Show Posts

This section allows you to view all posts made by this member. Note that you can only see posts made in areas you currently have access to.


Topics - thowhidul.hridoy

Pages: [1] 2 3 ... 6
1
গত তিন বছর ধরে অ্যাপল, স্যামসাংসহ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান যেসব ফোন বিক্রি করেছে সেগুলো মানুষের জন্য ‘বিপজ্জনক’ রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি রেডিয়েশন উৎপন্ন করেছে বলে জানিয়েছে শিকাগো ট্রিবিউন।

যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম প্রাচীন এই সংবাদমাধ্যমটি নিজেদের উদ্যোগে কয়েকটি জনপ্রিয় প্রতিষ্ঠানের স্মার্টফোন পরীক্ষা করে। গত এক বছর ধরে গবেষণা করার পর তারা দাবি করছে, ফেডারেল কমিউনিকেশনস কমিশন (এফসিসি) যে মাত্রার রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি রেডিয়েশন সমর্থন করে তার চেয়ে বেশি উৎপন্ন করেছে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের ফোন।

পঞ্চম প্রজন্মের নেটওয়ার্ক আসার ঘোষণায় এমনিতে রেডিও-ফ্রিকোয়েন্সি ইলেকট্রোম্যাগনেটিক রেডিয়েশন নিয়ে আলোচনা তুঙ্গে। বিজ্ঞানীদের শঙ্কা এই নেটওয়ার্ক মানুষের স্বাস্থ্য এবং পরিবেশের জন্য ক্ষতির কারণ হতে পারে।

এতদিন বলা হচ্ছিল পুরোনো মডেলের ফোনে যে ৩জি এবং ৪জি নেটওয়ার্ক ব্যবহার করা হয় সেটি এফসিসি অনুমোদিত। ক্ষতির মাত্রা থেকে অন্তত পাঁচগুণ কম বলেও দাবি ছিল ফোন প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানগুলোর। প্রতিষ্ঠানগুলোকে এফসিসির রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি রেডিয়েশনের নীতিমালা মেনে চলতে হয়।

এফসিসির নীতিমালা অনুযায়ী বর্তমানের নিরাপদ মাত্রাকে স্পেসিফিক অ্যাবজরপশন রেট বা ‘এসএআর’ বলা হয়। প্রতি কিলোগ্রামে এই মাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১.৬ ওয়াট করে।

ট্রিবিউন তাদের দীর্ঘ তদন্তে ১১টি আলাদা মডেল পরীক্ষা করেছে: চারটি আইফোন (৭, ৮, ৮ প্লাস এবং এক্স), স্যামসাং গ্যালাক্সির তিনটি (এস৮, এস৯ এবং জে৩), মটোরোলার তিনটি (ই৫, ই৫ প্লে এবং জি৬ প্লে) এবং একটি ব্লু ভিভো ৫ মিনি।

পরীক্ষা করা হয়েছে ক্যালিফোর্নিয়ার এফসিসি অনুমোদিত আরএফ এক্সপোজার ল্যাবে।

পরীক্ষকেরা ‘কৃত্রিম শরীরের’  ২, ৫, ১০ অথবা ১৫ মিলিমিটারের আশপাশে ফোনগুলো রাখেন। সঙ্গে চিনি, পানি এবং লবণের মিশ্রণ যোগ করা হয়।

ফলাফলে দেখা যায় আইফোন ৭’র রেডিও ফ্রিকোয়েন্সির শোষণমাত্রা সবচেয়ে বেশি। একই সঙ্গে শরীর থেকে ২ মিলিমিটার দূরের পরীক্ষায় এই ফোনটি নিরাপদ মাত্রার থেকে ২ অথবা ৪ গুণ বেশি রেডিয়েশন উৎপন্ন করেছে।

একই ‍দূরত্বে অন্য ফোনগুলোর অবস্থাও প্রায় একই।

এফসিসি বলছে, তারা নিজেরা ফোনগুলো পরীক্ষা করে সিদ্ধান্ত জানাবে।

মার্কিন প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান অ্যাপল এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত তাদের আইফোন নিয়ে কোনো মন্তব্য করেনি। সাড়া পাওয়া যায়নি দক্ষিণ কোরীয় প্রতিষ্ঠান স্যামসাংয়েরও।

2
মানুষের মধ্যে অনেকেই নিয়মিত ভাত আবার অনেকেই রুটি খায়। অনেকেই ভাবে, হয়ত রুটি খেলে শরীর বেশী সুস্থ আর ঝরঝরে থাকে!
এখন প্রশ্ন হলো, প্রতিদিন রুটি খাওয়া কি ঠিক? এতে আমাদের শরীরের কি কোনো ক্ষতি হয়? এটি অবশ্যই ভাবার বিষয়।

সম্প্রতি জি-নিউজের প্রতিবেদনে বলা হয়, রুটি বা আটা-ময়দার খাবার খাওয়ার ফলে শরীরে বাসা বাঁধতে পারে একাধিক রোগ।

গমে অতিরিক্ত গ্লুটেন (যা সহজে হজম হতে চায় না) থাকে। এ কারণে অনেক সময় পেটের নানা সমস্যার সৃষ্টি হয়। এতে কোলেস্টেরলের সমস্যাও বৃদ্ধি পেতে পারে। এছাড়া গমের তৈরি খাদ্য ত্বকের বয়স বাড়িয়ে দেয়। ত্বকে কুঞ্চন পড়ে যায়। এছাড়াও এই খাদ্য বেশি পরিমাণে খেলে চুল উঠে যাওয়ার সমস্যায়ও হতে পারে আপনার।

‘আমেরিকান জার্নাল অব ক্লিনিকাল নিউট্রিশন’ কর্তৃক প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে হয়েছে, পাউরুটি খাওয়ার পর শরীরে পরিপাকে বেশ কিছু পরিবর্তন হয়। এর প্রভাবে শরীরের বিশেষ কিছু হরমোনের ক্ষরণ বেড়ে যায় যা মানসিক অবসাদ বা ডিপ্রেশনের মতো সমস্যাকে বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়।

এছাড়াও একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে, গমে থাকা গ্লুটেন নামে উপাদান হজম হতে অনেকটাই সময় নেয়। আর এই কারণেই বাড়তে শুরু করে রক্তে শর্করার মাত্রা। ফলে ইনসুলিনের ক্ষরণও বেড়ে যায়।

দিনের পর দিন এমনটা চলতে থাকলে টাইপ-২ ডায়াবেটিকসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বহুগুণ বৃদ্ধি পায়। সেই কারণেই যাদের পরিবারে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রয়েছে, চিকিৎসকেরা তাদের গমের তৈরি খাবার এড়িয়ে চলার পরামর্শ দিয়ে থাকেন।

3
মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন মুসলিম সমাজে সাত দিনের মধ্যে জুমাবার তথা শুক্রবারকে বিশেষ মর্যাদায় ভূষিত করেছেন। আর এই দিনে মুসলমানরা তাঁদের শত ব্যস্ততা ছেড়ে জুমার নামাজ আদায় কর থাকনে। নামাজের সময় গরিব-ধনীর ভেদাভেদ ভুলে সবাই এক কাতারে শামিল হন এবং মসজিদে প্রবেশের পর সবার মর্যাদা সমান।
জুমা নামে পবিত্র কুরআনে একটি স্বতন্ত্র সূরা নাজিল হয়েছে। মহান আল্লাহ বলেছেন, ‘অতঃপর নামায সমাপ্ত হলে তোমরা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড় এবং আল্লাহর অনুগ্রহ সন্ধান কর ও আল্লাহকে অধিকরূপে স্মরণ কর; যাতে তোমরা সফলকাম হও।’ (সূরা জুমুআ, আয়াত : ১০)

হজরত ইবনে উমর (রা.) থেকে বর্ণিত আছে, ‘নবী করিম (সা.) নিষেধ করেছেন, কেউ যেন তার মুসলমান ভাইকে তার স্থান হতে উঠাইয়া দিয়া নিজে সেই স্থানে না বসে। তা জুমার দিন হোক বা অন্য কোনো দিন এবং মসজিদে হোক বা অন্য কোনো স্থানে হোক।’

হজরত আবু হুরাইরা (রা.) বর্ণনা করেছেন, এই দিনের মধ্যে এমন একটি মূল্যবান সময় আছে, যে সময়টুকুর মধ্যে নামাজরত অবস্থায় যেকোনো দোয়া করা হোক, আল্লাহতায়ালা উহা কবুল করে থাকেন, অবশ্য এই সময়টুকু খুবই অল্প। বুখারি প্রথম খণ্ড (৫২৩)। কাজেই জুমার দিনের প্রতিটি মুহূর্ত মুসলিম উম্মাহর জন্য বিশেষ অর্থবহ। তাই আমরা আত্মশুদ্ধির লক্ষ্যে আল্লাহর স্মরণ অন্তরে জাগরূক রাখি।

পবিত্র জুমার দিনে মুসল্লিরা ইচ্ছাকৃতভাবে ৫টি ভুল করে থাকে। যা কোনোভাবেই কাম্য নয়। সাধারণ এ ভুলগুলো থেকে বাঁচতে প্রত্যেককেই সতর্ক থাকা জরুরি। জুমার দিনের সাধারণ ৫টি ভুল হলো-

খুতবার সময় কথা:
জুমার নামাজের খুতবার সময় কথা বলা প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিষিদ্ধ করেছেন। কথা বলার দ্বারা অন্যকে খুতবা শুনতে বাধাগ্রস্ত করায়ও অনুমতি নেই। খুতবার সময় প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুসলিম উম্মাহকে চুপ থাকতে বলেছেন। সুতরাং ইমাম যখন খুতবা দেয় তখন চুপ থাকা উচিত। সাপ্তাহিক জুমার খুতবা সব মুসলিমের জন্য অনেক উপকারি। কারণ জুমার খুতবায় দ্বীন ও দৈনন্দিন অনেক বিষয়ে বয়ান পেশ করা হয়। হাদিসে এসেছে- রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘ইমাম যখন জুমার খুতবা দেয়, তখন তুমি তোমার কোনো সাথীকে চুপ থাকতে এবং খুতবার শোনার আহ্বান কর তবে নিঃসন্দেহে এটাও (চুপ থাকা ও খুতবা শোনার কথা বলা) শয়তানের কাজ।’ (বুখারি)

খুতবা না শোনা:
মুসল্লিদের মধ্যে এমন অনেকে আছে যারা ইচ্ছাকৃতভাবে খুতবা শোনে না কিংবা খুতবার সময় কথাবার্তায় সময় অতিবাহিত করে, সে ব্যক্তি জুমার নামাজ থেকেও অনুপস্থিত থাকে। যারা মনোযোগ দিয়ে খুতবা শুনে না, তারা পুরস্কারও পাবে না। তাই প্রত্যেক মুসলমানের উচিত মনোযোগ দিয়ে খুতবা শোনা। হাদিসে এসেছে-
হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি (ইমামের) খুতবার সময় নিজেকে কথা বলা থেকে বিরত না রাখবে সে জুমার পুরস্কার থেকে বঞ্চিত হবে।’ (মুসলিম)

শুক্রবার নামাজের সময় কাজ করা:
জুমার দিন নামাজের সময় যেকোনো কাজ করা নিষিদ্ধ। তারপরও মানুষ এ দিন নামাজ বাদ দিয়ে কাজে ব্যস্ত থাকে। শুক্রবার যখনই জুমার নামাজের আজান হবে তখনই সব কাজ রেখে মসজিদের দিকে ছুটে যেতে হবে। আল্লাহ তায়ালা জুমার নামাজের নির্দেশ দিয়ে বলেন- ‘হে মুমিনগণ! যখন জুমার দিন নামাজের জন্য (আজান) আহ্বান করা হয়, তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণের দিকে ধাবিত হও। আর বেচা-কেনা বর্জন কর। এটাই তোমাদের জন্য সর্বোত্তম, যদি তোমরা বুঝতে পার।’ (সূরা জুমআ : আয়াত ৯)

জুমার নামাজে দেরিতে যাওয়া:
সব সময় শুক্রবার জুমার নামাজের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করা। কোনো অজুহাতে জুমার নামাজে দেরি করে যাওয়ার পরিকল্পনা গ্রহণ করা যাবে না। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, শুক্রবার তাড়াতাড়ি জুমআর উদ্দেশ্যে গোসল করে মসজিদের দিকে যাওয়ার জন্য রয়েছে পুরস্কার। হাদিসে এসেছে- হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘প্রত্যেক জুমার দিন মসজিদের দরজায় ফেরেশতা অবস্থান করেন। ক্রমানুসারে মসজিদে আগমনকারীদের নাম লিখতে থাকেন। যে সবার আগে আসে তার জন্য মোটাতাজা উট কুরবানির সাওয়াব লেখেন। তারপর যে আসে তার জন্য গাভী কুরবানির সাওয়াব লেখেন। তারপর আগমনকারীর জন্য মুরগি দানের সাওয়াব লেখেন। তারপর আগমনকারী ব্যক্তি ডিম দানকারীর সাওয়াব পাবে। অতঃপর ইমাম যখন মিম্বারে আরোহন করেন তখন ফেরেশতা (সাওয়াব লেখার) খাতা বন্ধ করে মনোযোগ সহকারে ইমামের খুতবা শুনতে থাকেন।’ (বুখারি)

অপরিস্কার কাপড় পরিধান:
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জুমার নামাজের জন্য ভালো পোশাক পরিধান করতে বলেছেন। তিনি নিজেও শুক্রবার সর্বোত্তম পোশাক পরিধান করতেন। জুমার নামাজের জন্য অতিরিক্ত এক জোড়া পোশাক তৈরির তাগিদ দিয়েছেন। হাদিসে এসেছে-

হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে সালাম রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমাদের মধ্যে কারো ওপর দোষ আসবে না , যদি সে নিজের প্রয়োজনীয় কাপড় ছাড়াও সামর্থ্য থাকলে আরো দু’টি কাপড় জুমার নামাজের জন্য বানিয়ে নেয়া।’ (ইবনে মাজাহ, মিশকাত)

মূল কথা:
জুমার দিন ইচ্ছা করলেই প্রিয়নবী (সা.) ঘোষিত সুন্নাতগুলো যথাযথ পালন করা যায়। বিনিময়ে লাভ করা যায় অনেক সাওয়াব ও কল্যাণ। অথচ মানুষ ইচ্ছা করে-

খুতবার সময় কথা বলে। ইমামের খুতবা শোনা থেকে বিরত থাকে। জুমার নামাজের সময় হওয়া সত্ত্বেও কাজে ব্যস্ত থাকে। জুমার নামাজে দেরি আসে এবং অবহেলা বশতঃ অপরিস্কার, পুরাতন কাপড় পরিধান করে।
সুতরাং জুমার দিনের এ সাধারণ ভুলগুলো থেকে বেরিয়ে এসে হাদিসের নিদের্শনা অনুযায়ী, খুতবার সময় হট্টগোল না করে খুতবা শোনা, আজান হওয়ার নামাজের প্রস্তুতি গ্রহণ করে তাড়াতাড়ি মসজিদের দিকে ছুটে যাওয়া এবং জুমার দিন সর্বোত্তম পোশাক পরিধান করা। মহান রাব্বুল আরামিন আল্লাহ তায়ালা মুসলিম উম্মাহকে পবিত্র কোরআন ও সুন্নাহর নির্দেশনা অনুযায়ী জুমার দিনের এ সাধারণ ভুলগুলো থেকে হেফাজত থাকার এবং জুমার দিনের করণীয় কাজগুলো যথাযথ আদায় করার তাওফিক দান করুন। আল্লাহুম্মা আমিন।

4
প্রায় ১১ লাখ টাকা দামের ক্যামেরা অনলাইনে কেনাকাটার ওয়েবসাইট আমাজনের কিনেছেন মাত্র ৮ হাজার টাকায়!
প্রযুক্তি বিষয়ক ওয়েবসাইট সিনেট জানিয়েছে, আমাজন ঘোষিত ‘প্রাইম ডে’তে এ ঘটনা ঘটেছে। ধারণা করা হচ্ছে, বিশেষ দিনে খুচরা পণ্যে ছাড় দিতে গিয়ে ভুল করে বেশি দিয়ে ফেলেছেন কর্মকর্তারা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এই খবর ছড়িয়ে পড়লে আমাজনে ক্যামেরা কেনার হিড়িক পড়ে যায়। তবে সবাই অবশ্য দারুণ এই সুযোগটি লুফে নিতে পারেননি। এক ক্রেতা ক্যাননের ইএফ ৮০০ লেন্সের ক্যামেরা নেন। এটির আসল দাম বাংলাদেশি মুদ্রায় ১০ লাখ ৯৮ হাজার ৮৫৫ টাকা। সেটি তিনি কিনে নেন ৮ হাজার ৩০ টাকায়!

বছরের নির্দিষ্ট একটি সময়ে কয়েক দিনের জন্য প্রাইম ডে ঘোষণা করে আমাজন। অনেক ক্রেতা এই প্রাইম ডের জন্য মুখিয়ে থাকেন। এই দিনগুলোতে ভালো ছাড় দেওয়া হয়। এবার প্রাইম ডে ছিল ১৫ ও ১৬ জুলাই। ৮ হাজার টাকায় ক্যামেরা কিনে কিছুটা শঙ্কায় আছেন ওই ক্রেতা। ক্যামেরাটি সত্যি সত্যি আমাজন তার ঠিকানায় পাঠাবে কি না, সেটি বুঝতে পারছেন না তিনি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের বন্ধুদের উদ্দেশে লিখেছেন, ১০ লাখ টাকার ক্যামেরা ৮ হাজার টাকায় নিয়েছি। তারা এটা বাতিল করবে কি না?

তার মতো আরেকজন লিখেছেন, সবচেয়ে দামি ক্যামেরা কিনলাম মাত্র ৮ হাজার টাকায়। বেজোস আপনাকে ধন্যবাদ। আমাজনে যারা নিয়মিত কেনাকাটা করেন, তারা বলছেন যে পণ্য একবার বিক্রি হয়ে গেছে, সেটি আর বাতিল করবে বলে মনে হয় না। কারণ এই ইতিহাস প্রতিষ্ঠানটির নেই।

5
কুমিল্লা জেলায় দিন দিন কমে যাচ্ছে নানা প্রজাতির দেশীয় মাছ। এখন আর খাল-বিল ও নদীতে আগের মতো দেশীয় মাছ পাওয়া যাচ্ছে না।

জেলেরা দিনভর মাছ ধরার নানা কৌশল ব্যবহার করলেও ফিরতে হয় খালি হাতে। তাই হতাশ হয়ে অনেকে এ পেশা থেকে সরে যাচ্ছেন।

খাল-বিল, জলাশয় ভরাট হয়ে যাওয়া আর জমিতে কীটনাশক ব্যবহারের কারণে এসব মাছ কমে যাচ্ছে বলে মনে করেন স্থানীয় জেলেরা।

তবে পরিবেশবিদদের মতে, জলাশয় কমার পাশাপাশি রাসায়নিক সার আর নানা প্রতিবন্ধকতার কারণেও দেশীয় মাছ দিনদিন কমে যাচ্ছে।

কুমিল্লা জেলায় বছরে এখন দেশীয় প্রজাতির দুই লাখ মেট্রিক টন মাছ উৎপাদন হয়, যা আগের তুলনায় অনেক কম। তবে মাছ উৎপাদন বাড়াতে সরকার বর্তমানে নানামুখি কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। যার সুফল পেতে অধীর আগ্রহে আছে এ জেলার মানুষ।

কুমিল্লা জেলায় বেশ কয়েকটি নদীর পাশাপাশি রয়েছে খাল-বিল ও জলাশয়। এসব জলাশয়ে একসময় দেশী প্রজাতির শিং, মাগুর, বোয়াল, কই, টাকি, টেংরা, মলা, মেনি, পুটি, শোলসহ প্রচুর দেশীয় মাছ পাওয়া যেত। জলাশয়ে ধর্মজাল, ছিটা জালসহ নানাভাবে জেলেরা মাছ ধরতো।

এখনো জেলেরা এসব দিয়ে মাছ ধরতে গেলেও ফিরে আসে খালি হাতে। তাই বাজারগুলোতেও দেশীয় মাছের আকাল দেখা যায়। খাল-বিল ও জলাশয়ে পানি থাকলেও মাছের দেখা মিলে না।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) কুমিল্লা জেলার সভাপতি ডাক্তার মোছলেহ উদ্দিন বলেন, জেলেরা জীবিকার তাগিদায় কারেন্ট জাল ব্যবহার, বাঁশের বেড়াসহ আরও বেশ কয়েকটি প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে মাছের পোনা ধ্বংস করছে। এসবের ব্যবহার কমাতে জেলেদেরকে ভর্তুকি দেয়ার পরামর্শ দেন পরিবেশ রক্ষা আন্দোলনের এই নেতা।

এদিকে কুমিল্লার জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আবদুল কুদ্দুছ আকন্দ জানান, দেশীয় প্রজাতির মাছ হারিয়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ জলাশয় ভরাট। এছাড়াও মা মাছের প্রজনন ও বেড়ে উঠার জায়গার স্বল্পতাও অন্যতম কারণ।

6
সারাবিশ্বে মোবাইল এপ্লিকেশন ইন্ডাস্ট্রি ২০২০ সালে দুইশ’বিলিওন ডলার মার্কেটে পরিণত হবে। দেশের অ্যাপ ডেভলপাররাও এই মার্কেটপ্লেসে জায়গা করে নেবে এবং বৈদেশিক মুদ্রা আয় করবে। মঙ্গলবার (২৫ জুন) ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশের (আইইবি) কম্পিউটার কৌশল বিভাগের উদ্যোগে ‘মোবাইল অ্যাপস ডেভেলপমেন্ট এবং ব্যক্তিগত ডেটা সুরক্ষা’ সংক্রান্ত এক সেমিনারের মূল প্রবন্ধে এতথ্য জানানো হয়।

সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক ও আইইবি’র প্রেসিডেন্ট ইঞ্জিনিয়ার আবদুস সবুর বলেন, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি খাতে বাংলাদেশের অপার সম্ভাবনা এখন বিশ্বজুড়ে আলোচনায় রয়েছে। মোবাইল এ্যাপস ব্যবহার করে আমরা ট্যাক্সি ডাকছি, বাজার করছি, বিভিন্ন বিষয়ে আবেদনের ফরম আমরা এ্যাপস-এর মাধ্যমে পূরণ করছি। ট্রেন, বাস এমনকি সিনেমার টিকেটও এ্যাপসের মাধ্যমে সংগ্রহ করতে আমার দিনদিন অভ্যস্ত হচ্ছি। আর ফেসবুক, ইউটিউিব তথা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম তো আমাদের দৈনন্দিন জীবনের অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিলিয়ন ডলারের অ্যাপস বাজারে বাংলাদেশি অ্যাপ ডেভেলপারদের জন্য অপার সম্ভাবনা রয়েছে। এই সম্ভাবনাগুলোকে কাজে লাগানোর জন্য ইতিমধ্যে ৩১ হাজার ৯৩০ জন আইটি প্রশিক্ষিত দক্ষ জনবল তৈরি করেছে সরকার।

আইইবি’র প্রেসিডেন্ট বলেন, আধুনিক প্রযুক্তি নির্ভর প্রশিক্ষিত মানবসম্পদ তৈরির মাধ্যমে মোবাইল গেইম ও এ্যাপ্লিকেশন উন্নয়নে স্থানীয় বাজার সম্প্রসারণ ও আন্তর্জাতিক বাজারে প্রবেশের জন্য বাংলাদেশকে প্রস্তুত করার লক্ষ্যে সরকারের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের উদ্যোগে মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন তৈরির ওপর দেশব্যাপী বিনামূল্যে প্রশিক্ষণ প্রদানের জন্য একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। এছাড়াও বাংলাদেশ সরকারের আইসিটি বিভাগ ইতিমধ্যে মোবাইল গেইম ও এ্যাপ্লিকেশনের দক্ষতা উন্নয়ন শীর্ষক প্রকল্প চালু রয়েছে। সুতরাং আমাদের উচিত হবে অ্যাপস ডেভলমেন্টের এই বিশাল মার্কেটকে কাজে লাগানো এবং দেশের নতুন নতুন ডেভেলপারদের জন্য উন্নততর প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা। ভবিষ্যতে আমাদের দেশের এই অ্যাপ ডেভলপাররা বিদেশের মার্কেটপ্লেসে জায়গা করে নেবে এবং বৈদেশিক মুদ্রা আয় করবে।

সেমিনারে বক্তরা বলেন, দিনের একটি উল্লেখযোগ্য সময় ব্যয় করছি কোন না কোন মোবাইল অ্যাপসে হয় ফেসবুক, নয়তো টুইটার, জিমেইল, ইউটিউব, উবার, চালডাল কিংবা হোয়াটস এপ, ভাইবার ইত্যাদি। সারাবিশ্বে মোবাইল এপ্লিকেশন ইন্ডাস্ট্রি ২০২০ সালে ২০০ বিলিওন ডলার মার্কেটে পরিণত হবে। শুধুমাত্র এপল আর গুগলের প্লে স্টোরেই ৬ মিলিয়ন এরও বেশী মোবাইল এপ্লিকেশন রয়েছে। বিশ্বে মোবাইল ফোন সাবস্ক্রিপশনের সংখ্যা ৭ বিলিয়ন এরও বেশী। আমাদের দেশে শুধুমাত্র স্মার্ট ফোন ইউজার ৩ কোটিরও বেশী এবং ইন্টারনেট ব্যবহারে দক্ষিণ এশিয়ায় আমরা ২য়। স্মার্টফোন ব্যবহারকারীরা প্রতিমাসে গড়ে ৩০টি মোবাইল এপ্লিকেশন ব্যবহার করে। বিশ্বের ১০% মানুষ প্রতি ৪ মিনিটে একবার স্মার্টফোনটি চেক করে যার ৯০% সময় কাটে কোনো না কোনো মোবাইল এপ্লিকেশনে। চতুর্থ শিল্প বিল্পবে যে সকল উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার ব্যাপকহারে বিস্তার লাভ করবে বিশেষত আইওটির মত প্রযুক্তিগুলো অনেকটাই নির্ভর করবে মোবাইল এপ্লিকেশনের উপর।

সেমিনারে বিশ^বিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সদস্য অধ্যাপক ড. প্রকৌশলী সাজ্জাদ হোসেন, আইইবি’র সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী খন্দকার মনজুর মোর্শেদ, আইইবি’র কম্পিউটারকৌশল বিভাগের ভাইস-চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মো. তমিজ উদ্দীন আহমেদ প্রমুখ বক্তব্য দেন। আইইবি’র কম্পিউটারকৌশল বিভাগের চেয়ারম্যান এবং কানাডিয়ান ইউনির্ভাসিটি অফ বাংলাদেশের উপাচার্য অধ্যাপক ড. প্রকৌশলী মুহাম্মদ মাহফুজুল ইসলামের সভাপতিত্বে ও সম্পাদক প্রকৌশলী মো. রনক আহসানের সঞ্জালনায় সমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ফিনল্যান্ডের হেনসিংকি বিশ^বিদ্যালয়ের মোবাইল এপস ডেভেলপমেন্ট স্পেশালিষ্ট প্রকৌশলী মেজবাহুল ইসলাম এবং ফিনল্যান্ডের হেনসিংকি বিশ^বিদ্যালয়ের কমিউনিকেশন ল স্পেশালিষ্ট ড. শাকিলা-বু-পাশা। 

7
সময় মতো আখ বিক্রির টাকা না পেয়ে ক্ষোভে-দুঃখে জমি থেকে আখ উপড়ে ফেলেছেন জয়পুরহাট চিনি কলের কৃষক। আখের বদলে আবাদ করেছেন অন্য ফসল। চাষিদের কথা- তিন মাস আগে তারা আখ বিক্রি করেছেন। কিন্তু এখনও টাকা পাননি। তাহলে তাদের সংসরা চলে কীভাবে? ছেলেমেয়েদের পড়াশোনার খরচই আসে কোত্থেতে? যে ফসল বিক্রি করে দিনের পর দিন পাওনা টাকার জন্য ধরনা দিতে হয়, সেই ফসল আবাদ না করাই ভালো। জয়পুর হাট চিনি কলের ইবনে আল মাসুদ এবছর নিজের ৬ বিঘা জমিতে আখ চাষ করেছিলেন এবং মামার সঙ্গে যৌথভাবে করেছিলেন আরও ১৬ বিঘা জমিতে আখের চাষ। চিনিকল কর্তৃপক্ষের কাছে তার পাওনা ছিল ছয় লাখ টাকা। সেই টাকা সময় মতো না পাওয়াতে অভিমানে তিনি ১৬ বিঘা জমির আখ উপড়ে ফেলেন। তার মতো জয়পুরহাট সদর উপজেলার গাড়িয়াকান্ত গ্রামের আর একজন চাষি হাফিজার রহমান আখ বিক্রি করে সময় মতো আখের মূল্য আড়াই লাখ টাকা না পেয়ে দুই একর জমির আখ তুলে ফেলে ওই জমিতে কলার চাষ করেন। এভাবে জংপুরহাট চিনি কলের বিভিন্ন সাবজোন থেকে ৩০০ থেকে ৩৫০ একর জমির আখ তুলে ছিলেন কৃষক। এটা শুধু জয়পুরহাট চিনি কলে নয়; অন্যান্য চিনিকলেও এ ধরনের দুঃখজনক ঘটনা ঘটেছে।

আখ একটি দীর্ঘমেয়াদি ফসল। রোপণ থেকে কাটা পর্যন্ত ১২ থেকে ১৪ মাস সময়ের প্রয়োজন হয়। এ সময়ে আমন ধান, আলু ও ভুট্টার মতো তিনটি ফসলের চাষ করে আখের চেয়ে অনেক বেশি অর্থ আয় করা যায় অনায়াসে। তারপরও সেই আখ বিক্রি করে যদি সময় মতো মূল্য না পাওয়া যায়, তাহলে আখের আবাদ করবে কেন কৃষক? আজ থেকে প্রায় তিন মাস আগে দেশের ১৫টি রাষ্ট্রায়াত্ত চিনিকলে আখ সরবরাহ করেন কৃষক। চিনি বিক্রি না হওয়ার কারণে আখ বিক্রির টাকা না পেয়ে মহা বিপদে পড়েছেন কৃষক। সরকারি ১৫টি চিনিকলের কাছে আখ চাষিদের পাওনা রয়েছে ১৫০ কোটি টাকা। এর মধ্যে আখের মূল্য ১১৯ কোটি টাকা এবং বীজের মূল্য ৩১ কোটি টাকা। আখ চাষিদের পাওনা ১৫০ কোটি টাকা আসন্ন ঈদের আগে বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশনকে পরিশোধের পরামর্শ দিয়েছে সরকারি প্রতিষ্ঠান সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটি। কমিটির এ উদ্যোগকে আমার অভিনন্দন জানাই।

এরকমতো ছিল না দেশের কৃষিভিত্তিক একমাত্র ভারি প্রতিষ্ঠান চিনিশিল্প। আখ বিক্রির সঙ্গে সঙ্গেই কৃষক আখের মূল্য পেতেন। মনের আনন্দে নতুন আখ রোপণ করতেন। মুড়ি আখের যতœ নিতেন। সময় মতো সারও কীটনাশক প্রয়োগ করে আখের ফলন বাড়নোর চেষ্টা করতেন। বেশি দিনের কথা না, ১৯৮৯-৯০ মাড়াই মৌসুমে বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশন ২০ লাখ ৯৬ হাজার ২০৩ টন আখ মাড়াই করে ১ লাখ ৮৩ হাজার ৮৬২ টন চিনি উৎপাদন করে। সে সময় চিনি আহরণের হার ছিল ৮.৭৭%। পরবর্তীতে ২০০০-২০০১ মাড়াই মৌসুমে ১৩ লাখ ৬৯ হাজার ২৬ টন আখ মাড়াই করে ৯৮ হাজার ৩৫৫ টন চিনি উৎপাদন করে বিএসএফআইসি। ওই মাড়াই মৌসুমে চিনি আহরণ হার ছিল ৭.১১%। এরপর জলবায়ু পরিবর্তন, তুলনামূলক কম সূর্যালোক ঘণ্টা, আগাম আখ চাষের জমির পরিমাণ হ্রাস, নিচু জমিতে আখ চাষ, উচ্চ চিনি আহরণযুক্ত ইক্ষু জাতের অভাব, অপরিপক্ব আখ মাড়াই, পুরাতন যন্ত্রপাতি ও মিলের যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে কমতে থাকে চিনি আহরণ হার ও মোট চিনি উৎপাদন।

বাংলাদেশে আখই একমাত্র ফসল, যা কৃষক সরকার নির্ধারিত দামে সরাসরি মিলে সরবরাহ করতে পারেন। আখের মূল্য মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে কৃষককে প্রদান করা হয়। আখকে বলা হয় বীমাকৃত ফসল। কারণ খরা, অতিবৃষ্টি, ঝড়, বন্যা এবং রোগও পোকা মাকড়ের আক্রমণেও আখ ফসল একেবারে নষ্ট হয় না। বঞ্চিত করে না কৃষককে। অর্থ সংকটের কারণে চিনিকলগুলো এখনও আখের জমিতে উপরি প্রয়োগের জন্য প্রয়োজনীয় সার ও কীটনাশক সংগ্রহ করতে পারেনি। উপরি সার ও কীটনাশক প্রয়োগের সময় দ্রুত শেষ হয়ে যাচ্ছে। সময়মতো উপরি সার ও কীটনাশক প্রয়োগ করতে না পারলে আখের ফলন শতকরা ২৫ থেকে ৩০ ভাগ হ্রাস পাবে- এতে কোন সন্দেহের অবকাশ নাই। গত ২০১৮-১৯ মাড়াই মৌসুমে ১৫টি চিনিকলের আখ মাড়াই ও চিনি উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছিল যথাক্রমে ১৬ লাখ ৮২ হাজার ও ১ লাখ ২৫ হাজার টন। ওই লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে ১১ লাখ ৮২ হাজার টন আখ মাড়াই করে ৬৮ হাজার ৯৫২ টন চিনি উৎপাদন করা হয়। জুন মাসের পর বর্ষা শুরু হলে আখের জমিতে আর উপরি সার ও কীটাশক প্রয়োগ করা সম্ভব হবে না। একারণে আগামী মাড়াই মৌসুমে আখের স্বল্পতার কারণে চিনিকলগুলোতে চিনি উৎপাদনের পরিমাণ আরও হ্রাস পাবে এবং লোকসানের পরিমাণও বৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে। তাই সার ও কীটনাশক ক্রয়ের জন্য মিলগুলোকে যত শিগগিরই সম্ভব প্রয়োজনীয় অর্থ সররাহ করতে হবে।

জানা যায়, ২০১২-১৩ অর্থবছরে চিনিকলগুলো লোকসান ছিল ৩১৪ কোটি টাকা। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে সেটি বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়ায় ৬৪১ কোটি টাকায়। আর গত অর্থবছরে ১৪টি চিনিকলের লোকসান হয় ৮৩৪ কোটি টাকা। বাংলাদেশ চিনি ও শিল্প করপোরেশনের (বিএসএফআইসি) অধীনে থাকা ১৬টি শিল্পপ্রতিষ্ঠানে মধ্য লাভ করেছে শুধু দুটি প্রতিষ্ঠান। দর্শনার কেরু অ্যান্ড কোম্পানি ও কুষ্টিয়ার রেনউইক যজ্ঞেশ্বর অ্যান্ড কোম্পানি। লাভে থাকা কেরুর চিনি কারখানা ছাড়াও আছে ডিস্টিলারি ইউনিট, বাণিজ্যিক খামার পরীক্ষামূলক খামার ও জৈব সার কারখানা। সব মিলিয়ে কেরু গত অর্থ বছরে লাভ করেছে ৫ কোটি ৫৪ লাখ টাকা। অবশ্য ২০১৪-১৫ অর্থবছরের কেরুর লাভ ছিল ৯ কোটির টাকার বেশি। কুষ্টিয়ার রেনউইক অ্যান্ড যজ্ঞেশ্বর কোম্পানি গত বছর লাভ করেছে ৬ কোটি টাকা।

১৫টি চিনি কলের বার্ষিক উৎপাদন ক্ষমতা ২ লাখ ১০ হাজার টন হলেও বর্তমানে বছরে চিনি উৎপাদন হচ্ছে মাত্র ৭০ লাখ টনের মতো অর্থাৎ উৎপাদন ক্ষমতার মাত্র তিন ভাগের এক ভাগ। আখের স্বল্পতাই উৎপাদন ক্ষমতা অনুযায়ী চিনি উৎপাদন না হওয়ার অন্যতম কারণ। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর আখ চাষিদের দাবির প্রেক্ষিতে তিনবার আখের দাম বৃদ্ধির পরও মিল এলাকায় লক্ষ্যমাত্রা মোতাবেক হচ্ছে না আখ চাষ। বর্তমানে মিলসগেটে প্রতি মণ (৪০) আখের দাম ১৪০ টাকা। সে হিসেবে ১০০ কেজি আখের দাম ৩৫০ টাকা। সদ্যসমাপ্ত মাড়াই মৌসুমে করপোরেশনের গড় চিনি আহরণ হার ছিল ৫.৮৩%। সে অনুযায়ী ১০০ কেজি আখ থেকে চিনি পাওয়া যায় ৫ কেজি ৮৩০ গ্রাম। ৫০ টাকা কেজি হিসেবে যার বর্তমান বাজার মূল্য ২৯১ দশমিক ৫০ টাকা। অর্থাৎ ১০০ কেজি আখ থেকে যে চিনি পাওয়া যায় তা বিক্রি করে আখের দামই উঠে না। তারপর তো রয়েছে উৎপাদন উপকরণ- চুন, সালফারের দাম, জ্বালানি খরচ, শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতনÑভাতা, আখ পরিবহন খরচ এবং যন্ত্রপাতি মেরামতসহ অন্যান্য ব্যয়। এ অবস্থাতে চিনি কলগুলো লাভ করবে কীভাবে? সম্প্রতি (১৫ মে বুধবার) জাতীয় সংসদের সরকারি প্রতিষ্ঠান কমিটিতে বিএসএফআইসির প্রতিষ্ঠানগুলো নিয়ে আলোচনা হয়। তাতে সংস্থাটি চিনিকলের লোকসানের কিছু কারণ উল্লেখ করে। কারণগুলো হলো- উৎপাদন খরচের চেয়ে বিক্রয় মূল্য কম, পুঞ্জিভূত ঋণ ও সুদ, আখের উন্নত জাতের উদ্ভাবন না হওয়া, কারখানার আধুনিকায়ন না হওয়া ও দক্ষ জনবলের অভাব। এছাড়া বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো কর্তৃক অপরিশোধিত চিনি আমদানি করে কম দামে বাজারজাত করা। লোকসানের পাশাপাশি করপোরেশনের ব্যাংক ঋণ ও দায় দেনার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ছয় হাজার ৭১০ কোটি টাকা। করপোরেশনের দাবি লোকসান কমাতে ব্যাংকঋণ সুদসহ এককালীন মওকুফ করা হোক। এছাড়া বিএসএফআইসি না লাভ না ক্ষতি পর্যায়ে না আসা পর্যন্ত সরকারি রাজস্ব খাত থেকে বেতন প্রদান।

দেখা গেছে সরকারিভাবে চিনির দাম ৬০ টাকা নির্ধারণ করলে বেসরকারি পরিশোধন কারখানগুলো তাদের পরিশোধিত চিনি ৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করে। আবার চিনির দাম কমিয়ে সরকার প্রতি কেজির দাম ৫০ টাকা নির্ধারণ করলে পরিশোধন কোম্পানিগুলো বিক্রি করে ৪৮ টাকা কেজিতে। অন্যদিকে পরিশোধন কারখানাগুলোর উৎপাদিত চিনির রং ধবধবে সাদা। এসব কারণে সরকারি চিনি কলে উৎপাদিত চিনি বিক্রি হয় না। দেশে বর্তমানে ৬টি চিনি পরিশোধন কারখানা রয়েছে। এসব কারখানাগুলো ব্রাজিলও থাইল্যান্ড থেকে র-সুগার আমদানি করে পরিশোধন করে বাজারজাত করছে। এসব পরিশোধন কারখানাগুলোর বার্ষিক উৎপাদন ক্ষমতা ৩২ লাখ টন। আর দেশের বার্ষিক চিনির চাহিদা ১৪ লাখ টন। শর্ত ছিল পরিশোধন কারখানাগুলো তাদের উৎপাদিত চিনির ৫০% বিদেশে রফতানি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করবে। কিন্তু তারা সে শর্ত ভঙ্গ করে বিদেশে রফতানি না করে উৎপাদিত সমুদয় চিনিই দেশে বাজারজাত করছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে দেশের কৃষিভিত্তিক চিনি শিল্প ও আখ চাষিগণ।

কৃষি পণ্যের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করা ছাড়া দেশের কোটি কোটি কৃষকের ভাগ্য উন্নয়ন সম্ভব নয়। কৃষি প্রক্রিয়াকরণ শিল্পই পারে কৃষকের উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করতে। সে লক্ষ্যেই দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে স্থাপন করা হয় কৃষিভিত্তিক চিনি শিল্প। চিনি শিল্পগুলো শুধু চিনি উৎপাদনই করে না। স্বল্প সুদে আখ চাষিদের মধ্যে বীজ, সার ও কীটনাশক বিতরণ করে। প্রযুক্তিগত সহায়তা দেয়। আখ চাষিদের প্রশিক্ষণ দেয়। আখের সঙ্গে সাথি ফসল হিসেবে আলু, পেঁয়াজ, রসুন, শীতকালীন সবজি, ডাল ও তেল জাতীয় ফসল উৎপাদনে আখচাষিদের উদ্বুদ্ধ করে। আখ চাষিদের মেধাবী ছেলেমেয়েদের এককালীন বৃত্তি প্রদান করে। মিলজোন এলাকায় রাস্তা-ঘাট ও ব্রিজ-কালভার্ট মেরামত করে। আখ চাষিদের উৎপাদিত সমুদয় আখ সরকার নির্ধারিত দামে ক্রয় করে। আখের মূল্য হিসেবে চিনিকলগুলো আখচাষিদের মধ্যে কোটি টাকা বিতরণ করে, যা গ্রামীণ অর্থনীতির চাকাকে সচল রাখতে এবং এ শিল্পের সঙ্গে জড়িত প্রায় অর্ধকোটি মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে অবদান রাখে। চিনিকল এলাকায় অনেক কৃষক আছেন যাদের পাকা বাড়ি নির্মাণ হয়েছে আখের টাকায়। যাদের মেধাবী ছেলেমেয়েরা মেডিকেল কলেজ ও বিশ্ব বিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করছেন আখ বিক্রির অর্থে। চিনিকলগুলো চিনি উৎপাদনের সঙ্গে অনেক সামাজিক দায়িত্ব পালন করে, তাতে লাভবান হচ্ছেন দেশের ক্ষুদ্র-প্রান্তিক কৃষক ও ভোক্তা সাধারণ। সে হিসেবে চিনি পরিশোধন কারখানাগুলো দ্বারা এদেশের কৃষকের কোন উপকারই হচ্ছে না। উপকার হচ্ছে ব্রাজিল ও থাইল্যান্ডের কৃষকের। আমরা সবাই বলি- কৃষক বাঁচলে বাংলাদেশ বাঁচবে। সেটা যদি সত্য হয়, তা হলে আর দেরি না করে অনতিবিলম্বে আখ চাষিদের পাওনা আখের মূল্য পরিশোধে সরকারকে জরুরি পদক্ষেপ নিতে হবে। সেই সঙ্গে চিনিকলগুলিকে বাঁচিয়ে রাখার ব্যাপারেও সঠিক ও বাস্তব সম্মত পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে সরকারকেই। অন্যথায় সরকারি চিনিকলগুলো বন্ধ হলে বেসরকারি পরিশোধন কারখানাগুলোর একচেটিয়া ব্যবসার কারণে দেশবাসীকে বর্তমানের দ্বিগুণ দামে চিনির স্বাদ ভোগ করতে হবে-এতে কোনো সন্দেহের অবকাশ নেই।

8
তরুণদের মধ্যে মোবাইল ফোন ও কম্পিউটারে আসক্তি প্রতিরোধে বিশেষ আইনের খসড়া তৈরি করছে ইতালি। দেশটির ক্ষমতাসীন ফাইভ স্টার মুভমেন্টের (এম৫এস) দল ডিজিটাল আসক্তি প্রতিরোধ ও চিকিৎসার প্রয়োজনে নতুন এ বিল আনছে। এ বিলের মাধ্যমে ‘নো মোবাইল ফোন ফোবিয়া’ বা নোমোফোবিয়া মোকাবিলা করা যাবে।

নোমোফোবিয়া হচ্ছে মোবাইল থেকে দূরে থাকায় আশঙ্কা। মোবাইল ফোন সব সময় ঠিক জায়গায় আছে কি না, তা নিয়ে মন সব সময় সতর্ক থাকে। মোবাইল হারানো বা মোবাইল থেকে দূরে থাকার ভয় থেকে মনের মধ্যে জন্ম নেয় এক সমস্যা। মোবাইল ফোনের বিভিন্ন অ্যাপ বা সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে নিয়মিত আপডেট না জানার আশঙ্কা তৈরি হয়। গবেষকেরা মোবাইল ফোনের সঙ্গে যোগাযোগ হারানোর এই ভয়জনিত সমস্যার নাম দিয়েছেন ‘নোমোফোবিয়া’, যার পুরো নাম ‘নো মোবাইল ফোন ফোবিয়া’। বর্তমানে যুক্তরাজ্যের ৫৩ শতাংশ এবং ২৯ শতাংশ ভারতীয় তরুণরা এ রোগের শিকার।

ইতালির ওই খসড়া আইনে সন্তানের মা-বাবা ও অভিভাবকের জন্য শিক্ষামূলক কার্যক্রম অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, যাতে তারা শিশুদের অতিরিক্ত মোবাইল ফোন ব্যবহারের বিষয়টি ধরতে পারেন। এ ছাড়া এই আইনে স্কুল ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় ইন্টারনেট ও সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমের অতিরিক্ত ব্যবহারের কুফল সম্পর্কে জানানোর পরিকল্পনার কথা রয়েছে। নোমোফোবিয়া সাধারণত তরুণদের ক্ষেত্রে বেশি ঘটে। তাদের রাতে ঠিকমতো ঘুম হয় না।

ইতালিতে ১৫ থেকে ২০ বছর বয়সি অর্ধেকের বেশি তরুণ দিনে ৭৫ বারের বেশি মোবাইল ফোন দেখেন। দেশটির ন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন অব টেকনোলজিক্যাল ডিপেনডেনে্সর করা এক গবেষণার বরাতে গণমাধ্যমে গতকাল সোমবার এ তথ্য প্রকাশিত হয়।

৬১ শতাংশ ইতালিয়ান নাগরিক বিছানায় শোবার সময় ট্যাবলেট বা মোবাইল ফোন ব্যবহার করেন। এর মধ্যে ১৮ থেকে ৩৪ বছর বয়সিদের সংখ্যা ৮১ শতাংশ। ফাইভ স্টার মুভমেন্ট তাদের খসড়ায় বলেছে, মোবাইল ফোনের আসক্তিকে জুয়ার আসক্তির সঙ্গে তুলনা করা যায়। এতে ডোপামিনের উত্পাদনে ব্যাঘাত ঘটে। ডোপামিন একটি হরমোন। দেহের ওজন নির্দিষ্ট মাত্রায় বজায় রাখার জন্য হরমোনটির গুরুত্ব রয়েছে। ডোপামিনকে কর্ম ত্বরান্বিতকরণ হরমোনও বলা হয়।

9
শুধু স্মার্টফোন নয়, টিভি থেকে লাইট সবই এখন স্মার্ট। তবে এই স্মার্ট গ্যাজেটের যুগে সমস্যাও রয়েছে অনেক। সমস্যা কিন্তু ছোটোখাটো নয়, রীতিমতো ভয়ংকর। ফেসবুক কিংবা মেইল অ্যাকাউন্ট যেমন হ্যাক হয়, তেমনই ব্যক্তিগত জীবনও হ্যাক হয়ে যেতে পারে।

সম্প্রতি ভারতে এমন একটি ঘটনা ঘটে। গুজরাতের সুরাতে এক দম্পতির সঙ্গে তেমনই ঘটনা ঘটেছে। ঐ দম্পতির বাড়িতে রয়েছে স্মার্ট টিভি। সেই টিভিতেই সুরাতের বাসিন্দা এক ব্যক্তি দেখেন তাঁর ও তাঁর স্ত্রীর ভিডিও দেখা যাচ্ছে পর্নো সাইটে। তাঁদের ব্যক্তিগত সময়ের ফুটেজ চলে গিয়েছে ঐ সাইটে। যা দেখে চমকে ওঠেন তিনি। খবর দেন পুলিশে। সাইবার সিকিউরিটি এক্সপার্টরাও চমকে যান এই কথা শুনে।

সাইবার পুলিশ তদন্তের জন্য ঐ দম্পতির বাড়িতে আসেন। প্রথমটায় তাঁরা ভেবেছিলেন যে, ঐ অ্যাপার্টমেন্টে কোনো লুকনো ক্যামেরা রয়েছে, আর তাতেই দম্পতির ফুটেজ উঠে গিয়েছে আর সেটাই কোনোভাবে লিক হয়ে গিয়েছে। কিন্তু, বিশেষজ্ঞরা অনেক খুঁজেও কোনো ক্যামেরার সন্ধান পাননি। পরে, তাঁদের চোখ পড়ে ঘরে থাকা স্মার্ট টিভিতে। এরপরই বিষয়টা ক্রমশ পরিষ্কার হতে থাকে তাঁদের কাছে।

জানা যায়, ঐ ব্যক্তি মাঝে-মধ্যেই পর্নো সাইট দেখতেন ঐ স্মার্ট টিভিতে। আর সেরকমই কোনো একটা সাইট থেকে হ্যাকার ঢুকে পড়ে। সেই হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে টিভিতে থাকা ক্যামেরা ব্যবহার করতে পারে সহজেই। ঠিক যেভাবে কম্পিউটার হ্যাক হয়, সেভাবেই।

সেই ক্যামেরাতেই বন্দি হয় দম্পতির ব্যক্তিগত জীবন। যেহেতু টিভিটি ওয়াই-ফাই এনেবল ছিল, তাই দূরে বসেই টিভির ক্যামেরা থেকে লাইভ ভিডিও পেয়ে যায় ঐ হ্যাকার। এরপর সেই ঘনিষ্ঠ অবস্থার দৃশ্য আপলোড করা হয় পর্নো সাইটে।

এই বিষয়টা সামনে আসার পরই সাইবার সিকিউরিটি এক্সপার্টরা ঐ ওয়েবসাইট থেকে দৃশ্যটি ডিলিট করে দেওয়ার ব্যবস্থা করেন। কিন্তু আগামীতে এই ধরনের স্মার্ট ডিভাইস ব্যবহার করা কতটা নিরাপদ হবে, সেই প্রশ্ন জেগেছে সংশ্লিষ্টদের মনে।

10
অল্প বয়সিদের মধ্যে বাড়ছে হিংসা। ভার্চুয়াল জগতের মোহে তারা সরে যাচ্ছে বাস্তবতা থেকে। এই অভিযোগে এর আগেও বিশ্বের একাধিক দেশে নিষিদ্ধ হয়েছে পাবজি (PUBG)। এবার সেই দেশগুলোর তালিকায় নাম উঠল জর্ডানের। ক্ষতিকর প্রভাবের জন্য নিষিদ্ধ করা হলো এই অনলাইন গেম।

জর্ডানের টেলিকম নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষের দাবি, ব্যবহারকারীদের ওপর কুপ্রভাবের জেরেই সরকারিভাবে নিষিদ্ধ করা হলো এই গেম। এদিকে জর্ডানে যথেষ্ট জনপ্রিয় পাবজি। দেশের যুবসমাজের মধ্যে এই গেমের জনপ্রিয়তা তুঙ্গে। এ নিয়ে এর আগেও উদ্বেগ প্রকাশ করেছিল সেই দেশের টেলিকম কর্তৃপক্ষ।

জর্ডানের মনোবিদদের দাবি, খেলার সময় অন্য খেলোয়াড়দের নৃশংসভাবে হত্যা করাই এই গেমের নিয়ম। এ ধরনের গেম-প্লে অল্প বয়সিদের মধ্যে হিংসার জন্ম দিতে পারে। তার পরেই পাবজি নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
ইতিপূর্বে ইরাক ও নেপালে নিষিদ্ধ করা হয়েছে পাবজি। ভারতের গুজরাটেও নিষিদ্ধ এই গেম। ইন্দোনেশিয়ার আচে-তে নিষিদ্ধ এই গেম।
প্লেয়ার আননোউন্স ব্যাটল গ্রাউন্ড (পাবজি) সারা বিশ্বেই তুমুল জনপ্রিয়। বিশ্বজুড়ে প্রায় ৪০ কোটি অ্যাকাউন্ট আছে এই গেমে। প্রতি মাসে বিশ্বের প্রায় ২৭ কোটি মানুষ নিয়মিত এই গেম খেলে।

স্মার্টফোনে ইন্টারনেট সহজলভ্য হয়ে যাওয়ায় আরও জনপ্রিয়তা পেয়েছে এই অনলাইন গেম। পেশা হিসেবেও অনেকে বেছে নিচ্ছেন পাবজি খেলা। ভারতসহ বিভিন্ন দেশেই পাবজি নির্মাতা বা অন্যান্য সংস্থা নিয়মিত টুর্নামেন্টের আয়োজন করে। টুর্নামেন্টে জয়ী হলে থাকে মোটা অঙ্কের টাকা জেতার সুযোগ। সেই কারণে আরও বেশি করে এই গেমের দিকে ঝুঁকছে অল্প বয়সিরা।

পাবজি খেলতে খেলতে উত্তেজনায় কিশোরের মৃত্যু:
ভারতের মধ্য প্রদেশে পাবজি খেলতে খেলতে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েছে এক কিশোর। ২৮ মে দুপুরের খাওয়া শেষ করেই মুঠোফোনে পাবজি খেলতে বসে ফুরখান কুরেশি। টানা ছয় ঘণ্টা একটানা খেলে হেরে যায় সে। এর পরেই উত্তেজিত হয়ে বাকি খেলোয়াড়দের ওপর চিত্কার করতে করতে অজ্ঞান হয়ে পড়ে। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিত্সকেরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

পাবজি নামের এই অনলাইন গেম চালু হওয়ার পর থেকেই তার জনপ্রিয়তা তুঙ্গে। অচেনা একদল খেলোয়াড় মিলে একে অন্যের বিরুদ্ধে বা অন্য কোনো দলের বিরুদ্ধে চলে যুদ্ধ। যে দল জেতে, তারা পায় চিকেন ডিনার ও লড়াই করার জন্য বিভিন্ন অস্ত্র। অত্যধিক আকর্ষণের জন্য খেলোয়াড়েরা দিন-রাত তাদের মোবাইলে মগ্ন থাকে, পারিপার্শ্বিক জগতের দিকে কোনো খেয়াল থাকে না।

মনোরোগ বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ, এই গেমের নেশা থেকে মুক্তি পেতে কয়েক দিন থেকে কয়েক সপ্তাহ এই গেম ও মোবাইল ফোন থেকে দূরে থাকতে হবে।

11
ব্যক্তিগত তথ্য বেহাতের ঘটনায় ফেসবুককে রেকর্ড পরিমাণ ৫০০ কোটি মার্কিন ডলার জরিমানার অনুমোদন দিয়েছে মার্কিন নিয়ন্ত্রকেরা। যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যমের বরাত দিয়ে বিবিসির এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল ট্রেড কমিশন (এফটিসি) যুক্তরাজ্যভিত্তিক রাজনৈতিক পরামর্শক প্রতিষ্ঠান কেমব্রিজ অ্যানালিটিকার বিরুদ্ধে ফেসবুক থেকে ৮ কোটি ৭০ লাখ ব্যবহারকারীর তথ্য অনৈতিকভাবে সংগ্রহের অভিযোগ তদন্ত করছে। এই প্রতিষ্ঠানটি ২০১৪ সাল থেকে এসব তথ্য হাতিয়ে নিয়েছিল বলে অভিযোগ।

বিবিসি জানায়, প্রায় ৮ কোটি ৭০ লাখ ব্যবহারকারীর তথ্য বেহাত ও অপব্যবহারের অভিযোগ নিয়ে এফটিসি গত বছরের মার্চ থেকে তদন্তে নামে।
যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম জানায়, ৩-২ ভোটে এ জরিমানার বিষয়টি অনুমোদিত হয়। রিপাবলিকান কমিশনাররা এ জরিমানার পক্ষে থাকলেও ডেমোক্রেটরা ছিলেন বিপক্ষে। এদিকে এসব প্রতিবেদনের বিষয়ে কোনো মন্তব্য নেই বলে জানিয়েছে এফটিসি ও ফেসবুক।
জরিমানার বিষয়ে এখন চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেবে মার্কিন বিচার বিভাগের সিভিল বিভাগ। জরিমানার চূড়ান্ত নিষ্পত্তিতে কত সময় লাগবে, তা জানা যায়নি। তবে শেষ পর্যন্ত যদি ৫০০ কোটি ডলার জরিমানা বহাল থাকে তাহলে তা হবে কোনো প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের ওপর এফটিসির আরোপ করা সর্বোচ্চ জরিমানা।

২০১৬ সালের যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্পের পক্ষে কাজ করেছিল কেমব্রিজ অ্যানালিটিকা। একটি অ্যাপের মাধ্যমে কয়েক কোটি ফেসবুক গ্রাহকের তথ্য হাতিয়ে তা প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচারের কাজে লাগানো হয়েছিল বলে ফাঁস হয়। ট্রাম্পের বিজয়ে এর বড় ভূমিকা রয়েছে বলে মনে করা হয়।
ফেসবুক ব্যবহারকারীদের তথ্য বেহাত হওয়ার ঘটনাটি সামনে নিয়ে আসেন কেমব্রিজ অ্যানালিটিকার সাবেক কর্মী ক্রিস্টোফার উইলি। তিনি বলেন, ফেসবুকের কোটি কোটি গ্রাহকের ব্যক্তিগত তথ্য কেমব্রিজ অ্যানালিটিকার কাছে বিক্রি করা হয়।
ওই তথ্যগুলো প্রক্রিয়াজাত করে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রচার শিবিরকে সরবরাহ করেছিল কেমব্রিজ অ্যানালিটিকা। শুধু তাই নয়, ওই তথ্যগুলো বিশ্লেষণ করে সম্ভাব্য রিপাবলিকান ভোটারও চিহ্নিত করা হয়।

এদিকে ফেসবুক কর্তৃপক্ষ ৮ কোটি ৭০ লাখ ব্যবহারকারীর তথ্য বেহাত হওয়ার কথা স্বীকার করেছে। আর কেমব্রিজ অ্যানালিটিকা দাবি করছে, ফেসবুক থেকে সংগৃহীত কোনো তথ্য তারা ট্রাম্পের প্রচারণায় ব্যবহার করেনি।

12
ফেসবুক, টুইটার, গুগলসহ বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া ও সার্চ ইঞ্জিন আনার ব্যক্তিগত তথ্য ও আচরণের তথ্য ছাড়া টিকে থাকতে পারবে না। তারা অর্থ উপার্জনের জন্য, বিজ্ঞাপনের জন্য ও পণ্য বিক্রির জন্য আপনার ব্যক্তিগত তথ্য ব্যবহার করে থাকে। কিন্তু আপনি বুঝতে পারছেন না যে তারা আসলে কী করছে।

তবে এটি সত্যি যে, সোশ্যাল মিডিয়ার সেবাগুলো গ্রহণ করতে আপনাকে কোনো অর্থ গুনতে হচ্ছে না। গত কয়েক মাস ধরে শীর্ষস্থানীয় সোশ্যাল মিডিয়া, যেমন— ফেসবুক, টুইটার ও গুগল—তারা নিরাপত্তার বিষয়টিতে বেশ গুরুত্ব দিতে শুরু করেছে।

এটি বলা খুবই সহজ, তারা বলছে যে, এ বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। তারা আমাদের ব্যক্তিগত তথ্য ও আচরণের তথ্য সংগ্রহ করছে না। তারা সব তথ্য ব্যক্তিগত রাখার পদ্ধতি অবলম্বন করতে যাচ্ছে। তারা বলছে, ‘আমরা ব্যবহারকারীদের তথ্য ও গোপনীয়তা রক্ষা করি।’
তারা কয়েক বছর ধরে ব্যবহারকারীদের ব্যক্তিগত তথ্য বিজ্ঞাপনী সংস্থাগুলোর ও ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে অর্থ উপার্জনের জন্য সংগ্রহ করছে।
এখানে চিত্রটি তুলে ধরা হলো, সেটি ভালো করে দেখুন। আপনি ব্যবহারকারী, আপনার অবস্থান বাঁ দিকে। আপনি যখন সাইটে নিবন্ধন করবেন তখন তারা আপনাকে কিছু মৌলিক তথ্য জিজ্ঞাসা করে। এখানেই শেষ নয়, এরপর তারা ধীরে ধীরে আপনার ব্যক্তিগত তথ্যগুলো সংগ্রহ করতে থাকে। যদিও তারা বলে থাকে যে, আমরা আপনার ব্যক্তিগত তথ্য রাখি, তবে এ তথ্য কারো কাছে হস্তান্তর বা বিক্রি করি না।

এটি সত্য হতে পারে। তবে তারা এমনটি করবে না, যাতে বিজ্ঞাপনী সংস্থাগুলো আপনার পছন্দমতো বিজ্ঞাপনগুলো তৈরি করতে পারে। এমনকি অফার দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেও আপনার আচরণ-সম্পর্কিত তথ্যগুলো ব্যবহার করবে না।
যদিও তারা আপনার ব্যক্তিগত তথ্য গোপন রাখে, তবু অর্থ উপার্জনের জন্য তারা আপনার ব্যক্তিগত তথ্য ব্যবহার করতে পারে।
কোম্পানিগুলো অর্থ উপার্জনের জন্য যা কিছু করে, তার চেয়ে অন্য প্রসঙ্গে তারা বেশি বলে। তবে এটি স্পস্ট যে, যতক্ষণ তারা আপনার ব্যক্তিগত তথ্য না পায় ততক্ষণ তারা আপনার মাধ্যমে অর্থ উপার্জন করতে পারে না।

যদিও তারা আগামী পরিকল্পনা সম্পর্কে বলে, ‘ আগামীতেও আমরা আপনার ব্যক্তিগত তথ্য ব্যবহার করব না।’ পরবর্তী সময়ে দেখবেন, ঐ তথ্যগুলোই তারা অর্থ উপার্জনের জন্য ও তাদের সাশ্রয়ের জন্য ব্যবহার করছে।

যদি এমন হতো যে, আপনার ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষার জন্য প্রতি মাসে ১০ থেকে ২৫ ডলার পর্যন্ত অর্থ পরিশোধ করতে হবে, তাহলে ভালো হতো। তবে লাখ লাখ ব্যবহারকারী রয়েছে, যারা তাদের ব্যক্তিগত তথ্য নিয়ে ভাবে না। তারা শুধু অ্যাপ্লিকেশনটি ব্যবহারই করছে। তবে সার্চ ইঞ্জিন থেকে তথ্য ব্যবহার করে অর্থ উপার্জনের কোনো সম্ভাবনা নেই।

শেষ পর্যন্ত আপনার তথ্য সুরক্ষার বিষয়ে যত্নবান হওয়া প্রয়োজন। হয়তো আপনার এমন একটি দিন আসবে যেদিন আপনি বিনা মূল্যে তথ্য প্রদানের দায় অনুশোচনা করবেন। এমনও হতে পারে, আপনার ব্যক্তিগত তথ্য-সম্পর্কিত আইডিটি হ্যাক হতে পারে। এ থেকে আপনার কাজে মুক্তিপণও দাবি করতে পারে। এ ছাড়াও ঐ তথ্যগুলো ব্যবহার করে নিষিদ্ধ কাজে ব্যবহারের মাধ্যমে আপনাকে আইনি জটিলতায় ফেলতে পারে। এছাড়াও ভালো একটি চাকরি পেতে বাধার সৃষ্টি করতে পারে অথবা জালিয়াতির মাধ্যমে পোস্ট দিয়ে আপনার সঙ্গে অন্যদের বন্ধুত্ব নষ্ট করে দিতে পারে।
একজন বিনিয়োগকারী হিসেবে আমি সর্বদা বিজ্ঞাপনভিত্তিক ওয়েবসাইট থেকে দূরে সরে থাকি এবং সাবস্ক্রিপশন-ভিত্তিক মডেলগুলোতে আমি বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকি। যদি আপনার কাছে মূল্যবান কিছু থেকে থাকে তবে লোকেরা তার মূল্য দিতে প্রস্তুত।

অ্যাপল মিউজিক, স্পটিফাই, অ্যামাজন মিউজিকের মতো সাইটগুলোতে এখন সাবস্ক্রিপশন ফি দিতে হয়। তারা আপনার ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহ করে। বিনা পয়সায় যারা ঐ সাইটগুলোতে গান আপ করায় তা মুছে ফেলা হয়। এ বিষয়টি টেলিভিশনে ভিডিওর মতো পণ্যের বেলাতেও লক্ষণীয়। এই পরিষেবা গ্রহণের জন্য প্রতি মাসে ব্যবহারকারীদের ৯.৯৫ ডলার প্রতি মাসে গুনতে হচ্ছে। এতে প্রমাণিত হয়, যুক্তিসংগত সাবস্ক্রিপশন ফি দিতে ব্যবহাকারীরা ইচ্ছুক।

13
সত্তরের দশকের পর থেকেই খুব দ্রুত বদলে যাচ্ছে প্রযুক্তি বিশ্বের প্রেক্ষাপট। প্রযুক্তির অগ্রগামিতার গতিতে খুব দ্রতই পুরোনো হয়ে যাচ্ছে আজকের সর্বাধুনিক প্রযুক্তিটিও। সাথে সাথে বৈপ্লবিক সব প্রযুক্তির আগমণও ঘটছে। তেমনি সামনের দিনগুলোতে বৈপ্লবিক সব পরিবর্তন ঘটাতে সক্ষম, এরকম কিছু প্রযুক্তির কথা এই লেখায়—

সত্তর দশকের কথা। কম্পিউটার বস্তুটা তখনও কেবল গবেষণানির্ভর কাজের জন্য আর শিল্প পর্যায়ে ব্যবহারের উপযোগী এক ডিভাইস। একেকটা কম্পিউটারের সিপিইউ’র আকৃতি ছোটখাট একটা ঘরের আয়তনের সমান। আর তখনকার প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী সাধারণ মানুষ কম্পিউটার দিয়ে করবেই বা কী? তবে এই ধারণার বাইরেও চিন্তা করার মানুষের অভাব ছিল না। স্টিভ জবস, বিল গেটস, পট ওটালিনি, ডেভিড মুরের মতো মানুষের কল্পনা ছিল সুদূরপ্রসারী। তারা কম্পিউটার নামক যন্ত্রটিকে গবেষণা আর বিশেষায়িত কাজের বাইরে একদম সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন কাজের উপযোগী ডিভাইস হিসেবেই ভাবতে পেরেছিলেন। এইসব স্বদ্রষ্টা আর তাদের অনুসারীদের মেধা আর শ্রমে আজ সারাবিশ্বের মানুষের হাতে হাতে পৌঁছে গেছে কম্পিউটার। এই কম্পিউটারেও তৈরি হয়েছে হাজারো রকমফের। আর কম্পিউটারের সাথে সংশ্লিষ্ট সব প্রযুক্তি মিলে গোটা বিশ্বের চিত্রটাই বদলে গিয়েছে। কম্পিউটার দিয়ে প্রযুক্তির যে যুগের সূচনা, ইন্টারনেট, মোবাইল ফোন এবং আধুনা ট্যাবলেট পিসি আর স্মার্টফোনে সেই যুগ পৌঁছে গেছে পরিণত এক অবস্থানে। তবুও প্রযুক্তির চমক থেমে নেই। সামনের দিনে বৈপ্লবিক পরিবর্তন ঘটাতে সক্ষম, এমন কিছু প্রযুক্তির কথা নিয়ে আলোচনার কমতি নেই কোথাওই। এরকম কিছু প্রযুক্তির কথা তুলে ধরা হলো এই লেখায়—

মেমরিস্টোর:
ইলেকট্রনিক্সের সূচনালগ্ন থেকেই সার্কিট কম্পোনেন্ট হিসেবে তিনটি উপাদানকেই চিনে এসেছে সবাই— রেজিস্টার, ইনডাক্টর এবং ক্যাপাসিটর। ১৯৭১ সালে এসে ইউসি বর্কলের গবেষক লিওন চুয়া বিশ্বকে চতুর্থ এক সার্কিট কম্পোনেন্টের ধারণা প্রদান করেন। তিনি এর নাম দেন মেমরিস্টর। ‘মেমোরি’ এবং ‘রেজিস্টর’ শব্দ যুগল থেকেই উত্পত্তি মেমরিস্টোর নামের। আর এর কাজটাও তেমনই। মেমরিস্টরের মধ্য দিয়ে কতটুকু বিদ্যুত্ প্রবাহিত হয়েছে, তা এটি এর স্মৃতিতে সংরক্ষণ করতে পারে। কেবল তাই নয়, এর মধ্য দিয়ে প্রবাহিত বিদ্যুতের পরিমাণকেও এটি বদলে দিতে পারে। আর সবচেয়ে অনন্য বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, যখন বিদ্যুতের প্রবাহ বন্ধও থাকে, তখনও এটি এর বিদ্যুতিক অবস্থাটিকে সংরক্ষণ করে রাখতে পারে। যার ফলে এখনকার ফ্ল্যাশ মেমোরির চাইতেও অনেক বেশি দক্ষ এবং কার্যকর মেমোরি স্টোরেজ হিসেবে এর ব্যবহার সম্ভাবনাময় হয়ে উঠেছে। ধারণা করা হচ্ছে মেমরিস্টরের ব্যবহারে ডিভাইসগুলোতে মেমোরির ঘনত্ব আরও বাড়ে। র্যামকেও এটি প্রতিস্থাপন করতে সক্ষম করে। সলিড স্টেট পিসি’র যে ধারণাটি নিয়ে গবেষকরা কাজ করেছিলেন, তাও সম্ভব হয়েছে এরই কল্যাণে।

৬৪- কোরের সিপিইউ:
কম্পিউটারের যাত্রার শুরু থেকেই প্রসেসর হিসেবে এক কোরের প্রসেসরই ব্যবহার হয়ে আসছে। তবে চলতি শতকের শুরু থেকেই একাধিক কোরের প্রসেসর যাত্রা শুরু। এখন তো হরহামেশাই কোয়াড-কোর প্রসেসর ব্যবহূত হচ্ছে পিসিতে। প্রসেসর নির্মাণে বিশ্বসেরা দুই প্রতিষ্ঠান ইন্টেল এবং এএমডি’র কল্যাণে এখন প্রসেসরের কোর সংখ্যা পৌঁছে গেছে ৬৪-এ। শুধু কোর সংখ্যাতেই নয়, প্রসেসরের আসরেও এসেছে বিশাল পরিবর্তন। এখন তারা কাজ করছেন ২২ ন্যানোমিটার নিয়ে। এর চেয়েও ছোট আকারের চিপে ৬৪ কোরের প্রসেসর নিয়ে গবেষণা অব্যাহত রেখেছে ইন্টেল এবং এএমডি উভয়েই। ইতোমধ্যে ৬৪ কোরের সিপিইউ বাজারে উন্মুক হয়েছে।

ইশারায় নিয়ন্ত্রণ:
মাইক্রোসফটের কাইনেক্টের কল্যাণে ইতোমধ্যেই আমরা ইশারা এবং শরীরের নড়াচড়ার মাধ্যমে গেমিংয়ের অভিজ্ঞতার সাথে পরিচিত। তবে এর বাইরেও সব ধরনের ডিভাইসের জন্যই শািরাভিত্তিক নিয়ন্ত্রণ নিয়ে গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছে প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলো। এসব নিয়ন্ত্রণের মধ্যে কণ্ঠস্বরের মাধ্যমে এবং এমনকি শুধুমাত্র চোখের ইশারায় নিয়ন্ত্রণের বিষয়ও অন্তর্ভূক্ত রয়েছে। চোখের ইশারায় কম্পিউটার নিয়ন্ত্রণের কিছু প্রোটোটাইপেও ইতোমধ্যে প্রদর্শন করেছেন ম্যাসাচুসেট ইন্সটিটিউট অব টেকনোলজির (এমআইটি) গবেষকরা। তারা জানিয়েছেন, খুব অল্প সময়ের মধ্যেই এই প্রযুক্তির পূর্ণাঙ্গ সংস্করণ তৈরি করে বাজারজাত করা খুবই সম্ভব।

সেমিকন্ডাক্টর:
প্রযুক্তি বিকাশের অন্যতম মূলে রয়েছে সেমিকন্ডাক্টর। এই সেমিকন্ডাক্টরের নানা রকফোর দিয়েই তৈরি হয় সব যন্ত্রাংশ। শুরু থেকেই সেমিকন্ডাক্টর নিয়ে নানান ধরনের গবেষণা চালিয়ে আসছেন গবেষকরা। তবে এবার সেমিকন্ডাক্টরে বড় ধরনের পরিবর্তন এনেছে গ্রাফিন। গ্রাফিন মূলত অত্যন্ত পাতলা, অত্যন্ত শক্তিশালী, স্বচ্ছ, পরিবাহী এবং নিজে নিজেই পরিবর্তনযোগ্য এক ধরনের পদার্থ। গবেষকরা জানিয়েছেন, গ্রাফিনের উপরে তারা ন্যানোওয়্যার তৈরি করতে পারে। এতে করে বর্তমানে সিলিকন সেমিকন্ডাক্টর ব্যবহার করে সাধারণ চিপের তুলনায় গ্রাফিন দিয়ে তৈরি তৈরি চিপের আকার হবে একশগুণ ছোট হচ্ছে। কারণ গ্রাফিন তৈরিতে গবেষকরা মূলত একটি অনুর পুরুত্বের স্তর ব্যবহার করে থাকেন। এতে করে গ্রাফিন ব্যবহার করে চিপ তৈরি করাটা অর্তের দিক থেকেও অনেক বেশি সাশ্রয়ী হয়ে উঠেছে। নওরোজিয়ান ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির ড. হেলজি উইম্যান গ্রাফিন নিয়ে কাজ করেছিলেন সহকর্মী অধ্যাপক বোর্ন- অভ ফিনল্যান্ডের সাথে। ২০১২ সালে তাদের গবেষণা চলাকালে আশাবাদ ব্যক্ত করে জানান, আগামী এক দশকে প্রচলিত সেমিকন্ডাক্টরের বিরাট একটি অংশ দখল করতে সক্ষম হয়েছে গ্রাফিন। আর তাতে করে কম্পিউটিং ডিভাইসে আসবে বৈপ্লবিক পরিবর্তন।

14
পৃথিবীর একমাত্র উপগ্রহ চাঁদে প্রথম মানুষ নামার ৫০তম বর্ষপূর্তি উদযাপন করে যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের হাজার হাজার লোক।

১৯৬৯ সালের ২০ জুলাই (যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময়) যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশযান অ্যাপোলো ১১ থেকে চন্দ্রযান ঈগল চাঁদের ট্রাঙ্কুইলিটি বেইস অবতরণ করে।

এর কয়েক ঘণ্টার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় সময় ৯টা ৫৬ মিনিটে (০২৫৬ জিএমটিতে) নিল আর্মস্ট্রং প্রথম মানুষ হিসেবে চাঁদের বুকে পা রেখে ইতিহাস সৃষ্টি করেন। 

প্রকৃতপক্ষে সোভিয়েত ইউনিয়নের সঙ্গে চলা শীতল যুদ্ধের প্রতিদ্বন্দ্বিতায় অনুপ্রাণিত হয়ে যুক্তরাষ্ট্র চাঁদে মানুষ পাঠালেও এখন অভিযানের ওই অংশটি একটি অনুপম মূহুর্ত হিসেবে বিশ্বব্যাপী স্মরণ করা হয়।

অনলাইনে ওই অবতরণের ফুটেজ সম্প্রচার করে নাসা এ বর্ষপূর্তি উদযাপন করে। এর মাধ্যমে নতুন প্রজন্ম ওই ঐতিহাসিক মূহুর্তটি দেখার সুযোগ পায়। ৫০ বছর আগে বিশ্বব্যাপী প্রায় ৫০ কোটি লোক রুদ্ধশ্বাসে ওই মূহুর্তটি দেখেছিল।

চন্দ্রযানটি অবতরণের মুহূর্তে অ্যাপোলো ১১-র কমান্ডার আর্মস্ট্রং বলেছিলেন, “হিউস্টন, ট্রাঙ্কুইলিটি বেইস এখানে। ঈগল অবতরণ করেছে।” 

যুক্তরাষ্ট্রের হিউস্টনের মিশন কন্ট্রোল থেকে চন্দ্রযানের সঙ্গে যোগাযোগের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তা চার্লস ডিউক জবাব দেন, “রজার, ট্রাঙ্কুইলিটি। আমরা আপনাদের মাটিতে দেখতে পাচ্ছি। আপনারা একদল লোকের নিঃশ্বাস বন্ধ করে দিয়েছিলেন। আমরা আবার নিঃশ্বাস নিতে পারছি।”

এর কয়েক ঘণ্টা পর চাদের পৃষ্ঠে প্রথম পা দিয়ে আর্মস্ট্রং তার বিখ্যাত উক্তিটি করেন, “মানুষের জন্য যা ছোট একটি পদক্ষেপ, মানবজাতির জন্য তা বড় এক লাফ।”

এর কিছুক্ষণের মধ্যে বাজ অলড্রিন চাঁদের পিঠে নেমে আর্মস্ট্রংয়ের সঙ্গে যোগ দেন। তাদের অপরসঙ্গী মাইকেল কলিন্স মূল যানে থেকে অভিযানের এক অংশ নিয়ন্ত্রণ করছিলেন।

এই তিন মার্কিন মহাকাশচারীরই জন্ম ১৯৩০ সালে। এদের মধ্যে অলড্রিন ও কলিন্স বেঁচে থাকলেও আর্মস্ট্রং ২০১২ সালে ৮২ বছর বয়সে মারা যান। 

চাঁদে অবতরণের ৫০ বছর পূর্তিতে শনিবার এক টুইটে অলড্রিন বলেছেন, “আমরা সেখানে প্রথম গিয়েছিলাম। আমরা চাঁদে নেমেছিলাম, ২৫ কোটি আমেরিকান আমাদের দিকে তাকিয়ে ছিল। সত্য হচ্ছে: অভিযানটি তাদের সবার ছিল এবং আমেরিকার ভবিষ্যৎ প্রজন্মের যারা আবার চাঁদে যাওয়ার স্বপ্ন দেখে।”

মাইকেল কলিন্স ফক্স নিউজকে বলেছেন, “রাতে যখন রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাই, অন্ধকার ঘনিয়ে আসে, আমি আমার ডান কাঁধের ওপরে কিছু অনুভব করি, তারপর তাকিয়ে ছোট ওই রূপালি রূপালিটি ওপরে দেখি আর ভাবি, ‘ওহ, ওই চাঁদ। আমি সেখানে গিয়েছিলাম।”

এই দিনটি উপলক্ষ্যে বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন শহরে বিভিন্ন অনুষ্ঠান পালিত হয়। এর মধ্যে অ্যাপোলো ১১ মিশন যেখান থেকে রওনা হয়েছিল হিউস্টনের সেই স্পেস সেন্টারেও বিভিন্ন কর্মসূচি পালিত হয়।

বিশ্বজুড়ে উদযাপন : হুস্টনে নাসার স্পেস সেন্টারে পর্যটকদের জন্য নানা আয়োজন করা হয়। সামরিক বাহিনীর সদস্যরা প্যারাশুট প্রদর্শনীর আয়োজন করেন। ছিলো কনসার্টও। নতুন বছরের স্বাগত জানানোর স্টাইলে আর্মস্ট্রংয়ের প্রথম পদক্ষেপের মুহূর্তের জন্য সবাই অপেক্ষা করছিলো। ভার্জিনিয়ার মহাকাশ জাদুঘরে চাঁদে পাওয়া বস্তুর প্রদর্শনী চলে। রাখা হয় আর্মস্ট্রংয়ের স্পেসস্যুট। সিয়াটলেল আকাশ জাদুঘরও ওই অভিযানের ভিডিও সম্প্রচার করে। শুক্রবার ওয়াশিংটনে বড় পর্দায়ও চন্দ্রাভিযানের ছবি দিয়ে তৈরি ১৭ মিনিটের একটি ভিডিও দেখানো হয়।

যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে প্যারিসের দ্য গ্র্যান্ড পালাইসে চাঁদে সফল অভিযানের অর্ধশতাব্দী বার্ষিকী নিয়ে আয়োজন করা হয়। ভবনটির কাঁচের দেয়ালে চাঁদের বিশাল একটি রেপ্লিকা প্রদর্শন করা হয়। মাদ্রিদের একটি ভবনের ওপরও বিশাল একটি চাঁদের রেপ্লিকা প্রদর্শন করা হয়।

15
বিমানে নয় সাইকেল চড়ে হজ্ব করতে যাচ্ছেন ৮ ব্রিটিশ মুসলিম। হজ্বের উদ্দেশে গত ৭ জুলাই লন্ডন থেকে তারা যাত্রাও শুরু করে দিয়েছেন। তাদের সঙ্গী কেবল আটটি সাইকেল।

সংবাদমাধ্যমটি আরও জানায়, গত ১৩ জুলাই তারা তুরস্কের ইস্তাম্বুল শহরে এসে পৌঁছেছেন। এভাবে ধারাবাহিকভাবে ১৭টি দেশ অতিক্রম করে তারা পৌঁছে যাবেন মহানবীর শহর মদিনায়। মদিনা থেকেই তারা হজ্ব ও ওমরা পালনের প্রস্তুতি গ্রহণ করবেন। তবে তারা যাত্রা পথে শুধু ইরাক ও সিরিয়া বিমানে পাড়ি দেবেন।

সাইকেল চালিয়ে ৪ হাজার কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে মদিনায় পৌঁছতে তাদের সময় লাগবে প্রায় ৬০ দিন। তবে ১৭টি দেশের মধ্যে দু’টি দেশ তারা সাইকেলে পাড়ি দিচ্ছেন না। জানা গেছে, শুধু ইরাক ও সিরিয়া বিমানে পাড়ি দেবেন এ আট হজ্বযাত্রী। অবশ্য সাইকেল চালিয়ে হজ্বযাত্রার উদাহরণ এটাই প্রথম নয়। এর আগেও বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে সাইকেলে একাকি কিংবা গ্রুপে এসেছে হজ্ব পালনকারী গ্রুপ। লন্ডন থেকেই ২০১৭ সালেও একটি গ্রুপ সাইকেলে হজ্ব পালনে পবিত্র নগরী মক্কায় যান। এর পর ২০১৮ সালে কেনিয়ার নাইরোবি থেকে এক নারীসহ ৪ জনের একটি গ্রুপ একইভাবে সাইকেলে চড়ে হজ্ব করতে গিয়েছিলেন। হজ্ব ছাড়াও তাদের উদ্দেশ্য ছিল যাত্রা পথে বিভিন্ন দেশে কেনিয়ার শিক্ষা বঞ্চিত শিশুদের জন্য তহবিল সংগ্রহ করা।

শুধু সাইকেল নয় পায়ে হেঁটে হজ্ব পালনে মক্কায় পৌঁছান বসনিয়ার এক ব্যক্তি। ২০১২ সালে সেনাদ হাদজিক নামের ৪৭ বছর বয়সী ওই বসনিয়ান নাগরিক পায়ে হেঁটে পবিত্র মক্কা নগরীতে গিয়ে পৌঁছান। এ যাত্রায় তাকে ৫ হাজার ৯০০ কিলোমিটার পথ পায়ে হেঁটে পাড়ি দিতে হয়।

Pages: [1] 2 3 ... 6