Daffodil International University

Career Development Centre (CDC) => Education => Articles and Write up => Topic started by: alsafayat on September 17, 2018, 10:30:58 AM

Title: বাংলাদেশে ৫ লাখ বিদেশী কর্মজীবী: নেপথ্যের দুর্বলতা
Post by: alsafayat on September 17, 2018, 10:30:58 AM
বিভিন্ন স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক গবেষণাপত্রের তথ্য ও শিল্প খাতে জড়িত উদ্যোক্তাদের মতামত উদ্ধৃত করে পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে দেখা যাচ্ছে, পাঁচ লাখের মতো বিদেশী বর্তমানে বাংলাদেশে কাজ করছে। ধারণা করা হচ্ছে, সামনের দিনগুলোয় এ সংখ্যা আরো বাড়বে। অন্যদিকে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) ২০১৫-১৬ অর্থবছরের হিসাব অনুযায়ী, দেশে বেকারের সংখ্যা প্রায় ২৬ লাখ, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যায় রয়েছে শিক্ষিত বেকার। তদুপরি আরো প্রায় সাড়ে তিন লাখ তরুণ প্রতি বছর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করে বেরোচ্ছে, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যায় রয়েছে মাদ্রাসা থেকে বেরোনো ডিগ্রিধারীরাও।

এখন স্বভাবতই প্রশ্ন আসে, এত বিপুলসংখ্যক মানুষ বিশেষত শিক্ষিত তরুণ বেকার থাকা সত্ত্বেও পাঁচ লাখ বিদেশী কেন বাংলাদেশে কাজ পাচ্ছে, যারা প্রতি বছর প্রায় সাড়ে ১৬ হাজার কোটি টাকা নিজ নিজ দেশে নিয়ে যাচ্ছে? বিষয়টি উত্কণ্ঠার হলেও এর মধ্যে কোনো অস্বাভাবিকতা নেই। বরং অপ্রিয় হলেও সত্য, উপযুক্ত দক্ষ লোক দেশে পাওয়া যাচ্ছে না বলেই চাকরিদাতারা বাধ্য হয়ে বেশি বেতন দিয়ে বিদেশীদের নিয়োগ করছেন এবং তা করতে না হলে অর্থাৎ স্থানীয়দের দিয়ে এ কাজ চালানো গেলে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের উৎপাদন ব্যয় বা ব্যবসায়ের খরচ আরো কম পড়ত। কিন্তু তা না করে তারা যে বেশি বেতন দেয়ার ঝুঁকি নিয়ে বিদেশীদের নিয়োগ করছেন, সেটি তারা নিরুপায় হয়েই করছেন— এ ব্যাপারে দ্বিমতের কোনো অবকাশ নেই। আর তাই মানতে হবে, শিক্ষার বর্তমান ব্যবস্থা ও ধারা অব্যাহত থাকলে সামনের দিনগুলোয় বিদেশীদের নিয়োগ দেয়ার এ হার আরো বাড়বে বৈ কমবে না। অন্যদিকে উৎপাদন ও ব্যবসায় খাতে উৎপাদনশীলতার উচ্চহার প্রতিষ্ঠা করতে চাইলে এ নিয়োগকে নিয়ন্ত্রণ করাটাও সমীচীন হবে না। কারণ বিশ্ববাজারের প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হলে উৎপাদন ও কর্মপ্রক্রিয়ায় উচ্চতর দক্ষতা সংযুক্তির কোনো বিকল্প নেই, যে দক্ষতার সরবরাহ বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থা কিছুতেই করতে পারছে না। তাহলে স্বভাবতই প্রশ্ন জাগে, বাংলাদেশের কর্মবাজার কি তাহলে ক্রমে বিদেশীদের হাতেই চলে যাবে?

শেষোক্ত এ প্রশ্নটিকে রাষ্ট্রের নীতিনির্ধারকরা অনেকটা তাচ্ছিল্যের সঙ্গে নিচ্ছেন বলেই মনে হচ্ছে। অন্তত এ বিষয়ে নানা উদ্বেগজনক খবরাখবর পত্রিকায় প্রকাশিত হওয়ার পরও এ ব্যাপারে তাদের কোনো প্রতিক্রিয়া না দেখে আপাতত তা-ই মনে হচ্ছে। জাতীয় সংসদে কত গুরুত্বহীন মামুলি বিষয় নিয়ে কথা বলে কত মূল্যবান সময় ব্যয় হয়। অথচ পাঁচ লাখ বিদেশী বাংলাদেশে কাজ করে (যাদের চার-পঞ্চমাংশই আবার বৈধ কর্মানুমতি ছাড়া) বছরে সাড়ে ১৬ হাজার কোটি টাকা বাইরে নিয়ে যাওয়ার মতো পরিস্থিতি কীভাবে মোকাবেলা করা হবে, সে বিষয়ে জাতীয় সংসদে একটি টুঁ শব্দও উচ্চারিত হয়নি। বরং প্রাসঙ্গিক নানা তত্পরতা দেখে এটাই মনে হচ্ছে, রাষ্ট্র বরং এক্ষেত্রে উল্টো পথে হাঁটছে। কয়েকটি উদাহরণ দিয়ে বিষয়টি খোলাসা করা যাক।

একটু পুরনো হিসাবে দেশে এখন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা ৯৭ (সর্বশেষ হিসাবে আরো বেশি হতে পারে)। এর মধ্যে গোটা দশেকের কথা বাদ দিলে বাদবাকিগুলোয় যে মানের পড়াশোনা করানো হয়, তাকে আর যা-ই বলা যাক, বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের শিক্ষা বলা যাবে না কিছুতেই। এখানে শিক্ষার আন্তর্জাতিক মান তো দূরের কথা, বাংলাদেশ মানের সাধারণ স্নাতক পর্যায়ের শিক্ষার স্তরও রক্ষিত হয় না। এখানকার অধিকাংশ বেসরকারি শিক্ষার মান নিয়ে যেমন প্রশ্ন রয়েছে, তেমনি প্রশ্ন রয়েছে এখানে ছাত্র ভর্তির যোগ্যতা নিয়েও। এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষায় নামমাত্র জিপিএ নিয়ে পাস করতে পারলেই এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে অনায়াসে ভর্তি হওয়া যায়, যাদের অধিকাংশেরই বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের পাঠ্যক্রমের সঙ্গে নিজেদের আত্মস্থ করার সামর্থ্য নেই। অথচ বাণিজ্যিক স্বার্থে এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে এ ধরনের ছাত্র ভর্তি দেদার চলছে। শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রেও একই অবস্থা। যাদের উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে শিক্ষাদানের যোগ্যতাও নেই, তারাই পড়াচ্ছেন স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে। ফলে এরূপ দ্বিবিধ (মানহীন শিক্ষক ও ছাত্র) মানহীন ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে বের হওয়া স্নাতকরা কর্মক্ষেত্রে গিয়ে চাকরি পেয়ে যাবেন বা চাকরিদাতারা অবলীলায় তাদের নিয়োগ দেবেন— এরূপ আশা করাটা একেবারেই অবান্তর। এবং অত্যন্ত যুক্তিসঙ্গত কারণেই তা ঘটছেও না এবং তা ঘটছে না বলেই তথাকথিত শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে।

একটি বহুল প্রচলিত ধারণা, দেশে কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় কারিগরি শিক্ষার প্রসার না ঘটে সাধারণ শিক্ষার বিস্তার ঘটার কারণেই শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা বাড়ছে। ধারণাটি পুরোপুরি সত্য নয়— আংশিক সত্য মাত্র। কারিগরি শিক্ষার বিস্তারে অবশ্যই ব্যাপক ঘাটতি রয়েছে এবং তা অবশ্যই সর্বোচ্চ গুরুত্ব ও দ্রুততার সঙ্গে পূরণ করা প্রয়োজন। কিন্তু অব্যক্ত বাকি সত্যটি হচ্ছে, কর্মবাজারে সাধারণ শিক্ষিত স্নাতকদের যে চাহিদা রয়েছে, মানসম্পন্ন স্নাতকের অভাবে চাকরিদাতারা সে জায়গাগুলোও প্রত্যাশা অনুযায়ী পূরণ করতে না পেরে ওইসব পদে হয় বিদেশী নিয়োগ করছেন অথবা নিরুপায় হয়ে নিম্নমানের স্থানীয়দেরকেই নিয়োগ দিতে বাধ্য হচ্ছেন। আর সাধারণ শিক্ষায় শিক্ষিত মানসম্পন্ন স্নাতক না পাওয়ারই একটি ফলাফল হচ্ছে সাম্প্রতিক সময়ে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় ‘নির্বাহী এমবিএ’ কোর্স খোলার ধুম পড়ে যাওয়া। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো থেকে পাস করা মানহীন বা নিম্নমধ্যম পর্যায়ের স্নাতকদের ঘষেমেজে ন্যূনতম পর্যায়ের কার্যোপযোগী করে তোলাই হচ্ছে এসব নির্বাহী এমবিএ কোর্সের মূল উদ্দেশ্য।

অন্যদিকে কারিগরি শিক্ষার মানও যে এখানে যথেষ্ট উন্নত— এমনটি বলা যাবে না। কারিগরি শিক্ষার ব্যাপক চাহিদার কারণে সাম্প্রতিক সময়ে বেসরকারি খাতে রাতারাতি বহুসংখ্যক পলিটেকনিক ও অনুরূপ কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে উঠলেও সেগুলোর মান নিয়ে সাধারণ শিক্ষার মানের মতোই গুরুতর প্রশ্ন রয়েছে। ফলে কারিগরি শিক্ষার অভাবেই শুধু দেশে বেকারত্ব বাড়ছে— এমনটি বলা যাবে না। বরং কারিগরি ও অকারিগরি উভয় ক্ষেত্রেই শিক্ষার মানের ক্ষেত্রে যে ব্যাপক ঘাটতি রয়েছে, সেটাই শিক্ষিত তরুণদের বেকারত্বের মূল কারণ। তবে হ্যাঁ, সাধারণ শিক্ষার তুলনায় কারিগরি শিক্ষাকে আমাদের অবশ্যই অধিকতর গুরুত্বের সঙ্গে নিতে হবে। সেসঙ্গে আরো একটি বিষয়ের প্রতি এখানে দৃষ্টি দেয়া প্রয়োজন, তথাকথিত এসব মানহীন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সনদ অর্জনের পর একজন ডিগ্রিধারী স্বভাবতই ভাবতে শুরু করে, যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও সে চাকরি পাচ্ছে না। অথচ চাকরি পাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষতা যে তার নেই, অধিকাংশ তরুণই তা বুঝতে না পেরে এক ধরনের হতাশায় ভোগে এবং এ ধারণার ভিত্তিতেই সামাজিকভাবেও তা প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছে যে, কর্মের অভাবেই মূলত দেশে শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা ক্রমে বাড়ছে। কিন্তু প্রকৃত তথ্য হচ্ছে, শিক্ষা ও ব্যবসায় খাতের দ্রুত প্রসারের ফলে দেশে প্রতিনিয়তই নতুন নতুন কর্মের সুযোগ তৈরি হচ্ছে। কিন্তু প্রয়োজনীয় দক্ষতা ও যোগ্যতার অভাবে আমাদের তরুণরা এসব পদে নিয়োগ লাভে সক্ষম হচ্ছে না এবং সে পদগুলোতেই পরে এসে নিয়োগ পাচ্ছে বিদেশীরা।

অতএব দেশ থেকে শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা কমাতে হলে বিশ্ববাজারের সর্বশেষ প্রবণতার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে দক্ষ ও আধুনিক প্রযুক্তির চাহিদা পূরণে সক্ষম জনবল গড়ে তুলতে হবে, যা গড়ে তোলার সামর্থ্য দেশের অধিকাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নেই। অথচ সত্য এই যে, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের বহুমাত্রিক ও ব্যাপক বিস্তারের ফলে দেশে নতুন নতুন কর্মের সুযোগ দিন দিন বাড়ছে এবং ক্রমে তা বাড়তেই থাকবে। কিন্তু প্রয়োজনীয় যোগ্যতার অভাবে, যদি না সে যোগ্যতা তৈরির আশু উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়, তাহলে সেসব সুযোগ আমাদের তরুণদের ধরাছোঁয়ার বাইরেই থেকে যাবে। প্রসঙ্গত বলা প্রয়োজন, এ ধরনের কর্মের সুযোগ বিশ্ববাজারেও দিন দিন বাড়ছে, যা বাংলাদেশের শিক্ষিত তরুণদের জন্যও সমানভাবে উন্মুক্ত। ইউরোপ ও আমেরিকার উদ্যোক্তারা এসব পদে লোক নিয়োগের ক্ষেত্রে এশীয় তরুণ-তরুণীকে বিশেষভাবে অগ্রাধিকার দিচ্ছে তুলনামূলকভাবে কম বেতনে নিয়োগদানের সুবিধা বিবেচনা করে। ভারত, শ্রীলংকা, থাইল্যান্ড, ফিলিপাইন, ভিয়েতনাম প্রভৃতি দেশের তরুণরা এ সুযোগ ব্যাপক হারে গ্রহণ করছে বা প্রয়োজনীয় যোগ্যতা থাকার কারণে তারা তা গ্রহণ করতে পারছে।

কিন্তু দুর্ভাগ্য, প্রয়োজনীয় শিক্ষাগত জ্ঞান ও ইংরেজি ভাষা না জানার কারণে বাংলাদেশের তরুণরা এ সুযোগের অতি সামান্য অংশও ভোগ করতে পরছে না। আর তা করতে না পেরে দোষ দিচ্ছে রাষ্ট্র ও সরকারকে। অবশ্য ত্রুটিপূর্ণ নীতিমালার দায় রাষ্ট্রেরও রয়েছে বৈকি! শখানেক মানহীন বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার অনুমোদন, শত শত মানহীন বেসরকারি কলেজের রাতারাতি সরকারীকরণ, ১৯৭০ সালের ২ হাজার ৭২১টি মাদ্রাসাকে ১৪ হাজার ১৫২টিতে উন্নীতকরণ— এসব তো রাষ্ট্রীয় নীতিমালা ও সিদ্ধান্তেরই প্রতিফলন বৈকি! শোনা যাচ্ছে, শিগগিরই প্রতি জেলায় ন্যূনতম একটি করে মডেল মাদ্রাসা স্থাপন করা হবে, যা স্পষ্টতই সরকার কর্তৃক গৃহীত সর্বশেষ শিক্ষানীতির পরিপন্থী ও অন্যদিকে বর্ধিত কর্মসংস্থান নীতিমালার সঙ্গেও অসঙ্গতিপূর্ণ। অতএব, দেশে একটি প্রকৃত কর্মোপযোগী শিক্ষিত তরুণ শ্রেণী গড়ে তুলতে হলে অবিলম্বে চলতি ধারার শিক্ষা ব্যবস্থা থেকে বেরিয়ে এসে চোখ-কান খুলে বিশ্ববাজারের চাহিদা ও প্রয়োজনের দিকে তাকিয়ে নতুন ধারার জনবল তৈরির প্রতি মনোযোগী হতে হবে। নইলে বাংলাদেশে কর্মরত পাঁচ লাখ বিদেশীর সংখ্যা যদি আগামী ১০ বছরে বেড়ে ১৫ লাখে উন্নীত হয়, তাতে মোটেও অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। কথাগুলো শুনে মন খারাপ হলেও এটাই বাস্তবতা।

লেখক : পরিচালক
আবু তাহের খান
ক্যারিয়ার ডেভেলপমেন্ট সেন্টার
ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি
atkhan56@gmail.com

Source: http://gg.gg/bq5sh

http://bonikbarta.net/bangla/news/2018-09-17
Title: Re: বাংলাদেশে ৫ লাখ বিদেশী কর্মজীবী: নেপথ্যের দুর্বলতা
Post by: tokiyeasir on September 22, 2018, 10:46:22 AM
Nice write up