানকে কেউ যদি প্রশ্ন করে আমাদের প্রিয় নবী (সঃ) কি ছিলেন? তিনি কি একজন হানাফী

কথবা শাফী অথাবা হাম্বলী ছিলেন? না! তিনি ছিলেন একজন মুসলিম। তাঁর পূর্বে আগত আল্লাহর সকল নবী ও

রাসূলগণের মতো।

যেমন সূরা নিসা ৫২ নং আয়াতে বলা হয়েছে-ঈসা (আ) ছিলেন একজন মুসলিম। ৬৭ আয়াতে বলা হয়েছে- ইব্রাহীম না

ইহুদী ছিল না খ্রীষ্টান, সে ছিল একজন মুসলমান।

ঘ. কুরআন বলছে নিজেদেরকে মুসলিম বলে পরিচয় দাও

কেউ পরিচয় জানতে চাইলে তার বলা উচিত আমি একজন মুসলিম-না হানাফী না শাফী।

আর কে হতে পারে বক্তব্যে তার চাইতে উত্তম? যে (মানুষকে) আল্লাহর পথে আহ্‌বান করে আর যাবতীয় জীবন

কর্ম যেভাবে আল্লাহ করতে বলেছেন সেভাবে করে এবং বলে আমি তো আল্লাহতে সমর্পিতদের একজন। (মুসলিম)

কুরআন বলে আমি তাদেরই একজন যারা আল্লাহতে সমর্পিত। অন্য কথায় বলো, আমি একজন মুসলিম।

২. রাসূলুল্লাহ (স) অমুসলিম রাজা বাদশাহদের কাছে ইসলামের দাওয়াত দিয়ে চিঠি লিখেছিলেন। সেই সব চিঠিতে তিনি

সুরা আলে ইমরানের এই আয়াত উল্লেখ করেছিলেন।

তাহলে বলে দিন ওদেরকে তোমরা সাক্ষী থাকো একথার যে আমরা (কিন্তু) সর্বান্তকরনে আল্লাহতে

আত্মসর্ম্পনকারী‘মুসলিম’। (৩:৬৪)

ঙ. ইসলামের মহান ইমামগণের প্রতি শ্রদ্দা ও সম্মান

ইসললামের ইতিহাসে মহান ইমাম ও আলেমগনের প্রতি আমাদের সম্মানবোধ আন্তরিক হতে হবে। তাঁদের জীবন

নিংড়ানো জ্ঞান সাধনা মুসলিম জাতিকে জ্ঞান সম্পদে সম্পদশালী করেছে। নিঃসন্দেহে আল্লাহর দরবারে তাঁরা

পুরুষকৃত হবেন। সাধারণের মধ্যে কিউ যদি বিশেষ কোনো ইমামের রীতি পদ্ধতি অনুসরণ করেন, সেটা অবশ্যই

দোষের কিছু নয়। কিন্তু পরিচয়ের ক্ষেত্রে তাদের কারো নাম জড়িয়ে পরিচয় দেয়া এক ধরনের সংকীর্ণতার

প্রকাশ। যেমনটা করতে তাঁরা কেউ বলে জাননি। নবী রাসূলগনের মতো তাঁরাও ছিলেন শুধুমাত্র আল্লাহতে

সমর্পিত মুসলিম। কাজেই তাঁদের কারো অনুসারী হলেই পরিচয় বদলে যায় না। মুসলমানদের পরিচয় একটাই তারা

অনেকেই হয়তো তাদের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংকীর্ণ মানসিকতাকে চাপা দেবার জন্য সুনানে আবু দাউদে বর্নিত

৪৫৭৯ নং হাদীস খানি নিয়ে তর্কে লাফিয়ে পড়বেন। যা রাসূল (স) বলেছেন, আমার উম্মত ৭৩টি ভাগে বিভক্ত হয়ে

কিন্তু এ হাদীসখানি রাসূল (স) তাঁর উম্মতের অধঃপতনের চূড়ান্ত পর্যায়ে যেসব বিকৃতি দেখা দেবে তারই

অন্যতম একটি আগাম বার্তা বহন করছে। তিনি তো একথা বলেননি। যে মুসলমানরা এভাবে ফের্কায় ফের্কায়

ভাগ হয়ে যেতে হবে।

কুরআন যেখানে আমাদেরকে আদেশ করছে কোনো বিভক্তির সৃষ্টি করা যাবে না। অতএব যারা কুরআন ও শুদ্ধ

হাদিস সমূহের একনিষ্ঠ অনুসারী এবং কোনো ধরনের বিচ্ছিন্নতার না কারণ হয় না কাউকে উৎসাহিত করে

তারাই সঠিক পথে রয়েছেন।

তিরমিযির ১৭১ নং হাদীসে বলা হয়েছে রাসূল (স) বলেছেনঃ আমার উম্মত ৭৩ ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়বে। এর মধ্যে

শুধু একটি ছাড়া বাদ বাকি সব জাহান্নামী হবে। সাহবায়ে কেরাম জানতে চাইলেন ইয়া রাসূলুল্লাহ সেই শুদ্ধ দল

কোনটি হবে?রাসূল (স) বললেন, “যাদের কাছে আমি এবং আমার সঙ্গী সাথীরা অনুসরণীয় হবো।

আনুগত্য করো আল্লাহর এবং আনুগত্য করো রাসূলের” কুরআনের বহু জায়গায় এই একটি কথা মুসলমানদের

মনের মধ্যে স্থায়ী ভাবে বসিয়ে দেবার জন্য নানান ভাবে বলে দেয়া হয়েছে। কাজেই একজন মুসলমানের অনুস্মরনীয়

আদর্শ হচ্ছে কুরআন ও বিশুদ্ধ হাদীস। তারপর এ দুয়ের নির্দেশনা সমূহকে অনুশীলনীর পদ্ধতি হিসেবে সে যদি

কোনো বিশেষ আলেমকে অনুসরণ করতে চায় তাতে দোষের কিছু নেই। কিন্তু তা যদি আবার কোনো এক

পর্যায়ে গিয়ে খোদ কুরআন ও হাদীসের বিরুদ্ধে চলে যায় তাহলে তা যত বড় বিশেষজ্ঞ আলেমই হোকনা কেন্ দুই

কড়ি মূল্য রাখেন না।

প্রতিটি মুসলমান যদি তার সামর্থ অনুযায়ী কুরআন বুঝে পড়ার অনুশীলনী করে এবং সেখান থেকে পাওয়া

মূলনীতিসমূহ খোদ রাসূল (স) এর বাস্তবায়ন পদ্ধতি অনুযায়ী বাস্তবায়নের চেষ্টা করে তাহলে ইনশাআল্লাহ

একদিন এই বিভক্তি দূর হয়ে যাবে এবং আমরা ঐক্যবদ্ধ শক্তিশালী এক ‘উম্মাহ’ হয়ে আত্মপ্রকাশকরতে সমক্ষ

১৮. সকল ধর্মই তো ভালো ও কল্যাণের শিক্ষা দেয় তাহলে শুধু

ইসলামেরই অনুসরণ করতে হবে কেন?

প্রশ্নঃ সকল ধর্মই মুলত তার অনুসারীদেরকে ভালো ভালো কাজ করতে শিক্ষা দেয়। তা হলে শুধু ইসলামকে

অনুসরণ করতে বলা হচ্ছে কেন? যে কোনো একটি ধর্ম অনুসরণ করলে সমস্যা কোথায়?

ক. অন্যান্য ধর্মের সাথে ইসলামের মৌলিক পার্থক্য

মুলত প্রতিটি ধর্মই মানুষকে মন্দ দূর করে ভাল হবার পরামর্শ দেয়। কিন্তু ইসলামের পরিধি আরো ব্যাপক।

ইসলাম আমাদেরকে ন্যায়-পরায়নতা অর্জনের প্রকৃতিসম্মত পথ ও পদ্ধতি দেখিয়ে দেয় কিভাবে ব্যক্তি ও সমাজ

জীবন থেকে যাবতীয় মন্দ নির্মূল করা যায়। ইসলাম মানুষের স্বভাব প্রকৃতি ও সমাজের চিন্তা ভাবনা ও রুচি

অভিরুচিকে বিবেচনায় রাখে। ইসলাম খোদ সৃষ্টিকর্তা বিধাতা প্রতিপালক আল্লাহ তা‘আলার দেয়া মানুষের

জীবন যাপন পদ্ধতির দিক নির্দেশিকা। এ কারণে ইসলামকে ‘দ্বীনুল ফিৎরাহ’ বা মানুষের প্রকৃতি সম্মত জীবন

ব্যবস্থাও বলা হয়।

খ. যেমন ইসলামে আমাদেরকে চুরি, ডাকাতি পরিহার করতে বলার সাথে সাথে সে এ ও বলে দেয় যে,কেমন করে সমাজ

থেকে এ প্রবনতা নির্মূল করা যাবে।

১. বড় বড় সব ধর্মই শিক্ষা দেয় চুরি ডাকাতি মন্দ কাজ ইসলামের শিক্ষাও তাই। তাহলে অন্য ধর্মের সাথে

ইসলামের পার্থক্য কোথায়? পার্থক্যটা হলো চুরি ডাকাতি মন্দ কাজ এ শিক্ষার সাথে সাথে ইসলাম এমন একটি

সামাজিক অবকাঠামো নির্মাণের বাস্তব পদ্ধতি নির্দেশ করে যে সমাজে চুরি ডাকাতির প্রয়োজনই পড়বে না।

২. মানুষের অভাব দুর করতে ইসলাম যাকতের বিধান দিয়েছে।

ইসলাম বিধান দিয়েছে এমন ব্যক্তির জন্য যাকাতি বাধ্যতাম্যলক যার নিসাব পরিমান উদ্ধৃত্ত তাকে। অর্থাৎ

বাৎসরিক আয় ব্যায়ের পরে ৮৫ গ্রাম সোনা বা এর সমমূল্যের নগদ অর্থ অথবা অন্যান্য মাল পত্র উদ্ধৃত্ত

থাকবে। ২.৫% বা শতকারা আড়াই টাকা প্রতি চন্দ্র বৎসরের শেষে তাকে (অভাবগ্রস্তদের দিয়ে দিতে হবে)।

পৃথিবীর প্রতিটি সম্পদশালী ব্যক্তি যদি সত্যি সত্যিই এই যাকাত আদায় করে তাহলে দারিদ্রতা বলতে পৃথিবীতে

কিছু থাকবে না। তখন ভিক্ষা দিতেও একজন ভিখারী খুজে পাওয়া যাবে না। (এই হলো ইসলামী অর্থনীতির মাত্র

একটি কার্যক্রম। শুধুমাত্র এই যাকাত ব্যাবস্থাটুকু কার্যকর হলে হাত পাতার লোক খুঁজে পেতে হবে।)

৩. চুরি ডাকাতির শাস্তি হাত কেটে ফেলা

চোর ডাকাত প্রমাণিত হলে তার হাত কেটে ফেলার আদেশ দিয়েছে ইসলাম। জ্যোতীর্ময় কুরআন বলছেঃ

চোর অথবা চোরনী, তোমরা তাদের হাত কেটে দাও এটাই শাস্তি যে কর্ম তারা করেছে তার দৃষ্টান্তমূলক

(দেয়া) আল্লাহর তরফ থেকে। আর আল্লাহ মহা মক্তিমান জ্ঞানপূর্ন।(সূরা মায়েদাহঃ৩৮)

৪. ইসলামী বিধি বিধান প্রতিষ্ঠিত হলে তার কল্যানী ফলাফল হাতে হাতে পাওয়া যায়

আমেরিকা পৃথিবীর উন্নত দেশগুলোর মধ্যে উন্নততম। দুর্ভাগ্যজনক ভাবে চুরি, ডাকাতি ও অন্যান্য অপরাধের

ক্ষেত্রে তার আছে সর্বোচ্চ রেকর্ড। এহেন আমেরিকায় যদি ইসলামের পূর্নাঙ্গ বিধান প্রতিষ্ঠিত হয়-

একদিকে প্রতিটি সার্মথ্যবান ব্যক্তি রীতিমতো যাকাত আদায় করছে অপর দিকে নারী বা পুরুষ চোর

প্রমাণিত হলে তার শাস্তি হাত কেটে ফেলা। তাহলে আমেরিকায় চুরি, ডাকাতির বর্তমান প্রবণতা বাড়বে, না একই

রকম থাকবে, নাকি একেবারে কমে যাবে? সঙ্গত ভাবেই তা কমে যাবে।তদুপরি এই ধরনের কঠিন আইন থাকলে

অনেক স্বভাবের চোরও নিজেকে এই ভয়ঙ্কর পরিণতি থেকে রক্ষা করতে চেষ্টা করবে। অর্থাৎ চুরি ডাকাতি

প্রায় বিলুপ্ত।

একথা মানতেই হবে যে, পৃথিবীব্যাপী চুরি ডাকাতির বর্তমান যে হার তাতে হাত কাটা আইন চালু হলে লক্ষ লক্ষ

লোক এমন দেখা যাবে যাদের হাত কাটা। বিষয়টা হলো যে মুহুর্তে এই আইন ঘোষনা করা হবে তার পরের মুহুর্ত

থেকেই এ প্রবণতা অত্যন্ত দ্রুততার সাথে কমে আসতে থাকবে। পেশাদারী চোরও এ পথে পা ফেলার আগে একবার

ভেবে নেবে ধরা পড়লে তার পরিনতি কি হবে। শাস্তির ভয়াবহতাই চোরের ইচ্ছাকে দমন করার জন্য যথেষ্ট।

তখন নিতান্ত দুরাত্মা ও দুর্ভাগা ছাড়া এ কাজ আর কেউ করবে না সামান্য কয়েকটি লোকের হয়তো হাত কাটা

যাবে কিন্তু কোটি কোটি মানুষ লাভ করবে নিরাপত্তা, শান্তি এবং সর্বস্ব হারাবার ভয় থেকে মুক্তি।

ইসলামী বিধান এই রকম বাস্তবধর্মী এবং প্রত্যক্ষবাবে ফলদায়ক

গ. যেমন ইসলাম নিষিদ্ধ করেছে নারী ধর্ষণ ও উৎপীড়ন। সাথে সাথে কার্যকর করতে বলেছে নারী ও পুরুষের

পারস্পরিক সম্মান ও মর্যাদা রক্ষায় উভয়ের কঠোরভাবে পালনীয় হিজাব বা পর্দা এবং সাব্যস্ত ধর্ষকের

শাস্তি মৃত্যুদন্ড।

১. ধর্ষণ ও উৎপীড়নের শেকড় শুদ্ধ নির্মূল করার পরামর্শ দিয়েছে

বড় বড় সকল ধর্ম নারী ধর্ষণ ও উৎপীড়ন জঘন্য অপরাধবলে ঘোষণা করে। ইসলামের শিক্ষাও তাই। তাহলে

কি পার্থক্য ইসলাম ও অন্যান্য ধর্মের? পার্থক্যের বিষয়টা হলে ইসলাম শুধুমাত্র নারী মর্যাদার ওয়াজই করেনা

বা ধর্ষণ ও উৎপীড়ণকে ঘৃনার সাথে জঘন্য অপরাধ হিসেবে পরিত্যাগ করতেই বলে না। সাথে সাথে সুস্পস্ট

নির্দেশনাও দেয় কিভাবে সমাজ থেকে এই অপরাধ সম্পূর্ন বিলুপ্ত হয়ে যাবে।

২.পুরুষের পর্দা

হিজাব বা পর্দা ইসলামের একটি বিধান। জ্যোতির্ময় কুরআন প্রথম উল্লেখ করেছে পুরুষের পর্দা। তারপরে তা

নারীর জন্য।

(হে রাসূল!) মোমেন পুরুষদের বলোঃ তারা যেন নিজেদের চোখকে বাঁচিয়ে চলে। এবং নিজেদের লজ্জাস্থান সমূহ

হেফাজত তরে। এটা তাদের আরো পবিত্র হয়ে ওঠার জন্য অত্যন্ত কার্যকর। (তাদের চরিত্র নির্মাণের জন্য)

যা কিছুই তারা করে অবশ্য অবশ্যই আল্লাহ সে সব কিছু সম্পর্কেই খবর রাখবেন। (সূরা নূরঃ ৩০)

যে মুহুর্তে একটি পুরুষ একজন নারীর প্রতি দৃষ্টিপাত করলো যদি কোনো ধরনের অশ্লিল চিন্তা মাথায় এসে

যায় এই ভয়ে সাথে সাথে তার দৃষ্টি নামিয়ে নেবে।

৩. নারীর পর্দা

কুরআন নারীর পর্দা সম্পর্কে এভাবে বরেছেঃ

আর (হে নবী) মোমেন স্ত্রীলোকদের বলুন! তারা যেন নিজেদের চোখ অবনত রাখে এবং নিজেদের লজ্জাস্থান

সমূহের যথাযথ সংরক্ষণ করে। আর যেন প্রদর্শনী না করে তাদের রুপ-সৌন্দর্য ও অলংকারের। তবে এ সবের

মধ্যে যা অনিবার্যভাবে প্রকাশ পেয়ে যায়। আর তারা যেন ঝুলিয়ে দেয় তাদের ওড়না তাদের বুকের ওপর। আর

তারা প্রকাশ করবে না তাদের রুপ-সৌন্দর্য তাদের স্বামী অথবা তাদের পিতা অথবা তাদের স্বামীদের

পিতা (শ্বশুর) অথবা তাদের পুত্র।(সূরা নূরঃ৩১)

নারীর জন্য হিজাবের পরিধি তার সম্পূর্ণ দেহ আর্বত থাকতে হবে ঢিলেঢালা কাপড়ে। শুধু কব্জী পর্যন্ত হাত এবং

মুখ মন্ডল খোলা থাকতে পারে যদি তারা চায়, তা না হলে তাও ঢেকে নিতে পারে। অনেক ইসলামী বিশেষজ্ঞ

মুখমন্ডল ঢাকারও পরামর্শ দেন।

৪. হিজাব উৎপীড়ন থেকে রক্ষা করে

নারীকে কেন আল্লাহ হিজাব ধারণ করতে বরেছেন কুরআনে তা এভাবে বলা হয়েছে

হে নবী! আপনার স্ত্রীগণ ও কন্যাগণ এবং ঈমান গ্রহণকারী নারীদেরকে বলে দিন তারা যেন ঝুলিয়ে দেয়া তাদের

নিজেদের ওপর তাদের বড় চাগর জাতীয় কিছু (যখন বাইরে যাবে)। এটা তাদের পরিচিতির জন্য ন্যুনতম (পোষাক)

তাহলে তারা আর উৎপীড়িত হবে না। আর আল্লাহ তো আছেনই ক্ষমা দানকারী দয়াময়। (সূরা আহযাবঃ ৫৯)

কুরআন বলে, নারীকে এই কারণে হিজাব পড়তে বলা হয়েছে যেন তারা রুচিশিলা মহিলা হিসাবে পরিচিত হয়। এটা

তাদেরকে উৎপীড়ন থেকে রক্ষা করবে।

ধর্ষণের সর্বোচ্চ রেকর্ড

আমেরিকায় ১৯৯০ সালে এফ, বি, আই এর রিপোর্ট অনুযায়ী ১,০২,৫৫৫ টি ধর্ষনের ঘটনা ঘঠেছে। মন্তব্যে বলা

হয়েছে আনুমানিক সর্বোচ্চ ১৫ শতাংশ ঘটনার অভিযোগ করা হয়। তাহলে সত্যিকারের পরিমাণ বের করতে হলে

৬.২৫ দিয়ে গুন করতে হবে দাঁড়ালো ৬,৪০,৯৬৮ এ সংখ্যাকে ৩৬৫ দিয়ে ভাগ করলে প্রতিদিন ১৭৫৬ টি ধর্ষণের

ঘটনা আমেরিকায় ঘটছে।

আমেরিকার ডিপার্টমেন্ট অব জ্যাস্টিস এর ন্যাশানাল ক্রাইম ভিকটিমাইজেশন সারভে ব্যুরো অব জাস্টিস এর

রিপোর্ট অনুযায়ী ১৯৯৬ সালে ৩,০৭,০০০ ধর্ষণের অভিযোগ রেকর্ড করা হয়েছে। তারপর বলা হয়েছে সংঘটিত

ঘটনার সর্বোচ্চ ৩১ শতাংশ অভিযোগ দায়ের করা হয়, তাহলে ৩,০৭,০০০ * ৩,২২৬ =৯,৯০,৩২২ টি ধর্ষনের

ঘটনা ১৯৯৬ সালে ঘটেছে। প্রতিদিন ২৭১৩ অর্থাৎ প্রতি ৩২ সেকেন্ড পৃথিবীর সভ্যতম দেশে একজন নারী

ধর্ষিত হয়। ১৯৯০ থেকে ১৯৯৬ এর এই পার্থক্য লক্ষ্য করার মতো। মনে হয় আমেরিকার ধর্ষকরা দিন দিন

শক্তিশালী হয়ে উঠছে।

এফ , বি, আই এর রিপের্টে বলা হয়েছে মাত্র ১০ শতাংশ ঘটনার অভিযুক্তকে গ্রেফতার করা সম্ভব হয়। অর্থাৎ

সংঘটিত ঘটনার মাত্র ১.৬% ভাগ। এদিকে অভিযুক্তদের ৫০ শতাংশ বিচারের আগেই বেরিয়ে যায়। তার মানে

০.৮% ভাগ ধর্ষক বিচারের সম্মুখীন হয়। অন্য কথায় কোনো ধর্ষক ১২৫ জন নারীকে ধর্ষণ করলে এর

মধ্যে তার ধরা পড়া শাস্তি পাওয়ার সম্ভাবনা মাত্র একবার। অনেক ধর্ষণকারী পুরুষ এটাকে একটা নিশ্চিন্ত

বাজী ও জুয়ার মতো ধরে নিতে পারে। কেননা ১২৫ বারে ধরা পড়ে শাস্তি পাওয়ার সম্ভাবনা মাত্র একবার।

রিপোর্টে আরো বলা হয় ০.৮ শতাংশের যারা বিচারের সম্মুখীন হয় তাদরে ৫০% শতাংশেই এক বছরের

কম, কারা ভোগ করে। যদিও আমেরিকার আইনে তার বিধান আছে ৭ বছরের। ধর্ষনের দায়ে প্রতিবার ধরা পড়লে

বিচারকরা তাদের প্রতি কোমল দন্ডের রায় দেন। ভেবে দেখার মতো বিষয় বটে! একজন ধর্ষক ১২৫ বার

ধর্ষণ করলে, ধরা পড়র সম্ভাবনা মাত্র একবার। আর ধরা পড়লে শাস্তির সম্ভাবনা মাত্র কয়েক মাস।

ঘ. মানবীয় সমস্যায় ইসলামের সমাধান বাস্তব মুখী

ইসলাম মানুষের জন্য সর্বশ্রেষ্ঠ জীবন্তযাপন পদ্ধতি। কেননা এর শিক্ষা অকার্যকর তত্ত্বাগত বাগাড়ম্বর

নয় বরং মানুষের যাবতীয় সমস্যার নগদ ও বাস্তব সমাধান। স্বতন্ত্র ব্যক্তি ও সমাজিক সমস্যা, উভয়

ক্ষেত্রেই ইসলামে প্রত্যক্ষ ফলাফর অর্জন করে। ইসলাম একারণেও শ্রেষ্ঠতম জীবন পদ্ধতি যে, এটা বাস্তব

সম্মত বিশ্বজনীন ধর্ম। কোনো জাতি অথবা জাতীয় জনগোষ্ঠীর মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়।

১৯. ইসলাম আজকের মুসলমানদের মধ্যে আকাশ ও পাতালের পার্থক্য

প্রশ্নঃ ইসলাম যদি শ্রেষ্ঠতম ধর্ম হয় তাহলে অসংখ্য মুসলমান কেন এত অসৎ অবিশ্বস্ত এবং অপরাধ জগতের

সাথে এমনভাবে জড়িত ?

ক. প্রচার মাধ্যম

১. ইসলাম শ্রেষ্ঠতম ধর্ম এতে সন্দেহের কোনো অবকাশ নেই। কিন্তু প্রচার মাধ্যমগুলো সব পশ্চিমাদের

হাতে- যারা ইসলামকে ভয় পায়। বিরামহীন ভাবে ওদের প্রচার যন্ত্রগুলো ইসলামের বিরুদ্ধে প্রচার করে যাচ্ছে

এবং ছেপে যাচ্ছে। হয় তারা ভুল তথ্য দিচ্ছে অথবা ভুল তত্ত্ব নিচ্ছে অথবা ইসলামের আংশিক সত্যকে বিরাট

করে তুলে ধরছে।

২. পৃথিবীর কোথাও কোনো বোমা ফাটলে কোনো তথ্য প্রমাণ ছাড়াই এর দায় মুসলমানদের ঘাড়ে চাপিয়ে

দেয়া হবে। এটাই হবে সংবাদের শিরোনাম। পরবর্তীতে যদি খুঁজে পাওয়া যায় যে, কোনো অমুসলিম এর জন্য

দায়ি-তখন সে সংবাদটা আর উল্লেখ করার মতো খবর থাকবে না।

৩. পঞ্চাশ বছর বয়সী কোনো মুসলিম যদি ১৫ বছরের এক যুবতীকে তার সম্মতিক্রমেও বিবাহ করে তা চলে

আসবে পত্রিকার প্রথম পাতায়। অথচ পঞ্চাশ বছরের কোনো অমুসলিম যদি ছয় বছরের কোনো ধর্ষণও

করে তাহলে সেটা হয় যাবে ভেতরের পাতার অনুল্লেখযোগ্য কোনো খবরের মতো। আমেরিকায় প্রতিদিন

২৭১৩ ধর্ষণের ঘটনা ঘটে, কিন্তু প্রচার মাধ্যমের জন্য এটা আদৌ কোনো খবর নয়। যে কোনো সময় যে

কোনো নারী কোনো দুর্বৃত্তের দ্বারা ধর্ষিত হতে পারে- এটা বোধ হয় আমেরিকান নারীদের জন্য একটা

রোমাঞ্চকর অনুভূতি।

খ. কালো ভেড়া সব পালেই আছে

এটা আমাদের ভালো করেই জানা আছে যে, কিছু মুসলিম অসৎ, চরিত্রহীন, প্রতারক ইত্যাদি। কিন্তু প্রচার

মাধ্যম তা এমনভাবে প্রচার করে যে, এ ধরনের কাজ শুধু মুসলমানরাই করে। সমাজের কলঙ্ক সব সমাজেই আছে।

গ. সামগ্রীকভাবে মুসলমানরাই শ্রেষ্ঠ

মুসলিম সমাজে এসব কলঙ্কিত লোকজন থাকা সত্ত্বেও পৃথিবীর বুকে মুসলমানরাই শ্রেষ্ঠ সমাজের অধিকারী।

সামগ্রীকভাবে আমরাই “নেশামুক্ত” বৃহত্তর সমাজ। যৌথভাবে আমরা এমন একটি সমাজ যারা পৃথিবীতে

সবচাইতে বেশি দান-দক্ষীনা করে থাকি। সামগ্রীকভাবে পৃথিবীতে এমন কোনো সমাজ নেই যেটা মুসলমানদের

সাথে একটু তুলনা করে দেখাতে পারে, যেখানে মানবীয় মর্যদাবোধ, সংযম, সহনশীলতা, মূল্যবোদ এবং নীতি-

নৈতিকতা ও স্বভাব-চরিত্র ইত্যাদির প্রশ্ন ওঠে।

ঘ . একটি গাড়িকে তার ড্রাইভার দিয়ে বিচার করবেন না

‘মার্সিডিস্‌’ কোম্পানীর নতুন বেরিয়ে আসা লেটেস্ট মডেলের একটি গাড়ী যদি আপনি দেখে নিতে চান এবং চালকের

আসনে এমন একজন লোককে বসিয়ে দিলেন যে ভালো ড্রাইভিং জানেনা। সে যদি ওটাকে নিয়ে দুম করে কোথাও

লাগিয়ে দেয় তাহলে আপনি কাকে দোষ দেবেন- গাড়ীটিকে না ড্রাইভারকে!

গাড়িটি সম্পর্কে জানার জন্য আপনার উচিৎ ছিল ওটার ক্যাটালগ ও ম্যানুয়েল নিয়ে একজন বিশেষজ্ঞের সামনে

বসে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে সব জেনে নেয়া। চলার ধরন, গতী, জালানী খরচ, দুর্ঘটনা কবলিত হলে তা থেকে সুরক্ষার জন্য

কি কি ব্যাবস্থা নেয়া হয়েছে ইত্যাদি ইত্যাদি। ড্রাইভারকে দিয়ে গাড়ীর আসল মূল্যমান যাচাই করা যায় না।

টাকার জোরে অনেক কোটিপতির ছেলে বিশ্বসেরা কোম্পানীর গাড়ি কিনে দু’দিনেই বারোটা বাজিয়ে ছেড়ে

একইভাবে জন্মগতভাবে পাওয়া ইসলাম নিয়ে আজকের মুসলমানরা যা করছে তাতে তার বাহ্যিক অবয়ব দুমড়ে মুচড়ে

এমন ভয়ঙ্কর আকার ধারণ করেছে যা দেখে নতুন কোনো ক্রেতা দু’পা এগোলে দশ পা পিছিয়ে যায়-একথা

অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই। কিন্তু একজন মানুষ হিসেবে যিনি জীবনের পথটা সুন্দরভাবে পাড়ি দিয়ে

সঠিক গন্তব্যে নির্বিঘ্ন পৌঁছাপতে চান তাকে তো সর্বোত্তম গাড়িটি খুঁজে বের করতেই হবে এবং গ্রহণ

করতে হবে গাড়ি চেনার সঠিক পদ্ধতি, অর্থাৎ তার ম্যানুয়াল ও ক্যাটালগ ধরে বিশেষজ্ঞের কাছে থেকে

বিস্তারিত জেনে নিতে হবে।

খোদ সৃষ্টিকর্তা বিধাতা প্রতিপালক আল্লাহ তা’য়ালা রচিত মানব-জীবন ম্যানুয়েল, ‘আলকুরআন’ এবং তাঁরই

নির্বাচিত শ্রেষ্টতম নমুনা-মানুষ মুহাম্মদ (স) নির্মিত ক্যাটালগ বিশুদ্ধ হাদীস সমূহ ইসলামকে চেনা ও জানার

একামত্র মাধ্যম।

ঙ. ইসলামকে বিচার করতে হবে তার বাস্ত- বায়নকারী মুহাম্মাদ (স)- এর মাধ্যমে। বিশ্ববরণ্য মুসলিম

ঐতিহাসিকগণের পাশাপাশি কিছু অমুসলিম ঐতিহাসিক রয়েছেন যারা কোনো প্রভাবে প্রভাবিত না হযে নিতান্ত

সততার সাথে মানবেতিহাসের সেবা করেছেন। তাদের মধ্যে অন্যতম মাইকেল এইচ হার্ট তার রচিত ‘দি

হানড্রেড’ গ্রন্থে মানবেতিহাসের শ্রেষ্ঠতম মানুষ হিসেবে এক নম্বর দিয়ে প্রথমেই যার নামটি লিখেছেন, তিনি

মুহাম্মদ (স) । থমাস কার্লাইল এবং লা-মর্টিন এর মতো ব্যক্তিত্বগণও তাদের রচনায় ইসলামের নবী ও রাসূল

মুহাম্মাদ (স)-এর প্রতি প্রভুত সম্মান প্রদর্শন করেছেন।

২০. অমুসলিমদের কাফের বলা

প্রশ্নঃ মুসলমানরা কেন অমুসলিমদের কাফের বলে?

কাফের মানে যে প্রত্যাখ্যান করে

কাফের শব্দটি মূল শব্দ ‘কুফর’ থেকে উৎপন্ন। যার মানে গোপন করা, আড়াল করা, অথবা প্রত্যাখ্যান করা।

ইসলামী পরিভাষায় কাফের বলা হয় সেই লোককে যে ইসলামের মহাসত্যকে গোপন করে, আড়াল করে বা

প্রত্যাখ্যান করে এবং এমন এক ব্যক্তি, যে ইসলামকে প্রত্যাখ্যান করে তাকে বাংলায় অমুসলিম এবং

ইংরেজীতে ‘ননমুসলিম’ বলা হয়।

যদি কোনো অমুসলিম তাকে অমুসলিম অথবা কাফের বলাকে গালি মনে করেন তা হলে ইসলাম সম্পর্কে তার ভুল

ধারণা ছাড়া এটাকে আর কিছুই বলা যায় না। ইসলাম ও ইসলামী পরিভাষা সম্পর্কে ভালো করে জেনে নেবার জন্য

তাকে ইসলামের মূল উৎস কুরআন ও বিশদ্ধ হাদীস থেকে জ্ঞান লাভ করতে হবে। তখন তিনি বুঝতে পারবেন এটা

গালি তো নয়ই বরং যথাযোগ্য পারিভাষা ব্যবহারে জন্য ইসলামকে ধন্যবাদ না জানিয়ে পারবেন না।

লেখকঃ ডঃ জাকির নায়েক

95
Allah: My belief / His position in the description of Al-Quran
« on: June 13, 2015, 02:10:36 PM »
আল্লাহর অবস্থান বিবরণে আল কুরআন

সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্য যিনি মানব ও জিন জাতিকে তাঁর একত্বটা ঘোষণা করার জন্য সৃষ্টি করেছেন।

সলাত ও সালাম বর্ষিত হোক আমাদের নাবী ও রাসূল মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের) উপর যিনি

তাঁর উম্মতের কাছে আল্লাহর একত্বতার বিস্তারিত জ্ঞান বর্ণনা করে গেছেন। আরও সলাত ও সালাম বর্ষিত

হোক তাঁর পরিবার ও সাথীগণের উপর যারা তাঁর কাছ থেকে তাওহীদের সঠিক জ্ঞান অর্জন করেছিলেন।

অতঃপর হে সম্মানিত পাঠক ও পাঠিকাগণ! পরকালে মুক্তি পেতে হলে অবশ্যই সঠিক ইসলামী আক্বীদা জানতে ও তার

উপর আমল করতে হবে। অন্যথায় পরকালে মুক্তি পাওয়া যাবে না। এ সঠিক আকীদার অনেক মাসআলা রয়েছে।

তন্মধ্যে ‘আল্লাহ কোথায়?’ এটিও একটি আকীদার গুরুত্বপূর্ণ মাসআলা, যাতে ভ্রান্ত দল জাহমিয়াসহ আরও বহু

দল পথভ্রষ্ট হয়েছে। আমি আল্লাহর নিন্মের বাণীর উপর আমল করত উক্ত গুরুত্ব পূর্ণ মাস’আলাটি সম্মানিত

পাঠক ও পাঠিকাগণের জন্যে এখানে আল কুরআনের আলোকে তুলে ধরলাম, যাতে তারা এর দ্বারা উপকৃত হতে পারে

এবং সূফীদের সর্বেশ্বরবাদের ভ্রান্ত বিশ্বাস (আল্লাহ নিরাকার ও সর্বত্র বিরাজমান) থেকে বাঁচতে পারে।

সূফীদের সর্বেশ্বরবাদের অর্থ হলো: তাদের নিকট খালিক – সৃষ্টিকারী আর মাখলূক্- সৃষ্টি জীব এর মধ্যে কোন

পার্থক্য নাই। সবই মাখলূক–সৃষ্টি জীব, আর সবই ইলাহ-উপাস্য।

আল্লাহ তা’আলা বলেন:

وَإِذْ أَخَذَ اللَّهُ مِيثَاقَ الَّذِينَ أُوتُوا الْكِتَابَ لَتُبَيِّنُنَّهُ لِلنَّاسِ وَلَا تَكْتُمُونَهُ فَنَبَذُوهُ وَرَاءَ ظُهُورِهِمْ وَاشْتَرَوْا بِهِ ثَمَنًا قَلِيلًا فَبِئْسَ مَا يَشْتَرُونَ

“(স্মরণ কর সেই সময়ের কথা) যখন আল্লাহ তা’আলা আহলু কিতাবদের নিকট থেকে এই মর্মে দৃঢ় অঙ্গীকার

নিয়েছিলেন যে, তোমরা অবশ্যই এটি তথা তাওরাত ও ইঞ্জিল মানুষের কাছে বর্ণনা করবে এবং তোমরা তা

গোপন করবে না। অতঃপর তারা সে অঙ্গীকারকে তাদের পিছনে ছুড়ে ফেলে দিল এবং তার বিনিময়ে সামান্য অর্থ

গ্রহণ করল। কত নিকৃষ্টতম তাদের ক্রয় কৃত বস্তু।” (সুরা আলি ইমরান আয়াত: ১৮৭)

আর সে মাস’আলাটির ব্যাপারে আহলুস্ সুন্নাত ওয়াল জামা’আতের আলিম ও অনুসারীগণের আক্বীদা বা বিশ্বাস

হলোঃ তারা সুদৃঢ় বিশ্বাস করেন যে, নিশ্চয়ই আল্লাহ তা’আলা স্বীয় সত্ত্বায় ও নিজ গুণাবলীসহ আরশের উপর

সমুন্নত। সকল সৃষ্টি জীবের উপর সমুন্নত। সকল সৃষ্টি জীব হতে আলাদা ও পৃথক। আহলুস্ সুন্নাহ ওয়াল

জামা’আতের লোকেরা ভ্রান্ত জাহমিয়াদের ন্যায় আকীদাহ পোষণ করেন না। তারা বলে যে, আল্লাহ তাঁর সৃষ্টি

জীবের সাথে সর্বত্র বিরাজমান আছেন। আহলে সুন্নাতের আলেমগণ এমন ভ্রান্ত কথা বিশ্বাস করেন না।

আর যারা জাহমিয়াদের মত বলবে যে আল্লাহ তাঁর সৃষ্টি জীবের সাথে জমিনে আছেন তারা পথভ্রষ্ট ও কাফির হয়ে

যাবে। এতে কোন সন্দেহ নেই। কারণ তাদের এ আক্বীদা কুরআন, সহীহ হাদীস, সাহাবা, তাবেঈন ও ইসলামের

ইমামগণের বিশ্বাসের পরিপন্থী।

এখানে একটি সংশয়ের নিরসন করা দরকার যে কারণে জাহমিয়া ও সূফীরা বিপথগামী হয়েছে। আর তা হলোঃ আল্লাহ

তা’আলা কুরআনের কিছু আয়াতে বলেছেন যে তিনি সৃষ্টি জীবের সাথে আছেন যেমন বলেছেন:

 ”তিনি তোমাদের সাথে আছেন তোমরা যেখানেই থাক।” (সূরা হাদীদ আয়াত: ৪)

তারা এ আয়াত ও এর সমার্থ বোধক অন্যান্য আয়াত হতে বুঝেছেন যে তিনি সস্তায় সৃষ্টি জীবের সাথে আছেন।

কিন্তু তাদের এ বুঝ কুরআন, সহীহ হাদীস, সাহাবী, তাবেঈ ও ইসলামের ইমামগণের বিশ্বাসের পরিপন্থী। এ

আয়াতগুলোর সঠিক তাফসীর বা ব্যাখ্যা নিন্মরূপঃ

তিনি আরশের উপর সমুন্নত থেকে তাঁর সৃষ্টি জীবের সাথে আছেন- এর অর্থ হলোঃ তিনি সৃষ্টি জীবের অবস্থাসমূহ

জানেন, তাদের কথাসমূহ শুনেন, তাদের কর্মসমূহ দেখেন, তাদের বিষয় সমুহ পরিচালনা করেন, দরিদ্রকে রুজি দান

করেন, ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ করে দেন, যাকে ইচ্ছা রাজত্ব দান করেন, যার কাছ থেকে ইচ্ছা রাজত্ব কেড়ে

নেন, যাকে ইচ্ছা সম্মান দান করেন, যাকে ইচ্ছা অপমান করেন, তাঁরই হাতে সকল কল্যাণ এবং তিনি সব কিছুর উপর

ক্ষমতাবান।

• আহলুস্ সুন্নাহ ওয়াল জামা’আহ এদের আকীদা হলো আল্লাহ আরশের উপর সমুন্নত। তারা তাদের এ আকীদার

উপর আল কুরআনের নিন্মের আয়াত সমূহ দ্বারা প্রমাণ গ্রহণ করেন।

১। আল্লাহ তায়ালা বলেন:

“দয়াময় আল্লাহ আরশের উপর সমুন্নত হয়েছেন।” (সূরা ত্বহা আয়াত: ৫)

{اسْتَوَى} ইস্তাওয়া এর অর্থ:

প্রখ্যাত তাবিঈ আবুল আলিয়াহ বলেছেন: ইস্তাওয়া অর্থ ইরতাফা’য়া। অর্থাৎ তিনি উঁচু হল। ইস্তাওয়া ইলাস্

সামায়ে এর অর্থ: তিনি আকাশের উপর আরশ এর উপর সমুন্নত হলেন।

প্রখ্যাত তাবিঈ মুজাহিদ বলেছেন: ইস্তাওয়া অর্থ ‘আলা। এর অর্থ সে সমুন্নত হল। ‘আলা আলাল আরশে এর

অর্থঃ তিনি আরশের উপর সমুন্নত হলেন। দেখুন: সহীহ বুখারী। (বাবু ওয়া কানা আরশুহু ‘আলাল মায়ে অর্থাৎ তাঁর আরশ পানির উপর আছে।)

হে প্রিয় পাঠক ও পাঠিকাগণ! কুরআনে ব্যবহৃত সকল ইস্তাওয়া ক্রিয়ার অর্থ: তিনি আরশের উপর উঁচু হলেন বা

সমুন্নত হলেন। ইস্তাওয়া ক্রিয়াটি কুরআনে মোট নয়বার ব্যবহৃত হয়েছে। আর আরশ শব্দটি মোট বিশবার

ব্যবহৃত হয়েছে।

وَهُوَ اللَّهُ فِي السَّمَاوَاتِ وَفِي الْأَرْضِ يَعْلَمُ سِرَّكُمْ وَجَهْرَكُمْ وَيَعْلَمُ مَا تَكْسِبُونَ

“আল্লাহ তিনিই উপাস্য আসমানে এবং জমিনে। তিনি তোমাদের গোপন ও প্রকাশ্য জানেন। তিনি আরও জানেন

তোমরা (ভাল- মন্দ) যা কর। এ আয়াতে فيফী على ‘আলার এর অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। অর্থ তিনিই আসমান সমূহের

উপরে আছেন।” (সূরা আন’আম, ৬ আয়াত: ৩)।

بَلْ رَفَعَهُ اللَّهُ إِلَيْهِ وَكَانَ اللَّهُ عَزِيزًا حَكِيمًا

 ”বরং আল্লাহ তাঁকে( ঈসা আলাইহিস্ সালামকে) উঠিয়ে নিয়েছেন তাঁর নিজের কাছে। আল্লাহ পরাক্রমশালী

প্রজ্ঞানয় (সূরা নিসা: ৪, আয়াত: ১৫৮)

تَعْرُجُ الْمَلَائِكَةُ وَالرُّوحُ إِلَيْهِ فِي يَوْمٍ كَانَ مِقْدَارُهُ خَمْسِينَ أَلْفَ سَنَةٍ

“ফিরিশতাগণ এবং রূহ ( জিবরাঈল) তাঁর (আল্লাহ) দিকে উঠেন, এমন দিনে যার পরিমাণ হবে পঞ্চাশ হাজার বছর।”

(সূরা মা’আরিজ ৭০, আয়াত: ৪)

يَخَافُونَ رَبَّهُمْ مِنْ فَوْقِهِمْ وَيَفْعَلُونَ مَا يُؤْمَرُونَ

তাঁরা (ফিরিশতারা) তাঁদের উপর তাঁদের প্রভূকে ভয় করে, আর তাঁদেরকে যা আদেশ দেয়া হয় তা পালন করে। (সূরা নাহল: ১৬, আয়াত: ৫০)

أَأَمِنْتُمْ مَنْ فِي السَّمَاءِ أَنْ يَخْسِفَ بِكُمُ الْأَرْضَ فَإِذَا هِيَ تَمُورُ

“তোমরা কি নিশ্চিত আকাশে যিনি আছেন, তিনি তোমাদেরসহ ভূমি ধসিয়ে দিবেন না। অতঃপর তা কাঁপতে থাকবে।”

(সূরা মুলক: ৬৭, আয়াত: ১৬)

أَمْ أَمِنْتُمْ مَنْ فِي السَّمَاءِ أَنْ يُرْسِلَ عَلَيْكُمْ حَاصِبًا فَسَتَعْلَمُونَ كَيْفَ نَذِيرِ

“তোমরা কি নিশ্চিত আকাশে যিনি আছেন, তিনি তোমাদের উপর কঙ্কর বর্ষণ করবেন না। অচিরেই তোমরা

জানতে পারবে কেমন ছিল আমার সতর্ককারী।” (সূরা মুলক ৬৭, আয়াত: ১৭)

 পূর্বের দু’আয়াতেও ফী في অব্যয়টি আলা على অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে।

“মহান আরশের অধিকারী।” (সূরা বুরূজ, ৮৫ আয়াত: ১৫)

قُلْ مَنْ رَبُّ السَّمَاوَاتِ السَّبْعِ وَرَبُّ الْعَرْشِ الْعَظِيمِ ( سورة المؤمنون ৮৬ )

 ”বলুন: সপ্তাকাশ ও মহা আরশের মালিক কে?” (সূরা মু’মিনূন ২৩, আয়াত: ৮৬)

“যিনি শক্তিশালী, আরশের মালিকের নিকট মর্যাদা শালী।” (সূরা তাকবীর ৮১, আয়াত: ২০)

“আল্লাহ ব্যতীত কোন (সত্য) উপাস্য নেই, তিনি মহা আরশের প্রভু- মালিক।” (সূরা নামল ২৭, আয়াত: ২৬)

سُبْحَانَ رَبِّ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ رَبِّ الْعَرْشِ عَمَّا يَصِفُونَ (سورة

“তারা যা বর্ণনা করে, তা থেকে আসমান ও জমিনের প্রভু- মালিক, আরশের প্রভু-মালিক পবিত্র। (সূরা যুখরুফ ৪৩, আয়াত: ৮২)

فَتَعَالَى اللَّهُ الْمَلِكُ الْحَقُّ لَا إِلَهَ إِلَّا هُوَ رَبُّ الْعَرْشِ الْكَرِيمِ

“অতএব মহিমান্বিত আল্লাহ, তিনি সত্যিকার মালিক, তিনি ব্যতীত (সত্য) কোন মাবুদ নেই। তিনি সম্মানিত

আরশের মালিক।” (সূরা মু’মিনূন ২৩, আয়াত: ১১৬)

قُلْ لَوْ كَانَ مَعَهُ آلِهَةٌ كَمَا يَقُولُونَ إِذًا لَابْتَغَوْا إِلَى ذِي الْعَرْشِ سَبِيلًا

“বলুন: তাদের কথামত যদি তাঁর সাথে অন্যান্য উপাস্য থাকত, তবে তারা আরশের মালিক পর্যন্ত পৌছার পথ

অন্বেষণ করত।” (সূরা বনী ইসরাঈল ১৭ আয়াত: ৪২)

لَوْ كَانَ فِيهِمَا آلِهَةٌ إِلَّا اللَّهُ لَفَسَدَتَا فَسُبْحَانَ اللَّهِ رَبِّ الْعَرْشِ عَمَّا يَصِفُونَ

“যদি তাতে তথা আসমান ও জমিনে আল্লাহ ব্যতীত অন্যান্য উপাস্য থাকত, তবে উভয় ধ্বংস হয়ে যেত। অতএব

তারা যা বলে, তা থেকে আরশের অধিপতি আল্লাহ পবিত্র।” (সূরা আম্বিয়া ২১, আয়াত: ২২)

فَإِنْ تَوَلَّوْا فَقُلْ حَسْبِيَ اللَّهُ لَا إِلَهَ إِلَّا هُوَ عَلَيْهِ تَوَكَّلْتُ وَهُوَ رَبُّ الْعَرْشِ

“এ সত্ত্বেও যদি তারা বিমুখ হয়ে থাকে, তবে বলে দাও, আল্লাহই আমার জন্য যথেষ্ট, তিনি ব্যতীত (সত্য) কোন

উপাস্য নেই। আমি তাঁরই উপর ভরসা করি এবং তিনিই মহান আরশের অধিপতি।” (সূরা তাওবা ৯, আয়াত: ১২৯)

الَّذِي خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ وَمَا بَيْنَهُمَا فِي سِتَّةِ أَيَّامٍ ثُمَّ اسْتَوَى عَلَى الْعَرْشِ الرَّحْمَنُ فَاسْأَلْ بِهِ خَبِيرًا

“(আল্লাহ) যিনি আসমান, জমিন ও এতদুভয়ের অন্তর্বর্তী সবকিছু ছয়দিনে সৃষ্টি করেছেন, অতঃপর আরশে সমুন্নত

হয়েছেন। তিনি পরম দয়াময়। তাঁর সম্পর্কে যিনি অবগত, তাকে জিজ্ঞেস কর।” (সূরা ফুরকান ২৫, আয়াত: ৫৯)

رَفِيعُ الدَّرَجَاتِ ذُو الْعَرْشِ يُلْقِي الرُّوحَ مِنْ أَمْرِهِ عَلَى مَنْ يَشَاءُ مِنْ عِبَادِهِ لِيُنْذِرَ يَوْمَ التَّلَاقِ

তিনিই সুউচ্চ মর্যাদার অধিকারী, আরশের মালিক, তাঁর বান্দাদের মধ্যে যার প্রতি ইচ্ছা অহী নাযিল করেন, যাতে সে

সাক্ষাতের দিন সম্পর্কে সকলকে সতর্ক করে। (সূরা গফির /মু’মিন ৪০, আযাতঃ ১৫)

وَتَرَى الْمَلَائِكَةَ حَافِّينَ مِنْ حَوْلِ الْعَرْشِ يُسَبِّحُونَ بِحَمْدِ رَبِّهِمْ وَقُضِيَ بَيْنَهُمْ بِالْحَقِّ وَقِيلَ الْحَمْدُ لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ

“তুমি ফিরিশতাগণকে দেখবে, তারা আরশের চার পাশ ঘিরে তাদের পালনকর্তার পবিত্রতা ঘোষণা করছে। তাদের

সবার মাঝে ন্যায় বিচার করা হবে। বলা হবে, সমস্ত প্রশংসা বিশ্ব প্রতি পালক আল্লাহর।” (সূরা যুমার ৩৯, আয়াত: ৭৫)

اللَّهُ الَّذِي خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ وَمَا بَيْنَهُمَا فِي سِتَّةِ أَيَّامٍ ثُمَّ اسْتَوَى عَلَى الْعَرْشِ مَا لَكُمْ مِنْ دُونِهِ مِنْ وَلِيٍّ وَلَا شَفِيعٍ أَفَلَا تَتَذَكَّرُونَ

“আল্লাহ যিনি নভোমণ্ডল, ভূমণ্ডল ও এতদুভয়ের মধ্যবর্তী সবকিছু ছয় দিনে সৃষ্টি করেছেন, অতঃপর তিনি

আরশে সমুন্নত হয়েছেন। তিনি ব্যতীত তোমাদের কোন অভিভাবক ও সুপারিশ কারী নেই। এরপরও কি তোমরা

বুঝবে না?” (সূরা সাজদা ৩২, আয়াত: ৪)

هُوَ الَّذِي خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ فِي سِتَّةِ أَيَّامٍ ثُمَّ اسْتَوَى عَلَى الْعَرْشِ يَعْلَمُ مَا يَلِجُ فِي الْأَرْضِ وَمَا يَخْرُجُ مِنْهَا وَمَا يَنْزِلُ مِنَ السَّمَاءِ

“তিনি নভোমণ্ডল ও ভূ-মণ্ডল সৃষ্টি করেছেন ছয়দিনে, অতঃপর আরশের উপর সমুন্নত হয়েছেন। তিনি জানেন যা

ভূমিতে প্রবেশ করে ও যা ভূমি থেকে নির্গত হয় এবং যা আকাশ থেকে বর্ষিত হয় ও যা আকাশে উত্থিত হয়। তিনি

তোমাদের সাথে আছেন তোমরা যেখানেই থাক। তোমরা যা কর, আল্লাহ তা দেখেন।” (সূরা হাদীদ ৫৭, আয়াত: ৪)

তিনি তোমাদের সাথে আছেন তোমরা যেখানেই থাক। এর তাফসীর বা ব্যাখ্যা এ আয়াতেরই শেষাংশ। আর তা

হলোঃ তোমরা যা কর, আল্লাহ তা দেখেন।

وَمَا يَعْرُجُ فِيهَا وَهُوَ مَعَكُمْ أَيْنَ مَا كُنْتُمْ وَاللَّهُ بِمَا تَعْمَلُونَ بَصِيرٌ

إِنَّ رَبَّكُمُ اللَّهُ الَّذِي خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ فِي سِتَّةِ أَيَّامٍ ثُمَّ اسْتَوَى عَلَى الْعَرْشِ يُدَبِّرُ الْأَمْرَ مَا مِنْ شَفِيعٍ إِلَّا مِنْ بَعْدِ إِذْنِهِ ذَلِكُمُ اللَّهُ رَبُّكُمْ

“নিশ্চয়ই তোমাদের পালনকর্তা আল্লাহ যিনি তৈরি করেছেন আসমান ও জমিনকে ছয় দিনে, অতঃপর তিনি আরশের

উপর সমুন্নত হয়েছেন। তিনি কার্য পরিচালনা করেন। কেউ সুপারিশ করতে পাবে না তবে তাঁর অনুমতি ছাড়া ইনিই

আল্লাহ তোমাদের পালনকর্তা। অতএব, তোমরা তাঁরই এবাদত কর। তোমরা কি কিছুই চিন্তা কর না?” (সূরা ইউনুস ১০, আয়াত: ৩)

اللَّهُ الَّذِي رَفَعَ السَّمَاوَاتِ بِغَيْرِ عَمَدٍ تَرَوْنَهَا ثُمَّ اسْتَوَى عَلَى الْعَرْشِ وَسَخَّرَ الشَّمْسَ وَالْقَمَرَ كُلٌّ يَجْرِي لِأَجَلٍ مُسَمًّى يُدَبِّرُ الْأَمْرَ يُفَصِّلُ

“আল্লাহ, যিনি ঊর্ধ্বদেশে স্থাপন করেছেন আকাশ মণ্ডলীকে স্তম্ভ ব্যতীত। তোমরা সেগুলো দেখ। অতঃপর

তিনি আরশের উপর সমুন্নত হয়েছেন। এবং সূর্য ও চন্দ্রকে কর্মে নিয়োজিত করেছেন। প্রত্যেকে নির্দিষ্ট সময়

মোতাবেক আবর্তন করে। তিনি সকল বিষয় পরিচালনা করেন, নিদর্শনসমূহ প্রকাশ করেন, যাতে তোমরা স্বীয়

পালনকর্তার সাথে সাক্ষাত সম্বন্ধে নিশ্চিত বিশ্বাসী হও।” (সূরা রাদ ১৩, আয়াত: ২)

إِنَّ رَبَّكُمُ اللَّهُ الَّذِي خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ فِي سِتَّةِ أَيَّامٍ ثُمَّ اسْتَوَى عَلَى الْعَرْشِ يُغْشِي اللَّيْلَ النَّهَارَ يَطْلُبُهُ حَثِيثًا وَالشَّمْسَ وَالْقَمَرَ

“নিশ্চয় তোমাদের প্রতিপালক আল্লাহ। তিনি নভোমণ্ডল ও ভূমণ্ডলকে ছয় দিনে সৃষ্টি করেছেন। অতঃপর

আরশের উপর সমুন্নত হয়েছেন। তিনি পরিয়ে দেন রাতের উপর দিনকে এমতাবস্থায় যে, দিন দৌড়ে রাতের পিছনে

আসে। তিনি সৃষ্টি করেছেন সূর্য, চন্দ্র ও নক্ষত্রকে এমন ভাবে যে তা সবই তাঁর আদেশের অনুগামী। শুনে রেখ,

তাঁরই কাজ সৃষ্টি করা এবং আদেশ দান করা। আল্লাহ, বরকতময় যিনি বিশ্বজগতের প্রতিপালক।” (সূরা আরাফ ৭, আয়াত: ৫৪)

হে সম্মানিত পাঠক পাঠিকাগণ! আমি আশা করি আপনারা পূর্বের আলোচনা থেকে আল্লাহর অবস্থান সম্পর্কে

আহলুস্ সুন্নাহ ওয়াল জামা’আতের আক্বীদা আল কুরআনের আলোকে জানতে পেরেছেন। আর তা হলো আল্লাহ

আরশের উপর সমুন্নত। তবে তিনি সৃষ্টি জীবের সব কিছু জানেন, দেখেন, পরিচালনা করেন ও তার প্রতিদান দান

করেন। আল্লাহ সবাইকে এ মাস’আলাটি সহ আকীদার অন্যান্য মাস’আলাসমূহ সঠিক ভাবে জানার তাওফীক দান

وَالنُّجُومَ مُسَخَّرَاتٍ بِأَمْرِهِ أَلَا لَهُ الْخَلْقُ وَالْأَمْرُ تَبَارَكَ اللَّهُ رَبُّ الْعَالَمِينَ

পরিশেষে আমি সারা বিশ্বের সকল মানুষকে জানিয়ে দিতে চাই যে কেবল সহীহ আক্বীদাই বা সঠিক বিশ্বাসই সারা

বিশ্বের সকল মানুষের হৃদয়, তাদের বাণী ও তাদের কাতারকে একত্রিত করতে সক্ষম। সঠিক বিশ্বাসই এ উম্মতের

প্রথম যুগের মানুষের অন্তর, বাণী ও কাতারকে একত্রিত করেছিল। তাঁরা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-

এর নেতৃত্বে তাওহীদের ছায়া তলে একত্রিত হয়েছিলেন। তাঁরা এক দলভুক্ত ছিলেন। তাই তাঁদের মত একত্রিত হওয়া

ও একত্রিত করার জন্যে প্রত্যেকেই কুরআন ও সহীহ হাদীসের আলোকে সঠিক আক্বীদা শিখা ও তা প্রচার ও

প্রসার করার জন্যে সর্বশক্তি ব্যয় করা একান্ত কর্তব্য।

আল্লাহ সবাইকে সঠিক আক্বীদা শিখার, তার প্রতি আমল ও তা যথাযথ প্রচার ও প্রসার করার তাওফীক দান করুন

লেখক: মুহাম্মাদ ইব্রাহীম, দাঈ দক্ষিণ কোরিয়া।

সম্পাদক: আব্দুল্লাহ শাহেদ আল মাদানী ও আব্দুল্লাহিল হাদী লিসান্স, মদীনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়

96
Allah: My belief / God means to accept!!
« on: June 13, 2015, 02:06:12 PM »
আল্লাহকে পেতে মাধ্যম গ্রহণ

সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য। আমরা তাঁরই প্রশংসা করছি, তাঁর কাছেই সাহায্য চাচ্ছি। আর তার কাছেই ক্ষমা

প্রার্থনা করছি। আমাদের মন্দ কৃতকর্ম, এবং আত্মার ক্ষতিকর প্রভাব থেকে আল্লাহর দরবারে আশ্রয় নিচ্ছি,

আল্লাহ তা'আলা যাকে হিদায়াত করেন তাকে গোমরাহ করার কেউ নেই। আর যাকে গোমরাহ করেন তাকে হেদায়াত

করার কেউ নেই, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, এক আল্লাহ ব্যতীত প্রকৃত কোন মাবুদ নেই, তার কোন শরীক নেই, আর

ও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আল্লাহর বান্দা ও রাসূল।

স্রষ্টা ও সৃষ্টির মাঝে মাধ্যম মানার ব্যাপারটা অত্যন্ত বিপজ্জনক বিষয়। পরিতাপের বিষয় যে, অনেক মুসলমানই

এ সম্পর্কে পরিষ্কার কোন ধারণা রাখেনা। ফলে আমরা আল্লাহর সাহায্য সহযোগিতা থেকে বঞ্চিত হতে চলেছি,

যে সাহায্য করার কথা তিনি কুরআনে তাঁর কাছে আশ্রয় কামনা এবং তাঁর শরীয়তের অনুসরণ করার শর্তে ঘোষণা

আল্লাহ বলেন : “আর মু'মিনদের সাহায্য করা আমার দায়িত্ব”। {সূরা আর-রূম: ৪৭}

“যদি তোমরা আল্লাহকে সাহায্য কর তবে তিনিও তোমাদের সাহায্য করবেন, এবং তোমাদের পদযুগলে স্থিতি দিবেন”। {সূরা মুহাম্মাদ: ৭}

“আল্লাহর জন্যই যাবতীয় সম্মান, আর তাঁর রাসূলের জন্য, এবং মু'মিনদের জন্য”। {সূরা আল-মুনাফিকূন: ৮}

“তোমরা দুর্বল হয়োনা, এবং তোমরা চিন্তা করোনা, তোমরাই বিজয়ী হবে যদি তোমরা ঈমানদার হও”। {সূরা আলে-ইমরান: ১৩৯}

সৃষ্টি ও স্রষ্টার মাঝে মাধ্যম বলতে কি বুঝায়, এ ব্যাপারে মানুষ তিনটি দলে বিভক্তঃ

একঃ একদল হচ্ছে তারা যারা শরীয়ত প্রণেতা হিসাবে প্রেরিত একমাত্র মাধ্যম রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি

ওয়া সাল্লাম)কেও মানতে নারাজ, বরং তারা দাবী করছে, - আর কত জঘন্যই না তাদের এ দাবী - যে, শরীয়ত শুধুমাত্র

সাধারণ মানুষের জন্য, উপরন্ত তারা এ শরীয়ত কে "ইলমে জাহীর" বা প্রকাশ্য বিদ্যা হিসাবে নামকরণ করেছে, তারা

তাদের ইবাদতের ক্ষেত্রে কতেক বাজে চিন্তা-ধারণা ও কুসংস্কারকে গ্রহণ করে "ইলমে বাতেন" বা গোপন বিদ্যা

নামে চালু করেছে, আর এর দ্বারা যা অর্জিত হয় তার নাম দিয়েছে (কাশ্ফ)। মূলত তাদের এই কাশ্ফ ইবলীশি

কুমন্ত্রণা আর শয়তানী মাধ্যম ছাড়া কিছুই নয়, কারণ এটা ইসলামের সাধারণ মুলনীতির পরিপন্থী, এ ব্যাপারে

তাদের দলগত শ্লোগান হলোঃ এ কথা (আমার মন আমার রব থেকে সরাসরি বর্ণনা করেছে)।

এতে করে তারা শরীয়তের আলেমদের সাথে ঠাট্টা করছে, এবং এ বলে দোষ দিচ্ছে যে, তোমরা তোমাদের বিদ্যা

অর্জন করছ ধারাবাহিক ভাবে মৃতদের থেকে আর তারা তাদের বিদ্যা সরাসরি চিরঞ্জীব, চিরস্থায়ী রব এর কাছ

এ সমস্ত কথা দ্বারা তারা অনেক সাধারন মানুষকে আকৃষ্ট করে তাদের পথভ্রষ্ট করছে। আর শরীয়ত নিষিদ্ধ

অনেক কাজ তারা এভাবে জায়েয করেছে যার বিবরণ তাদের কুসংস্কারপূর্ণ বই গুলিতে বিশদভাবে লিপিবদ্ধ করা

হয়েছে। ফলে এ ব্যবস্থার অবসান কল্পে আলেমগণ তাদেরকে কাফের এবং ধর্ম বিচু্যতির কারণে তাদের হত্যা করার

নির্দেশ দিতে বাধ্য হয়েছিলেন। কারণ তারা জানতনা বা জেনেও না জানার ভান করত যে, ইসলামের প্রথম মূলনীতি

হলোঃ মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর অবতীর্ণ পদ্ধতির বাইরে কেউ আল্লাহর ইবাদাত করলে সে

কাফের হিসাবে গণ্য হবে; কেননা আল্লাহ বলেন:

(সুতরাং তারা যা বলছে তা নয় বরং আপনার রবের শপথ, তারা যতক্ষণ পর্যন্ত আপনাকে তাদের মধ্যকার ঝগড়ার

মাঝে বিচারক মানবেনা অতঃপর তাদের অন্তরে আপনার ফয়সালার ব্যাপারে কোন প্রকার দ্বিধা দ্বন্দ্বের

অস্তিত্ব থাকবেনা, এবং পরিপুর্ণভাবে তা মেনে নিবেনা ততক্ষণ পর্যন্ত তারা ঈমানদার হতে পারবেনা)। {সূরা

আর এভাবেই শরীয়তের ইলমের বিরোধীতা ও তার আলোকে নির্বাপিত করার কাজ শয়তান তাদের মনে সৌন্দর্য

মন্ডিত করে দেখায়। ফলে তারা নিশ্চিদ্র অন্ধকারে ঘুরতে থাকে এবং তাদের খেয়াল খুশি মোতাবেক আল্লাহর

ইবাদত করতে থাকে। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তা'আলা তাদের যে চিত্র অংকন করেছেন তা তাদের ক্ষেত্রে সঠিক

বলে প্রতিয়মান হয়। আল্লাহ তা'আলা বলেন :

(বলুন: আমি কি তোমাদেরকে আমলের দিক থেকে সবচেয়ে বেশী ক্ষতিগ্রস্তদের সংবাদ দেব? (তারা হলো ঐ সব

লোক) যাদের দুনিয়ার জীবনের সমস্ত প্রচেষ্টা পন্ড হয়ে গেছে, অথচ তারা মনে করত কত সুন্দর কাজই না তারা

করছে, তারাই সে সব লোক যারা তাদের রবের আয়াতসমূহ ও তার সাথে সাক্ষাৎকে অস্বীকার করেছে, ফলে তাদের

সমস্ত আমল বিনষ্ট হয়ে গেছে, সুতরাং কিয়ামতের দিন তাদের জন্য কোন ওজন স্থাপন করবোনা)। {সূরা আল-

এ গ্রুপ শতধা বিভক্ত হয়ে একে অপরের বিরুদ্ধে লেগেছে, কারণ তারা সহজ সরল পথ থেকে দূরে সরে গেছে, যে পথ ছিল

আল্লাহর নেয়ামতপ্রাপ্তদের পথ, অভিশপ্ত বা পথহারাদের পথ নয়।

তাদের সমস্ত গ্রুপই জাহান্নামে যাবে, কারণ রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন:

(আমার উম্মত তিয়াত্তর ফেরকা বা গ্রুপে বিভক্ত হবে, বাহাত্তরটি জাহান্নামে আর একটি জান্নাতে যাবে - যারা

আমি এবং আমার সাহাবাগণ যে পথে আছি, তার উপর থাকবে)। হাদিসটি আবু দাউদ, নাসায়ী, ইবনে মাজাহ, তিরমিযি

সবাই আবু হুরায়রা (রাদিয়াল্লাহু আন্হু) থেকে সহীহ সনদে বর্ণনা করেছেন।

দুইঃ যারা মাধ্যম সাব্যস্ত করতে গিয়ে সীমালংঘন করেছে, আর মাধ্যমের ভুল ব্যাখ্যা করে এর উপর এমন কিছু

জিনিস চাপিয়েছে, যা চাপানো কক্ষনো জায়েয নয়।

তারা রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এবং অন্যান্য নবী ও নেক্কার ব্যক্তিবর্গকে এমনভাবে মাধ্যম

মানতে শুরু করেছে যে তাদের বিশ্বাস আল্লাহ তা'আলা কারো কোন আমল এদের মাধ্যম হয়ে না আসলে কবুল

করবেননা; কারণ এরাই হচ্ছে তার কাছে যাওয়ার অসীলা। (নাউজুবিল্লাহ)। এতে করে তারা আল্লাহ তা'আলাকে এমন

সব অত্যাচারী বাদশাহদের বিশেষণে বিশেষিত করেছে যারা তাদের প্রাসাদে প্রচুর দারোয়ান নিযুক্ত করে রেখেছে

যাতে করে কোন শক্তিশালী মাধ্যম ছাড়া তাদের কাছে পৌঁছা কক্ষনো সম্ভব হয়ে উঠেনা।

অথচ আল্লাহ তা'আলা পবিত্র কুরআনে বলেন:

(যখন আপনাকে আমার বান্দাগণ আমার সম্পর্কে প্রশ্ন করে তখন (বলুন) আমি নিকটে, আহবানকারী যখন আমাকে

আহবান করে আমি তার ডাকে সাড়া দেই, সুতরাং তারা যেন আমার হুকুম মেনে নেয় এবং আমার উপরই ঈমান আনে যাতে করে তারা সৎপথ লাভ করে)

আল্লাহ তা'আলার এ বাণীর সাথে পূর্ব বর্ণিত লোকদের বিশ্বাসের সংগতি কতটুকু?

এ আয়াত ইঙ্গিত করছে যে, আল্লাহর কাছে পৌঁছার একমাত্র মাধ্যম হচ্ছে তার উপর সঠিকভাবে ঈমান আনা এবং

তার প্রর্দশিত পথে ইবাদাত করা। দৃশ্যনীয় যে, এ আয়াতে ইবাদতের কথা ঈমানের পূর্বে উল্লেখ করে নেক আমল বা

সৎকাজের গুরুত্ব সম্পর্কে সাবধান করা হয়েছে; কেননা আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন ও তার জান্নাত হাসিলের জন্য

আল্লাহ তা'আলা কুরআনে অসীলা শব্দের উল্লেখ করেছেন এবং তা দ্বারা পূর্ণ আনুগত্য করাকেই বুঝিয়েছেন কারণ

এটা (অর্থাৎ আল্লাহ ও তার রাসূলের পূর্ণ আনুগত্যই) একমাত্র মাধ্যম যা তাঁর নৈকট্য দিতে পারে এবং তার

রহমতের দরজা খুলতে ও জান্নাতে প্রবেশ করাতে সক্ষম। তাই বলছেনঃ

(হে ঈমানদারগণ তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং তার কাছে অসীলা (পূর্ণ আনুগত্যের মাধ্যমে নৈকট্য)

অন্বেষণ কর আর তার রাস্তায় জিহাদ কর যাতে করে তোমরা সফলকাম হতে পার।) {সূরা আল-মায়িদাহ্: ৩৫}

নেককার বান্দাদেরকে যারা অসীলা হিসাবে গ্রহণ করে এমন মুর্খ, চেতনাহীন লোকদেরকে আল্লাহ তা'আলা পরিহাস

করেছেন কারণ তারা নেককার বান্দাদেরকে অসীলা বানাচ্ছে, অথচ নেককার বান্দারা নিজেরাই এই অসীলা তথা

আল্লাহর আনুগত্য দ্বারা নৈকট্য হাসিলের অধিক মুখাপেক্ষী।

আর এ ছাড়া আল্লাহর নৈকট্য লাভের দ্বিতীয় কোন পথ নেই, যেমন আল্লাহ তা'আলা বলেছেন:

(তারা যাদের আহবান করছে তারা নিজেরাই তাদের প্রভূর নৈকট্য লাভের জন্য অসীলা খুঁজছে। তারা তার রহমতের

আশা করছে, তার শাস্তির ভয় করছে, নিশ্চয়ই আপনার প্রভুর শাস্তি ভীতিপ্রদ)। {সূরা আল-ইসরা: ৫৭}

বড়ই পরিতাপের বিষয় যে, এ সমস্ত অমনযোগী লোকেরা যাদেরকে মাধ্যম হিসাবে গ্রহণ করেছে তাদের সত্তার

উপর ভরসা করে থাকার ফলে নেক আমল করা থেকে বিরত থাকছে, খারাপ কাজে অভ্যস্ত হয়ে পড়ছে। যা মুসলমানদের

অধঃপতনের কারণ হয়েছে। তারা ভুলে গেছে বা ভুলে থাকার ভান করছে যে, আল্লাহ তা'আলা তাঁর রাসূলকে - যিনি

সমস্ত মানব সন্তানের নেতা - তাঁকে সম্বোধন করে বলেছেনঃ

(বলুনঃ আমি আমার নিজের কোন উপকার বা ক্ষতি করার ক্ষমতা রাখিনা)। {সূরা আল-আ’রাফ: ১৮৮}

অনুরুপভাবে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর কলিজার টুকরা কন্যাকে সম্বোধন করে বলেছেনঃ

(হে ফাতিমা ! আমার কাছে যত সম্পদ আছে তার থেকে যা ইচ্ছা হয় চেয়ে নাও, আমি আল্লাহর কাছে তোমার কোন কাজে আসবনা )। {বুখারী ও মুসলিম}

(যখন কোন মানুষ মারা যায় তখন তার সমস্ত আমল বন্ধ হয়ে যায়, কেবলমাত্র তিনটি আমল ব্যতীত...)।

যদি নবীগণ ও নেক্কার লোকদের ব্যক্তিসত্তার অসীলা গ্রহণ জায়েয না হওয়ার ব্যাপারে কোন দলীল না থাকত,

বরং আমাদের সামনে উমর (রাদিয়াল্লাহু আন্হু) এর সেই ঘটনাটিই শুধু থাকত, যাতে তিনি নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি

ওয়া সাল্লাম) এর মৃতু্যর পর তাঁর অসীলা বাদ দিয়ে তার চাচা আব্বাসের দুআ'র শরণাপন্ন হয়েছিলেন, তবে

অসীলাবাদী এ দলের মুলোৎপাটনে তাই যথেষ্ট হত।

ইমাম আবু হানীফা (রাহমাতুল্লাহ আলাইহি) কতই না সুন্দর বলেছেন: "আমি আল্লাহর কাছে আল্লাহ ব্যতীত অপর

কিছুর মাধ্যমে কিছু চাওয়াকে হারাম মনে করি" দুররে মুখতার ও হানাফীদের অন্যান্য কিতাবে তা ইমাম সাহেব থেকে

বর্ণিত আছে। যদি ব্যক্তি স্বত্বা দ্বারা অসীলা দেয়া জায়েজ হতো, তবে কুরআন ও হাদীসের যাবতীয় দুআ' যার

সংখ্যা অগণিত তা ব্যক্তি সত্তার অসীলা দিয়েই আসত। (কিন্তু তার একটিও সেভাবে আসেনি)।

তিনঃ যারা স্রষ্টা ও সৃষ্টির মাঝে মাধ্যম বলতে বুঝেছেন সেই রিসালাতকে যার মানে হলো দ্বীন প্রচার, শিক্ষাদান

ও দ্বীনের প্রশিক্ষণ। তারা এই রিসালাতের উচ্চ মর্যাদা এবং এর প্রতি মানব জাতির প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি

করেছেন। ফলে তারা শরয়ী বিধান লাভের উদ্দেশ্যে এবং ঐশী বাণী বা ওহীর আলোকে আলোকিত হওয়ার জন্য

রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে বড় মাধ্যম এবং বৃহৎ অসীলা হিসাবে গ্রহণ করেছেন। যেমনিভাবে তারা

কুরআন অধ্যয়ন করছেন তেমনিভাবে তারা রাসূলের পবিত্র জিবনী ও তার সুন্নাত অধ্যয়ন করছেন। এতে তাদের

শ্লোগান হচ্ছে আল্লাহর বাণীঃ

(নিশ্চয়ই তোমাদের কাছে আল্লাহর কাছ থেকে নূর এবং সুস্পষট গ্রন্থ এসেছে, এর দ্বারা যারা আল্লাহর সন্তুষটির

পিছনে ধাবিত হয় আল্লাহ তাদেরকে হিদায়াত প্রদান করেন, আর তাদেরকে তাঁর ইচ্ছা মোতাবেক অন্ধকার থেকে

আলোতে নিয়ে যান, এবং সরল সোজা পথে পরিচালিত করেন )। {সূরা আল-মায়িদাহ্: ১৫, ১৬}

এরাই হলো মুক্তি প্রাপ্ত দল যাদের কথা পূর্বোক্ত হাদীসে বর্ণিত হয়েছে, এবং তাদেরকেই জান্নাতের সুসংবাদ

কিন্তু দুঃখের বিষয়: এ গ্রুপের পথ বিপদসংকুল, কন্টকাকীর্ণ। কেননা সত্যিকার ইসলাম আজ অপরিচিত হয়ে

পড়েছে। অধিকাংশ মুসলমান এর থেকে অনেক দুরে সরে গেছে। তারা এ দ্বীনকে বিদআ'ত ও মনগড়া রসম রেওয়াজে

এই রোগ অতি পুরাতন, এ ব্যাপারে সংস্কারকদের ভুমিকা খুব ভয়াবহ ও কষ্টসাধ্য।

উমর বিন আব্দুল আজীজ (রাহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেছেন (আমরা এমন কাজ সংসকার করতে চেষ্টা করছি যাতে

আল্লাহ ছাড়া আমাদের আর কোন সাহায্যকারী নেই, যে কাজ করতে গিয়ে বৃদ্ধরা তাদের জীবন শেষ করেছে, আর

ছোট ছোট ছেলেরা যুবক হতে চলেছে, বেদুঈনগণ তাদের বাস্তু ত্যাগ করে চলে গেছে। তারা এটাকে দ্বীন (ধর্ম) মনে

করেছে অথচ এটা আল্লাহর কাছে দ্বীন বলে সাব্যস্ত নয়।)

অবশ্য এটা নতুন কিছু নয়, কারণ রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দ্বীনের এ করুণ দৃশ্যের কথা বর্ণনা

(ইসলাম অপরিচিত হিসাবে শুরু হয়েছে। যেভাবে তা শুরু হয়েছিল সেভাবে আবার (অপরিচিত) অবস্থায় ফিরে আসবে।

সুতরাং গরীব (এই অপরিচিত) দের জন্যই সুসংবাদ) হাদীসটি মুসলিম শরীফে আবু হুরায়রা (রাদিয়াল্লাহু আন্হু)থেকে অপর বর্ণনায় এসেছে,

(বলা হলঃ হে আল্লাহর রাসূল এই গরীব (অপরিচিত) রা কারা? বললেনঃ বিভিন্ন গোত্র থেকে উত্থিত বিক্ষিপ্ত

কতক ব্যক্তিবর্গ) আহমাদ, ইবনে মাজা।

তিরমিযির এক (হাছান) বর্ণনায় এসেছে,

(এই গরীবদের জন্য সুখবর যারা আমার সুন্নাতের যে অংশ মানুষ নষ্ট করেছে তা পূণঃ সংস্কার করে চালু করেছে)।

মুসনাদে আহমাদে অপর এক সহীহ বর্ণনায় এসেছে,

(এই গরীব (অপরিচিত) গণ হলোঃ অনেক খারাপ লোকের মাঝখানে এমন কিছু ভাল লোক, যাদের অনুসারীর চেয়ে বিরোধীরাই হবে বেশী)।

সুতরাং এ গ্রুপকেই সংসকার কাজে এগিয়ে যেতে হবে, সংস্কারের আলোতে মুসলমানদের জাগিয়ে পুনরায় সঠিক

ইসলামের দিকে ফিরিয়ে নিতে হবে। আর বিরোধীতা ও বিপর্যয় সৃষ্টিকারীদের আমরা তাই বলব যা আল্লাহ তা'আলা

তাদের পূর্বসুরীদেরকে বলেছেনঃ

(আমাদের কি হলো যে, আমরা আল্লাহর উপর ভরসা করবনা অথচ তিনি আমাদেরকে যাবতীয় পথের দিশা দিয়েছেন?

আর আমরা তোমাদের শত আঘাতের বিপরীতে ধৈর্য্য ধারণ করবো, ভরসাকারীগণ যেন শুধু আল্লাহর উপরই ভরসা করেন)। {সূরা ইব্রাহীম: ১২}

লেখক : ড. আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া
সূত্র : ইসলাম প্রচার ব্যুরো, রাবওয়াহ, রিয়াদ, সৌদিআরব

97
আল্লাহ তাআলা কোথায় আছেন?

আল্লাহ তাআলা আমাদের রর ও ইলাহ। একমাত্র তিনিই ইবাদত আরাধনার উপযোগী। সে হিসেবে তিনি কোথায় 

সে বিষয়ে সম্যক ধারণা অর্জন আমাদের জন্য ওয়াজিব, যাতে আমরা তাঁর প্রতি একাগ্রচিত্তে ধাবিত হতে পারি,

যথার্থরূপে ইবাদত-বন্দেগি পালনে সক্ষম হই।

আল্লাহ কোথায় আছেন? এ প্রশ্নের সরাসরি উত্তর হল তিনি আরশের উপরে আছেন। আরশের উপরে থাকা

আল্লাহ তাআলার একটি অন্যন্য সিফাত, আল কোরআন ও সহিহ হাদীসে এ বিষয়ে স্পষ্ট বর্ণনা রয়েছে, যেমন

রয়েছে আল্লাহ তাআলার শ্রবন করা, দেখা, কথা বলা, অবতীর্ণ হওয়া এবং এ জাতীয় অন্যান্য সিফাতসমূহ।

সালাফে সালেহীনদের আকিদা আর মুক্তিপ্রাপ্ত দল বা আহলে সুন্নত ওয়াল জামাআত এ আকিদাই পোষণ করেন

কোনোরূপ পরিবর্তন, পরিবর্ধন ও সৃষ্টির সাথে তুলনা ব্যতীত। কারণ, আল্লাহ তাআলা বলেন:

তাঁর মত কিছু নেই আর তিনি সর্বশ্রোতা ও সর্বদ্রষ্টা।(সূরা শুরা,৪২: ১১ আয়াত)

এ কারণে যখন ইমাম মালেক রহ. কে (আর-রহমান, যিনি  আরশের উপরে উঠেছেন) এ আয়াত সম্পর্কে প্রশ্ন করা

হয়েছিল। উত্তরে তিনি বলেছিলেন: استواءতথা আরশের উপরে ওঠার বিষয়টি জানা, কিন্তু তার ধরণ অজানা, আর এ

বিষয়ের উপর ঈমান আনা ওয়াজিব। হে মুসলিম ভাই, ইমাম মালেক রহ. এর বক্তব্যের প্রতি খেয়াল করুন। কারণ,

তিনি আল্লাহ যে উপরে আছেন, তার উপর ঈমান আনাকে প্রতিটি মুসলিমের জন্য ওয়াজিব বলেছেন। কিন্তু কিভাবে

আছেন, তা আল্লাহ ছাড়া কেউ জানে না।

এ জন্যই আল্লাহ তাআলার যেসমস্ত সিফাত কোরআন ও সহিহ হাদীসে আছে, তার কোনটাকে অস্বীকার করলে,

(যেমন আল্লাহ যে আরশের উপরে আছেন) সে ঐ আয়াত বা হাদীসকে অস্বীকারকারী হল। কারণ, এ সিফাত হচ্ছে

পূর্ণতার, সম্মানের ও সর্বশীর্ষতার। তা কোন ক্রমেই আল্লাহর ব্যাপারে অস্বীকার করা যায় না। কিন্তু

পরবর্তী জামানার কিছু ওলামা যারা দর্শনের (philosophy) দ্বারা প্রভাবিত, তারা কিছু কিছু আয়াত ও সিফাতকে

তাবিল বা দূরব্যাখ্যা দিয়ে ভিন্ন অর্থে নিয়ে যান। এধরনের তাবিলের কারণে বহু লোকের আকিদা নষ্ট হয়ে যায়।

তারা আল্লাহ তাআলার এই পূর্ণ সিফাতকে পর্যন্ত অস্বীকার করে বসে। তারা সালাফগণের পথের বিরোধিতা

لَيْسَ كَمِثْلِهِ شَيْءٌ وَهُوَ السَّمِيعُ الْبَصِيرُ ﴿الشوري11﴾

করে। কিন্তু মূলে সালাফগণের রাস্তাই হচ্ছে বিশ্বাসযোগ্য, জ্ঞাননির্ভর ও হিকমতপূর্ণ। ঐ ব্যক্তির কথা

কতোই না উত্তম যিনি বলেন: প্রতিটি ভালোই রয়েছে সালাফগণের রাস্তা অনুসরনের মধ্যে, আর প্রতিটি

খারাবীই রয়েছে পরবর্তীগণের বিদআতকে মূল কথা বলে মেনে নিয়ে তা অনুসরনের মধ্যে।

কোরআন ও সহিহ হাদীসে আল্লাহ তাআলার যেসমস্ত সিফাতের কথা বলা হয়েছে তার উপর ঈমান আনা ওয়াজিব।

তাঁর সিফাতসমূহের মধ্যে পার্থক্য সৃষ্টি করা, অথবা তার কিছু সিফাতকে যেভাবে আছে সেভাবেই স্বীকার করা আর

কিছুকে পরিবর্তন করে বিশ্বাস করা কিছুতেই জায়েয হবে না। যে ব্যক্তি বিশ্বাস করে যে, নিশ্চয়ই আল্লাহ

তাআলা শ্রবনকারী ও দর্শনকারী, তার মানে এই নয় যে, তার শ্রবন ও দর্শন যন্ত্র আমাদেরই মত।

তার জন্য এটাও বিশ্বাস করা দরকার যে, আল্লাহ আসমানের উপর আছেন, তার সম্মান অনুযায়ী, কোন সৃষ্টির

সাদৃশ্য হয়ে নয়। কারণ এ সিফাতসমূহ আল্লাহ তাআলার পূর্ণতা প্রকাশ করে। তা আল্লাহ তাআলা স্বয়ং তাঁর

কিতাবে স্পষ্ট করে ব্যক্ত করেছেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর হাদীসেও তা বিদৃত

করেছেন। আর সত্যিকারের ফিতরতও তা স্বীকার করে, আর সত্যিকারের বুদ্ধি বিবেচনাও তা মেন নেয়।

ইমাম বুখারীর রহ. এর উস্তাদ নাইম ইবনে হাম্মাদ রহ. বলেছেন: যে ব্যক্তি আল্লাহকে তাঁর সৃষ্টির সাথে তুলনা

করল সে যেন কুফরী করল। আর আল্লাহ তাআলা নিজের সম্বন্ধে যা বলেছেন তা যে ব্যক্তি অস্বীকার করল সে

যেন কুফরী করল। আর আল্লাহ তাআলা তাঁর নিজের সম্বন্ধে কিংবা তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম

তাঁর সম্বন্ধে যা বলেছেন তাতে কোন তুলনা নেই। (শরহে আকিদাহ্ তাহাবিয়া)।

আল্লাহ আরশের উপর আছেন

কোরআন, সহীহ হাদীস, সৎ বুদ্ধি, সহীহ অনুভূতি সমস্ত কিছুই উপরোক্ত কথাকে সমর্থন করে।

১। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআলা বলেন:

পরম করুণাময় আরশের উপর আছেন।(সূরা তাহা, ২০: ৫ আয়াত।)

২। অন্যত্র আল্লাহ তাআলা বলেন:

তোমরা তার থেকে নির্ভয় হয়ে গেলে যিনি আসমানে আছেন, আর তিনি তোমাদের সহকারে জমিনকে ধ্বসিয়ে দিবেন

না?।(সূরা মূলক ৬৭: ১৬ আয়াত)।

ইবনে আব্বাস রা. এই আয়াতের তাফসীরে বলেন: তিনি হলেন আল্লাহ। (তাফসীরে ইবনুল জাওযি)।

৩। আল্লাহ তাআলা আরও বলেন:

তারা তাদের উপরস্থ রবকে ভয় করে। (সূরা নাহল,১৬: ৫০ আয়াত)।

৪। আল্লাহ তাআলা ইসা আ. সম্বন্ধে বলেন:

বরং  আল্লাহ তাকে তাঁর নিকটে উত্তলন করে নিয়েছেন। (সূরা নিসা, ৪: ১৫৮ আয়াত)।

৫। তিনি আরও বলেন:

আর তিনিই আল্লাহ যিনি আসমানে আছেন। (সূরা আনআম ৬: ৩ আয়াত)।

এ সমস্ত আয়াতের তাফসীরে ইবনে কাসীর রহ: বলেন: তাফসীরকারকগণ এ ব্যপারে একমত পোষণ করেন যে, তারা

আল্লাহ সম্বন্ধে ঐভাবে বর্ণনা করবেন না যেভাবে জাহমীয়ারা (একটি ভ্রষ্ট দল) বলে যে, আল্লাহ সর্বত্র

আছেন। আল্লাহ তাআলা তাদের এ জাতীয় কথা হতে পাক পবিত্র ও অনেক ঊর্ধ্বে।

আল্লাহ তাআলার বাণী:

الرَّحْمَنُ عَلَى الْعَرْشِ اسْتَوَى ﴿طه5﴾

أَأَمِنْتُمْ مَنْ فِي السَّمَاءِ أَنْ يَخْسِفَ بِكُمُ الْأَرْض(الملك 16)

يَخَافُونَ رَبَّهُمْ مِنْ فَوْقِهِمْ(النحل50)

بَلْ رَفَعَهُ اللَّهُ إِلَيْهِ(النساء 158)

وَهُوَ اللَّهُ فِي السَّمَاوَاتِ(الأنعام3)

وَهُوَ مَعَكُمْ أَيْنَ مَا كُنْتُمْ(الحديد 4)

তোমরা যেখানেই থাক না কেন, তিনি তোমাদের সাথেই আছেন। (সূরা হাদীদ, ৫৭: ৪ আয়াত)।

অত্র আয়াতের ব্যখ্যা হল; নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআলা আমাদের সাথে আছেন দেখার দ্বারা, শ্রবনের দ্বারা, যা

বর্ণিত আছে তফসীরে জালালাইন ও ইবনে কাসীরে। এই আয়াতের পূর্বের ও শেষের অংশ এ কথারই ব্যখ্যা প্রদান

৬। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে সপ্তম আসমানের উপর উঠানো হয়েছিল, তাঁর রবের সাথে

কথোপকথনের জন্য। আর সেখানেই পাঁচ ওয়াক্ত সালাত ফরজ করা হয়েছিল। (বুখারী ও মুসলিম)।

৭। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

তোমরা কি আমাকে আমিন (বিশ্বাসী) বলে স্বীকার কর না? আমি তো ঐ সত্ত্বার নিকট আমিন বলে পরিগণিত

যিনি আসমানের উপর আছেন। (আর তিনি হলেন আল্লাহ)। (বুখারী ও মুসলিম)।

৮। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেছেন:

যারা জমিনে আছে তাদের প্রতি দয়া কর, তবেই যিনি আসমানে আছেন তিনি তোমাদের প্রতি দয়া করবেন।

(তিরমিযী হাসান সহীহ)।

৯। অন্য হাদীসে এসেছে:

  . مُؤْمِنَةً فإنَّها أعْتِقْهَا قَالَ: اللهِ رَسٌولُ أنْتَ قَالَتْ أنا؟ مَنْ قَالَ السَّماءِ في فَقَالَتْ اللهَ؟ أيْنَ لَهَا: فَقَالَ جَارِيَةً وسلَّمَ عليه الله صلي الله رَسُولُسأَلَ

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ক্রীতদাসীকে জিজ্ঞেস করলেন: বলতো আল্লাহ কোথায়? সে বলল,

আসমানে। তারপর তিনি বললেন: বলতো আমি কে? সে বলল: আপনি আল্লাহর রাসূল। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু

আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, একে মুক্ত করে দাও, কারণ সে মুমিনা। (মুসলিম)।

১০। অন্যত্র রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

আরশ পানির উপর আর আল্লাহ আরশের উপর। তৎসত্তেও, তোমরা কি কর বা না কর তিনি তা জ্ঞাত আছেন।

(আবু দাউদ হাসান)।

১১।আবু বকর রা. বলেছেন:

যে ব্যক্তি আল্লাহর ইবাদত করে (সে জেনে রাখুক) নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআলা আসমানের উপর জীবিত আছেন,

কখনোই মৃত্যুমুখে পতিত হবেন না। (সুনানে দারেমী সহীহ সনদ) জাহমীয়াদের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।

১২। আব্দুল্লাহ ইবনে মুবারক রহ.-কে প্রশ্ন করা হয়েছিল, আমরা কিভাবে আমাদের রব সম্বন্ধে জানতে

পারব? উত্তরে তিনি বলেছেন: তিনি আসমানে আরশের উপর আছেন, সৃষ্টি হতে আলাদা হয়ে। অর্থাৎ আল্লাহ

পাকের জাত আরশের উপর আছেন, সৃষ্টি থেকে আলাদা হয়ে। তার এই উপরে থাকা সৃষ্টির সাথে কোন সামঞ্জস্য

১৩। চার ইমামগণই এ ব্যাপারে একমত যে, তিনি আরশের উপর আছেন, তিনি তাঁর কোন সৃষ্টির সাথে তুলনীয়

১৪। মুসল্লী সিজদায় বলেন: (আমরা মহান উঁচু রবের পবিত্রতা বর্ণনা করছি)। দোয়া করার সময় সে তার

হস্তদয়কে আসমানের দিকে উত্তলন করে।

১৫। যখন বাচ্চাদের প্রশ্ন করা হয়, বলত আল্লাহ কেথায়? তখন তারা তাদের স্বভাবজাত প্রবৃত্তির বশে বলে:

১৬। সুস্থ বুদ্ধি, বিবেক, আল্লাহ যে আসমানে আছেন তা সমর্থন করে। যদি তিনি সর্বত্রই বিরাজমান হতেন তবে

অবশ্যই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামতা জানতেন এবং সাহাবীদের শিক্ষা দিতেন। দুনিয়ার বুকে এমন

অনেক নাপাক অপবিত্র জায়গা আছে যেখানে তাঁর থাকার প্রশ্নই উঠে না।

ألاَ تأمَنُونيِْْ وَأنا أمِينُ مَنْ فيِ السَّمَاء (وهو اللهُ) (ومعني في السَّماء: علي السَّمَاء) (متفق عليه)

ارْحَمُوا مَنْ فيِ الارضِ يَرْحَمكٌمْ مَنْ في السَّمَاء (أي هو الله) (الترمذي وقال حسن صحيح)

وَالْعَرْشُ فَوْقَ الْمَاء وَاللهُ فَوْقَ عَرْشِهِ وَهُوَ يَعْلَمُ مَا انتُمْ عَلَيْهِ. (حسن رواه أبو داود)

ومَنْ كَانَ يَعْبُدُ اللهَ فإنَّ اللهَ فيِ السماء حَيٌّ لا يمُوتُ (رواه الدارمي في الرد غلي الجهمية باسناد صحيح)

১৭। যদি বলা হয়, আল্লাহ তাআলা তার জাত সহকারে আমাদের সাথে সর্বস্থানে আছেন, তবে তার জাতকে বিভক্ত

করতে হয়। কারণ, সর্বত্র বলতে বহু জায়গা বুঝায়। এটাই ঠিক যে আল্লাহ তাআলার পবিত্র জাত এক ও অভিন্ন।

তাকে কোন অবস্থাতেই বিভক্ত করা যায় না। তাই ঐ কথার কোন মূল্য নেই, যে তিনি সর্বত্র বিরাজমান। আর

এটা প্রমাণিত যে, তিনি আসমানে আরশের উপর আছেন। তবে তিনি তাঁর শ্রবেনর, দেখার ও জ্ঞানের দ্বারা সকল

বিষয় সম্পর্কে সম্যক অবহিত ।

সমাপ্ত

লেখক : আখতারুজ্জামান মুহাম্মদ সুলাইমান
সম্পাদনা: চৌধুরী আবুল কালাম আজাদ
সূত্র : ইসলাম প্রচার ব্যুরো, রাবওয়াহ, রিয়াদ, সৌদিআরব

98
পবিত্রতা সম্পর্কে অতি গুরুত্বপূর্ণ ৬২টি প্রশ্নোত্তর

প্রশ্নঃ (১২১) অপবিত্রতা ও বাহ্যিক নাপাক বস্তু থেকে পবিত্রতা অর্জন করার প্রকৃত মাধ্যম কি?

উত্তরঃ যে কোন নাপাকী থেকে পবিত্রতা অর্জনের মাধ্যম হচ্ছে পানি। পানি ছাড়া অন্য কোন মাধ্যমে

পবিত্রতা অর্জন করা যাবে না। চাই উক্ত পানি পরিচ্ছন্ন হোক বা পবিত্র কোন বস্তু তাতে পড়ার কারণে তাতে

কোন পরিবর্তন দেখা যাক। কেননা বিশুদ্ধ কথা হচ্ছে, পবিত্র কোন বস্তুর কারণে যদি পানির মধ্যে পরিবর্তন

দেখা যায়, তবে তাকে পানিই বলা হবে। এর পবিত্র করণের ক্ষমতা বিনষ্ট হবে না। এই পানি নিজে পবিত্র অন্যকেও

পবিত্র করতে পারে।

পানি যদি না পাওয়া যায় বা পানি ব্যবহার করলে ক্ষতির আশংকা দেখা যায়, তবে তায়াম্মুমের দিকে অগ্রসর হবে।

দু’হাত মাটিতে মেরে তা দ্বারা মুখমন্ডল মাসেহ করবে এবং উভয় হাত কব্জি পর্যন্ত মাসেহ করবে।

আর বাহ্যিক ও প্রকাশ্য নাপাক বস্তু থেকে পবিত্রতা অর্জন করার পদ্ধতি হচ্ছে, যে কোন প্রকারে উক্ত নাপাক

বস্তু অপসারিত করা। চাই তা পানি দ্বারা হোক বা অন্য কোন বস্তু দ্বারা। কেননা বাহ্যিকভাবে দেখা যায় এমন

নাপাক বস্তুর পবিত্রতার উদ্দেশ্য হচ্ছে যে কোন পবিত্র বস্তু দ্বারা তা অপসারিত করা। অতএব পানি বা

পেট্রোল বা কোন তরল পদার্থ বা শুস্ক বস্তু দ্বারা যদি পরিপূর্ণরূপে উক্ত নাপাকী অপসারিত করা সম্ভব হয়,

তবেই তা পবিত্র হয়ে যাবে। কিন্তু কুকুরের নাপাকী (মুখ দেয়া উচ্ছিষ্ট পাত্র) পবিত্র করার জন্য অবশ্যই সাতবার

পানি দ্বারা ধৌত করতে হবে এবং একবার মাটি দ্বারা মাজতে হবে।

এ ভাবেই আমরা জানতে পারব প্রত্যক্ষ নাপাক বস্তু থেকে কিভাবে পবিত্র হতে হয় এবং কিভাবে আভ্যন্তরিন

নাপাকী থেকে পবিত্রতা অর্জন করতে হয়।

প্রশ্নঃ (১২২) বাহ্যিক অপবিত্র বস্তু পানি ছাড়া অন্য কিছু দ্বারা পবিত্র করা যাবে কি? বাস্পের (Dry clean))

মাধ্যমে কি কোট ইত্যাদি পবিত্র করা যায়?

উত্তরঃ বাহ্যিক নাপাক বস্তু অপসারিত করা উদ্দিষ্ট ইবাদত নয়। অর্থাৎ ইহা ইবাদতের অন্তর্ভূক্ত নয়। বরং এ

দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে উক্ত নাপাক বস্তু থেকে মুক্ত হওয়া। অতএব যে কোন বস্তু দ্বারা যদি তা অপসারিত করা

সম্ভব হয় এবং তার চিহ্ন বিদূরিত করা যায়, তবে উক্ত বস্তু তাকে পবিত্রকারী হবে। চাই তা পানি হোক বা

পেট্রোল অথবা যে কোন বস্তু হোক। এমনকি বিশুদ্ধ মতানুযায়ী সূর্যের তাপ বা বাতাসের মাধ্যমেও যদি উক্ত

বস্তু অপসারিত হয়, তবে সে স্থান পবিত্র হয়ে যাবে। একথাটি শায়খুল ইসলাম ইমাম ইবনু তায়মিয়া (রহঃ)এর পসন্দ।

কেননা অপবিত্র বস্তুটি প্রত্যক্ষ থাকলেই উক্ত স্থানটি নাপাক থাকবে, যখনই উহা অপসারিত হয়ে যাবে তখনই

উক্ত স্থান পবিত্র হবে। অবশ্য নাপাক বস্তুটির রং যদি উঠানো সম্ভব না হয়, তবে কোন অসুবিধা নেই। এ

ভিত্তিতে আমরা বলতে পারি ড্রাই ক্লিনের মাধ্যমে যদি কোট ইত্যাদি সাফ করা হয় এবং তা থেকে বাহ্যিক নাপাকী

দূরীভূত হয়ে যায়, তবে তা পবিত্র হয়ে যাবে।

প্রশ্নঃ (১২৩) দীর্ঘকাল কোন স্থানে পানি জমে থাকার কারণে তা পরিবর্তন হয়ে গেছে। এ পানির বিধান কি?

উত্তরঃ যদিও এ পানি পরিবর্তন হয়ে থাকে তবুও উহা পবিত্র। কেননা বাইরের কোন নাপাক বস্তু দ্বারা তার

পরিবর্তন সৃষ্টি হয়নি। বরং দীর্ঘ সময় থাকার কারণে এই পরিবর্তন এসেছে। এ দ্বারা ওযু বা গোসল করলে তা

বিশুদ্ধ হবে। কিন্তু যদি নিশ্চিত হয় যে, কোন অপবিত্র বস্তু পড়ার কারণে তাতে পরিবর্তন এসেছে তবে তা নাপাক

বলে গণ্য হবে।

প্রশ্নঃ (১২৪) পুরুষদের জন্য স্বর্ণ ব্যবহার হারাম হওয়ার হেকমত কি?

উত্তরঃ হে প্রশ্নকারী আপনি জেনে রাখুন! এবং যারাই এই প্রশ্নের উত্তর পাঠ করবে তাদেরও জেনে রাখা উচিত

যে, প্রত্যেক মু’মিনের জন্য ইসলামী শরীয়তের বিধি-বিধান সমূহের হেকমত হচ্ছে, আল্লাহর নিম্ন লিখিত এই

“আল্লাহ ও তাঁর রাসূল কোন বিষয়ে নির্দেশ দিলে কোন মু’মিন পুরুষ কিংবা মু‘মিন নারীর সে বিষয়ে ভিন্ন কোন

সিদ্ধান্তের অধিকার থাকবে না।” (সূরা আহযাব- ৩৬)

কুরআন ও সুন্নাহ্ থেকে প্রমাণিত কোন বিষয় ওয়াজিব বা হারাম সম্পর্কে কেউ প্রশ্ন উঠালেই আমরা তাকে বলবঃ

এটা আপনার স্রষ্টা আল্লাহ্ তা’আলার নির্দেশ কিংবা আপনার রাসূল মুহাম্মাদ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া

সাল্লাম)এর নির্দেশ। বিষয়টি মেনে নেয়ার জন্য এটুকু কথাই একজন মুমিনের জন্য যথেষ্ট। এই কারণে আয়েশা

(রাঃ)কে যখন জিজ্ঞেস করা হল, ‘কি ব্যাপার, ঋতুবতী নারী রোযার কাযা আদায় করবে, অথচ নামাযের কাযা আদায়

করবে না?’ তিনি জবাবে বললেন,

“আমরা ঋতুবতী হতাম, আমাদেরকে রোযা কাযা আদায় করতে নির্দেশ দেয়া হত, কিন্তু নামায কাযা আদায় করতে

নির্দেশ দেয়া হত না।”[1] 

কুরআন ও সুন্নাহর উক্তি পাওয়া গেলে অন্য কোন হেকমত অনুসন্ধান করা উচিত নয়। বিনা দ্বিধায় মু’মিন সেটা

মেনে নিবে এবং আমল করবে। কোন প্রশ্ন করবে না। অবশ্য উক্ত নির্দেশের হেতু ও হেকমত অনুসন্ধান করা

নিষেধ নয়। কেননা তাতে ১) আন্তরিক প্রশান্তি বৃদ্ধি হয়, ২) বিষয়টির কারণ ও হিকমত জানা থাকলে ইসলামী

শরীয়তের শ্রেষ্ঠত্ব প্রস্ফুটিত হয়। ৩) তাছাড়া বিষয়টির কারণ জানা থাকলে, একই কারণ বিশিষ্ট অন্য কোন

বিষয়ে সুস্পষ্ট কোন উক্তি না পাওয়া গেলে, সেখানে কেয়াস করা সম্ভব হবে। শরীয়তের বিষয়ে হেকমত জানা থাকলে

উল্লেখিত তিনটি উপকার পাওয়া যায়।

উল্লেখিত ভূমিকার পর উপরে বর্ণিত প্রশ্নের জবাবে আমরা বলবঃ নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে

প্রমাণিত হয়েছে, পুরুষের জন্য স্বর্ণ ব্যবহার করা হারাম, নারীর জন্য হারাম নয়।[2]

 এর কারণ হচ্ছে, মানুষের সৌন্দর্যের জন্য স্বর্ণ হচ্ছে সর্বাধিক মূল্যবান বস্তু। বস্তুটি সৌন্দর্য ও গয়না

হিসেবে ব্যবহার করার জন্য। আর পুরুষের এটা দরকার নেই। অর্থাৎ পুরুষ এমন মানুষ নয় যে, তাকে অন্যের সাহায্য

নিয়ে পরিপূর্ণ হতে হবে। বরং তার পৌরুষত্বের কারণে সে নিজেই পরিপূর্ণ মানুষ। তাছাড়া নিজের দিকে অন্য

মানুষকে আকৃষ্ট করার জন্য পুরুষের সৌন্দর্য অবলম্বন করারও দরকার নেই। কিন্তু নারী এর বিপরীত। নারী

অপূর্ণ, তার সৌন্দর্যকে পূর্ণতা দান করা দরকার। একারণে সর্বোচ্চ মূল্যে গয়না দিয়ে তাকে সৌন্দর্য

মন্ডিত করার প্রয়োজন দেখা যায়। যাতে করে তার ঐ সৌন্দর্য স্বামী-স্ত্রীর মাঝে সদ্ভাব সৃষ্টি করে, স্বামীর

কাছে স্ত্রী হয়ে উঠে আবেগময়ী ও আকর্ষনীয়। আর একারণেই নারীর জন্য স্বর্ণ দ্বারা সৌন্দর্য বৃদ্ধি করা বৈধ

করা হয়েছে, পুরুষের জন্য নয়। আল্লাহ তা’আলা নারী প্রকৃতির বিবরণ দিতে গিয়ে এরশাদ করেনঃ

“যে অলংকারে মন্ডিত হয়ে লালিত-পালিত হয় এবং তর্ক-বিতর্ককালে স্পষ্ট বক্তব্যে অসমর্থ?” (তাকে কি

তোমরা আল্লাহর সন্তান হিসেবে সাব্যস্ত করবে?) (সূরা যুখরুফঃ ১৮)

আর এভাবেই শরীয়তে পুরুষের জন্য স্বর্ণ ব্যবহার হারাম হওয়ার হেকমত সুস্পষ্ট হয়ে গেল।

যে সমস্ত পুরুষ স্বর্ণ ব্যবহারে অভ্যস্থ, এ উপলক্ষ্যে আমি তাদেরকে নসীহত করে বলতে চাইঃ তারা এ কাজের

মাধ্যমে আল্লাহ ও রাসূলের নাফারমানী করেছে। নিজেদেরকে নারীদের কাতারে শামিল করেছে। নিজেদের হাতে বা গলায়

জাহান্নামের আগুনের আঙ্গার পরিধান করেছে। যেমনটি নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে প্রমাণিত

হয়েছে।[3]  তাদের উপর আবশ্যক হচ্ছে, আল্লাহ সুব্হানাহু ওয়া তা’আলার কাছে তওবা করা। তবে শরীয়তের

সীমারেখার মধ্যে পুরুষের জন্য রৌপ্য ব্যবহার বৈধ রয়েছে। অনুরূপভাবে অন্য পদার্থও ব্যবহার করা যাবে। যেমন

আংটি বা ঘড়ি ইত্যাদিও ব্যবহারও করা যাবে। তবে কোন ক্রমেই যেন তা অপচয়ের পর্যায়ে না পড়ে সে দিকে খেয়াল

প্রশ্নঃ (১২৫) স্বর্ণের দাঁত লাগানোর বিধান কি?

উত্তরঃ একান্ত প্রয়োজন দেখা না দিলে পুরুষের জন্য স্বর্ণের দাঁত লাগানো জায়েয নয়। কেননা পুরুষের জন্য

স্বর্ণ পরিধাণ করা ও তা গয়না হিসেবে ব্যবহার করা হারাম। কিন্তু নারীর ক্ষেত্রে যদি সচরাচর স্বর্ণের দ্বারা

দাঁত বাঁধানো প্রচলিত থাকে তবে কোন অসুবিধা নেই, স্বর্ণের দাঁত ব্যবহার করতে পারে। কেননা নবী

(ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ

“আমার উম্মতের নারীদের জন্য স্বর্ণ ও রেশম ব্যবহার বৈধ করা হয়েছে। এবং পুরুষদের জন্য তা হারাম করা

হয়েছে।”  অবশ্য খেয়াল রাখতে হবে তা যেন অপচয়ের পর্যায়ে না পড়ে। [4]

এ অবস্থায় নারী বা একান্ত প্রয়োজনে স্বর্ণের দাঁত ব্যবহারকারী পুরুষ যদি মৃত্যু বরণ করে তবে উক্ত স্বর্ণ

খুলে নিতে হবে। কেননা স্বর্ণ একটি সম্পদ। যার অধিকারী হচ্ছে মৃতের উত্তরাধিকারীগণ। স্বর্ণসহ দাফন করে

দিলে একটি সম্পদকে নষ্ট করা হল। কিন্তু যদি দাঁত খুলতে গিয়ে তার মাড়ি কাটা বা ভাঙ্গার দরকার পড়ে, তবে সে

অবস্থায় স্বর্ণ বের করা যাবে না। কেননা মুসলমান জীবিত ও মৃত সর্বাবস্থায় সম্মানিত।

প্রশ্নঃ (১২৬) ওযু করার স্থানে প্রস্রাব করার বিধান কি? বিশেষ করে যদি এতে লজ্জাস্থান প্রকাশিত হয়ে

যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে?

উত্তরঃ কোন মানুষের জন্য এমন কারো সামনে নিজের লজ্জাস্থান উম্মুক্ত করা জায়েয নয় যার জন্য তার

লজ্জাস্থান দেখা হালাল নয়। ওযুখানায় প্রস্রাব করার জন্য যদি লজ্জাস্থান উম্মুক্ত করে, তবে নিঃসন্দেহে মানুষ

উহা প্রত্যক্ষ করবে, ফলে সে এতে হবে গুনাহগার। ফিক্বাহবিদগণ উল্লেখ করেছেন, এ অবস্থায় তার উপর ওয়াজিব

হচ্ছে পানি ব্যবহারের পরিবর্তে কুলুখ ব্যবহার করা। মানুষের দৃষ্টির আড়ালে দূরে কোথাও গিয়ে হাজত পূরা করবে

এবং পাথর বা ঢিলা বা টিসু প্রভৃতি দ্বারা কুলুখ নিবে। ঐ বস্তু দ্বারা তিনবার লজ্জাস্থান মুছবে। তারা বলেন,

কেননা যদি ইস্তেন্জা (পানি ব্যবহার) করে তবে মানুষের সামনে লজ্জাস্থান প্রকাশ হয়ে পড়বে। আর এটা হারাম।

আর যা না করলে হারাম কাজ থেকে বাঁচা যাবে না তা করা ওয়াজিব।

মোট কথা, কোন ক্রমেই মানুষের সামনে লজ্জাস্থান প্রকাশ করা জায়েয নয়। বরং সাধ্যানুযায়ী চেষ্টা করবে

এমন স্থানে যাওয়া যা হবে মানুষের দৃষ্টির আড়ালে।

প্রশ্নঃ (১২৭) দন্ডায়মান অবস্থায় প্রস্রাব করার বিধান কি?

উত্তরঃ নিম্ন লিখিত দু’টি শর্তের ভিত্তিতে দাঁড়িয়ে প্রস্রাব করা যায়ঃ

১)     প্রস্রাবের ছিটা থেকে সে নিরাপদ থাকবে।

২)     কেউ যেন তার লজ্জাস্থানের প্রতি দৃষ্টিপাত না করতে পারে।

প্রশ্নঃ (১২৮) কুরআন মাজীদ সাথে নিয়ে টয়লেটে প্রবেশ করার বিধান কি?

উত্তরঃ বিদ্বানগণ বলেন, কুরআন শরীফ সাথে নিয়ে টয়লেটে প্রবেশ করা জায়েয নয়। কেননা একথা সর্বজন বিদিত

যে, পবিত্র কুরআন এমন সম্মান ও মর্যাদাবান বস্তু যা সাথে নিয়ে টয়লেটের মত স্থানে প্রবেশ করা সমিচীন নয়।

প্রশ্নঃ (১২৯) আল্লাহর নাম সম্বলিত কাগজ সাথে নিয়ে টয়লেটে প্রবেশ করার বিধান কি?

উত্তরঃ আল্লাহর নাম সম্বলিত কাগজ যদি বাইরে প্রকাশিত না থাকে বরং তা পকেটের মধ্যে থাকে বা গোপনে

অপ্রকাশিত অবস্থায় থাকে, তবে তা সাথে নিয়ে টয়লেটে প্রবেশ করা জায়েয। সাধারণত অনেক নাম তো এমন

রয়েছে যা আল্লাহ্র নামের সাথে সম্পর্কযুক্ত। যেমন আবদুল্লাহ বা আবদুল আজীজ প্রভৃতি।

প্রশ্নঃ (১৩০) টয়লেটের মধ্যে ওযু করার দরকার হলে সে সময় কিভাবে ‘বিসমিল্লাহ্’ বলবে?

উত্তরঃ টয়লেটের মধ্যে ওযু করলে মনে মনে বিসমিল্লাহ্ বলবে, মুখে উচ্চারণ করে বলবে না। কেননা ওযু ও গোসলে

‘বিসমিল্লাহ্’ ওয়াজিব হওয়ার বিষয়টি শক্তিশালী নয়। ইমাম আহমাদ (রহঃ) বলেন, ‘ওযুতে বিসমিল্লাহ্ বলার

ব্যাপারে নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বিশুদ্ধ কোন হাদীছ নেই।’ এজন্যে মুগনী গ্রন্থের লিখক

মুওয়াফ্ফাক বিন কুদামা মত প্রকাশ করেছেন যে, ওযুর সময় ‘বিসমিল্লাহ্’ বলা ওয়াজিব নয়।

প্রশ্নঃ (১৩১) প্রস্রাব-পায়খানার সময় কিবলা সামনে বা পিছনে রাখার বিধান কি?

উত্তরঃ এ মাসআলায় বিদ্বানদের থেকে কয়েকটি মত পাওয়া যায়ঃ

একদল বিদ্বান বলেন, বন্ধ ঘর ছাড়া অন্য কোথাও কিবলা সামনে বা পিছনে রেখে প্রস্রাব-পায়খানা করা হারাম।

তারা আবু আইয়্যুব আনসারী (রাঃ)এর হাদীছকে দলীল হিসেবে গ্রহণ করেছেন। নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া

সাল্লাম) বলেনঃ

إِذَا أَتَيْتُمُ الْغَائِطَ فَلَا تَسْتَقْبِلُوا الْقِبْلَةَ وَلَا تَسْتَدْبِرُوهَا بِبَوْلٍ وَلَا غَائِطٍ وَلَكِنْ شَرِّقُوا أَوْ غَرِّبُوا قَالَ أَبُو أَيُّوبَ فَقَدِمْنَا الشَّامَ فَوَجَدْنَا مَرَاحِيضَ قَدْ

“তোমরা পেশাব-পায়খানায় গেলে পায়খানার সময় বা প্রস্রাব করার সময় কিবলাকে সামনে রাখবে না এবং পিছনেও

রাখবে না। বরং পূর্ব ও পশ্চিম দিক ফিরে বসবে।”[5] 

আবু আইয়্যুব বলেন, আমরা শাম দেশে গিয়ে দেখি সেখানকার টয়লেট কা’বার দিকে তৈরী করা আছে। আমরা তা

ব্যবহার করার সময় বাঁকা হয়ে বসতাম অতঃপর আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইতাম।

এ বিষয়টি ছিল খোলা মাঠে। কিন্তু বন্ধ ঘরের মধ্যে যদি হয়, তবে কিবলা সামনে বা পিছনে রাখাতে কোন দোষ

ইবনু ওমার (রাঃ) বর্ণিত হাদীছে বলা হয়েছে, তিনি বলেনঃ

“আমি একদা হাফসার বাড়ীর ছাদে উঠলাম। দেখলাম নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) শামের দিকে মুখ করে

কা’বার দিকে পিছন ফিরে তাঁর প্রয়োজন পূরণ করছেন।” [6]

বিদ্বানদের মধ্যে কেউ কেউ বলেন, ঘেরা স্থানে হোক বা খোলা স্থানে হোক কোন সময়ই কিবলা সম্মুখে বা

পশ্চাতে রাখা যাবে না। তাদের দলীল হচ্ছে পূর্বেল্লিখিত আবু আইয়্যুব আনসারীর হাদীছ। আর ইবনু ওমরের হাদীছ

সম্পর্কে তাদের জবাব হচ্ছেঃ

প্রথমতঃ ইবনু ওমারের হাদীছটি হচ্ছে নিষেধাজ্ঞার পূর্বের।

দ্বিতীয়তঃ নিষেধাজ্ঞাই প্রাধান্য পাবে। কেননা নিষেধাজ্ঞা আসল থেকে স্থানান্তরিত হয়েছে। আর আসল হচ্ছে

জায়েয। তাই জায়েয থেকে স্থানান্তর হয়ে নাজায়েযের বিধানই গ্রহণযোগ্য।

তৃতীয়তঃ আবু আইয়্যুব বর্ণিত হাদীছ নবী (সাঃ)এর উক্তি। আর ইবনু ওমারের হাদীছ তাঁর কর্ম। রাসূল (সাঃ)এর

মৌখিক নির্দেশের হাদীছ কর্মের হাদীছের সাথে সংঘর্ষশীল হতে পারে না। কেননা কর্মে বিশেষত্ব ও ভুলের

সম্ভাবনা থাকে বা অন্য কোন ওযরেরও সম্ভাবনা থাকতে পারে।

এ মাসআলায় আমার মতে, প্রাধান্যযোগ্য কথা হচ্ছে,

খোলা ময়দানে ক্বিবলা সামনে বা পিছনে রেখে শৌচকার্য করা হারাম। চার দেয়ালে ঘেরা স্থানে কিবলাকে পিছনে

রাখা জায়েয হবে সামনে রাখা জায়েয নয়। কেননা কিবলার সম্মুখবর্তী হওয়ার হাদীছ সংরক্ষিত। এখানে বিশেষত্বের

কোন সম্ভাবনা নেই। কিন্তু পশ্চাতে রাখার নিষেধাজ্ঞাকে নবীজীর কর্ম দ্বারা বিশিষ্ট করে দেয়া হয়েছে। তাছাড়া

সম্মুখে রাখার চাইতে পশ্চাতে রাখার বিষয়টি সহজ, এই কারণে (আল্লাহ ভাল জানেন) ঘেরার মধ্যে থাকলে বিষয়টিকে

হালকা করা হয়েছে। তবে সর্বক্ষেত্রে উত্তম হচ্ছে কিবলাকে সম্মুখে বা পশ্চাতে না রাখা।

প্রশ্নঃ (১৩২) বায়ু নির্গত হলে কি ইস্তেন্জা করা আবশ্যক?

উত্তরঃ পশ্চাদদেশ থেকে বায়ু নির্গত হলে ওযু বিনষ্ট হবে। কেননা নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ

“নামায থেকে বের হবে না যে পর্যন্ত বায়ু বের হওয়ার আওয়াজ না শুনবে বা দুর্গন্ধ না পাবে।”[7] 

কিন্তু এতে ইস্তেন্জা করা ওয়াজিব নয়। অর্থাৎ- লজ্জাস্থান ধৌত করা আবশ্যক নয়। কেননা এমন কিছু তো

বের হয়নি যা ধৌত করার দরকার হবে।

তাই বায়ু নির্গত হলে ওযু নষ্ট হবে। এতে ওযু করে পবিত্র হওয়াই যথেষ্ট। অর্থাৎ-কুলি, নাক ঝাড়াসহ মুখমন্ডল

ধৌত করবে, কনুইসহ দু’হাত ধৌত করবে, কানসহ মাথা মাসেহ করবে এবং টাখনু পর্যন্ত দু’পা ধৌত করবে।

এখানে একটি মাসআলার ব্যাপারে আমি মানুষকে সতর্ক করতে চাইঃ কিছু লোক নামাযের সময় হওয়ার পূর্বে পেশাব-

পায়খানা করলে ইস্তেন্জা করে। তারপর নামাযের সময় উপস্থিত হলে ওযু করার পূর্বে ধারণা করে যে, পুনরায়

তাদেরকে ইস্তেন্জা করতে হবে- পুনরায় লজ্জাস্থান ধৌত করতে হবে। কিন্তু এটা সঠিক নয়। কেননা কোন কিছু

বের হওয়ার পর উক্ত স্থান ধৌত করে নিলেই তো তা পবিত্র হয়ে গেল। আর পবিত্র হয়ে গেলে পুনরায় তা ধৌত

করার কোন অর্থ নেই। কেননা ইস্তেন্জা ও শর্ত মোতাবেক কুলুখের উদ্দেশ্য হচ্ছে পেশাব-পায়খানা বের হওয়ার

স্থানকে পবিত্র করা। একবার পবিত্র হয়ে গেলে নতুন করে কোন কিছু বের না হলে আর তা নাপাক হবে না।

প্রশ্নঃ (১৩৩) কখন মেসওয়াক ব্যবহার করার গুরুত্ব বেশী? খুতবা চলাবস্থায় নামাযের অপেক্ষাকারীর মেসওয়াক

করার বিধান কি?

উত্তরঃ নিম্ন লিখিত সময় মেসওয়াক করা গুরুত্বপূর্ণঃ নিদ্রা থেকে জাগ্রত হলে, গৃহে প্রবেশ করে, ওযুতে কুলি

করার সময়, নামাযে দন্ডায়মান হওয়ার সময়।

নামাযের অপেক্ষাকারীর মেসওয়াক করাতে কোন অসুবিধা নেই। কিন্তু খুতবা চলাবস্থায় মেসওয়াক করবে না।

কেননা এটা তাকে খুতবা শোনা থেকে ব্যস্ত করবে। কিন্তু তন্দ্রা কাটানোর প্রয়োজনে মেসওয়াক ব্যবহার

করতে কোন দোষ নেই।

প্রশ্নঃ (১৩৪) ওযুর প্রারম্ভে ‘বিসমিল্লাহ’ বলা কি ওয়াজিব?

উত্তরঃ ওযুর প্রারম্ভে ‘বিসমিল্লাহ’ বলা ওয়াজিব নয়; বরং উহা সুন্নাত। কেননা এক্ষেত্রে বর্ণিত হাদীছ ছহীহ

বলার ক্ষেত্রে অনেকের আপত্তি রয়েছে। ইমাম আহমাদ বিন হাম্বাল (রহঃ) বলেন, ‘এক্ষেত্রে কোন হাদীছ

প্রমাণিত হয়নি।’ বলার অপেক্ষা রাখে না এবং কারো অজানা নয় যে, ইমাম আহমাদ হাদীছ শাস্ত্রের ইমাম এবং

হাফেয। তিনি যদি কোন ক্ষেত্রে বলেন, এ বিষয়ে কোন হাদীছ প্রমাণিত হয়নি, তবে সে ক্ষেত্রে অবশ্যই প্রশ্ন

থেকে যায়। অতএব যে বিষয়টি রাসূলুল্লাহ্ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত নয়

তা মানুষের উপর আবশ্যক করা উচিত নয়। এ জন্যে আমি মনে করি ওযুতে ‘বিসমিল্লাহ’ বলা সুন্নাত। কিন্তু

কারো নিকট যদি এ ক্ষেত্রে হাদীছ ছহীহ বলে প্রমাণিত হয়, তবে ‘বিসমিল্লাহ’ ওয়াজিব বলা তার জন্য আবশ্যক।

কেননা হাদীছে বলা হয়েছে: لاَ وَضُوْءَ অর্থাৎ- ওযু বিশুদ্ধ হবে না। ওযু পূর্ণ হবে না এরূপ অর্থ করা ঠিক নয়।

প্রশ্নঃ (১৩৫) পুরুষ ও নারীর খাতনা করার বিধান কি?

উত্তরঃ খাতনার বিষয়টি মতভেদপূর্ণ। নিকটবর্তী মত হচ্ছে, পুরুষের খাতনা করা ওয়াজিব আর নারীর জন্য

সুন্নাত। এই পার্থক্যের কারণ হচ্ছে, পুরুষের খাতনার মাঝে একটি ইবাদত বিশুদ্ধ হওয়ার শর্ত বিদ্যমান। আর তা

হচ্ছে নামাযের পবিত্রতা। যদি খাতনা না করা হয়, তবে পেশাব বের হলে তার কিছু অংশ লিঙ্গের ঢাকনা চামড়ার

ভিতরে জমা হয়ে থাকে, যা জ্বলনের কারণ হয় বা সেখানে ইন্ফেকশ (ওহভবপঃরড়হ) হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এবং

সর্বনিম্ন অসুবিধা হচ্ছে, যখনই সে নড়াচড়া করবে, তখনই পেশাবের বিন্দু বের হবে এবং তার শরীর ও কাপড় নাপাক

আর নারীর খাতনা করার সর্বোচ্চ উদ্দেশ্য ও উপকারিতা হচ্ছে, তার যৌন উত্তেজনা হ্রাস করা। আর এটা

হচ্ছে তার একটি পূর্ণতা। এখানে খারাপ অতিরিক্ত কোন বিষয়কে বিদূরীত করা হচ্ছে না। যেমন পুরুষের বেলায় হয়ে

বিদ্বানগণ খাতনার ক্ষেত্রে শর্ত করেছেন, খাতনা করলে যদি অসুস্থতা বা প্রাণনাশের আশংকা থাকে, তবে সে

অবস্থায় খাতনা করা ওয়াজিব নয়। কেননা ওয়াজিব বিষয় সমূহ অপারগতা, ধ্বংসের আশংকা ও ক্ষতির কারণে রহিত

পুরুষের খাতনা ওয়াজিব হওয়ার দলীলঃ

প্রথমতঃ এ মর্মে কয়েকটি হাদীছ বর্ণিত হয়েছে যে, ইসলাম গ্রহণ করলে নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)

খাতনা করার আদেশ করেছেন।[8]  আর নবীজীর নির্দেশ মানেই তা পালন করা ওয়াজিব।

দ্বিতয়তঃ খাতনা হচ্ছে মুসলিম ও খৃষ্টান বা হিন্দুদের মাঝে পার্থক্যের অন্যতম একটি বৈশিষ্ট। এমনকি

মুসলমানগণ যুদ্ধ ক্ষেত্রে খাতনার মাধ্যমে নিজেদের নিহত ব্যক্তিদের খুঁজতেন। আর যা বৈশিষ্ট হিসেবে গণ্য তা

হচ্ছে ওয়াজিব। কেননা মুসলমান ও কাফেরের মাঝে পার্থক্য থাকা ওয়াজিব। এই কারণেই নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি

ওয়া সাল্লাম) কাফেরদের সাথে সাদৃশাবলম্বন নিষিদ্ধ করেছেন। তিনি বলেনঃ

“যে ব্যক্তি কোন জাতির সদৃশ অবলম্বন করবে সে তাদেরই অন্তর্ভূক্ত হবে।” [9]

তৃতীয়তঃ খাতনা হচ্ছে শরীর থেকে একটি জিনিস কর্তন করা। বিনা কারণে শরীরের কোন অংশ কর্তন করা হারাম।

আর ওয়াজিব কারণ ছাড়া হারামকে হালাল করা বৈধ নয়। অতএব খাতনা করা ওয়াজিব।

চতুর্থতঃ খাতনা করলে অভিভাবকের পক্ষ থেকে ইয়াতীমের উপর ও তার সম্পদের উপর হস্তক্ষেপ করা হয়। কেননা

এতে খাতনাকারীকে পারিশ্রমিক দেয়া আবশ্যক। বিষয়টি ওয়াজিব না হলে তার শরীরে ও সম্পদে হস্তক্ষেপ করা

জায়েয হত না।

হাদীছের বাণী ও উল্লেখিত যুক্তি দ্বারা আমরা প্রমাণ করলাম যে, পুরুষের খাতনা করা ওয়াজিব।

কিন্তু নারীর খাতনা ওয়াজিব বলার ক্ষেত্রে প্রশ্ন রয়েছে। যেমনটি ইতোপূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে। অতএব সঠিক

মত হচ্ছে, পুরুষের খাতনা করা ওয়াজিব, নারীর নয়। একটি যঈফ হাদীছ রয়েছে। বলা হয়েছে,

“খাতনা পুরুষের জন্য সুন্নাত ও নারীর জন্য সম্মান।”[10] 

হাদীছটি বিশুদ্ধ হলে সকল মতভেদের সমাধান হয়ে যেত।

প্রশ্নঃ (১৩৬) কৃত্রিম দাঁত থাকলে কুলি করার সময় কি উহা খুলে রাখা ওয়াজিব?

উত্তরঃ কারো মুখে যদি দাঁত বাধানো থাকে, তবে ওযুর সময় উহা খুলে রাখা আবশ্যক নয়। উহা হাতের আংটি বা

ঘড়ি ব্যবহার করার মত। ওযুর সময় আংটি খোলা আবশ্যক নয়। বরং উত্তম হচ্ছে উহা নাড়িয়ে দেয়া, কিন্তু এই

নাড়ানোও ওয়াজিব নয়। কেননা নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আংটি পরিধান করতেন কিন্তু এমন

কোন বর্ণনা পাওয়া যায় না যে, তিনি ওযুর সময় উহা খুলে রাখতেন। অথচ মুখের মধ্যে বাঁধানো দাঁতের তুলনায়

আংটিই পানি পৌঁছানোর ব্যাপারে বাধার কারণ হতে পারে। তাছাড়া কোন কোন মানুষের দাঁত অনেক কষ্টে বাধাই

করতে হয়- যা যখন তখন খোলা ও লাগানো সম্ভব হয় না।

প্রশ্নঃ (১৩৭) কান মাসেহ করার জন্য কি নতুন করে পানি নিতে হবে?

উত্তরঃ কান মাসেহ করার জন্য হাতে নতুন পানি নেয়া আবশ্যক নয়। বিশুদ্ধ মতানুযায়ী মুস্তাহাবও নয়। কেননা

নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে ওযুর পদ্ধতি বর্ণনাকারী ছাহাবীদের মধ্যে কেউ এমন কথা উল্লেখ

করেন নি যে, তিনি কান মাসেহ করার জন্য নতুন করে পানি নিতেন। অতএব মাথা মাসেহ করার পর হাতের অবশিষ্ট

ভিজা দিয়েই কান মাসেহ করতে হবে।

প্রশ্নঃ (১৩৮) ওযুতে ধারাবাহিকতার অর্থ কি? ওযুতে মুওয়ালাত বা পরস্পর করার অর্থ কি? এদু’টি কথার বিধান

উত্তরঃ ওযুর মধ্যে ধারাবাহিকতার অর্থ হচ্ছে, আল্লাহ্ যে ধারাবাহিকতার সাথে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের কথা উল্লেখ

করেছেন সেভাবে ওযু করা। আল্লাহ প্রথমে মুখমন্ডল ধোয়ার কথা উল্লেখ করেছেন, তারপর দু’হাত, তারপর মাথা

মাসেহ করা এবং শেষে পা ধৌত করা। কোন মানুষ যদি উল্টাপাল্টা করে যেমন প্রথমে হাত তারপর পা তারপর

মুখমন্ডল ধৌত করে তারপর মাথা মাসেহ করে, তবে তার ওযু হবে না। এই কারণে মুখমন্ডল ধৌত করার পূর্বে

দু’হাত কব্জি পর্যন্ত ধৌত করা ওয়াজিব নয় সুন্নাত। অতএব আল্লাহ যে সিরিয়ালে ওযুর অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের কথা

উল্লেখ করেছেন, তাকেই ধারাবাহিকতা বলে যা বজায় রাখা ওযুর অন্যতম ওয়াজিব। নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া

সাল্লাম) হজ্জে গিয়ে সাঈ করতে গিয়ে প্রথমে ছাফা পর্বতে আরোহণ করে পাঠ করেন,

“নিশ্চয় ছাফা ও মারওয়া পর্বতদ্বয় আল্লাহর নিদর্শন সমূহের অন্তর্গত।” (সূরা বাক্বারা- ১৫৮)

এবং তিনি বলেন, أَبْدَأُ بِمَا بَدَأَ اللَّهُ بِهِ  ‘আল্লাহ যেভাবে শুরু করেছেন সেভাবে শুরু করছি।” [11] এখানে তিনি বর্ণনা করে

দিলেন, কেন তিনি মাওয়াতে যাওয়ার পূর্বে প্রথমে ছাফা পর্বতে আরোহন করলেন। আর তা হচ্ছে, আল্লাহ যার কথা

প্রথমে উল্লেখ করেছেন সেখান থেকেই প্রথমে শুরু করা।

আর মুওয়ালাত বা ওযুর কাজ পরস্পর করার অর্থ হচ্ছে, ওযুর অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ধোয়ার ক্ষেত্রে বিরতি গ্রহণের

মাধ্যমে পৃথক না করা। এর উদাহরণ হচ্ছে, মুখমন্ডল ধৌত করার পর পরই হাত না ধুয়ে দেরী করা। এ অবস্থায়

তার পরস্পরতা নষ্ট হয়ে গেল, তাই তাকে নতুন করে ওযু আরম্ভ করতে হবে। কেননা নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া

সাল্লাম) দেখলেন জনৈক ব্যক্তি ওযু করেছে কিন্তু পায়ে তার নখ বরাবর একটি স্থান রয়েছে। তিনি তাকে

বললেন, ارْجِعْ فَأَحْسِنْ وُضُوءَكَ “তুমি ফিরে গিয়ে সুন্দরভাবে ওযু করে আস।”[12]  আবু দাঊদের বর্ণনায় বলা হয়েছে,

তিনি তাকে পুনরায় নতুন করে ওযু করার নির্দেশ দিলেন। এ থেকে বুঝা যায়, ওযুতে পরম্পরা রক্ষা করা ওয়াজিব।

কেননা ওযু একটি ইবাদত। আর একটি ইবাদতের বিভিন্ন অংশের মাঝে বিচ্ছিন্ন করলে পরস্পরের উপর ভিত্তি করা

অতএব বিশুদ্ধ কথা হচ্ছে, ধারাবাহিকতা ও পরস্পরতা রক্ষা করা ওযুর দু’টি ফরয।

প্রশ্নঃ (১৩৯) ওযুর সময় কেউ যদি কোন একটি অঙ্গ ধৌত করতে ভুলে যায়, তবে তার বিধান কি?

উত্তরঃ ওযু করার সময় কেউ যদি একটি অঙ্গ ভুলে যায়, তবে যদি অচিরেই তা মনে পড়ে, তাহলে তা ধৌত করবে

এবং তার পরবর্তী অঙ্গ ধৌত করবে। যেমন কেউ ওযু করল, কিন্তু বাম হাত ধৌত করতে ভুলে গেল এবং শুধু ডান

হাত ধৌত করে মাথা ও কান মাসেহ্ করে ফেলল। দু’পা ধৌত করার পর খেয়াল হল তার বাম হাত ধৌত করা হয়নি।

তাকে আমরা বলব, আপনি বাম হাত ধৌত করুন, মাথা ও কান মাসেহ্ করুন এবং দু’পা ধৌত করুন। এই অঙ্গগুলো

পুনরায় ধৌত করা এজন্যই ওয়াজিব যে, ওযুতে ধারাবাহিকতা রক্ষা করা আবশ্যক। কেননা ওযুর অঙ্গগুলো যেরূপ

ধারাবাহিক ভাবে আল্লাহ্ উল্লেখ করেছেন, সেভাবেই ধারবাহিকতা বজায় রেখে তা করতে হবে। আল্লাহ্ বলেন,

“তোমরা মুখমন্ডল ধৌত কর, দু’হাত কনুই পর্যন্ত ধৌত কর, মাথা মাসেহ্ কর এবং দু’পা টাখনু পর্যন্ত ধৌত

কর।” (সূরা মায়েদা- ৬)

কিন্তু যদি দীর্ঘ সময় পর স্মরণ হয়, তবে পুনরায় ওযু করবে। যেমন কেউ ওযু করার সময় বাম হাত ধৌত করতে

ভুলে গেল এবং এভাবেই ওযু শেষ করে ফেলল। দীর্ঘ সময় অতিবাহিত হওয়ার পর স্মরণ হল সে তো বাম হাত ধৌত

করেনি। তখন তার উপর আবশ্যক হচ্ছে পুনরায় প্রথম থেকে ওযু করা। কেননা ওযুর অঙ্গ সমূহ ধৌত করার

ক্ষেত্রে পরম্পরা রক্ষা করা আবশ্যক। বরং ওযু বিশুদ্ধ হওয়ার অন্যতম শর্ত।

জেনে রাখা উচিত, যদি সে সন্দেহে থাকে অর্থাৎ- ওযু শেষ হওয়ার পর সন্দেহ হল, সে ডান হাত বা বাম হাত ধৌত

করেছে কি না? কুলি করেছে কি না? নাক ঝেড়েছে কি না? তখন এ সন্দেহের প্রতি গুরুত্বারোপ করবে না। বরং সামনে

অগ্রসর হবে এবং নামায আদায় করবে। কেননা ইবাদত শেষ হওয়ার পর কোন সন্দেহ দেখা দিলে সে দিকে ভ্রুক্ষেপ

করবে না, তার কোন মূল্য নেই। এ ধরণের সন্দেহের প্রতি গুরুত্বারোপ করলে মানুষের সামনে শয়তানের

ওয়াস্ওয়াসার দরজা উম্মুক্ত করা হয়। তখন প্রত্যেক মানুষ নিজ নিজ ইবাদতে সন্দেহ করা শুরু করবে। অতএব

আল্লাহর রহমতের অন্তর্ভূক্ত হচ্ছে, ইবাদত সম্পন্ন করার পর কোন সন্দেহ দেখা দিলে মানুষ সেদিকে ভ্রুক্ষেপ

করবে না, তার প্রতি গুরুত্বারোপ করবে না। অবশ্য সন্দেহ যদি দৃঢ়তায় পরিণত হয়, তবে তার ব্যবস্থা নেয়া

ওযু অবস্থায় পানি বন্ধ হয়ে গেল। তারপর আবার পানি পাওয়া গেল।

প্রশ্নঃ (১৪০) ওযু চলছে এমন সময় পানি বন্ধ হয়ে গেল। পানি যখন ফিরে এল তখন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ শুকিয়ে গেছে।

এখন ওযু কি নতুন করে করতে হবে নাকি বাকী অঙ্গ সমূহ ধৌত করলেই চলবে?

উত্তরঃ মাসআলাটির ভিত্তি হচ্ছে, ওযুর অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ধোয়ার ক্ষেত্রে পরম্পরা রক্ষা করা, ওযু বিশুদ্ধ

হওয়ার শর্ত কি না? এতে বিদ্বানদের মধ্যে দু’টি মত পাওয়া যায়।

একটি মত হচ্ছেঃ মুওয়ালাত বা ওযুর অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সমূহ পরস্পর ধৌত করা অর্থাৎ- একটি না শুকাতে অপর

অঙ্গ ধৌত করা ওযু বিশুদ্ধ হওয়ার অন্যতম শর্ত। একটি অঙ্গ ধৌত করার পর অপর অঙ্গ ধোয়ার পূর্বে যদি

বিচ্ছিন্নতা হয়ে যায়, তবে ওযু বিশুদ্ধ হবে না। এটাই সঠিক মত। কেননা ওযু পূর্ণাঙ্গ একটি ইবাদত। এর একটি

অংশের সাথে অপর অংশের সম্পর্ক থাকা জরূরী। অঙ্গ সমূহ পরস্পর ধৌত করার অর্থ কি? এর অর্থ হচ্ছে, এক

অঙ্গ ধোয়ার পর সাধারণভাবে এতটা সময় বিরতি গ্রহণ না করা যাতে পরের অঙ্গ ধোয়ার পূর্বে তা শুকিয়ে যায়।

কিন্তু এই বিরতি গ্রহণ যদি পবিত্রতা অর্জনের সাথে সম্পর্কিত হয় তবে কোন অসুবিধা নেই। যেমন ওযু শুরু

করেছে এমন সময় লক্ষ্য করে কোন এক অঙ্গে পেইন্ট বা এ জাতীয় কোন বস্তু লেগে আছে, তখন তা অপসারণ

করতে গিয়ে যদি দীর্ঘ সময়ের দরকার পড়ে এবং আগের অঙ্গ শুস্ক হয়ে যায়, তাতে কোন অসুবিধা নেই, ওযু চালিয়ে

যাবে, নতুন করে আবার শুরু করতে হবে না। কেননা এই দীর্ঘতা তো পবিত্রতার কাজের সাথেই সম্পর্কিত। তাছাড়া

এখানে তো ওযুর কাজে বিরতি গ্রহণ করা হয়নি।

কিন্তু পানির জন্য যদি বিরতি হয়, যেমনটি প্রশ্নে উল্লেখ করা হয়েছে, তবে বিদ্বানদের মধ্যে কেউ বলেন, এ

অবস্থায় পরস্পর ধৌত করার শর্ত ক্ষুন্ন হল। অতএব তাকে পুনরায় নতুন করে ওযু শুরু করতে হবে। আবার কেউ

বলেন, নতুন করে ওযু শুরু করার দরকার নেই। কেননা এখানে তো তার কোন এখতিয়ার নেই। সে তো ওযু পূর্ণ

করারই অপেক্ষা করছে। তাই পানি আসলে ওযুর বাকী কাজ পূর্ণ করবে- যদিও ধৌতকৃত অঙ্গ শুকিয়ে যায়।

যে সমস্ত বিদ্বান পরস্পর ধৌত করা ওয়াজিব বলেন, তাদের কথা হচ্ছেঃ অঙ্গ শুস্ক হওয়া না হওয়ার সাথে পরস্পর

ধৌত করার সম্পর্ক নেই। এর সম্পর্ক হচ্ছে সামাজিক পরিচিতির সাথে। সামাজিকভাবে যদি বলা হয় এখানে ওযুর

মাঝে বিচ্ছিন্ন হল বা বিরতি নেয়া হল, তবে তাতে পরস্পরতা নষ্ট হবে। যেমন পানি বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর যারা

পানির অপেক্ষা করে তারা তো পানি নিয়ে আসার কাজে ব্যস্ত, সাধারণভাবে মানুষ এটাকে ওযুর প্রথম অংশ ও

দ্বিতীয় অংশের মাঝে বিচ্ছিন্নতা বলে না। অতএব তারা পানি পাওয়ার পর ওযুর বাকী কাজ পূর্ণ করবে। আর এটাই

উত্তম কথা। তবে যদি উক্ত বিরতি খুব বেশী দীর্ঘ হয়ে যায়, তবে নতুন করে শুরু করে নেয়াটাই ভাল। কেননা কাজটা

প্রশ্নঃ (১৪১) নখ পালিশ ব্যবহার করে ওযু করার বিধান কি?

উত্তরঃ নখ পালিশ হচ্ছে এক প্রকার রং যা নারীরা তাদের নখে ব্যবহার করে থাকে। এটি গাঢ় হয়ে থাকে। নারী যদি

নামাযী হয় তবে তার জন্য তা ব্যবহার করা জায়েয হবে না। কেননা এটা নখে থাকলে ওযুর পানি নখে পৌঁছবে না।

আর কোন বস্তুর কারণে যদি পানি পৌঁছতে বাধার সৃষ্টি হয়, তবে তা ওযু ও গোসলকারীর জন্য ব্যবহার করা

জায়েয নয়। কেননা আল্লাহ বলেন, “তোমরা মুখমন্ডল ও হাতদ্বয় ধৌত কর।” (সূরা মায়েদা-৬) অতএব নারীর

নখে যদি নখ পালিশ থাকে তবে তা তো পানি পৌঁছতে বাধা দিবে। সুতরাং তা থাকা অবস্থায় ওযু বা গোসল করলে

তো তার একটি অঙ্গ শুস্কই রয়ে গেল এবং ওযু বা গোসলের একটি ফরয কাজ পরিত্যাগ করল।

কিন্তু নারী নামাযী না হলে, যেমন ঋতুবতী বা নেফাস বিশিষ্ট হলে, সে এগুলো ব্যবহার করতে পারবে। তবে এ কাজ

কাফের নারীদের বৈশিষ্টের অন্তর্গত। তাই উহা ব্যবহার না করাতেই কল্যাণ। কেননা এতে তাদের সাথে সদৃশ্য হয়ে

আমি শুনেছি, কোন কোন মানুষ নাকি ফতোয়া দিয়েছে যে, এটা হাত মোজা পরিধান করার ন্যায়। সুতরাং গৃহে

অবস্থান করলে নারী তা একদিন একরাত, আর সফরে থাকলে তিনদিন তিন রাত ব্যবহার করতে পারবে। কিন্তু এটি

ভুল ফতোয়া ও অজ্ঞতা। মানুষের শরীর আচ্ছাদিত করে এমন প্রত্যেক বস্তুকেই মোজার সাথে তুলনা করা উচিত

নয়। ইসলামী শরীয়তে যে মোজার উপর মাসেহ করার অনুমতি দেয়া হয়েছে তা শুধুমাত্র পায়ের মোজার সাথে

সংশ্লিষ্ট। আর তা প্রয়োজনের সময়। কেননা ঠান্ডার কারণে বা ময়লা-আবর্জনা থেকে সংরক্ষণ প্রভৃতির জন্য

পায়ে মোজা পরিধাণ করার প্রয়োজন পড়ে। এজন্য শরীয়ত মানুষের প্রতি সহজ করে এর উপর মাসেহ করা বৈধ

অনেক সময় ওরা নখ পালিশ ব্যবহারকে পাগড়ীর উপর মাসেহ করার সাথে তুলনা করে। এটা আরেক অজ্ঞতা। কেননা

পাগড়ীর স্থান হচ্ছে মাথা। আর মাথার ক্ষেত্রে আগে থেকেই সহজ করা রয়েছে। তা ধৌত করতে হবে না। সেখানে

মাসেহ করতে হবে। কিন্তু হাত এর বিপরীত। হাতের ফরয হচ্ছে তা ধৌত করা। এ কারণে নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি

ওয়া সাল্লাম) নারীদের হাত মোজাতে মাসেহ করা বৈধ করেননি। অথচ তা হাত ঢেকে রাখে। অতএব পানি পৌঁছতে

বাধাদানকারী যে কোন পর্দা হলেই তাকে পাগড়ী বা মোজার সাথে তুলনা করা জায়েয নয়।

প্রত্যেক মুসলমানের উপর ওয়াজিব হচ্ছে সত্য উদ্ঘাটনের জন্য প্রাণান্তকর চেষ্টা করা। এমন কোন ফতোয়া

না দেয়া যার জন্য আল্লাহ্র সামনে তাকে জবাবদিহি করতে হবে। কেননা এটা আল্লাহর দ্বীন ও শরীয়ত, এখানে

অনুমান ও ধারণা করে কোন কিছু বলার অবকাশ নেই। (আল্লাহ্ তাওফীক দাতা ও সঠিক পথ প্রদর্শক।)

প্রশ্নঃ (১৪২) শরীয়ত সম্মত ওযুর পদ্ধতি কি?

উত্তরঃ শরীয়ত সম্মত ওযুর পদ্ধতি দু’ভাগে বিভক্তঃ

প্রথম ভাগ হচ্ছে: ওয়াজিব পদ্ধতি। যা না করলে ওযুই হবে না। আর তা হচ্ছে পবিত্র কুরআনে উল্লেখিত বিষয়

সমূহ। আল্লাহ্ বলেনঃ

“হে ঈমানদারগণ! যখন তোমরা ছালাতের ইচ্ছা কর, তখন তোমরা মুখমন্ডল ও হাত দু’টি কনুই পর্যন্ত ধৌত

কর, মাথা মাসেহ কর এবং দু’পা টাখনু পর্যন্ত ধৌত কর।” (সূরা মায়িদা- ৬)

এর বর্ণনা হচ্ছে, মুখমন্ডল একবার ধৌত করতে হবে। কুলি করা ও নাক ঝাড়া মুখমন্ডল ধৌত করার অন্তর্গত।

হাত ধৌত করার সীমানা হচ্ছে মধ্যমা আঙ্গুলের প্রান্ত সীমা থেকে কনুই পর্যন্ত একবার ধৌত করা। হাত

ধৌত করার সময় কব্জি ধৌত করা হল কি না এ ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। অনেক লোক অসতর্কতা বশত:

শুধু হাতের উপর অংশ ধৌত করে এবং কব্জি ছেড়ে দেয়। এটা বিরাট ভুল। তারপর একবার মাথা মাসেহ করা। কান

মাসেহ করা মাথা মাসেহের অন্তর্গত। শেষে দু’পা টাখনু পর্যন্ত একবার ধৌত করা। এটা হচ্ছে ওযুর সর্বনিম্ন

ওয়াজিব পদ্ধতি।

দ্বিতীয় ভাগ হচ্ছেঃ মুস্তাহাব পদ্ধতি। প্রথমে বিস্মিল্লাহ্ বলে ওযু শুরু করবে। দু’হাত কব্জি পর্যন্ত তিনবার

ধৌত করবে। তারপর তিন চুল্লু পানি দ্বারা তিনবার কুলি করবে ও নাক ঝাড়বে। তিনবার মুখমন্ডল ধৌত করবে।

এরপর দু’হাত কনুইসহ তিন বার করে ধৌত করবে। প্রথমে ডান হাত তারপর বাম হাত। একবার মাথা মসেহ করবে।

মাথা মাসেহের নিয়ম হচ্ছেঃ দু’হাত পানিতে ভিজিয়ে, ভিজা হাত মাথার সামনের দিক থেকে শুরু করে পিছনের দিকে নিয়ে

যাবে, অতঃপর আবার তা সামনের দিকে ফিরিয়ে নিয়ে আসবে। এরপর কান মাসেহ করবে। দু’তর্জনী দু’কানের ছিদ্রে

প্রবেশ করিয়ে ভিতরের অংশ মাসেহ করবে এবং বৃদ্ধাঙ্গুলি দিয়ে কানের বাইরের অংশ মাসেহ্ করবে। সব শেষে দু’পা

টাখনুসহ তিনবার করে ধৌত করবে। প্রথমে ডান পা তারপর বাম পা।

ওযু শেষ হলে এই দু’আটি পাঠ করবেঃ

أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيكَ لَهُ وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ اللَّهُمَّ اجْعَلْنِي مِنَ التَّوَّابِينَ وَاجْعَلْنِي مِنَ الْمُتَطَهِّرِينَ

“আশহাদু আল্লা-ইলা-হা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা-শারীকা লাহু ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়া রাসূলুহু।

আল্লাহুম্মাজ্ আলনী মিনাত্ তাওয়াবীনা ওয়াজ্ আলনী মিনাল মুতাতাহ্হেরীন।”

অর্থ- “আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ব্যতীত উপাসনার যোগ্য কোন মা‘বুদ নেই। তিনি একক তাঁর কোন

শরীক নেই। এবং আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) তাঁর বান্দাহ ও রাসূল। হে

আল্লাহ্! আমাকে তওবাকারীদের অন্তর্ভূক্ত কর এবং পবিত্রতা অর্জনকারীদের মধ্যে শামিল কর।”

যে ব্যক্তি ইহা পাঠ করবে তার জন্য বেহেস্তের আটটি দরজাই খুলে দেয়া হবে। যে দরজা দিয়ে ইচ্ছা সে জান্নাতে

প্রবেশ করবে। এভাবেই নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে ছহীহ্ সনদে হাদীছটি বর্ণিত হয়েছে।[13]

يَاأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِذَا قُمْتُمْ إِلَى الصَّلَاةِ فَاغْسِلُوا وُجُوهَكُمْ وَأَيْدِيَكُمْ إِلَى الْمَرَافِقِ وَامْسَحُوا بِرُءُوسِكُمْ وَأَرْجُلَكُمْ إِلَى الْكَعْبَيْنِ

• অসুস্থ ব্যক্তির পবিত্রতা অর্জন করার পদ্ধতি

সম্মানিত শাইখ ইবনু ঊছাইমীন (রহঃ) বলেন,

অসুস্থ ব্যক্তি কিভাবে পবিত্রতা অর্জন করবে ও ছালাত আদায় করবে সে ব্যাপারে এটি একটি সংক্ষিপ্ত পত্র।

অসুস্থ ব্যক্তির অবস্থার বিচার করে তার জন্য ইসলামী শরীয়তে কিছু বিধান নির্দিষ্ট করা হয়েছে। কেননা আল্লাহ্

তা’আলা নবী মুহাম্মাদ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)কে ক্ষমাশীল সর্বোত্তম সঠিক ধর্ম দিয়ে প্রেরণ

করেন, যা হচ্ছে সহজ ও সরলতার বৈশিষ্টে অনন্য। আল্লাহ্ এরশাদ করেনঃ

“তিনি তোমাদের জন্য ধর্মে কোন অসুবিধা রাখেননি।” (সূরা হাজ্জ- ৭৮)

তিনি আরো বলেনঃ

“আল্লাহ্ তোমাদের জন্য সহজতা চান, তোমরা অসুবিধায় পড় তিনি তা চান না।” (সূরা বাক্বারা- ১৮৫)

আল্লাহ্ আরো বলেনঃ

“তোমরা সাধ্যানুযায়ী আল্লাহকে ভয় কর এবং তাঁর কথা শোন ও আনুগত্য কর।” (সূরা তাগাবুন- ১৬)

নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন,

“নিশ্চয় এই ধর্ম অতি সহজ।” [14]

তিনি আরো বলেনঃ

“আমি যখন কোন বিষয়ে তোমাদেরকে আদেশ করি, তখন সাধ্যানুযায়ী তা বাস্তবায়ন কর।” [15]

উল্লেখিত মূলনীতির ভিত্তিতে ওযর বিশিষ্ট লোকদের জন্য আল্লাহ তা’আলা ইবাদতকে সহজ ও হালকা করে

দিয়েছেন। যাতে করে তারা কোন অসুবিধা ও কষ্ট ছাড়াই তাঁর ইবাদত সম্পাদন করতে পারে। (আল্ হামদু লিল্লাহি

রাব্বিল আলামীন)

অসুস্থ ব্যক্তির পবিত্রতা অর্জনের পদ্ধতি:

১) অসুস্থ ব্যক্তির উপর আবশ্যক হল ছোট নাপাকী থেকে পবিত্রতা অর্জনের জন্য পানি দ্বারা ওজু করা এবং

বড় নাপাকী থেকে পবিত্রতা হাসিলের জন্য পানি দ্বারা গোসল করা।

২) পানি দ্বারা যদি পবিত্রতা অর্জন করতে না পারে- অপারগতার কারণে বা রোগ বেড়ে যাবে এই আশংকার কারণে

বা ভয় করে সুস্থ হতে দেরী হয়ে যাবে- তবে এহেন পরিস্থিতিতে সে তায়াম্মুম করবে।

৩) তায়াম্মুমের পদ্ধতি হল- হাত দুটিকে পবিত্র মাটিতে একবার মারবে তারপর তা দিয়ে সমস্ত মুখমন্ডল মাসেহ

করবে। অতঃপর উভয় হাতকে কব্জি পর্যন্ত মাসেহ করবে। আগে ডান হাত পরে বাম হাত।

৪) রুগী নিজে যদি পবিত্রতা অর্জন করতে অক্ষম হয়, তবে অন্য ব্যক্তি তাকে ওযু বা তায়াম্মুম করিয়ে দিবে।

৫) ওযু বা গোসলের কোন অঙ্গে যদি যখম থাকে আর পানি দিয়ে ধৌত করলে তাতে ক্ষতি হওয়ার আশংকা থাকে,

তবে পানি দিয়ে হাতকে ভিজিয়ে সে স্থানকে মুছে দিবে। এভাবে মুছে দেয়াতেও যদি ক্ষতির আশংকা হয়, তবে তার জন্য

তায়াম্মুম করে নিবে।

৬) ভাঙ্গা-মচকা ইত্যাদি কারণে যদি শরীরের কোন অঙ্গে পট্টি বা ব্যান্ডেজ থাকে তবে সে স্থান ধৌত করার

পরিবর্তে পানির মাধ্যমে তার উপর মাসেহ করে নিবে। এক্ষেত্রে তায়াম্মুম করবে না। কেননা মাসেহ ধোয়ার

পরিবর্তে ব্যবহার করা হয়েছে।

৭) কোন বস্তু দিয়ে তায়াম্মুম করবে? দেয়াল বা অন্য কোন বস্তু যেখানে ধূলা লেগে আছে তা দিয়ে তায়াম্মুম করা

যাবে। দেয়াল যদি মাটি জাতীয় বস্তু ছাড়া অন্য কোন বস্তু দ্বারা লেপন করা থাকে যেমন রং বা পেইন্ট, তবে

সেখানে তায়াম্মুম জায়েয হবে না। কিন্তু যদি উক্ত দেয়ালে ধূলা লেগে থাকে তবে তাতে তায়াম্মুম করতে অসুবিধা নেই।

৮) যমিনের উপর হাত রেখে বা দেয়াল থেকে বা যে বস্তুতে ধূলা আছে তা থেকে তায়াম্মুম করা সম্ভব না হয় তবে

কোন পাত্র বা রুমালের মধ্যে কিছু মাটি রেখে দিতে পারে। তারপর তা দিয়ে তায়াম্মুম করবে।

৯) এক ওয়াক্তের ছালাত আদায়ের উদ্দেশ্যে তায়াম্মুম করার পর যদি তায়াম্মুম অবশিষ্ট থাকে তবে তা দিয়ে আরেক

ওয়াক্তের ছালাত আদায় করতে পারবে। এক্ষেত্রে পরবর্তী ছালাতের জন্য আবার তায়াম্মুম করার দরকার নেই।

কেননা সে তো পবিত্রই আছে। আর পবিত্রতা ভঙ্গকারী কোন কারণও ঘটেনি। এমনিভাবে বড় নাপাকী থেকে যদি

তায়াম্মুম করে তবে পরবর্তী বড় নাপাকীতে লিপ্ত হওয়ার আগ পর্যন্ত আর তায়াম্মুম করতে হবে না। কিন্তু এর

মাঝে ছোট নাপাকীতে লিপ্ত হলে তার জন্য তায়াম্মুম করতে হবে।

 ১০) অসুস্থ ব্যক্তির উপর ওয়াজিব হল সকল প্রকার নাপাকী থেকে স্বীয় শরীরকে পাক-পবিত্র করা। যদি পাক-

পবিত্র হতে সক্ষম না হয়, তবে সংশ্লিষ্ট নাপাকী নিয়েই ছালাত আদায় করবে। তার উক্ত ছালাত বিশুদ্ধ হবে এবং

পুনরায় উক্ত ছালাত দোহরাতে হবে না।

১১) পবিত্র কাপড় নিয়ে ছালাত আদায় করাও অসুস্থ ব্যক্তির উপর ওয়াজিব। কাপড় নাপাক হয়ে গেলে তা ধৌত

করা অথবা তা বদলিয়ে অন্য কাপড় পরিধান করা ওয়াজিব। কিন্তু এরূপ করা ঐ যদি সাধ্যাতীত হয় তবে সংশ্লিষ্ট

নাপাকী নিয়েই ছালাত আদায় করবে। উক্ত ছালাত বিশুদ্ধ হবে এবং তা আর ফিরিয়ে পড়তে হবে না।

 ১২) পবিত্র স্থান ও পবিত্র বস্তুর উপর ছালাত আদায় করাও রুগীর উপর ওয়াজিব। যদি ছালাতের স্থান নাপাক

হয়ে যায় তবে তা ধৌত করা বা কোন পবিত্র বস্তু দ্বারা পরিবর্তন করা বা সেখানে কোন পবিত্র বস্তু বিছিয়ে

দেয়া ওয়াজিব। যদি এর কোনটাই সম্ভব না হয় তবুও ঐ অবস্থায় ছালাত আদায় করবে এবং তার ছালাত শুদ্ধ হবে।

অন্য সময় তা ফিরিয়ে পড়ারও দরকার হবে না।

১৩) পবিত্রতা হাসিল করতে অপারগতার কারণে কোন রুগীর জন্য ছালাত পরিত্যাগ করা বা কাযা করা কোন

ক্রমেই বৈধ নয়। সাধ্যানুযায়ী সে পবিত্রতা অর্জন করবে। তারপর সময়ের মধ্যেই ছালাত আদায় করে নিবে- যদিও

তখন তার শরীরে বা কাপড়ে বা ছালাতের স্থানে নাপাকী লেগেই থাকে যা দূরীভূত করা তার পক্ষে সম্ভব হয়নি।

কেননা আল্লাহ্‌ তাআলা বলেন: 

অর্থ: তোমরা সাধ্যানুযায়ী আল্লাহ্‌কে ভয় কর। (সূরা তাগাবূন: ১৬)

 ১৪) কোন মানুষ যদি বহুমূত্র রোগে আক্রান্ত থাকে, তবে সে ছালাতের ওয়াক্ত আসার আগে যেন ওযু না করে।

যখন ছালাতের ওয়াক্ত আসবে তখন তার লজ্জাস্থান ধৌত করবে, তারপর উক্ত স্থানে পবিত্র কোন বস্তু বেঁধে

দিবে যাতে পেশাব কাপড় বা শরীরে ছড়িয়ে না যায়। তারপর ওযু করে ছালাত আদায় করবে। এরূপ সে প্রত্যেক ফরয

ছালাতের সময় করবে। এরূপ করা যদি তার উপর অধিক কষ্টকর হয় তবে দু্লছালাতকে একত্রে পড়া তার জন্য

জায়েয আছে। যোহর এবং আছর একত্রে এবং মাগরিব ও এশা একত্রে আদায় করে নিবে। আর ফরয ছালাতের সাথে

সংশ্লিষ্ট সুন্নাতের জন্য আলাদা ওযু দরকার নাই তবে অন্য কোন নফল ছালাত আদায় করতে চাইলে তাকে ফরযের

নিয়মে পবিত্রতা অর্জন করতে হবে।

প্রশ্নঃ (১৪৩) সতর্কতা বশতঃ প্রত্যেকবার ওযু করার সময় সুতার মোজা খোলার বিধান কি?

উত্তরঃ এটা সুন্নাত পরিপন্থী কাজ। এতে ভ্রান্ত মতবাদ শিয়া রাফেযীদের সাথে সদৃশ্য হয়ে যায়। কেননা তারা

মোজার উপর মাসেহ করা জায়েয মনে করে না। অথচ মুগীরা বিন শো’বা (রাঃ) যখন নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া

সাল্লাম) এর মোজা খুলতে চাইলেন, তিনি তাকে বললেনঃ

“খুলতে হবে না। কেননা পবিত্র অবস্থায় আমি ও দু’টি পরিধান করেছি।” তারপর তার উপর মাসেহ করলেন। [16]

মোজার উপর মাসেহ করার সময় সীমা

প্রশ্নঃ (১৪৪) সুতার মোজার উপর মাসেহ করার সময়সীমা কখন থেকে গণনা শুরু করতে হবে?

উত্তরঃ এটি গুরুত্বপূর্ণ একটি মাসআলা। এর সঠিক বিবরণ মানুষের জানা দরকার। তাই বিস্তারিতভাবে আমি

প্রশ্নটির জবাব দিব। ইন্শাআল্লাহ্।

কুরআন ও সুন্নাহ্র দলীলের ভিত্তিতে মোজার উপর মাসেহ করার বিষয়টি সুপ্রমাণিত। আল্লাহ্ বলেন,

“হে ঈমানদারগণ! যখন তোমরা নামাযের ইচ্ছা কর, তখন তোমরা মুখমন্ডল ও হাত দু’টি কনুই পর্যন্ত ধৌত

কর, মাথা মাসেহ কর এবং দু’পা টাখনু পর্যন্ত ধৌত কর।” (সূরা মায়িদা- ৬)

উল্লেখিত আয়াতের মধ্যে أَرْجُلَكُمْ শব্দটিতে لام অক্ষরটিতে যবর এবং যের দিয়ে উভয়ভাবে পড়া যায়। যবর দিয়ে পাঠ

করলে তা وُجُوهَكُمْ শব্দের উপর ভিত্তি করবে। তখন মুখমন্ডল ধৌত করার মত পাও ধৌত করতে হবে। আর যের

দিয়ে পাঠ করলে তখন তার ভিত্তি হবে بِرُءُوسِكُمْ শব্দের উপর। তখন পা ও মাথা মাসেহের অন্তর্ভূক্ত হবে। অতএব

পূর্বোল্লিখিত দু’ক্বিরাত অনুযায়ী পদ যুগল ধৌতও করা যায় এবং মাসেহও করা যায়। সুন্নাতে নববীতে বর্ণনা

করে দেয়া হয়েছে যে, কখন ধৌত করতে হবে এবং কখন মাসেহ করতে হবে? সুতরাং পা যখন অনাবৃত থাকবে তখন তা

ধৌত করতে হবে। আর মোজা প্রভৃতি দ্বারা আবৃত করা থাকলে তা মাসেহ করবে।

হাদীছে নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে মুতাওয়াতির সনদে মোজার উপর মাসেহ করা প্রমাণিত

হয়েছে। যেমনটি জনৈক কবি বলেছেনঃ

মোতাওয়াতির পর্যায়ের হাদীছ সমূহ হচ্ছেঃ ১) নবীজীর উপর মিথ্যারোপ করা ২) আল্লাহর জন্য ঘর (মসজিদ)

তৈরী করা। ৩) ক্বিয়ামত দিবসে আল্লার দিদার লাভ। ৪) শাফাআতের বর্ণনা। ৫) হাওয কাওছার ৬) মোজার উপর

মোজার উপর মাসেহ করার বর্ণনা নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে মুতাওয়াতির সনদে বর্ণিত। তাই

পবিত্র (ওযু) অবস্থায় কোন মানুষ মোজা পরিধান করে থাকলে- ওযু করার সময় মোজা খুলে পা ধৌত করার

চাইতে উক্ত মোজার উপর মাসেহ করা উত্তম। এই কারণে মুগীরা বিন শো’বা (রাঃ) যখন নবী (ছাল্লাল্লাহু

আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর ওযুর সময় তাঁর পরিহিত মোজা খুলতে চাইলেন, তিনি বললেন, “খুলতে হবে না। কেননা

পবিত্র অবস্থায় আমি তা পরিধান করেছি।”[17] তারপর তার উপর মাসেহ করলেন।

মোজার উপর মাসেহ করার কয়েকটি শর্ত রয়েছেঃ

প্রথম শর্তঃ ছোট বড় সবধরণের নাপাকী থেকে পূর্ণরূপে পবিত্রতা অর্জন করার পর মোজা পরিধান করবে। যদি

পবিত্রতা অর্জন না করে মোজা পরিধান করে, তবে তাতে মাসেহ করা বিশুদ্ধ হবে না।

দ্বিতীয় শর্তঃ মাসেহ করার নির্দিষ্ট সময় সীমার মধ্যে মাসেহ করতে হবে। এর বর্ণনা অচিরেই আসবে।

ইনশাআল্লাহ।

তৃতীয় শর্তঃ ছোট নাপাকী থেকে পবিত্রতা অর্জন তথা ওযুর ক্ষেত্রে মাসেহ হতে হবে। কিন্তু গোসল ফরয হলে

মোজা অবশ্যই খুলতে হবে এবং সমস্ত শরীর ধৌত করতে হবে। এ জন্য জানাবতের ক্ষেত্রে মোজার উপর মাসেহ

করা যাবে না। যেমনটি ছাফওয়ান বিন আস্সাল (রাঃ) বর্ণিত হাদীছে রয়েছেঃ তিনি বলেন, আমরা সফরে থাকলে নবী

(ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদেরকে আদেশ করতেন, নাপাক না হলে আমরা যেন তিন দিন তিন রাত

মোজা না খুলি। [18]

মোজার উপর মাসেহ করার সময় সীমাঃ মুক্বীম তথা গৃহে অবস্থানকারীর জন্য একদিন একরাত তথা ২৪ ঘন্টা। আর

মুসাফিরের জন্য তিন দিন তিন রাত তথা ৭২ ঘন্টা। নামায কয় ওয়াক্ত হল সেটা বিষয় নয়, আসল কথা হচ্ছে

নির্ধারিত সময় পূর্ণ হওয়া।

কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, এই সময় গণনা কখন থেকে শুরু হবে? এই হিসাব শুরু হবে প্রথম বার মাসেহ করার সময় থেকে।

মোজা পরিধান বা ওযু ভঙ্গের সময় থেকে হিসাব শুরু হবে না। কেননা হাদীছে ‘মাসেহ’ শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে।

يَاأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِذَا قُمْتُمْ إِلَى الصَّلَاةِ فَاغْسِلُوا وُجُوهَكُمْ وَأَيْدِيَكُمْ إِلَى الْمَرَافِقِ وَامْسَحُوا بِرُءُوسِكُمْ وَأَرْجُلَكُمْ إِلَى الْكَعْبَيْنِ

যখন এই কাজটি হবে তখনই শব্দটির ব্যবহার হবে। “মুক্বীম একদিন একরাত্র মাসেহ করবে এবং মুসাফির তিনদিন

তিন রাত মাসেহ করবে।” প্রথমবার মাসেহ করার সময় থেকে হিসাব শুরু হবে। তখন থেকে নিয়ে ২৪ ঘন্টা পূর্ণ হলেই

মুক্বীমের নির্দিষ্ট সময় শেষ। আর ৭২ ঘন্টা পূর্ণ হলে মুসাফিরের নির্দিষ্ট সময় শেষ।

বিষয়টিকে অধিক সুস্পষ্ট করার জন্য একটি উদাহরণ পেশ করা হচ্ছেঃ

জনৈক ব্যক্তি ফজরের সময় পবিত্রতা অর্জন করে মোজা পরিধান করেছে। এরপর যোহর পর্যন্ত পবিত্র

অবস্থায় থেকেছে। এমনকি আছর পর্যন্ত তার ওযু নষ্ট হয়নি। তাই সে ঐ ওযুতে যোহর ও আছর নামায সময়মত

আদায় করেছে। তারপর মাগরিবের পূর্বে বিকাল ৫টার সময় ওযু করেছে এবং মোজার উপর মাসেহ করেছে। এই ৫টা

থেকে তার সময়ের হিসাব শুরু হবে। সে পরবর্তী দিন বিকাল ৫টা পর্যন্ত মোজার উপর মাসেহ করতে পারবে। যদি

পরবর্তী দিন ৫টা বাজার পনর মিনিট আগে মোজাতে মাসেহ করে এবং এশা পর্যন্ত তার ওযু ভঙ্গ না হয়, তবে ঐ

মাসেহকৃত ওযু দ্বারা মাগরিব নামায আদায় করতে পারবে কোন অসুবিধা নেই। অতএব এই লোক প্রথমবার ওযু

করার পর প্রথম দিন যোহর আছর মাগরিব এশা এবং দ্বিতীয় দিন ফজর যোহর আছর মাগরিব ও এশা মোট নয়টি

নামায আদায় করতে পারছে। কিন্তু সাধারণ মানুষের ধারণা হচ্ছে, মাসেহের মাধ্যমে শুধুমাত্র পাঁচ ওয়াক্ত নামায

আদায় করা যায়। অথচ একথার কোন ভিত্তি নেই।

শরীয়তে মাসেহ করার যে সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে তা শুরু হবে প্রথমবার মাসেহ করার সময় থেকে। এই

উদাহরণে আপনি দেখলেন কতগুলো ছালাত আদায় করা সম্ভব। উল্লেখিত উদাহরণে যে সময় দেখানো হয়েছে, তা

যদি শেষ হয়ে যায় এবং তারপর মাসেহ করে, তবে তা বাতিল বলে গণ্য হবে এবং তার ওযু হবে না। কিন্তু মাসেহের

নির্দিষ্ট সময় পূর্ণ হওয়ার কিছুক্ষণ পূর্বে মাসেহ করে যদি আর ওযু ভঙ্গ না হয়, তবে যতক্ষণ ওযু ভঙ্গ না হবে

নামায পড়তে পারবে- যদিও নির্দিষ্ট সময় অতিবাহিত হয়ে যায়। কেননা নামায আদায় করার সময় সে তো পবিত্র

অবস্থাতেই রয়েছে।

নির্দিষ্ট সময় অতিবাহিত হলেই মাসেহ ভঙ্গ হয়ে যাবে এমন কথা দলীল বিহীন। কেননা সময় অতিবাহিত হওয়ার অর্থ

হচ্ছে, আর মাসেহ করা যাবে না। এমন অর্থ নয় যে, সে আর পবিত্র থাকবে না। যে সময় সীমা দেয়া হয়েছে তা মাসেহের

জন্য প্রজোয্য পবিত্রতার জন্য নয়। তাই সময় অতিবাহিত হলেই ওযু নষ্ট হয়ে যাবে এর কোন দলীল নেই।

অতএব আমরা বলব, যখন কিনা এই ব্যক্তি বিশুদ্ধ শরঈ দলীলের ভিত্তিতে ওযু করে পবিত্র হয়েছে, তখন তার ওযু

নষ্ট হয়েছে একথার পক্ষেও বিশুদ্ধ শরঈ দলীল দরকার। আর যেহেতু সময় অতিবাহিত হলেই ওযু ভঙ্গ হয়ে যাবে

এরকম কোন দলীল নেই, সেহেতু ওযু ভঙ্গ না হওয়া পর্যন্ত সে পবিত্র হিসেবেই অবশিষ্ট থাকবে।

মুসাফিরের সময়সীমা তিনদিন তিনরাত। অর্থাৎ ৭২ ঘন্টা। এই হিসেব শুরু হবে প্রথমবার মাসেহের সময় থেকে।

এজন্য হাম্বলী মাযহাবের ফিক্বাহবীদগণ উল্লেখ করেছেন, কোন লোক যদি মুক্বীম অবস্থায় মোজা পরিধান

করে অতঃপর নিজ শহরে থাকাবস্থাতেই তার ওযু ভঙ্গ হয়, এরপর সফর করে এবং সফরের স্থানে গিয়ে ওযু করে

মাসেহ করে, তবে তাঁরা বলেন, সে মুসাফিরের সময়সীমা পূর্ণ করবে। এ দ্বারা বুঝা যায় যারা বলেন, মোজা পরিধান

করে প্রথমবার ওযু ভঙ্গ হওয়ার পর থেকে সময় গণনা শুরু হবে, তাদের এই কথা দুর্বল।

কখন মোজার উপর মাসেহ বাতিল হবে? ১) সময় অতিবাহিত হলে এবং ২) মোজা খুলে ফেললে। অর্থাৎ- মোজা খুলে

ফেললে আর মাসেহ করা যাবে না, কিন্তু সে পবিত্র অবস্থাতেই থাকবে যতক্ষণ তার ওযু ভঙ্গ না হয়। একথার দলীল

হচ্ছে ছাফ্ওয়ান বিন আস্সালের পূর্ববর্তী হাদীছ। তিনি বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ্ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)

আমাদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন মোজা না খোলার।’ এ থেকে বুঝা যায়, মোজা খুলে ফেললে মাসেহ বাতিল হয়ে যাবে।

অর্থাৎ- একবার মাসেহ করার পর যদি মোজা খুলে ফেলে, তবে পুনরায় তা পরিধান করে তাতে মাসেহ করতে পারবে না-

যতক্ষণ না সে নতুন করে পূর্ণ ওযুর মাধ্যমে পা ধৌত করে মোজা পরিধান করবে।

কিন্তু মোজা খুলে ফেললে পবিত্রতা অবশিষ্ট থাকবে। কেননা মাসেহ করার মাধ্যমে যখন কোন ব্যক্তি ওযু করবে

তখন শরঈ দলীলের ভিত্তিতেই সে পবিত্রতা অর্জন করে থাকে, সুতরাং তার এই পবিত্রতা নষ্ট হয়েছে একথা বলার

জন্য শরঈ দীলল দরকার। আর মাসেহ করে ওযু করার পর মোজা খুলে ফেললে ওযু বিনষ্ট হয়ে যাবে একথার পক্ষে

কোন দলীল নেই। কিন্তু একথার দলীল আছে যে, একবার মাসেহ করার পর মোজা খুলে ফেললে পুনরায় পরিধান করে

আবার তাতে মাসেহ করা যাবে না। যেমনটি পূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে। (আল্লাহ্ তাওফীক্ব দাতা)

প্রশ্নঃ (১৪৫) পাতলা বা ছেঁড়া মোজাতে মাসেহ করার বিধান কি?

উত্তরঃ বিশুদ্ধ মত হচ্ছে, ছেঁড়া মোজা এবং বাইরে থেকে চামড়া দেখা যায় এমন পাতলা মোজার উপর মাসেহ করা

জায়েয। যে অঙ্গের উপর মাসেহ হবে তাকে পরিপূর্ণরূপে ঢেকে রাখতে হবে এটা উদ্দেশ্য নয়। কেননা পা তো আর

সতর নয়। মাসেহ করার উদ্দেশ্য হচ্ছে ওযুকারী ব্যক্তির উপর সহজতা ও হাল্কা করা। অর্থাৎ- আমরা প্রত্যেক

ওযুর সময় মোজা পরিধানকারীকে মোজা খুলে পা ধৌত করতে বাধ্য করব না। বরং বলব, এর উপর মাসেহ করাই

আপনার জন্য যথেষ্ট। আর এই সহজতার উদ্দেশ্যেই মোজার উপর মাসেহ শরীয়ত সম্মত করা হয়েছে। অতএব

কোন পার্থক্য নেই চাই মোজা ছেঁড়া হোক বা ভাল হোক, পাতলা হোক বা মোটা হোক।

প্রশ্নঃ (১৪৬) পট্টির উপর মাসেহ করার বিধান কি?

উত্তরঃ প্রথমত আমাদের জানা উচিত যে, পট্টি কি?

পট্টি বা ব্যান্ডেজ হচ্ছে এমন বস্তু যা ভাঙ্গা-মচকা জোড়া লাগানোর জন্য ব্যবহার করা হয়। ফিক্বাহবিদদের

ভাষায়ঃ “বিশেষ প্রয়োজনে পবিত্রতা অর্জনের অঙ্গে কোন কিছু লাগিয়ে রাখা।” ভেঙ্গে যাওয়া স্থানে বা

ফোঁড়ার স্থানে বা পিঠের ব্যাথায় বা অন্য কোন কারণে যে পট্টি বা ব্যান্ডেজ লাগানো হয় এখানে সেটাই

উদ্দেশ্য। ধৌত করার পরিবর্তে সেখানে মাসেহ করলেই যথেষ্ট হবে।

যেমন কোন লোকের হাতে ফোঁড়ার কারণে যদি পট্টি বাধা থাকে, তখন ওযু করার সময় অন্যান্য স্থান ধৌত

করে পট্টির উপর শুধু মাসেহ করবে। তাহলেই তার পবিত্রতা পূর্ণ হয়ে যাবে। যদি তার ওযু ভঙ্গ না হয়ে থাকে, তবে

পট্টি বা ব্যান্ডেজ খুলে ফেলার কারণে তার পবিত্রতা নষ্ট হবে না। কেননা শরঈ দীললের ভিত্তিতে সে পবিত্রতা

অর্জন করেছে, সুতরাং পবিত্রতা নষ্ট হয়েছে একথা বলার জন্য শরঈ দলীল দরকার। আর পট্টি বা ব্যান্ডেজ খুলে

ফেললে ওযু বা পবিত্রতা নষ্ট হয়েছে একথার পক্ষে কোন দীলল নেই।

পট্টির উপর মাসেহ করার অনুমতি সংক্রান্ত হাদীছ সমূহ সবগুলোই ভেজালপূর্ণ। সবগুলোই যঈফ বা দুর্বল।

একদল বিদ্বান বলেন, তবে সবগুলো হাদীছের সমম্বয়ে তা দলীল হিসেবে যোগ্য হতে পারে।

আরেক দল বিদ্বান বলেন, হাদীছগুলো যঈফ হওয়ার কারণে তার উপর ভিত্তি করা চলবে না। এদের মধ্যে মতভেদ

আছে। কেউ বলেন, যেহেতু মাসেহ করার দলীল নেই তাই পট্টি বা ব্যান্ডেজ বাধা স্থানের পবিত্রতা রহিত হয়ে যাবে।

সেখানে কিছুই করতে হবে না। কেননা সে অপারগ। আবার কেউ বলেন, উক্ত স্থানে মাসেহ করবে না বরং তায়াম্মুম

কিন্তু হাদীছের প্রতি দৃষ্টিপাত না করে শরঈ মূলনীতির ভিত্তিতে দেখা যায় নিকটতম মত হচ্ছে মাসেহ করা। মাসেহ

করলে তায়াম্মুমের কোন দরকার নেই। এই অবস্থায় আমরা বলবঃ ওযু গোসলের কোন অঙ্গে যদি যখম বা

ফোঁড়া বা এরকম কিছু থাকে, তবে তা কয়েকটি স্তরে বিভক্তঃ

প্রথম স্তরঃ যখম বা ফোঁড়ার স্থানটি উম্মুক্ত। ধৌত করলে কোন অসুবিধা হবে না। সুতরাং উহা ধৌত করা

দ্বিতীয় স্তরঃ স্থানটি উম্মুক্ত কিন্তু ধৌত করলে ক্ষতির সম্ভাবনা আছে। তখন সেখানে মাসেহ করা ওয়াজিব।

তৃতীয় স্তরঃ স্থানটি উম্মুক্ত কিন্তু ধৌত বা মাসেহ করলে ক্ষতির সম্ভাবনা আছে। তখন সেখানে তায়াম্মুম করা

চতুর্থ স্তরঃ স্থানটি পট্টি বা ব্যান্ডেজ জাতীয় বস্তু দ্বারা ঢাকা আছে। তখন সেই বস্তুর উপর মাসেহ করবে।

ধৌত বা তায়ম্মুম করার দরকার হবে না।

প্রশ্নঃ (১৪৭) পট্টি বা ব্যান্ডেজের উপর কি একই সাথে মাসেহ ও তায়াম্মুম করতে হবে?

উত্তরঃ না, একই সাথে মাসেহ ও তায়াম্মুম করতে হবে না। কেননা একটি অঙ্গে পবিত্রতার দু’টি পদ্ধতি ব্যবহার

করা শরঈ মূলনীতির পরিপন্থী। তাই আমরা বলবঃ পট্টি সম্বলিত অঙ্গটির পবিত্রতা হয় মাসেহের মাধ্যমে অথবা

তায়াম্মুমের মাধ্যমে অর্জন করবে। কিন্তু দু’রকম পদ্ধতি ব্যবহার করার আবশ্যকতা শরীয়ত বহির্ভূত কাজ।

তাছাড়া একটি ক্ষেত্রে বান্দাকে দু’টি ইবাদতের ব্যাপারে বাধ্য করা যাবে না।

প্রশ্নঃ (১৪৮) ওযু শেষে প্রথমে ডান পা ধৌত করে মোজা পরিধান করা তারপর বাম পা ধৌত করে মোজা

পরিধান করার বিধান কি? এভাবে মোজা পরলে কি তার উপর মাসেহ করা যাবে?

উত্তরঃ মাসআলাটি বিদ্বানদের মাঝে মতবিরোধপূর্ণ। একদল বিদ্বান বলেন, পবিত্রতা পূর্ণরূপে সম্পন্ন করার

পর মোজা পরিধান করবে। অন্যদল বলেন, যদি প্রথমে ডান পা ধৌত করে তাতে মোজা পরিধান করে, তারপর

বাম পা ধৌত করে তাতে মোজা পরিধান করে, তবে তা জায়েয। কেননা ডান পা পবিত্র করার পরই তো তা

মোজাতে প্রবেশ করিয়েছে। অনুরূপভাবে বাম পা। অতএব সে তো পূর্ণ পবিত্রতা অর্জন করেই মোজা দু’টি

পরিধান করেছে। কিন্তু একটি হাদীছ পাওয়া যায় দারাকুতনী ও হাকেম উহা বর্ণনা করেন। হাকেম তা ছহীহ্ বলেন। নবী

(ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, “যখন কেউ ওযু সম্পাদন করে এবং মোজা পরিধান করে।” এ হাদীছ

দ্বারা বুঝা যায়, যে লোক এখনও বাম পা ধৌত করেনি সে তো পূর্ণরূপে ওযু সম্পাদন করেনি। তাই প্রথম মতটিই

অধিক উত্তম ও বিশুদ্ধ হিসেবে গণ্য হবে।

প্রশ্নঃ (১৪৯) মুক্বীম অবস্থায় মোজার উপর মাসেহ করে সফর আরম্ভ করলে কি সফরের সময়সীমা অনুযায়ী

আমল করতে হবে?

উত্তরঃ মুক্বীম অবস্থায় কোন লোক যদি মোজার উপর মাসেহ করে এরপর সফর করে, তবে সে সফরের

সময়সীমা অনুযায়ী আমল করবে, এটাই বিশুদ্ধ মত। বিদ্বানদের মধ্যে কেউ উল্লেখ করেছেন, মুক্বীম অবস্থায়

মাসেহ করে সফর করলে মুক্বীমের সময় সীমা অনুসরণ করবে। কিন্তু প্রথম কথাটিই বিশুদ্ধ। কেননা সফর করার

পূর্বে এই লোকের মাসেহ করার সময় সীমা তো অবশিষ্ট রয়েছে, তারপর সে সফর করেছে। অতএব সে মুসাফিরের

অন্তর্ভূক্ত হবে এবং তিন দিন তিন রাত মাসেহ করবে। উল্লেখ্য যে, ইমাম আহমাদ (রহঃ) দ্বিতীয় মত পোষণ করে

পরবর্তীতে প্রথম মত পোষণ করেছেন।

প্রশ্নঃ (১৫০) প্রথমবার কখন মাসেহ করেছে এ ব্যাপারে কোন মানুষ যদি সন্দেহে পড়ে, তবে সে কি করবে?

উত্তরঃ এ অবস্থায় নিশ্চিয়তার উপর নির্ভর করবে। যদি সন্দেহ করে যে, যোহরের সময় মাসেহ করেছে না

আছরের সময়। তখন সে আছরের সময়টাকে প্রথম মাসেহ গণ্য করবে। কেননা মূল হচ্ছে মাসেহ না করা। এই

মূলনীতির দলীল হচ্ছে, ‘কোন বস্তু যে অবস্থায় ছিল সে অবস্থাতে থাকাটাই তার দাবী।’ তার বিপরীত না হওয়াটাই

মূল। যখন জনৈক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ্ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট অভিযোগ করল, নামায

অবস্থায় তার যেন কিছু বের হয়ে যাচ্ছে। সে কি করবে? তিনি বললেন, “নামায ছাড়বে না যে পর্যন্ত আওয়াজ না

শুনবে বা দুর্গন্ধ না পাবে।” [19]

প্রশ্নঃ (১৫১) কোন মানুষ যদি পায়ের লম্বা জুতায় (যা পায়ের টাখনু ঢেকে পরা হয়) মাসেহ করার পর তা খুলে ফেলে

এবং মোজার উপর মাসেহ করে, তবে তার মাসেহ বিশুদ্ধ হবে কি?

উত্তরঃ বিদ্বানদের নিকট প্রসিদ্ধ কথা হচ্ছে, কেউ যদি পরিহিত দু’টি মোজার কোন একটিতে মাসেহ করে তবে

সেটারই মাসেহ হবে দ্বিতীয়টির মাসেহ হবে না। কেউ কেউ বলেন, যদি নীচের মোজায় মাসেহ করা হয়, তবে সময়সীমা

বাকী থাকলে দ্বিতীয়টিতে মাসেহ করা জায়েয হবে। এটাই বিশুদ্ধ মত। অর্থাৎ- কেউ ওযু করে মোজার উপর মাসেহ

করল, এরপর দ্বিতীয় আরেকটি মোজা, বা জুতা পরিধান করল, অতঃপর উপরেরটির উপর মাসেহ করল, তবে

প্রাধান্যযোগ্য মতানুযায়ী সময়সীমা বাকী থাকলে কোন অসুবিধা নেই। কিন্তু প্রথমটির উপর মাসেহ করার পর

থেকে সময়সীমা হিসাব করতে হবে, দ্বিতীয়টির উপর মাসেহের সময় থেকে নয়।

প্রশ্নঃ (১৫২) কোন মানুষ যদি মোজা খুলে ফেলে, তারপর ওযু বিনষ্ট হওয়ার আগেই তা আবার পরিধান করে নেয়,

তবে তার উপর মাসেহ করা জায়েয হবে কি না?

উত্তরঃ মোজা খোলার পর ওযু থাকাবস্থায় আবার তা পরিধান করার দু’টি অবস্থাঃ

প্রথম অবস্থাঃ হয়তো এটা তার প্রথম ওযু হবে। অর্থাৎ- প্রথমবার ওযু করার পর মোজা পরিধান করেছে কিন্তু

সেই ওযু ভঙ্গ হয়নি, তাহলে তো কোন অসুবিধা নেই। মোজা খুলে আবার পরিধান করলে তাতে প্রয়োজনের সময়

মাসেহ করতে পারবে।

দ্বিতীয় অবস্থাঃ মোজার উপর একবার মাসেহ করার পর উহা খুলে ফেলেছে, তবে উহা পুনরায় পরিধান করলে তাতে

আবার মাসেহ করা জায়েয হবে না। কেননা মোজার উপর মাসেহ করার শর্ত হচ্ছে পানি দ্বারা পূর্ণ পবিত্রতা

অর্জন করার পর তা পরিধান করা। কিন্তু এই লোক তো মাসেহের মাধ্যমে পবিত্রতা অর্জন করেছে। বিদ্বানদের

কথা থেকে এটাই জানা যায়।

কিন্তু কেউ যদি বলে যে, পবিত্র থাকাবস্থায় যদি পুনরায় মোজা পরিধান করে- যদিও মাসেহের মাধ্যমে পবিত্রতা

অর্জন করে থাকে- তবে তো সময় সীমা থাকলে মাসেহ করতে কোন বাধা থাকার কথা নয়। এটা শক্তিশালী কথা।

কিন্তু আমি জানি না কেউ এরকম মত প্রকাশ করেছেন। এ ধরণের কথা কে বলেছেন এরকম কারো নাম না জানার

কারণে আমি এ মত পোষণ করতে চাই না। বিদ্বানদের মধ্যে কেউ যদি বলে থাকেন, তবে আমার মতে সেটাই বিশুদ্ধ।

কেননা মাসেহের মাধ্যমে পবিত্রতা অর্জন তো পরিপূর্ণ। এখানে কোন ত্র“টি নেই। সুতরাং ধৌত করার মাধ্যমে

পবিত্রতা অর্জন করে যদি মাসেহ করা যায়, তবে মাসেহের মাধ্যমে পবিত্রতা অর্জন করেও তো তাতে মাসেহ

জায়েয হওয়া উচিত। কিন্তু এ রকম মত প্রকাশের পক্ষে আমি কোন আলেমে দ্বীনকে পাইনি। (আল্লাহ্ই অধিক

জ্ঞান রাখেন।)

 মাসেহের সময়-সীমা অতিবাহিত হওয়ার পর তাতে মাসেহ করা।

প্রশ্নঃ (১৫৩) মাসেহ বৈধ হওয়ার সময় সীমা অতিবাহিত হওয়ার পর কেউ যদি তাতে মাসেহ করে নামায আদায় করে,

তবে তার নামাযের বিধান কি?

উত্তরঃ মাসেহ বৈধ হওয়ার সময় সীমা অতিবাহিত হওয়ার পর যদি ওযু ভঙ্গ হয় এবং তাতে মাসেহ করে নামায আদায়

করে, তবে পুনরায় পা ধৌতসহ ওযু করতে হবে এবং পুনরায় উক্ত নামায আদায় করতে হবে। কেননা সে পা ধৌত

করেনি, ফলে অপূর্ণ ওযু দ্বারা নামায আদায় করেছে। কিন্তু যদি মাসেহ করার সময় সীমা অতিবাহিত হওয়ার পর সে

পবিত্র অবস্থাতেই থাকে ওযু ভঙ্গ না হয় এবং নামায আদায় করে, তবে তার নামায বিশুদ্ধ। কেননা মাসেহ করার

সময় সীমা শেষ হওয়া ওযু ভঙ্গের কারণ নয়। যদিও কতিপয় বিদ্বান বলেন, সময় সীমা শেষ হলেই ওযু ভঙ্গ হয়ে যাবে।

কিন্তু এটা বিনা দীললের কথা।

অতএব মাসেহের নির্দিষ্ট সীমা শেষ হওয়ার পর কেউ যদি পবিত্র অবস্থাতেই থাকে- যদিও পূর্ণ এক দিন- তবে সে

নামায পড়ে যাবে। কেননা শরঈ দীলেলের ভিত্তিতে তার পবিত্রতা বা ওযু প্রমাণিত হয়েছে। সুতরাং তার ওযু ভঙ্গ

হয়েছে, দীলল ছাড়া একথা বলা যাবে না। আর মাসেহের সময়সীমা শেষ হলেই ওযু নষ্ট হয়ে যাবে এমন কথা নবী

(ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে প্রমাণিত নেই। (আল্লাহই অধিক জ্ঞান রাখেন)

প্রশ্নঃ (১৫৪) ওযু বিনষ্টের কারণগুলো কি কি?

উত্তরঃ ওযু বিনষ্টের কারণগুলো কি কি সে সম্পর্কে বিদ্বানদের মধ্যে মতভেদ রয়েছে। ওযু বিনষ্টের কারণ

হিসেবে দলীলের ভিত্তিতে যা প্রমাণিত হবে, আমরা সেটাই এখানে আলোচনা করবঃ

ওযু ভঙ্গের কারণ সমূহ নিম্নরূপঃ

প্রথমতঃ পেশাব-পায়খানার রাস্তা দিয়ে কোন কিছু নির্গত হওয়া। চাই তা পেশাব, পায়খানা, বীর্য, বায়ু বা মযী[20]

 বা অন্য কিছু হোক- বের হলেই তা ওযু ভঙ্গের কারণ হিসেবে গণ্য হবে। এ ব্যাপারে প্রশ্নের কোন অবকাশ নেই।

কিন্তু বীর্য যদি উত্তেজনার সাথে বের হয়, তবে সকলের জানা যে, তখন গোসল ওয়াজিব হবে। কিন্তু মযী বের হলে

অন্ডকোষসহ পুরুষাঙ্গ ধৌত করে শুধু ওযু করলেই চলবে।

দ্বিতীয়তঃ নিদ্রা যদি এমন অধিক পরিমাণে হয়, যাতে ওযু ভঙ্গ হয়েছে কিনা অনুভুতি না থাকে, তবে তা ওযু ভঙ্গের

কারণ। কিন্তু নিদ্রা অল্প পরিমাণে হলে ওযু ভঙ্গ হবে না। কেননা এ অবস্থায় ওযু ভঙ্গ হলে সাধারণতঃ অনুভব

করা যায়। চাই চিৎ হয়ে শুয়ে নিদ্রা যাক বা হেলান ছাড়া বসে বা হেলান দিয়ে বসে নিদ্রা যাক। মোট কথা অন্তরের

অনুভুতি উপস্থিত থাকা। কিন্তু যদি এমন অবস্থায় পৌঁছে যায়, যাতে কোন কিছু বুঝতে পারে না, তবে ওযু করা

ওয়াজিব। কারণ হচ্ছে, নিদ্রা মূলতঃ ওযু ভঙ্গের কারণ নয়; বরং এ সময় ওযু ভঙ্গের সম্ভাবনা থাকে। অতএব

অনুভুতি থাকাবস্থায় যেহেতু ওযু ভঙ্গ হওয়ার সম্ভাবনা নেই, তাই নিদ্রা এলেই ওযু ভঙ্গ হবে না। নিদ্রা যে মূলতঃ

ওযু ভঙ্গের কারণ নয় তার দলীল হচ্ছে, অল্প নিদ্রাতে ওযু ভঙ্গ হয় না। নিদ্রা গেলেই যদি ওযু ভঙ্গ হত, তবে নিদ্রা

অল্প হোক বেশী হোক ওযু ভঙ্গ হওয়ার কথা। যেমনটি পেশাব অল্প হোক বেশী হোক ওযু ভঙ্গ হবে।

তৃতীয়তঃ উটের মাংস ভক্ষণ করা। উটের গোস্ত রান্না করে হোক, কাঁচা হোক খেলেই ওযু ভঙ্গ হয়ে যাবে।

কেননা জাবের বিন সামুরা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)কে জিজ্ঞেস করা

হল, আমরা কি ছাগলের মাংস খেয়ে ওযু করব? তিনি বললেন, যদি চাও তো করতে পার। বলা হল, আমরা উটের মাংস

খেয়ে কি ওযু করব? তিনি বললেন, “হ্যাঁ”।[21] 

নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন ছগালের মাংস খেয়ে ওযু করার বিষয়টি মানুষের ইচ্ছাধীন রেখেছেন,

তখন বুঝা যায় উটের গোস্ত খেয়ে ওযুর ব্যাপারে মানুষের কোন ইচ্ছা স্বাধীনতা নেই। অবশ্যই ওযু করতে হবে।

অতএব উটের গোস্ত কাঁচা হোক বা পাকানো হোক কোন পার্থক্য নেই, গোস্ত লাল বর্ণ হোক বা অন্য

বর্ণ খেলেই ওযু ভঙ্গ হবে। উটের নাড়ী-ভুঁড়ি, কলিজা, হৃতপিন্ড, চর্বি, মোটকথা উটের যে কোন অংশ ভক্ষণ

করলে ওযু ভঙ্গ হবে। কেননা রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এ ক্ষেত্রে কোন পার্থক্য বর্ণনা

করেননি। অথচ তিনি জানতেন মানুষ উটের সব অংশ থেকেই খেয়ে থাকে। উটের কোন অংশ থেকে অপর অংশের

বিধানের মধ্যে কোন পার্থক্য থাকলে নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তা অবশ্যই বর্ণনা করে দিতেন।

যাতে করে মানুষ ধর্মের বিষয়ে সুস্পষ্ট ধারণা লাভ করে। তাছাড়া ইসলামী শরীয়তে আমরা এমন কোন প্রাণীর

বিধান সম্পর্কে অবগত নই যে, উহার মধ্যে বিভিন্ন অংশের জন্য আলাদা আলাদ কোন বিধান আছে। কেননা

প্রাণীকুল কোনটা হয় হালাল আবার কোনটা হয় হারাম। কোনটা খেলে ওযু আবশ্যক হবে কোনটা খেলে ওযু

আবশ্যক হবে না। কিন্তু একটি প্রাণীর মধ্যে এক অংশের এই বিধান আর অন্য অংশের এই বিধান, এরকম পার্থক্য

ইসলামী শরীয়তে নেই। যদিও ইহুদীদের শরীয়তে এ রকম পার্থক্য পাওয়া যায়। যেমন আল্লাহ্ বলেন,

وَعَلَى الَّذِينَ هَادُوا حَرَّمْنَا كُلَّ ذِي ظُفُرٍ وَمِنْ الْبَقَرِ وَالْغَنَمِ حَرَّمْنَا عَلَيْهِمْ شُحُومَهُمَا إِلَّا مَا حَمَلَتْ ظُهُورُهُمَا أَوْ الْحَوَايَا أَوْ مَا اخْتَلَطَ بِعَظْمٍ

“ইহুদীদের জন্য প্রত্যেক নখবিশিষ্ট জন্তু হারাম করেছিলাম এবং গরু ও ছাগল থেকে এতদুভয়ের চর্বি আমি তাদের

জন্য হারাম করেছিলাম। কিন্তু ঐ চর্বি, যা পৃষ্ঠে কিম্বা অন্ত্রে সংযুক্ত থাকে অথবা অস্থির সাথে মিলিত থাকে,

(তা বৈধ ছিল)।” (সূরা আনআম- ১৪৬)

এ জন্য বিদ্বানগণ ঐকমত্য হয়েছেন যে, শুকরের মাংস যেমন হারাম তেমনি শুকরের চর্বিও হারাম। অথচ আল্লাহ্

তা’আলা শুকরের ব্যাপারে তার মংশ হারাম হওয়ার কথাই শুধু উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেনঃ

“তোমাদের উপর হারাম করা হয়েছে মৃত, রক্ত, শুকরের মাংস এবং গাইরুল্লাহর জন্যে যবেহকৃত প্রাণী।” (সূরা

আমি জানিনা শুকরের চর্বি হারাম হওয়ার ব্যাপারে আলেমদের মধ্যে কোন মতভেদ আছে। তাই উটের মাংস খেলে ওযু

ভঙ্গ হবে সেই সাথে উটের চর্বি, নাড়ী-ভুঁড়ি প্রভৃতি খেলেও ওযু ভঙ্গ হবে।

প্রশ্নঃ (১৫৫) স্ত্রীকে স্পর্শ করলে কি ওযু ভঙ্গ হবে?

উত্তরঃ বিশুদ্ধ কথা হচ্ছে, স্ত্রীকে স্পর্শ করলে কখনোই ওযু ভঙ্গ হবে না। একথার দলীল হচ্ছে, নবী

(ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বিশুদ্ধভাবে প্রমাণিত, তিনি স্ত্রীকে চুম্বন করে নামায পড়তে বের

হয়েছেন কিন্তু ওযু করেন নি। কেননা আসল হচ্ছে দলীল না থাকলে ওযু ভঙ্গ না হওয়া। কেননা শরঈ দলীলের

ভিত্তিতে তার ওযু প্রমাণিত হয়েছে। আর যা শরঈ দলীলের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত হয়, তা শরঈ দলীল ছাড়া নষ্ট হবে

যদি বলা হয়, আল্লাহ্ তো বলেছেন,

“অথবা যদি তোমরা স্ত্রীদের স্পর্শ কর।”

উত্তরে বলা হবেঃ আয়াতে স্ত্রীদের স্পর্শ করার অর্থ হচ্ছে তাদের সাথে সহবাসে লিপ্ত হওয়া। যেমনটি ইবনু

আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত হয়েছে। তাছাড়া আয়াতের মধ্যে তাহারাত বা পবিত্রতাকে দু’ভাগে বিভক্ত করা হয়েছেঃ

প্রকৃতরূপ ও বদলীরূপ এবং পবিত্রতাকেও দু’ভাগে ভাগ করা হয়েছেঃ ছোট পবিত্রতা ও বড় পবিত্রতা। অনুরূপভাবে

ছোট পবিত্রতার কারণ ও বড় পবিত্রতার কারণও উল্লেখ করা হয়েছে। আল্লাহ্ বলেন,

“হে ঈমানদারগণ! যখন তোমরা নামাযের ইচ্ছা কর, তখন তোমরা মুখমন্ডল ও হাত দু’টি কনুই পর্যন্ত ধৌত

কর, মাথা মাসেহ কর এবং দু’পা টাখনু পর্যন্ত ধৌত কর।” (সূরা মায়িদা- ৬)

এখানে পানি দ্বারা প্রকৃত ছোট পবিত্রতা অর্জনের পদ্ধতি আলোচনা করা হয়েছে। তারপর আল্লাহ্ বলেন,

“তোমরা যদি অপবিত্র হও, তবে পবিত্রতা অর্জন কর।”

এখানে পানি দ্বারা প্রকৃত বড় পবিত্রতা অর্জনের কথা আলোচনা করা হয়েছে। তারপর আল্লাহ্ আবার বলেন,

“তোমরা যদি অসুস্থ হও অথবা সফরে থাক অথবা তোমাদের কেউ পেশাব-পায়খান করে অথবা তোমরা স্ত্রীদের

স্পর্শ কর, তারপর পানি না পাও, তবে তোমরা তায়াম্মুম কর।”

এখানে (তায়াম্মুম কর) কথাটি পানি দ্বারা প্রকৃত পবিত্রতা অর্জন করার বদলীরূপ (পরিবর্তীত পদ্ধতি)

আলোচনা করা হয়েছে। এখানে ‘তোমাদের কেউ পেশাব-পায়খান করে’ একথা দ্বারা অপবিত্রতার ছোট একটি

কারণ উল্লেখ করা হয়েছে। এবং ‘স্ত্রীদের স্পর্শ কর’ কথাটি দ্বারা অপবিত্রতার বড় একটি কারণ উল্লেখ করা

হয়েছে। এখন যদি ‘স্ত্রীদের স্পর্শ কর’ কথাটি দ্বারা সাধারণভাবে হাত দ্বারা স্পর্শ করার অর্থ করা হয়, তবে

তো আল্লাহ্ এই আয়াতে অপবিত্রতার দু’টিই ছোট কারণ উল্লেখ করলেন এবং বড় কারণ উল্লেখ করা ছেড়ে

দিলেন। অথচ তিনি এর আগে বলেছেন, “তোমরা যদি অপবিত্র হও, তবে পবিত্রতা অর্জন কর।” এটা কুরআনের

বালাগাতের বা উচ্চাঙ্গ সাহিত্যের পরিপন্থী। তাই আয়াতে ‘স্ত্রীদের স্পর্শ কর’ কথাটি দ্বারা বুঝা যায় স্ত্রীদের

সাথে সহবাস করা। তাহলেই তো আয়াতে দু’টি তাহারাতের বর্ণনা পাওয়া যায়। বড় কারণ এবং ছোট কারণ। ছোট

পবিত্রতা হচ্ছে, শরীরের চারটি অঙ্গের সাথে সম্পর্কিত। আর বড় পবিত্রতা সমস্ত শরীরের সাথে সম্পর্কিত।

আর বদলী পবিত্রতা তায়াম্মুম শুধুমাত্র দু’টি অঙ্গের সাথে সম্পর্কিত চাই তা বড় পবিত্রতার ক্ষেত্রে হোক বা

ছোট পবিত্রতার ক্ষেত্রে।

এই ভিত্তিতে আমরা বলব, স্ত্রীকে স্পর্শ করা কখনই ওযু ভঙ্গের কারণ নয়। চাই স্পর্শ উত্তেজনার সাথে হোক

বা উত্তেজনার সাথে না হোক। তবে স্পর্শ করার কারণে যদি কোন কিছু নির্গত হয় তবে তার বিধান ভিন্ন। যদি

يَاأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِذَا قُمْتُمْ إِلَى الصَّلَاةِ فَاغْسِلُوا وُجُوهَكُمْ وَأَيْدِيَكُمْ إِلَى الْمَرَافِقِ وَامْسَحُوا بِرُءُوسِكُمْ وَأَرْجُلَكُمْ إِلَى الْكَعْبَيْنِ

বীর্য বের হয়, তবে গোসল করা ফরয আর মযী নির্গত হলে অন্ডোকোষসহ লিঙ্গ ধৌত করে ওযু করা

আবশ্যক।[22]

পবিত্রতা ছাড়া কুরআন স্পর্শ করাঃ

প্রশ্নঃ (১৫৬) জনৈক শিক্ষক ছাত্রদের কুরআনের দরস প্রদান করেন। মাদ্রাসায় বা তার আশেপাশে পানি নেই।

এখন তিনি কি করবেন? কেননা পবিত্র ব্যক্তি ছাড়া তো কেউ কুরআন স্পর্শ করবে না?

উত্তরঃ মাদ্রাসায় বা তার আশেপাশে যদি পানি না পাওয়া যায়, তবে শিক্ষক ছাত্রদের সতর্ক করবেন, তারা যেন

পবিত্র না হয়ে কুরআন বহন বা স্পর্শ না করে। কেননা আমর বিন হাযম (রাঃ) বর্ণিত হাদীছে রয়েছে, নবী

(ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে লিখেছেন,

“পবিত্র ব্যক্তি ছাড়া কেউ কুরআন স্পর্শ করবে না।”[23] 

এখানে পবিত্রতা বলতে উদ্দেশ্য হচ্ছে ওযু বা গোসল বা তায়াম্মুমের মাধ্যমে অর্জিত পবিত্রতা। যেমনটি আল্লাহ

ওযুর আয়াতে উল্লেখ করেছেনঃ

“আল্লাহ তোমাদেরকে কোন অসুবিধায় ফেলতে চান না, কিন্তু তিনি তোমাদেরকে পবিত্র করতে চান এবং তাঁর

নে’য়ামত সমূহ পূর্ণরূপে দান করতে চান, যাতে তোমরা তাঁর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে পার।” (সূরা মায়েদা- ৬)

এখানে ‘তিনি তোমাদেরকে পবিত্র করতে চান’ কথা দ্বারা বুঝা যায়, পবিত্রতা অর্জন না করলে পবিত্র হওয়া

যাবে না। তাই ওযুর মাধ্যমে পবিত্রতা অর্জন না করে কারো জন্য কুরআন স্পর্শ করা সমিচীন নয়। তবে কোন

কোন বিদ্বান ছোটদের জন্য বিনা ওযুতে কুরআন স্পর্শ করার অনুমতি দিয়েছেন। কেননা কুরআন হাতে নেয়া

তাদের জন্য খুবই দরকার। অথচ তারা ওযুর গুরুত্ব বোঝে না। কিন্তু উত্তম হচ্ছে, ছাত্রদেরকে ওযুর প্রতি

উদ্বুদ্ধ করা, যাতে তারা পবিত্র অবস্থায় কুরআন স্পর্শ করে।

প্রশ্নকারী উল্লেখ করেছেন, ‘পবিত্র ছাড়া তো কেউ কুরআন স্পর্শ করবে না’ সম্ভতঃ একথা দ্বারা তিনি ইঙ্গিত

করেছেন যে, কুরআন স্পর্শ করার জন্য পবিত্রতা অর্জন করা ওয়াজিব। কিন্তু এক্ষেত্রে বর্ণিত আয়াতে এ দলীল

পাওয়া যায় না। আল্লাহ্ বলেন,

“পবিত্রগণ ছাড়া কেউ তা স্পর্শ করে না।” (সূরা ওয়াক্বেয়া- ৭৯)

এখানে উদ্দেশ্য হচ্ছে, কিতাবুল মাকনূন বা লুকায়িত গ্রন্থ অর্থাৎ লওহে মাহফূয। আর ‘পবিত্রগণ’ বলতে উদ্দেশ্য

হচ্ছে ফেরেশতাগণ। এখানে ওযুর মাধ্যমে পবিত্রতা অর্জন করা উদ্দেশ্য হলে এরূপ বলা হত, ‘পবিত্রতা

অর্জনকারীগণ ছাড়া কেউ তা স্পর্শ করেনা’।  এখানে একথাও বলা হয়নি যে, পবিত্রতা অর্জন না করলে উহা স্পর্শ

করা জায়েয নয়। কিন্তু পূর্বে যে হাদীছ উল্লেখ করা হয়েছে, তাই ওযুর নির্দেশ প্রমাণ করার জন্য যথেষ্ট।

প্রশ্নঃ (১৫৭) কি কি কারণে গোসল ফরয হয়?

উত্তরঃ গোসল ফরয হওয়ার কারণ সমূহ নিম্নরূপঃ

১)     জাগ্রত বা নিদ্রা অবস্থায় উত্তেজনার সাথে বীর্যপাত হওয়া। কিন্তু নিদ্রা অবস্থায় উত্তেজনার অনুভব

না হলেও গোসল করা ফরয। কেননা নিদ্রা অবস্থায় স্বপ্নদোষ হলে মানুষ অনেক সময় তা বুঝতে পারে না।

২)     স্ত্রী সহবাস। সহবাসের ক্ষেত্রে স্ত্রীর যৌনাঙ্গে পুরুষাঙ্গের সর্বনিম্ন আগাটুকু প্রবেশ করালেই গোসল

ফরয হয়ে যাবে। কেননা প্রথমটির ব্যাপারে নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, “পানি নির্গত হলেই পানি

ঢালতে হবে।”[24]  অর্থাৎ বীর্যের পানি নির্গত হলেই গোসল করতে হবে। আর দ্বিতীয় কারণের ব্যাপারে নবী

(ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ

“স্ত্রীর চার শাখার (দু’হাত দু’পায়ের) মাঝে বসে, তার সাথে সহবাসে লিপ্ত হলেই গোসল ফরয হবে।” [25]

যদিও বীর্যপাত না হয়। এ বিষয়টি অনেক মানুষের জানা নেই। অনেক লোক স্ত্রী সহবাসে বীর্যপাত না করলে

অজ্ঞতা বশতঃ সপ্তাহ মাস কাটিয়ে দেয় গোসল করে না। এটি মারাত্মক ধরণের ভুল। এ জন্য আল্লাহ ও তাঁর

রাসূলের শরীয়তের সীমারেখা সম্পর্কে জ্ঞানার্জন করা প্রত্যেক ব্যক্তির উপর ফরয।

অতএব উল্লেখিত হাদীছের ভিত্তিতে, সহবাস করে বীর্যপাত না হলেও গোসল করা স্বামী-স্ত্রী উভয়ের উপর

৩)     নারীদের ঋতু বা নেফাস (সন্তান প্রসোবত্তোর স্রাব) হওয়া। ঋতুবতী নারীর স্রাব বন্ধ হলে, গোসলের

মাধ্যমে তাকে পবিত্র হতে হবে। এই গোসলও ফরয গোসলের অন্তর্ভূক্ত। কেননা আল্লাহ্ বলেন,

يسألونَكَ عَنْ الْمَحِيْضِ قُلْ هُوَ أذىً فَاعْتَزِلُوْا النِّسَاءَ فِيْ الْمَحِيْضِ وَلاَ تَقْرَبُوْهُنَّ حَتَّى يَطْهُرْنَ، فَإِذَا تَطَهَّرْنَ فَأْتُوْهُنَّ مِنْ حَيْثُ أَمَرَكُمُ اللهُ، إنَّ

অর্থাৎ “তারা তোমার কাছে জিজ্ঞাসা করে হায়েয স¤পর্কে। বলে দাও, এটা অপবিত্র। কাজেই তোমরা হায়েয

অবস্থায় স্ত্রী মিলন থেকে বিরত থাক। তখন পর্যন্ত তাদের সাথে সহবাসে লিপ্ত হবে না; যতক্ষণ না তারা পবিত্র

হয়ে যায়। যখন উত্তমরূপে পরিশুদ্ধ হয়ে যাবে, তখন গমণ কর তাদের কাছে। যেভাবে আল্লাহ্ তোমাদেরকে হুকুম

দিয়েছেন। নিশ্চয় আল্লাহ্ তওবাকারী এবং পবিত্রতা অর্জনকারীদের পছন্দ করেন।”  (সূরা বাক্বারা- ২২২)

তাছাড়া নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইস্তেহাজা বিশিষ্ট নারীকে নির্দেশ দিয়েছেন, ঋতুর নির্দিষ্ট দিন

সমূহ সে বিরত থাকবে তারপর গোসল করবে। নেফাস থেকে পবিত্র হওয়ার ক্ষেত্রেও অনুরূপ বিধান। তার উপরও

গোসল করা ফরয।

হায়েয ও নেফাস থেকে গোসল করার পদ্ধতি নাপাকী থেকে গোসল করার পদ্ধতির অনুরূপ। তবে বিদ্বানদের মধ্যে

কেউ ঋতুবতীর গোসলের সময় বরই পাতা ব্যবহার করা মুস্তাহাব বলেছেন। কেননা এতে অধিক পরিস্কার ও পবিত্র

হওয়া যায়। বরই পাতার বদলে সাবান বা শ্যম্পু ব্যবহার করলেও উক্ত উদ্দেশ্য হাসিল হয়।

বিদ্বানদের মধ্যে কেউ কেউ মৃত ব্যক্তিকে গোসল দেয়া ফরয বলে উল্লেখ করেছেন। দলীল হচ্ছে, নবী (ছাল্লাল্লাহু

আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর কন্যা যয়নবকে যারা গোসল দিচ্ছিলেন, তিনি তাদেরকে বললেন:

“যয়নবকে তিনবার গোসল করাও, অথবা পাঁচবার অথবা সাতবার অথবা এর চাইতে অধিকবার- যদি তোমরা তা মনে

তাছাড়া বিদায় হজ্জে আরাফা দিবসে জনৈক ব্যক্তি ইহরাম অবস্থায় বাহণ থেকে পড়ে গিয়ে মৃত্যু বরণ করলে নবী

(ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন,

“তোমরা তাকে পানি ও বরই পাতা দ্বারা গোসল দাও এবং পরিহিত দু’টি কাপড়েই কাফন পরাও।”[27] 

বিদ্বানগণ বলেন, মৃত্যু ব্যক্তিকে গোসল করানো ফরয। কিন্তু এটা জীবিতের সাথে সম্পর্কিত। কেননা মৃত্যু

বরণ করার কারণে উক্ত ব্যক্তির উপর শরীয়তের বাধ্যবাধকতা শেষ হয়ে গেছে। তাই জীবিতদের উপর ফরয হচ্ছে,

তাকে গোসল করিয়ে দাফন করা। কেননা নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সে সম্পর্কে নির্দেশ দিয়েছেন।

প্রশ্নঃ (১৫৮) স্ত্রীকে স্পর্শ, আলিঙ্গন ও তাকে চুম্বন করলে কি গোসল করতে হবে?

উত্তরঃ সাধারণ স্পর্শ, শৃঙ্গার, চুম্বন, আলিঙ্গন প্রভৃতির মাধ্যমে স্বামী-স্ত্রী পরস্পর আনন্দ বিনোদন

করলে তাদের উপর গোসল ফরয হবে না। তবে যদি উভয়ের থেকে বীর্যস্খলিত হয়, তবে উভয়ের উপর গোসল করা

ফরয হবে। একজনের থেকে বীর্যস্খলিত হলে শুধু তার উপরই গোসল ফরয হবে। এ বিধান হচ্ছে সাধারণ শৃঙ্গার,

চুম্বন, আলিঙ্গন প্রভৃতির ক্ষেত্রে। কিন্তু যদি তারা সহবাসে লিপ্ত হয়, তবে নারী-পুরুষ উভয়ের উপর গোসল

ফরয হবে- যদিও তাদের কারোই বীর্যস্খলিত না হয়। কেননা আবু হুরায়রা (রাঃ) বর্ণিত হাদীছে নবী (ছাল্লাল্লাহু

আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন,

“স্ত্রীর চার শাখার (দু’হাত, দা’পা) মাঝে বসে তার সাথে সহবাসে লিপ্ত হলেই গোসল ফরয হবে।”[28] 

মুসলিমের বর্ণনায় বলা হয়েছে, “যদিও বীর্যপাত না হয়।” এ বিষয়টি অনেক লোকের অজানা। তাদের ধারণা নারী-

পুরুষ মিলিত হয়ে বীর্যপাত না হলে তাদের উপর গোসল ফরয নয়। কিন্তু এটা বিরাট ধরণের অজ্ঞতা। অতএব

সহবাস হলেই সর্বাবস্থায় গোসল ফরয হবে। কিন্তু সহবাস না করে যে কোন প্রকারে আনন্দ-ফুর্তি করলে

গোসল ফরয হবে না।

প্রশ্নঃ (১৫৯) নিদ্রা থেকে জাগ্রত হয়ে কাপড় ভিজা দেখলে কি করবে?

উত্তরঃ ঘুম থেকে জাগ্রত হয়ে কাপড় ভিজা পেলে তিনটি অবস্থা হতে পারেঃ

প্রথম অবস্থাঃ নিশ্চিত হবে যে, এই ভিজা বীর্যপাতের কারণে হয়েছে। তখন স্বপ্ন স্মরণ থাক বা ভুলে যাক গোসল

দ্বিতীয় অবস্থাঃ নিশ্চিত হবে এটা বীর্য নয়। তখন গোসল করা ফরয নয়। কিন্তু ঐ ভিজা স্থান ধৌত করা

ওয়াজিব। কেননা তখন উহা পেশাবের বিধানের মধ্যে শামিল হবে।

তৃতীয় অবস্থাঃ ভিজাটা কি বীর্যের কারণে না অন্য কারণে বিষয়টি অজানা। তখন ব্যাখ্যার দাবী রাখেঃ

প্রথমতঃ যদি স্মরণ থাকে যে স্বপ্নে কিছু দেখেছে, তাহলে উক্ত ভিজা বীর্য ধরে নিয়ে গোসল করবে। কেননা উম্মু

সালামার হাদীছে বর্ণিত হয়েছে। তিনি নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)কে প্রশ্ন করলেন, পুরুষ যা স্বপ্নে

দেখে থাকে নারী যদি তা দেখে, তবে তাকেও কি গোসল করতে হবে? তিনি বললেন, “হ্যাঁ, যদি সে পানি দেখে।”[29]

 এথেকে বুঝা যায় স্বপ্নে কিছু দেখে যদি পানির ভিজা পাওয়া যায়, তবে গোসল করা ফরয।

দ্বিতীয়তঃ স্বপ্নে কিছুই দেখেনি। যদি নিদ্রা যাওয়ার পূর্বে সহবাসের চিন্তা মনে এসে থাকে, তবে উক্ত ভিজাকে

মযীর ভিজা মনে করবে।

কিন্তু ঘুমানোর পূর্বে সহবাসের কোন চিন্তা মাথায় না আসলে কি করতে হবে সে ক্ষেত্রে মতভেদ রয়েছেঃ

কেউ বলেছেন, সতর্কতা বশত: গোসল করা ওয়াজিব।

কেউ বলেছেন, ওয়াজিব নয়। এটাই বিশুদ্ধ কথা। কেননা আসল হচ্ছে যিম্মামুক্ত থাকা।

প্রশ্নঃ (১৬০) নাপাক অবস্থায় কি কি বিধান প্রজোয্য?

উত্তরঃ নাপাক অবস্থায় প্রজোয্য বিধান সমূহ নিম্নরূপঃ

প্রথমঃ নাপাক ব্যক্তির জন্য নামায আদায় করা হারাম। ফরয, নফল, জানাযা সবধরণের নামায। কেননা আল্লাহ্

“তোমরা যদি অপবিত্র হও, তবে পবিত্রতা অর্জন কর।” (সূরা মায়িদা- ৬)

দ্বিতীয়ঃ নাপাক ব্যক্তির জন্য আল্লাহর ঘরের তওয়াফ করা হারাম। কেননা কা’বা ঘরের তওয়াফ করলে মসজিদে

অবস্থান করতে হয়। আর তওয়াফকে নামায বলা হয়েছে। আল্লাহ্ বলেন,

“হে ঈমানদারগণ! নেশাগ্রস্থ অবস্থায় তোমরা নামাযের নিকটে যেয়ো না, যে পর্যন্ত তোমরা কি বলছ তা বুঝতে

না পার। এবং নাপাক অবস্থাতেও না, যতক্ষণ তোমরা গোসল না কর। তবে মসজিদে (অবস্থান না করে তার)

ভিতর দিয়ে রাস্তা অতিক্রম করতে চাইলে ভিন্ন কথা।” (সূরা নিসা- ৪৩)

তাছাড়া বিদায় হজ্জে আয়েশা (রাঃ) ঋতুবতী হয়ে পড়লে নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে বলেছিলেনঃ

“হজ্জ পালনকারীগণ যা করে তুমিও তাই করে যাও, তবে পবিত্র না হওয়া পর্যন্ত আল্লাহর ঘর তওয়াফ করো না।”

يَاأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تَقْرَبُوا الصَّلَاةَ وَأَنْتُمْ سُكَارَى حَتَّى تَعْلَمُوا مَا تَقُولُونَ وَلَا جُنُبًا إِلَّا عَابِرِي سَبِيلٍ حَتَّى تَغْتَسِلُوا

তৃতীয়ঃ কুরআন স্পর্শ করা হারাম। কেননা নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন,

“ পবিত্র ব্যক্তি ছাড়া কেউ কুরআন স্পর্শ করবে না।”[31]

চতুর্থঃ গোসল না করে মসজিদে অবস্থান করা হারাম। কেননা আল্লাহ্ বলেন,

“হে ঈমানদারগণ! নেশাগ্রস্থ অবস্থায় তোমরা নামাযের নিকটে যেয়ো না, যে পর্যন্ত তোমরা কি বলছ তা বুঝতে

না পার। এবং নাপাক অবস্থাতেও না, যতক্ষণ তোমরা গোসল না কর। তবে মসজিদে (অবস্থান না করে তার)

ভিতর দিয়ে রাস্তা অতিক্রম করতে চাইলে ভিন্ন কথা।” (সূরা নিসা- ৪৩)

পঞ্চমঃ গোসল না করে কুরআন পাঠ করা হারাম। কেননা আলী (রাঃ) বলেন:

রাসূলুল্লাহ্ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নাপাক অবস্থা ব্যতীত সর্বাবস্থায় আমাদেরকে কুরআন পড়াতেন।

নাপাক ব্যক্তির জন্য এই পাঁচটি বিধান প্রজোয্য।

প্রশ্নঃ (১৬১) গোসল করার পদ্ধতি কি?

উত্তরঃ গোসল করার দু’টি পদ্ধতি রয়েছেঃ

প্রথম পদ্ধতিঃ ওয়াজিব পদ্ধতি। আর তা হচ্ছে সমস্ত শরীরে পানি প্রবাহিত করা। অবশ্য কুলি করা ও নাকে পানি

দিয়ে নাক ঝাড়া এর অন্তর্গত। অতএব যে কোন প্রকারে সমস্ত শরীরে পানি ঢালতে পারলে বড় নাপাকী দূর হয়ে

যাবে এবং পবিত্রতা পূর্ণ হয়ে যাবে। কেননা আল্লাহ্ বলেন:,

“ “তোমরা যদি অপবিত্র হও, তবে পবিত্রতা অর্জন কর।” (সূরা মায়িদা- ৬)

দ্বিতীয় পদ্ধতিঃ পরিপূর্ণ পদ্ধতি। নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যেভাবে গোসল করেছেন ঠিক সেইভাবে

গোসল করা। নাপাকী থেকে গোসল করতে চাইলে প্রথমে হাত দু’টি কব্জি পর্যন্ত ধৌত করবে, তারপর নাপাকী

সংশ্লিষ্ট স্থান এবং লজ্জাস্থান ধৌত করে নিবে। এরপর পরিপূর্ণরূপে সঠিক পদ্ধতি অনুযায়ী ওযু করে নিবে।

তারপর মাথায় তিনবার পানি ঢেলে তা ভালভাবে ভিজিয়ে নিবে। সবশেষে সমস্ত শরীরে পানি ঢেলে ধুয়ে নিবে। এটাই

গোসলের পরিপূর্ণ পদ্ধতি।

প্রশ্নঃ (১৬২) গোসলের সময় কুলি না করলে বা নাক না ঝাড়লে গোসল বিশুদ্ধ হবে কি?

উত্তরঃ কুলি না করলে এবং নাকে পানি দিয়ে নাক না ঝাড়লে গোসল বিশুদ্ধ হবে না। কেননা আল্লাহ্ বলেন,

“তোমরা যদি অপবিত্র হও, তবে পবিত্রতা অর্জন কর।” (সূরা মায়িদা- ৬)

অর্থাৎ সমস্ত শরীর। আর মুখের ভিতর ও নাকের ভিতরের অংশ শরীরের অন্তর্গত যা পবিত্র করা ওয়াজিব। এই

কারণে নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ওযুতে কুলি করতে ও নাক ঝাড়তে নির্দেশ দিয়েছেন। কেননা উহা

আল্লাহর এই নির্দেশের অন্তর্গতঃ “তোমরা তোমাদের মুখমন্ডল ধৌত কর।” (সূরা মায়িদা- ৬) অতএব যখন

কিনা ঐ দু’টি স্থান মুখমন্ডলের মধ্যে শামিল- আর মুখমন্ডল ধৌত করা ওয়াজিব বড় পবিত্রতায়, তখন নাপাকীর

গোসলে কুলি করা ও নাক ঝাড়াও ওয়াজিব।

প্রশ্নঃ (১৬৩) পানি ব্যবহার করতে অপারগ হলে, কিভাবে পবিত্রতা অর্জন করবে?

উত্তরঃ পানি না থাকার কারণে বা ক্ষতির সম্ভাবনা থাকার কারণে পানি ব্যবহার করতে অপারগ হলে, তায়াম্মুম

করবে। এর পদ্ধতি হচ্ছে, পবিত্র মাটিতে দু’হাত (একবার) মারবে, অতঃপর তা দ্বারা মুখমন্ডল মাসেহ করবে এবং

يَاأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تَقْرَبُوا الصَّلَاةَ وَأَنْتُمْ سُكَارَى حَتَّى تَعْلَمُوا مَا تَقُولُونَ وَلَا جُنُبًا إِلَّا عَابِرِي سَبِيلٍ حَتَّى تَغْتَسِلُوا

উভয় হাতের কব্জি পর্যন্ত মাসেহ করবে। এই নিয়ম ছোট-বড় অপ্রকাশ্য নাপাকী থেকে পবিত্রতা অর্জনের সাথে

কিন্তু নাপাকী যদি প্রকাশ্য ও প্রত্যক্ষ্য হয়, তবে সেখানে তায়াম্মুম নেই। চাই উহা শরীরে হোক বা কাপড়ে বা

মাটিতে। কেননা প্রকাশ্য নাপাকী থেকে পবিত্রতা অর্জনের উদ্দেশ্য হচ্ছে উক্ত মূল বস্তুটির অপসারণ করা।

এখানে ইবাদতের শর্ত নেই। এই কারণে মানুষের অনিচ্ছায় যদি মূল নাপাক বস্তুটি যে কোন প্রকারে বিদূরিত হয়ে

যায়, তবে স্থানটি পবিত্র হয়ে গেল। যেমন কোন নাপাক স্থানে বা কাপড়ে যদি বৃষ্টিপাত হয় এবং বৃষ্টির পানির

সাথে উক্ত নাপাকী চলে যায়, তবে স্থানটি পবিত্র হয়ে গেল- যদিও এ সম্পর্কে মানুষের জানা না থাকে। কিন্তু

অপ্রকাশ্য নাপাকী থেকে পবিত্রতা অর্জনের বিষয়টি এর বিপরীত। কেননা তা একটি ইবাদত। তাই অবশ্যই এখানে

মানুষকে নিয়ত বা দৃঢ় সংকল্প করে তা আদায় করতে হবে।

প্রশ্নঃ (১৬৪) ঠান্ডার সময় কেউ যদি নাপাক হয়, তবে কি সে তায়াম্মুম করবে?

উত্তরঃ নাপাক হলেই গোসল করা ওয়াজিব। কেননা আল্লাহ বলেন,

“তোমরা যদি অপবিত্র হও, তবে পবিত্রতা অর্জন কর।” (সূরা মায়িদা- ৬)

কিন্তু রাতে যদি শীত প্রচন্ড হয় এবং ঠান্ডা পানিতে গোসল করতে সক্ষম না হয়, তবে সম্ভব হলে পানি গরম করে

নিবে। কিন্তু পানি গরম করার ব্যবস্থা না থাকলে তায়াম্মুম করবে এবং নামায আদায় করবে। কেননা আল্লাহ্ বলেন,

وَإِنْ كُنْتُمْ جُنُبًا فَاطَّهَّرُوا وَإِنْ كُنْتُمْ مَرْضَى أَوْ عَلَى سَفَرٍ أَوْ جَاءَ أَحَدٌ مِنْكُمْ مِنْ الْغَائِطِ أَوْ لَامَسْتُمْ النِّسَاءَ فَلَمْ تَجِدُوا مَاءً فَتَيَمَّمُوا صَعِيدًا طَيِّبًا

“নাপাকী থেকে তায়াম্মুম করার পতোমরা যদি অসুস্থ হও অথবা সফরে থাক অথবা তোমাদের কেউ পেশাব-পায়খানা

করে অথবা স্ত্রীদের স্পর্শ করে, তারপর পানি না পাও, তবে তোমরা পবিত্র মাটি দ্বারা তায়াম্মুম কর। স্বীয়

হস্তদ্বয় ও মুখমন্ডল মাটি দ্বারা মুছে ফেল। আল্লাহ তোমাদেরকে কোন অসুবিধায় ফেলতে চান না, কিন্তু তিনি

তোমাদেরকে পবিত্র করতে চান এবং তাঁর নে’য়ামত সমূহ পূর্ণরূপে দান করতে চান, যাতে তোমরা তাঁর কৃতজ্ঞতা

করতে পার।” (সূরা মায়েদা-৬)র পানি না পাওয়া পর্যন্ত সে পবিত্রই থাকবে। পানি পেয়ে গেলে গোসল করা

ওয়াজিব। কেননা ছহীহ বুখারীতে ইমরান বিন হুছাইন কর্তৃক দীর্ঘ হাদীছে প্রমাণিত হয়েছে। নবী (ছাল্লাল্লাহু

আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একদা জনৈক ব্যক্তিকে দেখলেন, মানুষের সাথে নামায আদায় না করে আলাদা হয়ে বসে আছে।

তিনি প্রশ্ন করলেন, “নামায পড়লে না কেন?” লোকটি বলল, আমি নাপাক হয়ে গেছি, কিন্তু পানি নেই। তখন নবী

(ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, “তুমি মাটি ব্যবহার কর, সেটাই তোমার জন্য যথেষ্ট।” এরপর পানি

এল, তখন নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে পানি দিয়ে বললেন, এটা তোমার শরীরে বইয়ে দাও।[33]  এ

থেকে বুঝা যায়, পানি পেলেই তা দ্বারা পবিত্রতা অর্জন করা তায়াম্মুমকারীর জন্য ওয়াজিব। চাই ছোট নাপাকীর

ক্ষেত্রে হোক বা বড় নাপাকীর ক্ষেত্রে।

তায়াম্মুমকারী বড় নাপাকী থেকে পবিত্রতা অর্জন করলে পুনরায় নাপাক না হওয়া পর্যন্ত বা পানি না পাওয়া

পর্যন্ত পবিত্র অবস্থাতেই থাকতে পারবে। তাই প্রত্যেক নামাযের জন্য বারবার তায়াম্মুম করবে না। অবশ্য

ছোট নাপাকী হলে তা থেকে পবিত্রতার জন্য তায়াম্মুম করবে।

প্রশ্নঃ (১৬৫) যে মাটি দ্বারা তায়াম্মুম করা হয় তাতে কি ধুলা থাকা শর্ত? আল্লাহর বাণী “তোমাদের মুখমন্ডল

ও হস্তদ্বয় তা দ্বারা মুছে ফেল।” এখানে “তা দ্বারা” বলতে কি বুঝা যায় যে,তায়াম্মুম করার সময় অবশ্যই ধুলা

উত্তরঃ প্রাধান্যযোগ্য মত হচ্ছে তায়াম্মুমের জন্য মাটিতে ধুলা লেগে থাকা শর্ত নয়। বরং মাটি দ্বারা

তায়াম্মুম করলেই যথেষ্ট হবে, চাই তাতে ধুলা থাক বা না থাক। অতএব মাটির উপর যদি বৃষ্টি নাযিল হয়, আর ঐ

فَامْسَحُوا بِوُجُوهِكُمْ وَأَيْدِيكُمْ مِنْهُ مَا يُرِيدُ اللَّهُ لِيَجْعَلَ عَلَيْكُمْ مِنْ حَرَجٍ وَلَكِنْ يُرِيدُ لِيُطَهِّرَكُمْ وَلِيُتِمَّ نِعْمَتَهُ عَلَيْكُمْ لَعَلَّكُمْ تَشْكُرُونَ

মাটিতে মানুষ হাত মেরে মুখমন্ডল ও হাত মাসেহ করে তবে যথেষ্ট হবে। যদিও মাটিতে কোন ধুলা না থাকে। কেননা

আল্লাহ্ বলেন,

“তবে তোমরা পবিত্র মাটি দ্বারা তায়াম্মুম কর। স্বীয় হস্তদ্বয় ও মুখমন্ডল মাটি দ্বারা মুছে ফেল।” (সূরা

তাছাড়া নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এবং তাঁর ছাহাবীগণ কখনো এমন স্থানে সফর করতেন যেখানে বালু

ছাড়া অন্য কিছু পাওয়া যেত না। কখনো বৃষ্টিপাত হত। তারপরও তাঁরা আল্লাহর নির্দেশ মোতাবেক তায়াম্মুম

করতেন। অতএব বিশুদ্ধ কথা হচ্ছে, যে কোন মাটি দ্বারা তায়াম্মুম করলেই তা বিশুদ্ধ হবে। চাই সেখানে ধুলা থাক

আল্লাহর বাণী: “তোমাদের মুখমন্ডল ও হস্তদ্বয় তা দ্বারা মুছে ফেল।” এখানে منه শব্দে مِنْ অব্যয়টি দ্বারা ‘কিছু

সংখ্যক’ বুঝানো উদ্দেশ্য নয়। বরং কোন কাজের শুরু বুঝানো হয়েছে। এই জন্যে প্রমাণিত হয়েছে যে, নবী

(ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তায়াম্মুমের পদ্ধতি দেখাতে গিয়ে মাটিতে হাত মেরে তাতে ফুঁ দিয়েছেন।[34]

প্রশ্নঃ (১৬৬) মাটি না পেয়ে দেয়ালে বা বিছানায় তায়াম্মুম করলে বিশুদ্ধ হবে কি?

উত্তরঃ দেয়াল হচ্ছে পবিত্র মাটির অন্তর্ভূক্ত। দেয়াল যদি পাথর বা মাটির তৈরী ইট দ্বারা নির্মিত হয়, তবে তা

দ্বারা তায়াম্মুম করা জায়েয। কিন্তু কাঠ বা পেইন্ট প্রভৃতি দ্বারা যদি দেয়ালকে ঢেকে দেয়া হয়- আর এর উপর ধুলা

জমে থাকে, তবে তা দ্বারা তায়াম্মুম করতে কোন অসুবিধা নেই। আর তা মাটিতে তায়াম্মুমের অন্তর্ভূক্ত হবে।

কেননা ধুলা মাটিরই অন্তর্ভূক্ত। কিন্তু উক্ত দেয়ালে যদি কোন ধুলা বা মাটি না থাকে, তবে সেখানে তায়াম্মুম

করা যাবে না। কেননা সেখানে তো কোন মাটি নেই।

আর বিছানার ক্ষেত্রে কথা হচ্ছে, যদি তাতে ধুলা থাকে, তবে তা দ্বারা তায়াম্মুম চলবে অন্যথায় নয়। কেননা

বিছানা মাটির অন্তর্গত নয়।

প্রশ্নঃ (১৬৭) ছোট্ট শিশুর পেশাব যদি কাপড়ে লাগে, তবে তার বিধান কি?

উত্তরঃ এই মাসআলায় বিশুদ্ধ কথা হচ্ছে, শিশু যদি পুরুষ হয় এবং শুধুমাত্র মাতৃদুগ্ধ তার খাদ্য হয়, তবে তার পেশাব

হালকা নাপাক। এটাকে পবিত্র করার জন্য পানির ছিটা দেয়াই যথেষ্ট। অর্থাৎ হাতে পানি নিয়ে কাপড়ের উপর

এমনভাবে ছিটিয়ে দিবে যাতে সম্পূর্ণ স্থানকে শামিল করে, ঘঁষতে হবে না এবং তাতে এত বেশী পরিমাণ পানি ঢালতে

হবে না যে, চিপে পানি বের করতে হয়। এর কারণ হচ্ছে নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে প্রমাণিত

হয়েছে, একদা একটি শিশু পুত্র নিয়ে এসে তাঁর কোলে রেখে দেয়া হল। সে পেশাব করে দিলে, তিনি পানি নিয়ে আসতে

বললেন, অতঃপর তার উপর ছিটা দিলেন, কিন্তু তা ধৌত করলেন না। [35]

আর শিশু যদি কন্যা সন্তান হয়, তবে তার পেশাব অবশ্যই ধৌত করতে হবে। কেননা পেশাব মূলতঃ অপবিত্র। উহা

ধৌত করা ওয়াজিব। কিন্তু শিশু পুত্রের পেশাব এর ব্যতীক্রম। কেননা সুন্নাতে নববীতে এর প্রমাণ বিদ্যমান।

পঞ্চাশ বছর বয়স অতিক্রম হওয়ার পর নারীর ঋতু স্রাবের বিধানঃ

প্রশ্নঃ (১৬৮) জনৈক নারী পঞ্চাশ বছর বয়স অতিক্রম করেছে। কিন্তু পরিচিত নিয়মেই তার স্রাব প্রবাহিত

হচ্ছে। আরেক পঞ্চাশোর্ধ নারীর স্রাব পরিচিত নিয়মে হয় না; বরং হলদে রং বা মেটে রঙ্গের পানি নির্গত হয়।

এদের বিধান কি?

উত্তরঃ নির্দিষ্ট ও পরিচিত নিয়মে যে নারীর স্রাব নির্গত হচ্ছে, তার উক্ত স্রাব বিশুদ্ধ মতে হায়েয বা ঋতুস্রাব

হিসেবে গণ্য হবে। কেননা ঋতুবতী হওয়ার জন্য সর্বোচ্চ কোন বয়স নেই। অতএব ঋতুর নির্দিষ্ট বিধান সমূহ এই

নারীর জন্য প্রযোজ্য হবে। অর্থাৎ- নামায, রোযা ও স্বামী সহবাস থেকে বিরত থাকা। স্রাব বন্ধ হলে ফরয

গোসল করা এবং ছুটে যাওয়া ছিয়ামের কাযা আদায় করা।

আর যে নারীর হলদে রং বা মেটে রঙ্গের পানি নির্গত হচ্ছে, যদি ইহা ঋতুর নির্দিষ্ট সময়ে বের হয়ে থাকে, তবে তা

হায়েয বা ঋতু হিসেবে গণ্য হবে। আর ঋতুর সময়ে না হলে তা হায়েয নয়। কিন্তু তার স্রাব যদি পরিচিত ঋতুস্রাবের

মত হয় কিন্তু কখনো আগে হয় কখনো পরে, তাতে কোন অসুবিধা নেই। যখন স্রাব আসবে তখন ছালাত, ছিয়াম

প্রভৃতি থেকে বিরত থাকবে আর যখন স্রাব বন্ধ হয়ে যাবে তখন গোসল করে পবিত্র হবে। এসমস্ত কথা বিশুদ্ধ

মতানুযায়ী- ঋতুর জন্য বয়সের নির্দিষ্ট কোন সময়সীমা নেই।

কিন্তু হাম্বলী মাযহাব মতে পঞ্চাশ বছর বয়সের উর্ধে হলে আর ঋতু নেই। যদিও কৃষ্ণ বর্ণের স্রাব নির্গত হয়।

তখন সে ছালাত, ছিয়াম, প্রভৃতি যথানিয়মে চালিয়ে যাবে। রক্ত বন্ধ হলে গোসল করার দরকার নেই। কিন্তু এমতটি

প্রশ্নঃ (১৬৯) গর্ভবতীর রক্তস্রাব দেখা গেলে তা কি ঋতুস্রাব হিসেবে গণ্য হবে?

উত্তরঃ গর্ভবতীর হায়েয হয় না। যেমনটি ইমাম আহমাদ বিন হাম্বাল (রহঃ) বলেছেন। কেননা নারীর গর্ভ তো

হায়েয বন্ধ হওয়ার মাধ্যমেই জানা যায়। বিদ্বানগণ বলেছেন, আল্লাহ্ তা’আলা নিজ হিকমতে হায়েযের রক্তকে

মাতৃগর্ভে ভ্রুণের খাদ্য হিসেবে সৃষ্টি করে থাকেন। গর্ভে সন্তান এসে গেলে ঐ হায়েয বাইরে বের হওয়া বন্ধ হয়ে

যায়। কিন্তু কোন কোন নারীর গর্ভধারণের পরও সঠিক নিয়মে হায়েয হতে থাকে। যেমনটি গর্ভধারণের পূর্বে

হচ্ছিল। তাদের এই স্রাব ঋতু হিসেবে গণ্য হবে। কেননা গর্ভধারণ তার মধ্যে কোন প্রভাব ফেলেনি। ফলে ঋতু

আপন গতিতে চলমান রয়েছে। অতএব তার এই স্রাব ঋতুর সবধরণের বিধানকে শামিল করবে। মোটকথা গর্ভবতী

থেকে যে স্রাব নির্গত হয়, তা দু’ভাগে বিভক্তঃ

প্রথম প্রকারঃ গর্ভধারণের পূর্বে যে নিয়মে ঋতু চলছিল গর্ভের পরেও যদি সেই নিয়মে স্রাব চলতে থাকে, তবে উহা

হায়েয হিসেবে গণ্য হবে। কেননা এখানে গর্ভধারণ তার স্বাভাবিক স্রাবের ক্ষেত্রে কোন প্রভাব বিস্তার করতে

পারেনি। ফলে উহা হায়েয বা ঋতু হিসেবেই গণ্য হবে।

দ্বিতীয় প্রকারঃ আকস্মিক কোন কারণ বশতঃ স্রাব নির্গত হওয়া। দুর্ঘটনাবশত:, ভারী কোন বস্তু বহণ করা

বা কোন স্থান থেকে পড়ে যাওয়া প্রভৃতি কারণে রক্ত প্রবাহিত হওয়া। তখন তা হায়েয হিসেবে গণ্য হবে না। বরং

তা শিরা থেকে নির্গত। তাই সে নামায, রোযা প্রভৃতি থেকে বিরত থাকবে না; পবিত্র অবস্থায় যা করতো তা সবই

স্বাভাবিক নিয়মে করতে থাকবে।

প্রশ্নঃ (১৭০) ঋতুর সর্বনিম্ন ও সর্বোচ্চ নির্দিষ্ট দিন বলে কি কিছু আছে?

উত্তরঃ বিশুদ্ধ মতে ঋতুর সর্বনিম্ন ও সর্বোচ্চ দিন নির্দিষ্ট বলে কিছু নেই। কেননা আল্লাহ বলেনঃ

অর্থাৎ “আর তারা তোমার কাছে জিজ্ঞাসা করে হায়েয স¤পর্কে। বলে দাও, এটা অপবিত্র। কাজেই তোমরা হায়েয

অবস্থায় স্ত্রী মিলন থেকে বিরত থাক। তখন পর্যন্ত তাদের সাথে সহবাসে লিপ্ত হবে না; যতক্ষণ না তারা পবিত্র

হয়ে যায়।” (সূরা বাক্বারা- ২২২)

এখানে স্ত্রী সহবাসের নিষিদ্ধতা নির্দিষ্ট দিনের সাথে সম্পর্কিত করা হয়নি। এর সম্পর্ক হচ্ছে অপবিত্রতা থেকে

পবিত্র হওয়ার সাথে।

এ থেকে বুঝা যায়, বিধানটির কারণ হচ্ছে ঋতু থাকা বা না থাকা। যখনই ঋতু পাওয়া যাবে, বিধান প্রযোজ্য হবে।

যখনই পবিত্র হয়ে যাবে, তার বিধান সমূহও রহিত হবে।

তাছাড়া নির্দিষ্ট দিন বেঁধে দেয়ার কোন দলীলও নেই। অথচ বিষয়টি বর্ণনা করে দেয়ার দরকার ছিল। বয়স বা

দিনের নির্দিষ্টতা যদি শরীয়ত সম্মত হত, তবে তা অবশ্যই আল্লাহর কিতাব ও রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি

ওয়া সাল্লাম)এর সুন্নাতে বর্ণিত হত।

অতএব এই ভিত্তিতে নারীদের কাছে পরিচিত স্রাব যখনই দেখা যাবে, নারী তখনই নিজেকে ঋতুবতী গণ্য করবে।

এখানে কোন দিন নির্দিষ্ট করবে না। কিন্তু নারীর স্রাব যদি চলতেই থাকে বন্ধ না হয়, অথবা সামান্য সময়ের

জন্য বন্ধ হয়, যেমন মাসে একদিন বা দু’দিন তবে তা ইস্তেহাযার স্রাব (বা অসুস্থতা) বলে গণ্য হবে।

প্রশ্নঃ (১৭১) কোন নারীর ঔষুধ ব্যবহারের মাধ্যমে ঋতুস্রাব চালু করে নামায পরিত্যাগ করার বিধান কি?

উত্তরঃ নিজের ইচ্ছায় ঋতুস্রাব চালু করার কারণে যদি স্রাব চালু হয়ে যায় এবং নারী নামায পরিত্যাগ করে তবে

উক্ত নামাযের কাযা আদায় করতে হবে না। কেননা ঋতুস্রাব যখনই দেখা যাবে, তখনই তার বিধান প্রযোজ্য হবে।

অনুরূপভাবে নারী যদি ঋতুস্রাব বন্ধ করার জন্য কোন ঔষুধ গ্রহণ করে এবং তার ফলে স্রাব না আসে, তবে নামায

ও ছিয়াম আদায় করবে এবং ছিয়ামের কাযা করবে না। কেননা সে তো ঋতুবতী নয়। অতএব কারণ পাওয়া গেলেই

বিধান প্রযোজ্য হবে। যেমনটি আল্লাহ্ বলেছেনঃ “আর তারা তোমার কাছে জিজ্ঞাসা করে হায়েয স¤পর্কে। বলে

দাও, এটা অপবিত্র।” (সূরা বাকারা- ২২২) অতএব যখনই এই অপবিত্রতা পাওয়া যাবে, তার বিধান পাওয়াও যাবে।

যখন অপবিত্রতা থাকবে না, কোন বিধি-বিধানও থাকবে না।

প্রশ্নঃ (১৭২) ঋতুবতী নারীর কুরআন তেলাওয়াত করা জায়েয কি?

উত্তরঃ প্রয়োজন দেখা দিলে ঋতুবতী নারীর কুরআন পাঠ করা জায়েয। যেমন সে যদি শিক্ষিকা হয়, তবে পাঠ

দানের জন্য কুরআন পড়তে পারবে। অথবা ছাত্রী কুরআন শিক্ষা লাভ করার জন্য পাঠ করতে পারবে। অথবা নারী

তার শিশু সন্তানদের কুরআন শিক্ষা দেয়ার জন্য পাঠ করবে, শিখানোর জন্য তাদের আগে আগে কুরআন পাঠ

করবে। মোটকথা যখনই ঋতুবতী নারী কুরআন পাঠ করার প্রয়োজন অনুভব করবে, তখনই তার জন্য তা পাঠ করা

জায়েয কোন অসুবিধা নেই। অনুরূপভাবে কুরআন পাঠ না করার কারণে যদি ভুলে যাওয়ার আশংকা করে, তবে স্মরণ

রাখার জন্য তেলাওয়াত করবে- কোন অসুবিধা নেই। বিদ্বানদের মধ্যে কেউ কেউ বলেন, বিনা প্রয়োজনেও তথা

সাধারণ তেলাওয়াতের উদ্দেশ্যে ঋতুবতীর জন্য কুরআন পাঠ করা জায়েয। অবশ্য কোন কোন বিদ্বান বলেন,

প্রয়োজন থাকলেও ঋতুবতী নারীর কুরআন পাঠ করা হারাম। এখানে তিনটি মত পাওয়া গেল।

কিন্তু আমার মতে যে কথা বলা উচিত তা হচ্ছে, ঋতুবতী নারী যদি কুরআন পাঠ দান বা শিক্ষা গ্রহণের প্রয়োজন

অনুভব করে বা ভুলে যাওয়ার আশংকা করে, তবে কুরআন পাঠ করতে কোন অসুবিধা নেই।

হায়েযের রক্ত না ইস্তেহাযার রক্ত সন্দেহ হলে কি করবে?

প্রশ্নঃ (১৭৩) নির্গত স্রাবের ব্যাপারে নারী যদি সন্দিহান হয় যে, এটা কি হায়েযের রক্ত না কি ইস্তেহাযার রক্ত

না কি অন্য কিছুর রক্ত? এবং সে পার্থক্যও করতে পারে না। তবে সে উহা কি গণ্য করবে?

উত্তরঃ আসল কথা হচ্ছে, নারীর গর্ভ থেকে নির্গত রক্ত হায়েযেরই হয়ে থাকে। কিন্তু যখন প্রমাণিত হয়ে যাবে যে,

তা ইস্তেহাযার স্রাব তখন ইস্তেহাযা হিসেবে গণ্য করবে। অন্যথায় ইস্তেহাযা কিনা সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত না

হওয়া পর্যন্ত নির্গত রক্ত হায়েয বা ঋতু হিসেবেই গণ্য করবে।

প্রশ্নঃ (১৭৪) নামাযের সময় আরম্ভ হওয়ার পর ঋতু শুরু হলে তার বিধান কি?

উত্তরঃ নামাযের সময় প্রবেশ করার পর যদি নারীর ঋতুস্রাব শুরু হয়, যেমন উদাহরণ স্বরূপ যোহরের নামায শুরু

হওয়ার আধাঘন্টা পর ঋতুস্রাব আরম্ভ হল, তবে পবিত্র হওয়ার পর এই ওয়াক্তের নামায কাযা আদায় করবে।

কেননা সে পবিত্র থাকাবস্থায় তার উপর নামায আবশ্যক হয়েছিল। আল্লাহ বলেনঃ

“নিশ্চয় নির্দিষ্ট সময়ে নামায আদায় করা মু’মিনদের উপর ফরয করা হয়েছে।” (সূরা নিসা- ১০৩)

আর ঋতু চলমান অবস্থায় যে সমস্ত নামায পরিত্যাগ করবে, তার কাযা আদায় করবে না। কেননা নবী (ছাল্লাল্লাহু

আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বর্ণিত দীর্ঘ একটি হাদীছে তিনি বলেনঃ

“নারী কি এমন নয় যে, সে ঋতুবতী হলে নামায পড়ে না ও রোযা রাখে না?”[37] 

সমস্ত উলামায়ে কেরাম একথার উপর ঐকমত্য যে, ঋতু চলাবস্থায় ছুটে যাওয়া ছালাতের কাযা আদায় করতে হবে না।

নারী যদি এমন সময় পবিত্র হয় যখন নামাযের এক রাকাত বা ততোধিক রাকাত আদায় করা সম্ভব, তখন সে সেই

নামায আদায় করে নিবে। কেননা নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ

“যে ব্যক্তি সূর্যাস্তের পূর্বে আছরের এক রাকাত নামায আদায় করতে পারবে সে আছর নামায পেয়ে গেল।” [38]

যদি আছরের শেষ সময় পবিত্র হয় এবং সূর্যাস্তের জন্য এতটুকু সময় অবশিষ্ট থাকে যখন এক রাকাত নামায

আদায় করা সম্ভব, অথবা সূর্যোদয় হওয়ার পূর্বে পবিত্র হয়, যখন কমপক্ষে ফজরের এক রাকাত নামায আদায়

করা সম্ভব, তবে উভয় অবস্থায় তাকে গোসল করার পর আছর বা ফজরের নামায কাযা আদায় করতে হবে।

নারীর ঋতুর নির্দিষ্ট দিন বৃদ্ধি হয়ে গেলে

প্রশ্নঃ (১৭৫) জনৈক নারীর ঋতুর নির্দিষ্ট দিন ছিল ছয় দিন। অতঃপর এই দিনের পরিমাণ বৃদ্ধি হয়ে গেছে। সে এখন

উত্তরঃ এই নারীর ঋতুর দিন ছিল ছয় দিন। কিন্তু তা বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়ে নয় দিন বা দশ দিন বা এগার দিন হয়ে গেছে,

তবে তা ঋতু হিসেবে গণ্য করে পবিত্র না হওয়া পর্যন্ত নামায-রোযা থেকে বিরত থাকবে। কেননা নবী (ছাল্লাল্লাহু

আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঋতুর জন্য নির্দিষ্ট সীমারেখা নির্ধারণ করে দেননি। আল্লাহ তা’আলা বলেন, “আর তারা

তোমার কাছে জিজ্ঞাসা করে হায়েয স¤পর্কে। বলে দাও, এটা অপবিত্র।” (সূরা বাকারা- ২২২) অতএব যতক্ষণ

পর্যন্ত এই স্রাব অবশিষ্ট থাকবে, নারীও নিজ অবস্থায় থেকে পবিত্র হওয়ার পর গোসল করে ছালাত-ছিয়াম

আদায় করবে। পরবর্তী মাসে যদি তার স্রাবের দিন কম হয়ে যায়, তবে স্রাব বন্ধ হলেই গোসল করে পবিত্র হয়ে

যাবে। যদিও আগের মাসের সমান দিন পূর্ণ না হয়।

মোটকথা নারী যতদিন ঋতু বিশিষ্ট থাকবে ততদিন সে ছালাত-ছিয়াম থেকে বিরত থাকবে। চাই ঋতুর দিন পূর্ববর্তী

মাসের বরাবর হোক বা কম হোক বা বেশী হোক। স্রাব বন্ধ হয়ে পবিত্র হলেই গোসল করবে।

হায়েযের দিন সমূহ বিচ্ছিন্নভাবে হলে কি করবে?

প্রশ্নঃ (১৭৬) জনৈক নারী মাসিক থেকে পবিত্র হওয়ার পর গোসল করে নামায শুরু করেছে। এভাবে নয় দিন

অতিবাহিত হওয়ার পর আবার স্রাব দেখা গেছে। তিন দিন স্রাব প্রবাহমান ছিল। তখন নামায পড়েনি। তারপর

পবিত্র হলে গোসল করে এগার দিন নামায আদায় করেছে। তারপর আবার তার স্বাভাবিক মাসিক শুরু হয়েছে। সে কি

ঐ তিন দিনের নামায কাযা আদায় করবে? নাকি তা হায়েযের দিন হিসেবে গণ্য করবে?

উত্তরঃ নারীর গর্ভ থেকে যখনই রক্ত প্রবাহিত হবে তখনই তা ঋতু বা হায়েয হিসেবে গণ্য হবে। চাই সেই ঋতুর

সময় পূর্বের ঋতুর সময়ের চাইতে দীর্ঘ হোক বা কম হোক। ঋতু থেকে পবিত্র হওয়ার পাঁচ দিন বা ছয় দিন বা দশ

দিন পর পুনরায় স্রাব দেখা গেছে, তবে সে পবিত্র হওয়ার অপেক্ষা করবে এবং নামায পড়বে না। কেননা এটা ঋতু।

সর্বাবস্থায় এরূপই করবে। পবিত্র হওয়ার পর আবার যদি ঋতু দেখা যায়, তবে অবশ্যই নামায-রোযা থেকে বিরত

থাকবে। কিন্তু স্রাব যদি চলমান থাকে- সামান্য সময় ব্যতীত কখনই বন্ধ না হয়, তবে তা ইস্তেহাযা বা অসুস্থতা

বলে গণ্য হবে। তখন তার নির্দিষ্ট দিন সমূহ শুধু ছালাত-ছিয়াম থেকে বিরত থাকবে।

প্রশ্নঃ (১৭৭) ঋতু শুরু হওয়ার দু’দিন পূর্বে নারীর গর্ভ থেকে যে হলুদ রংয়ের তরল পদার্থ নির্গত হয় তার বিধান

উত্তরঃ হলুদ রংয়ের এই তরল পদার্থ যদি ঋতুর সময় হওয়ার পূর্বে নির্গত হয়, তবে তা কিছু নয়। কেননা উম্মে

আত্বীয়্যা (রাঃ) বলেন,

“আমরা হলুদ রং ও মেটে রংয়ের তরল পদার্থ বের হলে তা কোন কিছুই গণ্য করতাম না।”[39]  (বুখারী)

আবু দাঊদের বর্ণনায় এসেছে, উম্মে আত্বীয়্যা (রাঃ) বলেন,

“পবিত্র হওয়ার পর হলুদ রং ও মেটে রংয়ের তরল পদার্থ বের হলে আমরা তাকে কোন কিছুই গণ্য করতাম

ঋতুর পূর্বের এই হলুদ রংয়ের তরল পদার্থ যদি ঋতু বের হওয়ার সাথে সাথে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়, তবে তা কোন কিছু

নয়। কিন্তু নারী যদি উহা ঋতুর সূচনা স্বরূপ মনে করে, তবে তা ঋতু হিসেবে গণ্য করবে এবং পবিত্র হওয়া পর্যন্ত

অপেক্ষা করবে।

প্রশ্নঃ (১৭৮) পবিত্র হওয়ার পর হলুদ রং ও মেটে রংয়ের তরল পদার্থ বের হওয়ার বিধান কি?

উত্তরঃ ঋতুর ক্ষেত্রে নারীদের সমস্যা সাগরতুল্য যার কোন কুল কিনারা নেই। এর অনেক কারণের মধ্যে

অন্যতম একটি কারণ হচ্ছে, গর্ভ বা মাসিক নিরোধক ঔষধ ব্যবহার করা। পূর্বে মানুষ এত ধরণের সমস্যা

সম্পর্কে অবগত ছিল না। সন্দেহ নেই সৃষ্টি লগ্ন থেকে নারীর নানান সমস্যা রয়েছে। কিন্তু বর্তমানে এর আধিক্য

এত বেশী যে মানুষ তার সমাধানের ক্ষেত্রে হয়রান হয়ে যায়; যা দুঃখজনক বিষয়।

তবে মূলনীতি হচ্ছে, নারী যদি নিশ্চিতভাবে ঋতু থেকে পবিত্রতা দেখতে পায়, যেমন নারীদের কাছে পরিচিত সাদা পানি

বের হওয়া, বা হলুদ বা মেটে রং বের হওয়া বা ভিজা পাওয়া এগুলো সবই হায়েয বা ঋতু নয়। এগুলো নামায বা ছিয়াম

থেকে বাধা দিবে না। স্বামী সহবাসে বাধা থাকবে না। কেননা এটা হায়েয নয়। উম্মু আতিয়্যা (রাঃ) বলেন, “পবিত্র

হওয়ার পর হলুদ রং ও মেটে রংয়ের তরল পদার্থ বের হলে, আমরা তা কোন কিছুই গণ্য করতাম না।” [41] এর সনদ

এই ভিত্তিতে, নিশ্চিতভাবে পবিত্র হওয়ার পর এ ধরণের যা কিছুই ঘটুক, তাতে নারীর কোন অসুবিধা নেই। ছালাত-

ছিয়াম ও স্বামী সহবাসে কোন বাধা নেই। কিন্তু পবিত্রতা না দেখা পর্যন্ত তাড়াহুড়া করবে না। কেননা কোন

কোন নারী রক্ত বের হওয়াতে কিছুটা শুস্কতা দেখলেই পবিত্রতার চিহ্ন না দেখেই তাড়াহুড়া করে গোসল করে

নেয়। এই জন্য মহিলা ছাহাবীগণ উম্মুল মু’মেনীন আয়েশা (রাঃ)কে দেখানোর জন্য তুলা নিয়ে আসতেন যাতে পীত

রংয়ের তরল পদার্থ লেগে থাকতো। তখন তিনি তাদেরকে বলতেন, “সাদা পানি নির্গত না হওয়া পর্যন্ত তোমরা

তাড়াহুড়া করবে না।” [42]

প্রশ্নঃ (১৭৯) ঋতু বন্ধ করার জন্য ঔষধ (ট্যাবলেট) ব্যবহার করার বিধান কি?

উত্তরঃ ঋতু বন্ধ করার জন্য ঔষধ (ট্যাবলেট) ব্যবহার করলে স্বাস্থ্যগত দিক থেকে কোন ক্ষতির সম্ভাবনা না

থাকলে, তাতে কোন অসুবিধা নেই। তবে তাতে স্বামীর অনুমতি থাকতে হবে। কিন্তু এযাবত আমি যা জেনেছি তাতে এ

সমস্ত ঔষধ নারীর জন্য ক্ষতিকারক। একথা সবার জানা যে, মাসিকের রক্ত প্রবাহিত হওয়াটা খুবই স্বাভাবিক।

আর সময় মত স্বাভাবিক বিষয়ের গতিতে বাধা দিলে সেখানে অবশ্যই ক্ষতির আশংকা থাকে। নারীর শরীরে তার

ক্ষতিকর প্রভাবও লক্ষ্য করা যায়। তাছাড়া ইহা ব্যবহার করলে অনেক সময় নারীর স্বাভাবিক মাসিক বাধাগ্রস্থ

হয় এবং সে পেরেশানী ও সন্দেহের মধ্যে পতিত হয়। নামায-রোযা ও স্বামীর সাথে সহবাসের ক্ষেত্রে অসুবিধার

এ জন্য আমি বলিনা যে এটা হারাম। কিন্তু নারীর ক্ষতির দিক চিন্তা করে বলি, এটা ব্যবহার করা উচিত নয়।

আমার মতে এ পদক্ষেপ পসন্দনীয় নয়।

আরো বলি, আল্লাহ নারীর জন্য যা নির্ধারণ করে দিয়েছেন, তাতেই তার সন্তুষ্ট থাকা উচিত। বিদায় হজ্জে নবী

(ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উম্মুল মু’মেনীন আয়েশা (রাঃ)এর ঘরে গিয়ে দেখেন তিনি কাঁদছেন। তখন আয়েশা

(রাঃ) ওমরার ইহরাম বেঁধেছিলেন।

তিনি তাঁকে বললেন, “কি হয়েছে তোমার, কাঁদছো কেন? আয়েশা (রাঃ) বললেন, আমি বললাম, আল্লাহর শপথ এ বছর

আমি হজ্জ না করলেই ভাল হত। তিনি বললেন, সম্ভবতঃ তুমি ঋতুবতী হয়ে গেছো? আমি বললাম, হ্যাঁ। নবী

(ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, এটা এমন এক বিষয় যা আল্লাহ তা’আলা আদম সন্তানের মেয়েদের জন্য

লিখে দিয়েছেন।[43]

(সুতরাং দুঃখ করার কিছু নেই।)  অতএব নারীর উচিত হচ্ছে, এ সময় ধৈর্য ধারণ করা। ঋতুর কারণে ছালাত-ছিয়াম

করতে না পারলে তো আল্লাহর যিকিরের দরজা উম্মুক্ত রয়েছে। তাসবীহ-তাহলীল করবে, দান-সাদকা করবে,

মানুষের সাথে সদাচরণ করবে, কথা-কাজে মানুষের উপকার করার চেষ্টা করবে, ইত্যাদি কাজ তো সুন্দর ও

অত্যাধিক ফযীলতপূর্ণ আমল।

প্রশ্নঃ (১৮০) চল্লিশ দিন অতিবাহিত হওয়ার পরও নেফাসের স্রাব চলতে থাকলে কি করবে?

উত্তরঃ কোন পরিবর্তন ছাড়াই যদি নেফাস বিশিষ্ট নারীর স্রাব চল্লিশ দিন অতিবাহিত হওয়ার পরও চলতে

থাকে- যদি চল্লিশ দিনের পরের স্রাব ঋতুস্রাবের সময়ে হয়ে থাকে, তবে তা হায়েয বা ঋতু স্রাব হিসেবে গণ্য করবে।

কিন্তু পূর্ববর্তী স্বাভাবিক ঋতু স্রাবের সময়ে না হয়, তবে সে সম্পর্কে বিদ্বানদের মধ্যে মতভেদ রয়েছে।

একদল বিদ্বান বলেন, চল্লিশ দিন পূর্ণ হলেই গোসল করে পবিত্র হয়ে যাবে এবং স্বাভাবিক নিয়মে ছালাত-ছিয়াম

আদায় করবে। আর প্রবাহিত রক্ত ইস্তেহাযা বা অসুস্থতা গণ্য করবে।

আরেকদল বিদ্বান বলেন, সে অপেক্ষা করবে এবং ষাট দিন পূর্ণ করবে। কেননা ষাট দিন পর্যন্ত নেফাস হয়েছে, এমন

অনেক নারীও পাওয়া গেছে। এটা বাস্তব বিষয়। কেননা প্রকৃত পক্ষে কোন কোন নারীর ষাট দিন পর্যন্তই

নেফাস হয়েছে। অতএব এই ভিত্তিতে ষাট দিন পূর্ণ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করবে। এরপর স্বাভাবিক ঋতু স্রাবের

দিকে ফিরে যাবে। আর সেই মাসিকের সময় অপেক্ষা করে পবিত্র হলে গোসল করে নামায-রোযা আদায় করবে।

এরপরও যদি স্রাব চলতেই থাকে তখন উহা ইস্তেহাযা হিসেবে গণ্য করবে।[44]

প্রশ্নঃ (১৮১) নেফাসের চল্লিশ দিন শেষ হওয়ার আগেই পবিত্র হয়ে গেলে বা চল্লিশ দিনের পর পূণরায় স্রাব দেখা

গেলে কি করবে?

উত্তরঃ নেফাস বিশিষ্ট স্ত্রীর সাথে সহবাস করা স্বামীর জন্য জায়েয নয়। যদি চল্লিশ দিনের মধ্যে সে পবিত্র

হয়ে যায়, তবে গোসল করে নামায আদায় করা তার জন্য ওয়াজিব এবং নামাযও বিশুদ্ধ। এ অবস্থায় স্বামী

সহবাসও তার জন্য জায়েয। কেননা আল্লাহ বলেন,

অর্থাৎ- “আর তারা তোমার কাছে জিজ্ঞাসা করে হায়েয স¤পর্কে। বলে দাও, এটা অপবিত্র। কাজেই তোমরা

হায়েয অবস্থায় স্ত্রী মিলন থেকে বিরত থাক। তখন পর্যন্ত তাদের সাথে সহবাসে লিপ্ত হবে না; যতক্ষণ না তারা

পবিত্র হয়ে যায়।” (সূরা বাক্বারা- ২২২)

যতক্ষণ অপবিত্রতা তথা রক্ত বিদ্যমান থাকবে ততক্ষণ স্বামীর সাথে সহবাস জায়েয হবে না। পবিত্র হয়ে গেলেই

সহবাস জায়েয হবে। যেমনটি নামায আদায় করাও তার জন্য ওয়াজিব। চল্লিশ দিনের পূর্বে পবিত্র হলে, নেফাস

অবস্থার যাবতীয় নিষিদ্ধতা শেষ হয়ে যাবে। তবে সহবাসের ক্ষেত্রে কিছুটা ধৈর্যাবলম্বন করা উচিত। কেননা

সহবাসের ফলে পুনরায় রক্ত চালু হয়ে যেতে পারে।

فَقَالَ مَا يُبْكِيكِ قُلْتُ لَوَدِدْتُ وَاللَّهِ أَنِّي لَمْ أَحُجَّ الْعَامَ قَالَ لَعَلَّكِ نُفِسْتِ قُلْتُ نَعَمْ قَالَ فَإِنَّ ذَلِكِ شَيْءٌ كَتَبَهُ اللَّهُ عَلَى بَنَاتِ آدَمَ

চল্লিশ দিন পূর্ণ হওয়ার পর এবং পবিত্র হওয়ার পর যদি আবার রক্ত দেখা যায়, তবে উহা মাসিকের রক্ত হিসেবে

গণ্য করবে। নেফাসের রক্ত নয়। মাসিকের রক্ত নারীদের কাছে পরিচিত। যখনই উহা অনুভব করবে মনে করবে উহা

ঋতুস্রাব। এই রক্ত যদি প্রবাহমান থাকে এবং সামান্য সময় ব্যতীত কখনই বন্ধ হয় না, তবে উহা ইস্তেহাযা হিসেবে

গণ্য হবে। তখন ঋতুর নির্দিষ্ট দিন সমূহ অপেক্ষা করবে এবং অবশিষ্ট দিন সমূহ পবিত্র হিসেবে গণ্য করবে এবং

গোসল করে নামায আদায় করবে। (আল্লাহই অধিক জ্ঞাত)

প্রশ্নঃ (১৮২) জনৈক নারীর তৃতীয় মাসেই গর্ভপাত হয়ে গেছে। সে কি নামায আদায় করবে, না নামায পরিত্যাগ

উত্তরঃ বিদ্বানদের নিকট পরিচিত কথা হচ্ছে, নারীর গর্ভ যদি তিন মাস অতিবাহিত হওয়ার পর পড়ে যায়, তবে সে

নামায পড়বে না। কেননা নারীর গর্ভস্থ ভ্রুণে মানুষের আকৃতি সৃষ্টি হয়ে গেছে। তখন তা নেফাস হিসেবে গণ্য হবে।

অতএব সে নামায থেকে বিরত থাকবে।

বিদ্বানগণ বলেন, মাতৃগর্ভে ভ্রুণের বয়স ৮১ (একাশি) দিন অতিবাহিত হলে মানুষের আকৃতি ধারণ করে। এ সময়টি

তো তিন মাসের অনেক কম। যদি নিশ্চিত হয় যে, তিন মাস বয়সের ভ্রুণ পতিত হয়ে গেছে, তবে নির্গত রক্ত

নেফাসের রক্ত বলেই গণ্য হবে। কিন্তু এই গর্ভপাত যদি আশি দিনের কমে হয়, তবে নির্গত রক্ত নষ্ট রক্ত বলে

গণ্য হবে। আর সে কারণে নামায প্রভৃতি পরিত্যাগ করবে না।

প্রশ্নকারী এই নারীর উপর আবশ্যক হচ্ছে, স্মরণ করার চেষ্টা করবে ৮০ দিনের কম বয়সে যদি গর্ভপাত হয়ে

থাকে এবং সে জন্য নামায পরিত্যাগ করে থাকে, তবে পরিত্যাক্ত নামাযের কাযা আদায় করবে। নামায কত ওয়াক্ত

ছুটেছে তা নিশ্চিতভাবে স্মরণ করতে না পারলে অনুমানের ভিত্তিতে কাযা আদায় করবে।

প্রশ্নঃ (১৮৩) অসুস্থতার কারণে যদি কোন নারীর রক্তস্রাব নির্গত হতেই থাকে, তবে কিভাবে সে ছালাত ও

ছিয়াম আদায় করবে?

উত্তরঃ এই নারীর অসুখ শুরু হওয়ার পূর্বে তথা গত মাসে তার ঋতুর যে দিন তারিখ নির্দিষ্ট ছিল, সেই নির্দিষ্ট দিন

সমূহে সে নিজেকে ঋতুবতী হিসেবে গণ্য করে ছালাত-ছিয়াম প্রভৃতি থেকে বিরত থাকবে। উদাহরণ স্বরূপ বিগত

মাসগুলোর প্রথম দিকে তার ছয়দিন ঋতু ছিল, তারপর এক সময় তার অসুখ শুরু হয়েছে, এক্ষেত্রে সে প্রত্যেক

মাসের প্রথম দিকে ছয় দিন অপেক্ষা করবে এবং ছালাত ছিয়াম থেকে বিরত থাকবে। এ দিন সমূহ শেষ হলেই গোসল

করে ছালাত-ছিয়াম আদায় করবে।

এ নারী বা তার মত নারীদের নামাযের পদ্ধতি হচ্ছে,

ক) ফরয নামাযের সময় হওয়ার পর পূর্ণাঙ্গরূপে লজ্জাস্থান ধৌত করবে।

খ) তারপর সেখানে প্যাড বা পট্টি জাতীয় কোন কিছু বেঁধে দিবে,

গ) এরপর ওযু করবে এবং নামায আদায় করবে।

নামাযের সময় উপস্থিত হওয়ার পূর্বে এরূপ ওযু ইত্যাদি কাজ করবে না। ফরয নামাযের সময় ব্যতীত অন্য সময়

নফল নামায পড়তে চাইলেও এভাবে ওযু ইত্যাদি করবে।

এ অবস্থায় যেহেতু বারবার এতকাজ করা তার জন্য কষ্টসাধ্য ব্যাপার, তাই দু’নামাযকে একত্রিত করা জায়েয।

যোহরের সাথে আছরের নামায আদায় করে নিবে বা আছরের সাথে যোহরের নামাযকে আদায় করবে। এবং মাগরিবের

সাথে এশার নামায আদায় করবে অথবা এশার সময় মাগরিব ও এশার নামায আদায় করবে। যাতে করে তার একবারের

পরিশ্রম দু’নামায যোহর ও আছরের জন্য যথেষ্ট হয় এবং দ্বিতীয়বারের পরিশ্রম মাগরিব ও এশার জন্য যথেষ্ট

হয়। আর একবার ফজর নামাযের জন্য। অর্থাৎ- পাঁচবার পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের জন্য লজ্জাস্থান ধৌত করা, পট্টি

বাঁধা, ওযু করা প্রভৃতি কষ্টকর বিষয়। তাই এর পরিবর্তে তিনবারেই একাজ আদায় হয়ে যাবে। কষ্টও অনেক লাঘব

হবে। (আল্লাহই তাওফীক দাতা ও তিনিই অধিক জ্ঞাত আছেন)

____________________________________________________________________________

রেফারেন্স সমূহ:

[1]  বুখারী, অধ্যায়ঃ ঋতু, অনুচ্ছেদঃ ঋতুবতী নামায কাযা আদায় করবে না। মুসলিম, অধ্যায়ঃ ঋতু, অনুচ্ছেদঃ ছিয়াম

কাযা আদায় করা ওয়াজিব।

[2]  তিরমিযী, অধ্যায়ঃ পোশাক, অনুচ্ছেদঃ স্বর্ণ ও রেশমের বিবরণ। নাসাঈ, অধ্যায়ঃ সৌন্দর্য, অনুচ্ছেদঃ

পুরুষের জন্য স্বর্ণ ব্যবহার হারাম।

 তো এই যুক্তিতে কোন দিন স্বর্ণের আংটি পরিধান করেননি? বরং আবদুল্লাহ্ বিন আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত

হয়েছে। তিনি বলেন,  এর চাইতে তারা কি মৃত্যুকে বেশী ভয় করে থাকে? রাসূল [3]   কিছু কিছু লোক অযথা যুক্তি

পেশ করে থাকে যে, কাফনের কাপড়ের মূল্য পরিমাণ স্বর্ণের আংটি ব্যবহার করতে কোন অসুবিধা নেই। তারা

প্রকৃত পক্ষে নিজের প্রবৃত্তির পুজা করে থাকে। ওরা কি জানে যে কিভাবে কোথায় তার মৃত্যু হবে। রাসূলুল্লাহ্

أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّه عَلَيْهِ وَسَلَّمَ رَأَى خَاتَمًا مِنْ ذَهَبٍ فِي يَدِ رَجُلٍ فَنَزَعَهُ فَطَرَحَهُ وَقَالَ يَعْمِدُ أَحَدُكُمْ إِلَى جَمْرَةٍ مِنْ نَارٍ فَيَجْعَلُهَا فِي يَدِهِ 

 একদা জনৈক লোকের হাতে একটি স্বর্ণের আংটি দেখতে পেলেন, তিনি তার হাত থেকে উহা খুলে নিয়ে ফেলে দিলেন,

অতঃপর বললেন, তোমাদের কোন মানুষ কি নিজের হাতে জাহান্নামের আগুন রাখতে চায়?” (মুসলিম, অধ্যায়ঃ

পোশাক ও সৌন্দর্য্য, হা/৩৮৯৭)“রাসূলুল্লাহ্

- অতএব যারা স্বর্ণের আংটি পরিধান করে তারা সাবধান। সেই আংটি বিবাহের আংটিই হোক বা স্মৃতির আংটিই

হোক সবগুলোই হারাম। -অনুবাদক।

[4]  তিরমিযী, অধ্যায়ঃ পোশাক, অনুচ্ছেদঃ স্বর্ণ ও রেশমের বিবরণ। নাসাঈ, অধ্যায়ঃ সৌন্দর্য, অনুচ্ছেদঃ

পুরুষের জন্য স্বর্ণ ব্যবহার হারাম।

* আমাদের দেশে বা ভারত উপমহাদেশে কিছু অতি পরহেযগার মানুষ দেখা যায়। যারা প্রস্রাব করার পর লজ্জাস্থানে

কুলুখ ধরে মানুষের সামনে বিভিন্ন ভঙ্গিতে হাঁটা-চলা, উঠানাম ও পুরুষাঙ্গ ধরে টানাহিঁচড়া করে, গলা খেঁখড়ানী দেয়।

তাদের এ কাজ যেমন একদিকে শরীয়ত বহির্ভূত ও বাড়াবাড়ী। অন্যদিকে তা অতি পবিত্রতার নামে নির্লজ্জতা ও

বেহায়াপনা চর্চা ছাড়া আর কিছু নয়। তাছাড়া এ চর্চা থেকে মুত্র নি:সরণ রোগেরও জম্ম হয়। আরব দেশসহ

অধিকাংশ মুসলিম দেশে পবিত্রতার নামে এ অপসংস্কৃতি কোথাও দেখা যায় না। (সম্পাদক)

[5] বুখারী, অধ্যায়ঃ ওযু, অনুচ্ছেদঃ পেশাব ও পায়খানায় কিবলা সামনে রাখবে না। মুসলিম, অধ্যায়ঃ পবিত্রতা,

অনুচ্ছেদঃ হাজত পূরা করে পবিত্রতা অর্জন করা।

[6] বুখারী, অধ্যায়ঃ ওযু, অনুচ্ছেদঃ দু’টি ইঁটের উপর পায়খানা করা।

[7] বুখারী, অধ্যায়: ওযু, অনুচ্ছেদ: সন্দেহের ক্ষেত্রে নিশ্চিত না হলে ওযু করবে না, হা/ ১৩৭। মুসলিম, অধ্যায়:

হায়েয, অনুচ্ছেদ: পবিত্রতায় নিশ্চিত থাকার পর ওযু ভঙ্গের ব্যাপারে সন্দেহ হলে ঐ পবিত্রতা নিয়েই নামায চালিয়ে

যাবে একথার দলীল। হা/ ৩৬১

[8] মুসনাদে আহমাদ ৩/৪১৫

[9] আবু দাঊদ পোষাক অধ্যায় হা/৩৫১২। মুসনাদে আহমাদ হা/৪৮৬৯, ৫৪০৯।

[10] মুসনাদের আহমাদ, ৫/৭৫। (দ্রঃ যঈফ জামে ছগীর- আলবানী হা/২৯৩৮।)

[11] মুসলিম, অধ্যায়ঃ হজ্জ, অনুচ্ছেদঃ নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর হজ্জের বর্ণনা।

[12] মুসলিম, অধ্যায়ঃ পবিত্রতা, অনুচ্ছেদঃ পবিত্রতার অঙ্গের সমস্ত অংশ শামিল করে ওযু করা।

[13] মুসলিম, অধ্যায়ঃ পবিত্রতা, অনুচ্ছেদঃ ওযুর পর মুস্তাহাব দু’আ। তিরমিযী, অধ্যায়ঃ পবিত্রতা, হা/ ৫০।

[14] বুখারী, অধ্যায়ঃ ঈমান, অনুচ্ছেদঃ ইসলাম ধর্ম সহজ। হা/৩৯

 কে সম্মান করা এবং প্রয়োজনাতিরিক্ত কোন প্রশ্ন তাকে না করা। এর সুন্নাতের অনুসরণ। হা/ ৭২৮৮।

মুসলিম, অধ্যায়ঃ ফযীলত, অনুচ্ছেদঃ নবী [15] বুখারী, অধ্যায়ঃ ই’তেছাম। অনুচ্ছেদঃ রাসূল

[16] বুখারী, অধ্যায়ঃ ওযু, অনুচ্ছেদঃ পা’দুটি পবিত্র করার পর যখন মোজা পরিধান করবে। হা/২০৬ মুসলিম,

অধ্যায়: পবিত্রতা, অনুচ্ছেদঃ মোজার উপর মাসেহ করা। হ/ ৭৯, ২৭৪।

[17]  বুখারী, অধ্যায়ঃ ওযু, অনুচ্ছেদঃ পা'দুটি পবিত্র করার পর যখন মোজা পরিধান করবে। হা/২০৬ মুসলিম,

অধ্যায়: পবিত্রতা, অনুচ্ছেদঃ মোজার উপর মাসেহ করা। হ/ ৭৯, ২৭৪।

[18] নাসাঈ, অধ্যায়: পবিত্রতা, অনুচ্ছেদঃ মোজার উপর মাসেহ করার সময় সীমা। তিরমিযী, অধ্যায়: পবিত্রতা,

অনুচ্ছেদঃ মুসাফির ও মুক্বীমের জন্য মোজার উপর মাসেহ করার বর্ণনা।

[19] বুখারী, অধ্যায়ঃ ওযু, অনুচ্ছেদঃ নিশ্চিত না হলে সন্দেহের কারণে ওযু করবে না। মুসলিম, অধ্যায়ঃ হায়েয,

অনুচ্ছেদঃ পবিত্রতা অর্জন করার পর যদি সন্দেহ হয় তবে উক্ত পবিত্রতা দ্বারা নামায আদায় করার দলীল। হা/

[20] উত্তেজনার কারণে লিঙ্গের আগায় আঠালো জাতীয় যে তরল পদার্থ বের হয়, তাকে আরবীতে মযী বলে।

[21] মুসলিম, অধ্যায়ঃ হায়েয, অনুচ্ছেদঃ উটের মাংস খেয়ে ওযু করা।

 এর কর্ম থেকে ছহীহ্ হাদীছে পাওয়া যায়ঃ[22] তাছাড়া বিষয়টির সমাধান নবী

 কখনো তাঁর কোন স্ত্রীকে চুম্বন করতেন অতঃপর নামায পড়তেন কিন্তু ওযু করতেন না।” (তিরমিযী, নাসাঈ,

ইবনু মাজাহ্, আহমাদ)আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী

[23]  দারেমী, অধ্যায়ঃ তালাক, অনুচ্ছেদ নং৩ হা/ ২১৬৬। মুআত্বা মালেক অধ্যায়ঃ নামাযের জন্য আহবান

[24] মুসলিম, অধ্যায়ঃ হায়েয, অনুচ্ছেদঃ পানি নির্গত হলেই পানি ঢালা। হা/ ৩৪৩।

[25] বুখারী, অধ্যায়ঃ গোসল, অনুচ্ছেদঃ উভয় লিঙ্গ মিলিত হলে করণীয়, হা/ ২৯১। মুসলিম, অধ্যায়ঃ হায়েয,

অনুচ্ছেদঃ পানি ঢালার সম্পর্ক পানি নির্গত হওয়ার সাথে। হা/ ৩৪৮।

[26] বুখারী, অধ্যায়ঃ জানাযা, অনুচ্ছেদঃ মৃতকে পানি ও বরই পাতা দিয়ে গোসল দেয়া ও ওযু করানো। হা/১২৫৩।

মুসলিম, অধ্যায়ঃ জানাযা, অনুচ্ছেদঃ মৃতকে গোসল দেয়া, হা/৯৩৯।

[27] বুখারী, অধ্যায়ঃ জানাযা, অনুচ্ছেদঃ ইহরামকারী মৃত ব্যক্তিকে কিভাবে কাফন পরাতে হয়। হা/ ১২৬৭। মুসলিম,

অধ্যায়ঃ হজ্জ, অনুচ্ছেদঃ ইহরামকারী মৃত্যুবরণ করলে কি করতে হবে। হা/১২০৬।

[28] বুখারী, অধ্যায়ঃ গোসল, অনুচ্ছেদঃ উভয় লিঙ্গ মিলিত হলে করণীয়, হা/ ২৯১। মুসলিম, অধ্যায়ঃ হায়েয,

অনুচ্ছেদঃ পানি প্রবাহিত করার সম্পর্ক পানি নির্গত হওয়ার সাথে। হা/ ৩৪৮।

[29] মুসলিম, অধ্যায়ঃ হায়েয, অনুচ্ছেদঃ নারীর বীর্য নির্গত হলে গোসল ওয়াজিব হওয়ার বর্ণনা। হা/ ৩১১।

[30] বুখারী, অধ্যায়ঃ হায়েয, অনুচ্ছেদঃ ঋতুবতী তওয়াফ ছাড়া হজ্জের যাবতীয় কাজ করবে।

[31] দারেমী, অধ্যায়ঃ তালাক, অনুচ্ছেদ নং৩ হা/ ২১৬৬। মুআত্বা মালেক অধ্যায়ঃ নামাযের জন্য আহবান হা/৪১৯।

[32] তিরমিযী, অধ্যায়: পবিত্রতা, অনুচ্ছেদঃ অপবিত্র না হলে যে কোন অবস্থায় কুরআন পাঠ করা।

[33] বুখারী, অধ্যায়ঃ তায়াম্মুম, অনুচ্ছেদঃ পানির বদলে পবিত্র মাটিই মুসলিম ব্যক্তির ওযু। হা/ ৩৪৪।

[34] বুখারী, অধ্যায়ঃ তায়াম্মুম, অনুচ্ছেদঃ তায়াম্মুমকারী কি দু’হাতে ফুঁক দিবে। হা/ ৩৩৮।

[35] বুখারী, অধ্যায়ঃ ওযু, অনুচ্ছেদঃ শিশু পুত্রের পেশাব। হা/২২৩। মুসলিম, অধ্যায়ঃ পবিত্রতা, অনুচ্ছেদঃ

দুগ্ধপোষ্য শিশুর পেশাবের বিধান ও তা ধোয়ার পদ্ধতি। হা/ ২৮৬।

 বলেন,  [36] আবুস্ সামাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত হয়েছে। নবী

“শিশু মেয়ের পেশাব ধৌত করতে হবে এবং শিশু ছেলের পেশাবে পানি ছিটিয়ে দিতে হবে।” (নাসাঈ, আবু দাঊদ, ইবনু

[37] ছহীহ বুখারী, অধ্যায়ঃ হায়েয, অনুচ্ছেদঃ ঋতুবতীর ছিয়াম পরিত্যাগ করা। হা/ ৩০৪।

[38] ছহীহ বুখারী, অধ্যায়ঃ নামাযের সময়, হা/৫৪৫। মুসলিম, অধ্যায়ঃ মসজিদ ও নামাযের স্থান, অনুচ্ছেদঃ এক

রাকাত নামায পেলে ঐ নামায পেয়ে গেল।

[39] বুখারী, অধ্যায়ঃ হায়েয, অনুচ্ছেদঃ হায়েযের দিন ছাড়া অন্য সময় হলুদ রং ও মেটে রংয়ের তরল পদার্থ বের

হওয়া। হা/৩২৬।

[40] আবু দাঊদ, অধ্যায়ঃ পবিত্রতা, অনুচ্ছেদঃ পবিত্র হওয়ার পর নারী যদি হলুদ রং ও মেটে রংয়ের তরল পদার্থ

বের হতে দেখে।

[41] আবু দাঊদ, ঐ

[42] বুখারী মুআল্লাকভাবে বর্ণনা করেন। অধ্যায়ঃ ঋতু, অনুচ্ছেদঃ মাসিক আগমণ ও নির্গমণ।

[43] ছহীহ বুখারী, অধ্যায়ঃ ঋতু, অনুচ্ছেদঃ নারীদের ঋতু হলে প্রয়োজনীয় নির্দেশ। মুসলিম, অধ্যায়ঃ হজ্জ,

অনুচ্ছেদঃ ইহরামের পদ্ধতি বর্ণনা করা।

[44] কিন্তু উম্মু সালামা (রাঃ) বর্ণিত হাদীছে এসেছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া

সাল্লাম)এর যুগে নেফাস বিশিষ্টি নারীগণ চল্লিশ দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করতেন। [দ্র: ছহীহ তিরমিযী হা/১৩৯,

ছহীহ আবু দাউদ হা/৩২৯, ছহীহ ইবনে মাজাহ্ হা/৬৪৮- আলবানী] অধিকাংশ বিদ্বান (সুফিয়ান ছাওরী, ইবনুল

মোবারক, শাফেঈ, আহমাদ, ইসহাক প্রমুখ) এমতই পোষণ করেন যে, চল্লিশ দিনের পর স্রাব নির্গত হতে থাকলে

সেদিকে ভ্রুক্ষেপ করবে না। বরং গোসল করে নামায ইত্যাদি শুরু করবে। আর হাসান বাছরী বলেন, ৫০ দিন পর্যন্ত

অপেক্ষা করবে। আর ৬০ দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করার কথা আত্বা ও শা’বী থেকে বর্ণিত আছে।
(তিরমিযী- হা/১১৯)- অনুবাদক।

99
নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নূরের তৈরী, না মাটির তৈরী?



আমাদের মনে রাখতে হবে, সৃষ্টির উপাদানের উপর ভিত্তি করে কোন ব্যক্তির মর্যাদা নির্ণয় করা সরাসরি

কুরআন ও হাদীছ বিরোধী কথা। কারণ মহান আল্লাহ বলেই দিয়েছেনঃ.

‘নিশ্চয় আল্লাহর নিকট তোমাদের মধ্যে ঐব্যক্তি বেশি সম্মানিত যে তোমাদের মধ্যে সর্বধিক তাক্বওয়াশীল’

পরহেযগার”। (সূরা হুজুরাত: ১৩)

নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেনঃ

হে মানব মণ্ডলি! নিশ্চয় তোমাদের প্রতিপালক এক, সাবধান! কোন আরবীর আজমীর (অনারব) উপর, কোন

আজমীর আরবীর উপর প্রাধান্য নেই। অনুরূপভাবে কোন লাল বর্ণের ব্যক্তির কালো ব্যক্তির উপর, কোন

কালো ব্যক্তির লাল বর্ণের ব্যক্তির উপর প্রাধান্য নেই। প্রাধান্য একমাত্র তাকওয়া পরহেযগারিতার

ভিত্তিতে হবে। ‘নিশ্চয় আল্লাহর নিকট তোমাদের মধ্যে ঐ ব্যক্তি বেশি সম্মানিত যে তোমাদের মধ্যে

সর্বধিক তাক্বওয়াশীল’-পরহেযগার (আহমাদ প্রভৃতি, হাদীছ ছহীহ। দ্রঃ শাইখ আলবানীর গায়াতুল মারাম,

পৃঃ১৯০, হা/৩১৩)।

এ জন্যই তো আযরের মত মূর্তী পুজারী মুশরিক ব্যক্তির ঔরষজাত সন্তান ইবরাহীম (আলাইহিস্ সালাম)

অন্যতম শ্রেষ্ঠ নবী, শুধু কি তাই মহান আল্লাহর খলীল তথা অন্তরঙ্গ বন্ধুও বটে, তার মিল্লাতের অনুসরন

করার নির্দেশ আমাদের নবীকেও করা হয়েছে। পক্ষান্তরে নূহ নবীর মত একজন সম্মানিত ব্যক্তির ঔরষজাত

সন্তান কাফের হওয়ার জন্য নিকৃষ্ট ব্যক্তি। বীর্য থেকে মানুষ সৃষ্টি হলেও মানুষই বীর্য অপেক্ষা উত্তম।

এমনকি তুলনা করাটাও অনর্থক। আদী পিতা আদম (আলাইহিস্ সালাম) মাটির তৈরী হলেও মাটির থেকে তিনি

সন্দেহাতীতভাবে উত্তম, এমনকি তুলনা করাটাও বাহুল্য কাজ..। আবু লাহাব সম্মানিত কুরাইশ বংশের হয়েও অতি

নিকৃষ্ট কাফের, যার শানে আল্লাহ সূরা মাসাদ (লাহাব) নাযিল করেছেন। মহান আল্লাহ এই সূরায় বলেনঃ পরম

করুনাময়, দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু। ‘আবু লাহাবের দুটি হাত ধ্বংস হোক, সে নিজেও ধ্বংস হোক। তার সম্পদ,

ও যা সে উপার্জন করেছে -কোনই কাজে আসেনি। সে অচিরেই লেলিহান অগ্নিতে প্রবেশ করবে। এবং তার

স্ত্রীও-যে ইন্ধন বহন করে, তার গলদেশে খর্জুরের রশি নিয়ে। (সূরা আল মাসাদ{লাহাব})

এ থেকেই অকাট্যভাবে প্রতীয়মান হয় যে, মানুষের শ্রেষ্ঠত্ব তার জন্মের উপাদানের উপর ভিত্তিশীল নয়। বরং

এই শ্রেষ্টত্ব এবং সম্মান তাক্বওয়ার ভিত্তিতে হয়ে থাকে। কাজেই নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নূর

থেকে সৃষ্টি না হয়ে মাটি থেকে সৃষ্টি হওয়া তাঁর জন্য মোটেও মানহানিকর বিষয় নয় যেমনটি অসংখ্য বিদআতী তাই

ধারণা করে বসেছে। বরং নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মাটির তৈরী হয়েও সৃষ্টির সেরা ব্যক্তিত্ব,

সর্বাধিক মুত্তাক্বী-পরহেযগার। সমস্ত সৃষ্টি কুলের সর্দার, নবীকুল শিরোমণী, আল্লাহর খালীল-অন্তরঙ্গ

বন্ধু। আল্লাহর অনুমতি সাপেক্ষে হাশরের মাঠে মহান শাফাআতের অধিকারী, হাওযে কাউছারের অধিকারী, সর্ব

প্রথম জান্নাতে প্রবেশকারী। মাক্বামে মাহমূদের অধিকারী, রহমাতুল লিল আলামীন, শাফিঊল লিল মুযনিবীন।

এসব বিষয়ে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের মাঝে কোনই দ্বিমত নেই। ইহাই ছাহাবায়ে কেরাম, তাবেঈনে ইযাম,

আইম্মায়ে মুজতাহিদীনের বিশ্বাস। যুগ পরম্পরায় এই বিশ্বাসই করে আসছেন সকল সুন্নী মুসলিম।

‘সৃষ্টির উপাদানের ভিত্তিতে ব্যক্তি শ্রেষ্ঠত্ব অজর্ন করে’ এটা ইবলীস শয়তানের ধারণা ও দাবী মাত্র। এই

অলিক ধারণার ভিত্তিতেই সে আগুনের তৈরী বলে মাটির তৈরী আদমকে সিজদাহ করতে অস্বীকার করে ছিল। অথচ

আল্লাহ অন্যান্য ফেরেশতাদের সাথে তাকেও আদমকে সিজদা করার নির্দেশ করে ছিলেন। তার উচিত ছিল আদমকে

সেজদা করা কিন্তু সে তা না করে নিজ সৃষ্টির উপাদানের খোড়া যুক্তি দেখিয়ে নিজেকে উত্তম ও আদম

(আলাইহিস্ সালাম)কে অধম মনে করে আদমকে সিজদা করা থেকে বিরত হয়ে ছিল।

মহান আল্লাহ সূরা আরাফে তার ঘটনাটি এইভাবে উদ্ধৃত করেছেনঃ

‘আর আমি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছি, এর পর আকার-অবয়ব তৈরী করেছি। অতঃপর আমি ফেরেশতাদেরকে

বলেছি-আদমকে সেজদা কর, তখন সবাই সেজদা করেছে, কিন্তু ইবলীস সে সেজদাকারীদের অন্তর্ভূক্ত ছিল না।

আল্লাহ বললেনঃ আমি যখন নির্দেশ দিয়েছি, তখন তোকে কিসে সেজদা করতে বারণ করল? সে বললঃ আমি আমি

তার চাইতে শ্রেষ্ঠ। আপনি আমাকে আগুন দ্বারা সৃষ্টি করেছেন, আর তাকে সৃষ্টি করেছেন মাটি দ্বারা। বললেনঃ

তুই এখান থেকে নেমে যা। এখানে অহঙ্কার করার অধিকার তোর নাই। অতএব তুই বের হয়ে যা। নিশ্চয় তুই

হীনতমদের অন্তর্ভূক্ত। (সূরাহ আল্ আরাফঃ১১-১৩)

অতএব যারা সৃষ্টির উপাদানের ভিত্তিতে ব্যক্তির শ্রেষ্ঠত্ব সাব্যস্ত করার পক্ষপাতি তাদের উপর্যুক্ত

আয়াতগুলি থেকে শিক্ষা গ্রহণ করা উচিত, চিন্তা করা উচিত যুক্তিটি কোন্ ভদ্রলোকের? ‘নবী (ছাল্লাল্লাহু

আলাইহি ওয়া সাল্লাম)কে নূরের তৈরী গণ্য করা হলে তাঁর শ্রেষ্ঠত্ব প্রকাশ হবে, আর মাটির তৈরী গণ্য করলে

সেই শ্রেষ্ঠত্ব বিলুপ্ত হবে, তাতে তার মানহানী হবে’ মর্মের যুক্তিটি শয়তানের যুক্তির সাথে মিলে কিনা চিন্তা-

ভাবনা করার উদাত্ত আহ্বান রইল।

নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)কে নূরের তৈরী জ্ঞান করা, বা এই বিশ্বাস করা যে, তিনিই সর্ব প্রথম

সৃষ্টি, যেমন ভারত উপ মহাদেশের হানাফী জগতের সকল ব্রেলভী সম্প্রদায় এবং দেওবন্দীদের কেউ কেউ এই

বিশ্বাসই করে থাকেন- এসব বিশ্বাস জাল এবং বাতিল হাদীছ নির্ভরশীল (দ্রঃ ছহীহাহ, ১/৮২০, ৪৫৮ নং হাদীছের

অধীন আলোচনা দ্রষ্টব্য)। নবী(ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মাটির তৈরী এই বিষয়ে অতীতে ছালাফে

ছালেহীনের মাঝে কোনই বিতর্ক ছিল না। এখনও যারা প্রকৃত আলেম তারাও এই মর্মে ঐক্যমত যে নবী

(ছাল্লাল্লাহু আআইহি ওয়া সাল্লাম) মাটির তৈরী মানুষ ছিলেন, তিনি অন্যান্য সকল মানুষের মত পিতা-মাতার

মাধ্যমে পৃথিবীতে এসেছেন। তারা এটাও বিশ্বাস করেন যে,

মানুষ মাটির তৈরী, ফেরেস্তা নূরের এবং জ্বিনজাত আগুনের তৈরী যেমনটি স্বয়ং নবী বলেছেন (মুসলিম,যুহদ ও

রাক্বায়িক্ব অধ্যায়,হা/৫৩৪) ।

কারণ এই মর্মে কুরআন ও হাদীছের বাণী একেবারে স্পষ্ট। এর পরও বিদআতে যাদের আপাদমস্তক

নিমজ্জিত,তারা নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর বিষয়ে বিতর্ক উঠায়। তারা বলতে চায়, নবী

(ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মাটির তৈরী নন, বরং তিনি নূরের তৈরী, তার ছায়া ছিল না..ইত্যাদি ইত্যাদি।

তাই আমরা বিষয়টির ফায়ছালা সরাসরি কুরআন ও নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর হাদীছ থেকে নিব।

কারণ মহান আল্লাহ বলেনঃ

‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহর আনুগত্য কর, রাসূলের আনুগত্য কর, এবং তাদের কর যারা তোমাদের

(ধর্মীয় বা রাষ্ট্রীয় বিষয়ে) নেতৃত্ব দাকারী, আর যদি তোমরা কোন বিষয়ে বিতর্ক কর, তবে বিষয়টিকে

আল্লাহ এবং তদীয় রাসূলের দিকে ফিরিয়ে দাও, ইহাই উত্তম এবং ব্যাখ্যার দিক দিয়ে সর্বোৎকৃষ্ট’। (আন্ নিসাঃ

৫৯)

মাটি থেকে নবীর সৃষ্টি হওয়ার প্রমাণ

(ক) কুরআন থেকেঃ

আমার নিকট আশ্চর্য লাগে যে বিদআতীরা কেমন করে মহান আল্লাহর দ্ব্যর্থহীন বাণীকে অস্বীকার করে বলে

যে, নবী (ছাল্লাল্লাহু আআইহি ওয়াসাল্লাম) মাটির তৈরী নন, বরং নূরের তৈরী। কারণ মহান আল্লাহ একাধিক

স্থানে বলেছেন যে নবী (ছাল্লাল্লাহু আআইহি ওয়া সাল্লাম) সৃষ্টিগত দিক থেকে بشر তথা আমাদের মতই একজন

মানুষ।

যেমনঃ

(১) সূরা কাহাফে মহান আল্লাহ এরশাদ করেনঃ (হে রাসূল!) ‘আপনি বলে দিন, আমি তো তোমাদেরই মত এক জন

মানুষ, আমার নিকট এই মর্মে ওহী করা হয় যে, তোমাদের উপাস্য এক ও একক, অতএব যে নিজ প্রতিপালকের

দিদার লাভের আশাবাদী সে যেন সৎকর্ম করে এবং নিজ প্রতিপালকের ইবাদতে অন্য কাউকে শরীক না করে’। (সূরা

আল্ কাহাফঃ ১১০)

(২) অন্যত্রে মহান আল্লাহ বলেনঃ ‘আপনি বলুন আমি আমার প্রতিপালকের পবিত্রতা বর্ণনা করছি। একজন

মানব, একজন রাসূল বৈ আমি কে? (সূরা বনী ইসরাইল: ৯৩)

(৩) তিনি আরো বলেনঃ ‘নিশ্চয় আল্লাহ মুমিনদের বড় উপকার করেছেন, যেহেতু তাদেরই মধ্য থেকে একজনকে

রাসূল হিসাবে পাঠিয়েছেন যিনি তাদের নিকট তাঁর আয়াতসমূহ তিলাওত করেন, তাদেরকে পরিশুদ্ধ করেন, এবং

তাদেরকে কিতাব ও হিকমত শিক্ষা দান করেন, যদিও তারা ইতোপূর্বে স্পষ্ট গুমরাহীতে নিমজ্জিত ছিল। (সূরাহ

আলে ইমরানঃ ১৬৪)

(৪) তিনি আরো বলেনঃ তোমাদের নিকট আগমন করেছে, তোমাদেরই মধ্যকার এমন একজন রাসূল, যার কাছে

তোমাদের ক্ষতিকর বিষয় অতি কষ্টদায়ক মনে হয়, যিনি হচ্ছেন তোমাদের খুবই হিতাকাঙ্খী, মুমিনদের প্রতি

বড়ই স্নেহশীল, করুনাপরায়ণ। (সূরা তাওবা: ১২৮)

(৫) তিনি আরো বলেনঃ এ লোকদের জন্যে এটা কী বিস্ময়কর হয়েছে যে, আমি তাদের মধ্য হতে একজনের নিকট

অহী প্রেরণ করেছি এই মর্মে যে, তুমি লোকদেরকে ভয় প্রদর্শন কর এবং যারা ঈমান এনেছে তাদরকে এই

সুসংবাদ দাও যে, তারা তাদের প্রতিপালকের নিকট (পূর্ণ মর্যাদা) লাভ করবে, কাফেররা বলতে লাগলো যে, এই

ব্যক্তি তো নিঃসন্দেহে প্রকাশ্য যাদুকর। (সূরা ইউনুস: ২)

(৬) তিনি আরো বলেনঃ তিনিই নিরক্ষরদের মধ্য থেকে একজন রাসূল প্রেরণ করেছেন তাদের নিকট, যিনি তাদের

কাছে পাঠ করেন তাঁর আয়াতসমূহ, তাদেরকে পবিত্র করেন এবং শিক্ষা দেন কিতাব ও হিকমত, যদিও তারা

ইতোপূর্বে স্পষ্ট গোমরাহীতে লিপ্ত ছিল। (সূরা-আল্ জুমুআহ: ২)

(৭) আল্লাহ আরো বলেনঃ আমি তোমাদের মধ্য হতে এরূপ রাসূল প্রেরণ করেছি যে, তোমাদের নিকট আমার

নিদর্শনাবলী পাঠ করে ও তোমাদেরকে পবিত্র করে এবং তোমাদেরকে গ্রন্থ ও বিজ্ঞান শিক্ষা দেয়, আর

তোমরা যা অবগত ছিলে না তা শিক্ষা দান করেন। (সূরা বাকারা ১৫১)

এখানে মহান আল্লাহ বলেই দিয়েছেন যে, নবী (ছাল্লাল্লাহু আআইহি ওয়া সাল্লাম) ঐসব লোকদেরই একজন, তিনি

তাদের বাইরের কোন লোক নন। কাজেই ঐসব লোক যদি নূরের তৈরী হন, তাহলে নবী(ছাল্লাল্লাহু আআইহি ওয়া

সাল্লাম)ও নূরের তৈরী হবেন, আর যদি তারা নূরের তৈরী না হন তবে তিনিও নূরের তৈরী হবেন না এটাইতো

স্বাভাবিক। আসলে বিদআতীরা কুরআন ও ছহীহ হাদীছ আয়ত্ব করতে এবং এর সঠিক ব্যাখ্যা অনুধাবন করা থেকে

চির ব্যর্থ, তাই তারা নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সম্পর্কে কুরআন ও হাদীছ বিরোধী কথা বলে যে,

নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মাটির তৈরী নন, বরং তিনি নূরের তৈরী। অথচ এভাবে তারা নবী

(ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে অধিক সম্মান দিতে গিয়ে আরো তাঁকে খাটো করে দিয়েছে। কারণ নূরের

তৈরী ফেরেশতার উপর আল্লাহ মাটির তৈরী আদম (আলাইহিস্ সালাম)কে শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন। তাদেরকে দিয়ে

আদমের সিজদা করিয়ে নিয়েছেন। (দ্রঃসূরা আল বাকারাহ: ৩৪, সূরা আল্ আ’রাফ: ১১) তাহলে কার শ্রেষ্ঠত্ব

প্রমাণিত হল? নূরের তৈরী ফেরেশতাদের নাকি মাটির তৈরী আদম (আলাইহিস্ সাল্লাম)এর? অবশ্যই মাটির তৈরী

আদম (আলাইহিস্ সালাম) এর শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণিত হল। তবে আমরা তর্কের খাতিরে এটা বললেও আমাদের

বিশ্বাস, আদম (আলাইহিস্ সালাম) ফেরেশতাদের উপর শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করে ছিলেন তাঁর ইলমের মাধ্যমে। আর

এটা একমাত্র আল্লাহর অনুগ্রহেই হয়ে ছিল। তিনিই আদমের প্রতি অনুগ্রহ করে ফেরেশতাদের চেয়ে তাকে বেশি

ইলম দান করে ছিলেন।

আমি বিশ্বের সকল বিদআতীকে বলতে চাই, এক লক্ষ চব্বিশ হাজার নবী ও রাসূল (অনেকে বলেনঃ নবী ও রাসূলদের

সর্ব মোট সংখ্যা হলঃ এক লক্ষ চব্বিশ হাজার, মতান্তরে দুই লক্ষ চব্বিশ হাজার। এভাবে বলে থাকেন, এটা

প্রমাণ করে তারা ঐমর্মে নবী এর কোন হাদীছ অবগত হন নি। মুসনাদ আহমাদ, ছহীহ ইবনু ইব্বান প্রভৃতিতে

নবী ও রাসূলদের সর্ব মোট সংখ্যা একলক্ষ চব্বিশ হাজার বলা হয়েছে, আরো বলা হয়েছে তাদের মধ্যে

রাসূলদের সংখ্যা সর্ব মোট ৩১৫ জন দ্রঃ মুসনাদ আহমাদ ৫/১৭৯,হা/২১৫৯২, ছহীহ ইবনু হিব্বান, হা/ প্রভৃতি

হাদীছ ছহীহ, সিলসিলাতুল আহাদীছ আছ ছহীহাহ ) এর মধ্যে শুধু নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কিভাবে

নূরের তৈরী হলেন? যদি তাঁকে নূরের তৈরী না বলায় তার মান খাটো করা হয়,তবে বাকী এক লক্ষ তেইশ হাজার

নয়শো নিরানব্বই জন নবী রাসূলকে মাটির তৈরী বলে কি তাদের মান খাটো করা হয় না? নাকি তারাও নূরের

তৈরী? কৈ কোন বিদআতীকে তো বলতে শুনি না যে নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর মত বাকী

সমস্ত নবী, রাসূলগণও নূরের তৈরী! বরং তারা এমনটি শুধু নবী মুহাম্মাদ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর

ক্ষেত্রেই বলে থাকে। সুতরাং বাকী সমস্ত নবীকে মাটির তৈরী বলায় যেমন তাদের মান হানী হয় না, তদ্রপ

আমাদের নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)কেও মাটির তৈরী বলায় তার মানহানী হবে না। তবে কেন বিষয়টি

নিয়ে এত বাড়াবাড়ি?

এমনকি অনেক মূর্খ বিদআতী নবীকে যারা মাটির তৈরী মানুষ বলে তাদের সকলকে কাফের ফাৎওয়া মেরে দেয়!

একজন মুসলিমকে কাফের বলা কী এতই সহজ? না, কখনই নয়, বরং এই বিষয়টি অতীব জটিল এবং সুকঠিন। কারণ

একজন মুসলিম ব্যক্তিকে কাফির ফাৎওয়া দেওয়ার অর্থই হলঃ সে জীবিত অবস্থায় থাকলে তার সাথে তার স্ত্রীর

সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে যাবে। নিজ মুসলিম সন্তান-সন্ততির উপর তার অবিভাবকত্ব চলবে না। সে মৃত্যু বরণ করলে

তাকে গোসল দেওয়া যাবে না, কাফন পরানো যাবে না, তার জানাযা ছালাত আদায় করা যাবে না। তার জন্য

মাগফেরাতের দুআ করা যাবে না, মুসলিমদের কবরস্থানে তাকে দাফন করা যাবে না। তার কোন মুসলিম আত্মীয়

স্বজন তার মীরাছ পাবে না, বরং তার সমুদয় ধন-সম্পদ সরকারী বায়তুল মালে জমা হয়ে যাবে। পরকালে সে

জাহান্নামে চিরস্থায়ীভাবে বসবাস করবে…প্রভৃতি। আর যদি সে প্রকৃত অর্থে কাফের না হয় তবে কাফের

ফাৎওয়া দাতা আল্লাহর উপর মিথ্যারোপকারী বলে গণ্য হবে ফলে সে সর্বাধিক যালিমে পরিণত হবে। আর তার

একমাত্র বাসস্থান হবে জাহান্নাম (দ্রঃ আরাফঃ)। এবং তাকে অন্যায়ভাবে কাফের বলার জন্য নিজেই কাফিরে

পরিণত হবে (বুখারী প্রভৃতি)। এ থেকেই প্রতীয়মান হয় বিষয়টি কত জটিল এবং সুকঠিন। এজন্যই বড় বড়

ওলামায়েদ্বীন মুসলিম ব্যক্তিকে সহজে কাফের বলেন না,বরং সে ক্ষেত্রে বহু সতর্কতা অবলম্বন করে থাকেন)

তাদের এই মূর্খামীদুষ্ট ফাৎওয়া অনুযায়ী সালাফে ছালেহীনের সকলই কাফের গণ্য হবে। কারণ তারা সৃষ্টি গত দিক

থেকে নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে মাটির তৈরী মানুষই মনে করতেন। তাঁরা আদৌ তাঁকে নূরের

তৈরী গণ্য করতেন না।

লেখক: আখতারুল আমান বিন আব্দুস সালাম

সূত্র: সালাফী বিডি[/size]

100
নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নূরের তৈরী, না মাটির তৈরী?

আমাদের মনে রাখতে হবে, সৃষ্টির উপাদানের উপর ভিত্তি করে কোন ব্যক্তির মর্যাদা নির্ণয় করা সরাসরি

কুরআন ও হাদীছ বিরোধী কথা। কারণ মহান আল্লাহ বলেই দিয়েছেনঃ.

‘নিশ্চয় আল্লাহর নিকট তোমাদের মধ্যে ঐব্যক্তি বেশি সম্মানিত যে তোমাদের মধ্যে সর্বধিক তাক্বওয়াশীল’

পরহেযগার”। (সূরা হুজুরাত: ১৩)

নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেনঃ

হে মানব মণ্ডলি! নিশ্চয় তোমাদের প্রতিপালক এক, সাবধান! কোন আরবীর আজমীর (অনারব) উপর, কোন

আজমীর আরবীর উপর প্রাধান্য নেই। অনুরূপভাবে কোন লাল বর্ণের ব্যক্তির কালো ব্যক্তির উপর, কোন

কালো ব্যক্তির লাল বর্ণের ব্যক্তির উপর প্রাধান্য নেই। প্রাধান্য একমাত্র তাকওয়া পরহেযগারিতার

ভিত্তিতে হবে। ‘নিশ্চয় আল্লাহর নিকট তোমাদের মধ্যে ঐ ব্যক্তি বেশি সম্মানিত যে তোমাদের মধ্যে

সর্বধিক তাক্বওয়াশীল’-পরহেযগার (আহমাদ প্রভৃতি, হাদীছ ছহীহ। দ্রঃ শাইখ আলবানীর গায়াতুল মারাম,

পৃঃ১৯০, হা/৩১৩)।

এ জন্যই তো আযরের মত মূর্তী পুজারী মুশরিক ব্যক্তির ঔরষজাত সন্তান ইবরাহীম (আলাইহিস্ সালাম)

অন্যতম শ্রেষ্ঠ নবী, শুধু কি তাই মহান আল্লাহর খলীল তথা অন্তরঙ্গ বন্ধুও বটে, তার মিল্লাতের অনুসরন

করার নির্দেশ আমাদের নবীকেও করা হয়েছে। পক্ষান্তরে নূহ নবীর মত একজন সম্মানিত ব্যক্তির ঔরষজাত

সন্তান কাফের হওয়ার জন্য নিকৃষ্ট ব্যক্তি। বীর্য থেকে মানুষ সৃষ্টি হলেও মানুষই বীর্য অপেক্ষা উত্তম।

এমনকি তুলনা করাটাও অনর্থক। আদী পিতা আদম (আলাইহিস্ সালাম) মাটির তৈরী হলেও মাটির থেকে তিনি

সন্দেহাতীতভাবে উত্তম, এমনকি তুলনা করাটাও বাহুল্য কাজ..। আবু লাহাব সম্মানিত কুরাইশ বংশের হয়েও অতি

নিকৃষ্ট কাফের, যার শানে আল্লাহ সূরা মাসাদ (লাহাব) নাযিল করেছেন। মহান আল্লাহ এই সূরায় বলেনঃ পরম

করুনাময়, দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু। ‘আবু লাহাবের দুটি হাত ধ্বংস হোক, সে নিজেও ধ্বংস হোক। তার সম্পদ,

ও যা সে উপার্জন করেছে -কোনই কাজে আসেনি। সে অচিরেই লেলিহান অগ্নিতে প্রবেশ করবে। এবং তার

স্ত্রীও-যে ইন্ধন বহন করে, তার গলদেশে খর্জুরের রশি নিয়ে। (সূরা আল মাসাদ{লাহাব})

এ থেকেই অকাট্যভাবে প্রতীয়মান হয় যে, মানুষের শ্রেষ্ঠত্ব তার জন্মের উপাদানের উপর ভিত্তিশীল নয়। বরং

এই শ্রেষ্টত্ব এবং সম্মান তাক্বওয়ার ভিত্তিতে হয়ে থাকে। কাজেই নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নূর

থেকে সৃষ্টি না হয়ে মাটি থেকে সৃষ্টি হওয়া তাঁর জন্য মোটেও মানহানিকর বিষয় নয় যেমনটি অসংখ্য বিদআতী তাই

ধারণা করে বসেছে। বরং নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মাটির তৈরী হয়েও সৃষ্টির সেরা ব্যক্তিত্ব,

সর্বাধিক মুত্তাক্বী-পরহেযগার। সমস্ত সৃষ্টি কুলের সর্দার, নবীকুল শিরোমণী, আল্লাহর খালীল-অন্তরঙ্গ

বন্ধু। আল্লাহর অনুমতি সাপেক্ষে হাশরের মাঠে মহান শাফাআতের অধিকারী, হাওযে কাউছারের অধিকারী, সর্ব

প্রথম জান্নাতে প্রবেশকারী। মাক্বামে মাহমূদের অধিকারী, রহমাতুল লিল আলামীন, শাফিঊল লিল মুযনিবীন।

এসব বিষয়ে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের মাঝে কোনই দ্বিমত নেই। ইহাই ছাহাবায়ে কেরাম, তাবেঈনে ইযাম,

আইম্মায়ে মুজতাহিদীনের বিশ্বাস। যুগ পরম্পরায় এই বিশ্বাসই করে আসছেন সকল সুন্নী মুসলিম।

‘সৃষ্টির উপাদানের ভিত্তিতে ব্যক্তি শ্রেষ্ঠত্ব অজর্ন করে’ এটা ইবলীস শয়তানের ধারণা ও দাবী মাত্র। এই

অলিক ধারণার ভিত্তিতেই সে আগুনের তৈরী বলে মাটির তৈরী আদমকে সিজদাহ করতে অস্বীকার করে ছিল। অথচ

আল্লাহ অন্যান্য ফেরেশতাদের সাথে তাকেও আদমকে সিজদা করার নির্দেশ করে ছিলেন। তার উচিত ছিল আদমকে

সেজদা করা কিন্তু সে তা না করে নিজ সৃষ্টির উপাদানের খোড়া যুক্তি দেখিয়ে নিজেকে উত্তম ও আদম

(আলাইহিস্ সালাম)কে অধম মনে করে আদমকে সিজদা করা থেকে বিরত হয়ে ছিল।

মহান আল্লাহ সূরা আরাফে তার ঘটনাটি এইভাবে উদ্ধৃত করেছেনঃ

‘আর আমি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছি, এর পর আকার-অবয়ব তৈরী করেছি। অতঃপর আমি ফেরেশতাদেরকে

বলেছি-আদমকে সেজদা কর, তখন সবাই সেজদা করেছে, কিন্তু ইবলীস সে সেজদাকারীদের অন্তর্ভূক্ত ছিল না।

আল্লাহ বললেনঃ আমি যখন নির্দেশ দিয়েছি, তখন তোকে কিসে সেজদা করতে বারণ করল? সে বললঃ আমি আমি

তার চাইতে শ্রেষ্ঠ। আপনি আমাকে আগুন দ্বারা সৃষ্টি করেছেন, আর তাকে সৃষ্টি করেছেন মাটি দ্বারা। বললেনঃ

তুই এখান থেকে নেমে যা। এখানে অহঙ্কার করার অধিকার তোর নাই। অতএব তুই বের হয়ে যা। নিশ্চয় তুই

হীনতমদের অন্তর্ভূক্ত। (সূরাহ আল্ আরাফঃ১১-১৩)

অতএব যারা সৃষ্টির উপাদানের ভিত্তিতে ব্যক্তির শ্রেষ্ঠত্ব সাব্যস্ত করার পক্ষপাতি তাদের উপর্যুক্ত

আয়াতগুলি থেকে শিক্ষা গ্রহণ করা উচিত, চিন্তা করা উচিত যুক্তিটি কোন্ ভদ্রলোকের? ‘নবী (ছাল্লাল্লাহু

আলাইহি ওয়া সাল্লাম)কে নূরের তৈরী গণ্য করা হলে তাঁর শ্রেষ্ঠত্ব প্রকাশ হবে, আর মাটির তৈরী গণ্য করলে

সেই শ্রেষ্ঠত্ব বিলুপ্ত হবে, তাতে তার মানহানী হবে’ মর্মের যুক্তিটি শয়তানের যুক্তির সাথে মিলে কিনা চিন্তা-

ভাবনা করার উদাত্ত আহ্বান রইল।

নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)কে নূরের তৈরী জ্ঞান করা, বা এই বিশ্বাস করা যে, তিনিই সর্ব প্রথম

সৃষ্টি, যেমন ভারত উপ মহাদেশের হানাফী জগতের সকল ব্রেলভী সম্প্রদায় এবং দেওবন্দীদের কেউ কেউ এই

বিশ্বাসই করে থাকেন- এসব বিশ্বাস জাল এবং বাতিল হাদীছ নির্ভরশীল (দ্রঃ ছহীহাহ, ১/৮২০, ৪৫৮ নং হাদীছের

অধীন আলোচনা দ্রষ্টব্য)। নবী(ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মাটির তৈরী এই বিষয়ে অতীতে ছালাফে

ছালেহীনের মাঝে কোনই বিতর্ক ছিল না। এখনও যারা প্রকৃত আলেম তারাও এই মর্মে ঐক্যমত যে নবী

(ছাল্লাল্লাহু আআইহি ওয়া সাল্লাম) মাটির তৈরী মানুষ ছিলেন, তিনি অন্যান্য সকল মানুষের মত পিতা-মাতার

মাধ্যমে পৃথিবীতে এসেছেন। তারা এটাও বিশ্বাস করেন যে,

মানুষ মাটির তৈরী, ফেরেস্তা নূরের এবং জ্বিনজাত আগুনের তৈরী যেমনটি স্বয়ং নবী বলেছেন (মুসলিম,যুহদ ও

রাক্বায়িক্ব অধ্যায়,হা/৫৩৪) ।

কারণ এই মর্মে কুরআন ও হাদীছের বাণী একেবারে স্পষ্ট। এর পরও বিদআতে যাদের আপাদমস্তক

নিমজ্জিত,তারা নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর বিষয়ে বিতর্ক উঠায়। তারা বলতে চায়, নবী

(ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মাটির তৈরী নন, বরং তিনি নূরের তৈরী, তার ছায়া ছিল না..ইত্যাদি ইত্যাদি।

তাই আমরা বিষয়টির ফায়ছালা সরাসরি কুরআন ও নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর হাদীছ থেকে নিব।

কারণ মহান আল্লাহ বলেনঃ

‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহর আনুগত্য কর, রাসূলের আনুগত্য কর, এবং তাদের কর যারা তোমাদের

(ধর্মীয় বা রাষ্ট্রীয় বিষয়ে) নেতৃত্ব দাকারী, আর যদি তোমরা কোন বিষয়ে বিতর্ক কর, তবে বিষয়টিকে

আল্লাহ এবং তদীয় রাসূলের দিকে ফিরিয়ে দাও, ইহাই উত্তম এবং ব্যাখ্যার দিক দিয়ে সর্বোৎকৃষ্ট’। (আন্ নিসাঃ

৫৯)

মাটি থেকে নবীর সৃষ্টি হওয়ার প্রমাণ

(ক) কুরআন থেকেঃ

আমার নিকট আশ্চর্য লাগে যে বিদআতীরা কেমন করে মহান আল্লাহর দ্ব্যর্থহীন বাণীকে অস্বীকার করে বলে

যে, নবী (ছাল্লাল্লাহু আআইহি ওয়াসাল্লাম) মাটির তৈরী নন, বরং নূরের তৈরী। কারণ মহান আল্লাহ একাধিক

স্থানে বলেছেন যে নবী (ছাল্লাল্লাহু আআইহি ওয়া সাল্লাম) সৃষ্টিগত দিক থেকে بشر তথা আমাদের মতই একজন

মানুষ।

যেমনঃ

(১) সূরা কাহাফে মহান আল্লাহ এরশাদ করেনঃ (হে রাসূল!) ‘আপনি বলে দিন, আমি তো তোমাদেরই মত এক জন

মানুষ, আমার নিকট এই মর্মে ওহী করা হয় যে, তোমাদের উপাস্য এক ও একক, অতএব যে নিজ প্রতিপালকের

দিদার লাভের আশাবাদী সে যেন সৎকর্ম করে এবং নিজ প্রতিপালকের ইবাদতে অন্য কাউকে শরীক না করে’। (সূরা

আল্ কাহাফঃ ১১০)

(২) অন্যত্রে মহান আল্লাহ বলেনঃ ‘আপনি বলুন আমি আমার প্রতিপালকের পবিত্রতা বর্ণনা করছি। একজন

মানব, একজন রাসূল বৈ আমি কে? (সূরা বনী ইসরাইল: ৯৩)

(৩) তিনি আরো বলেনঃ ‘নিশ্চয় আল্লাহ মুমিনদের বড় উপকার করেছেন, যেহেতু তাদেরই মধ্য থেকে একজনকে

রাসূল হিসাবে পাঠিয়েছেন যিনি তাদের নিকট তাঁর আয়াতসমূহ তিলাওত করেন, তাদেরকে পরিশুদ্ধ করেন, এবং

তাদেরকে কিতাব ও হিকমত শিক্ষা দান করেন, যদিও তারা ইতোপূর্বে স্পষ্ট গুমরাহীতে নিমজ্জিত ছিল। (সূরাহ

আলে ইমরানঃ ১৬৪)

(৪) তিনি আরো বলেনঃ তোমাদের নিকট আগমন করেছে, তোমাদেরই মধ্যকার এমন একজন রাসূল, যার কাছে

তোমাদের ক্ষতিকর বিষয় অতি কষ্টদায়ক মনে হয়, যিনি হচ্ছেন তোমাদের খুবই হিতাকাঙ্খী, মুমিনদের প্রতি

বড়ই স্নেহশীল, করুনাপরায়ণ। (সূরা তাওবা: ১২৮)

(৫) তিনি আরো বলেনঃ এ লোকদের জন্যে এটা কী বিস্ময়কর হয়েছে যে, আমি তাদের মধ্য হতে একজনের নিকট

অহী প্রেরণ করেছি এই মর্মে যে, তুমি লোকদেরকে ভয় প্রদর্শন কর এবং যারা ঈমান এনেছে তাদরকে এই

সুসংবাদ দাও যে, তারা তাদের প্রতিপালকের নিকট (পূর্ণ মর্যাদা) লাভ করবে, কাফেররা বলতে লাগলো যে, এই

ব্যক্তি তো নিঃসন্দেহে প্রকাশ্য যাদুকর। (সূরা ইউনুস: ২)

(৬) তিনি আরো বলেনঃ তিনিই নিরক্ষরদের মধ্য থেকে একজন রাসূল প্রেরণ করেছেন তাদের নিকট, যিনি তাদের

কাছে পাঠ করেন তাঁর আয়াতসমূহ, তাদেরকে পবিত্র করেন এবং শিক্ষা দেন কিতাব ও হিকমত, যদিও তারা

ইতোপূর্বে স্পষ্ট গোমরাহীতে লিপ্ত ছিল। (সূরা-আল্ জুমুআহ: ২)

(৭) আল্লাহ আরো বলেনঃ আমি তোমাদের মধ্য হতে এরূপ রাসূল প্রেরণ করেছি যে, তোমাদের নিকট আমার

নিদর্শনাবলী পাঠ করে ও তোমাদেরকে পবিত্র করে এবং তোমাদেরকে গ্রন্থ ও বিজ্ঞান শিক্ষা দেয়, আর

তোমরা যা অবগত ছিলে না তা শিক্ষা দান করেন। (সূরা বাকারা ১৫১)

এখানে মহান আল্লাহ বলেই দিয়েছেন যে, নবী (ছাল্লাল্লাহু আআইহি ওয়া সাল্লাম) ঐসব লোকদেরই একজন, তিনি

তাদের বাইরের কোন লোক নন। কাজেই ঐসব লোক যদি নূরের তৈরী হন, তাহলে নবী(ছাল্লাল্লাহু আআইহি ওয়া

সাল্লাম)ও নূরের তৈরী হবেন, আর যদি তারা নূরের তৈরী না হন তবে তিনিও নূরের তৈরী হবেন না এটাইতো

স্বাভাবিক। আসলে বিদআতীরা কুরআন ও ছহীহ হাদীছ আয়ত্ব করতে এবং এর সঠিক ব্যাখ্যা অনুধাবন করা থেকে

চির ব্যর্থ, তাই তারা নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সম্পর্কে কুরআন ও হাদীছ বিরোধী কথা বলে যে,

নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মাটির তৈরী নন, বরং তিনি নূরের তৈরী। অথচ এভাবে তারা নবী

(ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে অধিক সম্মান দিতে গিয়ে আরো তাঁকে খাটো করে দিয়েছে। কারণ নূরের

তৈরী ফেরেশতার উপর আল্লাহ মাটির তৈরী আদম (আলাইহিস্ সালাম)কে শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন। তাদেরকে দিয়ে

আদমের সিজদা করিয়ে নিয়েছেন। (দ্রঃসূরা আল বাকারাহ: ৩৪, সূরা আল্ আ’রাফ: ১১) তাহলে কার শ্রেষ্ঠত্ব

প্রমাণিত হল? নূরের তৈরী ফেরেশতাদের নাকি মাটির তৈরী আদম (আলাইহিস্ সাল্লাম)এর? অবশ্যই মাটির তৈরী

আদম (আলাইহিস্ সালাম) এর শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণিত হল। তবে আমরা তর্কের খাতিরে এটা বললেও আমাদের

বিশ্বাস, আদম (আলাইহিস্ সালাম) ফেরেশতাদের উপর শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করে ছিলেন তাঁর ইলমের মাধ্যমে। আর

এটা একমাত্র আল্লাহর অনুগ্রহেই হয়ে ছিল। তিনিই আদমের প্রতি অনুগ্রহ করে ফেরেশতাদের চেয়ে তাকে বেশি

ইলম দান করে ছিলেন।

আমি বিশ্বের সকল বিদআতীকে বলতে চাই, এক লক্ষ চব্বিশ হাজার নবী ও রাসূল (অনেকে বলেনঃ নবী ও রাসূলদের

সর্ব মোট সংখ্যা হলঃ এক লক্ষ চব্বিশ হাজার, মতান্তরে দুই লক্ষ চব্বিশ হাজার। এভাবে বলে থাকেন, এটা

প্রমাণ করে তারা ঐমর্মে নবী এর কোন হাদীছ অবগত হন নি। মুসনাদ আহমাদ, ছহীহ ইবনু ইব্বান প্রভৃতিতে

নবী ও রাসূলদের সর্ব মোট সংখ্যা একলক্ষ চব্বিশ হাজার বলা হয়েছে, আরো বলা হয়েছে তাদের মধ্যে

রাসূলদের সংখ্যা সর্ব মোট ৩১৫ জন দ্রঃ মুসনাদ আহমাদ ৫/১৭৯,হা/২১৫৯২, ছহীহ ইবনু হিব্বান, হা/ প্রভৃতি

হাদীছ ছহীহ, সিলসিলাতুল আহাদীছ আছ ছহীহাহ ) এর মধ্যে শুধু নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কিভাবে

নূরের তৈরী হলেন? যদি তাঁকে নূরের তৈরী না বলায় তার মান খাটো করা হয়,তবে বাকী এক লক্ষ তেইশ হাজার

নয়শো নিরানব্বই জন নবী রাসূলকে মাটির তৈরী বলে কি তাদের মান খাটো করা হয় না? নাকি তারাও নূরের

তৈরী? কৈ কোন বিদআতীকে তো বলতে শুনি না যে নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর মত বাকী

সমস্ত নবী, রাসূলগণও নূরের তৈরী! বরং তারা এমনটি শুধু নবী মুহাম্মাদ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর

ক্ষেত্রেই বলে থাকে। সুতরাং বাকী সমস্ত নবীকে মাটির তৈরী বলায় যেমন তাদের মান হানী হয় না, তদ্রপ

আমাদের নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)কেও মাটির তৈরী বলায় তার মানহানী হবে না। তবে কেন বিষয়টি

নিয়ে এত বাড়াবাড়ি?

এমনকি অনেক মূর্খ বিদআতী নবীকে যারা মাটির তৈরী মানুষ বলে তাদের সকলকে কাফের ফাৎওয়া মেরে দেয়!

একজন মুসলিমকে কাফের বলা কী এতই সহজ? না, কখনই নয়, বরং এই বিষয়টি অতীব জটিল এবং সুকঠিন। কারণ

একজন মুসলিম ব্যক্তিকে কাফির ফাৎওয়া দেওয়ার অর্থই হলঃ সে জীবিত অবস্থায় থাকলে তার সাথে তার স্ত্রীর

সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে যাবে। নিজ মুসলিম সন্তান-সন্ততির উপর তার অবিভাবকত্ব চলবে না। সে মৃত্যু বরণ করলে

তাকে গোসল দেওয়া যাবে না, কাফন পরানো যাবে না, তার জানাযা ছালাত আদায় করা যাবে না। তার জন্য

মাগফেরাতের দুআ করা যাবে না, মুসলিমদের কবরস্থানে তাকে দাফন করা যাবে না। তার কোন মুসলিম আত্মীয়

স্বজন তার মীরাছ পাবে না, বরং তার সমুদয় ধন-সম্পদ সরকারী বায়তুল মালে জমা হয়ে যাবে। পরকালে সে

জাহান্নামে চিরস্থায়ীভাবে বসবাস করবে…প্রভৃতি। আর যদি সে প্রকৃত অর্থে কাফের না হয় তবে কাফের

ফাৎওয়া দাতা আল্লাহর উপর মিথ্যারোপকারী বলে গণ্য হবে ফলে সে সর্বাধিক যালিমে পরিণত হবে। আর তার

একমাত্র বাসস্থান হবে জাহান্নাম (দ্রঃ আরাফঃ)। এবং তাকে অন্যায়ভাবে কাফের বলার জন্য নিজেই কাফিরে

পরিণত হবে (বুখারী প্রভৃতি)। এ থেকেই প্রতীয়মান হয় বিষয়টি কত জটিল এবং সুকঠিন। এজন্যই বড় বড়

ওলামায়েদ্বীন মুসলিম ব্যক্তিকে সহজে কাফের বলেন না,বরং সে ক্ষেত্রে বহু সতর্কতা অবলম্বন করে থাকেন)

তাদের এই মূর্খামীদুষ্ট ফাৎওয়া অনুযায়ী সালাফে ছালেহীনের সকলই কাফের গণ্য হবে। কারণ তারা সৃষ্টি গত দিক

থেকে নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে মাটির তৈরী মানুষই মনে করতেন। তাঁরা আদৌ তাঁকে নূরের
তৈরী গণ্য করতেন না।

লেখক: আখতারুল আমান বিন আব্দুস সালাম
সূত্র: সালাফী বিডি

101
নামাযের দো‘আ ও যিক্‌র



প্রথমঃ তাকবীরে তাহরীমার পর ইস্তিফতা বা প্রারম্বিক দো‘আ

«اللهم

১. উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা বা‘ইদ বাইনী ও বাইনা খাতায়াইয়া কামা বা‘আদতা বাইনাল মাশরিক্বি ওয়াল

মাগরিবি, আল্লাহুম্মা নাক্কিনী মিন খাতায়াইয়া কামা ইউনাক্কাস সাওবুল আবয়াদু

মিনাদ্দানাসি, আল্লাহুম্মাগসিলনী মিন খাতায়াইয়া বিল মা-য়ি ওয়াস সালজি ওয়াল বারাদি।

অর্থ: হে আল্লাহ! আমার এবং আমার গুনাহ্ খাতার মাঝে এমন দূরত্ব সৃষ্টি কর যেরূপ পশ্চিম ও পূর্বের

দূরত্ব সৃষ্টি করেছ। হে আল্লাহ! আমাকে আমার গুনাহ থেকে এমনভাবে পরিষ্কার কর যেমন সাদা কাপড়

ময়লা থেকে পরিষ্কার করা হয়। হে আল্লাহ! আমার পাপসমূহকে পানি, বরফ ও শিশিরের মাধ্যমে ধৌত

করে দাও। (বুখারী-মুসলিম)

২. উচ্চারণ: সুবহানাকা আল্লাহুম্মা ওয়া বিহামদিকা ওয়া তাবা-রাকাসমুকা ওয়া তা‘আলা জাদ্দুকা ওয়া লা-

অর্থ: হে আল্লাহ! সকল দোষ হতে তোমার পবিত্রতা ঘোষণা করছি এবং তোমারই সকল

প্রশংসা, তোমার নাম মহিমান্বিত, তোমার মর্যাদা-বড়ত্ব অতি উচ্চে এবং তুমি ব্যতীত সত্যিকার

কোনো মা‘বূদ বা উপাস্য নেই।

، اللهم أغسلني من خطاياي بالماء والثلجوالبرد» (رواه البخاري ومسلم)

«سبحانك اللهم وبحمدك وتبارك اسمك وتعالى جدك ولا إله غيرك» (رواه مسلم)

«وجهت وجهي للذي فطر السموات والأرش حنيفا وما أنا من المشركين، إن صلاتي، ونسكي، ومحياي، ومماتي لله رب العال

مين، لا شريك له وبذلك أمرت وأنا منالمسلمين اللهم أنت الملك لا إله إلا انت، أنت ربي وانا عبدك، ظلمت نفسي وأعتفت بذنب

 وأهدني لأحسنالأخلاق لا يهدي لأحسنها إلا أنت، وأصرف عني سيّئها، لا يصرف عني سيئها إلا أنت لبيك وسعديك، والخير

৩. উচ্চারণ: ওয়াজ্জাহতু ওয়াজহিয়া লিল্লাযী ফাত্বারাস সামাওয়াতি ওয়াল আরদা হানীফাউঁ ওমা আনা

মিনাল মুশরিকীন, ইন্না সালাতী ওয়া নুসুকী ওয়া মাহ্ইয়ায়া ওয়া মামাতী লিল্লাহি রাব্বিল ‘আলামীন, লা-

শারীকালাহু ওয়াবিযালিকা উমিরতু ওয়া আনা মিনাল মুসলিমীন।

আল্লাহুম্মা আনতাল মালিকু লা-ইলাহা ইল্লা আনতা, আনতা রব্বী ওয়া আনা আবদুকা, যালামতু নাফসী

ওয়া‘তারাফতু বিযানবী ফাগফিরলী যুনূবী জামীয়ান ইন্নাহু লা-ইয়াগফিরুজ্জুনূবা ইল্লা আন্তা, ওয়াহদিনী লি

আহসানিল আখলাক্বি লা-ইয়াহদী লিআহসানিহা ইল্লা আন্তা, ওয়াস্রিফ ‘আন্নী সাইয়্যিয়াহা লা-য়াসরিফু

আন্নী সাইয়্যিয়াহা ইল্লা আন্তা, লাব্বাইকা ওয়াসা‘দাইকা, ওয়াল খাইরু কুল্লুহূ বিইয়াদাইকা ওয়াশ শাররু

লাইসা ইলাইকা,আনা বিকা ওয়া ইলাইকা, তাবারাকতা ওয়া তা‘য়ালাইতা, আস্তাগফিরুকা ওয়া আতুবু

অর্থ: আমি সেই আল্লাহ্ তা‘আলার দিকে একনিষ্ঠভাবে চেহারা ফিরাচ্ছি যিনি আকাশসমূহ ও পৃথিবী সৃষ্টি

করেছেন এবং আমি মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত নই। নিশ্চয় আমার নামায, কুরবানী-হজ্জ, জীবন ও মরণ

বিশ্বজগতের রব্ব আল্লাহ্‌র জন্য নিবেদিত। তাঁর কোনো অংশীদার নেই। আর এই জন্যই আমি আদিষ্ট

হয়েছি এবং আমি মুসলিমদের অন্তর্ভুক্ত।

হে আল্লাহ্! তুমি সেই বাদশাহ যে তুমি ব্যতীত সত্যিকার কোনো মা‘বূদ নেই, তুমি আমার রব্ব এবং আমি

তোমার বান্দা, নিজের প্রতি যুলুম করেছি এবং আমার গুনাহ স্বীকার করছি। অতএব তুমি আমার যাবতীয়

গুনাহ্ মা‘ফ করে দাও আর নিশ্চয় তুমি ছাড়া তো গুনাহ মাফের কেউ নেই। আর তুমি আমাকে উত্তম

চরিত্রের দিকে পরিচালিত কর। তুমি ব্যতীত উত্তম চরিত্রের দিকে কেউ পরিচালিত করতে পারে না।

আমার চরিত্রের মন্দ গুণাবলী আমার থেকে দূর কর খারাপ গুণাবলী তুমি ব্যতীত কেউ দূরীভূত করতে

পারবে না। আমি তোমার ‌আহ্বানে সাড়া দিয়ে তোমার নিকট উপস্থিত। যাবতীয় কল্যাণ তোমার হাতে

নিহিত, অকল্যাণ তোমার দিকে সম্পৃক্ত নয়। আমি তোমার জন্য এবং তোমারই দিকে আমার

প্রবণতা। তুমি মহিমান্বিত ও অতি উচ্চ, আমি তোমার নিকট ক্ষমা চাই এবং তোমার নিকট তওবা

«اللهم رب جبرائيل، وميكائيل، وإسرافيل فاطر السماوات والأرض، عالم الغيب والشهادة أنت تحكم بين عبادك فيما كانوا فيه

৪. উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা রব্বা জিবরাঈলা ওয়া মীকাঈলা ওয়া ইসরাফীলা ফাত্বিরাস সামাওয়াতি ওয়ার

আরদি আলিমাল গাইবি ওয়াশ্ শাহাদাতি আন্তা তাহকুমু বাইনা ইবা-দিকা ফীমা কা-নূ ফীহি

ইয়াখতালিফূন, ইহদিনী লিমা উখতুলিফা ফীহি মিনাল হাক্বি বিইযনিকা, ইন্নাকা তাহদী মানতাশা-ঊ ইলা

সিরাতিম মুস্তাক্বীম। (মুসলিম)

অর্থ: হে আল্লাহ! জিব্রাঈল, মীকাঈল ও ইস্রাফীলের রব, আকাশসমূহ ও পৃথিবীর স্রষ্টা, গায়েব ও

উপস্থিত সকল বিষয়ে সর্বজ্ঞ। তোমার বান্দাগণ যে সব বিষয়ে মতভেদ করে তুমি তার মীমাংসা

কর, সত্য থেকে দূরে সরে যে সব বিষয়ে মতভেদ করা হয় সেগুলিতে তোমার সহায়তায় আমাকে সঠিক

নির্দেশনা দাও। নিশ্চয় তুমি যাকে ইচ্ছা সঠিক পথ প্রদর্শন কর। (মুসলিম)

ي فاغفرلي ذنوبي جميعا إنه لا يغفر الذنوب إلا أنت-

 كله بيديك، والشر ليس إليك أنا بي وإليك تباركتوتعاليت أستغفرك وأتوب إليك» (رواه مسلم)

 يختلفون، إهدني لما اختلف فيه منالحق بإذنك إنك تهدي من تشاء إلى صراط مستقيم» (رواه مسلم)

দ্বিতীয়ঃ রুকুর দো‘আ ও যিক্‌র

উচ্চারণ: ‘‘সুবহানা রব্বীয়াল ‘আযীম’’

অর্থ: আমার মহান রব্বের পবিত্রতা বর্ণনা করছি। (মুসলিম)

তিনবার বা তার চেয়ে বেশি বলবে।

(رواه أحمد وأبو داود والدار قطني والطبراني والبيهقي)

উচ্চারণ: ‘‘সুবহানা রব্বীয়াল আ‘যীম ওয়া বিহামদিহি’’

অর্থ: আমার মহান রব্বের পবিত্রতা ও প্রশংসা বর্ণনা করছি। (আহমাদ, আবু

দাউদ, দারাকুতুনী, ত্ববারানী এবং বায়হাকী)

কেউ যদি বেশি বলতে চায় তো বলবেঃ

উচ্চারণ: ‘‘সুবহানাকা আল্লাহুম্মা রব্বানা ওয়াবিহামদিকা আল্লাহুম্মাগ ফিরলী।’’

অর্থ: হে আল্লাহ! আমাদের রব্ব তোমার সকল প্রশংসা বর্ণনা করছি এবং সকল দোষ হতে পবিত্রতা

ঘোষণা করছি, আমাকে তুমি ক্ষমা কর। (বুখারী-মুসলিম)

«سبحانك اللهم ربنا وبحمدك اللهم اغفر لي» (متفق عليه)

«سبوح قدوس رب الملائكة والروح» (رواه مسلم)

উচ্চারণ: ‘‘সুব্বূহুন কুদ্দূ-সুন রব্বুল মালাইকাতি ওয়ার রূহ।’’

অর্থ: ফেরেশতামণ্ডলী ও জিবরাঈলের রব্ব সকল দোষত্রুটি থেকে পবিত্র। (মুসলিম)

উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা লাকা রাকা‘তু, ওয়া বিকা আ-মান্তু ওয়া লাকা আসলামতু, খাশা‘য়া লাকা সাম‘ঈ ওয়া

বাসারী ওয়া মুখখী ওয়া ‘আজমী ওয়া ‘আসাবী।

অর্থ: হে আল্লাহ! আমি তোমার জন্যই রুকু করি, তোমার প্রতি ঈমান এনেছি এবং তোমার নিকটেই

আত্মসমর্পণ করছি, আমার কান, দৃষ্টি, মস্তিষ্ক,হাড় ও মাংশপেশী সকল বস্তু তোমার ভয়ে অবনত

«اللهُمَّ لَكَ رَكَعْتُ، وَبِكَ آمَنْتُ، وَلَكَ أَسْلَمْتُ، خَشَعَ لَكَ سَمْعِي، وَبَصَرِي، وَمُخِّي، وَعَظْمِي، وَعَصَبِي»

«سبحان ذي الجبروت، والملكوت، والكبرياء، والعظمة» (رواه أبو داود والنسائي)

উচ্চারণ: সুবহানা জীল জাবারূতি ওয়াল মালাকূত ওয়াল কিবরিয়ায়ি ওয়াল ‘আজমাহ্।

অর্থ: সকল দোষ হতে পবিত্র যিনি মহাপরাক্রমশালী, বিশাল সাম্রাজ্যের অধিকারী, অসীম গৌরব-

গরিমা ও শ্রেষ্ঠত্বের অধিকারী। (আবু দাউদ ও নাসায়ী)

তৃতীয়ঃ রুকু হতে উঠার দো‘আ

(সোজা হয়ে দাঁড়ানো অবস্থায়)

উচ্চারণ: রব্বানা ওয়ালাকাল হামদ

অথবাঃ রব্বানা লাকাল হামদু

অথবাঃ রব্বানা লাকাল হামদু

উল্লেখিত সবগুলিই বুখারী-মুসলিমে বর্ণিত হয়েছে।

তবে একেকবার একেকটি পড়বে, যদিও উত্তম হলো নিম্নরূপে বলাঃ

«ربنا ولك الحمد حمدا كثيرا طيّبا مباركا فيه ملء السماوات وملء الأرض وملء بينهما وملء ما شئت من شيء بعد أهل الثن

اء والمجد أحق ما قال العبد وكلنا لكعبد لا مانع لما أعطيت ولا معطي لما منعت ولا ينفع ذا الجد منك الجد» (رواه مسلم)

উচ্চারণ: রব্বানা ওয়া লাকাল হামদু হামদান কাসীরান ত্বইয়্যিবান মুবারাকান ফীহি, মিলয়াস সামাওয়াতি

ওয়া মিলয়ালারদি ওয়া মিলয়া মা বায়নাহুমা ওয়া মিলয়া মা-শি’তা মিন শাইয়িন বা‘দু, আহলাস সানায়ি ওয়াল

মাজদি- আহাক্কু মাক্বলাল আবদু ওয়া কুল্লুনা লাকা আবদুন, লা মা-নি‘য়া লিমা আ‘ত্বাইতা ওয়ালা মু‘ত্বিয়া

লিমা মানা‘তা ওয়ালা ইয়ানফা‘উ যাল জাদ্দি মিনকাল জাদ্দু। (মুসলিম)

অর্থ: হে আল্লাহ্! তোমারই জন্য সর্ববিধ উত্তম ও বরকতপূর্ণ প্রশংসা যা আকাশসমূহ, পৃথিবী ও

উভয়ের মধ্যে যত কিছু রয়েছে সব কিছু পরিপূর্ণ,এগুলি ছাড়াও তুমি যত চাও সমস্ত পরিপূর্ণ প্রশংসা, তুমি

সকল স্তুতি ও মর্যাদার অধিকারী। তোমার বান্দা যে প্রশংসা করে তার চেয়ে তুমি অধিক প্রাপ্য, আমরা

প্রত্যেকেই তোমার বান্দা, তুমি যা দান কর তা বন্ধ করার কেউ নেই। আর তুমি যা বন্ধ রাখ তা

দানকারী কেউ নেই। কোনো সম্মানিত ব্যক্তি সম্মান কাজে আসবে না তোমার নিকট থেকেই প্রকৃত

চতুর্থঃ সিজদার দো‘আ ও যিক্‌র

উচ্চারণ: সুবহানা রাব্বিয়াল আ‘লা। (মুসলিম)

(رواه

উচ্চারণ: সুবহানা রবিবয়াল আ‘লা ওয়া বিহামদিহি। (আবু দাউদ, দারা কুতুনী, আহমাদ, ত্ববারানী ও

অর্থ: আমার মহান রব্বের প্রশংসাপূর্ণ পবিত্রতা বর্ণনা করছি।

অথবা চাইলে নিম্নোক্ত দো‘আ পড়বেঃ

উচ্চারণ: ‘‘সুবহানাকা আল্লাহুম্মা রব্বানা ওয়াবিহামদিকা আল্লাহুম্মাগ্ ফিরলী।’’

অর্থ: হে আল্লাহ! তোমার সকল প্রশংসা বর্ণনা করছি এবং সকল দোষ হতে পবিত্রতা ঘোষণা

করছি, আমাকে তুমি ক্ষমা কর। (বুখারী-মুসলিম)

উচ্চারণ: ‘‘সুববূহুন কুদ্দূসুন রব্বুল মালাইকাতি ওয়ার রূহ।’’

অর্থ: ফেরেশতামণ্ডলী ও জিবরাঈলের রব্ব সকল দোষত্রুটি থেকে পবিত্র। (মুসলিম)

উচ্চারণ: সুবহানা যিল জাবারূতি ওয়াল মালাকুত ওয়াল কিবরিয়ায়ি ওয়াল ‘আজামাহ্।

অর্থ: সকল দোষ হতে পবিত্র যিনি মহাপরাক্রমশীল, বিশাল সাম্রাজ্যের অধিকারী, অসীম গৌরব-

গরিমা ও শ্রেষ্ঠত্বের অধিকারী। (আবু দাউদ ও নাসায়ী)

«سبّوح

«سبحان ذي الجبروت، والملكوت، والكبرياء، والعظمة» (رواه أبو داود والنسائي)

 «اللهم إني أعوذ برضاك من سخطك، وبمعافاتك من عقوبتك وأعوذ بك منك لا أحصى ثناء عليك أنت كما أثنيت على نفسك»

উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্নী আ‘উযু বিরিদ্বা-কা মিন সাখাতিকা, ওয়া বিমু‘য়া-ফাতিকা মিন

উকূবাতিকা, ওয়া আ‘উযু বিকা মিনকা লা উহসী সানা’য়ান ‘আলাইকা, আন্তা কামা আসনাইতা ‘আলা

অর্থ: হে আল্লাহ! আমি তোমার সন্তুষ্টির মাধ্যমে তোমার অসন্তুষ্টি হতে আশ্রয় চাই এবং তোমার

ক্ষমার বিনিময়ে তোমার শাস্তি হতে আশ্রয় চাই,তোমার মাধ্যমেই তোমার নিকট হতে আশ্রয়

চাই, তোমার গুণগান গেয়ে শেষ করতে পারবো না, তুমি যেভাবে নিজের স্তুতি বর্ণনা করেছে। (মুসলিম)

«اللهم اغفرلي ذنبي كله، دقّه وجلّه وأوّله وآخره وعلانيّته وسره» (رواه مسلم)

উচ্চারণ: আল্লাহুম্মাগফিরলী যাম্বী কুল্লাহু দিক্কাহু ওয়া জিল্লাহু ওয়া আউয়ালাহু ওয়া আখিরাহু ও

আলানিয়্যাতাহু ওয়া সির্রাহু।

অর্থ: হে আল্লাহ্! ছোট ও বড় গুনাহ পূর্বের ও পরের গুনাহ এবং প্রকাশ্য ও গোপনীয় সকল গুনাহ খাতা

 «اللهم لك سجدت وبك آمنت، ولك أسلمت، سجد وجهي للذي خلقه وصوره وشق سمعه وبصره، تبارك الله أحسن الخالقين»

উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা লাকা সাজাদতু ওয়া বিকা আ-মানতু ওয়ালাকা আসলামতু, সাজাদা ওয়াজহিয়া লিল্লাযী

খালাকাহু ওয়া সাওয়ারাহু ওয়া শাক্কা সাম‘য়াহু ওয়া বাসারাহু, তাবারাকাল্লাহু আহসানুল খালিক্বীন।

অর্থ: হে আল্লাহ! আমি তোমাকেই সিজদা করি, তোমার প্রতি ঈমান এনেছি, তোমার নিকটই

আত্মসমর্পণ করছি, আমার মুখমণ্ডল তাঁর জন্য সিজদায় অবনমিত যিনি উহা সৃষ্টি করেছেন, প্রতিরূপ

দিয়েছেন এবং তার কর্ণ ও চক্ষু আলাদা করে সজ্জিত করেছেন, তিনি মহিমান্বিত আল্লাহ,সর্বোত্তম

পঞ্চমঃ দুই সিজদার মাঝে বসার দো‘আ

উচ্চারণ: রব্বিগফিরলী, রব্বিগফিরলী।

অর্থ: হে আল্লাহ্! তুমি আমাকে ক্ষমা কর, হে আল্লাহ্ তুমি আমাকে ক্ষমা কর। (আবু দাউদ-ইবনে মাজাহ্)

উচ্চারণ: আল্লাহুম্মাগফিরলী ওয়ার হামনী ওয়া ‘আফিনী ওয়াহদিনী ওয়ারযুকনী।

অর্থ: হে আল্লাহ! তুমি আমাকে ক্ষমা কর, আমার প্রতি রহম কর, আমাকে সুস্থতা দান কর, সঠিক পথে

পরিচালিত কর এবং রিযিক দান কর। (আবু দাউদ, তিরমিযী)

একটি বর্ণনায় বেশি রয়েছেঃ

অর্থ: আমার ক্ষতিপূরণ কর।

«اللهم اغفرلي، وارحمني، وعافني واهدني، وارزقني» (رواه أبو داود والترمذي)

অর্থ: আমার মর্যাদা বৃদ্ধি কর। (ইবনে মাজাহ)

ষষ্ঠঃ তাশাহহুদ (আত্তাহিয়্যাতু)

 «التحيات لله والصلوات والطيبات والسلام عليك أيها النبي ورحمة الله وبركاته، السلام علينا وعلى عباد الله الصالحين،

أشهد

«اللهم صل على محمد وعلى آل محمد كما صليت على إبراهيم وعلى آل إبراهيم إنك حميد مجيد، اللهم بارك على محمد وعل

উচ্চারণ: আত্তাহিয়্যাতু লিল্লাহি ওয়াস সালাওয়াতু ওয়াত্ব ত্বাইয়্যিবাতু আস্‌সালামু আলাইকা

আইয়্যুহান্নাবিইয়্যু ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু,আসসালামু আলাইনা ওয়া ‘আলা ইবাদিল্লাহিস্

সালিহীন। আশহাদু আল্-লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়া আশ্হাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়া রাসূলুহু।

আল্লাহুম্মা সাল্লি ‘আলা মুহাম্মাদিউ ওয়া ‘আলা আ-লি মুহাম্মাদ কামা সাল্লাইতা ‘আলা ইবরাহীমা ওয়া

আলা আ-লি ইবরাহীমা ইন্নাকা হামীদুম মাজীদ।

ى آل محمد كما باركت على إبراهيموعلى آل إبراهيم إنّك حميد مجيد» (رواه البخاري ومسلم)

আল্লাহুম্মা বারিক ‘আলা মুহাম্মাদিন ওয়া ‘আলা আ-লি মুহাম্মাদিন, কামা বা-রাকতা ‘আ-লা ইবরাহীমা

ওয়া ‘আলা আ-লি ইবরাহীমা ইন্নাকা হামীদুম্ মাজীদ।

(বুখারী-মুসলিম, এছাড়া অন্য বর্ণনায় কাছাকাছি এভাবেই বর্ণিত হয়েছে।)

অর্থ: সকল সম্মান-সম্ভাষণ, সকল সালাত ও সকল পবিত্রতা আল্লাহ্ তা‘আলার জন্য। হে নবী! আপনার

প্রতি শান্তি, রহমত ও বরকত অবতীর্ণ হোক, আমাদের ও নেক বান্দাদের উপর শান্তি অবতীর্ণ

হোক, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে ‘‘মুহাম্মাদ’’ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর বান্দা ও রাসূল।

হে আল্লাহ! তুমি মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর বংশধরের প্রতি রহমত অবতীর্ণ

কর, যেমনভাবে রহমত অবতীর্ণ করেছিলে ইবরাহীম আলাইহিস্ সালাম ও তাঁর বংশধরের প্রতি। নিশ্চয়

তুমি প্রশংসনীয় ও মর্যাদাবান।

সপ্তমঃ আত্তাহিয়্যাতু-দরূদের পর সালামের পূর্ব মুহূর্তের দো‘আ

«اللهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنْ عَذَابِ جَهَنَّمَ، وَمِنْ عَذَابِ الْقَبْرِ، وَمِنْ فِتْنَةِ الْمَحْيَا وَالْمَمَاتِ، وَمِنْ شَرِّ فِتْنَةِ الْمَسِيحِ الدَّجَّالِ»

উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্নী আ‘উযুবিকা মিন আযাবি জাহান্নাম ওয়া মিন আযাবিল ক্বাবরি ওয়ামিন

ফিতনাতিল মাহইয়া-ওয়াল মামাত ওয়া মিন শাররি ফিতনাতিল মাসীহিদ্ দাজ্জাল। (বুখারী-মুসলিম)

অর্থ: হে আল্লাহ! আমি জাহান্নাম ও কবরের আযাব হতে তোমার নিকট আশ্রয় কামনা করছি এবং

আশ্রয় কামনা করছি জীবিত অবস্থার ও মৃত্যুর ফিতনা হতে এবং মসীহ দাজ্জালের অনিষ্টকর ফিতনা

অন্য বর্ণনায় বেশি রয়েছেঃ

উচ্চারণ: ‘‘আল্লাহুম্মা ইন্নী আঊযুবিকা মিনাল মা-সামি ওয়াল মাগরামি’’

অর্থ: হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকট আশ্রয় কামনা করছি পাপকর্ম ও ঋণ থেকে।

اللهم إني ظلمت نفسي ظلما كثيرا ولا يغفر الذنوب إلا أنت فاغفرلي مغفرة من عندك وارحمني إنّك أنت الغفور الرحيم"

উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্নী যালামতু নাফসী যুলমান কাসীরান, ওয়ালা ইয়াগফিরুযযুনূবা ইল্লা

আন্তা, ফাগফিরলী মাগফিরাতাম মিন ‘ইনদিকা,ওয়ার হামনী ইন্নাকা আন্তাল গাফূরুর রহীম।

অর্থ: হে আল্লাহ! আমি নিজের উপর অনেক জুলুম করেছি, আর তুমি ব্যতীত গুনাহ খাতা কেউ ক্ষমাকারী

নেই। অতএব তুমি নিজ গুণে আমাকে ক্ষমা করে দাও এবং আমার প্রতি রহম কর কেননা তুমি অতিশয়

اللهم إني أغوذ بك من المأثم والمغرم (رواه البخاري ومسلم)

«اللهم اغفرلي ما قدمت، وما أخّرت، وما أسررت، وما أعلنت، وما أسرفت، وما أنت أعلم به مني -

 أنت المقدم، وأنت المؤخر لا إله إلا أنت» (رواه مسلم)

উচ্চারণ: আল্লাহুম্মাগফিরলি মা ক্বাদ্দামতু ওয়ামা আখ্খারতা ওয়ামা আসরারতু ওয়ামা ‘আলানতু ওয়ামা

আন্তাল মু’আখ্খিরু লা-ইলাহা ইল্লা আন্তা। (মুসলিম)

অর্থ: হে আল্লাহ! তুমি আমার সকল গুনাহখাতা ক্ষমা করে দাও যা পূর্বে ও পরে, গোপনে ও প্রকাশ্যে

করেছি, যা সীমা লঙ্ঘনজনিত গুনাহ এবং যে সম্পর্কে তুমি আমার চেয়ে অধিক জ্ঞাত। তুমি যা চাও

অগ্রগামী কর ও যা চাও পশ্চাতে নিয়ে যাও আর তুমি ব্যতীত প্রকৃত মা‘বূদ বা উপাস্য নেই।

«اللهم إني أعوذ بك من البخل، وأعوذ بك من الجبن، وأعوذ بك أن أرد إلى ارذل العمر، وأعوذ بك من فتنة الدنيا وعذاب القب

উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্নি আ‘উযুবিকা মিনাল বুখলি, ওয়া আ‘উযুবিকা মিনাল জুবনি, ওয়া আ‘উযুবিকা

আন উরাদ্দা ইলা আরযালিল উমরে, ওয়া ফিতনাতিদ দুনিয়া ওয়া আ‘উযু বিকা মিন আযবিল কাবরি।

অর্থ: হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকটে আশ্রয় চাই কৃপণতা, কাপুরুষতা ও আশ্রয় চাই চরম বার্ধক্যে

উপনীত হয়ে যাওয়ার এবং আপনার নিকট আশ্রয় চাই পৃথিবীর ফিতনা থেকে ও কবরের আযাব হতে।

উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা আয়িন্নী ‘আলা যিকরিকা ওয়া শুকরিকা ওয়া হুসনি ইবাদাতিকা। (আবু দাঊদ-নাসায়ী)

অর্থ: হে আল্লাহ! আমাকে তোমার যিক্‌র ও শুকরিয়া জ্ঞাপন এবং উত্তমরূপে ইবাদত করার তাওফীক

«اللهم أعني على ذكرك، وشكرك، وحسن عبادتك» (رواه أبو داؤد والنسائي)

«اللهم إني أسألك الجنة وأعوذ بك من النار» (رواه إبن ماجه وأبو داود)

উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্নী আসআলুকাল জান্নাতা ওয়া আ‘ঊযুবিকা মিনান্নার। (ইবনে মাজাহ - আবু

অর্থ: হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকটে জান্নাত প্রার্থনা করছি এবং জাহান্নাম থেকে আশ্রয় চাচ্ছি।

অষ্টমঃ সালামের পর বর্ণিত যিক্‌র

«اللهم أنت السلام ومنك السلام تباركت يا ذا الجلال والإكرام» (رواه مسلم)

উচ্চারণ: আস্তাগফিরুল্লাহ (তিনবার)

অর্থ: আল্লাহুম্মা আন্তাস সালামু ওয়া মিনকাস সালামু, তাবারাকতা ইয়া যাল জালালি ওয়াল ইকরাম।

অর্থ: আমি আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করছি। (তিনবার)

হে আল্লাহ! তুমি শান্তিময়, আর তুমিই শান্তির উৎস। হে মহামহিম ও সম্মানের অধিকারী মহিমান্বিত

«لا إله إلا الله وحده لا شريك له، له الملك وله الحمد وهو على كل شيءٍ قدير»

উচ্চারণ: লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহ্দাহু লা শারীকালাহু, লাহুল মুলকু ওয়ালাহুল হামদু ওয়াহুয়া আলা কুল্লি

শাইয়্যিন কাদীর। (তিনবার) (বুখারী - মুসলিম)

অর্থ: আল্লাহ ব্যতীত কোনো সত্যিকার ইলাহ বা উপাস্য নেই। তিনি এক, তাঁর কোনো অংশীদার

নেই, তাঁর জন্যই সকল প্রশংসা ও রাজত্ব আর তিনি সকল বিষয়ে সর্বশক্তিমান।

«لا إله إلا الله وحده لا شريك له، له الملك وله الحمد وهو على كل شيئ قدير، اللهم لا مانع لما أعطيت، ولا معطي لما منعت

উচ্চারণ: লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা-শারীকা লাহু লাহুল মুলকু ওলাহুল হামদু ওয়াহুয়া ‘আলা কুল্লি

শাইয়্যিন ক্বদীর। আল্লাহুম্মা লা মানি‘য়া লিমা আ‘ত্বইতা ওয়ালা মু‘ত্বিয়া লিমা মানা‘তা ওয়ালা

ইয়ানফা‘উ যাল জাদ্দি মিনকাল জাদ্দু। (বুখারী - মুসলিম)

অর্থ: আল্লাহ ব্যতীত কোনো সত্যিকার ইলাহ বা উপাস্য নেই। তিনি এক তাঁর কোনো অংশীদার

নেই, তাঁর জন্যই সকল প্রশংসা ও রাজত্ব আর তিনি সকল বিষয়ে সর্বশক্তিমান।

হে আল্লাহ্! তুমি যে দান কর তা বন্ধ করার কেউ নেই আর তুমি যা বন্ধ রাখ তা দানকারী কেউ নেই।

কোনো সম্মানিত ব্যক্তির সম্মান কাজে আসবে না, তোমার নিকটেই প্রকৃত সম্মান।

«لا إله إلا الله وحده لا شريك له، له الملك، وله الحمد وهو على كل شيء قدير، لا حول ولا قوّة إلا بالله، لا إله إلا الله، ولا نع

بد إلا إيّاه، له النعمة وله الفضل ولهالثناء الحسن، لا إله إلا الله مخلصين له الدين ولو كره الكافرون» (رواه مسلم)

উচ্চারণ: লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহ্দাহু লা শারীকালাহু, লাহুল মুলকু ওয়ালাহুল হামদু ওয়াহুয়া ‘আলা কুল্লি

শাইয়্যিন কাদীর। লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহি, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু, ওয়ালা না‘বুদু ইল্লা

ইয়্যাহু, লাহুন নি‘মাতু ওয়ালাহুল ফাদলু ওয়ালাহুস সানাউল হাসানু, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুখলিসীনা লাহুদদ্বীনা

ওয়ালাউ কারিহাল কাফিরূন। (মুসলিম)

অর্থ: আল্লাহ ব্যতীত কোনো সত্যিকার ইলাহ বা উপাস্য নেই। তিনি এক তাঁর কোনো অংশীদার

নেই, তাঁর জন্যই সকল প্রশংসা ও রাজত্ব আর তিনি সকল বিষয়ে সর্বশক্তিমান।

، ولا ينفع ذا الجد منك الجد» (رواهالبخاري ومسلم)

আল্লাহ তা‘আলার সাহায্য ব্যতীত স্বীয় অবস্থা থেকে পরিবর্তনের ক্ষমতা কারো নেই। আল্লাহ্

ব্যতীত সত্যিকার মা‘বূদ নেই, আমরা একমাত্র তাঁরই ইবাদত করি, তাঁর পক্ষ থেকে যাবতীয় নেয়ামত ও

অনুগ্রহ তাই তাঁর জন্যই সকল উত্তম প্রশংসা। আল্লাহ ব্যতীত কোনো সত্রিকার মা‘বূদ নেই, তাঁর

দ্বীন আমরা একনিষ্ঠভাবে মান্য করি যদিও কাফেরগণ তা অপছন্দ করে।

অর্থ: আমি আল্লাহর জন্য যাবতীয় দোষ হতে পবিত্রতা ঘোষণা করছি।

‘‘আহামদু লিল্লাহ’’ ৩৩ বার

অর্থ: সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্য।

‘‘আল্লাহু আকবার’’ ৩৩ বার

অর্থ: আল্লাহ্ সবার বড়। অতঃপর বলবেঃ

উচ্চারণ: লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহ্দাহু লা শারীকালাহু, লাহুল মুলক ওয়ালাহুল হামদু ওয়াহুয়া ‘আলা কুল্লি

শাইয়্যিন কাদীর। (তিনবার) (বুখারী - মুসলিম)

অর্থ: আল্লাহ ব্যতীত কোনো সত্যিকার ইলাহ বা উপাস্য নেই। তিনি এক, তাঁর কোনো অংশীদার

নেই, তাঁর জন্যই সকল প্রশংসা ও রাজত্ব আর তিনি সকল বিষয়ে সর্বশক্তিমান।

অথবাঃ সুবহানাল্লাহ ৩৩ বার, আলহামদুলিল্লাহ ৩৩ বার ও আল্লাহু আকবার ৩৪ বার। (তিরমিযী, নাসায়ী

"لا إله إلا الله وحده لا شريك له، له الملك وله الحمد وهو على كل شيء قدير" (رواه البخاري و مسلم)

আয়াতুল কুরসী

  يَعۡلَمُ بِإِذۡنِهِۦۚ إِلَّا عِندَهُۥٓ يَشۡفَعُ ٱلَّذِي ذَا مَن ٱلۡأَرۡضِۗ فِي وَمَا ٱلسَّمَٰوَٰتِ فِي مَا لَّهُۥ نَوۡمٞۚ وَلَا سِنَةٞ تَأۡخُذُهُۥ لَا ٱلۡقَيُّومُۚ ٱلۡحَيُّ هُوَ إِلَّا إِلَٰهَ لَآ﴿ ٱللَّهُ

  وَهُوَ حِفۡظُهُمَاۚ يَ‍ُٔودُهُۥ وَلَا وَٱلۡأَرۡضَۖ ٱلسَّمَٰوَٰتِ كُرۡسِيُّهُ وَسِعَ شَآءَۚ بِمَا إِلَّا عِلۡمِهِۦٓ مِّنۡ بِشَيۡءٖ يُحِيطُونَ وَلَا خَلۡفَهُمۡۖ وَمَا أَيۡدِيهِمۡ بَيۡنَمَا

উচ্চারণ: (আল্লা-হু লা ইলা-হা ইল্লা হুওয়াল হাইয়্যূল কাইয়্যূমু লা তা’খুযুহু সিনাতুঁও ওয়ালা নাউম। লাহূ মা-

ফিসসামা-ওয়া-তি ওয়ামা ফিল আরদ্বি। মান যাল্লাযী ইয়াশফা‘উ ‘ইনদাহূ ইল্লা বিইযনিহী। ইয়া‘লামু মা

বাইনা আইদীহিম ওয়ামা খালফাহুম। ওয়ালা ইয়ুহীতূনা বিশাইইম মিন্ ইলমিহী ইল্লা বিমা শাআ। ওয়াসি‘আ

কুরসিয়্যুহুস সামা-ওয়া-তি ওয়াল আরদ্ব। ওয়ালা ইয়াউদুহূ হিফযুহুমা ওয়া হুয়াল ‘আলিয়্যূল ‘আযীম)।

অর্থ: “আল্লাহ্, তিনি ছাড়া কোনো সত্য ইলাহ্ নেই। তিনি চিরঞ্জীব, সর্বসত্তার ধারক। তাঁকে

তন্দ্রাও স্পর্শ করতে পারে না, নিদ্রাও নয়। আসমানসমূহে যা রয়েছে ও যমীনে যা রয়েছে সবই তাঁর। কে

সে, যে তাঁর অনুমতি ব্যতীত তাঁর কাছে সুপারিশ করবে? তাদের সামনে ও পিছনে যা কিছু আছে তা তিনি

জানেন। আর যা তিনি ইচ্ছে করেন তা ছাড়া তাঁর জ্ঞানের কোনো কিছুকেই তারা পরিবেষ্টন করতে পারে

না। তাঁর ‘কুরসী’ আসমানসমূহ ও যমীনকে পরিব্যাপ্ত করে আছে; আর এ দুটোর রক্ষণাবেক্ষণ তাঁর জন্য

বোঝা হয় না। আর তিনি সুউচ্চ সুমহান।”

ফরয নামাযের পর উক্ত আয়াতুর কুরসী পড়বে কেননা হাদীসে বর্ণিত হয়েছেঃ ‘‘যে ব্যক্তি প্রত্যেক ফরয

নামাযের শেষে আয়াতুল কুরসী পড়বে তার জন্য মৃত্যু ব্যতীত জান্নাতে যাওয়ার আর কোনো বাধা নেই।

‘‘কুল হুয়াল্লাহু আহাদ’’, ‘‘কুল আঊযু বিরাবিবল ফালাক’’ ও ‘‘কুল আঊযু বিরাবিবন্ নাস’’ প্রত্যেক নামাযের

(আবু দাঊদ, নাসায়ী ও তিরমিযী)

70-(5) ۝  الرَّحِيْمِ      الرَّحْمٰنِ اللّٰهِ بِسْمِ﴿ اَحَدٌ     اللّٰهُ هُوَقُلْǺ الصَّمَدُ    اَللّٰهُ۝ۚĄ يُوْلَدْ    وَلَمْ ڏ يَلِدْ لَمْ۝ۚǼ  كُفُوًا لَّهٗ يَكُنْ وَلَمْ۝

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম (ক্বুল হুওয়াল্লা-হু আহাদ। আল্লাহুস্ সামাদ। লাম ইয়ালিদ ওয়া লাম ইউলাদ। ওয়া লাম

ইয়াকুল্লাহু কুফুওয়ান আহাদ)।

রহমান, রহীম আল্লাহর নামে। “বলুন, তিনি আল্লাহ্, এক-অদ্বিতীয়। আল্লাহ্ হচ্ছেন ‘সামাদ’ (তিনি কারো

মুখাপেক্ষী নন, সকলেই তাঁর মুখাপেক্ষী)। তিনি কাউকেও জন্ম দেন নি এবং তাঁকেও জন্ম দেয়া হয় নি। আর তাঁর

 ۝   الرَّحِيْمِ      الرَّحْمٰنِ اللّٰهِبِسْمِ﴿ الْفَلَقِ    بِرَبِّ اَعُوْذُقُلْǺ خَلَقَ   مَا شَرِّ مِنْ۝Ą وَقَبَ    اِذَا غَاسِقٍ شَرِّ وَمِنْ۝Ǽ  شَرِّ وَمِنْ۝

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম (ক্বুল আ‘উযু বিরব্বিল ফালাক্ব। মিন শাররি মা খালাক্ব। ওয়া মিন শাররি গা-

সিক্বিন ইযা ওয়াক্বাব। ওয়া মিন শাররিন নাফফা-সা-তি ফিল ‘উক্বাদ। ওয়া মিন শাররি হা-সিদিন ইযা হাসাদ)।

রহমান, রহীম আল্লাহর নামে। “বলুন, আমি আশ্রয় প্রার্থনা করছি  ঊষার রবের। তিনি যা সৃষ্টি করেছেন তার

অনিষ্ট হতে। ‘আর অনিষ্ট হতে রাতের অন্ধকারের, যখন তা গভীর হয়। আর অনিষ্ট হতে সমস্ত নারীদের, যারা

গিরায় ফুঁক দেয়। আর অনিষ্ট হতে হিংসুকের, যখন সে হিংসা করে।”

النَّفّٰثٰتِ فِي الْعُقَدِ    Ć۝  وَمِنْ شَرِّ حَاسِدٍ اِذَا حَسَدَ   Ĉ۝﴾،

 ۝  الرَّحِيْمِ   الرَّحْمٰنِ اللّٰهِبِسْمِ﴿ النَّاسِ   بِرَبِّ اَعُوْذُقُلْǺ النَّاسِ   مَلِكِ۝Ą النَّاسِ   اِلٰهِ۝Ǽ الْخَنَّاسِ   ڏ الْوَسْوَاسِ شَرِّ مِنْ۝Ć ۝

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম (ক্বুল ‘আউযু বিরাব্বিন্না-স। মালিকিন্না-সি, ইলা-হিন্নাসি, মিন শাররিল

ওয়াসওয়া-সিল খান্না-স, আল্লাযি ইউওয়াসউইসু ফী সুদূরিন না-সি, মিনাল জিন্নাতি ওয়ান্না-স।)।

রহমান, রহীম আল্লাহর নামে। “বলুন, আমি আশ্রয় প্রার্থনা করছি মানুষের রবের, মানুষের অধিপতির, মানুষের

ইলাহের কাছে, আত্মগোপনকারী কুমন্ত্রণাদাতার অনিষ্ট হতে; যে কুমন্ত্রণা দেয় মানুষের অন্তরে, জিনের মধ্য

থেকে এবং মানুষের মধ্য থেকে।”

উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্নী আসয়ালুকা ইলমান নাফিয়ান ওয়া রিযকান ত্বইয়্যিবান ওয়া আমালান

الَّذِيْ يُوَسْوِسُ فِيْ صُدُوْرِ النَّاسِ   Ĉ۝ مِنَ الْجِنَّةِ وَالنَّاسِ    Č۝ۧ﴾

«اللهم إنّي أسألك علما نافعا، ورزقا طيبا، وعملا متقبلا» (رواه إبن ماجه)

অর্থ: হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকটে উপকারী বিদ্যা, পবিত্র রিযিক এবং গ্রহণযোগ্য আমল কামনা

«رب قني عذابك يوم تبعث عبادك» (رواه مسلم)

উচ্চারণ: রব্বি ক্বিনী আযাবাকা ইয়াওমা তুব‘য়াসু ইবাদুকা। (মুসলিম)

অর্থ: হে আল্লাহ! আমাকে তুমি তোমার আযাব হতে বাঁচাও যেদিন তোমার বান্দারা উত্থিত হবে।

ফজর ও মাগরিবের নামাযের পর হলে বলবেঃ

উচ্চারণ: লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহ্দাহু লা শারীকালাহু, লাহুল মুলক ওয়ালাহুল হামদু ওয়াহুয়া আলাকুল্লি

শাইয়্যিন কাদীর। (১০ বার)

অর্থ: আল্লাহ ব্যতীত কোনো সত্যিকার ইলাহ বা উপাস্য নেই। তিনি এক তাঁর কোনো অংশীদার

নেই, তাঁর জন্যই সকল প্রশংসা ও রাজত্ব আর তিনি সকল বিষয়ে সর্বশক্তিমান। (তিরমিযী, আহমাদ ও

«لا إله إلا الله وحده لا شريك له، له الملك وله الحمد وهو على كلّ شيء قدير» (رواه البخاري و مسلم)

সমাপ্ত

যে সব বিষয় নামাযকে বাতিল করে দেয়:

1. ইচ্ছাকৃত কথা বলা

2. সম্পূর্ণ শরীর ক্বিবলার দিক থেকে সরে যাওয়া।

3. পেশাব-পায়খানার রাস্তা দিয়ে কিছু বের হওয়া।

4. বিনা প্রয়োজনে অধিক নড়াচড়া করা।

5. অট্টহাসি দেয়া।

6. ইচ্ছাকৃত রুকু সিজদা বেশী করা।

7. ইচ্ছা করে ইমামের আগে যাওয়া।


সূত্র: ইসলাম প্রচার ব্যুরো, রাবওয়াহ, রিয়াদ - কমিউনিটি কেন্দ্রিক দাওয়াহ ও শিক্ষা প্রচারমুলক সহযোগী

102
Allah: My belief / আল্লাহ কি নিরাকার???
« on: June 13, 2015, 12:31:16 PM »
আল্লাহ কি নিরাকার???


“যারা মনোনিবেশ সহকারে কথা শুনে, অতঃপর যা উত্তম, তার অনুসরণ করে। তাদেরকেই আল্লাহ সৎপথ প্রদর্শন

করেন এবং তারাই বুদ্ধিমান”। (জুমার ১৮)

“আল্লাহ যার বক্ষ ইসলামের জন্যে উম্মুক্ত করে দিয়েছেন, অতঃপর সে তার পালনকর্তার পক্ষ থেকে আগত

আলোর মাঝে রয়েছে। (সে কি তার সমান, যে এরূপ নয়) যাদের অন্তর আল্লাহ স্মরণের ব্যাপারে কঠোর, তাদের

জন্যে দূর্ভোগ। তারা সুস্পষ্ঠ গোমরাহীতে রয়েছে। আল্লাহ উত্তম বাণী তথা কিতাব নাযিল করেছেন, যা

সামঞ্জস্যপূর্ণ, পূনঃ পূনঃ পঠিত। এতে তাদের লোম কাঁটা দিয়ে উঠে চামড়ার উপর, যারা তাদের পালনকর্তাকে ভয়

করে, এরপর তাদের চামড়া ও অন্তর আল্লাহর স্মরণে বিনম্র হয়। এটাই আল্লাহর পথ নির্দেশ, এর মাধ্যমে

আল্লাহ যাকে ইচ্ছা পথ প্রদর্শন করেন। আর আল্লাহ যাকে গোমরাহ করেন, তার কোন পথপ্রদর্শক নেই”।

• “যে ব্যক্তিকে তার পালনকর্তার আয়াতসমূহ দ্বারা উপদেশ দান করা হয়, অতঃপর সে তা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়,

তার চেয়ে যালেম আর কে? আমি অপরাধীদেরকে শাস্তি দেব”। (সাজদা ৩২)

সৃষ্টির সেরা মানবজাতির মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার শর্ত হল ঈমান গ্রহন করা । আর ঈমান গ্রহনের পূর্বশর্ত

হল আল্লাহ্‌ রব্বুল আলামীনের সঠিক পরিচয় জানা । তাই সৃষ্টির সেরা হিসেবে আমাদের সর্বপ্রথম স্রষ্টা সম্পর্কে

জানতে হবে । এ প্রসঙ্গে আল্লাহ্‌ রব্বুল আলামীন পবিত্র কোরআনে বলছেনঃ

"সুতরাং জান সেই আল্লাহ্‌কে যিনি ছাড়া কোন ইলাহ নেই ।" [সূরা-মুহাম্মদ,আয়াত-১৯]

অথচ দুঃখজনক হলেও সত্য যে অধিকাংশ মানুষ আল্লাহ্‌ সম্পর্কে সঠিক ধারণা রাখে না।

আল্লাহ্‌র সঠিক পরিচয় জানবেন কেন?

• (ক) আল্লাহ্‌ সম্পর্কে ভ্রান্ত আক্বীদা বর্জনের জন্যে

• (খ) আল্লাহর প্রতি সঠিক আক্বীদা রাখার জন্যে।

• (গ) আল্লাহ্‌র সাথে কাউকে শরীক না করার জন্য।

• (ঘ) ভয়াবহ পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য।

আল্লাহ্‌ রব্বুল আলামীনের প্রতি ভ্রান্ত আক্বীদাহ বাদ না দিলে কঠিন শাস্তি পেতে হবে । আল্লাহ্‌ বলেনঃ

"এবং মুনাফিক পুরুষ মুনাফিক নারী ও মুশরিক পুরুষ মুশরিক নারী যারা আল্লাহ্‌ সম্বধে মন্দ ধারণা রাখে তাদেরকে

আল্লাহ্‌ শাস্তি দিবেন।" [সুরা-ফাতহ, আয়াত-৬]

খুবই আশ্চর্য বিষয় অধিকাংশ মুসলিম এর আক্বীদাহ সঠিক না । তারা সঠিকভাবে আল্লাহ্‌কে চেনেন না ।

আল্লাহ সুবাহানাহুয়াতাআলা কোরআনে তাঁর সিফাতে যাত এবং গুনাবলী বর্ণনা করেছেন তাঁর নিজস্ব সত্তার

বর্ণনায় হাত,পা, মুখ, দৃষ্টিশক্তি , শ্রবণ শক্তি, তাঁর সন্তুষ্টি ও ক্রোধ-ইত্যাদি উল্লেখ করছেন ।

রসুলুল্লাহ(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আল্লাহ্‌র স্বত্তা গুনাবলীর বর্ণনা করেছেন । মুসলিমগণ যে

আল্লাহ্‌র ইবাদত করে তাঁর কোন মূর্তি নেই । তাই যেসব মুসলিম সঠিক আক্বীদার খবর রাখে না তারা হিন্দুদের

সাকার বা মূর্তিমান দেবতার বিপরীতে নিরাকারআল্লাহ্‌র ধারনা গ্রহন করেছে।

এজন্যই পাক-ভারত উপমহাদেশে প্রায়ই শুনা যায়,

আল্লাহ্‌ নিরাকার এবং সর্বত্র বিরাজমান-এ বিশ্বাস হিন্দু ধর্মের মূল বিশ্বাসঃ ব্রহ্ম একক, অদ্বিতীয় , নির্গুণ ।

তিনি নিরাকার ও সর্বত্র বা সর্বভূতে বিরাজমান ! [স্রীমদ্ভগবত গীতা যথাযথ; কৃষ্ণ কৃপাশ্রীমূর্তি শীল

অভয়চরনাবিন্দু ভক্তি বেদান্ত স্বামী প্রভুপাদ কতৃক সম্পাদিত,অনুবাদঃ শ্রীমদ ভক্তিচারু । ভক্তিবেদান্ত বুক


• অথচ কোরআন ও সহীহ হাদীস থেকে আল্লাহ্‌ সুবাহানাহুয়াতালার আকার রয়েছে তা প্রমানিত।

কোরআন মাজিদের বিভিন্ন আয়াত ও রাসুল(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর হাদিসে আল্লাহ্‌

সুবাহানাহুয়াতালার চেহারা,হাত,পা,চক্ষু,যাত বা সত্তা, সুরাত বা আকারের উল্লেখ হয়েছে যার অর্থ স্পষ্ট । এর

মাধ্যমে আল্লাহ্‌র নির্দিষ্ট আকার আকৃতি আছে বলে পাওয়া যায়। যারা বলে আল্লাহ্‌ নিরাকার তারা মূলত

কোরআনের এসব আয়াতকে অস্বীকার করার মত স্পর্ধা প্রদর্শন করে থাকে। কারন যিনি নিরাকার তাঁর এসব

কিছু থাকার কথা নয়। আল্লাহতাআলা বলেনঃ

"তারা আল্লাহ্‌র যথার্থ মর্যাদা নিরুপন করতে পারেনি। কিয়ামতের দিন সমগ্র পৃথিবী তাঁর হাতের মুঠোতে

থাকবে।"[সূরা-যুমার,আয়াত-৬৭]

আল্লাহ্‌ রব্বুল আলামিন বলেনঃ

(কিয়ামতের দিন) ভূপৃষ্ঠের সবকিছুই ধ্বংস হয়ে যাবে । (হে রাসুল) আপনার মহিমাময় ও মহানুভব রবের চেহারা

অর্থাৎ সত্ত্বাই একমাত্র বাকি থাকবে। [আর-রাহমান-২৬-২৭]

"হে ইবলিস , তোমাকে কোন জিনিসটি তাকে সেজদা করা থেকে বিরত রাখল যাকে আমি স্বয়ং নিজের হাত দিয়ে

বানিয়েছি,তুমি কি এমনি ওদ্ধত্ত প্রকাশ করলে,না তুমি উচ্চমর্যাদা সম্পূর্ণ কেউ" [সূরা-সদ,আয়াত-৭৫]

আল্লাহ্‌ সুবাহানাহুয়াতালা বলেনঃ

"বরং তাঁর দু হাতই প্রসারিত,যেভাবে ইচ্ছা তিনি দান করেন।" [সূরা-সদ-৬৪]

আল্লাহ্‌ সুবাহানাহুয়াতালা আরও বলেনঃ

"বল -অনুগ্রহ আল্লাহ্‌রই হাতে" [সূরা-আলে ইমরান-৭৩]

অথচ আল্লাহ্‌ সুবাহানাহুয়াতাআলা কোরআনে

"সেদিন কোন কোন মুখ খুব উজ্জল হবে । তারাই হবে তাদের প্রতিপালকের দর্শনকারী" [সুরা-আল-কিয়ামাহ,

আল্লাহ্‌ সুবাহানাহুয়াতাআলা বলেনঃ

"দৃষ্টি শক্তি তাকে প্রত্যক্ষ করতে পারে না বরং তিনিই দৃষ্টি শক্তিকে প্রত্যক্ষ করেন এবং তিনিই দৃষ্টি

শক্তিকে প্রত্যক্ষ করেন এবং তিনি সুক্ষদরশি,সম্যকপরিজ্ঞাত ।" [সূরা-আনআম,আয়াত-১০৩]

আল্লাহ্‌ সুবাহানাহুয়াতাআলা বলেনঃ

"আল্লাহ্‌ ব্যতীত কোন ইলাহ নেই, তাঁর মুখমণ্ডল ব্যতীত সব কিছুই ধ্বংসশীল ।" [সূরা-আল কাসাস, আয়াত-৮৮]

আল্লাহ্‌ সুবাহানাহুয়াতাআলা নবী মূসা(আঃ)কে লক্ষ্য করে বলছেনঃ

"আমি আমার নিকট থেকে তোমার উপর ভালবাসা ঢেলে দিয়েছিলাম যাতে তুমি আমার চোখের সামনে প্রতিপালিত

হও।" [সূরা-ত্বহা, আয়াত-৩৯]

এমনিভাবে রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে স্বান্তনা দিতে গিয়ে বলেনঃ

"আপনি আপনার রবের নির্দেশের অপেক্ষায় ধৈর্যধারন করুন আপনি আমার চোখের সামনেই রয়েছেন।" [সূরা-আত-

"নিশ্চয়ই আল্লাহ্‌ শ্রবণ করেন ও দেখেন ।" [সূরা-মুজাদালাহ, আয়াত-১]

আল্লাহ্‌ সুবাহানাহুয়াতালা বলেনঃ

আল্লাহ্‌র সাদৃশ্য কোন বস্তুই নেই এবং তিনি শুনেন ও দেখেন ।" [সূরা-আশ-শুরা, আয়াত-১১]

"কিয়ামতের দিনে আল্লাহর হাঁটুর নিম্নাংশ উন্মোচিত করা হবে এবং সাজদা করার জন্য সকলকে আহবান করা হবে,

কিন্তু তারা তা করতে সমর্থ হবে না ।" [সুরা-কালাম,আয়াত-৪২]

এ প্রসঙ্গে আল্লাহ্‌র রসুল(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর হাদীসে বর্ণিত হয়েছেঃ

উমর(রাঃ)হতে বর্ণিত, রসুল(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)বলেছেনঃ

"কিয়ামতের দিন আল্লাহপাক সমস্ত আকাশমণ্ডলীকে ভাঁজ করবেন অতঃপর সেগুলোকে ডান হাতে নিয়ে

বলবেন,আমি হচ্ছি শাহানশাহ(মহারাজা)অত্যাচারী আর যালিমরা কোথায় ?অহংকারীরা কোথায় ? [মুসলিম]

রসুল(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)বলেন,

"পাহাড়-পর্বত এবং বৃক্ষরাজি এক আঙ্গুলে থাকবে,তারপর এগুলোকে ঝাঁকুনি দিয়ে তিনি বললেন,আমিই রাজাধিরাজ

অপর এক বর্ণনায় রসুল(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)বলেন-

"আল্লাহ্‌ সমস্ত আকাশমণ্ডলীকে এক আঙ্গুলে রাখবেন,পানি এবং ভু-তলে যা কিছু তা এক আঙ্গুলে রাখবেন।"[বুখারী

আবু সাইয়ীদ আল-খুদরী(রাঃ)বলেন,যে আমি রাসুলুল্লাহ(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)কে বলতে শুনেছিঃ

আমাদের প্রতিপালক (আল্লাহ্‌) কিয়ামতের দিনে তাঁর হাঁটুর নিম্নাংশ প্রকাশ করে দেবেন, প্রত্যেক মুমিন, মুমিনা

তাতে সাজদা করবেন এবং যে ব্যক্তি দুনিয়াতে লোক-দেখান ও সম্মানের জন্য তা করত সে সাজদা করতে গেলে তাঁর

পিঠ সমান হয়ে ফিরে আসবে(বা সিজদা করতে সমর্থ হবেনা)। [বুখারী,মুসলিম,তিরমিযী,আহমদ]

এ সকল কোরআনের আয়াত ও হাদীস আল্লাহ্‌ রব্বুল আলামীন যে নিরাকার নন

তার অকাট্য প্রমান করে বর্ণনা করে । আল্লাহর সিফাতকে তাঁর কোন মাখলুকের সাথে সাদৃশ্য না করে তাঁর উপর

বিশ্বাস স্থাপন করতে হবে । সর্বপরিনিরাকার কথাটি কোরআন ও সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমানিত নয় । বরং হিন্দু

সংস্কৃতি থেকে আমদানীকৃত বটে । কোন কল্পনার আশ্রয় না নিয়ে কিংবা প্রকৃত স্বরূপ জানতে না চেয়ে এর উপর

বিশ্বাস স্থাপন করতে হবে ।

• এ প্রসঙ্গে ইবনে কাসীর(রহঃ) বলেছেনঃ

"আল্লাহ্‌ তা'আলা আরশের উপর সমাসীন,

কোন অবস্থা ও সাদৃশ্য স্থাপন ছাড়াই তার উপর বিশ্বাস রাখতে হবে । কোন জল্পনা কল্পনা করা চলবে না,

যার দ্বারা সাদৃশ্যের চিন্তা মস্তিস্কে এসে যায় ; কারন এটা আল্লাহ্‌র গুনাবলী হতে বহুদুরে। মোটকথা, যা কিছু

আল্লাহতাআলা বলেছেন ওটাকে কোন খেয়াল ও সন্দেহ ছাড়াই মেনে নিতে হবে কোন চুল চেরা করা চলবে না । কেননা

মহান আল্লাহ্‌ রব্বুল আলামীন কোন কিছুর সাথে সাদৃশ্য যুক্ত নন । [তাফসীর ইবনে কাসীর]

এ প্রসঙ্গে ইমাম আবু হানিফা (রাহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ

“ পবিত্র কোরআনে আল্লাহ্‌র যে সমস্ত সিফাত (গুন)বর্ণিত হয়েছে যেমন-আল্লাহ্‌র হাত,পা,চেহারা,নফস ইত্যাদি

আমরা তা দৃঢ় ভাবে বিশ্বাস করি। স্বীকার করি এগুলো হচ্ছে তাঁর সিফাত বা গুণাবলী।

আমরা যেমন কখনও আল্লাহ্‌র সিফাত সম্পর্কে এ প্রশ্ন করিনা বা করবোনা যে,এ সিফাতগুলো

(হাত,পা,চেহারা,চোখ ইত্যাদি) কেমন,কিরুপ বা কিভাবে,কেমন অবস্থায় আছে,তেমনি আল্লাহ্‌র সিফাতের কোন

নিজস্ব ব্যাখ্যা বা বর্ণনা দিতে যাইনা। কেননা তিনি তা বর্ণনা করেন নাই।

যেমন-আমরা একথা কখনো বলিনা যে,

আল্লাহ্‌র হাত হচ্ছে তাঁর কুদরতি হাত,শক্তিপ্রদ পা বা তাঁর নিয়ামত।

এ ধরনের কোন ব্যাখ্যা দেয়ার অর্থ হল আল্লাহ্‌র প্রকৃত সিফাতকে অকার্যকর করা বা বাতিল করে দেয়া বা

অর্থহীন করা । আল্লাহ্‌র হাতকে আমরা হাতই জানবো এর কোন বিশেষণ ব্যবহার করবো না। কুদরতি হাত রূপে

বর্ণনা করবোনা । কোন রকম প্রশ্ন করা ছাড়াই যেরূপ কোরআনে বর্ণিত হয়েছে হুবুহু সে রকমই দ্বিধাহীনে

বিশ্বাস করি”। [আল ফিকহুল আকবার]

• আবু মুতি আল হাকাম ইবনে আব্দুল্লাহ আল বালাখি বলেনঃ

আমি ইমাম আবু হানিফা (রাহিমাহুল্লাহ)কে জিজ্ঞেস করেছিলাম যে কেউ যদি বলে যে, আমি জানিনা আল্লাহ্‌ কোথায় -

আসমানে না পৃথিবীতে, তাহলে তার সম্পর্কে আপনার অভিমত কি? প্রত্যুত্তরে তিনি বলেছেন-সে কাফের,কেননা

"পরম করুণাময় (রাহমান)আরশের উপর সমাসীন। (সুরা-ত্ব হা-৫)


• আবু মুতি বলেছেন, অতঃপর আমি তাঁকে(ইমাম আবু হানিফাকে)জিজ্ঞেস করেছিলাম যে কেউ যদি বলে যে,আল্লাহ্‌

উপরে অধিষ্ঠিত,কিন্তু আমি জানিনা আরশ কোথায় অবস্থিত আকাশে না পৃথিবীতে তাহলে তার সম্পর্কে আপনার

অভিমত কি? প্রত্যুত্তরে তিনি বলেছেন- যদি সে ব্যক্তি "আল্লাহ্‌ আকাশের উপরে "এ কথা অস্বীকার করে তা হলে

সে কাফের। (শারহুল আকিদাহ আত তাহাওইয়াহ লি ইবনে আবিল ইজ আল হানাফি পৃষ্ঠা নং-২২৮)


• ইমাম মালিক(রাহিমাহুল্লাহ)বলেনঃ

“ "আল্লাহ্‌র হাত"বলতে আল্লাহ্‌র হাতই বুঝতে হবে,এর কোন রুপক(মাজাযী)অর্থ করা

যাবেনা,মাজাযী(রুপক)বর্ণনা দেয়া যাবে না। আল্লাহ কেমন,কিসের মত এরকম প্রশ্ন করা বিদআত এমনকি তাঁর হাত

বিশেষণে ভূষিত করে,কুদরতি হাত বলাও যাবেনা কেননা কোরআনে ও সহীহ হাদীসে এভাবে বর্ণনা নাই ”। (আল

আসমা ওয়াস সিফাত পৃষ্ঠা নং-৫২৬)

আল্লাহ্‌র আরশে অধিষ্ঠিত হওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেনঃ

"আল্লাহ্‌ আরশে অধিষ্ঠিত একথা জানি, কিভাবে অধিষ্ঠিত তা জানিনা।

এর উপর দৃঢ় ঈমান পোষণ করা ওয়াজিব

এবং এ সম্পর্কে প্রশ্ন করা বিদআত।"

ইমাম মালিক(রাহিমাহুল্লাহ)আরও বলেনঃ

“আল্লাহ্‌ তাঁর আরশে অধিষ্ঠিত হওয়ার ক্ষেত্রে যতটুকু বর্ণনা দিয়েছেন তার বাইরে কোন প্রশ্ন করা নিষিদ্ধ

।আল্লাহ্‌ আরশে কিভাবে,কেমন করে সমাসীন বা উপবিষ্ট আছেন। এ সম্পর্কে আল্লাহ্‌তাআলা আমাদেরকে অবহিত

করেননি। তাই এ বিষয়টির কাইফিয়াত আমাদের কাছে সম্পূর্ণ অজ্ঞাত।"

-আল্লামা ইবনে হাজর(রাহিমাহুল্লাহ)ফাতহ গ্রন্থে(১৩তম খণ্ড পৃষ্ঠা নং ৪০৬) বলেছেন,উপরক্ত বর্ণনার সনদ

ইমাম শাফীঈ(রাহিমাহুল্লাহ)জোরালো অভিমত ব্যক্ত করেন এ প্রসঙ্গেঃ

"আল্লাহ্‌তালার আরশে অধিষ্ঠিত হওয়া এবং আল্লাহ্‌র হাত,পা ইত্যাদি যা তাঁর সিফাত বলে বিবেচ্য আর তা

কোরআন ও সহীহ সূত্রে সুন্নাহ দ্বারা প্রমানিত হওয়ার পরও যদি কোন ব্যক্তি বিরোধিতা করে,অস্বীকার

করে ,নিষ্ক্রিয় করে তবে সে অবশ্যই কাফের বলে গন্য হবে।

"আমরা আল্লাহ্‌র গুণাবলী স্বীকার করি ও বিশ্বাস করি তবে সৃষ্টির কোন কিছুর সাথে আল্লাহ্‌র গুনাবলীর কোন

আকার সাব্যস্ত করিনা,সাদৃশ্য(তুলনা)করিনা। কেননা আল্লাহ্‌ নিজেই তাঁর সাদৃশ্যের বিষয়টি বাতিল করে দিয়েছেন এ

"(সৃষ্টি জগতের) কোন কিছুই তাঁর সদৃশ নয়।" (সূরা-শুরা,আয়াত-১১)

-সিয়ারে আলামিন নুবালা-১০ম খণ্ড,পৃষ্ঠা নং,-৮০;আর দেখুন আইনুল মাবুদ-১৩তম খণ্ড পৃষ্ঠা নং-৪১;তাবাকতে হানাবিল ১ম খণ্ড পৃষ্ঠা নং-২৮৩

• ইমাম আহমদ বিন হাম্বল(রহঃ)বলেছেনঃ

“আল্লাহ্‌র আসমা ও সিফাতগুলো সম্পর্কে কোরআন ও সহীহ হাদীসগুলোতে যেভাবে বর্ণিত হয়েছে এগুলোকে

ঠিক সেভাবে সে পর্যায়েই রাখা উচিৎ । আমরা এগুলো স্বীকার করি ও বিশ্বাস করি এবং আল্লাহ্‌র সিফাতের কোন

সাদৃশ্য করি না । আর এটাই হচ্ছে বিচক্ষন ও বিজ্ঞ ওলামায়ে কেরামের অনুসৃত নীতি ”। [-ইবনুল জাওযী প্রনীত

মুনাক্বীবে ইমাম আহমদ , পৃষ্ঠা নং-১৫৫-১৫৬]

ইমাম আহমদ (রহঃ)আরও বলেনঃ

“কোরআন ও হাদীসে আল্লাহ্‌র সিফাতগুলোর বর্ণনা যেমনভাবে এসেছে তার বাহ্যিক ও আসল অর্থ স্বীকার

করতে হবে,মেনে নিতে হবে, এর প্রকৃত তথা আসল অর্থকে বাদ দেয়া যাবে না। নিস্ক্রিয় করা যাবে না, খারিজ করা

আল্লাহ্‌র সিফাতগুলো যথা আল্লাহ্‌র আরশের উপর অধিষ্ঠিত হওয়া আল্লাহ্‌র হাত, পা দেখা শোনা ইত্যাদি

সম্পর্কে যেরুপ বর্ণিত আছে তার বাহ্যিক ও আসল অর্থ ছাড়া রূপক , অতিরঞ্জিত অথবা অন্তর্নিহিত কোন

পৃথক অর্থ বা ব্যাখ্যা বা বর্ণনা রসুল(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কর্তৃক দেওয়া হয়েছে এমন প্রমান নেই।

আমরা যদি এ সত্য উপলব্ধি করি যে, সালফে সালেহীন আল্লাহ্‌র গুনাবলী সঠিক অর্থ বুঝেছেন । তাহলে আমাদের

জন্য অত্যাবশ্যকীয় হলো তারা এগুলোর যে অর্থ বুঝেছেন,আমাদেরকে ঠিক সেই অর্থই বুঝতে হবে । [-

মাজমুআতুররাসায়িলিল মুনীরিয়্যাহ পৃষ্ঠা নং(১৭৬-১৮৩]

আল্লাহ্‌র অবয়ব বিশিষ্ট অস্তিত্বকে, সত্ত্বাকে গুনাবলীকে অস্বীকার করে (অর্থাৎ নিরাকার করে) সন্যাসী,সুফী,

পীর সাহেবেরা অলীক সাধনা বলে তাদের ক্বলবে বসিয়ে নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমান করার জন্যই আল্লাহ্‌কে

নিরাকার বানিয়ে ধর্মীয় সমাজে প্রচার করেছেন। এটি ‘তাওহীদ আল আসমা ওয়াস সিফাত’ এর সুস্পষ্ট খেলাফ।

অবয়ব বিশিষ্ট তথা অস্তিত্বময় আল্লাহ্‌কে নিরাকার না করলে তো তাঁকে (আল্লাহ্‌কে) তাদের ক্বলবে বসানো

যাবে না । নিরাকার আল্লাহ্‌কে অলীক সাধনায়,কল্পনায় ক্বলবে বসিয়ে এই মুসলিম রূপধারী পুরোহিতরা নিজেদেরকে

দেবতার মর্যাদায় ভূষিত হয়ে সমাজে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করে চলেছেন । আসলে এ সবই ভণ্ডামির বেসাতি,

আল্লাহ আমাদের তাওহীদ বুঝার ও মানার তাওফিক দান করুন, সকল প্রকার শিরক থেকে রক্ষা করুন, আমিন।

সৌজন্যেঃ জুমার খুতবা

103
আল-কোরআন ও সুন্নাহ হতে সংকলিত শরীয়তসম্মত উপায়ে ঝাড়-ফুঁক



শরীয়ত সম্মত উপায়ে ঝাড়-ফুঁক করার শর্তাবলী

১- ঝাড়-ফুঁক হতে হবে আল্লাহর কোরআন অথবা, তাঁর নামসমূহ  অথবা তাঁর গুনাবলীসমূহ দ্বারা।

২- ঝাড়-ফুঁক হতে হবে আরবী বা অন্য যে কোনো ভাষায়, যার অর্থ জানা যায়।

৩- এ কথায় দৃঢ় বিশ্বাস রাখতে হবে যে, (রোগ চিকিৎসায়) ঝাড়-ফুঁকের কোনোই ক্ষমতা নাই, বরং রোগ শিফা’র

সকল ক্ষমতা একমাত্র আল্লাহ তা‘আলারই।

৪- ঝাড়-ফুঁক যেন হারাম অবস্থায় না হয় অর্থাৎ নাপাক অবস্থায় অথবা, কবর বা পায়খানায় বসে ঝাড়-ফুঁক করা


আল-কোরআনে বর্ণিত ঝাড়-ফুঁক সংক্রান্ত আয়াতসমূহ

১-  সূরা আল-ফাতিহা।

﴿  ٱلرَّحِيمِ ٱلرَّحۡمَٰنِ ٱللَّهِ بِسۡمِ١  ٱلۡعَٰلَمِينَ رَبِّ لِلَّهِ ٱلۡحَمۡدُ٢  ٱلرَّحِيمِ ٱلرَّحۡمَٰنِ٣  ٱلدِّينِ يَوۡمِ مَٰلِكِ٤  نَسۡتَعِينُ وَإِيَّاكَ نَعۡبُدُ إِيَّاكَ٥  ٱهۡدِنَا

(১) “আল্লাহর নামে শুরু করছি, যিনি পরম করুণাময় ও অতি দয়ালু। (২) সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ তা‘আলার জন্য,

যিনি সকল সৃষ্টিজগতের একাম্ত পরিচালনাকারী ও মালিক (৩) যিনি পরম দয়ালু, অতিশয় করুণাময়। (৪) যিনি

বিচারদিনের মালিক। (৫) আমরা একমাত্র আপনারই ‘ইবাদত করি আর আপনারই নিকট সাহায্য চাই। (৬)

আমাদেরকে সরলপথ প্রদান করুন। তাদের পথে, যাদেরকে আপনি নে‘মত দান করেছেন। (৭) তাদের পথে নয়, যারা

ٱلصِّرَٰطَ ٱلۡمُسۡتَقِيمَ ٦ صِرَٰطَ ٱلَّذِينَ أَنۡعَمۡتَ عَلَيۡهِمۡ غَيۡرِ ٱلۡمَغۡضُوبِ عَلَيۡهِمۡ وَلَا ٱلضَّآلِّينَ ٧ ﴾ [الفاتحة: ١،  ٧]

আপনার পক্ষ হতে গযবপ্রাপ্ত (অর্থাৎ, ইহুদীগণ)। আর তাদের পথেও নয়, যারা পথভ্রষ্ট (গোমরাহ) হয়েছে”

(অর্থাৎ, খৃষ্টানগণ)। আমীন।   


২- সূরা আল-বাক্বারার ১, ২, ৩, ৪ ও ৫ আয়াত।

﴿  الٓمٓ١  لِّلۡمُتَّقِينَ هُدٗى فِيهِۛ رَيۡبَۛ لَا ٱلۡكِتَٰبُ ذَٰلِكَ٢  يُنفِقُونَ رَزَقۡنَٰهُمۡ وَمِمَّا ٱلصَّلَوٰةَ وَيُقِيمُونَ بِٱلۡغَيۡبِ يُؤۡمِنُونَ ٱلَّذِينَ٣  يُؤۡمِنُونَ وَٱلَّذِينَ

بِمَآ أُنزِلَ إِلَيۡكَ وَمَآ أُنزِلَ مِن قَبۡلِكَ وَبِٱلۡأٓخِرَةِ هُمۡ يُوقِنُونَ ٤ أُوْلَٰٓئِكَ عَلَىٰ هُدٗى مِّن رَّبِّهِمۡۖ وَأُوْلَٰٓئِكَ هُمُ ٱلۡمُفۡلِحُونَ ٥ ﴾ [البقرة: ١،  ٥]

অর্থাৎ, (১) “আলিফ লা-ম মী-ম (২) এটা সেই কিতাব যার মধ্যে কোনো প্রকার সন্দেহের অবকাশ নেই, যারা

আল্লাহভীরু তাদের জন্য পথপ্রদর্শনকারী। (৩) যারা অদেখা বিষয়ের উপর ঈমান আনে এবং সালাত কায়েম করে

আর আমি তাদেরকে যে রুযী দান করেছি তা থেকে খরচ করে। (৪) আর তারা ঈমান এনেছে, যে সব কিছু আপনার প্রতি

নাযিল হয়েছে এবং যা আপনার পূর্বে নাযিল হয়েছে, আর আখেরাতের প্রতি তারা দৃঢ় বিশ্বাস করে। (৫) তারাই তাদের

মালিক ও সার্বিক তত্বাবধানকারী আল্লাহর পক্ষ হতে প্রাপ্ত হেদায়াতের উপর প্রতিষ্ঠিত রয়েছে আর এরাই

সফলকাম।” (সূরা আল-বাক্বারার ১, ২, ৩, ৪ ও ৫ আয়াত)।   
             

৩- সূরা আল-বাক্বারার ১৬৪ নং আয়াত।

﴿  مِن ٱلسَّمَآءِ مِنَ ٱللَّهُ أَنزَلَ وَمَآ ٱلنَّاسَ يَنفَعُ بِمَا ٱلۡبَحۡرِ فِي تَجۡرِي ٱلَّتِي وَٱلۡفُلۡكِ وَٱلنَّهَارِ ٱلَّيۡلِ وَٱخۡتِلَٰفِ وَٱلۡأَرۡضِ ٱلسَّمَٰوَٰتِ خَلۡقِ فِي إِنَّ

  لِّقَوۡمٖ لَأٓيَٰتٖ وَٱلۡأَرۡضِ ٱلسَّمَآءِ بَيۡنَ ٱلۡمُسَخَّرِ وَٱلسَّحَابِ ٱلرِّيَٰحِ وَتَصۡرِيفِ دَآبَّةٖ كُلِّ مِن فِيهَا وَبَثَّ مَوۡتِهَا بَعۡدَ ٱلۡأَرۡضَ بِهِ فَأَحۡيَامَّآءٖ

“নিশ্চয়ই আসমান ও যমীনের সৃষ্টিতে, রাত ও দিনের পরিবর্তনে, সমুদ্রে জাহাজসমুহের চলাচলে মানুষের জন্য

কল্যাণ রয়েছে। আর আল্লাহ তা‘আলা আকাশ থেকে যে পানি বর্ষণ করেছেন, তা দ্বারা মৃত যমীনকে সজীব করে

তুলেছেন এবং তাতে ছড়িয়ে দিয়েছেন সবরকম জীব-জন্তু। আর আবহাওয়া পরিবর্তনে ও মেঘমালায় যা তাঁরই হুকুমের

অধীনে আসমান ও যমীনের মাঝে বিচরণ করে – নিশ্চয়ই সে সমস্ত বিষয়ের মাঝে নিদর্শন রয়েছে বুদ্ধিমান

সম্প্রদায়ের জন্য।” (আল-বাকারা, আয়াত নং-১৬৪)।


৪- আয়াতুল-কুরসী (সূরা আল-বাক্বারার ২৫৫ নং আয়াত)।

﴿  يَعۡلَمُ بِإِذۡنِهِۦۚ إِلَّا عِندَهُۥٓ يَشۡفَعُ ٱلَّذِي ذَا مَن ٱلۡأَرۡضِۗ فِي وَمَا ٱلسَّمَٰوَٰتِ فِي مَا لَّهُۥ نَوۡمٞۚ وَلَا سِنَةٞ تَأۡخُذُهُۥ لَا ٱلۡقَيُّومُۚ ٱلۡحَيُّ هُوَ إِلَّا إِلَٰهَ لَآ ٱللَّهُ

  وَهُوَ حِفۡظُهُمَاۚ يَ‍ُٔودُهُۥ وَلَا وَٱلۡأَرۡضَۖ ٱلسَّمَٰوَٰتِ كُرۡسِيُّهُ وَسِعَ شَآءَۚ بِمَا إِلَّا عِلۡمِهِۦٓ مِّنۡ بِشَيۡءٖ يُحِيطُونَ وَلَا خَلۡفَهُمۡۖ وَمَا أَيۡدِيهِمۡ بَيۡنَمَا

“আল্লাহ, তিনি ব্যতীত অন্য কোনো সত্য মা‘বুদ নেই, তিনি চিরজীবিত এবং চিরন্তন। তাকে তন্দ্রা (ঝিমানো)

ও ঘূম কখনো স্পর্শ করতে পারে না। আসমান ও যমীনে যা কিছু রয়েছে সবই তারই, এমন কে আছে যে, তাঁর অনুমতি

ব্যতীত তাঁর নিকট সূপারিশ করতে পারে? (মানুষের) চোখের সামনে কিংবা পিছনে যা কিছু রয়েছে, সে সবই তিনি

জানেন। তিনি যতটুকু ইচ্ছা করেন ততটুকু ব্যতীত তাঁর অনন্ত জ্ঞানের কোনো কিছুকেই কেউ আয়ত্ব করতে

পারেনা। তার ‘কুরসী’ সমস্ত আসমান ও যমীনকে পরিবেষ্টিত করে আছে। আর সেগুলোকে ধারণ করা তাঁর পক্ষে

কঠিন কাজ নয়। তিনি সমুন্নত ও মহিয়ান।” (সূরা আল-বাক্বারার ২৫৫ নং আয়াত)।   
 

৫- সূরা আল-বাক্বারার ২৮৫ ও ২৮৬ নং আয়াত।

﴿  وَقَالُواْ رُّسُلِهِۦۚ مِّن أَحَدٖ بَيۡنَ نُفَرِّقُ لَا وَرُسُلِهِۦ وَكُتُبِهِۦ وَمَلَٰٓئِكَتِهِۦ بِٱللَّهِ ءَامَنَ كُلٌّ وَٱلۡمُؤۡمِنُونَۚ رَّبِّهِۦ مِن إِلَيۡهِ أُنزِلَ بِمَآ ٱلرَّسُولُ ءَامَنَ

  ٱلۡمَصِيرُ وَإِلَيۡكَ رَبَّنَا غُفۡرَانَكَ وَأَطَعۡنَاۖسَمِعۡنَا٢٨٥  تُؤَاخِذۡنَآ لَا رَبَّنَا ٱكۡتَسَبَتۡۗ مَا وَعَلَيۡهَا كَسَبَتۡ مَا لَهَا وُسۡعَهَاۚ إِلَّا نَفۡسًا ٱللَّهُ يُكَلِّفُ لَا

  عَنَّا وَٱعۡفُ بِهِۦۖ لَنَا طَاقَةَ لَا مَا تُحَمِّلۡنَا وَلَا رَبَّنَا قَبۡلِنَاۚ مِن ٱلَّذِينَ عَلَى حَمَلۡتَهُۥ كَمَا إِصۡرٗا عَلَيۡنَآ تَحۡمِلۡ وَلَا رَبَّنَا أَخۡطَأۡنَاۚ أَوۡ نَّسِينَآإِن

“রাসুল ঈমান রাখেন ঐ সমস্ত বিষয়ে, যা তার মালিক ও নিয়ন্ত্রক (আল্লাহর) পক্ষ হতে অবতীর্ণ হয়েছে এবং

মুমিনরাও। সবাই বিশ্বাস রাখে আল্লাহর প্রতি, তাঁর ফেরেস্তাদের প্রতি, তার কিতাবসমূহের প্রতি এবং তার

নবীগণের প্রতি। তারা বলে আমরা তাঁর নবীগণের মধ্যে (ঈমানের ব্যাপারে) কোনো প্রকার পার্থক্য

করি না। তারা বলে: আমরা শ্রবণ করলাম ও আনুগত্য স্বীকার করে নিলাম। হে আমাদের মালিক ও নিয়ন্ত্রক,

আমরা আপনারই নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করছি, আপনার দিকেই আমাদেরকে ফিরে যেতে হবে।

কোনো ব্যক্তিকেই আল্লাহ তার সামর্থের বাইরে কোনো কাজের ভার দেন না, সে তাই পাবে যা সে উপার্জন

করে, আর যা সে অর্জন করে তা তারই উপর বর্তায়।

হে আমাদের মালিক ও নিয়ন্ত্রক! যদি আমরা ভুলে যাই কিংবা ভুল করি, তাহলে এ জন্য আমাদেরকে ধর-পাকড়

করবেন না। হে আমাদের মালিক ও নিয়ন্ত্রক! আমাদের পূর্ববর্তীদের উপর যেরূপ কঠিন বোঝা অর্পণ করেছেন,

আমাদের উপর তদ্রূপ কোনো বোঝা অর্পণ করবেন না।

হে আমাদের মালিক ও নিয়ন্ত্রক! আমাদের শক্তি-সামর্থের বাইরে কোনো বোঝা বহনে আমাদেরকে বাধ্য

করবেন না। আপনি আমাদেরকে ক্ষমা করুন, আমাদের প্রতি দয়া করুন, আপনিই আমাদের অভিভাবক, অতএব

কাফিরগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে আমাদেরকে সাহায্য করুন।” (সূরা আল-বাক্বারার ২৮৫ ও ২৮৬ নং আয়াত)।


৬- সূরা আল-‘ইমরানের ১৯০ ও ১৯১ নং আয়াত।

﴿  ٱلۡأَلۡبَٰبِ لِّأُوْلِي لَأٓيَٰتٖ وَٱلنَّهَارِ ٱلَّيۡلِ وَٱخۡتِلَٰفِ وَٱلۡأَرۡضِ ٱلسَّمَٰوَٰتِ خَلۡقِ فِي إِنَّ١٩٠  جُنُوبِهِمۡ وَعَلَىٰ وَقُعُودٗا قِيَٰمٗا ٱللَّهَ يَذۡكُرُونَ ٱلَّذِينَ

وَيَتَفَكَّرُونَ فِي خَلۡقِ ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلۡأَرۡضِ رَبَّنَا مَا خَلَقۡتَ هَٰذَا بَٰطِلٗا سُبۡحَٰنَكَ فَقِنَا عَذَابَ ٱلنَّارِ ١٩١ ﴾ [ال عمران: ١٩٠،  ١٩١]

“নিশ্চয়ই আসমান ও যমীন সৃষ্টিতে ও দিবা-রাত্রির পরিবর্তনে জ্ঞানবানদের জন্য নিদর্শন রয়েছে। যারা দাঁড়িয়ে

বসে ও শায়িত অবস্থায় আল্লাহকে স্মরণ করে এবং আসমান ও জমিন সৃষ্টির বিষয়ে চিন্তা-গবেষণা করে আর বলে,

হে আমাদের রাব্ব্! আপনি এসব বৃথা (অযথা) সৃষ্টি করেননি। অতি পবিত্র আপনি, অতএব আমাদেরকে জাহান্নামের

শাস্তি থেকে বাঁচান।” (আল-‘ইমরানের ১৯০ ও ১৯১ নং আয়াত)।         


৭- সূরা আল-আ‘রাফের ৫৪ নং আয়াত।

﴿  وَٱلۡقَمَرَ وَٱلشَّمۡسَ حَثِيثٗا يَطۡلُبُهُۥ ٱلنَّهَارَ ٱلَّيۡلَ يُغۡشِي ٱلۡعَرۡشِۖ عَلَى ٱسۡتَوَىٰ ثُمَّ أَيَّامٖ سِتَّةِ فِي وَٱلۡأَرۡضَ ٱلسَّمَٰوَٰتِ خَلَقَ ٱلَّذِي ٱللَّهُ رَبَّكُمُ إِنَّ

“নিশ্চয়ই তোমাদের রব হচ্ছেন সেই আল্লাহ যিনি আসমান ও যমীনকে ছয় দিনে সৃষ্টি করেছেন, অতঃপর তিনি

আরশের উপর উঠলেন, তিনি দিনকে রাত দ্বারা ঢেকে দেন এমনভাবে যে, ওরা একে অন্যের পিছে পিছে দ্রুতগতিতে খুজে

বেড়ায়। আর চন্দ্র, সূর্য ও নক্ষত্ররাজিসহ সবই তার হুকুমের অনুগত। জেনে রাখো, সৃষ্টি করা ও আদেশ করা

একমাত্র তাঁরই কাজ। তিনিই বরকতময় আল্লাহ, যিনি সারা জাহানের মালিক, নিয়ন্ত্রক ও নির্বাহক।” (আল-

আ‘রাফের ৫৪ নং আয়াত) 


৮- সূরা আল-আ‘রাফের ১১৭, ১১৮, ১১৯ নং আয়াত।

﴿  يَأۡفِكُونَ مَا تَلۡقَفُ هِيَ فَإِذَا عَصَاكَۖ أَلۡقِ أَنۡ مُوسَىٰٓ إِلَىٰ ۞وَأَوۡحَيۡنَآ١١٧  يَعۡمَلُونَ كَانُواْ مَا وَبَطَلَ ٱلۡحَقُّ فَوَقَعَ١١٨  هُنَالِكَ فَغُلِبُواْ

“অতঃপর আমরা অহীযোগে বললাম, এবার তোমার লাঠিখানা নিক্ষেপ করো, এটা সঙ্গে সঙ্গে জাদুকররা জাদুবলে

যা বানিয়েছিল সেগুলোকে গিলতে লাগল।সুতরাং এভাবে প্রকাশ হয়ে গেল সত্য বিষয় আর তাদের বানোয়াট কর্ম

وَٱغۡفِرۡ لَنَا وَٱرۡحَمۡنَآۚ أَنتَ مَوۡلَىٰنَا فَٱنصُرۡنَا عَلَى ٱلۡقَوۡمِ ٱلۡكَٰفِرِينَ ٢٨٦ ﴾ [البقرة: ٢٨٥،  ٢٨٦]

وَٱلنُّجُومَ مُسَخَّرَٰتِۢ بِأَمۡرِهِۦٓۗ أَلَا لَهُ ٱلۡخَلۡقُ وَٱلۡأَمۡرُۗ تَبَارَكَ ٱللَّهُ رَبُّ ٱلۡعَٰلَمِينَ ٥٤ ﴾ [الاعراف: ٥٤]

وَٱنقَلَبُواْ صَٰغِرِينَ ١١٩ ﴾ [الاعراف: ١١٧،  ١١٩]

মিথ্যায় প্রতিপন্ন হলো। ফলে, তারা সেখানেই পরাজিত হয়ে গেল এবং অতীব অপদস্থ হল।” (সূরা আল-আ‘রাফের

১১৭, ১১৮, ১১৯ নং আয়াত)।     
   

৯- সূরা ইউনুছের ৭৯, ৮০, ৮১ নং আয়াত।

﴿  عَلِيمٖ سَٰحِرٍ بِكُلِّ ٱئۡتُونِي فِرۡعَوۡنُ وَقَالَ٧٩  مُّلۡقُونَ أَنتُم مَآ أَلۡقُواْ مُّوسَىٰٓ لَهُم قَالَ ٱلسَّحَرَةُ جَآءَ فَلَمَّا٨٠  مَا مُوسَىٰ قَالَ أَلۡقَوۡاْ فَلَمَّآ

“আর ফিরআউন বললো: আমার নিকট সমস্ত সুদক্ষ জাদুকরদেরকে নিয়ে এসো। অতঃপর যখন জাদুকররা এলো,

তখন মূসা তাদেরকে বললেন: নিক্ষেপ করো, যা কিছু তোমরা নিক্ষেপ করতে চাও। অতঃপর তারা যখন নিক্ষেপ

করলো, তখন মূসা বললো: যতো জাদুই তোমরা এনেছ, আল্লাহ নিশ্চয়ই এসব এটাকে পন্ড (ভন্ডুল) করে

দিবেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ এমন ফাসাদকারীদের ‌‘আমলকে সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হতে দেন না।” (সূরা ইউনুছের ৭৯, ৮০,

جِئۡتُم بِهِ ٱلسِّحۡرُۖ إِنَّ ٱللَّهَ سَيُبۡطِلُهُۥٓ إِنَّ ٱللَّهَ لَا يُصۡلِحُ عَمَلَ ٱلۡمُفۡسِدِينَ ٨١ ﴾ [يونس: ٧٩،  ٨١]


১০- সূরা আল-ইসরা (বনী-ইসরাইলের) ৮২ নং আয়াত।

“আর আমরা অবতীর্ণ করি কুরআনে এমন সব বিষয়, যা রোগের শিফা বা সুচিকিৎসা এবং মুমিনদের জন্য রহমত,

আর তা জালিমদের ক্ষতিই বৃদ্ধি করে।” (সূরা আল-ইসরা (বনী-ইসরাইলের) ৮২ নং আয়াত)।


১১- সূরা ত্বাহা এর ৬৫, ৬৬, ৬৭, ৬৮ ও ৬৯ নং আয়াত।

﴿  أَلۡقَىٰ مَنۡ أَوَّلَ نَّكُونَ أَن وَإِمَّآ تُلۡقِيَ أَن إِمَّآ يَٰمُوسَىٰٓ قَالُواْ٦٥  تَسۡعَىٰ أَنَّهَا سِحۡرِهِمۡ مِن إِلَيۡهِ يُخَيَّلُ وَعِصِيُّهُمۡ حِبَالُهُمۡ فَإِذَا أَلۡقُواْۖ بَلۡ قَالَ

٦٦  مُّوسَىٰ خِيفَةٗ نَفۡسِهِۦ فِي فَأَوۡجَسَ٦٧  ٱلۡأَعۡلَىٰ أَنتَ إِنَّكَ تَخَفۡ لَا قُلۡنَا٦٨  كَيۡدُ صَنَعُواْ إِنَّمَا صَنَعُوٓاْۖ مَا تَلۡقَفۡ يَمِينِكَ فِي مَا وَأَلۡقِ

“তারা বললো: হে মূসা, হয় তুমি নিক্ষেপ করো, অথবা আমরাই প্রথমে নিক্ষেপ করি। মূসা বললো: বরং তোমরাই

নিক্ষেপ করো, তাদের জাদুর প্রভাবে হঠাৎ মূসার মনে হলো যে, তাদের দড়ি ও লাঠিগুলো ছুটাছুটি করছে। অতঃপর

মূসা তার অন্তরে কিছু ভীতি অনুভব করলো। আমি বললাম: ভয় করো না, তুমিই প্রবল (বিজয়ী হবে)। তোমার

ডান হাতে যা আছে, তা নিক্ষেপ করো, এটা তারা যা বানিয়েছে, তা গিলে ফেলবে, তারা যা তৈরী করেছে তা তো শুধু

জাদুকরের কৌশল, জাদুকর যেখানেই আসুক সফল হবে না।” (সূরা ত্বাহা এর ৬৫, ৬৬, ৬৭, ৬৮ ও ৬৯ নং

﴿ وَنُنَزِّلُ مِنَ ٱلۡقُرۡءَانِ مَا هُوَ شِفَآءٞ وَرَحۡمَةٞ لِّلۡمُؤۡمِنِينَ وَلَا يَزِيدُ ٱلظَّٰلِمِينَ إِلَّا خَسَارٗا ٨٢ ﴾ [الاسراء: ٨٢]

سَٰحِرٖۖ وَلَا يُفۡلِحُ ٱلسَّاحِرُ حَيۡثُ أَتَىٰ ٦٩ ﴾ [طه: ٦٥،  ٦٩]


১২- সূরা আল-মুমিনুনের  ১১৫,  ১১৬,  ১১৭ ও ১১৮ নং আয়াত।

﴿  تُرۡجَعُونَ لَا إِلَيۡنَا وَأَنَّكُمۡ عَبَثٗا خَلَقۡنَٰكُمۡ أَنَّمَا أَفَحَسِبۡتُمۡ١١٥  ٱلۡكَرِيمِ ٱلۡعَرۡشِ رَبُّ هُوَ إِلَّا إِلَٰهَ لَآ ٱلۡحَقُّۖ ٱلۡمَلِكُ ٱللَّهُ فَتَعَٰلَى١١٦  يَدۡعُ وَمَن

  ٱلۡكَٰفِرُونَ يُفۡلِحُ لَا إِنَّهُۥ رَبِّهِۦٓۚ عِندَ حِسَابُهُۥ فَإِنَّمَا بِهِۦ لَهُۥ بُرۡهَٰنَ لَا ءَاخَرَ إِلَٰهًا ٱللَّهِمَعَ١١٧  خَيۡرُ وَأَنتَ وَٱرۡحَمۡ ٱغۡفِرۡ رَّبِّ وَقُل

“তোমরা কি মনে করেছিলে যে, আমরা তোমাদেরকে অনর্থক সৃষ্টি করেছি এবং তোমরা আমার নিকট ফিরে আসবে

না? মহিমান্বিত আল্লাহ যিনি সত্যিকারের বাদশাহ, তিনি ব্যতীত কোনো সত্য মা‘বুদ নেই, সম্মানিত ‘আরশের

তিনি রব্ব। যে ব্যক্তি আল্লাহর সহিত অন্য মা‘বুদকে ডাকে, ঐ বিষয়ে তার নিকট কোনো প্রমাণ নেই, তার

হিসাব তার রাব্বের নিকট আছে, নিশ্চয়ই কাফেররা সফলকাম হবে না। বলো, হে আমার রব্ব, ক্ষমা করুন ও দয়া

করুন, দয়ালুদের মধ্যে আপনিই তো শ্রেষ্ঠ দয়ালু।” (সূরা আল-মুমিনুনের  ১১৫,  ১১৬,  ১১৭ ও ১১৮ নং

আয়াত)।     
             

ٱلرَّٰحِمِينَ ١١٨ ﴾ [المؤمنون: ١١٥،  ١١٨]

১৩- সূরা আস-সাফ্‌ফাতের ১, ২, ৩, ৪, ৫, ৬, ৭, ৮, ৯ ও ১০ নং আয়াত।

﴿  صَفّٗا وَٱلصَّٰٓفَّٰتِ١  زَجۡرٗا فَٱلزَّٰجِرَٰتِ٢  ذِكۡرًا فَٱلتَّٰلِيَٰتِ٣  لَوَٰحِدٞ إِلَٰهَكُمۡ إِنَّ٤  ٱلۡمَشَٰرِقِ وَرَبُّ بَيۡنَهُمَا وَمَا وَٱلۡأَرۡضِ ٱلسَّمَٰوَٰتِ رَّبُّ٥

  ٱلۡكَوَاكِبِ بِزِينَةٍ ٱلدُّنۡيَا ٱلسَّمَآءَ زَيَّنَّاإِنَّا٦  مَّارِدٖ شَيۡطَٰنٖ كُلِّ مِّن وَحِفۡظٗا٧  جَانِبٖ كُلِّ مِن وَيُقۡذَفُونَ ٱلۡأَعۡلَىٰ ٱلۡمَلَإِ إِلَى يَسَّمَّعُونَ لَّا٨

“সারিবদ্ধভাবে দন্ডায়মান ফিরিশতাদের শপথ, এবং যারা কঠোর পরিচালক, আর যারা যিক্‌র আবৃতিতে রত (তাদের

শপথ)। নিশ্চয়ই তোমাদের মা‘বুদ এক, যিনি আসমান, যমীন এবং এদুয়ের মধ্যবর্তী যা কিছু আছে, এসব কিছুর

রব্ব। এ ছাড়াও উদয়স্থানসমুহের ও রব্ব তিনি। আমি নিকটবর্তী আসমানকে নক্ষত্ররাজির শোভা দ্বারা

সূশোভিত করেছি, আর সংরক্ষণ করেছি প্রত্যেক বিদ্রোহী শয়তান হতে। ফলে, তারা উর্ধ্ব জগতের কিছু শুনতে

পায়না, এবং তাদের প্রতি নিক্ষিপ্ত হয় সকল দিক হতে বিতাড়নের জন্য এবং তাদের জন্য রয়েছে অবিরাম

শাস্তি। তবে কেউ হঠাৎ (ছোঁ মেরে) কিছু শুনে ফেললে জলন্ত উল্কাপিন্ড তাদের পিছন দিকে হতে ধাওয়া করে।” (সূরা

আস-সাফ্‌ফাতের ১, ২, ৩, ৪, ৫, ৬, ৭, ৮, ৯ ও ১০ নং আয়াত)।   


১৪- সূরা আল- হাশরের ২২ ও ২৩ নং আয়াত।

﴿  ٱلرَّحِيمُ ٱلرَّحۡمَٰنُ هُوَ وَٱلشَّهَٰدَةِۖ ٱلۡغَيۡبِ عَٰلِمُ هُوَۖ إِلَّا إِلَٰهَ لَآ ٱلَّذِي ٱللَّهُ هُوَ٢٢  ٱلۡمُؤۡمِنُ ٱلسَّلَٰمُ ٱلۡقُدُّوسُ ٱلۡمَلِكُ هُوَ إِلَّا إِلَٰهَ لَآ ٱلَّذِي ٱللَّهُ هُوَ

“তিনিই আল্লাহ, তিনি ব্যতীত সত্য কোনো মা‘বুদ নেই। গোপন ও প্রকাশ্য সব কিছুই তিনি জানেন। তিনিই পরম

দয়ালু ও অতি দয়াময়। তিনিই আল্লাহ, তিনি ব্যতিত সত্য কোনো মা‘বুদ নেই। তিনি বাদশা, পবিত্র, শান্তি-

নিরাপত্তাদাতা, অভিভাবক, পরাক্রমশালী, প্রবল, মহাশ্রেষ্ঠ। মানুষ তাঁর সহিত যা কিছুর শির্ক করছে, সে সব হতে

তিনি অতি পবিত্র ও মহান।” (সূরা আল- হাশরের ২২ ও ২৩ নং আয়াত)।


১৫- সূরা আল-ক্বালমের ৫১ নং আয়াত।

﴿  لَمَجۡنُونٞ إِنَّهُۥ وَيَقُولُونَ ٱلذِّكۡرَ سَمِعُواْ لَمَّا بِأَبۡصَٰرِهِمۡ لَيُزۡلِقُونَكَ كَفَرُواْ ٱلَّذِينَ يَكَادُ وَإِن٥١  لِّلۡعَٰلَمِينَ ذِكۡرٞ إِلَّا هُوَ وَمَا٥٢  [القلم: ﴾

“আর কাফেররা এমনভাবে আপনার দিকে তাকায় যে, এক্ষুনি তাদের দৃষ্টি দিয়ে আপনাকে ঘায়েল করে দিবে, তারা

একথাও বলে যে, নিশ্চয়ই সে (রাসূল) একজন পাগল।” (সূরা আল-ক্বালমের ৫১ নং আয়াত)।


১৬- সূরা জ্বীনের ৩ নং আয়াত।

“(আমার প্রতি) আরও অহি করা হয়েছে যে, আমাদের মালিক ও পরিচালনাকারীর (আল্লাহর) মান-মর্যাদা সম্ভ্রম

অতি উর্ধ্বে। তিনি কাহাকেও স্ত্রী বা সন্তান হিসেবে গ্রহন করেননি।”


১৭- সূরা আল-কাফেরুন।

﴿  ٱلۡكَٰفِرُونَ يَٰٓأَيُّهَا قُلۡ١  تَعۡبُدُونَ مَا أَعۡبُدُ لَآ٢  أَعۡبُدُ مَآ عَٰبِدُونَ أَنتُمۡ وَلَآ٣  عَبَدتُّمۡ مَّا عَابِدٞ أَنَا۠ وَلَآ٤  أَعۡبُدُ مَآ عَٰبِدُونَ أَنتُمۡ وَلَآ٥  لَكُمۡ

“বলো, হে কাফিরগণ! আমি তার ইবাদত করি না যার ইবাদত তোমরা করো এবং তোমরাও তাঁর ইবাদতকারী নও,

যাঁর ইবাদত আমি করি, এবং আমি ইবাদতকারী নই তাঁর, যার ইবাদত তোমরা করে আসছো, আর তোমরা তাঁর

دُحُورٗاۖ وَلَهُمۡ عَذَابٞ وَاصِبٌ ٩ إِلَّا مَنۡ خَطِفَ ٱلۡخَطۡفَةَ فَأَتۡبَعَهُۥ شِهَابٞ ثَاقِبٞ ١٠ ﴾ [الصافات: ١،  ١٠]

ٱلۡمُهَيۡمِنُ ٱلۡعَزِيزُ ٱلۡجَبَّارُ ٱلۡمُتَكَبِّرُۚ سُبۡحَٰنَ ٱللَّهِ عَمَّا يُشۡرِكُونَ ٢٣ ﴾ [الحشر: ٢٢،  ٢٣]

﴿ وَأَنَّهُۥ تَعَٰلَىٰ جَدُّ رَبِّنَا مَا ٱتَّخَذَ صَٰحِبَةٗ وَلَا وَلَدٗا ٣ ﴾ [الجن: ٣]

এবাদতকারী নও, যাঁর ইবাদত আমি করি। তোমাদের দ্বীন (কুফর) তোমাদের জন্য আর আমার দ্বীন (ইসলাম)


১৮- সূরা আল-ইখলাছ।

“বলুন, তিনি আল্লাহ, এক-অদ্বিতীয়, আল্লাহ হলেন – ‘সামাদ’ (তিনি কারো মুখাপেক্ষী নন, সকলেই তার

মুখাপেক্ষী), তিনি কাউকেও জন্ম দেন নি এবং তাঁকেও জন্ম দেয়া হয় নি, আর তাঁর সমতুল্য কেউই নেই।” (সূরা আল-

﴿ قُلۡ هُوَ ٱللَّهُ أَحَدٌ ١ ٱللَّهُ ٱلصَّمَدُ ٢ لَمۡ يَلِدۡ وَلَمۡ يُولَدۡ ٣ وَلَمۡ يَكُن لَّهُۥ كُفُوًا أَحَدُۢ ٤ ﴾ [الاخلاص: ١،  ٤]


১৯- সূরা আল-ফালাক্ব।

﴿  ٱلۡفَلَقِ بِرَبِّ أَعُوذُ قُلۡ١  خَلَقَ مَا شَرِّ مِن٢  وَقَبَ إِذَا غَاسِقٍ شَرِّ وَمِن٣  ٱلۡعُقَدِ فِي ٱلنَّفَّٰثَٰتِ شَرِّ وَمِن٤  حَسَدَ إِذَا حَاسِدٍ شَرِّ وَمِن

“বলুন, আমি আশ্রয় চাই আল্লাহর ভোরের রবের (মালিক ও অধিপতির), তিনি যা সৃষ্টি করেছেন তার অনিষ্ট হতে,

আর অনিষ্ট হতে রাতের অন্ধকারের, যখন তা গভীর হয়। আর অনিষ্ট হতে সে সব নারীদের যারা গিরায় ফুঁক

দেয়। আর অনিষ্ট হতে হিংসুকের, যখন সে হিংসা করে।” (সূরা আল-ফালাক্ব)।

﴿  ٱلنَّاسِ بِرَبِّ أَعُوذُ قُلۡ١  ٱلنَّاسِ مَلِكِ٢  ٱلنَّاسِ إِلَٰهِ٣  ٱلۡخَنَّاسِ ٱلۡوَسۡوَاسِ شَرِّ مِن٤  لنَّاسِ صُدُورِ فِي يُوَسۡوِسُ ٱلَّذِي٥  ٱلۡجِنَّةِ مِنَ

“বলুন, আমি আশ্রয় প্রার্থনা করছি মানুষের রবের, মানুষের অধিপতির, মানুষের মা‘বুদের কাছে, আত্মগোপনকারী

কুমন্ত্রণাদাতার নিকট অনিষ্ট হতে, যে কুমন্ত্রণা দেয় মানুষের অন্তরে, জিন ও মানুষের মধ্য থেকে। (সূরা আন-


সাহীহ হাদীসে বর্ণিত ঝাড়-ফুঁক সংক্রান্ত দো‘আসমূহ

1- সাহীহ মুসলিমে রয়েছে:

‘আল্লাহর পরিপূর্ণ কালেমাসমূহের ওসিলায় তাঁর নিকট আমি তিনি যা সৃষ্টি করেছেন সেগুলোর অনিষ্ট থেকে আশ্রয়

চাই।’ (বিকালে ৩ বার)। (সাহীহ মুসলিম: ৪/২০৮১)।


2-  সাহীহ আল-বুখারীতে রয়েছে:

‘আল্লাহর পরিপূর্ণ কালেমাসমূহের ওসিলায় সকল শয়তান ও বিষাক্ত জীব-জন্তু থেকে ও যাবতীয় ক্ষতিকর চোখ

(বদ নযর) হতে আশ্রয় প্রার্থনা করছি।’ (সাহীহ আল বুখারী ৪/১৪৭, নং ৩৩৭১)।   
 

3- হিসনূল মুসলিমে রয়েছে:-                                                             

أَعُوذُ بِكَلِمَاتِ اللهِ التَّامَّاتِ مِنْ شَرِّ مَا خَلَقَ (صحيح مسلم (4 / 2081).

أَعُوذُ بِكَلِمَاتِ اللَّهِ التَّامَّةِ، مِنْ كُلِّ شَيْطَانٍ وَهَامَّةٍ، وَمِنْ كُلِّ عَيْنٍ لاَمَّةٍ " (صحيح البخاري (4 / 147(

  فِي ذَرَأَ مَا شَرِّ وَمِنْ فِيهَا، يَعْرُجُ مَا شَرِّ وَمِنْ السَّمَاءِ، مِنَ يَنْزِلُ مَا شَرِّ مِنْ فَاجِرٌ، وَلَا بَرٌّ يُجَاوِزُهُنَّ لَا الَّتِي التَّامَّةِ اللَّهِ بِكَلِمَاتِ«أَعُوذُ

  من المسلم (حصن رَحْمَنُ». يَا بِخَيْرٍ يَطْرُقُ طَارِقًا إِلَّا طَارِقٍ كُلِّ شَرِّ وَمِنْ وَالنَّهَارِ، اللَّيْلِ فِتَنِ شَرِّ وَمِنْ مِنْهَا، يَخْرُجُ مَا شَرِّ وَمِنْالْأَرْضِ،

“আমি আল্লাহর ঐ সকল পরিপূর্ণ বাণীসমূহের সাহায্যে আশ্রয় চাই যা কোনো সৎব্যক্তি বা অসৎ ব্যক্তি

অতিক্রম করতে পারে না, — আল্লাহ যা সৃষ্টি করেছেন, অস্তিত্বে এনেছেন এবং তৈরী করেছেন তার অনিষ্ট

থেকে। আসমান থেকে যা নেমে আসে তার অনিষ্ট থেকে এবং যা আকাশে উঠে তার অনিষ্ট থেকে, আর যা পৃথিবীতে তিনি

সৃষ্টি করেছেন তার অনিষ্ট থেকে, আর যা পৃথিবী থেকে বেরিয়ে আসে, তার অনিষ্ট থেকে,  দিনে রাতে সংঘটিত ফেতনার

অনিষ্ট থেকে, আর রাতের বেলায় হঠাৎ করে আগত অনিষ্ট থেকে। তবে রাতে আগত কল্যাণকর আগমনকারী ব্যতীত,

হে দয়াময়।” (হিসনুল মুসলিম : ২/১৪১)। 


4- হিসনূল মুসলিমে রয়েছে:-

  الكتاب أذكار من المسلم (حصن يَحْضُرُونِ». وَأَنْ  الشَّيَاطِينِ هَمَزَاتِ وَمِنْ عِبَادِهِ، وَشَرِّ وَعِقَابِهِ غَضَبِهِ مِنْ التَّامَّاتِ اللَّهِ بِكَلِمَاتِ«أَعُوذُ

“আল্লাহর পরিপূর্ণ কালেমাসমূহের ওসিলায় আশ্রয় চাই তাঁর রাগ থেকে, তাঁর শাস্তি থেকে, তাঁর বান্দাদের অনিষ্ট

থেকে, শয়তানদের কুমন্ত্রণা থেকে এবং তাদের উপস্হিতি থেকে।” (আবু দাউদ: ৪/১২, নং : ৩৮৯৩। সাহীহুত-

তিরমিযী ৩/১৭১)।     


5- সাহীহ হাদীসে রয়েছে:-

 ( الْعَظِيمِ». الْعَرْشِ رَبُّ وَهُوَ تَوَكَّلْتُ عَلَيْهِ هُوَ، إِلَّا إِلَهَ لَا اللَّهُ«حَسْبِيَ7 ( داود أبي (سنن . مرات)4  /321  أذكار من المسلم (حصن).

“আল্লাহই আমার জন্য যথেষ্ট, তিনি ছাড়া আর কোনো সত্য মা‘বুদ নেই, আমি তাঁর উপরই ভরসা করি, আর তিনি

মহান আরশের রব্ব।” (৭ বার)। (সূনানে আবু দাউদ ৪/৩২১) ও ( হিসনুল মুসলিম ১/৬১)। 


6- সাহীহ মুসলিমে রয়েছে:-

«بِاسْمِ اللهِ أَرْقِيكَ، مِنْ كُلِّ شَيْءٍ يُؤْذِيكَ، مِنْ شَرِّ كُلِّ نَفْسٍ أَوْ عَيْنِ حَاسِدٍ، اللهُ يَشْفِيكَ بِاسْمِ اللهِ أَرْقِيكَ». (صحيح مسلم (4 / 1718).

“আল্লাহর নামে আপনাকে ঝাঁড়ফুক করছি, কষ্টদায়ক সকল কিছুর ক্ষতি হতে, যে কোনো মানুষ বা বদনযর অথবা

হিংসুকের হিংসার নজর হতে। আল্লাহ আপনাকে শিফা বা রোগমুক্ত করুন, আমি আপনাকে আল্লাহর নামেই ঝাঁড়ফুক

করছি।” (সাহীহ মুসলিম: ৪/১৭১৮)।


7- সাহীহ হাদীসে রয়েছে:-

“আমি মহান আল্লাহর কাছে চাই, যিনি মহান আরশের রব্ব, তিনি যেন আপনাকে রোগ হতে শিফা দান করেন।” (৭ বার

পড়বেন)। (আবু-দাউদ, ৩/১৮৭)।


8- সাহীহ মুসলিমে রয়েছে:-

তোমার শরীরের যেখানে ব্যথা রয়েছে সেখানে হাত রেখো এবং তিনবার বলো, বিসমিল্লাহ, তারপর সাতবার

«أَسْأَلُ اللَّهَ الْعَظِيمَ رَبَّ الْعَرْشِ الْعَظِيمِ أَنْ يَشْفِيَكَ ». (سنن أبي داود (3 / 187).

«أَعُوذُ بِاللهِ وَقُدْرَتِهِ مِنْ شَرِّ مَا أَجِدُ وَأُحَاذِرُ». (صحيح مسلم (4 / 1728). 

“এই যে ব্যথা আমি অনূভব করছি এবং যার আমি আশংকা করছি, তা থেকে আমি আল্লাহ তা‘আলার এবং তাঁর

কুদরতের আশ্রয় প্রার্থনা করছি।” (সাহীহ মুসলিম: ৪/১৭২৮, নং ২২০২)।       


9- সাহীহ আল-বুখারীতে রয়েছে:-

«اللَّهُمَّ رَبَّ النَّاسِ، مُذْهِبَ البَاسِ، اشْفِ أَنْتَ الشَّافِي، لاَ شَافِيَ إِلَّا أَنْتَ، شِفَاءً لاَ يُغَادِرُ سَقَمًا». (صحيح البخاري (7 / 132).

“হে আল্লাহ! হে মানুষের রব্ব, আপনি তাদের কষ্ট, সমস্যা, বিপদদূরকারী। আপনি তাদেরকে শিফা (রোগমুক্ত) করে

দিন, আপনিই তো শিফাদানকারী। আপনি ব্যতীত রোগমুক্তকারী কেউই নেই, রোগ হতে এমন শিফা দান করুন,

যাতে রোগের কিছুই শরীরে অবশিষ্ট না থাকে।” (সাহীহ আল-বুখারী: ৭/১৩২)। 


10- অনুরূপভাবে সাহীহ হাদীসে রয়েছে:

«بِسْمِ اللَّهِ الَّذِي لَا يَضُرُّ مَعَ اسْمِهِ شَيْءٌ، فِي الْأَرْضِ، وَلَا فِي السَّمَاءِ، وَهُوَ السَّمِيعُ الْعَلِيمُ»، (ثَلَاثَ مَرَّاتٍ). (سنن أبي داود (4 / 323). 

“আল্লাহর নামে, যার নামের সাথে আসমান ও যমীনে কোনো কিছুই কোনো ক্ষতি করতে পারে না। আর তিনি সর্বশ্রোতা, মহাজ্ঞানী।” (৩ বার)।
আবদুল্লাহ ইবন আব্দুর রহমান আল-জিবরীন রহ.

অনুবাদ: আবুল কাসেম মুহাম্মাদ মাসুম
সম্পাদনা: ড. আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া

104
আক্বীদাহ সংক্রান্ত কতিপয় গুরুত্বপূর্ণ মাসআলাহ



১. প্রশ্ন: মহান আল্লাহ কোথায় অবস্থান করেন?

উত্তর: মহান আল্লাহ আরশে আযীমের উপর অবস্থান করেন। আল্লাহর কথাই এর দলীল। আল্লাহ তায়ালা বলেন:

অর্থ: ‘(তিনি আল্লাহ বলেন) পরম দয়াময় আরশের উপর সমুন্নীত রয়েছেন। [সূরা ত্বা-হা:৫]

মহান আল্লাহ আসমানের উপর বা আরশে আযীমের উপর সমুন্নত আছেন, এই অর্থে কুরআন মাজীদের ৭টি আয়াত

রয়েছে। অতএব যারা দাবী করেন যে, মহান আল্লাহ সর্ব জায়গায় বিরাজমান, অথবা তিনি মুমিন বান্দার ক্বলবের

ভিতর অব্স্থান করেন, আর মু‘মিন বান্দার ক্বলব বা অন্তর হলো আল্লাহর আরশ বা ঘর। তাদের এ সমস্ত দাবী

সবই মিথ্যা ও ভিত্তিহীন।


২. প্রশ্ন: মহান আল্লাহর চেহারা অর্থাৎ মূখমন্ডল আছে কি? থাকলে তার দলীল কী?

উত্তর: হাঁ, মহান আল্লাহর চেহারা অর্থাৎ মূখন্ডল আছে। আল্লাহর কথাই এর দলীল ।

অর্থ: ‘[কিয়ামতের দিন] ভূপৃষ্ঠের সবকিছুই ধ্বংস হয়ে যাবে। তবে (হে রাসূল! সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম

আপনার মহিমাময় ও মহানুভব পালন কর্তার চেহারা মুবারক অর্থাৎ আল্লাহর সত্তাই একমাত্র বাকী

থাকবে। (আর-রাহমান: ৩৬-৩৭)


৩. প্রশ্নঃ মহান আল্লাহর কি হাত আছে? থাকলে তার দলীল কী?

﴿كُلُّ مَنْ عَلَيْهَا فَانٍ ـ وَيَبْقَى وَجْهُ رَبِّكَ ذُو الْجَلَالِ وَالْإِكْرَامِ﴾

উত্তরঃ মহান আল্লাহর হাত আছে, আল্লাহর কথাই এর দলীল।

অর্থ: ‘আল্লাহ বললেন, হে ইবলীস ! আমি নিজ দুহাতে যাকে সৃষ্টি করেছি, তাকে সিজদা করতে তোমাকে কিসে বাঁধা

﴿قَالَ يَا إِبْلِيْسُ مَا مَنَعَكَ أَنْ تَسْجُدَ لِمَا خَلَقْتُ بِيَدَيَّ ﴾ (ص:৭৫)


৪. প্রশ্ন: মহান আল্লাহর কি চক্ষু আছে? থাকলে তার দলীল কী?

উত্তরঃ হাঁ, মহান আল্লাহর চক্ষু আছে। আল্লাহর কথাই এর দলীল। যেমন তিনি হযরত মূসা (আঃ) কে লক্ষ্য করে

﴿وَأَلْقَيْتُ عَلَيْكَ مَحَبَّةً مِّنِّيْ وَلِتُصْنَعَ عَلَى عَيْنِيْ﴾ (طـه :৩৯)

অর্থ:‘আমি আমার নিকট হতে তোমার উপর ভালবাসা ঢেলে দিয়েছিলাম, যাতে তুমি আমার চোখের সামনে

প্রতিপালিত হও। (ত্বা-হা: ৩৯)

এমনিভাবে আল্লাহ তা‘আলা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে শান্তনা দিতে যেয়ে বলেন:

অর্থ:‘(হে রাসূল! সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আপনি আপনার পালন কর্তার নির্দেশের অপেক্ষায় ধৈর্যধারণ

করুন, আপনি আমার চোখের সামনেই রয়েছেন। (আত-তূর: ৪৮)


৫. প্রশ: মহান আল্লাহ শুনেন এবং দেখেন, এর দলীল কী?

উত্তর: মহান অল্লাহ শুনেন এবং দেখেন। আল্লাহর কথাই এর দলীল। যেমন তিনি বলেন,

অর্থ:‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআলা শ্রবণ করেন ও দেখেন। (আল-মুজাদালাহ: ১)


৬. প্রশ্ন: মানুষের শ্রবণ শক্তি ও দর্শন শক্তি, অপর দিকে মহান আল্লাহর শ্রবণ শক্তি ও দর্শন শক্তি, এ দুয়ের

মাঝে কোন পার্থক্য আছে কী?

উত্তর: হাঁ, মানুষেরা কানে শুনে ও চোখে দেখে, অপর দিকে মহান আল্লাহ শুনেন ও চোখে দেখেন, এ দুয়ের মাঝে

অবশ্যই বিরাট পার্থক্য রয়েছে। মহান আল্লাহর কথাই এর দলীল। যেমন তিনি বলেন,

অর্থ:‘আল্লাহর সাদৃশ্য কোন বস্তুই নাই এবং তিনি শুনেন ও দেখেন (শূরা:১১)।

 বাস্তবতার আলোকে চিন্তা করলে আমরা বুঝতে পারি যে, নি:সন্দেহে মানুষের দৃষ্টিশক্তি ও শ্রবণশক্তির একটা

নির্ধারিত আয়তন, সীমা বা দুরত্ব আছে যার ভিতরের বস্তু গুলি মানুষেরা সহজে চোখে দেখতে পায় এবং আওয়ায বা

শব্দ সমূহ সহজে কানে শুনতে পায়। তবে ঐ নির্ধারিত সীমা বা দূরত্বের বাইরে চলে গেলে তখন মানুষ আর কিছুই

চোখে দেখতেও পায় না আর শুনতে পায় না। অপর দিকে মহান আল্লাহর দর্শনশক্তি ও শ্রবন শক্তির জন্য

নির্ধারিত কোন সীমা বা দুরত্ব বলতে কিছুই নেই। যেমন মানুষেরা ২/৩ হাত দূর থেকে বইয়ের ছোট অক্ষরগুলি

দেখে পড়তে পারে, কিন্তু ৭/৮ হাত দূর থেকে ঐ অক্ষরগুলি আর পড়া সম্ভব হয় না।

এমনিভাবে মানুষের চোখের সামনে যদি সামান্য একটা কাপড় বা কাগজের পর্দা ঝুলিয়ে রাখা হয় তাহলে ঐ কাপড় বা

কাগজের ওপাশে সে কিছুই দেখতে পায় না। এমনিভাবে মানুষেরা গভীর অন্ধকার রাতে কিছুই দেখতে পায় না। অপর

দিকে মহান আল্লাহ তা‘আলা অমাবস্যার ঘোর অন্ধকার রাতে কাল পাহাড় বা কাল কাপড়ের উপর দিয়ে কাল পিঁপড়া

চলাচল করলেও সেই পিঁপড়াকে দেখতে পান এবং তার পদধ্বনি শুনতে পান।

﴿وَاصْبِرْ لِحُكْمِ رَبِّكَ فَإِنَّكَ بِأَعْيُنِنَا ﴾ (الطور:৪৮ )

﴿لَيْسَ كَمِثْلِهِ شَيْءٌ وَهُوَ السَّمِيْعُ البَصِيْرُ﴾ (الشورى: ১১)


৭.প্রশ্ন: একমাত্র মহান আল্লাহ ছাড়া দুনিয়ার আর কেউ গায়েবের খবর রাখে কী?

উত্তর: না, একমাত্র মহান আল্লাহ ছাড়া দুনিয়ার আর কেউ গায়েবের খবর রাখে না। আল্লাহ তাআলার কথাই এর

দলীল। যেমন তিনি বলেন:

অর্থ:‘নিশ্চয়ই আমি আাল্লহ আসমান ও যমীনের যাবতীয় গোপন বিষয় সম্পর্কে খুব ভাল করেই অবগত আছি এবং

সে সব বিষয়েও আমি জানি যা তোমরা প্রকাশ কর, আর যা তোমরা গোপন রাখ। (বাক্বারাহ: ৩৩)

আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন:

অর্থ: “সেই মহান আল্লাহর কাছে অদৃশ্য জগতের সমস্ত চাবি রয়েছে। সেগুলো একমাত্র তিনি ছাড়া আর কেহই

জানেন না।” (আনআম: ৫৯)


৮.প্রশ্নঃ দুনিয়ার জীবনে মুমিন বান্দাদের পক্ষে স্বচক্ষে অথবা স্বপ্নযোগে মহান আল্লাহর দর্শন লাভ করা

অর্থাৎ আল্লাহকে দেখা কি সম্ভব?

উত্তরঃ না, দুনিয়ার জীবনে মু‘মিন বান্দাদের পক্ষে স্বচক্ষে অথবা স্বপ্ন যোগে মহান আল্লাহকে দেখা সম্ভব

নয়। আল্লাহর কথাই এর দলীল। যেমন তিনি বলেন?

অর্থ: “তিনি (হযরত মূসা (আঃ) আল্লাহকে লক্ষ্য করে) বলেছিলেন, হে আমার প্রভূ! তোমার দীদার আমাকে দাও,

যেন আমি তোমাকে দেখতে পাই। উত্তরে মহান আল্লাহ (হযরত মূসা (আঃ) কে) বলেছিলেন, হে মূসা! তুমি আমাকে

কক্ষনো দেখতে পাবে না। (আ‘রাফ: ১৪৩)

উক্ত আয়াত ও আরো অন্য আয়াত দ্বারা এটাই প্রমাণিত হলো যে, সৃষ্টিজিবের কোন চক্ষু এমনকি নাবী ও

রাসূলগণের কেহই দুনিয়ার জীবনে মহান আল্লাহকে দেখতে পায় নাই আর কেউ পাবেও না। অতএব যারা বা যে সমস্ত

নামধারী পীর সাহেবরা দাবী করে যে, তারা সপ্নে আল্লাহকে দেখতে পায়। প্রকৃতপক্ষে তারা ভন্ড ও মিথ্যুক, এতে

﴿إِنِّي أَعْلَمُ غَيْبَ السَّمَاوَاتِ وَالأَرْضِ وَأَعْلَمُ مَا تُبْدُوْنَ وَمَا كُنْتُمْ تَكْتُمُوْنَ﴾ (البقرة:৩৩)

﴿وَعِنْدَهُ مَفَاتِحُ الْغَيْبِ لاَ يَعْلَمُهَا إِلاَّ هُوَ﴾  (الأنعام :৫৯)

   ﴿قَالَ رَبِّ أَرِنِي أَنْظُرْ إِلَيْكَ قَالَ لَنْ تَرَانِيْ .. ﴾ (الأعراف :১৪৩)


৯.প্রশ্ন: আমাদের নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি কি মাটির তৈরি? না নূরের তৈরি?

উত্তর: আমাদের নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মাটির তৈরী। আল্লাহর কথাই এর দলীল।

﴿قُلْ إِنَّمَا أَنَا بَشَرٌ مِّثْلُكُمْ يُوْحَى إِلَيَّ أَنَّمَا إِلَـهُكُمْ إِلهٌ وَّاحِدٌ﴾

অর্থ:‘আপনি (হে রাসূল! সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আপনার উম্মাতদেরকে) বলে দিন যে, নিশ্চয়ই আমি

তোমাদের মতই একজন মানূষ। আমার প্রতি অহী নাযেল হয় যে, নিশ্চয় তোমাদের উপাস্যই একমাত্র

উপাস্য। (আল-কাহফ: ১১০)

উক্ত আয়াত দ্বারা প্রমাণিত হলো যে, আমাদের নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দৈহিক চাহিদার

দিক দিয়ে আমাদের মতই মানুষ ছিলেন। তিনি খাওয়া-দাওয়া, পিশাব-পায়খানা,বাজার-সদাই,বিবাহ-শাদী, ঘর-সংসার

সবই আমাদের মতই করতেন। পার্থক্য শুধু এখানেই যে, তিনি আল্লাহর প্রেরীত রাসূল ও নবী ছিলেন, তাঁর কাছে

আল্লাহর তরফ থেকে দুনিয়ার মানুষের হিদায়েতের জন্য অহী নাযিল হত, আর অমাদের কাছে অহী নাযিল হয় না।

অতএব যারা রাসূলের প্রশংসা করতে যেয়ে নূরের নাবী বলে অতিরঞ্জিত করল, তারা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া

সাল্লামএর প্রতি মিথ্যার অপবাদ দিল।


১০. প্রশ্ন: অনেক বই পুস্তকে লেখা আছে, এ ছাড়া আমাদের দেশের ছোট-খাট বক্তা থেকে শুরু করে আন্তর্জাতিক

খ্যাতি সম্পন্ন বক্তাদের অধিকাংশই বলে থাকেন যে, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে সৃষ্টি না করলে

আল্লাহ তা‘আলা আসমান-যমীন, আরশ-কুরসী কিছুই সৃষ্টি করতেন না। এ কথাটি সঠিক?     

উত্তর: উল্লিখিত কথাগুলি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন, বানাওয়াটি ও মিথ্যা। কারণ কুর‘আন ও ছহীহ হাদীছ থেকে এর

স্বপক্ষে কোন দলীল নেই। অপরদিকে কুরআন মাজীদের সূরা আয-যারিয়াতের ৫৬ নং আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা

বলেছেন যে, ‘আমি জ্বিনজাতি এবং মানবজাতিকে সৃষ্টি করেছি একমাত্র আমার ইবাদাত করার জন্য।


১১. প্রশ্নঃ আমাদের নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কি গায়েব বা অদৃশ্যের খবর

উত্তরঃ না, আমাদের নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম গায়েবের খবর রাখতেন না। আল্লাহর কথাই এর দলীল।

﴿قُل لاَّ أَمْلِكُ لِنَفْسِيْ نَفْعًا وَّلاَ ضَرًّا إِلاَّ مَا شَآءَ اللهُ وَلَوْ كُنْتُ أَعْلَمُ الْغَيْبَ لاَسْتَكْثَرْتُ مِنَ الْخَيْرِ وَمَا مَسَّنِيَ السُّوْءُ﴾ (الأعراف:১৮৮)

অর্থঃ :‘(হে মুহাম্মাদ! সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আপনি ঘোষণা করে দিন যে, একমাত্র আল্লাহর ইচ্ছা

ছাড়া আমার নিজের ভাল-মন্দ, লাভ-লোকসান, কল্যাণ-অকল্যাণ ইত্যাদি বিষয়ে আমার কোনই হাত নেই। আর

আমি যদি গায়েবের খবর জানতাম, তাহলে বহু কল্যাণ লাভ করতে পারতাম, আর কোন প্রকার অকল্যাণ আমাকে

স্পর্শ করতে পারত না। (আল-আ‘রাফ:১৮৮)

বাস্তবতার আলোকে আমরা একথা বলতে পারি যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যদি গায়েবের খবর

জানতেন, তাহলে অবশ্যই তিনি ওহুদের যুদ্ধে, বদরের যুদ্ধে, তায়েফে এবং আরো অন্যান্য অবস্থার পরিপেক্ষিতে

কঠিন বিপদের সম্মুখীন হতেন না।   


১২.প্রশ্ন: অনেক নামধারী বড় আলেম ও বক্তাগণ বলে থাকেন যে, আমাদের নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া

সাল্লাম এর দেহ বা শরীর মুবারক কবরের চারিপার্শ্বে যে সমস্ত মাটি রয়েছে সে সমস্ত মাটির মূল্য বা মর্যাদা

অল্লাহর আরশের মূল্য বা মর্যাদার চেয়েও অনেক বেশী। এ কথাটি সঠিক?

উত্তর: উল্লিখিত কথাটি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন, বানাওয়াট ও মিথ্যা, কেননা কুরআন ও হাদীছ থেকে এর স্বপক্ষে

কোনই প্রমাণ পাওয়া যায় না।


১৩.প্রশ্ন: অনেকেই নামধারি পীর-মুর্শিদ, অলী-আওলিয়াদের এবং মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর

অসীলা করে আল্লাহর নিকট দু‘আ করে থাকে। এটা জায়েয কি জায়েয নয়?

উত্তর: উল্লিখিত বিষয়টি জায়েয নয়। কেননা মৃত ব্যক্তির অসীলা করে আল্লাহর কাছে দু‘আ করা নিষেধ বা

হারাম। চাই সেই মৃতব্যক্তি কোন নবী বা রাসূল হৌক না কেন।     


১৪. প্রশ্ন: ‘মীলাদ মাহফিল কায়েম করা অর্থাৎ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর জন্ম বার্ষিকী

পালন করা জায়েয কি জায়েয নয়? যদি জায়েয না হয়, তাহলে আমাদের দেশের অধিকাংশ আলেম-উলামাগণ মীলাদ পড়ান

উত্তর: ‘মীলাদ মাহফিল কায়েম করা অর্থাৎ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর জন্ম বার্ষিকী পালন

করা নি:সন্দেহে না জায়েয। কারণ এর স্বপক্ষে কুরআন মাজীদ ও ছহীহ হাদীছ হতে এবং ছাহাবা কিরামের আমল ও

পরবর্তী উলামায়ে মুজতাহিদীনদের তরফ থেকে কোনই প্রমাণ নেই। সেহেতু এটা ইসলামী শরীয়তে নতুন আবিষ্কার

তথা বিদ‘আত। যার পরিণাম গোমরাহী, পথভ্রষ্ঠতা ও জাহান্নাম।     


১৫.প্রশ্ন: মহান আল্লাহকে পূর্ণভাবে ভালবাসা বা আনুগত্য করার উত্তম পদ্ধতি কী?

উত্তর: মহান আল্লাহকে পূর্ণভাবে ভালবাসার উত্তম পদ্ধতি হলো: খালেছ অন্তরে আল্লাহ তা‘আলার আনুগত্য

করা, আর দ্বিধাহীন চিত্তে তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর অনুসরণ করা। মহান আল্লাহর কথাই

এর দলীল। যেমন তিনি বলেন,     

অর্থ:‘(হে রাসূল! সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আপনার উম্মাতদেরকে) আপনি বলেদিন, তোমরা যদি

আল্লাহকে ভালবাসতে চাও, তাহলে তোমরা আমারই অনুসরণ কর। তাহলে আল্লাহ তোমাদেরকে ভালবাসবেন, আর

তোমাদের পাপও ক্ষমা করে দেবেন। আর আল্লাহ হলেন ক্ষমাকারী দয়ালু। (আলু-ইমরান: ৩১)


১৬.প্রশ্ন: আমাদের নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে পূর্ণভাবে ভালবাসা বা অনুসরণ করার

﴿قُلْ إِنْ كُنْتُمْ تُحِبُّوْنَ اللهَ فَاتَّبِعُوْنِيْ يُحْبِبْكُمُ اللهُ وَيَغْفِرْ لَكُمْ ذُنُوْبَكُمْ وَاللهُ غَفُوْرٌ رَّحِيْمٌ ﴾ ( آل عمران:৩১)

উত্তর: আমাদের নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে পূর্ণভাবে ভালবাসার উত্তম পদ্ধতি হলো:

রাসূল্লুাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর প্রত্যেকটা নির্দেশ ও নিষেধকে মনে-প্রাণে মেনে নেওয়া। মোট

কথা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সুন্নাতের উপর যথাযথভাবে আমল করার মাধ্যমে তাঁর

সুন্নাতকে জীবিত রাখা। মহান আল্লাহর কথাই এর দলীল। যেমন তিনি বলেন:

অর্থ:‘অতএব (হে মুহাম্মাদ! সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আপনার প্রতিপালকের কসম, তারা কখনই ঈমানদার

হতে পারবে না। যতক্ষণ না তাদের মাঝে সৃষ্ট কোন ঝগড়া বা বিবাদের ব্যাপারে আপনাকে ন্যায় বিচারক হিসাবে

মেনে না নিবে। অত:পর তারা আপনার ফায়ছালার ব্যাপারে নিজেদের মনে কোনরূপ সংকীর্ণতা বোধ না করে তা

শান্তিপূর্ণভাবে কবূল করে নিবে। (আন-নিসা: ৬৫)

 এ মর্মে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন:

অর্থ:‘যে ব্যক্তি আমার সুন্নাত অনুযায়ী আমল করল, সে আমাকে ভাল বাসল, আর যে আমাকে ভাল বাসল সে এর

বিনিময়ে জান্নাতে আমার সাথে অবস্থান করবে।

﴿فَلاَ وَرَبِّكَ لاَ يُؤْمِنُوْنَ حَتَّىَ يُحَكِّمُوْكَ فِيْمَا شَجَرَ بَيْنَهُمْ ثُمَّ لاَ يَجِدُوْا فِيْ أَنْفُسِهِمْ حَرَجًا مِّمَّا قَضَيْتَ وَيُسَلِّمُوْا تَسْلِيْمًا﴾

“مَنْ عَمِلَ بِسُنَّتِي فَقَدْ أَحَبَّنِي وَمَنْ أَحَبَّنِي كَانَ مَعِيَ فِي الْجنَّة” (ذم الكلام وأهله)

“مَنْ أَحْيَا سُنَّتِيْ فَقَدْ أَحَبَّنِيْ، وَمَنْ أَحَبَّنِيْ كَانَ مَعِيَ فِي الْجَنَّةِ” (الاعتصام: حَدِيثٌ حَسَنٌ)

অর্থ:‘যে ব্যক্তি আমার সুন্নাতকে জীবিত রাখল সে যেন আমাকে ভাল বাসল, আর যে ব্যক্তি আমাকে ভাল বাসল সে

এর বিনিময়ে জান্নাতে আমার সাথে অবস্থান করবে। (আল-ই‘তেছাম: হাদীছ হাসান)।


১৭. প্রশ্ন: বিদআতের অর্থ কি? বা বিদআত কাকে বলা হয় ?

উত্তর: পারিভাষিক অর্থে সুন্নাতের বিপরিত বিষয়কে ‘বিদআত বলা হয়। আর শারঈ অর্থে বিদআত হলো:

‘আল্লাহর নৈকট্য হাছিলের উদ্দেশ্যে ধর্মের নামে নতুন কোন প্রথা চালু করা, যা শরীয়তের কোন ছহীহ দলীলের

উপরে ভিত্তিশীল নয় (আল-ইতিছাম ১/৩৭পৃঃ)।


১৮. প্রশ্ন: বিদআতী কাজের পরিণতি কী কী?

উত্তর: বিদআতী কাজের পরিণতি হলো ৩ টি।                 

১. ঐ বিদআতী কাজ আল্লাহর দরবারে গৃহীত হবেনা।           

২. বিদআতী কাজের ফলে মুসলিম সমাজে গোমরাহীর ব্যাপকতা লাভ করে।

৩. আর এই গোমরাহীর ফলে বিদআতীকে জাহান্নাম ভোগ করতে হবে। এ প্রসঙ্গে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি

“مَنْ أَحْدَثَ فِيْ أَمْرِنَا هَذَا مَا لَيْسَ مِنْهُ فَهُوَ رَدٌّ ” (متفق عليه)

অর্থ: ‘যে ব্যক্তি আমাদের শরীয়তে এমন কিছু নতুন সৃষ্টি করল, যা তার মধ্যে নেই, তা প্রত্যাখ্যাত। (বুখারী ও

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বলেছেন:

অর্থ: ‘আর তোমরা দ্বীনের মধ্যে নতুন সৃষ্টি করা হতে সাবধান থাক! নিশ্চয় প্রত্যেক নতুন সৃষ্টিই বিদআত,

আর প্রত্যেক বিদ‘আতই হলো গোমরাহী, আর প্রত্যেক গোমরাহীর পরিণাম হলো জাহান্নাম। (আহমাদ,

“وَإِيِّاكُمْ وَ مُحْدَثَاتِ الأُمُوْرِ فَإِنَّ كُلَّ مُحْدَثَةٍ بِدْعَةٌ وَكُلَّ بِدْعَةٍ ضَلاَلَةٍ وَ كُلَّ ضَلاَلَةٍ فِيْ النَّارِ”


১৯. প্রশ্নঃ আমাদের দেশে প্রচলিত কয়েকটি বড় ধরনের বিদআতী

কাজ উল্লেখ করুন।

১. ‘মীলাদ মাহফিলের অনুষ্ঠান করা।

২. ‘শবে-বরাত পালন করা।

৩. ‘শবে-মেরাজ পালন করা।

৪. মৃতব্যক্তির কাযা বা ছুটে যাওয়া নামায সমূহের কাফ্ফারা আদায় করা।

৫. মৃত্যুর পর ৭ম, ১০ম, অথবা ৪০তম দিনে মানুষদেরকে খাওয়ানো বা দুআর অনুষ্ঠান করা।

৬. ‘ইছালে ছাওয়াব বা ছাওয়াব রেসানী বা ছাওয়াব বখশে দেওয়ার অনুষ্ঠান করা।

৭. মৃতব্যক্তির রূহের মাগফিরাতের জন্য অথবা কোন বিপদ থেকে রক্ষা পাওয়ার উদ্দেশ্যে খতমে কুরআন অথবা

খতমে জালালীর অনুষ্ঠান করা ইত্যাদি।

৮. জোরে জোরে চিল্লিয়ে যিকর করা।

৯. হালকায়ে যিকরের অনুষ্ঠান করা।

১০. পীর সাহেবের কাছে মুরীদ হওয়া।                             

১১. মা-বোন ও স্ত্রীকে পীর সাহেবের কাছে মুরীদ হওয়ার জন্য এবং তাদের খেদমত করার জন্য পাঠানো।

১২. ফরয, সুন্নাত, ও নফল তথা বিভিন্ন ধরনের নামায শুরু করার পূর্বে মুখে উচ্চারণ করে নিয়াত পড়া বিদ‘আত।

১৩. পেশাব করার পরে পানি থাকা সত্বেও অধিকতর পবিত্রতা অর্জনের উদ্দেশ্যে কুলুখ নিয়ে ২০, ৪০,৭০ কদম

হাটাহাটি করা, জোরে জোরে কাশি দেয়া, হেলা দুলা করা, পায়ে পায়ে কাচি দেয়া এসবই বেহায়াপনা কাজ ও স্পষ্ট

১৪. অনেকে ধারণা করেন যে, তাবলীগ জাম‘আতের সাথে যেয়ে ৩টা অথবা ৭টা চিল্লা দিলে ১হজের সওয়াব হয়। এ

সমস্ত কথা সবই বানাওয়াট ও মিথ্যা, তথা বিদ‘আত।


২০.প্রশ্ন: যদি কোন ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নামে মিথ্যা হাদীছ তৈরি করে

অর্থাৎ বানাওয়াট ও মনগড়া কথা মানুষের সামনে বর্ণনা করে বা বই পুস্তকে লিখে প্রচার করে, তাহলে তার পরিণতি

উত্তর: যে ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নামে মিথ্যা হাদীছ রচনা করে মানুষের কাছে

বর্ণনা করে তার পরিণতি হবে জাহান্নাম। রাসূলের কথাই এর দলীল, যেমন তিনি বলেন:

“مَنْ كَذَبَ عَلَيَّ مُتَعَمِّدًا فَلْيَتَبَوَّأ مَقْعَدَهُ مِنَ النَّارِ”

অর্থ: যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে আমার উপর মিথ্যা আরোপ করল, এর বিনিময়ে সে যেন তার ঠিকানা জাহান্নামে

প্রণয়নেঃ আবুল কালাম আযাদ

সম্পাদনায়: আব্দুন নূর আব্দুল জব্বার

সূত্র: সালাফী বিডি


ইসলামী আকীদা বিষয়ক কতিপয় গুরুত্বপূর্ণ মাসয়ালা

আমাদের সৃষ্টির উদ্দেশ্য

১। প্রশ্ন : আল্লাহ্‌ আমাদের কেন সৃষ্টি করেছেন?

১। উত্তর : আল্লাহ্‌ আমাদের সৃষ্টি করেছেন এ জন্য যে, আমরা তাঁর ইবাদত করব, তাঁর আনুহগত্য করব এবং তাঁর

সাথে কাউকে শরীক করব না। তিনি বলেন :

"আমি জ্বিন এবং মানব জাতি এজন্য সৃষ্টি করেছি যে, তারা শুধু আমার ইবাদত করবে।" সূরা আজ-জারিয়াত : ৫৬

রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন : "বান্দার উপর আল্লাহ্‌র হক হচ্ছে, তারা তাঁর ইবাদত করবে

এবং তাঁর সাথে কাউকে শরীক করবে না।" (বুখারী ও মুসলিম)

২। প্রশ্ন : ইবাদত বলতে কি বুঝায়?

২। উত্তর : ইবাদত একটি ব্যাপক বিষয়। ইসলামি আকিদা, আল্লাহর পছন্দনীয় প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য কথা ও কাজ,

সব কিছু এর অন্তর্ভুক্ত। যেমন : দোয়া, নামায, বিনয়, তাকওয়া ইত্যাদি।

আল্লাহ্‌ তাআলা বলেন :

"বলুন : আমার নামায, আমার কুরবানী, আমার জীবন ও মরণ বিশ্বজাহানের প্রতিপালক আল্লাহ্‌র জন্য।" সূরা আল-

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন : আল্লাহ্‌ তাআলা বলেছেন :

"আমি আমার বান্দার উপর যা ফরজ করেছি, তার চেয়ে অধিক প্রিয় কোনো জিনিসের মাধ্যমে বান্দা আমার

সান্নিধ্য লাভ করতে পারেনি। আর আমার বান্দা নফল ইবাদতের মাধ্যমে আমার নৈকট্য লাভ করতে থাকে।"(হাদীসে

قُلْ إِنَّ صَلاَتِيْ وَنُسُكِيْ وَمَحْيَايَا وَمَمَاتِيْ لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِيْنَ

৩। প্রশ্ন : ইবাদত কত প্রকার ?

৩। উত্তর : ইবাদতের অনেক প্রকার রয়েছে। যেমন : দোয়া, আল্লাহর ভয়, তাঁর নিকট প্রত্যাশা, তাঁর

ওপর ভরসা, তাঁর নিকট আকাঙ্ক্ষা, তাঁর উদ্দেশ্যে জবেহ-মান্নত-রুকু-সিজদা-তাওয়াফ ও শপথ ইত্যাদি। এর ভেতর

কোন একটি জিনিস আল্লাহর জন্য না হলে ইবাদত বলে গণ্য হবে না।

৪। প্রশ্ন : আল্লাহ্‌ রাসূললগণকে কেন প্রেরণ করেছেন ?

৪। উত্তর : আল্লাহ্‌ তাঁর বান্দাদের তাওহীদ ও ইবাদতের দিকে আহ্বান জানাতে রাসূলগণকে প্রেরণ করেছেন।

আল্লাহ্‌ তাআলা বলেন :

"আমি প্রত্যেক জাতির কাছে রাসূল পাঠিয়েছি এই জন্য যে, তোমরা আল্লাহ্‌র ইবাদত করবে এবং 'ত্বাগুত" বর্জন

করবে।" সূরা আন-নাহাল : ৩৬

ত্বাগুত : আল্লাহ্‌ ব্যতীত মানুষ সেচ্ছায়-সন্তুষ্টি চিত্তে যার ইবাদত করে, যাকে আহ্বান করে সেই ত্বাগুত।

রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন : "...নাবীগণ ভাই-ভাই...আর তাঁদের দ্বীন এক" অর্থাৎ প্রত্যেক

নবী আল্লাহ্‌র একত্ববাদের আহ্‌বান জানিয়েছেন। (বুখারী - মুসলিম)

وَلَقَدْ بَعَثْنَا فِيْ كُلِّ أُمَّةٍ رَّسُوْلاً أَنِ اعْبُدُوْا اللهَ وَاجْتَنِبُواْ الطَّاغُوْتَ

তাওহীদ বা একত্ববাদের প্রকার

৫। প্রশ্ন : তাওহীদে রুবুবিয়্যাত বা আল্লাহর 'রব' সিফাতে তাওহীদ বলতে কি বুঝায়?

৫। উত্তর : আল্লাহর কার্যাবলীতে কাউকে অংশিদার না করা। অর্থাৎ একমাত্র তিনি সৃষ্টিকর্তা, রিযিক দাতা,

জীবন-মৃত্যু ও উপকার-অপকারের মালিক ইত্যাদি।

আল্লাহ্‌ তাআলার বাণী :

অর্থ : "সমস্ত প্রশংসা বিশ্বজাহানের প্রতিপালক আল্লাহ্‌র জন্য।" সূরা আল-ফাতেহা : ২

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহকে সম্বোধন করে বলেন: "...তুমি আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর

প্রতিপালক...।" (বুখারী - মুসলিম)

৬। প্রশ্ন : ইবাদতে তাওহীদ বলতে কি বুঝায় ?

৬। উত্তর : ইবাদতের মালিক শুধু আল্লাহকেই জ্ঞান করা এবং সকল ইবাদত তাঁর জন্য উৎসর্গ করা। যেমন : দুআ,

জবেহ্‌, মান্নত, বিনয়াবনত অবস্থা, প্রার্থনা, নামাজ, তাওয়াক্কুল ও ফয়সালা ইত্যাদির মালিক আল্লাহকে স্বীকার

করা এবং শুধু তাঁর জন্যই সম্পাদন করা।

আল্লাহ্‌ তাআলা বলেন :

অর্থ : "আর তোমাদের ইলাহ একজন-ই, তিনি ব্যতীত অন্য কোন ইলাহ নেই, তিনি দয়াময় অতি দয়ালু।" সূরা আল-

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন : "সর্ব প্রথম তাদেরকে এ সাক্ষ্য দেয়ার প্রতি আহ্বান করবে

যে, আল্লাহ্‌ ব্যতীত কোন ইলাহ নেই।" (বুখারী - মুসলিম)

বুখারীর অন্য বর্ণনায় রয়েছে : "আল্লাহ্‌র একত্ববাদের ঈমানের প্রতি তাদেরকে আহ্‌বান করবে।"

৭। প্রশ্ন : রুবুবিয়্যাত ও ইবাদতের ক্ষেত্রে তাওহীদের লক্ষ্য কি?

৭। উত্তর : রুবুবিয়্যাত বা আল্লাহর সিফাতে 'রব' এবং ইবাদতে তাওহীদের লক্ষ্য হল, মানুষ আল্লাহর বড়ত্ব ও

শ্রেষ্ঠত্ব অন্তরে ধারণ করত সকল ইবাদত তাঁর জন্য উৎসর্গ করবে। নিজ কর্ম ও আচরণে তাঁর অনুসরণ করবে।

অন্তরে ঈমান সু-দৃঢ় রাখবে এবং পৃথিবীতে আল্লাহ্‌র বিধান প্রতিষ্ঠায় আত্মনিয়োগ করবে।

৮। প্রশ্ন : আল্লাহ্‌র নাম ও গুনাবলিতে তাওহীদ বলতে কি বুঝায় ?

৮। উত্তর : আল্লাহ্‌ তাআলা তাঁর কিতাবে নিজেকে যেসব গুণে গুণান্বিত করেছেন অথবা তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু

আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিশুদ্ধ হাদীসে তাঁর যেসব গুণাবলি বর্ণনা করেছেন তা প্রকৃত অর্থে, কোনরূপ অপব্যাখ্যা,

তাঁর কোন সৃষ্টির সাথে সাদৃশ্য স্থাপন, তাঁর প্রকৃত গুণকে নিষ্ক্রিয় করা এবং কোন বিশেষ আকৃতি ধারনা করা

ব্যতীত যথাযথ রূপেই বর্ণিত গুণাবলি তাঁর জন্য স্থির করা বুঝায়। যেমন : আরশে আসীন হওয়া, অবতরণ করা, হাত

ইত্যাদি আল্লাহ্‌র পরিপূর্ণ শানের উপযোগী পর্যায়ে সাব্যস্ত কর বুঝা যায়। পবিত্র কুরআনের বাণী:

"কোন কিছুই তাঁর সাদৃশ্য নয়, তিনি সর্ব শ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা।" সূরা আশ-শুরা : ১১

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন : "আমাদের রব পৃথিবীর আকাশে প্রত্যেক রাতে অবতরণ

করেন।" (বুখারী - মুসলিম) পৃথিবীর আকাশে আল্লাহ্‌ নিজস্ব শান ও স্বাতন্ত্রতা বজায় রেখে অবতরণ করেন, যার

সাথে অন্য কোন কিছুর তুলনা হয় না।

وَإِلَهُكُمْ إِلَهٌ وَّاحِدٌ لاَ إِلَهَ إِلاَّ هُوَ الرَّحْمَنُ الرَّحِيْمُ

সব চেয়ে বড় পাপ

৯। প্রশ্ন : আল্লাহ্‌র নিকট সবচেয়ে বড় পাপ কি?

৯। উত্তর : শিরকে আকবার। আল্লাহ্‌ তাআলা লোকমানের উপদেশ উল্লেখ করে বলেন :

"আর যখন লোকমান তার পুত্রকে বলল, হে বৎস ! আল্লাহ্‌র সাথে শরীক করো না, নিশ্চয় শিরক বড় জুলুম।" সূরা

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করা হল, সবচেয়ে বড়পাপ কি ? তিনি বললেন : "যে আল্লাহ

তোমাকে সৃষ্টি করেছেন তাঁর সাথে শরীক করা।" (বুখারী - মুসলিম)

১০। প্রশ্ন : বড় শিরক কি ?

১০। উত্তর : যে কোন ইবাদত আল্লাহ্‌ ব্যতীত অন্য কারো জন্য নিবেদন করা। যেমন : দুআ, জবেহ্‌ ইত্যাদি।

আল্লাহ্‌ তাআলা বলেন :

وَإِذْ قَالَ لُقْمَانُ لِابْنِهِ وَهُوَ يَعِظُهُ يَا بُنَيَّ لَا تُشْرِكْ بِاللَّهِ إِنَّ الشِّرْكَ لَظُلْمٌ عَظِيمٌ

وَلاَ تَدْعُ مِنْ دُوْنِ اللهِ مَا لاَ يَنْفَعُكَ وَلاَ يَضُرُّكَ فَإِنْ فَعَلْتَ فَإِنَّكَ إِذًا مِّنَ الظَّالِمِيْنَ

"আর আল্লাহ্‌ ব্যতীত অন্য এমন কাউকে ডাকবেনা যে তোমার উপকারও করে না, ক্ষতিও করে না, আর যদি তুমি

তা কর তবে অবশ্যই জালিমদের অন্তর্ভূক্ত হয়ে যাবে।" অর্থাৎ মুশরিকদের মধ্যে গণ্য হবে। সূরা ইউনুস : ১০৬

রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন : "কবীরা গুনার ভেতর সবচেয়ে বড় গুনাহ্‌ হল আল্লাহ্‌র সাথে

শরীক করা, পিতা-মাতার নাফারমানী করা এবং মিথ্যা সাক্ষ্য দেয়া।" বুখারী

১১। প্রশ্ন : বড় শিরকের পরিণাম কি ?

১১। উত্তর : চিরস্থায়ী জাহান্নাম। আল্লাহ্‌ তাআলা বলেন :

"যে কেউ আল্লাহ্‌র সাথে শরীক করবে আল্লাহ্‌ তার ওপর জান্নাত অবশ্যই হারাম করবেন, এবং তার ঠিকানা

জাহান্নাম, আর জালিমদের জন্য কোন সাহায্যকারী নেই।" সূরা আল মায়েদা : ৭২

রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন : "যে ব্যক্তি আল্লাহ্‌র সাথে কোন কিছু শরীক করে মৃত্যুবরণ

করল সে জাহান্নামে যাবে।" মুসলিম

১২। প্রশ্ন : আল্লাহ্‌র সাথে শরীক করা অবস্থায় সৎকর্ম কাজে আসবে কি ?

১২। উত্তর : শিরকের সাথে সৎকর্ম কোন উপকারে আসবে না। কেননা আল্লাহ্‌ তাআলা বলেন :

"তারা যদি শিরক করত তবে তাদের সমস্তকৃতকর্ম নষ্ট হয়ে যেত।" সূরা আল-আন্‌আম : ৮৮

আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন : "আল্লাহ্‌ তাআলা বলেছেন : 'আমি শরীকদের শিরিক থেকে

অনেক দূরে, যে ব্যক্তি তার কৃতকর্মে আমার সাথে অন্যকে শরীক করল আমি তাকে ও তার শিরিককে অগ্রাহ্য

করি।" হাদীসে কুদসী - মুসিলম

إِنَّهُ مَنْ يُّشْرِكْ بِاللهِ فَقَدْ حَرَّمَ اللهُ عَلَيْهِ الْجَنَّةَ وَمَأوَاهُ النَّارَ وَمَا لِلظَّالِمِيْنَ مِنْ أَنْصَارٍ

বড় শিরকের প্রকারভেদ

১৩। প্রশ্ন : আমরা মৃত বা অনুপস্থিত ব্যক্তিদের নিকট ফরিয়াদ করব কি ?

১৩। উত্তর : না, আমরা মৃত বা অনুপস্থিত ব্যক্তির নিকট ফরিয়াদ করব না বরং আল্লাহ্‌র নিকট ফরিয়াদ করব।

আল্লাহ্‌ তাআলা বলেন :

"তারা আল্লাহ্‌ ব্যতীত অন্য যাদেরকে ডাকে তারা কিছুই সৃষ্টি করে না বরং তাদেরকে সৃষ্টি করা হয়। তারা

নিষ্প্রাণ, নির্জীব এবং কখন তাদেরকে পুনরুত্থিত করা হবে সে বিষয়ে তাদের কোন চেতনা নেই।" সূরা আন-নাহাল :

রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন : "হে চিরঞ্জীব, সবার ধারক ও বাহক, আমি তোমার রহ্‌মত

ফরিয়াদ করি।" তিরমিজী

১৪। প্রশ্ন : আমরা কি জীবিত ব্যক্তির নিকট ফরিয়াদ করতে পারি ?

১৪। উত্তর : হ্যাঁ ! যেসব ক্ষেত্রে জীবিত ব্যক্তি সামর্থ রাখে সে সব ব্যাপারে সাহায্যের ফরিয়াদ করা যাবে।

আল্লাহ্‌ তাআলা মুসা আলাইহিস্‌ সালামের ঘটনা বর্ণনা করে বলেন :

"মুসার দলের লোকটি তার শত্রুর বিরুদ্ধে তাঁর সাহায্য কামনা করল, তখন মুসা তাকে ঘুষি মারল, যার ফলে সে মরে

গেল।" সূরা আল-কাসাস : ১৫

وَالَّذِينَ يَدْعُونَ مِنْ دُونِ اللَّهِ لَا يَخْلُقُونَ شَيْئًا وَهُمْ يُخْلَقُونَ ﴿২০﴾ أَمْوَاتٌ غَيْرُ أَحْيَاءٍ وَمَا يَشْعُرُونَ أَيَّانَ يُبْعَثُونَ ﴿২১﴾

فَاسْتَغَاثَهُ الَّذِيْ مِنْ شِيْعَتِهِ عَلَى الَّذِيْ مِنْ عَدُوِّهِ فَوَكَزَهُ مُوْسَى فَقَضَى عَلَيْهِ

১৫। প্রশ্ন : আল্লাহ্‌ ব্যতীত অন্যের সাহায্য প্রার্থনা কি জায়েয ?

১৫। উত্তর : যে সব ক্ষেত্রে আল্লাহ্‌ ব্যতীত অন্যের কোন ক্ষমতা নেই সে ক্ষেত্রে জায়েয নয়। আল্লাহ্‌

"আমরা শুধু তোমারই ইবাদত করি, শুধু তোমারই সাহায্য প্রার্থনা করি।" সূরা আল-ফাতেহা : ৫

রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন : "যখন প্রার্থনা করবে শুধু আল্লাহ্‌র নিকট করবে, যখন

সাহায্য কামনা করবে আল্লাহ্‌র কাছেই করবে।" তিরমিজী

১৬। প্রশ্ন : আমরা জীবিত ব্যক্তির নিকট সাহায্য প্রার্থনা করব কি ?

১৬। উত্তর : হ্যাঁ, যে সব ক্ষেত্রে জীবিত লোক সামর্থ রাখে। যেমন : ঋণ বা কোন বস্তু প্রার্থনা করা।

আল্লাহ্‌ তাআলা বলেন:

"সৎকর্ম ও আল্লাহ্‌ ভীতিতে তোমরা পরস্পর সাহায্য করবে।" সূরা আল -মায়েদাহ্‌ : ২

রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন :

"আল্লাহ্‌ ঐ বান্দার সাহায্যে আছেন যে বান্দা তার ভাইয়ের সাহায্যে থাকে।" (মুসলিম)

কিন্তু রোগ মুক্তি, হিদায়াত, রুযী ও এ ধরনের অন্য কিছু আল্লাহ্‌ ব্যতীত অন্যের নিকট চাওয়া যাবে না। কেননা

জীবিত ব্যক্তিও এসব ক্ষেত্রে মৃত ব্যক্তির মত অপারগ।

ইব্‌রাহীমের কথা বর্ণনা করে আল্লাহ্‌ তাআলা বলেন :

"যিনি আমাকে সৃষ্টি করেছেন, তিনিই আমাকে পথ প্রদর্শন করেন। তিনিই আমাকে পানাহার করান এবং

রোগাক্রান্ত হলে তিনিই আমাকে রোগ মুক্ত করেন।" সূরা আশ-শু'আরা : ৭৮,৭৯,৮০

১৭। প্রশ্ন : আল্লাহ্‌ ব্যতীত অন্যের উদ্দেশ্যে মান্নত করা জায়েয কি ?

১৭। উত্তর : আল্লাহ্‌ ব্যতীত অন্যের উদ্দেশ্যে মান্নত করা জায়েয নয়। আল্লাহ্‌ তাআলা ইমরানের স্ত্রীর কথা

اَلَّذِيْ خَلَقَنِيْ فَهُوَ يَهْدِيْنِ وَالَّذِيْ هُوَ يُطْعِمُنِيْ وَيَسْقِيْنِ وَإِذَا مَرِضْتُ فَهُوَ يَشْفِيْنِ

"হে আমার প্রতিপালক ! আমার গর্ভে যা আছে তা একান্ত তোমার জন্য আমি উৎসর্গ করলাম।" সূরা আলে-

রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন : "যে ব্যক্তি আল্লাহ্‌র আনুগত্যের মান্নত করল সে যেন তাঁর

আনুগত্য করে, আর যে আল্লাহ্‌র অবাধ্যতার মান্নত করল সে যেন তাঁর অবাধ্যতা না করে।" বুখারী

জাদুর বিধান

১৮। প্রশ্ন : জাদুর বিধান কি ?

১৮। উত্তর : জাদু কাবীরা গুনার অন্তর্ভুক্ত, কখনো কুফরী হতে পারে। আল্লাহ্‌ তাআলা বলেন :

"বরং শয়তানরাই কুফরী করেছিল, তারা মানুষকে জাদু শিক্ষা দিত।" সূরা আল-বাকারা : ১০২

রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন : "সাতটি ধ্বংসাত্নক পাপ থেকে দূরে থাক : আল্লাহ্‌র সাথে শিরক

করা, জাদু...।" (মুসলিম)

وَلَكِنَّ الشَّيَاطِيْنَ كَفَرُوْا يُعَلِّمُوْنَ النَّاسَ السِّحْرَ

জাদুকর কখনো মুশরিক, কখনো কাফের ও কখনো ফাসাদ সৃষ্টিকারী হয়ে থাকে। ইসলামি বিধান মোতাবেক তাকে

তার কৃতকর্মের শাস্তি স্বরূপ হত্যা করা ওয়াজিব। জাদুকরের কৃতকর্ম নিম্নরূপ হয়ে থাকে : কোন কিছু নষ্টকরা,

ইন্দ্রজাল বা ভেল্কিবাজি, দ্বীন থেকে পথভ্রষ্ট করা, পরস্পরে বিবাদ সৃষ্টি করা, কৃত অপরাধ গোপন করা,

স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করা, কোন জীবন নষ্ট করা, অথবা জ্ঞান শুন্য করে ফেলা ইত্যাদি যা অনেক

খারাপ ফলাফল বয়ে নিয়ে আসে।

১৯। প্রশ্ন : আমরা গায়েবের ব্যাপারে গণক এবং ভবিষ্যৎ বেত্তাদের খবর বিশ্বাস করব কি ?

১৯। উত্তর : আমরা তাদেরকে বিশ্বাস করব না, কেননা আল্লাহ্‌ তাআলা বলেন :

"বল, আল্লাহ্‌ ব্যতীত গায়েব বা অদৃশ্যের খবর আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীতে কেউ রাখে না।" সূরা আন-নামল : ৬৫

রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন : "যে ব্যক্তি গণক বা ভবিষ্যৎ বেত্তার নিকট আসল এবং তার

কথা বিশ্বাস করল, সে নিশ্চয় মুহাম্মাদের উপর যা অবতীর্ণ হয়েছে তার সাথে কুফরী করল।" মুসনাদে আহ্‌মাদ

قُلْ لاَ يَعْلَمُ مَنْ فِيْ السَّمَوَاتِ وَالأَرْضِ الْغَْبَ إِلاَّ اللهُ

ছোট শিরক

২০। প্রশ্ন : ছোট শিরক বলতে কি বুঝায় ?

২০। উত্তর : ছোট শিরক কবিরা গুনাহের অন্তর্ভুক্ত। তবে ছোট শিরিককারী জাহান্নামে চিরদিন থাকবে না।

ছোট শিরিক কয়েক প্রকার। যেমন : 'রিয়া' বা লোক দেখানো আমল। আল্লাহ্‌ তাআলা বলেন :

"...সুতরাং যে তার প্রতিপালকের সাক্ষাত কামনা করে, সে যেন সৎকর্ম করে ও তার প্রতিপালকের ইবাদতে কাউকে

শরীক না করে।" সূরা আল-কাহ্‌ফ : ১১০

রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন : "আমি তোমাদের জন্য সবচেয়ে বেশী যে পাপের ভয় পাই তা

হলো ছোট শিরিক তথা 'রিয়া'। (রিয়া : যে সকল আমল আল্লাহর জন্য করা হয়, তা মানুষকে দেখানোর উদ্দেশ্যে

সম্পাদন করা।) (মুসনাদে আহ্‌মাদ)

২১। প্রশ্ন : আল্লাহ্‌ ব্যতীত অন্যের নামে শপথ করা জায়েয কি ?

২১। উত্তর : আল্লাহ্‌ ব্যতীত অন্যের নামে শপথ করা জায়েয নয়। আল্লাহ্‌ তাআলা বলেন :

"বল, নিশ্চয় আমার রবের শপথ ! তোমরা অবশ্যই পুনরুত্থিত হবে।" সূরা তাগাবুন : ৭

রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: "যে আল্লাহ্‌ ব্যতীত অন্যের নামে শপথ করল সে অবশ্যই শিরক

করল।" মুসনাদে আহ্‌মাদ

তিনি আরো বলেন : "কারো যদি শপথ করার প্রয়োজন হয় সে যেন আল্লাহ্‌র নামে শপথ করে অথবা চুপ থাকে।"

কিন্তু কেউ যদি কোন ওলীর ব্যাপারে এ বিশ্বাস পোষণ করে শপথ করে যে, তার ক্ষতি করার ক্ষমতা রয়েছে তবে

তা বড় শিরকের অন্তুর্ভুক্ত। কারণ এতে প্রতিয়মান হয়, সে উক্ত ওলীর নামে মিথ্যা শপথে ভয় পায়, তাই সে তার

فَمَنْ كَانَ يَرْجُوْ لِقَاءَ رَبِّهِ فَلْيَعْمَلْ عَمَلاً صَالْحاً وَلاَ يُشْرِكْ بِعِبَادَةِ رَبِّهِ أَحَداً

২২। প্রশ্ন : আরোগ্য লাভের জন্য সুতা বা বালা ব্যবহার করা যায় কি ?

২২। উত্তর : আরোগ্যের জন্য সুতা বা বালা ব্যবহার করা যাবে না, কেননা আল্লাহ্‌ তাআলা বলেন:

"আর আল্লাহ্‌ যদি তোমাকে কোন কষ্ট দেন, তবে তিনি ব্যতীত তা মোচনকারী আর কেউ নেই, পক্ষান্তরে তিনি

যদি তোমার কল্যাণ করেন, তবে তিনি সবকিছুর উপর ক্ষমতাবান।" সূরা আল আন্‌আম : ১৭

প্রখ্যাত সাহাবী হুজাইফা থেকে বর্ণিত, তিনি এক ব্যক্তিকে জ্বর থেকে বাঁচার জন্য হাতে সুতা পরিহিত অবস্থায়

দেখেন, তখন উক্ত সুতা কেটে ফেলে আল্লাহ্‌র এই বাণী পড়েন :

"তাদের অধিকাংশ আল্লাহ্‌কে বিশ্বাস করে, কিন্তু তাঁর সাথে শরীক করে।" সূরা ইউসুফ : ১০৬

২৩। প্রশ্ন : কুনজর থেকে বাঁচার জন্য পুঁতি, কড়ি বা এ ধরনের অন্য কোন বস্তু ঝুলানো যায় কি?

২৩। উত্তর : কুনজর থেকে বাঁচার জন্য এগুলি ঝুলানো যাবে না, কেননা আল্লাহ্‌ তাআলা বলেন :

"আর আল্লাহ্‌ যদি তোমাকে কোন কষ্ট দেন, তবে তিনি ব্যতীত তা মোচনকারী আর কেউ নেই।" সূরা আন্‌আম :

রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন : "যে ব্যক্তি তাবীজ-কবচ ঝুলাল সে শিরক করল।" মুসনাদে

অসীলা ও তার প্রকারভেদ

২৪। প্রশ্ন: কিসের মাধ্যমে আল্লাহ্‌র অসীলা বা নৈকট্যের মাধ্যম গ্রহণ করা যায়?

২৪। উত্তর : অসীলা বা নৈকট্য গ্রহণের উপায় দুই ধরনের হয়ে থাকে, (১) বৈধ (২) অবৈধ।

(১) বৈধ ও পালনীয় অসীলা গ্রহণের উপায় হলো :

(ক) আল্লাহ্‌ তাআলার নাম ও গুনাবলির মাধ্যমে

(খ) সৎ কর্মের মাধ্যমে ও

(গ) জীবিত সৎ ব্যক্তিদের দুআর মাধ্যমে

আল্লাহ্‌ তাআলা বলেন :

"আল্লাহ্‌র জন্য রয়েছে সুন্দর সুন্দর নাম, অতএব তোমরা তাঁকে সেই সব নামেই ডাকবে।" সূরা আল আ'রাফ : ১৮০

"হে মু'মিনগণ! আল্লাহ্‌কে ভয় কর, তাঁর নৈকট্য লাভের উপায় অন্বেষণ কর।" আল-মায়িদাহ্‌ : ৩৫

(অর্থাৎ তাঁর আনুগত্য এবং তাঁর পছন্দনীয় কাজের মাধ্যমে তাঁর নৈকট্য লাভ কর।)

রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহ্‌ আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন : "(হে আল্লাহ্‌ !) আমি তোমার নিকট ঐ সমস্ত নামের

(অসীলায়) মাধ্যমে প্রার্থনা করি যে সমস্ত নামে তুমি নিজের নামকরন করেছ।" (মুসনাদে আহ্‌মাদ)

রাসূল এবং অলীদের প্রতি আল্লাহ্‌র ভালবাসার ওসীলা এবং রাসূল ও অলীদের প্রতি আমাদের ভালবাসার ওসীলা

গ্রহণ জায়েয। কেননা তাদের ভালবাসাও সৎকর্মের অন্তর্ভুক্ত।

অতএব, আমরা এভাবে বলতে পারি : (হে আল্লাহ্‌ ! তোমার রাসূল ও অলীদের প্রতি ভালবাসার ওসীলায় আমাদেরকে

সাহায্য কর এবং তোমার রাসূল ও অলীদের প্রতি তোমার ভালবাসার অসীলায় আমাদের রোগ মুক্ত কর।)"

২। অবৈধ অসীলা গ্রহণের রূপ : মৃত ব্যক্তির নিকট প্রার্থনা, তাঁর নিকট প্রয়োজনীয় বস্তু চাওয়া। যেমন

বর্তমানে কতক মুসলিম দেশে তা রয়েছে, এটি বড় শিরকের অন্তর্ভুক্ত। আল্লাহ্‌ তাআলা বলেন :

"আর আল্লাহ্‌ ব্যতীত অন্য কাউকে ডাকবে না, যা তোমার উপকারও করে না, অপকারও করে না। যদি তা কর তবে

তুমি অবশ্যই জালিমদের অন্তর্ভুক্ত হবে।" সূরা ইউনুস : ১০৬ অর্থাৎ মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত হবে।

يَأَيُّهَا الَّذِيْنَ آمَنُوْا اتَّقُوْا اللهَ وَابْتَغُوْا إِلَيْهِ الْوَسِيْلَةَ

لاَ تَدْعُوْ مِنْ دُوْنِ اللهِ مَا لاَ يَنْفَعُكَ وَلاَ يَضُرُّكَ فَإِنْ فَعَلْتَ فَإِنَّكَ إِذًا مِنَ الظَّالِمِيْنَ

পক্ষান্তরে রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মর্যাদার অসীলা গ্রহণ করা। যেমন, কেউ বলল : "হে

আল্লাহ, মুহাম্মাদের মর্যাদার ওসীলায় আমার রোগ মুক্ত কর।" এ ধরনের কথাতেও চিন্তার বিষয় রয়েছে। কারণ,

সাহাবায়ে কেরাম কখনো এ ধরনের অসীলা করেননি। খলীফা ওমর রা. রাসূলের মৃত্যুর পর তাঁর ওসীলা গ্রহণ না করে

তাঁর জীবিত চাচা আব্বাসের দোআর অসীলা গ্রহণ করেছেন। অতএব, অতএব কেউ যদি বিশ্বাস করে যে, আল্লাহ্‌

কোন ব্যক্তির মধ্যস্থতার মুখাপেক্ষী, তবে উক্ত ওসীলা শিরকের পর্যায়ে যেতে পারে। যেমন : আমীর ও রাষ্ট্র

প্রধান মধ্যস্থতার মুখাপেক্ষী। এটা প্রকৃত পক্ষে সৃষ্টিকর্তার সাথে সৃষ্টি জীবের সাদৃশ্য স্থাপন করার ন্যায়।

ইমাম আবু হানীফা বলেন : "আমি আল্লাহ্‌ ব্যতীত অন্যের মাধ্যমে প্রার্থনা করা মাকরূহ মনে করি।" (দুররে

দুআ ও তার বিধান

২৫। প্রশ্ন : দুআ কবুল হওয়ার জন্য কোন সৃষ্টিজীবকে মাধ্যম করা কি জরূরী?

২৫। উত্তর : দুআর জন্য কোন সৃষ্টিজীবকে মাধ্যম করার প্রয়োজন নেই। আল্লাহ্‌ তাআলা বলেন :

"আমার বান্দাগণ যখন তোমাকে আমার সম্মন্ধে প্রশ্ন করে, আমি তো নিকটেই।" সূরা আল-বাকারা : ১৮৬

রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহ্‌ আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন : "নিশ্চয় তোমরা নিকটতম সর্বশ্রোতাকে ডাকছ, যিনি

তোমাদের সাথেই রয়েছেন।" (মুসলিম) অর্থাৎ তিনি তোমাদের সব কিছু শুনেন ও দেখেন।)

২৬। প্রশ্ন : জীবিত ব্যক্তির নিকটে প্রার্থনা জায়েয কি?

২৬। উত্তর : হ্যাঁ, প্রার্থনা মৃত ব্যক্তির নিকট নয়, জীবিত (উপস্থিত) ব্যক্তির নিকট জায়েয।

আল্লাহ্‌ তাআলা রাসূলের জীবদ্দশায় তাঁকে সম্মোধন করে বলেন:

"আর ক্ষমা প্রার্থনা কর তোমার এবং মু'মিন নর-নারীদের পাপের জন্য।" সূরা মুহাম্মাদ : ১৯

তিরমিজী বর্ণীত সহীহ্‌ হাদীসে এসেছে : "দৃষ্টি শক্তিহীন এক ব্যক্তি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম-এর

নিকট এসে বলল : আল্লাহ্‌র কাছে দুআ করেন যেন আল্লাহ্‌ আমাকে আরোগ্য দান করেন। তিনি বলেন : যদি তুমি চাও

দুআ করব, আর যদি চাও ধৈর্যধারন কর, তবে তাই তোমার জন্য উত্তম।

২৭। প্রশ্ন : রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর শাফাআত কার নিকট চাইতে হবে ?

২৭। উত্তর : রাসূলের শাফায়াত আল্লাহ্‌র নিকট চাইতে হবে। আল্লাহ্‌ তাআলা বলেন

"বল, সকল সুপারিশ আল্লাহ্‌রই ইখতিয়ারে..." সূরা যুমার : ৪৪

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জনৈক সাহাবীকে শিক্ষাদান কল্পে বলেন, বল, "হে আল্লাহ, তাঁকে আমার

সুপারিশকারী নিয়োগ কর।" অর্থাৎ রাসূলকে আমার সুপারিশকারী বানাও। (তিরমিজী: হাসান, সহীহ)

তিনি আরো বলেন : "আমি আমার উম্মতের জন্য কিয়ামত পর্যন্ত আমার সুপারিশের প্রার্থনা গোপন রেখেছি।

আল্লাহ্‌র ইচ্ছায় কিয়ামত দিবসে এ সুপারিশ আমার উম্মতের প্রত্যেক ঐ ব্যক্তি প্রাপ্ত হবে, যে আল্লাহ্‌র সাথে

কোন কিছু শরীক না করে মৃত্যুবরণ করল।" মুসলিম

২৮। প্রশ্ন : জীবিত ব্যক্তির নিকট কি সুপারিশ চাওয়া যাবে ?

২৮। উত্তর : জীবিত ব্যক্তির নিকট পার্থিব্য জগতের ব্যাপারে সুপারিশ চাওয়া যাবে। আল্লাহ্‌ তাআলা বলেন

مَنْ يَّشْقَعْ شَفَاعَةً حَسَنَةُ يَكُنْ لَّهُ نَصِيْبٌ مِّنْهَا وَمَنْ يَّشْفَعْ شَفَاعَةً سَيِّئَةُ يَكُنْ لَّهُ كِفْلٌ مِّنْهَا

"কেউ কোন ভাল কাজের সুপারিশ করলে তাতে তার অংশ থাকবে এবং কেউ কোন মন্দ কাজের সুপারিশ করলে তাতে

তার অংশ থাকবে...।" সূরা আন-নিসা : ৮৫ (অর্থাৎ সে তার ভাল-মন্দ সুপারিশের জন্য প্রতিদান পাবে)

রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহ্‌ আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: "সুপারিশ কর প্রতিদান পাবে।" আবু দাউদ


সূফীবাদ ও তার ভয়াবহতা

২৯। প্রশ্ন : সূফী ত্বত্তের ক্ষেত্রে ইসলামের বিধান কি?

২৯। উত্তর : সূফীবাদ রাসূল, সাহাবা ও তাবিয়ীদের যুগে ছিল না। পরবর্তী যুগে ইউনান তথা গ্রীক দর্শন আরবী

ভাষায় অনুবাদ হওয়ার পর তা প্রকাশ পায়।

ইসলামের সাথে সূফীবাদের বহুক্ষেত্রে বিরোধ রয়েছে। যেমন :

১। আল্লাহ্‌ ব্যতীত অন্যের নিকট প্রার্থনা : অধিকাংশ সূফীগণ আল্লাহ্‌ ব্যতীত মৃত ব্যক্তির নিকট প্রার্থনা

করে, অথচ রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহ্‌ আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : "দুআই হলো ইবাদত।" (তিরমিজী) কারণ,

আল্লাহ্‌ ব্যতীত অন্যের নিকট প্রার্থনা করা বড় শিরকের অন্তর্ভুক্ত যা সমস্ত সৎকর্ম নষ্ট করে দেয়।

২। অধিকাংশ সূফীগণ বিশ্বাস করে যে, আল্লাহ্‌ তাআলা স্বীয় স্বত্ত্বায় সর্বস্থানে বিরাজমান। অথচ তা কুরআন

বিরোধী। ইরশাদ হচ্ছে :

"দয়াময় 'আরশে' সমাসীন।" (তা-হা : ৫) (এর ব্যাখ্যায় বুখারীর ভাষ্য অনুযায়ী তিনি ওপরে ও উচ্চে অধিষ্টিত।)

৩। কতিপয় সূফীর বিশ্বাস, আল্লাহ্‌ তাআলা তাঁর সৃষ্টি জীবের ভিতরে অবতরণ করেন। যেমন ভ্রান্ত সূফী সম্রাট

ইব্‌নে আরাবী -যার কবর সিরিয়ার দামেস্কে- বলেন :

"বান্দাই তো রব আর রবই তো বান্দা। হায়! কিছুই বুঝিনা, কে আমল করার জন্য আদিষ্ট?"

তাদের আরেক তাগুত বলে: "কুকুর হোক আর শুকর হোক, সেই তো আমাদের মা'বুদ।"

৪। অধিকাংশ সূফীর ধারনা যে আল্লাহ্‌ তাআলা মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জন্য দুনিয়া সৃষ্টি

করেছেন। অথচ এটা কুরআন বিরোধী আক্বীদা। ইরশাদ হচ্ছে :

"আমি জ্বিন ও মানুষকে ইবাদতের জন্যই সৃষ্টি করেছি।" সূরা আজ-জারিয়াত : ৫৬

"আমি তো পরকাল ও ইহ্‌কালের মালিক।" সূরা আল-লাইল : ১৩

৫। অধিকাংশ সূফীর ধারণা আল্লাহ্‌ মুহাম্মাদকে স্বীয় নূর দ্বারা এবং মুহাম্মাদের নূর দ্বারা সব কিছু সৃষ্টি করেছেন,

মুহাম্মাদই হচ্ছে আল্লাহ্‌র প্রথম সৃষ্টি। তাদের এ ধারণা কুরআন বিরোধী।

৬। সুফীদের ইসলাম বিরোধী আকীদার কতিপয় নমুনা। যেমন: অলীদের নামে মান্নত করা, ওলীদের কবরের চারিপাশে

তওয়াফ করা, কবরের ওপর নির্মাণ কার্য করা, আল্লাহ্‌ ও রাসূল থেকে বর্ণিত হয়নি এমন বিশেষ পন্থায় জিকির

করা, জিকরের সময় নাচা-নাচি, ধুমপান বা গাঁজা খাওয়া, তাবীজ-কবচ, জাদু, ভেল্কিবাজী, অন্যের মাল-সম্পদ নানা

প্রতারনায় ভক্ষণ এবং তাদের উপর বিভিন্ন ছলনা, বাহানা করা প্রভৃতি অনেক ধরনের ভ্রান্ত আক্বীদা ও

কার্যকলাপ দেখা যায় তাদের মধ্যে।

আল্লাহ্‌ ও তাঁর রাসূলের কথার ক্ষেত্রে আমাদের অবস্থান

৩০। প্রশ্ন : আমরা আল্লাহ্‌ এবং তার রাসূলের কথার ওপর কারো কোন কথাকে অগ্রাধিকার দেব কি?

৩০। উত্তর : আমরা আল্লাহ্‌ এবং তাঁর রাসূলের কথার ওপর কারো কোন কথা অগ্রাধিকার দেব না। আল্লাহ্‌

َيأَيُّهَا الَْذِيْنَ آمَنُوْا لاَ تُقَدِّمُوْا بَيْنَ يَدَيِ اللهِ وَرَسُوْلِهِ

"হে মু'মিনগণ! আল্লাহ্‌ ও তাঁর রাসূলের সামনে তোমরা কোন বিষয়ে আগে বেড়ে যেও না।" সূরা আল-হুজুরাত : ১

রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন : "সৃষ্টিকর্তার অবাধ্যতায় কোন সৃষ্টিজীবের আনুগত্য চলবে

সাহাবী ইব্‌নে আব্বাস রা. বলেন : "আমি তাদেরকে দেখছি, তারা অতি সত্বর ধ্বংস হয়ে যাবে। আমি বলি 'নবী

সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন', এর বিপরীতে তারা বলে, 'আবু বকর-ওমর বলেছে!" মুসনাদে আহ্‌মাদ ও

৩১। প্রশ্ন : দ্বীনের ক্ষেত্রে মতবিরোধ হলে আমাদের করণীয় কি?

৩১। উত্তর : আমরা কুরআন ও সহীহ হাদীসের আশ্রয় গ্রহণ করব। আল্লাহ্‌ তাআলা বলেন :

"কোন বিষয়ে তোমাদের মধ্যে মতভেদ ঘটলে তা আল্লাহ্‌ ও রাসূলের দিকে উপস্থাপিত কর, যদি তোমরা আল্লাহ্‌

ও কিয়ামত দিবসের ওপর বিশ্বাসী হয়ে থাক। আর এটাই কল্যাণ কর এবং পরিণতির দিক দিয়ে উত্তম।" সূরা

রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন : "আমি তোমাদের মধ্যে দুটি বস্তুই রেখে গেলাম, যতক্ষণ

পর্যন্ত তোমরা এই দুটি বস্তুকে মজবুতভাবে ধরে থাকবে কোনক্রমেই পথভ্রষ্ট হবে না। আল্লাহ্‌র কিতাব আর

আমার সুন্নাত।" হাদীসটি ইমাম মালেক বর্ণনা করেছেন এবং আল-বানী তাঁর সহীহ্‌ জামেতে সহীহ বলেছেন।

৩২। প্রশ্ন : কেউ যদি মনে করে তার প্রতি শরীয়তের আদেশ-নিষেধ রক্ষা করা জরুরী নয়, তবে তার বিধান কি ?

৩২। উত্তর : উক্ত ব্যক্তি কাফের, মুরতাদ এবং মিল্লাতে ইসলাম বহির্ভুত। কারণ, দাসত্ব একমাত্র আল্লাহ্‌র

জন্য। যা কালেমায়ে শাহাদাতের স্বীকারোক্তির মাধ্যমে প্রমাণ হয়। তাই যতক্ষণ পর্যন্ত বাস্তব জগতে

আল্লাহ্‌র পরিপূর্ণ ইবাদত না করা হবে ততক্ষণ তাঁর দাসত্ব প্রমাণ হবে না। যার ভেতর রয়েছে ইসলামের মৌলিক

আকীদা, ইবাদতের নিদর্শনসমূহ, শরীয়ত ভিত্তিক ফয়সালা, জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে আল্লাহ্‌র বিধান বাস্তবায়ন

ইত্যাদি। আল্লাহ্‌র নাজিলকৃত বিধানের বাইরে হালাল-হারাম সাব্যস্ত করা সরাসরি শিরকের অন্তর্ভূক্ত এবং তা

ইবাদতে শিরিক করার সমতুল্যও বটে।

فَإِنْ تَنَازَعْتُمْ فِيْ شَيْءٍ فَرُدُّوْهَ إِلَى اللهِ وَالرَّسُوْلِ إِنْ كُنْتُمْ تُؤْمِنُوْنَ بِاللهِ وَالْيَوْمِ الآخِرَ ذَلِكَ خَيْرٌ وَأَحْسَنُ تَأْوِيْلاً

কবর যিয়ারত ও তার আদব

৩৩। প্রশ্ন : কবর যিয়ারতের বিধান কি ? এবং আমরা কেন কবর যিয়ারত করি?

৩৩। উত্তর : মহিলা ব্যতীত শুধু পুরুষের জন্য কবর যিয়ারত সাধারণত মুস্তাহাব।


কবর যিয়ারতের কিছু উপকারীতা ও কতিপয় আদব নিম্নে বিধৃত হল :

১। জিয়ারতকারীর জন্য কবর যিয়ারত উপদেশ ও নসীহত স্বরূপ। এর ফলে মৃত্যুর কথা স্বরণ হয়, যা সৎকর্মের

রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন : "আমি তোমাদেরকে কবর যিয়ারত নিষেধ করেছিলাম, তবে

এখন তোমরা যিয়ারত করতে পারো।" (মুসলিম)

মুসনাদে আহ্‌মাদ ও অন্য কিতাবে একটি বর্ণনায় এসেছে : "কবর যিয়ারত তোমাদেরকে পরকাল স্বরণ করিয়ে দেয়।"

২। আমরা কবরস্থানে গিয়ে মৃতদের জন্য এস্তেগফার করব, ক্ষমা চাইব। আল্লাহ্‌কে বাদ দিয়ে তাদের নিকট কোন

প্রার্থনা কিংবা তাদের কোন দুআ কামনা করব না।

রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবাদেরকে কবরস্থানে গিয়ে নিম্নের দোয়াটি পড়ার দীক্ষা দিয়েছেন

" اَلسَّلاَمُ عَلَيْكُمْ أَهْلَ الدِّيَارِ مِنَ الْمُؤْمِنِيْنَ وَالْمُسْلِمِيْنَ ، وَإِنَّا إِنْ شَاءَ اللهُ بِكُمْ لَلاَحِقُوْنَ ، أَسْاَلُ اللهَ لَنَا وَلَكُمُ الْعَافِيَةَ "

অর্থ "হে মু'মিন ও মুসলিম কবরবাসীগণ তোমাদের প্রতি সালাম, ইন্‌শাআল্লাহ্‌ আমরাও তোমাদের সাথে অবশ্যই

মিলিত হবো, আমি আল্লাহ্‌র নিকট আমাদের ও তোমাদের জন্য শান্তি কামনা করছি।" (মুসলিম)

৩। কবরের ওপর বসা ও তার দিক ফিরে নামায পড়া নিষেধ। রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন :

"কবরের ওপর তোমরা বসবে না এবং তার দিকে ফিরে নামায আদায় করবে না।" (মুসলিম)

৪। কবরস্থানে কোরআন মজীদ এমনকি সূরা ফাতেহাও পড়া যাবে না। রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম

বলেন : "তোমরা তোমাদের ঘর-বাড়ীকে কবরস্থান বানিয়ে নিওনা, কেননা যে ঘরে সূরা বাকারা পড়া হয় শয়তান সে

ঘর থেকে পলায়ন করে।" (মুসলিম)

উল্লেখিত হাদীস থেকে প্রমাণ হয় যে, কবরস্থান কোরআন তেলাওয়াতের স্থান নয়, কোরআন তেলাওয়াতের স্থান

বাড়ী। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর সাহাবা থেকে কোন প্রমাণ নেই যে, তাঁরা মৃতদের জন্য

কোরআন পড়েছেন; হ্যাঁ, তাঁরা মৃতদের জন্য দুআ করেছেন। রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন মৃত

ব্যক্তির দাফন সম্পন্ন করতেন, তার নিকট দাঁড়িয়ে বলতেন : "তোমরা তোমাদের ভাইয়ের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা

কর এবং তার সুদৃঢ় হওয়ার জন্য দুআ কর। যেহেতু এখন সে জিজ্ঞাসিত হবে।" (হাকেম)

৫। কবরে বা মাজারে পুষ্পমাল্য বা ফুল অর্পণ করা যাবে না। এ আমল রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও

তাঁর সাহাবাগণ থেকে প্রমাণিত নয়, এটা খৃষ্টানদের কালচার। আমরা যদি উক্ত পুস্পমাল্যের খরচটা ফকীর-

মিসকীনকে দেই তবে তাতে মৃত ব্যক্তি ও ফকীর-মিসকীন উভয়ে লাভবান হবে।

৬। কবর প্লাষ্টার, পেইন্ট ও উঁচু করা এবং কবরে নির্মাণ কার্য করা নিষেধ। হাদীসে বর্ণিত : "রাসূলুল্লাহ্‌

সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কবরে নির্মাণ কাজ ও প্লাষ্টার করতে নিষেধ করেছেন।" মুসলিম

৭। প্রিয় মুসলিম ভাই! মৃত ব্যক্তির নিকট দুআ চাওয়া ও তাদের নিকট সাহায্য প্রার্থনা করা থেকে বিরত থাকুন।

মৃতরা সামর্থহীন, বরং এক আল্লাহ্‌কে ডাকুন, তিনি সর্ব শক্তিমান ও দুআ কবুল করেন। উপরুন্তু মৃত ব্যক্তিদের

নিকট কিছু প্রার্থনা করা শিরকে আকবরের অন্তর্ভুক্ত।


কবরে সিজদা ও তাওয়াফ করা

৩৪। প্রশ্ন : কবরে সিজদা ও সেখানে জবেহ্‌ করার বিধান কি ?

৩৪। উত্তর : কবরে সিজদা ও পশু জবেহ করা জাহেলী যুগের মুর্তিপুজা তুল্য এবং বড় শিরক। কারণ, সিজদা ও পশু

উৎসর্গ করা ইবাদত, যা এক আল্লাহ্‌ ব্যতীত অন্য কারো জন্য বৈধ নয়। যে ব্যক্তি আল্লাহ্‌ ব্যতীত অন্য

কাউকে সেজদা করল কিংবা অন্য কারো উদ্দেশ্যে জবেহ করল, সে মুশরিক হয়ে গেল।

আল্লাহ্‌ তাআলা বলেন :

"বল, নিশ্চয় আমার নামায, আমার কুরবানী, আমার জীবন, আমার মৃত্যু, জগতসমূহের প্রতিপালক আল্লাহ্‌র জন্য

নিবেদিত। তাঁর কোন শরীক নেই, আর আমি এর প্রতি আদিষ্ট হয়েছি এবং আমিই প্রথম মুসলমান।" সূরা আল-

আন্‌আম : ১৬২ - ১৬৩)

আল্লাহ্‌ তাআলা আরো বলেন :

قُلْ إِنَّ صَلاَتِيْ وَنُسُكِيْ وَمَحْيَايَا وَمَمَاتِيْ لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِيْنَ لاَ شَرِيْكَ لَهُ وَبِذَلِكَ أُمِرْتُ وَأَنَا أَوَّلُ الْمُسْلِمِيْنَ

"আমি অবশ্যই তোমাকে (হাউজে) কাওসার দান করেছি, সুতরাং তুমি তোমার রবের উদ্দেশ্যে নামায আদায় কর

এবং কুরবানী কর।" সূরা আল-কাওসার : ১-২

এছাড়া আরো বহু আয়াত রয়েছে যার দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, সিজদা, পশু উৎসর্গ করে জবেহ করা ইবাদতের

অন্তর্ভুক্ত, যা আল্লাহ্‌ ব্যতীত অন্য কারো উদ্দেশ্যে করা শিরকে আকবর।

৩৫। প্রশ্ন : অলীদের কবরের চারিপার্শ্বে তাওয়াফ করার বিধান কি ? অলীদের উদ্দেশ্যে পশু উৎসর্গ বা জবেহ

করা অথবা মান্নত করার বিধান কি ? ইসলামের দৃষ্টিতে জীবিত বা মৃত অলীদের নিকট দুআ প্রার্থনা কি জায়েয?

৩৫। উত্তর : মৃত অলীদের উদ্দেশ্যে পশু উৎসর্গ বা জবেহ করা ও মান্নত করা শিরকে আকবর। অলী বলতে বুঝায়

যে ব্যক্তি তাকওয়া অবলম্বনের মাধ্যমে আল্লাহ্‌র বন্ধুত্ব লাভ করেছে এবং শরীয়তের বিধি-নিষেধগুলো যথাযথ

পালন করে। যদিও তার থেকে কোন কারামত প্রকাশ না পায়।

মৃত অলী বা অন্যদের কাছে দুআ প্রার্থনা জায়েজ নয়, জীবিত সৎ ব্যক্তিদের নিকট দুআ চাওয়া জায়েয। কবরের

চতুর্পাশে তাওয়াফ করা জায়েয নয়, তা একমাত্র কা'বা শরীফের বৈশিষ্ট। কেউ যদি কবরবাসীর নৈকট্য অর্জনের

উদ্দেশ্যে তাওয়াফ করে তবে তা বড় শিরকের অন্তর্ভুক্ত বলেই গণ্য। আল্লাহ্‌র নৈকট্য লাভের উদ্দেশ্য হলেও এটা

জঘন্যতম বিদয়াত। কারণ, কবর ত্বওয়াফ কিংবা নামাজের জন্য নয়। যদিও আল্লাহ্‌র সন্তুষ্টি কামনা উদ্দেশ্য

আল্লাহ্‌র পথে দাওয়াতের বিধান

৩৬। প্রশ্ন : আল্লাহ্‌র পথে দাওয়াত এবং ইসলামের জন্য কাজ করার বিধান কি ?

৩৬। উত্তর : আল্লাহর পথে দাওয়াত দেয়া প্রত্যেক মুসলমানের দায়িত্ব। কুরআন-হাদীস কর্তৃক প্রত্যেকেই এর

দায়িত্বপ্রাপ্ত। এর জন্য আল্লাহর সরাসরি নিদের্শও বিদ্যমান রয়েছে। আল্লাহ তাআলা বলেন :

"তুমি তোমার রবের পথে হিকমত ও উত্তম ওয়াজ-নসিহতের মাধ্যমে আহ্বান কর।" সূরা আন-নাহাল : ১২৫

আল্লাহ্‌ আরো বলেন :

"তোমরা আল্লাহ্‌র পথে জিহাদ কর যেভাবে জিহাদ করা উচিত।" সূরা আল-হজ : ৭৮

অতএব, প্রত্যেক মুসলমানের উচিত সার্বিকভাবে জিহাদে অংশ নেয়া। এবং সামর্থের সবটুকু উজাড় করে দেয়া।

বিশেষ করে বর্তমান যুগে ইসলামের কাজ করা, আল্লাহ্‌র পথে দাওয়াত ও তাঁর পথে জিহাদ করা অত্যন্ত জরুরী হয়ে

পড়েছে বরং প্রত্যেক মুসলমানের জন্য তা আবশ্যক হয়ে গেছে। অতএব, এর থেকে বিমুখ ব্যক্তি আল্লাহ্‌র দরবারে

পাপী-গুনাহ্‌গার বলে বিবেচিত হবে।

৩৭। প্রশ্ন : নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কবর বা অন্য নবী এবং সৎ ব্যক্তিদের কবর স্পর্শ করা

এমনিভাবে মাকামে ইব্‌রাহীম, কাবা ঘরের দেয়াল-গেলাফ এবং দরজা স্পর্শ করার বিধান কি ?

৩৮। উত্তর : কবর স্পর্শ করার ব্যাপারে আবুল আব্বাস রাহেমাহুল্লাহ্‌ বর্ণনা করেন :

উলামায়ে কেরাম এ ব্যাপারে একমত যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বা অন্য কোন নবী বা সৎ

ব্যক্তিদের কবর যিয়ারত করার সময় হাত দিয়ে স্পর্শ কিংবা মুখ দিয়ে চুম্বন করা যাবে না। দুনিয়াতে জড় পদার্থের

মধ্যে হজরে আসওয়াদ (কালো পাথর) ব্যতীত কোন বস্তু চুম্বন দেয়া বৈধ নয়। বুখারী ও মুসলিমে বর্ণিত হয়েছে,

ওমর রাযিয়াল্লাহু আনহু হজরে আসওয়াদকে উদ্দেশ্য করে বলেন : "আল্লাহ্‌র শপথ ! নিশ্চয় আমি জানি যে, তুমি

একটি পাথর মাত্র। তুমি ক্ষতিও করতে পারবে না উপকারও করতে পারবে না। অতএব, আমি যদি রাসূলুল্লাহকে

اُدْعُ إِلَى سَبِيْلِ رَبِّكَ بِالْحِكْمَةِ وَالْمَوْعِظَةِ الْحَسَنَةِ

চুম্বন দিতে না দেখতাম তবে আমি তোমাকে চুম্বন করতাম না।" আর চুম্বন দেয়া ও স্পর্শ করা শুধুমাত্র

বায়তুল্লাহ্‌র (কাবা শরীফের) কোণের জন্য নির্ধারিত। অতএব আল্লাহ্‌র ঘরের সাথে সৃষ্টি জীবের ঘরের তুলনা

ইমাম গায্‌যালী রাহেমাহুল্লাহ্‌ বলেন : "কবর স্পর্শ করা ইহুদী ও খৃষ্টানদের অভ্যাস।"

মাকামে ইব্‌রাহীমের ব্যাপারে কাতাদা বলেন : "মাকামে ইব্‌রাহীমের নিকট নামায পড়ার জন্য আদেশ করা হয়েছে তা

স্পর্শ করার জন্য আদেশ করা হয়নি।"

ইমাম নবভী বলেন : "মাকামে ইব্‌রাহীম চুম্বন ও স্পর্শ করা যাবে না, এটা বিদআত।"

কাবা ঘরের অন্যান্য অংশ সম্পর্কে আবুল আব্বাস বর্ণনা করেন: চার ইমাম ও অন্যান্য ইমামদের মতে রুকনে

ইয়ামানীকে শুধু হাত দিয়ে স্পর্শ এবং হজরে আসওয়াদকে মুখ দিয়ে চুম্বন ও হাত দিয়ে স্পর্শ করা যাবে। এ ছাড়া

অবশিষ্ট দুই কোণ বা কাবা শরীফের অন্যান্য অংশ চুম্বন কিংবা স্পর্শ করা যাবে না। যেহেতু নবী সাল্লাল্লাহু

আলাইহি ওয়াসাল্লাম রুকনে ইয়ামানী ও হজরে আসওয়াদ ব্যতীত অন্য কিছু স্পর্শ করেননি।

অতএব, যেখানে উক্ত দুই কোণ ব্যতীত কাবার অন্য কোন অংশ স্পর্শ ও চুম্বন জায়েয নেই, অথচ তা

বাইতুল্লাহর অংশ, সেখানে কাবা শরীফের গেলাফ, দরজা ও মক্কা-মদীনা মসজিদের দরজাসমূহ স্পর্শ ও চুম্বন করার

বৈধতার প্রশ্নই আসে না।



অনুবাদক : মুহাম্মাদ আব্দুর রব আফ্‌ফান
লেখক : শায়খ মুহাম্মাদ জামীল যাইনু
تأليف: محمد جميل زينو
ترجمة: محمد عبد الرب عفان
সম্পাদনা : সানাউল্লাহ নজির আহমদ
مراجعة: ثناء الله نذير أحمد
সূত্র : ইসলাম প্রচার ব্যুরো, রাবওয়াহ, রিয়াদ, সৌদিআরব
المكتب التعاوني للدعوة وتوعية الجاليات بالربوة بمدينة الرياض

105
অলী আওলিয়াদের অসীলা গ্রহণ : ইসলামি দৃষ্টিকোণ




بسم الله الرحمن الرحيم

الحمد لله والصلاة والسلام على من لا نبي بعده

সকল প্রশংসা মহান রাব্বুল আলামীন আল্লাহর জন্য। সালাত ও সালাম নিবেদন করছি আমাদের সর্বশেষ নবী

মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তার সকল সাহাবীগণের প্রতি।

বর্তমান সময়ে আমরা দেখতে পাচ্ছি ইসলাম সম্পর্কে যথাযথ জ্ঞান না থাকার কারণে বা ইসলাম সম্পর্কে

উদাসীনতার কারণে ইসলাম ধর্মের নামে অনেক অনাচার, কুসংস্কৃতি, শিরক ও বিদআত প্রচলিত আছে ও প্রচলন

ঘটছে। এর মধ্যে একটি হল, অলী আওলিয়াদের অসীলা দিয়ে দুআ-প্রার্থনা করা, তাদের কাছে সাহায্য চাওয়া, তারা

ভাল-মন্দ কিছু করতে পারে বলে বিশ্বাস রাখা, তাদের সন্তুষ্টি অর্জনের মাধ্যমে আল্লাহর রহমত লাভ করা যাবে

বলে বিশ্বাস করা। এ উদ্দেশ্যে তাদের কবর যিয়ারত করা, তাদের কবর তওয়াফ করা, কবরে উরস উৎসব

আয়োজন করা ইত্যাদি। অনেক মুসলিম এ সকল কাজ এ ধারনার ভিত্তিতেই করে যে, এই কবরে শায়িত অলী

আওলিয়ারা আমাদের প্রতি সন্তুষ্ট হলে আল্লাহর রহমত লাভ করা যাবে। অথবা তাদেরকে অসীলা বা মাধ্যম হিসাবে

গ্রহণ করলে আল্লাহ আমাদের উপর সন্তুষ্ট হবেন। তাদেরকে অসীলা হিসাবে গ্রহণ করতে যেয়ে তারা তার মাধ্যমে

বা তার নামে বিপদ থেকে মুক্তি কামনা করে আল্লাহর কাছে। অনেকে সরাসরি তাদের কাছেই নিজেদের প্রয়োজন ও

অভাব পুরণের জন্য প্রার্থনা করে। বিপদ থেকে উদ্ধার কামনা করে। তারা মনে করে এ ধরণের অসীলা গ্রহণ করতে

ইসলামে নিষেধ নয়। বরং এদের অনেকে মনে করে এ ধরনের অসীলা গ্রহণ ইসলামে একটি ভাল কাজ।

কিন্তু আসলে অসীলা গ্রহণ কী? এর বৈধতা কতটুকু?

বইটিতে এ বিষয়টি নিয়েই আলোচনা করার প্রয়াস পাবো ইনশাআল্লাহ।

সত্যিকার অসীলা হল, আল্লাহ তাআলার আনুগত্য ও রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর অনুসরণের

মাধ্যমে সৎকর্ম করা আর নিষিদ্ধ ও হারাম কথা-কর্ম থেকে বেঁচে থাকা। আর নেক আমল সম্পাদন করার মাধ্যমে

আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করা হল সত্যিকার অসীলা। তা ছাড়া আল্লাহর সুন্দর নামসমূহ ও গুণাবলির মাধ্যমে

অসীলা গ্রহণের কথা আল্লাহ তাআলা নিজেই বলেছেন।

কিন্তু মৃত অলী আওলিয়াদের কবরের কাছে যাওয়া, কবর তওয়াফ করা, কবরে-মাজারে মানত করা, কবরে শায়িত

ব্যক্তির উদ্দেশ্যে প্রার্থনা করা, তার কাছে নিজের অভাব অভিযোগের কথা বলা ইত্যাদি কাজ-কর্মের মাধ্যমে

অসীলা গ্রহণ শুধু নিষিদ্ধই নয় বরং এগুলো শিরক ও কুফরী। এগুলোতে কেহ লিপ্ত হলে তার ঈমান নষ্ট হয়ে যায়।

নাউজুবিল্লাহ!

এ গেল মৃত অলী আওলিয়াদের অসীলা গ্রহণ সম্পর্কে। আবার অনেকে জীবিত ব্যক্তিদের মাধ্যমে নাজায়েয অসীলা

গ্রহণ করে থাকে। তাদের ব্যাপারে বাড়াবাড়ি করে থাকে। যেমন গরু, ছাগল, মুরগী জবেহ করার সময় বলে থাকে:

আমাদের পীর সাবের নামে বা আমার বাবার নামে জবেহ করলাম। অথবা নিজের পীর বা পীরের পরিবারের লোকদের

সম্মানের জন্য সেজদা করে থাকে। এগুলো সবই শিরক এবং শিরকে আকবর বা বড় শিরক। অনেকে নিজের জীবিত

পীর ফকীরদের সম্পর্কে ধারনা করে থাকে যে, আল্লাহ তাআলার সাথে তার বিশেষ যোগাযোগ বা সম্পর্ক আছে,

তাই তার মাধ্যমে আল্লাহকে পাওয়া যাবে, এটাও শিরক।

যারা একদিন লাত উজ্জা প্রভৃতি দেব-দেবীর পূজা করতো, তারা কিন্তু এ বিশ্বাস করতো না যে এগুলো হল

তাদের প্রভূ বা সৃষ্টিকর্তা। বরং তারা বিশ্বাস করতো এগুলোর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের মাধ্যমে বা তাদেরকে

অসীলা হিসাবে গ্রহণ করে তারা আল্লাহ নৈকট্য অর্জন করবে। তারা এটাও বিশ্বাস করতো না যে, এ সকল দেব-

দেবী বৃষ্টি দান করে বা রিযক দান করে। তারা বলতো :

আমরা তো তাদের ইবাদত করি এ জন্য যে তারা আমাদের আল্লাহর নিকটবর্তী করে দেবে। (সূরা যুমার, আয়াত ৩)

তারা এ সম্পর্কে আরো বলতো :

এরা (দেব-দেবী) আমাদের জন্য আল্লাহর কাছে শুপারিশ করবে। (সূরা ইউনূস, আয়াত ১৮)

দেখা গেল তারা এ অসীলা গ্রহণের কারণেই শিরকে লিপ্ত হয়ে পড়লো। আর এ শিরকের বিরুদ্ধে তাওহীদের দাওয়াতের

জন্যই আল্লাহ তাআলা রাসূলগণকে পাঠালেন যুগে যুগে, প্রতিটি জনপদে। এ সকল দেব-দেবীর কাছে যেমন

প্রার্থনামূলক দুআ করা শিরক তেমনি সাহায্য প্রার্থনা করে দুআ করাও শিরক।

আল্লাহ তাআলা বলেন:

বল, তাদেরকে ডাক, আল্লাহ ছাড়া তোমরা যাদেরকে (উপাস্য) মনে কর। তারা তো তোমাদের দুঃখ-দুর্দশা দূর

করার ও পরিবর্তন করার ক্ষমতা রাখে না।  (সূরা ইসরা, আয়াত ৫৬)

আল্লাহ তাআলা আরো বলেন:

قُلِ ادْعُوا الَّذِينَ زَعَمْتُمْ مِنْ دُونِ اللَّهِ لَا يَمْلِكُونَ مِثْقَالَ ذَرَّةٍ فِي السَّمَاوَاتِ وَلَا فِي الْأَرْضِ وَمَا لَهُمْ فِيهِمَا مِنْ شِرْكٍ وَمَا لَهُ مِنْهُمْ مِنْ ظَهِيرٍ

বল, তোমরা আল্লাহ ছাড়া যাদেরকে ইলাহ মনে করতে তাদেরকে আহবান কর। তারা আসমানসমূহ ও যমীনের মধ্যে

অণু পরিমাণ কোন কিছুর মালিক নয়। আর এ দুয়ের মধ্যে তাদের কোন অংশীদারিত্ব নেই এবং তাদের মধ্য থেকে

কেউ তাঁর সাহায্যকারীও নয়। আর আল্লাহ যাকে অনুমতি দেবেন সে ছাড়া তাঁর কাছে কোন সুপারিশ কোন কাজে

আসবে না। (সূরা সাবা, আয়াত ২২-২৩)


قُلِ ادْعُوا الَّذِينَ زَعَمْتُمْ مِنْ دُونِهِ فَلَا يَمْلِكُونَ كَشْفَ الضُّرِّ عَنْكُمْ وَلَا تَحْوِيلًا. (الإسراء : 56)

﴿22﴾ وَلَا تَنْفَعُ الشَّفَاعَةُ عِنْدَهُ إِلَّا لِمَنْ أَذِنَ لَهُ. (سبأ : 22-23)

এ সকল আয়াতে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বললেন: আল্লাহ ব্যতীত যাদেরকে ডাকা হয়, যাদের কাছে দুআ-প্রার্থনা

করা হয় তারা অনু পরিমাণ বস্তু সৃষ্টি করতে পারে না। তারা কোন সৃষ্টি জীবের সামান্য কল্যাণ করার ক্ষমতা

রাখে না। তারা আশ্রয় প্রার্থনাকারীকে কোন আশ্রয় দেয়ার সামর্থ রাখে না।

নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কবরকে মসজিদ বানাতে নিষেধ করেছেন। কবরের কাছে নামাজ পড়তে

নিষেধ করেছেন। কবরকে সেজদা দিতে নিষেধ করেছেন। তিনি ওফাতের সময়ও বলেছেন:

আল্লাহ তাআলা ইহুদী ও খৃষ্টানদের অভিসম্পাত করুন। তারা নবীদের কবরকে ইবাদতের স্থান হিসাবে গ্রহণ করেছে।

আর ইবাদত-বন্দেগীর দ্বারা কবরকে সম্মান করা হল শিরকে লিপ্ত হওয়ার একটি রাস্তা। এভাবে কবরকে পূজা

করার মাধ্যমেই মানুষ মূর্তি পূজার দিকে ধাবিত হয়।

ওমর রা. দুআর সময় আব্বাস রা. কে অসীলা হিসাবে গ্রহণ করেছিলেন, এ বিষয়টি দিয়ে অনেকে মৃত ব্যক্তির অসীলা

গ্রহণ করার বৈধতা দেয়ার প্রয়াস পান। কিন্তু ওমর রা. আব্বাস রা. এর দুআকে অসীলা হিসাবে গ্রহণ করেছেন তার

ব্যক্তিত্বকে নয়। আর আব্বাস রা. তখন জীবিত ছিলেন। যে কোন জীবিত ব্যক্তির দুআকে অসীলা হিসাবে গ্রহণ

করা যায়। ওমর রা. তা-ই করেছেন। তিনি বলেছেন, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জীবিত থাকাকালে

আমরা তার অসীলা দিয়ে দুআ করতাম। এখন তিনি নেই তাই আমরা তার চাচা আব্বাসকে দুআ করার ক্ষেত্রে অসীলা

হিসাবে নিলাম। ওমর রা. এর এ বক্তব্যে স্পষ্ট হল যে, তিনি কোন মৃত ব্যক্তিকে দুআর সময় অসীলা হিসাবে গ্রহণ

বৈধ মনে করতেন না। তিনি নবী হলেও না।

বিষয়টা এমন, যেমন আমরা কোন সৎ-নেককার ব্যক্তিকে বলে থাকি, আমার জন্য দুআ করবেন। কোন আলেম বা

বুযুর্গ ব্যক্তির মাধ্যমে আমরা নিজেদের জন্য দুআ করিয়ে থাকি। এটাও এক ধরণের অসীলা গ্রহণ। এটা বৈধ।

কিন্তু কোন বুযুর্গ ব্যক্তি মারা যাওয়ার পর তাকে অসীলা করে দুআ করা, দুআর সময় তার রূহের প্রতি

মনোনিবেশ করা (যেমন অনেকে বলে থাকে আমি আমার দাদাপীর অমুকের দিকে মুতাওয়াজ্জুহ হলাম), তার থেকে

ফয়েজ-বরকত লাভের ধারনা করা, এগুলো নিষিদ্ধ ও শিরক। মৃত ব্যক্তি যত মর্যাদাবান বুযুর্গ হোক সে কারো

ভাল-মন্দ করার ক্ষমতা রাখে না। যখন সে মৃত্যুর পর নিজের জন্য ভাল মন্দ কিছু করতে পারে না, তখন অন্যের

জন্য কিছু করতে পারার প্রশ্নই আসে না। সে কারো দুআ কবুলের ব্যাপারে কোন ভূমিকা রাখতে পারে না। কাউকে

উপকার করার বা বিপদ থেকে উদ্ধার করার ক্ষমতা তার থাকে না।

নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম স্পষ্টভাবে বলেছেন : মৃত ব্যক্তি নিজের কোন উপকার করতে পারে

না। তিনি বলেছেন :

মানুষ যখন মৃত্যুবরণ করে তখন তার আমল বন্ধ হয়ে যায় কিন্তু তিনটি কাজের ফল সে পেতে থাকে।

১. ছদকায়ে জারিয়াহ (এমন দান যা থেকে মানুষ অব্যাহতভাবে উপকৃত হয়ে থাকে)

২. মানুষের উপকারে আসে এমন ইলম (বিদ্যা)

৩. সৎ সন্তান যে তাঁর জন্য দুআ করে। বর্ণনায়: মুসলিম

হাদীসটির মাধ্যমে স্পষ্টভাবে জানা গেল মৃত ব্যক্তি জীবিত ব্যক্তিদের দুআ, ক্ষমা প্রার্থনার ফলে উপকার পেতে

পারে। কিন্তু জীবিত ব্যক্তিরা মৃতদের থেকে এরূপ কিছু আশা করতে পারেনা।

যখন হাদীস থেকে প্রমাণিত হল যে, কোন আদম সন্তান যখন মৃত্যুবরণ করে তখন তার সকল আমল বন্ধ হয়ে যায়।

তার আমল দিয়ে সে কোন উপকার লাভ করতে পারে না, তখন আমরা কিভাবে বিশ্বাস করি যে, অমুক ব্যক্তি কবরে

জীবিত আছেন? তার সাথে আমাদের যোগাযোগ হয়? তিনি আমাদের উপকার করতে পারেন? আমাদের প্রার্থনা

শুনেন ও আল্লাহর কাছে শুপারিশ করেন? এগুলো সব অসার বিশ্বাস। এগুলো যে শিরক তাতে কোন সন্দেহ নেই।

মৃত ব্যক্তিরা যে কবরে শুনতে পায় না, কেহ তাদেরকে কিছু শুনাতে পারে না এটা আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আল

কুরআনে ইরশাদ করেছেন। তিনি নবীকে সম্বোধন করে বলেছেন:

নিশ্চয় তুমি মৃতকে শোনাতে পারবে না, আর তুমি বধিরকে আহবান শোনাতে পারবে না। (সূরা নামল, আয়াত ৮০)

إذا مات الإنسان انقطع عنه عمله إلا من ثلاث : إلا من صدقة جارية أو علم ينتفع به أو ولد صالح يدعو له .  رواه مسلم

إِنَّكَ لَا تُسْمِعُ الْمَوْتَى وَلَا تُسْمِعُ الصُّمَّ الدُّعَاءَ. (النمل : 80)

যখন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোন মৃতকে কিছু শোনাতে পারেন না, তখন সাধারণ মানুষ

কিভাবে এ অসাধ্য সাধন করতে পারে? কাজেই আমরা মৃতদের কবরে যেয়ে যা কিছু বলি, যা কিছু প্রার্থনা করি তা

তারা কিছুই শুনতে পায় না। যখন তারা শুনতেই পায় না, তখন তারা প্রার্থনাকারীর প্রার্থনা কিভাবে কবুল করবে?

কিভাবে তাদের হাজত-আকাংখা পূরণ করবে?

আল্লাহ তাআলা ব্যতীত যা কিছুর উপাসনা করা হয়, তা সবই বাতিল। আল্লাহ তাআলা বলেন:

وَلَا تَدْعُ مِنْ دُونِ اللَّهِ مَا لَا يَنْفَعُكَ وَلَا يَضُرُّكَ فَإِنْ فَعَلْتَ فَإِنَّكَ إِذًا مِنَ الظَّالِمِينَ ﴿106﴾ وَإِنْ يَمْسَسْكَ اللَّهُ بِضُرٍّ فَلَا كَاشِفَ لَهُ إِلَّا هُوَ وَإِنْ

আর আল্লাহ ছাড়া এমন কিছুকে ডেকো না, যা তোমার উপকার করতে পারে না এবং তোমার ক্ষতিও করতে পারে

না। অতএব তুমি যদি কর, তাহলে নিশ্চয় তুমি যালিমদের অন্তর্ভুক্ত হবে। আর আল্লাহ যদি তোমাকে কোন

ক্ষতি পৌঁছান, তবে তিনি ছাড়া তা দূর করার কেউ নেই। আর তিনি যদি তোমার কল্যাণ চান, তবে তাঁর অনুগ্রহের

কোন প্রতিরোধকারী নেই। তিনি তার বান্দাদের যাকে ইচ্ছা তাকে তা দেন। আর তিনি পরম ক্ষমাশীল, অতি দয়ালু

(সূরা ইউনূস, আয়াত ১০৬-১০৭)

এ আয়াত থেকে স্পষ্ট বুঝা গেল আল্লাহ ব্যতীত যাদেরকে ডাকা হয়, যাদের কাছে দুআ-প্রার্থনা করা হয় তা সবই

বাতিল। আরো স্পষ্ট হল যে, এগুলো কাউকে উপকার করতে পারে না বা ক্ষতি করতে পারে না।

যখন তারা সবই বাতিল, তাদের কাছে দুআ-প্রার্থনা করলে যখন কোন উপকার হয় না তখন কেন তাদের স্মরণাপন্ন

হবে? কেন তাদেরকে অসীলা গ্রহণ করা হবে? কেন তাদের কবরে যেয়ে দুআ করা হবে?

অনেক বিভ্রান্ত লোককে বলতে শুনা যায়, অমুক অলীর মাজার যিয়ারত করতে গিয়েছিলাম। সেখানে যেয়ে এই দুআ

করেছিলাম। দুআ কবুল হয়েছে, যা চেয়েছিলাম তা পেয়ে গেছি ইত্যাদি। এ ধরনের কথা-বার্তা আল্লাহ তাআলার প্রতি

মিথ্যারোপের শামিল।

হ্যা, হতে পারে অলী আওলিয়াদের মাজারে গিয়ে কিছু চাইলে তা যেন অর্জন হবে না এ কথা বলা যায় না। তবে অর্জন

হলে সেটা দু কারণে হতে পারে:

এক. অলীর মাজারে যেয়ে যা চাওয়া হয়েছে তা পুরণ করা কোন সৃষ্টিজীবের পক্ষে সম্ভব হবে অথবা হবে না। যদি

সম্ভব হয়, তাহলে হতে পারে শয়তান প্রার্থীত বিষয়গুলোকে অর্জন করিয়ে দিয়েছে। যাতে শিরকের প্রতি আসক্তি

সৃষ্টি হয়। যা চেয়েছে শয়তান সেগুলো তাকে দিয়েছে। কেননা যে সকল স্থানে আল্লাহ তাআলা ব্যতীত অন্যের

ইবাদত করা হয় সে সকল স্থানে শয়তান বিচরণ করে। যখন শয়তান দেখল কোন ব্যক্তি কবর পূজা করছে, তখন সে

তাকে সাহায্য করে থাকে। যেমন সে সাহায্য করে মূর্তিপূজারীদের। সে তাদের এ সকল শিরকি কাজগুলোকে তাদের

কাছে সুশোভিত করে উপস্থাপন করে থাকে বলে আল্লাহ তাআলা আল কুরআনে বহু স্থানে উল্লেখ করেছেন।

এমনিভাবে শয়তান গণক ও জোতিষিদের সাহায্য করে থাকে তাদের কাজ-কর্মে। তাই অনেক সময় এ সকল গণকদের

কথা ও ভবিষ্যতবাণী সত্যে পরিণত হতে দেখা যায়।

এমনিভাবে শয়তান মানুষের আকৃতি ধারণ করে বিপদগ্রস্ত মানুষকে বলে থাকে অমুক মাজারে যাও, তাহলে কাজ হবে।

পরে সে যখন মাজারে যায় তখন শয়তান মানুষের রূপ ধারণ করে তার সাহায্যে এগিয়ে আসে। ফলে বিপদে পড়া মানুষটি

মনে করে মাজারে শায়িত অলী তাকে সাহায্য করেছে। এমনিভাবে শয়তান মানব সমাজে শিরকের প্রচলন ঘটিয়েছে ও

শিরকের প্রসার করে যাচ্ছে।

দুই. আর যদি প্রার্থীত বিষয়টি এমন হয় যা পুরণ করা শুধু আল্লাহ তাআলার পক্ষেই সম্ভব, তাহলে বুঝতে হবে এ

বিষয়টি অর্জনের কথা তাকদীরে আগেই লেখা ছিল। কবরে শায়িত ব্যক্তির বরকতে এটির অর্জন হয়নি।

তাই সকল বিবেকসম্পন্ন মানুষকে বুঝতে হবে যে মাজারে যেয়ে দুআ করলে কবুল হয় বলে বিশ্বাস করা সর্বাবস্থায়ই

কুসংস্কার। কেহ যদি মাজারে যেয়ে দুআ প্রার্থনা করে, মাজার পূজা করে মানুষ থেকে ফেরেশতাতে পরিণত হয় তাহলেও

বিশ্বাস করা যাবে না যে, এটা মাজারে শায়িত অলীর কারণে হয়েছে। এর নামই হল ঈমান। এর নামই হল নির্ভেজাল

তাওহীদ। তাওহীদের বিশ্বাস যদি শিরকমিশ্রিত হয়, কু সংস্কারাচ্ছন্ন হয় তা হলে ব্যক্তির মুক্তি নেই।

يُرِدْكَ بِخَيْرٍ فَلَا رَادَّ لِفَضْلِهِ يُصِيبُ بِهِ مَنْ يَشَاءُ مِنْ عِبَادِهِ وَهُوَ الْغَفُورُ الرَّحِيمُ ﴿107﴾ (يونس)


কাল্পনিক কারামত

অনেক মানুষই মুজিযা আর কারামতের পার্থক্য জানে না। মুজিযা আর কারামত কি তা বুঝে না। মুজিযা হল এমন

অলৌকিক বিষয় যা নবীদের থেকে প্রকাশ পায়। আর কারামত হল এমন অলৌকিক বিষয় যা আল্লাহ তাআলার

প্রিয় বান্দাদের থেকে প্রকাশ পায়। মুজিযা প্রকাশের শর্ত হল নবী বা রাসূল হওয়া। আর কারামত প্রকাশের শর্ত

হল নেককার ও মুত্তাকী হওয়া। অতএব যদি কোন বিদআতী পীর-ফকির বা শিরকে লিপ্ত ব্যক্তিদের থেকে

অলৌকিক কিছু প্রকাশ পায় সেটা মুজিযাও নয়, কারামতও নয়। সেটা হল দাজ্জালী ধোকা-বাজি বা প্রতারণা।

অনেক অজ্ঞ লোক ধারনা করে থাকে মুজিযা বা কারামত, সাধনা বা চেষ্টা-প্রচেষ্টা করে অর্জন করা যায়। বা

মানুষ ইচ্ছা করলেই তা করতে পারে। তাই এ সকল অজ্ঞ লোকেরা ধারনা করে অলী আউলিয়াগণ ইচ্ছা করলে

কারামতের মাধ্যমে অনেক কিছু ঘটাতে পারেন, বিপদ থেকে মানুষকে উদ্ধার করতে পারেন। কিন্তু আসল ব্যাপার

হল, কারামত কোন ব্যক্তির ইচ্ছাধীন নয়। এটি একমাত্র আল্লাহর ইচ্ছাধীন। মানুষ ইচ্ছা করলে কখনো

কারামত সংঘটিত করতে পারে না, সে যত বড় অলী বা পীর হোক না কেন।

কোন বিবেকমান মানুষ বিশ্বাস করে না যে, একজন মানুষের প্রাণ চলে যাওয়ার পর তার কিছু করার ক্ষমতা থাকে।

আবার যদি সে কবরে চলে যায় তাহলে কিভাবে সে কিছু করার ক্ষমতা সংরক্ষণ করে?

এ ধরনের কথা তারাই বিশ্বাস করতে পারে অজ্ঞতার ক্ষেত্রে যাদের কোন নজীর নেই। অলী তো দূরের কথা

কোন নবীর কবরও পূজা করা জায়েয নেই। নবীর কবরতো পরের কথা, জীবিত থাকা কালে কোন নবীর ইবাদত

করা, বা তাকে দেবতা জ্ঞান করে পূজা করা যায় না। এটা ইসলামে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। আল্লাহ তাআলা বলেন :

مَا كَانَ لِبَشَرٍ أَنْ يُؤْتِيَهُ اللَّهُ الْكِتَابَ وَالْحُكْمَ وَالنُّبُوَّةَ ثُمَّ يَقُولَ لِلنَّاسِ كُونُوا عِبَادًا لِي مِنْ دُونِ اللَّهِ وَلَكِنْ كُونُوا رَبَّانِيِّينَ بِمَا كُنْتُمْ تُعَلِّمُونَ الْكِتَابَ

وَبِمَا كُنْتُمْ تَدْرُسُونَ ﴿79﴾ وَلَا يَأْمُرَكُمْ أَنْ تَتَّخِذُوا الْمَلَائِكَةَ وَالنَّبِيِّينَ أَرْبَابًا أَيَأْمُرُكُمْ بِالْكُفْرِ بَعْدَ إِذْ أَنْتُمْ مُسْلِمُونَ ﴿80﴾. (آل عمران)

কোন মানুষের জন্য সংগত নয় যে, আল্লাহ তাকে কিতাব, হিকমত ও নবুওয়াত দান করার পর সে মানুষকে বলবে,

তোমরা আল্লাহকে ছেড়ে আমার ইবাদতকারী হয়ে যাও। বরং সে বলবে, তোমরা রব্বানী(আল্লাহ ভক্ত) হও।

যেহেতু তোমরা কিতাব শিক্ষা দিতে এবং তা অধ্যয়ন করতে। আর তিনি তোমাদেরকে নির্দেশ করেন না যে,

তোমরা ফেরেশতা ও নবীদেরকে প্রভূ রূপে গ্রহণ কর। তোমরা মুসলিম হওয়ার পর তিনি কি তোমাদেরকে কুফরীর

নির্দেশ দেবেন? (সূরা আলে ইমরান, আয়াত ৭৯-৮০)


মুশরিকদের অবস্থা : অতীত ও বর্তমান

যারা কবর মাযার পূজা করে তারা বলে থাকে যে, মুশরিকরা মূর্তি পূজা করত। আমরাতো মূর্তি পূজা করি না। আমরা

আমাদের পীর দরবেশদের মাজার জিয়ারত করি। এগুলোর ইবাদত বা পূজা করি না। তাদের অসীলা দিয়ে আল্লাহর

কাছে দুআ-প্রার্থনা করি যেন আল্লাহ তাদের সম্মানের দিকে তাকিয়ে আমাদের দুআ-প্রার্থনা কবুল করেন। এটাতো

কোন ইবাদত নয়। এদের উদ্দেশ্যে আমরা বলব, মৃত ব্যক্তির কাছে সাহায্য ও বরকত কামনা করা সত্যিকারার্থে

তার কাছে দুআ করার শামিল। যেমন ইসলামপূর্ব জাহেলী যুগে পৌত্তলিকরা মূর্তির কাছে দুআ-প্রার্থনা করত।

তাই জাহেলী যুগের মূর্তি পূজা আর বর্তমান যুগের কবর পূজার মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। এ দুটো কাজই লক্ষ্য

উদ্দেশ্যের দিক দিয়ে এক ও অভিন্ন। যখন জাহেলী যুগের মুশরিকদের বলা হল তোমরা কেন মূর্তিগুলোর ইবাদত

করো? তারাতো কিছু করার ক্ষমতা রাখে না। তখন তারা ইবাদতের বিষয়টি অস্বীকার করত এবং বলত:

আমরা তো তাদের ইবাদত করি না, তবে এ জন্য যে তারা আমাদের আল্লাহর নিকটবর্তী করে দেবে। (সূরা যুমার,

আয়াত ৩)

এমনিভাবে আমাদের সমাজের কবরপূজারীরাও বলে থাকে যে, আমরা তো কবরে শায়িত অলীর ইবাদত করি না। তার

কাছে দুআ করি না। আমাদের উদ্দেশ্য শুধু এই যে, তারা আল্লাহর কাছে প্রিয়। তাদের মাধ্যমে আল্লাহর অনুগ্রহ

অর্জন করা যাবে। এ সকল অলীগণকে আমরা আমাদের ও আল্লাহ তাআলার মধ্যে মাধ্যম মনে করে থাকি।

কাজেই পরিণতির দিক দিয়ে জাহেলী যুগের মুশরিকদের মূর্তি পূজা আর বর্তমান যুগের মুসলমানদের কবর পূজা এক ও

অভিন্ন। দুটো একই ধরনের শিরক।


মুহাব্বাত ভালোবাসার ক্ষেত্রে শিরক

অন্তরের একাগ্র ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা আল্লাহ ব্যতীত আর কোন সৃষ্টি পেতে পারে না। এই নির্ভেজাল

শ্রদ্ধাপূর্ণ ভালোবাসা হল একটি ইবাদত। যারা মনে করে আমরা এই কবরের অলী ও বুযুর্গদের অত্যাধিক

ভালোবাসি, তাদের শ্রদ্ধা করি, তাদের সম্মান করি তাহলে এটিও একটি শিরক। আর এই মাত্রাতিরিক্ত

ভালোবাসা ও শ্রদ্ধার কারণেই তারা অলী-বুযুর্গদের কবরে মানত করে, কবর প্রদক্ষিণ করে, কবর সজ্জিত করে,

কবরে ওরস অনুষ্ঠান করে। কবরবাসীর কাছে তারা সাহায্য চায়, উদ্ধার কামনা করে। যদি কবরওয়ালার প্রতি

মাত্রাতিরিক্ত সম্মান ও ভালোবাসা না থাকতো, তাহলে তারা এগুলোর কিছুই করত না। আর এ ধরনের

ভালোবাসা শুধু আল্লাহর তাআলার জন্যই নিবেদন করতে হয়। আল্লাহ ব্যতীত অন্যের জন্য নিবেদন করা শিরক।

আল্লাহ তাআলা বলেন:

আর মানুষের মধ্যে এমনও আছে, যারা আল্লাহ ছাড়া অন্যকে আল্লাহর সমকক্ষরূপে গ্রহণ করে, আল্লাহকে

ভালবাসার মত তাদেরকে ভালবাসে। আর যারা ঈমান এনেছে, তারা আল্লাহর জন্য ভালবাসায় দৃঢ়তর। (সূরা আল

বাকারা, আয়াত ১৬৫)

দৃঢ়তর, সত্যিকার ও সার্বক্ষণিক ভালোবাসা একমাত্র তাআলার প্রাপ্য। এটা অন্যকে নিবেদন করলে শিরক হয়ে

যাবে। মুশরিক পৌত্তলিকরা তাদের দেব-দেবীর জন্য এ রকম ভালোবাসা পোষণ করে থাকে।

আল্লাহ মানুষের খুবই কাছে। মানুষ আল্লাহর কাছে তার প্রার্থনা পৌছে দিতে মাধ্যম বা অসীলা খোঁজে। কিন্তু

কেন? আল্লাহ তাআলা কি মানুষ থেকে অনেক দূরে? আর মাজারে শায়িত সে সকল পীর অলীগণ মানুষের কাছে কি

আল্লাহর চেয়েও নিকটে? কখনো নয়। একজন মানুষ যখন প্রার্থনা করে তখন সকলের আগেই তারা সরাসরি

আল্লাহর কাছে পৌঁছে যায়।

আল কুরআনে আল্লাহ তাআলা নিজে বলেছেন:

আর যখন আমার বান্দাগণ তোমাকে আমার সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করবে, আমি তো নিশ্চয় নিকটবর্তী। আমি

প্রার্থনাকারীর ডাকে সাড়া দেই, যখন সে আমাকে ডাকে। সুতরাং তারা যেন আমার ডাকে সাড়া দেয় এবং আমার প্রতি

ঈমান আনে। আশা করা যায় তারা সঠিক পথে চলবে। (সূরা বাকারা, আয়াত ১৮৬)

মানুষ সরাসরি আল্লাহ তাআলার কাছে তার সকল প্রার্থনা নিবেদন করবে কোন মাধ্যম ব্যতীত। এটাই ইসলামের

একটি বৈশিষ্ট ও মহান শিক্ষা। আল্লাহ তাআলার কাছে দুআ-প্রার্থনায় কোন মাধ্যম গ্রহণ করার দরকার নেই

মোটেই।

দুআ-প্রার্থনায় মাধ্যম বা অসীলা গ্রহণ একটি বিজাতীয় বিষয়। হিন্দু, বৌদ্ধ খৃষ্টানসহ অন্যান্য ধর্মের

লোকেরা আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করতে মূর্তি, পাদ্রী ও ধর্মযাজকদের মাধ্যম হিসাবে গ্রহণ করে থাকে। এ

দিকের বিবেচনায় এটি একটি কুফরী সংস্কৃতি, যা কোন মুসলমান অনুসরণ করতে পারে না।

وَمِنَ النَّاسِ مَنْ يَتَّخِذُ مِنْ دُونِ اللَّهِ أَنْدَادًا يُحِبُّونَهُمْ كَحُبِّ اللَّهِ وَالَّذِينَ آَمَنُوا أَشَدُّ حُبًّا لِلَّهِ. (البقرة : 165)

وَإِذَا سَأَلَكَ عِبَادِي عَنِّي فَإِنِّي قَرِيبٌ أُجِيبُ دَعْوَةَ الدَّاعِ إِذَا دَعَانِ فَلْيَسْتَجِيبُوا لِي وَلْيُؤْمِنُوا بِي لَعَلَّهُمْ يَرْشُدُونَ. (البقرة : 186)

দুআ-প্রার্থনায় আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য সৎকর্মসমূহকে অসীলা হিসাবে নেয়া যায়। তেমনি আল্লাহ রাব্বুল

আলামীনের নামসমূহ অসীলা হিসাবে নেয়ার জন্য আল-কুরআনে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

আল্লাহ তাআলা বলেন:

আর আল্লাহর জন্যই রয়েছে সুন্দরতম নামসমূহ। সুতরাং তোমরা তাঁকে সেসব নামের মাধ্যমে ডাক। আর তাদেরকে

বর্জন কর যারা তাঁর নামে বিকৃতি ঘটায়। তারা যা করত অচিরেই তাদেরকে তার প্রতিফল দেয়া হবে। (সূরা আল

আরাফ, আয়াত ১৮০)

সর্বশেষে বলতে চাই, যারা এ ধরনের অন্যায় অসীলা গ্রহণের মাধ্যমে শিরকে লিপ্ত হচ্ছেন তারা এর থেকে ফিরে

আসুন। আমাদের দায়িত্ব কেবল সত্য বিষয়টি আপনাদের কাছে পৌঁছে দেয়া। এ সকল অসীলা নি:সন্দেহে শিরক। আর

শিরক এমন এক মহা-পাপ যা আল্লাহ কখনো ক্ষমা করবেন না। যে এ শিরকে লিপ্ত হবে জাহান্নামই হবে তার

ঠিকানা।

আল্লাহ তাআলা বলেন:

নিশ্চয় যে আল্লাহর সাথে শরীক করে, তার উপর অবশ্যই আল্লাহ জান্নাত হারাম করে দিয়েছেন এবং তার ঠিকানা

আগুন। আর যালিমদের কোন সাহায্যকারী নেই। (সূরা মায়েদা, আয়াত ৭২)

তাই আমাদের জন্য একান্ত কর্তব্য হল, আমাদের সকল ইবাদত-বন্দেগী, দুআ-প্রার্থনা নির্ভেজালভাবে একমাত্র

এক আল্লাহ তাআলার জন্য নিবেদন করা। তিনি যা করতে বলেছেন আমরা তাই করবো। নিজেরা কিছু উদ্ভাবন

করবো না। তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদের যেভাবে প্রার্থনা করতে শিখিয়েছেন আমরা

সেভাবেই প্রার্থনা করবো। তিনি যেভাবে অসীলা গ্রহণ অনুমোদন করেছেন, আমরা সেভাবে অসীলা গ্রহণ

করবো। এর ব্যতিক্রম হলে আমরা ইসলাম থেকে দূরে চলে যাবো। কাজেই সর্বক্ষেত্রে আমাদের কর্তব্য হবে

কুরআন ও সহীহ হাদীস অনুসরণ করা। যদি আমরা এভাবে চলতে পারি তবে দুনিয়াতে কল্যাণ আর আখেরাতে চিরন্তন

সুখ ও সফলতা লাভ করতে পারবো। অন্যথা, উভয় জগতে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে যাবো। আল্লাহ রাব্বুল

আলামীন আমাদের সকলকে শিরক থেকে হেফাজত করুন। আ-মীন!

وَلِلَّهِ الْأَسْمَاءُ الْحُسْنَى فَادْعُوهُ بِهَا وَذَرُوا الَّذِينَ يُلْحِدُونَ فِي أَسْمَائِهِ سَيُجْزَوْنَ مَا كَانُوا يَعْمَلُونَ. (الأعراف : 180)

إِنَّهُ مَنْ يُشْرِكْ بِاللَّهِ فَقَدْ حَرَّمَ اللَّهُ عَلَيْهِ الْجَنَّةَ وَمَأْوَاهُ النَّارُ وَمَا لِلظَّالِمِينَ مِنْ أَنْصَارٍ. (المائدة : 72)



সংকলন: শায়খ আব্দুল আযীয বিন আব্দুল্লাহ বিন বায রহ.
সূত্র : ইসলাম প্রচার ব্যুরো, রাবওয়াহ, রিয়াদ, সৌদিআরব
অনুবাদক: আব্দুল্লাহ শহীদ আব্দুর রহমান

Pages: 1 ... 5 6 [7] 8