Daffodil International University

Entrepreneurship => Successful Entrepreneur => IT => Topic started by: Rubaiya Hafiz on August 01, 2019, 02:01:42 PM

Title: সফল পাঁচ নবীন ফ্রিল্যান্সারের কথা
Post by: Rubaiya Hafiz on August 01, 2019, 02:01:42 PM
অক্সফোর্ড ইন্টারনেট ইনস্টিটিউটের (ওআইআই) তথ্য অনুসারে, বাংলাদেশ ইতিমধ্যে অনলাইন শ্রমের দ্বিতীয় বৃহত্তম সরবরাহকারী হয়ে উঠেছে। দেশের প্রায় সাড়ে ছয় লাখ নিবন্ধিত ফ্রিল্যান্সারের মধ্যে প্রায় পাঁচ লাখ সক্রিয় ফ্রিল্যান্সার নিয়মিত কাজ করছেন। জ্ঞানভিত্তিক আউটসোর্সিংয়ের কাজে দক্ষ জনশক্তি তৈরি করতে সরকারের তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি বিভাগ ২০১৭ সাল থেকে ‘লার্নিং অ্যান্ড আর্নিং প্রজেক্ট’ (এলইডিপি) নামে দীর্ঘমেয়াদি প্রকল্প বাস্তবায়ন করে আসছে। এই প্রকল্প থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে অনেক তরুণ নিজ উদ্যোগে ফ্রিল্যান্সার বা মুক্ত পেশাজীবী হিসেবে কাজ করছেন। এ ক্ষেত্রে সফল পাঁচজন তরুণের গল্প থাকছে।

অনেকে অনেক কথা বলেছে কিন্তু হাল ছাড়িনি
হাফসা আনোয়ার, ঢাকা
হাফসা আনোয়ার থাকেন উত্তরায়। ২০১৭ সালে ফেসবুক থেকে জেনে আবেদন করেছিলেন। পরীক্ষায় পাস করার পর সাক্ষাৎকার নিয়ে তাঁকে লার্নিং অ্যান্ড আর্নিং প্রকল্পের প্রশিক্ষণের জন্য নির্বাচন করা হয় ২০১৮ সালের জানুয়ারি মাসে। তখন ইডেন মহিলা কলেজে গণিত বিভাগে স্নাতক (সম্মান) প্রথম বর্ষের ছাত্রী।
হাফসার প্রশিক্ষণটি ছিল ওয়েব ডেভেলপমেন্টের ওপর। ৫০টি ক্লাস করেছিলেন তিনি। প্রশিক্ষণের পর মেন্টরিং সেন্টারে আরও ১০টা ক্লাস হয়েছে হাফসা আনোয়ারের। এমসিসি লিমিটেডের দেওয়া প্রশিক্ষণ থেকে ওয়েবসাইট ডিজাইন, ডেভেলপমেন্ট বিষয়ে শেখেন।
অনলাইন আউটসোর্সিংয়ের কাজের জায়গা ফাইভারে অ্যাকাউন্ট খোলেন প্রশিক্ষণের পর। এর এক মাস পর যুক্তরাষ্ট্র থেকে ২৫ ডলারের একটা কাজ পান তিনি। এখন প্রতি মাসেই ৬–৭টা কাজ করেন। কিছু নির্দিষ্ট কাজদাতা আছে অস্ট্রেলিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রে। এ পর্যন্ত ১২ হাজার ডলার আয় করেছেন তিনি। হাফসা এখন কাজ করছেন ফাইভার ও আপওয়ার্কে।
হাফসা বলেন, ‘আমি পেওনিওরের মাধ্যমে স্থানীয় ব্যাংক থেকে টাকা তুলি। শুরুতে ইংরেজি নিয়ে অসুবিধা হয়েছিল। কিন্তু চর্চা করেছি, আমার ক্লাসের এক বন্ধু আমাকে অনেক সাহায্য করেছে। জীবনে কিছু পরিবর্তন এসেছে। পরিবর্তনটা আর্থিক থেকে মানসিক বেশি। এখন সবকিছু সহজ মনে হয়। আমার পরিবার, আত্মীয়স্বজন ও বন্ধুরা বলেছিল এইগুলো হবে না, সময় নষ্ট—এখন তাঁদের ধারণা বদলেছে।’

পাঁচজনের একটি দল করে কাজ করছি
মিরাজুল ইসলাম, টাঙ্গাইল
টাঙ্গাইলের মিরাজুল ইসলাম যখন মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র, তখন লার্নিং অ্যান্ড আর্নিংয়ের প্রশিক্ষণের সুযোগ পান। এখন শেষ সেমিস্টারে পড়ছেন। আগে থেকে কম্পিউটারের প্রতি ভালোবাসা ছিল, চেষ্টাও করেছিলেন কিছু করার, কিন্তু পারেননি।
২০১৭ সালে প্রশিক্ষণ নেন। ওয়েব ডিজাইন, ডেভেলপমেন্ট শেখেন। প্রশিক্ষণ দেয় ডিজিকন টেকনোলজিস লিমিটেড। ফ্রিল্যান্সার ডটকমে ২৫–৩০টা কাজ বিড করার পর প্রথম কাজ পান মিরাজুল, সেটা ৩০ ডলারের। এরপর আমেরিকার একজন ক্লায়েন্ট ওই দেশের ওয়েবসাইটের একটা কাজ দেয়। শুরু হয় মিরাজুলের পথচলা। প্রশিক্ষণের পর থেকে এখন পর্যন্ত ১০ হাজার ডলার আয় করেছেন তিনি।
মিরাজুল বলেন, ‘আমার সরাসরি কাজদাতা বেশি। তবে এর বাইরে ফ্রিল্যান্সার ডটকমে কাজ করি। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন ওয়েবসাইটের কাজ আমরা বাংলাদেশে বসে করে দিই। বর্তমানে আমি ৫ জনের একটা দল তৈরি করেছি। ছোট একটা অফিসের মতো নিয়েছি, ১০ হাজার টাকা ভাড়া দিচ্ছি প্রতি মাসে। এই ৫ জনের মধ্যে ২
জনকে আমরা প্রশিক্ষণ দিয়ে তৈরি করে নিচ্ছি।’
মিরাজুল নিজেই নিজের খরচ চালান। বাসার খরচও দেন। বললেন, ‘ভবিষ্যতে বড় একটা অফিস নেব, যেন অন্তত ২০০ মানুষের কর্মসংস্থান হয়।’

৩০০ জনকে শিখিয়েছি
সুবীর নকরেক, ময়মনসিংহ
ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর ছেলে সুবীর নকরেক। ময়মনসিংহে একটি ফ্রিল্যান্সার ট্রেনিং ইনস্টিটিউট করেছেন। নাম নকরেক আইটি ইনস্টিটিউট। সুবীরের বড় ভাই ও এক কাকা এলইডিপির প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন। তাঁদের কাছে শুনেই ঢাকাতে প্রশিক্ষণ নিতে আসেন। প্রথম থেকেই তিনি ঠিক করেছিলেন, ২০০ ঘণ্টার গ্রাফিক ডিজাইন কোর্স শেষ করবেন। ঢাকায় আসার পরপরই একটা ভালো চাকরির সুযোগ পেয়েছিলেন, কিন্তু সেটা করেননি সুবীর। তখন তিনি কিছুই করতেন না।
প্রশিক্ষণটা হয়েছিল মিরপুর বাঙলা স্কুল অ্যান্ড কলেজে, ২০১৭ সালে। এর আগেই ফ্রিল্যান্সিং সম্পর্কে অনলাইনে জেনেছিলেন। সুবীর বলেন, ‘আমি করপোরেট ব্র্যান্ডিং, ডিজাইন, লোগো, ফ্লায়ার তৈরি, ব্রশিওর, আইডি কার্ড তৈরি ইত্যাদি শিখেছি।’
সুবীরের প্রথম কাজ ছিল একটা ফ্ল্যায়ারের নকশা। এর জন্য পেয়েছিলেন ৭৫ ডলার। তখন থেকে এখন পর্যন্ত দেড় বছরে তাঁর আয় প্রায় ১১ হাজার ডলার। এখন কাজ করেন আপওয়ার্কে।
সুবীর বলেন, ‘আমার প্রতিষ্ঠান নকরেক আইটি থেকে আমি প্রশিক্ষণ দিই। এখন পর্যন্ত ৩০০ জনকে প্রশিক্ষণ দিয়েছি। এর মধ্যে আমাদের গারো সম্প্রদায়ের প্রায় ১৫০ জন তরুণ রয়েছেন। আমি স্কাইপের মাধ্যমে প্রবাসীদেরকেও প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকি।’
ফ্রিল্যান্সার হিসেবে কাজ শুরু করে সুবীর এখন একজন উদ্যোক্তা। এলইডিপির প্রশিক্ষণ মডিউল ধরেই ময়মনসিংহে খুলেছেন তাঁর প্রতিষ্ঠান।

মো. আশিক মিয়া
আমার পরিবার আমাকে নিয়ে গর্ব করে
নেত্রকোনায় নিজেদের বাড়িতেই থাকেন আশিক মিয়া। নিজের কলেজে একটি ব্যানারে দেখে জানতে পারেন প্রশিক্ষণের ব্যাপারে। সেখানে দেখে আগ্রহী হয়েছেন আশিক। নেত্রকোনার চন্দ্রনাথ কলেজে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন ডিজিটাল বিপণন বিষয়ে।
আশিক বলেন, ‘শুরুর দিকে দুই মাস ধরে কাজদাতাদের রিকোয়েস্ট পাঠাতে হয়েছে। এরপর যুক্তরাষ্ট্রের একজন প্রথম সাড়া দেন। তাঁর একটা এসইওয়ের (সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন) কাজ ছিল। সেখান থেকেই শুরু।’
২০১৭ সালের শেষ থেকে কাজ শুরু করেন আশিক। এখন পর্যন্ত মোট আয় করেছেন ১২ হাজার ডলার। এ জন্য আশিককে ২০০–এর বেশি কাজ করতে হয়েছে।
বর্তমানে তিনি ফাইবারে কাজ করেন। যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, ব্রাজিল, নেদারল্যান্ডস, আইসল্যান্ড, সৌদি আরব ইত্যাদি দেশ থেকে কাজ পান। আশিক বলেন, ‘শুরুর দিকে কাজের জন্য ল্যাপটপ ছিল না। পরে নিজে উপার্জন করে তিনটা ল্যাপটপ কিনেছি। ছোট ভাইবোনদের কাজ শেখাচ্ছি। পরিবারের সবাই এখন আমাকে নিয়ে গর্ব করে।’
মো. আশিক মিয়া ভবিষ্যতে নিজের কাজের পরিসর আরও বাড়াতে চান।

স্টার্টআপ খুলতে চাই
সোমা সরকার, টাঙ্গাইল
সোমা সরকার, থাকেন টাঙ্গাইলের সাবালিয়ায়। বন্ধুর কাছ থেকে এই প্রশিক্ষণের ব্যাপারে জেনেছেন। টাঙ্গাইলের সরকারি সা’দত কলেজ থেকে স্নাতকোত্তর পরীক্ষা দিয়েছিলেন, তখন টাঙ্গাইলে এই প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। গ্রাফিক ডিজাইন কোর্সে প্রশিক্ষণ নেন সোমা।
২০১৭ সালের জানুয়ারি মাসে আপওয়ার্কে অ্যাকাউন্ট খোলেন সোমা। তিনি বলেন, ‘যাঁরা প্রশিক্ষণ দিয়েছেন, তাঁরা আমাদের শিখিয়ে দিয়েছেন কীভাবে কাজ খুঁজতে হবে, আবেদন করতে হবে। এসব জানার পর আমি বিড করা শুরু করি। প্রায় এক মাস পরে আমি প্রথম কাজ পাই। সেটা ছিল একটা লোগো ডিজাইনের কাজ।’ এখন পর্যন্ত তাঁর আয় ১০ হাজার ডলারের বেশি। প্রায় ৩২৩টি অর্ডার সম্পন্ন করেছেন। প্রতি মাসে গড়ে ৪৫ থেকে ৫০ হাজার টাকার মতো আয় হয় সোমার।
সোমা বললেন, ‘আমার যখন পরীক্ষা শেষ হলো, আমাকে সবাই বলছিল চাকরি নিয়ে ভাবার কথা। আমি কী করব ভাবছি। আমি কী চাকরি পাব। এ রকম সময়ে এই প্রশিক্ষণে যুক্ত হই, তারপর কাজ পাওয়া, আর এখন তো পুরো দমে কাজ করে যাচ্ছি। নিজের পায়ে দাঁড়াতে পেরেছি, এটা সবচেয়ে আনন্দের। ভবিষ্যতে ইচ্ছা আছে একটা স্টার্টআপ উদ্যোগ চালু
করার।’