Daffodil International University
Faculties and Departments => Faculty Sections => Topic started by: Nayeem on February 26, 2020, 02:27:12 PM
-
পৃথিবীর বেশিরভাগ দেশে শুক্রবার সপ্তাহের শেষ কর্মদিবস।দুপুর থেকে সবার মন উড়ুউড়ু করে।অফিসের কাজের চাপ একটু কম থাকলে অনেকেই আগে আগে বাসার দিকে ছুট লাগান। পরিবার কিংবা বন্ধুদের সাথে একটু বেশি সময় কাটানোর আশায়।কিন্তু অজানাকে জানা ই যাদের একমাত্র তৃষ্ণা, জ্ঞান চর্চাই তাদের মনের খোরাক জোগাবে তাতে আর আশ্চর্য কি! তাই পৃথিবীর অনেক গবেষণাগারে বিজ্ঞানীরা শুক্রবার বিকালটা কে বেছে নেন, একটু ভিন্নধর্মী কিংবা পাগলাটে পরীক্ষা করার জন্য। তাঁরা এর নাম দিয়েছেন ‘ফ্রাইডে নাইট এক্সপেরিমেন্ট’। ধরেই নেয়া হয় এটা নিছক খেলা, কিন্তু খেলাচ্ছলে যদি চমৎকার কোন আবিষ্কার হয়ে যায়, তাতে মন্দ কি!
ম্যানচেস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আন্দ্রে জেমস এবং অধ্যাপক কস্তা নোভোসেলভ প্রায় সপ্তাহেই এরকম ফ্রাইডে নাইট এক্সপেরিমেন্ট করতেন। তাঁদের এই পরিক্ষাগুলো সবসময়ই থাকত তাঁদের দৈনন্দিন গবেষনার কাজ থেকে সম্পূর্ণ আলাদা বিষয় নিয়ে। ২০০৪ সালের কোন এক শুক্রবার সন্ধ্যায় তাঁরা খেলাচ্ছলে এমনি এক বিস্ময় বস্তুর সাথে পৃথিবীকে পরিচয় করিয়ে দেন, যার নাম ‘গ্রাফিন’। এর আগে যে বিজ্ঞানীদের গ্রাফিন সম্পর্কে কোন ধারণাই ছিলনা, এমনটা নয়।প্রকৃতিতে গ্রাফিন পাওয়া যায় গ্রাফাইট রূপে। যে গ্রাফাইট আমরা পেন্সিলের শীষ হিসাবে ব্যাবহার করে থাকি।অনেকগুলো গ্রাফিন স্তর থরে থরে একটার উপর একটা সাজালে গ্রাফাইট হয়। এই তথ্য বিজ্ঞানীদের কাছে ছিল।কিন্তু গ্রাফিন কে গ্রাফাইট থেকে আলাদা করার কৌশল কেউ জানত না। কিংবা আলাদা করা গেলেও গ্রাফিন যে আলাদা অবস্থায় কারও সাথে বিক্রিয়া না করে ঠায় দাড়িয়ে থাকবে, এ বিষয়গুলো অজানা ছিল। সবচেয়ে বেশি অজানা ছিল, গ্রাফিনের গুনাগুন। জিনিসটাকে কাজে লাগানো না গেলে আলাদা করে আর লাভ কি!
প্রফেসর নভোসেলভ এবং প্রফেসর আন্দ্রে স্টিকি/স্কচ টেপ ব্যাবহার করে গ্রাফাইট এর পৃষ্ঠ থেকে গ্রাফিন আলাদা করার চেষ্টা করেন। ব্যাপারটা অনেকটা ওয়াক্সিং করে গায়ের লোম উঠানোর মত। প্রথমে তাঁরা লক্ষ করেন এক এক বারে কয়েক স্তর করে গ্রাফিন উঠে আসছে।এই কয়েক স্তর গ্রাফিনের উপর বারংবার স্টিকি টেপ প্রয়োগ করে তাঁরা একটা গ্রাফিন স্তরকে আলাদা করতে সক্ষম হন। গ্রাফিন আসলে বিশুদ্ধ কার্বনের তৈরি একটা শীট ছাড়া আর কিছুই না। যেখানে কার্বন পরমাণুগুলো এক জন আরেকজনকে সমযোজী বন্ধনের মাধ্যমে শক্ত করে ধরে রাখে আর মৌচাক সদৃশ ষড়ভুজাকৃতি আকার ধারন করে।এক একটা গ্রাফিন স্তর মাত্র ০.৩১৮ ন্যানোমিটার পাতলা, যা কিনা একটি কার্বন পরমানুর ব্যাসের সমান; অর্থাৎ খালি চোখে দেখাই যায়না। কিন্তু এই অদৃশ্য কার্বনের জাল যে বিপুল সম্ভবনা আর জাদুকরী গুনাগুন নিয়ে পৃথিবীকে নাড়া দিয়েছে তা অভূতপূর্ব!
গ্রাফিন এখনও পর্যন্ত বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডে আবিষ্কৃত সবচেয়ে পাতলা বস্তু যা কিনা স্টিলের চেয়ে ২০০ গুন বেশি শক্তিশালী আর কপারের চেয়ে ১০ লক্ষ গুন বেশি বিদ্যুৎ পরিবাহী! তাই ইলেক্ট্রনিক্স এর জগতে গ্রাফিন এর সবচেয়ে বেশি কদর। ম্যাটেরীয়াল আর ইলেক্ট্রনিক্স সায়েন্টিস্ট দের কাছে গ্রাফিন যেন এক রুপকথার যাদুর কাঠি, যার স্বপ্ন তাঁরা আজীবন দেখে এসেছেন। সুপারকন্ডাক্টার, সুপার ক্যাপাসিটর আর সেন্সর হিসাবে গ্রাফিনকে ব্যাবহার করার জন্য গত দশ বছরে গবেষণা জগতে বিপ্লব ঘটে গেছে।বিশ্বের বড় বড় সব বিশ্ব বিদ্যালয়ে আলাদা গ্রাফিন রিসার্চ সেন্টার কিংবা নিদেন পক্ষে একটা করে গ্রাফিন রিসার্চ গ্রুপ গড়ে উঠেছে।
গ্রাফিনের শক্তিশালী সমযোজী বন্ধন কার্বনের অনুগুলিকে এমন নিবিড়ভাবে ধরে রাখে যে হিলিয়াম গ্যাসের মত ক্ষুদ্র অণুও এই গ্রাফিনস্তর ভেদ করতে পারেনা।তাই গ্রাফিন যেকোন কিছুর উপর চমৎকার প্রলেপ হিসাবে কাজ করে। কোন কিছুর উপর গ্রাফিনের আবরন থাকলে তা যেমন মরিচা ধরেনা একই সাথে বিদ্যুৎ পরিবহনেও কোন সমস্যা হয়না, বরং সাহায্য করে।
গ্রাফিনের সাথে অক্সিজেনকে যুক্ত করে তৈরি হচ্ছে গ্রাফাইট অক্সাইড। এই বস্তু আবার পানিকে প্রবাহিত হতে দেয়, কিন্তু পানির সকল আবর্জনা আর লবন আটকে দেয়। তাই পানি পরিশোধনের গবেষণায় গ্রাফিন অক্সাইড এক নতুন দিগন্ত খুলে দিয়েছে। আজকের বিজ্ঞান তাই সমুদ্রের পানিকে সহজে আর স্বল্প খরচে সুপেয় পানিতে পরিনত করার প্রযুক্তি বাজারজাত করার দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে আছে।
শক্তিশালী হবার পাশাপাশি গ্রাফিন খুবই নমনীয়। বড় বড় মোবাইল প্রস্তুতকারক কোম্পানিগুলি গ্রাফিন ব্যাবহার করে মোবাইল স্ক্রিন বানানোর কাজে অনেক এগিয়ে গেছে। সেদিন আর বেশি দূরে নয় যেদিন মোবাইলটাকে যেভাবে খুশি ভাঁজ করে মানিব্যাগের ভিতর ফেলে পকেটে পুরে রাখা যাবে, আবার ভাঁজখুলে অবলীলায় আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনা যাবে!
গ্রাফিনের গুণগান করতে থাকলে বই লিখে ফেলা যাবে। আসলে গ্রাফিন নিয়ে বিজ্ঞানীরা বই লিখেছেন ও বেশকিছু। এখন শুরুতে যা বলছিলাম সে কথায় ফিরে আসি। অধ্যাপক আন্দ্রে জেমস এবং অধ্যাপক কস্তা নোভোসেলভ খেলতে খেলতে গ্রাফিন আবিষ্কার করলেও আবিষ্কারটা ছিল যুগান্তকারী। তাই তাঁরা গ্রাফিন আবিষ্কারের জন্য ২০১০ সালে পদার্থ বিজ্ঞানে নোবেল পুরষ্কার পান। ব্যাপারটা তাঁরা আকস্মিক ভাবে আবিষ্কার করলেও কিভাবে সেটাকে কাজে লাগানো যায় সেই মেধা এবং বুদ্ধির জোর তাঁদের ছিল। তাইতো নভোসেলভ (৪৫ বছর) আর আন্দ্রে (৬০ বছর), এই দুই বিজ্ঞানি মৃত্যুর আগেই বলতে গেলে অমর হয়ে গেছেন।খেলাচ্ছলে যদি এত দারুন আবিষ্কার হয়, এমন ২/১ টা শুক্রবার দেরি করে বাসায় ফেরা যায় বৈকি!
-
A very significant information!
-
Nice
-
Thanks for sharing.
-
Informative
-
Thanks for sharing the information on Graphene with such a communicative language.
-
Thanks for sharing
-
Informative and a very good post.
-
Very interesting! I had no idea about Friday experiments before let alone the information of discovering Graphite Oxide.
Thanks for sharing.
Shamsi
Shamsi Ara Huda
Assistant Professor
Department of English