Daffodil International University

Employability => Employability Skills => Academic Skill => Topic started by: Badshah Mamun on January 08, 2022, 11:54:05 AM

Title: এমন শিক্ষা কার কী কাজে আসবে?
Post by: Badshah Mamun on January 08, 2022, 11:54:05 AM
এমন শিক্ষা কার কী কাজে আসবে?
দেশে শিক্ষার মান যে নিম্নগামী, তা অনেকবার অনেকভাবেই বলা হয়েছে। তবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যায় কোনো কমতি নেই।

স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় সব পর্যায়েই। এক্ষেত্রে ‘কোয়ান্টিটি’ আমাদের বেশ আশ্বস্ত করলেও ‘কোয়ালিটি’র কথা মনে হলে হতাশ হতে হয়।

আমাদের দেশে মাধ্যমিক স্তরে নবম শ্রেণি থেকেই আলাদা বিজ্ঞান শিক্ষা শুরু হয়, তবে উচ্চমাধ্যমিকে একেবারে পাকাপাকি। একদম ছেলেবেলা থেকেই দেখে ও শুনে আসছি যে, সাধারণত বেশি মেধাবী শিক্ষার্থীরা বিজ্ঞান, অপেক্ষাকৃত কম মেধাবীরা ব্যবসায় শিক্ষা এবং বাকি গড়পড়তা সবাই মানবিক বিভাগে পড়তে আগ্রহী হয় এবং পড়ে থাকে।

আমাদের কলেজের হেড ক্লার্ক ইনামূল হক (শিক্ষার্থী-শিক্ষক সবার অতি প্রিয় এবং সবার কাছে ‘ভাইছাব’ নামে পরিচিত) খুবই রসিকজন। বিএ পাশ করার পর ১৯৬৪ সালে কলেজ চালুর দিনেই তিনি চাকরিতে যোগ দিয়ে সেখান থেকেই ২০০০ সালে অবসরে যান।

একসময় বয়সের সঙ্গে সঙ্গে বেশ অভিজ্ঞতাও সঞ্চয় হয় তার। বেতন প্রদান বা এমন কাজে কোনো শিক্ষার্থী অফিসে তার কাছে গেলে নামের পর বিভাগ লেখার বেলায় তিনি মুখের দিকে চেয়ে জিজ্ঞেস করতেন, ‘ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার, ম্যানেজার, নাকি মন্ত্রী-আপনি কোন বিভাগের শিক্ষার্থী, কী লিখব?

এর সরলার্থ : বিজ্ঞান পড়া মানে ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার হওয়া, ব্যবসায় শিক্ষা মানে ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজার আর গড়পড়তা মানবিক বিভাগ নিয়ে পড়া মানে রাজনীতি এবং একসময় এমপি-মন্ত্রী হওয়ার সুযোগ!

কেবল শিক্ষকতা জীবন নয়, ব্যক্তিজীবনেরও ঘটে যাওয়া অনেক অম্ল-মধুর ঘটনা এখন আর আমি আগের মতো মনে রাখতে পারি না, সহজে ভুলে যাই।

তবে এক্ষেত্রে খানিকটা বুদ্ধি খাটালাম, যাতে বিষয়টি বিস্মৃত হয়ে না পড়ি। তারিখ : ২ সেপ্টেম্বর ২০১৫। একে একে প্রায় ছয়টি বছর গত হয়ে গেল। হঠাৎ পুরোনো জামার পকেট থেকে বের হয় আবেদনপত্রের কপিটি।

কলেজের অধ্যক্ষ ছুটি নিয়ে ঢাকায় গেলেন। তার অনুপস্থিতিতে আমি দায়িত্ব পালন করছি। একসময় একজন ছাত্র এসে কক্ষে ঢুকল, হাতে ফি মওকুফের একটি আবেদনপত্র। আবেদনপত্রটি ভালো করে না পড়েই আমি ছাত্রটিকে বোঝাতে চেষ্টা করি, টাকা মওকুফের ব্যাপার, ও যেন আগামীকাল অধ্যক্ষ ফিরে এলে সরাসরি তার হাতেই সেটি দেয়। কিন্তু না; সে এখনই এবং আমার কাছেই সেটি দিয়ে দিতে চায়। বারবার অনুরোধে শেষ পর্যন্ত আমি তা গ্রহণ করি এবং যথারীতি সে বিদায় নিয়ে চলে যায়। অন্য একটি কাজ শেষ করে আবেদনপত্রটিতে চোখ রাখতেই প্রচণ্ড একটি ধাক্কা খাই। ও মা, এ আমি কী দেখছি!

শিক্ষার মান যে নিম্নগামী, তা আমাদের স্বাধীনতার পর থেকে (অটোপ্রমোশন ও বিভিন্ন পাবলিক পরীক্ষায় ব্যাপক গণটোকাটুকির ফল) বেশ সুবিদিত। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের আবেগ-বিহ্বলতা কাটিয়ে বঙ্গবন্ধুর আমলেই পরীক্ষায় নকল বন্ধ ও শিক্ষাব্যবস্থায় মোটামুটি একটি স্বাভাবিক গতি ফিরে আসে। পরবর্তী সময়ে জিয়াউর রহমানের আমলে সত্তরের দশক পর্যন্ত মোটামুটি তা অব্যাহত থাকে। কিন্তু আশি ও নব্বইয়ের দশকে শিক্ষা বিভাগের অনিয়ম, অব্যবস্থা, দুর্নীতি ও অবজ্ঞা-অবহেলার পরিণাম এখন আমরা প্রতিনিয়ত প্রত্যক্ষ করছি আর হাড়ে হাড়ে টেরও পাচ্ছি।

সে যাই হোক, মূল প্রসঙ্গে ফিরে আসি। ওই ছাত্রের আবেদনটি মোট ৩৮টি শব্দে লেখা এবং তাতে ১০টি শব্দ সে ভুল বানানে লিখেছে; সেটি আমার কাছে বড় কথা নয়। নিজের শ্রেণিকে সে ‘একাদ্বশ’ বলে উল্লেখ করেছে, তাও বাদ দেওয়া যেতে পারে। অসম্ভবকে ‘অসম্বভ’ এবং নিয়মিত লিখতে গিয়ে লিখেছে ‘নিয়মীত’ এবং এক জায়গায় ‘অকূল’ আবেদনও লিখেছে কলেজের ওই ছাত্র। একটি আবেদনপত্র ‘আবেদন মঞ্জুর করলে বাধিত হব’ বা ‘মঞ্জুর করে বাধিত করবেন’-সচরাচর এমন সব শব্দ দিয়ে শেষ করা হয়। চোখে এবং বেশ মনে লাগার মতো বিষয় হলো, অধ্যক্ষের কাছে লেখা আবেদনপত্রটি সে শেষ করেছে ঠিক এভাবে-‘আবেদনটি মঞ্জুর করে বাধিত হন।’ এখানে ওর বাধিত হওয়া আর অধ্যক্ষের বাধিত হওয়াকে সে একাকার করে ফেলেছে। ‘মরব’ নাকি ‘মারব’ মানে একই কথা (!)। তাও না হয় বাদ দিলাম। একে একে অনেক কিছুই তো উপেক্ষা করলাম, তাহলে এতক্ষণ ধরে কেন এমন প্যাঁচাল? ইতোমধ্যে যাদের ধৈর্যচ্যুতি ঘটে গেছে এবং প্যাঁচাল থেকে মুখ ঘুরিয়ে অন্যত্র মনোনিবেশ করেছেন তাদের কথা আলাদা। কিন্তু যারা ধৈর্য ধরে এখনো আমার ‘প্যাঁচালে’র শেষটা জানার অপেক্ষায় রয়েছেন, তাদের প্রতি আমার গভীর কৃতজ্ঞতা।

আমার যা বেশি মনে লেগেছে তা হলো, ছাত্রটি ওর আবেদনপত্রে ফি বা ফি মওকুফ কথাটি লিখেছে একে একে তিন জায়গায় এবং তিনবারই সে লিখেছে ‘ফ্রি’ বা ‘ফ্রি মওকুফ’। আরও কথা-গড়পড়তা মানবিক বা ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগের সাধারণ মানের কেউ নয়; সে বিজ্ঞান বিভাগের একজন নিয়মিত শিক্ষার্থী। তাহলে এই ছাত্র বা এমন ছাত্রের ভবিষ্যৎ কী? তার নিজের, পরিবারের, কলেজের, সর্বোপরি সমাজের কী কাজে আসবে এমন শিক্ষা?

অথচ উদ্যোগ-আয়োজনের কোনো কমতি নেই। দেশজুড়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছড়াছড়ি। চারদিকে বিদ্যালয়, মহাবিদ্যালয় ও বিশ্ববিদ্যালয়। এমনকি ৫-১০ বছর আগের তুলনায়ও শিক্ষার্থীদের সামনে এখন অবারিত সুযোগ। ঘাটতি কেবল মান আর সঠিক দেখভালের। উল্লিখিত শিক্ষার্থী কিংবা ঘটনাটিকে আমি আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা ও সমাজের বিচ্ছিন্ন কোনো বিষয় বলে মনে করি না। এখনই মনোযোগী হওয়া দরকার-শিক্ষার্থী, শিক্ষক, নীতিনির্ধারক, সরকার-সবার।

বিমল সরকার : অবসরপ্রাপ্ত কলেজ শিক্ষক

Source: Daily Jugantor
Title: Re: এমন শিক্ষা কার কী কাজে আসবে?
Post by: Md Kamrul Hasan on March 13, 2022, 01:53:44 PM
Thanks for sharing.